অণুগল্প



তিস্তার খোঁজে তিস্তা পারে

শ্যামল কুমার মিশ্র

লালমণিরহাট-- বড় চেনা বড় কাছের এই গ্রাম। মেঠোপথ ধরে হেঁটে চলেছে সবুজাভ। দূরে বাহিরচর দেখা যায়। দিগন্ত জুড়ে জ্যোৎস্না ভরে রয়েছে। জোৎস্নাস্নাত হতে হতে এগিয়ে চলেছে সবুজাভ তিস্তার অভিমুখে। প্রতি রাতে সে তিস্তাকে দেখতে পায়। তিস্তার কলধ্বনিতে মন ভরে ওঠে। এক সময়ে সে গিয়ে বসে তিস্তা সন্নিধানে। এক টুকরো হিমেল হাওয়া এসে লাগে তার চোখে মুখে। মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। হারিয়ে যায় ত্রিশ বছর আগে।

সেদিন ও ছিল এমনি এক দুধসাদা জ্যোৎস্নাভরা সন্ধ্যা। অপরাহ্ণের ম্লান আলো এসে পড়েছিল তিস্তার বুকে। নীল আকাশ এসে মিশেছে তিস্তায়। দু'চোখ ভরে দেখছে তিস্তাকে। দুয়ে মিলে একাকার। তিস্তার হাত ধরে চলেছে চিলমারিপাড়ার দিকে। দুদিকে কাশের বনে আনন্দের হিল্লোল। ছোট্ট বিহঙ্গের মত কলতানে ভরিয়ে তুলছে তিস্তা। হাজারো প্রশ্নের ভিড়। পেলব জ্যোৎস্না গায়ে মেখে ওরা বসেছিল তিস্তা-পারে। নাম না জানা পাখি এক, গান শুনিয়ে চলেছে। সবুজাভর বুকে মাথা রেখে তিস্তা হারিয়ে যায় সেই গানের মাঝে। আজও চোখ বন্ধ করলে সবুজাভ শুনতে পায় সেই গান।

হঠাৎ ভাবনায় ছেদ ঘটায় খালেক ভাইয়ের গলা। নাও বেয়ে চলেছে। ডাক দেয়--- ও সবুজ দাদা! এবার ঘরে ফেরো। রাইত যে অনেক হইল। মৃদু হাসি ফুটে ওঠে সবুজের মুখে। বলে হ্যাঁ ফিরছি খালেক ভাই। সবুজের জন্য খালেকদের ও বড় কষ্ট হয়।...
সবুজ হারিয়ে যায় আবার নিজের জগতে। সেই কাশের বনে তিস্তার মাঝে। বাসন্তী রঙের শাড়িতে কী অপরূপ হয়ে উঠেছিল তিস্তা। অপলক নয়নে চেয়ে থাকে সবুজ। একসময় চাঁদ যেন নেমে এসে বলে- এবার ওঠো সবুজ। তিস্তাকে যেতে দাও।
উঠে পড়ে তিস্তা। তিস্তা এগিয়ে যায়। অকারণ অবারণ সে চলা। সময় চলে যায়। তারপর প্রতিটি বিকেল, প্রতিটি সন্ধ্যা খোঁজে তিস্তাকে। তিস্তা যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। তিস্তা হারিয়ে গেছে নক্ষত্রলোকে, এক অজানিতের দেশে। লিম্ফোমা কেড়ে নিয়েছে ওকে।

আজও সবুজ খুঁজে ফেরে সেই প্রথম প্রেমকে। তিস্তা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। টুপটুপ করে জ্যোৎস্না ঝরে পড়ছে। সবুজ দেখতে পাচ্ছে তিস্তার কবরী মাঝে তারা যেন ফুল হয়ে ফুটে উঠছে। কাশবনে ঢেউ লেগেছে। আকাশ এসে তিস্তার জলে মিশে যাচ্ছে। কানে ভেসে আসছে তিস্তার সেই কথা - চলো সবুজদা, আমরা হারিয়ে যাই কাশের বনে।
কাশের বনে আজ সত্যিই হারিয়ে গেছে তিস্তা। এ যেন নিরন্তর এক খোঁজ। সবুজের চোখ দুটো কখন যেন জলে ভরে ওঠে....।



পাত্রী চাই

অনিন্দিতা নাথ

রবিবার সকাল বেলা, পত্রিকা পড়তে পড়তে হঠাৎ একটা  পাত্রপাত্রীর  বিজ্ঞাপন চোখে পড়লো। রং শ্যামলা ও সাহসী, ক্যারাটে জানা, চাকরীরতা, এই গুনে গুণান্বিত হতে হবে। সঙ্গে মোবাইল নম্বর।"
       আমি কৌতূহলবশতঃ সেই ফোন নম্বরে ফোন করলাম, ব্যাপারটা কি জানার জন্য।            ওপাশ থেকে- 'হ্যালো' বলার সাথে সাথে নমস্কার জানালাম, এবং বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে জানতে চাইলাম।
         পাত্রের পিতা গম্ভীর গলায় বললেন-'বলুন...' 
          আমি বিজ্ঞাপনের কথা পাড়লাম। 
           উনি বললেন আমার ছেলে অফিসার পোস্টেই চাকরি করে। বর্তমান যুগে এ ধরনের মেয়ে আমাদের পরিবার পছন্দ করে। ছেলের পক্ষে সবর্দা বৌকে রক্ষা করতে পারলেও, বৌএর নিজেরও কিছুটা সুরক্ষার 
প্রয়োজন আছে। সেজন্য এই বিজ্ঞাপন, এবং ঠিক এমন পাত্রীই চাই আমাদের ।অন্যথা কথা বলা নিষ্প্রয়োজন।" 
          আমি ফোন ধীরে রেখে দিলাম।





                  মূল পাতায় যান







মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল সংখ্যা || ৪ ফাল্গুন ১৪৩০ || ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪