অণুগল্প
বাদলি
মৌ সু মী পা ল
চমক লাগলো তোমাকেই! মনের ইচ্ছেগুলো বড় বেপরোয়া। চাবুকের ঘা খেয়েও বেসাতি করে মন। আলিঙ্গন পরম সুখের বলে বোধহয়।।
ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিদিনে তোমার সাথে দেখা। উদ্বাস্তু ফুটো টিনের দমাদম নাচনে তার জমে থাকা না পাওয়ার উদগীরণ! দুটি প্রানীর না ভেজা শরীরের চাহিদায় দুজন দুজনকে সেই প্রথম চেনা।।
মৌনতার মাঝেও পরিপূর্ণ জোয়ার শরীর মন জুড়ে! চোখের চাহনিতে আর একবার প্রেমে পরা। অচেনা কি এমনি চেনা হয়? প্রথম পরশের মতো ভিতরে ভিতরে কি নিদারুন পুড়ে যাওয়া।।
হঠাৎই একটা টিকিটের ছোট্ট কাগজে কি যেন লিখলে! ফেরার সময় হলো দুজনেরই। লেখা কাগজটা আমার সামনে ফেলে দিলে চোখের ইশারায়...। অস্থিরতায় বুঝিয়ে দিলে তা গ্রহণ করতে! কাগজের টুকরোতে তোমার নাম জেনেছিলাম বাদল।।
রাতে এখন ঘুম নেই! পোয়াতি মেয়েটা ভরা বাদলে তোমার আশ্রয় চায়! আলিঙ্গন যতটা সহজ আগলে রাখাটা বোধহয়...। কয়েকবার আসার পর তুমি আর আসো না কোনোদিন এই পথে।।
তবু আমি মেয়েটার নাম দিলাম 'বাদলি'। শোনো পুরুষ--- তোমরা বেসাতি করে চলে যাও! কিন্তু আমি বসতি গড়ি।।
(প্রকৃতি মা কে উৎসর্গ করে আমার ছোট্ট নিবেদন)।।
সুখবৃষ্টি
ব না নী চ ক্র ব র্ত্তী
কদিন ধরে গরমটা মারাত্মক পড়েছে। সারাক্ষণ গা ঘামে প্যাচ্ প্যাচ্ করছে। বাড়িতে এসি ও নেই যে সারাদিন অফিস এ খাটুনির পর রাতে একটু শান্তিতে ঘুমোবে। সকালের দিকে যাও বা একটু ঘুম আসে তাও অফিসে লেট হবে বলে ভোর ভোরই উঠতে হয় সাগরিকাকে। ভোরে উঠেই ছোট্ট পূর্বা কে স্কুলে দিয়ে কোনরকমে নাকে মুখে গুঁজে অফিস। মাঝে মাঝে নিজের উপরই বিরক্তি আসে এই একঘেয়ে জীবন কাটাতে কাটাতে। বিরক্তিটা আরো বাড়ে যখন নীলের নামটা ফোন এর স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। আজ প্রায় এক বছর হয়ে গেলো নীল ওকে আর পূর্বা কে ছেড়ে চলে গেছে জীবনটাকে নিজের মতো করে কাটাবে বলে। আমাদের জীবন অনেক টা সিল্ক রুটের মতো। এর প্রতিটা বাঁকে কিছু না কিছু অপেক্ষা করে আছে। কখনো সেটা ভালো আবার কখনো বা খারাপ। অবশ্য ভালো খারাপটা তো আপেক্ষিক ব্যাপার। একসময় এই নীলের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে বাড়ির সবার অমতে বিয়ে করেছিল আবার এখন সেই মানুষটার সাথেই কথা বললে মনটা তেতো হয়ে যায়। এইসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতেই কখন রবিবার দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি। চমকে উঠলো বাইরে মেঘের গুড়গুড়ানি শুনে। পাশের ঘর থেকে পূর্বা দৌড়ে এলো মা চলো ছাদে যাই, বৃষ্টিতে ভিজবো। সাগরিকাও মুহূর্তের জন্যে বাচ্চা হয়ে গেলো আর মেয়ের সাথে দৌড়ে ছাদে চলে এলো। ততক্ষনে বৃষ্টির বড়ো বড়ো ফোঁটা পড়া শুরু হয়ে গেছে। বৃষ্টির জলের সাথে সব রাগ, দুঃখ, অভিমান মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে যেতে দূর থেকে ভেসে আসছে আজ নিখিলের আনন্দধারায় ধুইয়ে দাও, মনের কোনের সব দীনতা মলিনতা ধুইয়ে দাও।
বৃষ্টিস্নাত দিন
আ ন ন্দ শি কা রী
শ্রাবণের সেই দিনটি ছিল ঘরের কোণে কোনো এক রমণীর মুখ গুমরে থাকার মতো। ঠিক যেন কেউ কালো একটা চাদর জড়িয়ে রেখেছে। সকাল থেকেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ে চলেছে, কোনো কাজই করতে পারছিলাম না।
সেদিন যদিও অফিস যাওয়ার তাড়াহুড়োটা ছিল না, দিনটি ছিল রবিবার। বাড়িতে আমি ছাড়া আর কেউ নেই, মা-বাবা একটু দরকারি কাজে বেরিয়েছেন।
সকাল দশ'টার দিকে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা নিয়ে বাজারে বেরিয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার বাড়ি ফিরলাম ওই প্যাঁচপ্যাঁচে কাদার মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে বাজারের ব্যাগটা সাথে নিয়ে, অসহ্য।
বাড়ির টুকিটাকি কাজ তাড়াতাড়ি করে সেরে নিলাম। দুপুরের দিকে বৃষ্টিটা একটু কমল। খাওয়াদাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম নিলাম।
অবশেষে বিকালে বৃষ্টিটা থামল। ছাদে উঠে গেলাম। বৃষ্টি শেষে আবহাওয়াটা একটু ঠান্ডা ঠান্ডা, যাক বাবা বিরক্তিকর গরমের থেকে রেহাই পাওয়া গেছে।
আকাশের দিকে তাকাতেই চোখে পড়ে কি সুন্দর শুভ্র মেঘের ভেলা ভেসে চলেছে কৃষ্ণবর্ণের মেঘ গুলোকে সরিয়ে দিয়ে। আহা! কি মনোরম সেই দৃশ্য, চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো। বাচ্ছাগুলো যে যার ছাদ থেকে ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে মত্ত, তাদের মধ্যেও এক রেষারেষি লক্ষ্য করলাম কে কার ঘুড়ি কাটতে পারে। এক একজনার ঘুড়ি কাটছে আর ভোকাট্টা বলে চিৎকার করে উঠছে সাথে পাখিদের কিচিরমিচির। আমি ছাদের উপর হাঁটতে হাঁটতে চারিদিকে সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখছি আর আপন মনে গুনগুন করে গান গেয়ে চলেছি।
সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে, পাখিরাও ফিরতি পথে যে যার বাসায় ফিরতে ব্যস্ত, শঙ্খধ্বনির আওয়াজ ভেসে আসছে। এবার নীচে নামার পালা এমন সময় নীচে দু-একটা বাড়ির পর একটা হৈচৈ শুনতে পেলাম।
তাড়াতাড়ি করে নীচে নেমে গেলাম, দেখলাম চারিদিকে লোকজন জড়ো হয়ে গেছে, শুনলাম ওই বাড়ির ছেলেটা ঘুড়ি ধরতে গিয়ে পা পিছলে ছাদ থেকে পড়ে গেছে, মাথা ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে, সবাই কান্নাকাটি করছে। ভেবেছিলাম হয়তো মারা গেছে, এমন সময় কে যেন বলে উঠল প্রাণ আছে গো প্রাণ আছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন