স্মৃতিকথা
জিন্স প্যান্ট
স র্বা ণী রি ঙ্কু গো স্বা মী
আমরা যখন টিনএজার তখন মেয়েদের রেডিমেড জিন্স তেমন পাওয়া যেত না, অন্ততঃ আমি দেখিনি। আমাদের মধ্যবিত্ত সংসারে জামাকাপড় অশালীন না হলে তেমন আপত্তি ছিল না কারুর, আমরা তখনকার সালোয়ার কামিজ ওড়না লং ফ্রক জড়ানো স্কার্ট চুড়িদার বেল বটম সব পরেছি। কিন্তু এখনকার মতন সব রকম মাপের মেয়েদের জিন্স পরা হয়নি বলে মনে মনে খুব দুঃখ ছিল। তখন আমি নিতান্তই ছিপছিপে, আমার পুরোনো আত্মীয়বন্ধুরা সেই চেহারার সাক্ষী আছে। তা আমার মনখারাপি দূর করতে বাবু নেপাল থেকে একটা ছেলেদের জিন্স নিয়ে এসে সেটাকেই চেনা দর্জিকে দিয়ে কাটিয়ে মাপসই করে দিয়েছিল। কিন্তু তাতে কি আর হয়, চেহারার ধরণ আলাদা ছেলেদের আর মেয়েদের... তাই না? তবুও দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে সেই আশির দশকে ঐ পরেই গোটা দিল্লী সিমলা ঘুরেছিলাম মা বাবুর সঙ্গে... কী লক্ষ্মী মেয়ে বলো দেখি!
তার পরের বছর বিয়ে, এসে পড়লাম একে মফস্বল তায় কোলিয়ারীতে এক যৌথ পরিবারে। শাড়ি এবং ঘোমটা সেখানে বিবাহিতাদের জন্য অপরিহার্য, খুব প্রিয় সব পুরোনো সালোয়ার কামিজ যে মা কোথায় কোথায় দান করে দিল খবর রাখিনি আর। তবে দীঘা গেছিলাম একবার বিয়ের বছর চারেক পরে, শাশুড়ি মা লুকিয়ে টাকা দিয়েছিলেন সমুদ্রে স্নান করার জন্য সালোয়ার কামিজ কিনে নিতে... কিনিনি, তখন নিজেরই অভ্যেস চলে গেছিল পরার। বহুবছর পর আবার সালোয়ার কামিজ ধরলাম যখন রিয়া ব্যাঙ্গালোর বাসিন্দা, দুরন্ততে আপার বার্থে চড়বার জন্য। তখন থেকেই আবার পরি... বিশেষ করে বিকেলে হাঁটতে গেলে বা বাজারহাট করতে। তবে অনুষ্ঠানবাড়িতে শাড়িই পরি, শ্বশুরবাড়ি সম্পর্কিত কোথাও গেলেও।
ঝুমকো দুল রঙিন টিপ সানগ্লাস আর হিল জুতোর মতো, জিন্সপ্যান্ট আমার অধরাই রয়ে গেল এই জীবনে। দুঃখ নেই গো, ঐ একটুখানি মনখারাপি আর কি... ব্যস্।
এ জিন প্যান্ট "কথাটা প্রথম শুনেছিলাম আসানসোলের কোলিয়ারীতে বিয়ে হয়ে এসে, খুব মজা পেয়েছিলাম শুনে।
চন্ডীগড়
অ গ্নি মি ত্র
এশিয়ার প্রথম ও দেশের অন্যতম পরিকল্পিত শহর, দেশের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত চন্ডীগড়।... পাঞ্জাব ও হরিয়ানার যৌথ রাজধানী এই চন্ডীগড় যা ছোট কিন্তু নয়নাভিরাম শহর। তৎসহ এটি একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। সম্প্রতি অনেক বছর পর আবার ঘুরে এলাম সেখানে।
১৯৫৪ সালে বিখ্যাত স্থপতি লে করবুসিয়ে-র ( Le Corbusier) হাত ধরে গড়ে ওঠে চন্ডীগড়। আসলে দেশভাগের পর লাহোর পাকিস্তানে চলে যায়, তাই পাঞ্জাব ও হরিয়ানার একটি নতুন রাজধানীর দরকার অনুভূত হয়। আগে থেকেই কাছেই ছিল চন্ডীমন্দির এলাকা। তার থেকেই এমন নাম। এই একই স্থপতি মোটামুটি একই সময়ে আমাদের বিধাননগর বা সল্টলেকেরও পরিকল্পনা করেন। প্রায় আটচল্লিশটি সেক্টর নিয়ে গঠিত হয় চন্ডীগড় শহর। শিক্ষামূলক সংগঠন হিসেবে এখানে আছে পিজিআই ( PGIMER), পেক ( PEC বা Punjab Engineering College ) ও পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি। শেষোক্ত সংস্থায় পড়াতেন প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ শ্রী মনমোহন সিংহ। এখানে আছে আরো সরকারি কলেজ, যেমন Government Home Science Colllege।
চওড়া পরিষ্কার রাস্তা ও অনেক রকম গাছগাছালির জন্যে এই শহরের সৌন্দর্য অপরিসীম। ঘোরার জন্যে আছে সুকনা লেক, রক গার্ডেন , রোজ গার্ডেন, ছাতবির জু বা চিড়িয়াখানা, রামকৃষ্ণ মিশন ও কালীবাড়ি। সতেরো সেক্টরের মার্কেটও বিখ্যাত ও বিস্তৃত। কিছু না করে এখানে শুধু বসেও থাকা যায়। সতেরো সেক্টরে বিকেলে স্থানীয় পাঞ্জাবী গায়ক এবং বাদকদের সুরেলা গীত ও বাদ্য খুব ভালো লাগে। এখানকার লোকেরাও ভালো ও মানুষকে সাহায্য করার জন্য সর্বদা তৎপর।
আমার সবথেকে ভালো লেগেছিল এখানকার খাওয়াদাওয়া। খাবারদাবারে কোনো ভেজাল নেই এখানে।... দুধ, মাখন, লস্যি ও বাটার চিকেন এখানকার বিখ্যাত খাবার। এখানে এক গ্লাস লস্যি খেলে আর খিদে পাবে না চট করে। আর এখানকার আলুর বা অন্য পরোটার কোনো তুলনা নেই। ভাতপ্রেমীরা 'কাঢ়ি চাওল' ও 'রাজমা চাওল' খেতে পারেন। মিষ্টির দোকানের মধ্যে নামকরা হলো গোপাল সুইটস্ এবং সিন্ধি সুইটস্।
সাধারণত কেউ আলাদা করে ঘুরতে যায় না এখানে, তবে শিমলা, মানালি বা অমৃতসর যাবার পথে অনেক লোকে এক বা দুই রাত থেকে যায় চন্ডীগড়ে। কালকা মেল ( বর্তমান নাম নেতাজী এক্সপ্রেস) ও বিমানপথে কলকাতা থেকে সরাসরি পৌঁছে যাওয়া যায় চন্ডীগড়ে এখন। থাকার জন্য ছোটবড় কিছু হোটেল আছে এই শহরে। সব মিলিয়ে মনে রাখার মতো সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন শহর চন্ডীগড়। এরকম শহর দেশে আর দ্বিতীয়টি নেই।।...
তথ্যসূত্র:- নিজস্ব অভিজ্ঞতা
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন