পত্র সাহিত্য

মুহূর্ত ( চিঠি )

শি খা না থ


সম্বোধনে কি লিখবো, আগের মতো আজ তো বলা যাবেনা প্রিয়তমেষু, তবু কিছু বলতেই হয়। বেশ, লিখলাম তোমায় ….

বন্ধু

সত্যিই কি তুমি তাই? নাহ্ কোনো প্রশ্ন করছিনা।, মাঝে, মাঝে খুব একা লাগে জানো, কেমন যেনো হাঁফ ধরে। বিকেলে যখন পোস্ট অফিসের ছুটির পর বাড়ী ফিরি, ঘামে ভেজা মনটা কোথায় যে হারায়…। এতদিনেও অভ্যাস হলোনা। হুঁ, কি আর করি। বুড়িদের বাড়ীর পেছনে, মিত্তিরদের চার তলা বাড়ি। মনে পড়ে তোমার? রোজ দেখি, শেষ বিকেলে কমলা রঙের সূর্য্যটা, আস্তে আস্তে লুকিয়ে পড়ে মিত্তিরদের বাড়ীর পেছনে। নরম আলোয় মনটা কোথায় যেনো পালাই পালাই করে। তোমার কথা মনে হয়।হালকা হাওয়ায় গেটের পাশে দাঁড়াই কিছুক্ষন। মাধবী লতার শিরায় শিরায় গুচ্ছ ফুল, নড়ে চড়ে আমার খোঁজ নেয় বোধ হয়। মনে মনে হাসি। গেট খুলতেই মুন্নিটা ছুটে আসে। কোথায় থাকে সারাদিন কে জানে, জানো ..ওর চারটে বাচ্চা হয়েছে ধবধবে সাদা।
এধার ওধার করে বেড়ায়। অনেকদিন অনেক কিছু লিখতে চেয়েও, লিখতে পারিনি। রোজ ভাবি দপ্তরে এতো লোকের চিঠি আসে, শুধু তোমার….
তুমি কেমন আছো? ভালো তো? এত বছরেও ভুলতে পারলাম নাগো। খুব ইচ্ছকরে, তোমার সংসার টা দেখে আসি। তুমি চাওনি আমায়, এটাই সত্যি, আমার ভালোবাসার মনটা বুঝতেই পারেনি তা। তোমার গানের কলিতে ছিলো অন্য ভাঁজ।
রডোডেনড্রনের মুক্ত শাখায়, লালের গুচ্ছ, তৃতীয়ার চাঁদ, বড়ো আবেগী, ছোঁয়া কি যায় বলো? কি ভীষণ বোকামি ছিলো আমার। সে দিন ফিরিয়ে দিয়েছিলে, বলেছিলে তোমার উঠোন আমার জন্য নয়। কলমিলতার জাল বুনেছিলে সেখানে, সুন্দর, তোমার নিপাট ভালোলাগা। অসম্ভব যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গিয়েছিলাম। ধীরে ধীরে বয়ে চললাম, আমারএকাকীপথে……। শুধু নিজের করে রেখেছিলাম, আমার বিশ্বাস।
            
তারপর ……
ক্ষয় হতে হতে, আঘাতে ভাঙতে ভাঙতে, আমার
আদরের বিশ্বাসেও পড়লো টান,... পড়ে থাকলো বোবা চাউনি, আর বিস্ময়। তুমি ঘর বসালে তাও জানলাম মিনুর কাছে। কেনো বলতো আমায় বলতে পারোনি। 
কাঁপা গলায় আজকাল মাঝে মাঝে গাইতে ইচ্ছে করে 
"এই করেছো ভালো নিঠুর হে।" কাছে পেলে হয়তো এতটা উতলা লাগতোনা, হয়তো ভালোবাসাতেও খাদ জমতো। এখনো তুমি গান গাও, আগের মতো। 
চিঠি লিখতে লিখতে চোখের সাথে সাথে আকাশেও বেশ মেঘ করেছে। নামুক বৃষ্টি, আজ ভিজবো। মনটাকে একটু ধোওয়া দরকার।চোখের জলটা বড্ডো
নোনতা, তুমি তো জানোই আমি একটুও নোনতা ভালবাসিনা। চোখের জল সে কথা বুঝলে তো!
ফোন করবো ভাবি, কিন্তু মনের কথা কি বলতে পারি বলো। তুমি তো একটা … না থাক। অপেক্ষাতে দিন কাটে, ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ রেখে সংখ্যা কমাতে থাকি, বিজয়া, আর, নতুন বছরের। হোয়াটস অ্যাপ এ পাবো তোমার  ফরওয়ার্ডেড ম্যাসেজ। জানি দায়সারা,
তবুও।  এটা তোমায় লেখা ১০০ নম্বর চিঠি। কাল ছুটি
নিয়েছি, তোমার জন্মদিন, দক্ষিণেশ্বর যাবো। মায়ের কাছে, প্রণাম সেরে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেব আমার চিঠির বোঝা। আবার নতুন করে লিখবো। আগের লেখা গুলো যখন ভাসিয়ে ছিলাম, কি সুন্দর খানিক ভেসে টুপ করে চলে গেলো মা গঙ্গার পোস্ট অফিসে। 
বাইরে বৃষ্টিটা একটু ধরেছে। আজ কিছু খওয়া হয়নি। দেখি কি ব্যবস্থা করি খাওয়ার। জানো একটা গান মনে আসছে- "আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনা।"ভালো থেকো। 
          ইতি…. আমি।








মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল সংখ্যা || ৪ ফাল্গুন ১৪৩০ || ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪