বনেদী বাড়ির পুজো

মেখলিগঞ্জ পূর্ব পাড়ার দত্ত বাড়ির ঐতিহ্যবাহী দুর্গা পূজা ১০৯ বছরে

শুভ্রজীৎ বিশ্বাস

কোচবিহার জেলার বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা মহকুমা শহর মেখলিগঞ্জ। মফঃস্বল শহর মেখলিগঞ্জে রয়েছে একাধিক ঐতিহ্যবাহী দুর্গা পুজো। তিস্তা পাড়ের কাশ ফুলের আন্দোলন ও বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রর রেডিওতে মহালয়ার অনুষ্ঠানের সাথে সাথেই এবার মেখলিগঞ্জ পূর্ব পাড়ার দত্ত বাড়ির ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপূজা পা রাখলো ১০৯ বছরে। দত্ত বাড়ির দুর্গাপূজার প্রতিমা তৈরি হয় বাড়ির স্থায়ী দুর্গামন্ডপেই। প্রায় বছর ৪৮ থেকে সেই প্রতিমা মন্ডপে বসেই তৈরি করে আসছেন মেখলিগঞ্জের বিশিষ্ট মৃৎ শিল্পী ক্ষিতীশ ব্যানার্জি। দত্ত বাড়ির দুর্গা পূজার শুরু হয় ঈশ্বর মোহিনী মোহন দত্তের হাত ধরে। তারপর বংশানুক্রমে রোহিনী মোহন দত্ত, দ্বিজেন্দ্র মোহন দত্ত, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, ও বর্তমানে মৃণাল কান্তি দত্তের তত্বাবধানে ও সুবল দত্ত, সৌমেন দত্ত, উজ্জ্বল দত্ত, উত্তম দত্ত,  মলয় দত্ত ও চিন্ময় দত্তর সহযোগিতায় এই পূজা পরিচালিত হচ্ছে। আলোকসজ্জার দায়িত্ব পরিবারের সদস্যরাই নিয়ে থাকেন। মৃণাল কান্তি দত্তর ভাষায় দত্ত বাড়ির দুর্গা পূজার কিছু বিশেষত্ব আছে। বৈষ্ণব মতেই দত্ত বাড়িতে পূজিত হন দেবী মহামায়া। বাড়িতে ষষ্ঠী থেকে দশমী চলে নিরামিষ আহার, তারপর মৎসমুখী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া শুরু হয় । একসময় দত্তবাড়ির পূজা করতেন জীবন কৃষ্ণ ভট্টাচার্যের বাড়ির লোকেরা। জানা যায় দত্ত বাড়ির সত্যেন্দ্রনাথ দত্তর তত্বাবধানে যখন পূজা হয় সে সময় তিনি স্বপ্নাদেশ পান যে জনৈক শঙ্কর চক্রবর্তীর দ্বারাই দত্তবাড়িতে পূজিত হতে চান দেবী মহামায়া। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তার স্বপ্নাদেশের কথা শঙ্কর চক্রবর্তী কে জানাতেই তিনিও পূজা করতে এক কথায় রাজি হয়ে যান। সেই থেকে তিনিই এই বাড়ির দুর্গা পূজা করে আসছেন। এমন কি বিজয়া দশমীর দিন মায়ের বিসর্জনের ক্ষেত্রেও দত্ত বাড়িতে ব্যাবহার করা হয় না কোনো যানবাহন। বাড়ির সদস্যরা দেবী মহামায়ার প্রতিমা বিসর্জন দেন ঘাড়ে নিয়ে। সারা বছর বংশের সদস্যরা কর্মসূত্রে অন্যত্র থাকলেও দুর্গা পূজার ৪ টে দিন কাটান একসাথেই। মায়ের আরাধনার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরা একে অপরের সাথে ভাগ করে নেয় নিজেদের সুখ দুঃখ। আজকের  ক্ষুদ্র পরিবার ব্যাবস্থাপনায় যৌথ পরিবারের এ হেন দৃশ্য বিরল। দত্ত বাড়ির পুজোয় শুধু যে পরিবারের মানুষজনই আনন্দ করেন তা কিন্তু নয়। মেখলিগঞ্জ পুরসভার কয়েক হাজার মানুষ এর পাশাপাশি সংলগ্ন এলাকা থেকেও দলে দলে মানুষ ভিড় জমান এই পুজো দেখতে।




                  মূল পাতায় যান



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল সংখ্যা || ৪ ফাল্গুন ১৪৩০ || ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪