অণুগল্প

এ ফ্রেন্ড ইন নীড

সা হা না

-"মা, ওমা, মাআআআআ"... 
ডাকটা আসছে নীচের তলা থেকে। কলিং বেল বাজলো! মণির মা এসেছে! বিন্দু স্নান সেরে পশ্চিমের বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলেন। ভেজা চুল ঝাড়া চলছিল! তবে, সবটাই পেছন ফিরে। পশ্চিম দিকে ভুলেও তাকাবেন না, ধনুর্ভাঙা পণ!
উঁকি মেরে চাবিশুদ্ধ থলেটা নামিয়ে দিলেন। সরে এসে, ভাবতে লাগলেন... ওপাশের জমিটা মনিরুলের। তিন পুরুষের বাস ওদের। এই আধা শহরতলিটায় ওদের একতলা বাড়িটা বেশ আকর্ষণীয়। তবে তাঁর বাড়ির তুলনায় কিছুই নয়, অবশ্য!

আড়চোখে দেখলেন, ও বাড়ির সব দরজা জানলা বন্ধ! কেমন যেন নিশ্চুপ! একটু অস্বাভাবিক লাগলো।

ততক্ষণে মণির মা কাজ-টাজ ফেলে সটান ওপরে।
-"কি হলো?" একটু বিরক্ত হন।
-"মা, ও বাড়ির কর্তা গো"......ফিসফিসিয়ে ওঠে!
-"কি হয়েছে?" অজানা আশঙ্কায় তিনিও ফিসফিসিয়ে বলেন।
-"ওই যে বুকের ব্যামো। কি যেন বলে, অ্যাটাক গো! হাসপাতালে নিয়ে গেল তো। জানো না?"
উত্তর দেন না।
বেশ কয়েক বছর ওদের সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ! দু'বাড়ির কোনো সদস্যই প্রকাশ্যে মেলামেশা করেন না, ভেতরে ভেতরেও না!
ঝামেলাটা হয়েছিল একটা গাছের দখল নিয়ে। তাঁদের বাগানের আম গাছ, যা কিনা শ্বশুরের হাতে তৈরি, ছিল একেবারে দু'বাড়ির সীমানার মধ্যে! দু'পক্ষই ফল নিতো ঝুড়ি ভরে! গাছতলায় দাঁড়িয়ে দু'বাড়ির গিন্নিরা আড্ডাও দিতেন!
হঠাৎ এক বসন্তের সকালে গাছ কাটার শব্দে কর্তা গিন্নি ছুটে গিয়ে দ্যাখেন...
বেশ কটা ডাল হারিয়ে গাছটা ধুঁকছে! কারণ কি? উত্তর এলো, ঝুপসি গাছের জন্য জানলা আটকাচ্ছে, রোদ-হাওয়া নেই!
প্রচন্ড বচসা, প্রায় হাতাহাতির জোগাড়... পাড়াশুদ্ধু লোক প্রথমে মজা দেখলেও পরে দু'পক্ষকে থামায়!

সেই থেকে....
মনটা ভারী হলো। একদম পাশের বাড়িতে বিপদ, তিনি জানলেন না...

ঘরে ফিরে বাক্স খুলে একজোড়া পাশা আর মলিন হয়ে আসা মাকড়ি জোড়া বের করলেন। তিনি আর আমিনা সই পাতিয়েছিলেন... একসঙ্গে একরকম গয়না তৈরি করিয়েছিলেন!
-"কি গো? কি ভাবছো?"
কাগজ পড়তে বসে চা-এর প্রয়োজন পড়ে বিপ্লবের। তাই এদিকে আসা..
কর্তার ডাকে হুঁশ ফেরে।
সশব্দে বাক্স বন্ধ করে ফিরে দাঁড়ালেন।
এ ভঙ্গি চেনেন, বিপ্লববাবু। কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন গিন্নি!
নীরবতা ভেঙে বিন্দু বলে ওঠেন...
"চট্ করে জামাটা গলিয়ে নাও। পাশের বাড়িতে যেতে হবে। ওদের খুব বিপদ!"







মৃত্যুই শ্রেয় 

র মে শ দে 

আমি ভালো নই, কারণ আমার জন্মের সময় মা কে, খুব কষ্ট পেতে হয়েছিল। জ্যোতিষীর মতে আমার জন্ম তিথি, নক্ষত্রের সঠিক হিসেব অনুসারে হয়নি। তাই আমি ভালো নই। আমার জন্মের পর বাবা চলে গিয়েছিল।তাই আমি ভালো নই। কলেজে পড়ার সময় দামী গাড়ী, মোবাইল ছিলনা। তাই বন্ধুদের কাছে আমার কোনো দাম ছিল না। কাজের জায়গায় দু হাত পেতে কোনোদিন ঘুষ নিতে পারিনি। তাই হয়নি কোনো অট্টালিকা।পেরে উঠতে পারিনি দামী অলঙ্কার দিয়ে নিজের স্ত্রীর মন রাখতে। আমার স্ত্রীর কাছে আমি ভালো নই, কারণ তাকে অবাধ স্বাধীনতা আমি দিইনি। তার সব কথায় তাল মিলিয়ে চলতে পারিনি। নিজের ছেলের কাছে ভালো হতে পারিনি। কারণ অবাধ সুখ তাকে দিতে পারিনি। আর পারিনি বলেই সে আজ কষ্টকে মাথায় নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছে। নিজের মেয়ের কাছে ভালো হতে পারিনি কারণ তাকে প্রেম করে বিয়ে করার অনুমতি দিতে চাইনি। নিজে মদ, গাঁজা, তামাকের সেবন করতে পারিনি। তাই অনেক বন্ধু, প্রিয়জনদের চোখে ভালো হতে পারিনি। এখন আমি আরো ভালো নই কারণ এখন বার্ধক্য এসে জর্জরিত করে দিয়েছে। আমি আর রোজগার করে এনে সংসারের চাহিদা মেটাতে পারি না। তাই এখন আমি সবার কাছে খারাপ। মৃত্যুই একমাত্র ভালো!






পুরোনোপন্থী

র মে শ দে 

রামবাবু বয়স্ক মানুষ। চাকরি থেকে দশ বছর আগে রিটায়ার করেছেন। তার এক ছেলে।
উনি একজন বিজ্ঞানী। অবসর প্রাপ্ত রামবাবু একাই বাজারে যান। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আনার জন্য। ছেলে বাবাকে অনেক বার বলেছে অনলাইন শপিং, বেকিং শিখে নিতে। বাবা শিখতে রাজি নয়। অসুবিধা হলেও বাজারে সে যাবেই। ছেলে বলছে বাবা এখন টেকনোলজি গ্রহণ করতে হবে। তাহলে বাড়িতে বসেই সবকিছু পেয়ে যাবে।

বাড়িতে বসেই সবকিছু পেয়ে লাভ কি জানিস। সময় বাঁচানো।এতো সময় বাঁচিয়ে মানুষ কি করে বলতে পারিস? নিজে নিজেই মোবাইল নিয়ে সবাই
ব্যস্ত থাকে। পাশাপাশি বসে থাকলেও কথা বলার
সময় থাকে না। এইভাবে ট্রেনে, বাসে, রাস্তায় সবাই
যদি ব্যস্ত থাকে তাহলে ভাববিনিময়, সৌজন্য বোধ একে অপরকে জানাবে কিভাবে। তোদের এই টেকনোলজি সময় বাঁচাতে জানে। কিন্তু কারো চোখের জল মোছাতে পারে না। তোদের এই টেকনোলজি অর্ডার করলে বাড়িতে খাবার এনে দিতে পারে। কিন্তু না খেয়ে থাকা মানুষ গুলোর পাশে গিয়ে সাহায্য করতে পারে না। তোদের এই টেকনোলজি পণ্য এনে দিতে পারে কিন্তু পুণ্য কোনো দিন এনে দিতে পারে না। এই ডিভাইস নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটানো যায়। কিন্তু কারো পাশে বসে তার
সুখ, দুঃখের সাথী হয়ে সময় কাটানো যায় না। তাই আমাকে আমার মতো থাকতে দে।





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল ও বাসন্তী সংখ্যা || ৯ চৈত্র ১৪৩১ || ২৩ মার্চ ২০২৫

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চতুর্থ বর্ষ || চতুর্থ ওয়েব সংস্করণ || বাদল সংখ্যা || ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ || ২৯ জুলাই ২০২৫