কথোপকথন

একটি কথোপকথন (কাল্পনিক)

র ত্না দা স

ছাদে শীতলপাটি বিছানো। চারদিকে আধফোটা ফুলের সাজ। মৃদু ঘিয়ের প্রদীপের নরম আভা গোধূলিকে আরও মায়াবী করে তুলেছে। বসেছেন সু-ছাঁদ কবরীতে কাদম্বরী অপরদিকে রবি। জ্যোতিদাদা আজ আসেননি এখনও।

কাদম্বরী: রবি, সারা ছাদ ভরা এত ফুল, তবু আমি কেন জানি যূথীবনের বেদনার আভাস পাচ্ছি। মন বড় চঞ্চল, উন্মন।

রবি: কেন নতুন বৌঠান! তোমার মুখেও ঘন ছায়া। আজ তবে এ কি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ... গাই!

কাদম্বরী: না রবি ও গান আজ নয়। আজ প্রাণ পূর্ণ নয়, শূন্য হয়ে আছে। প্রাণে মনে দগ্ধ শলাকার জ্বালাময় ছাপ, তার সূচীমুখে তীব্র তাপ! তোমার সোনার বাংলা আজ জ্বলছে, পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে আর্ত অসহায় কান্নায়।

রবি: নতুন বৌঠান, সোনা পুড়ে কয়লা হয়েছে, কয়লা পুড়েই তো হিরে। দেখো তাকিয়ে কী ঝকঝকে মুখ সব ঋজু মেরুদন্ডে। ওরা ন্যায় চাইছে, ওরা সত্য, শিব, সুন্দরের পূজারী। ওদের হাতেই নতুন যুগের শুরু হবে। ভাঙবে দুয়ার আসবে জ্যোতির্ময়। আলোয় ভরে যাবে দশদিক। সব অন্ধকার যাবে ঘুচে। বুঝলে বৌমণি!

কাদম্বরী: রবি তুমি আমাকে এ কী নামে সম্বোধন করলে! কখনও তো শুনিনি!

রবি: এটা এই যুগের ডাক বৌমণি। ভারি মিঠে বড় আপন লাগে।

কাদম্বরী: আচ্ছা রবি। তবে তুমি আমাকে ঐ নামেই ডেকো। চলো আজ দুজনে মিলে গাই "ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা।"

রবি: ঠিক গানের কথা বললে বৌমণি। কদিন বাদেই আসছেন দনুজদলনী, দর্পহারিণী, সংহারিণী, বিনাশিনী। ঐ শোনো, শঙ্খে, শঙ্খে তাঁর মঙ্গলগীত গাওয়া শুরু হয়েছে।

কাদম্বরী: রবি, তুমি কবে থেকে পৌত্তলিকতায় বিশ্বাসী হয়ে উঠলে! এসব তো এবাড়িতে নেই!

রবি: দেবী দশপ্রহরণধারিনী কোনো পুত্তলি নয় বৌমণি, তিনি শাশ্বত শক্তির প্রতীক তাই ভক্তির দ্যোতক। তিনি জননী। তাকে দেখলে বলতে ইচ্ছে করে "ওগো মা তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে।"

দুজনের সম্মিলিত গীতসুধায় সব ফুলগুলো ঝলমল করে ফুটে উঠলো। তাদের সুবাসিত খিলখিল হাসি ছড়িয়ে গেল এধার থেকে ওধারে, এপার থেকে ওপারে...







মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল ও বাসন্তী সংখ্যা || ৯ চৈত্র ১৪৩১ || ২৩ মার্চ ২০২৫

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চতুর্থ বর্ষ || চতুর্থ ওয়েব সংস্করণ || বাদল সংখ্যা || ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ || ২৯ জুলাই ২০২৫