কবিতা





স্বপ্নখামার

শ্যা ম লী  ব্যা না র্জী 


যে পারে, সে আপনি পারে, 
আপনি পারে ফুল ফোটাতে,
শত বাধা কাটিয়ে উঠে
বিপদ থেকে উঠে দাঁড়াতে।

নাইবা পেলো সার-মাটি-জল 
নাইবা পেলো রবির আলো,
নিজের মনের শক্তি দিয়ে
চতুস্পার্শ ভরিয়ে দিলো।

ফুলের সৌরভ পড়ল ছড়িয়ে
রূপে সবাই মুগ্ধ হলো,
পুষ্পপাত্রে ঈশ্বরের পায়ে
পুষ্প-জীবন সার্থক হলো।

আগাছা হোক, কুঁড়ির ভিতর 
লুকিয়ে থাকে সম্ভাবনা,
ইচ্ছাশক্তি প্রবল হলে,
প্রকাশ পায় আত্মচেতনা।

স্বপ্নটুকু সাথী করে 
চলতে হবে জীবনপথে,
আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রমে 
ঘুচবে আঁধার, আলোর রথে।

প্রতিকূল পরিস্থিতি
অনুকূলে আনতে হবে,
হার মানলে চলবে নাকো
লড়াই করে বাঁচতে হবে।

বিলিয়ে দিয়ে আত্মসত্তা,
ঊষর জমিন ভরতে হবে,
শত বাধা কাটিয়ে উঠে
স্বপ্নখামার গড়তে হবে।






কাঁটা বিঁধে আছে

সো মা  ন ন্দী


শুনেছিলাম,
শীতের ওম ক্ষিদেয় জ্বলা ছাঁই ওড়ালে -
শতাব্দী ঘুরে জলন্ত কুন্ডের তপস্যায় মাটির গভীরেও ভাষা একদিন আগুন হয়, আলো হয়.... 
তবে এই যে আমি এত কথা বলি, 
তবু কেন কিছুই বলি না? 

মৃতজীবী ছত্রাকের উৎসব সমারোহে লেগেছে ড্রাকুলা গ্রহণ-
বীভৎস নরক গোঙানিও উঠছে মাটির ভিতে! 
শুয়ে, বসে উপমা, অলংকার, শব্দ ছায়ায় দীর্ঘতর হচ্ছে অপরাধ - 
ভাষাতত্ত্বও জানে না যখন শিশু কান্নার কঠিন অবয়ব, 
তখন গঙ্গাজলে মুখ ধুয়ে নিই পাষাণবেদিতে....!






নিদাঘ

সো মা  ন ন্দী


বিদায়ী মেঘের গোটা বিষন্নতা শুয়ে আছে পরম নিশ্চিতে কালবৈশাখীর বুক জুড়ে-
বাতাসের ভেতর অসংখ্য হৃদয়ের এমন নীরবতা,
তার দিকে তাকিয়ে আম্রমুকুলও  বুঝি শুকিয়ে মরে!
তবে গানের ভাষা হারিয়ে গাছেদের ভেতরেও কি চলছে রক্তক্ষরণ? 
ঝরা পাতা, বাতাসও তাকে উড়িয়ে নিয়ে চলে নির্ভার স্রোতে-
ঠোঁট জুড়ে তার চুম্বনের তৃষ্ণা 
জল নেই, 
খরার দরজায় শায়িত আগুন...






সমুদ্র বিনম্র রয়

শু ভা শি স  সা হু


তাইতো এই
ক্লান্তি অবক্ষয়, 
সময় স্রোতের মুখে
মরেছি আমি
অনেকবার মানুষ হয়ে। 

চলেছি আমি
দিনান্ত ঝটিকার মুখে, 
কত গানের তরঙ্গ ছড়ায়
ছড়ায় মরণের মত। 

হায়! যদি আমি সমুদ্রের বুকে
হঠাৎ বয়ে যাই, 
পাবো অজস্র
কালো অন্ধকার
তার বুকে। 
শুধু আমি 
রাতের অন্ধকারে
দেখেছি তার অক্ষুণ্ণ পাঁজরে, 
কী স্রোতবলে  
বয়ে গেছে
সে কী অকূল দুরন্ত প্লাবন। 
দেখেছি অন্ধকারের প্রবল ফেনা। 
কী ক্লান্তি কী অবক্ষয়-
অন্ধকার তবু স্তব্ধ নয়, 
সমুদ্র বিনম্র রয়।।







গঙ্গাস্নানে

বি শ্ব না থ  মা ঝি


গঙ্গাস্নানে পাপ নাশ।

ঘাটে গাছ
পাপ ছড়িয়ে আছে 
তার শাখা প্রশাখায়।

গঙ্গায় নামার আগে
তারা ওখানে নিয়েছিল আশ্রয়
স্নান সেরে ওপরে উঠতেই---
তারা আবার
দখল নিলো শরীর।

জন্ম থেকে পাপ
এ শরীরই সব
এখানে তাদের বাস।

গঙ্গাস্নানে পূণ্য হয় বটে
তাকে ছাড়ে না পাপ
যেখানে গাছ নেই
সেখানে গঙ্গাস্নানে লাভ।

পাপ একটু একটু করে
ক্ষয়ের সম্ভাবনা ।


 



শিশুবেলার গন্ধ

গী তা লি  ঘো ষ


কাগজের নৌকাগুলো চলছে কেমন সারে সারে---
দেখি, আর শিশুবেলার কথা কেমন মনে পড়ে!

বৃষ্টির একটানা সুর ছন্দে তালে প্রাণ ভেজালো।
মন যেন সেই সুরেতেই শিশুবেলার গন্ধ পেল।

সেদিনের কোমল নবীন স্বপ্নে ভরা দৃশ্যগুলো--
আজও যেন স্পষ্ট হয়ে, মন ভরালো, প্রাণ জুড়ালো।

কতবার বৃষ্টিবেলায় ভিজে ভিজে সুখ খুঁজেছি--
ভিজে হাওয়ায় সোঁদা মাটির গন্ধে আকুল মন বুঝেছি।

সেদিনও ভাসিয়েছিলাম নৌকাগুলি নদীর জলে।
জানি না, কোন সে দেশে পৌঁছে গেল দুলে দুলে।

বহুকাল স্বপ্নগুলি পুষেছিলাম প্রাণের মাঝে,
নিভৃতে কোন গোপনে, সাজিয়েছিলাম খাঁজে খাঁজে।

জীবনের শিশুবেলার কিছুই যেন রয় না পড়ে।
আজকের বর্তমানের বাতাসে সব যায় যে সরে।

তবুও রঙিন অতীত আজও আমার মনে প্রাণে
বুলালো কোমল হাতের ছোঁয়া, মন ভরল গানে।

সে গানের সুরের পরশ বৃষ্টিধারার ছন্দে কেঁপে
এ সময়ে, দৌড়ে এসে মনকে মাতায়, ভুবন ব‍্যেপে।

শিশুকাল আবার আমায় মাতাল করা গন্ধে বাঁধে,
ফিরে যাই, সেই সুদূরের স্বপ্নমদির হর্ষ-স্বাদে।






সময়ের চোরা স্রোত

প্র চি ত্র  সো ম না থ


বাড়ি ফেরার আছে কত তাড়া,
সময়ের প্রতি পলে তাই নিজেকে জুড়ে দেওয়া...
টিক টিক শব্দের বিরামহীন ঘুরে চলা 
আর হৃদয়ের ক্যাম্পাসে ঝড় তোলা
সময় তো মানে না স্তব্ধতা...
না জানে কাজের হিসেব নিকেশ,
জানে শুধু একই কক্ষপথে বিচরণ করা।
তবুও সময়ের সাথে সাথে নিজেকে গড়ে তোলা
ঠিক যেমন উত্তপ্ত লোহার উপর হাতুড়ির আঘাত হানা।
কাজের চাপের বাহানা খুঁজে ফেরে কত শত লোক
সময়ের দোহাই দিয়ে বানায় আফসোসের ইমারত।

এদিকে ট্রেন এসে থামে সময়ের হেরফেরে,
ক্লান্ত শরীর খোঁজে একখানি বসার জায়গা
কোনোমতে গুঁতোগুতি, অগুনতি ঝাঁকুনি খেয়ে
শেষে এক ঝুলন্ত ফাঁকা হাতলে পড়ে যায় হাত।
কাটে কোলাহল আর নানান রকম আলোচনা,
হঠাৎ সেই হাতলে নরম তুলতুলে ছোঁয়া লেগে
মিলিয়ে যায় চোখের পলকে।

খুঁজে ফেরে সেই অচেনা স্পর্শ ক্লান্ত শরীর,
খানিক অলীক জগতে পাড়ি দিতে চায় এ মন....
সবুজ গালিচায় নীল রঙা ওড়না ওড়ায় ষোড়শী।
ধরতে গেলে পালিয়ে বেড়ায় এক নিমেষে,
রেখে যায় শুধু এক আকাশ খিলখিল হাসি।

সময় বয়ে যায় জোয়ার ভাঁটার টানে
ট্রেনের সেই চেনা আওয়াজ জানান দেয়
গন্তব্য খুব দূরে নয়...
ধীরে ধীরে সেই অনাহুত স্পর্শ 
বিলীন হয়ে যায় কঠোর বাস্তব ভূমিতে
পা রাখার পর'।
তারপর বাড়ি ফিরে একরাশ সমস্যা নিয়ে
ঘৃণার রাজ্যে বসবাস করে মাথার চুল'কটা
টেনে ছিঁড়ে দিতে দিতে জানলার বাইরে
তাকিয়ে বলতে ইচ্ছে করে 
চুলোয় যাক এ নরকের চাকরি।

তারপর কেটে যায় প্রহর....
নতুন স্বপ্নের খোঁজে এলিয়ে দেওয়া
এ নশ্বর দেহে ছেঁড়া বালিশ কত
অভিযোগ জানাতে জানাতে 
বিদ্রোহী হয়ে ওঠে নিশীথে।

রাত কেটে ভোর হয়.....
একঘেয়ে জীবন শুরু হয়
জীবনের এক এক পর্যায়ে
শুধু ঝরে যায় শুকনো পাতার মতো
রসহীন ব্যর্থতার পলেস্তারা।

জীবন তবুও গতিময়,
সাফল্য ও ব্যর্থতার
দাঁড়িপাল্লা আজ নিরপেক্ষ নয়,
টিক টিক শব্দ শুধুই জানিয়ে যায়
আমি আছি ঠিক, আর তুমি...





আইকরনিয়া

শ্যা ম ল  কু মা র  মি শ্র


আইকরণিয়া!
তোমার জন্যে আমি হাজারো পথ হাঁটতে পারি
প্রুশিয়া, বার্লিন এর পথে পথে
তোমার বেগুনী রঙা ঠোঁটের স্পর্শে জেগে রয় ফ্রেডেরিকের হৃদয়
দুবাহুর আলিঙ্গনে বাঁধা পড়ে দুজনায়
মৃদুমন্দ বাতাস ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়... 

আইকরণিয়া!
তোমার মনে পড়ে সেদিনের কথা
বৃষ্টিস্নাত সেই বিকেল, 
বড় বড় ফোঁটায় ভিজে যাচ্ছিল তোমার কুন্তল
তোমার দু'গাল বেয়ে ঝরে পড়ছিল বারিধারা
ক্লোরোফিল মাখা ফ্রেডেরিকের হাতখানি 
তোমায় আড়াল করেছিল
বৃষ্টি শেষে অপরাহ্ণের শেষ আলোটুকু 
হারিয়ে যায় তোমার বৃন্ত মাঝে... 

গবাক্ষ পথে আজো আমি খুঁজি তোমায় 
প্রুশিয়ার রাইন ওয়েসারের ঊর্মি মাঝে 
রাত্রির নিশীথে জ্যোৎস্না ভরা রাতে 
তোমার বেগুনী স্পর্শ ছুঁয়ে যায় আমায় 
অন্তহীন আনন্দের ধারাস্রোতে 
সহস্র ঊর্মি মাঝে জেগে থাকে আইকরণিয়া...






নতুন কাব্য আমরা লিখে যাই

জ য় ন্ত  দ ত্ত  ম জু ম দা র


এই অসময়ের আকাশ জুড়ে
নতুন কাব্য আমরা লিখে যাই
বৃষ্টি ভেজার দিন আনবো বলে
মন থেকে মনে এই কবিতা ছড়াই
এসো সাথে এসো
তুমি এসো সাথে এসো
নতুন কাব্য আমরা লিখে যাই

হাতে হাত রাখলেই সাগর পাড়ি
তুমি সুর মেলালেই সব কিছু পারি
ছিনিয়ে আনতে দাবি আগুন থেকে
সারেগা রেগামা দিয়ে গান বাঁধতে
এসো সাথে এসো
তুমি এসো সাথে এসো
নতুন কাব্য আমরা লিখে যাই


আমাদের ক্লাসরুম ক্যাম্পাস মাঠ
কেড়ে নেবে কে আছে এই পথ ঘাট
পড়ার দাবিতে হোক যুদ্ধ জারি
কাজের দাবিতে স্লোগানে হুশিয়ারী 
এসো সাথে এসো
তুমি এসো সাথে এসো
নতুন কাব্য আমরা লিখে যাই






অনন্ত পুণ্য সন্নিধানে

র ত্না  দা স


সিন্ধুনদ হিন্দুসভ্যতার অহঙ্কার মেখে বয়ে গেছে
কীসের প্রামাণ্যতা! কোথায় যথার্থতা!
কিছু ধর্মপ্রাণ মস্তিষ্ক ধর্মচিহ্ন আঁকা রুমালে মুখ মুছে বাড়ি যায়।

আর্য অনার্যের দ্বন্দ্বের প্রাথমিক শুভারম্ভ, শোষক ও শোষিতের ইটারনাল কর্নফ্লিক্ট
ইতিহাস স্মৃতি রোমন্থনকে পেছনে ফেলে বর্তমান সময়কে ধরে তার প্রেক্ষাপটে।

তখন তিনি বসলেন অশ্বত্থ বৃক্ষের তলে—
মুখে তার করুণামাখা দৃষ্টি
জরা, ব্যধি, মৃত্যু... ইহজাগতিক ব্যথাসম্ভার থেকে মানবমনের মুক্তি
এই অভিলাষ তাকে প্রবুদ্ধ করলো ধ্যানমগ্নতায়।

দীর্ঘ তপস্যায় তপোক্লিষ্ট দেহ
উপবাস ভঙ্গ দেবী সুজাতার পরমান্ন উনপঞ্চাশ গ্রাসে গ্রহণে—
লাভ করেছেন বোধি... দিব্যজ্ঞান
অশ্বত্থ বৃক্ষ অভিধা পেলো বোধিবৃক্ষের।
মুক্তি এলো ঐহিক সকল বন্ধনে
অর্হত্ব প্রাপ্তির পর তথাগত হলেন সম্বুদ্ধ
ভোগতৃষ্ণা সব দুঃখের উৎস
পরিত্যাগেই মুক্তির সন্ধান
রক্তমাখা পিচ্ছিল ধর্মপথে শুধুই অনর্থ।

হে অনন্তপূণ্য তোমার করুণাবারিতে সিক্ত হোক ধরণীতল 
ধরার চিত্ত হোক নিষ্কলুষ
তব পাদমেকং গচ্ছামি।






স্বগতোক্তিতে গান্ধারী

র ত্না  দা স


কুরুক্ষেত্রের প্রান্তরে গান্ধারী হাতড়ে বেড়াচ্ছিলেন পুত্রদের অস্থিচূর্ণ।
শতপুত্র... হায়! আজ শূন্য কোল কেঁদে ফেরে। একজন, মাত্র একজনও নেই পাশে
এ কি অভিশাপ! মায়ের সামনে পড়ে আছে খন্ডবিখন্ড সন্তানের মৃতদেহ!

'কুন্তী, তুমি গর্বিত পান্ডব জননী'
সত্যিই তাই কী!
তোমার জ্যেষ্ঠপুত্র পান্ডব হয়েছিল কী!
মাতৃত্বের ভিক্ষা চেয়েছিলে, বসাতে চেয়েছিলে পঞ্চপুত্র আগে। সবার প্রথম ভাগে।
শত উৎকোচেও কর্ণ সম্মত হয়নি
সে কৌরব পক্ষেই রয়ে গেছে-
দলবদলের শিক্ষা তার হয়নি, কারণ কালটা বর্তমান নয়।

তোমার প্রথম হার তোমার ধর্মপুত্র-
ধর্মের সাথে ছিল কী!
অশ্বত্থামা হত ইতি গজ...
ধর্মের ভন্ডামি একেই বলে
আমার পুত্র দুর্যোধন, অধর্মের পথে হেঁটেছে জানি, তবে দৃঢ়তার সাথে
মুখোশ পরা ধর্মকে তার হাতিয়ার করেনি।

তোমার দ্বিতীয় হার তোমার পুত্রবধূ-
রাজ্যসভায় দ্রৌপদীর লাঞ্ছনা তোমার পুত্রেরা স্তব্ধ মুখে চেয়ে দেখেছে বিনা প্রতিবাদে
সেই আমার পুত্র বিকর্ণ গর্জে উঠেছিল।

তোমার তৃতীয় হার তুমি ও তোমার পুত্রেরা যে রাজ্যজয়ের ইতিহাস লিখলে তা কলঙ্কিত, রক্তাক্ত-
ইতিহাস মনে রাখে সব অন্যায়ের প্রতিবেদন
যতঃ ধর্মঃস্ততো জয়ঃ
ধর্মের জয় হয়েছে কী!

আজ যে পিচ্ছিল পথে হেঁটে তোমার পুত্ররা সিংহাসন অধিকার করলো, সেটা খুব সুখাসন হবে না।
কাঁটার খোঁচা তারা এড়াতে পারবেনা
'ভ্রাতৃরক্তে রাঙানো সিংহাসন পায় না কখনো হৃদয়ে আসন'

কুন্তী আমি সব হারিয়েও অটল রইলাম
তোমার আঁচলের রিক্ততার, চাতুর্য্যের দাগটা মোছা গেল না-
এককথায় মুছতে পারলে না
আমি অন্ধত্ব  স্বেচ্ছায় বরণ করেছি
তুমি চোখ বন্ধ করে রাখলে অন্ধ অহমিকায়
দিনের শেষে তোমার হাতের মুঠি খুলে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসেব গণনা করে দেখো

    শূন্য শুধুই শূন্য
আমি নিঃস্বতাতেও পূর্ণ।






প্রস্থান

দে বা শি স  স র খে ল 


কুটুম পালায়  
ভাড়াটেরা চুপ
কাঠুরেরা বলে; 
দু'দিন টিকিয়ে রাখা হে  
ত্রিবেণী যাবে না
সে পুন্নি করেনি 
যষ্টিমাস পুকুরে জল হতে দাও
শবাধার নিভিবে কেমনে?

চোখ বুজলে দু'কলম জেলার পাতায়।

 টিকোমা কাঞ্চন রডেনন্টেলিয়া ফুটেছে বিস্তর
পাশে থেকে পুড়ে যেতে চায়
চিতার দুপাশে হবে গন্ধের নাচ গান।

শিয়ারা ছাড়াই ঘুগিতে মাছ
মাগুর ঘড়ুই খুঁজছে পলুই খালুই
পুড়কির লম্বা ওড়। 
গ্রামদেশে আষাঢ়ের পহেলা প্রহরে 
খাদ্য-শৃঙ্খলে হাহাকার নেই।

 আর নিজের ভার বলতে পারো না বলে
ভারহীন।







শব্দ মোহ বন্ধন

দে বা শি স  স র খে ল 


খুব জ্ঞান ঝরালে
তেমন পাত্র পেলে তো  ঢালো সোনামুগ
উলুবনে মেহেদী ছড়াও।

ঝরাপালকের কাল থেকে কালবেলা
সহজ মানুষ বেয়ে  রবিশংকরের  নিশীথ ঝংকার।

ভেঙ্গে ভেঙ্গে দিলে
বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক  স্বয়ংশাসক।

কুবেরের বিষয় আশয় থেকে
যোজন ভাইরাস
শ্যামল অজিত মলয়ের ক্ষুধা।

জ্ঞান দিতে দিতে 
এক ঝুড়ি রাঙা ভাঙা আলু।
হাটালে বিটালে কত শব্দ
মোহ বন্ধনের  
গন্ধ হাহাকার।







কুহক

নী ল  আ কা শ 


তোমাকে ভাবা ঠিক কোনো পাহাড়ী নির্জন কুটিরে বসে একান্তে মোহরদির গান শোনার মতো,
ঠিক যেমন তুমি মিস করো পাহাড়ের মাথায় তোমার প্রিয় সোনালী রোদের মুকুট অথবা শীত শীত তোমার রোমকূপ।

হ্যাঁ, আমি জানি তুমি এখন পাহাড়ে যাওনি বেড়াতে
কিন্তু স্পষ্ট অনুভব তো করতে পারো এই হেমন্তে তুমিও একটা পাহাড়ের কোলে আছো।

জানো, আমি যখন কোনো কিছু ভীষণ ভীষণ মিস করি
আমার নিছক এই কুহকটুকুই সম্বল!

 





দহন

অ ম ল  সি ন হা


দহন এখন বিশ্ব জুড়ে,
পুড়ছে সবুজ নির্নিমেষ।
দখলদারির বিশ্ব ক্ষুধায়,
পুড়ছে দেখো আস্ত দেশ।
হাসছে নিরো, ভাবছে হিরো,
খেলছে বসে রামির তাস।
প্রবঞ্চনার দগ্ধ চিতায়,
পুড়ছে কোন যুবার লাশ।
বাড়ছে দহন মূল্য বোধে,
বাড়ছে দহন বিশ্বাসে।
ভরছে বাতাস কার্বনেতে,
ঢুকছে যে বিষ নিঃশ্বাসে।
বাড়ছে দহন মুখের ভাষায়,
সুখের ঘরে বাড়ছে জ্বর।
অবিশ্বাসের দ্বন্ধে পুড়ে,
ছাড়ছে দুহাত, পরস্পর।
বাড়ছে পারদ বাজার দরে,
হারছে বুঝি ভোজ বাজি,
বাড়ছে দহন ভাবনাতে, সব
দোকানদারের কারসাজি।
প্রতিশ্রুতির না থাক দেহ,
দেহত্যাগেও শান্তি নেই।
ভোটের বাজার চড়ছে শুধু,
প্রতিশ্রুতির বন্যাতেই।
বাড়ছে দহন ভালোবাসায়,
কোথায় তেমন বন্ধু পাই!
বিজ্ঞাপনে ভরছে পাতা,
"মনের মত বন্ধু চাই"।






কৃষ্ণকলি

অ ম ল  সি ন হা



কৃষ্ণকলিরা কাব্যেই থাকে,
আর থাকে শুধু মন্দিরে।
কৃষ্ণারা আজ বড় একঘরে,
ভালোবাসা সেথা বন্দী রে।
কৃষ্ণবরণা বলে তারা কেহ,
পায়না সবার স্নেহ।
ঘরে ও বাইরে গঞ্জনা সয়ে,
দিন করে অতিবাহ।
গৃহের লক্ষ্মী হলেও হবে কি,
এরা যে লক্ষ্মীহীনা।
কেউ তো করেনা ঘরণী এদের,
মোটা টাকা পণ বিনা।
বীনাপানি যার রয়েছে সহায়,
লক্ষ্মীর কৃপা সেই শুধু পায়।
অথবা পিতার অর্থের জোরে
কালো হয় খাঁটি সোনা।
গরীবের মেয়ে কালো হলে তার,
জোটে শুধু গঞ্জনা।






বন্ধু

অ ম ল  সি ন হা


এই পৃথিবীর ব্যথা ভরা প্রান্তরে,
ভালো থেকো তুমি, শুধু চাই অন্তরে।
নিত্য দহনে, দহে যদি মন-প্রাণ,
ছলনায় যদি বাড়ে তব অভিমান।
সাধের স্বপ্ন ভাঙ্গে যদি বারে বার,
তবুও বন্ধু মেনো নাকো কভু হার।।
সহসা আঁধারে ঢাকে যদি চারধার,
প্রলয়ের রোষে ভাঙ্গে স্বপ্নের দ্বার।
তবুও বন্ধু কহিবো যে বারবার,
জীবনের পথে, কেটে যাক এ আঁধার।
যদি কোনদিন বিশ্বাসে ধরে চিড়।
যার লাগি তব চিত্ত ছিল অধীর।
জীবনের প্রতি আসে যদি ধিক্কার।
স্মরণেতে রেখো বন্ধু তুমি আমার।
যদি কোনদিন জরা আসে  দেহ মনে।
সাথে অনেকেই রহিবে না প্রিয়জনে।
প্রদোষের সাথী নাহি ফেরে যদি আর।
পাশে আছি যেন, বন্ধু তুমি আমার।
জীবনের পথে আছে বাধা অনুক্ষণ।
আছে অবজ্ঞা, লাঞ্ছনা অকারণ।
তবুও বন্ধু দাঁড়িয়ে যেওনা পথে,
পাশে পাবে মোরে যদি হাত রাখো হাতে।





কবিতা পাঠ

কৌ শি ক  গা ঙ্গু লী


আমাকে চেনে সেই বটগাছ
যার সাথে কোকিলের কথা হয়, 
আজ মাঝরাতে নেমেছে তারাদের বৃষ্টি,
আমি চান করি তাতে,
দেখো আমার গায়ে হাস্নুহানার গন্ধ,
দেখো আমার শরীরে জোৎস্না লেগে আছে।
আমার প্রেমিকারা আমাকে চেনে না,
চেনে শুধু ওই বটগাছ, তবুও আমি পথ চলি এ সীমান্ত থেকে অন্য সীমান্তে, পথে পড়ে থাকে রক্ত মাখা ইতিহাস আর জীবনের গান।
তবুও মৃত্যু বারবার হানা দেয়, আমি কবিতা বলি বধিরেরা শোনে।
তারপর অচেনা পাখির পালক আসে কাছে আর 
আসে ঠাকুমাদের  রূপকথার  গল্প।
আমি সিনেমা নয়, ছবি দেখি আকাশের গায়ে,
আমার শরীরে জোছনা, 
গায়ে হাস্নুহানার গন্ধ ।






একই ধারার সংগীত

অ ম ল  বি শ্বা স


এবং তুমি
বলাবাহুল্য যখন সাঁকো দুললো
ওটা দিঘি ছিলো না, নদী।

যদি জোয়ারের প্রথমবেলা হতো
ক্ষত-বিক্ষত বুক
না, রক্তাক্ত না; সম্মোহনের উদ্যোক্তা হয়ে
চোখের মণিতে সৃষ্টি করতো সরুপথ।

মতামত তখন একটিই, হাত ধরো, 
এবং আমি আর একটু সাঁকো ভাঙতে
যখন রেঙে উঠতো তোমার চোখ 
পরলোক থেকে স্বর্গ টেনে আনতাম জলে।
কৌতুহলে মাঝি বলতো, নদীতে কারা!
জলের ধারায় তখন জাতীয় সংগীতে
যুক্ত হতো জাতীয়তাবোধ।

নৌকায় ঘর তুলে
ভুলে যেতাম সীমান্তের নো-ম্যান্স-ল্যান্ড
ভেঙে যাওয়া সাঁকোর মতো,
এবং তখন দু'হাতে পদ্মার জল নিয়ে
ছড়িয়ে দিতাম গঙ্গায়
তুমি, আমি এবং আমাদের সন্তান।






কবিতার উঠোনে

অ সী ম  দা স


কবিতা পঙক্তির কোলে দেড় বছরের
ফুটফুটে সুধাকে এনে বসাতেই,
হন্তদন্ত চাঁদ নেমে এসে সুধার কপালে
আয় আয় টিপ দিয়ে গেল!
চাঁদ চলে যেতেই হাজির উসকো খুসকো ঝড়।
কবিতার উঠোনে এক সুপুরি গাছের
মগডালে চড়ে বসল সে।
বৃষ্টিকে হাঁক দিয়ে বলল-- এসো ভিজি।
বেচারা বৃষ্টি তো মেঘের বুকে ভয়ে জড়োসড়ো!
মেঘ বলল-- বৃষ্টি এখন সদ্য শৈশবে,
তোমার সঙ্গে হুটোপুটি করতে পারবে না।
একটু বড় হোক নিশ্চয়ই পাঠাব তোমার কাছে।
ঝড় তো মেঘের এই কথা শুনে
রেগে আগুন তেলে বেগুন!
রক্তচক্ষুতে আমাকে বলল--
বৃষ্টি না হলে কবিতা জমবে কেমন করে?
আমি কাঁচুমাচু মুখে বললাম--
দ্যাখো আমি শুধু কবিতায় শব্দ বসাতে পারি,
যেমন ফুটফুটে সুধা, চাঁদ, ঝড়, উঠোন,
সুপুরি গাছ, বৃষ্টি, মেঘ ইত্যাদি।
এখন তোমরা যদি নিজেদের কাজ না করো,
তাহলে আমি কি করতে পারি বলো!
ঝড় একথা শুনে আরও রেগে গিয়ে বলল--
আমাকে ডাকার আগে মেঘকে জিজ্ঞেস করেছিলে,
বৃষ্টির বয়স এখন কতো চলছে?
আমি থতমত খেয়ে বললাম-- না মানে,
এ তো আমার কল্পনাতেই আসেনি।
ঝড়, আমার মাথার চুল সামান্য উড়িয়ে দিয়ে
চলে যেতে যেতে বলল-- কবিতা-শব্দের
সম্পূর্ণ হাল হকিকত আগে জেনে 
তারপর আমাদের ডাকবে।
বুড়ো হতে চললে, এখনো কবিতায়
সঠিক শব্দ বসাতে শিখলে না হে!






অধিকার

সু স্নি গ্ধা  রা য়  চৌ ধু রী 


খেয়ালের আকাশে মেঘজমা ভিড়,
মনের আকাশে অনেক প্রশ্নচিহ্ন,
ভালোবাসার এক নিবিড়   চাওয়া 
পরিতৃপ্ততা। 
চির শাশ্বত সত‍্য ভালোবাসা 
দুটি মনের এক অনবিল অদম‍্য চাহিদা মিলন। আধুনিক সমাজে
ভালোবাসার পরিতৃপ্ততা সময় কাটানোর 
ঝোঁক! ভালোবাসা তখন সফল যখন
দুটি মনের কথা, ইচ্ছা এক। একজন ভালোবাসি বলে 
আর অপরজন সময়ের 
অপব‍্যবহার করে-- 
একে কখনো ভালোবাসা বলে না। 
দুটি মন দুটি হৃদয় এক ঝড়ঝাপ্টা,
সব এক ভালোবাসায় পরিতৃপ্ততা।।





বেকুব বিবৃতি

ভী ষ্ম দে ব  বা ড়ৈ 


আমি দেখেছি তোমার চোখের আলো মুখ করে আছে ভার,
আমি দেখেছি দেশের গনতন্ত্ররা  জ্বলে-পুড়ে ছারখার!

আমি দেখেছি উঠতি বখাটে ছেলেটা লিখেছে নেতার নাম,
আমি দেখেছি পাড়ার ভদ্র মেয়েটি কিনিয়াছে বদনাম!

আমি দেখেছি হাঁড়িতে ভাত জোটেনি খেটে খাওয়া মানুষের,
আমি দেখেছি টাকার পাহাড় জমেছে নামকেনা দানবের।

আমি দেখেছি সততা মুখ বুঁজে মরে বদনামী জেল খেটে,
আমি দেখেছি মানুষ দেশ ছেড়ে যায় খালি পায়ে পথ হেঁটে।

আমি দেখেছি প্রবীন বৃদ্ধের গায়ে কতো না শ্রমের সীল, 
আমি দেখেছি কতো ফ্যাশন দুনিয়া পরে আছে হাই হীল।

আমি দেখেছি কতো অন্ধ বিচার তালকানা করে দিন,
আমি দেখেছি কতো সাদা মানুষেরা হয়েছে অন্তরীণ।

আমি দেখেছি কতো রাতের তারারা মিছেমিছি মরে যায়,
আমি দেখেছি কতো নিরীহ পরাণ পথে পথে মার খায়।

আমি দেখেছি ভণ্ড রাজনীতিবিদ তুড়ি মারে লাল চোখে,
আমি দেখেছি দেশটি তিলে তিলে মরে ধাপ্পা বাজির শোকে।

আমি দেখেছি এখনো সূর্য রয়েছে আধখানা চোখে চেয়ে,
আমি বলছি এখনো মানুষ বাঁচাও মানুষের গান গেয়ে।






কথকতা               
                                             
স ঞ্চি তা  ভ ট্টা চা র্য


বেঁচে থাকার রসদ শুধুই কবিতা
ইচ্ছেগুলো আখর হয়ে
হয় শুধুই কবিতা
কবির লেখা কবিতা
পড়তে পড়তে মনে হয়
এই তো বেশ লাগছে
নিজেকে কাব্য নায়িকা।
কবি বলো না মোরে
আমিই তোমার চাঁদ
আমিই কি তোমার সেই আখর
যে আখর এর রূপেই
ভালো বেসেছো আমায়
দিয়েছো এক কবিতার জন্ম
সন্ধ্যা প্রদীপএর শিখা সম
জ্বালিয়েছো যে দীপ
কেমনে পোড়াবে তারে
কঠিন নির্মম তারে
অবিরত হয়ে চলেছে যে অগ্নুৎপাত
নামে না কি একবার ও সে শ্রাবণ
অন্তঃস্থিত অন্তক্ষরণ
শুধু জ্বলছে সর্ব মন
এতো কঠোর নির্মম তোমার হৃদয়?
নামাও বরিষণ
বৃষ্টি নামার আগে
বড়ো ভিজতে ইচ্ছে যায় তনুমন
সবকিছুর হোক অবসান
কবিতাতেই পূর্ণ হোক
শুধু কবিতার শূণ্য হৃদয়।





আশা
 
দে ব যা নী  ঘো ষা ল


প্রতিদিন সকাল হয় আমার প্রিয় কোকিলের গান শুনে
রোজনামচায় ঘড়ির কাঁটা সরে টিক টিক শব্দে
মনের অবগুন্ঠনে থাকে নতুনের শ্বাস
গুটিকতক দিন বাদে
হিংসাত্মক আবহাওয়া তছনছ করে
নিত্য দিনের ভালত্বটুকু
নিয়তির পরিহাস
হৃৎপিন্ড বিকলের দিকে
তবু হৃদয়কে বিকলাঙ্গ হতে দিতে পারিনা
মেনে নেওয়া গরম শ্বাসে আজ দীর্ঘশ্বাস বেমানান
শুধু পরখ করার আশ্বাসে বেঁচে থাকা
ভাবি তবু,
কি আশায় বাঁচার এত সাধ!
তবু ভোর রাত সুখের ওমচাদরে
সুখ স্মৃতি খোঁজে পরম সুখে।
বোধ হয় ভাল থাকার আশায়!






শীতল আহ্বান

প্র দী প  কু মা র  দে (নী লু)


আলপথ ধরে চলে এসেছি নদীর তীরে,
চারদিকে উদোম প্রকৃতি কম্পিত শীতল সমীরে।
জাল ফেলে রূপোলি শষ্যের খোঁজে জীবিকা সন্ধানী,
বিহঙ্গেরা আলস্যে ভরা আকাশে ডানা মেলেনি।
বিষন্ন আলোটুকু নিয়ে নির্বাক নিঃস্ব চরাচর,
কতটুকু উষ্ণতা ছড়াতে পারে শীতার্ত দিবাকর!
নিজেকে পরিযায়ী ভেবে উড়ে যেতে পারিনা,
হিমেল পরশে খসে পড়ে পালক অশক্ত ডানা।
ধোঁয়াটে রহস্যে ভরা সবুজাভ নির্জন প্রান্তরে,
একাকী পথিক কারে খুঁজে ফিরি অশান্ত অন্তরে।
হয়তো অপূর্ণতার রিক্ততায় জীবন বয়ে যাবে হাহাকারে,
তবুও শীত তুমি এসো নব সাজে সুললিত বাহারে।







শীতের সুখ

প্র তি ম  সে ন


কনকনে ঠান্ডায়, কুয়াশার চাদরে,
নীল নীল নীলিমায়, সূর্যি মুখ ঢাকেরে।

শন শন বাতাসে, খস খস পাতারা,
টুপটাপ শিশিরে, ভিজে গা কিনারা।

চচ্চড় চামড়া, থর থর কাঁপুনি,
ঠোঁট-মুখ ফাটেরে, দাঁতে শিরশিরানি।

আলসে রোদ্দুর, কমলা, নলেন গুড়,
পিঠে-পুলি-পায়েসের গন্ধেতে ভরপুর।

মিঠেল রোদে সুখ, উত্তাপ দুপুরে,
আবেশটা লেগে থাক, বুকেরই হাঁপরে।






কী ভীষন দরকার ছিলো

সি রা জু ল  ই স লা ম


তোমাকে আমার দরকার ছিলো; কী ভীষন দরকার। 
কচি ধানের ক্ষেতে দোলানো বাতাসের অমলিন ছোঁয়ায়
দুলে ওঠা মনের সতেজ প্রেরণায় তোমাকে আমার দরকার ছিলো

তোমাকে আমার দরকার ছিলো চৈত্রের কাঠফাটা রোদ্দুরে
একখন্ড কালো মেঘ হয়ে ছায়ার আবরণে জড়িয়ে
আমাকে ঢেকে রাখবার জন্য, তোমাকে প্রয়োজন ছিলো।

তোমাকে আমার দরকার ছিলো, অঝর-শ্রাবন বৃষ্টিতে ভেজা
শাড়ীর আঁচলে লেপ্টে থাকা তোমার শরীরের উষ্ণতা
পাওয়ার জন্য-
তোমাকে আমার প্রয়োজন ছিলো, কী ভীষন প্রয়োজন!
সঘন-ঘন উষ্ণ আবেগে দ্বিধা থরোথরো তোমার নরম ঠোঁটের
পেলবতাটুকু শুষে নেবার জন্য তোমাকে আমার প্রয়োজন ছিলো।

তোমাকে আমার দরকার ছিলো মধ্য মাঘের শীতার্ত রাতের আলিঙ্গনে
হিম হয়ে আসা শরীরের সব রক্তকণাগুলো যখন হিমাঙ্কের নীচে নেমে আসে। 
শিশিরের শব্দের মতন ঝরে পড়া নিশুতি-রাতের আলিঙ্গনে-
বিবস্ত্রা শরীরের পাগলামীতে খ্যাঁপাটে উন্মাদনায় বিভোর হয়ে, 
একটুখানি বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছের প্রেরণায়, তখনই তো
তোমাকে আমার দরকার ছিলো, কী ভীষন দরকার!

তোমাকে আমার দরকার ছিলো বসন্তের আগমনী গানের সুরে 
সুরে সুরে তুমি আমায় ভরিয়ে দেবে প্রাণ-অফুরান।
বাগানের সবক'টা ফুল আবেশে সোহাগের পাপড়ি মেলে সলাজে-
চেয়ে থাকবে আমারই জন্য, শুধু তোমার ভালোবাসার লালপদ্ম হয়ে। 
আকন্ঠ তৃষ্ণায় ডুবে যেতে যেতে আমি অনুভব করবো
তোমার গরম শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রগাঢ় উষ্ণ মোহ ভালোবাসা।
তোমাকে আমার দরকার ছিলো, কী ভীষন দরকার।

শূন্য হৃদয় চরাচরে চেয়ে দেখি আজ বিরাণ মরুভূমি-
পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে হাহাকার, প্রতিক্ষার কষ্টরেণু।
আঙ্গুলের ফাঁক গলে ঝরে যাওয়া আঁজলাভরা জলের মতো
তুমিও যে কখন সরে গেছো অভিমানের সাথে সাথী হয়ে!
অভিমানের প্রিয় বাঁশী বাজে কি এখনো সঘন-ঘন রাত্রির অন্ধকারে?
তোমাকে আমার প্রয়োজন ছিলো অসময়ের এই অনন্ত অবেলায়।







জোকার ও নববধূ

 শা ন্ত ম য়  গো স্বা মী


পৃথিবী থেকে যেদিন সার্কাস বিলুপ্ত ঘোষিত হলো,

সার্কাসের এক জোকার সোজা গিয়ে বসলো বিয়ের পিঁড়িতে,

তারপর রঙ মেখে সঙ সেজে সোজা ঢুকে পড়লো বাসরঘরে,  

সারা রাত সাক্ষী থাকল সার্কাসের বিচিত্র সব খেলা…

সে নানান কসরতে মুগ্ধ করতে চাইলো নববধূকে!

নববধূর আঁচলের তলায় উঁকি দিল বাজারের ফর্দ,  

রঙিন কৌটো থেকে পাখি, ফুল, প্রজাপতি সবই বৃথা গেল জোকারের

জোকার সব খেলা জানে, জানেনা শুধু শরীরী বিভঙ্গের খেলা

জানে না সে খুচরো পয়সার গতিপথ, বাজারদরের নিয়মিত ওঠানামা

সে নানান কসরতে মুগ্ধ করতে চাইলো নববধূকে!






দহন

 শা ন্ত ম য়  গো স্বা মী


 আমার পড়বার মতো কোনও বই ছিল না

ছিল না সেরকম কোনও জরুরী কাজ ও

তার বদলে ভেসে উঠছিল এক মানবী মুখ।

বেশ কিছুদিন, বেশ কিছু রাত

আমি সেই মুখের দিকে তাকিয়ে

পৃথিবীর তামাম ভালবাসার গল্পগুলো

পড়ে ফেলেছি।

থমকে যায় সময় পেরোনো দিন

ক্রমশ ডুব দেয় নরম কুয়াশায়

আর আমার নেবুলা ছিঁড়ে

নিকোটিনের কালো কষ,

লালচে হৃদপিন্ড, কুসুম গরম নাভী থেকে

টেনে বের করে আর্তনাদ।

রাতের আঁধারে মিশে থাকে বিষ…

নীলমুখো আয়নায় তখন শুধুই বিস্মৃতি

ভালো নেই কেউ, তবুও পরস্পর আলগোছে

বলতেই পারি, ভালো আছি।

মস্তিষ্ক সেরেছে অজুত রক্তস্নান

প্রতিদিন উগরে দিচ্ছে অসুখের স্বর

এই বৃষ্টিভেজা দিনে অভয়স্বর সিম্ফনী হয়ে

ব্যালের ছন্দে ছুঁয়ে যাক মন...

বলি ভালো আছে সে।

এসো … ভালো থাকি আমরা সবাই।







দেউলিয়া

প্র দী প  আ চা র্য্য


অবশেষে শেষ ধাপে পৌঁছে নিজেকেই সঁপে দিলাম অনিশ্চিতের হাতে,
হৃদয়কে দেউলিয়া ঘোষণা করতেই অসংখ্য ক্রেতার ভিড়!
শেয়ার বাজারের সূচকের মতো ছুটে চললো উল্কার বেগে,
অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে দেখছি ভালোবাসার ঊর্ধ্বমুখী স্রোত!
এতদিন শুধু পসরা সাজিয়ে অপেক্ষা করেছি প্রিয় আগমনের,
বারবার পরিবর্তিত হয়েছে ঋতুচক্র শিমুল পলাশের বনপথে!
হারানো সময় হঠাৎই আজ সাদরে বরণ করে নিতে দরজায় অপেক্ষারত।।






বেড-টি

পৃ থ্বী শ  দ ত্ত 


শীতের সাথে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে 
ভোরবেলা জেগে ওঠে মায়া, 

শীতের বিছানা পুরনো প্রেমিকার মতো
ঘুম ঘুম তর্পণে কাটে সকালের সুখ, 
সারা রাত ধরে বিন্দু বিন্দু উষ্ণতা এনে
ভোরের শয্যায় সে ওম দিয়ে রাখে,

পুরুষের নিমীলিত চোখ দেখে 
টেবিলে ঢেকে রাখা চায়ের কাপ থেকে 
উড়ে উড়ে যাচ্ছে গার্হ্যস্থ ধোঁয়া!

এই ধোঁয়াস্নাত ভোর থেকে জেগে ওঠে 
শীতের পুরুষও!






ভাসানের নীল স্রোতে

বি বে কা ন ন্দ  ন স্ক র


ভাসানের শেষে পড়ে আছে বাসি ফুলগুলি
মরা চরে, মরা নুড়ি, বাতাসে বিষাদ
কে যেন চলে গেল ভাসানের স্রোত ধরে!

তার পদছাপ, এখনো বালিতে অস্ফুট  দাগ
এখনো বাতাসে তার  নিঃশ্বাস ঘ্রাণ।
অনেক স্মৃতি একসাথে দুচোখের পাতায়
এঁকেছে কিভাবে অশ্রূত তান?

নদীর  বুকে এতো শূন‍্যতা 
কাঁপা ঠোঁটে  অস্ফুট  হাহাকার 
এপার ওপার ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলা
তবুও বিষাদে বেজেছে ছিন্ন সেতার!

ভাসানের শেষে অধোমুখের মিছিল 
হেঁটে চলে নীরবে একা, যন্ত্রণা ক্ষতে
শুধু আবেগে লেখা তার  নাম,
হয়তো বা
আবার হবে দেখা, ভাসানের নীল স্রোতে!






বোধশূন্য

ম ধু মি তা  ব সু  স র কা র


যা কিছু অন্তর্গত, দেওয়াই যেতো  নির্দ্বিধায়-
শুধু বঞ্চনার ভয়--
চুরি হয়ে যাচ্ছে সমস্ত কবিতার অমোঘ লাইন-
তুমিও-
শুধু ঠাস বুনোট  কল্পনা--
স্কিৎজোফ্রেনিয়া--
নার্সদিদি বেঁধে রাখেনা আর-
আমি থেকে গেছি-- থেকে যাই-- দুরুহ কল্পনা নিয়ে--
এটুকু নিয়েই আমার অন্তর্গত-
যদি চাও সবটুকুই দিতে পারি--
অসতো মা সদগময়ো
তমসো  মা জ্যোতির্গময়ো 
মৃত্যোং মা অমৃতোগময়ো----

ডাক্তার বলেছেন স্কিৎজোেফ্রেনিয়া সারেনা---






ডাকবাক্স

নূ পু র  রা য় (রিনঝিন)


ডাকবাক্স হয় না খোলা নেই বন্ধ খাম
বন্ধু সেতো আজ ও তাই জ্বলজ্বলে নাম।
একটি চিঠি পৌঁছতে লাগে এক একটি মাস
তবুও প্রেমে পড়েনি ভাটা প্রেমেতে সহবাস।
বছর শেষে দুই বছরে হয়েছে কভু দেখা
ভরসা ছিলো ডাকবাক্সে নয়তো আমি একা।
সকাল সন্ধ্যে হচ্ছে দেখা ভালোবাসার মুখ
তবুও আজ ভরে না মন মনে বড়ো অসুখ।
ডাকবাক্স অবহেলায় গাছপালায় ঢাকা
ডাকপিয়ন যায় না ডেকে পিঠের ঝোলা ফাঁকা।
ঠাকুমা ঝুলি নকশী কাঁথা গিয়েছে সব ঠেসে
রানার আজ স্মার্ট ফোনে করছে কাজ বসে।







ইচ্ছে ডানা (২)

নূ পু র  রা য় (রি ন ঝি ন) 


ইচ্ছেডানায় ভরছে উড়ান ঘুরছে অচিনপুর 
বন্ধঘরের কোনাখামচায় খুঁজে চলে কোহিনূর।
দিনবদলের সাধ্যি কী তার মস্ত দালান ঘর  
মনের ভিতর খুঁড়ছে কবর নির্জনে দিন ভর।  
সকাল সন্ধ্যে যত্ন আত্তি কম তো তাদের নয়
সবুজ পাতায় বাড়ছে বাহার ছোট্ট টেবিলময়।
বাহার বিহার খেলছে পাত্তি দেওয়া নেওয়া পালা 
এমনি করেই রঙমিলান্তি অন্ধকারের খেলা।
আধাঁর ঘুচায় আলোর দিশায় রঞ্জিত হাত মেলে
আসবে আবার জন্মে জন্মে স্নেহের পরশ পেলে।






বন্ধ হোক এ নিঠুরতা

শু ভ্রা  ভ ট্টা চা র্য


এই পৃথিবীর আছে যত জীব জড়
প্রকৃতি সৃষ্ট সমষ্টিগত শক্তি ও ভর,
শক্তি ভরের পারস্পরিক রূপান্তরে
জন্ম মৃত্যু আবর্তনে জীবনচক্র ঘোরে,
প্রকৃতির ইচ্ছায় পেয়েছি অমূল্য এ প্রাণ
তারে কেমনে করি ধর্মের নামে বলিদান!
যা নিজ ইচ্ছায় করিতে পারি না সৃষ্ট
তারে হিংস্রতায় কেমনে করি বিনষ্ট!
ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ ক্ষমতাশালী 
সংকীর্ণ হৃদয়ে ভরা আঁধার ঝুল কালি,
পূজার নামে নিষ্ঠুর নৃশংস প্রথা এ বলি
নিরীহ জীবহত্যায় কারে তুষ্ট করে চলি!
এমন ধম্মে কম্মে পাপের ঘড়া ভরে
রুষ্ট প্রকৃতি, মানবতার কবর খোঁড়ে,
এ পৃথিবী একমাত্র বাসস্থান সবাকার
তবে কেন বলি! নেই বাঁচবার অধিকার!
বলির নামে বাস্তুতান্ত্রিক সাম্য বিঘ্নিত
বলি প্রদত্ত জীবেরা হবে একদা বিলুপ্ত,
বলি নামক রক্তাক্ত প্রথায় কলুষিত মন
প্রাণের মাঝে ঈর্ষা হিংসার বীজ বপন,
বাঁচাও প্রকৃতির স্নেহের সকল দান
মনে রেখো সবাই "প্রথার ঊর্ধ্বে প্রাণ",
তাই ধর্মের নামে বন্ধ হোক এই হত্যা
পারস্পরিক প্রয়োজনে বাড়ুক সখ্যতা,
শাস্ত্র গ্রন্থে "ছাগ" বলির কথা বর্ণন
যাহার অর্থ কুৎসিত পঞ্চরিপুর দমন,
বলির নামে আর জীব হত্যা কভু নয়
শুদ্ধ চিত্তে নিজেরাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রই,
মনের যত কুপ্রবৃত্তিদের করি দমন
পূজার প্রকৃত অর্থ হোক অনুধাবন,
পূজা হলো অন্তঃদর্শনে আত্মশুদ্ধিকরণ
অন্তঃঅসুর বিনাশে শুভশক্তি জাগরণ।






একটা অতিরঞ্জিত মানবীজন্মের কবিতা

চৈ তা লি  না থ


খুব সহজেই আফসোস আলোকিত হয়,

আমি লুকিয়ে রাখি নিজেকে
রাত্রির মতো নির্লিপ্ত এবং গভীর অনিশ্চয়তার মতো অনন্ত...!

আঁধার যত তীব্র হয় ততই তীক্ষ্ণ হয় জীবনের ক্লান্তির অনটন। 
এই নির্মম সত্যের কাছে আমার তন্ময় বসে থাকা।
পোষা পাখির মতো, খাঁচা এবং শিকলের ভিতর
বেঁচে থাকার সাথে কী নিবিড় বন্ধন! 

মুক্ত করি নিজেকে ওই আফসোসের আলোয়।
আমার সমস্ত অনুভব প্রকাশ করব বলে,
ছিঁড়ে ফেলি শিকল, ভেঙে ফেলি খাঁচা
তুলে নিই আরক্ত কলম...

আমার এই লড়াইয়ের কোনও নাম নেই 
কোনও গৌরব নেই... 
হেমন্তের শিশিরে ভিজে থাকা ঘাসের মতোই অনিশ্চিত!

একটা অতিরঞ্জিত মানবীজন্মের কবিতা।






প্রেম আসুক

মৌ মি তা  চ্যা টা র্জী


একটা বিধ্বংসী প্রেম আসুক,

টর্নেডোর মতো।

ঘুরন্ত বায়ুস্তম্ভ সমূলে আঘাত করুক,

অনুশাসনের আবর্জনার স্তুপে।

ছাঁইচাপা আগুন অনুভূতিদের ঘুমভাঙাতে,

একটা বিনাশকারী রাত নামুক।

একটা প্রেম আসুক, যাতে থাক 

পূর্ণযৌবনা নদীর উশৃঙ্খলতা,

বেপরোয়া গতি,

সব ভয় উপেক্ষা করে,

অবলীলায় নিম্নগামী হয়ে,

ভাসবে ও ভাসাবে।

একটা প্রেম আসুক মহাশূন্যের অনন্ত অন্ধকার নিয়ে।

আরব্ধ জ্ঞানের বিলুপ্তি হোক।

নিষিদ্ধ উষ্ণতায় তপ্ত হয়ে জ্বলে উঠুক, হিমশীতল চেতনারা।

উথাল পাথাল করা একটা  নিষিদ্ধ প্রেম আসুক,

নরম জড়ানোয়, একটা বলিষ্ঠ প্রেম আসুক। অবেলায়, একটা নষ্ট করা প্রেম আসুক। তবুও আসুক।







প্রিয় খাবার

বি ধা ন  ঘো ষ


খাওয়া ছাড়া জীবনে
আর কি আছে ভাই!
যতদিন বেঁচে আছি                                                      
ভালোমন্দ খেয়ে যাবো,
খেয়ে যদি মরণও হয়
কুছ পরোয়া নাই!!

আসলে আমি মানুষটা যে
বড়োই পেটুক!
খাওয়াতেই আমার যত আনন্দ
খাওয়াতেই পাই সর্বসুখ!!
কেউ যদি খেতে বলে
সেথায় আমি পড়ি বসে!
কে কি ভাবলো তাতে আমার
কিইবা যায় আসে!!

খাওয়াতে আমার নেইকো
কোনো বাছবিচার!
যা কিছু জোটে
নিমেষে করি সাবাড়!!
অল্প-স্বল্প খাবারে আমার
ভরে নাকো পেট!
হোকনা সে বিরিয়ানি
কিংবা কবিরাজি কাটলেট!!

সকালে উঠে আলুর দম
আর গরম গরম পরোটা,
খাই গুনে গুনে গোটা বারোটা! 
দুপুরে যদি হয় সরু চালের ভাত,
আর কষা মাংস!
আমি হামলে পড়ি, নিমেষে করি
সবকিছু ধ্বংস!!
বিকেলে জলযোগে আমার চাই
সিঙ্গাড়া কিংবা কচুরি গরম গরম!
সঙ্গে খান দশেক গুড়ের রসগোল্লা
আর গোটাকতক লর্ড চমচম!!

আর শীতের রাতে যদি হয়
পিঠে-পুলি কিংবা পাটিসাপটা,
খুশিতে ধরেনা মন---
নেচে ওঠে প্রাণটা!!
সারাটা দিন খেয়েই যাই
তবু করি খাই খাই-- 
কিছুতেই ভরেনা আমার মনটা!
যতক্ষণ না খাই আমি
বৌয়ের মুখ ঝামটা!!







ওহে ঝরাপাতা

ছ ন্দা  দা ম


ওহে ঝরাপাতা, শোন্ আমার কথা, একটু তো দাঁড়া,
উড়ে তো যাবিই,
কালের ডায়রীর, একটা পাতা, তোর নামে ধরা,
স্থান তো পাবিই।

যাবার আগে... কিছু হিসাব আছে, মিলিয়ে নে না,
হাতে সময় থাকতে,
খেরো খাতার শেষের পাতা গুলো... হলদেটে কালো,
পারবি মেলাতে?

ঝরাপাতা তোর, শিরা উপশিরায়, লেখা বাঁচার যুদ্ধ
সালোক সংশ্লেষের,
মহীরুহ কি মনে রেখেছে...  তোর কাহিনী সবসুদ্ধ?
করলি যা বিনিময়ে তোর প্রাণের!!

রাখে না মনে, তোর মতো লাখো, পড়েছে ঝরে...
বৃক্ষটাকে খাড়া রাখতে,
বছরের শেষে, আবর্জনা তোরা, রেখেছে জড়ো করে
লোকে আগুন জ্বালাতে।

তবু জ্বলে যা, ওরে ঝরা পাতা, কিছুটাক্ষণ তবুও তো
আঁধার দূরে রাখলি,
আমরা তো জানি, কাঁদতে নিজের ব্যথার কান্নায়...
জ্বলে যেতে না হয় তুই শেখালি।।






শীত - আর সব...

প্র ল য়  ব সু


জানো শ্রীতমা, চিলেকোঠার একচিলতে বারান্দায়
ধোঁয়াটে কফির কাপটা হাতে নিয়ে বসলেই
পরতে পরতে খুলে যায় বিশাল তেপান্তর।
ঘাড় ফেরালে উঁকি দেয়
নরম রোদালো- সুরেলা স্বরে,
সে আলোর টুকরোরা হীরের দ্যুতিতে ছড়ায়
যুগ যুগ একলা অপেক্ষায় থাকা ছাদটার কোণায় কোটরে।

কুয়াশার কম্বল খুলে ধীরে আড়মোড়া ভাঙে
মায়াবী শহুরে ধোঁয়াশা সকাল।
মেঘফাঁকে দেখা যায় সারি সারি পোশাকের মর্নিং ওয়াক;
আর পুরাতনী আলমারির মাথায় রাখা
এফএম রেডিওটাতে মান্না দের গান।
ফাঁকা স্টেশন পেরিয়ে দূরের ঝর্ণা পাহাড়ে
আলগা শিশির বিন্দুরা দিনের আলোর পথে
সব মিলায় নিঃসীম অজানা অসাড়ে।

হয়ত শীত আলস্যের ঋতু, অথবা আবদারের,
আসলে গাঢ় রাতে উষ্ণ আলিঙ্গনের   
কিংবা ফিকে জ্যোৎস্নার, নিঝুম স্তব্ধতার।
ভালোবাসার হরিণের মতো
বুকে মুখ লোকানোর ঋতু শীত,
পাখির ডানার মাঝে আগলে থাকা
যত স্থবির সময়ের ভীড়।

সংক্রামক মৃত্যুর হাওয়া এখন দিনান্তরে,
তারই মাঝে কত স্মৃতি, আসে ঠেলেঠুলে হৃদয় বন্দরে,
তবু সব হাওয়া কখনই দীর্ঘশ্বাস নয়;
শীত রাত যত বাড়ে, উষ্ণতা গভীরতর হয়।
গোলাপের অস্তিত্ব - বিষে ধ্বংস হয় না কখনো...







বেশরম

কা বে রী  বো স 

কোনোও সিকবা না রেখেই ভিজে 
গেল কলকাতা ...
তুই ও  কি ভিজলি নাকি অনুমিতার 
বেশরম প্রেম আজ দুপুরে!!! 
হঠাৎ করে মেঘের আঁচল উড়িয়ে 
হুড়মুড়িয়ে ঝরঝরিয়ে ভিজিয়ে গেলো 
সব্বাই কে......
বন্ধ আগল খুলে গিয়ে ভিজিয়ে দিলো উষ্ণতা কে
দুপুর বেলার নিদ টুটিয়ে উড়িয়ে অনু আঁচলটাকে;
বুঝিয়ে দিল প্রেম নয়কো বেশরম আজ বারিস ভী হ্যায়!!!!






অনাথ

উ জ্জ্ব ল  অ ধি কা রী


আমি মাগো ভাবছি বসে বসে
 আমায় ফেলে গেলি কোন সাত সমুদ্র দেশে।
আমি তোর অপেক্ষায় বসে নদীর ঘাটে এসে 
কলসি কাঁখে যাচ্ছে কারা, মায়ের মত সেজে 
দৌড়ে গিয়ে পথের মাঝে রাস্তায়  দাঁড়াচ্ছি বেঁকে 
যদি তুই মা হোস, একটু দাঁড়াবি কাছে এসে।
বলবি-, খোকন একা কেন, কি করছিস হেথায়?
আয় বাবা আমার কোলে যাচ্ছিস তুই কোথায়।
একবার যদি আমার কাছে আসিস পাশে মা 
তোকে আমি আর কোনোদিন যেতে দেবো না।
মনটা আমার জুড়িয়ে যাবে তোকে পেলে মা ।
তোর বুকেতে মাথা রেখে হারিয়ে যাবো সপ্ত সুখে 
যখন, কেউ বলবে ডেকে কোথায় পেলি মা?
আমি বলবো সবাইকে ডেকে ডেকে-
এই দেখনা এসে গেছে আমার হারিয়ে যাওয়া মা।
 
জন্ম যখন হয়ে ছিল তোর কোলে
 এক নিমিষে দেখে ছিলাম তোকে নয়ন মেলে
আমি তখন উঠেছিলাম  খিলখিলিয়ে হেসে 
আমি ছিলাম যে তোর  বুকের মাঝে সেই সময়ে ঘেঁষে।
পাশ ফিরে শুয়ে ছিলাম যখন, আমায় ফেলে গেলি মাগো কখন।
ঘুম ভেঙ্গে দেখলাম না আর তোকে, কেঁদেছিলাম ব্যাকুল  চোখে।
আমি ছিলাম আয়া মাসীর কোলে, 
তোকে আমি খুঁজে ছিলাম  চোখে জলে ভেসে।
তুই মা হারিয়ে গেলি আমার  চোখের পলকের নিমিষে।

আয়া মাসী আমায় নিয়ে অনেক বড় করে 
জীবনটা যে তার আমায় ঘিরে আমায় ভালোবেসে।
তবু কেন মা, আমার এ মন, তোকে বড্ড ভালোবাসে। 
যখন তখন তোর কথা মা, মনে উদাস হয়ে ভাসে 
ভাবি নি মা তোকে ছেড়ে আমি বাঁচলাম কি করে 
মনের মাঝে মাকে ছাড়া কিসের এত যাতনা,
এ যেন বিজয়ের সুর বুকের মাঝে অজানা যন্ত্রনা।।

পাশের বাড়ির বিল্টু যখন মা মা করে ডাকে
আমার বুকের মাঝে কিসের কষ্টে দুঃখগুলো ডাকে
বিল্টু হেসে মাকে গিয়ে জড়িয়ে থাকে ধরে,
আমার চোখে কান্না তখন অবিরাম ঝরে পড়ে।
বুকের মাঝে এত কান্না কোথায় রাখি বল 
মাকে আমি খুঁজে বেড়াই কোথায় পাই চল 
বিল্টু বলে মা যে আমায় অনেক ভালোবাসে
শুনে কথা বুকের মাঝে মায়ের অভাব আসে।
বুকটা চিরে রক্ত ঝরে, বুকের মাঝে সব শূন্য-
কাল কুটিরে বসে আছি, চারি পাশে শুধু অরণ্য।
মাকে আমি কোথায় খুঁজি, কোথায় খুঁজে পাই 
চোখের মাঝে সাত সুমুদ্র বুকের মাঝে ঝড়ের আওয়াজ তাই।
হৃদয় মাঝে কাটাকুটি রক্ত আসে শুধু 
আমি না খেলে, মা  বলে না- আসছে খোকন জুজু।
লোকের মাকে দেখলে পরে মনে হয় একা পৃথিবী  ধূ ধূ 
মাঝ সমুদ্রে নৌকায় বসে একাই ভাসছি  শুধু।
কুয়াশায় ঢাকা চারিদিকে মা ছাড়া সব ধূ ধূ।

ছোট থেকে তোকে খুঁজি,  মাঝ  সমুদ্র একা বুঝি,
জলের ধারা এমন গতি চোখের  কোনে উপচে পড়ে সব পৃথিবীর নদী।
 মায়ের জন্যে এমন কেনো মনের ভিতর করে উথাল পাথাল
আমি কি অনাথ বলে! 
মনকে  পারছি না দিতে সামাল।
লোকের মুখে শুধু শুনি, মা যে আমার ফেলে গেছে এই ভূমি।
তুই যদি মা থাকতিস পাশে, অনাথ কথাটা কি লোকের মুখে আসে।।
চোখের জলে শুধু ভাসি, মনকে বোঝাই মা যে আমার গেছে কাশী।
আমার হৃদয় পাথর করে 
কষ্টগুলোকে  রেখেছি সাজিয়ে রাশি রাশি ।
লোকের মুখে শুধু শুনি,  ছেলের জন্য মায়ের বুকে অপার করুণার ভূমি।
মিথ্যে কথা এগুলো সব, আমি এসব শুনি।
আমার মা  আমার ছেড়ে সেই যে গেল চলে-
আমার কাছে আর তো সে ফিরলো না খোকন বলে।।







সোমরস

অ সী ম  পা ঠ ক 


জীবনের স্বপ্ন আঁকি তোমার বুকে, চন্দ্রালোকিত জ্যোৎস্নার মাদকতায় তোমার মুখে শতাব্দীর ক্লান্তিরেখাগুলি  আমার কপালে এঁকে বলি এসো--- আমার ভালোবাসার মোহানায় মিশে যাও এক নিবিড় পূর্ণতায়, জীবনের মাদকতায় অস্ত গোধূলির সন্ধ্যারাগে প্রেমের সোমরস আকন্ঠ পানে আমি নেশাতুর হতে চাই, আমি যে প্রেমের পূজারী, কামনার ক্রীতদাস নই, মৃত্যুর শীতলতায় ডুবে যাবো যেদিন সেদিনও আমার ওষ্ঠে লেগে থাকবে শাশ্বত  ভালোবাসার সোমরস।





পাল্টে ফেলেছি নিজেকে

প ল্ল ব  ভ ট্টা চা র্য  অ ন ন্ত


পাল্টে ফেলেছি ঘর;
পাল্টে ফেলেছি পুরোণো আসবাব।
ধুলো ঝেড়েছি,
তুলে ফেলেছি দেওয়ালের চটচটে রঙ।
পুরোণো যা কিছু চলে গেছে 
পুরোণো মানুষের সাথে,
নতুনের আবাহনে।
স্মৃতির দেরাজ থেকে বাছাই করি
যন্ত্রণা দেওয়ার মতো স্থির বর্জ্য উপকরণ।
স্তুপাকার বর্জ্যের ভিতর থেকে
অতর্কিতে উঁকি মারে 
হারিয়ে যাওয়া গল্পের বিবর্ণ পাণ্ডুলিপি।
জানলা দিয়ে বাতাস আসে,
পাতা উল্টে যায়
হারিয়ে যাওয়া গল্প আবার মনে আসে ফিরে।
ছেঁড়া পাতায় অশ্রু ঝরে পড়ে
ধুলো মাখা শব্দগুলো আবার নড়েচড়ে
বিলিকাটা আঙ্গুলের নখরের ঘায়
আবার যেন কথা বলে, আবার যেন চায়।
পাল্টাতে চেয়েছিলাম ঘর,
পাল্টাতে চেয়েছিলাম গৃহস্থালি,
নিরলস পাল্টানোর প্রচেষ্টায়
নিজেকে ছাড়া সবই রয়ে গেছে স্থিরবৎ।।






আমি কবি নই

সৌ র ভ  স র দা র


কবি হলেন চির ভাবুক
মধ্য রাতের স্তবতা তার মনের পাঁচিলে
তিনি রবিকে দেখেন আগুন গোলা,
পূবালীকে কহেন স্বর্গপুতঃ,
এমন ভাবনা আমার কই?
না কবি আমি নই ।

সূর্যাস্তের মৃদু আলোয় ওড়ে পাখির ঝাঁক
বাতাসের মিষ্টি গন্ধ মাতায় চারিপাশ,
কাশবনে অলির খেলা অপূর্ব ভঙ্গিতে
সোনার ফসল মাথা নাড়ে পরম আনন্দেতে,
প্রকৃতির এই রকম দেখেও, আমি চুপ রই
কাজেই, আমি কবি নই।

গহীন তমসায় ডুবে ধরা, তার বড়ো অসুখ
অর্থ পিছে অন্ধ সবে, হাতের পাশেই স্তব্ধ সুখ,
তাদের মান মনুষ্যত্ব ক্লান্ত মরচে ধরে
স্বার্থান্বেষীর বীজে তাদের মন গেছে ভরে,
তবুও আমি বিবশ হয়ে তাদের মাঝে রই
আমি তো কবি নই।
শিশুসম অবোধ আমি, অল্প দুঃখে কাতর হই
অগণিত জনসমুদ্রেও আমি ভেসে রই
সুখের খোঁজেও আমি ফিরি নিশিদিন
হাতে গোনা পাঠক আমার 
আমার লেখনী ধরামাঝে প্রান ফিরে পাচ্ছে কই?
না--- আমি কবি নই।






সাদা-কালো অক্ষর

জ য়ী তা  চ ক্র ব র্তী  আ চা র্য


ছেঁড়া পাতাগুলো আজ কেমন,
বিষন্ন মনে তাকিয়ে আছে!  
আঘাতের পেন্সিল নেই,  
সাদা-কালো অক্ষর গুলো,,
অপরিচিত হয়ে ম্লান হয়ে গেছে, 
যা কখনো ছিল না- নিস্তব্ধ আঁধার ফোঁপানো ইচ্ছেগুলো  লিখে রাখা যায়, বিনিসুতো মালায়। 

কত বিনিসুতো মালা ছিঁড়ে গেছে অসময়ে,
ঝরা পাতার কাব্যে আমার শেষ ঠিকানা!

তোমাকে বর্ণপরিচয় জানতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। 
উপপাদ্য সম্পাদ্য, তাও না। চিরহরিৎ দুঃখরা তো আদর্শলিপি পড়ে না…

নিঃশব্দের ঘরে রঙের আঁচড়, 
তোমার-আমার মাঝে বয়ে চলেছে অমীমাংসিত তিস্তা…
হৃদয়-জমাট আকর, অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানে।






প্রেমের উৎস

স ঞ্জ য়  কু মা র  ক র্ম কা র


বিস্ময়কর দৃশ্যপট: 
 অখন্ডরূপে মুক্ত স্বাধীন চেতনা, 

মায়াচ্ছন্ন জীবন বোধে ভালোবাসাটা যেন এক চিরন্তর অনুভূতি। 

অদম্য অভিলষিত জীবনবোধ,
থেকে থেকে আনন্দ-বেদনায় জীবনটাকে সঞ্চারিত করে যায়।

"দ্য গ্রেটেস্ট হ্যাপিনেস অফ দ্য লাইফ...
ইজ কনভিকশন দ্যাট উই আর লভট,

প্রেমিক সূর্য যখন সম্পূর্ণ জগত আলোকিত করে যায়,

তখন রক্তিম উল্লাস বেয়ে সিলিকার উত্তপ্ত আঁচলকে সন্ধ্যায় মিশিয়ে নিয়ে আসে।

নিপুণ চিত্রগুলি তখন ধীরে ধীরে হৃদয়স্পর্শী হয়ে উঠে...

আলগোছে হাত বাড়িয়ে তখন অঙ্গে অঙ্গে জাগে শিহরণ,

কৌতুহলী দৃষ্টিগুলো তখন প্রযত্নের সহকারে ইচ্ছাপ্রণোদিত ভাবে আশ্বাস যুগিয়ে দিয়ে যায়।

অবারিত উদার আকাশ, মুক্ত বাতাস ছুঁয়ে পাখিদের অশ্রুত ধ্বনির আভাস...

বেণী বাঁধা সবুজের পাতায় আলোর আড়ম্বরে সূর্যের রশ্মিতে সজীবতার উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে দিয়ে যায়।

শৈল্পিক বিপন্নতা ছেয়ে ভেসে চলা পেঁজা মেঘের অলীক,

ধেয়ে আসা সুদূরপন্থী  হাওয়া, তখন সাধনের সঙ্কল্প নিয়ে উড়ে চলে কতই  তিতির শালিক,

অস্থির দৃষ্টি নিয়ে অলিন্দ আলোর খোঁজে যখন দৃষ্টি আকর্ষণ করে যায়,

নিস্পন্দ দৃশ্যমানে তখন ভাবাই ধাঁধানো অজস্র রূপের লীলা, 

ভূষিত কল্যাণ আলোকে যখন  সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে,

বিমূর্ত নষ্টালজিয়ায় স্বপ্নে আঁকা পাখনাগুলি অনবরত  বাসনা নিয়ে ভেসেই চলে...

নিঃসাড় ক্লান্ত গোধুলি ঘিরে করুণ নিঃশ্বাসে যখন অস্তরাগের বাঁশি বাজে,

স্বর্গপ্রাপ্ত কণ্ঠ থেকে বাশিঁর তালে সুরের সাধনায় অমর প্রেমের বার্তাগুলি ভেসে আসে... 

ছুঁয়ে যাওয়া বাতাস, দুলিয়ে ওঠা গাছের শাখা,

বিমূঢ় হয়ে ভবঘুরে সোনার ঝালর হাতে...
মনে পড়ে সেই অরফিউস ও  ইউরিডাইসের প্রেমগাঁথা।

অসীম প্রেমের উৎস নিয়ে নিঃশব্দ হাহাকারে চেয়ে রয় সেই পৌরাণিক দ্বীপ,

বিপদগ্রস্ত শহর, নির্লিপ্ত নাগরিকের জীবন,

প্রতিটা মূহুর্ত শঙ্কায় ভরা, রূপের লাবণ্যে রোদ, বৃষ্টি, ঝড় সবকিছুর সাথেই অতিক্রম করে যখন  নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলে।

ঘন শোকের শব্দে বিচ্ছিন্নতায় দুর্বলতার সমাগমে  আকাঙ্ক্ষার মধ্যে সবই যেন ধ্বংস হয়ে যায়।।





ও আকাশ

নি ভা  চা ক লা দা র


ও আকাশ সেজেছো মনময়ূরী
 আজ এ সাঁঝের বেলা ঐ আবডালে,
নাগাল পেলে একটু সোহাগ করি। 
 
 রামধনুর সাত রঙা উড়নি মেলে 
হেমন্তেরও পরশ মেখে 
যেয়োনা এখনি চলে। 

মনোহরণ চপল চরণ
 সেই সোনার হরিণ
 চেয়ে আছি অপলক নয়ন।

কেন মিছে চেয়ে থাকি 
 এসো না আরও কাছাকাছি 
 খানিক রঙ মনেতে মাখি। 

 রাতের আঁধারে মিলাবে 
 রঙের সকল ছটা 
 এক একটি তারা  ফুটবে। 

অমানিশার ঘোর কালো আঁধার 
সে যে ভয়ঙ্কর এক রূপ 
শঙ্কা জাগে কখন আবার। 

জনশ্রুতি, তুমি নাকি মরণের ওপারে
ঠাঁই  হয় অবিনশ্বর আত্মার সে দিন কি পাব তোমায় 
এমনই আপন করে!

 কত শত আপনার প্রিয়জন 
 আছেন ঐ তারার দেশে 
 হবে কি পুনর্মিলন অবশেষে?







দুইহাত

অ জি ত  কু মা র  জা না 


ছাড়পত্র পায় শীত, 
হিমের লাঠি মারে, 
অসহায় হেমন্তের মাথায়। 

শব মিশে অদৃশ্য কোথায়!

শীতের ভিতরে চাঁদ ওঠে,
শাক-সবজির চকচকে শহর।
রসের ভাঁড়ের বাঁদুড় নাচ, 
পাতায় পাতায় হিমের খঞ্জনী।
খেজুর গুড়ের রোদ, 
গায়ে মাখে সকাল। 

নীচের সিঁড়িতে ছেঁড়া জামা কাঁদে, 
অপেক্ষা বসে থাকে,
রোদের সহানুভূতির হাত।

গুটিসুটি মারে অন্ধকার, 
ঝোড়া ঝোড়া শিশির ছাদ, 
শীতের ভালো-মন্দ দুইহাত।






গল্পটা হোক তোমার আমার

ভা র্গ বী


ভীষণ একটা রোদ উঠেছে
আলোও যেন ক্লান্তিকর
ভীষণ একটা জোৎস্না রাত
জমাট তবু অন্ধকার।

ভীষণ একটা লাল গোলাপ
বইছে সেও কাঁটার ভার
ভীষণ করে তোমায় চাওয়া
একলা মনের চুপকথার।

ভীষণ একটা বৃষ্টি হোক
ঘুম ভেঙে যাক রূপকথার
ভীষণ একটা ভালবাসার
গল্পটা হোক তোমার আমার।





শান্ত মন       
                                                             
অ ন্ন পূ র্ণা  দা স


কখনো শান্ত মনে ধ্যান করেছ?
অথবা বলতে পারো ধ্যানে শান্ত মনকে দেখেছ?
দুটোই বিচার করার বিষয়,
এটি একটি উপলব্ধি, যা অভ্যাসের ফসল।
ঠিক তেমনই ঘরে পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলেছ? 
যারা সবসময়ই তোমার খুবই কাছের, 
একবার তাদেরকে সম্মান করো 
শান্ত ভাবে কথা বলে দেখ তাদের সাথে, 
তোমার ঘরের পরিবেশ একদমই পাল্টে গেছে।
আবার একবার ইতিহাস দেখো, দেখবে--- এই নরমপন্থী দল কিন্তু শান্ত মনের প্রতীক, 
যেমন রাজনৈতিক অহিংস আন্দোলন,
শান্তভাবেই আইন অমান্য--- 
শান্ত মনে পাঠের উপযোগিতা তো জানো!
শান্ত মন উচ্চ রক্তচাপের শত্রু,
পেশাগত দুশ্চিন্তার সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে সেই মন। 
সফলতার পথ খুঁজে মেলে ধরে সামনে তোমার, 
কিছুই না, যুদ্ধ নয়, শান্ত মনে শান্তি আনার চেষ্টা সর্বক্ষেত্রে....





শব্দের হাহাকার ও বিন্দু জল

স ন্দী প  কু মা র  মি ত্র


মল্লিকা, 
তুমি কখনো শব্দের আর্তনাদ
শুনেছো? 

হ্যাঁ শব্দেরাও আর্তনাদ করে, 
কি, শুনতে পাওনি তো? 

তবে শোনো, 
মাঝ রাতে চিলেকোঠায় 
ভরা দুপুরে শুনসান পুকুর ঘাটে
উপচে পড়া নদীর পাড়ে ঘাটের 
শেষ সিঁড়িটায়
রাস্তার ডাস্টবিনে নোংরা ঘাঁটা
কোনো---

আকাশ পানে ধেয়ে যাওয়া
নীরব দৃষ্টিতে
কতো শব্দের অলংকার
হাহাকার করে
একটা জীবন খুঁজে পাবার
ঠিকানা খোঁজে 
শব্দের এই হাহাকার শুনতে
মন লাগে---

কখনো শব্দের চোখের জল
দেখেছো?

যে জল 
বৃষ্টি হয়ে নামে পদ্ম পাতায়
তৎক্ষণাৎ নিষ্ক্রমণ ঘটে
সেখান থেকে---

কি আশ্চর্য, 
দেখো, ঐ জলটুকুও
ধরে রাখতে কতো অনীহা!!

অথচ শব্দেরা কাঁদে 
হ্যাঁ হ্যাঁ কাঁদে 
তবে সশব্দে নয় 
নীরবতা বজায় রেখে
সাদা কাগজে, কলম-কথায়।

অজস্র নদ নদী নালা দিয়ে বয়ে
সেই শব্দ হাজির হয় 
সাগরের বুকে

কেউ শুনতে পায় না
শোনার মতো মন
কোথায়---??





অলকানন্দা

চ ন্দ্রা ণী  চৌ ধু রী 


ধীর পায়ে এগিয়ে চলেছি আমি 
কবিতার মতো করে, অলকানন্দা!
পাহাড়ের পাদদেশে বয়ে চলা নদীর,
স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ মাছরাঙা জলে,
পা ডুবিয়ে ডুবিয়ে মেপেছি কত গভীর গভীরতা,
গুনগুনিয়ে রঙিন নুড়িপাথর ছাড়িয়ে,  চলে গেছে দূরে বহুদূরে 
সবুজ জলজ জঙ্গলে, অতলে!
ছড়িয়ে আছে বালিয়াড়ি শঙ্খ ঝিনুক 
চারিধারে---
এগিয়ে চলেছি আমি কবিতার মতো 
করে, অলকানন্দা! 
নদীর কিনারে ছিল মন্দির   যেখানে  বিয়ে হয়েছিল হর-পার্বতীর,
সেই হোম নাকি এখনো জ্বলছে 
ধিকিধিকি-
বিশ্বাস হয় না আমার! 
সেই ছাইপাশ ধোঁয়া ধুনোর গন্ধ মেখে হাতে তুলেছি সুডৌল পাথর,
কোনোটা শিব কোনোটা নারায়ণ ভেবে মাথায় ঠেকাই নিরন্তর! 
বিশ্বাস হয় না আমার, 
প্রতিক্ষণ শুধু মন ভেসে যায় 
অলকানন্দা জলে!
অতল শুধু ডাকে আমায়!
আমার তৈরি শব্দ ভেসে যায়,
অর্থ ভেসে যায়, অলকানন্দা জলে! 
চোখের জল নদীর জল একাকার হয়
এগিয়ে চলেছি আমি কবিতার মতো করে, অলকানন্দা!





একটু পাগলামি থাক

শ্যা ম ল  খাঁ 


একটু পাগলামি থাক,
গতানুগতিক দুঃখ, উৎকণ্ঠা আর বেদনার ঘেরাটোপে
দম বন্ধ জতুগৃহের দক্ষিণ কোণে
একটা পাগলামির জানালা খোলা থাক।

পৃথিবীর আবর্তনের মতোই নিয়মে বাঁধা
সকাল সন্ধ্যার নাগরদোলা,
একই আকাশের তলায় একঘেয়েমির ছন্দে
ঘুরতেই থাকে সারাজীবন।

নাট বল্টু খুলে ছিটকে বেরোবার অমোঘ নেশা
শীতল রক্তে এক এক বার জাগে বই কি!
সেই নেশায় উন্মত্ত হয়ে বয়সটাকে কফিন বন্দী করে
গতানুগতিক সামঞ্জস্য হীন প্রকাশ কে...
তোমরা পাগলামি বলতেই পারো!

হারানো সময়ে,... লজ্জা আর সংকোচের বাঁধনে
যে পাগলামি করা হয়ে ওঠেনি,
বয়সের অজুহাতে তাকে নির্বাসনে পাঠানো
সেও তো আর এক পাগলামি!

বাইরে বয়সের সংখ্যার চলমান সিঁড়িটা কে থামিয়ে 
অতৃপ্ত মন চায় বালক বেলার চপলতা।
কিংবা চায়...
কৈশোরের কৌতূহলে ভাটা পড়ে যাওয়া
আনন্দের স্বাদ... চেটেপুটে খেতে।
অথবা...
যৌবনের উদ্দাম সমুদ্রে আর একবার গা ভাসাতে।

সংকোচের কল্পনায় চারপাশে ঘিরে থাকে 
নানান বিধি নিষেধের চোখ রাঙানি।
বজ্র আঁটুনির ফাঁক গলে ভেতরের আমিটাকে
একটু শীতল জলে ভিজিয়ে নিলে...
হয়তো আরও সতেজ, তরতাজা একটা আমি উঁকি দেবে 
তাতে দোষ কোথায়?

জীবনে একটা বৈচিত্র্যের দুর্নিবার আগমন ঘটুক না!
তা সে খ্যাপামি বা পাগলামি যাই হোক।
একটা সবুজে ভরা সরল ঊর্ধমুখী জীবন তরঙ্গ
মহাকালের শুকনো ডাল বেয়ে...
উঠে যাক না... লাউডগার মতো।






সেই পাথর খুঁজছি

শ্যা ম ল  খাঁ


এখন তো চারিদিকেই আগুন
গৃহস্থের উনুন থেকে শ্মশানের চুল্লি।
কিংবা ধরো--
রাজনৈতিক ভাষণ থেকে দ্রব্য মূল্য,
চারিদিকে শুধু আগুন আর আগুন।

বাঁচার রাস্তা নেই সেও জানি
পুড়ে পুড়ে মরতেই হবে মন না চাইলেও।
সবার হাতেই জ্বলন্ত মশাল,
অন্ধকার দূর করার জন্য তো নয়
একে অন্যকে পুড়িয়ে মারবার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

সম্পর্ক, মানবিকতা সবই পুড়ছে
হিংসার আগুনে।
ঘর সংসার পুড়ে ছার খার
অহং এর আগুনে।

পৃথিবীর চির স্থির আয়তনে
নিজেদের অধিকার কব্জা করার জন্য
ক্রমাগত জমা হচ্ছে বারুদের স্তুপ।

হয়তো কোনোদিন ঘুম ভাঙার আগেই দেখবো
পৃথিবী জ্বলছে
দাউ দাউ করে
তার মধ্যেই পথ খুঁজে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি।

অরণ্য থেকে অরণ্যে
গুহা থেকে গুহায় 
আদিম থেকে আদিমতম রাস্তায় 
আমি সেই পাথর দুটি এখনো খুঁজছি
যাদের ঘর্ষণে প্রথম আগুন জ্বলে উঠেছিলো।





আমি এক ছেলে

পা র্থ  ম ন্ড ল


আমি সেই ছেলে
যার ঘরে অথর্ব বাবা, বৃদ্ধা মা আর দুটো বোন,
আমি সংসারের জোয়াল কাঁধে তুলে নিয়েছি হাসি মুখে।

ঘরে আইবুড়ো দুটো বোন
তাদের মুখের দিকে তাকালে আমার খুব কষ্ট হয়
জানি না তাদের সুপাত্রে দান করতে পারব কি না জানিনা,
একটা অপরাধ বোধ আমায় গ্রাস করে।

হ্যাঁ আমি সেই ছেলে
যে সংসারের জন্য নিজের স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিতে পারে
যে দুবেলা খেটে সংসার চালায়
যার মাথার উপর দু'দুটো অবিবাহিত বোন
তবু সে রঙিন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে।

এ স্বপ্ন দেখাটাকি তার অপরাধ
বোনদের বিয়ে দেওয়াটা কি তার কর্তব্য নয়।

আমি তাই ভাবি আর কাজ করে যাই
হয়তো সুদিন আসবে
বোনেরা আনন্দে হাসবে
আমি দেই দিনের আশায় আছি
হ্যাঁ আমি এক ছেলে।






পটভূমি
  
অ মি তা ভ  দে


পটভূমি ছিলে সমাজতন্ত্রে
আশ্বাসে ছিল যৌথ খামার
অভাব ছিল যে গরম ভাতের
পটভূমি, তুমি দেখছো আঁধার।

মুষ্টিবদ্ধ কত কত গান
কত সমীক্ষা কত যে স্লোগান
হাঁড়িতে বসে না দুই মুঠো চাল
পেটে হাত রেখে জীবনের গান।

বুভুক্ষু মানুষ বোঝে না সমাজ
কেঁদে সারা ঘরে ছোট মেয়েটা
যৌথ খামার যৌথ আওয়াজ
গরম ভাতের হবে ঘনঘটা।

জীবন জুড়ালো নিশি অবসানে
ক্ষুধিত হৃদয়ে বিদায় ভাষণ
পোষ্টার পড়ে গরম ভাতের
খালি পেটে তবু আন্দোলন।

বিমান বুদ্ধ মানিকের দল
যৌথ ভাবনা সমাজ চেতনা
ক্রুর কুটিল জীবনের ভিড়ে
ব্যর্থ প্রয়াস সমাজ রচনা।

একমুঠো ভাত ছিলে পটভূমি
তোমার কাব্যে ভরেছে ধরণী
বিষন্ন কোনো অবসর দিনে
সেই মেয়েটি হলো যে কাহিনী।।






বিপন্ন হৃদয়

সু ল তা  পা ত্র


ওগো হৃদয়, আজ তুমি মোর মনের দুয়ারখানি খোলো, 
আজ মনের মাঝে আঁকবো কেবলই, বেদন ভরা আমার স্মৃতিগুলো। 
লাল বেনারসি পরে, কলা গাছ, আম্রপল্লব, ফুলে সাজানো বিবাহ কুঞ্জে, বিয়ে হল সতেরো বছরে, 
স্বামীর হাতের সোহাগ সিন্দুরে, রাঙিয়ে সিঁথি এলেম শ্বশুর ঘরে। 
কাল রাত্রির অবসানে,  ফুলশয্যার রাতে আমরা ভাসলাম প্রেমের সাগরে, 
পরের দিন হঠাৎ বার্তা পেয়ে তুমি চলে গেলে, দেশ সেবার কাজে কোন সুদুরে! 
চার দিন পর তোমার প্রাণহীন দেহ, ফিরলো কফিন বন্দি করে, 
করলে আমায় বিধবা, অলক্ষ্মী বলল পাড়ার সবাই নির্বিচারে। 
সাদা থানের ভাঁজে ভাঁজে, লুকোলো এক অসহায় বিধবার ক্রন্দন, 
কেড়ে নিলে আমার শাঁখা, পলা, রূপ, রঙ, হাসি আর স্বপ্নের স্পন্দন। 
ফাগুনের পলাশ, শিমুলে আমায়, আজও জড়িয়ে ধরে তোমার প্রেমের চাদর, 
রাত জাগা পাখির ডাক শুনে, জেগে থাকি আমি রাত ভোর। 
আমি খুঁজি না তোমায় জোনাক জ্বালা পথে, খুঁজি না বকুল তলায়, 
আঁখিপাতে অশ্রু নিয়ে তোমায় যে খুঁজি ওগো, আকাশের তারাদের মালায়। 
তোমার ছেলে তোমার মত হয়েছে বীর, সফল হয়েছে আমার অভিশপ্ত জীবনের ব্রত, 
আজ একবিংশ শতাব্দীতেও, আমি হয়েছি লাঞ্ছিত, অবহেলিত নিত্য। 
একা থাকা হলো না আমার,  একাকীত্ব আসে যে বারংবার, 
দুঃসহ স্মৃতি সেও আসে, যখন জীবন হয়েছে ছারখার। 
কি আছে আর অবশিষ্ট?  ঝড়ো হাওয়া সেগুলো উড়িয়ে নিতে চায় অবেলায়! 
আঁখির নোনা ঢেউ সেও আসে, অপ্রাপ্তির ছোঁয়া ভরা এই জীবনটায়। 
নির্জনতা সেও যে আসে, রাত দুপুরে এসে বসে আরাম কেদারায়! 
আমি তো জানি, আমার নিদ্রাহীন আঁখিপাতে, কারো হাতের পরশ আর আসবেনা, 
আমি তো জানি, খুব ভালো থাকবে তুমি আমি তো আছি, কেউ আর বলবে না!






হাঁদুখুড়োর ইচ্ছে

সু শা ন্ত  ঘো ষ 


হাঁক পাড়ে হাঁদুখুড়ো-
নিয়ে আয় টোপর কিনে, পরে দেখি একবার 
ইচ্ছে করছে বিয়ে করতে, 
মন করে আনচান, 
বিয়ে করি আর একখান
টোপর মাথায় নিয়ে পরতে। 

হাঁদুখুড়ো বলে আজ-
তোদের খুড়িতো মরেছে কবে,
হিসেব নেই তার 
জন্মে হয়েছে বড়ো সেখানে,
আবার করবে বিয়ে কনে সেজে উলুধ্বনি দিয়ে 
আমি কেন একা থাকি এখানে?

যুক্তি দিয়ে বোঝায় খুড়ো- 
আমার বয়সটা বেশি নয়- চার কুড়ি সাথে পাঁচ
নতুন খুড়ি খোঁজ মিলবে, 
এক কুড়ি পেরিয়ে থাক-না'হয় নতুন খুড়ির বয়স
তবে তো জুড়িটা চলবে।

অনুজীব নিয়ে খুড়ো বলে-
অনুজীব থাকুক দেশে 
দেরি করে আর লাভ নেই 
বিয়েটা সেরে ফেলি এখনই,
মেয়েদের বাড়লে বয়স দেখতে কি লাগে ভালো 
বসন্ত পালিয়ে যায় তখনই।

পণের বিরুদ্ধে খুড়ো বলে- 
মোলায়েম হাতের ছোঁয়ায়, কোলে টেনে মাথাখানি 
আদরে ভরিয়ে দেবে যত্ন, 
চাই না কিছুই পণ- গাড়ি মেয়েকে দেবে একখান
আমার চাই না কোন রত্ন।

চাঁদুখুড়োর আজ ভীষণ ইচ্ছে- 
ছেলে মেয়েরা ফাঁকা মাঠে, ঢলে পরে গল্পে মেতে
লাইসেন্স নেই কারো সঙ্গে, 
খুড়ির সাথে জড়িয়ে ধরে, হারিয়ে যাই ওই মাঠেতে
প্রেমের জোয়ারে বাঁচি রঙ্গে।







ধরি পারি যতো

ব দ রু দ্দো জা  শে খু


হাঁটতে আমার ভালোই লাগে, রঙ-বেরঙের খেলা
চলছে দেখি চারিপাশে, দৃশ্যরাজির মেলা
মনকে টানে পথের পানে সকাল বিকাল হলেই---
কিছু কিছু অসুখবিসুখ  সামলে রাখবো ব'লেই
এমন প্রয়াস, তাই বারো মাস সুস্থতাকে সাধি
যথাসাধ্য, খাদ্যাখাদ্যের অনেক বাঁধাবাঁধি
আছে, পুরো পথ্যবিদের তালিকা মেনে চলি, 
তবু ভুলে' যাই মাঝে মধ্যে ---স্মৃতির কানাগলি
ঝিমিয়ে পড়ে অল্প দিনেই ঝুলকালি ধূলায়;
ধুত্তরিকা! আবার তখন ফর্দে চোখ বুলাই
ব্যাজার মনে, অকারণে বার-তারিখও ভুলি
হরহামেশাই, এমন দশায় বিরক্তির অঙ্গুলি
গজিয়ে উঠে চারিপাশে পরিবারের বৃত্তে,
কারুকৃত্যে বন্ধ্যাত্ত্ব আসে সরল উদার চিত্তে;
সত্যে-মিথ্যে জীবন গড়া ধরাচূড়ার দৈন্যে
এক বুক মালিন্য নিয়ে  লেখালিখির সৈন্যে
পরিণত হওয়ার লক্ষ্য হচ্ছে  অপাঙ্ক্তেয়
দিনে দিনে, গুলিয়ে যায় কর্তব্য বিধেয়,
শ্রেয়ঃ মানি তবু আত্মার মৌন আবেদন-- 
আনন্দ-বেদনাগুলি  ঝিরঝিরে শিউরণ
দিয়ে যায় অবসরে, লতাপাতার মন
কাঁপতে থাকে, হৃদয়-বৃত্তির  ক্ষণিক রত্নধন
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপচে' হঠাৎ  তরঙ্গের মতো--
তরঙ্গেয় মিলিয়ে যায়, ধরি পারি যতো।







চিতাকাঠ

গৌ রা ঙ্গ  সু ন্দ র  পা ত্র


পুড়ে পুড়েএকা পড়ে আছে চিতাকাঠ
শ্মশানের বুকে।
কে বলবে মানুষটির প্রেমের মতোই
এক সময় সতেজ সবুজ ছিল
এই চিতাকাঠ, চেরা আকাশমণি,
জ্বলে পুড়ে গেছে সব
মানুষটির অভিমানগুলি।
ছাইভস্ম  নদীজলে গেছে বয়ে
তবু থেকে গেছে কিছু স্নেহ ভালোবাসা 
নির্বাক ডিমের মতো বধূটির দেহে ও হৃদয়ে।
আর যত বেদনা থেকে গেছে মূক সাহারায়
এভাবেই মানুষের দিনরাত্রি সব বৃথা যায়।

পুড়ে পুড়ে একা পড়ে থাকে চিতাকাঠ
শ্মশানের বুকে।






বেঁচে থেকো

ত নু জা  চ ক্র ব র্তী


ভালো থেকে   ভালো রেখ
             ভালোবাসা 
            বেঁচে থেকো।

      চঞ্চল                নির্ঝর  
              বলে যা'ও, 
               তারপর ?

আছে শুরু     নেই শেষ   
          ভালো আছি
             এই   বেশ!

অভিমান       অনুরোধ 
          কাটে মেঘ 
          শোধবোধ।

বারোমাস   প্রেমে পড়া 
           রোগটাই
            মন গড়া

তবু চায়       প্রেম রোগে 
           আমরণ 
        যেন ভোগে।

কাটে সুর   কাটে তাল 
          রাতদিন 
          ভুলভাল--

বকে যাও     যত পারো 
            ঘুম নেই 
        চোখে কারো।

পথ চেয়ে     বসে থাকা 
          চেনা পথ 
         আঁকাবাঁকা 

ফেরে তা'ও    নীড়ে তার
           সুখপাখি 
            সংসার।

ভাঙা গড়া      মিলমিশ 
         ঠোঁটে ঠোঁটে 
           ফিসফিস 

অন্তিমে     হাতে হাত 
      নোনা জল 
        ধারাপাত।







হেমন্তিকায়

কা বে রী  রা য় চৌ ধু রী 


হিমেল হাওয়ায় শীতের আমেজ
ভোরের ঘুমে আড়মোড়া ভাব।
চোখ মেলেই কণকবরনী আকাশ
রশ্মিছটায় রাঙানো ফুলেল জলসা।
বেহাগ যেন না পায় ভাষা, সোহাগ রঙিন কুঞ্জবিতান
পাতার মর্মর ধ্বনিতে নূপুর পায়ে ঘূর্ণিবায়।
নদীর জলতরঙ্গে স্বর্ণালী হাসি প্রতিবিম্বিত
বাইছে তরী উজানে উথাল ঢেউয়ের দোলায়।
মাঝির মনে পুলক জাগে প্রিয়ার প্রেমের সুরভি
মিলনে অধীর সুরসাগরে গাইছে ভাটিয়ালি।
সোনালী ধানে ঢেউ খেলানো রবির ঝিলিক হাসি
গ্রামের ঘরে সোনালী ফসল সোনার চেয়ে দামী।
বেলা ছোট তিলককামোদ রাগে গধুলি 
রাত্রিটা বড় হেমন্তিকায় উষ্ণ ওমে প্রেম সোহাগী॥






রূপকথাদের ভিড়ে

কা বে রী  রা য় চৌ ধু রী 


রূপকথাদের ভিড়ে বাস্তবটা উধাও অচিরে
সারা জীবন বয়ে চলে রূপকথা স্বপ্নের আলেয়া!
ওঠানামা করে স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে পরীদের দেশে
গভীর নিদ্রায় হীরে পান্না মণিমানিক্য অক্লেশে মুঠোতে!
বাস্তবের অপূর্ণতা রূপকথা নগরীতে জাদুকরী মায়া
শৈশবের ঘুমপাড়ানি গল্পগুলো রাতের স্বপ্নচারিতায়!
বাস্তবের পটভূমি ভুলে ক্ষণিক সুখের রজতশুভ্র জ্যোৎস্না
ইচ্ছেগুলো আতসকাচে রঙিন জলছবি চোখের তারায়!!






শীতল হাতছানি

কা বে রী  রা য় চৌ ধু রী 


কুয়াশা চাদরে বরফে আবৃত পাহাড়
বনবনানী সবুজে প্রেমের আমন্ত্রণ।
শীতল হাতছানি বয়ে নিয়ে বুকের ভেতর
অমোঘ টানে বনলতা নিয়েছে আশ্রয়।
রোদ, বৃষ্টি, ঝড় মানিয়ে নিয়ে মিলনের সেতুবন্ধন
স্তব্ধ মনে শিকড়ে বেঁধেছে সোহাগের মায়াজাল।
প্রত্যাশাহীন ভালোবাসা অনুভবে চিরন্তন
মেঘকে ভালোবেসে পাহাড় বিরহে কাতর।
বনছায়া মূর্ত প্রেমে ত্যাগের মহান দৃষ্টান্ত
অবারিত মন উদাসী হাওয়ায় রচেছে মুক্তির সীমান্ত॥





এটা কোনো কবিতা নয়,এক পশলা চোখের জল

শি খা  না থ


আমি এক শানাইওয়ালা, 
মন্দিরের নহবতে বাজে সুর খুব ভোরে,
 মায়ের মন্দিরের দরজা খোলে, 
মঙ্গল আরতির ধুপ গন্ধ ছড়ায়, মা জাগেন…।

মন্দিরের বাইরে…
 হরিমতি নাকে তিলক কেটে হরি নাম করে…
ছোট্ট দুটো কর্তালে তাল রেখে গায়, মা হয়তো শোনেন…
ভিক্ষের কাপড়টা তখন পাতেনা…
দু'হাত জোড় করে প্রণাম সারে
দু'হাত পেতে চোখের জল নিয়ে ভিক্ষে চায়…

আমি এক শানাইওয়ালা,
দিন যাপনের  ফেরিওয়ালা…
শানাই বাজে, বিয়ে বাড়ির বার বারান্দায়...,
ব্লু টুথে...
শিখেছিলাম রাগ-রাগিণী আব্বার কাছে…
এখন তেমন কাজে লাগেনা…
ছেঁড়া কাপড়, ছেঁড়া টুপি নিয়ে, নহবতে নয়
 বাইরে মন্দিরের কোনায়।
সুর বাজে, ভৈরবী নয় অন্য কোনো কিছু
চোখের জলে হয়তো ভ্রষ্ট রাগ,

তখন এতটা অন্ধকার নামেনি…
বিয়ের আসরে পড়তো ডাক…
আব্বার  পোশাক ঝলমলে, জরির টুপি…
আম্মি জান গায়ে আতর ছিটিয়ে দিতেন…
চোখে সুর্মা…
আম্মিজানের থুতনি ধরে আদর করে
সঙ্গীদের নিয়ে বেরিয়ে যেতেন আব্বা।
বাবুদের ঘরের বায়না সাত দিন ধরে মুজরো,
ছোট্ট আমি স্বপ্ন দেখতাম এরকম কিছু…

দিন বদলের ডাক এলো, ধীরে ধীরে কমলো  রোশনাই
আম্মি গেলো, আব্বা গেলো, 
আমার সুর টানা রিক্সার চাকায় বন্দী হলো,
আমি মাল বয়ে মুজরো করি..,
আমার শাদি হলো বচপনা চলে গেলো…
সংসারের জিম্মেদারি বাড়লো…।
মুন্না এলো বড়ো হলো বিবি লিয়ে চলে গেলো…

বহুত বড়াপন থা বাবু, বানারাস হামার দেশ,
কই দেখলো না.
নাব্বই সাল কে বুড়াপেমে মা দেখছেন…
ভোর বেলা সুর লাগাই বে সুরা তাই হয়তো
মা  সু নেন…
হামাদের দুটা পেট কে মা খালি রাখেনা,
দোয়া মাঙ্গী মা তুলে লও হামদের দু'জনকে।

আমি এক শানাই ওয়ালা একটুকুন বেসুর শুনবেন বাবু,
ভিখ না, শিল্পী ভেবে সম্মানটা দিয়ে যান।





অবেলায়

ক বি তা  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়


হেমন্ত বোধহয় শেষ হয়ে এলো
অথবা হয়েও গেছে;
ক্যালেন্ডারের পাতা ওল্টাইনি অনেক দিন,
অথচ অনুভব করি 
রোজই একটা করে সংখ্যা মুছে দিচ্ছি ক্যালেন্ডার থেকে।

মনেমনে আমলকি পাতারা ছুঁয়ে যায় আমাকে;
কখনো হিমালয় ছুঁয়ে কথারাও 
কিছু বলে যায় কানে কানে,
এঁকে দিয়ে যায় একটা মুখ;
মনে পড়ে যায় একটা গল্প...

সেই যে ছোট্ট মেয়েটা 
ফড়িং ধরতে গিয়ে
অবাক হয়ে দেখ্তো পাহাড়টাকে,
গোড়ালি-ডোবানো নদীর জলে
জল-ছপাছপ খেলা সেরে কুড়োত চকচকে নুড়ি-পাথর!
কখনো স্কুলে যাবার সময় 
পরের বাড়ির লাউ-মাচায় রঙিন প্রজাপতি তাকে ভুলিয়ে দিতো সময়,
কিন্তু স্কুলের ঘণ্টি শোনা গেলেই দে ছুট...দে ছুট...

সেই মেয়েটা হারিয়ে গেলো
শহরের রুক্ষ হাওয়ায়, কিন্তু 
আঘাতে আঘাতে কৃত্রিম হয়েও হারাতে চায়নি সেই দু-বেণী বাঁধা মেয়েটার ছবি...
তাই মাঝে মাঝেই ধুলো মাখা বাক্সের নুড়ি-পাথর গুলো 
হয়ে যায় হীরে,
ঘোলা চোখে কিশোরীর চমক!

তারপর কেটে গেছে দিন, মাস, বছর---
পাহাড়ি নদী কখনো উত্তাল কখনো শান্ত;
প্রজাপতি, ফড়িং হয়তো আজও বসে লাউয়ের মাচায়;
পাহাড়টাও সলমা-চাদর জড়িয়ে নেয়
যখন অন্ধকার নামে উপত্যকায়।
শুধু মেয়েটা আজ
ঝাপসা চোখে দেখে শৈশব, যৌবন আর আগামীর অনিশ্চয়তা...

গল্পটা মনে পড়তেই মনটা যেন কেমন হয়ে গেলো---
গিয়ে দাঁড়ালাম ব্যালকনিতে,
ক্যালেন্ডারের পাতাগুলো ছিঁড়ে 
উড়িয়ে দিতে লাগলাম একটা একটা করে;
উত্তুরে হাওয়ায় উড়তে লাগলো সেগুলো---
কিছু পড়লো আমার চোখে মুখেও...

আমার ভালোবাসার দিনগুলো হারিয়ে যেতে লাগলো আস্তে আস্তে...
দেখলাম অপলক চোখে চেয়ে,
ওরা হারিয়ে যাচ্ছিলো, যেতে দিলাম ওদের;
যেতে দিতে হয়...
নাহলে যে কষ্ট পেতে হয়!!





অধুরা স্বপ্ন

অ মি ত  চৌ ধু রী (সি ন্টু)


কাল রাতে যা স্বপ্ন দেখেছি বলেছি তারে আমি ডেকে,
যদি ভুলে যায় সকাল হতে মনে করিও দিও আমাকে!
আমি তো করছি অপেক্ষা তার-ই  কখন সে বলবে এসে,
জানা ছিল না স্বপ্নের মাঝে ভুলে যাবো আমি তাকে!!
যদি মনে হয় বলবো তারে বলেনি কেন সে আমাকে,
উত্তর হয়তো আসবে একই মনে ছিল না তারও
বলতে হতো কাকে!






নির্লিপ্তি

সু ম ন্ত  চ ক্র ব র্তী


ইদানীং আর তেমন কিছুই গায়ে মাখি না।
রৌদ্র সাবান, মান অপমান, 
কে রুষ্ট হোলো, ভূত ভগবান, 
কোথাকার জল গড়ালো কোথায়? 
কার ঘুম হচ্ছে না খু্ব ঠাণ্ডায়। 
কার পেটে খিদে, কেন অসুবিধে, 
পাগলটা কেন একা একা কাঁদে?
ওসব কিচ্ছুটি মনে রাখি না। 
কারো বেদনাই আর বুকের গভীরে আঁকি না। 
কি হবে ওসব সাত পাঁচ ভেবে, 
যে সূর্য ডোবার ঠিকই ডুবিবে। 
আমি খামোখাই আর তাকে জলে নেবে, 
হুঁশিয়ার করে কাঁচা ঘুম ভেঙে ডাকি না। 
কে কবে জানি কি বলেছিলো?
কার বোকামিতে কে কি হারালো, 
কেবলই নিজের শান্তি নষ্ট, একদমই মনে রাখি না। 

কৃষকের ঋণ, কেন বাড়ে প্রতিদিন, 
শ্রমিকের কেন ফেরে না সুদিন, 
দাম কেন তেড়ে, শুধু যায় বেড়ে, 
কারা বা মিছিলে মিটিংয়ে চিৎকার করে, 
আমি ওসবের ধারটি মোটেও ধারি না! 
সত্যিই দাদা, এখন সুখনিদ্রাটি ছাড়ি না। 

নিজের কোটরে আছি চুপ করে বসে, 
কবে জীবতারা যাবে টুপ করে খসে, 
জানা নেই তাই যা যা স্বাদ আহ্লাদ, 
আশ মিটিয়েই তার গোড়া থেকে ছাদ, 
ভোগ করবার শত সহস্র বাসনা, 
সকাল সন্ধ্যে শুধু তার উপাসনা, 
করে চলি তাকে কোনো আবরণে ঢাকি না। 
যে যাই বলুক কিছু একদমই গায়ে মাখি না।

তবে আজও রাত হলে, তারায় তারায়, 
যদি আকাশেতে চোখ চলে যায়, 
তাদের অগণিত চোখে কি জানি বার্তা, 
আর বোঝার মতোন অবুঝ মহাশূন্যতা, 
যেন গিলে খেতে আসে, যত মৃদু হেসে, 
এড়িয়ে যাওয়ার শত চেষ্টার শেষে, 
হার মেনে দেখি গলা তৃষ্ণায় কাঠ, 
গভীর নিঃসঙ্গতা যেন ছুঁয়েছে ললাট। 
একটুকু জল বাড়িয়ে হৃদয় করবে শীতল, 
কেউ নেই পাশে, সেই সুবিপুল মহাকাশে, 
মোর কোথা নাই স্থান, শুধু হাহাকার গান, 
ব্যাপ্ত আঁধার, ঘিরে চারিধার, 
কেউ মোর চিৎকার, না আছে শোনার, 
আমি গলা তুলে তবু কাউকেই আর ডাকি না, 
হয়তো নিজেই, আর একটুও ভালো থাকি না।






বেচারামের আতঙ্ক

কে  দে ব  দা স


বেঁচারাম পোদ্দার, 
আগুপিছু ভেবে না পাই,
কি করে হবে সে উদ্ধার।
পাড়ার মোড়ের কালুয়া আর লালুয়ার আঁতাতে,
হয় সে জেরবার।

কালুয়া দেয় অহরহ, 
অযাচিত প্রলোভনের আশ্বাস, 
শুনে মোর উঠে নাভিশ্বাস।
বুঝতে পারি বেশ, 
নজরটি রয়েছে তার, 
আমার দু'কাঠা জমিতে, 
ফেলবে বুঝি নিঃশ্বাস।

লালুয়া দেয় ফতোয়া, 
দিতে হবে টিপ ছাপ,
বললাম যেথায় খাস, 
ভাববার নেই অবকাশ। 
অন্যথা হলে পরে, 
দেখে নেবে সর্বনাশ।

রন্টিদা, আমাদের জি হুজুর, 
করেন সকলের মঙ্গল, 
নেই কোন দ্বিমত। 
তাই বলি, আগু পিছু না ভেবে 
দিয়ে দেবে সহমত।

বলেছিলাম সেই বার, 
নিপাত যাবে তোমার ঘড়বাড়ি,
যদি কর ছল চাতুরী। 
শুধরে নাও নিজেকে, যত পার তাড়াতাড়ি।

নইলে হবে বিপদ ঘোর, যেনো তুমি নিশ্চিত।
মানে মানে দিয়ে দাও  টিপ ছাপ, নয়তো ভবিষ্যত অনিশ্চিত।

শুনে মোর হয় ওষ্ঠাগত প্রাণ, 
জানিনা কেমনে পাব পরিত্রাণ।





বেলাবয়ে যায়

নী হা র  কা ন্তি  ম ন্ড ল


সুদিন আসবে ভেবে
অনেকেরই বর্তমানের দিনপঞ্জী
কায়ক্লেশে কেটে যায়
বিশেষত ছাপোষা কর্মজীবি বা
চাকুরীজীবি সম্প্রদায়।

কর্মক্ষেত্রে কাজের ফাঁকে ফাঁকে
চোখ চলে যায় যায় 
দেয়াল ঘড়ির কাটায়।
সোম মঙ্গল কাটতে না কাটতেই
প্রতীক্ষার প্রহর গোনা
কবে আসবে শনি আর রবি।
মাসের প্রথম পক্ষ পেরোতে না পেরোতেই
অপেক্ষায় থাকা মাসান্তের মাসিক বেতনে।

কখনও তীর্থের কাকের মতোই 
অপেক্ষায় থাকা---
ত্রৈমাসিক মহার্ঘ‍ ভাতা
বার্ষিক, দ্বিবার্ষিক ইনক্রিমেন্ট
কিংবা বেতন পুনর্বিন্যাসের দিকে।

অনেক ইচ্ছেই পিছোতে পিছোতে 
ক্লান্ত হয়ে দমে যায় 
অভ‍্যস্তও হয়ে যায় অপূর্ণতায়।
বিশেষত নিজের প্রয়োজন, ইচ্ছে বা 
পোষিত স্বপ্নরাশি আপোষিত হয়।
সারাটা কর্মজীবন প্রায়
এভাবেই কেটে যায়।

তারপর যখন কিছুটা সচ্ছলতা আসে
পিছন ফিরে দেখা যায়
জীবনের অমূল্য সময় পেরিয়ে গেছে যেন দূরে বহু দূরে
সুদিনের প্রত‍্যাশার প্রহর গুনে গুনে।
সামান্যই পড়ে আছে তার---
অতীত সংগ্রামের
স্মৃতি-রোমন্থনে।






বৃষ্টির গান

বি কা শ  গুঁ ই


বৃষ্টি পড়ে
অঝোর ঝরে
গাছের পরে
মাটির ঘরে।
বৃষ্টি ভোরে
ঘুমের ঘোরে
টিনের চালে
উনুন শালে।
বৃষ্টি কাঁদে
নানান ছাঁদে
নদীর কোলে
পানসি খোলে।
বৃষ্টি হাসে
দূর্বা ঘাসে
মুক্তো জ্বলে
রৌদ্রানলে।
বৃষ্টি হাঁচে
সৃষ্টি নাচে
সাপের মাথায় 
ব‍্যাঙের ছাতায়।
বৃষ্টি রাগে
শঙ্খ লাগে 
পানার বনে
হলুদ বনে।
বৃষ্টি ভেসে
যাচ্ছে মিশে
ধানের শীষে
টিয়ার শিসে।
বৃষ্টি ভেজায়
টোকা মাথায় 
রাখাল বালক
মাথায় পালক।
বৃষ্টি দিনে
রৌদ্র কিনে
যাচ্ছে ফিরে 
মেঘের ভিড়ে।







সন্ধ্যায় তুমি

তু হি ন  কা ন্তি  ভ ট্টা চা র্য্য 


সেদিন আমি অপেক্ষা করেছিলাম দুপুরবেলায় 
সন্ধ্যা নেমে আসবে কখন তোমার অবহেলায়,
অনেকক্ষণ অনেক কিছু ধরে চিন্তা করে পায়নি
পারিনি তোমাকে ছুঁতে হৃদয়ের কথা জানতে চায়নি।

অপরাহ্ণের সূর্য লাল হয়ে জ্বলছে তোমার কপালে
তোমার বেনি দুলছে হাওয়ায় আনন্দে দোদুল দোলে,
নব যৌবনের হাওয়া লেগেছে তোমার উন্মুক্ত আঁচলে
যুবকরা কেন পাগল হয় বুঝেছি গজগামিনীর চালে।

তবুও কোথায় হয়ে গেছিল আমার মস্ত একটা ভুল
সন্ধ্যা নেমে এসেছিল ব্যর্থতার তার দিচ্ছি মাশুল,
দিগন্ত বলাকা ফিরে যাচ্ছিল বাসাতে হয়ে মশগুল
কপোত কপোতীরা দিনান্তের উষ্ণ মিলনে আকুল।

তুমি হয়তো ভেবেছিলে এই দেখাই শেষ দেখা হবে
অন্তিম মুহূর্তের সাজে, নিজেকেই যত্ন করে সাজাবে,
সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা কখন নেমে যাবে
তুমি বুঝতে পারোনি মনে হয় ব্যর্থতা কি করে লুকাবে?

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে এলো প্রকৃতি আর জীবনে
চরাচর ব্যাপ্ত নিকষ কালো সুন্দরী চাঁদ আকাশে নয়নে,
হিল্লোল হাসির মুক্ত যৌবন ঝর্ণায় লজ্জায় নত বদনে
শত রাগ অভিমান স্তিমিত করেছিলাম হৃদয় সংগোপনে।।






সুচারু চাঁদ ও পাইনের  ছায়ায়

শু ভ ঙ্ক র  পা ল


আমি স্পষ্ট দেখতে পাই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে
একটা শীতের পাখি উড়ে যাবার আগে
পাহাড়ে ধাপে ধাপে ফসল কাটে
ওদের কর্মঠ হাত আর মুখের বলি রেখায় 
নবান্নের পাহাড়
হুইসেল আর টায়ারের দাগে পরিযায়ী ভিড়
অনুবাদ ঢাল বেয়ে কুয়াশা নেমে আসে
পাতা খসবার দিনে মেহেদী হাসানের গান
একটা স্বপ্ন বেঁচে থাকে সুচারু চাঁদ ও পাইনের  ছায়ায়
চাঁদের ঘনিষ্ঠতায় একটু একটু তুষারের ঝিরঝির
গভীর রাত জুড়ে নক্ষত্রেরা উপন্যাসের ভিতর
আগামীর রোদের আয়োজন সেরে রাখে।






পরিতাপে জীবন ইটময়

প্র দী প  ম ণ্ড ল


যে রাস্তাটি বয়ে গেছে স্বর্গের বুক চিরে
সবুজের সমাহারে মন করত চিক চিক। 
বাবলা গাছে কাক বাঁশঝাড়ে কোকিল
উঠোনে চড়ুই পায়রা জোড়ায় শালিক। 

পাশ দিয়ে বয়ে চলা ক্ষীণ-স্রোতা নদীর
অবগাহনে পরিতৃপ্তি সূর্যাস্তে রবি রক্তিম। 
পাড়ে গর্তে বাস দিনান্তে কুশল বিনিময়
ঘোষনা করতো একটি দিবসের অন্তিম। 

খড়ের চালে প্রশান্তি সরু বাঁকা আলপথ
মোরগের ডাকে ভোর পূবাকাশে চালক। 
এখনও একই রূপে যথাযথ বিরাজমান
হাতছানি শুনতে পাই সে যে স্বর্গলোক। 

দিনে দিনে বেড়েছে বয়স এখনও বাড়ন্ত
একদিন গতি  হবেই কানাগলি'তে  রুদ্ধ। 
মনের দোষ দিই কেমনে মন সবই জানে
ইটের ঘেরাটোপে পথ  হারিয়ে অবরুদ্ধ। 

কাল্পনিক সুখের তাড়না মায়াময় জগৎ
বোধোদয়ে চেতনা ফিরলে দেরি হয়ে যায়। 
লবন জলে ভাসে হা-হুতাশ, ভাসে সুস্বপ্ন
অসমর্থ পারি না,শক্ত শিকল ছেঁড়া দায়। 

ইট পাথর মন টানত সবুজ বিঁধত চোখে
ইটের রাজত্বে ওষ্ঠাগত জীবন জ্বালাময়। 
সূর্য্য লালিমায় সবুজের সমাহারে কূজন
অসহায়, বাকি জীবন পরিতাপে ইটময়।





সুন্দরী গাছ

স্ম র জি ৎ  ব্যা না র্জি 


সুন্দরী রে তোর মা কোথায় ঘরই বা তোর কই? 
বাঁচার রসদ একটু মাটি যাচ্ছে দেখা ওই, 
মাতলা গাঙে জোয়ার আসে তুই তুলেছিস মাথা 
সোনালী রোদ যায় ছুঁয়ে তোর চিকন সবুজ পাতা।
গায়ে নোনা বাতাস লাগে হিজল বনের মাটি 
এরই মাঝে তুই হয়েছিস চিকন পরিপাটি, 
যত্ন-আদর নেইকো কিছু গহন বনের গাছ 
দু-পায়ে তোর নূপুর পরায় কচি সবুজ ঘাস।
সোহাগী তোর ফুলগুলো সব অকারণেই হাসে 
মৌমাছিরা তাই তো ওদের এত ভালবাসে, 
জোয়ার জলে যায় ভেসে ওই না ফোটা তোর ভ্রূন 
আবার কোথাও দেখতে পাব সুন্দরীদের বন।







মনে রবে নীরবে

সু ব্র ত  ন ন্দী


একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রভাতে রবিকরের উচ্ছ্বাস!
ভালোবাসার আরাধ্যে এগিয়ে চলার প্রয়াস।
এসেছিলে প্রেমের দুয়ারে উদ্বেলিত আলোকে,
তোমার স্বতঃস্ফূর্ততার দ্যুতি ছড়িয়ে ভূলোকে,
কত ঝঞ্ঝাট অক্লেশে সামলেছ আপন আভায়,
অভাব অনটন প্রতিভাত হয়নি তোমার ছোঁয়ায়;
প্রতিটি দিন নতুনভাবে বাঁচি তোমার উৎসাহে,
প্রতিটি কবিতাই রচিত হয় নিজস্বতার আবহে।
এইদিনটি ফিরে ফিরে আসুক জীবনে বারংবার,
প্রতিটি ভোরের আলোয় তোমায় দেখি সহস্রবার।






সুখ কারে কয়

ম নো জ  স মা দ্দা র


আমি খুঁজছি পরশ পাথর,
বসাবো হৃদয় মন্দিরে।
হঠাৎ হৈ হৈ রৈ রৈ শব্দে ভাঙলো ঘুম,
একি সবই স্বপ্ন ছিল!

বিঁধলো বুকে,
ফালাফালা মাংসপিন্ড পড়লো খোসে,
দেখলো কে?
কাঁদছি জন্মান্তরের দুঃখ শোকে,
অসুখ বুকে।

আচ্ছা সুখ কারে কয়?
খুঁজি আমরা- সেকি ঈশ্বর নাকি গোলকধাঁধা!






বেঁচে আছি

অ রু ণ  কু মা র  দাঁ


ভেঙেছো অনেক কিছু
মন ভেঙেছো
ঘর-বাড়ি ভেঙেছো-
দুঃখ ভাঙা সহজ না!

ধুলো মেখে দেখো কেমন
বেঁচে আছি-
যেমন সহস্র বছর, বেঁচে আছে স্বপ্ন!






গোলাপবালা

স্বা তী  ঘো ষ


সাজানো ছিল ফুলের কেয়ারি
হাওয়ায় উড়ছিল
মাধবী, কনকচাঁপার লতা
বাতাস নরম পেলব ছিল,
সূর্যের আলো ছিল মৃদু
যতটুকু হলে ফুটে ওঠে
প্রাণকথা,
উড়ে উড়ে গিয়েছিল
সরল জোনাকি
কাঠগোলাপ আর বাতাবিলেবু ফুলের সুবাস ছিল
আবেশ জড়ানো 
পথ এসে পৌঁছেছিল গন্তব্যের কাছাকাছি-
শুধু দরজা খুলে আর দেখেনি
গোলাপবালা,
আনমনা হাতে ফুলের কলি
ছোঁয়নি গোলাপবালা
শুধু ঝুমুর ঝুমুর ছন্দ পায়ে
তেহাই-এর বোল তোলেনি সেই গোলাপবালা-






তোরা যুদ্ধ করে করবি কি তা বল

উ জ্জ্ব ল  চ ক্র ব র্তী


বিশ্বাস করো
আমি হেরে যেতে আসিনি,

তোমাকে খুঁজেছি নির্জন শ্মশান, নিরালা আলপথে, 
খুঁজেছি ঘূর্ণি ঝড়, ধুলো মাখা জীবনে,
রাইফেল ট্রিগারে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া দেহের পাশে মুষ্টিবদ্ধ হাত 
ওপরে তুলে শপথ নিয়েছি ফিরে যাবো তোমার কাছে,

তবু দেরি হলো,

কথা ছিলো
শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে দেবো বৃষ্টির জলে,
জঙ্গল, গুহা, নদীর স্রোত
বা প্রবল শীতেও গরম রক্তের ফোয়ারায় জড়িয়ে নেবো তোমাকে,
যুদ্ধ জয়ের শেষে শোনাবো বিজয় সঙ্গীত,

দেরি হয়ে গেল,

মরফিন আচ্ছন্নতায়
কিছু দিন আগেই মৃত্যু ছুঁয়েছে প্রেম।







সেখানে

ন ব নী তা
                         

                 সেখানে পাহাড়ের গায়ে
          কাস্টার্ড রঙের শিফন শাড়ির মতো
                   এখনো কুয়াশা নামে
                            ভালবাসার৷

           পাইনগাছের ঝিরঝিরে পাতার ফাঁকে
                  উঁকি দিয়ে যায় রূপোলী চাঁদ,
                       আদিম বন্য গন্ধভরা
                   জ্যোৎস্নাভেজা শালের বনে
                           শিহরণ জাগে
              পাহাড়ি হিমেল বাতাসের ছোঁয়ার৷

                সেখানে আজও হয়ত কোথাও
                    বন্দী কোনো বিরহী যক্ষ
                দীর্ঘশ্বাসের শিলমোহর দেওয়া
                   মেঘ-পালকের নরম খামে
                             চিঠি পাঠায়
                          প্রেয়সীকে তার৷

                সেখানে আজও সন্ধ্যে হতেই
                          পার্বত্যশরীরে
           আঁকাবাঁকা সর্পিল সব পাকদণ্ডী জুড়ে
                   বিন্দুবৎ স্বপ্নেরা জ্বলে ওঠে
                             সারে সারে,
               আর তারায় ভরা রাতের আকাশ
                           আজও তাদের
           হিম-হিম হাওয়ায় হাওয়ায় গল্প শোনায়
                   নীহারিকাদের রূপকথার৷৷







মশা

ড. ম ধু মি তা  ভ ট্টা চা র্য


ডেঙ্গু জ্বরে হল কাবু
কলকাতার এই জনগণ 
এডিস মশার কামড়, জেনো 
এই রোগের মুখ্য কারণ।

যত্রতত্র জমা জলে,
এই মশাদের জন্ম হয়,
ঘরের বাইরে, ঘরের মাঝে
জল জমানো-- একদম নয়।

জ্বরের সাথে গা, হাত ব্যথা
কিংবা চোখের পিছন ব্যথা
অথবা গায়ে লালচে দানা,
সাথে আছে দুর্বলতা।

রক্ত পরীক্ষা করলে পরে
পড়বে ধরা ডেঙ্গু রোগ,
এরই সাথে এখন আবার
ম্যালেরিয়া হয়েছে যোগ।

এডিস ঘোরে দিনের বেলায়,
আনোফিলিস রাতের বেলা
মশার থেকে থাক দূরে
প্রতিরোধে কোরোনা হেলা।






উদ্ভাসিত মুখ

ম ঞ্জি রা  ঘো ষ


মেঘের ছায়ায় ঢাকা ছিলো
দুঃখ পদাবলী--
শহর জুড়ে অঝোর ধারায়
ভিজছে অলি গলি।

ভিজছে আকাশ, ভিজছে জমিন
কাকভেজা সেই রাত--
বৃষ্টি তুমুল, ঝড়ো হাওয়ায়
পাহাড় প্রতিবাত।

দু'চোখ জুড়ে সন্দেহ বিষ
নিন্দা অপবাদ--
পরের সুখে আগুন জ্বেলে
ঝালমরিচের স্বাদ।

স্বাদের গোড়ায় জল ঢেলে দি'
একলা বাঁধি মন--
সৃজন শাখায় ফুল ফোটাবো
পারবো যতক্ষণ।

রোদের জন্মে আলোর ছটা
রোদের কণায় সুখ--
বাধা নিষেধ পেরিয়ে এসে
উদ্ভাসিত মুখ।।






অপরিহার্য
  
ম ঞ্জি রা  ঘো ষ


কথারাও থাকে চুপকথাদের নীরব নিবিড় প্রান্তে
আসলে সে কথা তুমিও কি আগে নিজের মনেতে জানতে?

বাইরে যা দ্যাখো, প্রকাশিত আহা সেটুকুই ভাবো ধার্য--
মনের ভিতর যা আছে গোপনে তাই তো অপরিহার্য।

থৈ থৈ আলো অদৃশ্য তবু যা কিছু চেয়েছ দেখতে
দেখেছিলে চোখে অনাবিল প্রেম,পার নি কেবল বলতে।

রিমঝিম সেই বৃষ্টির সাথে যদি হয় খেলা বন্ধ
উড়ে তো যাবেই আতরের সেই সুবাসিত সুধা গন্ধ।

অনুমেয় যত বিবাদ বিষাদ হাতের মুঠোয় বন্দি
আসলে কেবল অনুসন্ধানে দূরে সরে গ্যাছে সন্ধি।

তাহলে এখন মেনে নাও প্রিয়, রীতে ও বৈপরীত্যে
ভুল ভাবনার অবসান হবে দিনশেষে মিলনান্তে।।





তুমি রবে নীরবে

মৌ সু মী  মু খা র্জী 


যদি মোহনায় বেজে ওঠে ওই চেনা সুর,
তোমার গভীরে যাবো দূর হতে দূর।

ধুধু মরুভূমি জীবনের বালিয়াড়ির শূন্যতায় 
যেদিন তোমার সাথে আলাপ হলো...
ভাবিনি নদীর মত ভাসিয়ে নিয়ে যাবে,
দু'কূল ছাপিয়ে ঢেউ উঠেছে আজ লুনি সাহারায়।
অনুভবের উপত্যকায় অথবা নদীর মোহনায়,
তুমিই আছো আপেক্ষিক মহিমায়।
অশান্ত মনে আনন্দ উপভোগ সম্ভব হতো না তোমায় ছাড়া...
আমাকে অপার করুণা করা প্রেমিক তুমি।
অপার্থিব ভালোবাসায় জড়িয়ে নিয়েছো আমায়,
তোমার হাত ধ'রে এগিয়ে যাওয়া কবিতার পথে,
ভালোবাসি তোমায়, পাহাড়ের বুকে ঝর্ণার মত আছড়ে পড়তে চাই।
অনুভবে পেয়েছি তোমায় ডিজিটাল সুখ,
এসো সবুজ আলোর তলায় করি কাব্যিক মালাবদল,
সবুজ আলোকে সাক্ষী রেখে গড়ি ভালোবাসার বাসর ঘর।
তোমার নাব্যতায় ডুবে মরি অতল গহ্বরে।
ক্রমশঃ আরো গভীরে ডুব সাঁতার দিই সমুদ্র বুকে,
যদি তলাতলে তলিয়ে যাই সমুদ্রের গভীর থেকে গভীরে,
তুমি হাত ধ'রো সখা, হারাতে চাই না তোমায়।
অনুভবের উপত্যকায় বাসা বাঁধি, লিখি অনুভবের কলমে,
যার আখরের প্রতি ছোঁয়ায় ঝরে পড়বে নৈসর্গিক প্রেম।






ভোরের আলো আসবে এবার

মা লা  চ্যা টা র্জ্জি
     

দীর্ঘরাত্রি চিরস্থায়ী হয়ে থাকেনা, তাই ভোরের
আলোর দিকে চেয়ে থাকি। 
ঘড়িতে চারটে বাজল,
এখন তো কাকেদের ডাকার সময়। 
বাগানের ফুলেরা, বট, পাকুড়ের গাছেরা
ভোরের আলোকে স্বাগতম্ বলার জন্য প্রস্তুত।

ভোরের হাওয়া মৃদু হেসে বলে গেল-
নিদমহল এখন ঘুমিয়ে আছে? জাগবে না?
আরে জাগবে নিশ্চয়,
ভোরের আলো ডেকেছে ওরা কি তা জানে না!
রাতের আঁধার, নৈশব্দের বিছানা ওদের ভালো
লাগে না। 
সব সময় কি ঘুমের ঘোরে থাকলে চলে?
পাখিরা জেগে গেল,
গল্পের মতো সুন্দর সকাল
অরণ্য, ঝরণা, নদী, পাহাড়কে আলোকিত করার
জন্য মুখিয়ে আছে। 
সব সময় আকাশজুড়ে রাত্রি থাকলে,
ভোর কখন আলোমাখা হাসি হাসবে?







জীবশ্রেষ্ঠ

সো না লী  ম ন্ড ল  আ ই চ


আজ আমরা নিয়তি 
অবিচল নিস্তব্ধ শ্মশানে একলা বসে
বাতাস কটু গন্ধে ভারী

কত রাজপথ জনপথে
নাম না জানা নদীরা হারায় স্রোত
পর্বতের গুমোর নিশ্চিহ্ন

ইতিহাসে বয়ে যাক
চিহ্নহীন কালের লেখায় বালিহীন মরু
অক্সিজেন মাস্ক মুখে

পিপাসায় সবুজ প্রাণ
শিকড়ে মাটি খোঁজে, কংক্রিট বলে 
"হেথা নয় অন্যকোথা"

উন্নয়নের প্রবেশ পথে
শিকারি কুকুর জিভ ঝুলিয়ে পাহারায়
আস্তাকুঁড়ে চাঁদের আলো

আগ্রাসী হা-ঘর লোভে
নির্লজ্জ অপরাধী বিবেক পর প্রজন্মের
উপড়ে আনে কলজে

আমরা চির আয়ুষ্মান
চিলতে বনের মাথায় শেষ প্যাঁচা ওড়ে 
ভাসানে ভাঙড়া বাজে...







বাবুইবাসা

পা প ড়ি  রা য়


বদ্ধ খাঁচায় জমাটবাঁধা দুঃখ রঙে 
সাদা কালোর ওই যে তোমার মস্ত দালান,
রাঙিয়ে দেবো আদরকথার সাতটি রঙে 
ঘাম ঝরিয়ে গড়বো তোমার দরজা খিলান॥

নতুন চোখে দেখো তখন তোমার বাড়ি,
খড়কুটোতে বাবুই পাখির ঠোঁটের ছোঁয়ায়
গল্প লিখো তোমরা দুজন শুক ও সারি
নতুন রঙের গন্ধ মেখে পালকডানায়॥

ওই দুরের ইষ্টিশনের শেষ সীমানায় 
আমার বাড়ি পরিবারের বুনোট ওমে
মায়ের হাতের আলপনা আর হলুদবাটায়...
তোমার ঘরে ছুঁইয়ে দিলাম শ্রমের দামে॥

তোমার বাড়ির হাজার টাকার ঝাড়বাতিটা,
আমার ঘরের মোমের আলোর সোহাগ ওমে
সত্যি সুখের গল্পলিখুক ও রূপকথায়
আঁকছে ছবি ছেঁড়া তুলি ভিজছে ঘামে॥






অলীক ভাবনা

টু লা  স র কা র 


আসলে তুমি, 
এলে তুমি
শীতলপাটি বিছিয়ে দিলাম,
বসলে হাসি মুখে।
যদিও ছিলো গ্রীষ্মের প্রখর তাপ-
তবু এক টুকরো বসন্ত দেখা দিলো।
দখিনা বাতাস উঠোনে ঢুকে পড়লো।
তোমার ভাবনাই বেঁচে থাকার রসদ। 
জানি যাবে এখনই চলে।
তবে কেন আসো বসন্তকে নিয়ে?
আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে কেন যাও চলে?
জানি কিছুই এই জগতে স্থায়ী নয়।
সবাই একে একে যাবে ছেড়ে।
দুজনে বসে মুখোমুখি নির্বাক মৌন
তবু যেনো কত কথা হয়ে যায় বলা।
রাগ, অভিমান, দুঃখ সবই মিলেমিশে একাকার। 
হঠাৎ কর্কশ কন্ঠে ডেকে ওঠে একটি কাক।
মনে হয় সঙ্গী হারিয়েছে, সঙ্গীকে ডাকছে।
আমারও ভেঙে গেলো আনমনা স্বপ্ন দেখা মন।
বসে আছি একা দাওয়াতে কেউ কোথোও নেই।
দিনরাত কাটে এমনি অলীক ভাবনার আবেগে।







নেতাজীকে খুঁজে ফিরি আপন ঘরে

আ শ রা ফ হা য় দা র


নেতাজী তোমাকেই খুঁজছি 
ক্লান্তিহীন অলস দুপুরের মতো দুরন্ত গতিতে
অতন্দ্র প্রহরী হয়ে‌ যুগ থেকে যুগান্তর 
তোমাকেই খুঁজছি, আর খুঁজছি।

নেতাজী তোমাকে খুঁজছি 
সেই শৈশবের মাঠ পেরিয়ে ঝড়ের ডানা মেলে 
পাহাড় পর্বত পেরিয়ে ভারতবর্ষের পথে পথে
মাঠে, ঘাটে, মসজিদ, মন্দির,গীর্জা,প্যাগোডায়
খুঁজে চলেছি ক্লান্তিহীন কবরখানা, শ্মশানে
আবার মিছিল মিটিং, স্লোগান, জনসমুদ্রের ময়দানে।
 
নেতাজী শুধু তোমাকে খুঁজছি
কাবুলের অলি গলি রাজপথের বাঁকে বাঁকে
আবার জার্মানির বার্লিন শহর থেকে গ্রাম গ্রামান্তরে
আবার কখনো তিলোত্তমা রাশিয়ার শহরে
কাল কারুকার্যময় রাস্তায় রাস্তায়
আবার জাপান শহরের অলিতে গলিতে
শিশিরের শব্দে সোনালী রোদের ঢেউয়ে ঢেউয়ে।

কোথাও তোমাকে খুঁজে পাচ্ছিনা
সাবমেরিনে খুঁজেও তোমাকে পাচ্ছিনা,
সিঙ্গাপুর, মালাশিয়া, ইম্ফল, রেঙ্গুন 
আর পৃথিবীর পথে পথে খুঁজে পাচ্ছিনা।

নেতাজী তোমাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম খুঁজে চলেছি 
বিমান পথে, স্থল পথে, নৌপথে এমন কি সাবমেরিন যোগে‌ 
কেবল খুঁজে চলেছি পৃথিবীর এপিঠ,‌ ওপিঠ
কোথাও তোমাকে খুঁজে পাচ্ছিনা।

নেতাজী তোমাকে অন্তবিহীন খুঁজছি 
জীবন চলার পর্বে পর্বে খুঁজে চলেছি 
আর খুঁজে যাবো জীবন নদীর তীরে দাঁড়িয়েও
ভারতবর্ষের স্বাধীনতার নৌকায় পাল তুলে
স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের পাতায় পাতায়
রেডিও, টেলিভিশনের খবরে
কবির কবিতার ছন্দে ছন্দে, শিল্পীর গানের সুরে সুরে
বাউলের একতারার তরঙ্গে
মাঝির পালতোলা নৌকার সারিতে।

নেতাজী কোথাও তোমাকে খুঁজে পাচ্ছিনা
সেই উনিশশো পঁয়তাল্লিশ সাল হতে আজও বিশ্ব সংসার তন্নতন্ন করে 
খুঁজে চলেছি বিরামহীন
বনে-জঙ্গলে, পথে ঘাটে মাঠে ময়দানে সন্ন্যাসীর বেশে।

নেতাজী তোমাকে খুঁজছি
যেদিন বার্লিন থেকে তুমি ভাষণে বলেছিলে, "আমি সুভাষ বলছি, 
ভিক্ষায় স্বাধীনতা আসেনা, আমাকে রক্ত দাও, 
আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো"
তখন থেকেই তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি 
তোমার প্রাণের প্রিয় জননী জন্মভূমির বুকে।

নেতাজী তোমাকে খুঁজছি
তদন্ত কমিশন রিপোর্টের পাতায় পাতায়
আজাদ হিন্দ ফৌজ সৈনিকের সাক্ষাৎকারে 
আবার খুঁজছি ভারতবর্ষের সকল আশ্রমে।

নেতাজী তুমি কেনো অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলে?
কোন অভিমানে নিজেকে আড়াল করে রাখলে?
আজ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে তুমি রহস্যময়!

নেতাজী সেদিন কি বৃটিশদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলে?
ভারতবর্ষের লোভী নেতাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলে?
তোমাকে অন্তরালে রেখে ক্ষমতার লোভে ভারতবর্ষ ভাগ করেছিল?
ভারতবাসীর কাছে সেই রহস্য সবই আজও অজানা।

নেতাজী আজও তোমাকে খুঁজছি
সমবেত ভারতবর্ষের সকলেই তোমাকে খুঁজছে
আর খুঁজে যাবে অনন্তকাল
খুঁজে যাবে ততকাল
যতকাল ‌পৃথিবীর বুকে রবে ভারতবর্ষ হয়ে মহাকাল।

নেতাজী তোমাকে খুঁজছি 
একজন দেশ নায়ককে খুঁজছি
স্বাধীনতার মহানায়ক ভারতাত্মাকে খুঁজছি
খুঁজে যাবো চিরদিন, চিরকাল।

আমার ক্লান্তিহীন খোঁজার রাজ্যে 
সশরীরে তোমাকে পাইনি বটে
তবে স্বপ্ন যোগে তোমাকে পেয়েছি 
মানবতার দ্বারে দ্বারে আর জনসমুদ্রের ময়দানে।

তারপরও সশরীরে তোমাকে না পেয়ে 
আলোর পিপাসায় তৃষ্ণা মেটেনি 
তাই আজও তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি
শ্যামল মায়ায়,দেশের সবুজ ঘাসের মাটিতে।

নেতাজী যেখানে আছো, সেখানে ভাল থেকো
তোমার প্রাণের ভারতবর্ষ শতকোটি মানুষ
তোমায় ভুলবেনা কোন কালেও।

দিন যত যাবে, ততই তোমার আলোর বহতা বাড়বে
প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তোমাকে শ্রদ্ধা করে যাবে
আর তোমাকে হারানোর বেদনায় কেঁদে যাবে অবিরাম।

জয়তু নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু
তোমারই হোক জয়, তোমারই হোক জয়
তুমি শতাব্দীর পর শতাব্দী শতকোটি মানুষের চোখে নির্মল আলোর জ্যোর্তিময়।




মাঝি

সু শা ন্ত  সে ন


ইচ্ছা ছিল মনের ভেতর দুলবে মাঝি
ইচ্ছা ছিল তোমার সাথে আমিও আছি,
ইচ্ছা ছিল মনের ভেতর সমুদ্দুর
দেখবো আমি নিজের চোখে বরবুদুর।
ইচ্ছা ছিল বিনা বাধায় উড়বে নিশান
ইচ্ছা ছিল সবাই গাইবে সাম্যের গান,
ইচ্ছা ছিল পাঁচিল কোনো থাকবে নাকো
চাইবো আমি হাতের ওপর হাতটা রাখো।
ইচ্ছা ছিল মাতাল হবো মিলন নেশায়
ইচ্ছা ছিল বাঁশি যেন বাঁচতে শেখায়,
ইচ্ছা ছিল চেপে একা হাতির পিঠে
আসবো দেখে হারিয়ে যাওয়া জন্ম ভিটে।
ইচ্ছা ছিল ইচ্ছা ছিল ইচ্ছা ছিল
ইচ্ছা এসে মনটা আমার রাঙিয়ে ছিল।





ভেসে যাওয়া কবিতারা

সৌ মে ন  দ ত্ত 


এখন আর ডায়েরিতে কিছু লিখি না, 
যোণি স্রাব নিয়ে হাসাহাসি, আর সাদা 
পোশাকিদের ঊরুদ্বয়ে মুখ গুঁজে জৈবিক চেতনা,
এই নিয়েই কলমের কোম্পানিগুলো বেশ চলছে।
পাড়ার মোড়ে দুচারটে খুচরো মাতালের দল, হাড় চিবিয়ে খাবি খাচ্ছে,
এই বুঝি তলিয়ে গেলো। 
মূল্যবৃদ্ধির বাজারে কাঁচের ভল্লুকের জনজোয়ারে নবযৌবন খোঁচা খায়,
 ভ্যাবাগঙ্গারাম হয়ে তার ফাঁকেই মূল্যবোধ মুখ গুঁজে শুয়ে পড়ে।
কেউ আসে না ডাকতে, ঘুম ভাঙাতে,
আমি তার পাশ দিয়েই হেঁটে বাড়ি ফিরি রোজ
রোজ,
কাঁধে নিয়ে সমন্বয়কারী জীবাণুর দল।
বাতিল কতিপয় ছেঁড়াফাটা নোটের দল, 
ছোঁ মেরে বসে। 
পেচ্ছাপের সুগন্ধে মুখ ধোবে বলে। 
কান্নার শব্দ আজকাল শোনা যায় না, 
পলিথিনে চাপা শরীর শুধু আলোচনা সভায় আড়ি পাতে।
সবকটা আন্দোলনের রঙ এখন জ্বলন্ত জিরাফে।
শুধু গিলে খাচ্ছে  চাঁদের জমা রস,
আমি তাতে হাত ধুইনি একবারও, ধ্বজা হাতে ঝরা পাতা গুলোকে
শুধু গা ভাসাতে দেখেছি দলে দলে।






যন্ত্রণার বারমাস্যা

সু খে ন্দু  ভ ট্টা চা র্য         


এ যন্ত্রণা ব্যক্তিগত নিজস্বতা শিরায় শিরায়  

ভাঙা মন বিষাদেরা চুপিসারে সাগর পেরোয় 

থমকে দাঁড়িয়ে গেলে কারও কিছু যায়ও আসেনা

কুমীরের কান্না দিয়ে এ-মনের চিঁড়েও ভেজে না । 

 প্রতিবেশী পরিজন বেদনার উপশমে আসে

করাতি রুমাল যেন আরও বেশি কাটে চার পাশে 

যতই করেছে মায়া রোমে রোমে চিন চিন জ্বালা

উৎসব আড়ালে থাকে প্রাণঘাতী ওই কারবালা ।  

 আপন হয়েছে যারা আপনার বহু শর্ত মেনে

প্রশমনে বাহ্যিকতা নালীমুখ কতটুকু জানে

তবুওতো পারাপার ক্ষীণতর বসন্তের কাছে

শ্বেতশুভ্র পাঞ্জাবিতে বেঁচে থাকা এই বেশ আছে ।   

 আপাত সুখের তালা খোলা আছে মৃত হরিলুটে

বেদনার ক্ষতগুলো দিনরাত মরে মাথাকুটে

এই পরিচিত গতি কতটুকু বিবর্ণতা ঢাকা

জীর্ণ শতকের ক্লেশ- ধোয়া আর ঘুরেফিরে মাখা।

 হাতের ছাপের মতো ভিন্ন ভিন্ন এক থেকে একে 

এ যন্ত্রণা ব্যক্তিগত উপশম কেউই জানে না।






থাকবে না কেউ দুঃখে

র ত ন  পা ল


দায় দায়িত্ব পালন তো নয় পৃথিবীরই একার,
শস্যশ্যামলা স্বর্গ নীড়ের অনেকের অধিকার, 
সুন্দর গড়ে সবুজ আসরে সঙ্গত দেয় যে কত,
পাখি আর ফুল, লতা, গুল্ম যে যার নিজের মত।

ও ভঙ্গিমা, মূরত ত্যাগেরই মৃন্ময়ী রূপ যে তার,
সবার মাঝে এক ও একাত্ম সে নির্যাস খোলা দ্বার।
তারি মেহফিল সুরের তালে রঞ্জিত করেছে সব,
ব্যঞ্জনায় তার ঝঙ্কার ধ্বনি শুনলেই উঠে যে রব। 

মূর্ত প্রতীক ত্যাগেরই সে তো মহিমায় ভরে যে শান,
হৃদয়ে সেই বিরাট প্রাপ্তি, বিধাতারই সে এক দান।
সবুজের এই আদিগন্ত বসত গড়েছে যারই,
রক্ষক তারাই নিজের দর্পে দায় যে বর্তায় তারই।

সে অঙ্গীকার দৃপ্ত-শপথ তারাই নেয় যে সবে,
লুন্ঠিত নয় কেউ কোনভাবে মুক্তির স্বাদে রবে।
সবুজ মহিমা এক ভাব রূপে মুগ্ধতা সেই নিজে,
কারণের বলি কোথাও তো নয়ই রূপরস ভরবে ভিজে। 

তেমন ওই বোগেনভেলিয়াই রূপের আলোয় খেলে,
অপূর্ব তার ছন্দে সাজায় সুশোভিত রূপ মেলে।
জেনো দুর্বার সে তাজ মহিমায় উন্মাদনায় মেতে,
ভূলুন্ঠিত যে কেউ নয় আজ, সবুজ স্বর্গ ক্ষেতে।

উষর মরুর তটভূমি নয়, সবুজের সমারোহ,
প্রকৃতিতে মিলবে খুশির ঝিলিক, আনবে দীপ্তি মোহ।
লাজবে রূপের রহস্য সাজে, হৃদয় ভরবে সুখে,
মোহময়ী তার লাবন্য রূপকে, থাকবে না কেউই দুঃখে।






সন্তান সম্ভবা

স্ব প ন  কু মা র  ধ র


সারাদিন কষ্টে কাটিয়েও,
রবির কিরণ দেখতে পেলেও,
প্রচন্ড ঝড়ে ছন্নছড়া হয়েও,
অমনিশায় পথ না হারিয়েও,
লাঞ্ছনার শিকড় হৃদয়ে গজালেও,
ভবিষ্যত জীবন অনিশ্চিত জেনেও,
বঞ্চনাকে জীবনে মেনে নিতে হলেও,
বাঁচতে চাই আমি, "আসন্ন" এর তরে।

দিনের পর রাত্রি আসে,
অন্ধকারের পর আলো,
দুঃখের পর সুখ নিশ্চিত,
জানি আমি ভালো।
আমি নিশ্চিত আসবে সুদিন,
কেটে যাবে এ ঘোর দুর্দিন,
আমি যে সন্তান সম্ভবা নারী,
দুঃখ কষ্ট সব, জয় করতে পারি।







ব্যর্থ জীবন

ব ন্দ না  রা য়


আকণ্ঠ তৃষ্ণার্ত হয়ে 
কিছু স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে 
ছুটে চলি নিরুদ্দেশের পথে, 

সব রস রক্ত নিংড়ে নেওয়া
এ মাতাল শরীরখানা কোনো
রকমে বয়ে বেড়ানো, 
অযত্নে জং ধরেছে প্রকোষ্ঠে প্রকোষ্ঠে। 

অনুভূতিগুলো ভোঁতা হতে হতে 
কখন অকেজো হয়ে গেছে
বুঝতে পারিনি। 
সংবেদনশীলতা বলে তার আর কিছুই নেই,
মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না ঈন্ধনের আতিশয্যে। 
কেবল অস্ফুটে আর্তনাদ বেরিয়ে আসে,
কেউ শুনতে পায়না বেদনা বিধুর বোবা কান্না।

আমি অন্ধকারে পথ চলি 
এক অজানা পথে 
মাঝেমধ্যে আলোর স্ফুলিঙ্গ দেখে
মনটা নেচে ওঠে,
আবার কখনো বেদনার আস্ফালন,
মনে হয় জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়ার 
শুধুই ব্যর্থ প্রয়াস।






কবিতা হলেও সত্যি

অ মি ত  কু মা র  ন স্ক র 


কারো ঋণ রাখতে চাই না
মনের গভীরে ভালোবাসার উষ্ণ প্রস্রবণ
কেউ না ছুঁয়ে গেলেও ক্ষতি নেই ।
আমি তো একাই এসেছি---
মিথ্যা ভালোবাসার খেলায় নাই বা দান ধরলাম...
জীবন একটাই, মিথ্যা ডামাডোলে কেনই বা নিজেকে ব্যতিব্যস্ত করি?
যাকে মন থেকে ধরতে চাই, সে বরাবরই অধরা থাকে।
আর কতদিনই পৃথিবীর সুখ সম্পদ মোহ 
ভোগ করব?
তার চেয়ে সব অধরাই থাক---
আমি শিখে নিই অধরা হওয়ার কায়দাকানুন...
আলোর জাল গুটিয়ে পৃথিবীতে যখন একা একা
সন্ধ্যা নামে,
আমার জীবনেও কখন সন্ধ্যা নেমে আসবে আমি নিজেই জানি না; 
কেন চুপিচুপি বেলাভুমিতে আঁকিবুঁকি কাটা,
অকারণে আছড়ে পড়া ঢেউ 
সেই তো মুছে দেবে সব চিহ্ন!
লোনাজলের স্বাদে ভরিয়ে দেবে 
জীবনের যত তিক্ততা।
জীবন আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছে
শুধু কেড়ে নিয়েছে আকাঙ্ক্ষা হাসি  বিশ্বাস---
আপন হয়েছে অনাদর অবহেলা আর ছলনা...
বিশ্বাস করুন আমিও এক আহাম্মক,
কিসের লোভে যে দৌড়াই বারবার!
কি জন্য এসেছি আর কি জন্যই এত আয়োজন বুঝিনা,
এই পৃথিবীর কাছে শুধু করুণা পাওয়া ছাড়া কি আছে এ জীবনে?
কখনো কখনো মনে হয় এ পৃথিবীটা বোধ হয় আমার নয়...
একটু ভালোবাসা, ভালো কথা, নয়তো প্রশংসা এইটুকুমাত্র পাওয়ার সার্থকতা?
বুঝতে পারি না এই পৃথিবীকে, পৃথিবীর মানুষকে।
সব বৃথা চিন্তা, যাদের ভালোবাসি 
স্বার্থের জন্য তারা সাময়িক আমার কাছের বান্ধব। 
মাত্র স্বার্থের কটা দিন, তারপর 
একেবারে অধরা---
আমার আয়ত্বের বাইরে,
কেন না কাছে থাকলে তাদের স্বার্থে আঘাত 
লাগবে যে।
আপনারা বলুন একা একা কি বাঁচা যায়?
কি আশ্চর্য দেখুন সব-ই থাকতে আমরা কেমন একা তাই না?
তার চেয়ে আসুন আমরা একা একা নিজের মতো করে বাঁচি
একেবারে নিজের মতো;
নিজের বৃত্তের মধ্যে থাকি, ভালো থাকি---
নতুন করে আর কিছু ভাবার নেই;
থাকুক সবই অধরা,
জন্মেছি যখন তৃষ্ণা মেটাব এক গণ্ডুষ জলে,
শুধু অপেক্ষায় আছি গঙ্গোত্রী থেকে 
কন্যাকুমারী মোহনার মহামিলনে...






ভরাডুবি

দে বা র তি  গু হ  সা ম ন্ত


টাইটানিক জাহাজ ডুবছিল,
রোজ আর জ‍্যাক তখনো,
দুহাত ছড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখছে,
জল ঢুকছে জাহাজে।

জল ঢুকেছে ফুসফুসেও,
অক্সিজেনের লেশমাত্র নেই,
ফুসফুস ক্রমশ সংকুচিত,
এবার ডুবল বলে।

পর্ণমোচী গাছ প্রস্তুতি নিচ্ছে,
নব নব সাজে উদ্ভাসিত হয়ে,
আমন্ত্রণ জানাবে রোজ আর জ‍্যাককে,
ফুসফুসটা বোধহয় বেঁচে গেল এ যাত্রা।







লিওনেল মেসিকে

লু ৎ ফ র  র হ মা ন খো ক ন


তুমি নীল আকাশে লাল সূর্য্য
সবুজের মাঝে সবুজ পরিবেশ 
তুমি উল্লাসে উচ্ছ্বাসে
বুয়েন্সের একখন্ড বাংলাদেশ। 
তুমি সাড়া দুনিয়ায় পতাকা উড়িয়ে
মন থেকে মনে মানচিত্র ছাড়িয়ে,
উড়ে দূরে ১৭ হাজার কিলোমিটার। 
বুয়েন্সের ব্যস্ত শহরে তুমি প্রেম 
তুমি বিষন্ন বিকেলে তারুন্যের উল্লাস 
তুমি ঢাকার নির্ঘুম রাত, জেগে থাকা চাঁদ
পাখির চোখে শতশত মানুষের উন্মাদ। 
তুমি বাড়ির ছাদে আকাশী রঙের নীল সুখ
তুমি গতিময় প্রেমের ছন্দহীন প্রেমিক
তুমি সুন্দরী রমনীর আতঙ্কিত মুখ। 

তুমি বিনয়, বিনয়ী,
দুরন্তপনার উড়ন্ত পথিক 
তুমি ফুটবলের যাদুকর
তুমিই জয়ী, তুমি চ্যাম্পিয়ন প্রিয় আকাশী 
তুমি লিও, লিওনেল মেসি-







ভালো-বাসা

অ নি ন্দি তা  ভ ট্টা চা র্য্য


রাত্রি যাপনের কোন এক ঠিকানায়,
মেঘেদের রাশি ভেসে বেড়ায় আপন বেলায়
আমিও কিছুটা অবাক পানে
পাইন গাছের সারির আনাগোনা খুঁজি।
ভোরের সূর্যের আলগা পরশ 
ভেদ করে যায় একেকটা আবডাল,
নতুন ঠিকানা কিংবা নতুন নতুন মুখ,
যদিওবা নতুন কিছুই নয়। 
চোখ মিলিয়ে শুধু এদিক-ওদিক 
আবছা ভাবনাদের ছল। 
ব্যস্ত কলম কিন্তু শান্ত মন
চেয়েও গুছিয়ে ভরানো হয় না পাতা
একবার, শুধু একবার যদি ঐ দূরের সমুদ্র
থেকে তুলে আনতে পারতাম মনের কিছু 
হিরে মানিক...
তবে পাইন গাছের কোন এক ফাঁকের ঢালে
একটা ঘর গড়তাম
নিতান্তই ঘর, 
যেখান থেকে দূরে ওই দূরে সব সীমানা ছাড়িয়ে 
দেখা যাবে খোলা আকাশ বাতাস,
যেখানে চোখের জোর কমলেও
আনন্দ দেবে একরাশ ভেসে যাওয়া ভালোবাসা।






নিশ্চিন্ত আনন্দ

প্র বী র  কু মা র  চৌ ধু রী


অনেক তো খোঁচা খাই
চোখে জল-ব্যাথা লাগে
ভালোবেসে কাছে  যাই
তোমাদের  অনুরাগে।

মাঝে, মাঝে বড় জ্বালা
ধমকায়  আত্মজনে
ভর্ৎসনা, হেলাফেলা
কাঁদি শুধু  মনে মনে ।

শুনি  কত শব্দসাথী
স্বার্থ  গোনে আহরণে 
লাঠালাঠি, হাতাহাতি
শেষ হয় বিভাজনে।

লাভ-ক্ষতি মিছে  গোনা
ও'যে বৃথা পন্ডশ্রম
এতো দুধে ঢালো চোনা
পাগলের মতিভ্রম।

লেখালিখি ভালোবাসি
লিখে যাই সোজা পথে
আমি খুঁজি রাশি, রাশি
মনি-মুক্ত শব্দ হাতে ।

আজ আছি কাল নেই
এসে যাবে শেষবেলা
কিছু দিয়ে আনন্দেই
সাঙ্গ হোক শেষ খেলা।





ওপেন টি বায়োস্কোপ

প্র কৃ তি  দ ত্তা


চলন্ত ট্রেনের জানালা যেন এক চলন্ত লাইব্রেরী...
পাতা ওল্টাও আর পড়ে যাও,
সে যেন এক চলমান আর্ট গ্যালারি...
দেখে যাও ছবি, আর গেঁথে রাখো হৃদয়ে,
একটা রূপমায়া, ধূপছায়া টাইপের সিনেমাহল...
তা বললেও অত্যুক্তি হয় না।
স্টেশনে স্টেশনে ফুটে ওঠে জীবনের কত গল্প,
ননস্টপ ছুটে চলায় প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী।
সারা দিনের পর যখন রাত নামে,
কোণ কোশের বিদ্রোহ হয় চোখ জুড়ে,
তখনও রড কোশের সহায়তায়,
আরও একটিবার বাইরে তাকালে,
দেখা মেলে মায়াবী রাতের যবনিকা,
ধীরে ধীরে থেমে যায় ওপেন টি বায়োস্কোপ।







পুনর্মিলন

আ ল্পি  বি শ্বা স 


হামাগুড়ির শৈশবটা কেটে গেলো যেই
টালমাটাল পায়ের সকাল পেরিয়ে বড় হই।

কচিকাঁচার দল ভারি হলো কিশোরবেলায়
মাঠঘাট সব মুখর হলো, আড্ডা গাছেরতলায়।

দলবেঁধে সব স্কুল কলেজে, কথা বকমবকম, 
রঙঝরা দিন কিচিরমিচির তর্ক ভীষণরকম।

বৃষ্টিধারায় ভিজতে ভিজতে পুড়ে রোদের আভায়
ভাগ্য অন্বেষণে ছিটকে গেলাম কে কোথায়...

দায় দায়িত্ব সামলে নিয়ে সংসার সমাজে
সময়টা যে কেটে গেলো কি ব্যস্তময় কাজে।

ফিরে এলাম উৎসমুখে একটু অবসরে
কথা গানে মুখর হল, মিলনসেতু গড়ে।







হাঁটতে হাঁটতে-হাটে বাজারে

সু জি ত  মু খো পা ধ্যা য়


পৌষালি গোধুলি হাটে- সূর্য দিনশেষে, সব উষ্ণতা চুরি করে
ডুব দেয় মহাকাল কোলে।
হাটে বিকিকিনি খণ্ডচিত্রে, 
খুঁজে পাই: জীবনের উষ্ণতর স্বাদ।
সস্তা সুতিচাদর, শিশুর গরম পোশাক, 
কমদামী চপ্পল, চন্দন কাঠ।
লক্ষ্মীর ব্রতকথা, আধুনিক গানের স্বরলিপি
অপ্রাপ্তবয়স্ক কৌতুহলী প্রেমপত্রের বই।
অপরাহ্ন প্রসাধন সেরে
সদরের ধুলো মাখে গ্রাম্য যুবতী।
দরদামে হরেক নিত্য টুকিটাকি
মুখে তার ক্লান্তিমাখা খুশী।
পাওয়া যায় বিষ, আঁখরীগুলি-
মরে যাবে সব ইঁদুর, উকুন আর মাছি।
যৌবনবর্দ্ধক দাওয়াই, সেরে যাবে সব দাদ, চুলকানি
ক্যানভাসার গলা তুলে শিশি, বোতলের ধূমপান।
পার্লার ফেরত সুবেশা কুমারী-
বিদেশী ম্যাগাজিনে বিউটি টিপস্ খোঁজে সন্ধানী চোখ।
ফুচকার পাশে নব্যদম্পতি 
লিপস্টিক বাঁচিয়ে হালকা হাসি
জিবচেটে তৃপ্ত বেঁচে থাকা।
এভাবেই হাঁটতে হাঁটতে খুঁজে পাই
জীবনের মানে।
অন্তহীন মানুষের ভিড়ে, চিরায়ত হাটে
বেঁচে থাক সব আশা, ভালোবাসা, স্বপ্নখানি।
প্রাণের পসরাপাখি যেন বন্দী না হয়
কালোবাজারি খাঁচায়॥






ফেরিওয়ালা

ব ন্দ না  ম ন্ড ল  মি ত্র


চলে নিয়মের খেলা
কুয়াশায় ঘোলাটে সময়
নিয়মিত রাত আসে, দিন যায়, আসে ভোর।
অতীতের পাতা থেকে স্মৃতি ঘষে নেওয়া
রঙীন কোলাজ গড়ি তায়।

আকাশের কোণে জাগে আশা
মেলে ধরে পাখি নতুন ডানা
কচিফুল উঁকি দেয়
নেশাতুর পৌষের সকালে
ধোঁয়ামাখা রাস্তায়
আজও ডেকে যায় ফেরিওয়ালা॥






তুই আফিম হয়ে মিশে গেছিস রক্তে যখন

আ মি নু ল  ই স লা ম 


তোকে দেখেই কিছু নদীর উৎপত্তি

মনের গভীরতায় তুই কি ডুবে আছিস এখন?

দুর্নিবার মিছিল~
জলজ কাকলির পাশেই মরমি হাওয়া
কবুল করছে আধিপত্য 

তুই আগের মতোই নির্বিকার 
নিরীহ   
মন্দিরের পুজোয়

তোকে ধরা গেল না!
 
কোনো অবিশ্বাসের ডালে 
তুই লেজ ঝোলাসনি কখনও

হিংসেরা হিংস্র নির্মম হয়ে যাচ্ছে যখন
তখনও তুই নিজের ভেতর মজে~
জমিয়ে তুলছিস অলংকার

পা থেকে মাথা অবধি~

তবুও তোকে বলতে দ্বন্দ্বেরা রাস্তায়

তোর ছবি হিংসে মাখা 
ভালো বললেই 
বন্ধুর অভিমান

ঘনঘন দেখলে বাড়ে লঙ্কার ফলন 
তাই 
বাড়াবাড়ি করতে চায় না মন

শুধু দেখে 
আর টুকে রাখে চড়াই-উতরাই ~

তোকে নামে বেঁধে ছোটো করলেই~ বরং 
ইলাস্টিক হয়ে বসে যাস ভালোই 

অহংকারের ভেতর ব-দ্বীপ 
আলতো ভাঙছে

সময়ের বিন্দুগুলো বরফ

কিছু বৃত্তের স্বপ্নপূরণে চরকায় তেল ~

'মাখনের তুলতুল'
রুটির জানাশোনা প্রসাধন

যা নিয়তই লেপ্টে নিচ্ছে বণিক
চশমায়





কবিতার অন্বেষণে

প লা শ  বি শ্বা স

              ( ২৯ )

রজনীগন্ধার সুরভি
নিঃশব্দ প্রেমের গান গেয়ে গ্যাছে
ঘুম আর জেগে থাকার পার্থক্য বুঝতে বুঝতে
হাজির হয়েছে তোমায় নিয়ে হঠাৎ করে 
সুপ্রভাতের দিনলিপি একান্তে
                                       
                   ( ৩০ )

এসো বনলতা
হেমন্ত রাতে চুপি চুপি শিশির মেখে
মেঠো আলপথ ধরে কবিতার ঘরে
ভালোবাসার হৈমন্তী আলাপন সেরে নেবো 
সংগোপনে এবার
                                
               ( ৩১ )

মিশিয়ে দিলাম নিজেকে
তোমার প্রতিকৃতির প্রতিটি জীবন্ত কোষে
আমি এখন একফালি শরৎ মেঘ
ভাসতে ভাসতে উজার হওয়া
রাতের আকাশে হৈমন্তী 
                                     
                ( ৩২ )

অপরাজিতা আরও গাঢ় নীল হয়
শিশির স্নাত তোমার ব্রততী শরীর খানি
সোনা রোদ মাখে লকলকিয়ে বেড়ে ওঠা 
আশ্বিনের পুঁই মাচানে
জমা রেখো পুঁই বীজের মতো তোমার বাসন্তী রঙ
                                    
               ( ৩৩ )

বৃষ্টি ভেজা দুপুর কথা বলে না
ঝরে যায় শুধু ঝরঝর
চোখের পাতা খুলে দেখি ভিজে যাচ্ছো তুমিও
আমাকেও ভেজাতে চাও
প্রজাপতির পাখা যেমন ভিজে যায় মধু খেতে খেতে
                                            
               ( ৩৪ )

গোলাপ গন্ধি কিছু শব্দ
ইথার তরঙ্গ বেয়ে নেমে আসুক আমার চোখে
আমি নীল হই কিছুক্ষণ
তোমার উষ্ণতা বুকে নিয়ে হেঁটে যাই দূর নীহারিকার পথে
আর ঝরে ঝরে যাক নক্ষত্র ফুল রাতের আকাশ হতে






বর্ণমালা ও পরকীয়া

ঋ ষি 

সময় লিখতে গেলে রাতের অন্ধকারে জোনাকি ঘোরে  

পরস্ত্রী প্রেমিকা হলে বর্ণমালা হয়ে যায় 

যাকে  উচ্চস্বরে পড়া যায় না সামাজিক উচ্চারণে 

কবিতায় যন্ত্রণা বেড়ে যায়। 

মহান কবি পরকীয়া কাকে বলে ?

পরকীয়া একটা সবুজ অরণ্য যেখানে চিৎকার  বৃষ্টি 

ভিজে মাটিতে শুধু কেঁচোদের বাস 

আর প্রেমিকার গর্ভাশয়ে লুকোনো আদিম অন্ধকার। 

মৃত্যুর আগে হঠাৎ অন্ধকার নদীতে দেখি  ঈশ্বরকণা

আমি কালো আফিমের নেশা বুদ্ এক নাগরিক 

এই শহর ভালোবাসা লিখতে চাইলেও 

কিন্তু ভালোবাসার বাড়িগুলো বড়ো অন্ধকারে চিরকাল। 

থেঁতলে যাওয়া মরুভূমি যদি হস্তমৈথুনের নালিশ করে 

মরুভূমিতে জন্মানো ওয়েসিস,

সব বর্ণরা বর্ণমালায় আমার প্রেমিকার নাম

আর প্রেমিকা আমার সামাজিক না কোনযুগেই।

বেবাগ উৎসবের শহর আমার সামাজিকতা 

অথচ বিছানায় বেবাগ উলঙ্গ দুটো চোখ সারারাত জেগে 

তারপর বর্ণমালারা জন্ম নিতে চায় তোমার গর্ভাশয়ে 

আমার শব্দের সংসারে জঙ্গলের কবিতা। 

গলায় মাফলার জড়িয়ে মধ্যাহ্নে নেমে পড়ি পুরোনো পুকুরে 

তাকিয়ে দেখি আমার পাশে চান করছে শালিখ পাখি,

পুকুর পাড়ে বাজেদের হুক খুলে যায় 

আমি তাকাতে পারি জলে ডুবে মরে  যাই।

দিন শেষে পবিত্র পাপীর মতো পরস্ত্রী আগলাতে নেই 

তবে বিবাগী জীবন পরজন্মে রাধা,

আমি স্থবিরতা খুঁজি আমার বর্ণমালার প্রেমে 

ভালোবাসা শব্দটার শান্তি ছিল না কোনোদিনই।






কথা কিছু কিছু

ম ধু প র্ণা  ব সু

(১)
শেষ ফোঁটা বৃষ্টিও পড়েনি, 
মুসাফির রুক্ষ ঠোঁটে 
ভুলে যাওয়া চুমুর মতো 
তেষ্টার চাতক উদাসীনতা। 

(২)
মুখোশের আড়ালে বিষাদ 
লোভী হয়ে পরাশ্রয়ী  হ্যাংলামি 
কাতর করতলে অস্পষ্ট রেখায় 
ভাগ্য হারিয়েছে প্লাবনের নিশানা। 

(৩)
নিতান্ত জরুরী নয় ফিরে আসা-
মনের অন্ধ কর্ণিকা তবু অপেক্ষায়
বিজয় স্তম্ভ চুরমার প্রচ্ছন্ন যেদিন 
সেদিন হেলায় দাগ মুছে দেবো।






তুমি

আ কা শ  নে রু দা 


তোমার ভিতরে আমি নেই!!
এটা ভাবলে মনে হয় আমি যেন 
আর আমার মধ্যেও নেই!!
মনে হয় এক ঘন অমাবস্যার 
অন্ধকারে পথ হারিয়েছি আমি!! 
কোনোদিকে কোনো 
দিশা নেই, আলো নেই, প্রাণ নেই!!
আমার বুকের মধ্যে কোনো
শ্বাস নেই!! চোখের মধ্যে কোনো 
দৃষ্টি নেই!!
 চারিদিকে শূন্য দেওয়াল জুড়ে 
শুধু, নেই! নেই!! নেই!!! এই 
একটাই শব্দ প্রেতলোকের 
হাহাকারের মতো শন শন 
করে বইতে থাকে!!
বুকের কোটরে কোটরে 
ঝন ঝন করে ভেঙে চুরমার 
হতে থাকে অবোধ্য কিছু 
অবাধ্য অভিমান!!

তবে অবাক হয়ে দেখি, 
এক আশ্চর্য জাদুকাঠির ছোঁয়ায়, 
কেমন চোখের পলকে মৃত কঙ্কালের 
হাড়গোড়ের আনাচেকানাচে 
ঝিকমিক করে ওঠে গান!! 
ঝাঁপিয়ে পড়ে ঝুমকোলতা, 
ফিক ফিক করে হেসে ওঠে 
মিষ্টি বিকেল!!
শুধু সেই জাদুকাঠির ছোঁয়ায়, 
যে জাদুকাঠির নাম "তুমি"!!!





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল সংখ্যা || ৪ ফাল্গুন ১৪৩০ || ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪