কবিতা
মেঘমল্লার সমগ্র- প্রথম পর্ব থেকে সমাপ্তি পর্ব
স র্বা ণী রি ঙ্কু গো স্বা মী
মেঘমল্লার-১
ক বাবু তো অপেক্ষাতে আছেন
মেঘ করলেই আপিস নেবেন ছুটি
আলুর চপ আর বেলি ফুলের মালা
কমলিকার কাছে গুটিগুটি
খ এর কাছে মেঘের মানে অন্য
কিলোদশেক বেশী ব্যাসন লাগে
এক দুটো দিন একটু সময় নেই
বন্ধ হয়না রাত দশটার আগে
গ ভেবেছে মেঘের দেখা পেলে
মুড়ো ঝ্যাঁটায় ভাঙবে কোমর তার
দশবাড়িতে ভিজেভিজে যাওয়া
দুহাত জোড়া হাজাতে জেরবার
ঘ এর আবার অন্যরকম জ্বালা
মেঘের মানে নতুন পলিথিন
বৃষ্টি হলেই ছাদের ফাটল থেকে
জাগন্ত রাত আর ঘুমন্ত দিন
ঙ ভাবছে লিখবে এবার ঠিক
চিঠির ভাষায় নিজস্ব মেঘদূত
চ কিন্তু মেঘলা সন্ধে হলেই
কোণায় কোণায় লক্ষ্য করে, ভূত!
ছ এর কথা কে আর মনে করে
টিউশনিতে যায়না কামাই করা
মাসের শেষে ঐ কটা টাকাতে
এক আধটা দিন ডাল, পেঁয়াজের বড়া
জ এর এখন নতুন বিয়ে, তাই
গুনগুনিয়ে গলার ভেতর সুর
সে জানে না, মেঘের মতো সেও
ঝরতে ঝরতে চলবে বহুদূর
মেঘ রাখেনা এসব কিছুর খোঁজ
আপনমনে আকাশটাতে থাকে
অনেকখানি বাষ্প জমে গেলে
ঝরতে হবে, ঝরতেই হয় তাকে!
মেঘমল্লার ২
খোকাবাবু ভাবছে শুয়ে শুয়ে
ঝ এর কথা খুকি বললো কই
আদ্ধেকটা মেঘমল্লার লিখে
সংসারেতে ব্যস্ত হয়ে রই
ঞ র কথা এবার নাহয় বলি
মেঘমানেই চৌকি উঁচু করা
খাটের ওপর ছিষ্টির সংসার
তার ওপরে পোষা বেড়ালেরা
ট ভেবেছে এবার বৃষ্টি হলেই
শিখে নেবে কাগজটা ভাঁজ করে
কেমন করে নৌকো বানায় দাদা
ভাসিয়ে দেবে ড্রেনের ঐ জোয়ারে
ঠ এর আবার ভীষণই শীত করে
বৃষ্টি হলেই কাঁপিয়ে আসে জ্বর
ছেঁড়া কাঁথায় ঠকঠকিয়ে কেঁপে
শাপমণ্যি, এবং অতঃপর
ড ভাবছে মেঘ করলেই কেলো
ফুটপাতেতে দোকান বন্ধ তবে
আর কটা দিন হলেই মাসের শেষ
রেশন তোলা, কি ব্যবস্থা হবে!
ঢ তো আছেন ফুর্তিতেই বেশ
চলছে ছুটি জমাটি কারবার
মেঘ মানেই ঘরে শুয়ে বসে
জোম্যাটোতে খাবার আবদার
ণ এর কাছে মেঘ মানে দুত্তোর
গুছিয়ে রাখা ভাবনারা রংরুট
বুকের ভেতর মনখারাপির বাসা
হাতের ভেতর বিষন্ন চিরকুট
ত এর আবার মেঘ দেখলেই ব্যস্
যতোরকম মনখারাপের কথা
কোথা থেকে স্মৃতির কবর খুঁড়ে
দুঃখগুলো, বুকের ভেতর ব্যথা
থ জানে সব শুকনো কাপড় ছাদে
বাতের ব্যথায় উঠতে কষ্ট হয়
আচারগুলো বয়েম ভর্তি রোদে
বৃষ্টি হলেই সেসব অপচয়
মেঘ লিখেছে কতো না যুগ ধরে
অভিজ্ঞতার আজব উপাখ্যান
আমরা ভাবি, আমরা বুঝি লিখি
মেঘমল্লার এবং নতুন গান!
মেঘমল্লার ৩
দ ভেবেছে মেঘ করেছে যেই
লোকাল ট্রেনের দমবন্ধ ভীড়ে
বার্তাটি আজ পৌঁছে দিতে হবে
"পাখি হবো, তোমার চোখের নীড়ে"
ধ এর আবার আজকে দারুণ কাজ
পিঠে বোঝাই মালের বিশাল ব্যাগ
বৃষ্টি হলেও ডেলিভারি চাই
নাহলেই তো মালিক বলবে, ভাগ!
দন্ত ন হেসেই কুটিপাটি
বৃষ্টি হলেই ভাসবে গলির পেট
হাঁড়িকুঁড়ি জাহাজ তখন সব
বৃষ্টি মানেই বন্ধ স্কুলের গেট
প এর মনে আশঙ্কা আর ভয়
মেঘ জমলে বৃষ্টি নামায় যদি
মিড ডে মিলের খাবার আশা শেষ
বুকের ভেতর খিদের একটা নদী
ফ ভেবেছে গানের স্যারের মুখ
চশমাকাঁচের আড়ালে ঐ চোখ
বৃষ্টি হলে ভাসুক চারিদিকে
প্রেমের গান একটা সত্যি হোক!
ব এর কাছে মেঘ মানে ঝামেলা
একটা জামা কেচে পরতে হয়
আকাশনীল ঐ বাধ্যতা পোশাকে
পেট তো চলে, মনেতে সংশয়
ভ এর কাছে জীবন মানেই ভুল
আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা ফাঁস
তার ওপরে অফিস ফেরত ভীড়ে
কাক ভেজা তো, সাড়ে সর্বনাশ
ম ভাবে ঐ আকাশজুড়ে মেঘ
বাড়ি ফিরুক সকলে ঠিকঠাক
তারপরে নয় সারাটা রাত ধরে
রিমঝিমিয়ে বৃষ্টি হয়ে যাক
মেঘ ভেসে যায় আপনমনে তার
ইতিউতি মারছে উঁকিঝুঁকি
ঠিক মেপে নেয় কতোখানি চাওয়া
রইলো কোথায় চাওয়ার কতো ফাঁকি!
মেঘমল্লার ৪
য ভেবেছেন বর্ণমালা জুড়ে
ট্যাক্সোবাবুর কথা কোথাও নেই
ফাইলটিতে ডুবিয়ে রেখে মাথা
মনেমনে পদ্য লেখেন তাই
র এর আজকে ভীষণ অভিমান
আজকে তেনার জন্মদিনটি ছিলো
যথারীতি বরের মনে নেই
হোয়াটস অ্যাপে ঝগড়াঝাঁটি হলো
ল এর মনের আকাশে দুই ঘুড়ি
উড়ে উড়ে প্যাঁচ খেলছে খালি
মেঘ মানেই ছোট্ট বেলার ছাদে
ভোকাট্টায় প্রচন্ড হাততালি
ব ভাবছেন যমজ জনের কথা
মেঘ জমলে তারও কষ্ট হয়?
ছোটোবেলার কথা মনে পড়ে
ভিজে ফেরা, হোমটাস্কের ভয়
তালব্য শ দিব্বি থাকেন একা
মেসের ঘরের চৌকিতে সংসার
বৃষ্টি হলে বন্ধ রুটির দোকান
জল পেটেতেই ঘুমোতে হয় তাঁর
মূর্ধণ্য ষ এর মাটির বাড়ি
বৃষ্টি হলেই দেওয়াল ধ্বসার ভয়
ভাঙন নিয়ে নদী আসছে বুঝি
ঘুমের ভেতর মনেতে সংশয়
দন্ত্য স ট্রাফিক মোড়ে মোড়ে
হেঁকে বেড়ায়,"বেলী ফুলের মালাআআ!"
গাড়ির কাঁচটি আধখানা যেই নামে
মনের ভেতর ঝাড়বাতি হয় জ্বালা
হ বুঝেছে সারাজীবন ধরে
মেঘ মানেই কেবল ভেসে যাওয়া
এক জায়গায় থাকার স্বপ্ন তাই
তার কাছেতে অনেকখানি পাওয়া
ক্ষ জানে বেশ মেঘ করলেই কাশি
গুমোট হয়ে হাঁপানি তার বুকে
গরম হলেও রোদই ভালো তার
পুড়ে গিয়েই সে তো ভালো থাকে
মেঘ জানে, সে একাই একশোজন
সব না পাওয়া ধুইয়ে দিতে পারে
চুপটি করে তাই দেখে যায় আজ
কতটা কার ক্ষোভ জমা ঐ পাড়ে!
মেঘমল্লার ৫
ড় -র আবার হাঁটুর ভেতর মাথা
পলিথিনের এক ফোঁটা ঐ ঘর
বৃষ্টি এলে সব ভেসে যায় সব
দাঁড়িয়ে কাটে রাতটুকু তারপর
ঢ় তাইতো দেখে মেঘ
সারাটা দিন নজর করে খুব
কালো হয়ে এলেই গ্যারেজ খুঁজে
লেজের ভেতর মুখ লুকিয়ে, ডুব
অন্তঃস্থ য় এর ভালো থাকা
রোদ বৃষ্টি দুই ই লাগে বেশ
ছাতা বেচেই ঘর চলে যে তার
মেঘ হলেও নেই উদ্বেগ রেশ
খন্ড ৎ বাদ পড়ছেন দেখে
অভিমানে দুচোখ ছলছল
মেঘ জমেছে অমনি মনেমনে
না চাইতেই দু এক ফোঁটা জল
অনুস্বরটি সানুনাসিক স্বরে
বলে যাচ্ছে, "আজকে মাংস খাবো"
বিসর্গটি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
ভাবছে,
"কোথায় এতো টাকা পাবো!"
চন্দ্রবিন্দু জনতা আমরাও
মেঘ দেখলেই জানলাকপাট আঁটি
অসময়ের বৃষ্টি ভেজায় যদি
যাবতীয় শুকনো বুকের মাটি!
মেঘমল্লার সমাপ্তি পর্ব
এইবছরে মেঘের মানে অন্য
এইবছরে মেঘের মানে ভয়
আঁকড়ে ধরে স্থাবরটুকু বাঁচি
আবার যদি ঝড়ের মাতন হয়
মেঘ কিন্তু আপনমনেই থাকে
কখন আনে বৃষ্টি কখন ঝড়
সে জানে তো বৃষ্টি তুফান সবই
জীবনজুড়ে চলেই পরেরপর
সামলে নিতে সবাই শিখে যায়
গড়তে শেখার জন্য ঝড়ও আসে
যাতে সবাই যেটুকু যার আছে
সেইটুকুকে ভীষণ ভালোবাসে!
কবিতার অন্বেষণে
প লা শ বি শ্বা স
(২৩)
মনটি আমার জলের মতো
তোমার হৃদ সরোবর রাখবে যেমন প্রসারিত
আমার ভালোবাসা তেমন আকারই নেবে
ঘোলা না টলটলে
কীসের ভাবনা ভাবো অতশত
(২৪)
লুকিয়ে রেখেছো নিজেকে
মেঘের আড়ালে মায়া সন্ধ্যার সাজে
বিদ্যুৎপর্ণা হয়ে চকিত জানান দিয়ে যাও ক্ষণে ক্ষণে
তুমি আছো আমাতেই
ফাগুনের আগুন জ্বেলে দিয়ে
.
(২৫)
সকাল থেকে সাঁঝ
অনেক অনেক কাজের মাঝে
মন কেমনের গল্প লেখো তুমি
খোলা চোখে দিন রাত্তির এক হয়ে যায়
কবিতা শুধু তুমি
(২৬)
যে আগুন এনেছো বুকে ফাগুনের
যাবে কী করে আমায় ফেলে
সাত সমুদ্র তেরো নদী পারে একাকী
একদিন আমি শীতল হবো
তোমার আঁচলে মাথা রেখে অশ্বত্থ ছায়ে
(২৭)
রাখা আছে বুকের মাঝে আলতাছাপ কোমল পা
ষোড়শী মনের হাসি দু'টো নয়নে
অসময়ে দিগন্তে হাঁটে প্রেম
দিয়ো না বাধা কথার ছলে অবাক করে
কবিতার কথা টেনে
(২৮)
বলোতো কোন ভুবনডাঙার মাঠে
কথা হবে দু'জনার মুখোমুখি বসে
হেঁটে যাবো পায়ে পায়ে বিকেলে সূর্যের সাথে
অনন্ত প্রেম শূন্যতা দেবে ঢেকে
উষ্ণতায় ছুঁয়ে নেবো ঠোঁট
গীতিকবিতাগুচ্ছ
আ শ রা ফ হা য় দা র
১)
শারদীয় আকাশে মায়ের আগমন
আলোর বাঁশি বাজে তিথি লগন।।
শারদীয় আকাশে-
রাতের শিশিরে সরোবরে ফুটিল পদ্ম
ভোরের আলোয় শিউলি দোলে সদ্য।।
মায়ের পুষ্প বরণে জেগে আছে প্রভাত
আজই জগন্ময়ী দুর্গা মায়ের আগমন।
শারদীয় আকাশে-
শিউলি জবা পদ্ম ফুলের হাসি
মুখরিত ভুবনমোহিনী হাসি।।
আকাশ পথে শুনি পদধ্বনির রথ
জগন্ময়ী দুর্গা মায়ের শুভ আগমন।
শারদীয় আকাশে-
২)
জানি গো তুমি আসবে না ফিরে
তবুও পথ চাওয়া তোমায় ঘিরে!!
জানি তুমি আসবে-
কেনো ভালবেসে সেদিন বুকে নীলে
আজ কেনো পথের বাঁকে ফিলে গেলে।।
আমার মনের ব্যাথা তো বুঝলে না
তবুও তোমার আশায় বসে থাকা নীড়ে!
জানি তুমি আসবে-
আমি তো ছিলাম একা নিজের মতো
কেনো প্রেমে জাগালে মজনুর মতো।।
জানি গো তুমি আর ভালবাসবে না
আসবে না ফিরে জীবন নদীর তীরে
তবুও বৃথা বসে থাকা এই আঁধারে!
জানি তুমি আসবে-
৩)
আমার মনের আকাশ বিষন্ন
জীবনে কালবৈশাখী আসন্ন!!
আমার মনের-
বেদনার আগুনে পুড়ছে পৃথিবী
জেগে আছে হৃদয়ে সেই ছবি।।
কেনো ভুলতে পারিনা স্মৃতিময়
অতীত আমার যে বড় বিষন্ন!
আমার মনের-
জানি তো সে আসবে না ফিরে
তবুও পথ চাওয়া তারই ঘিরে।।
দুঃখের স্রোতে জীবন গীতিময়
আজ হৃদয়ের আকাশ বিষন্ন!
আমার মনের-
৪)
জানিনা কেনো ভালবেসে বুকে নিয়ে ছিলে
আজ জানিনা কোন অপরাধে
আমায় পথের প্রান্তে ফেলে গেলে !!
জানিনা কেনো ------
কেনো দীপ নিভালে পথের বাঁকে
কেনো জীবন আঁধারে দিলে ঢেকে!!
পথের মাঝে এই আঁধারে একা থাকা
কত যে ব্যাথা, কত যে জ্বালা
তুমি তো বুঝলে না, তুমি তো জানলে না
শুধু দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে গেলে!
জানিনা কেনো-
আমি আজও তোমারই আছি
শয়নে স্বপনে জাগরণে রয়েছি!!
এ ব্যাথার আগুন বুঝবে না তুমি
তোমার পথ চেয়ে থাকি আমি
জানি আসবে না, নাম ধরে ডাকবে না
তবুও এই পথ চাওয়া অশ্রু ফেলে!
জানিনা কেনো-
৫)
তুমি খুঁজবে আমায় খুঁজবে
যে দিন থাকবো না এই ভবে।।
তুমি খুঁজবে-
কাঁদবে হারানো বেদনায়
অশ্রু ঝরাবে আঁখি পাতায়।।
হৃদয়ে শুধু আকুলতা নিয়ে
সেদিন আমায় খুঁজবে নীরবে।
তুমি খুঁজবে-
তখন প্রেমে গাঁথুনি তারার মালা
কেনো দিতে এলে ফুল এ বেলা!
ঝরাপাতার মতো ব্যাথা নিয়ে
চিরদিন আমার পথ চেয়ে রবে!
তুমি খুঁজবে-
চাওয়া পাওয়া
সৌ মে ন দ ত্ত
বেলা গড়িয়ে বিকেল,
সূর্য ডোবার অপেক্ষায়।
জীবনের অনেক আনন্দ নিমেষেই নিকষকালো অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়,
তা বুঝতেই মন পা দেয় নতুন নতুন চক্রবুহ্যে।
হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে কখনও কখনও হয়তো কিছু পায়,
হয়তো বা কিছু না পেয়েও হতাশাকে লুকিয়ে রাখে গহীন গহ্বরে।
মৃদু হাসিতেই আগলে রাখে সর্বস্ব।
প্রশ্ন অনেক জমা হয়,
অনেক উত্তর ও আড়িপাতে,
কিন্তু মেলে না সহজেই।
বালির বাঁধ, নিমেষেই গুঁড়িয়ে যায়, মাড়িয়ে যায়। আকস্মিকতায় কিছু প্রশ্নের জন্ম হয়,
আকস্মিক ভাবেই আবার মিলিয়ে যায়,
বাতাসে শুধু মৃদুমন্দ গন্ধ রয়ে যায়।
যত না পাওয়া, তার অধিক চাওয়া।
হিসেবের বড়ই গরমিল,
শুধু অবসন্নতা আঁকড়িয়ে বাঁচতে শেখা।
কখনও হারিয়ে যায় অবসাদের অতলান্তে,
কখনও সাঁতার দিই চেনা মুখের মাঝে অচেনা জলছবির স্রোতে।
2)
রাস্তায় শুধু চোখ মেলে দেখো
সব কিছু সহজে পেলে অস্তিত্ব মূল্যহীন হয়ে পড়ে,
কখনও রৌদ্রে পোড়া কিষাণকে দেখো,
গলা হাঁকান হকারকে দেখো,
অফিসে গলাধঃকরণ খাওয়া শ্রমিককে দেখো,
কখনও আগুনে পোড়া ভাঁটা মজুরকে দেখো,
রাস্তায় চোখ মেলে দেখো শুধু, হাজার হাজার লাখো লাখো মুখ অস্তিত্বের লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী।
যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারো, তবেই সাথী পথে নামো।
শর্টকাটে জীবন বাঁচে না, বিপথগামীতা সহজলভ্য,
পছন্দ তোমার আমার, রাস্তায় চোখ মেলে দেখো।
হোঁচট খাবে, হুমড়ি খেয়ে পড়বে, রক্ত ঝরবে, ক্লান্তি আসবে, অবসাদ পিছন টানবে, তুমি শুধু পরোয়া না করে নিজের পথে চলো।
খরায় পুড়বে, বর্ষা মাখবে, শীতল হবে আবার শরীর,
রাস্তায় শুধু চোখ মেলে দেখো।
সবাই প্রতিদ্বন্দ্বী, সবার লক্ষ্যপথ ভিন্ন,
তুমি শুধু ভয় পেয়ো না ভীড় দেখে,
তুমি শুধু আঁতকে উঠো না চেনা মুখ দেখে,
তুমি শুধু পিছুটান ভেবো না লক্ষ ভীড়ে,
রাস্তায় শুধু চোখ মেলে দেখো।
কোথাও আলো নেই, কোথাও অন্ধকার নেই,
সবার খোঁজ পরশপাথর,
সবার খোঁজ মুকুটের,
সবার খোঁজ অল্প সুখের,অল্প আনন্দের,
রাস্তা মেলে না সহজে। বানাও রাস্তা নিজের নিজের,
স্বাধীনতা সহজে আসে না, চলা শুরু করো পিছুটান ভুলে, রাস্তা তোমায় দেবে না দেখা, তুমি বরং নিজেকে পালটে
রাস্তায় শুধু চোখ মেলে দেখো।
আবহ নদী
সো না লী ম ণ্ড ল আ ই চ
শুরু না থাকলে সাড়ার অর্থ মূল্যহীন
অস্বীকার শব্দের আড়ালেই সন্দেহ
পৌঁছে যাওয়ার আগে ঘটনা ঘটে যায়
সিঁড়ি পেরোনো নিয়ে থাকে ধকল
দরজায় টোকা দেয়, খুঁজতে থাকে কারন
এসবের প্রমাণ পত্র বলে নেই কিছু
সে এক টিকটিকি উপসর্গ বুক পর্যন্ত
দেখানো গেল না বুঝি প্রশ্ন ঝুলে
ব্যস্ততার প্রয়োজন কিছুতে শেষ হয়না
চৌকাঠের এপার ওপার বহুত ফারাক।
আবছা ছবি
সো না লী ম ণ্ড ল আ ই চ
সে রাতে কাব্যে কালপুরুষের অচেনা রূপ
ধনুক নামিয়ে রেখে হাতে কলম
তখন চাঁদ-তারা আসরে জ্বলন্ত আলিঙ্গন
পোষা পাতিলে ঘোলা আমানি
অনুর ঘূর্ণী ভরা আকাশ বাতাস একাকার
চলা অচিন দেশের ঝড়ের ঠিকানায়
ডিলিট হল পথের নক্সা নাম পরিচয়
কেটে যায় ধনুর্বিদের বুড়ো আঙুল আচমকা
পথের অনেক উঁচুতে শরীর, ব্যাথায় অবশ
ক্রমে নিঃশ্বাসের কষ্ট বাড়লে নাট্যকার এসে
আমতেলের জার খুলে গন্ধ শোকালে
ঘুমের ভিতর টক ঝাল ও তেলের তুফান ঝাঁঝ
জলের ডুব অতলে এক মরণ দোলা
বাঁচার পণে খাবি খায় উদ্বায়ী ভাবনা
নাট্যকার নাড়ি টিপে গুনে চলে সংলাপের আয়ু।
প্রাপ্তি
দে ব যা নী ঘো ষা ল
ভালবাসা?
সে তো ফড়িং এর মত!
বিশ্রাম নিতে বসে খানিক কোথাও না কোথাও।
তারপর উড়ে যায় চোখের নিমেষে।
কোন্ অগোচরে।
আসলে ভালবাসলে
বিনিময়ে প্রাপ্তির আশা করতে নেই।
অকস্মাৎ অজান্তেই যে সুখকর প্রাপ্তি,
সেইটিই বড় প্রাপ্তি।
সে তুমি ভালবাস আর না বাস।
মায়ার বাঁধন
দে ব যা নী ঘো ষা ল
ভালবাসা তো মায়ায় ভরা।
তাই বুঝি ছিন্ন করতে চাও!
সন্ধ্যা শেষের ঝরা পাতাকে ভুলবো কেমন করে।
যাকে যত্নে বেঁধেছি হৃদয়ে গোপনে!
লালিত করেছি বিশ্বাসী আবেশে!
জন্মের দায়ে হয়েছি পর।
দূরকে কাছে পেয়েছি অভিনীত উপেক্ষায়।
পড়ন্ত বেলায় অভিমানী উপেক্ষাই দূরকে করেছে আপন।
কেমন করে ছিঁড়বো সে বাঁধন??
বলে যেও সখা যাবার কালে।
জানি জানি।
সে উপেক্ষা ছিল একান্ত ভালবাসারই ছলে।
চিতায় দাও কবিতা
শ্যা ম ল খাঁ
কবি,
কার মনে চেতনা জাগাবে তোমার কবিতা?
ঐ দেখো সব হু বাবাজির দল।
সকাল থেকে যে ঝান্ডা হাতে নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায়
গোধূলি পেরোতে না পেরোতেই
কোনো এক গুপ্ত মন্ত্রের ছোঁয়ায়--- ঝান্ডা হয় বদল।
সকালের নীতি আদৰ্শ, নাকি রাতেরটা
কোন মূলমন্ত্রে দীক্ষিত ওরা
জানতে পেরেছো কি?
হয়তো এতদিনে এটা বুঝতে পেরেছো
স্বার্থের বৃত্তটা সম্পূর্ণ করতে
দলে দলে পলে পলে এই ভোল বদল।
অনেকেই বুদ্ধি খরচ করে বলবে
প্রতিবাদে ঝলসে ওঠা
সমাজকে চেতনা বিলানো
সেতো কবিদের কাজ, কলমটা চলুক না।
আমি বলি---
চোখ মেলে তাকানোর দরকারটা কি?
অনিয়ম, অবিচার, বহুরূপতা
সেতো নিয়ম, বিচার, একমুখীতারই উল্টো রূপ,
চাঁদের একটা পিঠ দেখেই তো কাটিয়ে দিলে সারাজীবন।
দেখছো না
স্বেচ্ছায় শৃঙ্খল পরে
দলে দলে ঘুরে বেড়াচ্ছে জীবনহীন মানুষ।
শৃঙ্খলিত জীবনের আনন্দ উপভোগে ব্যস্ত ওরা,
কেন টান দিতে চাও সুখের শৃঙ্খলে?
আবার যারা অপেক্ষায় বসে আছে সাজঘরে,
তারাও জানে
মুখস্থ স্লোগানের মানে---- সহজ উপার্জন।
হাজার পদাঘাতেও যাদের ঘুম ভাঙবেনা
কবির কবিতা তো পালকের সুড়সুড়ি মাত্র,
বন্ধ করো তোমার ঘুম ভাঙানো তিক্ত উপদেশ।
কবি,
তোমার কলমটা এবার ফেলে দাও
স্বেচ্ছামৃত্যুর মিছিলের জোয়ারে
তোমার কবিতায় নিয়ম করে
যে দিন বদলের পূর্বাভাস দিয়ে চলেছো,
তা কোনোমতেই মিলবে না
সেটা ওরা জেনে গেছে।
ওরা চায়
তোমার কলম রক্ত বমি করুক,
দেখতে পাচ্ছো না
কুম্ভকর্ণের পরম শিষ্য হয়ে
দেশবাসী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
কবি, তোমার কি দায়?
কেন তুমি এতো উতলা? তুমিও ঘুমাও ওদের মতো।
ওরা যখন বাধ্য হয়ে তোমাকে জাগাবে
দুচোখ ভরে দেখবে সোনার লঙ্কা পুড়ে শেষ।
তখন তুমি
তোমার সব কবিতা রাবনের চিতায় ফেলে দিয়ে
আবার হেলে দুলে রাম রাজত্বে ফিরে যাবে।
নীরব কারিগর
শ্যা ম ল খাঁ
অন্তঃসলিলার বুকে স্রোতের আনাগোনা
দেখেনি কেউ,... দেখতেও চায় না,
তবু ঢেউ জাগে, তবু ব্যাথা লাগে পাথরের ঘর্ষণে।
সব ঝড় বুকে নিয়ে যে পাখিটা হলো নীড় হারা
সেও আশা নিয়ে বুক বাঁধে।
কোনো এক শান্ত সকালে ঠোঁটে তুলে আনে
এক টুকরো সোনালী খড়।
এরা গড়ে চলে আজীবন
টুপ্ টাপ ঝরে পড়ে শ্রমের নির্যাস,
লাল সুতোর গামছায় রক্তের দাগ
অপ্রকাশিতই থেকে যায়।
অপ্রকাশিত থেকে যায় রক্তিম সূর্যের পিঠে
পিঠ রেখে দিনান্তের লড়াই।
তবুও,... ইতিহাস গড়ার কারিগর এরা নয়
এরা ধর্মের উল্কাপাত দেখতে চায় না,
তার চেয়ে চুন সুরকির আস্তরণ দিয়ে
পৃথিবীর ক্ষতস্থান মেরামত করে বেশী সুখ পায়।
স্ব ইচ্ছায় ডুব দেয় বিক্ষুব্ধ সাগরের বুকে
হারিয়ে গেলেও খবরের শিরোনামে নেই এরা,
মরুপথে নিজের তৃষ্ণার্ত বুক চাপা রেখে
নীরবে মরুদ্যানের খোঁজ করে।
ক্ষুধার্তের আর্ত চিৎকার শুনে ছোটে এরা
মৃত্যুকে বগলে চেপে,
নূতন করে জীবন্ত মানুষের ছবি আঁকবে বলে।
নিজের শরীর থেকে মাটি বের করে
উই ঢিবি গড়ে তোলে,
রত্নাকর কে আশ্রয় দেবে বলে।
আশায় থাকে,... লাল কাপড়ে মোড়া
শ্রমের মহাকাব্য হাতে বাল্মীকির উত্থানের দিনের।
হয়তো ইতিহাস হারিয়ে যায়
ইতিহাসেরই চরম বিশ্বাস ঘাতকতায়।
ধাক্কা খেয়ে খেয়ে তবু এরা বেঁচে থাকে
বীজ বোনে নীরবে ইতিহাসের পাতায় পাতায়।
মানুষ দেখিনি, প্রজাপতি দেখিনি
মৌ সু মী পা ল
মানুষ দেখিনি। প্রজাপতি দেখিনি কতোদিন।
জীবনেও না। প্রকৃতিতেও না।
ফ্ল্যাটের প্রতি ঘুলঘুলিতে টব সাজানো গাছ দেখেছি
থরে থরে।
সৌখিন গাছগুলো অসহায়ের মতো প্রেমহীন নিষ্প্রাণ
সীমাহীন স্পর্ধা নেই দিগন্ত ছোঁবার।
কেউ কেউ স্পর্ধা দেখালেই সংক্ষিপ্ত ছাঁটকাট।
একমুঠো ভেজালি সারযুক্ত মাপা মাটিতে
বাড়বাড়ন্তের বাউন্ডারি।
সবুজেই হলুদের পোকাকাটা পোলিও।।
সেই কবে আকাশ মাটি বাতাস প্রকৃতি দেখেছিল
আমাদের বাপ- ঠাকুরদাদারা।
তার-ও....তার-ও...তার-ও আগের ঠাকুরদাদারা।।
আমরা আস্ত কংক্রিট গিলে ফেলেছি মানুষেরা।
মাটি আকাশকে ঢেকে
মার্বেলের স্লিপারে ঝকঝকে থুতনির বাহাদুরি।
নিজেদের শ্বাসযন্ত্রকে নিজেরাই গিলে খাই রোজ।
সভ্যতা কিনে নিয়েছি বহুমূল্যে লড়াই করে।।
আশ্চর্য ভাবে মাটি চাপা মার্বেলে ____
শিকড় ছড়াতে পারি নি কেউই।
মানুষ আর উদ্ভিদ সময়ের আগেই পঙ্গু হয়ে
অর্ধেক যাপন।
মানুষ নেই। প্রজাপতিও দেখি না কতোদিন।।
রাত শেষে
মৌ সু মী পা ল
পেটের বড় খিদে গো বাবুমশাইরা
চাল ফোটার গন্ধে জিভ লকলক করে।
বিশ্বাস করুন বাবুরা______
বহুমূল্যের লেবেল মার্কা জল খাবার স্বাদ কেমন
জানিনা তা।
পাশের বাড়ির মুখার্জি গিন্নি তো শুনেছি
একশো কুড়ি টাকা বোতলের জল খায়
ওই কি যেন নাম!
আমি আর কি করি বলুন___
ওই কালীতলায় একটা হাতল কল থেকে
বোতল ভরাট করে গতর খোয়াই।
বুকে পেশীতে বড় খিঁচ ধরে, হাঁপ ধরে গো
তবু _____
হামলে পড়া লোকজনের এতোই চাপ যে
কলের মাথাও দু'ফাঁক হয় সময় সময়।
মাছ মাংস না থাক্
আলু, ডাল, চাল _____
বাজারে গিয়ে বেছে বেছে ছাঁটাই সস্তা আলু পাই
পনেরো/কুড়ি টাকায়, দেখি___
বস্তা খানেক নিল চুমকি দিদি
রিক্স করে নিয়ে যাবে ঠুসে ঠুসে
অনেকগুলো পেট আলুর চোকায় আমোদ পায়।।
তবু জানেন বাবুরা _____
রাত শেষ হলে
আমি একটা সূর্য দেখবো বলে রোজ জেগে উঠি।।
রোদচশমা
সো মা ন ন্দী
পিঁচুটি মেঘ সাক্ষী
আলো বিহীন নিরালা বিষাদে
কতকাল আর চোখ ঢেকে রাখা?
আড়ালেতে তার পা টিপে টিপে এ ঘর ও ঘর হাতড়াই ছায়ার ছলনায়,
সাবেক ইতিকথায় মৃত্যু জেনেও।
মড়ার খুলি হাতে দিনকানা বাতাসের চিৎকারে যখন-
ঘুরপাক খায় নর্দমার জল, অমরত্বের বাসনাও নিভিয়ে নেয় বর্ণিকার আলো।
ক্ষয়ে আসা দিনে মুঠো ভরা যামিনী ফুলে ফেঁপে উঠে,
আলোর নিচে ঐ দু'চোখেতে চালায় কঠিন শাসন!
বাইরে যতই আড়ি পাতা থাক পুরাতন ক্ষতেরা যদি চোখ ধুইয়ে দেয় জাতিস্মরের আলোয়,
তবে গোপন প্রশ্রয়ের দুর্ভেদ্য আড়াল ভেঙে স্মৃতিকথা বুকে নিয়ে আজও-
হেঁটে আসে স্বর্গীয় ম্যুরালেরা মিনারের পাদদেশে।
তাইতো নিরক্ষর ছানি পড়া চোখেদের এ নির্জলা উপবাস,
বিশ্বচরাচর কে ফাঁকি দেবে ভেবে যতই ডুবজলে লুকাক অতল গোপন-
তবু রেটিনায় লেগে থাকে অপরাধ বোধ
নিহত যিশুর কঙ্কালের মতো....!
ম্যানহোল
সো মা ন ন্দী
বর্ষীয়সী রাতে পৃথিবীর নিজস্ব বাতাসেরা সুনসান হতেই-
হাতের মুঠোয় নাচা অশোকস্তম্ভের সচ্ছল প্রস্তাব, ঈশ্বরকে নিয়ে চলে মাটি থেকে দূর
অনেক দূর...
কিন্তু মাখা তো হয়নি কভু মাতৃঅঙ্গ তাপ
চন্দনের মতো করে,
তাই বুঝি সেতারের সুতীব্র ঝালার স্নেহেরাও
ঝুঁকে থাকে মমতাময়ীর মতন বাইরের দুয়ারে!
রক্তের লালা কতখানি আর উঠে আসে অক্ষরের মুখে, সুরের মুর্চ্ছনায়!
বৃথাই তন্ন তন্ন করে খোঁজা অন্তরে বাহিরে-
নীচু হয়ে আসে মাথা, ছিঁড়ে যায় সম্ভ্রান্তের মোড়ক
কষ্ট পাচ্ছো ডুবে যাচ্ছো?
শরীর কখনো সামাজিক হয় না।
তাইতো হৃদয়ের গভীরের শুদ্ধ শিল্পের কারুকাজেরা
আজও নক্সা বোনে স্বর্গীয় দূরত্বে...
ভালোবেসে দেখো
কা বে রী রা য় চৌ ধু রী
সূর্যের আলো এসে হৃদয়ের মণিকোঠায়
জ্বালো মনের অতলে গভীরতর আলো
দূর থেকে শুনেছো আছড়ে পড়া ঢেউ-এর উচ্ছ্বাস
বালিয়াড়ি জুড়ে আবেগী স্পন্দনে আলাপন
ভালোবেসে দেখো
পরশমণি ছোঁয়ায় স্বর্গীয় অনুভূতির জাগরণ ঘটে কি না
পৃথিবী আজও সৌন্দর্যের শিখরে করে অমৃতের সন্ধান
ভালোবাসা পেলে হিয়ার মাঝে তরঙ্গ উত্তাল
প্রেমের আবীর ছোঁয়ায় সুতৃপ্ত নয়ন তোমার।
সময়ের অভ্যাসে
কা বে রী রা য় চৌ ধু রী
পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে পাল্টে যাচ্ছে
মানিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা অনবরত
আয়নায় নিজেকে অচেনা লাগে
পরিণতির সঙ্গে মিশে যায় অভিজ্ঞতা
চোখদুটো দেখে নেয় জগৎ সংসার
ভালোবাসার পৃথিবীটা ঝাপসা কাচ
সময়ের সাথে পরিবর্তন আশেপাশে
মায়া, মমতা যাপনের অনুষঙ্গ মাত্র
সময়ের অভ্যাসে ঘাত-প্রতিঘাত
হৃদয়পিঞ্জর ভালোবাসার কাঙাল
ভ্রমণ-১
সু ম ন স র কা র
ওই যে পাহাড় পেরোই
পেরোই কত ইমারত
হাজার সবুজ সরে
সরে কত মন্দির মঠ।
পথ ঘাট নদী পুকুর
কত পাই আমার পথে,
হাজার ভিড়ের মাঝে
আকাশটাও চলে সাথে।
কু- ঝিকঝিক গাড়ি চলে
ওই পাহাড়ের গাঁ ধরে,
ছায়া হতে আলো পড়ে
আমার জানালার ধারে।
কতশত পাখি ওড়ে
ওই দিগন্তের পাড়ে,
নদীনালা মাঠঘাট
যেন সব আছে ভরে।
হাজার যাত্রী চলে
আমার ঠিকানার পথে,
কত হকার ব্যস্ত তারা
তাদের কর্মের সাথে।
পাড়ার গাঁ ধরে
ওই যে দিঘি পড়ে,
ব্যস্ত চাষি মাঠে
লাঙলের হাল ধরে।
কতশত সেতু পড়ে
আমার চলার পথে,
দূর হতে দূরে সরে
যা পাই আমার সাথে।
মেঠো পথে ব্যস্ত পথিক
নিজ গৃহে ফেরার টানে,
ব্যস্ততার ভিড়ে সূর্য যায়
পূব হতে পশ্চিম কোণে।
লাল পাহাড়টি দাঁড়িয়ে আছে
ওই সাদা পাহাড়টির পানে,
সড়ক পথটি বয়ে গেছে
এই সবুজ গাঁয়ের কোণে।
কত সাজে সজ্জিতা
এ ধরণীর বাহার,
মুগ্ধ আমার ভ্রমন যাত্রা
প্রণাম জানাই চরণে তোমার।
ভ্রমণ- ২
কু ঝিকঝিক ট্রেন চলে
আপন ছন্দের তালে,
আলো থেকে আঁধার পথে
যাচ্ছে দুলে দুলে।
দূরের আলো যাচ্ছে সরে
আরো দূরের ঠিকানায়,
কাছের আলো দূর হয়ে যায়
চোখের ইশারায়।
নাম না জানা স্টেশনগুলো
যাচ্ছে পিছে সরে,
ছোট-বড় গাছগুলো সব
বলছে আমায় ডেকে।
এতোদিন কোথায় ছিলে
পায়নি দেখা তোমার,
আবার বুঝি পড়লো মনে
নদী, পাহাড়, ঝর্ণার।
আঁধার হতে ফুটলো আলো
সকাল হলো আবার,
নদীনালা কত পথঘাট
শস্যশ্যামলার বাহার।
মাঠে চাষি লাঙ্গল হাতে
করছে জমি চাষ,
কি অপূর্ব ওই দৃশ্য খানি
মনের ঘরে বাস।
ছোট ছোট শাপলাগুলো
মুখ তুলেছে ওই,
আপন মনে সেজে আছে
ফোটার অপেক্ষাতেই।
কাঁচা পথটি বেঁকে গেছে
পাড়ার গাঁয়ের দিকে,
চোখের নিমেষে দূর হয়ে যায়
রেললাইনের বাঁকে।
শহর পেরিয়ে গ্রাম আসে
গ্রাম পেরিয়ে শহর,
কু ঝিকঝিক ট্রেন চলে
আঁধার হতে দ্বিপ্রহর।
সারি সারি চা বাগান
ওই ঢালু জমি ঘিরে,
ছায়াময় বৃক্ষ সাথী
দাঁড়িয়ে আপন তালে।
নানারকম খাবারদাবার
আরো কত কি আসে,
মেলার মতো লাগে যেনো
ব্যস্ত তারা কাজে।
পাহাড় পর্বত রয়েছে বাকি
আমার অগ্রসরের পথে,
শব্দরা সব খেলছে মনে
কবিতার ঘরেতে।
বলতে বলতে এসে গেলো
ডাংতলের ওই পাহাড়,
সবুজ ঘাসে মোড়া চাদর
কি অপূর্ব তার বাহার।
রাখী পূর্ণিমা
শ্যা ম লী ব্যা না র্জী
আমার ছাতবাগানের টগর গাছে,
অজস্র ফুল ফুটে আছে।
ফুল ঝরানো সাঁঝের বেলা,
সামনে বকুল ফুলের থালা।
জাফরি কাটা অলিন্দে আজ ফুলের কিরণ লুটোপুটি,
পূর্ণ চাঁদের আবেশ নিয়ে,
আজ যে রাখী, সবার ছুটি।
জরির তবক, ফুলের রাখী,
পরাবো আজ প্রিয়ের হাতে,
লাড্ডু, মিঠাই, মতিচুর আর শরবত ও থাকবে সাথে।
পেস্তা বাদাম বাটা দেওয়া
ঘন দুধের শরবতে,
খসের গন্ধ, মধুর সুবাস,
মিঠাস আছে তার সাথে।
ফুলের গন্ধে পাগল হয়ে ,
লুব্ধ ভ্রমর ছুটে আসে,
জ্যোৎস্নামাখা ছাতবাগানে
ঘোরে ফুলের আশেপাশে।
আসুক অলি, আসুক মধূপ,
সবার জন্য দুয়ার খোলা,
বেহিসাবী দেওয়া-নেওয়ায়
এতদিনের এ পথ চলা।
সান্ধ্য আড্ডা ক্রমে ক্রমে,
গানের সুরে উঠলো জমে।
সন্ধ্যাকাশে পূর্ণচন্দ্র,
বাতাস বহে মৃদুমন্দ।
আমার কবরীতে যুথীর মালা,
পরণে আজ নীলাম্বরী,
যেন নীলাকাশের প্রেক্ষাপটে,
ছড়িয়ে আছে কল্কা জরি।
মিঠে সুরের গানের সাথে,
বাজলো প্রিয়ের সরস বীণ,
মন্দ মধুর বাতাস বহে,
অতি মধুর একটি দিন।
প্রতিবন্ধী মন
ম ধু মি তা ব সু স র কা র
যেদিন তোমার নয়নে হয়েছে আমার নয়নপাত--
চলে গেছো দৃষ্টিসীমা ছাড়িয়ে বহুদূরে
তবু অনন্ত প্রবাস লিখতে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়েছি--
শূন্যতার গমক-- খাদে গলা নামাতে গিয়ে ডুবে যাই অতলান্তিক গভীরে--
যেখানে আপন খেয়ালে সফেন সমুদ্র আঁকি
তোমার অলিভ রঙা শাড়ির আঁচলে
প্রমিত সময়--
ঢেউ এর দাপটে আজোও নৌকাডুবি হয়--
আপাততঃ আমার জন্য কোনও উজান রাখিনি--
প্রস্তাব ও নয়--
প্রত্যাখ্যান সহ্য করতে পারিনা বলে এতোটাই হৃদয়ের ক্ষয়--
নিজেকে বারবার দোষী সাব্যস্ত করেছি।
বিড়ম্বিত ভাগ্যের দোহাই--
কেমন আছো?- অবারিত করেছি আজ, খুলে দিয়েছি অর্গল--
হঠাৎ বুকের গহীনে জলকল্লোল হলে উপচে ওঠে কান্না--
আমি আর কোনওদিন তোমার চোখের আদলে সঙ্গীহীন নদী আঁকবোনা--
তুমি হয়তো অবগত ছিলেনা, ভালোবাসা প্রতিবন্ধী
একবার অনুভব করো তোমার অলিভ আঁচলে চিরদিন
আমি যে বন্দী--
হাত নাগালের চাঁদ
প্র ল য় ব সু
ব্যঞ্জন জীবন খাঁজে
চাঁদ ঝোলা জলতল;
অতল জলের ভিতর জল
আর শূন্য মনস্তল।
আরশী নগরের গান
ভুলে গেছে ধুঁকে,
ভুলে গেছে গাছপালানদী
সংবরণ শোকে।
অকপট, তবু সভয় চারণগীত
গর্তের উলঙ্গ উন্মোচন,
কথিত স্বতন্ত্র শিরোনামে
অনুসঙ্গ- অনাকাঙ্ক্ষিত স্খলন;
সংক্রান্ত সমীক্ষা, ইতিহাস
দূরে ঠেলে দেয় প্রয়োজন অকাতর।
তলানীতে গতিময় উপজীব্য,
দমনে সিদ্ধ শাখামৃগ জঠর।
সম্বিত উদযাপিত হোক
সত্যের দ্বিধাহীন আলোকে;
ভুলে যাওয়া কথাকলি
বসুক চালক আসনে।
ছিপের ফলায় গাঁথা রাতচর সাপ
নির্বাপিত নির্নিমেষ স্তব্ধময় কাল;
প্রবাহে আসুক চেতনা সম্মোহক-
চন্দ্রসম্ভব হোক মেহনমুক্তি তাল।
বেলাশেষের কবিতা
ছো ট ন গু প্ত
স্বপ্ন দেখাতে এসেছিলি নাকি তুই?
বাতাসের বুকে দু-কলম ছোঁয়া ভুঁই।
পথ থেকে পথে অচেনা কথা ও সুর
তুই চলে গেলি চোখে নিয়ে রোদ্দুর।
কাঠের সাঁকোতে হেঁটে যেতে ভুল করে
পড়ে যাচ্ছিলি, আমি দুটি হাত ধরে।
মহুল রৌদ্রে ছায়াতলে বট গাছে
চেনা কবিতাটা শালবনে রাখা আছে।
মেঘ রোদ ছায়া অবরোধে থেমে যায়
আপাত শান্তি, কবিতারও ঘুম পায়।
টিলা পাহাড়ের শীর্ষে ওঠার কালে—
তোর সাথে পথে স্বপ্নের আবডালে
বিশ্রামকালে মুছে নিস ফোঁটা ঘাম
বাউন্ডুলের কথারা দেবে না দাম।
সামনের গাঁয়ে রাত্রে ঘুমাবো খালি
আকাশের আলো হ্রাসে পথ হাতড়ালি।
পাহাড়িয়া গাঁয়ে টলমলে পদভারে–
গোধূলী মায়ায় আকাশের নেশা বাড়ে।
পথিক বাউলা নীরবতা বিধি মানে
চলে যাবে কাল পথ ভুলে কোনোখানে।
হিজিবিজি টানে যতসব ছবি আঁকা
ছড়ানো ছেটানো ধুলো-কালিঝুলি মাখা।
হয় তো কখনও পায়নি কোথাও সাড়া
সারারাত ধরে স্বপ্নের কড়া নাড়া।
শত কথা বয়ে ছিলি তুই বড়ো কাছে
শরীরে শিয়রে পরশে তা লেখা আছে।
আজ অন্ধকার, কাল ঠিক রোদ পাবি,
ছেড়ে আসা পথে ভুলে যা ভরসা দাবি।
ঝাপসা দু-চোখে অখণ্ড অবসরে
বাউন্ডুলের শেষ কবিতাটা পড়ে
লিখে দিয়ে যাস তার না ফেরার দেশে
কবি চলে যাবে চিরতরে রাজবেশে।
ভালবাসা
বি শ্ব না থ রা হা
সমস্ত প্রেমের সাথে
চাঁদ আছে কী যে মিলেমিশে!
আকাশের এলো রাত
মেলে দেয় দিন
অজস্র তারার স্নান
পাখিদের পারাপার
মন্দ বায় শিহরণ গায়
বয়স যে শুধুই দখিন
ছাদে শুয়ে বাধ্য সময়
দুই চোখ নেশাতুর
জগতে বিলীন
মেঘের পালকে লাগে
তারাদের সারারাত আঁচ
উষ্ণ মন্থনে মাতে
মনের গহীন
আর আছে চাঁদ ঐ
সবার যৌবনবোধে, যৌবনবতী
কী যে ভালো, দ্বিধাভোর
তার সাথে মাধবী আলাপ
আর নির্মল আরতি, রাত
হোক না সে ক্ষীণ
তাই তো আলোর পারে, আঁধারে,
ভালবাসা আজো সাজে
বন্য নবীন
ওষ্ঠের বাঁধন কাঁপে
বিপন্ন অধরে
একটু জ্যোৎস্নার দায়
দিতে চায় শুধু
এরপর দিন আসে ফুল ফোটে
ক্লান্তিবিহীন
হে পামর, প্রেমের স্পর্শক
অ সী ম দা স
এইতো পেতেছি বৃত্তে বিশুদ্ধ আরণ্যক শ্বাস,
পেরেক বিদ্ধ করো
হে পামর, প্রেমের স্পর্শক!
অযোনিসম্ভূত নই,
সুতীক্ষ্ম ব্যথার জ্বরে কম্পমান তাপ ভুলে
যুগান্তে সহস্র স্বীকারোক্তির নীলাঞ্জন নীরবতা
নিঃশুল্কে ধারণ করেছি ।
ভুলিনি আয়ুর ভারে অকর্ষিত মানবের সুবর্ণ বিন্যাস।
ভুলিনি নিঃসঙ্গ নীল অ্যামিবা-যন্ত্রণা।
কল্পিত স্বর্গ নয়,
দুর্দিনের বন্ধু সারমেয় একদিন
ধন্বন্তরী ধর্ম হতে পারে ।
পড়শী পরম জ্ঞানে সাধারণ
না জেনেও জানে,
ফোরাতের লাল জলে ইউফ্রেটিস
জলের স্বধর্ম বুকে আজও বহমান।
সে আমার নিরুক্ত প্রেম
গো বি ন্দ ব্যা না র্জী
সেই সত্যিটাকে নিয়েই
আমি আজীবন হেঁটে যাব উল্লাসে
"উজ্জীবন" নামের তকমা ঝুলিয়ে দেবো
দু'চোখের আগলে রাখা স্বপ্নের আলো পথে
তারও পরে নতজানু কোন স্ট্যাচ্যু হ'য়ে
থেকে যাবো নিরুক্ত প্রেম...
আবছা বিকেলের আলো
গাছেদের নরম সবুজ পাতা ছুঁয়ে
নেমে আসতে থাকবে আমার গানের পাশে
সন্ধ্যার শঙ্খশব্দ দূরে
তার সপ্তকের কোমল গান্ধার ছুঁয়ে
নির্জন রেখাবের মত ব'সে থাকবে
তখন আমি কেঁদে উঠলেও
ভেবোনা সে আমার দৈন্যতা
ভেবোনা সে আমার শূন্যতা
সে আমার নিরুক্ত প্রেম
আমার নতজানু প্রার্থনা
বিপ্লব
অ মি তা ভ চ ক্র ব র্তী (অ ক বি)
মানুষকে ভালোবাসার স্বপ্নে ভেসে সুন্দর পৃথিবীর
গড়ার আশাতে আর একান্ত আলাপচারিতায়
আমাদের নির্ঘুম রাতগুলো কাটাতাম!
আমাদের সেই নির্ঘুম রাতগুলো যদি সঙ্গবদ্ধ হয়-
থেমে যাবে সময়, নদীর স্রোত, জনবহুল রাস্তা!
অবিশ্বাস্য হলেও, এমন বিশ্বাস নিয়েই বাঁচতাম …
বিশ্বাস করতাম,
একদিন এই নষ্ট পৃথিবীর বুকে জন্ম হবে
এক পবিত্র শিশু।
ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ আগলে রাখবে
সেই শিশুটিকে।
মানুষ তাকে আশ্রয় ও প্রশয় দেবে,
সৃষ্টির একান্ত ইচ্ছায় শিশুটি বেড়ে উঠবে!
মানুষ ভালোবাসে সুন্দর স্বপ্ন দেখতে
আমরাও তো স্বপ্ন দেখতাম-
বলতাম দেখিস একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
অগ্নি স্ফুলিঙ্গ থেকেই সৃষ্টি হবে নতুন প্রজন্মের,
নুতুন ঝকঝকে প্রভাত দেখবে নতুন পৃথিবী।
অনাগত সেই শিশুর নাম রেখেছিলাম 'বিপ্লব'।
আজ এই কঠিন মুহূর্তে পৃথিবীর মানুষ
সেই বিপ্লবের অপেক্ষায়…
ক্রান্তিলগ্নে পৌছে গেছি আমরা-
সেই শিশুটির হাতে ধরে ভালোবেসে
এবার সত্যিই বাঁচতে চাই।
ঝড় নামে ঝড় থামে
আ মি নু র র হ মা ন
আমার সামনে বিশাল আকাশ
আমি বসে আছি তোমার সমুদ্রের কিনারে
যেখানে ঝড় নামে, ঝড় থামে
তুমি আমি একাকার হয়ে যাই
একটা ঢেউ আঁছড়ে পড়েছিল
আমি সেই ঢেউয়ে ভেসে গিয়েছি
এরপর অজস্র ঢেউ, অজস্র ঝড় এসেছিল
আমি নিস্তব্ধ, নির্বিকার তাকিয়ে দেখেছি।
পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে ভেবেছি
নিচের ক্ষুদ্র পিঁপড়ার মতো আমরা
তবু কতো অহংকার জমা বুকের ভেতরে!
নিস্তব্ধ রাত্রি জানে আমি তোমার জন্য কতটা বিভোর!
আগুন জ্বলেছে রাজপথে
প ল্ল ব ভ ট্টা চা র্য অ ন ন্ত
আগুন জ্বলেনি শ্মশানে
আগুন জ্বলেছে শহরের রাজপথে।
সারিবদ্ধ শুয়ে আছে প্রানহীন মানুষের দল
রক্ত চন্দনে সাজানো আ-ধোওয়া শরীর
মৃত্যুকে দেখে কাছ থেকে।
নিশাচরের অদৃশ্য থাবা শরীর ছুঁয়ে যায়
অন্তহীন পেটে, অবিরাম কাতরায়-
রুটি ভেবে চাঁদের দিকে মুষ্টি ছুঁড়ে মারে
প্রতারণায় স্থির চোখে অশ্রু ঝরে পড়ে।
রক্ত বয়ে যায়, মাটি রক্ত চুঁয়ে যায়
জন্ম নেওয়ার অভিশাপ-
জীবন খাতায় লিপিবদ্ধ, বিধাতার রায়।
পায়ের তলায় তখনও গতির সুড়সুড়ি
মেরুদণ্ড সোজা করে আকাশ ছুঁতে চায়।
মেঘ আসে, বৃষ্টি ঝরে, রক্ত ধুয়ে যায়
রাজপথে দীর্ঘশ্বাস গোপনে হারায়।
রুগ্ন দেশের পথে
সু মি তা সা হা
আমরা পরিযায়ী শ্রমিক,
জন্ম প্রত্যন্ত গ্রামে,
আজ কাজের তাগিদে
পরিচিত বিশ্বে পরিযায়ী নামে!
নুন আনতে পান্তা ফুরায়,
ভীষণ ক্ষিদের টানে!
বড়ই মূর্খ, হয়নি জানা
লেখাপড়ার মানে!
দিনমজুর বাবার মাথায়
কত ঋণের বোঝা!
ক্ষিদের জ্বালা কষ্ট কঠিন,
নয়তো বাঁচা সোজা!
কাজের তাগিদে দিলাম পাড়ি,
সুদূর শহর পানে!
বাঁচাবো ঘর,বাঁচবো আমি,
তাকিয়ে সবার পানে!
শহরের কাজে খেতাম পেতে,
পেট ভরে দুটি বেলা,
ঘাম ঝরা দেহে দু'চোখ জুড়ে,
আসতো ঘুমের মেলা।
খেটে খাওয়া ক্লান্ত শরীর,
তবুও ছিলাম বেশ!
শুনতে পেলাম মারণ রোগের
কবলে আমার দেশ!
ঘুমিয়ে শহর জনশূন্য,
কাজ নেই আর হাতে!
নিঃস্ব হয়ে আবার আমরা
দাঁড়িয়েছি ফুটপাথে!
সরকার নেই, মন্ত্রীও নেই,
নেই কোনো অনুদান,
দিগ্বিদিক ভুলে বিভ্রান্ত সব
শত শত পরিযায়ী প্রাণ!
হারিয়ে গেল চলার ছন্দ,
মাথার ওপর ছাদ!
কোথায় যাবো?কিই বা খাবো?
সামনে মরণ ফাঁদ!
চাই নি কখনো ব্যাধির ওষুধ,
চাই শুধু ভাত খেতে!
চাই যে শুধু নিজের গাঁয়েতে,
কেবল ফিরে যেতে!
পায়ে হেঁটে মোরা,দাঁতে দাঁত চেপে,
চলেছি সড়ক পথে!
যতই মারো লাঠির বাড়ি,
পারবেনা আটকাতে।
চলতে চলতে পড়ছি কেবল,
উঠছি গায়ের জোরে!
পথের বলি অনেকেই হলো
ফেরা হলো না মায়ের ক্রোড়ে
পেটের খিদে, অকাল বোধন,
মরেছি শত শত!
দল বেঁধে তবু সমুখপানেতে,
চলেছি অবিরত!
গরীবের পাশে থাকে না যে কেউ,
জীবনযুদ্ধ নিশিদিন!
আবার জাগবো,তোমাদের কাজে,
ফুরোবো না কোনোদিন!
হৃদয়
নি খি ল বি শ্বা স
মানুষ কতো কিছু জানে, চেনে,
আমি কিছুই জানিনা, চিনিনা।
মানুষ মানুষের হৃদয়ের গভীরতা জানে,
কি করে যেতে হয় জানে,
আমি পড়ে থাকি রাস্তায়,
এই গলি থেকে ওই গলি,
কিছুতেই পাই না খুঁজে,
গভীরতা দূর অস্ত।
মানুষ কতো কি বোঝে,
আকার ইঙ্গিত, চোখের জটিল ভাষা, অনায়াসে ডুবে যায়,
অনায়াসে ভেসে ওঠে,
হৃদয়ের গভীরতা মাপা তাদের কাছে
একে একে দুই।
আর আমি?
কোন পথে নামতে হবে তাই খুঁজে মরি।
মানুষ মানুষের হৃদয় নিয়ে
কতো লুকোচুরি খেলে,
কখনো রুমাল হারিয়ে যায়,
নুতন রুমাল কেনে।
আর আমি কানামাছি ভোঁ ভোঁ,
কাউকে পারিনা ছুঁতে।
মানুষ কতো কি জানে, চেনে,
আমি কিছুই জানিনা, চিনিনা।
মানুষের হৃদয় কি সত্যি গোলক ধাঁধা?
ভীষণ জটিল?
আমি সেই মুসাফির
দি ব্যে ন্দু ধ র
আমি সেই মুসাফির,
সকালের জানালায় যার হাতে
তুলে দাও তুমি
লাল নীল সবুজ হলুদ।
তুমি জানো,
জীবনের কথা
লেখা হয় এভাবেই
সকালের আকাশেই
নীলাকাশে সাদা মেঘে ভাসা।
আমি সেই মুসাফির
যার ঠোঁটে তুমি
তুলে দাও পাখিদের ভালবাসা।
আমি সেই মুসাফির,
যাকে তুমি ভুলে যাও দিতে
ভালবাসা মাখা কাজলের টানে
ফিরে আসা।
আমি সেই মুসাফির,
বারবার সন্ধ্যার
প্রদীপের আলোজ্বলা হাতে
যাকে তুমি বিদায় জানাও,
তোমার ঠিকানা দিতে শুধু ভুলে যাও।
আমি সেই মুসাফির
বারবার তাই
খুঁজে শুধু যাই
মেঘভাঙ্গা দ্বিতীয়ার চাঁদরাতে
নত কোনো আঁখিপাতে
মায়া ডাক, "সব থাক,
মুসাফির এবার ঘুমাও।"
গহনের অন্তঃপুর
প্র দী প শ র্ম্মা স র কা র
গহনেরও অন্তঃপুর হয়, প্রবাসের দুঃখের অন্দরমহলে সুখী ঘরকন্না যেমন।
যেমন পরপারের অজ্ঞাত অন্ধকূপে
মরণকে শ্যাম সম্ভাষণ করি, বিজনকে চেতনা জ্ঞান করি।
সময়ের পারাবারে নুড়ি কুড়োই,
শ্রান্তি ও ভ্রান্তির সাঁড়াশি আক্রমণে
কালের কাছে অসহায় নতিস্বীকার।
নিয়ম ক'রে সূর্যোদয় দেখি–
ঘরকন্নার অবসরে গায়ে রোদ মাখতে গিয়ে
এক পশলা গর্ভবতী মেঘ এসে ভিজিয়ে দিয়ে যায়।
দৃষ্টির ঘোলা কাচপথে অযাচিত বাষ্প জমা হয়,
বিনিয়োগ যা কিছু ছিল,
মাটির বুকে কষা আছে–
হিসাব মেলাতে দেখি, চেতনার ঘরে তস্করের হাতের ছাপ।
থমথমে ফাগুন, রোদসী বৈশাখ, কোটর বন্দী মাঘ,
চরিত্রের অন্ধকারে শ্যামাপূজার দীপাবলি–
তাই চেতনার উন্মেষ লগ্ন প্রত্যুষের সীমায় এসে
গর্ভযন্ত্রণা ভোগ করে।
এ জন্মে আর দ্বিজ হওয়া হ'ল না।
শারদ-বন্দনা
মে হে দী হা সা ন সু ম ন
হৃদাকাশে আজ সরোদের সুরে শুক্ল কাদম্বিনী,
চির নীল প্রাণে নব-নীল ছুঁয়ে শারদ-সীমন্তিনী।
সুস্মিত মুখে শারদীয়া সুখ শুভ্র কাশের ডগায়..
পুলক প্রবাহে ভেজা তনু-মন কাশফুল হতে চায়।
উজ্জ্বল নীলে অম্বর সাজে, ঝলমলে সোনা রোদ
সবুজের ক্ষেতে রোদের আদর ঝকঝকে প্রচ্ছদ!
নির্মল শ্বাস, স্নিগ্ধ পরশ, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে পাখি,
পাখির ডানায় মেঘের ভেলায় অনুভব বেঁধে রাখি।
বাতাসে ভাসে আগমনী সুর বাজলো ঢাকের কাঠি
উৎসবের ছোঁয়া কাশের বনে আয়োজন পরিপাটি।
অঞ্জলি হয়ে শিউলি লুটায়..ভোরের শিশির মেখে,
প্রভাতের রবি নরম-কোমল, বিমল-প্রণাম দেখে।
শিশির জড়ানো শিউলিতলা নির্মল এক স্বর্গ!
সুন্দরী ঐ নীলের পরে সাদা মেঘ যেন অর্ঘ্য!
দিনের শেষে সূর্য যখন আঁধার-কোলে লোটে,
শরৎশশী জ্যোৎস্না হাতে সন্ধ্যাকাশের ঠোঁটে।
এ কোন আমি
প্র দী প বি শ্বা স (মি নু)
আমার আমি পাল্টে গেছি
অনেকটা আজকাল;
কেমন যেন খুব অচেনা
অন্যরকম চাল!
মন কেমনেও শান্ত থাকি,
অধীরতাও গোপন রাখি,
সুখের খোঁজে আকাশ দেখি,
বাতাস বলে রকমটা কি?
ডাক দিই না মৌন থাকি,
ইচ্ছেগুলো গোপন রাখি!
মন কেমনে'র সন্ধ্যাবেলা,
বিষাদমাখা রাত্রিবেলা,
স্বপ্ন দেখার সাধ ছেড়েছি,
নিঃশব্দের গান ধরেছি,
আমি বোধহয় পাল্টে গেছি;
আয়নাতে যেই মুখ রেখেছি!
অন্য আমি অন্য মুখ
ভীষণ অচেনা;
আয়না হয়ত আমার মত
আয়না জানেনা !
কোন আমিটা আমার ছিল
অযথা সব প্রশ্ন যত;
কোন আমিটা আমার মত
ফালতু হাজার প্রশ্ন শত!
বদলে গেছে ইচ্ছে সাধের
মিথ্যা সাধনা;
সাধ আহ্লাদ আনমনা,
মন কেমনের যন্ত্রণা;
ওষুধ যেন ফুরিয়ে গেছে
ক্যাপসুল শুধু সান্ত্বনা
ঘুম পাড়ানি রাংতা মোড়া
স্বপ্ন ভোলার মন্ত্রণা!
রোদ মাখিনা, রোদ পড়ে রয়
উঠোন জুড়ে;
জোৎস্না শুয়ে আস্তাকুঁড়ে!
পাল্টে যাওয়া বদলে যাওয়া,
আপন স্বজন ভুলতে চাওয়া!
কি ছিল আর কি ছিল না
কি পাইনির শুণ্যতা,
মন কেমনের নিখোঁজ
ছবি,
মৌন নীরব ব্যকুলতা!
নদীর স্রোতে ঢেউ হারিয়ে
ঢেউ-এর ফিরে আসা,
সাগর পাগল সাগর অধীর
সাগর ভালোবাসা!
মন কাড়ে না মন টানে না
মন কেমনের সুখ;
সকল দুখের অন্তিমেতে
সুখের ক্ষতমুখ!
গানের সুরে অবাক হওয়া;
কে গাইছে জানতে চাওয়া;
এখন অনেকদুর---
হারিয়ে যাওয়া সুর;
শব্দেরা সব ভীষণ ঘাতক
ভয়ানক নিষ্ঠুর!
বদলে গেছি পাল্টে গেছি
পাল্টে যাবো আরও?
আমার আমির অহংকারে
আমি নইকো কারও!
কবর জানে কার শব
মাটির অধিকারে?
কফিন জানে কে ঢুকছে
আঁধার ঘেরা ঘরে?
আগুন জানে কে পুড়ছে
ছাই হয়ে প্রতিদিন?
আমিই বোধহয় মৃত্যুনামা
বাঁচার আশা ক্ষীণ!
রোদ বৃষ্টি জোৎস্না বাতাস
মরন বোঝেনা;
পাল্টে যাওয়ার বদলানো
সুখ
ভীষণ যন্ত্রণা!
পরিত্যক্ত
সু ম ন্ত চ ক্র ব র্তী
সময়ের বেড়ি রেখে গেছে তার ছাপ,
সে সাঁকো একাকী নুয়ে আছে কোনোমতে,
বুকের মধ্যে বড় অবাধ্য ব্যথা,
একরাশ কথা ভিড় করে আছে তাতে!
কতো না পীড়ন সহ্য অতীত তাও,
দুটি পাড়কে সে রেখে গেছে সংযোগে,
কতো তুফান যে এলো আর গেলো বুকে,
টুঁ শব্দটি মুখে ছিলো না তো তার আগে!
আজ দুমড়ে গিয়েছে কোমর বলিষ্ঠতা,
আজ জল ছুঁই ছুঁই ভাঙা বুকখানি তার,
দু'চোখের ভাষায় জড়ানো অশ্রুরেখা,
কেউ রাখে না তো খোঁজ আগের মতোন আর !
এই সংসার কি ততোটুকু সার বোঝে,
নি:সাড়ে তুমি যতোদিন সয়ে যাবে?
তারপর আর কেউ রাখবে না খোঁজ,
এই বোধে কেউ কতো উজ্জ্বল হবে ?
এই সভ্যতা বোঝে শুধু হিসেবের কড়িখানি?
কতো দাম দিয়ে কতো বেশি যাবে পাওয়া,
শুধু লাভে আর লোভে হাত পাকিয়েছ জানি,
একদিন নিজেরও কপালে তেমনই বিচার পাওয়া!
নিঃশব্দে ঢেউয়ের ঘ্রাণ
ম ধু প র্ণা ব সু
এও তো এক আশররীর ডুব সাগর।
চেনা মুখের সারি ক্রমশঃ যখন ঢেউয়ের প্রতি আঘাতে নতুন করে জীবনকে প্রতিযোগিতার জন্য ডেকে নিয়ে আসে, তখন ডুবসাঁতারের অনভ্যস্ত মন্ত্র উচ্চারণ করে ভেসে যাওয়ার সাহস জোগাড় করতে হয়।
অথবা ডুবতে জানলে তবেই তো এ অরূপের
সন্ধান পাওয়া যায়। কতজন পারে এমন নিমজ্জিত গভীর অন্ধকার থেকে গোপন অনুভব হাতড়ে
স্বস্তি তুলে আনতে।
বহুবার বালির বুকে আঁচড় কেটে বাঁচার নাম লিখেছি,
চোখের পলকে ঢেউ ছুঁয়ে বলে গেছে, তুমি ভয়ের কালো দাগ না সরিয়েই আকাশ আঁকার চেষ্টা করো, তাই সেই নাম মিথ্যে হয়ে যায় বারবার।
আসলে যাকে আবেগ বলি তা আসলে আবেদন, সাড়া পাওয়া সহজ নয়, তাই তো এমন মোহাচ্ছন্ন বিশ্বাসে অতল গভীর থেকে শব্দের স্পষ্টতাকে
জড়িয়ে ধরতে হয় আমায়।
ভাসিয়ে দিলে বেবাক অপটু হাত সমাধি বেঁধে নেয় নিজের। আর দুএকজন সৌভাগ্যক্রমে সাঁতরে পাড়ে ভিড়িয়ে দেয় শরীর।
মগ্ন বসুধা
র ত্না দা স
বিকেলটা আত্মরতিতে মগ্ন হয়ে আছে।
আকাশের কোণায় কোণায় মেঘের জমায়েত, কিছু বলবে বোধহয়...
ঠোঁট ফাঁক করতে না করতেই বন্ধ! একটু কথা বললে তো "বারি ঝরে ঝরঝর" হতে পারতো! হলো না।
আকাশের মৌনব্রত পালন চলছে...
রোদের তেজ দুর্লঙ্ঘ্য অস্থির—
প্রোষিতভর্তৃকা সম বিরহ বিধুর
তীব্র, তীক্ষ্ণ জলধারা মাঠ, ঘাট, প্রান্তর জুড়ে ঢেউ তুলে নিবিড় আশ্লেষে নামতে পারে
ছুঁয়ে দিতে পারে ঠোঁটের প্রান্তভাগ...
বিরহী বঁধূয়া অমলতাসে রাখে হিয়া
নিশাস্বপ্নে ডুবে যায় অপেক্ষার প্রহর...
আমার যা কিছু
ন ব নী তা
তোমাকে দিয়েছিলাম
মগ্ন একটি বিকেল— কস্তুরীগন্ধমাখা,
তোমাকে দিয়েছিলাম
নিভৃত কিছুটা পথচলা— সবুজ ছায়ায় ঢাকা,
সেই যেদিন আমায় দেখিয়েছিলে
উতল পথের বাঁকে
হারিয়ে যাওয়া মরা নদীর সোঁতা,
সেদিন আকাশে ছিল
কনে-দেখা আলো—
লাজুক সিঁদুর-রাঙা
জানিও, আজও সে'সব কথা
মনে আছে কিনা!
নিদ্রাহীন রাত
টু লা স র কা র
রাত খুব গভীর, শব্দহীন
দু'আঁখি নিদ্রাহীন
সারাদিনের না-বলা কথার ছটফটানি
বিনিদ্র রাতের শাসানি।
দীর্ঘ সময়, চুপকথাদের সাথ
একাকী হৃদয়, জীবন বেসামাল।
যেন চলতে চলতে থমকে গেছে পৃথিবীটা
রাত সেজেছে তারায় তারায়
একফালি চাঁদকে নিয়ে।
পৃথিবীর ছাদের ওপর শুধু
শূণ্য ... মহাশূণ্য।
নিশ্চিন্তে বিশ্রামরত পূবের আকাশ।
আমার চারপাশে এখন শ্বাসরোধী দূষণ।
সংলাপে প্রলাপে
সী মা সা ন্যা ল
মনের নিঃশব্দ উনুনে চাল ফোটে
প্রতীক্ষার হাঁটুজলে
পৌষালী স্মৃতি অলস দুপুর ঢেউয়ে কথা বলে
শব্দের পেয়ালায় চুমুক, সহবাস ঠোঁটে ঠোঁটে চলে
সাদাকালো রঙগুলো উড়ানের ডানা মেলে
একাকীত্বে পুড়ে যাওয়া জলবন্দী ঘেরাটোপ
উড়োনচণ্ডী জোনাকপাখায় কিছু আলো ছোপছোপ
যদি শুরু হয় অঙ্গারে ওড়া সম্ভাষণ
হোক তাই, জানি এ তবু বাঁচার
অবলম্বন
এফোঁড়ওফোঁড় নকশীকাঁথায় আদুরে মনযাপন
আঙুল টোকায় সে সুতোয় কি অবাধ্য ভ্রমণ
এলোপাথাড়ি ভাসমান মাস্তুলে স্বপ্নকুঁড়ি কায়া
চোখের পাতা জুড়ে আজও তবু স্মৃতি মুগ্ধমায়া।
স্বাধীনতা তোমাকে
শা ন্তা ল তা বি শ ই সা হা
(১) থালা হাতে মিড ডে মিলের সারিতে দাঁড়িয়ে__
সকাল থেকে না খাওয়া মেয়েটি,
মুখে তার অমলিন হাসি।
(২) বই'এর ব্যাগ ফেলে____
সংসারের জোয়াল কাঁধে তুলে নিল পনেরোর কিশোর,
বুকে তার লড়াইয়ের আগুন।
(৩) বিদ্যালয় মহাবিদ্যালয় সবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়____
শংষাপত্র হাতে ছেলেটা ছুটছে,
চোখে তার স্বপ্নপূরণের জেদ।
(৪) হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল বিনা চিকিৎসায় মারা গেল____
অসহায় ছেলেটার মা,
শরীরে তার না হারার লড়াই।
(৫) ঘরের পরে ইঁটভাটায়____
ধর্ষণের লোলুপ থাবায় শোষিত নারী
আজ বিচারের কাঠগোড়ায়,
মনে তার নীরব যন্ত্রণা।
স্বাধীনতা তোমাকে__,
ঐতিহাসিক আগষ্টের স্মরণার্থে এ পত্রলিখন।
তুমি এখন ছিয়াত্তরের প্রৌঢ়, নানান ঘটনায় অভিজ্ঞ।
জানি, রূপোর চামচ মুখে নিয়ে তুমি জন্মাওনি,
বহু ঘাত-প্রতিঘাতের প্রাচীর ডিঙিয়ে তোমার আগমন টলোমলো পায়ে।
নতুন স্বপ্নের জাল বুনে স্বাধীনতা,
তুমি সুন্দর পৃথিবীর অংশীদার হতে চেয়েছিলে; হয়তো পেরেছো।
তাই আসমুদ্রহিমাচল উড়ছে তোমার বিজয় নিশান।
হয়তো বা আজও তুমি বীজ বপণ করে চলেছ___
আরও উজ্জ্বলতর দিনের আশায়। স্বাধীনতা তোমাকে বরণ করি গানে কবিতায়,
আহ্বান করি বিভেদ বৈষম্যহীন এক নতুন সকালের।
নেপথ্যে বুঝিবা তখন তোমার অশ্রু ঝরে।
তোমার জন্মদিনে হাজারো প্রতিশ্রুতি পালনের অঙ্গীকার শুনি,
শত শব্দের বাহারে তুলে ধরি;
তোমার সংগ্রামী জীবনের ইতিহাস।
তোমার ঝাপসা দৃষ্টিতে ভেসে উঠে___
নিরন্তর ছুটে চলা সেইসব হারিয়ে যাওয়া শত সন্তানের মুখ।
বুঝি স্বাধীনতা, বড় ব্যথা তোমার বুকে।
বিশ্বাস কর, মনে হয় সব ক্লেদ সরিয়ে,
বুকভরা ভালোবাসায় শপথ নিই___,
" তোমার পতাকা যারে দাও
তারে বহিবারে দাও শকতি "।
আর যেন আঘাত না হানি তোমার মর্যাদায়।
ভালো থেকো স্বাধীনতা,
চির নবীন হয়ে থেকো।
তোমার প্রৌঢ়ত্বের বুকে থাকুক তারুণ্যের তেজ,
তোমার বলীয়ান চলার পথ হোক মসৃণ।
আমি আশাবাদী স্বাধীনতা।
তোমায় শতকোটি প্রণাম
নদী
বি শ্ব না থ মা ঝি
খরস্রোতা নদীর ভূমিগর্ভে
পলি জমে না কখনো
সেখানে শুধু পাথর আর বালি
পলি কথায় অনেক কিছু বোঝায়
খরস্রোতা বলতে ধারার তীব্রতা
মাটি ধুয়ে ধুয়ে প্রবাহমান
তবু তার গর্ভ রত্নাকর
তবু তার মাটি গঙ্গামাটি
তবু তার জল গঙ্গাজল
আমার বুকের মাটিতে আর
আমার মনের জলে
কোন পলি জমে নেই।
ভাঙনের ধ্বনি
সু ব্র ত ন ন্দী
দেখা হয়ে ছিল কোনো এক শ্রাবণের বারিধারায়,
মনের দোরে অবারিত সবুজ সংকেতের চিত্রনাট্য এঁকে!
বেদুইন মনে মরূদ্যানের রঙিন হাতছানি অজান্তে।
রিক্ত বুকের পাঁজরে লেগে থাকা অনুর্বর জমি!
ফিরে পেতে চায় নবারুণ স্মৃতিমেদুর আখ্যান,
নব কলেবরে উন্মেষ সঞ্চিত আবেগী কলতান।
উজানে ভাসিয়ে দেয় মনের প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত করে,
স্বপ্নেরা নিঃসঙ্গতার অন্ধ আকাশে প্রদীপ জ্বালে,
মুদ্রিত নয়ন আবারো শিহরিত অপ্রত্যাশিত তালে!
সবুজ প্রান্তরে প্রস্ফুটিত আলোকবর্তিকার দর্পণ,
কম্পিত মনডোর, নেচে ওঠে অনতিক্রম্য মূর্ছনার ছন্দে!
জীবনের পারাবার উচ্ছ্বসিত ভালোবাসার আনন্দে।
অজস্র স্বপ্নের মাঝে গড়ে ওঠে চারিত্রিক বন্ধন,
সঙ্গোপনের উপলব্ধিরা মেঘের দেশে ডানা মেলে,
সংকল্পের বর্ণপরিচয় বাঙ্ময় প্রতিটি পলে।
কিন্তু গোধূলি লগনে বিবর্ণতার হলুদ চিঠি,
অস্তরাগে অন্তর্নিহিত সহস্র সন্দিহান দৃষ্টি!
বিক্ষিপ্ত মরুঝড়, অবশেষে ভাঙনের বৃষ্টি।
প্রতীক
সা য় ন্তি কা ঘো ষা ল
এতো যে আলোর কোলাহল,
সবটাই আসলে অন্ধকারের প্রতীক!
ঠিক কতটা মিশে গেছি,
কিম্বা কতটুকু শোক۔۔۔
রক্তাক্ত শরীর!
মহাকাল পথে এগিয়েছি বারবার,
ছুটে গেছি রাজার কাছে۔۔۔
ধর্ষিত হয়েও দর্শকের আসন ছাড়িনি!
বিড়ালের নখের আঁচড়ে বিদ্ধ হয়েছে ইউক্যালিপ্টাস,
নিজেকে ঢেকেছি খুচরো পাপে۔۔۔
অথচ সূর্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কখনো মনে হয়নি আমিই আসলে জারজতার প্রতীক!
স্বাধীনতার প্রাপ্তি
ক ন ক কা ন্তি ম জু ম দা র
সত্য কথন সত্য বর্ণন অনেকেরই পছন্দ নয়।
মানুষ আপনার মনের মাধুরী মিশিয়ে
আপন জগৎ তৈরীর প্রচেষ্টায় থাকে!
তবুও সত্য সত্যই থাকে,
মিথ্যার প্রচারে তা প্রতিষ্ঠিত হলেও।
এমন একদিন- যেদিন
অশ্রুসিক্ত হবার মন্ত্রে দীক্ষিত আপামর জনসাধারণ
ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিনিময়ে কি অর্জিত হলো,
নাকি সমঝোতার লেনদেনের মাধ্যমে সেদিন
এসেছিল মানুষের আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নফল?
অনিচ্ছার অনিন্দ্যসুন্দর অবহেলায়।
কয়েকের ক্ষমতার লালসা,
আর উচ্চাকাঙ্খার ফলশ্রুতিতে;
চাওয়া পাওয়ার বিস্তর ফারাকে!
কেউ ভিটেমাটি চাটি হয়ে বেঘর হোল,
কেউ হারালো তার চোদ্দপুরুষের
ভোগ দখল করা পুরো ভুখণ্ড;
আর কেউ কেউ পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার
দখলদারিতে রক্তের বন্যা বহালো।
বুঝতে পারছো- সেসবই ছিলো
কয়েকজনের নিজের দিকে ঝোল টানার হিসেব-নিকেশ!
অনেকেই বোঝেনি,
কেউ কেউ বুঝেও অক্ষমতাহেতু
আত্মসম্বরণ করেছেন।
আর এভাবেই তো চলে ভিক্ষালব্ধ প্রাপ্তির আনন্দ অবগাহন!
"চলছে ভাষন-মিথ্যেকথন,
উদ্বাহু নেত্য।"
অথচ-দেখেছো কি
আস্তিনের আড়ালে আছে নৃশংস চোরাগোপ্তা আক্রমণ?
মৈত্রী-সম্প্রীতি-সংহতি ....
গালভরা উচ্চারণে
চমক আছে,
নেই সঠিক মূল্যায়ণের প্রয়াস, প্রয়োগ ....
আলো চাই, অনালোকিত হৃদয়ের জন্য।
সেই তিরিশের সাদা কালো ছবি
অ নু প দ ত্ত
দীর্ঘ তিরিশ বছর তো মিথ্যে নয়
মানুষের ঘ্রাণ দিন দিন–
এখনও রঙিন–
হোক না পুরানো৷
সেই তিরিশের সাদা কালো ছবি৷
চার পাশে এত জীবিত জীবন
আত্মকথা ইতিকথা ভরে ওঠা
সব কিছু থমকে যায়– সূর্যাস্তের নীল-জল
এতো সতর্কতা– কাল ডাহুকের ডাক
কাটাকুটি সময় অতল খাদ–
সব এসে এক জায়গায় থমকে পড়ে৷
সেই তিরিশের সাদা কালো ছবি৷
ফেলে আসা জবুথবু আদিম শীতে
শহরের এক কোনে ওম খোঁজা লেপের
অন্তরালে এক যুবক বেলার কথা ওঠে,
ফাগুন ভোর আমি আলো জ্বালবো না,
অন্ধকার মাখি, চারুলতা-ঘ্রাণ খুঁজি
অমল বাতাস বুকে এই সতর্কতা–
এত আগুন উৎসব সব তারা খসে যায়৷
সেই তিরিশের সাদা কালো ছবি৷
মানছি না, মানবো না৷
দীর্ঘ তিরিশ বছর তো মিথ্যে নয়
হোক না, সেই তিরিশের সাদা কালো ছবি৷
তবুও তো তার ঘ্রাণ ছিল …. থাকে,
কখনও দেহলী সুবাস
কখনও নির্যাস অভ্যন্তরীণ
কখনও দিদার বিবশ
কখনও নিতান্ত দগ্ধ-দিন… তবু
এখনও রঙিন –হোক না পুরানো৷
সেই তিরিশের সাদা কালো ছবি৷
মধ্যবিত্ত
সু খে ন্দু ভ ট্টা চা র্য
‘চলে যাবো চলে যাবো’ বললেই কি আর যাওয়া যায়!
চোখ সরালেই কানে সাইরেন, স্রোত বেজে চলে
কী আছে আর কী চায়; পাঁচফোড়নের জাবদা খাতা
না থাকলে হাঁসের ঘরের পাটা কেউ খুলবে না
সাময়িক মন-খারাপের নখ টিপে ধরলেই সাদা
ছাড়লে আবার সেই লাল; বড় চেনা এই স্রোত
শিকড় মাটির তলপেটে অঙ্কুর বার করেছে
লোহা জেনে গেছে কামারের আসল সমীকরণ
মনোমতো পৌঁছালে বিশ্বাস-জল-সে ঠিকই দেবে
মিথোজীবিতা এক অভ্যাস; ভালবাসার জন্ম দেয়
ঘরে অহি নকুলের ফাঁকে গলি ঘুপছি জেনেও
মাঝে মাঝে বয়ে যায় শীতল বাতাস, যায় বৈকি!
মেথির বীজের তলদেশে সুস্থতার স্বাদ এই বাঁচা
নিয়ে যায় উত্তর প্রজন্মের আর এক অপেক্ষায়।
তাই দুপুর বেলায় যাবো যাবো বাতাস ভিজিয়ে
কী লাভ; গাছ ঘুমিয়ে গেলেইতো মন খারাপ করে
ঘুমন্ত চোখের থেকে চেপে ধরেছে তৃষ্ণার্ত প্রাণ
লতাকে ভালবেসে দাগী দেয়ালও সৌন্দর্য রাখে।
কলমেতে শান্ দাও কবি
গো বি ন্দ ম ন্ড ল
কলমেতে শান্ দাও কবি কলম গর্জে তোলো আজ
যতই বৃদ্ধ তুমি হও কলম বাঁচানো তোমার কাজ।
তোমার পকেটে শোভা পায় তোমার হাতেই করে খেলা
যেকথা লিখে তুমি কবি কখনও করো না অবহেলা।
চারিদিকে যখনই অন্ধকার নেমে আসে ঘিরে চারিধারে
তখনই আলোর দিশা দাও সেই দুর্ভেদ আঁধার ভেদ করে।
তোমার কাছেই তাই ভালো আমাকে দিয়েই তুমি লেখো
তোমার কাছেই বেঁচে রই মরমী করেই তবে রেখো।
মনে পড়ে অসহায় কত জাতির জীবনে দুরাশা
যেখানে অত্যাচারীর খড়্গ কেড়ে নিয়ে যায় যত ভাষা
মুক ও বধির করে দিয়ে ভয়ের আবহ দেয় ঠেলে
ভয়ে ভয়ে বেঁচে থেকে থেকে দিন যায় চোখের জল ফেলে।
আশাহত সেই সব বুকে সাহসের শেষ পুণ্যবাণী
তোমার কলম লিখে রাখে সাহসের দিশা দেয় আনি।
তোমার কর্তব্য যেন তাই অন্ধজনে দিতে আলো
আশার প্রদীপ জ্বেলে মনে ঘুচাতে চেয়েছো যত কালো
তাইতো তোমাকে বলে যাই কলমে দিয়ে যাও শান্
আমরা যতই মরি বাঁচি সাঁওতাল করেছে ভগবান।
আমরা চিনিনা কোনো পথ আমরা চিনিনা কোনো ঘাট
আমরা এগিয়ে যেতে পারি জানাতে পারি যে প্রতিবাদ
আমাদের কথা যারা বলে তোমারই মতো একজন
তোমার কথা তাই শুনি শান্ দাও তোমার কলম
বেদনার যত ইতিহাস কান্নার যত ব্যাথা গাথা
গেঁথে রাখো কলমে তোমার লিখে যেও সকলের কথা
ঘুম নয় শান্ দিয়ে যাও তোমার কলম লিখে যাক
জানি কভু ছাড় নাহি পাবে তবু, সেকথাই হোক ইতিহাস।
জেলখানা গরাদের ভয় অত্যাচারীর দেওয়া ব্যথা
যতবার করবে আঘাত সে আঘাত যন্ত্রণার কথা
তোমার কলম যাবে লিখে থামবেনা সেই কোনোদিন
সমাজের দায় থেকে যায় কবির কাছেই থাকি ঋণ
হে কবি, ভয়ে নয় কাঁপুক হৃদয় ভয় তুমি করবেই জয়
পকেটের কলম যাবে লিখে সব ভয় হয়ে যাবে ক্ষয়।
ও কবি, শান্ দিয়ে যাও মায়ের কান্না ভেজা চোখ
তোমার কলমে গৌরব ভুলে যায় যত কিছু শোক।
স্বাধীনতা দিয়ে গেল যারা সর্বহারার সেই দল
দ্বীপান্তর ফাঁসি কারাবাস বন্দীর জুটেছে যত ফল
মাটির পৃথিবী তা জানে তোমার কলম থামেনি
শাসকের দল তাই আজও কলমের কথা ভোলেনি
বেলা যদি আসে ফুরিয়ে থেমে যদি যেতে চায় শ্বাস
হাতের কলমে জানি তুমি লিখে যাবে তবু ইতিহাস
তোমার কলমে তাই আজও দিয়ে রেখো যত পারো শান্
তোমার প্রকাশ বাণী শোনে দেওয়ালেরও থাকে জেনো কান।
তোমার কলম লেখে গান দরদী মনে তাই বাজে
তোমার হাতের ছোঁয়া পেয়ে কলমের গৌরব সাজে
কবি আছে-ছিল-থাকবেও তাইতো কলম বেঁচে থাকে
আঙুলে ধরেছো যত চেপে সকলে তাইতো মনে রাখে
আকাশের চাঁদ দেয় ধরা স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না দেয় ঢেলে
তোমার আকুতি ভরা চোখ ছুটে যায় সব কাজ ফেলে
মনিহার প্রেমের কত কথা কত সুর কত সঙ্গীত
প্রিয়তমা মায়াবী এলোকেশ হারিয়ে গিয়েছে সম্বিত
ছলছল নয়ন ভরা জলে বিরহের বেদনা ভরা সুর
হারানো প্রেমের সুরে চাঁদ চিরকাল তবুও মধুর
রাতজাগা নিশাচর চোখে কাজলের মতো কালি মাখা
অপরূপ হয়েছে ততবার যায়নি কলম চেপে রাখা
হৃদয়ের মরমী অনুভূতি অনুভবে আবেশ দিলে ঢেলে
ছুটে যায় প্রাণ উড়ে যায় তোমারই টানেই সব ফেলে
তাইতো কলমে দাও শান্ আপনার মতো কথা কও
সকলের কথা লিখে রেখে জগতে ধন্য তুমি হও।
তুমি আছো তাই আমি থাকি এছাড়া আমার আমি কই
লেখকের হাতে হাতে আমি আমাকে দিয়েই করে সই।
কবি, তুমি বৃদ্ধ যত হও সব কথা যাও লিখে লিখে
আমাকে দিয়েই জয়গানে ছড়িয়ে পড়ুক দিকে দিকে।
দিয়েছো যখনই পরীক্ষা গিয়েছো লেখার মাঝে ঠুকে
মুখে তুলে নিয়েছো কতবার যতনে রেখেছো পুনঃ বুকে
ভুলিনি সেসব কোনো দিন আমাকে দিয়েই যাও শান্
চেতনার ফুলকি দাও জ্বেলে ঘুম ভেঙে জাগুক পাষাণ।
তুমিও কালের বিবরণে নর নও, হও ভগবান
তুমিও লেখো অবিরাম জাগিয়ে তোলো জনগণ
মধ্যযুগীয় চেতনার দুর্গম পাহাড় ভেঙে দিয়ে
ভগীরথ করে গড়ো তারে কলমে আলোর আশা দিয়ে
তোমারও রয়েছে কত দায় কাঁধে নিয়ে দায়িত্বের বোঝা
কলমে তোমার পরিচয় নিরন্তর পথ তাই খোঁজা
তোমার এগিয়ে দেওয়া পথে পায়ে পায়ে পথ খুঁজে চলা
তোমার লেখার ভাষা নিয়ে মুখ তুলে সেকথাই বলা।
চিরন্তন কলমে তোমার হোক নিরাশার আঁধার অবসান
নিরন্তর তোমার চেষ্টায় কলমে দিয়ে যাও শান্।
অনিঃশেষ
কা জী নু দ র ত হো সে ন
অরণ্যের আজো সেই গান আছে..
কলতান আছে কত পাখিদের,
তেমনি অনন্ত এক আকাশ
আজো দ্যাখো মাথার উপরে,
পুরাতন আঁধারকে সাথী করে
চেনা আলো তেমনি খেলা করে,
তবু আমাদের কথা হলনা'কো শেষ
বাকি কথা আজো বাকি রয়ে গেল...
এমনই বেলা পড়ে এসেছিল বলে,
গত জনমেও বলা হয়নি'কো শেষ।
জীবন যে ছোটো হয় বয়সের থেকে
তুমি আমি সম্যক বুঝিনি'কো বলে,
আরো ছোটো হয়ে যায় আমাদের
মুখোমুখি বসবার স্বর্ণালী ক্ষণ।
উঠবার সময় বুঝি হয়ে এলো আবার
দীঘল আঁধারে ঘিরেছে চারপাশ,
যা কিছু বলার ছিল, রয়ে গেল বাকি
দ্বার বন্ধ হওয়ার কথা বলছে গোধূলি।
হৃদয় যদি দেখতে পেতাম
প্র দী প ম ণ্ড ল
হৃদয় যদি দেখতে পেতাম
হতো সবার কতোই না ভালো!
জাত পাতের বিচারে ভাগ না হয়ে
গুণাদির বিচারে সমাজ করতো আলো।
চুরি ডাকাতি কমে যেত
মেলা মেশা হত দেখে শুনে।
কথার সঙ্গে না মিললে হৃদতরঙ্গ
আগে থেকেই ধরা পড়তো ভণ্ড জনে।
চাটুকারি চাটতো না পা
নেতারা সকল করতো কাজ।
সুস্থ সমাজ বিরাজ করতো সদা
জন্ম নিতোই না দুষ্টু, ধান্দা-ধড়ি বাজ।
ভুগতো না কোন মা বোন
হতো না খুন জখম রাহাজানি।
যুদ্ধবাজ দুনিয়া হাতে হাত মিলিয়ে
একে অপরকে এগিয়ে দিতো এটা মানি।
লুট হতো না টাকা পয়সা
সততা হতো সমাজের আধার।
ময়লা জমে হৃদয় হতো না কালো
সুখ শান্তিময় হত সবার জীবন সংসার।
অপূরণ
শু ক দে ব দে
বইতে বইতে নদী হয়ে গেছি কবেই
ধরা সতীর মতো কেটে দিয়েছি স্তন৷
গ্রীষ্মে শুয়ে থাকে সর্বস্বান্ত কায়া
পাথরের ভাঁজ বালির পাঁজর খাবেই...
বাইতে বাইতে মাঝি হয়েছি বেশ
মনে হয় না আর নোনা ঘামের স্রোত
ক্লান্তিশেষে মাথা পাতি বলীর মতো
কবে স্থির দাঁড়? নোঙরের আঁচড় শেষ?
পুড়তে পুড়তে নিজেই হয়েছি আগুন
সবকিছু দিয়েও বাকি আছে কি আর?
দহনের শেষে শক্তি যেটুকু থাকে,
হাড়গুলোও নাও, বজ্র হবে তো দারুণ!
বিয়াল্লিশের এক
স ঙ্গী তা দা শ গু প্ত রা য়
মাঠের উল্টোদিকের দোতলা বাড়িটা, বিয়াল্লিশের এক। দরজার গায়েই লেখা।
ও বাড়িতে বল পড়লে আমরা চাইতে যেতাম না।
গোগোলদের জানলা দিয়ে বাড়ির ভেতরটা দেখা যায়
দরজা খোলা, ভেতরে ঢুকে সরু ফালি প্যাসেজ ডাইনে
বাঁয়ে লাল বারান্দা। বারান্দা ঘিরে পর পর কটা ঘর।
একটু ঝুঁকে দেখলে একটা চাতালের একদিকে বড় চৌবাচ্চা দেখা যায়।
একটা তুলসীমঞ্চও আছে আমাদের বাড়ির মত
আর একটা জবা ফুলের গাছ। ডালগুলো পাঁচিলের এদিকে অবধি চলে এসেছে
গোগোলের মা ডাল টেনে ফুল তুলে নিত দেখেছি। খুব সাহসী বাবা!
আমরা এসব দেখতাম গোগলের ঘর থেকেই
দোতলার দরজাগুলো বেশিরভাগই বন্ধ থাকত।
কে যেন বলেছিল ওই ঘরগুলোতে বাচ্চাদের আটকে রেখে মন্ত্র পড়ে বুড়ি বানিয়ে দেয়
আমরা সব্বাই জানতাম সে কথা। বিশ্বাসও করতাম
বুড়ি কে বানায় বুঝতাম না।
“ওই বুড়িগুলোর মধ্যেই একজন লিডার। শুধু মেয়েদেরই ধরে” শাপলা ফিসফিস করে বলত
কথাটা সত্যিই হবে। ছাদে অনেক সময়ই অনেকগুলো বুড়ি দেখি
মাঠ থেকেও দেখতে পেতাম দোতলার জানলায় বসে চশমা পরা একজন বুড়িমানুষ বই পড়ছে।
শাপলা বলত “খবদ্দার তাকাস না। হাত তুলে ডাকলে আর ফিরতে পারবি না। পা ওদিকেই যাবে। আর গেলেই জানিস তো। ব্যাস…”
সেবার দুগ্গা ভাসানের পর দেখি মা আর সোনাপিসি কলিং বেল বাজাচ্ছে ওই দরজায়
ভয়ে আমার পা যেন রাস্তায় গেঁথে গেল।
মা-কে ডেকে আটকাতে চাইলাম, গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোলো না।
শাপলা ফিসফিস করে বলল “ওখানে কেন যাচ্ছে রে কাকিমা? শিগগির বারণ কর!”
আমি দৌড়ে মার কাছে গিয়ে ডাকলাম, মা!
সোনাপিসি হাতটা ধরে বলল এই তো, বুবান এসে গেছিস। চল মাসিমাদের প্রণাম করবি
ভয়ে আমার গলা শুকনো কাঠ। পিছন ফিরে শাপলাকে একবার শেষবারের মত দেখে নিলাম।
বাব্বা! বাড়ি ভর্তি বুড়ি গিজগিজ করছে। তিন, চার, পাঁচ জন।
আমি ঢিপঢিপ প্রণাম করছি মা’দের দেখাদেখি
ছোট থালায় একটু মিষ্টি গজা, নারকেল ছাপা, মাখা মাখা ঘুগনি, বাদাম ভাজা
খাব কি! ভাবছি এই বুঝি বাইরে থেকে শেকল তুলে দিল।
মার কোনো হুঁশ নেই। হেসে হেসে গল্প করছে। সোনাপিসি আবার একটা সেলাই তুলে কাকে বলল গুজরাটি স্টিচ না? আমাকে শিখিয়ে দিন না মাসিমা!
কালো গায়ের রং, মাথায় সাদা চুলের খোঁপা, মুখে পান
একজন আমার চিবুক ধরে বললেন, বাঃ রাজকন্যে তোমার কত বড় হয়ে গেল বউমা!
এই মেয়ে হতে শেষ সময় অবধি গাড়ি পাওয়া যায় না… মনে আছে?
মা বলল, সেদিন গলিতে এক হাঁটু জল! আপনারা গাড়িটা না দিলে হাসপাতালে যেতে পারতাম না মাসিমা।
আমার ভয় কমে আসছিল। এদিক ওদিক ঘুরে দেখছি
পরী, পুতুল, ছোট বড় রঙিন কৌটোয় ফুল পাতা আঁকা, কাচের আলমারিতে সাজানো
ওঁদের মধ্যে একজন বললেন, পুতুল নেবে? কোনটা পছন্দ?
মা তাড়াতাড়ি বাধা দিল “ওকি মাসিমা! একদম দেবেন না। কত দামি জিনিস এসব”
খানিক পরে বেরিয়ে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম
মাকে বললাম ভাগ্যিস দরজা আটকে আমাদেরকেও বুড়ি বানিয়ে দেয়নি!
মা অবাক হল, সে আবার কী রে?
তারপর সব শুনেটুনে হেসেই খুন!
ওরা, ওই পাঁচজনই নাকি আসলে বোন
কর্তারা মারা গিয়েছেন। ছেলেপুলে সব সংসারপাতি করছে মন দিয়ে
শেষ বয়সে বাড়িঘর তাদের জিম্মা করে বোনেরা একে একে এসে উঠেছেন এখানে
এখানে কেন?
সোনাপিসি বলে ওমা! এটা তো ওঁদের ঠাকুদ্দার বাড়ি।
ঠাকুদ্দার ছিল একটিমাত্র ছেলে। সেই ছেলেরই এই পাঁচ মেয়ে
মা বলল সে ঠাকুদ্দার নাম তুইও জানিস। এ পাড়ার সব্বাই জানে।
কী নাম? আমি অবাক হই
“সাধুচরণ সেন”
ওমা! এ নাম তো খুব চেনা!
আমাদের গলির গায়েই লেখা আছে “সাধুচরণ সেন রো”
মহাপয়ার
ঊ ষা গ রা ই
ছেলেটি কাগজের নৌকো ভাসাতো
অতল গভীর তার চোখ দুটিতে
উজানী বেলা কিংবা
স্বপ্নময় অবেলায়
শ্রাবণে অথবা প্লাবনে,
ভালোবাসা ঝরে পড়ে তার
ঠোঁটের মিতব্যয়ী হাসিতে
চোখের কোমল দিঠিতে
তার শ্যামলা মুখের শিশির চূর্ণি ঘামে।
ওই মাদকতাময় চোখ দুটিতে
ডুব দিয়ে ছিলাম একদিন
জৈষ্ঠ্যের ভরা দুপুরে যখন
ঝিমধরা উদাসী গাছের শাখারা
ক্লান্ত শ্বাস বহিয়ে দিত
তখনও বহে যেত দুটি মনে
প্রেমের নিভৃত জোয়ার
সে অনুভব লুকিয়ে এসেছি
নূপুর বোষ্টমীর কুঞ্জে।
সে এক উতলা ফাগুনে, ফাগের আগুনে
রাঙা সিঁথিতে স্বীকৃতি পেয়েছিল
আমাদের ভালোবাসার মহাকাব্য।
পলাশের রঙ তখন আমাদের সারা শরীরে
আচ্ছন্ন তখন মন আমাদের এক নিষিদ্ধ নেশায়
সেকথা বলবো, কোনও একদিন
কদমফোটা সন্ধ্যেয় অন্য কোনও খানে।
সেদিনের সেই বাসন্তী পূর্ণিমার চাঁদ
ঢেলে দিয়েছিল সমস্তটা আশীর্বাদের ঔজ্জ্বল্য
আমাদের মাথায়।
তারপরের কাহিনীটা একটু অন্যরকম
হয়তো কাহিনীকারের মনে ছিল
অন্য কোনও ভাবনা।
আমি চলে গেলাম সাত সমুদ্দুর তের নদীর পারে
জাদুকরী আস্তানায়, আর-
সে চলল সুখ কিনতে হাটে-বাজারে
পশরা সাজানোই ছিল, হল কিছু বিনিময়
তারপর সে উজানে বেয়ে চলল কত নদীপথ
খবর পাই, আজও সে
পৌঁছোতে পারেনি মোহনায়
তার কাগজের নৌকো নিয়ে
আমি বন্দীদশায় কাটাই দিনরাত।
আজ দীর্ঘ বছর পরেও
আমার আকাশে একটাই ধ্রুবতারা জ্বলে
সে স্নিগ্ধ আলো বুকে জড়িয়ে পথ খুঁজে ফিরি
তবু আমার একা অতিক্রম করা পথ
বারবারই থামিয়ে দেয়
সেই আবির গুলাল ভরা বাসন্তী দিনে
বারবারই আহত পাখির মতো
ডানা ঝাপটাই নিষ্ফলা প্রয়াসে
নির্ঝরের মতো ঝড়ে ভেঙে পড়ে
স---ব অভিলাষ।
তাই আজ বিষণ্ণ দুপুরে
হাহাকার ভরা মনে একলা বসে
কাগজে কলমে অন্ত্যমিল খুঁজি
মহাপয়ারের... মহাসময়ের
মহাপ্রয়াণের অন্ত্যমিল।
জলের দুপুর থেকে
শ র্মি ষ্ঠা ঘো ষ
জলের দুপুর থেকে যে মাছটি উঠে এসেছিল, তার একমাথা ঘন কেশ, দুটি নীল চোখ, ভাঙা চাঁদের মতো দুটি কান, তরোয়ালের মতো বাঁকা তীক্ষ্ণ নাক, শালুকের পাপড়ি ঠোঁট, শ্যাওলা মাখা দুটি স্তন আর স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ-ন্দ মন ছিল।
আমরা সশব্দে নির্বাক তাকিয়ে ছিলাম দুজনের দিকে। অকস্মাৎ ভাঁটার টানে জল তাকে কেড়ে নিলো। সে তখন কিছু বলার চেষ্টায়... যেমন ধূপ নেভার আগে শেষবারের মত কিছু বলার জন্য হাঁ করে...
আমি একটা মেঘ হতে চাই
ক থা ক লি সো ম (পা রু ল)
আমি একটা আস্ত মেঘ হতে চাই,
সূর্যের তাপে তপ্ত মাটি যখন ফেটে চৌচির হবে
আমি মেঘ ভাঙা বৃষ্টি হয়ে সেখানে
নদী হয়ে বয়ে যেতে চাই।
যার পারে গড়ে উঠবে সবুজ বনবীথি
পাখির কলরবে মুখরিত হবে বাতাস
কবিরা নরম ঘাসের উপর উবু হয়ে বসে
লিখবে কবিতা কল্পনা প্রেয়সীকে।
কখনও ভাসবে প্রেমের বন্যায়
কখনও ফুল ছিঁড়তে গিয়ে ছিঁড়বে পাপড়ি
কখনও দু'চোখ ভাসাবে প্রিয়াকে হারানোর বেদনায়।
যেখানে স্থান শুধু কল্পনা আর ভালোবাসার
বিচ্ছেদ যেখানে অজানা
হিংসা যেখানে অচেনা
দুঃখ কাউকে স্পর্শ করবেনা
সমালোচনাকে কেউ চিনবে না...
পাখির কাকলিতে মুক্ত হবে ব্যর্থতার জমাট ইতিহাস।
রুদ্র উত্তাপে বিবর্ণ রুক্ষ মাটি
যেখানে পাবে মুক্তির উল্লাস।
আমি এমন একটা মেঘ হতে চাই ।
হিয়ার মাঝে
অ মি তা ভ দে
কেমন করে দুলকি চালে আকাশ এলো
কেমন করে আকাশ জুড়ে মেঘের ভেলা!
ভাবতে থাকি এমনতরো হয় কি কভু
এলোমেলো ভেবেই চলি সারাবেলা।
মেঘের সাথে জাপটে ধরি সময়টাকে
মুঠোর মাঝে মিলিয়ে গেলো শূন্য আকাশ,
বাদল চোখের অভিমানে সূর্য্য হারায়
বৃষ্টি নামে দুকূল জুড়ে সোঁদা বাতাস।
বৃষ্টি ভেজা আদুর মনে কিসের নেশা
জল থৈ থৈ উঠোন কেমন রঙিন চিকণ,
হিয়ার মাঝে তুফান ওঠে কলকলিয়ে
মন খারাপের আজব খেলা দুলছে ভুবন।
এমনি করেই দিনের খেলা সাঙ্গ হলে
মেঘের দেশে পৌঁছে যদি যায় সহজে!
রাত্রি আসুক সদলবলে ছিনিয়ে নিতে
আপন পাবো আপন হবো হিয়ার মাঝে।
মা আসছেন
শ ম্পা মু খা র্জী কো লে
নীল আকাশে সাদা মেঘের অবাধ বিচরণ,
শরৎ বাতাসে শিউলি সুবাসে খুশিতে আজি মন।
ভোরের আলো করে ঝলোমলো কাশফুল নাচে তালে।
দীঘির জলে ঢেউয়ের তালে শতদল ওঠে দুলে।
প্রকৃতির আজ কতই না সাজ ভরেছে রূপের ডালি,
আনন্দে মুখরিত গাইছে অবিরত নানা সুরে কাকলি।
ভ্রমরের দল করে গুঞ্জন বসে ফুলে ফুলে,
শিশির বিন্দু দিচ্ছে চুমু শিউলির রাঙা গালে।
ধানের শীষে রোদ্দুর মিশে হেসেই লুটোপুটি,
মেঘ রোদ্দুরে সারাদিন ধরে করছে খুনসুটি।
চারিদিকে আজ পুজো পুজো সাজ নানান আয়োজন,
একটি বছর পরে আবার মায়ের মর্ত্যে আগমণ।
আজ সকালে
সু স্নি গ্ধা রা য় চৌ ধু রী
প্রতিদিন সকালের মতো এসেছে আজোও সকাল।
প্রতিদিনের প্রশ্নের মতো কিছু
প্রশ্ন জেগেছে মনের মধ্যে।
ভালোবাসা না শর্তসাপেক্ষে ভালবাসা,
কোনটা জীবনের সব চাইতে উপযোগী।
জীবন তো চলছে নিজের গতিতে,
সকাল থেকে দুপুর, দুপুরে থেকে রাতের সমাহার,
কিন্তু কিছু প্রশ্ন মনের মধ্যে রয়ে গেছে যা চিরসত্য
তাকেই গ্রহণ করতে হবে প্রশ্ন সেটাই বলে।
ভালোবাসা তো মনের ইচ্ছা, তবে শর্তসাপেক্ষে
ভালোবাসা, এটা আবার কি? ভালবাসা মানেই
তো কিছু চাহিদা, কিছুটা শ্রদ্ধা আর বাকীটা লোক
দেখানো আবেগ। কিন্তু শর্তসাপেক্ষে ভালোবাসা? সেটার কারণ হলো যখন ভালোবাসার মানুষ নিজেকে বিলীয়ে দেয় আধুনিকতার ধাঁচে তখন
জীবনে চলে আসে কিছু শর্ত আর সেই শর্ত দিয়ে সে প্রতিটা মানুষ কে করে বিচার,
তারকাছে তখন ভালোবাসা, ভালবাসা নয়- কিছু শর্তে বাধা এক জীবন।
তারসাথে প্রতিনিয়ত জড়িয়ে থাকা মানুষ
এর দ্বারাই শর্তের দ্বারাই নিরীক্ষিত ও উপেক্ষিত।
এ যেনো ভোরের এক নতুন চাহিদা।।
সে দিন তো নয় দূরে
নূ পু র রা য় (রি ন ঝি ন)
তুমি যখন বছর পঁচিশ
আমি দেখলাম আলো,
সেদিন থেকে মা ছায়া গাছ
আমায় বাসলে ভালো।
তুমি আমার প্রথম আলো
অমর প্রেমের খনি,
তুমি আমার একলা আকাশ
আমার জন্মভূমি।
জন্মভূমি মুক্ত হলো
বলি বীর সন্তান,
মায়ের কোল হয়েছে খালি
শহীদ কত যে প্রাণ!
অনেক কিছুর বিনিময়ে
পতাকা উড়ল মুক্তির,
শিকল মুক্ত ভারতবাসী
গান ধরে দেশ ভক্তির।
করলে তুমি পঁচাত্তর পার
বিশ্বের চতুর্থ শক্তি,
উন্নত দেশ পাচ্ছে যে ভয়
চলছে ভারত ভক্তি।
জগৎ সভার শ্রেষ্ঠ আসনে
তুমিই আবার বসবে,
সেদিন তো নয় বেশি দূরে
সারা বিশ্ব হাসবে।
তবুও ব্যর্থ
ক বি তা ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়
একটা শরৎ আঁকতে গিয়ে ব্যর্থ হচ্ছি বারবার
কিন্তু আঁকার রসদ-যোগান অনবরত...
শ্রাবণ শেষ না হতেই হিংসুটে কাশফুল
জবরদখল করেছে নদীর পাড়,
রেল লাইনের ধার আর মাঠে-ঘাটেও ইতি-উতি।
আকাশে পেঁজা তুলোর হাট,
ভোরের হাওয়ায় হালকা শির শিরানি,
রোদ ছায়ার লুকোচুরি খেলা
বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে
আসছে সে...
"পথে সেচন কোরো গন্ধবারি
মলিন না হয় চরণ তারি"
তাই, শিউলি বিছিয়ে দেবে মখমলের গালিচা,
ভোরের ঘাস শিশির ফোঁটায়
ধুইয়ে দেবে তার অলক্ত-চরণ,
স্থলপদ্ম সাজিয়ে দেবে বরণডালা,
খুশির ছোঁয়ায় উত্তাল আকাশ ভাঁজ খুলে দেবে
নীল জমিতে সাদা বুটি জামদানির!
মেঘ বালিকার খুনসুটিও ক্ষণস্থায়ী
বরং বলাকার পথ ধরে উড়ে যাবে
বিছিয়ে দিয়ে ঝলমলে শামিয়ানা...
অথচ আমিই ব্যর্থ...
ডায়েরির সাদা পাতা আর খোলা কলম
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আমার দিকে,
আমার বর্ষণ ক্লান্ত চোখে
শ্রাবণ তার স্থায়ী তাঁবু গাঁড়ার চেষ্টায়...
মনে করিয়ে দিতে চাইছে অন্য একটা গল্প!
সঙ্গে যোগ দিয়েছে অ্যাম্বুলেন্স, সুইং ডোর,
সাদা পোশাকে কয়েকটা ছায়া আর
হরিধ্বনির পথে এক গোছা মাধবীলতা...
( কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি লাইন আছে লেখায়)
অন্তর্গত
সু প্রি য় কু মা র
যদি কখনো ঘুম ভেঙে দেখো
চারপাশে কেউ নেই
ভয় পেয়ো না।
ভেবো না তুমি একা।
একটা নদীর কথা ভেবো-
যদি কখনো দেখ সকল বিদ্রুপের
কটু কথার
কেন্দ্র বিন্দু তুমি,
পাশে কেউ নেই
কেঁদো না, চিৎকার কোরো না,
একবার আকাশের কথা ভেবো।
যদি দেখ সামনে কোন পথ নেই-
সব কিছু রুদ্ধ হয়ে গেছে-
দিশেহারা হয়ো না,
একটা অরণ্যের কথা ভেবো।
নদীর প্রবাহ আকাশের অন্তহীনতা
আর অরণ্যের
নির্বাক অধ্যবসায়ের মধ্যে
এক অঙ্কুরোদগমের ইতিহাস লেখা থাকে।
সবুজের সমারোহ
অ ন্ন পূ র্ণা দা স
কি লিখি গাছ নিয়ে মনে মনে
ভাবছে রূপকথা,
সে টবে দুটো গাছ লাগিয়েছিল
কিন্তু কোনটিতে বেশি জল
আবার কোনটি জল না পেয়ে শুকিয়ে গেছে,
পাশের বাড়ির ছাদে কাকু ও কাকীমাকে ফ্ল্যাটের রান্নাঘরের জানালা দিয়ে দেখে,
কি সুন্দর তারা গাছে জল দেয়,
মাটি খুঁড়ে গাছের গোড়ায় সার দেয়
আবার কখনো কথা বলে গাছের পরিচর্যা নিয়ে।
তারা কোন পরিবেশ দিবস নিয়ে ফেসবুকে ছবি অথবা লেখা দেয় না,
তারা স্বামী, স্ত্রী দুজনে ছাদ বাগানে একান্তে একটু শান্তির অবসরক্ষণ কাটায়।
তারা গাছের সাথে অনুভূতির আদানপ্রদানের জন্য গাছেদের একটি নাম দিয়েছে,
সেই নামে তাদের ডাকে, বাড়িতে থাকা ছোট শিশুটিও
গাছেদের সেই নামে ডাকে এবং মনের কথা বলে,
কখনো আবার মানুষকে ভালোবেসে গাছ দান করেন।
সবাইকে বলেন গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে
তাই এদের যত্ন নেওয়ার কথা,
তাদের এই গাছের প্রতি ভালোবাসা শুধু তার বাড়ির ছাদেই আটকে নেই,
তারা নীরবে পার্কে, রাস্তায় গাছ লাগায়।
তাদের এই গাছের প্রতি ভালোবাসা মানুষের কাছে আশেপাশের ফ্ল্যাট ও বাড়িগুলো সবুজ করে সাজানোর প্রেরণা হয়ে উঠেছে।
তারা এভাবেই প্রতিদিন প্রকৃতিকে সবুজের সমারোহে সাজিয়ে তুলেছেন নীরবে...
বিশ্বসভা
ক ল্যা ণী দে ব চৌ ধু রী (শি লা লি পি)
কবি তোমার হৃদয়ের কষ্ট
আঁকে কি বেদনার ছবি
সাত মহাসাগরের
যত জল রাশি রাশি,
ফুলিয়া ফাঁপিয়া উপচে ওঠে কি?
তোমার আঁখি মাগি;
কত কষ্টের পাহাড় বুকে
চাপে নিরবধি,
অথৈ পাথার কুলকিনারাহীন
হৃদয় মাঝার ছবি।
নোঙর করে না কেনো
শান্তির বার্তা নিয়ে যুদ্ধজাহাজ।
কে আছো বন্ধু ভাগাভাগি করো
এতো জ্বালার ভার।
নিখিল ব্রহ্ময় মিলাক কষ্ট;
করো ফুরফুরে মন ইথার।
বাতাসে মিলাক দেহখানি কর
শূণ্য নিক্তিতে ওজন,
হবে না আর কোন কালে
মহাসমুদ্র কষ্ট জলাধার।
সব কষ্ট মারো শুকিয়ে;
প্রখর সূর্য ধার।
বিদায় কষ্ট মুক্তি দিলাম
যাও চিরতরে,
হালকা বুকে ঘুরবো এবার
নিখিল বিশ্ব ঘরে।
আলোর প্রশস্তিতে
মা লা চ্যা টা র্জ্জি
এইমাত্র দীর্ঘরাত্রি চিরে আলোর জন্ম হলো,
দরজার আগল খুলে বাইরে দাঁড়িয়েছি,
তুমি কোলাহলের আনন্দে মেতে আছো
সূর্যালোক, এতোটাই মত্ত
ঘুম ভাঙাতে, যেন জীবনের
স্বপ্নিল হাসি দেখা গেল,
তোমার ভোরের আলো
দীর্ঘতর হয়ে আসছে, আরও সরব,
তুমি এতই বিশদ সম্ভার
বোঝোনা তোমাকে কত নামে ডাকি।
অপেক্ষা
স বু জ জা না
পাড়ার জলতলার চাতাল গড়িয়ে ঠান্ডা চাঁদের আলো
মায়াবী ফরসা পা ছড়িয়ে আছে আমার অপেক্ষার হাঁটু ঘেঁষে
তেমনই অদ্ভুত
তেমনই নিঝুম
আমি ডুবে আছি আলোর অনুরাগে আপাদমস্তক।
জলের কল থেকে টুপ টুপ শব্দে এখনও পড়ছে জলের ফোঁটা
সামনের পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিরা মাতাল
মাথায় উপর ডানার ঝাপট দিয়ে উড়ে গেল একটা বাদুড়
বুড়ো বটগাছের কোটর থেকে হুতুমের সাইরেন
আমি কিন্তু কোন শব্দই পাচ্ছি না
কারন আমার কানে কানে এক নারী বলে গ্যাছে,
সবাই ঘুমোলে জলতলায় আমি আসব....
আমার জিভে লেগে আছে লাল মদ আর মধুর স্বাদ
কানে অনিবার্য ছন্দ।
যে কথা হয়নি বলা
উ জ্জ্ব ল চ ক্র ব র্তী
তবু শেষ ইচ্ছে জানতে চাইলে বলবো
তোমার কোলে মাথা রেখে ছেড়ে যেতে চাই পৃথিবীর মায়া,
একদিন থেমে যাবে সুর,
জনপদ ছেড়ে হারিয়ে যাবো তুমি আমি
দেশ থেকে দেশান্তরে...
বহু জন্ম পেরিয়ে
যদি হাজার বছর পরও পৃথিবীর বুকে ফিরে আসি...
তুমিও এসো।
ভালোবাসার ডালি সাজিয়ে সেদিন ফিরবো পৃথিবীর বুকে...
নাম আমার দুর্গা
ছ ন্দা দা ম
ও দুর্গা তুই নাকি ঠাকুর,
তোর নাকি দশ হাত,
কই দেখি না তো সারাবছর যুদ্ধ করতে!
না গো মা দিয়েছিল নাম ভালোবেসে,
নামে কি এসে যায়!
রাঁধিবাড়ি সংসার করি, হৃদয় সেঁকে রুটি গড়ি,
স্বপ্ন আগুন জ্বালিয়ে রোজই চড়াই ভাতের হাঁড়ি,
বাচ্চা সামলাই, পরিজন সেবা করি, এই আর কি।
ও দুর্গা তোর নাকি অসীম শক্তি,
দশ হাতে দশ অস্ত্র...
কই প্রয়োগ করিস না তো কোনো দিন!
না গো নাম হলো বলে মা দুর্গা নাকি?
ঘরদোর ঝাড়ি, ময়লা তাড়াই, কাপড়চোপড় বাসনকোসন করিগো ধোলাই...
বিবেক, আমার গয়নাগাঁটি, সেজে থাকি পরিপাটি,
স্বপ্ন, আশা সবকিছুর পুঁটুলি বেঁধে...
উঠিয়ে রাখি আলমারির উপরটাতে।।
মাটির দুর্গাকে সাজাও তোমরা ত্রুটি বিহীন,
আসল দুর্গা সে তো মেয়ে সাধারণ...
তার মুখের দিকে না তাকিয়ে মনের দিকে মন ফেরানোর সময়,
ওগো... তোমরা পাও কি সারাজীবন!!!
জীবন সায়াহ্নে
প্র দী প কু মা র দে নী লু
জীবনের সায়াহ্নে এসে আজ আমরা পথ হারিয়েছি,
দুজনে দাঁড়িয়ে আছি বয়ে যাওয়া নদীর দুই তীরে,
পাশাপাশি রেল পথের মতো পাশে থাকা অথচ আলাদা,
এতো অভিমান অন্তরে! গান আছে- গলদ সুর তাল লয়ে।
অবাঞ্ছিত সময় সেতারের ছেঁড়া তারের কান্নার অবসাদ বয়ে,
পৌঁছে গেছি স্বপ্নের মায়াজাল বুনে ক্লান্ত পদক্ষেপে ধীর পায়ে,
বনজ প্রান্তর জুড়ে শুধুই অসীম শূণ্যতা, তুমি নেই! চারপাশে
টুপটাপ পাতা ঝরার নিবিড় নিঃস্বতা পদচাপে পিছুপানে চাই
নাহ! এই রৌদ্রতপ্ত দুপুরের খরতাপে সর্বত্র নিঃসঙ্গতা কেউ নেই
মন বলে ফিরে যাই নিজ নিকেতনে, তার আগে একটিবার
তোমার নাম উচ্চারণ করি, সেই নাম ছড়িয়ে পড়ে হাওয়ায় ভেসে
সমগ্র চরাচর মাঝে, আমার যাত্রা শেষ! ফিরে যাবো ভিড় ঠেলে শহরের আনাচে কানাচের দৃশ্য খুঁটে খুঁটে, তুলে নেবো স্মৃতির সম্পদ, অস্ফূটে বলি ভালো থেকো।
ভালোবাসি
মু হা ম্ম দ আ ল ম জা হা ঙ্গী র
ভালোবাসি তোমায় খুব খুব,
ভালোবেসে তোমার মাঝে দিয়েছি ডুব।
ভালোবাসি তোমার মুখের হাসি
ভালোবেসে তাই তো থাকি পাশা-পাশি।
ভালোবাসি তোমার রূপোলি পশম চুল,
ভালোবেসেই তো ক্ষমা করি তোমার শত ভুল।
ভালোবেসে তাই খুলেছি হৃদয়-আগল
ভালোবেসে আজ আমি তাইতো বদ্ধপাগল।
ভালোবাসি তোমার কর্মী দেহের ঘাম,
শ্রমসুখও আজ মিটিয়ে দিয়েছে দাম।
ভালোবেসে গাই স্থায়ী অন্তরা আভোগ,
ভালোবেসেই তো দূরে রাখা যায় শত রোগ শোক সম্ভোগ।
ষোলয়ানা
অ জি ত কু মা র জা না
অর্ধেক আর অর্ধেকে অখন্ড এক,
দুটো অঙ্কের মুদ্রার যোগফল।
দুটো মাসেই একটা ঋতু,
একে একে দুই জোড় মৌলিক।
একটা নীড়ে দুটো পাখি,
দুটো আঁখির দৃষ্টি এক।
দুটো হাতেই বাজে তালি,
দুই বর্ণেই শব্দ ওড়ে।
দুটি পাতার মাঝেই ফুল,
দুটি পায়েই পথ চলে।
দুটি পৃষ্ঠায় এক পাতা,
তবলা-ডুগি বোল তোলে।
এক পৃথিবীর দুটো ভাগ,
জোড়, বিজোড়েই সংখ্যা হয়।
ভ্রূণের জন্ম দুই লিঙ্গেই,
তাল, ছন্দেই সুর মিষ্টি।
একলা পুরুষ সৃষ্টি ছাড়া,
আটআনা আটআনায় ষোলয়ানা।
শাস্তি
শা শ্ব তী চ্যা টা র্জী
যে কোনো ওজোরে
সকলে কেমন দূরে হেঁটে যায়
ঘাট ছেড়ে পারাপারের দিকে
দুলুনি চারাটি ছেড়ে দাম্ভিক বৃক্ষের দিকে
স্বতঃসিদ্ধ মাটি ছেড়ে স্বল্পায়ু রংধনুর দিকে
মেঠো চর্যাপদ ছেড়ে আদেখলা কোরাস সন্ত্রাসে
সূতিকাগৃহের থেকে ছায়ালেশহীন
বাস্তুহীন হেঁটে চলে আগন্তুক মায়াহীনতায়
তারপর
জামাকাপড় ছিঁড়েখুঁড়ে পুড়িয়ে ভিজিয়ে
ফিরে আসে কিম্ভুতকিমাকার
সমস্বরে হল্লা করে
গালি দেয়
একটা একটা বাজে খরচা করে
অদেখা পুঁজির থেকে বাদশাহি মোহর
ততক্ষণে পথিক চাঁদ হাঁটু ভেঙে বসে
হোগলা জঙ্গলের পেটে ঘাপটি মারে জোলো অন্ধকার
অদূরের জানলা বয়ে যায়
এটা সেটা অকৃপণ ক্ষয়ে যায় নষ্ট তিথিতে
অথচ সামান্য শস্য মাঝামাঝি জল ও বাতাস
বারোমেসে খুদকুঁড়ো
আদুড় গায়ের সুখে পশমিনা বিষাদের লেপ
কাছেই ছিল
অথচ বোবায় পায়
মানুষ কেমন
আধা অজুহাতে
রাঙানো খোলস পরে দূরে হেঁটে যায়
কমলা গাঁয়ের শ্যামলা মেয়ে
ম ধু ছ ন্দা গা ঙ্গু লী
কমলা গাঁয়ের শ্যামলা মেয়ে-
দেখি তোমায় চেয়ে,
ডাগর চোখের ওই চাওয়াতেই
উঠছি আমি গেয়ে।
পা দুটি তার আলতারাঙা
নূপুর দিয়ে বাঁধা,
রিনিঝিনি সুর উঠল বেজে
মনে জাগল ধাঁধাঁ।
গান দরিয়ায় ভাসিয়ে তরী
চলল ধীরে ধীরে,
সুরের মধুর মূর্চ্ছনাতে
ঠেকল গিয়ে তীরে।
খোঁপায় গোঁজা কনকচাপা
গলায় জুঁইয়ের মালা,
ভীরু চোখে চারিদিকে চায়
কমলা গাঁয়ের বালা।
নদীর জলে স্নান করে
হাতে ফুলের সাজি,
মন্দিরেতে পূজার ক্ষণে
শঙ্খ উঠল বাজি।
ডাগর চোখের মদির চাওয়ায়
উঠল জেগে নেশা,
মন দরিয়া উথাল পাথাল
পাইনা কোনো দিশা।
তোমার রূপের সুবাস আজ
আমায় আছে ছেয়ে,
ভালোবাসায় তোমায় খুঁজি
ও শ্যামলী মেয়ে।
পাঞ্চালি
সু জি ত মু খো পা ধ্যা য়
আজও তুমি পাশার বাজি পাঞ্চালি।
পঞ্চ স্বামীর চোখের সামনে বিবস্ত্রা, নতমুখে রাজ্যসভায়।
লজ্জা ঢাকতে চোখ বুজে প্রার্থনা নিষ্ফল।
আজও তুমি প্রতারিত ,
কামনা দগ্ধ অহল্যা।
যে হৃদয়ে ছিলো মেঘ পালকের ছোঁয়া--
সে হয়ে গেলো কঠিন পাষাণ।
মুক্তিকামী অপেক্ষা সে ও এক পুরুষের স্পর্শ কৃপায়।
আজও তুমি রাজসুখ ত্যাগী জানকী---
পিতৃ আজ্ঞাবাহী স্বামী অনুগামী।
শত বৈভব উপেক্ষায় স্পর্ধা ধরো সতীত্ব আঁকড়ে।
তোমার জন্য আমরা বুনেছি অবৈধ চাদর।
তোমার গায়ে জড়িয়ে নিরাপদ উষ্ণতায় হাত সেঁকে নিই আমরা পুরুষেরা।
অগ্নিপরীক্ষা সে শুধু তোমারই সতী কোমল চামড়ার জন্য বরাদ্দ রেখেছি।
আজও ভালোবাসা আর বেঁচে থাকা চেয়ে, ডুবে থাকো নিরাশ প্রতীক্ষায়।
প্রিয় পুরুষের প্রাণভিক্ষায়,
আজও সাবিত্রী মুখোমুখি যমরাজ সাথে যুক্তিজালে।
দেবাঙ্গণে রক্তাক্ত ঘুঙুরের তালে আজও নাচে বেহুলারা।
যুগান্তর সাক্ষী রেখে পুরুষ নিথরে ঘুমায়।
পাঁজর আহত করে জলথলি পেটে বয়ে,
নারী শুধু সতী হয়
একান্ত আপন দায়।
ছোঁ
স জ ল কু মা র টি কা দা র
রাস্তার শিশু। উড়ছিল সকালে...
চোখে শ্যেনদৃষ্টি। থাবার মধ্যে পোষা
তীক্ষ্ণ নখ!
সাবধান হওয়া ভালো, যারা ফুটপাতে
খাবারের দোকানে টিফিন করছ।
হয়ত এখনই নেমে আসবে
মৃত্যু থেকে জীবনে ফেরার
একটা চিল ছোঁ!
খোঁজ
সু জ ন প ণ্ডা
কোথায় সেই মানুষ
পায়ের পাতায় ধুলোর চাদর
মাথায় অবনত তারার আকাশ।
নীল অপরাজিতায় সেজে
এই শরৎ-এ
কোথায় সেই পুরুষ?
কার হাতে বাবুই পাখির বাসা?
একটি মানুষ ও একটি শাল গাছ।
কার দুঃখে তারা খসে?
কোন প্রশ্নে ধৈর্য্য হারায় কালবৈশাখী মেঘ?
এই অপেক্ষা শুধু সেই মানুষের জন্য।
কোথায় সেই নারী যার
বিষাদ জুড়ে মায়ের ক্লান্তি?
শুভ জন্মদিন
শা ম স উ জ জো হা
সব স্বপ্ন সত্যি হোক, আলোকজ্জ্বল হোক
জন্মদিন শুভ হোক
বড় হয়ে গেলে বাড়ে, ছোট বেলার জন্য শোক
জন্মদিন শুভ হোক
সব শোক কেটে যাক, সবুজ হাসিটা থাক
উচ্ছলতা থাক, অসীম আনন্দ থাক
আমাদের মাঝে থাক, আমাদের শিশুকাল
জন্মদিনের আনন্দে, কেটে যাক মহাকাল
এক থেকে এক
সু নী ল আ চা র্য
যখন যেখানেই যাই--- সেখানেই
আমার ঘর, আমার দেশ মনে হয়
এই যে মায়াস্নেহে গাছপালা
সবুজ প্রতীকে উজ্জ্বল চলাচল
বুকের ভেতরে দুলে দুলে জীবন
কেমন আনন্দে-উচ্ছ্বাসে আত্মহারা
যখন যেখানেই যাই--- সেখানেই
মানুষে মানুষে একই মানুষ
তবু কত রঙ, কত বিচিত্র গড়ন
এক থেকে এক কেমন আলাদা
উৎসর্গ
সু র ঞ্জ না বি শ্বা স দে
পাথরে মুরতি গড়বো কার??
যতোবার পাথরে করছি আঘাত...
ফুটে উঠেছে চোখের পাতায়...
সেই মুখ... সেই আকুতিলব্ধ স্নেহ...
যার আঁচলে বেঁধেছিলাম আমার আকাশ।
যতোবার ভেবেছি প্রতিমা গড়বো খড়কুটোয়...
কেউ যেনো মাটি হয়ে দিয়েছে আশ্রয়...
যতোবার টেনেছি রেখা দেবতার নয়নে...
দেখেছি সেই দুটি চোখ...
যার অগ্নিধারা... যেনো যজ্ঞকুণ্ড থেকে উঠে
আসা হোমাগ্নির ছটা...
শুদ্ধ হয়েছি আত্মদহনে।
যতোবার নিজেকে ভাঙি গড়ি...
যতোবার নিজেকে যাচাই করি...
নিজেকে মনে হয় এক কারো ছায়াসঙ্গী...
একতাল কাঁচা মাটি...
কোমল দুটি হাতের মমত্ব ছাড়া শুধুমাত্র
অসম্পূর্ণ উপলব্ধি।
চার পাশে জমাট আঁধারে...
তার মাঝে আলোর সন্ধান,
ঘুরে ফিরি মন্দির থেকে মন্দিরে...
কতোটা অবুঝ হলে তবেই এতো অপূর্ণতা,
ঘরের সামান্য আগুনেই তো দেওয়া যায়
রম্য আহুতি,
হৃদয় যদি হয় সুগন্ধি সমিধ,
ভোগের থালায় দিয়ে একমুঠো ভালোবাসা
মরমী পাষাণে উৎসর্গ করে দিই আত্মজন,
...মা--- এক অপার্থিব সুখ।।
কলম
অ মি ত চৌ ধু রী সি ন্টু
কলমে কি আছে?
কলম তো যে কেউ কিনতে পারে!
কলমে কি আছে?
কলমে তো যে কেউ লিখতে পারে!
কলমে কি আছে?
কলমে তো যে কেউ সই করতে পারে!
"তবে কলমে কি এমন আছে যে এত দামি?
কলম তো কলম,
দাম অতি-সামান্য!
যদি সঠিক জায়গায় সঠিক ব্যাক্তি কলম চালাতে পারে, তবে সাধারণ সই অটোগ্রাফ-এ পরিণত হতে পারে,
যদি সঠিক সময় সঠিক বয়সে কলমের মূল্য কেউ বুঝতে পারে তবে দেশের সর্বোচ্চ আসন ও পেতে পারে।
একমাত্র কলম-ই পারে মানুষের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে,
শুধুমাত্র কলম- ই পারে মানুষকে নিচু থেকে উপরের দিকে উঠাতে,
আর আঙ্গুল ছাপ কে উপর থেকে নিচের দিকে নামাতে!!
কিন্তু আজ কেন যেন মনে হয় কলমের কালি হয়তো সবার শেষ হয়ে গেছে,
নতুবা কলমের জায়গা দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে,
কলম এর মূল্য হারাতে বসেছে নয়তো বা কলম ভয়ে নিজ স্বার্থে লুকিয়ে থাকছে।
নইলে কেন আজ শিক্ষিত সমাজ আঙ্গুল ছাপকে ভয় পাচ্ছে?
শিক্ষিত মানুষ আঙ্গুল ছাপকে মহাশয় বলছে,
আর কলমের সঠিক মূল্য পেতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে,
আঙ্গুল ছাপ মানুষের সামনে মাথা নত করে মুখ থুবড়ে পরে থাকছে,
এবং কেনই বা লাঠি ধরা লোকের হাতে আজ কলমধারীরা হেরে যাচ্ছে!
শুনেছি কলমে আঁকা কিছু ছবিও কথা বলে,
তবে আজ কলম নীরব কেন বলতে পারো?
ব্যাকুল মন
ব ন্দ না রা য়
আমার পরাধীন স্বত্বা মাঝে
কিছু শব্দের স্বাধীন খেলা-
কুড়িয়ে বেড়ায় কিছু খড়কুটো
খোঁজে সীমাহীন আকাশ
আর স্বতন্ত্র স্বাধীনতা।
মনের মাঝে শত সহস্র কাটাকুটির খেলা-
কখনো পড়ে আঁচড়ের দাগ
ফোঁটায় ফোঁটায় গড়িয়ে আসে রক্ত
নির্বিকার চিত্তে বসে দেখি
আকাশ পাতাল কল্পনার মাঝে
হতাশা আর উদাসীনতার ছাপ স্পষ্ট।
লুকিয়ে রাখি ব্যথার জ্বালা
অনেক তো হলো,
তাচ্ছিল্য ঘৃণা ক্ষমতার দম্ভ
অজস্র সীমাহীন অহংকার-
ছুঁতে পারেনি
ব্যাকুল অনুভূতির বন্ধ দরজা।
মনীষী মননে
শ্যা ম ল কু মা র মি শ্র
কাজী কবি! তোমার প্রয়াণ দিবসে তোমায় যেন আরো বেশি করে মনে পড়ছে
তোমার কবিতা গান আরো বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে আজ
জানো কবি! সময়টা এগিয়েছে
প্রবহমান জীবনে মুক্ত অর্থনীতি ছায়া ফেলেছে
ধর্মের বেড়াজালে বিজ্ঞান পথ হারায়েছে
বিসর্জিত বিজ্ঞানের ইতিহাস
মূঢ় রাষ্ট্রের ঢক্কানিনাদে বিজ্ঞান বিসর্জিত
'জাতের নামে বজ্জাতি' বেড়েই চলেছে
ব্রাহ্মণ্যবাদের অস্থির পদচারণা
তুমি কি শুনতে পাচ্ছ কবি বিলকিসের কান্না
ধর্ষিতা নারীর যন্ত্রণা
পাশবিক এক অত্যাচারের কাহিনী
বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কাঁদে
তোমার স্বপ্নের ভারতবর্ষ যমুনার ঘোলা জলে নিমজ্জিত
নীল স্বপ্নগুলো শরতের মেঘের মতো কোথায় হারিয়েছে
জানো কবি!
বড় ভয় করে এ কোন বিজ্ঞান?
ধর্মের মোড়কে ফ্যাসিবাদ সন্তর্পণে পা ফেলেছে...
ওহে মানুষ! তুমি আর একবার চোখ মেল
গর্জে ওঠো! মনীষী মননের আধারে
বীরের এ রক্ত স্রোত সে যে বৃথা যায়!
ক্লান্ত অবসন্ন আমি,
তোমায় আজও স্মরি
রাত্রির নিশীথে পাতা ঝরার মুহূর্তে
কান্না ভেজা বিলকিসের অশ্রু মাঝে
তোমার সহাস্য নয়নে
তেজোদ্দীপ্ত যৌবন মাঝে
নিরন্তর সৃষ্টির অভিলাষে
তুমি আজও উজ্জ্বল...
বৃষ্টি এবং...
ম ধু মি তা রা য়
বৃষ্টি এসেছিল
ছেলেটি বলেছিল...
শরীরই সব, মন দিয়ে কি হবে!
মেয়েটি বলেছিল...
মন ছাড়া সব মিথ্যে
ছেলেটি এখন মন নিয়ে ছিন্নভিন্ন
আর মেয়েটি নির্জন দুপুরে
স্পর্শের জন্য ছটফট করে
বৃষ্টিশেষ
মাটিজুড়ে ক্ষত
জলছবি
সোনালী রঙে ডুবলো
আহা! এত সুন্দর!
ছেলেটি ছাদে দাঁড়ালো
মেয়েটিও।
মুখ
সো ম না থ দ ত্ত
মেয়েটি সন্ধের মুখে সেজে গুজে দাঁড়িয়ে আছে সোনাগাছির রাস্তার এক ধারে।
মুখটা, অদ্ভুত রকমের চেনা মনে হল।
যেন, সেই কবেকার কোনো লাল ফিতে, সাদা মোজা, স্কুল ইউনিফর্ম।
কোনো কলেজ গেটে পাটভাঙা হলদে শাড়ি।
যেন বাবুদের বাড়ি দু'বেলা বাসন মাজা মলিন ফ্রক।
সংসারের হলুদ আর কালজিরের গন্ধে হারানো কোনো ছাপা শাড়ি।
মনেহল, সেই মুখ আমি দেখেছি প্রতিবাদী মোমবাতি মিছিলে।
ধর্ষিতা হয়ে পড়ে থাকা কোনো সুনসান রাস্তায়।
গলায় শাড়ি দিয়ে ঝুলে থাকা করিকাঠে।
উন্মাদ হয়ে বসে থাকা কোনো রেল ব্রিজের তলায়।
মনে হলো সেই মুখ আমি দেখেছি, কুমোরটুলির কাঁচা মাটির মূর্তিতে মূর্তিতে।
সব মুখ এসে মিশে যাচ্ছে সেই মুখে।
আর সেই মুখ পলকে হয়ে উঠছে, গোটা একটা সমাজ আস্ত একটা পৃথিবী।
আমি সেই আশ্চর্যময়ী মুখের সামনে গিয়ে দাঁড়াই।
যে মুখে কোনো কালিমা নেই। নেই কোনো পাপ পুণ্যের বালাই।
শুধু একটা আলো ফুটে আছে, নরম ভোরের মতো আলো।।
মুগ্ধতা
পা র্থ ম ন্ড ল
প্রকৃতির রূপ আমায় মুগ্ধ করে
ভোরের আনকোরা আলো আর আধফোটা ফুল আমায় মোহিত করে,
পূবের কোণ থেকে লাল সূর্য আকাশে আবির ছড়ায়
নেচে ওঠে শালিক জোড়া আর কত পাখি।
নিঝুৃম রাতের শেষে ভোরের আকাশ নতুন দিনের বার্তা আনে
আমি দুচোখ ভরে তন্ময় হয়ে দেখি আর দেখি,
কাজলা দিঘির জলে পানকৌড়ির টুপটাপ ডুব
তপস্বী বকের একপায়ে আরাধনা আমি প্রত্যক্ষ করি,
একে একে মানুষ জাগে
কৃষক মাঠে যায় সবুজ ধানের পরিচর্যা করতে
দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ধান আর হরেক পাখি
আমি তন্ময় হয়ে দেখি
এ আমার ভীষণ ভালোলাগা আমি মুগ্ধ হই।
পথে এসো সাথী
দে বা শি স স র খে ল
অসুখের শয্যা ছেড়ে পথে এসো সাথী।
রাজপথে নামো।
গৃহসুখ সন্ধানী মানুষ পথে বসে আছে।
ওদের সামনে দাঁড়াও
সমস্বরে বল
শুধুই উদরপূর্তি নয়
আমরা সন্ধান পেয়েছি নতুন বীজের
মহীরুহ হবে।
পথে এসো সাথী
পথরোধ করো।
পথের ওধারে
ভাঙ্গা রথ ভাঙ্গা ধ্বজ ভাঙ্গা হাত
নকল সারথি
নকল ফাল্গুনী।
ওপথ তোমার নয়
তোমার ধবল টাকমাথা
ভীষণভাবে বিশ্রী শ্রীহীন।
কোন শ্রী তোমার জন্য যথেষ্ট নয়।
ফ্যাসিবাদের চাকা তোমাকে মাড়িয়ে দিয়ে
যদি কাশবনে যায়
কার্নিভালে যায়।
যেতে দাও
পথরোধ করো ।
জিহ্বা বন্ধক দাওনি তুমি
ক্রীতদাস নও,
তোমার লাশের উপর ভাঙ্গা রাজছত্র পড়ে আছে।
ন্যায়চ্ছত্র হাতে পথে পথে মানুষের রাত্রি জাগরন।
তোমার লাশের দাফনে লিখনে
গণজাগরণের ছায়া।
প্রাগৈতিহাসিক
নী হা র কা ন্তি ম ন্ড ল
তিথি নক্ষত্র বিচার করে তোমার
সময় হলো এই মর্ত্যে আসার
প্রতি বছরই তুমি মর্ত্যে আসো
শরতের শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশে
শিউলি ফুলের সুবাস মেখে।
আমরা যে বছরভর খরা বন্যা রাহাজানি
দুঃসময় কিংবা ধর্মীয় হানাহানি
মহামারির সাথে অসম লড়াইয়ে জেরবার
তখন তো আবির্ভাব ঘটে না তোমার!
মর্ত্যে আসার আগে থেকেই তোমার আশীর্বাদ
ঝরে পড়ে তোমাকে কেন্দ্র করে
গড়ে ওঠা বানিজ্য বিস্তারে।
তুমি আসবে বলেই কুমোর পাড়ায়
মূর্তি গড়ার সাজ সাজ রব।
পাড়ায় পাড়ায় ডেকরেটরদের আনাগোনা
ছোটদের মুখে খুশির কলরব
ঢাকিরা তাদের ঢাকে পরায় নতুন সাজ
তুমি আসবে বলেই সারা বছর বেকার থাকা
যুবক যুবতীদেরও জুটে যায় ঠিক
শপিংমলের বিপনীতে দু'তিন মাসের কাজ।
ছাত্র-শিক্ষকের কাছে তুমি অখন্ড অবকাশ
সমস্ত ব্যবসায়ীর কাছে তুমি বানিজ্য বিকাশ
তোমার আগমন গড়পড়তা বাঙালীর কাছে
বহু প্রতীক্ষিত এক আনন্দ জোয়ার।
আর নুন আনতে পান্তা ফুরানো
মা-বাবার দুশ্চিন্তায় মাথায় হাত।
নিন্দুকেরা যদিও বলে লাস্যময়ী ছলনাময়ী
এক বারবনিতা তোমার আসল রূপ
আদিম অসুর নেতা হুদুড় দুর্গার নিধনযজ্ঞে
তুমিই ছিলে আর্যদের মোহময়ী টোপ
আর্যদের সাম্রাজ্য বিস্তারে সহযোগিতার
পুরস্কারই হলো তোমার এই দেবীরূপ
তাই কি আজও শাস্ত্রীয় বিধান মানতে
তোমার প্রতিমা গড়তে হলে ছুটতে হয়
বেশ্যাবাড়ীর একমুঠো মাটি আনতে
একি কেবল তোমার অতীতকে স্মরণ করাতে!
উৎসব প্রিয় বাঙালীর কাছে
প্রাগৈতিহাসিক ঐতিহাসিক সত্য
কিংবা অনৈতিহাসিক তথ্য বিকৃতির বিতর্ক
সযত্নে দূরে সরিয়ে রেখে
আমোদ প্রমোদটাই মুখ্য।
আগমনী আবাহন আরাধনার চেয়েও
বিদায় বিসর্জনের উৎসবেই বেশি মত্ত।
অলংকার
স ঞ্জ য় কু মা র ক র্ম কা র
বিনম্র ছন্দের কোলাহলে আধ্যাত্মিক করুণা,
ধ্বনি ও সঙ্গীতের নিদর্শনে মাতৃভূমির মহান সঙ্গীত,
হৃদয় মস্তিষ্ক ছুঁয়ে দিব্যদর্শন করে যায়।
একমুঠো রং, অলংকরণে সাজানো শশীমুখ,
বন্ধনী ছিঁড়ে প্রতিবিন্দু ছুঁয়ে নিরন্তর পূণ্যস্রোত...
অপার আনন্দে ছায়াগুলো বিকীর্ণ করে যায়।
প্রতিটি ঝংকারের সাথে মোহনীয় চঞ্চল নৃত্যেরা যখন সুখের সাথে খেলা করে,
তখন অ্যানথ্রোপোস যুগের মতন সূর্য্যের দীপ্তি গুলো প্রাণের অলিন্দে অদৃশ্য আলোকে রঞ্জিত করে যায়।
এই যোজনের পথে রঙের বাহার, দৃশ্যে অদৃশ্যে সৃষ্টির বিচিত্র লীলা।
চোখ ধাঁধানো রঙে রিভার অফ কালারস,
কৃষ্ণবর্ণ, শুভ্র বর্ণ ধারণ করে বন্দনায় পত্র পল্ববের জন্মটা ও যেন বিধিসম্মত হয়ে ওঠে।
সৃজনের পথে পথে বিশ্ব মানবতা,
আবার কখনো দিকে দিকে নির্ঘাত উল্কাপাত,
মহাশব্দে ঘন ঘন অগ্নিবৃষ্টির নিষ্ঠুর গর্জন,
ঘষা কাচের মতন অস্বচ্ছ আসক্তি নিয়ে,
স্বচ্ছতার বিচিত্র জীবনশৈলীগুলো যখন ফিরে আসে নিষ্প্রভ সেই প্রাণের আলো নিয়ে।
রাঙা বৰ্ণে পুষ্পের নৈবেদ্য,
রত্নপলার মতন সুগন্ধি মিশিয়ে জীবনের অন্বেষণে অচ্ছেদ্য নিবিড় সম্পর্ক...
প্রলম্বিত প্রান্ত থেকে রীতির উল্লেখে পরিধেয় পোশাক,
জীবন শৈলীর সচেতনায় সূচিশিল্পের অপূর্ব অলঙ্করণ,
উরু কাপড় পরিধান করে বিশাল প্রাচুর্যের ঐশ্বর্য নিয়ে মানুষ যখন অলংকারে অলংকৃত হয়।
দৈহিক পোশাকে তখন মানুষের সৌকর্যবৃদ্ধি ঘটে।
সামাজিকতার সৌন্দর্য বর্ধনে শঙ্খ ঝিনুকের খোলস থেকে যখন মুক্তো ঝরে,
রূপের সান্নিধ্যে প্রাচীন অলংকার :
গভীর বালুকাময় থেকে তখন অলংকার ছড়িয়ে পড়ে।।
অবশ্যম্ভাবী
প্র বী র কু মা র চৌ ধু রী
এ গোধূলি নয় তো প্রত্যাশিত, জাগায় হতাশা
মরমে মরে প্রেম অনভিপ্রেত অনন্ত যাত্রায়
হৃদয় ভরা ছিল তার সোহাগে মাখানো হাসি
ধ্বর্ষ নিশীথে ছিঁড়েছে তারে আজ সে বাসি।
মেতেছিল হওয়া খুশির তোলপাড়ে
ক্ষত চাঁদ ভুলে ছিল ব্যথা জোছনা ছড়াতে
তুফান এসে মিথ্যা ভালোবাসে-
ঠকালো শেষরাতে হিংস্র অভিলাষে।
সবুজ পাতা যেন খসে পড়ে অকালে
কামাঘাতে মর্মর ধ্বনি সহসা হৃদয় ভাঙ্গে
সাজানো নীড়খানি কালো মেঘে ছায়
বিশ্বাস কেঁদে ছোটে বলে হায়, হায়।
পাহাড় শীর্ষে দাঁড়িয়ে দেখি বঞ্চিতের রক্তচক্ষু
প্রতিবাদীর দৃঢ প্রত্যয় সংঘাত অবশ্যম্ভাবী
সূর্যদীপ্ত সকাল আজ দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় অনড়-
ডিঙ্গায় মিছিল রক্তাক্ত পায়ে জ্বলন্ত প্রান্তর।
পদ্মকুসুম
কো য়ে ল তা লু ক দা র
তুমি শুধু একবার খুলে দাও হৃদয়ের কপাট
এই উচ্ছ্বল যুবকের সামনে বন্ধ করো না দরজা
একবার খুলে ফেলো লজ্জার অবগুন্ঠণ।
তোমাকে শেখাবো কীভাবে ভালোবাসতে হয়
সব তছনছ করে, সব ভেঙ্গেচুরে কীভাবে গড়তে হয় শরীর শিল্প, হৃদয় ভাঙ্গতে হয় হৃদয়ের গহীনে
যেয়ে।
আমি হাঁটু মুড়ে দু'হাতে স্পর্শ করতে চাই স্বর্ণরেণু
ভুলে যাওয়া ঢের ভাল স্মৃতি কাতর যন্ত্রণা
তুমি এই উন্মূল যুবকের বুকে মাথা রাখো
তোমার সব মণিকাঞ্চন বিলিয়ে দাও অকাতরে।
আমরা মিলব নদীর মতো, অন্তঃশীল স্রোত ধারার মতো -- ভেসে ভেসে তুলে আনব অলক্তমাখা পদ্ম-কুসুম।
অন্য ঈশ্বরী
ম ঞ্জি রা ঘো ষ
আমাকে একবার
তোমার ত্রিনয়নী দৃষ্টির এক অযুত অংশ দাও--
আমি স্পষ্টত কতিপয় মানবিক মুখ দেখতে চাই।
আমাকে একবার
তোমার দশভূজের অঙ্গীকার দাও--
উৎসব অঙ্গনের চতুষ্কোণে
নিভে যাওয়া দীপের শিখাটুকু উস্কে দিই।
হতাশ পথ শিশুদের আদুড় গায়ে
মাখিয়ে দিই নির্ভেজাল আদর।
পৃথিবীর যত শত দুয়োরানীর মালিন্যে
আশ্বিনের প্রভাতী রোদ্দুর ছড়াক স্নিগ্ধ লাবণ্যে।
মুহূর্তে ধ্বংস করি,
আণুবীক্ষনিক মারণ ভাইরাসের
ছোঁয়াছুঁয়ি লুকোচুরি খেলা।
আমাকে একবার, তোমার শাণিত ত্রিশূল দাও--
অনায়াসে বিদ্ধ করতে পারি কামুক ধর্ষকের দুঃসাহস।
অন্তঃত একবার-
তোমার সিংহবাহন দাও
প্রয়োজনে জনারণ্যে যুদ্ধ ঘোষনা করতে পারি।
আমি তো বেহুলা নই,
কি করে ভাসাবো ভেলা পৃথিবীর
শবদেহ নিয়ে?
গাঙুরের জলে আজও বাজে
শিবরঞ্জনীর রিণিঝিনি।
পৃথিবীর সব ঘাটে অতর্কিতে হানা দেয়
চিল শকুনেরা ঝাঁকে ঝাঁকে।
একই চালচিত্রে বসে
অতীত ও বর্তমান করে কানাকানি।
আমি এক অন্য ঈশ্বরী।
নিজস্ব ক্যানভাসে
দিন বদলের ছবি আঁকি।
দুর্নিবার ঝঞ্ঝাবাতের ধুলোমাখা
পৃথিবীতে বর্ষণ শেষে নেমে আসুক
অলৌকিক শারদীয়ার আলো।
নির্ভয়ের আনন্দে বেঁচে থাক
আমাদের সন্তান-সন্ততি।।
জোট
চি র ঞ্জী ব হা ল দা র
তোমার সঙ্গে দেখা হবে প্রেতলোকে
তোমার সঙ্গে লুডো খেলবো রেল কামরা
তোমার সঙ্গে দেখা হবে বিনা টিকিট
কানে কানে শেয়ার করো প্রেমিক দামড়া
জেরুজালেমে দেখা হবে ইউফ্রেটিস
পড়শী রাই কানে কানে ছড়াবেই বিষ
না হয় কিছু কাটলো সময় চুলোচুলি
বেশরমে হাজির থাকি মোটা চামড়া
তোমার সঙ্গে দেখা হবে লোক আদালত
তোমার সঙ্গে বয়েই গেছে এই নাকে খৎ
তোমার সঙ্গে তোর সঙ্গে বিষ ও বাঁশি
কারসাধ্যি খুলবে আইন এ গাঁটছড়া
শ্রাবণীপার্বণ
আ ল্পি বি শ্বা স
পুণ্যার্জনের পথ কোনটি, কোন পথে গেলে আসবে প্রশান্তি,
কোন ঋতু বড় প্রশস্ত, ধর্মেকর্মে আনবে শান্তি?
নিজেকে সাজালে গৈরিক রঙে, ত্যাগের প্রতীক এ পোশাক
অপার্থিব রূপলোকেতে বিচরিছ স্কন্ধেতে লয়ে বাঁক।
ঘাসমাটির গন্ধ মাখা মায়াময় ভোর জড়ায় আলোক দু'চোখের দু'পাতায়
প্রাণবন্ত চিতে দ্যুতি উদ্ভাসিত মুখমন্ডলে শিবমহিমায়।
বড় চেনা এ বালুচর এ নীল জমীন-আসমান, বাতাস
রাতভর এরই মাঝে শুধু হেঁটে চলা, ঝকমকে মুখ, দ্রুত পড়ে শ্বাস।
ঝিঁঝিডাকা ঝোপ, শালুকের ঝিল- ম ম গন্ধধূপের সৌরভে
এই আমি শুধু অবগাহন করি বিশ্বভরা সৌন্দর্যবৈভবে।
কাঠের সেতু ও কিছু স্মৃতি
প্র কৃ তি দ ত্তা
অনেক দিন পর চলেছি এপথ দিয়ে,
কাঠের সেতুটায় ওঠার আগে থমকে দাঁড়ালাম,
প্রায় বছর দশেক আগে
নতুন কাঠ পাতা হয়েছিল পাটাতনে
শতবর্ষ পেরিয়ে যাওয়া জীর্ণ সেতুর হৃদয়ে পেসমেকার।
কেউ একজন হাতে হাত রেখে কথা দিয়েছিল
ফিরে আসবো আবার।
সেতু পেরিয়ে সে চলে গেল বড় রাস্তায়
সীমান্তে পড়েছে ডাক, যুদ্ধ অনিবার্য
আর ফিরলো না...
তারপর বহুদিন এপথে আসা হয়নি,
কেন আসবো? কিসের আশায়?
আজ যখন এ গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার সময় হলো
এই পথে ঝলসে উঠলো ফ্ল্যাশব্যাক,
সেদিনের নতুন পাটাতনে কালচে শৈবালের দাগ
সেদিনের স্মৃতি শোনাতে চায় ক্যাচক্যাচ শব্দে
কত পথিককে সে বলে, কিন্তু কেউ বোঝেনা
দুর্বোধ্য আওয়াজ, শুধু আমি বুঝি।
সময় রঙের জৌলুস কমিয়ে দেয়
সেদিন ভরা বর্ষায় নদী ছিল ঘোলাটে
দুই তীরে সবুজে সবুজ।
আর আজ, জলে কালচে মেরুনরঙা ট্রিন্টিপোহলিয়ার দাম
সবুজ হারিয়েছে ধুলোয়।
কাঠের রেলিঙে শেষ বারের মত হাত বোলালাম
মনে হলো, সে যেন বলছে, "তুমি ফিরে আসবে তো?
হারিয়ে যাবে না তো তার মতো?"
ভিতরে বয়ে গেলো বেদনার ফল্গুধারা,
বিষণ্ণ হাসি নিয়ে এগিয়ে গেলাম।
প্রকৃতি তার রঙ ফিকে করে দিতে পারে,
আর আমি পারবো না স্মৃতি ভুলে থাকতে?
ছোট্ট কাঠের সেতু, তুমি আমাদের গল্প শুনিও আগামীকে
কংক্রিটে ঢেকে না যাওয়া পর্যন্ত
চিৎকার করে বোলো,
তারপর, তারপর তো তোমার পালা,
তোমাকেও পথ ছেড়ে দিতে হবে।
সে যে রূপকথারই দেশ
সা য় ন্ত ন ধ র
বাদল দিনে ওই আকাশের বুকটি চিরে
ঝরলো বারি, আয়না হলো তেপান্তরে
বর্ষা দিনে জল সায়রে চল ভাসি
তিস্তা নদী ডাকছে আমায় করুণ সুরে
রাখাল তুমি বাজাও গো ভাই সেই বাঁশি।
সায়ন্তিকায় সূর্য যখন নেই সহায়
অভাবী সংসারেতে সলতে কিনতে তেল ফুরায়
অপেক্ষাতে কাটবে সে রাত যেমন কাটে
দুঃখগুলো ঘুচবেই কাল ভোরের আলোয়
বানভাসিরা দেখো চেয়ে নৌকো বাঁধা ঐ ঘাটে।
আজ দেখো গো চেয়ে চেয়ে নীল আকাশে
সাদা পেঁজা তুলো মেঘের ভেলা ভাসে
তেপান্তরে উঠছে জেগে ঐ ডাঙা
জলছবিতে ঝলমলে এক দিন হাসে
আয়রে সবাই সারাবো আজ পাড় ভাঙা।
তারপরে হাত লাগাই সোনার ধান বোনায়
বাড়বে চারা যত্ন নিলে এই সময়
বাদল মেঘের ছুটি হবে দিনে দিনে
সবুজ ধানের ফুল বাতাসে পরাগ ছড়ায়
হেমন্তিকায় ভরবে গোলা মাতবো নবান্নে।
স্বপ্ন
স ন্দী প কু মা র মি ত্র
জানি না কবে ফিরে যাব যে
অনন্তের ঐ কোলে
পারবো কিনা তোমায়
যেতে বলে!!!
ভুল বুঝনা ভালোবাসা
শোক কোরো না তখন
সংস্কারটা ধরে রেখ
করে পরম যতন।
চিনতে তখন পারবে নাকি
কেমন হবে বেশ
কি নামেতে ডাকবে আমায়
কোথায় আমার দেশ।
আবার যখন আসবে ফিরে
অন্তরেতে নিয়ে
বাসবে তুমি আমায় ভালো
মেঘমালা সরিয়ে?
চোখের পাতায় কাজল রেখো
ঠোঁটে মুক্তোর হাসি
প্রাণ ভরিয়ে ডাকবে তখন
এক ছুটেতে আসি।
মনে যেন সোহাগ থাকে
কন্ঠে থাকে গান
শুনেই যেন চিনতে পারি
ব্যাকুল হবে প্রাণ।
এই বেলাতে কাটছে কতো
রোদ বৃষ্টি ঝড়ে
পরেরটুকু জোৎস্না হয়ে
হৃদয় দিয়ো ভরে।
সেইদিনেরই স্বপ্ন দেখি
নিভিয়ে ঘরের আলো
তুমি কি আমায় রাখবে মনে
বাসবে তখন ভালো?
হাতে নিয়ে দোতারাটা
গাইবে প্রাণের গান
ঝুমুর পা সঙ্গী হবে
মিলিয়ে মনের তান।
বিভোর হয়ে থাকবো দু'জন
গানের ভেলায় ভেসে
স্বপ্ন তখন সত্যি হবে
যদি দু'হাত ধরো এসে।
বলবে তুমি নাও গো আমায়
বাউল তোমার সাথে
প্রাণের সুরে করবো রেওয়াজ
দোতারাটি হাতে।
মিলিয়ে গলা গানের সাথে
মিশিয়ে দিও প্রাণ
জীবন লীলার সাথি হয়ে
বুকের মাঝে স্থান।
বাউল বলে ডাকবে তোমায়
রং বাহারী সাজে
পরবে গলায় মতির মালা
মরবো আমি লাজে।
যত্ন করে তোমার সাথে
বসবো দিনের শেষে
তুমিই হবে মনের মালিক
হাল ধরবে এসে।
বিভোর হবো প্রাণের ছোঁয়ায়
চোখে জলের বান
বাউল মনের দোতারাটা
গাইবে সাথে গান।
দোতারাতে সুরের বাধন
পায়ে নূপুর বাজে
দু'চোখ ভরে দেখবো তোমায়
সকাল দুপুর সাঁঝে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন