কথিকা





কিছু নেশা ছিল... বাকিটা কপচানো বুলি

উ ত্ত ম কু মা র  দা স


বিলাসিতার নামে শব্দের খোঁজে এক বুক জলে নামা হয়নি গামছার খেলায়।
উলঙ্গ মন বারবার খেলতে চেয়েছে ভেজা চটির শরীরকে ঘিরে; মৃত শরীরের স্নেহ চর্চিত জীবনচর্চা ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে বারবার নারী মনস্তত্ত্বের ব্যাখ্যা শুনেছি... তবে বিচারকের সিদ্ধান্তে শরীর কাটা ছেনির শিথিলতায়  সবটাই ছিল নপুংসকের শিরোনাম।

এমনি ফেলে আসা  সুদূর প্রাচ্যে আমার এক বারান্দায় বিকেল...

কিছু আশ্চর্য প্রজাপতি বিধ্বস্ত করলো আমার সাধের একাকিত্বের সৌধকে। 
আমি দেখলাম তিনটে নৌকার একই পার থেকে ভিন্নমুখী যাত্রা... এক হাঁটু কাদা তখন নেমে গেছে গাঙ্গেয় উপত্যকা ছুঁয়ে... সৌরপ্রভা এঁকে দিয়েছে স্টেডালের এক নেগা রক্তিম শিমুলের ডালি।
প্রজাতির শ্রোণি মনের কলুষতা দূর করতে যদি নৈসর্গিকভাব বৃত্তের বাইরে এসে দাঁড়ায় তবে রোজনামচা প্রচলিত পথে বাঁধা সৃষ্টি করবে।
কাদার স্রোত গোড়ালি ডিঙাবে
আছাড় খাওয়া ঢেউ গুলি ওজন মাপবে পঁচানব্বই থেকে একশো ছুঁয়ে।

সময়ের কাছে ওসব তুচ্ছ বিষয়
আচমকাই মস্তিষ্কে যখন চেপে বসে পালক
ছেঁড়া লোমজ সুখ... তখন 
কিছুটা বিধ্বস্ত মন কিছুটা বিধ্বস্ত জীবন কিছু বিধ্বস্ত কবিতা আর বোতল ভর্তি আমার বাংলা ।





শ্রীরাধিকা জাগো

গী তা লি  ঘো ষ


ঐ যে দূরে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি... রুক্ষ চুলগুলো উড়ছে, কবরী থেকে খসে গেছে ফুলের মালাটি, আনমনা... বারবার দীর্ঘনিঃশ্বাসে শরীর তার কেঁপে উঠছে। কোনদিকে তার দৃষ্টি? পথের ধারে তমাল গাছটির গায়ে মৃণাল হাত দুখানি রেখে কী খুঁজে বেড়াচ্ছে সে? পৃথিবীর অন‍‍্য কোনো দিকে তার দৃষ্টি নেই... একনিষ্ঠ নজরে কাকে সে বন্দী করে রাখতে চায়? প্রাণের গোপনে যে তারে তার সুললিত ছন্দ ছিল, সেই তারে যে এক ভঙ্গুর কাঁপন দেখা যায়। 

রাজার দুলালী হয়ে যে গোপবালকের সঙ্গে তার প্রাণের লেনাদেনা, সেই কস্তুরীগন্ধ সমন্বিত পুরুষটির অপসৃয়মান শরীরটির দিকেই আজ তার বিভ্রান্ত দৃষ্টি। কিছুক্ষণ আগেই সেই প্রাণপ্রিয় প্রেমিকটি যে চিরদিনের মত নিজের নারীটিকে ছেড়ে চলে গেছে কর্তব্যের হাত ধরে। ওই ধূলি ধূসরিত পথের প্রান্তে অশ্রূমতী নারীটি তার জীবনের সব সম্বল হারিয়ে রিক্ত নিঃস্ব হয়ে প্রস্তর মূর্তির মত নিথর হয়ে রয়েছে। শ‍্যামপ্রিয়া শ্রীরাধিকার এই দীর্ণ রূপটি কী সেই শ‍্যামকান্তি বংশীবাদকের চোখে পড়ল না? রাজকর্তব‍্য তাকে এতোই নিষ্ঠুর করে দিতে পারল? যে প্রিয়া সমাজ সংসার ভুলে বারবার শত অপমান সহ‍্য করেও মোহনবাঁশির সুরের আকর্ষণে ছুটে ছুটে প্রেমের কাছে ধরা দিয়েছে  তাকে কেমন করে ভুলে গেল সেই  প্রেমিকপুরুষটি। নারীর অনুরাগ  উপেক্ষা করে, যৌবনের সংরাগ অবহেলা করে নূতন পথের আকর্ষণে এমন করে চলে যেতে হয়?  এ কী সঠিক বিচার? 

রাধা, তোমার চোখের অশ্রু তুমি এবার মুছে ফেলো। আগুনপাখি বাসা বাঁধুক তোমার মনে। যে প্রিয় তোমার জীবনকে উপেক্ষিত অবহেলায় ভরে দিল, তার জন‍্য তোমার দু'চোখে শ্রাবণ নামিও না। তুমি তো জানো, এর পর থেকে কৃষ্ণের জীবনে তুমি ব্রাত‍্য। কারণ তাকে তো মহাভারতের মহানায়ক হতেই হবে! ধর্মের জয়পতাকা তাকে তুলতেই হবে! শুধু কৃষ্ণের জীবনে তো না, বিশ্ব সংসারে তুমি ব্রাত‍্য হয়েই থাকবে। আর কোনো বৈষ্ণব কবি তাদের সুললিত লেখনীতে তোমার জীবন-বেদন আঁকবেন না। অথচ তোমার জীবনের অনেকটা সময়  এখনো বাকি। কেমন করে কাটাবে তুমি তোমার নিঃসঙ্গ জীবন? যে রাধিকার কথা আর কেউ বলবে না, তাকে তো নিজের মুখেই উচ্চারণ করে নিজের কথা জানাতে হবে। তাই আগুনে হৃদয়কে অভিষিক্ত করো রাধিকা। তোমার প্রতি ঘটে যাওয়া এই অবিচারের জন‍্যই তোমাকে জেগে উঠতে হবে, মুখে যথাযথ ভাষা আনো, বিশ্বে ছড়িয়ে দাও তোমার একান্ত অভিমানের জ্বলন্ত আগুন।।






ভাগ্যচক্র

প্র ণ ব  কু মা র  ব সু 


রোজ‌ প্রায় ভোরবেলা ট্রেনে চেপে আমায় নানান শহরে বা বর্ধিষ্ণু গ্রামে যেতে হয়- আবার কাজ শেষ করে বিকেল বা সন্ধ্যায় ঘরে ফেরার পালা- এক একদিন এক এক জায়গায় যেতে আমারও বেশ ভালো লাগে-
চারিদিকের নানান দৃশ্য উপভোগ করতে বেশ লাগে আমার- খবরের কাগজ কিনলেও সেটা ব্যাগের ভেতর নিয়ে রাখতাম- কাজের ফাঁকে বিরতির সময় ব্যাগ থেকে বার করে পড়তাম, প্রথম প্রথম অবশ্য ট্রেন ছাড়ার আগে চোখ বোলাতাম দৈনিক সংবাদপত্রের পাতায়... কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখতাম আমার হাতে রয়েছে শুধু প্রথম আর শেষ পৃষ্ঠা- বাকি পাতাগুলো এর ওর হাতে চলে গেছে... সেই থেকে অভ্যাস পাল্টে ফেললাম !

সেদিনও যাচ্ছি ভোরের ট্রেনে- অনেকে দেখেছি ট্রেনে বা দূরপাল্লার বাসে উঠলেই অচেনা লোকের সঙ্গে আলাপ করে গল্প জুড়ে দেন-
এটা আবার আমার স্বভাবের একদমই বিপরীত- আমি নাকি মুখচোরা- অনেকে আবার আড়ালে আবডালে দাম্ভিক শব্দটাও আমার নামের সঙ্গে জুড়ে দেয় !

যেহেতু আমার গন্তব্য রোজ‌ই পাল্টে যায়, ডেলি-প্যাসেঞ্জাররা আমার অপরিচিত! ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে আমার উল্টোদিকের জানলার ধারে এসে বসলেন এক বয়স্কভদ্রলোক- বয়স মনে হয় সত্তর পেরিয়ে আশির কাছাকাছি- সম্ভ্রান্ত পরিবারের ভদ্রলোক সেটা বেশভূষা দেখেই বোঝা যায়- সঙ্গের ছোট ব্যাগটা মাথার ওপর যথাস্থানে নিজেই তুলে রাখলেন- কিছুক্ষণ পরেই আমায় প্রশ্ন করলেন- কী ভায়া কোথায় যাওয়া হচ্ছে? 
আমি শুধু গন্তব্য স্টেশনের নামটা বললাম- ওনার পরের প্রশ্ন- কী করা হয়? আমি বললাম- চাকরি! সেতো বুঝলাম- সরকারি না বেসরকারি? আমার উত্তর শুনে ভদ্রলোক বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন আমি ওনার প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে চাইছি! উনি নিজেই এবার বলতে শুরু করলেন নিজের কথা- কোথায় যাচ্ছেন, কদিন থাকবেন, কবে আবার নিজের বাড়িতে ফিরবেন ইত্যাদি... আমি মাঝে মধ্যে ঘাড় নেড়ে যাচ্ছিলাম বা বলছিলাম- ওহ্! বুঝলে ভায়া একসময় আমাকেও খুব ঘোরাঘুরি করতে হত- গিন্নির কড়া নির্দেশ ছিল ভরা পেটে যাত্রা করতে হবে! কথাটা বলে আমার দিকে তাকিয়ে নিজেই হা হা করে হাসলেন!
ব্যাগ গুছিয়ে- জামাকাপড়- দরকারি কাগজপত্তর ঠিক জায়গামতো রেখে দেওয়াটা ছিল ওর একটা নিত্যনৈমিত্তিক কাজ- আজ অবধি আমার কোন‌ওদিন কোন‌ও অসুবিধা হয়নি! এমনকি অসুস্থ শরীরেও আমার কাগজপত্র ঠিকমতো গুছিয়ে না দিলে যেন ওর ঘুম হতো না!

আমার গন্তব্য এর পরের স্টেশনে- ভদ্রলোককে বিদায় জানিয়ে উঠতে যাচ্ছি এমন সময় উনি বললেন- দেখলে তো ভায়া গল্প করতে করতে তোমার নামটা জানা হয়নি!
আমার নামটা শোনার পর উনি বললেন- আমি হলাম দেবব্রত রায় আর আমার গিন্নির নাম স্বর্গীয় শোভা রায়।




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল সংখ্যা || ৪ ফাল্গুন ১৪৩০ || ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪