রম্য রচনা
ট্যাংগোদার পুলিশকে ফাঁকি দেওয়া
অ শো ক বো স (দে ব ব্র ত)
সারাদিন ঘরে আটকা। অনেকটা যেন ঘরে রাখা বিদেশী কুকুরে মত। যাতায়াত বড় জোড় বাউন্ডারির গেট পর্যন্ত। কুকুরও অন্তত একবার রাস্তায় বের হবার সুযোগ পায় প্রকৃতির ডাককে সম্মান জানানর খাতিরে। ট্যাংগোদার সেই সম্মান জ্ঞাপন ঘরের সাথেই অ্যাটাচড্। অতএব বাইরে বের হবার উপায় নেই। বাইরে পুলিশ মোতায়েন আছে বিশেষ সম্মান জানানর জন্য। সে যাই হোক, এই ঘরে থাকা; জনসমাবেশের সংস্পর্শে না আসা; এসমস্ত কিছুইতো এই মুহূর্তে প্রাণ বাঁচানোর লড়াই, সাবধানতা বা কৌশল। কিন্তু ট্যাংগোদা হল সেই ধরনের পাবলিক যারা নিজেদের ভাল বোঝেনা; যাদের কথা ভেবেই "যার বিয়ে তার হুঁশ নেই... পুলিশ প্রশাসনের ঘুম নেই" ধরনের কিছু প্রবাদ বাক্যের প্রচলন হয়েছে। এদের জন্যই পুলিশের এই বিপদের দিনেও ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা চষে বেড়াতে হচ্ছে।
এবার মূল ঘটনায় আসি। আজ ট্যাংগোদা ঠিক করেছে, বন্ধুর বাড়ি যাবে এবং রাস্তায় পুলিশ ধরলে, পুলিশের চোখে ধুলো দিয়েই বন্ধুর বাড়ি যাবে। বন্ধুকে ফোন করে ও বলে: দ্যাখ, আমি পকেটে ব্যথার ওষুধ নিয়ে ঘর থেকে বের হব। পুলিশ ধরলে বলব, তোর দাঁতে ব্যথা, তাই তোর জন্য এই ট্যাবলেট নিয়ে যাচ্ছি। পুলিশ যদি আমার কথা বিশ্বাস না করে, তোকে জিজ্ঞেস করে, তুই আমার কথাটাই বলবি। আর এই দাঁতের ব্যথা বা পেটের ব্যথা এমন জিনিস, পুলিশ কেন, বিশ্বের কেউ সেটাকে মিথ্যে প্রমাণ করতে পারবে না।
বন্ধুকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিজের দলে নিয়ে ট্যাংগোদাতো রাস্তায় বের হল। পকেটে ট্রেনযাত্রার টিকিট থাকলে প্যাসেঞ্জার যেমন টিকিট চেকারকে পরোয়া করেনা, ট্যাংগোদা তেমনি পুলিশকে অবজ্ঞা করেই এগিয়ে চলল। তবে পুলিশ হল যত বেহায়া টাইপের লোক, তাঁরা আবার দেশবাসীর জীবনের সুরক্ষাকে কিছুতেই অবজ্ঞা করতে পারেননা। অতএব তাঁরা ট্যাংগোদাকে ধরলেন। জিজ্ঞাসাবাদ চলল। ট্যাংগোদাও দাঁতের পেইন কিলার আর বন্ধুর প্রয়োজন নিয়ে মানবতা আর বন্ধুর প্রতি কর্তব্যবোধকে লকডাউন ভাঙার কারণ হিসেবে তুলে ধরল: স্যর দাঁতের ব্যথায় খুব কাতরাচ্ছে বেচারা। এই ওষুধটা দিলে স্বস্তি পাবে। আমার কথা বিশ্বাস না হয়, আপনারা চলুন আমার সাথে। আমার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করবেন, আমি সত্যি বললাম কিনা।
পুলিশ দাদা ট্যাংগোদার কথাই রাখলেন। তাকে নিয়ে চললেন তার বন্ধুর বাড়ি। ট্যাংগোদার তাতে কোনও চিন্তা ছিলনা। স্ক্রিপ্টতো বন্ধুকে পড়ানোই আছে, ভাবনা কিসের। কিন্তু বন্ধুর বাড়ি গিয়ে ঘটনায় দেখা গেল আসল টুইস্ট। পুলিশ দাদা বললেন: ট্যাংগো বাবু আপনি একটু বাইরে থাকুন আমি আলাদাভাবে আপনার বন্ধুর সাথে কথা বলব। এই বলে তিনি ঘরে ঢুকে বন্ধুকে একা টেনে নিয়ে গিয়ে বললেন: ট্যাংগো কিন্তু কেঁদেকেটে আসল কথাটা বলে দিয়েছে। বলেছে, আপনি নাকি ট্যাংগোকে শিখিয়ে পড়িয়ে দিয়েছেন, যে দাঁতের ব্যথার এই মিথ্যে কাহিনী বললেই আমরা বোকা ব'নে যাব আর ট্যাংগোকে ছেড়ে দেব?
ট্যাংগোদার চাল-এ সহজে কনভিন্সড হওয়া বন্ধু পুলিশদার এই পাল্টা চালে একেবারে ধরাশায়ী হয়ে গেল। সেকী! এযে দেখছি তাকেই ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে! ঘাবড়ে গিয়ে বন্ধু তৎক্ষনাৎ উগড়ে দিল যে ওর কোনও দোষ নেই। সব ট্যাংগোদার প্ল্যান।
এরপর আরকি, ট্যাংগোদা আর তার বন্ধুকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে পুলিশদা বললেন: ট্যাংগোবাবু, দেখুন, এই রোগের ব্যাপারে নতুন করে আরতো কিছু বলার নেই। আমরা ধরলে ছাড় পাবেন। এই রোগ ধরলে কিন্তু ছাড় নেই। আপনার নেই; যে বন্ধুর বাড়ি আসলেন তার নেই; আপনাদের পরিবার-এর নেই এবং আর কার কার যে নেই সে উপরওলাই জানেন। চালাকি করছেন কার সাথে? ভেবে দেখুন, আপনার এই চালাকি যদি জীবনের সবচেয়ে বড় বোকামি হয়ে দাঁড়ায়!
বাবুসাব ফাঁস গিয়া তো?
প্র দী প দে
--হ্যাঁগো তুমি কোথায় এদিক- ওদিক হুটহাট চলে যাও- তা বলো না কেন?
--কেন এইতো পাশেই ছিলাম। সিগারেটের অনুসন্ধানে ছিলাম।
--না ঠিক আছে। চলো বাড়ি যাই। সন্ধ্যা নামছে।
--তাতে কি হল? সন্ধ্যা বেলাতেই তো লেকে বেশি মজার।
--এই ব্যাপারখানা কি বলোতো? তোমার বন্ধুরা এই বয়সে মরে পচে গেল! আর তুমি কিনা এই বয়সে লেকে সন্ধ্যায় এসে ফুর্তি করতে চাইছো? লজ্জা করে না? আমি চললেম।
গিন্নি আমার থেকে ছোট। কিন্তু রসহীনা। প্রকৃতি বোঝেনা, রোমান্স করতে জানে না। জন্ম, খাওয়া, ঘুম আর মরা -এই বৃত্তের জীবন ওর।
বয়সে কি আসে যায়?
মনটাই সব
শরীরটাকে শুধু দাঁড় করিয়ে রাখো নেতিয়ে যেন না পড়ে।
নেতিয়ে পড়লেই রোমান্স শেষ!
গিন্নি মুখ ভেঙছে, আমার মরা মা বাপের নামে খিস্তি দিয়ে বাড়ির দিকে টানা হাঁটা দিল।
আমি মন খারাপ করার সু্যোগ পেলাম না তার আগেই একেবারে মনের মতনই এক অল্পবয়সী বিবাহিতা আমার সামনে এসে হেসে লুটিয়ে পড়লো!
-- কি দাদা, বৌদি বুঝি রাগ করে চলে গেল? দুঃখ করবেন না। আমিও একা, চলুন না বেঞ্চে বসে একটু আলাপ করি।
মনটা আমার জুড়িয়ে গেল…
বসে পড়লাম। যুবতী বসেই কাছে এগিয়ে আসতে লাগলো। গল্প কাকে বলে? আমি মনের কথা দুঃখের কথা বকেই যাচ্ছি ও সান্ত্বনা দিয়েই যাচ্ছে।
দুজনায় ঘনিষ্ঠ। দিশাহারা। দেহতত্ব! যুবতী তার উপর আবার পরস্ত্রী আমাকে তার একান্তই নিজের শরীর ছেড়ে দিয়েছে। আমি তো কোন ছাড় এইরকম পরিস্থিতিতে কোন দেবতাই নিজেকে ধরে রাখতে পারবে না, আমি গ্যারান্টি দিতে পারি। আমিও পারলাম না। সে এক বিশ্রী অবস্থা!
পরস্ত্রী ছিটকে উঠে পড়লো,
--আমাকে এখুনি বাথরুমে যেতে হবে, বুঝতেই পারছেন? কিছু খরচ করুন এবার!
আমি বুঝলাম। তবুও না বোঝার ভান করলাম।
এরকম ভাবে বেশিক্ষণ চললো না। বউটি আবার আরো রোমান্স করে উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়েই কেঁদে ভাসিয়ে দিল-- আমার স্বামী আজ বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছে। অন্য মহিলার সঙ্গে আছে। যদি কিছু টাকা দেন তাহলে কিছু খাবার কিনে আনি। পেটে খাবার দিলে আরো চাঙ্গা হব আমি, তবেই না …
আপাততঃ শ-পাঁচেক দিলেই হবে …
আমি পকেট থেকে ঝেড়েমুছে চারশত ষাট টাকা দিতে পারলাম। কারণ আমার লক্ষ্মীর ভান্ডার যে গিন্নির বগলদাবায়!
যুবতী মুখ বেঁকিয়ে দিল,
--এবাব্বা এতে কি হবে?
রাতে হোটেল ঘরভাড়া খাওয়ার খরচ তো দিতেই হবে। ঠিক আছে এখন এটাই দিন আমি একটু ফ্রেশ হয়েই আসছি …
আর ফেরার রাস্তা নেই। এসপার নয় উসপার! গিন্নিকে আজ টাইট দিতেই হবে। ওকে আজ দেখিয়ে দেব আমার ক্ষমতা।
বিগলিত, রোমাঞ্চিত, পুলকিত, উদ্দীপিত আমি।
ট্রেলার শেষে হিট সিনেমা শুরু হওয়ার আগে ঠিক যেরকম অবস্থা হয় আমার অবস্থাও তদ্রূপ।
বসে আছিতো আছিই। সময় বয়ে চলে। উত্তেজনা বাড়ে। আবার কমে। অধৈর্য হয়ে পড়লাম। রাত অনেক হল। সিকিউরিটি গার্ডের তৃতীয় হুইসেল বেজে গেল। সব ফাঁকা! আমি একা!
বেঞ্চি ছেড়ে দিতেই হল। গেটের দিকে পা বাড়ালাম। এখনও যদি ও আসে …
গেটম্যান ইয়াবড়া তালা ঝোলাতে ব্যস্ত, আমায় দেখে মোচওয়ালা মুখ নেড়ে হেসে দিল, …
--কি বাবুসাব ফাঁস গিয়াতো?
হো - হো - হো ………
হাসতে হাসতে আমি শেষ... দুটিই অসাধারণ 👌🏼
উত্তরমুছুন