প্রবন্ধ


আন্তন চেখভ (Anton Chekhov)---(ছোটগল্পের রাজকুমার)

শং ক র ব্র হ্ম

১৮৬০ সালেের ১৯শে জানুয়ারি রাশিয়ার তাগানকায় আন্তন চেখভ (Anton Chekhov)-এর জন্ম হয়। তাঁর বাবা ছিলেন- পাভেল জেগোরোভিচ চেখভ আর মা ছিলেন- পাভেল চেখভ।

আন্তন চেখভের শৈশবকাল কেটেছে দারিদ্রের মধ্য দিয়ে। চেখভের বাবা ছিলেন একজন মুদি দোকানদার। তাই বাবা চাইতেন ছেলে তার দোকানে বসুক। তিনি ছেলেকে স্কুলে না পাঠিয়ে তার দোকানে বসাতে চাইতেন। সেইসাথে তিনি ছেলেকে নিয়মিত গীর্জায় যেতে বাধ্য করাতেন। কিন্তু চেখভের মা চাইতেন, ছেলে লেখাপড়া শিখে মানুষ হোক। বাপের মতো ছেলে যেন মুদি দোকানদার না হয়।

দশ বছর বয়সে বাবার অনেকটা অমতেই, মায়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আন্তন চেখভ শহরের একটি ভালো স্কুলে ভর্তি হন। এর আগে আন্তন চেখভ গ্রামের এক প্রাইমারি স্কুলে পড়তেন। শহরের স্কুলেই আন্তন চেখভ প্রাচীন গ্রীক এবং ল্যাটিন ভাষার সাহিত্য সমূহ পড়েছিলেন।

১৮৭৯ সালে বাবার মুদির দোকান উঠে যাওয়ার উপক্রম হলে বাবা পরিবার পরিজন নিয়ে ভাগ্যান্বেষণে রাজধানী শহর মস্কোতে চলে আসেন । মস্কো এসে আন্তন চেখভ ডাক্তারী পড়ার মনস্থ করেন। ভর্তি হন - ফার্স্ট মস্কো স্টেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তিনি ছিলেন চিকিৎসক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার।

আন্তন প্যাভলোভিচ চেখভ রুশ ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্পলেখক এবং নাট্যকার। গল্প লেখায় আন্তন চেখভ-এর ছিলো অসাধারণ দক্ষতা। অতি সামান্য কিছু কথায় আন্তন চেখভ আশ্চর্য সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন জীবনের যে কোন সূক্ষ-অনুভবী ঘটনাকে। এই জন্য তাঁকে বলা হয় ছোটগল্পের রাজকুমার। তিনি একবার বলেছিলেন, যে লিখতে পারে, সে একটা ছাইদানী নিয়েও সুন্দর গল্প লিখতে পারে। লেখায় মুন্সীয়ানা থাকা চাই। মানুষের মনের রহস্য অনুসন্ধান করার মতো মানসিক ক্ষমতা থাকা চাই। তিনি তা পারতেন অনায়াসে । আন্তন চেখভ-য়ের গল্প কিংবা নাটকের কাহিনীতে কোথাও কোনো জটিলতা নেই । গল্পের শেষে রয়েছে মনোজ্ঞ এক সমাধান । জীবনের অতি তুচ্ছ ঘটনাকে আন্তন চেখভ এমন দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলতে পারতেন যে, সব মিলিয়ে ছবির মতো ফুটে উঠতো একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনের এবং সমাজের চালচিত্র।

আন্তন চেখভ তাঁর আশ্চর্য সুন্দর নিপুণতায় নিখুঁতভাবে এঁকেছেন তার সময়কার রাশিয়ার জীবনের বাস্তব চলমান ছবি। এক কথায় বলতে গেলে চেখভের সাহিত্যকর্ম ছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর রাশিয়ার সমাজ জীবনের জীবন্ত-বাস্তব ও পূর্ণাঙ্গতার প্রতিচ্ছবি।

আন্তন চেখভকে বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা ছোটগল্পকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্ব- সাহিত্যের তিন জন অবিস্মরণীয় গল্পকার হলেন, রাশিয়ার আন্তন চেখভ, ফ্রান্সের গী দ্য মোপাসাঁ ও আমেরিকার ও.হেনরী।

আন্তন চেখভের ছোটগল্পগুলো পরবর্তী কালের লেখক, সমালোচক ও সমাজের বিভিন্ন মানুষের কাছে প্রভূত সমাদর লাভ করেছে। নাট্যকার হিসেবে পেশাজীবনে চেখভ চারটি ক্ল্যাসিক নাটক লিখেছিছেন। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে এমন নাট্যকারদের মাঝে শেকসপিয়ার ও ইবসেনের পাশাপাশি চেখভের নামও উল্লেখ করা হয়। এ'ছাড়া মঞ্চনাটকে প্রাক-আধুনিকতার উদ্ভবে অন্যতম তিনজন ব্যক্তিত্বের মধ্যে ইবসেন ও অগুস্ত স্ত্রিন্দবারির পাশাপাশি আন্তন চেখভ এর নাম উল্লেখ করা হয়ে থাকে।

১৮৭৯ সালে আন্তন চেখভ মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টিতে ভর্তি হন ও ১৮৮৪ সালে তিনি ডাক্তারী পাস করেন। তিনি ডাক্তার হিসাবে একটি সরকারী চাকরিও পান। এবার তিনি নিজেই পরিবারের হাল ধরেন। চাকরি করার পাশাপাশি তিনি শুরু করেন সাংবাদিকতা এবং কমিকসের বই লেখা।

আন্তন চেখভ সাহিত্য রচনায় হাত দেন ১৮৮০ সালের দিকে। স্টেপ্পে নামক একটি বড় গল্প দিয়ে তাঁর সাহিত্য সাধনা শুরু।

তিনি খুব দ্রুত লিখতে পারতেন। ১৮৮৮ সালের মধ্যে তিনি আরও দশটি গল্প লিখে ফেলেন । ইভোনভ নামে একটি নাটকও লেখেন ১৮৮৭-৮৯ সালের মধ্যে ।

আন্তন চেখভ (১৮৯৩-৯৪ সালের মধ্যে) ‘দি আইল্যান্ড অব সাখালিন' নামক একটি ভ্রমণকাহিনীও লেখেন।

সুভোরিন নামক এক ব্যক্তি ছিলেন চেখভের গ্রন্থসমূহের প্রকাশক এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু । তিনি প্রথম ইউরোপ ভ্রমণে যান সেই প্রকাশক বন্ধুর সাথে।

১৮৮৮-১৮৮৯ সালে তিনি ‘উড ডেমন‘ নামের চার অঙ্কের একটি উল্লেখযোগ্য নাটক লেখেন।

১৮৯০ সালে আন্তন চেখভ লেখেন তাঁর সব চেয়ে বেশি মঞ্চসফল নাটক Pyadya Vanya (Uncle Vanya). এটা তার একটা মাস্টারপিস নাটক।

১৮৯২ সাল থেকে ১৮৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি সরকারী ডাক্তার হিসাবে মস্কো থেকে ৮০ কি.মি. দক্ষিণে মিলিখোভো গ্রামে কাটান। তাঁর সাথে থাকতেন তাঁর বোন মারিয়া। মারিয়া ভাইয়ের দেখাশুনার জন্য তখনও বিয়েই করেননি। এই দুর্গম অঞ্চলে তিনি যান ভাইয়ের সেবা করার জন্য। নির্জন স্থানে তার তেমন কোনো কাজ ছিল না। আন্তন চেখভ তাঁর অবসর সময়কে কাজে লাগিয়েছিলেন লেখালেখির মধ্য দিয়ে। 

জীবনের পুজারী ছিলেন চেখভ। জীবনকে আন্তন চেখভ সহজভাবে নিয়েছিলেন এবং দেখেছিলেন অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে। আন্তন চেখভ-এর সমগ্র রচনার মধ্যে আছে মানবতা-দরদী শিল্পী হৃদয়ের মহত্বের ছাপ।

১৮৯২ সালে প্রকাশিত হয় তার গল্প 'বাটার ফ্লাই' ও 'নার্ভস'। ১৮৯৩ সালে রচনা করেন An Annonymous Story. ১৮৯৪ সালে রচনা করেন The Black Monk এবং ১৮৯৭ সালে রচনা করেন Peasants. এছাড়াও তিনি আরও অনেক গল্প লিখেছিলেন।

টলস্টয়ের লেখার একজন পরম ভক্ত ছিলেন আন্তন চেখভ। তিনি টলস্টয়ের আদর্শের দ্বারা নিজেও প্রভাবিত হয়ে পড়েন ১৮৮০ সালের পর থেকে। 

আন্তন চেখভের ১৮৯৬ সালে শ্রেণী সংগ্রামের পটভূমিকায় Chayka (The Seagall) নামে একটি উল্লেখযোগ্য নাটক লেখেন। তার জন্য তিনি পুশকিন পুরস্কার পান।

এক সময় আন্তন চেখভ-এর নাটকের এক অভিনেত্রী ওল্‌ল্গা নিপারের প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। শেষ বয়সে এসে ১৯০১ সালে তাঁকে বিয়েও করেন, কিন্তু তাঁদের কোনও সন্তান হয়নি।

জীবনের শেষ দিকে আন্তন চেখভ সহসা ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। নিজে একজন ডাক্তার হয়েও এই কঠিন ব্যাধি থেকে তিনি মুক্তিলাভ করতে পারেননি। 

দুরারোগ্য মারণ এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরই তাকে আধাপঙ্গু আখ্যা দিয়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

সংসার ও রোগের চিকিৎসার খরচের জন্য তাঁকে বাধ্য হয়ে নিজের বাড়ি বিক্রি করে দিতে হয়। তিনি মস্কোর বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে মফঃস্বল শহর ইয়াল্টায় গিয়ে একটা বাড়ি কিনে বসবাস করতে থাকেন।

শেষ জীবনটা তাঁর মোটেও সুখের হয়নি।

আন্তন চেখভ ১৯০৪ সালের ১৭ই জানুয়ারি মাত্র চুয়াল্লিশ বছর বয়সে দুরারোগ্য ক্ষয় রোগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস!






আধুনিক শিক্ষার জনক
          বিদ‍্যাসাগর

ধূ র্জ টি র ঞ্জ ন ম জু ম দা র


বাল‍্যবয়স থেকেই বিদ‍্যাসাগর সমাজটাকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে দেখেছিলেন। বিশাল মানবিক হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পেরেছিলেন অশিক্ষা-জনিত অন্ধকারে নিমজ্জিত হাজার হাজার অসহায় নারী-পুরুষের আর্তনাদ।

নিষ্ঠুর সমাজের তথাকথিত শাস্ত্রের বিকৃত অনুশাসনে আত্মীয়-পরিজনের মধ্যেই দেখেছেন কিরকম অন‍্যায়ভাবে বলি হতে। এইসব মানুষের চরম অবমাননা তাঁকে শুধু ব‍্যথিত করেনি, তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করেছিল এবং উদ্বুদ্ধ করেছিল প্রতিকারের চিন্তায়।

কুসংস্কারের কালো হাত থেকে মুক্তি পেতে শিক্ষার প্রসার ও প্রচারের যে একান্তই প্রয়োজন, তিনি তা বুঝেছিলেন। সেইজন্যই তিনি বলেছিলেন যে ধর্ম-সংস্কার নয়; সবার আগে প্রয়োজন সমাজ-সংস্কার।

কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ধর্মের গোঁড়ামির বিরুদ্ধে তিনি বজ্রের মত কঠিন মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। এরজন্য দরকার শিক্ষা-সংস্কার ও শিক্ষার ব‍্যাপক বিস্তৃতি।

তাইতো তিনি জ্ঞানের প্রদীপ হাতে নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন বাংলার ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে। দুর্বার পৌরুষ। কোন বাধাই তাঁকে শৃঙ্খলিত করতে পারেনি।

তিনি বলছেন, "বাংলাদেশে যেখানে যেখানে শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে সেখানেই তথাকথিত  পন্ডিতদের প্রভাব কমে আসছে।"

নানা প্রতিকূল অবস্থার সন্মুখীন হয়েও তিনি প্রায় একক প্রচেষ্টায় বাংলার বিভিন্ন জেলায় ৫৬ টি বিদ‍্যালয় স্থাপন করেছিলেন। আজকের দিনেও বিস্ময়ের সঙ্গে তা স্মরণ করতেই হয়। এমনকি মৃত্যুর একবছর আগেও বীরসিংহ গ্ৰামে মায়ের নামে ভগবতী বিদ‍্যালয় স্থাপন করেছিলেন।
 শিক্ষার অগ্ৰগতির জন্য এই নিরন্তন প্রচেষ্টা এক উজ্বল ও আশ্চর্য নিদর্শন।

কুসংস্কারে আচ্ছন্ন মানুষকে সচেতন করার জন্য কোন সামাজিক বাধা, শাস্ত্রীয় আচার-বিচার এমনকি যাজকবৃত্তির মূঢ়তা ইত‍্যাদির বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্ৰাম চালিয়ে গেছেন। আবার বিদেশি সরকারের অন‍্যায়, ভ্রান্ত ও অত‍্যাচারী নীতির বিরুদ্ধে ও সর্বদা তীব্র লড়াই জারি রেখেছিলেন।

শিক্ষা প্রসারে তিনি ছিলেন চূড়ান্ত বাস্তববাদী। ইংরেজী বিদ‍্যালয়গুলির পাশে বাংলা বিদ‍্যালয়গুলি যাতে প্রতিযোগিতার সন্মুখীন না হয়, সেইজন্য বাংলা বিদ‍্যালয়গুলিকে একটু দূরে গ্ৰামাঞ্চলে প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতী ছিলেন এবং সেগুলো যাতে আরও উন্নত হয় তার জন্য পাশাপাশি প্রকৃতি বিজ্ঞান, শারীর বিদ‍্যা, অর্থনীতি ইত‍্যাদি বিষয়গুলি যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছিল ।

ভাবাবেগের চেয়েও সমকালীন বাস্তব পরিস্থিতির চিন্তা-ভাবনা ও বিচারই তাঁকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চালিত করেছে। সেইজন্যই সংস্কৃত কলেজে শূদ্র, কায়স্থদের পাঠের সু্যোগের  জন্য তিনি  তীব্র লড়াই করেছিলেন এবং সফলও হয়েছিলেন।

বিদ‍্যাসাগর চেয়েছিলেন ব‍্যাপক জনশিক্ষা ও বিজ্ঞান-ভিত্তিক আধুনিক শিক্ষা--- যা প্রয়োজনীয় তথ্যের অধিকারী হবে এবং স্বদেশের তথাকথিত কুসংস্কার থেকে মুক্ত হবে।
আধুনিক জন-শিক্ষাবিস্তারের  জন্য রূপরেখাটির গভীরতার প্রমাণ পাই  তাঁর লিখিত একটি নোটে। হ‍্যালিডে সাহেবের কাছে নোটের প্রথম অনুচ্ছেদেই তিনি বলেন--- "বাংলাদেশে শিক্ষার তত্ত্বাবধানের ভার যাঁরা নিয়েছেন তাঁদের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলা ভাষার সাহিত্য সৃষ্টি করা।" এটি সারাংশ মাত্র। আরও অনেক নোট তিনি দিয়েছিলেন।

তিনি ইংরেজি ও পাশাপাশি সংস্কৃত এই দুই ভাষার  পারদর্শিতা  অর্জনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন এই কারণে যে তার ফলে এই শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষেরা বাংলা ভাষাকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার প্রকৃত বাহন হিসাবে গড়ে তুলতে পারবে। এর ফলে বাংলা ভাষার মাধ্যমে সাধারণের মধ্যে আধুনিক জ্ঞানের বিকাশ ও প্রসার ঘটবে।

ভারতীয় ও পাশ্চাত্য দুই দর্শনেই জ্ঞান থাকলে, এ দেশের পন্ডিতদের পক্ষে আমাদের দর্শনের ভুলভ্রান্তি ও অসারতা কোথায় আছে তা সহজেই বোঝা যাবে এবং আরও বলেছেন যে  কীভাবে এক সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়ের মত খন্ডন করেছে তার যৌক্তিকতা ও ভুলভ্রান্তি সহজেই অনুধাবন করা যাবে। এই রকম সুযোগ দিলে ছাত্রদের মধ্যে নিজেদের বলিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠবে।

দেশের জনসাধারণের কল‍্যাণের জন্য বাংলা শিক্ষা বিস্তার ও সুব‍্যবস্থা করার জন্য এবং সমাজের সামগ্ৰিক উন্নতি বিধানে যে যে বিষয়গুলির জ্ঞান সে সময়ে তিনি অত‍্যাবশ‍্যক মনে করেছিলেন সেই বিষয়গুলো শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য সুপারিশ করেছিলেন। তার মধ্যে জীবন চরিত, জ‍্যামিতি, নীতিজ্ঞান, রাষ্ট্রজ্ঞান, পাটিগণিত, শারীরজ্ঞান সহ আরও বিষয় ছিল।

বাংলার মানুষের ঐহিক মানসিক ও সামগ্ৰিক উন্নতিবিধান ক‍রতে এবং বাঙালির মানসকে বিজ্ঞানমনষ্ক করতে আমরণ সংগ্ৰাম করে গেছেন।

বহুমাত্রিক উজ্বল ব‍্যক্তিত‍্বসম্পন্ন বিদ‍্যাসাগরের যে কোনও একটি  বৈশিষ্ট্যের মূল‍্যায়ন মোটেই সহজসাধ্য নয়। এই অজেয়  পৌরুষ মহামতি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ‍্যাসাগর (বন্দোপাধ্যায়) আমাদের দেশে আধুনিক শিক্ষার ভিত গড়ে গিয়েছেন। এই মানবপ্রেমী জনশিক্ষার কারিগর কালজয়ী কর্মযোগী মহাপুরুষকে  গভীরতম বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।।






ভালোলাগা ভালোবাসা

জ য় শ্রী ঘো ষ

আজকে একটা অন্য টপিক নিয়ে কথা বলব আজকে বলব ভালোবাসা ভালোলাগার মধ্যে পার্থক্য কি অনেকেই বুঝতে পারে না কোনটা ভালোবাসা কোনটা ভালো লাগা? অনেকে তো আবার ভালো লাগলে ভালোবাসা আর ভালোবাসাকে ভালো লাগা বলে তাহলে চলুন আজকে না হয় এটাই একটা ছোট্ট গল্প শোনাই ।
ভালোবাসা আর ভালোলাগা এই দুটোর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে প্রথমেই বলি ভালোবাসা কি ভালোবাসা এমন একটা শব্দ যেটার সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ সত্যি কথা বলতে সেই ভাবে উল্লেখিত সংজ্ঞা ভালোবাসার হয় না তবে ভালোবাসা কি সেটা হয় সেটা আমি তোমাদের আজ বোঝাবো ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যেটা প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে হঠাৎ করে চলে আসে না । দুজন ভালোবাসার মানুষের মধ্যে যত্নশীল হওয়াটা ভীষণভাবে দরকার। আর ভালোলাগা যেমন আমরা কোন একটা জিনিস কে দেখে আমাদের ভালো লাগে বা কোন বন্ধুত্ব করলে সে বন্ধুত্বটাকে ভালো লাগে সেটা হচ্ছে আমার কাছে ভালোলাগা। আমাকে কিছুদিন আগে এক বন্ধু বলছিল যে তার একটা মেয়ের সাথে আলাপ হয়েছে। মেয়েটিকে ভালো লাগে সে মেয়েটি তার ভালোবাসা। তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, "তোর মেয়েটির সাথে কত দিনের আলাপ?" সে আমায় বলে- "এইতো ১০-১২ দিন" আমি  বললাম তার মধ্যে তুই তাকে ভালোবেসে ফেলেছিস সে বলল- হ্যাঁ। ঠিক আছে তাহলে সে ক্ষেত্রে তুই তাকে বল। তখন আমার বন্ধু জিজ্ঞেস করল আচ্ছা আমি সত্যি সত্যি ভালোবেসেছি তো? কেন তুই এ কথা কেন বলছিস কিন্তু জানিস তো, যদি সে অনলাইন নাও থাকে তাও আমার কিছু যায় আসে না। কিন্তু ওই যে অভ্যাস---! তখন আমি তাকে বললাম দেখ তাহলে এটা ভালোবাসা হতে পারে না। সেটা হতে পারে ভালোলাগা। তখন আমার বন্ধু বলল কেন ভালোবাসা নয় কেন তখন আমি তাকে একটা উদাহরণ দিলাম চলো তোমাদেরও উদাহরণটা দিই- ধরো, তুমি একটা ফুলের দোকানের পাশ দিয়ে প্রতিদিন যাও তো তোমার একটা ফুলকে ভালো লাগলো, তুমি ফুলটাকে নিয়ে আসলে, তাহলে সে ক্ষেত্রে তুমি কোনদিনই বলতে পারো না যে তুমি ফুলটিকে ভালোবেসে বাড়িতে এনেছো তোমার ভালো লেগেছে তুমি নিয়ে এসেছো। যেমন আমাদের অনেকের গান করতে নাচ করতে বই পড়তে ভালো লাগে ভালো লাগার জন্য বলি। তখন আমি আমার বন্ধুকে বলি ফোন এটা ভালো লাগা। এটা ভালোবাসা হতে পারে না কারণ যদি সেটা ভালোবাসা হত তাহলে সে যখন অফলাইন থাকে বা তার কোন অসুস্থতায় তোর মনটা খারাপ হত সেটা যখন হয় না তাহলে সেটা ভালোবাসা না সেটা ভালো লাগে। তোর তাকে ভালো লেগেছে বুঝতে পেরেছিস কারণ ভালোবাসা অত সহজে পাওয়া যায় না ভালোবাসার একটা উদাহরণ দিই চলো তোমাদেরও তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে। সে ফুলের উদাহরণটাই দিচ্ছি। ধরো তুমি একটা ফুলের দোকানের পাশ দিয়ে প্রতিদিন যাও। এবং একটা নির্দিষ্ট ফুলকে তুমি প্রতিদিন দেখো কিন্তু তুমি সে ফুলটা বাড়িতে আনোনি। কিন্তু তুমি প্রতিদিন দেখো হঠাৎ করেই তুমি একদিন দেখতে পেলে সে ফুলটা আর সেই দোকানে নেই তখন তুমি ভাবলে কি হল আজকে সে ফুলটা দেখতে পাচ্ছি না কেন এই বলে তুমি দোকানদারকে গিয়ে বললে আচ্ছা ফুলটা কোথায় দোকানদার বলল ফুলটা বিক্রি হয়ে গেছে। সেটা শুনে তোমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু তখন তুমি বুঝলে না তোমার মনটা কেন খারাপ হলো। তারপরে তুমি বাড়িতে আসলে কিছু বুঝতে পারছিলে না ফুলটার জন্য কেন তোমার মন খারাপ থাকলো, তুমি নিজেই বুঝতে পারলে যে তুমি সেই ফুলটাকে ভালোবেসে ফেলেছ আমরা মানুষের মত ফুলকেও ভালবাসতে পারি শুধু মানুষকে ভালবাসতে হবে তার কোন মানে নেই। একটা ফুলকে যেমন ভালবাসতে পারি একটা গাছকেও ভালবাসতে পারি একটা পশুপাখিকেও ভালবাসতে পারি আমি তোমাদের এই উদাহরণটা এই হিসেবে দিলাম যে তখন কিন্তু তুমি শূন্যতা অনুভব করছিলে যে আমি যে দোকানে পাশ দিয়ে যাই আমি যে ফুলটা দেখি এখন যে ফুলটা কেন দেখতে পাচ্ছি না সুতরাং তুমি শূন্যতা অনুভব করছিলে তখন আমি আমার বন্ধুকে বলি এটাই হচ্ছে ভালোবাসা। তুই একটা মানুষের সাথে রোজ কথা বলছিস, হঠাৎ করে সেই মানুষটা অসুস্থতার জন্য বা কোন কারণে অনলাইন হতে পারছে না কিন্তু তোর তার জন্য সে রকম কোনো মনে শূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছেনা, বা সেরকম খারাপ লাগছে না কারণ তুই তাকে ভালোবাসতেই পারিসনি। অর্থাৎ বলতে চাইছি- ভালোবাসা হচ্ছে ধীরে ধীরে জন্ম নেয়। ভালোবাসা ভালোলাগার মধ্যে পার্থক্য যে দু"দিন কারো সাথে কথা বললেই আমি তাকে ভালোবাসি"- নয়। আরে বাবা ভালোবাসা অত সহজ নয়। আগে নিজের মনকে প্রশ্ন করো যে তুমি তাকে ভালোবাসো কিনা আর সেটা আদৌ ভালোবাসা কি ভালো লাগা কিনা তবে ছোট্ট প্রবন্ধের মাধ্যমে একটা ফুলের উদাহরণ দিয়ে দিয়ে তোমাদেরকে ভালোবাসা ভালো লাগার মধ্যে একটা ছোট্ট পার্থক্য বোঝানোর চেষ্টা করলাম আর অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করে আমার কাছে ভালোবাসা মানে কি আমার কাছে ভালোবাসা মানে হলো আমরা প্রত্যেকেই জানি যে আমাদের সাথে স্বয়ং ঈশ্বর আছেন কোথাও কোথাও আমাদের ঈশ্বর আছে কিন্তু আমরা তাকে কখনো দেখতে পারি না সেরকম আমার মনের মানুষ যাকে দেখার সুযোগ সবার হয় না। আরো ভালোবাসা আমার কাছে কি সবকিছু আমি নিজেও হয়তো ব্যাখ্যা করে তোমাদেরকে বলতে পারব না বা বোঝাতে পারবো না আমি শুধুমাত্র একটা ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে তোমাদেরকে বোঝাতে চাইলাম তো তোমরা তোমাদের মনের মানুষ ও বা তোমাদের ভালো লাগার কোন মানুষও তাদের সাথে কথা বলো, আগেই তোমরা বোঝ যে তোমরা তাকে ভালোবাসো নাকি ওটা ভালো লাগা প্রথমে সবার বোঝা উচিত যেটা যে ভালোলাগা নাকি ভালোবাসা যদি ভালোবাসা হয় তাকে বলে দাও আর যদি ভালো লাগা হয় তাহলে আমার মনে হয় আস্তে আস্তে সেখানে ভালোবাসা।






মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল ও বাসন্তী সংখ্যা || ৯ চৈত্র ১৪৩১ || ২৩ মার্চ ২০২৫

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চতুর্থ বর্ষ || চতুর্থ ওয়েব সংস্করণ || বাদল সংখ্যা || ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ || ২৯ জুলাই ২০২৫