ক্রীড়া সমাচার
দ্য মিরাকেল অব বার্ন : মিরাকেল নাকি অতি মানবীয় এক কামব্যাক?
জা হি দ হা সা ন রা জু
এই যুগে যদি কাউকে বলা হয় হাঙ্গেরিকে জার্মানি হারিয়েছে এমন একটা ম্যাচকে ইতিহাসের সেরা মিরাকেল বা আপসেট বলা হয়, এটা কেউ বিশ্বাস করবে? বিশ্বাস না করলেও এটাই সত্য। এই মিরাকেল ঘটেছিল ১৯৫৪ সালের আজকের এই দিনে, অর্থাৎ ৪ঠা জুলাই। খোদ জার্মানরাই এটাকে 'মিরাকেল অব বার্ন' বলে!
কেন এটি মিরাকেল? হাঙ্গেরির ওই দলটাকে তখন বলা হত 'মাইটি ম্যাগিয়ার্স'। ফেরেঙ্ক পুসকাস, জোলতান জিবোর, স্যান্দর ককসিস, ন্যান্দর হিদেকুটির মতো তারকায় ঠাসা দল হাঙ্গেরি। শুধু যে তারকায় ঠাসা তা-ই নয়, পারফরম্যান্সও অতি মানবীয়। হাঙ্গেরির রোড টু ফাইনালের ফলাফলের দিকে তাকালে বোঝা যায় দলটা কেমন ছিল। গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৯-০, জার্মানিকে ৮-৩ গোলে উড়িয়ে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে ৪-২, সেমি ফাইনালে উরুগুয়ের বিপক্ষে ৪-২ গোলের বড় জয় নিয়ে ফাইনালে উঠেছিল। হাঙ্গেরির এই অপ্রতিরোধ্য অবস্থা বিশ্বকাপের কয়েক বছর আগে থেকেই বহাল ছিল। যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই হিউমিলিয়েট করেছে। ফুটবলে তখন কেবল মাইটি ম্যাগিয়ার্সের রাজত্ব। ওদিকে জার্মানির অবস্থা নাজেহাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯৫০ বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ থাকার পরে ১৯৫৪ সালে আবার হাজির হয়েছে। তাও সবাই খুব প্রফেশনাল না!
কেন এটি অতি মানবীয় কামব্যাক? এই ম্যাচটা দুটো দিক থেকেই দুর্দান্ত এক কামব্যাক। প্রথমটা হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয় থেকে শুরু করে পরবর্তীতে জার্মানির দুটো ভাগে আলাদা হয়ে যাওয়া এবং বিশ্বযুদ্ধে নেতিবাচক অবস্থানের কারণে ১৯৫০ সালে নিষিদ্ধ থাকার পরে বিশ্ব দরবারে দেশ হিসেবে, জাতি হিসেবে আবার নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার বেশ বড় একটা মঞ্চ ছিল ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপ। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরে প্রথম উপস্থিতিতেই চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা নিঃসন্দেহে দুর্দান্ত কামব্যাক।
কামব্যাকের দ্বিতীয় দিকটি হল মাইটি ম্যাগিয়ার্সের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বেই ৮ গোল হজম করা জার্মানি ফাইনালেও প্রথম ১০ মিনিটেই ২-০ গোলে পিছিয়ে গেল। ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার নজির ফুটবলে আপনি অনেক পাবেন। কিন্তু এটার সাথে তুলনা করার আগে কিছু বিষয় ভাবতে হবে। প্রথমত, মঞ্চটা বিশ্বকাপ ফাইনালের মঞ্চ। বাড়তি চাপ থাকাটা স্বাভাবিক। দ্বিতীয়ত, প্রতিপক্ষ শক্তিমত্তায় যোজন যোজন এগিয়ে। তৃতীয়ত, এদের বিপক্ষেই গ্রুপ পর্বে ৮ গোল হজম করেছে। সুতরাং, প্রথম ১০ মিনিটেই ২ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরে ফুটবল সমর্থকদের চোখে বিশেষ করে জার্মান সমর্থকদের মধ্যে গ্রুপ পর্বের হিউমিলিয়েশনের পুনরাবৃত্তির শঙ্কা তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক ছিল। জার্মান ফুটবলারদের সাইকোলজির উপরেও প্রচণ্ড রকমের চাপ সৃষ্টি করাটাও স্বাভাবিক ছিল। সেই অবস্থা থেকে বাকি ম্যাচে গোল হজম না করে তিনটা গোল দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা অবিশ্বাস্য ছিল। জয়সূচক গোলসহ হেলমুট রানের জোড়া গোল জার্মানিকে জিততে সহায়তা করেছে। তবে উল্লেখ করবার মতো আরও একটা বিষয় রয়েছে। বাকি ম্যাচেও হাঙ্গেরির মুহুর্মুহু আক্রমণকে প্রতিহত করার ক্রেডিট জার্মান গোলকিপারকে না দিলে সেটা পাপ হবে। কেননা জার্মানরা জিতলেও পুরো ম্যাচে আক্রমণে হাঙ্গেরি ডমিনেট করেছে।
রাজনীতি, অর্থনীতিতে জার্মানদের কামব্যাকের অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে। তবে দেশ হিসেবে, জাতি হিসেবে জার্মানদের কামব্যাক গল্পের মুকুটে ১৯৫৪ সালের এই মিরাকেল অন্যতম সেরা পালক হিসেবে বিবেচিত হবে।
আপনি বরাবর ই ভালো লিখেন!
উত্তরমুছুনআমি আপনার লেখুনির ভক্ত