রম্য রচনা
অপয়া জামাইষষ্ঠী
অ শো ক বো স (দে ব ব্র ত )
মন্টুদার অফিস একসময় শিয়ালদাতে ছিল। এখন উল্টোডাঙ্গায়। কাকতালিয়ভাবে, শ্বশুরবাড়িও সেখানে। আাজ জামাইষষ্ঠী। আজ ছুটি নিয়েছেন বটে, কিন্তু উল্টোডাঙ্গায় আজও যেতে হবে। কেন যেতে হবে? মন্টুদা বিবাহিত, পাঠকরা বুদ্ধিমান, তাই কারণটা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। বাসে চেপে বৌদিকে নিয়ে বেলঘরিয়া স্টেশনের দিকে চলেছেন সকাল সকাল।
এবার আসি বৌদির কথায়। সাজতে ভালবাসেন খুব। যারা বলবেন, বাপের বাড়িইতো যাবেন, তাতে এত সাজগোজের কী আছে! তাদেরকে বলি, যাতায়াতের পথে বাপেরবাড়ির লোকজন থাকেনা। পরনে তার একদম নতুন, পাটভাঙ্গা ঝলমলে শাড়ি। এই প্রসঙ্গে বলি, নতুন শাড়ি পরার আগে পর্যন্ত দাদা জানতে পারেন না যে বৌদির এরকম একটা শাড়ি ছিল। এটা বোধহয় বা নিরুপায় হয়ে সারপ্রাইজ দেওয়া...হয়তো...। সে যাইহোক, গলায় বেশভারী একটি সোনার হারও আছে। জীবনে কিছু দেননি, এই অপবাদ শুনতে শুনতে শেষে অর্ডার দিয়ে বউয়ের জন্য এই হারটি বানিয়ে দিয়েছিলেন মন্টুদা। একদম লেটেস্ট ডিজাইন, আর কারও গলায় এরকম নকশার হার দেখা যাবেনা। অন্তত মন্টুদা এরকম দাবী করেছেন।
বাসে বেশ ভিড় ছিল। কিছুপথ চলার পর এক ভদ্রমহিলার গলার দিকে নজর যেতেই ভুরু কুচকে গেল বৌদির। তার অনেক দিনের বিশ্বাস, মন্টুদা একজন মিথ্যুক টাইপের স্বামী কিন্ত হাতেনাতে প্রমাণের অভাবে, তার সেই
আ-বিবাহ লালিত বিশ্বাস স্বীকৃতি পায়নি। আজ বুঝি অপেক্ষার শেষ হল। তিনি আজ বরের মিথ্যেবুলির প্রমাণ পেয়েছেন। যাইহোক, চুরি ধরার রাগ চেপে, পরিস্থিতি মেনে চাপা গলায় উনি বললেন: কই, তুমি যে বললে, আমাকে একদম লেটেস্ট ডিজাইনের হার বানিয়ে দিয়েছ, ওই চেয়ে দেখ, ঐ ভদ্রমহিলার গলায় ঠিক আমার মত হার....আরে, ঐ যে ঐ ভদ্রমহিলা, বাস থেকে নেমে যাচ্ছেন.....
মন্টুদাও দেখতে পেলেন হার সহ ভদ্রমহিলাটিকে, এবং সেই সঙ্গে আঁতকে উঠে দেখলেন যে তার বউ-এর গলার হারটি নেই.....
মন্টুদা: আরে বোকা, ওটা তোমার হারটাই, তোমার গলা থেকে খুলে নিয়ে চলে গেছে, কী কাণ্ড! তুমি বুঝতেও পারলেনা..... ধর্ ধর্ ধর্ ধর্....
আর ধর্ ধর্, ততক্ষণে সেই ভদ্রচোরমহিলা বাস থেকে নেমে হাওয়া।
যাইহোক অবশেষে বুকের উপরে ঝোলা হার হারানোর জ্বালা বুকেই চেপে রেখে বৌদি অকালবিধ্বস্ত মন্টুদাকে নিয়ে স্টেশনে পৌঁছলেন।
বৌদি খুব একটা বাইরে বেরননা। তাই, অভিজ্ঞতার অভাব। ঘরের চেনা পরিবেশে চোখ-কান বুজে চলার অভ্যাসকে যে বাইরের জগতে অসাবধানতা বলে, সেটা তার জানা থাকবে কি করে! ফলস্বরূপ, তিনি আবার ভুল করলেন। এবার মন্টুদা কিছু বুঝে উঠতে পারার আগেই তিনি শিয়ালদাগামী এমন একটি ট্রেনে ঝট করে উঠে পড়লেন, যেটা উল্টোডাঙ্গায় থামেনা। সোজা শিয়ালদা। মন্টুদা বৌদিকে এরজন্য অনেক কিছুই শোনাবেন, সেটা সবার জানা। ওসব কথায় তাই আর যাচ্ছিনা। শুধু একটা কথাই বলি, যা উনি বারবার বলছিলেন: আমার মত একজন সৎ এবং ভালো মানুষের কপালে একটু সুখ জোটেনি তোমার মত বৌ জুটেছে বলে...
হ্যাঁ তার দুর্ভোগের আরো বাকি ছিল। যখন তারা শিয়ালদায় নেমে উল্টোডাঙ্গায় ফেরার ট্রেনের খোঁজ করছিলেন, একটি লোক এসে খপ করে মন্টুদা হাত চেপে ধরলেন এবং চিৎকার করে উঠলেন: কী দাদা, আামার কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা ধার নিলেন বৌদিকে হার কিনে দেবেন, কিছুটাকা কম পড়ছিল বলে, আর তারপর ১ বছর বেপাত্তা!? শিয়ালদা চত্তরেই দেখিনা! ফোনও সুইচডঅফ করে রেখেছেন! আামার শিয়ালদার এই দোকানে বারবার আসতেন আপনি। এত বন্ধুত্ব হয়ে গেছিল, বিশ্বাস করেছিলাম, এই তার প্রতিদান দিলেন!??
অবশেষে আজ ১ বছরের পুরোণো ধার শোধ করে, মন্টুদা নিজেকে আবার সৎ এবং ভালোমানুষ প্রমাণ করলেন!!!! বৌদির সাথে সাথে এরকম একটি জামাইষষ্ঠীও তার কপালে জুটবে, ভাবতে পারেননি সৎ এবং ভালোমানুষ মন্টুদা!
আর বৌদি, তিনি তার স্বামীর সম্বন্ধে এমন একটি প্রমাণ পেলেন, যা তিনি কোনদিনও বিশ্বাস করতেন না।
বৌ
চ ন্দ ন চ ক্র ব র্তী
"দাদা কেমন আছেন" ?
"আর দাদা গেলেই হয়" !
দুই ভদ্রলোকের মধ্যে কথা হচ্ছিল। দাঁড়িয়ে গেলাম।
"কেন অসুবিধা কি"?
"কি যে বলেন! কোথাও তো সুবিধা দেখি না"!
"কি রকম"?
"যেমন ধরুন, ইচ্ছা হল, একটু মাংস খাবো। ডাক্তারের বারণ! ইচ্ছা হল একটু মিষ্টি খাই। ডাক্তারের বারণ! তা ডাক্তারকে গুলি মেরে চালানো যায়। কিন্তু বউ যে হেড দিদিমণি! অথচ দেখুন আপনার বৌদি বাজারে গিয়ে ফুচকা সাটিয়ে আসে! তখন কিছু বললে বলবে ডাক্তাররা ওসব বলে। ওনার কিন্তু গ্যাসের ব্যাথা ওঠে। নেই নেই করে মাসে মোটা টাকার ওষুধ লাগে।
"আচ্ছা আপনার বউ, মানে আমার বৌদি, কোন স্কুলে ছিলেন"?
"না না উনি কোন স্কুলে টুলে ছিলেন না"!
"তাহলে উনি হেড দিদিমণি হলেন কি করে?
আর দাঁড়ালাম না। আমার যেটা মনে হয় মেয়েদের মধ্যে মাতৃত্বের কারণেই একজন হেড দিদিমণি লুকিয়ে থাকে। নইলে সংসারটা শ্মশান হয়ে যেত!!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন