কবিতা

 যাত্রা


তৈ মু র  খা ন


পার্থিব যাবে অপার্থিবের বাড়ি

আমরা বৈরাগ্য চাইব যদি না ফেরে হলদে শাড়ি

ক্ষতচিহ্ন ঢেকে চাঁদ উঠবে

মৌসুমিকে কেউ ভোলেনি

মৌসুমী যদিও ঋতু নয়,কিংশুক ফুলের মতো নারী


ডেটল ভেজাচ্ছে তুলো

আমরা তার গন্ধগুলো ভাগ করছি

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসছে মৃত্যুগুলো


ছুটি হল

এই মুহূর্তে ছুটি হল

নিরালোকে ছুটে যাচ্ছে নিপুণ হাওয়া গাড়ি




ছুটছে যারা


ক ল্পো ত্ত ম


এই যে এতখানি পথ 

হেঁটে এসেছো সারি সারি 

আকাশের নিচে

এরও এক বিদগ্ধ ইতিহাস রয়ে গেল 

খুরিদের চাপে।

মিশে গেল পথের ধুলায়।


আকাশ হাসছে।


সূর্যের বিদায় বেলায়

গাছেদের সারি

হারিয়ে যায় ষষ্ঠপদী আঁধারে আঁধারে।


ছুটে চলো

উঁচিয়ে রেখে শিং

অগুনতি নক্ষত্রের দিকে।





যেদিন কবিতা আসে


র বী ন্দ্র না থ  প্র ধা ন 


যেদিন একটি কবিতা লিখতে পারি,

সেদিন আকাশ ঝরায় অঝোরে বৃষ্টি,

আমার পৃথিবী সেজে ওঠে রঙে রঙে।

যেদিকে তাকাই সবকিছু ভালো লাগে।


আমার কলম যেদিন কবিতা লেখে—

অকাল বসন্তে পলাশের হাতছানি,

প্রৌঢ় হৃদয়ে যৌবন মাদল বাজায়, 

কোকিল কাননে সারাদিন গান গায়।


কী এমন জাদু শব্দের কথামালায়---

পলকের স্পর্শ সরায় বুকের চাপ, 

অনুভূতিগুলো ছাড়া পেয়ে ডানা মেলে—

ব্যর্থ নাবিকের সাফল্যের অভিযান।


যেদিন কবিতা একটু সদয় হয়—

সচল কলম কথা বলে সারাক্ষণ।

অক্ষরের মধু আহরণে মাতে মন,

খুঁজে পায় যেন জীবন শব্দের অর্থ।





স্পর্শ


আ কা শ  নে রু দা


আমাকে জানতে ও চিনতে চেয়ে 

বারংবার জিজ্ঞেস কোর না  

কোথায় আছি কিভাবে আছি!

জোরাজুরি কোর না!

আমি আছি আছি এবং আছি,

কখনো ভাঙ্গা গড়ার মাঝে,

কখনো কিছু নিরপেক্ষ নিঃশ্বাসে,

কিংবা তরুলতায় ঝোপেঝাড়ে,

ঝরে যাওয়া পাতার বিষণ্ণতায়,

শ্রমিকের অবসন্ন মুখে,

নিষ্ঠুর কুঠারে ও গানের সুরেও,

এমনকি নিজেতে,

ভেতরে এবং বাইরেও,

এই সব কিছুই আপেক্ষিক 

কিংবা মিথ্যে হয়ে যেতে পারে!

যদি না এই সবকিছুতেই 

তুমি নামের মঞ্জরী আমাকে না ছোঁয়!


এই যে আছি এবং হয়তো রয়ে যাবো 

মন্দ ও ভালোর বুকের স্পন্দনে,

ভীষণ ভীড়ে কিংবা নির্জনতায়,

বেপরোয়া প্রেমিকের লেখা নীল চিঠিতে,

মদ্যপ মাতালের চিৎকার চেঁচামেচিতে,

ধূর্ত শেয়ালের জুলজুলে চোখে,

ট্রেন লাইনের ভীষণ ঘর্ষণের আওয়াজে,

পাখির শিসে,

হাওয়ার তরঙ্গে,

কল কারখানার ধোঁয়ায়,

পুজোতে পার্বনে,

শোকে ও খুশিতে,

উত্থানে পতনে,

দ্রোহে বিদ্রোহে বিশ্বাসে বিশ্বাসহীনতায়,

শান্তিতে কিংবা অশান্তির মুহূর্তেও,

সবেতেই আছি আছি এবং আছি!

হয়তো আরও কয়েকটা মাস বছর যুগ পেরিয়ে 

এভাবেই থেকেও যাবো,

কিংবা এক নিমেষে এই সবকিছু থেকেই হয়তো হারিয়ে যাব,

যদি ঘটমান ও দৃশ্যমান সবকিছুর মধ্যে 

আমাকে কেউ দেশ বলে না ভাবে!





ব্যথার শরৎ


ক বি তা  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য় 


আজকাল দিন কাটে এক অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে 

মনের মধ্যে ভাবনারা উঁকি দিলেও 

লিখতে পারি কই?

নিত্যনৈমিত্তিক কাজ সারি যন্ত্রের মত,

কর্তব্যেও কোনো  ত্রুটি নেই...

 

আমার গাছেরা  বোঝে আমার যন্ত্রণা  

মাথা দুলিয়ে আদর জানায়

টুপটাপ পাতা ঝরিয়ে সোহাগও, 

ওরা জানে আমি শরৎকালে ভালো থাকিনা...


আকাশে বাতাসে যখন খুশির ভেলা

অন্তরে ব্যথার প্রদীপ জ্বেলে

দুহাত দিয়ে আগলে রাখি শিখা,

অনির্বাণ সেই শিখা অনন্ত-ব্যথায়  উজ্জ্বল হয়ে  এক পুরনো গল্প শোনায়...


আমি জ্বালিয়ে রাখি সে প্রদীপ  আমার সমস্ত সত্ত্বা দিয়ে, 

আর আমাকে অবাক করে 

সে  নিজেই জ্বলে ওঠে প্রতিটি শরৎকালে, এবং 

জ্বলতেই থাকে...





বন্ধু নিজেই


স ন্দী প ন  গু প্ত


বিপদে সবাই আসবে পাশে

দেখতে চাইবে ক্ষয়,

দিনের শেষে নিজের ব্যথা

শুধুই নিজের হয়...


বলবে সবাই অনেক কথা

পড়বে জ্ঞানে পলি,

গ্রামের মানুষ ডোবে বর্ষায়

ভেজে শহরতলি...


কার পক্ষ কার দিকেতে 

করলে শুরু গোনা,

বন্ধু কে আর সাজছে কে

বোঝা বিড়ম্বনা...


চলতে হবে অনেকটা পথ

শুনতে হবে আরও,

নিজেকে বন্ধু ভাবলে কাউকে

পড়বে না দরকারও...





সময় কণা


অ শো ক  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়


এই মুহূর্তটাই এক বিশেষ মূহুর্ত---

প্রতি পল, প্রতি ক্ষণ, প্রতি দিন মান---

প্রতিটি মূহুর্তের আছে আলাদা ব্যাঞ্জনা।

সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র তারা আপন মহিমায়।

পেরিয়ে গেছে যে সময় ফিরবে না আর।

এক একটি দিন চলে আপন গতিতে 

সঙ্গে নিয়ে ঘটনা বহুল বিচিত্র যাপন।

মহাকালের চাকা ঘুরে চলে অবিরত

সমগ্র মহা বিশ্বে অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে 

যেখানে থেমেছে কালের আশ্চর্য গতি পথ।

কোথাও দিন--- রাত্রি কোথাও।

কোথাও আলো, কোথাও শূন্য অন্ধকার মায়া।

বিস্তারিত সেই মায়াজালে টিকটিক চলে 

জড় ও জীবন গড়ি---

প্রাত্যহিক দিনলিপি চিটিয়ে আঠা জালে।

আজ যে দিনটি হারালে হাসি-কান্না-গানে

ফের তাকে খুঁজে পেতে দিতে হবে পরিক্রমা 

আলোক যানে চড়ে---

শত শত আলোকবর্ষ দূরে।





অস্তিত্বেই মুগ্ধতা


অ ন্ত রা  ম ন্ড ল


তোমার কবিতায় উপহাসের কেন্দ্রবিন্দু হয়েও 

নিজেকে খুঁজে পেলাম না,

ইচ্ছেরা নিশ্চুপ থেকে মাপলো আমাদের দূরত্ব।

ভাবনার কালো মেঘে যখন বৃষ্টি নামলো

তোমার কাজল মুছে যাবে তাই হাত পেতে ধরলাম বৃষ্টিজল,

তারপরেই হাহুতাশ।

মাটির ভাঁড়ে দুধ চায়ের সুবাস নিতে নিতেই তা

এগিয়ে দিলাম তোমার পানে,

আর তখনই বুঝলাম কবিতার আসল অন্তর্নিহিত অর্থ।

শেষ বসন্তের দ্বিপ্রহরে কবিতা বইয়ের সাদা অংশে

জুড়ে দিলাম দু-তিন বাঁকের প্রেমালাপ,

যেখানে ঘড়ির কাঁটার ফুরিয়ে যাওয়া সময়ে

জুড়ে দিলাম তোমার কাল্পনিক অস্তিত্ব,

তোমার করা উপহাসে মিশিয়ে দিলাম প্রাক্তন অধিকার,

তারপর ছন্দ মিলিয়ে দেখি,

শুধুই মুগ্ধতা।





নয়ানজুলি


সো মা  ন ন্দী


বৃষ্টি আসা আর না আসার মাঝখানে দাঁড়িয়ে একা জলের অন্ধকারে! 

ভিজে মাটির মধ্যে ডুবে থাকা তোমার কম্ম নয় জানি।

শিকড় পচে যায় পাছে, তাই টেনে তোলা টবের বাহারে।

আশ্রয়ের নিচে যে পোকাগুলি আছে তাদের কথা এখন না ভাবলেও চলে।

প্রেমের মত ঘন হয়ে লেগে থাকা পাতারা ঝরে গেলে,

বুক ভাসানো জলও প্রত্যাখ্যাত ভিখিরির মতো চলে যায় হাওয়ায় হাওয়ায়।

অথচ শরীরে বর্ষার রেণু ভেঙে মেঘ ঢুকে পড়লে,

আলভাঙা জমিতে আরুনির মত নিশ্চিন্তে ফুরিয়ে যাওয়া।


তবুও রক্তশিরা জ্বালিয়ে ঝুড়ি নামিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা।

কেউ এলে দেখা হয়, ছাইমাখা পোড়া কথাও হয়।

ওদের গলে যাবার ভয় থাকে না, 

ওরা তো পোড়া মাটির ঘোড়া।

কিন্তু ওদের শরীর খারাপ হলে পাখিরাও আসে না তেমন।

শুধু নিকষ কালো কাক উড়ে এসে পিন্ড খেয়ে যায়।

দ্যাখা না গেলেও, ঠোকরানোর শব্দ পাওয়া যায়...





আঁধার পাঁচালি


বি দ্যু ৎ  চ ক্র ব র্তী

 

প্রোজ্জ্বল শিখাটি ধরে রেখেছে যে বাতিদান

আমি তার নীচে রোপণ করেছি প্রজন্মবীজ

আলোআঁধারিতে যার বেড়ে ওঠা, সেই জানে

রোদজোছনার ফারাক, বাকি সব রাতকানা।

 

নিভন্ত সলতেটিকে উসকে দিয়ে

আলোকমালায় যে সাজিয়েছে পৃথিবীর বাতিঘর

আমি তার সাত জনমের প্রেমিক---

যে আমাকে সঁপেছে তার আজন্ম বোহেমিয়ানা।

 

আমি বাতি হয়ে জ্বলে উঠিনি কখনো

আমার বুক জুড়ে আজন্ম ভীতি-ধুকপুক

ভাতখেকো আমি জানি আলোকের ইন্ধন

ফুরোলেই সব ফাঁকি--- কথা চিরন্তন।

 

আঁধারের গুহা থেকে আলোকের পথে পথে

যে ফেলেছে পা, আমি তার আলোর দিশারী

রোজ রাতে আমি তাকে শেখাই আঁধার-পাঁচালি

পিলসুজ বেয়ে বেয়ে ছড়াবে সে আলোর দীপালি। 





ক্রমশ উদ্বাস্তু হয়ে যাচ্ছি

   

প্র দী প  সে ন 


এক একটা বাস্তু ক্রমশ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। 

সততা, সহমর্মিতা, সহাবস্থান, হিতৈষা-

একে একে হারিয়ে ফেলছি কত ঘর। 

দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে সে তালিকা। 

হীন মানসিকতার মহা সুনামির দৌরাত্ম্যের মাঝেও 

এখনও যেটুকু বাস্তু ভিটে অবশিষ্ট আছে 

তাও বুঝি হারাতে বসেছি অচিরেই।

তবে কি শেষমেষ বাস্তুহারা হয়ে 

পথভ্রষ্ট পথিকের মতো পায়চারি করাই ললাটলিখন!





প্রেমের যুদ্ধ হোক


শু ভা শি স  সা হু


আজ আকাশে

প্রেমের আর্বিভাব হোক, 

তুমিও এসো

দেবীর মতো;

আর জড়িয়ে ধরে বলো:

‘এখন আর

দুঃখ করতে নেই, এইতো

আমি তোমার

কাছে’। 


হে দেবী হে আকাশের

বিচলিত সুখ;

আজ দুজনের ভিতর

শুধু প্রেমের যুদ্ধ হোক।।





নীলকন্ঠ চাতক


ই লা  সূ ত্র ধ র


ধীরে ধীরে গুছিয়ে নিচ্ছি-

আমার সংসার।

আত্মীয়-পরিজন, লৌকিকতা,

আর বোগেনভেলিয়ার ছাদবাগান।

সব!

সব সামলেও কবিতার জগত গড়ে তুলেছি,

কিভাবে পূর্ণতা পাচ্ছে জীবন

একবার এসে দেখে যাও অনির্বাণ!


তুমি বলেছিলে সকাল দেখতে!

আমি এখন রোজ 

প্রভাতী আলোয় তাই খুঁজে ফিরি তাকে

সূর্যের সোনালী আভায়-

জলাশয়ে হাঁসেরা ডুবস্নান সারে।

আর সাদা-বাদামি ডানা ঝাপটিয়ে

প‍্যাঁক প‍্যাঁক স্বরে 

ঠোঁটে ঠোঁটে উল্লাস করে অবিরত।


শুধু একটু সময় দিলেই-

সেজে উঠবে আকাশের ক্যানভাস!

তুলির টানে রঙের ছটায় রাঙাবে চিত্রপট।

তবু কেন কাদায় লেপ্টেছে এ শরীর?


রেখে যেতে চাই অন্তিম কিছু একান্ত আশ্রয়-

গড়িয়ে পড়েছে পড়ুক অযাচিত গরল,

যেটুকু বিষবাষ্প শুষে নিই বুক ভরে।

মহাকাল যেভাবে হয়েছিল নীলকন্ঠ চাতক!





স্তব্ধ রাতে


ছো ট ন  গু প্ত 


স্তব্ধ রাতের বাইপাসে একা একা ভেসে যাওয়া চাঁদ 

শত তারা আলো জ্বেলে বলে ভুলে যাও বিগত বিষাদ 

পাথরে পাথর ঠুকে ঠুকে জ্বালিয়েছি প্রথম আগুনে 

আপাতত ঘন জঙ্গলও ঘুমে কাদা বিগত ফাগুনে।


কাটা গাছে নুয়ে থাকা মাটি ভূমিতলে কমে আসা জল 

বলে যায় রাত ভারী হলে খুঁজে নিও নয়া কোনও স্থল 

বৃষ্টির গত ধার বাকি শোধ করে যায়নি যে মেঘ 

তার কাছে যাওয়া হয় না তো বাড়ে তার ঋতু উদ্বেগ।


রাতদিন মিলেমিশে আলো বজ্রনিনাদে চমকালো 

তারপরে ফিরে চলে যাওয়া তারপরে রাত ঘনকালো 

এত কালো মেখে নিয়ে চলা তোমাকে হয়নি তাও বলা 

কি দিয়ে যে গড়ে তোলা সাঁকো ভঙ্গুর চুপ আলাভোলা 


বলে গেছে পরাজয় নীতি ভেঙেচুরে সততার ইতি 

ইতিহাসে যা যা লিখে রাখে মানবিক ভ্রান্ত প্রতীতি, 

এখানে ভ্রমের কবিতারা মাঝে মাঝে বড়ো দিশেহারা 

মাঝে মাঝে মিছে জাঁক করে ধু ধু মাঠে বুনে যায় চারা 


সে চারা বৃষ্টি ভেজে না সবুজের ছবি আঁকবে না 

এখানে বিরতিহীন খরা নদীপথ আর বাঁকবে না 

বন্ধ্যা শহরে হাইওয়ে চলে যায় বহু ক্রোশ বয়ে 

স্তব্ধতা বেড়ে চলা রাতে বিপন্ন কালছবি হয়ে-


এসেছিল, চলে গেছে কবে, ধূসর অবয়ব তাকে ছোঁবে 

বলেনি তা আগামী শিশুরা, জেগে ওঠে রাত্রে নীরবে।

হেরে যায়, হেরে যেতে যেতে ক্ষণিকের স্বপ্নতে মেতে 

পাহাড়ের কাহিনি লিখেছে ঘন জঙ্গল গেছে তেতে।





সময় আর আমি


র ঞ্জি তা  চ ক্র ব র্তী


সময় আর আমি সমান্তরাল ভাবে চলছিলাম,

হঠাৎ করে পুরোনো দিনের সঞ্চিত

কিছু দুঃখ এসে উপস্থিত!

তারা আমার হাত ধরে নিয়ে গেল

মাঝসাগরের পথে-

জলের জীবাণুগুলো আবার আমায়

আঁকড়ে ধরল।


আমি ফিরে গেলাম, রেশমের রুমাল প্যাঁচানো

কাঁটাযুক্ত অতীতের দরজায়;

রুপোর পেয়ালায় সাজানো

বিষাক্ত পানীয় স্পর্শ করলাম।

আমি আবারও হয়ে উঠলাম,

তোমাদের পাশের বাড়ির সেই অসহায় প্রেমিকা!


এবারও আমি পিছিয়ে পড়লাম...

সময় আর আমি একদিন

সমান্তরাল ভাবে চলেছিলাম।





ডাকবাক্স


চা ন্দ্রে য়ী  দে ব


উপন্যাসের শেষের পাতায় 

ধরে রাখতে চেয়েছিলাম তোমায়

মেঘপিয়নের ডাকে সাড়া দিয়ে

রামধনুতে মিশে গেলে জীমূতের দেশে

দখিনের বারান্দায় আনমনা হাওয়া

ছুঁয়ে যায় বারে বারে অযৌক্তিক কথার বাহানায়

হাঁটু গেড়ে বসে আছে মনের এক কোণে

ভেঙে পড়া টুকরো টুকরো শব্দ

চিঠিরা অবলীলায় ডাকবাক্সে বন্দী

অন্তহীন ঠিকানার খোঁজে।।





আলো


কৃ ষ্ণা  গু হ 


সোনার কাঠি আর রুপোর কাঠির ছোঁয়ায় যে রাজকন্যার ঘুম ভাঙতো, কতকাল কল্পনায়ও আসে না!! আসেনা পক্ষীরাজের ঘোড়ায় চড়ে টগবগিয়ে রাজকুমার।


এখন টম এন্ড জেরি 

মিকি মাউস আর 

ডোরেমনের জয়জয়কার।


রূপকথার গল্প গুলো আজও জড়িয়ে আমায়!

মাঝে মাঝেই ঝরাপাতার গান শুনি, নির্জন দুপুরে মেঠোপথে তাল খেঁজুরের সারি গুনি!


দিন বদলেছে জানি,

জানা অজানার মাঝে নিজেকে হারাই!


আলগা হয়েছে সম্পর্কের বাঁধন,

আজও ইচ্ছে হয় যদি যাদুর কাঠির ছোঁয়া পেতাম ছুটে যেতাম সাত সমুদ্দুর তের নদীর পার!


যেখানে বয়ে যায় কুল ছাপানো বন্ধনহীন জোয়ার মানবতার।


 সেখানেই তো নির্জনরাত্রি দূর করে দেবে সব অন্ধকার।


রাত-পাখি এসে ঘুম ঘুম চোখে বলে যায় আলোর সন্ধান যখন পেলে দেরি কেন! যাও চলে যাও আলোর দিশায়।





সাঁঝের প্রদীপ


সি রা জু ল  ই স লা ম


তুমি হাসলেই মুক্তা ঝরে তুমি হাসলেই মোতি

তোমার হাসিতে রাঙা সকাল উদ্ভাসিত জ্যোতি 


তুমি হাসলেই বাগান জুড়ে পাখিদের কলতান

স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় ফুল মালঞ্চে ফুলের জয়গান


ভোরের আকাশে ডানা মেলে পাখি যখন তুমি হাসো

ঘাসের ডগায় শিশিরকণা মুগ্ধতায় ভালোবাসাে


উজান ভাটার জলধারায় তোমারই গুণগান

ইচ্ছে ডানায় মরালীর ঝাঁক ফিরে পায় যেন প্রাণ 


সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে গড়েছেন স্রষ্টা কারিগর 

অপরূপা তুমি তোমার রূপে 

ভরে যায় অন্তর 


তুমি না হাসলে অন্ধকারে 

ঢেকে যায় দিনের আলো

মায়াবতী তুমি তোমার মায়ায় সবাইকে বাসো ভালো 


তুমি যে এক স্বর্গীয় ফুল ধরা'তে ফুটেছো জানি

তোমার জন্য রেখে গেলাম আমার কবিতা খানি 


সার্থক হোক জন্ম তোমার এই পৃথিবীর পরে

সাঁঝবাতি হয়ে আলো জ্বেলে দাও সবারই অন্তরে!!





পরবাস


শি খা  না থ


জীবন যেনো গল্প বলা শহর,

যে শহরে তোমার আমার বাস।

নিত্য নতুন প্রাসাদ গড়ে কতো

ভাঙ্গে গড়ে কতো যে কারিগর।



বাগান সাজায় অনেক যত্ন করে,

নানান পাখির নানান কলতান।

বাগান জুড়ে নানান ফুলের বাহার,

তোমার আমার প্রেমের ঝর্না গড়ে।


চলছে চলছে দিনের গতি বেয়ে,

রোজের দেখা ব্যস্ত শহর জুড়ে।

তোমার আমার ভাবনা ছিলো এক,

বিবর্ণ হলো ভুলের সঙ্গ পেয়ে।


জীবন শুধু ভালোর মাত্রা  খোঁজে,

কালোর ঘরে শুধুই অন্ধকার।

ভাবনা যখন দু পথে নেয় মোড়,

শহর  তখন নীরবতাই বোঝে।


তবুও যখন রোদ, আকাশ ভেঙে আসে,

আমার আবেগ যেনো, নতুন করে ভাসে।

জীবন গল্প লেখে নিয়ম বে নিয়মে,

ছন্দ ঘোরে ফেরে নতুন পরবাসে।





প্রহর


শি খা  দ ত্ত 


এইসব নিরালা রাতে, আমি শুধু 

মোহরদির গান শুনি।

ভিজে যায় দু'চোখের পাতা 

অজানা বিরহে। 

বাতাসে ফিসফিস শব্দ, ঢেউ তোলে, মোহময়ীচাঁদ, ছায়াচ্ছন্ন মালকোষে ভেসে যায় সমূহ ভালবাসা। 

ছড়িয়ে পড়ে চোখের কাজল গাঢ় অভিমানে।

এ ভরা আশ্বিনে, বাতাসে তীব্র শিউলির গন্ধ 

ক্লান্ত প্রহর, চৌদোলা মেঘ 

দেখতে দেখতে চুর হয়ে যাই 

পরম শান্তি জলে। 

হরিৎ ভাঙ্গা মাঠে 

জেগে ওঠে বনলক্ষ্মী 

কারা যেন জ্বেলে গেছে সুখ 

ভোরের আলোর গায়ে রাত্রির স্তব।





বড় অভিমান রেখে গেছে প্রেম


অ ঞ্জ ন  ব ল


বড় অভিমান রেখে গেছে প্রেম

শরতের সকালে- বৃষ্টিহীন ছেঁড়া মেঘ

বিবর্ণ হলুদ পাতার মতো শোক গাঁথা।

ভরা ক্লান্ত মজে যাওয়া নদী চরে

পৃথিবীর সব আলো নিভে গেছে

স্তিমিত গন্ধ স্পর্শ... কোমল গান্ধার

নিশি রাতে সুরেলা রেশ.... বাতাসে।


স্তব্ধতার বিন্দু বিন্দু ঘাম শিশিরের ঘাসে

এখনো মালতির গন্ধ আঁচলে বাঁধা;

ছায়া ঘেরা প্রিন্সেপ ঘাটে গভীর রাতে

কন্ঠলগ্ন মিথুন;

আকাশে নক্ষত্র গালিচা অদৃশ্য খামার,

মাটির অবকাশে শহরের বেওয়ারিশ মুখ 


শয্যা যাপন।

বড় অভিমান রেখে গেছে প্রেম

কোনো এক নগরীর সুরম্য জাদুঘরে

জমানো মৌর্য অবশেষ,

প্রেমহীন শস্যহীন সহবাস আর কতদিন-

অতৃপ্ত রতিক্রীড়া নারীদের অহল্যা বুকে

শুষে নেয় পৃথিবীর পুরুষালি ঠোঁট 

নারীদের সবুজ সৌষ্ঠব।





নাগরিকত্ব


উ ৎ প লে ন্দু  দা স


নাগরিকত্ব নিয়ে সমস্যা শুধু মানুষের নয় 

শুধু কয়েক ফুট উঁচু কাঁটা তারের বিভাজনের গল্প

সমস্যা বহু গভীরে, 

ক্ষমতা ও শ্রেষ্ঠত্বের দর্প প্রদর্শনের

বহুদিনের লালিত বিশ্বাস 

চামচিকা হয়ে ঝোলে মনের আঁধার কোণে।


সমস্যা নেই পরিযায়ী পাখিদের আসা যাওয়ার

বহমান মেঘেদের বৃষ্টি ঝরানোর

বাতাসের নিশ্চিন্তে বয়ে যাওয়ার

চাঁদ সূর্য নক্ষত্রের আলো ছড়ানোর,

তারা তো ভৌগলিক পৃথিবীর বিধিবদ্ধ নাগরিক নয়।


সমস্যা সৃষ্টি করে শুধু লোলুপ নেকড়ে মানুষের দল

ধর্মের দোহাই দিয়ে করে বিতাড়ন জন্মভিটা থেকে

পান করে একই গ্রহের সুমিষ্ট ভৌম জল,

তবুও অভাবনীয় তাদের দলবদ্ধ হিংস্র আগ্রাসন।


অথচ ডিএনএ তে নেই তত অমিল

রক্তের রং লাল, ঘাম ও চোখের জল নোনতা

ঈশ্বরের নাম বিভিন্ন কেন প্রশ্ন না তুলে

খসায় শেষে সব পলেস্তারা জমিন আসমানে

ভিন্ন ভিন্ন মত যত, আসলে অভিন্ন না জেনে।





ভালোবাসা অন্তহীন


জ য় ন্ত  দ ত্ত  ম জু ম দা র


এক বিষের সাথে যুদ্ধ করছি

রাত্রি দিন

যে এক ভালোবাসার 

দখল নিতে চায়! 


সে বিষেরই সাথে কুস্তি লড়ছি

বিরাম হীন


জানি

জিততে যে হবেই

দীর্ঘ পথের শেষে বলতে হবে

ভালোবাসা অন্তহীন!





প্রথম কুঁড়ি


বী থি কা  ভ ট্টা চা র্য 


প্রথম যেদিন কাছে এলি, হঠাৎ কাজের ফাঁকে, 

সেদিন তোকে দেখেছিলাম, আগুন ছিলো চোখে। 

সেদিন থেকেই প্রথম শুরু, মন উচাটন টান, 

তখন আমার উনিশ, তোর একুশ অনুমান। 

সেদিন ছিলো মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি ছিল ছাদে,

দুজন মিলে ভিজেছিলাম, মিষ্টি সে আহ্লাদে। 

দেহের ভেতর কাঁপন ছিল, মনের মধ্যে ঝড়,

ঝড়ের মধ্যে দুটি হৃদয়, বেঁধেছিলো ঘর।

ভেজা শাড়ীর জল আঁচলে, সিক্ত বেণীর চুল, 

সেদিনের সেই প্রথম প্রেমটা হয়তো ছিল ভুল।

আজকে সবই মলিন বড়, সেদিন যেটা মধু, 

ছাঁটা চুল আর বয়েস কাটে, এখন আমি বধূ। 

সেদিন ছিলো তাঁতের শাড়ী আজ পরেছি স্যুট,

অনেক খানি বদলে গিয়ে, চটি ছেড়ে বুট। 

সময় কেমন সব কিছুকে বদলে দিয়ে যায়, 

সেদিনের সেই প্রথম প্রেম আজ ভুলের ঠিকানায়। 

সেদিন ছিলো গোঁফের রেখায়, চিকণ কচি ছাঁট,

আজকে খানিক পুরু, মোটা অনেকটা ভরাট। 

কাঁচা পাকা চুলের ভাঁজে, মুখের হাসি টুকু,

কেমন যেন বদলে গেছে, কেমন রুখু শুখু। 

হঠাৎ করে হারিয়ে গেলি, বৈশাখী এক রাতে, 

তখন আমি দাঁড়িয়েছিলেম, অপেক্ষাতে ছাদে।

একেক করে পেরিয়ে গেছে, কতনা বৈশাখ, 

হঠাৎ কেন এলি ফিরে? দিলি আবার  ডাক। 

মনের মধ্যে তোর ছোঁয়াটা, আজো মিঠে স্বাদ,

অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে, সময় সাধে বাধ। 

আজো তবু তোর ডাকেতে মনের মধ্যে ঝড়, 

অন্তরে তুই আজো আছিস, বাইরে শুধুই পর।





তবুও বেঁচে থাকা


আ র তি  ধ র


একটি আস্ত জীবনকে পরীক্ষাগারে

ফেলে চলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা,

কখনো তুলনামূলক; কখনো

বিশ্লেষণাত্মক---


মাঝে মাঝে শরীরে সুঁচ ফোটানোর বেদনা

অনুভব হয়,

আবার কখনো বা শীতল পরশ ছুঁয়ে যায়

অনেক সময় চরাচর জুড়ে নেমে আসে গাঢ় অন্ধকার, বহির্বিশ্বের সঙ্গে যেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন---

একটা আলাদা জগত, জাগতিক সুখ -লেনাদেনা... সব থেকে ঊর্ধ্বে বড় হালকা একটা অপার্থিব আকর্ষণ!

তার মাঝে সোজা থেকে বেঁচে থাকা...

মানে মরনের অপেক্ষায়





জটিল চিত্র


সো না লী  ম ন্ড ল  আ ই চ


অসংলগ্ন রঙিন কথারা

ভেসে এসে ঘিরে ধরে

জলশূন্য ভাঙা কুয়োটার 

কৃষ্ণগহ্বরে ঢুকে যায়

যতো জমা উৎকণ্ঠা

সাদা সিল্কের রুমালটা

এখন ভিজে যাচ্ছে।


আবলুস কাঠের ফ্রেমে

বাঁধানো ছবি থেকে

বেরিয়ে আসে আহত ঘোড়া

নিখুঁত যুদ্ধের সাজে

এক বিন্দুমাত্র কলঙ্ক।


তুচ্ছ ও ওজনদার দুঃখ

ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে চুরমার

প্রতিবাদে গলা ফাটাচ্ছে

রাস্তার আত্মীয় কুটুম।


অপবাদ অপমৃত্যুর ভিড়ে

আত্মার আত্মিক গ্লানি

সারিবদ্ধ বিতৃষ্ণা প্রবল

অসন্তোষের ঐতিহাসিক

গরল স্রোতে বয়ে যায়।


সততার আত্মবিশ্বাসে ভরা

ঝাপসা হাতগুলো মুষ্টিবদ্ধ।





কঙ্কাল


স ত্য জি ৎ  রা য় 


ছন্দ ঢেলে মাটিকে নরম করে তোলো

পাথর তো এমনিই শক্ত হয়ে ওঠে,

ঘোড়ার খুরে ভালোবাসা ঢেলে দিলে 

ফুটেও যেতে পারে কয়েকটা পদ্মফুল।

শুকনো নদীর তীরে স্নানের মরাকান্নায়

আমিও ভেসে যেতে পারি বহুদূর,

ভেঙে পড়া গাছের ডালে পাখিদের বাসা

হঠাৎ মনে করায় আমার বাবার কাঁধ।

নীল মেঘের অজস্র আঁকিবুঁকি ছবি

বুকে জড়িয়ে তুমি রোদের স্বপ্ন দেখ,

বৃষ্টির ভেজা নোনা জলে আমি তাই

কবিতার কঙ্কাল খুঁজি রোজ।





বিরহ থাক গুমোট ঘরে


 ম ঞ্জি রা  ঘো ষ


বুকের মাঝে ঝড় থেমেছে, বৃষ্টি ঝরো ঝরো

তাই কি তোমার হৃদয় আকুল, বলছে "কিছু বলো"--

টুপ টাপ টুপ বৃষ্টি কণা, ঝরছে ক্ষতের 'পরে

অন্তরেতে মেঘ জমেছে, ভাবনা টলোমলো। 


চৌকাঠে পা বাড়িয়ে আছি, ভিজতে যাবার ছলে

বাইরে দেয়া গুরু গুরু, ভিতর পানে একা---

দূর কি নিকট, নিকট কি দূর, তুচ্ছ হবে তখন

আপনা হতেই পারবে যখন, মনের মধ্যে দেখা। 


ঢেউয়ের স্রোতে ভাসিয়ে দিও, অভিমানের খেয়া

বিরহ থাক গুমোট ঘরে, বাতাস থেকে দূরে-

এক লহমায় ফুটে উঠুক, বনের কুসুম যত

নতুন দিনের সূচনা হোক্  প্রভাত পাখির সুরে।।





পড়ন্ত রোদ


মে খ লা  ঘো ষ  দ স্তি দা র 


বানের জল নেই। তবু ভরাডুবি,

ভেসে যায় হৃদয়ের,সরোবর তট-

এক টন অভিমান আর কিছু কথা

স্মৃতি ঘেরা বিষাদের আঁকিবুঁকি পট,


সাধের বাগান জুড়ে, সাধনার ছবি-

উপাসনা পথ খোঁজে, নিয়মমাফিক। 

বুক ভরা ইচ্ছেরা, আশার গহীন-

সাঁতরে বেড়ায় শুধু, কেন যে অধিক। 


বোঝার পাহাড় নেই, বোঝাবুঝি শেষে-

মুক্ত আকাশে চায়, নিশ্চুপ মন।

টান নেই পিছু ফেরা অগত্যা তাই-

বাকী পথ বলে না যে সুপ্ত গোপন। 


সাগরকে ছুঁতে গিয়ে, চাঁদের গ্রহণ-

ভালোবাসি তাও চাঁদ জনমের ঋণ। 

পাবো না নাগালে জানি, কোটি কোটি দূর-

সাধ্যের বাইরে সে, ব্যথা চিনচিন। 


কেউ যদি ধরে হাত, পড়ন্ত রোদ।

গোধূলির রঙ বুনি, বেরঙিন স্বাদ-

জানালার কাচ জোড়া, বন্ধ দুয়ার-

সাঁঝের শিখায় পোড়ে, শখ - আহ্লাদ। 


যেতে যেতে ভাঙা তীর। অপূরণ সায়-

দ্বন্দ্বের পাশে দ্বিধা ফুরায় না হায়!!!!





রানার


পি উ লী  মু খো পা ধ্যা য়


সাজানো ঘরে প্রজাপতি ওড়ে,

তবু যেন আচমকা নিম্নচাপের হাওয়া…

ত্বকের ছিদ্র চিনতে ঘুলঘুলির ওপারে

আবরণ পুরু করার মন্ত্রে কবিতা শিখি


দেহে প্রতিবর্তের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ তৈরীতে

সমুদ্র খুঁজি, প্রতিক্রিয়া সাজাই নিজের মতো

সুযোগসন্ধানী মাছের ঝাঁকে যেন জেলিফিস;

বিচ্ছিন্ন হয়ে চিঠি লেখার পালা


নিজের খবর গোপন করে যাবতীয় সংবাদ

ছড়িয়ে দেওয়ার ঋতুতে আগাম সতর্কতা–

একটা জীবন তোমার সঙ্গে কাটাতে কতটুকু 

খোঁজ নেবো? উত্তর ভাসে লিলির সুগন্ধে!





মাহেন্দ্রক্ষণ

    

শা ন্তা ল তা  বি শ ই  সা হা


দূরে বহূদূরে স্বপ্নালোকে একান্ত ধ‍্যানমৌন প্রকৃতির কোলে

আমি স্থির বসে আছি,

বৈদিক সভ‍্যতার শান্ত রসস্পদ তমসাতীরে,

প্রাচীন তপোবনকেন্দ্রিক গুরুগৃহের নিঃস্তব্ধতায়।

এই জ্ঞানপীঠেই একদা উচ্চারিত হয়েছিল ভারতীয় সভ‍্যতার মর্মবাণী,

             "অসতো মা সদগময়

             তমসো মা জ‍্যোর্তিগময়

             মৃত‍্যুর মা অমৃদঙ্গময়।"

ভারতীয় জাতীর আর্যপুরুষেরা জগৎ মাঝে বিলিয়ে দিলেন দূর্মূল‍্য ভাবধারা

         "বহূজন হিতায় বহূজন সুখায়।"

সেদিন গুরুশিষ‍্য পরম্পরায় আবিষ্কৃত হল,

গূঢ় বিশ্বসৃষ্টিতত্ত্ব ব্রহ্মতত্ত্ব পরলোকতত্ত্ব ভারতীয় আধ‍্যাত্ত্ববিজ্ঞান।

নিরালায় এই শ্রেষ্ঠ তপস‍্যালব্ধ ফল

কালের পাদপীঠে পা ফেলে বর্তমানের দোরগোড়ায়।

মাতৃজঠরে শিশুভ্রূণ বেড়ে ওঠে নিরাপদে,

আর্বিভূত হয় কোলাহলমুখরতায়।

সমস‍্যাসঙ্কুল জীবন পেরিয়ে পৌঁছে যায় গোধূলিলগনে,

অবশেষে বাণপ্রস্থ জীবনে

নির্জনতার বিশাল ব‍্যাপ্তি মাঝে অনুরণিত হয়,

কবিগুরুর সেই অমোঘ বাণী,

"জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণাধারায় এসো

সকল মাধুরী মিলায়ে যায় গীতসুধারসে এসো।"

এই সুরে আমি আমার প্রিয়'র স্পর্শ পাই,

চিনতে চাই আপণ স্বরূপ।

সেই মাহেন্দ্রক্ষণে পরমেশ্বরে আত্মনিবেদিত প্রাণ

চিরশান্তিময় মৃত‍্যু।





মৃত্যু কাব্য


বি বে কা ন ন্দ  ন স্ক র 


গান ভুলেছে পাখির মা

ভোর আসে নি তাই 

কালকে রাতে খুন হয়েছে 

তোমার আমার ছোট ভাই ।


কাঙাল সকাল আকাশ সকাল 

সকাল জুড়ে আর্তনাদ 

রক্ত মাখা সকালগুলো 

আনলো বয়ে মৃত্যু স্বাদ!


রোদের আভা দিনের শোভা 

কে এনেছে মৃত্যু দিন

ছেঁড়া সেতার ভাঙা সরোদ

কে বাজালো ছিন্ন বীণ!


নদী যখন স্থবির ঘুমে

মৃত্যু কাব্য শুনবে কে

রাজসভাতে বন্দি কবি

আত্ম হনন আঁকবে কে?





দাবানল


শ ম্পা  সা ম ন্ত


শীতল পাতারা ঝরিয়ে ফেলছে অঙ্গরাগ। জ্বেলেছে পরিশুদ্ধ আগুন। শোধন করে। দাউ দাউ দাবানলে নিজেকে শোধন করে।

তারস্বরে বেঁচে থাকার প্রাণান্ত প্রয়াস জানায় বনের পশুপাখি।যাপনের মুঠি খুলে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে নির্ভয় আকাশের দিকে। যেন সমবেত প্রার্থনা এসে লুটোপুটি খায়। যেন সমূহ আশ্রয় পাহাড়ের নীচে ছত্রাকার।


এই বাসযোগ্য মাটিও পরবাস হয়ে ওঠে। আকিঞ্চন দান এই বনরাজি ফিরিয়ে দিতে ব্যস্ত। ঠিক সেই মাহেন্দ্রক্ষণটিতে শীৎকার ধ্বনি ওঠে ভাদ্র  শারমেয়র। প্রেয়সীর ডাকে প্রকৃতি উথাল পাথাল, পুরুষেরা উদবেল!


রমনীয় সন্ধ্যা মেতে ওঠে অগ্ন্যুৎপাতী কমলাবর্ণে।মহাসাগরের কলরব আমি বহন করি। গোচরে আসে মহামান্য সন্ন্যাসীর স্তব। সুর তুলে আনি জলযান জাহাজে। গান গায় লোনা বাতাসের গন্ধ।অনির্বচনীয়। আলো ফেলে মহাদানী চাঁদ সাগরজলে। খণ্ড খণ্ড হয়ে ভেসে যায়।

সে কোন খণ্ড মুখ!! তারও এক মুখোশ আছে, প্রশান্তি আছে।


জ্যোৎস্নায় জোনাকীর ঝিকিমিকি আলো সরে গেলে শূন্যতা ভাসে।তার চোখেও ভাসে পূর্ণ অবসাদ।কালো অন্ধকারের জল পূর্ণিমায় সোনার বর্ণ ধরে। সেসময় আমিও সাগরের ভাষা বুঝি, অপেক্ষা বুঝি, বুঝি উৎকণ্ঠার মন ও চন্দ্রমার ভাষা। ক্লান্ত চকোরের মতো চেয়ে থাকি তৃষ্ণার্ত চোখে।


চিতায় আগুন জ্বলে। বিখ্যাত ব্যক্তির শব, জ্ঞানীর শব, প্রেমিকের শব।

উচ্ছিষ্ট মুখে নিয়ে পেরিয়ে যাই নদী, সাগর, মহাসাগর।

আত্মাদের প্রেতলোক জেনেছি। আমি সঙ্গম শিখেছি। ছল ও চাতুরী জেনেছি। জেনেছি পুরুষের অবলীলায় অসংযমী প্রত্যয়।


তবুও ভেঙে পড়া আমার স্বভাব বিরুদ্ধ। উস্কখুস্ক চাওয়ার তাগিদ নিয়ে বিবস্বান ছুটে চলা প্রতিযোগিতা দেখেছি। লুটোপুটি খেয়েছি বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের অট্ট হাসিতে। মৃত্যুরেখায় হাঁটতে হাঁটতে ফারাক করেছি প্রেম ও প্রতারণা। বিভেদরেখা ছুঁয়ে এসেছি।


নির্ভরতার আশায় সরে এসেছি।দেয়ালও জেনেছে নিস্ফল মাথাঠোকার আকুতি অর্থহীন। আগুন জ্বেলে শান্ত মশাল হাতে পারাবার পেরিয়েছি।

উপরে ধুসর ধর্মান্ধ আকাশের ক্যানভাস।

মাঝখানে বিভেদের চেরাপুঞ্জির মেঘ।এখানে কালো মেঘ বারোমাসে তেরো প্রলয়ের বিসর্জন। নির্ভেজাল জন্মান্ধ বৃহন্নলা চরাচর।

আঁধার যাপিত হিজড়ার উঠোনে বুভুক্ষু বেশ্যার সমাগম।


যেখানে পৃথিবী পাহাড়ময় সেখানে নদীর চোখে ঘুম নেই।রাত জাগে ময়ুরকণ্ঠী চাঁদ জ্যোৎস্নার সাত সমুদ্র তের নদীর বাঁক ঘুরে।

ভোরের অপেক্ষায় কাটে রাত, রক্তের নিঃস্রোত মুহূর্তে।


এ দেশ তোমার অগ্নিশিখায় যাপন তোমার। তোমার বনবহ্নি দাবানল।

দেখ আজ কতকাল সূর্য ওঠেনি দিগন্তে।





অতীতচারী


ম ধু প র্ণা  ব সু


সময় এখন অগাধ পাড়ি, স্বপ্ন ভাঙা উদাসীন মন

কে ওই বসে অতীত পাশে স্মৃতির ঘরে রম্য যাপন।

কত যুগের পূর্ব কথায় ফিরেছি জন্ম ভিটের টানে

সবুজে লেখা আলপথ আর মাটির গন্ধ অন্যমনে।

কে আছো ওই পূর্বসূরী শীর্ণকায়া আমার পাশে,

সোনার ফসল ধানের গন্ধে মেয়েবেলা পূর্বাভাসে।

পাঠশালা ছুট শ্রান্ত বেলা, সন্ধ্যাদীপের গাঁয়ের বধূ

ধর্ম কি সে, উঁচ নীচ কি? আরশি নগর স্বপ্নে জাদু।

তুচ্ছ সে নয় প্রসাদ জ্ঞানে, পান্তা নুনে বিশ্বাসী মন,

অন্ন তুলে মুখের গ্রাসে হৃদয়ের জানে সবাই স্বজন।

সেসব সময় আছে কি আর? মনের নিখাদ সরলতা

আজও কি কেউ দীপ জ্বেলেছে পূর্ব সুরে আত্মকথা।





প্রকৃতির  সংসারে

  

মা লা   চ্যা টা র্জ্জি

     

মনের তাগিদে আমি মাঝে মাঝে দক্ষিণা বারান্দায় 

     এসে দৃষ্টি ছড়াই দূর বহুদূর...

   যার প্রতিটি কোনায় নিজেকে সঁপে দিতে দিতে

   শুরু করি এক দৃষ্টিসুখ যাত্রা। 


  নানান  দৃশ্যের  সাক্ষী  হয়ে কখনও  আমি

উল্লসিত হই, কখনও হতবাক, কখনও বা মন্ত্রমুগ্ধ। 

কখনও দুরূহ পাখিদের গানে আবেগবিহ্বল হয়ে

মনের অর্গল খুলে ফেলে অপার আনন্দে গান ধরে

মিশে যাই প্রকৃতির গায়ে ও শোভায়। 

 চাওয়া-পাওয়ার অতৃপ্ত  বেদনাগুলি

খুশির হাওয়ায় মিলিয়ে যায় শূন্যে। 

কাকভোরে শিশিরসিক্ত  কোনও শরতের সকালে

 চোখ দি ঘাসের সবুজসংসারে, আনন্দে নেচে গেয়ে

আমি আবেগবিহ্বল চোখ পাতি, বহু দূর,

রূপকথা তুলে আনি  রূপ-রস-গন্ধে ভরা পৃথিবী  থেকে।  


দূরে বহুদূরে শোভা  বিছিয়ে আছে বাংলা ও

বাংলার মুখ, সোনালি খেতময় হাসিমাখা  ধান,

 ঠিক শরতের আগমনের বার্তা দিয়ে ঘোষণা 

দূর্বাদলের প্রদীপ ছবি, যা দেখে আমি

খুশিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে বললাম যেন পৃথিবীর আবিলতা মুছে যায় যতই বিপদ আসুক। 


দক্ষিণা বারান্দায় দাঁড়িয়ে এভাবেই বহু কিছু দেখে

 নিজেকে ভাসিয়ে দিলাম

        প্রকৃতির সর্ব জায়গায়।





অসহায়


জ বা  ভ ট্টা চা র্য


  এই রাতে খোলা জানলা দিয়ে

  যে জোছনা তোমায় শুচিস্নানে ভিজিয়ে দিচ্ছে

  সে কিন্তু জানে,

  আমার ভেতর কোনো গাছ নেই আর

  পাখি নেই, আছে হাজার বছর

  রাত জেগে থাকা।

  সুপারি গাছের মাথায় মাথায় দুলতে থাকা

  হাওয়াও জানে, কেবল তুমি বলেছ বলেই

  আমি তুলে রেখেছি আমার  বাঁশি,

  মাঝ বয়সি সকল  সাধ।


  তুমি ছুঁয়ে দিলে নির্ঘাত খুলে যেত

  মরচে ধরা এ বুকের  কপাট।


  আমার গ্রীবায় তখন জোনাকির অফুরান আলো

  ভালোবাসার নাম ধরে ডাকে--- আয় আয়


  যক্ষকীট কুরে খায় প্রতীক্ষার মন,

  আমি ভেসে যাই

  প্রতিমা বিসর্জনের মতো,

   বিকেলের সুবর্ণরেখায়।





ব্রাত্য


চৈ তা লী  ধ র  ম ল্লি ক 


বন্ধ শার্সির কাচে ভালোবাসার জন্য 

বেদনার দাগহীন অস্তিত্ব।

তোমার ঘুমন্ত মুখ দেখতে গিয়ে, দেখি...

জানলার ফাঁক দিয়ে আসা

কমলা ডানার রোদপাখি, আমার আগেই 

তোমাকে ছুঁয়ে...


স্মৃতির গন্ধে ভিজিয়ে দিয়ে

অন্ধকার আসে লুকিয়ে, কখন 

জানি না!... আলোর ঠিক পিছনে।


স্বপ্নে দেখা আকাশের রঙটাকে ছোটবেলার রঙপেন্সিলবাক্সে খুঁজেছি বারবার...


কখন যেন...

ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছি নিজে,


 তবু মনের কার্নিশ জুড়ে, মায়াময় শব্দের জ্যোৎস্না।


তোমার ঘুমন্ত না-বলা কথাদের নিয়ে

কবিতায় আগলে বসে থাকি।

সযত্নে ই মেলে, লিখি... ভালবাসার প্রলেপ দিয়ে 


পুরোনো চিঠির ভাঁজে, শব্দেরা যে

আজ ব্রাত্য!...





টাপুর টুপুর বৃষ্টি এলো

 

দু র্গা প দ  ম ন্ড ল


টাপুর টুপুর বৃষ্টি এলো 

তিরপূর্ণির গাঁয়,

উলুক ঝুলুক মেঘমেয়েটির

ওড়না ভিজে যায়। 


বৃষ্টি পড়ে ফুলপুকুরে 

বৃষ্টি আদুল গাছে, 

ছাতিম পাতায় এদিক ওদিক 

বৃষ্টি ফোঁটা নাচে। 

আকাশ ঝেঁপে আঁধার এলো 

সিন্ধু বারোঁয়ায়।।


বৃষ্টি পড়ে ঝমঝমিয়ে 

শালুক ভেজে না, 

কলাবতী মেয়ের আমার 

কান্না থামে না।


বউ-কথা-কও পথ ভুলে যায় 

বৃষ্টিমাতন তালে, 

বৃষ্টি হলেই যাই ফিরে যাই 

কালিদাসের কালে;

বৃষ্টি খুকীর দুঃখী চোখের 

পাপড়ি ছুঁয়ে যায়।।





তাম্রলিপি


ম ঙ্গ লা  দ ত্ত  রি মি


লেখা হোক অজানা কোনো গল্পের পাহাড় ঘেঁষে পড়া ঝর্ণার জলে, সদ্যস্নাত কোনো বোষ্টুমীর উত্থান গাঁথা,

মেঘ বালিকারা হয়ে উঠুক সদ্য সাবালিকা।

গহীন বনানীর বুক ছুঁয়ে আসা উষ্ণ ঘামের গন্ধে মাতোয়ারা হোক প্রকৃতি, তারাদের চোখে নিষ্পলক রাত।

তোমার শব্দ-মেঘ গর্জে উঠুক, 

আমার একলা আকাশে নক্ষত্র স্পর্শে।

শত রাত জাগা নিশাচর জানে আকাশের বুকে ক্ষতটা ঠিক কতটা গভীর।

অন্ধকার কাটুক নতুন ভোরের আশায়, আমি আলেয়ার আলোয় খুঁজে ফিরি অশরীরী আত্মার শান্তি নিকেতন।

ভেজা বালিশটা জানে ইতিহাস, এবার না হয় লেখা হোক নতুন কোনো তাম্রলিপি।





প্রেম-ঘড়ির গপ্পো


রা জ ন্যা  ভৌ মি ক


কী অদ্ভুত, সুন্দর এই পথচলা—

তুমি চলে যাও বারেবার,

আর আমি?

ঘুরপাক খাই

তোমার ছায়ার পাশে।


বর্তমান ছুটে চলে

মরীচিকার পেছনে।

তবুও আমি দৌড়াই—

যেন ভালোবাসার যুদ্ধ,

তোমায় ছোঁয়ার সাধনায়।


অদৃশ্য তুমি, নেই তবুও আছো—

আমার প্রতিটি প্রশ্বাসে, ঘূর্ণনে,

হৃদস্পন্দনের টিকটিক শব্দের সুরে।


তাই তো থেমে যায়নি

এই প্রেম-ঘড়ির গল্প—

যার সূচনায় তুমি,

প্রিয় সময়।

ইতি,

সেই কাঁটা,

যে কেবল তোমাকেই

মাত্রা দিয়ে যায়।





মিসাইল


সু পা য় ণ  দা স


এ কালে এক দর্পের জগতে আছি মোরা,

যেখানে গুল্লিবদ্ধ হয়ে গেছে ভালোবাসা,

মানবতা আজ মিসাইলের নিশানায়।


দক্ষিণের বায়ু আজ আর শীতল নয়,

হিংস্রতা উল্কাবৃষ্টির মতো ছড়িয়ে পড়েছে

পূর্ব থেকে পশ্চিম।


ক্ষমতার পদতলে পিষে গেছে মানবতা—

শিশুর কোমল মুখ, খিদের দুধ;

বারুদের গন্ধে আজ সবই ফিকে।


ধ্বংস আর ধ্বংসে মত্ত রাজারা,

এ বিজ্ঞানের জয় নয়,

এ এক ধ্বংসাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র।


যে ক্ষেপণাস্ত্রে তুমি বারুদ ভরেছ,

আমি সেথায় বুকের দুধ ভরে দিতে চাই।





গায়ের গন্ধ


উ প মা  বে গ ম


আমি আমার মা-বাবার উপস্থিতি না দেখেই বুঝতে পারি,

ওই যে গায়ের গন্ধ---


ডিভোর্সের পর আজকাল আমার গা থেকে বোধ হয় অদ্ভুত এক গন্ধ আসে

সবাই কেমন পাশ কাটিয়ে যায়, 


আত্মীয়রা একটু দূরের, ওদেরটা ওতো গায়ে মাখি না।

কিন্তু নিজের ভাই-বোন

সর্বোপরি মা-বাবা

ওদের পাশ কাটানোটা বড্ড খোঁচায়।

রক্তক্ষরণ হয়---


আমার ছোট্ট শিশু সন্তানের গা থেকেও বোধহয় আমার গন্ধ আসে।

সবার সূক্ষ্ম অবহেলা আর সুন্দর উচ্ছিষ্টের উপটোকন,


ছেলে আমার গন্ধে নাকে হাত দেয় না,

কেমন যেন বোবা হয়ে যায়।





লিখি মৃত্যুর কবিতা


ম ধু মি তা  ব সু  স র কা র


শনাক্তকরণ শেষ হলে তুমি ঘোষনা করলে 

এসব অক্ষরযাপন নিতান্ত অর্থহীন, 

ধার ও ভার কেটে কেটে সমতলে নামা সহজ কিন্তু 

বিপরীতে, বিপজ্জনক, পাহাড়ে ওঠা এ জীবনে সম্ভব হোলনা---

গড়িয়ে গড়িয়ে চলেছে জীবন---

পঙ্গু হৃদয়, ততোধিক কষ্টকর দেহভার---

লাস্য নেই, শোক আছে, সম্ভার নেই, আছে কিছু নশ্বর তৈজস,

একে কি যাপন বলে?  


বৃথা এ অক্ষর! যে অক্ষর বিবর্ণ, সে বর্ণমালা আমি পড়িনি---

স্যাঁতানো বালুতে যে কবিতা লিখেছি এতোকাল 

সমুদ্রের লাল কাঁকড়া হিংস্র নখরে মুছে দিয়ে গ্যাছে সব,  যাবতীয়---

ইদানিং প্রবল নিরাসক্তি নিয়ে, প্রয়োজনহীন আমি পড়ে আছি শামুকের খোলের ভিতর---

ঢুকলে বেরোতে পারিনা---

করতল জুড়ে কাটাকুটি, আয়ু রেখা ছোট হয়ে আসা আমি মৃত্যুর কবিতা লিখি, 

পরাঙ্মুখ আমি জীবনের দিকে হেলে পড়ি তত।





বুনো ছেলেটা


সু মা  গো স্বা মী

       

বুনো ছেলেটাও 

         সংসারী হয় কখনো সখনো 


একটা একটা ইট দিয়ে পোক্ত করে ঘরটাকে ,

         বৌটাকে নিয়ে নতুন করে বাঁচার আশায় 


বালতিতে জল ভরে রাখে ,

      নাহলে হয়তো বৌটা স্নান করতে ভুলে যাবে


বুনো ফুলের মালা নিয়ে অপেক্ষায় থাকে 

        সোহাগী বৌটাকে আদর করার নেশায়


দুধের গ্লাসটা পড়ার টেবিলে রেখে দেয়,

      নাহলে হয়তো ভুলোমনা বৌটা খাবেই না

      

রোজগারের পথে চলার সময়

      মনটা মাঝে মাঝেই খারাপ হয়ে যায়,

       পানপাতার মতো মুখটা দেখতে ইচ্ছে করে 


বিছানাটাও পরিপাটি করে রাখে,

      নাহলে হয়তো ছোট্ট বৌটা জানালার কাছে 

      অপেক্ষায় থাকবে সারা দুপুর


বুনো ছেলেটা

              ভালোবেসে ভালো বাসায় থাকতে চায় আজও।    

             আজও সে সংসার করে।

   ভালোবেসে ভালো বাসায় থাকতে চায়।





মায়া


পি না কী  র ঞ্জ ন  মি ত্র


রাগ ক'রে থাকা নয় ঘরের ভেতরে 

বাইরে আনন্দ ঝড় সৃষ্টির আনন্দ স্বাদ 

মানুষেরই হাতে হাতে গড়া 

তারও চেয়ে ভালো স্বাদ প্রকৃতির খেয়ালীপনায় 

তীর ভাঙ্গা পাথরের চাঁই

 ঠাঁই নাই ঠিক সেথা মানুষের আনাগোনা,

দূ--র থেকে দেখে নাও সুখ

কী সুখে ঘুরছে পাখি আঁখি যার মাছ মাছ খোঁজে 

রূপ যার জলে ছবি আঁকে 

আকাশের  নীল নীচে তীর ঘেঁষে জল 

সামুদ্রিক শৈবাল কিছু আসে পাশে ঘর বেঁধে থাকে,

 আধ ভাঙ্গা চাঁদ আজও দাঁড়িয়ে কে আঁকে!

কে ফেলে সৃষ্টি মায়া মানুষের হৃদয়েই সুখে!





সুবাস


শ র্মি ষ্ঠা  মি ত্র  সে ন গু প্ত 


আলো মাটি জল- এসবের মধ্যে পাক খেতে গিয়ে মনে পড়ে কুমারডিহ‌ ইস্কুলের কথা

বড় ইচ্ছে ফিরে যাবার

মাটির দেয়ালে খড়িমাটির আঁকিবুকি

বৃষ্টি ফোঁটায় টিনের চালের সিম্ফনি

নিষ্পাপ কালোকেলো মুখগুলোর অনাবিল হাসি। 

বরাবর অজুহাত খুঁজি ফেরার

চেনা মানুষ কত সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়

ফ্যাশনেবল ছবি তোলে

অথচ আমার তো ওই এঁদো গ্রামের ভগ্নপ্রায় ইস্কুল!


সারাদিনমানের সাংসারিক প্রলেপ লেপে একটেরে হয়ে বসে থাকি

জ্বরের প্রদাহে ভুল বকি

চেনা হাতের স্পর্শে খুঁজে বেড়াই তিন দশকের স্নেহময় করতল।


আর কখনও যাওয়া হবে না 

নিরস্ত্র করার উপায় করায়ত্ত

দামাল ঝড় হাসিমুখে চাপতে শিখেছি

ওপরের সিঁড়িতে পা দিতে গেলে মুখের একটি রেখাও বিচ্যুত করা অপরাধ

অর্বাচীনের উত্তরণের পথে কুমারডিহ-র সুবাস মুছে গেছে ওডিকোলনের মায়ায়।





সময়ের ব্যবধানে


ত প ন  ম ন্ড ল 


 প্রভাতী সূর্য উঁকি দেয় এখনোও 

গেঁয়ো ভাঙা ঘরের জানালায়।

শিশুদের কোলাহল আর পদ স্পন্দনে

এখনোও ভাঙে সবুজ ঘাসের নিদ্রা ।

আছে পাঠশালা। 

আছে গুরু, আছে শিষ্য।

কিন্তু নেই সেই গুরু শিষ্যের আত্মিক যোগ। 

নেই গুরুর আন্তরিকতা।

নেই গুরুর প্রতি শিষ্যের শ্রদ্ধা। 

নেই গুরুর কোনো দায়িত্ব।

নেই কোনো দণ্ড।

নেই শৃঙ্খলা। 

নেই শিক্ষার গতি।

নেই শিক্ষার মান।

নেই পোকায় কাটা পুরানো বইয়ের গন্ধ। 


তবে আছে কি!!

আছে নতুন বইয়ের পাহাড়।

আর আছে শুধু অর্থের প্রাচুর্য্য।

গুরু যে এখন শুধু সময়ের দাস মাত্র।


কোলাহল আর আজগুবি গল্পতে 

অতিবাহিত সময় আর সময়।

আসলে পাল্টেছে যুগ। 

পাল্টেছে সময়। 

ব্যাগ ভর্তি বইয়ের ভারে শিশু আজ চির কঙ্কাল। 

টিউশন- স্কুল, স্কুল- টিউশন!

ব্যস্ততা , শুধুই যে ব্যস্ততা। 

আছে খেলার মাঠ,

 নেই খেলোয়াড়।

আছে অনলাইন গেম আর গেম।

নেই বন্ধুদের আড্ডা

আছে একঘেঁয়েমি ব্যস্ততা। 

টেকনোলজির ফাঁদে পড়ে শিশুর করুন আর্তনাদ। 

ডিজিটাল দুনিয়ায় একদিন শিশু হবে যুবক।

তখন চাই  অর্থ আর অর্থ !

টেকনোলজি কি দেবে মানবতার শিক্ষা? 

টেকনোলজি কি দেবে শিশুর নৈতিক শিক্ষা?





বিস্বাদগুলো


সৌ মে ন্দ্র  দ ত্ত  ভৌ মি ক 


ঘাড় গুঁজে মুখ বুজে আজ ও কালের বিস্বাদগুলো 

হাত-পা মেলে রোদ পোহায়।

ভাসানের বাজনা বাজিয়ে ওগুলোর ভিলিয়ার্সের 

তান্ডবনাচনে মাতব বলে,

সেই কতকাল আঁকপাঁক করি,

সেই শুভক্ষণ জাল পেতে 

ধরতে পারি না কোনমতেই।

এই অশুভ সোহাগের নিরুপায় বিরক্তিও 

পালাবার রাস্তা খুঁজে অবশেষে 

টলমল, সর্ষেফুলের অনেক চাষ দেখে।


তসর বাস্তুঘুঘুরা জোরালো ক্যাম্প বানিয়ে 

অনাবাসী হয়ে খুশীর মৌতাতে ঝুঁটি ধরে

নাড়ায়, কাঁটায়....





অবদান


দে ব যা নী  ঘো ষা ল


অবদান গৃহীত হয় কারুর দয়ায় না ভালবাসায়?

অবদান কথার অর্থ যেন আজ বড্ড কঠিন। 

বিশ্বাসের ছোঁওয়ায় ভালবাসা প্রাপ্তির আশায় 

যে অবদান এক অপার্থিব প্রাপ্তির আশ্বাস দেয়,

সে অবদান আজ যেন নিম্নমুখী স্বার্থসমৃদ্ধ।

ফলে বিশ্বাস ভালবাসা শব্দগুলোর ওপর বিতৃষ্ণা।

যে সবুজায়নে আলো বাতাস আর মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাতে সবুজ গালিচা ছিল,

ইচ্ছে হতো খালি পায়ে হাঁটি---

সবুজের আদর নিঙড়ে নিই---

এখন মনে হয় ও গালিচা কৃত্রিম। ওখানে কীটের বাস। অথবা কাঁটা বিছানো আছে। 

ভয় পাই। আতঙ্কে দেখি সে গালিচা দূর থেকে।

নিঃশব্দে হেঁটে যাই অন্ধকারে 

মায়াবী রাতে বিজলি আলোর আভায় 

বৃষ্টিস্নাত দুষিত বাতাস পেরিয়ে 

এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে।

অবদান প্রাপ্তির ভয়ে।





ঋতুচক্রের বর্ষা


সু নি র্ম ল  বি শ্বা স 


তুমি চিরকাল জেগে থাকবে 

আমার স্মৃতির পাতায়, 

জীবন চলার পথে সাথী হয়ে

মিশে থাকবে হৃদয় আকাশে।


আমার আজো পড়ে মনে,  

বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের দিনে

তুমি আমি কত পথ হেঁটেছি 

একসাথে হাতে হাত রেখে,

কচুপাতার ছাতা মাথায় দিয়ে‌। 


তুমি পাশে ছিলে বলেই 

পথ চলা হয়ে উঠেছিল স্বপ্নমধুর,

তোমার স্নিগ্ধ শীতল ছোঁয়া 

আমাকে চিরকাল করে তুলেছে মুগ্ধ।


তোমার নিটোল পায়ের নূপুর 

রিনিক ঝিনিক ছন্দে 

বেজে ওঠেছে 

আমার কল্পনার মন-মন্দিরে। 


তোমায় কাছে পেলে, 

প্রকৃতির মতোই তারুণ্যের উদ্দীপনায়

জাগে আমার মন-প্রাণ। 

তাইতো, দিন গুনি তোমার অপেক্ষায় 

তোমার একটু ছোঁয়া পেতে

খোলা জানালায় হাত বাড়াই।


তুমি আস নিজের খেয়ালে

ঋতুচক্রের বর্ষাবেলায়।।





নষ্ট নারী


স র ব ত  আ লি  ম ণ্ড ল


পঙ্কিলতার আবর্তে ঘেরা এ সমাজ, 

কিছু মানুষ রূপী হায়নার দল 

ভোগ বিলাসের তৃষ্ণা নিবারণে 

নারীকে পণ্য করে অর্থ সম্পদে।


সভ্য সমাজের কিছু অসভ্য মানুষ-

প্রতিদিন কেড়ে নেয় নারীর সম্ভ্রম, 

তারপর চলে মনুষ্যত্বহীনতার পৈশাচিক আক্রমণ, 

অসহায় নারী যখন আর্তচিৎকার করে! 

লম্পটের দল তখন মেতে ওঠে বিদ্রুপের হাসিতে। 

বস্ত্রহীন নারীকে চালায় পাশবিক অত্যাচার 

তারপর একসময় হয়ে পড়ে সংজ্ঞাহীন।


রাজপথের আলো যখন হয়ে আসে ক্ষীণ, 

তখন রাজপথ থেকে হারিয়ে যায় গলিপথে।


এভাবেই যদি নষ্ট হয় নারী, 

পুরুষ কেন হয় না?





জয় জয় দুর্গা মা


দে ব যা নী  সে ন গু প্ত 


ভুলতে কি পারবো মাগো?

এই চরম দগ্ধ পোড়া ঘা টা!

ছিনিয়ে নিল মাথার সিঁদুর, 

এই হিংসা এই ত্রাস চলবে আর কতদূর?

নিয়েছি হয়তো হিসেব নিকেশ, 

ভারত অগ্নিকন্যাদের দেশ, 

 ভুলতে হয়তো পারবো না মা এই ক্লেশ, 

জীবন মরণে ভয় ঘোরে পাকে পাকে, 

এই বুঝি ছিন্ন হয় প্রাণ,

কি জানি কখন আসবে কোন বাণ।

এই সুন্দর ধরাভূমি ফুলে ফুলে ঢাকা, 

কি করে মানুষগুলোর হয় এমন রক্ত পিপাসা?

চাঁদ ফুল সূর্য্য তারা সবই তো আছে জগতে, 

কেন, শয়তানি ভর করে বুদ্ধিহীন মগজে, 

কত কি ঘটনা দেখি কাগজে!

শরতের আলোতে কাশের মেলা, 

তোমার পদচিহ্নের পরশে ধরিত্রী হোক সত্যি সুন্দর, 

হে জগৎ জননী, তাই করো আশিস 

মানুষের মন হোক নির্বিষ, 

মনের কালিমা যাক মুছে, 

হিয়ার মাঝে লুকিয়ে আছে, 

অনেক ভালোবাসা মন,

ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা নিয়ে, 

ভরবে এ ভুবনে,  জয় জয় জয় দুর্গা মা, 

এসো হে মা তোমার ঘরে, সকলের জীবন দাও মা ফুলের মতন গড়ে।।





মেঘের আলয়


অ চি ন্ত্য  বি ক্র ম  দে


মেঘমুলুকে মেঘের দেশে

মেঘবালিকার বাড়ি,

সেখানে গিয়ে কোরনা কেউ

মেঘের সাথে আড়ি,

মেঘের আলয় নামের ভিতর

মেঘের ছড়াছড়ি,

মেঘমুলুকের বাতাসরা তাই

করছে হুড়োহুড়ি, 

সেই বাতাসে ভর করে নেবো

প্রাণভরা নিশ্বাস,

উদ্যমী মন পুলকিত হয়

এটা তার বিশ্বাস।

মেঘ পিওনেরা নিয়ত ব্যস্ত 

মেঘবালিকার চিঠিতে,

পৌঁছুতে হবে সঠিক সময়ে

দেরী যেন না হয় বিলিতে।

মনে মনে ভাবি কবে যাই 

বলো মেঘমল্লারের বাড়ি,

মেঘমুলুকে চলো ভেসে আসি

চড়ে মেঘের গাড়ি।





পুজোর প্রকৃতি

 

কু শ ল  ব র্ম ন 


 সময় এসেছে,

পরিবেশ থেকে আকাশ,

আকাশ থেকে প্রকৃতি,

যেথায় সবই সেজে উঠেছে 

শরদের প্রাতে।

    

   যাহাতে প্রকৃতি হাসে 

   শেফালি ফুলের মালা দুলিয়ে,

   এক মুঠো ভালোবাসা পাঠিয়েছিলাম,

  নাম না জানা শরৎ-এর চিঠিতে। 


নীলের মাঝে শুভ্র মেঘও,

বলে দেয় সময় এসেছে চলে।

চারিদিকে শুভ্র কাশফুল,

দুর্গোৎসবে মেতে...

     

     আগমনীর সুরে,

     পুজো পুজো গন্ধ বাতাসে।


শুভ্র মেঘের ভেলায় করে 

শরৎ নেবে বিদায়,

হালকা হিমেল বাতাসে মধ্যে 

আগমন হবে হেমন্তের।





পুজো


প্র তী ক  মি ত্র


একটা পুজো আমার মতন ছিল

একটা পুজো ছিল তোমার মতন।

প্রত্যাশায় একটা আকাশ ছুঁলো

তো অন্যটায় ছিল সম্মোহন।

তারপর এল আমাদের পুজো তোমাদের নয়।

কোথাও যেন ভ্রু’কুঁচকানো, অনেকটা সংশয়।

দেখা তো অনেক হল খোয়াবে,

এখন শুধু অপেক্ষা বাস্তবের জন্য।

একটা পুজো সবার কবে হবে

নির্ভেজাল আনন্দ সৌজন্য?





আমন্ত্রণ

 

 প্র তী ক  ব ড়ু য়া 

 

কৈলাসে ওই মহাদেবের সংসারে 

 নিত্য দিনের নেশা-ভাঙের কেলেঙ্কারি 

পুত্র কন্যা সাথে 

আসছে উমা বাপের বাড়ি।


বাপের বাড়ি ভারী মজা 

নাই বাধা, নাইরে সাজা।

 

বাপের বাড়ি ভারী মজা,         

ঢ্যাং কুড় কুড় বাদ্যি বাজে

 শিউলি ফুলের গন্ধ ছড়ায়, 

কাশফুল ওই মাথা নাড়ে।

নতুন পোশাক নতুন রূপে 

রং বেরঙে সবাই সাজে।

 

পথ চেয়ে মা আছে ব'সে, 

সুখ-দুঃখের কথা কবে 

আসছে যে মা উমা রূপে 

বাপের ঘরে-সংসারে।


মন্ডা মিঠাই কতই খাবার 

খাবে সবাই মিলে, সবাই মিলে?

 

কি বার্তা নিয়ে এলি মা কেমন বছর যাবে,

অপুষ্টি অনাহারে মরবে না তো আর রোগে-শোকে?

 

একবার তুই দেখে যারে,

শাল মহুয়ার দেশে--- 

মরছে কত অপুষ্টি আর অনাহারে।

 

বাজে না মাদল,

সাজেনা রমনী শাল পিয়ালের বনে,

ওঠেনা সুর মধুর গান হারায় স্বর অনাহারে।

গগন সম হৃদয় তাদের শুধুই কাঁদে বাঁচার তরে।


একবার আয় না রে মা আমাদের ঘরে 

সুরেন্দ্রনগর, ঢেকলা পাড়া, 

বান্দা পানি, রেড ব্যাঙ্ক, রায়পুরে 

অন্তত তুই সাক্ষী থাকিস 

ডুয়ার্সের এই চা বলয়ে।





বৃত্তের মহিমা

 

আ ল তা ফ  হো সে ন  উ জ্জ্ব ল


যদি ধরাধাম হতো বর্গাকারে—

প্রান্ত থাকত, থাকত এক শেষধারে,

হেঁটে গেলে পৌঁছাতাম নিঃশেষ যাত্রায়,

আর মিলন হতো না প্রিয় প্রাণের মাতায়


কিন্তু পৃথিবী বৃত্ত--- এক আশ্চর্য রেখা,

যেখানে শেষেরও নেই শেষ দেখা।

চলে গেলে ফিরে আসো, এক নিরবধি চক্রে,

ঘোরে জীবন, ঘোরে প্রেম, ঘোরে সত্যের ত্রিতে।


বৃত্ত মানেই অনন্ত, নেই কোনো সূচনা,

নেই মৃত্যুর ভয়, কেবল পুনর্জন্মের টানা।

যেখানে সূর্য ওঠে, আবার ডুবে যায়,

তবু থামে না আলো, আশা রেখে যায়।


চাঁদের পূর্ণতা—এক গোলাকার কাব্য,

যেন ঈশ্বরের প্রেমে আঁকা নিঃশব্দ অভিমন্যু।

বিবাহের আংটি, এক শপথের বৃত্ত,

প্রেমের শুরু, কালের গলায় জাগায় সুরভিত ঋদ্ধ।


এক সাধু ঘুরে চলে ভিক্ষার পথ ধরে,

ঈশ্বরের বৃত্তে সে বাঁধা অদৃশ্য রজ্জুতে রবে।

উদ্ধারের জাহাজে যে লটকানো লাইফবয়া,

তা-ও এক গোল আকৃতি, বাঁচিয়ে রাখে মায়া।


দেশ, জন্মভূমি—তাকেও ভালোবাসি বৃত্তের মতো,

চারপাশ ঘিরে রাখে সে হৃদয়ের প্রহরীর মতো।

আমার শিকড়, আমার কান্না, আমার গান—

এই মাটিতেই খুঁজি আমি পরিত্রাণ।


সব বৃত্তই ঘোরে, কখনো ঘূর্ণিতে, কখনো নিয়তিতে,

একটি কেন্দ্রে—যেখানে ঈশ্বর থাকেন চুপিচুপি গভীর অভিপ্রেতে।

তাঁর সৃষ্টি--- সূর্য, চাঁদ, পৃথিবীর ঘূর্ণি,

প্রমাণ করে, কোনো রেখাই সোজা নয় সম্পূর্ণ নির্মল ধ্বনি।


বৃত্ত আমাকে শেখায়--- ভালোবাসা ফিরে আসে,

দুঃখ ঘুরে গিয়ে নতুন আশায় হাসে।

আর এই বৃত্তের মাঝে, আমি খুঁজি আলো,

দেশ, ঈশ্বর, প্রেম, আর অনন্ত ভালো।





প্রেম, আমায় মেরো না


আ ব্দু ল  র হ মা ন 


বৃষ্টিভেজা অন্ধকার সন্ধ্যা

অবিরাম চঞ্চল সূঁচ ফুঁটছে স্যাঁতসেঁতে শরীরে

সোঁদা মাটির গন্ধ জানলায় উঁকি দিচ্ছে 

প্রেমসত্ত্বা চাইছিল প্রত্যেহ দৃষ্টিকে আড়াল করতে

শরীরের চরম প্রতিকূল স্থান দেখছে 

তার গোপন যৌবন পিচ্ছিলতায় উঁকি দিচ্ছে 

অদ্ভুত প্রার্থনা আর প্রশংসার ঘন্টাধ্বনিতে

উল্লাসিত স্ট্রিট লাইটের বিচ্ছুরিত আভা 

আমার চোখ জ্বালিয়ে দেয়,

আমার গোপন দ্বিধাগ্রস্থ ভালো লাগার স্থান নেচে ওঠে 

তার পাঁকা বুক বেয়ে কাঁচা রাস্তা পার হই

হঠাৎ দেখি আর চমকে উঠি---

তার কথা একটি বীণার মতো সুর তোলে

তার অঙ্গভঙ্গি ভেজা আঙুলের মতো ঢেউ তোলে

আমার চোখ জলে থই থই 

কেঁপে কেঁপে উঠি 

আর বারে বারে ফিসফিস করে বলি---

ও হে প্রেম! ও হে প্রেম! আমায় মেরো না!





অতিক্রম, দ্রাঘিমারেখা চুপি চুপি


অ র্ণ ব  সা ম ন্ত 


দ্রাঘিমাও গলে যায় মোমের মতন 

সৌরভ এসে ঢাক্কা মারে ছলাৎছল শব্দে 

সুরভী ঝঙ্কারে ঝঙ্কারে দুলে ওঠে নৌকার শরীর 


মাঝি অসহায় জানে তাকে ভেসে যেতেই হবে 

নদী ছেড়ে সাগরে ঢেউগুলির উন্মাদনা, উচ্ছ্বাস 

গানে গানে সহজিয়া বাঁশির ধুন 

তানপুরা শরীর হয়ে জাপটায় সমস্তকে জাপটায় 


এ চক্রব্যূহ থেকে মুক্তি পেতে চায় নির্বোধেরা 

কোষে রক্তে স্নায়ুতে সঞ্চারিত করে নব নব পৃথিবী অধ্যায় 


ব্ল্যাকহোলে আলোর চারাদের অঙ্কুরোদ্গম ও চাষবাস 

লালন পালন করে সমান্তরাল নেমে আসা অশ্রু 

পদ্ম হয়ে ফোটে পদপ্রান্তে, খেদ থেকে যায় নৈঃশব্দের শরীরে 

কামনা চোখের অপলকে ক্ষয়ের জয় 

জানি না কখন তুমি আলোর বেগের থেকে বেশি ছুটে 

নীল টিশার্ট, সবুজ স্কার্ট, লাল টাই পরে একান্ত ছাত্রীবেশে 

স্কুলের ঘন্টা শেষে সাত জন্মের কোর্স ও ডিসকোর্স শেষে 

তুলে দাও নিজেকে প্রলয়ের হাতে সৃজনপিয়াসী 

যদি অপত্য কোনোদিন বলে যায় সংযম ও অসংযমের কথা 

আর সেই কাহিনি দ্রাঘিমা পথ ধরে আন্তর্জাতিক, কিংবদন্তি হয় 

এখনও তোমার ঠোঁটে ঠোঁট, বুকে বুক আশ্লেষ জড়ানো 

মুক্তিঝর্ণায় দুরন্ত, প্রাণবন্ত!





সুকান্ত

              

মি ষ্টি বৃ ষ্টি


সুকান্ত তুমি আমাদের প্রতিবাদের মশাল!

আজও জ্বলছো।

সুকান্ত তোমার নিজস্ব আগুন!


...সুকান্ত তোমার কবিতার সেই দুঃসহ আঠারো বছর

আজও সমানভাবে যন্ত্রণা দেয়।

সুকান্ত তোমার কি মনে হয় 

আমরা স্বাধীন? 


সুকান্ত তোমার অবাক পৃথিবী!


সুকান্ত তোমার রানার আজও সূর্যের ভয়ে

ছুটছে! কখন আসে ভোর?


সুকান্ত! তোমার পূর্ণিমা চাঁদ আজও ঝলসানো রুটি---

সুকান্ত, তোমার সেই দেশলাই কাঠি!

মোরগ এখনো টেবিলে খাবার হয়...

সুকান্ত, তোমার স্বপ্নিল চোখ দুটি...


সুকান্ত তোমার আগামীর শিশু ডাস্টবিনে জন্মায়...

কুকুরের সাথে রুটি ভাগ করে খায়!

আজও তার জন্য তৈরি হয়নি কোনো নিরাপদ পৃথিবী---


সুকান্ত তুমি আমাদের অভিমন্যু ছিলে,

মাতৃগর্ভে আগম শিখেছো,

ব্যুহভেদ, নিগম শেখোনি।


সুকান্ত, সপ্তরথীর আক্রমণে আজও দেশ...

সুকান্ত, কোথায় সকাল?





শারদীয় আঙিনা


সং ঘ মি ত্রা  ভ ট্টা চা র্য


শরতের নীল আকাশের মাধুর্যে 

হঠাৎই মনের অবাধ্য জানলায়  উঁকি দেয়  

আমার শৈশব।

এই জানলাটা বন্ধ হয়ে গেছে আজ প্রায় এক দশক হলো।

জং ধরা জানলার পাল্লাগুলো কেমন যেন একটা জেদ ধরে থাকে।

আজ একটু ফাঁক হতেই...

শৈশবের নীল আকাশ আমায় বললো শারদীয়  সকাল এসেছে ঋতু পরিক্রমায়!

কাশের বন ডেকে বললো,

সেই যে তুমি ঘরে আগল দিয়ে বসে আছো 

আমরা যে পসরা সাজিয়ে এনেছি তোমার জন্যে!

তবু তুমি বিষন্ন কেন?

সত্যিই জানি না শুধুমাত্র  শ্রাবনের কালো মেঘেরই 

কেন আনাগোনা আমার আঙিনায় আজকাল!

শিউলির সৌরভ মেশা ভোরের স্নিগ্ধতা এখন অধরাই।

তবুও পড়ন্ত  বিকেলের করুণক্লান্ত আলোয় 

হয়তো ছিল না কোনো উচ্ছ্বাস!

তবুও কাশের বনের মতন এমন আপন করে 

ডাকেনি তো কেউ!

 পড়েনি তো কেউ মনের ব্যর্থ প্রলাপের চাপা কান্নার পাঠ!

তাই হয়তো জানিনা আজ এতো স্মৃতিবিধুরতার মধ্যেও 

দিগন্ত থেকে দিগন্তে...

এই অপার্থিব সুন্দরের আবাহনে বীনার সপ্ততন্ত্রীতে 

উন্মুক্ত তান সুরের অজস্র লহরী সাজায়।

শরতের তন্দ্রাচ্ছন্ন মাদকতার মধ্যে 

যেন কোনো ক্লান্তি নেই!

যেন কোনো শোক নেই!

তাই পুজোর গন্ধ নিয়ে আবারো এসেছে আশ্বিন!

তাই মহালয়ার ভোরের স্তোত্রপাঠ 

ভুলিয়ে দেয় বিচ্ছেদ বেদনা 

তবুও তারই মাঝে  ক্ষণিক সান্ত্বনা পায় একলা মন!

দূরের নতুন সবুজ ধানের উপর জমে থাকা বিন্দু বিন্দু 

শিশির আলেয়ার মতো কোনো অপার প্রেমের দিশা দেয় হৃদয়ে।

দেখি দেবী মূর্তির সাথে  মিলে গেছে আমার কোনো অতীতের মানবী মূর্তির।

সান্ধ্য আরতির ধুনোর ধোঁয়ায় কেমন যেন সব এলোমেলো হয়ে যায়।

চোখের কোনটা কেমন যেন ভিজে যায়।

বুঝি শৈশবের ফেলে আসা শরৎ আবার এসেছে 

এক চেনা সুরে অচেনা মায়ায় আমার আঙিনায়।

একান্তই আমারই আঙিনায়!





অবসর


অ ন্ন পূ র্ণা  দা স


ছুটির ঘন্টা বেজে চলেছে

এটা প্রতিদিনের মত ছুটি নয়

এ একটু আলাদা

কর্মজীবন থেকে অবসর নেওয়ার প্রস্তুতি

নতুন প্রজন্মের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করা

পরিচিত চেয়ার, টেবিল, স্কুলের দেওয়াল, পিচবোর্ড

সবার থেকে বিদায় নিতে হবে। 


ছাত্রীদের যে লাল, নীল পেন দর্শন দিত খাতায় আঁচড়

আজ তার থেকে বিশ্রাম। 

যারা প্রাক্তন ছাত্রী তারাও  খবরটি শুনে ভারাক্রান্ত;

তাদের আপন বিজ্ঞানের দিদিকে স্কুলে আর দেখবে না। 


তবুও তারা মনে মনে জানত দিদি স্কুলে আসে

সেই সকালের ট্রেনে, 

ফিরতেন বিকেলের ট্রেনে

এ তো নিত্য চলাচল... 


তাই মন আজ বিষন্নতায় ভরা

প্লাটফর্মের বটগাছের নীচে বসে

অপেক্ষারত দিদিকে 

প্রাক্তন ছাত্রী আর দেখবে না। 


এই বটগাছ যেন কত অবসরের সাক্ষী

যেন কত কথা নীরবে বলে চলেছে... 


পুজো আসছে মা দুর্গার আগমন হবে

তারই মধ্যে চলছে প্রিয় দিদিকে বিদায় সম্ভাষণ জানানোর প্রস্তুতি;

রূপকথা আজ সত্যিই বিচলিত

পুরোনো মধুর স্মৃতি তাড়া করে চলেছে

অন্তহীন পথে...






বিচ্ছেদ


অ ন্ত রা  স র কা র 


কোথাও একটা ফাটল তৈরি হয়েছিল।

দশবার ফোন লিস্ট চেক করেও ভাঙন চোখে পড়ে নি।

চুন, সুড়কি,বালিতে সাময়িক  মেরামত  হলেও 

ফাটল কতটা বিস্তৃত ছিল ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি।

কেবল, তুমি জানতে-

কীভাবে নিঃশব্দে হারিয়ে যেতে হয়!

স্লো পয়জনিং ইঞ্জেকশনে,

মানুষ খুন করতে হয়!

মিথ্যে প্রতিশ্রুতি জিভের ডগায় রেখে, 

সম্পর্ক পিষে ফেলতে হয়।

আইন, কানুন, আদালত লাগে না,

মুখে কালো দাগ লাগে না।

অথচ-

শ্রাবণের ডানায় ঝড় তোলে হলদে চিরকুট,

অঝোরে নোনাজল গড়িয়ে পড়ে চিবুক বেয়ে,

বানভাসি প্লাবনে নৌকাডুবি হয়।

ভেসে যায়...






ধর্ম


উ ত্ত ম  কু মা র  দা স 


ঘুমের মধ্যস্থতায় স্বপ্নের আহাম্মকি আবরণে কিছু ভয় আনুষ্ঠানিকতায় ক্রমশ সাহসী হয়ে উঠছে


চোরা কারবারিদের কাছে বিশ্বাস ক্রমশ হয়ে উঠেছে জাগতিক সংলাপ আর  নিরাকার প্রত্যয়! 

মানবিকতা উপেক্ষিত।





জীবনস্রোত


তী র্থ রা জ  রা য়


একদিন তুমি দূর থেকে ডাকবে আমায়,

তোমার শীতল স্পর্শ কাশফুলের তুলোর মতো

ছুঁয়ে যাবে আমার অবচেতন মন,

মেঘের দল পার করবে দিগন্ত,

আবছা আলোয় ভেসে আসবে না বলা কথার ধ্বনি,

হাত বাড়িয়ে দেবে খোলা আকাশের বুকে, 

পিছুটানেরা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে মনের আঙিনায়,

স্মৃতিগুলো ধরা পড়বে বায়োস্কোপের রিলে।

হঠাৎ তখন অভিমানের মেঘ জমবে গাঢ় হয়ে, 

বজ্রপাত হবে সজোরে,

ছিঁড়ে যাবে হৃদয়ের তার,

ঝমঝমিয়ে নামবে শ্রাবণধারা,

ভাসিয়ে নিয়ে যাবে শেষ বিকেলের ঝরাপাতা। 

মাঝি আবার দাঁড় বাইবে,

ছল ছল শব্দে ভেসে যাবে নৌকা

জীবনস্রোতে-।






বৃষ্টি


সু স্মি তা  ম ন্ড ল  পা ই ক (মা লা)


বৃষ্টিস্নাত মফঃস্বল,

রক্তকরবী ফোঁটে।

সেই বৃষ্টি বিরক্ত

বানভাসি অপবাদে!

বাষ্প জড়িয়ে,ছড়িয়ে ছড়িয়ে

যায় সে মেঠো পথে...

এলো মেলো রাস্তা কেমন

লজ্জা রাঙানো ঠোঁটে!

আগমনী সুর ভেসে আসে

জানায় পলে পলে...

সূর্য যখন প্রখর, তুমি

লুকোও মেঘের কোলে।

অসঙ্গত শ্রাবন; বাগিচা বৈরী,

নষ্ট হয় নীড়!

তবুও বলি,

রৌদ্র দাবদাহ হার মানিয়ে, হাজির হও নিয়ে আরামের ভীড়।





চলো এক পেগ নোবেল হয়ে যাক


উ ৎ প লে ন্দু  পা ল  


চলো এক পেগ নোবেল হয়ে যাক 

যুযুধান বনশুকরের বেশে 

পাহাড় কিংবা মরুভূমির দেশে 

রক্তপাতের হিংস্র উল্লাসে 

চলো এক পেগ নোবেল হয়ে যাক 


ভরা ছিল গ্লাস তৃপ্ত আবেগে 

তবুও ডাকে মেঘ অশ্লীল রাগে 

আগুন আর ধোঁয়ার সোহাগে 

চলো এক পেগ নোবেল হয়ে যাক 


প্রতিরাতে ভাসে স্বপ্নের ভেলা 

দূর্দম কিছু বেইমানি খেলা 

ধ্বংসস্তুপে ঢাকা প্রতি ভোরবেলা 

চলো এক পেগ নোবেল হয়ে যাক 


হাত সেঁকে নিয়ে যুদ্ধ আগুনে 

হিংস্রতা ঢেকে বুদ্ধের ভানে 

মত্ততা মেখে শুকরীর ঘ্রাণে 

চলো এক পেগ নোবেল হয়ে যাক 


প্রতি রাতে খেলে মরণের খেলা 

শ্বেত কপোতেরে করে হেলাফেলা  

স্তবস্তুতিগানে ভিজে এই বেলা 

চলো এক পেগ নোবেল হয়ে যাক 


মুখোশের আড়ে শ্বদন্ত ঢেকে 

লোলুপ জিহ্বায় নরমাস চেখে 

ওষ্ঠরঞ্জকে স্মিতহাসি মেখে 

চলো এক পেগ নোবেল হয়ে যাক।





আলো ও অন্ধকার


প্র শা ন্ত  ক র


তোমার অন্ধকারটা

আমি আলোতেই ঢেকে রাখি

আলো ব্যর্থ হলে 

তুমি আবার শুদ্ধ অন্ধকার


আমি নিজেকে প্রজা ভেবেছি 

তাই তুমি রাজন্যা 


প্রজাস্বত্ব ছেড়ে দিলে 

তুমি আমারই আলোর ব্যর্থতা

ভেবে নিও


শুধু আমি তোমার পেছনে ছুটছি


তোমার অন্ধকার

তাই আমার আলোর স্বরূপ





অস্তিত্ব


প লা শ  বি শ্বা স


আমি নীল সমুদ্র ছুঁয়ে দেখলাম

আমার সমস্ত শরীর লবনাক্ত হয়েছে

সৈকতে দাঁড়িয়ে বালি ঘেঁটে গেলাম 

শিশুর মতো একাকী


কিছু হারিয়ে গ্যাছে তবুও কী 

উত্তরে বলে দিই 

না তো

সবুজ স্বপ্ন মাখি আবার সারাটা গায়ে

স্বপ্ন দেখতে আমি বড্ড ভালোবাসি


বেঁচে আছি যুগ যুগ ধরে

এভাবেই আমি





লাল স্বপ্নের ঘোরে

    

রা জা  পা ল চৌ ধু রী

      

বিগত শতক তখন, সাতের দশক।

কৈশোর বেলা, ছাত্র নেহাতই তখন।

অবোধ বালক মনে, প্রশ্ন জাগে নানা কারণ অকারণ।

না বুঝে তখন নীতি-নৈতক, শুধু খেলাধুলা পড়া, 

আর সুকুমারে-স্বপনে সত্যজিত সাথে সুভাষে স্বপ্ন গড়া,

সুকুমার মন, বোঝেনা তখন, স্বপ্নের ভাঙা-গড়া।

শুনে কানাঘুষো, কানু নামে একজন হাতে বন্দুক,

বিদ্রোহ হেঁকে ফেরি করে যায় দুয়ারের পাছে পাছে।

ফাঁকি দিয়ে ছোটে প্যায়দা পুলিশে রাত্রির কালো কার্ণিশে,

বলে যায় কানে ঐ আসে দিন লাল সূর্যের রাঙা।

দেখি চেয়ে শুনি কচি কানে কানে, বুঝি কি না বুঝি,

কত প্রাণ যায় বলি, কখনো পুলিশ, কখনো বন্ধু খুনি,

কতো জননীর কোল বুক হলো হাহাকারে খালি,

মনীষীরা যত বিগত দিনের শির-চ্ছেদে মাখে মাটি।

সুন্দর দিন, সকলের দিন, শ্রেণি হীন দিন ঐ এলো বুঝি!

একে একে দিন যায় হয়ে পার কৈশোর ফেলে বৃদ্ধ এখন।

এরই মাঝে কতো দিন বদলানো মাদকতা মেখে

কাল হয়ে গেল গত, কত রং নাচে চোখের সুমুখে!

একে একে সব ফিকে হয়ে যায় আসেনা সুদিন, আর্তেরা আজও কাঁদে।

বন্দুক হাতে বিপ্লবী কতো, হলো বুর্জোয়া পাতি,

যোগ দিলো শেষে শত্রুর দলে হবার হয় না গতি।

মুখেতে কুলুপ কেউ হলো চুপ, কেউ তবু চাপে দাঁত,

পথ খুঁজে খুঁজে চিত্ত ব্যাকুল জীবন হতেছে পার,

এ গলি সে গলি ঘুরে ঘুরে হায় কোথা সে রাজপথ?

সত্তর থেকে বিরাট সফর; শতকের মাঝ, বুকে ভরা আশ,

কত কাল আর আশা ভরা বুকে

ছুটবে মানুষ লুকিয়ে হুতাশ!





সুনামির ঢেউ


কা বে রী  রা য়  চৌ ধু রী


বুকের ভেতর বহমান নদীতে স্বচ্ছ জলধারায় থৈ থৈ প্লাবন, 

উথাল পাতাল স্রোতে নুড়িপাথর জমা ব্যথার আঁচড়ে হোঁচট খেয়ে চিনি পথ।

তুফান বুকে একলাই সামলাতে হয় সুনামির ঢেউ, 

পাশে থেকে সহায়তা করার নেই কেউ। 

নদী বলো আর নারী দিগ্বিদিক দিশেহারা, 

পথের বিপদে সঙ্গীবিহীন লড়াইয়ে ঘাত প্রতিঘাতের সন্মুখীন। 

একলা চলো পথের বাঁকে দুর্বার রণরঙ্গিনী ভূমিকা, 

নদী সাগরের মোহনায় এসে অস্তিত্ব বিলীন।

নারীকে জয় করতে হচ্ছে অস্থিত্বের পূর্ণ অধিকার, 

নারীশক্তি মঙ্গল গ্রহে পর্দাপণ আকাশ জয়ের নিশান।

নীল জলে সাঁতার, পাহাড়ে ট্রেকিং বনে জঙ্গলে অবাধ বিচরণ, 

সংসার সমুদ্র সাঁতারে শিক্ষায়, ব্যক্তিত্বে ভারতের রাষ্ট্রপতি মহিলা। 

নারী শরীর লোলুপতা গ্রাসে ঘৃণিত নৃশংসতায় বলি অহরহ, 

নারী প্রতিবাদী হলেই অভয়ার মতো ধর্ষিতা মৃতা। 

বিচার ব্যবস্থা কলঙ্কিত অর্থের বিনিময়ে মাথা নত, 

নারীর দীপ্তিময়ী মহাশক্তি ধ্বংস করে দিতে পারে পৃথিবীর পাশবিকতা। 

নদী শীর্ণ হলে জলাভাব তৃষ্ণার্ত দহনে হাহাকার, 

নারীর প্রতি অবমাননা, ব্যভিচার স্বার্থের বিষে দলিত ছায়া পতনের অশনি সংকেত।

বৈষম্যের অন্ধকারে শক্তি তলিয়ে ধূলোয় ইতিহাস, 

সুনামির লোনাজলে ভেসে যায় তেজস্বিতা মহাবিক্রমের।।





ইতিহাস কথা বলে

 

শি বা নী  গু প্ত 


কত প্রাসাদের পাঁজরে পাঁজরে ইতিহাস লেখা আছে,

মর্ম ব্যথার বেদনায় গাঁথা রক্ত আখর মাঝে। 

ক্ষমতার লোভে কত হানাহানি প্রাণের নিধন কথা, 

ভগ্ন ইটের পিঞ্জর মাঝে ইতিহাস লিখে যথা।


কত অসহায় লাঞ্ছিতা হায় বাসনার তাপে পুড়ে,

নিথর দৃষ্টি রক্তবৃষ্টি হারেম মহল জুড়ে।

প্রত্নতত্ত্ব  পরিচর্যায় সংশ্লিষ্ট জনে,

সুকঠিন শ্রমে সংগ্রহ করে রেখেছে যত্ন সনে।


বিজয় কাহিনী ষড়যন্ত্রের কূট কৌশল যে তায়,

সময় গতিতে নথিপত্র  বুঝি বিলুপ্তির পথে ধায়।

কতনা প্রশ্ন সুপ্ত রয়েছে প্রত্নতত্ত্ব  মাঝে,

তথাপি মানুষ সচেষ্ট আজো জানার প্রয়াসে কাজে।


বিভীষিকা কত লুক্কায়িত যে,

পুরাতত্ত্বে রাজে,

সন্ধানী মন তবু অনুক্ষণ অনুসন্ধানে সাজে।

কালের ছোবলে যুদ্ধবিগ্রহে যত না হয়েছে হার,

'ইতিহাস কেঁদে মেনে নেয় ভুল বেলা শেষে বার বার'।





অব্যক্ত থেকে যায়


বা সু দে ব  বা গ


আমি কি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলবো 

ওই তো তুমি আমার, চোখ বুজে আসে 

অন্তর জুড়ে বইছে ফাগুনের হাওয়া?

তোমার স্নিগ্ধ শোভন অবয়ব, ও দৃষ্টির 

আড়ালে লুকিয়ে আছি আমি !

বলবো কি এসো না একটু গঙ্গার তীরে 

বসে গল্প করি, বলব কি তুমি আমার

নব দম্পতির মত মিষ্টি গন্ধে বর্ণে অতুলনীয় 

এক সাক্ষাৎ লক্ষ্মী?

বলতে পারছি কই, আমি একা নই, আমার

তুমি তো আছই, বাতাসে ভেসে আসে এক

শিরশিরে অনুভূতি, ওটাই চাই গো, আর

কিছু নয়, কথাগুলো অনুরণন করে, সিক্ত

হয়, ফেলে আসা অতীত!

পারি না গো, কতটুকু তুমি চিনলে আমায়

ওই লাইক কমেন্ট এর মধ্যে গলছে হৃদয়

মোমবাতির আলোতেই উত্তরন।

আমি তো খুচরো পয়সা গো, কে গোনে,

যার রোজ ভুরি ভুরি অর্থ আসে, সে কি

সিকি আধুলির খবর রাখে?

মনে হয় তো না। এই বেশ ভাল আছি

বলতে হয়, দ্বিধা দ্বন্দ্বে খাদের কিনারে 

দিন চলে যায়।

তবে মাঝে মাঝে মনে হয় তাহলে কি 

আমি সত্যই ঠিক আছি?

শব্দেরা হাহাকার করে, চিৎকার দিয়ে 

বলি, হ্যাঁ গো, আমি কি অপেক্ষা করবো!

তুমি আসবে তো?

উত্তর আসে না, প্রতীক্ষায় দিন কাটে

এইভাবে রক্তিম আভা ম্লান হয়,

আঁধার আসে, বই পড়ি, ঘুম নেই

চোখে, নিশানা ভ্রষ্ট হয়।

অন্তিম মুহূর্তের ডাক শুনতে পাই

ঘুম ঘুম চোখে, কারা যেন বলে

অনন্তের ডাক দিয়েছে ।

স্বপ্নগুলো ধূসর হয়ে যায়, ভেসে বেড়ায়

স্বর্গীয় সুখ আর অনুভূতি।





উপসংহার


র ঘু ন ন্দ ন  ভ ট্টা চা র্য


একই নিয়মে সূর্য ওঠে ভোরের আকাশে,

নিয়ম মেনে ডুবে যায় গোধূলি এঁকে,

বারবার ঘুরে আসে চেনা গানের কলি,

দুর্বোধ্য শব্দগুলো উচ্চারিত একটানা সুরে!


স্বয়ংক্রিয় পেশীর চাপে 

বুকের বাঁ পাশটা ওঠানামা করে তালে তালে 

আমরা ভাবি- বেঁচে আছি, বেশ আছি, 

বেঁচে আছি, না জন্মের দায় মেটাতে মৃত্যুকে 

করছি আলিঙ্গন?


প্রিয়জন প্রয়োজন, নাকি প্রয়োজনে প্রিয়জন,

দাঁড়িপাল্লায় মাপতে মাপতে শক্তির অপচয়,

একমুঠো, দুমুঠো করে করে চোখের আড়ালে 

ক্ষয় হয়ে যায় অক্ষয় ভাঁড়ার..!


ঘর ফেরত পাখির ক্লান্ত কাকলি থেমে যায়,

যখন সন্ধ্যার আকাশে নেমে আসে নিস্তব্ধতা,

শ্রান্ত চোখে যখন দাঁড়াই নিজের মুখোমুখি;

উপসংহার যেন লিখে দেয় নতুন এক অধ্যায়!





কথা বলে


অ নি র্বা ণ  চ ট্টো পা ধ্যা য়


ধুলোয় ধুসর হয়ে পড়ে থাকে লেখা 

প্রিয় বইগুলি কবিতার 

কিছু বিক্রি হয়েছে, অধিকাংশ হয়নি 


খুব কম মানুষ কবিতা পড়ে 

আরও কম মানুষ বোঝে 

কবিতার বইগুলো সেকথা বোঝে না


ধুলো খেতে খেতে আর অপেক্ষা করতে করতে

কবিতাগুলো একদিন বৃদ্ধ হয়ে যায় 

কবিতার বৃদ্ধ শরীর কেউ দেখে না

শুধু কবি ছাড়া 


কিন্তু বৃদ্ধ শব্দ আর ভাবনা গুলি জ্বালিয়ে দেওয়া যায় না

কবরে পাঠানোও যায় না

কথা বলে সময়ের কোষে কোষে...





আঁধার


তু ল সী  ম ন্ড ল 


যে পরিব্যপ্ত আঁধারে ডুবে আছে গ্রহ-নক্ষত্র, জ্যোতিষ্ক 

আর এই পৃথিবী- তারই নাম কৃষ্ণ।

এক ফোঁটা আঁধার যখন আলোকিত হয় তখন জন্ম নেয় আত্মা-

তুমি আমি সবাই সেই বিন্দু বিন্দু আত্মা,

যারা আলো খুঁজতে খুঁজতে ঝরে পড়ি আলোর বিশাল সমুদ্রে।

তাই আত্মার প্রকৃত রং আঁধার,

আঁধারের নাম কৃষ্ণ।

আমি কৃষ্ণ, তুমি কৃষ্ণ।

আমরা কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান, কেউ খ্রিস্টান কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমরা কেবল আঁধারের সন্তান।

হিংস্র হোক বা শান্ত, জলচর হোক বা স্থলচর, ক্ষুদ্র হোক বা বৃহৎ সব প্রাণিকুলই আঁধারের সৃষ্টি।

আমরা সকলেই আঁধার,

আমাদের একটাই জাত- আঁধার।

আমাদের একই উদ্দেশ্য- আলোয় ডুব দেওয়া।

আমাদের একটাই গন্তব্য- আবার আঁধারে মিশে যাওয়া।

তাই বড় হাসি পায়

যখন দেখি মানুষ জাত ধর্মের নামে বিভাজন তোলে---

যেন তারা এই আঁধারের একাত্মতাকে ভুলে গেছে।





বিশ্বাস

                    ‌

রা ম মো হ ন  বা গ চী


তোমাকে বিশ্বাস করে সঁপে দিয়েছি নিজেকে 

হাতে হাত রেখে ভুলে গেছি নিজের সত্তা 

নিকট হয়েছে দূর আরও দূর  

তবুও শপথের করিনি অপমান।

কিন্তু,

তুমিতো রাখনি নিজের অঙ্গীকার 

খুশির জোয়ার, এসেছে ভাঁটা 

পুড়ে ছাই হয়ে গেছে উৎসবের আলো 

শুষে নিয়ে হৃদি স্থলে করেছো আঘাত। তবুও,

নিজের উপস্থিতি ঝরে পড়েনি বাদল দিনে 

অনাবৃষ্টি আর প্রচণ্ড রৌদ্রের দাবানলে পুড়ে 

আরো আরো উথলে উঠেছে হৃদয়পুর

কেন যে ভুলতে পারিনি অঙ্গীকার।

কেন, জান?

বিকেলের একমুঠো রৌদ্রের অপেক্ষা 

দিন গুনি অনিদ্রায়, ভোগের স্বাদ ঘোলে মেটাতে 

আজও আমি ভিড়ের মাঝে খুঁজে বেড়াই তোমাকে...





ঋতু বাহার


শি প্রা  ঘো ষ


আমি উষ্ণ মরুভূমির কাঁটাগাছ,

তুমি তৃষ্ণার জল।

আমি গ্রীষ্মের দাবদাহ

তুমি শীতল বাতাস।

বর্ষার প্যাঁচপ্যাঁচে কাদা আমি 

তুমি সোনালী রোদ্দুর।

আমি শরতের ভাসা মেঘ

তুমি কাশফুল।

যখন আমি হেমন্তের ফাঁকা মাঠ

তুমি যেন সোনালী ধান।

আমি শীত কাতুরে এক বুড়ি

তুমি উষ্ণ কম্বল।

আমি যেন বসন্তের ঝরা পলাশ

আর তুমি গাইয়ে কোকিল।





মন থেকে মনে


অ ল কা ন ন্দা  দে


অনেকটা মেঘ যদি হৃদয় ঘেরে

ভয় পায় আশারা অশনি স্বরে,

মেঘ মেঘ কথারা অবসাদ মেখে

থেমে যায় জানালায় তোমায় দেখে।


যদি কোনো ভীরু হাওয়া সান্ধ্য সুরে

ভারি করে চিন্তা বিষাদে পুড়ে,

কুটিল তিমির যদি ক্ষোভকে ডাকে 

ভাঙা ঘুম হেয় করে স্বপ্নটাকে।


মরুভূমি মনটাকে পাঠিয়ে দিও

আমার হৃদয়াবেগ নদীটি নিও,

সবুজ পাতায় ভরা বুকের বনে

জীবন ছায়ায় মোড়া কবিতা শোনে।


গড়ে নেবে গান আর ছন্দ মিলে

অলস পবন ওড়া এই নিখিলে,

একখানি ছোট ঘর লাল পথপাশে 

চোখে চোখে হাসিরা শুধু ভালোবাসে!


এইটুকু পাওয়াতেই চাওয়াদের সুখ 

জীবনের আয়োজনে কেটে যায় যুগ, 

ইশারায় ফাল্গুন অসময়ে এসে

আগলায় শরতের ছদ্মবেশে।





গল্পের মতো কবিতা


নি বে দি তা  দে


তোমার আমার গল্পে দই পাতার মতো পড়ে থাকতেই বেশি ভালো লাগে। 

অহেতুক কেন আর কাউকে টেনে আনা? 

অযথা শব্দ খরচ করে মিছেমিছি কষ্ট পাওয়া! 

তোমার কবিতায় তুমি লিখতেই পারো, 

মুক্তির আনন্দ, গদ্য পদ্য গোলাপ কিংবা 

রাজকুমারীর গল্প কথা। 


যদি বলি বলতো ভালোবাসা তবে কি? 

কাউকে ভালো রাখাটাই হলো ভালোবাসা। 

তার জন্য ফুলের মতো সুন্দর মন লাগে, 

লাগে প্রজাতির রঙিন স্বপ্নময় ডানা, 

সেই আলোতে যেথা খুশি সেথা উড়ে চলা! 

থাকে হারিয়ে ফেলার নাম না জানা ভয়, 

মেঘ আসে হৃদয়ের আকাশে চোখে আসে জল। 


তাই তো অভিমান হলে, জল ভরা মেঘে, 

বৃষ্টি মতো তোমার বুকে নামি, 

নদীর দুকূল ছাপিয়ে নগর, বন্দর জনপদ,

সব ভাসিয়ে দিতে পারি!


হোক না তোমার আমার জীবনের আঁটোসাঁটো, সাদামাটা, আটপৌরে গল্প। 

থাকুক অনেক কথা কাটাকাটি, খুনসুটি, 

দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা থাক অল্পস্বল্প। 

যে ভাবনায় সারদিন সর্বক্ষণ সেই তো, 

আমার অনুপ্রেরণা, যেন কবিতার মতো গল্প।






যত  ফুল পাখি গাছেরা মিছিলে


বি জ য়  শী ল  


আমার দেশ। এ পোড়া দেশে   

রাজসভার কবিরত্নেরা যখন 

ইনিয়েবিনিয়ে রাজারপ্রশ্বস্তি--

হত্যাকে আত্মহত্যার রূপমায় 

সাজাতে ব্যস্ত হবে সে তখনই 

এ শহরের সেবাকেন্দ্র ধর্ষিত.... 

গাছেরা তো সবফুল ঝরিয়ে 

মেয়েটাকে লজ্জাবস্ত্র দিয়েছে, 

পাখিরা সুখউড়ান ভুলে গিয়ে 

প্রতিবাদী কবিতা হাঁটে রাস্তায়....

অনেক মৃত্যু সয়েছে এই শহর, 

না, আর নয়। বিদ্রোহী যত ফুল 

পাখি গাছেরা মিছিলে মিছিলে

ধর্ষক রাজার-ই নাম লিখেছে, 

তাই রাজপথে আগুন জ্বলছে!





অস্থিমজ্জা


অ মি ত  ম জু ম দা র 


আমার ঠোঁটে লবণাক্ত মাটি

তোমার চোখে বিপদসীমার জল 

কত হাজার পথ এগোনোর পরেও

অস্থিমজ্জা হারায় নিজের দল? 


তুমি মৃত্যু তুমিই মিছিল শোকের 

পায়ের পাশে জুতোই মাপে লোক

দীর্ঘ পথে হাঁটার বিনিময়ে 

ওদের চোখেও নতুন ঝর্না হোক। 


উড়ছে আগুন শহর পাড়া গাঁয়ে 

সবার হাতে সকালবেলার আঁচ 

নদী এখন শুদ্ধ হতে চেয়েই

বুকের থেকে ঝরিয়ে ফেলে মাছ। 


আমি কুড়োই দু’হাতে জাল পেতে

তারাও খোঁজে আমার মতো হাত 

সময় মতো চোখের পর্দা টেনে 

বাঁদিক ফিরে শরীর করে কাত। 


ডানে হলেই কি বা এসে যেতো? 

মাটিতে ছাপ সব জুতোরই হয়

মৃত্যু নিয়ে যতই কথা বলো 

ঘুমিয়ে যাওয়া সহজ কর্ম নয়। 


ঘুম এখানে বড্ড বারোয়ারী 

সব কাঠামোয় পেরেক মারে সেই 

বাকি হিসেব মজ্জা থেকে খুলে 

সুযোগ পেলে অস্থি পোড়াবেই।





মা এসেছে


ত নু শ্রী  ঘো ষ 


'মা' এসেছে। 

নিত্যকালের মাতৃরূপিনী মর্ত্যে আবার নেমেছে।

নীল আকাশের ভেলায় চড়ে, 

আমাদের উমা এসেছে।


আগমনী সুরে মাতল হৃদয়, 

বিশ্ব ভুবন খেপেছে।

শিউলি ঝরানো ভোরের হাওয়ায় শৈলপুত্রী এসেছে।

বাপের বাড়িটা আজও গোলমেলে

আজও অগোছালো রয়েছে।

তোমাকে সাজিয়ে নিয়ে আসে যারা 

'মা'কে বৃদ্ধাশ্রমে রেখেছে। 

নারীর মানকে আজও কি তারা উচ্চে তুলতে পেরেছে?

উপনগরী কত সুন্দরী 

সহস্রগ্রাস কেড়েছে;

ছিল ধানী চাষী, হল বাবুর্চি সেও তো নতুনই সেজেছে!

ধর্না মঞ্চ থিম হয়ে গেল 

কার্নিভাল তো চলছে;

ক্লাবে ক্লাবে মায়ের প্রতিমা প্রতিযোগিতায় মেতেছে।


এসব প্রশ্ন তোলা থাক মনে

কাশের বন তো দুলেছে;

জিম করে 'মা' যে স্লিম হয়েছেন

থিম পুজো তাই জমেছে,

'মা'এসেছে।।





তবু বাঁধি স্বপ্নসেতু


সা য় ন্ত ন  ধ র 


কতদিন দেখিনি তোমায় 

তোমার নীরবীণা শুনিনি কতকাল 

তোমার স্পর্শে শীতলতা না পেয়ে 

আজ আমি অভিমানী।


তুমি বলবে আমি দূরে সরে গিয়েছি

আমি বলবো, তুমি ধরে রাখতে জানো না 

তুমি কেঁদে কেঁদে ঘোলাটে করবে অবয়ব 

আমি উদাস হয়ে কল্পনা করবো তোমায়।


যোগাযোগের সেতু ভেঙেছে আজ

থামেনি তবু আমাদের পথচলা 

দেখা হবে আবার নতুন পথের বাঁকে 

পাবো নতুন করে কোমল স্পর্শখানি


তোমার স্রোতে ভেসে গেছে কত কথা

আর্দ্র বাতাসে মিশেছে প্রাণের ব্যথা

ডুবেছে কিছু ওজনদার কথা ভারী

কূলেতে যে কথা আজো অশরীরী

জেগে থাকে, হেঁটে বেড়ায়, ছায়া ফেলে

মনে, জাগায় বিষাদ-তিক্ত বিষ-গরলে।


তবু বাঁধি স্বপ্নসেতু দু'পাড় জুড়ে

দু'হাত ভরে অভ্রচিকচিক বালু খুঁড়ে।






গোপন সংকেত


ড রো থী  দা শ  বি শ্বা স


সবার চোখ এড়িয়ে, 

অচেনা সবুজ নির্জনে জন্ম এক 

গোলাপরঙা পেলব পাপড়ির ক্লিওম,

বনের পাণ্ডুলিপিতে সে এক চিরন্তন ছায়া,  

যার অস্তিত্বে ছড়ায় বনজ সৌরভ।


সে যেন গোপন কোনো বার্তাবাহক।  

তাকে জানে, দেখে, বোঝে যে

এই মাটিতে একাকী রোজ 

পায়ের চিহ্ন রেখে যায়,

যেন স্মৃতিরম্যতার গন্ধ মেখে 

শরীর মন হাল্কা করতে, 

দিনের পর দিন ফিরে আসে সে

ঠিক একই জায়গায়।


ক্লিওম কেশর দুলিয়ে তাকে ডাকে

পাপড়ি বোলায় তার কঠিন বর্মে,


সে জানে, তার অতিথির উপস্থিতিতে 

মাটি হয়ে উঠবে উর্বর—  

সে এক বিরল পুষ্টির উৎস, যেখানে জীবনের পুনর্জন্ম হয়।  


সে আগাছা নয়,  

সে এক পথনির্দেশিকা,

এক নির্ভরযোগ্য মানচিত্র—  


ক্লিওম মাথা তুলে দাঁড়ায়,  

নির্বাক সাক্ষী হয়ে, নীরব কাব্য হয়ে 

বিপন্নতার, অস্তিত্বের, এবং প্রজননের।





পূজাবার্ষিকী


চ ন্দ্র না থ  শে ঠ


প্রিবুকিং চলছে আপাতত শরতের মেঘ; নিজস্ব হোয়াটস অ্যাপে। 

বুকমার্ক এবারও ওই লজ্জাবনতা কাশ। হারিয়ে যাওয়া একশো

পাখির ডাক, সালিম আলি থেকে সরাসরি বাছাই পালক... নাম দেখে

নয়, ওড়ার মান... ঐতিহাসিক পাখি, ছোটো, অণুগল্পের মতো পালক, 

আবার পাতাজোড়া অলৌকিক ডানার ঝাপট...


মা আসছেন--- এ আনন্দ সবার; শুধু, দোরগোড়ায় কোনোরকমে হেলে 

 দাঁড়িয়ে আছে যে জটায়ু পাখিটি...

ক্ষতবিক্ষত, কি কুক্ষণে নেমে 

এসেছিল ছিনাল শহরে...লড়াইখ্যাপা !





ঘুড়ি ও লালজবা


চ ন্দ্র না থ  শে ঠ


একটি সাদা ল্যাজ উড়ে যায় ঘুড়ির পিছন.. কে তাকে পাত্তা 

দেয়? বেল-আঠায় জোড়া ল্যাজ বাতাসের বিহ্বলতা নিয়ে উঠে

 যায় যোজন যোজন... 


হলুদ-সবুজ আলোয় ভেসে আসে--- সাদা ল্যাজ... 

মঙ্গলকামনা কার... নীচে ধরা লাটাইয়ের সুতো


ওই দূরে--- এলিয়েন; ভিনগ্রহ... উড়ে যাওয়া ঘুড়িটির;

হিতাহিতচিন্তা শূন্য হয়ে। রাত্রি নামে--- গভীর গভীর--- সেখানে 

দিনের আলো ঘন্টা ছ'য়েক! এই ওঠে ঢেউ ওই সে ওঠে... চাঁদ 

পৃথিবীর কাছাকাছি: জোয়ারভাটা-য় কি ভীষণ জেরবার  


বেল-আঠায় জোড়া ঘুড়ি--- সাদা লেজ ডাক দেয় বাতাসের

 বিহ্বলতা নিয়ে উঠে যায়; হিতাহিতজ্ঞানশূন্য উড়ে যাওয়া তার 


বায়ুমন্ডল হারিয়ে ফেলছে সে; এলোমেলো উড়তে গিয়ে মনে 

পড়ে--- সাদা লেজটির কথা... ভিন গ্রহের এলিয়েন এসে বন্ধুতা 

পাতায়; বলে, 'এখানে অক্সিজেন নেই ফিরে যাও ঘুড়ি... নেই 

আত্মীয়স্বজন' 


জবা গাছে এসে জড়ায় ঘুড়ির সুতো; হাজার ওয়াটে জ্বলে 

ওঠে--- পৃথিবীর সামান্য লালজবা গাছ। লেগে যায় চিরচেনা--

বিদ্যুদ্ বিভাস...





দহন


ন ব নী তা


ঘাসে ঘাসে, পাতাদের কিনারায় লেগে থাকা

শিশিরের স্ফটিকস্বচ্ছ ফোঁটায় ফোঁটায়,

কাশবনের আড়ালে আবডালে,

আমাদের দহন লেখা হয়ে চলেছে

ইদানিং সমস্ত শরৎ ঋতু জুড়ে।


ঝলসে আমরা পুড়ছি নিঃসাড়ে

তরাস জাগছে হৃদয়ে,

দহনের পদাবলী লেখা হয়ে চলেছে

সময়ের নিজস্ব নৈসর্গিক পরিভাষায়।


এই দহন আসন্ন শীতে

যোগান দেবে প্রয়োজনীয় ওমটুকু

আপাতত মগ্ন রয়েছি সেই আশায়।

                   

বৃক্ষতমা


ন ব নী তা


সে এক অযোনিজাত কন্যে।


তার মা-টি মাটি হয়ে উঠতে পারেননি বলেই হয়ত

নাড়ীর টান চারিয়ে যায়নি শিকড়ে শিকড়ে

নিবিড় হয়নি বাঁধন, টুটে যায় হালকা টানে।


এক মাটি থেকে অন্য মাটিতে

এক জলবায়ু থেকে অন্যতর জলবায়ুতে

নিজেকে মানিয়ে নিতে নিতে

যোগ্যতমের উদ্বর্তন তত্ত্বে পারঙ্গম হতে হতে

ক্রমশ সে নিজেই হয়ে উঠেছে

আশ্রয়স্বরূপা ধাত্রী, বৃক্ষতমা এক নারী৷





পথের কাছে প্রেমের দাবি


সং হি তা  ভৌ মি ক


শ্রাবণের মেঘ যখন ঘন কালো

বৃষ্টির পায়ে পায়ে-

অপরিচিত পথিক হয়ে

ঠিকানা বিহীন নিঃশব্দ নীলিমায়

তুমি চললে সুদূরপানে।


রংধনুর ছটা যেনো ঘুচালো, 

অজ্ঞাত অবহেলিত কোনো কালো,

সন্ধ্যাতারা যেনো আজ সঙ্গী হয়ে,

তোমারই চোখের স্পর্শে,

আনন্দ আলোকে আরাম পায়।


ভিড়ের মাঝেও ছিলো শূন্যতা, 

আরও অনেকটা দীর্ঘপথ হেঁটে যেতে চেয়েছি,

গোধূলির ইঙ্গিতে অভিসারের পথ ধরে।

এখন নিভৃত অশ্রুধৌত সে পথ--- 

ক্ষণে ক্ষণে অসমাপ্ত রজনীর উপহাস,

ফিরে পাওয়া যাবে কি আর-

অজানার স্রোতে ভেসে চলার

সে যাত্রাসহচরী, কোথায় পাই তাকে?

নিগূঢ় অন্তরে চিরন্তন পথের কাছে,

প্রেমের কিছু অমূল্য দাবি রয়ে যায়।





চেনা পথের শূন্যতা


সং হি তা  ভৌ মি ক


আগলে কোথায় রাখতে পারলে

ধূসর লাগে যে সব,

চেনা পথে হেঁটেছি উদাসীন 

অচেনা পথিক বেশে,

মন বিবাগী ছুটছে কেমন দেখো-

খুঁজছে পরিচিত পথের বাঁক, 

বিরাম নেই এই পথে, শুধু আছে দীর্ঘশ্বাস,

ঘিরে ঘিরে আসে অবসন্নতা,

ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে

ক্লান্তি জড়ানো তীব্র অধীরতা,

স্মৃতির সংলাপে আজ রয়েছে কেবল

অব্যক্ত চেনা পথের শূন্যতা।





যুদ্ধ থামাও


অ নি ন্দি তা  না থ


পৃথিবী যুদ্ধ থামাও। 

যুদ্ধ ছড়িয়ে দিল 

বিষাক্ত বাতাস। 

দূর হ'তে ভেসে আসে 

ক্রন্দন ধ্বনির। 

বীভৎস দৃশ্য নজর 

কাড়ে নিউজ চ্যানেলে!

দলা পাকানো আগুনের কুন্ডলী। 

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, মধ্যবিত্ত 

সংসারে হাঁস-ফাঁস। 

অনাহারে মৃত্যু,

বন্ধ হোক যুদ্ধের দামামা। 

চাই শান্তি।




নীরব প্রেম


অ নি ন্দি তা  না থ


রাই তোমায় শেষ 

দেখেছি নববঁধূ সাজে।

কি অপূর্ব লাগছিল!

নীরব ভালবাসা ছিল 

তোমার প্রতি। 

ভয়ে প্রকাশ করিনি!

অনুষ্ঠান বাড়ি জমজমাট। 

সবার মত আমিও 

উপহার দিলাম তোমায় 

এক গুচ্ছ লাল গোলাপের   

তোড়া। 

গোপন ব্যথা জানে 

ডায়রি ও আমি।





শূন্যতা


ম নি কা  ঘো ষ 

 

জীবন খাতার প্রতি পাতায়,

একে  যাই আলপনা, আঁকা তখন কইবে কথা,

যখন আমি রইব না,

হাসি- কান্নার  দোদুল-দোলায়,

জীবন চলে আঁকা-বাঁকা,

লিখতে বসে হল না লেখা,

 জীবন খাতায় প‍রে থাকে শূন্যতা,

শূন্য দিয়ে শুরু কবে, শূন্য দিয়ে  শেষ।

শূন্য দিয়ে হিসেব কষে,

থাকবে না কোনো ভাগ শেষ...।




অন্য গ্রহ


ম নি কা  ঘো ষ


সৃষ্টি সুখের উল্লাসে,

মন মাতানো হৈ -হুল্লোড়ে,

চলে যেতে ইচ্ছে করে, এক  অজানা গ্রহের সন্ধানে,

যেখানে থাকবে না সাম্প্রদায়িকতার দ্বন্ধ, ধর্মীয় বিভেদ,

যেখানে থাকবে না হিংসা,  বিদ্বেষ,  লালসা,

হানাহানি, কাটাকাটি, থাকবে না নারী নির্যাতন,

স্বামী খুন, গণধর্ষন, কন্যা ভ্রূণ ধ্বংস করা,

থাকবে না রাজনৈতিক দলাদলি, ছল চাতুরী,

জীবন জীবিকার উপর দুর্নীতি।

স্বাস্থ্য, খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসায় থাকবে স্বচ্ছতা,

থাকবে নারী স্বাধীনতা, নারী নিরাপত্তা, শিশু সুরক্ষা,

যেখানে  বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে

কাঁদবে না, থাকবে শান্তির বাণী,

থাকবে শুধু সুস্থ সুন্দর সুশীল  সমাজ,

অফুরান মুক্ত বাতাস...,

এক পৃথিবী ভালোবাসা...।





হাতিয়ার ধরো নারী


ম ধু মি তা  ধ র


মেয়েটি তখন দেয়ালে দেয়ালে এঁকেছিল তার শৈশব

রক্তের ধারা আজ দিশেহারা মুছে দিয়ে গেল সেই সব।


খেলনার মাঝে লুকোনো থাকত স্টেথোর মত হাতিয়ার

নারীর শরীর কখন বিকোয় সে জানত না কিবা দাম তার।


গল্পের  ছলে রাক্ষস এলে মার মুখে বুক লুকিয়ে

থাকত সেদিন, আজ একা পড়ে তাজা রক্তেরা শুকিয়ে।


এখন, আজকে অপরাধী খোঁজো ধরলেও কিবা করবে

ঘুণ ধরা এই  সমাজ তবুও বুক ফুলিয়েই চলবে।


আর কতদিন ধরে লেখা হবে ঘৃণ্য ধর্ষকাব্য

যোনি পথে কোন কাঁটা তার নেই এতটাই বুঝি নাব্য!


রণরঙ্গিনী রূপে সেজে এসো আজ হাতে তুলে নাও অস্ত্র 

শরীর ঢাকো ক্রোধের বর্মে রক্তে ভিজুক বস্ত্র।


ফুল, নদী আর ডানা ভাঙা পাখী ক্যানভাসে থাক বন্দী

তোমার শ্বাসেতে খতমের গান, হোক্ বাতাস বারুদ গন্ধী!






ওগো সুন্দর


ম ধু মি তা  ধ র


ওগো সুন্দর, ওগো সুন্দরতম

সোনার সাজে সেজেছে তোমার রথ

ঝড়ের হাওয়ায় উড়ে গেছে যত ধুলো

বৃষ্টির  ফোঁটা ধুয়ে দিয়ে গেছে পথ।


কদমের গাছ ভরে গেছে ফোটা ফুলে

বাতাসে বাতাসে ভরে আছে তার রেণু

যমুনার জল উত্তাল হল আজ

আকাশে বাতাসে বাজছে তোমার বেণু।


তোমার ধ্বজা আকাশেতে উড্ডীন

জয় ডঙ্কা বাজছে উচ্চনাদে

তারই মাঝে যেন মিশেছে আর্তনাদ

বিপন্নতায় ঐ বুঝি কেউ  কাঁদে।


তুমি এসো নাথ, রথ থেকে নেমে এসো

পথের ধূলায় মিশেছে চোখের জল

আর থেকো নাতো উচ্চাসনে বসে

এমন করে থেকো না গো অবিচল।


তোমার বুকে কি বাজছে না কোন ব্যথা?

তোমার চোখেও অশ্রুরা চিকচিক

জানি তুমি এলে ঘুঁচে যাবে সব ভেদ

কান্না মুছে অভাগা হাসবে ঠিক ।


তুমি তো সেই রাজার রাজা জানি

তোমাকে সত্যি মানায় স্বর্ণরথে

তবু বিশ্বাস, তুমিই করবে ত্রাণ

প্রলেপ লাগাবে বেদনাহতের ক্ষতে।





কঙ্কনের হাতছানিতে


ত ড়ি ৎ  চ ক্র ব র্তী


আগুনের নদীতে এক টুকরো বরফ ছুঁড়ে দিলাম।

কুয়াহগা ছটফটিয়ে হাজার শ্বাস কুড়োতে আকুল।

টুকরো হলো শত যুগ প্রাচীন বিশ্বাসের কলিজা।

আকাশে ভাসিয়ে দিলাম এক কোঁচর পলাশের ফুল।

তোমার নুপুরের রিনিরিনিতে!


বোগানভেলিয়া পাতা শতাব্দীর কবিতা ছেপেছে।

টানা টুপটাপ বৃষ্টিতে পুরো পাতা প্যারাসিটামল।

ভোঁতা ছুটন্ত ঘুষিতে তাই নাকে হাজার ফোঁটা রক্ত।

হাস্নুহানার গন্ধ মেখে অমাবস্যা হলো তপ্ত গরল।

তোমার সিঁদুরের ঝলকানিতে!


ডেকে ডেকে বউ কোকিল ক্লান্ত হয়ে ঘর ছাড়লো।

ভরা নদীর বাঁকে আকাশ তাকে বারবার ছুঁয়ে যায়।

মুকুল লুকোচুরি খেলছিল পড়ন্ত রোদ্দুরের সাথে।

জুঁই ফুলের গন্ধে ব্যর্থ প্রেমিক আঁচলের স্পর্শ চায়।

তোমার কঙ্কনের হাতছানিতে!





জল ফুল নদী নয়


ত ড়ি ৎ  চ ক্র ব র্তী


-একি তুই কাঁদছিস। কি ছেলেমানুষী বলতো।


-না। শুদ্ধ হচ্ছি। মনে যে আয়াস জমে আছে কান্নার ঝটকায় তার কিছুটা পরিষ্কার করছি।


-তাহলে খানিকটা কেঁদে নে। কেঁদে শুদ্ধ শুচি হয়ে ওঠ।


-কেনরে এমন হয়! বারবার যাকে বড়ো আপন ভাবি কিছুদিন পরে সে ভেসে যায়। কি ভীষণ বোকাবোকা লাগে নিজেকে।


-মোটেও না। কে বলে তোকে বোকা! তুই তো সরল। তুই পবিত্র জলের মত। ভালো মানুষরা বোধহয় বোকাই হয়।


-জল। ঠিক বলছিস আমি জল। বড্ড বেশি হালকা থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু পারি কই!


-হ্যাঁ তুই জল। জলের মতো জীবন। তাই তো ত্রিভুবনের ভালোবাসা তোর মধ্যে। 


-কিন্তু আমি তো জল নই। তবে যে সকলে বলে ফুলের মতো পবিত্র হও। তাইতো আমি ফুলের মালা পরে ছিলেম। ফুলের মতো পবিত্রতা আশা করেছিলাম।


-ফুল কেন হবি তুই। ফুলের মতো করুণ ঝরে যাওয়া জীবন কেন হবে তোর! রূপ রস ছাড়া ফুলের আর কি আছে। তুই তো নদীর মতো বহিতে পারিস। তোর সাথে বহিতে পারে ধুয়ে নিতে পারে পাপের ভার। ফিনিক্সের আগুন ধুতেও পারিস তুই। তোকে পোড়াতে পারেনা কেউ। তোকে বাঁধতে চেষ্টা করেও ধ্বংসাবশেষে ভেসে যায় তারা। তুই আবার ভাটিয়ালির নতুন সুর বাঁধিস।


-এতো বড়ো নদী হতে ভয় হয় যে। আমি নদীও নই। তার থেকে যদি কর্ণঝোরায় নিজেকে ভিজিয়ে শান্তিনিকেতনী চেক শাড়িতে গাছকোমর বেঁধে নিজেকে সাজিয়ে নতুন সত্যি মানুষটার জন্যে অপেক্ষায় থাকি। আলতা পরবো পায়ে। নোলক আর আঙ্গট।


-তাই তুই জল ফুল বা নদী নোস্।  তুই তুই’ই।





শংসাপত্র

 

দী প ঙ্ক র  স র কা র 


লেখায় প্রমাদ ছিল ছন্দেও গলদ তবু কুড়ালে

হাততালি, শ্রোতারা মুগ্ধ উন্মাদের মতো বোঝেনি 

তোমার চাতুরী। পাঠগুণে ঢেকেছে ফাঁক ফোকর 

আড়াল করেছ সবটা কাটাকুটি, ভেতরে ঢোকেনি 

কেউ ঈষৎ সহিষ্ণু, উপেক্ষা করেছে নির্বিষ। সেই 

ভ্রম থেকে গেছে আড়ালে অজানা কৌতুক। 

বহুবার হয়েছে এমন, প্রলাপে বেজেছে ঠমক গোপন অশ্লীল। সেই তো নিবিড় পাঠ মুঠো ভরে রাখা যেন দুরন্ত উন্মুখ।






মা মা গন্ধ


দী প ঙ্ক র  স র কা র 


নীল রঙের শাড়িটা উড়ছে হাওয়ায় 

সদ্য মা হওয়া যুবতীর শাড়ি। 

ওই তো বছর খানেক আগে চৌধুরীদের বাড়ির 

বউ হয়ে আসে মেয়েটি। 

মা মা গন্ধ ভাসে তার শরীরে, 

আমি তার ঘ্রাণ পাই। 

ছাদে উঠতেই দেখি হাওয়ার সঙ্গে লুটোপুটি। 

ওই ঘ্রান আমার খুব চেনা, 

আমি যখন জন্মাই, আমার শরীরে ও টের পাই সেই 

ঘ্রাণ। 

মা মা গন্ধে ভরে যায় ঈশান নৈর্ঋত।





অন্ধ তিমিরে


স্ব প্না  ম জু ম দা র


আনমনা বসন্ত অবাক চোখে প্রকৃতি দেখলেও

বসন্ত ছুঁয়ে ছিল হেসে, বেশ কয়েক বছর গভীর ভাবে

এখন উদাসী সে বসন্ত---


আক্ষেপ জানায় কতো, সময়ের দিশা বদলে গেছে বলে

বর্ষাও সেদিন অভিযোগ করেছিল---

মনে প্রশ্ন জাগে, রামধনু রঙ কেন শুধু, আকাশের বুকেই থাকে! 


অনন্ত বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও কখনো কখনো মন ভেঙে যায়, যখন আচরণ বদলায়

কালবৈশাখী ঝড় উঠেছিল সেদিন---

সাবধানে কিছু আবেগ এনেছিলাম কুড়িয়ে, শুধু মাত্র

তোমার জন্য! 


তুমি হেসে মনের দরজায় এসে জড়িয়ে বলেছিলে কতো

কথা, সেদিন---

জানি ওসব মনে থাকলেও ভুলে যেতে হয় ধীরে ধীরে! 


অবশ্য, বিধাতার ভাবনা আলাদা ছিল

সংক্রমণের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল শরীরেও মনে

তাইতো, পথ হারিয়েও বারে বারে ফিরে আসো

এই ভালোবাসার অন্ধ তিমিরে।।





অজানা বই


স্ব প্না  ম জু ম দা র


জীবন এক অজানা বই

যার প্রতিটি পৃষ্ঠায় লেখা আছে পুরো জীবনের গল্প

সুখ, দুঃখ, হাসি কান্না, ভালো-মন্দর হিসেব! 

যদি আগে জানা যেতো, মানুষ জীবনটা সাজিয়ে

গুছিয়ে, ভেবেচিন্তে চলতো! 

মানুষ এক একটি পাতায় পা রাখে আর ভাবে

বইয়ের লেখায় দুঃখ কেন বেশি

ছোট্ট জীবনে কেন থাকে মরুভূমির বালুরাশি! 

শৈশব কৈশোরের সেই মিঠে সময় কেন আসে না

বারংবার---

যৌবনে থাকে সুগন্ধ, তবুও লড়াই ভরপুর, 

জানা হয় না, এ লড়াই কতোটা কেমন হবে

লড়তে লড়তে ক্লান্ত মন, ভাবে

অজানা বইয়ে কি আছে আর লেখা, যেখানে

গল্প সহজ হবে! 

জ্যোতিষ এসে ভাগ্য গোনেন, বলেন কতো কথা

জীবনের পথে চলতে চলতে কিছু মেলে কিছু

মনে হয় রূপকথা! 

জীবনের রঙীন অধ্যায়ে মানুষ কতোটাই থাকে খুশি

ঠিক পরের মুহুর্তে জানে না কোন অঘটনের কথা

লেখা রয়েছে, সেই অজানা বইয়ে

ঘটনার মুখোমুখি মানুষ বে-সামাল হয়ে ভাবে

হে ঈশ্বর এমনটা কেন করলে! 

হয়তো, জীবনের কোনো এক মোড়ে পাওয়া যাবে

অমৃতের সন্ধান---

তাই, ইচ্ছে না হলেও এই বইয়ের পাতা উল্টোবে

নিজের মতো, পড়তে হবে জানতে হবে, স্মৃতির

মোড়কে রাখতেও হবে

জীবনের এই বইয়ে পাওয়া তথ্য।।





পরিণত ভাটায়


স্ব প ন  কু মা র  ধ র (শ্রী ধ র)


ভাবার অবকাশ পাইনি কখনো,

সময়ের গতিতে চলে,

অন্তিম লগ্নে কেন যে মনে হয়,

সময়ই কথা বলে।

তারুণ্যের গতিতে ছিল উদ্দামতা,

এখন পরিণত ভাটায়,

মনের মণিকোঠায় সঞ্চিত স্মৃতি'রা,

স্বর্ণালী আভা ছড়ায়।


ইচ্ছেদের এখন ও হয়নি মরণ,

রয়েছে মনের গভীরে,

অভিজ্ঞতার নিরিখে পরিপক্কতা বেড়েছে,

ক্ষমতা কমেছে শরীরে।

অতীতের দিন ফিরে যদি পাই,

সাজাবো পরিকল্পনা করে,

ভুল নয়, সব ভালো-কে নিয়ে,

জীবনটা গোছাবো ভরে।






ফিরে যেও তুমি


 স্ব প ন  কু মা র  ধ র (শ্রী ধ র)


যদি কোনদিন ফিরে আসতে চাও,

অনায়াসে আসতে পারো,

বিরহ তো কাম্য ছিল না,

মিথ্যে অভিমান'ই বাধা হোল।

 

আমার হৃদয়ের অভ্যন্তরে,

রিক্ততা আছে, চাপা বেদনা আছে,

তোমার শূন্যতা দিয়েছে অবসাদ,

তাইতো, সময়ের কাছে আত্মসমর্পণ করেছি।


ফেলে আসা দিন আর মুহুর্তগুলো,

স্মৃতির পর্দায় কেবলই ভেসে চলেছে,

আর বলে চলেছে-  "ফিরে যেও তুমি",

আর তারই অপেক্ষাতেই তো আছি।






শেষ বিচার


দে ব যা নী  দা স


বিচার চাই বিচার চাই

আকাশ বাতাস মাতিয়ে আজ

একই রব বিচার চাই 

দলে দলে পথে নেমে

জনস্রোতে বিচার চাই

কিন্তু কিসের বিচার, কারই বা বিচার!


যুগের পর যুগ চলেছে, সময়ের পর সময়

ইতিহাসের অনেক পাতা সিক্ত অশ্রুজলে

অন্ধসমাজ দেখেছে বহুবার

শুনেছে লাঞ্ছিতার আর্তনাদ


যাজ্ঞসেনীর কাতর কণ্ঠ আকাশে বাতাসে আজ

বহু দেবালয়ের প্রাঙ্গণও ভাসে

দেবদাসীর চোখের জলে

ঈশ্বরের নামে সঁপেছে মন,

তৃপ্ত করেছে আপন বাসনারে বিনাদোষে শাপগ্রস্ত অহল্যারও সেদিন

ধর্ষিত হয়েছিল অন্তর মন

কিন্তু বিচার কোথায়?


কান পাতলে, আজও শুনি সে হাহাকার

কামড়ে খেয়ে ছুঁড়ে ফেলেছে নিথর রক্তাক্ত দেহ বহুবার 

শক হুণ দল পাঠান মোগল বৃটিশ সেনা ও এ সমাজদল 

সুযোগটা কেউ ছাড়েনি ঝাঁপিয়ে পরা নরখাদকের পারবে কি কেউ হিসাব দিতে আজ ও কত নির্ভয়া নীরবে নিভৃতে কাঁদে?


যে হাত দিয়ে শক্তি পুজো করিস 

সে হাত দিয়েই নগ্ন মায়ের দেহ ছুঁয়ছিস,

অসুর, দানব না পশু- কি তোর পরিচয়?

মান নেই হুশ নেই-মানুস তো কদাপি নোস।


বিচার কোথায়? পাল্টানো গেল না কিছুই 

শুধু সময়ের সাথে নর-পিশাচের

সংখ্যাটাই বেড়ে গেল

রাজনীতি, সমাজসেবা, মানবসেবা, ধর্ম- এসবের নামে 

লোভ ও লালসা মুখোশ পরা

মুখ দেখেছি অনেক।

শির উঁচিয়ে বুক ফুলিয়ে 

ঘুরছে যত হিংস্রদল--- 

বিচার কে আর করবে তাদের?

যেদিন--- কামনা বাসনায় দগ্ধ হৃদয় 

সিক্ত হবে জ্ঞানের আলোয়

সেই যদি যদি আসে আবার

সেই আশাতে রই।





আমিই সেই রানার


দে ব যা নী  দা স


"রানার চলেছে রানার 

রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে---"

---এক শতাব্দীর পারে এসে তার চলার পথও ফুরোলো শেষে


আজ শুধু সে এক ঐতিহ্যবাহী 

স্তব্ধ নিষ্প্রাণ দণ্ডায়মান মুর্তি

কাঁধে আজো আছে তার সেই চিঠির বোঝা,  

হাতে লাঠি ও লণ্ঠন 

তবু চেনে না তারে আজ আর কেউ 

যুগের হাওয়ায় ফিরেও দেখে না তারে,

সুখ দুঃখ প্রেম ভালোবাসার কথা- সবই যে চলে হোয়াটস্ অ্যাপে

এক লহমায় খবর পৌঁছে যায় তার প্রাপকের কাছে।

হা-পিত্যেশ নেই, নেই পথ চাওয়া

দেওয়া নেওয়া- সব অনলাইনে। 


চিঠির বয়ানে ভরে যায় ইমেল

রানার তাই অবসরে। 

প্রযুক্তির যুগে প্রয়োজন ফুরিয়েছে তার।


অস্তিত্ব হারিয়ে নব প্রজন্মের চোখে সে হয়তো ইতিহাসের পাতায়

নয়তো ডাকঘরের দুয়ারে দাঁড়ানো ব্রোঞ্জের সাজানো এক পুতুল। 

ঐতিহ্য হারিয়ে আজ সে চোখের জলে ভাসে।


ঘন্টা বাজিয়ে যেন সে চিৎকার করে বলে,

"ওগো নতুন যুগের মানুষ---

আমিই সেই ডাকহরকরা আমিই সেই রানার

যুগের শেষে প্রযুক্তির হাতে কাজ ফুরিয়েছে আমার।"





এখন বসন্ত নেই


 ধী রে ন্দ্র না থ  চৌ ধু রী 


এখন বসন্ত নেই, কৃষ্ণচূড়া ফুটছে তবুও,

কোকিলের কুহু রব ডালে ডালে, কি যে সমারোহ।

পলাশের হাতছানি, ভরছে বাতাস সংগীতেই,

কি হবে এসব দিয়ে, তুইই তো আর কাছে নেই।


একইভাবে চলে আসে ধীরে ধীরে ফাগ-উৎসব,

রঙের বৈচিত্র্য নিয়ে, সে এক অন্য অনুভব।

আমি আনমনা থাকি, একা বসে যমুনা তীরেই,

কি হবে এসব দিয়ে, তুইই তো আর কাছে নেই।


স্নিগ্ধ বাতাস আর ঘ্রাণে ঘ্রাণে কি যে মৌতাত,

সেই কবে রেখেছিলি ফাগুনে আমার হাতে হাত।

কতো প্রতিশ্রুতি ছিল, সব মিথ্যে হলো অচিরেই,

কি হবে এসব দিয়ে, তুইই তো আর কাছে নেই।


ভীষন কাঙাল আমি, তৃষ্ণা নিয়ে খুঁজে ফিরি রঙ,

কখনো আসল থাকি, কখনো বা সেজে যাই সঙ।

নির্জনে তোকে খুঁজি, কখনো বা উৎসব-ভিড়েই,

কি হবে এসব দিয়ে, তুইই তো আর কাছে নেই।


বসন্ত উৎসব আসে ফি বছর, পূর্ণ সম্ভার তার নিয়ে,

আমার বুকেতে "মেঘ-মল্লার" কেউ যায় যে বাজিয়ে

আমি ভিজি বসন্তে, বর্ষার বৃষ্টি ও নোনা ধারাতেই,

কি হবে এসব দিয়ে, তুইই তো আর কাছে নেই!





তুই দিয়েছিস


ধী রে ন্দ্র না থ  চৌ ধু রী


তুই দিয়েছিস     কবিতা আর গান,

তুই দিয়েছিস     আমায় প্রাতঃস্নান।


তুই দিয়েছিস     রক্তজবার লাল,

তুই দিয়েছিস     স্নিগ্ধ সে সকাল।


তুই দিয়েছিস     আনন্দ আর শোক,

তুই দিয়েছিস     সত্য-মিথ্যালোক।


তুই দিয়েছিস     একটা আকাশ নীল,

তুই দিয়েছিস     উড়ন্ত গাঙচিল।


তুই দিয়েছিস     মেঘের পরে মেঘ,

তুই দিয়েছিস     দুরন্ত আবেগ।


তুই দিয়েছিস     মন্দিরে আরতী,

তুই দিয়েছিস     এগিয়ে চলার গতি।


তুই দিয়েছিস     স্তোত্র-শ্লোকের কথা,

তুই দিয়েছিস     মুখর-নীরবতা।


তুই দিয়েছিস     অনাশ্রুত বাণী,

তুই দিয়েছিস     গোপন হাতছানি।


তুই দিয়েছিস     ফেসবুকেতে চলা,

তুই দিয়েছিস     কতই ছলা-কলা।


তুই দিয়েছিস     অনেকখানি পথ,

তুই দিয়েছিস     ভাঙ্গা চাকার রথ।


তুই দিয়েছিস     স্বপ্ন দু-চোখ ভরে,

তুই দিয়েছিস     কান্না ঘুমের ঘোরে।


তুই দিয়েছিস     আশার আলো জ্বেলে,

তুই দিয়েছিস     কত কি বিটকেলে।


তুই দিয়েছিস     ফোনেতে মিসড্ কল,

তুই দিয়েছিস     নোনা চোখের জল।


তুই দিয়েছিস     কখনও হাততালি,

তুই দিয়েছিস     আশার গুড়ে বালি।


তুই দিয়েছিস     নিরন্তর আশ্বাস,

তুই দিয়েছিস     বন্ধ্যা মাঠে চাষ।


তুই দিয়েছিস     ফুলঝরা এক গাছ,

তুই দিয়েছিস     মিথ্যে ময়ূর-নাচ।


তুই দিয়েছিস     মিথ্যে ছবি আঁকা,

তুই দিয়েছিস     কল্পনার দুই পাখা।


তুই দিয়েছিস     আমায় রাজার সাজও,

তবু তোকে         পাইনি আমি আজও।





রঙ নাম্বার


ধী রে ন্দ্র না থ  চৌ ধু রী 


সেদিন ছিলো একটা উড়ো ফোন, ভুল বোতামে পড়ে ছিল হাত,

সময় তারিখ পড়ছে না তো মনে, হয়তো তখন হবে গভীর রাত ।


ঘুম জড়ানো চোখে বলে কেউ, এতো রাতে কে বলছেন "দাদা" ,

ঘাবড়ে গিয়ে বলি আমি তাকে, কৃষ্ণ আমি, তুমি বোধহয় রাধা।


খিলখিলিয়ে উঠলো মেয়ে হেসে, বললো দাদা, থাকেন কতদূর,

আপনার লোক কোন জায়গায় থাকে, এটা কিন্তু শুধুই দুর্গাপুর।


আমি বললাম, কথা বলুন কম, শুনুন বেশি যেটা আমি বলি,

খুঁজছি আমি রঞ্জনা যার নাম, সে বললো, আমি কৃষ্ণকলি।


কেটে দিলো ফোনটা হঠাৎ করে, রঙ ছেটালো মনে অনেকখানি,

কল্পনাতে আমিও তুলি ফুল, বুকে সাজাই রঙিন ফুলদানি।


ঘড়ির কাঁটা, ঠিক চারটের ঘরে, সূর্য্য ওঠার অনেক তখন বাকি,

দেশলাইটা হঠাৎ দিলাম জ্বেলে, ঠোঁটের ফাঁকে সিগারেটটা রাখি।


ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় ভরিয়ে দিলাম ঘর, যাতে ওর মুখটা না আর ভাসে,

অন্তরেতে হঠাৎ কেমন শীত, উষ্ণতাটা শুধু শ্বাস-প্রশ্বাসে।


ভোর হলো যেই চা বানাই এক কাপ, হেঁকে বলি, রাখলে কোথায় চিনি,

মনে ভাবি, হতে যদি তুমি, প্লিজ একবার নিজের অর্ধাঙ্গিনী।


সকাল হলো, বেরিয়ে পড়ি পথে, নেড়িকুত্তা ডাকছে "ঘেউ ঘেউ" ,

আমি বলি, কামড়ে আমায় দ্যাখ, আমার বুকে পাহারা দেয় কেউ।


অফিস গেলাম, বসছে না মন কাজে, সেই যে উড়ো ফোনের "কৃষ্ণকলি" ,

ব্যাগের থেকে বইটা বের করে, পড়ি রবিঠাকুর, গীতাঞ্জলি।


প্রেমের বাতাস বইছে হুহু, হুহু, বাতাস কাঁপায় "শিউলি" ফুলের ঘ্রাণ,

হঠাৎ ফোনে কার রিং টোন বাজে, কে করলো সকালে আহ্বান!


"হ্যালো, মশাই, কাল রাতের সেই আমি, নম্বরটা সেভ ছিলো তক্ষুনি,

কোথায় আছেন, ব্যস্ত কি খুব কাজে, ফোনটা আবার হবে কখন শুনি"


আমার বুকে তখন পদাবলী, লিখছে মেয়ে, গাইছে কীর্তন,

স্তব্ধ আমি, একদম বাকরুদ্ধ,  তরঙ্গেতে ভাসছে তনু, মন।


গাছের পাতায় তখন কি উচ্ছ্বাস, শঙ্খ, কাঁসর বাজছে মন্দিরে,

হঠাৎ যেনো বসন্তের কোকিল, কুহু রবে ফেললো আমায় ঘিরে।


বুকে আমার তখন কৃষ্ণকলি, নিচ্ছে সেরে তারই প্রাতঃস্নান,

পাঁচটা মিনিট হলো ফোনে কথা, হৃদয়েতে তুলেছে "আম্ফান"!


এরপরেতে নিত্য যাওয়া আসা, মোবাইলের ইথার ধরে ধরে, 

বুকের ভেতর জীবন্ত এক মেয়ে, "প্রেম পুজো" চায় প্রত্যেক প্রহরে।


কষ্ট আমার বেশ কিছুটা হবে, শুনবে রাধা কৃষ্ণ-বাঁশির সুর,

মন্দিরটা নয়তো কাছাকাছি, রাস্তা অনেক, সেই দুর্গাপুর।


নেবো না তো ওজন বেশি সাথে, ঝোলাবো না কাঁধে কোনো ঝুলি,

তুলসী, কদম অপছন্দ রাধার, সে শুধু চায় একমুঠো "শিউলী"!





নারী


সু শা ন্ত  সে ন 


যে কোনো একটি নারীর কথা বলতে গেলেই নাড়িতে টান পড়ে। 


যে কোনো একটি নারী মানেই জন্মদাত্রী, 

হয় তোমার নাহলে আমার।

নারী নিয়ে আসে স্বর্গীয় অনুভুতি জীবনে।


চলতে চলতে তার হাত ধরি

মিলে যায় তার সাথে জীবন যৌবন।


যে কোন একটি নারীই 

পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়

যেখানে মাখা থাকে স্নেহ ও প্রেম একসঙ্গে।


যে কোনো এক নারীতে 

মনের আসক্তিতে মিশে যাই।




সমুদ্র


সু শা ন্ত  সে ন


সমুদ্র প্রথম নয় দ্বিতীয়'ও নয়

সমুদ্র কি প্রতিদিন চায় রে হৃদয় !


অপরাহ্ন এলে যদি ঢেউ ওঠে পড়ে

সমুদ্র কি একা বসে থাকে বালুচরে।


বিষাদের প্রতিমা কি দুর্গা ঠাকুর

সমুদ্র নিকটে আসে আবার সে দূর।


তোমার বাঁশি'ত বাজে বৈকুণ্ঠের পথে

তাই কি সমুদ্র আসে অর্জুনের রথে।


উদাস হৃদয় যদি একা বসে কাঁদে

অমাবস্যার আলো পড়ল কি ছাদে;


অনন্ত মাধুরী বলে যাকে ভাবা হয়

তার কাছে সমুদ্র কি রেখেছে হৃদয়




সৌন্দর্য


সু শা ন্ত  সে ন


শিল্পী যখন বিভ্রান্ত

ভাবছেন যা বললেন যা করলেন জীবনে

তার মূল্যায়ন নেই,

তার সারা জীবনের কাজ 

কেউ মনে রাখছে না,

তখন ঠিক করলেন-

আর জনসমক্ষে আসবেন না।


ভেবে তিনি দ্বার রুদ্ধ করে বসে থাকলেন

শম্ভু মিত্রের মতন।


তাতে ক্ষতি হলো এই 

যে মুষ্টিমেয় কয়েকজন 

শিল্পীর কাজ দেখে আনন্দ পাচ্ছিলেন

তারা নতুনতর আনন্দ শিল্পীর কাছ থেকে 

আর পেলেন না ।


পৃথিবীর সৌন্দর্য হলো বিঘ্নিত।





অপরূপ পলাশ


অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত 


কেন যে বারবার 

তোমাকেই  মনে পড়ে এই ঘনঘোর শ্রাবণের রাতে?

চোখ আমার নিদাঘের খরভূমি

             "নিদ নাহি আঁখিপাতে!"


দ্যাখো মাথার উপরে ওই সুদূর আকাশে কত তারাদের খেলাঘর

          কত ঝকমকে ঘরবাড়ি!

চলো না ওই তারাদের বাগানে গিয়ে "ধরাধরি" খেলা খেলি!

         তুমি কি রেগে আছো?

কেন যাবে না তুমি পাতার  আড়ালে ওই অদূরের শ্যামলীবাগানে?

মন তো আসলে পর্যটনপ্রিয়- চলে ডালে-ডালে বনে-বনে!

            তবু

এই দেশে আছে সংশয় প্রেমে ও পরিহাসে!

আমি "ধর্মে ও আছি জিরাফেও

আছি"! 

কেন যে তোমাকেই মনে পড়ে  আজ এই হলুদ বসন্তের রাতে?





অশ্রুদিনের কবিতা


অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত 


   ইচ্ছে হলেই হারিয়ে  যাবো

তখন তুমি আমাকে খুঁজে নিও

গুলবো আমি আবীর প্রবাসের 

       নীল-সাদা জলে 

তখন তুমি তাতে অশ্রু মিশিয়ে নিও 

 ভাঙা চাঁদের ম্লান জ্যোস্নার হাসি

তোমার কৃষ্ণ তোমার রাধা 

আমার হাতে বিষের ভাঙা বাঁশি!





অশ্রু দিনের কবিতা


অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত 


কী সহজে তুমি হাত ছুঁয়ে চলে  যাও অবশেষে 

মুগ্ধ প্রভাত হয়ে হেসে অক্ষয়  প্রতিমা স্বরূপ দাঁড়িয়ে থাকো  আনমনে।

দেখি--- আমার চারপাশে  শরতের হাসিতে দুলে ওঠা কাশ  বন- স্তূপ মেঘের নৌকায় ভেসে  বেড়াচ্ছে মেঘ বালিকার দল!

আমি নির্বিকার চৌকাঠ হয়ে  দাঁড়িয়ে থাকি প্রভাত ফেরির 

প্রয়াত উৎসবে--- সিঁদুর পরা  মেঘ বালিকার দল প্রভাত-প্রতিমা  

নিয়ে চলে যায় প্রবাসে!

                আজকাল 

শরত- স্তূপ মেঘ আর স্মৃতি  বিস্ফোরণের শব্দে ছিন্ন ভিন্ন  মেঘের নৌকায় মেঘ বালিকার দল চলে এলে আমার বিসর্জনের  কথা মনে পড়ে!





অশ্রুদিনের কবিতা


অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত 


আজকাল আর কিছুই মনে পড়ে   না!

সমস্ত শূন্যের মতো কি রকম, গোল-গোল হয়ে আসে!

মনে পড়ে না--- আমি তোমার কাছে ফিয়েছিলাম, না- রুমি তুমি আমার কাছে? 

বাইরে অসময়ের বৃষ্টি পড়ে--- 

জল কণিকা বাতাসে ওড়ে!

আমার খুব শীত করে! তোমাদের ওখানে বোধহয় হিমের নিচে পারদ!

আমার ভয় করে--- হেরে যাবার ভয় বা হারিয়ে যাবার ভয়!

ভয় করে--- পাতা ওড়ে! বসন্ত উৎসবের! প্রবীনারা নবীনা হয়ে ফেরেন উৎসবে! বয়সে--- বয়সেই থাকা ভালো! কি লাভ হলো বলো ফ্রেঞ্চ কাটে?

কাটা ঘুড়ি হয়ে আমি তো লটকে আছি দীর্ঘকাল ইয়ার্ডের পারঘাটে!

বালতিতে আজকাল একা একা জল ভরি--- কলের জাহাজ কিনি! ছেড়ে দেই--- স্টীমারের  বাঁশি শুনি!

 মন পড়ে থাকে--- প্রবাসে!

       গায়েত্রী স্পিভার্ক তে!




এপিটাফ


অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত


প্রণয় রহস্যের দিকে যে এলোমেলো রাস্তাটি গেছে আমি সেইদিকে যাই! 

মুগ্ধভাবে দেখি চারিদিক--- ফুলের বাগান দেখি মেঘ দেখি-, দেখি রূপসী চতুর্দশীর চাঁদ!

মৃত নক্ষত্রের আলো ছড়িয়ে  পড়ে আমার চারপাশে--- আমার  ভীষণ শীত করে--- রাস্তার  এককোণে রেস্তোরাঁ জুড়ে  বাজছে ড্রাম! গনগনে আগুনে আঁচে জ্বলছে মৃত কবির শব--- তার  চারদিকে উড়ে উড়ে  আসছে পরিযায়ী পাখির মতো নির্জন অক্ষর!

তুমি তাকে ধরো--- গড়ে নাও নিজের মত! নতুন প্রেমিকার  মতো তাকে দাও নিজস্ব  নিভৃতি!

    একটি চাতক পাখির ডাক  তোমার শরীরে--- তুমি তাকে জল দাও মাটি দাও!

   দাও তাকে প্রণম্য নিজস্ব  বিভূতি!




অনুগত সংলাপ


অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত 


       তুমি বলেছিলে---

অশ্রুনদীর মাঝখানে যে অভিমানের স্রোত সেখানে নৌকা বাঁধা যায় না!

বিশ্বাস করিনি আমি--- বিশ্বাসের মাটি খুঁড়ে গড়েছি প্রত্যয়ের সোনার বালা!

অনন্ত আশা নিয়ে গিয়েছি ঝোঁপ জঙ্গল ঘেরা মাধবীলতার বাগানে--- নির্বিকার ঔদাসীন্যে

বিঁছে কেটেছে তাকে সানন্দে!

       তবুও ফেরেনি সে !

আজ স্মৃতিটুকু ছাড়া অভিমানের মাটিতে আর কোনো কিছু পড়ে  নেই!

               শুধু 

পাজামার শেকড়েবাঁধা দড়িটুকু বলে দিচ্ছে এই না থাকাটাই সব!

      কী প্রবল যন্ত্রণাময়!

নির্জন পারঘাটের উপর ছড়িয়ে  পড়ছে গোধূলির অস্ত মাখা আলো! ভেজা পাটাতনের উপর ছড়িয়ে আছে কিছু রজনী জাগা মাধবীলতা ফুল!

তোমার প্রবাসে চলে যাওয়া  নিয়ে কোনো এপিটাফ লিখি না আজ!





কবিতার অন্বেষণে (৮৩-৮৮)


প লা শ  বি শ্বা স


( ৮৩ )

পরিযায়ী বলাকার দু'টো পা ছুঁয়ে যায় 

তোমার আমার মানস দীঘি সহসা যখন

টলটলে জলে পড়ে হিংস্র আঁচড়

তখন শান্তি খুঁজি দু'দণ্ড শ্বেতশুভ্র ডানায়

চেতনার অম্লমধুর বাতায়নে

                               


( ৮৪ )

দূরের আকাশটা দেখে যাই মাঝে মাঝে

ইচ্ছে করে গোলাপগুচ্ছ এঁকে দিই ওই আকাশের বুকে

তোমার আমার শেষ ঠিকানা নাকি শূন্যে

শূন্যই যখন উৎপত্তি আর বিনাশের কারণ

ভালোবাসি সেই শূন্যলোক 

                                          


( ৮৫ )

আঁখি জলে ভেসে দিগন্ত কুয়াশাময়

তবু হৃদয় গোলাপ ছুঁয়ে থাকে

ক্লান্তি নেই চোখের তারায়

আমার ঘুম ঘুম চোখেও সেই তো তুমি 

বনলতা বনলতা বনলতা

                              


( ৮৬ )

বেঁচে থাকার স্পর্ধা টেনে নিয়েছি বুকে

দুর্গম পথে হেঁটে যাওয়া শুধু

ক্লান্তিহীন আমিকে খুঁজে রাখি চোখের পাতায়

তোমার চোখে হলুদ ফুল ফোটাই

আমায় খোঁটা দিক যতোই বসন্ত আবীর

                                      


( ৮৭ )

পূবের আকাশে আজ তুমি

দু'চোখের তারায় যখন গোলাপ আর চন্দ্রমল্লিকা

কুয়াশা পথ ছেড়েছে আমায় দিগন্ত ছুঁতে

সোনারোদ্দুর কিরণ দিয়েছে শিশিরের ওপর

হিংসেতে যে জ্বলছে জ্বলুক 

                                      

( ৮৮ )

তুমি শীতের দুপুরে নরম রোদ্দুর

ফুল না ফোটা দিনে তুমি ফুলের মালা

তুমি বৃষ্টি না ঝরার দিনে ভোরের শিশির ফোঁটা

কথা না বলার মাঝে তুমি স্বপ্নের কবিতা

আর আমি তো শুধু তোমার আমি





কথা-কাহিনী


আ ল্পি  বি শ্বা স


                 (১)


কথা যখন কাঁটার মতো বেঁধে 

        ছড়ায় দেহে তীব্র সৌর দহন...

কথায় কথায় কথাই শুধু বাড়ে

কথার ঝাঁঝে অসুস্থ হয় মন।


                     (২)


মুখের কথাই সত্যি যখন

      মনের কথা শোনা বারণ

মনে মনে মনান্তর 

        এতেই বিষম কালযাপন

ইলশেগুঁড়ি হয়ে ঝরে 

তোর কথা যখন

ভিজে বাতাস স্মরণ করায়

           নরম কথার ধরণ


                   (৩)


তেতো কথা কটু কথা বাঁকা কথা যত

মনে ছড়ায় দগদগে ঘা, শুকায় না সে ক্ষত

কথার প্যাঁচে জব্দ নয় অকাট্য যুক্তি

ভিত্তিহীন কথার ভেতর খুঁজো না সত্যি।


                    (৪)


ভ্রূকুটি খেলে নীরস কথায়, থমথমে হয় মুখ

হাসি খেলে সরস কথায়, চিত্তে আনে সুখ


আনি মানি জানি না, কোনো কথা মানি না

আকথা কুকথা যত দীঘির জলে লীন

কথায় সুরের মালা গেঁথে

আমি বাজাই বীণ।


                    (৫)

                   

এমন কথা বলবো যাতে ঘটে সমন্বয়,

মনের সাথে মন জুড়ে এক সাঁকো তৈরি হয়।




মূল পাতায় যান।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল ও বাসন্তী সংখ্যা || ৯ চৈত্র ১৪৩১ || ২৩ মার্চ ২০২৫

চতুর্থ বর্ষ || চতুর্থ ওয়েব সংস্করণ || বাদল সংখ্যা || ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ || ২৯ জুলাই ২০২৫

পঞ্চম বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১১ কার্তিক ১৪৩২ || ২৯ অক্টোবর ২০২৫