শ্রুতিনাটক
না লেখা দিনলিপি
বন্দনা মণ্ডল
- ওরে বাবা! সাড়ে ছ'টা! দেরি হয়ে গেল।
- হ্যাঁ, যাই...
- হাবুর মা, বড্ডো দেরি হলো গো।
- আগে রান্না ঘরটা করো।
- কি গো, ওঠো, চা খাবেনা?
- হাবুর মা, দু'টো ফুল এনে দাও।
- তুমি তাড়াতাড়ি করো, এই চা রইলো, আমি ওপরে যাচ্ছি।
- হ্যাঁ বাবা, এখুনি আসছি সোনা।
- হাবুর মা, ছাতাটা দেখো কি হয়ে আছে, একটু তাকাবার সময় নেই গো, তুমি আছো তাই।
- যাই...
- এই নাও, টিফিনটা ভুলোনা।
- দুধের পাত্রটা আবার কই?
- এমাসে দু'দিন বাদ গেলো.... তা আপনার হলো পাঁচশো আশি..... ঠিকাছে, কুড়ি টাকা পরে দেবেন।
- হ্যাঁ সোনা আসছি, এই তো মা এসে গেছে। ও জল খাবে? .... দিচ্ছি।
- হাবুর মা ওবেলায় তাড়াতাড়ি এসো। চারটেয় বাবুকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাব।
- হ্যাঁ সোনা জল, এই নাও। তুমি একটু ঘুমোও, আমি আসছি। এই যাহ্ চারটে সিটি পড়ে গেলো!
- আসছি... যাই… কে?
- ও আপনি, আসুন আসুন, বসুন। চা করছি ...... ও জল? এই নিন।
- চা করি? দাদা তো দুপুরে খেতে আসবেন। .... .. হ্যাঁ আমি বলে দেব,..... . হ্যাঁ-হ্যাঁ আবার আসবেন।
- আসছি সোনা, ওহো বমি পাচ্ছে? আস্তে আস্তে, কিচ্ছু হয়নি। নাও শুয়ে পড়ো, একটু জল খাও, আমি পরিষ্কার করে নিই। এই নাও .... নুন-চিনি জল। লক্ষীসোনা বায়না করেনা।
- যাই…
- এসো,.... নাও জল, হ্যাঁ,.... বাবু ঘুমোচ্ছে। হ্যাঁ একটু ভাত চিনি আর নুন চটকে খাইয়ে দিয়েছি।
- পোস্ত নেবে? দিচ্ছি,.... মাছ করার সময় পাইনি। কি? ডিম?.... দাঁড়াও দিচ্ছি।
- নাম লিখিয়েছো?... ঠিক আছে।
- এখুনি বের হবে?..... ঠিকাছে যাবো। দেখি যদি টোটো পাই,.... . নাহলে ফোন করবো। আচ্ছা,...... সাবধানে।
- এই তো আমার খোকন সোনা, আমরা এখন বেড়ু-বেড়ু যাব। ওহ তুমি লাল জামা পড়বে? ঠিকাছে, .....আহা, বায়না করেনা। তুমি না লক্ষ্মী ছেলে। নাও আর এক চামচ,..... আচ্ছা আর খেতে হবে না। এই নাও মোবাইল। আমি রেডি হই। লক্ষ্মীসোনা।
- ও টোটো! ও টোটো! দাঁড়ান ভাই, এই শুধু তালাটা দেবো, ছেলেটার অসুখ।
- আর পারিনা, মাস্কটা আবার কই? নাও নাও পরে নাও। .....এসো কোলে মাথা দাও।
- দাঁড়ান দাঁড়ান, কত? এই নিন।
- হ্যাঁ হ্যালো! আমরা চলে এসেছি, রাখো। .....কি? তুমি আসবে? ঠিকাছে। কি?..... তাড়াতাড়ি বন্ধ করবে?.... আচ্ছা আচ্ছা, ও হ্যাঁ শোনো, দু'টো ম্যাগি এনো তো। হ্যাঁ,... রাখো।
- ভালো আছেন? আমি ভালো আছি। … বিনায়ক ঘোষ।
- গত পরশু থেকে জ্বর আর আজ সকালে একবার বমি হয়েছে। হ্যাঁ। না,..... পাতলা পায়খানা হয়নি তবে কখনো ঘামছে আবার ঠাণ্ডাও লাগছে। ঠিক আছে।.... বলছি, কোন পরীক্ষা-টরীক্ষা? ও.... ঠিকাছে-ঠিকাছে। আসছি।
- হ্যালো! কোথায় তুমি?
- এই তো বাবা এখুনি এসে পড়বে।
- ডক্টর আঙ্কল কি বললেন মনে থাকবে তো?
- না বাবা, ওষুধ তেতো হয়না। ....তুমি না লক্ষ্মী ছেলে, দু'দিনে ভালো হয়ে যাবে। তারপর আমরা ঘুরতে যাব। কেমন? অনেক মজা করবো, খেলবো।
- হ্যালো! হ্যাঁ মা, হ্যাঁ ওষুধ দিয়েছে। হ্যাঁ ভালো আছে। তোমার জামাই নিতে আসবে। হ্যাঁ দোকান বন্ধ করেই আসবে। ঠিক আছে রাখো। না, ....আজকে ফোন করার আর সময় পাবো না। কালকে করবো। হ্যাঁ, ...রাখো।
- এই তো বাবা চলে এসেছে।
- দাঁড়াও উঠি, ব্যাগটা দাও। ওকে সামনে নিওনা। হাওয়া লাগবে।
- তুমি মাঝখানে বসো।
- চাবিটা! এই তো।
- তুমি কাপড় ছাড়ো, আমি ঠাকুর ঘর থেকে আসি।
- কি? লুঙ্গি? ওই তো চেয়ারে দিয়ে এলাম।
- তুমি ওকে চকোলেট কেন দিলে? সকালে তো বমি করেছিল।
- না সোনা, সবটা খায় না। আমি ফ্রিজে রেখে দিই, কালকে খাবে কেমন? (চুমু)
- চা টা ধরো। রাতে যে কি করি ? সয়াবিন করি।
- হাবুর মার মাইনেটা দিয়ে যেয়ো, আর হ্যাঁ, গ্যাসটা বুক করতে হবে। তোমার ওষুধ নেওয়ার সাথে একটা মুভ বা ভোলিনি নিও তো আমার জন্য।
- আমার লক্ষ্মী ছেলেটা কই রে? কে খাবে? কে খাবে? অমনি করে না। দুধ-রুটি এনেছি। দেখো আমুল দিয়েছি। কাজু দিয়েছি। এই নাও খাও, আর দু'বার দিলেই শেষ। এই, এই, শেষ। জল? জল।
- কই, খেতে এসো। সাড়ে এগারোটা যে।
গল্প শুনবে? কিসের গল্প শুনবে? ও সেই দৈত্যের বাগান? ঠিকাছে। 'একদিন সকালে একটি দৈত্যের বাগানে কতগুলো বাচ্চা খেলছিল।'
- আরে তোমাকে না কতদিন বলেছি, শুতে এসে মোবাইলটা দেখবে না। বাবু ঘুমোতে চায়না। অ্যালার্মটা দিয়েছো?
- তারপর? 'তারপর বাচ্চাদের চিৎকার শুনে তো দৈত্যের ঘুম ভেঙে গেল। তারপর দৈত্য সে কি গর্জন করে উঠলো - "কারা ওখানে?" বাচ্চারা তো পড়িমড়ি করে দে ছুট। তারপর দৈত্য বাগানের গেটে একটা ইয়া বড়ো বোর্ডে ... ই-য়া-ব-ড়ো বোও-র্ডে (হাই) লিখে রাখলো…'
- বাবা কালকে বলি। তুমি এখন ঘুমাও, (চুমু) আজ মায়ের খুব ঘুম পেয়ে গেছে। না না সোনা, দেখো বারোটা বাজে। ঘুমাও।
- ওই শোনো, কই গো - ঘুমিয়ে গেছো?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন