রম্য রচনা



মহিষাসুরের সাক্ষাৎকার

অশোক বোস (দেবব্রত)

দেবব্রত: অসুরদা আমার, আমার মানে বাংলার জনগনের কিছু প্রশ্ন ছিল।

অসুর দা: আচ্ছা! ক দেখি, শুনি কী প্রশ্ন!

 দেবব্রত: সবার প্রথম প্রশ্ন হল, আপনি এত বদমাস কেন?

অসুর দা: বদমাস! কস কীরে ব‍্যাটা! আমি ত হ‌ইলাম মাটির মানুষ ..

দেবব্রত: মাটির মানুষ!?

অসুর দা: নিশ্চয়...তরা আমারে মাটি দিয়া তৈরী করছস.... তাই আমি মাটির মানুষ।

দেবব্রত: সেতো স‍্যর মা দুর্গা থেকে কার্তিক ঠাকুর, সবাই মাটির তৈরী।

অসুর দা: হ‍, আমি না ক‌ইছি? আমি ত আর ওনাদের বদমাইস ক‌ইনাই। সুন, আমি ক‍্যান বদমাইস, রাজেশখান্নার এক ডায়ালগেই তার জবাব পাবি..

দেবব্রত‌: রাজেশখান্না আপনার কথা বলে গেছে? বলেন কী???!!

অসুর দা: না রে হতভাগা, উনি কী ক‌ইছেন? উনি ক‌ইছেন, দুনিয়াটা এক নাট‍্যমঞ্চ...আমরা সব্বাই কাঠের পুতুল ..একেকটা 'কারপেন্টার' প্লে করতে আছি..

দেবব্রত‌: ওটা কারপেন্টার নয় , আপনি বোধহয় ক‍্যারেক্টার বলতে চাইছেন ..

অসুর দা: হ তাই..আমার দায় হ‌ইল গিয়া ভিলেইন এর রোল প্লে ..আর পুরাণে কী ল‍্যাখা আছে..

দেবব্রত‌: পুরাণেও ...

অসুর দা: হ আছেতো ..পুরাণে আছে, আমরা যারা অসুর এ‍বং কোন‍ও দ‍্যাব বা দ‍্যাবির হাতে অক্কা পাইছি, তারা আসলে নিজেরাও আগে কোন‌ও দ‍্যাব বা দ‍্যাবি আছিলাম , ভগবান রুষ্ট হ‌ইয়া অভিশাপ দিলে কেউ রাবণ, কেউ কংস, কেউ তারকাসুর হ‌ইছে, আমিও তেমনি মহিষাসুর হ‌ইছি..

দেবব্রত: ওরেবাবা...তা আপনি কী পাপ ক'রে অসুর হলেন, আগেই বা কী ছিলেন ...

অসুর: তাকি আর স্মরণ আছেরে ব‍্যাটা...সবার মুক্তি হ‍ইছে, আমারতো আর মুক্তি হয়নাই, ফি বছর ত্রিশূলমুখী মরণ আমার, বুকে খোঁচা লাইগা লাইগা রক্ত ক্লট বাঁইধা গ‍্যাছে, সেই ক্লট ব্রেনে শিফ্ট হ‌ইলেও হ‌ইতে পারে ...

দেবব্রত: ঠিক কথা ..কিন্তু প্রশ্ন হল, একটা দোষের জন‍্য আপনার বার বার মৃত‍্যদন্ড কেন?

অসুর দা: এই সম্বন্ধে একটা কথা ক‌ই...এইযে পত‍্যেক বছর আমারে বধ করা হয়, এটারে কয় রিপ্লে...টিভিতে তদের খেলার যে রিপ্লে দ‍্যাখানো হয়, এইটা প্রথম শিখাইছি আমরা, এইটডাতো মানবি, নাকি? 

দেবব্রত: আচ্ছা! কিন্তু কেন এই রিপ্লে?

অসুর দা: পাবলিক ডিমান্ড রে ব‍্যাটা, এইডা না হ‌ইলে আর উৎসব হ‌ইবে ক‍্যামনে , কত লোক দ‍্যাখতে আসে ক'তো! এইডাতো প্রকাশ‍্যে মৃত‍্যুদন্ড, মানে মৃত‍্যুদন্ডের লাইভ শো ...দূরদূরান্ত থেকে কত টেরোরিস্ট‌ও দর্শন করতে আসে..

দেবব্রত: টেরোরিস্ট নয়। আপনি বোধহয় ট‍্যুরিস্ট মীন করছেন...

অসুর দা: হুমমম, তাই হবে...অত কথায় কথায় ভুল ধরস ক‍্যান...

দেবব্রত: প্লীজ, রাগবেন না স‍্যর, আমি জনগনের কাছে সঠিক তথ‍্যটা পৌঁছে দিতে চাইছি...

অসুর দা: জনগনরে কী ক‌ইবি? জনগন সব জানে। ওরা জানে যে আমি ত্রিশূল খাই তাই ওরা নতুন জামাকাপড় পড়তে পায়, স্কুল কলেজ অফিসে ছুটি পায়, বাঙালিরা বাইরে ঘুরতে যাওয়ার হুজুগ পায়..আমার বুকে সস্তার লোহার ত্রিশূল বেঁধা দ‍্যাখানোর উৎসবকে আরো বিনোদনমূলক করার ল‌ইগাইতো কোটি কোটি ট‍্যাহার রুপার রথ তৈয়ার হয়...কাপড়ওলার ব‍্যবসা হয়, বিউটি পারলারে ভীড় বাড়ে...

দেবব্রত: ও অসুর দা কোথায় গেলেন...ও অসুর দা...

নো নেট‌ওয়ার্ক ফাউন্ড ....




                     মূল পাতায় যান


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল সংখ্যা || ৪ ফাল্গুন ১৪৩০ || ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪