কবিতা

* মুড *

ডাঃ তা র ক ম জু ম দা র

তোমার ভালোবাসা 
আপাদমস্তক রোদে জলে
পথে প্রান্তরে ,আবেগে
অনুভূতির দেওয়ালে দেওয়ালে। 

প্রত্যাশার অবসানে স্নিগ্ধ বাতাস। 

তোমার খামখেয়ালি মন
মানেনা বারন
একটু উষ্ণতার উষ্ণ চুম্বনে
পরিবর্তিত মুড---।




* অভ্যাসের গল্প * 

পি ন্টু ঘু ঘু

একদমই অনিবার্য 
একটা ঝড় আসবে
ভেঙেচুরে উল্টে পাল্টে 
করে দিয়ে যাবে মুখোমুখি 
তোমাকে আমাকে।

অস্পষ্ট কথা
ভোরে যাবে অলিগোলির রাস্তায়
মেঘে মেঘে ভেসে বেড়াবে
দুর্দশাগ্রস্ত সম্পর্ক
অকেজো ভালোবাসা।

চায়ের কাপে লেগে থাকবে আকাঙ্ক্ষা।




* কবিতার অন্বেষণে *

প লা শ বি শ্বা স
 
             ( ৭ )
সময় হাতের মুঠোয় তখন
গিয়েছিলো দু'চোখ কাশের বনে 
আর তুমি এলে মাছরাঙা পাখির মতো হঠাৎই
বোকা মাছ পড়ে থাকে জলে
মাছরাঙার ঠোঁটে আমি এঁকে দিয়েছি ভালোবাসা
                                     
            ( ৮ )
এখন আকাশে বিদ্যুতের ঝলক
তুমি আছো আগের মতোই তন্দ্রাচ্ছন্ন 
জেগে ওঠো কবিতা খুব শিগ্গিরি
তোমার মুখাবয়ব আলোকিত জানালার পাশে
আমি দাঁড়িয়ে তোমার শিয়রে
                                        
              ( ৯ )
থেমো না কখনো এমন ভাবে
এগিয়ে যাও পাহাড়চূড়ায় একটু একটু করে
তারার মতো চকচক করছো তুমি
সবুজ শ্যাওলায় ঢেকে থাক এই প্রাণ শরীর 
নির্বাক হয়েছি হাসিমুখে
                                    
             ( ১০ )
মিশে যেতে ইচ্ছে হয় যখন পাহাড়ের গানে
শান্ত দীঘির পাথরঘাটে টলটলে জল পা ছুঁয়ে যাক
নীল আকাশ মুখ ভার করে হিংসে ছড়ায় তখন
কবিতা মাথা দুলিয়ে নাও কাশফুলের মতন
আমার চোখ জ্বলে উঠুক হাহাকারে
                                    
               ( ১১ ) 
বন্ধুত্ব আঙুল গুনে বয়স মাপে না কখনো
হেঁটে যায় অনন্তের পথে কবিতার মতো
শিউলি রাতে ফোটে ঝরে যায় প্রাতে 
বয়স বোঝে না আমার মতো
আমি ছাদ বারান্দায় রাতেই দেখেছি তাকে
                               
           ( ১২ )
জ্বলেছো অন্তরে তুমিও ক্ষণকাল
হাট-বাজার-সংসার টানাপোড়েনের মাঝে
এবার যাপন কবিতার পাশে
আলো-ছায়ার গোপন কথা হৃদয়ের দীপ-শিখা
আমি শব্দহীন হতে পারি কবিতাহীন না হয়ে




* আজও....*

তু লি মু খা র্জি চ ক্র ব র্তী

জানো ইলাবন্ত, গরম পড়ার আগেই এখনও দার্জিলিং চলে আসি আমি। ঠিক যেমন আসতাম আগে। ডোলো পাহাড়, কালিম্পং মনাস্ট্রি সব ছাড়িয়ে দূরে..... আরও দূরেএএএএ চলে যেতাম আমরা, এখনও আমি এখানেই আসি প্রতি বছর ঠিক ঐ সময়ে।

প্যারা গ্লাইডিং পয়েন্ট এর পাশে রেলিং ঘেরা বাঁধানো চত্বরে একটু ছায়ার জন্য ছাউনির নীচে দাঁড়াতাম দুজন, সামনে অতল খাদ আর দূরে সবুজাবৃত পাহাড়। নাছোড় রোদ্দুরের পিছু ধাওয়া আর সরে সরে গিয়ে আমার অবাক হয়ে পাহাড় দেখা। কি অবলীলায় তুমি এই পাহাড় কে টপকে যেতে আর ফিরে আসতে।
আমার অবাক দৃষ্টি দেখে তুমি বলতে, 'ওরাও তোমাকে অবাক হয়ে দেখছে মঞ্জীর, কেন যে ভয় পাও পাহাড় কে'

হাত ধরে পাশে বসিয়ে কত কথাই না বলতে। পাহাড়..... সব ঐ পাহাড় কে নিয়ে।

আমি তোমার কথা শুনতে শুনতে কেমন হারিয়ে যেতাম ইলাবন্ত। একদম সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গাছটাকে সাক্ষী রেখে মনে মনে ভবিষ্যতের স্বপ্ন আঁকতাম। দার্জিলিং চায়ের গন্ধ, স্টিম মোমোর গন্ধ, সবুজ বনানীর বুনো গন্ধ, হঠাৎ করে লাফিয়ে পড়া পাহাড়ী ঝোরার শব্দ, তীব্র বেগে পাহাড়ের বাঁক ঘুরে সমতলের দিকে বয়ে চলা চঞ্চল নদীর শব্দ, আর..... আর রুকস্যাক কাঁধে ট্রেকিং থেকে ফেরা তোমার গায়ে লেগে থাকা পাহাড়ের ধুলো, হঠাৎ জাপটে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলে চেনা চুরুটের গন্ধ..... সব আঁকতাম....

আমি বুঝিনি ইলাবন্ত তুমি আমার থেকেও পাহাড় কে বেশি ভালোবাসতে। আর তাই দশবছর আগে পাহাড় কে দেখতে খুব সামনে থেকে সেই যে তুমি রুকস্যাক নিয়ে ট্রেকিং এ গেলে.... আর ফিরলে না..... পাহাড় বুঝি আটকে দিয়েছিল তোমার ফেরার পথ!!

আমার স্বপ্ন খাতায় শুকিয়ে যাওয়া সবুজ গাছ, চঞ্চল নদী, পাহাড়ী ঝোরা। চায়ের কাপে চা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া চা আর মোমো। 

আমি বাতাসের ঘ্রাণে পরিচিত চুরুটের গন্ধ পাবার চেষ্টা করি। 

আমি আজও তোমার ফেরার পথ চেয়ে পাহাড়ের কাছে আসি, তুমি আসবে না জেনেও....




* বেওয়াফা *

তু লি মু খা র্জি চ ক্র ব র্তী

ঘুম ঘুম আবেশ নিয়ে, একলা হেঁটে চলি

জমাট বাঁধা কুয়াশা, মিথ্যে আবরণে ঢাকে 
একহাত দূরের সব অস্পষ্ট 

গান্ধারীর মতোই হাতড়াই কুয়াশা 
চোখ থেকেও অন্ধ 

দু'হাতে কিছু ছুঁয়ে দিতেই মিষ্টি গন্ধ নাকে আসে
নিঃশ্বাসে মিশে যাওয়া সে গন্ধ কুয়াশা মাখা আতরের

তোমার রুমালের চেনা আতর

তবে কি কুয়াশার আড়ালে তুমি!! 

না না, তুলোট বইয়ের পাতার মতো ঝুরঝুরে অতীত হয়ে তুমি আছো মন দহলিজে

কিছুতেই পারবে না পার হতে চৌকাঠ

স্বেচ্ছাবন্দীত্ব.... 

খুশবু তে তুমি.... অবচেতনেও তুমি.... সবটাই কুয়াশা মাখা আবছায়া 

রোদের আলো কুয়াশা এফোঁড় ওফোঁড় করলেই দেখব কেউ নেই, কিছু নেই

রাতভোর কুয়াশায় ভেজা ঘাস সারা মাঠ জুড়ে 

আর, কত কত রঙিন প্রজাপতি উড়ছে চারপাশে 

তুমি ছুটে চলেছো তাদের ধরতে 

নাগাল পেলেই এক নামে ডেকে ভাবছো গভীর প্রেম 

আসলে সবটাই ধুন্ধ্..... কুয়াশা




সু শা ন্ত ভ ট্টা চা র্যে র ক বি তা


১.
* হেমন্তের কবিতা *

নদীকেও পড়া যায়।

ইচ্ছে করলে ভাঁজ করে রাখা যায় 
বুক পকেটে

হেমন্তের পাকা ধানে
তুমি ঠোঁট ভিজিয়েছো কতবার

উনুন লেপতে বসেছো 
দু একটা ঘাসফড়িং চুলের ভেতর 
বিলি কাটছে। আজ কি বার

নিরাকার
একটি ঘুম মাখানো বাঁশপাতা
বুকের গভীরে নেমে গেলো

তুমি গর্ভাশয় ছিঁড়ে 
কখন যে গোলাভর্তি ধান

তুমি শব্দ বুনছো
আমি বুনছি খিদের সাতকাহন
অত উঁচু থেকে তোমাকে ঠিক পড়া যাচ্ছে না

মাধবী! বৃষ্টি কবে আসবে


২.
*বোনকে*

বুক থেকে 
একটা রোববার ছিঁড়ে দিলাম
ওটা আমার বোন।

এত্তো উত্তাল হাওয়ায় খচরমচর
ছ্যাক শব্দ। লুচি ভাজা হচ্ছে

যমদুয়ারের ভেতর টা কেমন
রাক্ষসের হা এর মতো রহস্যের মোড়ক

অনাবিষ্কৃত থাক
একটি শব্দ ও আর লিখবো না

ওহ্ এত আবছায়া লুটোচ্ছে পায়ের কাছে
আমি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যর্থ দাদা

একটা আঙুল এগিয়ে আসছে কপাল বরাবর
যেন প্রত্নখনন। যেন মহার্ঘ শেকড়ের চুরমার

বোন
আমি তোর দাদা
আমি তোর আত্মঘাতী দাদা।




  অ সী ম দা সে র ক বি তা 

১.
* আলো অন্ধকারে *


বিশুদ্ধ শব্দের সাঁকো অতিক্রম করতে গিয়ে 
আমি অব্যর্থ সার্থক শব্দের গর্ভে 
প্রপাত পড়েছি।
কি অনাস্বাদিত উষর অনুভূতি 
আমার নিমগ্ন শরীরের রোমাঞ্চিত 
সারা মন জুড়ে।

ভাগ্যিস কবিতা হওয়ার আগের মুহূর্তে
আমি প্রপঞ্চময় পিচ্ছিল পিছলে পড়েছিলাম!
কবিতা হলে তো রূপকথা হয়ে যেতাম।
আর শেষের দৃশ্যের অশেষ 
সুখ শান্তিতে কালাতিপাত 
বহমান আমাকে অস্থির স্থবির করতো।

তারচেয়ে এই ভালো।
কবিতার অনতিদূরে কেমন খাবি খাচ্ছি!
নাকানিচোবানি খেতে খেতে 
মাঝে মাঝে হাঁকুপাকু উদোম আকাশে নাক গলিয়ে 
নির্বিকার স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছি।
আহা, নিরন্ধ্র কষ্টের সঙ্গে যুগপৎ প্রকৃষ্ট আরাম!

আমি এই আলো অন্ধকারের দ্বৈত 
সমারোহে আমৃত্যু বেঁচে নিতে চাই।
অনর্গল আনন্দের ক্লান্তি আমার সহ্য হবে না।
কবিতা-রূপকথার নিরবচ্ছিন্ন সুখ 
আমার লোমশ ধাতে সইবে না।



২.
* মাটির মহতী আয়ু * 


অনিকেত এই নত নির্জন রাতে 
মালবাহী রেল চুপ ঘুমে শবাসনে,
প্রশ্নের বানে ক্ষত বিক্ষত তনু 
প্রসূতি বাতাস ছুঁয়ে যায় আনমনে।

চেষ্টা আশার যুগলবন্দী শ্রমে 
গড়ে ওঠা ধীর মহীরূহ সংসার
ছেড়েছুড়ে যাওয়া নাড়ির মরণ হলে 
উদ্যমীভুক নিশাচর পারাপার।

স্মৃতির সেতুটি ধরে রাখে দুটি কূল 
জীবন কুঁড়িরা করে শুধু আনাগোনা,
ক্ষয়ে ক্ষয়ে টিলা মাটির মহতী আয়ু 
মাতৃ শব্দে ইথারের জাল বোনা।

শেষ নিঃশ্বাসে উঁচু প্রতিভার ছাই 
মিলে মিশে এক রাম শ্যাম যদু মধু,
ক্রমাগত মায়া হয়ে যায় ছানি ছায়া 
চিত্রার্পিত সন্তান কাঁখে বধূ ।




ছো ট ন গু প্তে র ক বি তা 


১.
* খোঁজে *

কি মানে হয় ঠিক জানা নেই, তাও তো ভিজেই
শব্দ খুঁজি বৃষ্টি দিনে একলা নিজেই।
মনে তো হয় সব কবিতাই ছন্নছাড়া
লিখতে পারেন যেসব কবির নেই পাহারা।

তাদের হাতেই বকলমে সোনার আখর
আঁকতে পারেন ছন্দে ছড়ায় সাতরঙে স্বর।
যা মনে হয় সেইদিকে যায় স্বপ্ন পথের
পুকুর দিঘি নদীর গল্প উজান স্রোতের–

হাত বাড়িয়ে আমারও খোঁজ শব্দগুলোর
কবিতা নয়, শীতের দুপুর মাঠের ধুলোর
ধূসর বেলায় দিব্বি আছি,
কথায় কথায় সংশপ্তক লেখায় বাঁচি।

তুই বলেছিস, লিখতে হবেই রোজ কবিতা
সাধ্য ছাড়াই দেখতে গেলাম সেই ছবিটা।
আর কিছু না, দিনযাপনের আখর যতো
বাজুক কবির মনেই না হয়, কমুক ক্ষত।।



২.
* সাদা ভাতের গল্প *

উষ্ণ সাদা ভাতে
সুবাস ছড়ায় পেটের খিদেয় 
সহসা মৌতাতে।

ভাত খাবো নুন দিয়ে
লঙ্কা চিরে ছড়িয়ে দেবো 
গরাস মুখে নিয়ে।

গরম ভাতের আঁচে
খিদে যখন খিদেকে খায়
কেউ এসো না কাছে।।




চি র ঞ্জী ব হা ল দা রে র ক বি তা


১.
* না কবিতা *

অনেকগুলো না সাজিয়ে
সন্ধ্যা গড়া যায় কিনা
ভেবে দেখতে হবে

আকাশ থেকে নেমে আসা বাজ  
 না
জুয়ারীর বাম পকেটে আত্মগোপন করে থাকা অনির্ণেয় লোভ
না
ভাবুন আপনি পুকুরে স্নানে নামার পর আপনার গামছা মাছে গিলে ফেলল 
না
আপনার ম্যাসেঞ্জারের বান্ধবী ভীমরতি সম্পন্ন ডাকসাইটে সুন্দরী
 না
আপনার অটোনমাস ইচ্ছে থেকে নেমে আসছেন কল্প বান্ধবী

এখন না সূচক সম্ভাবনাগুলো 
আপনার দিকে এসে উড়ন্ত চুম্বন দিতে দিতে 
মিশে যাচ্ছে হ্যাঁ এর অভ্যন্তরে

আহা এখন আপনি অমৃতগামী



২.
* জল ও রশ্মি *

জলরাশির কাছে গেলে অবশ্যই পাগলকে সঙ্গে নিতে হয়

দেখি আশ্চর্য এক সারমেয় সঙ্গ নিয়েছে

আমার ফতুর দিনযাপন কুড়িয়ে আনে
জলযান সরণির পাশে এক খন্ড আরণ্যক রাত

গভীর রাতে আয়না থেকে নেমে এসে 
আমাকে সমুদ্র শোনায়




আ র তি ধ রে র ক বি তা

১.
* শান্ত হেমন্ত *

বড় শান্ত হেমন্ত
আশা জাগায়, উদ্দিপনা বাড়িয়ে দেয়। 

হাসিমুখ চাষি গিন্নীর
নাওয়া খাওয়া ভুলে যায় ব্যস্ততায়! 

মাঠে কর্তা, হাতে কাঁচি, মুখে গান 
আমার গোলা ভরা ধান.... । 

দাওয়া গোবরে লেপামোছা
ধান এলে ঝাড়া-বাছা
শুকিয়ে নেওয়া হেমন্তের মিঠে রোদে 
ন্যাংটা ছেলেটা বসে আছে
পিঠে খাওয়ার লোভে! 

উঠোনে লাউলতা ভোরের শিশিরে স্নান সারে, মাচার দিকে লকলকিয়ে ধায় 
যৌবনবতী হবার আশায়... 

বছর ভরের অন্ন
আহা! নতুন চালে হবে যে নবান্ন....। 

লাজুক গাঁদা, রোদ পেয়ে আলসি ভাঙে
মাঠ থেকে গরুর গাড়ি এসে দাওয়া'য় থামে। 

ওরে একটু উলুধ্বনি দে 
বাইরে আয়, দেখ চেয়ে
মা লক্ষ্মী যে আমার ঘরে বাঁধা পড়েছে....!



২.
* দৃষ্টি প্রদীপ *

বলছি আগুন নয়
প্রদীপ জ্বালো 
আর তাতে খানিকটা
তেল রূপে প্রেম ঢালো। 

বাড়িয়ে দিও না
প্রদীপের শিখা কে
জ্বলুক সে ধীরে ধীরে
নাহলে বের হবে জিহ্বা লকলকে।

চারিদিকে বড় আঁধার
একটু প্রকাশ চাই
শুধু চলে ভাঙার খেলা
দিয়ে ধর্মের দোহাই। 

এসো একটা প্রদীপ জ্বালি
বসাই যতনে হৃদয়ের কোণে
ধীরে ধীরে তার শিখা
দ্যুতি ছড়াক আমাদের মনে। 

জানি এভাবেই রোধ হবে
পৃথিবীর যত বিভেদ, ভাঙন
এভাবেই হবে একদিন
আলোকিত সবার প্রাঙ্গন।




উ দ য় ন রা জী বে র ক বি তা

১.
* কাদম্বরী *

এখনো তো অপেক্ষাই শাশ্বত 
কিছুটা মানুষ, কিছুটা পাখিদের মত।

নতুবা
এই নরম মেজাজের দুপুরে 
কে আছে আর —
দিতে পারে স্বপ্ন বাস্তবতার
মধ্যবর্তী আকাশ
অপ্রস্তুত নীলের অভিজ্ঞতা?

ঘড়ির কাঁটা যদি স্পষ্টভাবে শোনাতে চায় তার শব্দ, যদি আরো বেশি ব্যস্ততা দেখা দেয় চারিদিকে 
যদি একা লাগে 
যদি নিঃসঙ্গ মনে হয়
যদি দৌড়াতে ইচ্ছে করে... 
ঘন নিঃশ্বাসে —
ঠিক
ঠিক তখনই!

থমকে যাবার ভাষায় ফুটে থাকে চোখের ফুল
লতানো নুয়ে পড়া উদ্ভিদের চেয়ে ঝাপসা দেখায় তোমার চশমার ফ্রেম
অভিশাপের গতিতে পথও পিছিয়ে যায় নির্মম!
বলে দেবার মত কিছু উপলব্ধি বাকি থাকে
বলা হয় না
বাকি থাকে কিছু গান শোনা...

ঠিক
ঠিক তখনই!
মনে পড়ে...

এখনো তো অপেক্ষাই শাশ্বত 
কিছুটা মানুষ, কিছুটা পাখিদের মত।



২.
* মূর্খতা *

আমার মনের ওজন 
তোমার আঙুলের সমান। 
প্রধানতঃ শীতরাতে 
শ্যামল হয় যখন অন্ধকার;
একান্ত ঘড়ির কাটাগুলো থামে; 
সময় হয়—
তোমাকে দেখার।

যাকে রোজই দেখি, 
তবু দেখিনি — কোনোদিন। 
তুমি ঠিক সেই অন্ধকারের মতই 
উজ্জ্বল প্রিয়তমা আমার। 
রক্তপ্রবাহ সমান রঙিন...

পৃথিবীর শেষ রুটিটির মত 
পবিত্র তোমার মুখ।
আমি কতটা বিভোর হ'য়ে দেখি, 
ও তুমি বুঝবে না। 
অমন ভিখিরির সঙ্গে 
নিশ্চই পরিচয় নেই?
সামান্যই চায়
যে এভাবেই—
সবকিছু ছেড়ে 
কেবল তাকিয়ে থাকে। 
তোমার দিকে
 — ওই ঝুলবারান্দায় 
যাতে সহনীয় হয়ে আসে 
সমস্ত গ্লানি; তিরস্কার...
তুমি অবুঝ, 
আমি মাতাল। 
মূলতঃ দুজনই শিশু। 
তুমি লিখতে জানো না চিঠি;
আর তাছাড়া 
আমি কি পড়তে জানি?




মৌ সু মী পা লে র ক বি তা

১.
* অসুখ *

হিমেল রাতে তোমাকে বড় মনে পড়ছে পাগলী 
নিঃশব্দ রাতের অন্ধকারে নিঃসঙ্গ আমি
মুখ ঢেকে কাঁদি শিশিরের মতন।।

শ্রদ্ধা ভক্তি দিয়ে দুবেলা ভাত মাখতে মাখতে
আমি ক্লান্ত রিক্ত মৃতপ্রায় জীব।
বিশ্বাস করো--- আমি ঈশ্বর নই। আমি মানুষ।
একমুঠো ভালোবাসাই আমার জন্য যথেষ্ট।।

একান্তে এতো ছটফটানি।
কি গভীর চাওয়া।
বোঝাই কেমনে?
খুব ইচ্ছে করে ____
বাহুডোরে জড়িয়ে ধরে তোমার কাছে নিজেকে
নিঃশেষ করি।
চিৎকার করে মনের অমোঘ সত্য কে জানিয়ে বলি-
ভালোবাসা চাই আমি, এক গলা জল ভালোবাসা।
আমি যাকে চাই- তুমি সেই..ই। তুমি-ই.......।।

তবুও সব কথা বলা হবে না, বলা যাবে না 
এতো আপ্যায়নের সীমারেখায়- 
আমার আকুতির অব্যক্ত যন্ত্রনারা 
কেঁদে যাবে যাবৎকাল!!
জানি-
সে খবর তোমার জানা হবে না কোনোদিনও।।



২.
* বেঁধো না *

বনের পাখি বনেই থাকি
সেটাই আমার কাজ 
মানুষ তুমি খুশির নেশায়
বাঁধলে খাঁচায় আজ।।

ঝটপটিয়ে মরি পাখা
কেমনে খুলি জাল?
বন্দী আমি, তুমিও জেনো
আটকে যাবে কাল।।

এমন নেশা কেমনে করো 
মরন যাতে রয়?
তোমার খুশি কিনবে বলে
আমার অবক্ষয়?

 মানুষ তুমি বুদ্ধিজীবী
 উচ্চ যেথা শির!
খোলা আকাশ প্রিয় জেনেও
বেঁধাও বুকে তীর!!

তোমার খুশি কিনতে গিয়ে
 আমার কাড়ো প্রেম।
মানুষ বড়াই, ঘাতক তুমি
এইটুকু জানলেম।।

তবুও এমন মানুষ আছেন
উড়িয়ে দিতেই মন।
জানেন তাঁরাই প্রিয় আকাশ
প্রিয় সবুজ বন।।




* নির্দোষ ইচ্ছে *

অ ম ল বি শ্বা স

অস্থির ইচ্ছায়
লজ্জায় হাত রাখে আপন যৌবন
শিহরণ জাগিয়ে তুষ্ট করে
সম্ভ্রমের ঘর।
                  যতোক্ষণ দ্বৈতদেহে অধিবাস
                  তরঙ্গ নিশ্বাসে
                  গিলে খায় ওঁ-কার ঈশ্বর-অঙ্কুরে;
                  বিস্তৃত হয় গর্ভাধান
                  অনামী জীবন সৃষ্টির সম্ভারে,
                  দোষ কার?

রক্তিম যৌবনে
উষ্ণ আনন্দের জ্যোতির্ময় দান
মহামূল্যবান যৌনাচারে 
সম্ভোগের ঘর।
                  স্বর্গ লজ্জা পায় অন্তিম সুখে
                  ঘুমঘুম জোছনায়
                  প্রশস্ত হয় সপ্ত আকাশ অন্তরে;
                  নির্দোষ পিতৃত্বের লোভে
                  বীর্যবান খোঁজে বীর্যবতীর চোখ,
                  দোষ কার?

সঠিক ঠিকানায়
একজন তাপস-তাপসীর সুখ
অনিবন্ধিত পাখির বাসর
নীলের আঁচলে।
                  সত্য শুধু আকস্মিক যৌবনরিপু
                  মুগ্ধ আলিঙ্গনে
                  বৈবাহিক শর্তে দরিদ্র যৌবন;
                  সুস্থ আকর্ষণে সৃষ্টি বাঁচুক
                  অঙ্গীকার হোক রাত্রির শয্যায়
                  ইচ্ছেরা নির্দোষ।




* কল্পনা, স্বপ্ন এবং অভেদ্য নীরবতা *

চৈ তা লী না থ


সেদিন বৃষ্টি হয়নি....,
ভেজা ঘাস, ধোয়া পাতা তোমায় আপ্যায়ন করেছিলো বেশ! 
দম্ভভরে এগিয়ে চললে, পথে দু'এক পরিচিত... 
করলে কুশল বিনিময়ও। চললে কোথায়, জানান দেওয়ার আবেগে বলে গেলে সে কথাও!
সময় মেপে কথোপকথন....!

শরীরের দীক্ষা তো মিশে যায় মাটিতে, কিন্তু আত্মা !?!
তীব্রতম কান্না হয়ে ঘুরে বেড়ায়? 
মিশে যায় ভারী বাতাসের ধূলিকণায়? 
হৃদয়ের ভার বড় বেশি মনে হয়?

বৃথাই আমি খুঁজি আমার
চারপাশের সেই চেনা দেশ,
পায়ের নীচের নিশ্চিত পথ
এবং সেই নিষ্পাপ মুখ।

এসব ধোঁয়াশা ছাড়া কিছুই না, শূন্যতা কেবলই!
তবু আমার চারপাশে খুঁজি রেখা ও আঙ্গিক।

হঠাৎ তোমার মাটিপথ এসে মিশলো তোমার গন্তব্যে!
তড়িঘড়ি সামলে ওঠার তোমার সেকি আয়োজন! 
এবার যে বলতে হবে বিদায় হও, সময় শেষ!! 
ফিরতি পথ ভুলিয়ে ছিলো তোমায়, রোদের তাপ!
...বৃষ্টিশেষের মাটির উত্তাপ পুড়িয়ে ছিলো, তোমার পায়ের তলা!! 
আগত সময়ে সম্বিৎ ফিরেছিলো তোমার, এবার বলতে হতোই তোমায়, 'বিদায় হও, গৃহস্থালি সামলাও। আর ফেরার আগে মেঠোপথে চলার আবেগকে রেখে যাও ওই ঘাসের ওপর।'
 
বলতেই হতো তোমায়...,'তোমার সীমা নির্ধারিত!'

কল্পনা,স্বপ্ন,এবং অভেদ্য নীরবতা!
হে শান্তি, 
তুমি অশ্রুর চেয়ে প্রবল, তুমিই জয়ী।




* মহাজাগতিক * 

নি র্মা ল্য ঘো ষ 

যখনই বিশ্বাস করতে যাই...
একটা অবিশ্বাস ঘটে...
আমি পিছিয়ে আসি...
বিশ্বাস হারাই...
কিন্তু, কল্পনার নীতাকে যেদিন বাস্তবে দেখলাম.... প্রথম....
বিশ্বাস করেছিলাম একবারেই...
কারণ, আমাদের সম্পর্কটা ছিল মহাজাগতিক...
অবিশ্বাস ঘটেনি তাই ...
আসলে, আমাদের মিলনটা ছিল একেবারেই পূর্ব নির্ধারিত...
ঘাসের সঙ্গে ভোরের শিশিরের মিলনের মতই...




* বাধাহীন *

পি না কী র ঞ্জ ন মি ত্র
 
রাগ, প্রকাশের পর বোধোদয় 
বুকে পুষে রাখে তার দহন ক্ষমতা কী ভীষণ   
সংসার, না গলালে নাক মাথায় ঢোকে না জীবনের সারাসার কী থাকে কখন 
সুখ, অসুখে রাত্রি না পার হলে সহ্যের সীমা বোধে আসে না সুখ বেটা কী চরিত্র নিয়ে অভিনয় করে। 
পাশাপাশি বাসা না বাঁধলে বুঝতেই পারা যায় না 
পড়শির সাথে পিরিতি কেমন। 
পারাবত জানে ঠিক তার 
গৃহস্বামীর সহনশীলতার আলাপন 
ভালোবাসার বৃষ্টিতে ভিজলেই বোঝা যায়  
চোখের ভেতরেও বান ডাকে। 
আমরা মাপি যে জ্ঞানের মাপনি দিয়ে 
তা কালাতীত নয় নিরপেক্ষও নয় সে একক, 
সেটাই তো তোমার আমার সবার 
মনের ওজনের বাটখারা 
যা দিয়ে যত খুশি মেপে চলি অপরের জ্ঞান। 
আলো অবাধে যেতে পারে না যেখানে, 
সেখানেই চোখে পড়ে না কিছুই 
তাই তো সেটা অন্ধকার । 
চিনির পানা চ্যুতি হয় যদি এক ফোঁটা 
জুটে যাবে ঠিক পিপীলিকা 
ঢাক ঢোল যতই পেটাও 
আশেপাশে থাকলেও কোন বাধা  শুনবে না।




* মনেই পড়ে না *

কো য়ে ল তা লু ক দা র 


আজ হয়ত তোমার মনেই পড়ে না, একবার সাত রাস্তার মোড়ে মারাত্মক ট্রাফিক জ্যামে আটকে পড়াতে বাড়ি ফিরতে দেরি হয়েছিল, আর এজন্য তুমি রেগে ভূত হয়ে গিয়েছিলে। ভেবেছিলে, আমি বুঝি অন্য কারোর সাথে ডেটিং করেছি। 

আজ হয়ত তোমার মনেই পড়ে না, আমাদের ঝগড়া ও খুনসুটি করার কথা। তুমি রাগ করে বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে বাপের বাড়ি চলে যেতে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতাম, তুমি বাপের বাড়ি না গিয়ে আমার বড়ো বোনের বাসায় চলে গেছ এবং আমার বিরুদ্ধে দুনিয়ার নালিশ করেছ।

আমার বোন তোমাকে যখন বুঝিয়ে আমার কাছে রেখে যেত, তখন তুমি নতুন করে আমার প্রেমে পড়তে। কী সব নতুন নিয়মের মধুর প্রেমে বাঁধতে আমাকে!  

আজ কতো কথা মনে পড়ে, পাড়ার ইঁট বিছানো রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে চলে যেতাম রেল স্টেশনে। অকারণে ট্রেনের হইসেল শুনতাম প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে। 

কিংবা পার্কের সেই ঘাসের কোণ্। কোনো কথা না বলে অহেতুক বসে থাকতাম সারা দুপুর। গেটে দাঁড়িয়ে ফুচকার দোকানে ফুচকা খেতাম। অসময়ে কোকিলের ডাক শুনেছি পার্কের বেঞ্চে বসে। আর ওদিকে মরা পাতা ঝরে পড়ত তোমার চুলের উপর। 

মনে কী পড়ে বই মেলার কথা। প্রাঙ্গণে হাঁটতে হাঁটতে নিঃশ্বাস নিতে নতুন বইয়ের। স্টলে ঢুকে খুঁজেে খুঁজে বের করতে হুমায়ুন আহমেদের একজন মায়াবতী। জানো, আজ অনেকেই কোথাও নেই।

কেউ আর ডাকে না। মনে রাখেনি কেউ। তোমার মতো কেউ আর ভালোবাসে না। আজ এমন হয়েছে দিন, কারোরই কোনো দায়ভার নেই ভালোবাসার! যারা হাত ছেড়ে দিয়ে চলে যায়, তারা কেউ আার ফিরে আসে না।




* অভাবী জীবন *
 
  ব ন্দ না রা য় 


দশ বাই দশ ঘরে আমার 
দিন চলে যায় ভালোই সুখে
নুন ভাত ফ্যান ভাতে 
থাকি সদা হাসি মুখে।

হাজার রকম অভাব অনটন 
সব চাহিদা মেটে নাকি
দিনের বেলা খোলা আকাশ 
রাতের বেলা শীতল পাটি।

বাজারের সস্তা আনাজ
ঢেকুর তুলে গুল মারি
নুন আনতে পান্তা ফুরায় 
ভাত ছেড়ে আমানি বারি।

অভাবের এই সংসারেতে  
বিদ্যুতের দিল লাইন কেটে
যেটুকু পাই দিন চলে যায় 
বাবুর বাড়ি খেটেখুটে।

দুঃখটাকে সঙ্গী করে 
আপোস করে বেঁচে থাকি
শত ছিদ্র এক কাপড়ে 
লাজ লজ্জা মরমে ঢাকি।




* মা নিষাদ *

রূ পা লী মু খা র্জি

মা নিষাদ বলে উঠে দাঁড়ালে, ভোরবেলা অবগুণ্ঠন খুলে রোদ তুলে ধরে,ভাঙা চাঁদ ঘুমিয়ে পড়ে সমুদ্রের পাতা বিছানায়,
ঠিক মায়ের মতো হয়ে কে যেন আজ ও ডাকে, আমি তার চোখে আদর রাখি, সাধ জাগে একবার সেই আগের নাম ধরে ডাকি, দুরে তখন ভাটিয়ালি,
মাঝি দাঁড় টানে, সব সুর ফোয়ারার মতো, পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে বুকের মাঝে নেবে বলে, আকাশ তখন ইছামতি,
কি জানি কেনো ভুলে যাই চারাগাছে জল দিতে, রাতের বেলা কুয়াশা চুপিচুপি দুধ খাইয়ে দিতে আসে, অবলীলায় মায়ের চিত্রলিপি।
তুমি মা নিষাদ বলে উঠে দাঁড়ালে, পৃথিবী আমার ভাঙা উঠোনে জ্যোৎস্নায় মাখামাখি,
প্রেমগান শুনবো বলে আজও প্রাচীন জরাজীর্ণ মন্দিরে রাস উৎসব
অন্ধকার ফেলে আলো কুড়োতে কুড়োতে আসি
তুমি মাঠ পেতে দিলে
আমার নগ্ন পায়ে আলতা রঙের সকাল
ঘুমিয়ে থাকা পৃথিবী টা একটু একটু করে আলো মাখছে
সব দুঃখ সব ব্যথা সব কথা বাষ্প হয়ে তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে তখন একঝাঁক খোলা আকাশ।




* গণ্ডী *

ধ ন ঞ্জ য় পা ল         

কেউ কেউ হয়তো বলবে-এতো বিড়ম্বনা কিসের!
আসলে ওরা জানে না-এই মরশুমে আমার সময় নেই।
কাঁচালঙ্কা আর লবণ দিয়ে ফেনভাত খাওয়ার জন‍্যেও-
চাল দরকার, মাঠ থেকে ধান ঘরে তুলতে হবে।

আমি জানি, প্রতিবছর এ সময়েই তোমরা দক্ষিণে যাবেই-
আর্যাবর্তের আকর্ষণ কাটিয়ে দাক্ষিনাত‍্যের ভাস্কর্যের টানে,
আমার তামাটে রঙের ঝুলেপড়া চামড়ায় এখন অতিরিক্ত ভার,
আগামী বসন্তে নবীন পুষ্পপত্রে আমি হয়তো বেমানান জীব,
হয়তো ফুলের উপত্যকার চেয়েও শ্মশানভূমি আমার প্রিয় হবে।

হুক্কা-হুয়া করতে করতে কিছু শেয়ালের পারাপারের ইতিহাস,
পাকা ধানের রসের সন্ধানে কিছু ইঁদুরের প্রাণান্তকর চেষ্টা,
আমার শ‍্যেনচক্ষু এড়িয়ে কিছু ধান চলে যায় সোহাগীর আঁচলে,
ছাব্বিশেই বৈধব‍্য এসেছিল যে নারীর তার এছাড়া পথ কী!
সেইসব রক্তক্ষরণের ইতিহাসের নীরব সাক্ষী আছে এই মাঠ।

আর্যাবর্তের অববাহিকা নয়,দাক্ষিনাত‍্যের কৃষ্ণমৃত্তিকা নয়,
চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত আমার ধানজমি,কিছু ইঁদুর, গোটাকয় শেয়াল-
আমাকে বেঁধে রেখে দেয় মোহময়তার গণ্ডীতে।




* পিছু না দেখা *

অ নি ন্দি তা না থ 

এখনো কিছু সময় রয়েছে হাতে,
শোনো প্রিয়জন, বন্ধুমহল আমার!
চোখেতে গভীর আলোর চমক,
বিদ্যুত গতিতে ধায়।
বহু বাসনার পূর্ণতা প্রত্যাশায়।
ক্ষুদ্র জীবন! নেই কো ভয়!
পেছনে দৃষ্টি, আত্মহনন? নৈব নৈব চ।
উত্তাল সমুদ্রে ভাসবো শক্ত রশি ধরে।
আসা-যাওয়া চেনা গলির রাস্তায়। 
সবাই নিজেকে বড় ভালোবাসে,
মুহুর্মুহু আরশির পানে ছোটে মন।
আরশিটাও মলিন হবে একদিন,  
কিংবা চূর্ণ-বিচূর্ণ।
ঠিক একদিন আমিও ফ্রেমে হবো বাঁধা,
দেওয়ালের স্মৃতি।
চন্দনে সাজানো মুখ,
ফুল মালা গলে গন্ধে বিভোর গৃহ।




* চিত্তশুদ্ধি *

ছ ন্দা দা স

বিস্মৃতি - সরোবরে আমার মুক্তিস্নান
জীর্ণ ক্লেদাক্ত স্মৃতি সব ভুলে গেছি,
চাই না শুনতে স্মৃতিকাতর আহ্বান 
মনের দরজায় তাই অর্গল দিয়েছি। 

সর্বাঙ্গে আমার ঝলসায় হীরক দ্যুতি 
অঙ্গার হয়ে স্বেচ্ছায় কে জ্বলতে চায়!! 
আর হবে না জীবনে কোনো বিচ্যুতি 
ভুলবো না চাতুর্য্যে ভরা মধুর কথায়। 

একাকী রমণী আমি স্বয়ং সম্পূর্ণ 
নই কোনো প্রণয়ীর প্রেম পিয়াসী, 
পুরুষের মিথ্যে দম্ভ হেলায় করে চূর্ণ 
একান্তে আমি এক নারী, স্বপ্নবিলাসী।




* হৈমন্তী কথা *
 
ক স্তু রী ক র

হেমন্তের বাদামি হলুদ কথা উড়ে যাচ্ছে হাওয়ায়, ঝরে পড়ছে শহরের শরীরে, উড়ছে ধুলোবালি জীবন, উদাস কুয়াশা ছেয়ে যাচ্ছে ঘরময়, হোঁচট খেতে খেতে সন্ন্যাসী মন স্থির হতে চাইছে গর্ভগৃহের 
নিভৃত শান্ততে.....

অশ্রুত সঙ্গীতে মগ্ন শিল্পী একবার ফিরে দেখো, তোমার দৃষ্টির স্পর্শ দাও আমার নিথর নদীতে, উদ্ভাস স্রোতে টলে ওঠো আনত মৃত্যু, ভোরের আকাশ লিখবে যেদিন নতুন আখরে, সেদিন তৃণাঙ্কুরের শিষে দুটি স্ফটিক স্বচ্ছ শিশির রাখবো তোমার জন্য--- গ্রহণ কোরো




* যদি চলে যাই *

টু লা স র কা র 

যদি চলে যাই কিইবা এসে যায়
আপনজনের দু-এক দিনের শোক,
বাকী চলে সব একই সমতায়।
যদি হারিয়ে যাই শুণ্য জনারণ্যে
দু-একদিন হৈচৈ কাছের জন,
কেইবা আছে খুঁজবে হয়ে হন্যে।
যদি ঘরবন্দী নিজেকে নিয়ে
কিছু মানুষ কি হবে উদগ্রীব? 
নাকি সবাই ব্যস্ত আপন কর্ম নিয়ে।
কিছুই যায় আসেনা কোনোকিছুতেই 
বেঁচে থাকতে হবে শুধু নিজেকে মানিয়ে।




* সনদপত্র *

ভা স্ক র বো স

দুই পাহাড়ের মধ্যস্থলে পঞ্চেন্দ্রিয় স্থাপিত করলে,
আর তোমার দুই বাহুঅক্টোপাসে পরিণত হলে-
নিঃশ্বাস আর ঘামের প্রস্রবণ আমায় করে সিঞ্চিত।
তখন আমার বরফ শরীর, গলে জলে পরিণত।
আমার জিওন কাঠি স্ফূরণে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়।
ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলতে তোমার চোখের পানে চেয়ে রয়।
কিভাবে প্রস্তুতি নেবে ভালবাসাকে রক্ষা করতে?
মনে রেখো, ভূমিকা থাকে উভয়েরই সমান প্রস্থে।
যদি তোমার উপস্থিতি শুধু কর্তব্যকেই পালন করে,
তাহলে পঞ্চেন্দ্রিয়র মুক্ত হাসিও যাবে সমাধি ঘরে।
দুনিয়ার সমস্ত জটিলতা কাঁধে নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে,
সেই আমি শিল্প আঁকতে সবকিছু এসেছি মাড়িয়ে।
সেখানে তোমার অবস্থান কতটা গ্রাহ্য ভেবে দেখ।
তথাপি যদি নিজেকে অদ্ভুত কোন নির্লিপ্ততে রাখ,
আমি বুঝে নেব তোমার অলিন্দতে কবুতর আছে।
তুমিই হয়ত তাকে প্রশ্রয় দিয়ে, নিয়ে এসেছো কাছে।
উপসংহারে আমার বক্তব্য কি থাকবে জানতে চাও? 
তাহলে শোন, স্ফূরণের পর, ধর আমার মৃত্যু এলো।
পরিষ্কার দেখি, অধৈর্য্যতে সে চৌকাঠে বসে পড়ল।
আসলে আমার প্রেম স্খলিত-তে শেষ কথা বলেনা।
তারপরেও, তোমার অস্তিত্ব ছাড়া সে কিছু ভাবেনা।
এবার বল, তুমি কি আমার সাথে যেতে পারবে? 
নাকি যাকে নিয়ে বাস কর, তার সাথে পড়ে থাকবে।
যে কোনও একটি- তুমি এখন পছন্দ করে নাও।




* পাদ্য অর্ঘ্য *  

ঊ ষা গ রা ই 

বৃষ্টিবৃক্ষগুলি ঠায় দাঁড়িয়ে বহুকাল 
অদৃশ্য হাহাকার টহল দেয় দিনরাত 
তুমিও একদিন বুক ভরে শ্বাস নিয়েছো
যেদিন মোহনায় পৌঁছেছিলে।

যে পথ ভুলে গিয়ে 
ঢুকে পড়েছো নির্ভার জীবনে
সে পথে আর এসোনা।
অনেক জীবন শেষে তুমি জেনেছো এখন
মৃত যা কিছু তাকে 'লাশ' বলে,
ফিরে যাও তুষারের কাছে।

এ পুতিগন্ধময় প্রখর উত্তাপ...
এ অনিবার্যতায় ধেয়ে আসা জোয়ার.....
এ কবিতা তোমার জন্য নয়...
এ জীবনও তোমাকে মানায়না, অতএব -

'ভালোবাসা' শব্দটিকে আত্মস্থ করতে
জল-আসনের পাদ্য অর্ঘ্য দিওনা।




* বর্ষায় ভেজা হেমন্ত *

পা র্থ দী প স মা জ দা র


হঠাৎ হেমন্তের সকালে শীতল বাতাসে
বৃষ্টির হাসি সেই শ্রাবণ কলরবে;
যত দূরে চোখ যায় দেখি
ধোঁয়ায় মেলেছে পাখা বৃষ্টি রাশি।

এ যেন শ্রাবণ মেঘের রূপে
ঘিরেছে অম্বর জল ভরা মেঘে;
অর্বুদ শিশুরা তার করে কোলাহল
হেমন্তিকার সুরে বাজায়ে বিদায়ের বাঁশি।

কাশফুল তো ভেসে গেছে আগেই
শিউলিও ঝরে গেছে হিমেল বাতাস স্পর্শে;
তারপর হায় 
কি যে হলো
আকাশ ঘিরেছে শ্রাবণ মেঘের আশায়

ধূসর ধরণী সরসা হলো জলে
কত আঁখি জলে ভরল চারিদিকে;
এমনিতে হেমন্ত হিমেল বায়ু দূরন্ত
অকাল বর্ষায় কাঁপন ধরায় বুকে।

এতো বৃষ্টি এতো জল তবু
দাদুর দাদুরীর নাই কোন কোলাহল;
ডাকে নি মেঘ নেই বিদ‍্যুৎ চমক
কুয়াশার ধোঁয়াশায় ভরা হেমন্ত সকাল।




* বৌ কথা কও * 

কা ক লী সা হা

কিছুদিন ধরে বারান্দার কার্ণিশে হলুদ ঠোঁটের সে এক পাখি কতই না ডাকাডাকি করলো,
কি মধুর সে ডাক, সে ডাক কি কেউ এড়াতে পারে....?
আমি তাকে দেখলেই ছুটে বেরিয়ে আসতাম
তার জন্য পাকা ফল রেখে দিতাম, বাটিতে জল ও দিয়েছি বার কয়েক।
ফলে দাঁত বসিয়ে ওর খুশি দেখে সুখী হয়েছি
জলে ঠোঁট ডুবিয়ে ওর জলকেলি দেখে রোমাঞ্চিত হয়েছি কতবার।

কদিন হোলো সে আর আসেনা,
বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার পা ধরে যায়
এ পাখি উড়ে আসে, ও পাখি গান গায়
কিন্তু সেই হলুদ বরণ ঠোঁট আর তো আসেনি, মোটেই।

ব্যাপারটা যখন প্রায় ভুলতে বসেছি, কি ভুলেই গেছি, প্রায়
তখন খেয়াল করলাম বেশ কিছুদিন ধরেই
উল্টো দিকের বাড়ির তেতলার কার্ণিশে বসে
হলুদ বরণ লেজ নাড়াতে নাড়াতে আধা পাকা ফল ঠোকরাচ্ছে সে
ঠোঁট দেখেই চিনেছি তাকে, বোধহয় সেও চিনেছিল আমায়।

আর কখনোই এ তল্লাটে দেখিনি,
সেই হলুদ বরণ 'বৌ কথা কও' পাখি।




* আগাছা *

ব ন্দ না ম ন্ড ল

ছাতবাগানে আমার ফুলের সাম্রাজ্য।
অযথা কতগুলো আগাছা জায়গা করে নিয়েছে তাদের পাশে,
আমার ভারি রাগ হল ওদের ওপর।
এ তো অনধিকার দখলদারি!!
আচ্ছা করে শাস্তি দিতে হবে।

রোজ দু'বেলা জল পেয়ে
দস্যি ছেলের মতো বাড়বাড়ন্ত তাদের।
আমার সাধের ক্যালেন্ডুলাকে প্রায় মেরেই ফেলবে দেখছি!
হঠাৎ করে যদি মিসেস সেন আসেন 
তবে লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাবে।

দুপুরে সবাই যখন ঘুমোচ্ছে
কাঁচি হাতে ছাতে, দিলাম আচ্ছা শাসন করে। 
ফের যদি দেখি!

শান্তির উদ্গীরণ মনে।

আমার ছাতে তখন আভিজাত্যের হাসি।
যতসব বাউন্ডুলে আগাছার দল
তোদের কি আর মানায় গ্ল্যাডিউলাস ক্যালেন্ডুলার পাশে!




* চিতার উপান্তে * 

প ল্ল ব ভ ট্টা চা র্য অ ন ন্ত

সাহসী মৃত্যুরে আমি ভালোবাসি।

ধর্ম,পুণ্যের মতো মিথ্যে উন্মাদনা
আমাকে আলিঙ্গন করতে পারেনি।

আমি অপারগ দক্ষিনে অথবা বামে
কিংবা মধ্যিখানে সুস্থিত রয়ে যেতে।

আমার মস্তিষ্কে অজস্র দংশক কীট
খুঁচিয়ে মারে প্রতিটি রক্ত কণিকায়
আমারে ভালোবেসে।

ওরা আমাকে ভয় করে, করে সমীহ-

আমাকে অবাঞ্ছিত ভেবে ছুটে মরে
আমারই পিছে পিছে আমরণ উৎসাহে।

আমিও! আমিও দুঃস্বপ্ন হয়ে ঘুরি ফিরি
নরকের আনাচে কানাচে।

আমার স্পর্ধা ওরা পারেনা মেনে নিতে-
ওদের শুকনো আভিজাত্যে
আমি যেন এক রহস্যময় আলো।

ভয় পায় নিতে তার অন্তস্থিত তাপ--
আনন্দে, বিরহে আর উদভ্রান্ত নিদ্রায়।

নেবে আমার আত্মা--?
নাকি প্রেতাত্মার ভয়ে আরো যাবে
দুরে সরে সরে এক নিশ্চিন্ত তফাতে--?

ভয় পাও প্রত্যুত্তরের মুখোমুখি হতে,
নাকি সব উত্তর পুড়ে যাবে চিতার উত্তাপে!




* একাদশী *

নী লা ঞ্জ ন অ ধি কা রী

চাঁদ উঠেছে, ফুল ফুটেছে
  একাদশীর ঘর ... 
বুকের ভেতর বাসরভাঙা
  তপ্ত বালির চর। 

রাতবিরেতে যখন তখন
 বোশেখ নাড়ে কড়া, 
পোড়ামুখীর সিঁথির দাগে
 কান্না থাকে ভরা। 

ভেতর ঘরে শুকোয় শ্রাবণ
   চাঁদটা ওঠে কই! 
ঘোমটা ঢাকা তুষের আগুন
   ভাদর এলো ওই। 

থান জড়ানো, রোদ পোহানো
   দিব্যি বেঁচে থাকা, 
ফুলটা ফোটে নিয়ম মতোই
   বাড়লো হাতের শাঁখা। 

বিঁধবে কাঁটা ফাগুন দহন
  পরাগ ভরা বুক, 
চাঁদটা ধরা হাতের মুঠোয়
  বামনি জুড়োয় সুখ। 

চৈত্র রাতের পূর্ণিমাতে
  অঙ্গ জ্বলে তার, 
নাইতে যাবে একাদশী
   পদ্মদিঘীর পাড়। 

থৈ থৈ ঢেউ, ছোঁয়াচ লাগে
    কালো দিঘীর জল, 
বুক ধুকপুক এলোকেশীর, 
   মেলছে শতদল। 

 নিয়ম মতোই সিঁদুর গলে
   অ-সুখ বারো মাস
সামলে রাখিস, মুখপুড়ি তোর
  সুখের সর্বনাশ। 

পাঁপড়ি বোঝে, রঙের খিদে
 সোহাগ মাখায় সই, 
শুন্য বুকে আঁচল খসে, 
   ফুল ফুটেছে কই! 

 অষ্টাদশী চন্দ্রিমা ওই
      জ্বালায় চিতার সুখ
  দাউ দাউ দাউ শীৎকারে তার
     ভরলো হিমেল বুক। 

চাঁদ ওঠেনি, ফুল ফোটেনি,
  একটা ন্যাড়া ছাদ, 
বাসর ভেঙে ঝাঁপিয়ে পড়ে
   একাদশীর চাঁদ।





* রসায়ন *

সো না লী ম ন্ড ল আ ই চ

শব্দের স্বীকৃতি স্বহা
স্বাতী নক্ষত্রের মতো

         জ্বলজ্বলে

চেতনা শেষে

আর এক চেতনায়
রোমাঞ্চ ঝরে পড়ে

        অন্ধকারে

ছোঁয়াছুঁয়ি খেলায়

একটু উষ্ণতার জন্য
দাবানল হবে বলে

          গাছেদের

ঘর্ষনের ক্যাকফোনি

সংহত ভাস্কর্যে অনাবৃত
পশমি উপন্যাসের পার্বন ...




* ব্যবধান *

শা শ্ব তী চ্যা টা র্জী

আমাকে জ্বেলোনা এভাবে
মেলা থেকে কিনে আনা প্ল্যাস্টিকের খেলনা লণ্ঠন
ব্যাটারি-চালিত
শিশুটি বারেক খেললে নিভে যায় চালচুলোহীন
মেধা-ঝংকৃত ঐ বিরাট সভায় 
সালংকারা ঝাড়বাতি ক্ষাত্র তেজে ডেকো না আমায়
ছাপোষা পলকা দীপ কৌলীন্যরহিত
সন্ধের ফিরিওলা শ্রান্ত হাতে ঘরে তোলে করুণ ব্যথায়
প্রকৃতই সুতপুত্র দেহে নেই কবচকুণ্ডল
যুযুধান শিবিরের আস্ফালনে অস্পৃশ্য প্রায়
দলছুট জোনাকির মতো
অলক্ষ্যে নিষ্ফল জ্বলে অক্ষম ক্ষমায়
স্পর্ধিত নীল শিখা নেই 
অথবা ময়ূরকণ্ঠী ধূপে
নেই কোনো ঈর্ষণীয় রসায়ন আয়ু
প্রায়ান্ধ আলপথে অপ্রতিভ আলেয়ার শব
যশস্বী ছায়াপথ দূর থেকে প্রমাদ জাগায়




* পদ্য উড়ে য়ায় *

পি য়াং কু ম ণ্ড ল

কোথায় যেতে হবে, মাথার মধ্যে পাখি নিয়ে
আকাশ পরিস্কার হতে দাও

কথার ভাঁজে কথা রেখে দূরত্ব বাড়ে
বিপদ সীমার নিচে। 
ক্রমাগত জোরালো হাওয়ায় উড়ে গ্যাছে নীরবতা। 

ভালোবাসা ভুলে যাই নিয়মিত চর্চার অভাবে। 
এই যে জোরে ফুঁ … রাখলে
ধূলো সরে গেলেই বজবজিয়ে উঠবে ক্ষত। 

এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। এখানে এসে দেখলাম সীমানা, 
ধোঁয়া নেই। ধূলো নেই। পদ্য উড়ে যায়।




* মনের কথা *

শ ম্পা দা স

শহর জুড়ে ব্যস্ত সময় পেরিয়ে যায়
জীবন যুদ্ধে কেউ হেরে যায় রোজ 
কোন বাঁকে কার পথ যে হারায়
কেই বা রাখে সেই খবরের খোঁজ ?

কেউ কেউ হাসি রাখে চোখে মুখে
কারো কারো ভান আছে কতো সুখে
মোছে কি স্নেহের হাত শাসনের ক্ষত?
ক্লান্ত শরীর পায় কি ঠাঁই শান্ত বুকে!

ভালো আছি, তুমিও ভালো থেকো
এসব বোধহয় শুধুই কথার কথা?
আমরা কি ভালো রাখতে পারি আদৌ 
ছুঁতে কি চাই কারোর মনের ব্যথা?

কেউ পারেনা বইতে মনের ভার
মেতে উঠি সবে তখনই কলরবে 
কাছের মানুষ কতোটা ভারাক্রান্ত
কাছে গিয়ে তার ভাগ নিতে চাই কে কবে?

দু'চোখ জুড়ে ঘুম এসে যায় খুব
জাগিয়ে রাখার মন্ত্রটা শেখা জরুরি
মৃত্যু আসবে। আসুক অমোঘ নিয়মেই
বেঁচে থাকাটায় বাঁচতেই হবে পুরোপুরি।

কোথাও কোনো বিয়োগ যদি হয়
কবি লিখে দেন যোগসাজশের কাব্য
গদ্যের মতো দিনলিপি ছুঁড়ে ফেলে
আমরাও তবে জুড়ে থাকা নিয়ে ভাবব।

মুঠোফোনে স্পর্শ আসুক বন্ধুমনের
ইনবক্সেও জমুক না হয় সুপ্রভাত
কেমন আছ? জিজ্ঞাসা থাক বন্ধুজনের
কাঁধের ওপর থাকুক কোনো ভরসার হাত।।

আর যে বুকের পাশে থেকেও
থাকে মনের যোজন খানেক দূরে
তার চুপকথা কেউ যত্নে পড়ে নিলে
ছিন্নবীণাও বাজবে মধুর সুরে।।




* রঙ যাপন * 
 
কৃ ত্তি কা ভৌ মি ক 

বনে যখন পলাশ আগুন মনে তখন ফাগুনমাস
রঙের আগুন জ্বেলে দিল তোরই চোখে সর্বনাশ
                 পাতা বাহার খাতার ভাঁজে
                  মন তো পোড়ে সকাল সাঁঝে
মাদলেরই তালে তালে বুকের ভিতর চৈত্রমাস।

পলাশ রঙে রঙিন হবে এ মন যখন তোর সাথে 
মাতাল বাতাস সঙ্গী হবেই মন হারানো মাঝ রাতে
                রঙের ছোঁয়ায় ভালোবাসা
                নিবিড় ক'রে বাঁধে বাসা
রঙিন খামে পাঠিয়ে দিলাম গোপন চিঠি তোর হাতে। 

পলাশ শিমূল কৃষ্ণচূড়ার রঙের নেশায় মাতাল মন
ঝরবে জানি সব ফুলেরা শেষ হলে এই দিন যাপন
                রঙের খেলা সাঙ্গ হলে
                বিদায় নেবো চোখের জলে
প্রতীক্ষাতে কাটবে প্রহর আসবে আবার শুভক্ষণ।




* উৎসর্গ *

জা রা সো মা ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়

একটা জীবন ঘুমন্ত কাটালে গল্প জমে 
স্মৃতিস্তুপ সরে জানলায় বসে রোদ
 আমি মেলে ধরি নতুন অঙ্গীকার 

প্রতিরাতে বালিশে গুঁড়ো হয় চাঁদ 
প্রবাদপ্রতিম শীত জমে ধূসরতা মেখে
প্রহরী কুকুরের দীর্ঘ সজাগ কান ধরে আলাপ 

আমাদের ঘুম নেই। খোলা পিঠ-উঠোনে 
নক্ষত্রের সমাবেশে ওঠে আপত্তির কূটকচালি
লবণজল সরিয়ে খুঁচিয়ে তোলে কচুরিপানা 

আমরা জোগাড় করি বিষাদের সরঞ্জাম 
কেবল একজীবন কবিতায় উৎসর্গ করব বলে।।




* মায়া *  

জ য় ন্তী ঘো ষ

মায়ার বন্ধনে তুমি আমি সকলে,
কেউ কারো নই, আমরা আসলে।

সাময়িক ভালোবাসা আমার তোমার,
প্রকৃতির নিয়মে বাঁধা জীবন সবার।

জেনে শুনেও তবু আশা মনের ভিতর,
এই আছি, এই নাই অস্থির অন্তর। 

আমার আমিত্ব ভুলে, থাকি বাহির মুখে,
ভাবি, কি হলো? কেন হল? আছি সব দুঃখে।

যা হবার সে তো হবেই, থামবে না কিছু,
বিচলিত হয়ে চলি সকলে শূণ্যের পিছু পিছু।

স্বার্থেই ঘুরি ফিরি, সুযোগ বুঝে মনের কথা বলি ...
আসলেই নিজেকে ফাঁকি দিয়ে, চালাকিতে চলি।

ক্ষণিকের বিয়োগে হা-হুতাশ করি সকলেই,
সময়ের ব্যবধানে…. শুধু, নিজেকে ভালোবাসি আসলেই।




* পেরেকের পাপ *

সু জি ত মু খো পা ধ্যা য়

পবিত্র সাদা গির্জার গা ধুয়ে নামছে রুপোলি চাঁদ।
বর্ষ শেষের জ্যোৎস্না...।

আমি দেখছি...রুপোর আলোয়, ত্রিশটি রুপোর খণ্ডে
পবিত্র রক্ত-মাংসের দাম।
জুডাস বেচে দিলে বিশ্বাস?

মাত্র ত্রিশটি রুপোর চাকতি! জন্ম দিল অযুত অবিশ্বাস,
পেরেকের পাপে...ঊনচল্লিশ চাবুকের ঘায়ে 
দাগী পৃথিবীর সব প্রেম।

নাজারেথ থেকে গলগথ....ক্রুশ কাঠ বইছি আমি,
আমার পবিত্র মজ্জায় মরচে ধরা পেরেকের 
চুমুতে লেগে আছে ঘৃণা।
গড়ানো রক্ত ফোঁটায় ধর্ম-জাত বাটোয়ারা, ম্যাপ ভাঙে মাটি।

কাল ভোরে সূর্য ওঠার আগে মোরগের তিন ডাকে
অস্বীকৃত পৃথিবীর প্রেম...
অপবিত্র আমি খুলিদের দেশে নির্বাসিত।
কশেরুকা বাঁকে ক্রুশকাঠ ভারে।

সব পানশালা পেয়ালায় পবিত্র আচমন করো পৃথিবী আজ..
শেষ ছেঁড়া রুটির গায়ে আগুনে
সেঁকে নাও মাংসের অনুভব।
নিষিদ্ধ গলিপথে অচল হোক আজ রুপোর চাকতি।
অনুনাদী গির্জা ঘন্টা যত দূর শোনা যায়......
কান ঢাকো তোমরা জুডাসেরা..

ও পৃথিবী, আজ প্রার্থনা করো,পবিত্র রক্ত দাগে ভোঁতা হোক 
সব পেরেকের পাপ।




* অপেক্ষা *

দে ব যা নী ঘো ষা ল

জানি একদিন জমাটি মেঘ সরে যাবে নিজের খেয়ালে।
দেখবো আবার স্বচ্ছ নীলাকাশ অবাক পৃথিবীর কোলে।
তখন কি আমায় মনে থাকবে?
যে বিশুদ্ধ অনুরাগ আহরণ করেছিলাম রক্তাক্ত অক্ষরে অক্ষরে!
ফিরবে কি আর তেমন আকুল আকাঙ্ক্ষাতে?
যে দামাল ঝড়ে ছিন্ন হয়েছিল আশ্বাসী দুটো হৃদপিন্ড!
সত্যিকারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ফিরবে কি সে?
হয়তো!
হয়তো ঐ জমাটি মেঘ একপশলায় ভিজিয়ে দেবে আমাদের সব গুমরে মরা অনুতাপ।
প্রতীক্ষায় তাই রাত পাহারায় নির্ঘুম নিশ্চুপ বিষন্ন রাত।




* পারাপার * 

ম ধু প র্ণা ব সু 

অনুভূতি নিয়ে কথা বোনার কাজ নিই..
জীবন কোথাও এসে ক্লান্ত বসে পড়ে, 
ভাবতে, আত্মস্থ করতে।
জমা খরচের হিসেব মেলেনা কোনদিন,
এখন সময় হয়েছে নিকটদূর, 
দূর দূরান্তে আপনজনের ডাক, শ্রুতির বাইরে। 
বুক থেকে আঁচল খসিয়ে ডাকি মরনের
কঠিন দূতকে, শরীরের সমস্ত গোপন 
লোভ খুলে ধরি পরম শ্রদ্ধায়,
ভীষণ এক শৈত্য কামনার নাভিকমল
ছুঁয়ে যায় ঐশ্বরিক প্রেম, 
জন্ম হয় শ্বেত চন্দনে মাখা ছায়া পথ।
যেতে যেতে খুঁটে খাই লবনাক্ত আনন্দ।
আমার অমরত্ব আজ ভীষণ খেয়ালী, 
তবুও ভালোবাসায় মরণকে বেঁধে রেখেছি
আগুনের মতো উত্তপ্ত।




* চিড়িয়াখানা *

উ জ্জ্ব ল দ ত্ত চৌ ধূ রী

চিড়িয়াখানায় আজকে গিয়ে, দেখি যে এক ময়না টিয়ে,
অন্ধকারে খাঁচার কোনে, গান ধরেছে গুনগুনিয়ে। 
ঝাপসা সেসব যায়না বোঝা, তবুও শুধু শব্দ খোঁজা,
ভিড়ের মানুষ শুধুই হাসে, বোঝেনা কেউ বলছে কি সে।
হঠাৎ দেখি একটু দূরে, কাঁপিয়ে বাতাস চেঁচিয়ে জোরে,
নাচছে ময়ূর পেখম তুলে, আনন্দে সে পৃথিবী ভুলে।
রং বেরঙের আলোর ছটা, কি বাহারি বলব কি তা!
এমন ছবি দেখতে পাই কই? যদিও আছে বই তে সমস্তই।
যখন গেলাম বাঘের খাঁচায়, কাছ থেকে বাঘ দেখার আশায়,
শুধুই শুনি বাঘের মৃদু স্বর, বলছে লোকে বাঘ বাবাজির জ্বর।
পিছন পানে আসছি যখন, কাঁপিয়ে বুক বাঘটি তখন,
হালুম করে উঠল ডেকে আজ, মনে হল পড়ল যেন বাজ।
এদিক সেদিক ঘুরে ফিরে, গেলাম যখন আরও ভিতরে,
দেখতে পেলাম বিশাল গন্ডার, ছোরার মত একটা খড়্গ তার।
একটু দূরে তাকিয়ে দেখি, লম্বা খাঁচায় বানর, একি!
দিচ্ছে লাফ, পড়ছে চিৎপটাং, মুহূর্তেই হচ্ছে আবার সটান।
যেই না বাদাম দিয়েছি ছুঁড়ে, মুঠো ভরে খাঁচার ভিতরে,
অমনি দেখি লম্ফঝম্ফ নেই, খাচ্ছে বাদাম মনের আনন্দেই।
এমন সময় হঠাৎ দেখি, সিংহ মামা গিয়েছে ক্ষেপি,
খিদের সময় নেইকো খাবার তার, মারছে থাবা খাঁচায় বারংবার।
হঠাৎ যদি বাইরে আসে, কি হবে তাই ভাবতে বসে!
কাঁপছি আমি কাঁপছি বারবার, ডাকছে যেন বলছে 'খবরদার'।
চলতে চলতে হঠাৎ দেখি, আকাশ পানে দিয়েছে উঁকি,
ডোরাকাটা সারাটা গায়ে যার, চিনি তাকে, জিরাফ নামটি তার।
হুশ, হুশ, যেই না বলা, চলতে চলতে বাড়িয়ে গলা,
গাছের পাতা খাচ্ছে আনন্দেই, এমন কাজটা করতে পারে সেই।
চিড়িয়াখানায় অবশেষে, এলাম আমি সবার শেষে,
যেথায় হাতি বাঁধা শিকলে, চোখটি বুজে, খাচ্ছে মনের ভুলে।
সবার চেয়ে শক্তি বেশি, থামের মত পায়ের পেশি, 
গায়না তবু শিকল ভাঙার গান, নাড়ায় শুধু কুলোর মত কান।
ছটফটিয়ে গা ঘেঁষে, খেলছে শাবক অভ্যেসে,
জানবে না সে এইদেশে
একদিন তার পড়বে পায়ে বেড়ি, খাটবে নাকো কোনই জারিজুরি।




* শেষ প্রহর *

ক থা ক লি সো ম পা রু ল


তোমার আমার কোনদিন যেন দেখা না হয় কৃষ্ণরূপ,
 প্রতিটি প্রহর যা তুমিময় 
 চাপা থাক মনের ডায়েরির পাতায়।

তোমার চলে যাবার দৃশ্যটা চোখের সামনে ভাসতে ভাসতে স্থির হয়ে গেছে। 
তুমি ছিলে প্রখর যুক্তিবাদী, বিপ্লবী, 
আমি ভালোবাসার ফেরিওয়ালা ।
বড়ো দিনের ছুটির আগের দিন 
রোদ চশমার আড়ালে আমার চোখ দুটো ফুলে লাল, 
 কান্নায়।
আমি যতই গোপন রাখিনা কেন তুমি ঠিক বুঝে নিয়ে ভেজা সুরে বলেছিলে 
কঠিন হও, দৃঢ় হও, আমি ফিরবো বোকা মেয়ে-  
থেকো অপেক্ষায়। বিগবাজারে, বেশ কিছু প্যাকেট হাতে 
হ্যাঁ তুমি --তুমিই তো
মহাজাগতিক সৌন্দর্যের ঝড়, 
আজও অম্লান-
ভোরের সূর্যোদয় যেন পুরীর সমুদ্র তীরে।
স্তব্ধ হৃদয় বুঝি দমবন্ধ হয়।
ভয়হীন খুশি, কাছে গেলে, ইশারায় 
পাশে দেখিয়ে দিলে তোমার বিশ্ব।
তোমার বসন্তের কোকিল বসেছে সে বিশ্বে
অবাক হলাম সব উলটে গেছে, 
আমি ভয়হীন, তুমি আছো কেঁপে কেঁপে।
ছিঁড়ে ফেলেছো প্রখর যুক্তিকে, তোমার 
বাকশক্তিহীন লন্ড ভন্ড আমি।
এই প্রহরটি যা ছিল তোমার অপেক্ষায়  
টুপ কারণে পড়ে গেল ধুলোয়।




* হিমের পরশ *

শি খা না থ

শীত লিখে যায় হিমের সাতকাহন।
আলসে সকাল হিম জড়ানো ঘুম
খেজুর গাছে গাছির হৃদয় বাঁধা
 আবছা ভোর খোঁজে আলোর রেখা।

হিমের পরত গাছের পাতায় নাচ,
মিঠে রোদে টুপটুপিয়ে ঝরে
ছোট্টবেলার দুষ্টুমি খেলে যায়
উষ্ণ লেপের আদরখানি খোঁজে।

হিমের রাতে চাঁদ আকাশে স্থির
আকাশ ভরা তারার কোলাহল,
হিমের ছোঁয়ায় জলছবি কাঁচ আঁকে
মনে জাগে, রাই জাগানোর ছল।

পথের ধারে নিপাট শয্যা জুড়ে
ঘরছাড়া সব ঘুমায় ছেঁড়া কাঁথায়
খোলা আকাশ বিশাল সামিয়ানা
ধুনি জ্বেলে রাতের শীত সরায়।

ওইটুকু সুখ ধুনির গরম আভা
জীবন সাজায় নতুন গানের সুর।
সকাল হলেই ব্যস্ত জীবন যেমন
সুখ খোয়া যায় জীর্ণ জীবনপুর।

রাত্রি নামে আবার হিমের ছোঁয়ায়
হিমেল বাতাস ছন্দে চামর দোলায় 
ছেঁড়া কাঁথায় জমছে প্রেমানল
সদ্য জাত শিশুর কোলাহল।

হিমেল হাওয়ায় ভাসছি আমি তুমি
হিম ফুরোলে গাইবে কোকিল গান
উষ্ণ আদর থাকবেনা সে জানি।
কাঁদবে কাঁথা থাকবে পড়ে ম্লান।




* স্বর্ণলতা একটা গাছের নাম *

স ন্দী প কু মা র মি ত্র

জানো মল্লিকা, 
আমি তাকে যন্ত্রনা থেকে পারিনি
উদ্ধার করতে
বুঝি ও প্রেমিক মনের মানুষ----

বারবার ছুটে চলে, 
এক মন থেকে অন্য মনে
ওর দ্বারা কারো ক্ষতি হবে না
যদি উপকার নাও হয়।

তবু দেখো যন্ত্রনারা ওকে কেমন
ঘিরে ধরে কষ্ট দেয়।

পারিনি ওকে বোঝাতে, হয়তো
নিজেই ঠিকটা বুঝে উঠতে পারিনি।

আমিও ভালবেসে ফেলেছি কবিতাকে
সৃষ্টি সুখের উল্লাসে, মেতে উঠি 
কবিতাকে নিয়ে।

নিজেকে হারিয়ে যেতে দিইনি
জানি, ও খুব একা হয়ে পড়বে 
ওর ঐ ভবঘুরে দশা দেখে
নতুন নতুন কবিতা সৃষ্টি করি।

আর অবগাহন করি তার থেকে নিসৃত
পবিত্র জলে
সাঁতার কেটে খেলে বেড়াই তার
শব্দ ঢেউয়ের সাথে----

কতো কথা বলে আমার সাথে
কত কিছু জানতে চায়
মমতা মাখানো স্পর্শ দিয়ে
স্পন্দন বুঝতে চায়।

কখনো বঞ্চিত করিনি তাকে
তার পবিত্র কথামালা
বুক ভরে শ্বাস জোগায় দেহে
মনের উত্তাপ, ভাগ করে নেয়।

একদিন কবিতা জানতে চাইল
তুমি ওর জন্য
এতো কষ্ট পাও কেন?
বললাম, ওকে বোঝাতে পারিনি
ভালবাসা আর প্রেমের পার্থক্য। 

তাই ওর কষ্ট, আমাকে বড় ব্যথা দেয়
বোঝাতে পারিনি, 
পতিতাও ভালবাসে, সংসার করে
তার স্বামী তো-----




* অপেক্ষা *

ম ধু কৃ ষ্ণা চ ক্র ব র্তী

অপেক্ষা যে ডুবতে থাকে প্রতিবিম্বে,
অস্তাচল জেগে রয়
ব্যস্ত শহর হেঁটে যায় আড়ম্বরে
ঘুম পাড়ানি গান বাঁধে উৎকণ্ঠার আদরমন!

একটু একটু করে হামা দেয়,
বাড়তে থাকে একেকটি তিথি
একেকটি দিন
এমনই করেই আসে বুঝি
রূপকথার রাত্রি দিন!




* পানেই মান *

প্র ভা ত কু মা র গো প 

কি রে পানু পান খাবি?
দে তাহলে গাড়ীর চাবি, 
বোঁটাতে আনবি চুন, 
নাহলে তোকে করবো খুন, 

আশি বছরের ফোকলা বুড়ি, 
করে হামানদিস্তায় সুপারি গুঁড়ি, 
বোঁটা সমেত কিনলে পান,
তবেই থাকে পানের মান, 

পান বিনা হয় না শুভ কাজ,
পানই রক্ষা করে নারীর লাজ 
 যদি পানকে ভালোবাসি, 
তবেই বাঁচবে পানের চাষী, 

পান হতে যদি খসে যায় চুন, 
বাকবিতন্ডা শুরু হয় দ্বিগুণ, 
কেউ চায় খয়ের ছাড়া বাহার, 
শুনি পান রসে হজম করে আহার।

সানাই বাজে বিয়ের আসরে, 
ধিক্ ধিক্ অগ্নি বিবাহ বাসরে, 
বরকর্তার নজর সোনা দানা পণে, 
জোড়া তাম্বুলে লজ্জা ঢাকে কনে, 

বর বেচারা সাধাসিধে হাবা, 
দায়গ্রস্ত পিতার বুকে বসায় থাবা, 
পান-সুপারিতে বরণ করে বর, 
পানের পিকে ভরাইয়ো না ঘর, 

পানের আত্মীয় চুন সুপারি মৌরি, 
কথায় আছে ছাগল পানের বৈরী, 
পান ছেড়োনা যতোই বাড়ুক দর, 
পানেই সমৃদ্ধ করো রানারের ঘর!!




* সাইকেল *

প্র কৃ তি দ ত্তা

বাড়ির অব্যবহৃত ব্যালকনিতে আজ তার স্থান, গ্যারেজ ঘরে জায়গা মেলেনি, 
অথচ ধুলোকণারা ঠিক জায়গা করে নিয়েছে তার গায়ে।
ব্রেক দু'টোতে কষে বাঁধন, যদি ছাড়া পেয়ে ছুট লাগায়, এক ছুট্টে অনেকটা দূর ...

মনে পড়ে যায় তার সেই ছোট্টবেলার কথা-
চা-বাগানের মাঝ বরাবর, ছায়াবৃক্ষের শীতল ছায়ায়,
কখনো বা ঠাঠা রোদে, কখনো ঝড়-জল-বৃষ্টিতে প্যাডেলে চাপ পড়তেই নিঃশব্দ অগ্রগতি।

বয়স বাড়লে একটু ক্যাচক্যাচ শব্দ, আবার শুশ্রুষা পেয়ে নতুনের মত, নতুন হাতে নতুন ডেস্টিনেশন।
কখনো উৎরাই পথে তীব্রগতিতে হাতল আগলহীন, আবার কখনো চড়াই উঠতে প্যাডেলে ভীষণ চাপ।
মনে পড়ে যায় যৌবনের সে সব দিন...

প্রৌঢ়ত্বে নতুন অলঙ্কার নতুন পথচলা,
ডাবল ক্যারিতে কষ্ট হলেও অপরের আনন্দে আনন্দিত হওয়ার একটা অন্যরকম আনন্দ।
একসময় সে পেল কচি হাতের ছোঁয়া …

এভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বদলে যায়, হাত বদলে বদলায় যাত্রাপথ,
প্যাডেলে আবার চাপ পড়ে, এবারে অর্ধচাপ, দূরন্ত গতি। বুড়ো হাড়ে জোর কম, ভেঙে যায় পাঁজর …

আবার নতুন স্ট্রাকচারে সাজে সে, রঙ বদলায়, বদলে যায় ফ্রিহুইল।
আবারও ছুটে চলা শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত - শহরতলী পেরিয়ে গ্রাম গ্রামান্তরে, হাইওয়ে ধরে নদীর পাড়,
ঘন বনাঞ্চলে একটু বিরতি, কখনো কাজে কখনো অকাজে শুধুই ছুটে চলা …

কিন্তু কি যে হল, এই প্রৌঢ়কালেও তার শক্তি ছিল চলার, ইচ্ছা ছিল ঘুরে দেখার এ পৃথিবী।
কিন্তু তাও তার দু'চাকায় হাওয়ার অভাব,
নিশ্চল পড়ে আছে সেই ব্যালকনিতে।

কখন নিশব্দেই ওর ক্যারিয়ার হয়ে গেছে বইয়ের তাক, হাতল হয়েছে হ্যাঙ্গার, 
তবু সে ভাবে আবার নতুন প্রজন্ম আসবে, কচি হাতে ধুলোর বোঝা সরাবে, আর চাপ দেবে বেলে, "ক্রিং ক্রিং"।
থেমে থাকা হৃদস্পন্দন ফিরে পাবে গতি,
দু'চাকায় হাওয়া ভরে নাদুসনুদুস করবে কেউ,
স্পর্শ পাবে বালি, নুড়ি বা ম্যাস্টিকের, তারপর আবার ছুটে চলা।
 
হিমেল সকালে হলুদ সর্ষেক্ষেত ধরে,
বাসন্তী বিকেলে পড়ন্ত মিঠে রোদ গায়ে মেখে,
বাদল সন্ধ্যায় বৃষ্টিস্নাত রাস্তায় জল ছিটিয়ে,
অথবা শারদ কাশের পটভূমিতে ভোরের স্নিগ্ধ আলোয়।




* পৌষালী *

সু নৃ তা রা য় চৌ ধু রী 


সোনার আলো পড়লো ঢাকা গভীর কুয়াশায়,
সকাল হয়েও রাতের আঁধার কাটলো না যে হায়।
কাজের ফেরে চলছে দেহ, মনটা ফেরে ঘুরে,
পৌষালী সেই শৈশবটা ডাকছে পিছন ফিরে।
কুটকুটে সেই গরম জামা, ক্রীম মাখানোর হাত,
সকাল বেলা নতুন আলুর সঙ্গে ফেনা ভাত।
রোদের আলোয় পিঠটি রেখে অ্যানুয়েলের পড়া,
পাড়ার যত ছেলেগুলোর ঢিল ছুঁড়ে কুল পাড়া,
লোভীর মত তাকিয়ে থাকা চেপে মনের সাধ,
সরস্বতী জানতে পেলে পরীক্ষা বরবাদ।
ভোরবেলাতে দোরগোড়াতে খেজুর রসের ভাঁড়,
শুকনো পাতার আগুন ঘিরে সোয়াদ নিতাম তার।
নতুন চালের পায়েস পিঠে, নলেন গুড়ের বাস,
বাঁকা নদীর পাড়ে জমে উঠতো যে সার্কাস।
পরীক্ষাটি শেষ হলে পর দেদার ছিল ছুটি,
বাবার সাথে রেলগাড়িতে পিসির বাড়ি ছুটি।
চিড়িয়াখানায় জাদুঘরে কাটত ছুটির দিন,
উপহারের ঝুলি নিয়ে আসতো বড়দিন।
নতুন ক্লাসে ওঠার পরে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ,
স্মৃতির কোঠায় সেদিন গুলো এখনো অম্লান।
লেপের ওমে রাত কাটানোর শীতের সে শৈশব
চলে গেলেও স্মৃতির পাতায় লেখা আছে সব।




* মানব জন্ম *

শ ক্তি প্র সা দ ধ র

প্রকৃতির স্নেহে ধন্য হলে
নীরবে নিভৃতে কথার সৃষ্টি হয় নিরন্তর।
সবাক হলেই বুঝে নিতে হবে
দৃষ্টি আকর্ষণের বিষয়টি।
যুদ্ধ নয়, শান্তির দ্বারস্থ হতে গিয়ে 
আশ্বস্ত হয় না মন।
কত কি যে লেখা হয় কত আঁকিবুকি, 
নির্বিচারে করেছো দোহন,
ফিরে তো দেখনি কখনও
কতটুকু সঙ্গতি তোমার,
যুগ যুগ ধরে যা খুশি লিখে যাও পৃথিবীর বুকে,
ধন্য হও নিজ অহঙ্কারে,
প্রায়শ্চিত্ত শুধু নয়,
জড় ইমারত 'পরে
প্রাণে তো আশঙ্কা জাগে না,
কল্পনায় পাড়ি দিতে পারো না দূর মহাকাশে,
হেথা নয় হোথা -
প্রাণধারণের ইঙ্গিত খুঁজতে যেও না।
চেতনা রুদ্ধ তোমার, 
ধুলিকণার 'পরে
কিভাবে জন্ম নিলে উন্নত জীব হয়ে।।




* আকাশ জমিন *

সু ম ন্ত চ ক্র ব র্তী 

আকাশের বুকে ভাসমান মেঘ নির্ভার, 
নীচে দুরন্ত গতি লৌহশকট দুর্বার। 
জলে ছায়া ছুটে চলে মেঘে আর নীলে বিস্ময়,
চোখে পড়ে না পলক এই ছবি হোক অক্ষয়। 

মন ছুটে যায় মুঠো আলগায় ঝমাঝম, 
ঝড়ের আদলে নৃত্যের তাল সমাগম, 
ফের শূন্যের দিকে দৃষ্টি ফেরালে শান্ত, 
সেই অপরূপ কথা স্মৃতি ছুঁয়ে প্রাণবন্ত। 

এতো মোহ ঘিরে জীবন শরীরে প্রকৃতির, 
খুশি মেঘে হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়া লেগে অস্থির। 
সভ্যতা থেমে থাকতে পারে না একই জায়গায়, 
কভু সম্মুখ পানে কভু পিছনের পানে দৌড়ায়। 

স্মৃতি ইতিহাস জলে তার বহমানতার প্রতিবিম্ব, 
যুগের আঁধার গমন অথবা প্রগতির আঁকে স্তম্ভ। 
মানুষের ভাঙা গড়া সব কালপ্রবাহেরই চক্রে, 
চায় নতুনের সাথে কিছু পুরাতনে থাকি আঁকড়ে। 

দমকা গতির প্রকোপে মন ভিতরের ভিত নড়ে যায়, 
তাই যান্ত্রিক সুখও মেঘেদের পানে ফিরে চায় । 
চোখে জমি-পথ চিরে সময়ের ট্রেন ছুটে চলে উদাসীন, 
তবু প্রকৃতির কোল ভালোবাসা ছোঁয়া রাতদিন!




* হেমন্তের রাত *

আ ল্পি বি শ্বা স

হিম শীতলতা যেন 
দূর নীলিমায়
স্বচ্ছতা হারায়ে ঢাকে
মন কুয়াশায়

                         ফিসফাস বাতাসের 
                         চাপা গর্জন
                         টুপটাপ শব্দে
                         শিশির পতন

ধানের খড়কুটো 
অশ্বত্থ শিকড়ে
আবছায়া রঙ নিয়ে
রূপকথা গড়ে

                         আকাশগাঙেতে পাতা
                         আঁধারের ফাঁদ
                         বড় নিঃসঙ্গ
                         নিষ্প্রভ চাঁদ

কোথা চেনা সেই জন
কোন ঠিকানায়
তারও মুখখানি ঢাকে
নীল ওড়নায়

                         দূর আকাশের ভালে
                         তারা আলো জ্বালো
                         হাওয়াব্রীজ পার হয়ে
                         টিমটিমে আলো

কতটা জ্বালবে আলো
করছে পরখ
আকাশের ছবি আঁকে
রাতজাগা চোখ।




* শীত নামলে পাড়ায় পাড়ায় *

ঝু মা চৌ ধু রী

বেসামাল রক্তস্রোতে পৌষ আসন্ন,
শীত কাঁপবে শিরায় শিরায় এইবার।
কমলালেবুর কোয়ায় তোমার নাম লিখবো
রোদে তাতা মাদুরটিকে আদর দিয়ে পৌঁছে দেবো তোমার পাড়ায়

শীত কাঁপলে লেপের তুলোয় উনুন জ্বেলে আঁচের পিঠে পিঠ রাখবো
কলঘরে জলের ঢেউ ভয় দেখালেই শব্দে তোমার আঙুল ছুঁয়ে জ্বর আনবো

তার ওপরে যেদিন খানিক বৃষ্টি ফোঁটা জ্বর বাড়াবে!
আমি তোমায় ডাকতে যাবো মাড়িয়ে শিশির রাত দুপুরে

ওই তো মোটে দুটি মাস পৌষ আর মাঘ!
কাটিয়ে দিলে মন্দ কি গায়ে গায়ে!
উঠোন জুড়ে শীত বিছাবো দুপুরভর
আর
বসন্ত আমার গায়ে লেপ্টে যাবে তোমায় ছুঁয়ে!!




* বিষ্ময়বোধক চিহ্ন *

 শা ম স উ জ জো হা

কলেজের করিডোর থেকে যতক্ষন দেখা যায় 
আমি তাকিয়ে ছিলাম বাবা হেঁটে চলে যাচ্ছেন
শহরের অচেনা লোকের ভীড়ের মধ্যে বাবা 
একসময় হারিয়ে গেলেন। সেই থেকে প্রতিসন্ধ্যায় 
বাবার কথা ভাবি, সুপোরি বাগানের কথা ভাবি 
মা'র কথা ভাবি, বাড়ির কথা ভাবি। তারপর বাড়ি যাই
ফেরার সময় বাবা বাস স্টপেজ পর্যন্ত এগিয়ে দেন।
  
দাঁড়িয়ে থাকি মোড়ের উপর, করিডরে 
রাতের গল্প মুখস্ত করি, দিন মুখস্ত করি 
অচেনা গলি, অচেনা মানুষ মুখস্ত করি
মুখস্ত করতে করতে একদিন দেখি 
এখন আমি আর মুখস্ত করি না কাউকে
সবাই মুখস্ত মানুষ, যেন ধারাপাত পড়ি

বাবা আমাকে বাস স্টপেজ পর্যন্ত এগিয়ে দেন 
আমি বাস ছেড়ে অচেনা ট্রেনের কামরায় উঠি
অচেনা ষ্টেশনে নেমে পড়ি, এখানেও কিছু কিছু 
মুখস্ত মানুষ দেখি আর কিছু বিষ্ময়বোধক চিহ্ন
বছর দুই সেই বিষ্ময় আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় 
একদিন ঘুম থেকে জেগে আবার ট্রেনে চেপে বসি
বাবা আমাকে খোলা ডাকে চিঠি পাঠালেন 
প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে। কোন বিষ্ময়চিহ্ন নেই



* শূন্যতা *

স্ব প্না ভ ট্টা চা র্য 

ছায়া সরে গেলে, মায়া সরে গেলে, 
চরাচর জুড়ে পড়ে থাকে শূন্যতা। 
শূন্যতা... 
যাকে সংজ্ঞায়িত করতে হিমসিম খায় শব্দেরা।

প্রতিদিন দিগন্ত ফুঁড়ে সূর্য উঁকি দিয়ে বলে...
চেয়ে দেখো, পূবের আকাশ তেমনই রক্তিম! 
অন্তহীন বয়ে চলা বাতাস বলে যায়... 
শূন্য কিছু নয়! 
মৃত্তিকা তার স্বয়ংসম্পূর্ণ সত্তায়
ধরে রাখে যাবতীয় অভিযোগ-মান-অভিমান।
তবুও... 
জানলার ফাঁক দিয়ে সকালের নরম আলো 
যখন পড়ে থাকে খোলা ডায়রির পাতায়,
যখন অর্ধসমাপ্ত গল্পেরা পরিনতি খুঁজে 
পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে,
যখন খোলা পড়ে থাকা কলমের
বুক চুঁইয়ে নিঃশব্দে নেমে আসে বিষাদ, 
চেয়ারে লেগে থাকা ওম
হঠাৎ শৈত্যে দিশেহারা, কিংবা 
কফিমগে লেগে থাকা আঙুলের ছাপ 
অতীন্দ্রিয় স্মৃতি হয়ে ম্লান, নতমুখ,
তাকেই কি শূন্যতা বলে!




স জ ল কু মা র টি কা দা রে র ক বি তা


১.
* এ লেখা *

আমি তো কখনও লেখা প্রতিযোগিতায় নামতে চাইনি!
লেখাই এসে ধাক্কা দেয়।এমন ধাক্কা যে 
পড়ে গিয়ে ভেঙে যায় বুকের খাঁচা!
ভিতরের পোষা পাখিটাও তখন সুযোগ বুঝে 
উড়ে যেতে চায় দূরে...

এ লেখা তাই মৃত্যুর মুখে বাঁচা।



২.
* দুইটি চোখ *

দুইটি চোখ পড়ি
তবু যেন পাতার পর পাতা!
রাত্রি নিভে আসে
অথচ শেষ হয় না কবিতা...


৩.
* ভালোবাসা *

তোর সব থেকে ছোট্ট একটা টুকরো 
তুলে নিয়ে দেখেছি

তার ভিতরেও আমি আছি...




* পথ *

ক ল্পো ত্ত ম

                (১)

পায়ে চলা পথ দিয়ে পৃথিবী ডিঙোবো
ভালোবেসে এই পণ করেছি কখন
যষ্টিও জানে না সে কথা।

তুমিও কি জানো,
কত পথ পেরোনোর পর
কানে আসে বাঁশুরির সুর ?
পর্বত উত্তোলন করে
আমাকেও জায়গা দাও,
ঝরে যাক বৃষ্টি অবিরত অনন্ত মাঠে
সিক্ত হোক ঘাসের গালিচা

সব রং ফিকা হয়ে এলে
তোমারই গায়ের রং
ঘষে দাও আমার আকাশে।
সেই আমার নিলাম্বর
সেই আমার অনন্ত পথ
অনন্ত জীবন বলয়ে।

                  (২)

পথের সঙ্গে পথ মিশে তৈরি হয় মহাপথ
যে পথ চক্রাকারে ফিরে আসে আমার উঠোনে।
তুমি যদি হেঁটে যাও অভিমান ভরে
দূরে, দূরে, দূরে, আরও দূরে, দেখবে
একদিন এসেছো ফিরে ঠিক
ডেকেছো ভোরের আলো হয়ে।

আমিও তো এভাবেই ফিরে ফিরে আসি
কখনও শিল্পী হয়ে, কখনও লেখক হয়ে
কখনও পাগল হয়ে পাগলের বেশে
যে দেশে জন্ম নাও তুমি।

কেউ বলে, লক্ষ্মী-নারায়ণ
আমি বলি, আসলে তা শুধু একটা ক্ষণ
তোমার আমার এই পরিচ্ছন্ন প্রেম বলয়ের।

হাঁটো পথ, পথ হাঁটো আরো
ডিঙোবো এমন ঢেউ সাগরের হাজারো হাজারো
বছর পেরিয়ে গেলে ফিরে আসে আবার বোশেখ;
কখনো পাগল হয়ে রাস্তায় ঘুরি
কখনো আমার হয় রাজ্যাভিষেক
কনকাচল, যমন, কলিঙ্গ বা যক্ষপ্রদেশের।

                    (৩)

কতদূর চলে গেছে পথ
কতদূর যাওয়া আসা আমাদের
গ্যালাক্সি ছাড়িয়ে
কেউ কি বলতে পারে ?
কেউ কি বলতে পারে
গ্ৰহান্তরের পথে কোন্ ধুলোর ওড়াউড়ি,
কতবার পোশাক পাল্টানোর পর
আমাদের পরিণয় ঘটে ?

বিদেশ, সেতো আমাদেরই দেশ ছিল
ভিন গ্ৰহ, সেতো আমাদেরই গ্ৰহ ছিল একদিন
গ্ৰহদোষে, আমাদের অবস্থান নির্বাচিত হলো
দীর্ঘ পথের এ মুখে ও মুখে।

সুচতুর বাতাসের সঞ্চারণে
মুছে গেছে 
আমাদের মিলনের পথ-মাঝের পদ-ছাপ।

পাল্টে নাও পোশাক
পাল্টে নিই পোশাক আমিও,
আমাদের পরিণয় অবশ্যম্ভাবী
হয়ে উঠবে কোনো না কোনো গ্রহ সঞ্চারণের
নির্ধারিত ক্ষণে।

                 (৪)

এখনও অনেক পথ বাকি,
পথের কি রয়েছে কোথাও শেষ ?
মাঝপথে রান্নাবান্না সেরে
হাঁটাকেই করেছি নিঃশেষ আপন খেয়ালে।

হেঁটেছি ধুলোয়, শুয়েছি ধুলোয়
ধুলোর চাদরে
ঢাকা দিয়ে রেখেছি কানাকড়ি 
পারাপারের হিসেব মেলাতে।

পথ তো অনেক আছে বাকি
পথের মাঝেই করি হিসেব নিকেষ
কত পথ গিয়ে
আবার থামবো কোন্ গাঁয়ে,
আবার হাঁটবো কোন্ পথের শাখায়ে,
কতটা ঘুমায়ে
জেগে উঠে জাগাবো তোমাকে,
হাঁটাবো আমার কোন্ দিকে
ডাইনে না বাঁয়ে ?






মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল সংখ্যা || ৪ ফাল্গুন ১৪৩০ || ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪