রম্য রচনা


এররস আর ব্রেড আরনার্স

শৌ ভি ক রা য়

ইংরেজিতে একটি কথা আছে- Errors are bread-earners। কথাটা শুনে প্রথমটায় থমকে ছিলাম একটু। আমার মধ্যবিত্ত মন কথাটা মানতে চায়নি। কিন্তু একটু গভীরে গেলেই বোঝা যায়, কথাটা ভীষণভাবে ঠিক। ঠিক মানে, আমাদের শিক্ষকতা জীবনে। 

সত্যিই তো ছাত্ররা যদি ভুল না করত, তবে কি আমার প্রয়োজন হত? অবশ্যই হত না। আর প্রয়োজন না হলে, চাকরিটি থাকত না। না থাকলে, পেটের ভাতও জুটত না! Errors বা ভুলকে ঠিক করাই আমার কাজ, তা সে লাল কালিতেই করি বা সবুজ। কী যায় আসে?

ঘটনা হল, এই ভুল ঠিক করতে করতে একসময় একঘেয়েমি আসে। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর শুধু ভুল ঠিক করো আর ভুল ঠিক করো! কাঁহাতক ভাল লাগে!!

লাগে। ভুলগুলো যদি এক্সট্রা অর্ডিনারি হয়, তবে একঘেয়ে নিস্তরঙ্গ এই জীবনেও বেশ একটা ইয়ে আসে। কীভাবে ভুলব সেই ভুলটিকে যেটি আমার কাছে ক্ল্যাসিক বলে মনে হয় আজও। ক্লাস সিক্সের সেই পুঁচকে Our Headmaster রচনা লিখেছিল Mrs. B. C. Pal is our headmaster. He is short and fat. He has two eyes, two hands, two legs and no tail. ভুল করার ক্ল্যাসিক উদাহরণ নয় কি এটা? আগের ক্লাসে পড়া Mrs. Khan is our headmistress আর গরুর রচনার এরকম পাঞ্চ আর দ্বিতীয়টি পাইনি আজ অবধি! 

'গাছের কাণ্ডের কাজ কী?'  উত্তরে যদি কেউ লেখে 'মানুষকে গাছে উঠতে সাহায্য করা', তবে সেই ভুলকে তারিফ করতেই হয়! এরকম বাস্তব বুদ্ধি নিয়ে চলা ছাত্রের জীবনে কিচ্ছু আটকাবে না। সে ঠিক ট্যাকেল করবে সব, এটা নিশ্চিতে বলতে পারি। 

ক্ল্যাসিক ভুলের আর একটা উদাহরণ- 'তামা গাছে ফলে। তামা দিয়ে বিড়ি সিগারেট বানানো হয়। কোচবিহার জেলা তামা চাষের জন্য বিখ্যাত...।' অবাক লাগছে তো? লাগবার কথা। আসলে ছাত্রটি হুড়োহুড়ি করে প্রশ্ন পড়তে গিয়ে, তামার বদলে 'তামাক' পড়েছিল। বেশ জম্পেশ লিখে, রিভিশন দিতে গিয়ে যখন আবিষ্কার করল যে, 'তামা' সম্পর্কে লিখতে বলা হয়েছে, তখন উত্তরটা না কেটে তামাক থেকে শুধু 'ক' গুলো কেটে দিয়েছিল। আর তার ফলে আমরা পেয়ে গেলাম অনবদ্য এই রচনাটি! 

আজ পঞ্চম শ্রেণির এক খুদে 'শকুনের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ' হিসেবে যা লিখেছে, তাতে অত্যন্ত চমৎকৃত হয়েছি। উত্তরটি ভুল নাকি সেটা নিয়ে এখনও চিন্তায় আছি ঠিকই, কিন্তু খুদে ছাত্রটির ভাবনায় বিস্মিত না হয়ে পারিনি। ও লিখেছে 'গরুর শরীরে ব্যথা হওয়ার জন্য গরুকে ওষুধ খাওয়ানো হয়। সেই ওষুধ খেয়ে গরুর ব্যথা কমে গেলেও, কিছুদিন পর গরু মরে যায়। শকুন সেই মরা গরু খায়। ফলে তার কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। কিডনি ফেল করে শকুন মরছে। তাই শকুনের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।' পড়াই ইংরেজি। একটু স্বাদ বদলাবার জন্য চেয়েচিন্তে  ওদের পরিবেশ বিষয়ক ক্লাসটা চেয়ে আজ যে উত্তর পেয়েছি, তাতে নিজেই ভুল করলাম কিনা ভাবতে হচ্ছে! শকুনের কিডনি! বাপরে। বিপদজ্জনক ব্যাপার!!

এরকম মিষ্টি মিষ্টি ভুলের উদাহরণ প্রচুর। সে সব বলতে গেলে সাতকাহন হবে। তাই অলমিতি। শুধু সংযোজন, এরকম ভুল চলুক। সব ভুলই ঠিক হয়ে যাবে একদিন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে। কিন্তু ভুলের এই দারুণ রেশটা রয়ে যাবে চিরদিন। আমার সেই ছাত্র আজ যেমন নিজে নিজেই হাসে। টেলিগ্রাম শিখে হোটেল বুক করতে গিয়ে বেচারা লিখেছিল, 'I EAT HOTEL'... কোনও ভুল না করলে, এই অম্লান হাসিটা কিন্তু আর থাকবে না! তাই ERRORS BREAD-EARNERS হোক বা না হোক, THEY ARE CLASS IN THEMSELVES IN FEW CASES.....








চড়

স হ স্রাং শু  মা ই তি

সপাটে চড়-বৌ এর হাতে। ঘরের দরজা বন্ধ  করে। চড় মারার পর হাউ হাউ কান্না, সে তো বুকফাটা কান্না। কান্না আর থামেনা-
    
আমাদের  বিয়ে হয়েছে মাস দেড়েক। নূতন বউ, শখ আহ্লাদ  গভীর। চৈত্র সংক্রান্তির গাজন মেলা। বাইকে বউকে বসিয়ে সন্ধ‍্যায় মেলায় এসেছি। ফাঁকা মাঠে গ্রামের চড়ক মেলা। আলো আঁধারি মেলা। লন্ঠন, হ‍্যাজাক  আর জেনারেটর-এর নিবু আলো।   বসন্তের পর উঠতি বয়সের ছেলে মেয়ে, যুগলদের ভীড় ভালোই। রাত বাড়লে গাজন সন্ন্যাসী মেলায় নাচতে নাচতে আসবে।  
নূতন বৌ-কে নিয়ে গ্রাম‍্য মেলায় এদিকে ওদিকে ঘুরছি। মেলার খেলনা পুতুল  হরেক  রকম  কেনা কাটাও করছি। 

তখন  সব বউদের মাথায় ঘোমটা থাকতো, নূতনদের আবার একটু বেশি করে। মেলায় ঘুরছি, দূরে আইসক্রিম গাড়িতে আইসক্রিম  বিক্রি  চলছে। বৌ-কে দাঁড় করিয়ে আইসক্রিম কিনতে এলাম। ভীড় ঠেলে  দুটো আইসক্রিম কিনলাম। ফিরে এসে  হলুদ শাড়িতে মাথায়  ঘোম দেওয়া  অবিকল বৌ এর মতো মেয়েটির হাতে টোকা মেরে একটা আইসক্রিম ধরিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে  পড়লাম। নজর পড়ল সামনের দিকে-ওখানে যে বউ দাঁড়িয়ে, প্রায় একই রকম হলুদ শাড়ি পরা ঘোমটা দেওয়া- তাহলে যাকে আইসক্রিম ধরালাম  ও কে!
ভাববার ও ফুরসৎ  নেই, ফিরে ও  দেখার আগ্রহ নেই। সামনে বৌ-কে দেখে চলে এলাম বৌ-এর কাছে। বাকী একটা আইসক্রিম  বৌ এর হাতে তুলে  দিলাম। বৌ দূরে থেকে মেয়েটাকে আইসক্রিম  ধরানো ভালো করেই দেখেছে। কেউ কোন  কথা বাড়াই নি।
সেদিন  কলার দেওয়া সাদা পাঞ্জাবী চোস্ত্  পরে মেলায় এসেছি। হঠাৎ  সেই মেয়েটা  পেছন থেকে এসে আমার একটা হাত বগল দাবা করে উল্টোমুখে হ্যাঁচকা টান মারছে, ব‍্যপারটা কি ঘটছে কিছু বোঝার আগে  মেয়েটা ঘুরে প্রথমে আমার বৌ এর মুখের দিকে তাকায়, তারপর আমার  মুখের দিকে নজর ফেলে  ঝটকা দিয়ে আমার হাত ছেড়ে মেলার ভেতরে  এগিয়ে যায়, মুহুর্তে  মেলায় উবে যায়।  

আমরা  মেলা ছেড়ে বাড়িতে  ফিরে এলাম। ঘরে ঢুকেই  কি ঘটেছিল প্রথমেই বলেছি। 
বৌএর এই দৃশ‍্য দর্শনে প্রথম ভাবনায় মনে হয়েছিল সেই মহিলা  আমার পূর্ব পরিচিতা, প্রেমিকা হলেও হতে পারে। যা মনকে সায় দিতে না পেরে আমার  প্রতি আক্রোশে  আমার  গায়ে হাত তোলে। গায়ে হাত তোলার  আত্মগ্লানি তে কান্না ছিল ক্ষমা ভিক্ষার সরল পদ্ধতি। ঘটনা ছিল  ঐ মহিলার হলুদ শাড়ি থাকায় মুখ  না দেখেও আলো আঁধারিতে বৌ ভেবে ওকে আইসক্রিম  ধরিয়ে ছিলাম। মহিলাটি ও নিশ্চিত  চোস্তা পাঞ্জাবি  পরা বরের অপেক্ষায়  ছিল। যে কারনে সহজে আইসক্রিম ধরে নেয় ও পরক্ষণে আমার হাত বগলদাবা করে টান মারে। এরপর আমাদের  মুখ দেখে  ভুল  ভাঙে, এবং সরে যায়।

তখন গ্রামের লাজুক বউ কিছু বলার সাহস নেই। লজ্জায়  মেলার আড়ালে  চলে যায়।
কিন্তু  আমার  বৌ দেখল কি? 
মেলায় এক মহিলাকে আইসক্রিম  কিনে দিলাম, সে আমার হাত ধরে টান মারল, ওর  মুখ  দেখে আমাদের  থেকে সরে গেল। এ অবস্থায় বরেদের নিয়ে সাতপাঁচ ভাবনা কোন অস্বাভাবিক নয়। যে কারনে বৌ সেই  মুহুর্তে  রাগে ক্ষোভে আক্রোশের বহিপ্রকাশ ঘটিয়েছে। দুজনের প্রথম জীবনে কাকতলীয়ভাবে একটা ভুল  ঘটল। ভুল করেও একটা মজার  ঘটনা ঘটল যা আজও  হাসির খোরাক দেয়। সেদিন বৌ আমাকে  চড় মেরেছিল। কাহিনী এখানেই শেষ। তবু কিছু বলার থেকে যায়, তাই বলছি--- ভুল পথ কোনো  পুরুষের কাম‍্য নয়। পুরুষ ভুল  পথে এগোলে শায়েস্তা করার অধিকার স্ত্রীদের আছে। স্বামী  তুমি কেবলমাত্র স্ত্রীর। সেদিন চড় মারাটা একটা আবেগ। সে নিয়ে  মাথা ঘামাই না। কিন্তু কোনো পুরুষে যদি ব‍্যাভীচারী বৌকে কষ্ট দেয় তাহলে বরকে কেমন শায়েস্তা করতে হয় পাঠকগন স্থির করে দেন- যে পুরুষ মদ গিলে বাড়ি এসে বৌ পেটায়- সেই পুরুষ দের  কে ঘৃণা করি। বৌকে পেটানো এখন ও সভ‍্য সমাজে ঘটে। যেটা সমাজের লজ্জা। বৌরা এখনও কথায় কথায় মার খায়। বর্তমানে  নারীদের অনেক শক্তিশালী হতে হবে, ভয় কি?







কীর্তিমান জামাইরা

পা র্থ  গো স্বা মী

পেংলা  ভূত বাড়িতে আসতেই বউ পেঁচি ভূতনি শুনছো... হ্যাঁ গো পেদি বলছিল সামনেই ভূত চতুর্দশীতে একালড়্যা পল্লী বাপের বাড়ি ঘুরে আসবো আমরা, তোমার বন্ধু হেংলাও রাজি তুমি আর না করো না। পেংলা আর হেংলা ভূত একই বাড়ির জামাই, পেদি আর পেঁচি দুই বোন। শ্বশুরবাবা হুদুলকুতকুত বেশ একটা ভদ্রলোক নয় সব সময় জামাই বাবাজীবনদের নাস্তানাবুদ করার মতলব আঁটেন। জামাইরাও যে খুব ভালো তা নয় পাল্টা দিয়ে তবেই দম নেয় আর কি....

ভূত চতুর্দশীর দিন বাবা হুদুলকুতকুত বলছে--- আয় মা আয় পেদি আর পেঁচি ঘরে আয়, এইতো অকর্মন্যের ঢেঁকি বাবাজীবনরাও এসেছো দেখছি।হ্যাঁ শ্বশুরবাবা--- বলেই প্রণাম করতে গিয়ে জোরে একটা পায়ের উপর চিমটি কাটে।

হুদুলকুতকুত- কাওমাও কাওমাও করে ব্যথায় চিৎকার করে ওঠে। পরক্ষণেই আশীর্বাদের বদলে দুই জামাইয়ের মাথায় জোর টোকা মারে, পেংলা আর হেংলা বেদনায় মে গো মে গো করে ওঠে....

পেদি- কি গো তোমাদের দুই বন্ধুর কি হল হঠাৎ?

হুদুলকুতকুত- ও কিছু না মা আমার আশীর্বাদের জোর আর কি বলতে পারিস, আর মনে মনে ভাবে দাঁড়াও বাছাধন এইটুকুতেই তোমরা ছাড় পাবে না।

ভূত চতুর্দশীর দিন হুদুলকুতকুত বললো, শোনো বাবাজীবনরা আমরা সন্ধ্যা হলেই আজ সবাই বেরিয়ে পড়বো। নতুন জায়গা তোমরা একা একা থাকতে পারবে না। আমি পকপকা ভূতকে বলে রেখেছি রাত্রিতে তোমাদের সাথে ও শুয়ে পড়বে চিন্তার কিছু নেই।

পেংলা- (হেংলার কানে কানে) হ্যাঁ রে কি ব্যাপার বল তো, শ্বশুরবাবা আমাদের জন্য এত কিছু ভাবছেন?

হেংলা-(মাথা চুলকিয়ে) বুঝলি, মনে হচ্ছে বুড়োর মাথায় আমাদেরকে টাইট দেওয়ার কোন প্ল্যান ঘুরপাক খাচ্ছে!

একটু রাত্রি হতেই পকপকা এসেই শুয়ে পড়লো একটু পরেই ঘড়ঘড় শব্দে নাক ডাক সাথে একবার ডান হাত দিয়ে পেংলার গালে থাপ্পড় তো একটু পরেই বাম হাত দিয়ে হেংলার গালে থাপ্পড় মেরেই চলেছে। আবার সোজা উঠে দাঁড়িয়ে একবার পেংলাকে ফুটবলের মত কিক তো একবার হেংলাকে কিক। আসলে এই রোগখানা পকপকার আজকের নয় বহুকালের।

হেংলা বলছে- পেংলা তুই কি ঘুমিয়ে পড়লি? মরে গেলুম রে মরে গেলুম কি জোরে মারছে মাইরি....

পেংলা- ওরে হেংলা আমার অবস্থাও একই রে, মনে হচ্ছে জীবনখানা আজই শেষ।

সেই রাতেই দুজন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে শ্বশুরবাবা সকাল হতেই এর পাল্টা পেয়ে যাবেন।আমরা বুড়োকে ছাড়বো না আমাদের সাথে পাঙ্গা এবার ওই বুড়ো হাড়ে হাড়ে টের পাবে।

সকাল হতেই পেংলা ও হেংলা দুই জামাই দুই হাঁড়ি জোলাপ মেশানো মিষ্টি নিয়ে এসে এই যে শ্বশুরবাবা এইসব মিষ্টি আপনার জন্য বাজার থেকে গিয়ে নিয়ে আসলাম...

হুদুলকুতকুত- (জিভে জল এসে গেলো)কই দেখি কই দেখি কোথায়? বলেই একসাথে গবাগব করে সব সাবড়ে দিলো। একটু পরেই শরীরখানা কেমন যেন করছে।

পেংলা বললো- শ্বশুরবাবা  মিষ্টিগুলো কি খেতে ভালো লাগে নি? একদম গরম গরম করছিলো ওইজন্য তো আপনার জন্য আনলাম।

হুদুলকুতকুত- না না খেয়ে আমার মন ভরে গেছে বাবাজীবন।শরীরটা কেমন যেন করছো মনে হচ্ছে একটু ঘুমিয়ে নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।

আচ্ছা বেশ বেশ তাই করুন আমরা এলুম শ্বশুরবাবা...
সকাল গড়িয়ে দুপুর হতেই হুদুলকুতকুতের পেটে জোর মোচড় ঘটি হাতে যাচ্ছে আর আসছে,যাচ্ছে আর আসছে পিচকারির মতো মল বের হচ্ছে। ইনকামিং টোটাল অফ পুরোটাই আউটগোয়িং আর কি...

হুদুলকুতকুত আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না শয্যাশায়ী আর বিড়বিড় করে বলে চলেছে
"পেট করে করে গুড়গুড় বেরিয়ে গেলেই আবার ভুটভুট,
আর পারি না আর পারি না ঘটি হাতে ছুটছুট"

ঘটি হাতে বসে পড়ে গুনগুনিয়ে বেদনাদায়ক গান ধরে...

"ওরে বেটা বাবাজীবনরা মিষ্টি খেয়েই পেট করে গুড়গুড়,
করলি বেশ জব্দ সব যে বেরিয়ে যায় হুড়হুড়"

হুদুলকুতকুত পেটের ব্যামোতে শিক্ষা পেয়ে জামাই বাবাজীবনদের থেকে একটু দূরেই থাকছে। নতুন করে খুব একটা পেছনে লাগার আর চেষ্টা করেন নি। তবে তক্কে তক্কে রয়েছেন সুযোগ পেলে ছেড়ে কথা বলবেন না। এদিকে হেংলা এবং পেংলা শ্বশুরবাবাকে জব্দ করতে পেরে মনে মনে বেশ খুশি। আর এই খুশিতে অনেকদিন পর দুজনে মদ খাবে এইভেবে সেই মতো বিকেলের দিকে দুজনে বেরিয়ে পড়লো। বারে বসে মজলিস করে মদ খাচ্ছে খেতে খেতে দুজনেই পুরো মাতাল হয়ে গেলো। আর সেই অবস্থায় শ্বশুরবাড়ি ফিরে এলো।

পেঁচি বললো- কি গো অনেকটাই রাত্রি হয়ে গেলো এত দেরি করলে কেন? চলো চলো আমরা কথা মত ঘুরে আসি।

পেংলা-বলছি তো আমি মদ খাইনি। আমাকে মাতাল করা অত সহজ নয় বুঝলে। হ্যাঁ খেয়েছি একটু ঠিকই...

এই শোনো তো বলেই পেংলার হাতটা ধরে অনেক হেঁয়ালি করলে আর না আজ আমরা ঘুরতে যাবোই। পেংলা ঠাটিয়ে পেঁচির গালে একটা থাপ্পড় মারে, বললাম তো আমি মদ খাইনি, দেখলে তো তুমি যেটা চাইছো সেটাই করে দেখালাম।

পেঁচি বললো- মিনশে ছড়া থাপ্পড় মেরে আমার গালটা লাল করে দিয়ে বলছে দেখো যা চাইছিলে সেটাই করে দেখালাম। ছড়ার মরণও হয় না।

কথাটা বলেই এই ঠান্ডার দিনে এক বালতি জল পেংলার মাথায় ঢেলে দিলো। আর পেদিকে বললো শোন তোর মিনশেটা কিছু ঘটানোর আগেই ওর উপরে ঠান্ডা জল হড়হড় করে ঢেলে দে বুঝলি...

পেদি বললো- শোনো তুমি এখানেই চুপটি করে দাঁড়াও আমি এক্ষুনি জল নিয়ে আসছি একদম অন্য কোথাও চলে যাবে না।

এসে দেখে হেংলা নিজেই নিজের গায়ের উপর এক বালতি জল ঢেলে নিয়েছে।

হেংলা- দেখো বলেছিলাম না আমি মদ খেলেও পেংলার মতো মাতাল হয়নি। আর পেদি তুমি প্রায়শই বলো না চাঁদে যাবো চাঁদে যাবো নিয়ে চলো। সেই চাঁদ আমি আজ তোমার জন্য সাথে করে নিয়ে এসেছি।

হেংলা লক্ষ্য করেছে বালতির জলে চাঁদ তাই দেরি না করে ওই বালতির জলটা এই নাও তোমার চাঁদ বলে পেদির মাথায় ঢেলে দিলো। দেখলে তো আমি মাতাল
নই চাঁদ এনেই ছাড়লাম।

আর এইসব কান্ডকারখানার পর  সেই রাত্রিটা পেংলা ও হেংলাকে রুমের বাইরে কাটাতে হলো। পেদি পেঁচি সজোরে রুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দিলো।

হুদুলকুতকুত সব শোনার পর ভাবলেন না অনেক হয়েছে এই হেংলা আর পেংলাকে জব্দ করতেই হবে। দিন দিন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।ডেকে পাঠালেন দুই কীর্তিমান জামাইকে...

হুদুলকুতকুত বললো- শোনো বাবাজীবনরা আমাদের একালড়্যা পল্লীতে বহিরাগত শত্রুরা বারবার আক্রমণ করছে, আমাদের প্রেসিডেন্ট ইয়ং ছেলেদের ডিফেন্সে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন। যোগদানের ক্যাম্প চলছে ওখানে আমার এক বাল্যকালের বন্ধু অক্কাবাজ ডাক্তার ডাক্তারি পরীক্ষার চার্জে আছে। আমার সব কথা হয়ে গেছে তোমরা দুজনে আগামীকাল ওখানে গিয়ে যোগদান করবে।

পেংলা বলে ওরে হেংলা,হেংলা বলে ওরে পেংলা জীবনখানা মনে হয় এবার শেষ...

"বজ্জাত শ্বশুরবাবা ফেলে দিলো ফাঁপরে,
মনে হয় সুন্দর এ জীবন এবার যাবে বেঘোরে"।

সবার একের পর এক ডাক্তারী পরীক্ষা চলছে এবার পেংলা আর হেংলার ডাক পড়লো প্ল্যান অনুযায়ী হেংলা টেরা আর পেংলা ল্যাংড়া সেজে গেলো।

অক্কাবাজ-একি হেংলা পেংলা তোমরা কি করে এরকম হলে বিয়ের সময় দেখেছিলাম তোমরা তো এরকম ছিলে না যাইহোক তোমরা কিন্তু চলে যাবে না সবার হয়ে যাওয়ার পর তোমাদের ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।

সবার সবকিছু হয়ে যাওয়ার পর অক্কাবাজ বললো ভালো ভালো খাবার এই রুমে রাখা ছিল তুমি কি দেখেছো হেংলা? আর পেংলার কাছে গিয়ে বললো ওই দূরে মাঠে এক লক্ষ টাকা পড়ে আছে কে যেন ফেলে গেছে খবর পেলাম তুমি কি এই বিষয়ে কিছু জানো পেংলা?

বলেই অক্কাবাজ তক্কে তক্কে রইলো কীর্তিমান জামাইদের হাতেনাতে ধরার জন্য, রাত্রি অনেকটাই হয়েছে, কেউ কোথাও নেই হেংলা উঠে পড়ে ভালো ভালো খাবারের সন্ধান করতে লাগলো চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আর পেংলা একছুট ওই দূরে মাঠে লক্ষ টাকা পাবার আশায় আর এই সবকিছুই সিসিটিভি ফুটেজে উঠে গেল। পরের দিন সকালে অক্কাবাজ হেংলা আর পেংলাকে তাদের রাত্রিবেলা কর্মকাণ্ড দেখিয়ে বলল আমার সাথে পাঙ্গা, হুদুলকুতকুত তোমাদের বিষয়ে আমাকে আগে থেকেই সবকিছু বলে দিয়েছিল। শোনো তোমাদের ডিফেন্সে জয়েন আজ থেকে হয়ে গেল। তোমরা এখন থেকে এই ক্যাম্পেই থাকবে। তোমরা সম্পূর্ণ ফিট। আর আমার সাথে আমার রুমে তোমাদের থাকতে হবে। মনে মনে ভাবে বাবাজীবন তোমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঠিক এইভাবেই জব্দ হতে হবে আমার নাম হলো অক্কাবাজ ভূত।

পেংলা বললো-ওরে হেংলা আমরা একালড়্যা পল্লীর জামাই। এর শোধ আমাদের নিতেই হবে বুঝলি....

সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠেই সবাই প্র্যাকটিস মাঠে, পেংলা হেংলার মন না চাইলেও বাধ্য। উপস্থিত হতে হয়েছে চোখে ঘুম নিয়েই আর তা দেখে অক্কাবাজ ভাবলো এদের নিয়ে সবার মাঝে একটু মজা করা যাক।

অক্কাবাজ বললো- সবাই শোনো আমি গতকাল রাত্রিতে একটা স্বপ্ন দেখেছি, টয়লেটে মলমূত্র ত্যাগ করার পরিবর্তে পেংলা আর হেংলার গায়ে করে ফেলেছি শুনে সবাই হাসাহাসি জুড়ে দিলো।

হেংলা বললো- স্যার তারপর কি হলো?

হঠাৎ করেই পেংলা বলে উঠলো আমিও একটা স্বপ্ন দেখেছি। সবাই উৎসুক হয়ে বলল কি স্বপ্ন?বলো বলো আমরা সবাই শুনতে চাই।

পেংলা বললো- অক্কাবাজ স্যার মুখ হা করে ঘুমাচ্ছেন আর আমি টয়লেটের প্যান ভেবে ওই মুখে মলমূত্র ত্যাগ করে দিয়েছি।

অক্কাবাজ মনে মনে ভাবে বেটা বেশ শয়তান তো, সাথে সাথে সবার সামনে বেইজ্জত করে দিলো। কেন যে সকালেই পিছনে লাগতে গেলাম। এদের থেকে একটু দূরে দূরেই থাকতে হবে‌।

সবাই চলে যাওয়ার পর অক্কাবাজের সামনে পেংলা হেংলা গুনগুনিয়ে গান ধরলো...

"পেংলা হেংলার পিছনে লেগে অক্কাবাজের মাথায় পড়লো বুঝি গামলা,
কত এলো কত গেলো হলো সবাই কুপোকাত লে এবার ঠ্যালা সামলা"

কীর্তিমান জামাইরা এইভাবেই তাদের কীর্তি সব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে থাকে। কেউ ওদের খপ্পরে চট করে পড়তে চায় না একটু দূরে দূরেই থাকে।




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল সংখ্যা || ৪ ফাল্গুন ১৪৩০ || ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪