অণুগল্প
চিটিংবাজ
প্র দী প দে
কথোপকথন শ্রবণে আগ্রহী হয় মন, কিন্তু লুকিয়ে শোনা বা অনুমানে বলা হয়তো বা অন্যায়। ন্যায় নীতি আপাতত তুলে রাখলাম, কালি, কলম আর মনের তাগিদে।
-আরে আমার কথা ছাড়ুন। আমার কোন অভাবই নেই।
হো হো হো ভুবনমোহিনী হাসি, প্রথম জনের।
-সেতো বটেই। খুব ভালো কথা।
দ্বিতীয় জনের তারিফ।
-বউ মারা গেছে। আমি একা। দুটি বাড়ি একটা ফ্ল্যাট। কি করবো কাকে দেবো?
-দু'দুটো বাড়ি?
-না, না একটা বাড়ি আর একটা ফ্ল্যাট।
-ওহঃ ওহ...
-সারাজীবন প্রচুর কামিয়েছি পি ডাব্লু ডি র
কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার ছিলাম। বাইরে বাইরে থাকতাম। শেষ জীৰন পেপার ডকুমেন্টারীর উদ্দেশ্যে এই কলকাতায় আসা। না হলে কলকাতায় কি মানুষ থাকে?
-আচ্ছা। আচ্ছা। আপনার ছেলে মেয়ে?
-ছেলেতো বিশাল কোম্পানীতে কাজ করে। বাইরে। প্রচুর মাইনে। মেয়েও চাকরি পেয়ে যাবে। সেন্টজেভিয়ার্সে, ডবল এম এ। গোলপার্ক থেকে স্প্যানিশ ভাষায়। ফরেনে চাকরী পেয়ে যাবে।
-তাহলে বাড়িতে রান্নবান্না?
-কাজের লোক সব করে দেয় আমি গাছের পরিচর্যা করি। ব্যায়াম ধ্যান করি রোজ। বাড়ি আর ফ্ল্যাটটা ছেলে মেয়েকে দিয়ে দেবো।
-আমার ছেলেও তো কলেজে পড়ে। ওই কলেজটি কেমন?
-ছ্যাঃ ছ্যাঃ ওটা বাজে কলেজ…
বলতে বলতে প্রথম লোকটি ভ্যানিশ। দ্বিতীয় জন যখন তাকে খুঁজতে ব্যস্ত তখনই তৃতীয় জনের প্রবেশ,
-দাদা ওই চিটিংবাজটা কোথায় গেল?
-চিটিংবাজ?
-তা ছাড়া কি? দু বছরের বাড়ি ভাড়া বাকী তার উপর আমার বন্ধুর থেকে ঢপ মেরে অনেক টাকা ধার নিয়েছে, এখন দূর থেকে আমাকে দেখেই পগারপার! খুঁজে তোকে পাবোই…
শালা পালাবি কোথায়?
অভিমানী প্রেম
মি ঠু ন মু খা র্জী
নিবিড় প্রেম বড় কষ্ট দেয়। এক মুহুর্তের বিচ্ছেদ হৃদয় মেনে নিতে পারে না। একটি হৃদয় অন্য হৃদয়ের সাথে আস্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে। প্রিয় মানুষের জীবনের প্রতিটি বিষয়কে নিজের করে অনুভব করে। আবার কখনো কখনো নিবিড় প্রেম একটু ভুল বোঝাবুঝিতে ও অভিমানে একে অপরকে ত্যাগও করতে পারে। ত্যাগ করলেও সে প্রেম একেবারে নষ্ট হয়ে যায় না। অনন্তকাল ধরে ছাই চাপা আগুনের মতো অন্তরের অন্তঃস্থলে বিরাজ করে। এমন অনেক প্রেম আমি দেখেছি। তারই একটা আজ শোনাবো।
কেশব ও রাধার প্রেম। আহা ভোলার মতো না। আমি রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের কথা বলছি না। এ হল আমার গ্ৰাম রাধেশ্বরপুরের রাধামাধব চক্রবর্তীর ছেলে কেশব চক্রবর্তী ও যুগল মুখার্জীর মেয়ে রাধিকা মুখার্জীর প্রেম। সারা গ্ৰাম এদেরকে কেশব ও রাধা নামেই চেনে। বৃন্দাবনের রাধাকৃষ্ণের প্রেমের ন্যায় এ প্রেমও অত্যন্ত পবিত্র। একই সঙ্গে কেশব ও রাধা গ্ৰামের পাঠশালায় পড়তে আসত । তখন তাদের বয়স ছিল যথাক্রমে আট ও সাত। এই সময় থেকেই তাদের বন্ধুত্বের সূত্রপাত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। আমার চোখের সামনে দেখতে দেখতে তারা আঠারো পেরিয়ে যায়। ছোট ছোট বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে খুনসুটি, রাগ, অভিমান লেগেই থাকত। আবার কেশব কখনো কৃষ্ণের মতো রাধিকার মান ভাঙানোর চেষ্টা করত । তাদের এই মেলামেশা গ্ৰামের মানুষেরা ভালো চোখে দেখতো না। তাদের বাবা-মাকে বলে অনেক বার তাদের আলাদা করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারে নি। কেশবকে একদিন দেখতে না পেলে রাধার দুচোখে যেমন অশ্রুধারা ঝরে পড়ত, তেমনি কেশবেরও। একজন অন্যজনকে কথা দিয়েছিল- "বাঁচলে একসাথে বাঁচবো, মরলেও একসাথে মরব।" একদিন অসিত নামের একটি ছেলের সঙ্গে রাধিকার বিয়ে হয়ে যায়। বাবার সম্মান রাখতে ও কেশব সেই সময় তাকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় অভিমানে ও কষ্টে বাল্যপ্রণয়কে ত্যাগ করেছিল রাধিকা। বৃন্দাবন ছেড়ে রাধাকে কাঁদিয়ে শ্রীকৃষ্ণ যেমন মথুরায় গিয়েছিলেন, ঠিক তেমনি কেশবকে কাঁদিয়ে রাধিকা গিয়েছিল তার শ্বশুর বাড়ি। প্রেম তবুও মরে নি...।
গল্প না সত্যি
অ সী ম পা ঠ ক
বাসস্টপে কুড়ি মিনিট দাঁড়িয়ে, রুটের শেষ বাসের এতো লেট হবার কথা নয় এখন তো সমস্যাই সমস্যা। এবার কি করবে বিনয়? শহরের নামকরা হাসপাতালে বাবার চিকিৎসা চলছে। বাড়ি ফেরাটা দরকার, কাল পরশুর মধ্যে কিছু টাকা ডিপোজিট করতে হবে। এমন সময় খবর এলো গাড়ি আজ আসবে না, বিনয়ের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। টাকার যোগাড় করতে হবে, আর তাছাড়া হাসপাতালে একজন ছাড়া থাকতে দেয়না রোগীর সাথে, স্ত্রী সবিতাকে রেখে সে ফিরছে। বাড়িতে মা এর কাছে বাচ্চা দুটোকে রেখে এসেছে, এমনিতেই টানাটুনির অভাবের সংসার, কোনরকমে দিন গুজরান। পকেটে স্বচ্ছ টাকাও নেই যে গাড়ি ভাড়া করে সে বাড়ি ফেরে। এমন সময় একটা কালো স্করপিও গাড়ি তাকে সাইডে রেখে পেরিয়ে যায়। কিছুদূর গিয়ে গাড়িটা দা়ঁড়িয়ে আবার ব্যাক করে। গাড়ির কাঁচ নামিয়ে বিনয়কে হাঁক পাড়ে চশমা চোখে কাঁচা পাকা দাড়িতে তারই সমবয়সী মধ্য চল্লিশের আরোহী। বিনয় সামনে গিয়ে চিনতে পারে না। আরোহী বিনয়ের কাঁধে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে 'কিরে চিনতে পারলি না, আমি অমর...' বিনয় চমকে ওঠে, অমরের কথা সে সব জানে। কোলকাতার মাফিয়া চক্রের কেউকেটা একজন বস। তার নামে সতেরোটা মার্ডার কেস, চারটে ব্লাস্ট কেস ঝুলছে। বিনয়ের গা ছমছম করতে শুরু করে। ক্লাশ ওয়ান থেকে টেন অবধি একসাথেই পড়াশোনা। অমর বলে, ভয় পাচ্ছিস গাড়িতে ওঠ, বাড়িতে ছেড়ে দেবো, বলে একপ্রকার জোর করেই তাকে গাড়িতে তোলে। সামনের সিটে অমরের দেহরক্ষী। কিছু তফাতে আর একটা গাড়ি। অমর বলে ওটাতে ওর পোষা লোকেরা আছে। গাড়িতে বসেই অমর শোনে বিনয়ের বাবার অসুস্থতা ও আর্থিক অসুবিধার কথা। কিছু সময় পর বিনয় ধাতস্থ হয়ে বলে, 'এ লাইনে কেনো এলি, তুই তো খারাপ ছিলি না।' গলা ছেড়ে হেসে ওঠে অমর, কিছু পরে বলে, 'সব ভাগ্য রে, নাহলে তোর মতো ক্লাশে বরাবরের ফার্স্ট ছেলে আজ একটা কেরানীর চাকরি করে!' বিনয়ের সেই সাবেকি পুরানো বাড়িটা অমরের চেনা। কতোবার এখানে বিনয়ের মায়ের বানানো পিঠেপুলি খেয়ে গেছে। কথায় কথায় বাড়ির সামনে গাড়ি এসে পড়ে। বিনয় নামার সময় অমরকে চা খেয়ে যাবার কথা বলতে গিয়েও থমকে যায়। উল্টে অমরই দু'হাজার টাকার একটা নোট বাড়িয়ে বলে, 'এটা তোর বাচ্চাদের জন্য চকোলেট কিনে দিস।' বিনয় আমতা আমতা করে নোটটা নেয়। গাড়ি দ্রুত বেগেই বেরিয়ে যায়। বিনয় হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো যেনো!
স্নান সেরে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়, বিছানায় শুয়ে পড়তেই কয়েকদিনের অনিদ্রা ক্লান্তিতে ঘুমে ঢলে পড়ে সে।
রাত তখন কটা মনে নেই দরজায় টোকা শুনেই দরজা খুলে চমকে যায় বিনয়। একি এতো রাতে আবার অমর তার সামনে! একটা চেন দেওয়া ব্যাগ বিনয়ের দিকে বাড়িয়ে অমর বলে, 'এটা রাখ, কাকু র চিকিৎসা করা, বাড়িটা মেরামত করাবি আর তারপর বাকী যেটা বাঁচবে অনাথ আশ্রমে দিয়ে দিস।'
অমর আর কোন কথা বলার অবকাশ না দিয়ে ঝড়ের বেগে চলে যায়, দরজা বন্ধ করে বিনয় রুমে এসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দুটো বেজে দশ মিনিট। ব্যাগটা আলমারিতে রেখে আবার সে ঘুমিয়ে পড়ে। খবরটা সকালেই পায় বিনয়। খবরের কাগজ নিউজ চ্যানেল সব জায়গায় ব্রেকিং নিউজ রাত একটায় হাইওয়েতে গুরুতর দুর্ঘটনায় নিহত মাফিয়া ডন অমর মন্ডল। এ কি করে সম্ভব! কিন্তু কার কাছেই বা জানতে চাইবে বিনয় যে আসল সত্যিটা কি? মরার পরেও উপকার করে গেলো কৈশোরের বন্ধু? নাকি সে আবার ফিরে আসছিলো টাকা নিয়ে বিনয়কে দুঃসময়ে সাহায্য করতে?? উত্তর নেই। যেটুকু আছে তা হলো অমরের জন্য একফোঁটা চোখের জল।
সুখি হওয়ার চেষ্টা
প্রী ত ম স র কা র
প্রথমে প্রাইভেট গোয়েন্দা লাগানোর কথাই ভেবেছিল অর্নব। শেষে অবশ্য সেই পরিকল্পনা বাতিল করে নিজের কলেজ জীবনের বন্ধু সুরজিতের পরামর্শ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টা আলোচনার জন্য আজ সন্ধ্যায় পার্ক ষ্ট্রীটের এই রেঁস্তোরায় সুরজিতকে ডেকেছে অর্নব। আগামী নভেম্বরে অর্নবের বিয়ে। তাঁর যেহেতু নিজের পছন্দের কোন মেয়ে নেই- তাই বাড়ির লোকের ইচ্ছায় তাঁদের পছন্দ করা পাত্রীকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে অর্নব। পাত্রী অর্নবের দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের পরিচিত। সেই সূত্রে পাত্রী পছন্দ থেকে পরিচয়- সবই একবারে মিটে গিয়েছে। দুজনের সেলফোন নম্বরও বিনিময় হয়েছে। কিন্তু সমস্যাটা দেখা দিয়েছে এরপরেই। নিজের অফিসের কাজের ফাঁকে যখনই অর্নবের একটু সুদেষ্ণার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে হয়, সেলফোনে কল করলেই সুদেষ্ণার ফোন 'এনগেজড’ পাচ্ছে। অথচ অর্নব জানে, সুদেষ্ণা সল্টলেকের বেসরকারি অফিসে যে পোষ্টে চাকরি করে, সেখানে ফোনে ব্যস্ত থাকার কথা নয়। প্রথমে বিষয়টিকে পাত্তা না দিলেও, এখন অর্নবের সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। নিজেদের মধ্যে ব্যাপারটা আলোচনার জন্য সুদেষ্ণাকে পার্ক ষ্ট্রীটের এক কফি শপে ডেকেছিল অর্নব। সেখানে সুদেষ্ণার সেলফোন দেখার সুযোগ পেয়েই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গিয়েছে। ভেবেছে, বাড়িতে বাবা-মাকে ‘মেয়ের চরিত্র ভালো নয়’– এই অপবাদই বিয়ে থেকে সরে আসার পক্ষে যথেষ্ট। নিজে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায়, আজ সুরজিতের সাহায্য নিতে হচ্ছে! সুরজিত একটু দেরি করে নির্দিষ্ট ঠিকানায় অর্নবের সঙ্গে দেখা করতে এসেই বললো, “কি সমস্যা হলো রে! আমাকে এভাবে তলব করলি! আমার জন্য অন্ততঃ দুটো লার্জ হুইস্কির অর্ডার দে।”
অর্নব সুদেষ্ণার সব কথা খুলে জানালো সুরজিতকে। সঙ্গে এটাও জানালো, যেদিন সুদেষ্ণাকে পার্ক ষ্ট্রীটের কফি শপে ডেকেছিল, টেবিলের উপরে নিজের পার্স ও মোবাইল ফোন রেখেই সুদেষ্ণা ওয়াশরুমে গিয়েছিল, তখন সুদেষ্ণার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে সেলফোনের কল লিস্ট ঘেঁটে দেখেছে অর্নব! সেলফোন অসংখ্য ছেলেদের নম্বরে ভর্তি। প্রত্যেকের সঙ্গে নিয়মিত অনেকক্ষন ধরে কথা চলে! অর্নব বললো, “আমার মনে হচ্ছে, সুদেষ্ণার অন্য কোন ছেলের সঙ্গে প্রেম আছে! এই কারনেই ওঁকে সেলফোনে এনগেজড্ পাই। আমি তো ভাবছি, বিয়েটাই করবো না!” সুরজিত হুইস্কির প্রথম পেগটা শেষ করে গ্লাস টেবিলে নামিয়ে বললো, “আরে বোকা! সুদেষ্ণা হয়তো প্রেমট্রেম কিছু করছে না! তোকেই ও ভালোবাসে। তুই সুদেষ্ণার সাথে এ নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করে একটা ওপেন পার্টি দে। সেখানে দুপক্ষের বন্ধুরাই উপস্থিত থাকবে। যদি সুদেষ্ণার অন্য কোন ছেলের প্রতি দুর্বলতা থাকে, তবে সেদিনই এই শর্মার চোখে ঠিক সেটা ধরা পড়ে যাবে।”
টাইম মেশিন
সু জি ত চ ক্র ব র্তী
কতদিন পর দুই বন্ধু আজ আবার সামনাসামনি বসে আছে! তমাল অনুপমকে বলল, "তুই এখন কত বড় বিজ্ঞানী হয়েছিস। অর্থ, যশ কোনো কিছুরই অভাব নেই! তবু কি তোর ইচ্ছা করে না আবার ছোট হয়ে আমাদের সেই চিলড্রেন'স পার্কে ফিরে যাই?" অনুপম বলল, "সত্যি, খু-উ-ব ইচ্ছা করে রে, সেই স্লিপে উঠে 'সোঁ-ও-ও' করে গড়িয়ে পড়ি সোজা আমাদের হারিয়ে যাওয়া শৈশবে! যদি একটা টাইম মেশিন পাওয়া যেত...!"
তমাল বলল, "আর সেই ঢেঁকিতে চড়া! ঢেঁ-কুঁচ কুঁচ, ঢেঁ-কুঁচ-কুঁচ। তোর উত্থান, আমার পতন। এরপর যখন আমি উঠব, তুই পড়বি। টাইম মেশিনে তো সবই সম্ভব!"
অনুপমের মনে পড়ে যায় পুরনো দিনের কথা। বাবা ছিল না অনুপমের। বড় হয়ে সংসারের হাল ধরবার তাগিদ ছিল তার, তাই হয়তো সমবয়সী আর পাঁচ জনের মতো ছিল না তার শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো। ওরা তিনজনেই এক সাথে বড় হয়ে উঠেছে--- অনুপম, তমাল আর মধুরিমা, যে এখন তমালের স্ত্রী। ত্রিকোণ প্রেমের গল্পে, সিনেমায় যেমনটা প্রায়শই দেখা যায় ঠিক সেইরকম না হলেও হয়তো খুব স্বাভাবিক ভাবেই ওরা দু'জনেই একসাথে মধুর প্রেমে পড়েছিল। এরপরের ঘটনা খুব স্বাভাবিক, জীবনে এমনটা আকছার ঘটে যায়। অনুপমকে ব্যর্থ প্রেমিক বলা যেতে পারে আর সেই কারণেই জিতে গেল তমাল রায়।
অন্যান্য অনেক সার্থক প্রেমিকের মতনই তমালবাবু রোজ সকালে চা খেয়ে বাজারের ব্যাগ হাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পাশে রাধুর দোকানে একটা সিগারেট ধরিয়ে টুক টুক করে নিধুবাবুর বাজারে যায়। তিন দোকানে যাচাই করে আড়াই শো গ্রাম ঢেঁড়শ আর হাফ কেজি ট্যাংরা নিয়ে ফিরে এলে তাকে মধুর বাণী শুনতে হয়, "বাজার করার কী ছিরি! "দাড়ি কামাতে কামাতে তমাল বলে, "হাতে বেশি টাইম নেই। তাড়াতাড়ি কিছু করে দাও যা হোক!"
অনুপমের জীবন যাপন একেবারে অন্য রকম । ভীষণ মসৃণ, গোছানো এবং সুপরিকল্পিত। কাজ অনেক, কিন্তু সে কাজে ক্লান্তি নেই বরং আনন্দ আছে। জীবনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ আছে, সময় নেই। অভিযোগ নেই এই কারণে যে সে দেশে এটাই কাঙ্ক্ষিত এবং স্বাভাবিক, নারী পুরুষ সবার জন্য। শুধু কখনো রাতে একা একা লাগে। তখন মনে হয়- কার জন্যে এইসব?
এবার অনুপম বলল, "জানিস তমাল, টাইম মেশিন আমাদের অতীত ফিরিয়ে দিলেও ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কখনও পরিবর্তন করতে পারে না। তাই মাঝে মধ্যে ভাবি, "এই বেশ ভাল আছি!"
বন্ধুর চোখে চোখ রেখে তমাল বলল, "আমাদের তো অনেক বয়স হয়ে গেল। তুই আর কবে বিয়ে করবি অনুপম? তুই যে বললি এবার দেশে আসছি এবং নিজের জন্যে কিছু ব্যক্তিগত ভাবনাও আছে ওখানে গিয়ে। তা 'পাত্রী চাই'- বিজ্ঞাপন দিয়েছিস নাকি কোথাও?"
এই সময় ঘরে ঢুকেছে তমালের ছেলে তিতাস। এবছর মাধ্যমিক পাশ করেছে। লম্বা, সুপুরুষ আর ভীষণ পুরুষালি চেহারা ওর। সঙ্গে কেমন একটা লাজুক হাসি তাকে রোমান্টিক করে তুলেছে। সে বেশিক্ষণ সেখানে না দাঁড়িয়ে ভেতরে গিয়ে মায়ের সাথে ফিসফাস শুরু করে দিয়েছে ততক্ষণে। দেখে শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস অনুপমের পেট থেকে উঠে বুকে এসে আটকে রইল। সে বলল, "ভেবেছিলাম আগে। এইমাত্র তোর পুত্রকে দেখে মত পরিবর্তন করে ফেললাম। মনে হলো, ইট'স টু লেট। নাহ্, বিয়েটা সময় মতো সেরে ফেলা দরকার ছিল। যাক্ গে! সবার কপালে তো ভগবান সব কিছু লেখেন না।"
অভিক ও ছন্দা
বি শ্ব না থ রা হা
প্রেমে বুক কেঁপে ওঠেনি কারও এমন নয়। বিশেষতঃ মনের পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা হৃদয়ের কাঁপন, বৃৃদ্ধের কাছে যেমন স্মৃতিতোরঙ্গে রাখা নিস্পন্দ অতীতের মত, তেমনি যুবাকিশোর হলে, তাড়পত্রে মলয়মরুৎ লাগলেই যেন মরুঝঞ্ঝা! হৃদরোগের অর্ধেক রোগ কি এখান থেকেই শুরু! অভীক ফস করে ছন্দাকে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল।
সেদিনটা ছিল দুপুর। বৃষ্টির বেলা। বনবিতানের ভিতরে একটা শেডের নীচে বসে ছন্দা দুটো কাক'কে দেখছিল। একটা কাকভেজা কাক আর একটা ভিজে একসা কাককে খাইয়ে দিচ্ছে! কী নিষ্ঠার সাথে সে খাওয়ানো! ওরা কী মা ও সন্তান! বাৎসল্যরসে ওরা বুঝি মানুষকে ছাড়িয়ে যায়! নাকি যুগলজুটি! বৃষ্টি উপেক্ষা করে এমন তুঙ্গ অন্তরতমতা! ছন্দার খুব বিরল লাগল দৃশ্যটা!
ছন্দা জানে অভীকের প্রশ্নের একটা উত্তর দিতেই হবে! উত্তর না দিলে মনের হিল্লোল ছুঁড়ে ফেলে ভেজা পাতার মত পড়ে রইবে সে! এই মানুষটাকে বাঁচিয়ে রাখা, কোথায় যেন তার দায়! ছন্দার মন বলে উঠল, সম্পর্ক আলোর মত। তবে বড় অভিমানী। এমনি জ্বলে না, জ্বালাতে হয়! জ্বালিয়ে রাখতে হয়।
ছন্দা অভীকের চোখে তির্যক করে তুলল নিজের দৃষ্টি, চোখের তারায় সাত সাগরের ঢেউ, মেঘের মত ওড়নাচুলের আঁচলে ঢেকে ফেলল অভীককে!
-এই যে দুটো কাককে আমি কিছুক্ষণ ধরে দেখছি, ভাল করে তুমিও দেখ, এরাও কিন্তু দুজনে দুটি হৃদয়ের মালিক! কিন্তু দেখ, এদের কোনও তাড়ন নেই। পাকা পাকা এত কথা বল, একটু ছেলেমানুষ থাকলেই তো আর ল্যাঠা থাকে না!
অভীক আসমানী হাসিতে বোল তুলে দিল আসমুদ্রে।
লহরী ও লহরায় মথিত হল প্রকৃতি।
মরা স্বপ্ন
মো য়া ল্লে ম না ই য়া
দরিদ্র রতন সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর যেটুকু সময় পায় মনে মনে বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু বড়লোক হতে গেলে যে অনেক টাকা চাই, তা তো তার নেই! রতন মাথা চুলকায় আর ভাবতে থাকে, কিন্তু কোন সমাধান সে খুঁজে পায় না। একটা সময় হতাশ হয়ে সে নিজেই বলে ওঠে, "নাহ, গরীবের বড়লোক হওয়ার কোন চান্স নেই।"
উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর বাবা তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। তারপর বছর ঘুরতে না ঘুরতে সে নিজেই বাচ্চার বাবা হয়ে ওঠে। এভাবে দরিদ্র সংসারে পাঁচ বছরে চার-চারটে সন্তানের জন্ম দিয়ে রতন যেন সংসারের ঘানিতে উদায়স্ত পরিশ্রম করা এক কলুর বলদ! সুখ, শান্তি, স্বপ্ন… তার কাছে যেন বহু বছর আগে ফেলে আসা কোন শৈশব স্মৃতি।
সেদিন এক সঙ্গে কাজ থেকে ফেরার পথে রফিক বলল, "রতন, সব দিন আমি লটারি কাটি কিন্তু কিছু পড়ে না। আজ তুই আমার হয়ে কেটে দে তো? রতন কখনো নিজে লটারি কাটেনি। সে বরাবর দেখে এসেছে রফিক বা অন্যরা অনেক টাকার লটারি কাটে। তবে কেউ কখনো কিছু পেয়েছে কিনা, সে জানে না। তাই রফিকের কথায় কৌতুহলী রতন 'j' সিরিজের কুড়িটা টিকিট বেছে নিল। পরদিন রেজাল্ট৷ যথারীতি রতন খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়েছে, হঠাৎ সকাল আটটায় উত্তেজিত রফিকের ফোন, ---দোস্ত, আল্লাহর রহমতে আমার টিকিট লেগে গেছে। তোর হাতে যাদু আছে দোস্ত। আমি পঞ্চাশ লক্ষ টাকার মালিক!
---রতন চমকে ওঠে। নিজের মনে সে বলে ওঠে, "প-ঞ্চা-শ লাখ! মানে রফিক এখন বড়লোক!"
সেই থেকে রতনের যেন স্বপ্ন পূরণের নেশা লেগে গেল। সে যেটুকু রোজগার করে প্রত্যেকদিন সেটুকু দিয়ে লটারির টিকিট কাটে আর অপেক্ষা করে। কিন্তু সেই অপেক্ষার আর শেষ হয় না! এভাবেই একদিন সবাই দেখলো, একটা ন্যুব্জ শরীর বাটি হাতে লটারির দোকানের সামনে বসে ভিক্ষে চাইছে, "বাবু, দু'টাকা দেবেন মুড়ি খাবো !"
অভিশপ্ত স্থান
স ব্য সা চী ( ডাঃ সা য় ন ভ ট্টা চা র্য )
গুপ্ত বাবুর পিছনে সবাই লেগেছে। এল কারণ, তিনি সবাইকে আপিসের কাজে ব্যস্ত থাকতে বলেন। তাঁর মতে, এতে আত্মা দীপ্ত থাকে। তবে সবাই তো তাঁর মতো নয়, তাই এক লপ্তে সবাই মিলে বড় সাহেবের কাছে গুপ্তবাবুর নামে অভিযোগ জানায় যে তিনি অনেক খাটাচ্ছেন তাদের। আর বড় সাহেবও এদের কথায় প্রভাবিত হয়ে যান। গুপ্তবাবুর পুজোর ছুটি মাঠে মারা যায়। সপ্তমীর দিনেও কাজ করতে হয় তাঁকে।
বড় সাহেব যে সন্দীপ্তার সাথে একটা সম্পর্কে রত আছেন, সেটা গুপ্তবাবু জানতে পারলেন। বলতে গেলে সন্দীপ্তা বড়সাহেবের আপ্ত সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। গুপ্তচরও বলা যায়। তাঁর অবাক লাগলো, নিজে এতটা নীচ হয়ে, হপ্তার পর হপ্তা কুকাজ করেও কী করে কেউ অধস্তন কর্মচারীদের কথায় নেচে এরকম অকাজ কুকাজ করতে পারে। এদের বিবেকে বাধে না। অন্তত সন্দীপ্তাকে অন্যরকম ভেবেছিলেন গুপ্তবাবু। আপিসটাকে এই সব লোকেরা মনোরঞ্জনের আখড়া বানিয়ে নিয়েছে। পরনিন্দা পরচর্চা নিয়ে ব্যাপ্ত থাকতে ভালোই পারে এরা। বড় সাহেবের সুনজরে থাকলেই সব কাজ হাসিল হবে। কেল্লা ফতে হয়ে যাবে।
এখন আর এসব নিয়ে ভাবেন না গুপ্তবাবু। গা সওয়া হয়ে গিয়েছে তাঁর।।
অভিশপ্ত বর্ষা
জ য় ন্তী
সেদিন বর্ষার রাত ছিল...
সবারই তো প্রিয় বর্ষা। কিন্তু আমার কাছে অভিশপ্ত। আমাদের অনেক বছরের লড়াই করে তোর আমার বিয়েটা পূর্ণতা পেয়েছিল। তোর সব জেদ আবদার জোর, সবই তো আমি, আমাকে নিয়ে...। তোর জেদ রক্ষা করতেই সেইদিনের বর্ষার রাতে... টিপ টিপ বৃষ্টিতে কি আনন্দে দুজনে বেরিয়ে পড়েছিলাম তোর পছন্দের চকোবার আইসক্রিম খেতে খেতে আসছিলাম, বাড়ির কিছু দূরে গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা হায়নার মত ঝাঁপিয়ে পড়লো ওই পাঁচজন। পারিনা তোকে ওদের থাবা থেকে বের করে আনতে সেদিন। আমার চোখের সামনে তোকে...!! কি অসহ্য যন্ত্রণা!! কাউকে ডাকতে পারিনা আমার মুখ হাত বেঁধে দিয়েছিল। বর্ষা দেখলে তোর চিৎকারে শিউরে উঠি আজো ...! অনেকটা বছর পেরিয়ে এসেও ঝুল-বারান্দায় গিয়ে রাস্তার দিকে, বৃষ্টি পড়লেই অপেক্ষায় অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি, যদি তুই আসিস! খুব অসহায় আমি। তোর শূন্যতা বড্ডো একা করে দিয়েছে, অপরাধ বোধ কুরে কুরে খাচ্ছে, কেন তোকে বাঁচাতে পারিনি।
তোর পাশের জায়গাটা রাখিস, তুই শুধু সহধর্মিণী ছিলি না অপু। আমার পুরো পৃথিবী ছিলি রে। জানিস, তোর শূন্যস্থান বিরাট ঊষর খাদে আজ পরিণত।
নদী আমার নদী
ক ল্পো ত্ত ম
সামনেই জলাধার থাকলে নদীর অবস্থা এমনই হয়। জমে ওঠে দূর দূরান্ত থেকে ধুয়ে আসা বালি, মাটি, আবর্জনাসমূহ। জমে ওঠে সেই সব আবর্জনার সঙ্গে বয়ে আসা বিভিন্ন গাছের বীজ। সেইসব বীজ অঙ্কুরোদগম হয়ে বেড়ে ওঠে ধীরে ধীরে। তখন বুজে ওঠে নদীপথ। প্রবাহপথ সরু হতে হতে বোঝা যায় না নদী বলে। আমাদের গ্রামের সামনে কুমারী নদীর অবস্থাও ঠিক তাই। দেড় দু' কিলোমিটারের মধ্যে জলাধার। সেই জলাধারের সঙ্গে নদী এসে মিশেছে আমাদের গ্রামেই। গ্রামের উত্তরপূর্ব সীমানায়। তাই, এই জায়গাটাতে অনেকটাই সরু হয়ে এসেছে নদীটা।
কয়েক বছর আগে পর্যন্তও অনেকটাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছিল। এতখানি মাটি জমতো না জায়গাটাতে। তখন ধবধবে পরিষ্কার বালি। শুকিয়ে গেলেই বাচ্চাদের ছুটোছুটির জায়গা। আমরা বন্ধুরা স্কুল ছুটির পর গরু ছাগল চরাতে গিয়ে খেলা করতাম। পদ্মা, শ্যামসুন্দর, শুকদেব, সহরই নদীর চরে গরু-ছাগল ছেড়ে দিয়ে বালুচরে বসে খেলতাম। ধরা গুডু, কাঠি লুকোলুকি, টিলা তৈরি এইসব। কখনো কখনো মাল-কাঁকড়া খুঁড়তাম। বালির ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া শাদা শাদা সাত-আট হাত লম্বা ঘাস খুঁড়তাম। গেঁটেঘাস। নিজের নিজের গরু ছাগলকে খাওয়াতাম। সেই নদীর সঙ্গে জন্মান্তরের টান। আগেও ছিল। এখনও আছে। এখন সেই টান গড়িয়েছে বর্তিকার দিকেও। বর্তিকাও পছন্দ করে নদীটাকে। নদীও পছন্দ করে বর্তিকাকে। নদী যাওয়ার কথা বললেই লাফিয়ে ওঠে বর্তিকা। বর্তিকা তীরে এলেই লাফিয়ে ওঠে জল। নদীর জল। পাথরের গায়ে ধাক্কা খেতে খেতে ধাক্কা খায় বর্তিকার পায়ে। ভিজে যায় বর্তিকা।
------আজ কোথায় স্নান করবি?
তেল সাবান নিয়ে যেতে যেতে বর্তিকাকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলে----- নদীতে।
------নদীতে কোথায়?
------বহি বহি। বহি বহি স্নান করবো।
পুরনো ব্রিজটা ভাঙ্গা হয়েছে। ধ্বংসের চিহ্ন স্বরুপ পড়ে রয়েছে ঢালাইয়ের টুকরো, পাথরের চাঁই, ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাওয়া তারের জালির খন্ডাংশ। কোথাও কোথাও মাটিতে দেবে যাওয়া রডের টুকরো। সেই ব্রিজ নতুন করে গড়ে তোলার কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যসমূহ। তার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে জল। জীবনধারা।
আমরা নদীতে নামি। ফুরফুরে বালির ওপর বয়ে চলা গোড়ালি জলে ছেড়ে দিই বর্তিকাকে। হাঁটু জল বা কোমর জলে স্নান করি আমরা। সে তখন দৌড়ে বেড়ায়। জলের ভেতর খোঁজে মাছের দল। ঐ তো ছোটো ছোটো মাছ। সাঁতার কাটছে। তোর মতোই ছোটো ছোটো।
-বাবা ধরবি? সে জানতে চায় আমার কাছে।
-না ধরবো না। ওদের মায়েরা কাঁদবে।
-কাঁদবে? নিশ্চিত ভাবে জানতে চায় আমার কাছে।
-হ্যাঁ, কাঁদবে। ধরে নিলেই কাঁদবে।
মায়ের দিকে এগিয়ে যায় সে। সাবান গুঁড়ি দিয়ে বালতিতে ভিজিয়ে রাখা কাপড়গুলো থেকে ছোটো ছোটো প্যান্ট জামাগুলো বার করে টেনে টেনে। নিজেই শুরু করে কাচতে।
-এই চুবিয়ে দিবি না। আগে কাচতে দে। নোংরাই থেকে যাবে।
ধমক দেয় ওর মা। এক বিন্দুও না শুনে পূর্ববৎ চালিয়ে যায় সে। আরও বেশি বেশি কাপড় নিয়ে ফেলতে থাকে জলে। জামাটা বয়ে যাওয়ার উপক্রম হতেই চটাস করে বসিয়ে দেয় এক চড়।
-ভ্যাঁ-এ-এ-এ।
কোলে নিই তাকে।
-মারছো কেন?
-তবে কি চুমু খাব? জামাটা বয়ে যাবে না?
-আমি তো দেখছি। আর বয়ে গেলেই কি করবে, বাচ্চা না? বিরক্তির সঙ্গে বলে ওঠে ও------ বাচ্চা! সব জানে ঢিবরিটা।
সে কি জানে, জামাটা বয়ে গেলে কি হবে? সে কি আর জানে, তারের টুকরোতে কেটে যাবে পা? সে বিপদ জানে না। লাভ লোকসান জানে না। আর যারা যা করে, সেগুলোই করতে হবে তাকে। ক'দিনের জীবনে এই তার জীবন বোধ!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন