পত্রসাহিত্য
মহানায়ককে লেখা
স্ব প্না ম জু ম দা র
শ্রদ্ধেয়, প্রিয় মহানায়ক উত্তম কুমার,
বহু বছর পরে আপনাকে একটি পত্র লিখবো ভাবলাম। অনেক দূরের দেশে এখন আপনার অবস্থান তো। অগত্যা চিঠি লেখাই শ্রেয় মনে করলাম। আপনি যখন ছিলেন এখানে, তখন ভালোই চিঠি লেখার চল ছিল। আপনিও যথেষ্ট অভ্যস্ত ছিলেন তাতে। যদিও তখন ওই কালো কালো দাদু ফোন ছিল কারো কারো বাড়িতে। বিশেষত আপনাদের তো ছিলোই। ওটা ছাড়া যোগাযোগে ভীষণ অসুবিধা।
এখন চিঠি লেখার আর তেমন চল নেই। সব ওই মোবাইল ফোনেই চলে। আপনি তো আবার এই যন্ত্রটি দেখে যাননি। আপনি চিঠি লেখাতেই বিশ্বাসী ছিলেন হয়তো। তাই এই চিঠি লেখা আপনাকে।
আপনি আমাদের মধ্যে আজ,না থেকেও আছেন, থাকবেন চিরদিন। এখনও আপনার অগণিত ভক্ত দর্শক আছেন যারা আপনাকে আজও স্মরণ করেন।আপনার ছবি টিভিতে দেখেন। বর্তমান প্রজন্মর অনেকেই আপনার পুরোনো সাদা কালো ছবি দেখে অণুপ্রাণিত হয়। আপনি আপনিই রয়ে গেলেন। আপনার মতো আর কেউ তেমনটা হলো না। মহানায়ক সম্মান আপনার জন্যই স্বযত্নে রাখা রইলো। হয়তো চিরদিনের জন্য।
আপনার অভিনীত ছবিগুলো এই যেমন সবার ওপরে, রক্ত তিলক, প্রিয় বান্ধবী, ধন্যি মেয়ে এমন অজস্র ছবি আছে সত্যিই মনে দাগ কাটে। আপনার অভিনয় ছিল প্রাণবন্ত। আপনার কথা বলার ভঙ্গিমা, গলার স্বর, চাহনি এ তো ভোলা যায় না।
১৯২৫ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর আপনার জন্ম হয়। শত বছর হলো আপনার এই পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্ক। অথচ মাত্র তেপ্পান্ন বছর বয়সে আপনি ইহলোকের মায়া কাটিয়ে পরপারের বাসিন্দা হলেন।
আজকের এই দিনে আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই।
আপনাকে নিয়ে এখনও মানুষের মনে উন্মাদনা আছে। এ বছর আরো বেশি কিছুই হবে বলে আশা রাখি। বাংলা চলচ্চিত্র জগত আপনাকে তো ভুলবে না কখনোই। আপনি চলে যাওয়ার পরে বাংলা চলচ্চিত্র শিল্প একটু ঢিলে ও একঘেয়ে হয়ে উঠেছিল। বর্তমানে খুব যে অবনতি হয়েছে এমনটা আমার অন্তত মনে হয় না। বেশ ভালো ভালো ছবি তৈরি হচ্ছে। আপনি থাকলে হয়তো আমরা আরও কিছু ছবি উপহার পেতাম। বড্ড তাড়াতাড়ি চলে গেলেন আপনি। এমনটা না হলেই ভালো হতো।
বর্তমানে, বিভিন্ন আলোচনায় আপনার কথা শুনি। আপনার নায়িকাদের মুখেই বেশি শুনতে পাই। সকলেই আপনার গুনগ্রাহী। আপনার ওগো বধূ সুন্দরী, অমানুষ, আনন্দ আশ্রম ছবিগুলো অনবদ্য। মনে দাগ কেটে যায়। অবশ্য সব ছবিই এরকম মাপের। অনবদ্য, সুন্দর।
আপনার প্রথম ছবি ১৯৫৩ সালে তৈরি সাড়ে চুয়াত্তর মহা নায়িকা সুচিত্রা সেনের সাথে অভিনীত। তখন আমি জন্মাইনি। তবে পরবর্তীতে বড় হয়ে দেখেছি। মহানায়কের প্রথম ছবি কি না দেখলে চলে?
আপনি তো শুধু অভিনেতা ছিলেন না। ছিলেন একজন পরিচালক, প্রযোজক, সঙ্গীত পরিচালনাও করতেন বলে জেনেছি।
তবে, আপনার অরুণ কুমার নামটিও বেশ সুন্দর। সূর্যের আলোর প্রতিফলন যেন এই নামে ছিল।
অনেক কথা লিখে ফেললাম। অবশ্য আপনার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে কোনো কথা লিখলাম না। যেখানে আছেন ভালো থাকুন। আমাদের ভালোবাসায় থাকুন।
আর বিশেষ কি লিখব, লিখতে তো অনেক কিছুই ইচ্ছে করে। এবারে শেষ করলাম।
ইতি
একজন ভক্ত, দর্শক মাত্র
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন