কথিকা
শরীর মনে রেখেছে
দে ব ব র্ণা
আলসেমীতে হেলান দিয়ে নিস্পৃহতার আবেশে ফোনটা ঘাঁটছিলাম। মন-মেজাজের আবহাওয়াও বেশ গুমোট, আজকাল আর বৃষ্টি নামে না, ভ্যাপসা গরমে যেন নিশ্বাস আটকে আটকে আসে। শুনেছিলাম ঘাড়ের কাছে একটা কোন নাগিনী বেশ নিশ্বাস ফেলে, আমারতো পুরো মাথার মধ্যেই সংসার-টংসার পেতে একাকার কান্ড বাঁধিয়েছে।
এসব ভাবতে ভাবতেই অতর্কিতেই ফোন এলো; আমার এক বান্ধবীর। একুশের গোড়ায় ওর সাথে পরিচয় হয়েছিল, মাসখানেকের মধ্যেই একটা আত্মিক টান অনুভব করলাম।
এখন আমাদের কথোপকথন মিলমিশ দেখলে লোকে, মেয়েবেলার বন্ধুত্ব বলে ভুল করে ফেলে। ওর একটা সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়েছে, আগে আগে ভীষণ কান্নাকাটি করতো এখন আর কাঁদে না, আক্ষেপ করে। কিসের যে আক্ষেপ ওর বুঝি না। কেনো ভালোবাসলাম, কেনো সবার সাথে একা লড়ে গেলাম, কেনো বারবার অপমানের পরও থেকে গেলাম ---শুধু কেনো কেনো আর কেনো। ও বোঝে না, কেনো'র প্রশ্ন মানেই অতীত, আর যা ঘটে গেলো সেটার কোনোরকম উত্তর মাথা কুটে মরে গেলেও পাবে না, আমরা কেউ পাই না। তবুও অবাধ্য যে জন সে'তো শোনে না।
প্রায়শই শুনি, বিশেষত মহিলাদের থেকে --বাচ্চাটা আছে তাই যেতে পারি না, এতো বছরের সংসার সব ভেঙে চলে যাবো কি করে, লোকে কি বলবে আরো কত কি। কিসের এই অমোঘ টান?
যে সম্পর্ক প্রতিনিয়ত বিষাক্ত প্রহেলিকার জন্ম দেয়, সেখানে আটকে থাকার কিসের এই অদম্য ইচ্ছে?
সত্যিই কি সংসার? ভালোবাসা? নিরাপত্তা? নাম ধাম অর্থ পরিচয়--- নাকি অন্যকিছু? প্রেমে এই পৃথিবীর প্রতিটা মানুষই পড়ে, আবার দৈবাৎ বিচ্ছেদও আসে। মানুষের মন মাছেদের মতনই কিংবা পুরোনো দেওয়াল, মনে রাখতে রাখতে একদিন সেটাও মুছে যায়, অন্য রঙ চেপে বসে। শুধু থেকে যায় কি জানেন? অকাট্য শরীরী টান, শুনতে দারুন অশালীন লাগলেও এটা ভীষণ সত্যি। বাবা মা সন্তান ভাই বোনের ভালোবাসা নয়, আজ কথা বলছি প্রেম নিয়ে যে প্রেম দুই অপরিচিত মানুষের মধ্যে হয়; অকস্মাৎ পরিচয়-অবসরের অবসাদ কাটাতে দীর্ঘমেয়াদী আলাপচারিতা--- কত বিনিদ্র রাত্রি কাবার হয়ে যায় আর তারপরেও সেসব যাত্রাপালার যবনিকা ওঠে না-কিছু অচেনা থেকে ভার্যা হয়ে যায় আর কিছু রহস্যের তলায় পড়ে জীবাশ্ম। তবুও এইসবকটা উদ্ভট আলাপগুলোর একটা ইতিহাস আছে, নামটা জরুরি নয়।
দুটো ভিন্ন পরিবারের মানুষ, ভিন্ন আদৰ্শ শিক্ষা কিসের জাদুমন্ত্রে অভিন্ন হয়ে ওঠে এর রহস্য আজ অবধি কোনো ব্যোমকেশই ভেদ করতে পারেনি, কারনটা হয়তো এই ব্যোমকেশকে অন্য কোনো শরদিন্দু লিখেছে, ভালোবেসে কিংবা ভয়ে যাকে আমরা ঈশ্বর বলি।
দক্ষিনী সংস্কৃতিতে একটা পরিভাষা ব্যবহার করা হয়, যাকে বলে Runanabandhana (রুনানাবন্ধন) যার সহজ মানে হলো Body Memory, অর্থাৎ মন ভুলে যাওয়ার ক্ষমতা রেখে চললেও, শরীরের কাছে তা অসম্ভব। মানুষের শরীরে মোট সাতটা চক্র থাকে ---সহস্ত্র, অজ্ঞান, বিশুদ্ধ, অনাহত, মণিপুর, স্বধিষ্ঠানা এবং মূলাধার। মাথা থেকে পা অবধি, প্রতিটা চক্রের এক একটা নির্দিষ্ট কাজ থাকে। আজ কথা বলবো, স্বধিষ্ঠানা বা Sacral চক্রকে নিয়ে, যা থাকে আমাদের Genital Part বা যোনির কাছে, বলা ভালো নাভি থেকে চার আঙুল নীচে অবস্থান করে। স্বধিষ্ঠানা চক্র বা কুন্ডলিনী হলো, হিন্দু তন্ত্রবাদ মতে শরীরের দ্বিতীয় চক্র। এই চক্র মৃত্যুভয়, সামাজিক ভয়, লজ্জা, স্বনাশকতা ইত্যাদি দ্বারা বন্ধ থাকে --দেখবেন অনেকের মধ্যে কিছু বিশেষ লজ্জা থাকে আমাকে দেখতে খারাপ, আমার দেহ সুঠাম নয় ইত্যাদি আরো নানান রকম বা অহেতুক মৃত্যুভয়, সামাজিক লাঞ্চনার ভয় যাঁদেরকে ঘিরে ধরে অকস্মাৎ তাদের আসলে কুন্ডলিনী ব্লক থাকে।
উল্টোদিকে, সৃজনশীলতা, সৃষ্টিরস, নিজের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এইসবকিছুই আসে Sacral Chakra মুক্ত হলে।
জেনে বা অজান্তে যদি কখনো কোনো মানুষের সাথে যৌন সম্বন্ধ তৈরী হয় সেখানে আমাদের শরীর, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অন্যের শরীরের সাথে পরিচয় গড়ে তোলে, হরমোনাল পরিবর্তন ছাড়াও শরীরী চক্রগুলো একে অন্যের সাথে যুক্ত হতে থাকে। যৌনতার আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয়, শারীরিক মিলনে একে অন্যের কর্মের ভাগিদার হয়ে উঠি আমরা। সেই মানুষটার যত পূর্ব কর্ম যার ঋণের কিস্তি সে চোকাচ্ছে সেই দায়ভার এখন আমারও, আমার সমস্ত কার্মিক দায়ভার তাঁর।
কেনো হঠাৎ করে, একটা সম্পর্ক থেকে বেরিয়েই আমরা আরেকটা সম্পর্কে যেতে চাই না? কারণটা প্রাথমিক ও আপেক্ষিকভাবে মন হলেও, শরীরীভাব সেখানে প্রবল থাকে। মন সমন্বয়ের ভাব জানলেও শরীরের তা অনেকটা সময় লেগে যায়, তারমধ্যে সেই সম্পর্ক যদি দীর্ঘ ৩০/৪০ বছরের হয় তাহলে আজীবনেও শরীর সেই স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারে না, এটাকেই বলা হয় Runanabandhana...
ভারতীয়রা অপরিচিত কোনো ব্যক্তির সাথে হাত জোড় করে প্রণাম করে, ওদেশের মতন জড়িয়ে ধরে নয়। কারণটা কিন্তু সেই একই, Energy Exchange হয় স্পর্শে। এই কারণেই লেবু, লঙ্কা, নুন, সাদা তিল ইত্যাদি সরাসরি হাত থেকে আমরা গ্রহণ করি না, কারণ এই দ্রবাদি শক্তির সুপরিবাহী, যদিও এই বিষয়ের কোনো সঠিক প্রামান্য নেই আমার কাছে।
বাড়ির ঘুম আর বেড়াতে গিয়ে ঘুমের মধ্যে তফাৎ লক্ষ্য করেছেন নিশ্চই? কারণটা কিন্তু একই, শরীর আমাদের ভীষণ সংক্রামক, যে বস্তু বা ব্যক্তির দ্বারা সংক্রামিত হলো সেই ভাইরাস ছাড়তে কালঘাম বেরিয়ে যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটা ছাড়ানো যায়ও না।
তাই, শেষে একটাই কথা বলি, চেষ্টা করবেন স্পর্শ না করে যতটা চলা সম্ভব, অন্তত, যতটা বাস্তবসম্মত ততটা রক্ষা করুন, প্রতিদিন নিয়মিত যোগসাধন করুন, অন্তরের পুরুষ ও প্রকৃতিকে জাগিয়ে তোলা আবশ্যিক, সঙ্গে সাতটি চক্রকে open রাখাও দরকার। আর অহেতুক যৌন সম্বন্ধ, সম্পর্ক এড়ানো উচিত, অবান্তর ঋণের বোঝা কেনো বাড়াবো আমরা?
একেতো সেই মানুষের মনের ভীষণ একটা কষ্ট, তাঁর চোখের জল এসবের দায়ভার পরে উল্টে আমরা রুনানাবন্ধনায় জড়িয়ে পড়ি। শরীরেরও মন থাকে মস্তিষ্ক থাকে।
মানুষ ভুলে যায়, প্রকৃতি মনে রেখে দেয় কিংবা শরীর---
এলো মধুমাস
রী তা ভ দ্র দ ত্ত
"কুহেলীর দোলায় চড়ে"ই সে আসে। তারপর কোন এক মন্ত্রবলে ধূসর রঙের ঘোমটাখানা মুখ থেকে যায় সরে। ঝকঝকে রোদেলা সকালে সবকিছুই যেন অন্যরকম; অন্য স্বাদ, অন্য অনুভূতি! প্রকৃতির রঙ গেলো বদলে,বলা যায় তার রূপের বাহার গেলো খুলে। সাজবাহারে অপরূপা হলো সে। কৃষ্ণচূড়ার লালিমা লাগলো তার লজ্জা রাঙা কপোলে। অশোক পলাশের গালিচা বিছানো পথের দিকে চেয়ে সে কার অপেক্ষায় চেয়ে থাকে উন্মনা মনে?
প্রতিদিনের চেনা মেয়েটি কেমন যেনো অচেনা হয়ে ওঠে! বনপথে আসে কোন সে অচেনা পথিক!এই কি সে? মাধবীমকুঞ্জে ভ্রমরের গুঞ্জন, লতাবিতানে কোকিলের কুহুতান, দূরে ঘুঘুর একটানা ডেকে যাওয়া উদাস দুপুর.....!! বসন্ত পঞ্চমের রাগে বাসন্তী শাড়ির আঁচল ওড়ে হিমেল হাওয়ায়। বাণীবন্দনার সাতকাহনের ফাঁকে, মদির চোখের গভীর দৃষ্টি, সুর্মা পরা চোখের কোনে রাই কিশোরীর মিষ্টি সলাজ হাসি। পুরোণো পাড়ায় হঠাৎ দেখা কিশোরবেলার সে-ই প্রেমিকার সঙ্গে। ধীর স্থির আত্মপ্রত্যয়ী সে ও কেমন নিমেষেই হয়ে ওঠে জলতরঙ্গ হাসির সেই ছটফটে বালিকাটি।
প্রেমের মাস এই মধুমাস। বড়ো অবুঝ এই মাসে, অঙ্কুরিত হয়, ফুলে ফলে পল্লবিত হয় কতই না প্রেম! আসলে প্রেমের কোনো মৃত্যু হয় না। প্রেমের কোনও সময় হয় না, হয় না কোন ও বয়স। পঞ্চভূতে লীন হবার পরেও তৃণাঙ্কুরে প্রেমবারি সিঞ্চনেই জন্ম নেয় নবাঙ্কুর। ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বেড়ে ওঠে সে ভালোবাসা বিলিয়ে দিতে। আবহমান কালের এই প্রেম বয়ে চলে নিরন্তর। কখনও সরবে কখনও বা নীরবে।তাই মাতাল হাওয়ায় মন যতই এলোমেলো হোক না কেন, সময়ের ডাল-পালা যতই রিক্ত হতে থাকুক না কেন প্রেমের ভান্ডার কিন্তু উপচে পড়ে প্রাচুর্যে!প্রায় পত্রবিহীন কাঞ্চন ডাল ও ফুলে ফুলে রঙিন হয়, চারিদিক আলো করে দাঁড়ায় এসে পথের ধারে। ঠিক-ভুল, সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ থাকে দূরে, নির্ভেজাল সত্যই দেয় ধরা।মান অভিমান ভুলে গিয়ে, ফুলেল আবিরে রাঙিয়ে শুধুই কাছে টেনে নেওয়া। হঠাৎ কখনও বা চৈতালী ঝড়ে হয় ছন্দপতন; তবু---
হৃদয়ে মধুমাস বসত করে বারোমাস;
মোহ নয়, আবেগ নয়, শুধুই প্রেম,
শুধুই ভালোবাসা।।
ছায়ার মায়া
ভা র্গ বী
একটা রোদ্দুর এসে পড়ে ঘরের মেঝেতে, আলতো নরম শীত-মাখা দুপুরের শেষ প্রান্তে। জানলায় রাখা গাছ ছায়া হয়ে ছড়িয়ে রয়েছে মেঝের ওপর। চারিদিকে তখন এক অদ্ভুত মায়া। রোজ রোদ্দুর এসে পড়ে গাছের শরীরে, গাছ ছায়া হয়ে পড়ে মেঝের গায়ে। প্রতিদিনই মেঝে দুপুরের শেষে ছায়াটুকুর জন্য বসে থাকে। এভাবে দিন কাটে ছায়ার মায়ায়। ছায়ার উপর মেঝের অধিকার বোধ জন্মায়। একদিন উটকো মেঘ এসে দাঁড়ায় আলোর পথে। মেঝে হাপিত্যেস করে বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়। ছায়ার জন্য ছটফট করে মেঝের প্রাণ।
মেঝে ধীরে ধীরে বোঝে তার উন্মুখ পথ চাওয়ায় ছায়ার খুব কিছু আসে যায় না। মেঝে ভাবে বেশ ছায়া যখন দূরত্ব চায়– মেঝের পক্ষে সেটা মেনে নেওয়াই বাঞ্চনীয় বোধহয়। কারণ ছায়ার জন্য মেঝে আধার মাত্র, ছায়া তৈরীতে মেঝের তো কোনো
হাত নেই তাই অধিকারবোধকে অসম্ভব বোকা মনে হয় মেঝের। নিজেকে অবাঞ্ছিত মনে হয়; মেঝের মনেও কেমন একটা ঘন মেঘ জমে। ফরাশ বিছিয়ে দেয় মেঝে তার আর ছায়ার মাঝে। ছায়ার তাতে বিশেষ কোনো হেলদোল নেই। কেমন যেন তাচ্ছিল্য মেঝের থাকা বা না থাকায়। ভাবটা মেঝের ইচ্ছে হলে থাকুক না ইচ্ছে হলে জোড় নেই কোনো। মেঝে বুঝতে শেখে যে দূরত্ব আসলে ছায়ার জন্য বড়ো স্বস্তিদায়ক হয়। অথচ এই ছায়া কতরকম ভাবে ভেঙেচুরে পড়তো, কখনো জোৎস্নায়, কখনো রোদে, কখনো রাস্তার হ্যালোজেনের আলোর সাথে।
মেঝের ভাবে ছায়ার বোধকরি মনে হয় সে কোনো ক্ষয় করেছে এ-যাবৎ। ক্ষয়রোগ সারাতে মেঝের দাওয়াই দূরত্বই অনিবার্য এবং অবশ্যম্ভাবী হয়। নিদেনপক্ষে ক্ষয় রোগের দায় থেকে তো মেঝের মুক্তি লাভ হয়।
অশ্বত্থ ছায়ায়
রা জা
১)
ঘুঘুর ডাক, শীত দুপুরের নূপুর। মাতাল ট্রেন পেরিয়ে যায় গ্রামীণ হাট। কোলাহল, এত বার্তালাপ। বিপরীতে দু'একটা মিসড্ কল থাকুক। চুপ দিয়ে ছবি আঁকে আবছা রং। আমাদের নেশার আসরে গালিব নেমে আসে। "হামে মালুম হে জান্নাতি হকিকত, ওরনা..."। স্বর্গের সত্যতা জেনেও পূণ্য স্থানে যাও। দানবাক্সের দারোয়ান, আলো অন্ধকার মাখামাখি। বেসুর দোতারা হাতে পাগল ঘুরে মন্দা বাজারে। বাতিল জাহাজ চোখের জলের মতো মহৎ। যে মাহাত্ম্য নিয়ে আকাশ গেরুয়া হয়। মীরার কন্ঠে একটু একটু করে শরীর পায় কানাই। লুৎফুন্নেসার অপেক্ষা মেশে ভোরের আজানে। নকল গহনা মোড়কে মুখ বদল দেখি। হাঁটি, থামি। ভিন্ন শহরের রোশনাই পর্দা টেনে দেয়। আর...
২)
তোমার ভেতরে বোবা বহুরূপী কবে থেকে সহজ করে বলে গেছে সহজিয়া জীবন। অযথা দাড়ি কমায় বিভ্রান্তি টেনে আনো। অহংকারী বিড়ালের পিছু নিয়ে জেনেছ কিছু গল্পে লাল সংকেত রাখতে নেই। কিভাবে এড়িয়ে যেতে হয় সংক্রামক বিস্ময়। মানুষের শরীর থেকে মুছে যাচ্ছে ফসলের ঘ্রাণ। ভয় হয়, তোমাকে শুঁকে শুঁকে একদিন যদি তোমাকেই না পাই। ফকির হয়ে যাব নাকি আত্মহননকারী। আধো ঘুম ইশারায় বাবার ঘেমো শার্ট পতাকা হয়ে ওড়ে। ঝাউ বন, মৃতপ্রায় ঘোড়ার চোখ। নিমগ্ন কুয়াশায় বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের হেঁটে যাওয়া। আমি তো চিরকুট কুড়াই সে সব ছায়াদের, ফেরার ইচ্ছে নিয়ে যারা ফেরারি হয়ে গেলো। অজানা নাম লিখে কাগজ নৌকা ভাসাই আকাশে। আগলে রাখলে নষ্ট হয়ে যাই। বিরহ বিছালে কষ্টফুল ফোটে। ঝলসানো বাগানের মালি হয়ে বাহারের স্বপ্নে মাতি। মাথার উপর দিয়ে রাতচরা ভেসে যায়...
৩)
কিছু কিছু হৃদ অন্ধকার নিশি ডাক যেন। এক রুদ্রাক্ষ গাছের নিচে ধূমাবতী কাঁদে। উল্কার মৃত্যু দেখে কিশোরী প্রার্থনা। চন্দন গন্ধ মেখে সাধন সঙ্গিনীরা নেমেছে বেপথে। কী পাই, কী হারাই ইন্দ্রজাল। তবু, বারবার তোমাতেই ফিরে আসা। জলের মতো সরল ও গহীন। তবু, শেষমেশ সরে সরে যাওয়া, বাঁশের বুক পুড়িয়ে বাঁশি জন্ম যেমন। সংসার সন্ন্যাস পৃথিবীর গান আর লালন সাঁই। কোথায় পালাই। এই মাত্র যদি মহাপ্রভুর পদচিহ্ন নিয়ে ফিরে যায় সমুদ্র ঢেউ, তোমাকে ঠিকানা পাঠাবো। চিঠির মতো উড়বে পাখির ঝাঁক। জানাবো, এখন আমি অনেক দূরে। নিভু নিভু রোদ্দুরে আছি নিঝুম। এখানে সব সমান। পরমানন্দের কাছে বিরহের আঁচে...
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন