প্রবন্ধ
বহুমুখী সতীনাথ
গী ত শ্রী সি ন হা
প্রত্যেক যুগেই দেখা গেছে সাহিত্য, রাজনীতিসহ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গড়ে ওঠে কতগুলো বৃত্ত। এই বৃত্তই নির্দিষ্ট করে ক্ষেত্রগুলোর পথ রেখা এবং তাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় ঘটনা -দুর্ঘটনা। আর সেই বৃত্তের বাইরে যাঁরা থেকে যান, ইচ্ছে বা অনিচ্ছায় অনুসরণ করতে পারেন না সেই পথরেখা, যতই প্রতিভাধর হন, সমকালে তাঁরা থেকে যান ব্রাত্য। হয়ত মহাকাল তাঁদের প্রতি কখনও কখনও সুবিচার করেন। যদিও বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রবলয় বা কল্লোল বলয় -এর বাইরে বলয় - ব্রাত্য যে প্রতিভাধর লেখকেরা ছিলেন, বিশেষত প্রবাসী লেখকরা, তাঁরা প্রচারে পুরো আলো না পেলেও জিজ্ঞাসু পাঠকের কাছে অপরিচিত ছিলেন না। তাঁদের তৈরি নিজস্ব ঘরানা সমকালেই পাঠক সাধারণকে ভাবতে বাধ্য করেছিল। এই বলয় - বৃত্তের বাইরের একজন প্রতিভাধর লেখক হলেন সতীনাথ ভাদুড়ি।
বাংলা সাহিত্যে সতীনাথের পরিচিতি 'জাগরী' ও 'ঢোঁড়াই চরিত মানস' - এর স্রষ্টা হিসাবে। একদিকে পূর্ণিয়ার জীবন অন্যদিকে বিভিন্ন পরিবেশ প্রতিবেশের সঙ্গে যুক্তি - বিযুক্তির ফলে অর্জিত অভিজ্ঞতাবিধৃত হয়ে আছে এ উপন্যাস দুটিতে। এই উপন্যাস দুটি আঞ্চলিকতার দোষে দুষ্ট হয়েও বিশ্বনাগরিকতার দাবি করতে পারে। অন্য উপন্যাসগুলোর ক্ষেত্রেও আমরা একই কথা বলতে পারি।
সতীনাথের উপন্যাস গুলো যতটা আলোচিত বা সমালোচিত, তাঁর ছোট গল্প ততটা নয়।ছোট গল্প আলোচনায় সতীনাথ কে আজও সমালোচক মহল প্রায় ব্রাত্যই রেখেছেন। অথচ তাঁর ছোটগল্পে কনটেন্টের অভাব নেই এবং অনেক গল্পই শিল্প সার্থক।
সতীনাথের উপন্যাসের মতোই গল্প রচনার ভিত্তিও বাস্তব অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই তিনি তাঁর চরিত্রগুলো সৃষ্টি করেছেন। পূর্ণিমার জীবন, উকিল হওয়া, কংগ্রেসের পদাধিকারী হিসাবে সাধারণ মানুষ, আমলা, রাজনীতিবিদদের সংস্পর্শে আসা, জেলে থাকার সময় কয়েদিদের ঘনিষ্ঠ হওয়া ----- তাঁর গল্পের বিষয়বস্তু ও চরিত্র গঠনে উপাদানের কাজ করেছে। তাই সতীনাথের গল্পে ঘুরেফিরে এসেছে ব্যক্তি মানুষের অসংগতি, ভন্ডামি, অসাধুতা, সঙ্গে সঙ্গে সমাজ, নৈতিকতা প্রভৃতি বিষয়। শুধু তাই না, আমলাতন্ত্র, ব্যবসায়ীদের ধান্দাবাজী সর্বত্র তাঁর অবাধ গতি। সব কিছুকেই তিনি দেখেছেন শাণিত ব্যঙ্গের দৃষ্টিতে। তা যদিও পরশুরামের মতো হিউমার নয়, পরিশীলিত ফরাসী রীতির স্যাটায়ার। তবে সতীনাথের এই আপাত ব্যঙ্গের পিছনে ছিল একটা সহানুভূতিশীল মনের অবস্থান। তাই তা আমাদের সচকিত করে, হাসায় --- কিন্তু আঘাত দেয় না।
সতীনাথের অনেক গল্পেই নাটকীয় উপাদান আছে, নাটকীয় উপাদান আছে তাঁর উপন্যাসেও। কিন্তু সতীনাথ তাঁর সাহিত্য জীবনে একটি মাত্র নাটক রচনা করেন --- অনেক সম্ভাবনা থাকলেও। 'চকাচকী' গল্পগ্রন্থের অন্যতম গল্প 'মুনাফা ঠাকরুণ' --- এর নাট্যরূপ দেন 'পারবে না এদের সঙ্গে'। 'পরিচয়' পত্রিকার ১৩৫৮ এর অগ্রহায়ণ- পৌষ সংখ্যায় নাটকটি প্রকাশিত হয়। আমরা দেখবো নাটকটি কতদূর সার্থক বা নাট্যকার হিসাবে সতীনাথের সম্ভবনা কতটা।
'পারবে না এদের সঙ্গে'- নাটকে এক ব্যবসায়ী পরিবারের মানসিকতার সুন্দর উপস্থাপন করেছেন সতীনাথ। মধ্যবিত্তের আত্মসন্মানসর্বস্ব মানসিকতার সীমান্তে এসে আমরা চমকিত হয়ে দেখি সন্মান, চরিত্র সব কিছুকেই ব্যবসায়ের ভিত্তি করা যায়। জীবনের সমস্ত মানবিক ক্ষেত্রই অর্থনৈতিক মানদন্ডের উপর গড়ে ওঠে। মাক্সবাদী দর্শনে আত্মস্থ সতীনাথের এই ছিল অভিমত। 'সত্যি ভ্রমণ কাহিনী'-তে সতীনাথ জানিয়েছেন। এক সঙ্গে বেশীক্ষণ ভাবতে পারা যায় কেবল অ্যনির কথা।
আর অ্যনির কথা ভাবতে গেলেই দেখি যে, তার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য ভাবে মিশে আছে, নিজের কথাও ---- চেষ্টা করেও আলাদা করা যায় না। প্রেমকে অন্ধ মনে করে ভুল করে লোকে। ভালোবাসার মধ্যেও খানিকটা হিসেব থাকতে বাধ্য।
এই নাটকেও সেই হিসেবই করে গেছে প্রতিটি চরিত্র। যেখানে লাভ যেখানেই তাদের গন্তব্য। নীতি নৈতিকতা আত্মসন্মান সবকিছুকেই দাঁড়িপাল্লায় তুলতেও এদের আপত্তি নেই। এদের চিন্তা-চেতনার সঙ্গে মধ্যবিত্ত পাঠকের সত্যিই পারা দুষ্কর।
তিন দৃশ্যে বিভক্ত 'পারবে না এদের সঙ্গে' নাটকে প্রধান চরিত্র শেঠজীকে কেন্দ্র করেই অন্যান্য চরিত্রগুলো আবর্তিত, সকলের লক্ষ্য মুনাফা লাভ। শেঠজীর গদির কেরানিরা শেঠ গৃহিণী, টিকমচাঁদ, শেঠজীর ছেলে বিরিজলাল, ফেকমল এবং সর্বোপরি শেঠজী ----- সকলেই টাইপ চরিত্র। যেনতেনপ্রকারে মুনাফা অর্জনই এদের একমাত্র উদ্দেশ্য। মাহিনার বাইরে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের জন্য শেঠগৃহিণীর সঙ্গে কেরানিদের চুক্তি হয়েছে, শেঠজীর অগোচরে শেঠ গৃহিণীর তৈরি আচার, পাঁপড়, আমসত্ত্ব আধাআধি বখরাতে বাইরে বিক্রি করবে। এই নাটকের ব্যতিক্রমী চরিত্র ইংরেজি জানা মধ্যবিত্ত মানসিকতার ছেলে আত্মসন্মানসর্বস্ব, হতাশাগ্রস্ত ফণীবাবু। কাহিনীর সূত্রপাতও ফণীবাবুকে কেন্দ্র করেই। ইংরেজি শিক্ষিত ৭০ টাকা মাইনের চাকুরে ফণী বাবু তার কাজ নিয়ে এবং মাইনে নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল না। তা ছাড়া অন্যান্য কর্মচারীদের তার প্রতি ব্যবহারও তার কাছে অপমানকর মনে হয়েছিল। ফণীর কাজের প্রতি এই অনীহার কারণ নাটকে উল্লিখিত না থাকলেও 'মুনাফা ঠাকরুন' গল্পে সেই কারণের উল্লেখ আছে।
ফণী ইংরেজি বাংলা লিখতো ভালো। বাসনা ছিল কাগজ চালাবে ভবিষ্যতে। কিন্তু নিতে হয়েছিল কাজ শেঠজীর গদিতে, মাসিক ৭০ টাকা মাইনেতে। তবে কাজটা নিজের লাইনের ----- অর্থাৎ লেখাপড়ার কাজ --- ইংরেজি আর বাংলার চিঠিপত্র লেখার কাজ। কলেজে পড়বার সময় সে পলিটিক্স করতো। এখানে এসে দেখে যে গদির পরিবেশ আর মনিব - কর্মচারীর সম্পর্ক ঠিক তার পলিটিক্সের জানা ছকে ফেলা যায় না!... চেয়ার টেবিলের ব্যবস্থা নেই, ফরাশে বসে জলচৌকির উপর খাতা রেখে লিখতে হয়। সিঁদুর বড় বড় করে লেখা দেওয়ালের 'মুনাফা' শব্দটিকে ও কুলুঙ্গির গণেশ ঠাকুরকে প্রধান কর্মচারী টিকচাঁদ ধূপ-ধুনো দিয়ে প্রত্যহ পূজা করে, অন্য কর্মচারীরা ভক্তিভরে প্রণাম করে। গদির মধ্যে থুতু ফেলা বারণ নয়, কিন্তু চা খাওয়া বারণ। নামমাত্র মাইনেতে গদির এতগুলো কর্মচারী উদয়াস্ত পরিশ্রম করে, কিন্তু কেউ মাইনে বাড়াবার দাবি করে না। একই ধরনের কাজ করে কেউ কম মাইনে পায়, কেউ বেশি। তবু তা নিয়ে কোনো আন্দোলন নেই। অন্দরমহলের আচার, বড়ি, পাঁপড় শেঠ গৃহিণীর সঙ্গে আধাআধি বখরায় কর্মচারীরা লুকিয়ে বিক্রি করে দেন। অদ্ভুত! ... মেজাজ একেবারে খারাপ হয়ে যায় এদের ধরণ-ধারণ দেখে।
ফণীর মধ্যবিত্ত মানসিকতার এই মনোভাবের ফলেই নির্দোষ হাসিঠাট্টা থেকে বাদানুবাদ তৈরি হয়। প্রথমে তা ফণী ও গদির কেরানিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে তা শেঠজীর মধ্যে সঞ্চারিত হয়। ফলস্বরূপ ফণীর চাকরি থেকে ছাঁটাই। এবং এই অপমানের বদলা নেবার জন্য ফণীর হুঙ্কার।
তোমার গদির নাড়িনক্ষত্র আমার জানা। সব আমি ফাঁস করবো ------ পাবলিকের কাছে।
সেই হুমকির সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করে ফণী ইন্দ্রাণী পাবলিশার্স থেকে 'হাটে হাঁড়ি' সিরিজে 'শেঠজীর কেচ্ছা' বের করে। দাম দুই টাকা। কেচ্ছার প্রতি মানুষের অসাধারণ আসক্তির বশে সেই বই-ও বিকোচ্ছে 'হট কেকের' মতো। বই যাতে সাধারণ মানুষের হাতে না পৌঁছায় তাই বিরিজলাল মামা ফেকমল কে দায়িত্ব দিয়েছে সমস্ত বই কিনে বাড়িতে নিয়ে আসতে। বইখানা কত টাকার খারাপ বলেছে, সেই হিসেবে যখন শেঠজী ব্যস্ত তখন ক্ষিপ্ত বিরিজলাল প্রস্তাব করেছে ইন্দ্রাণী পাবলিশার্স - এর ব্যবসা লাটে ওঠানোর এবং বজ্জাত ফণীর পিছনে গুন্ডা লাগানোর।
যত টাকা খরচ হয় ইন্দ্রাণী পাবলিশার্স-কে একবার দেখে নেব। আমি কোনো কথা শুনতে চাই না আপনার। মানহানির মোকদ্দমা আনবো আমি তাদের বিরুদ্ধে। ফণীটার পিছনে আমি গুন্ডা লাগাবো। আগুন লাগিয়ে দেব ইইন্দ্রাণী পাবলিশার্স এর প্রেসে। পুলিশকে টাকা খাইয়ে আমি ওদের জেরবার করবো।
মুনাফাদেবীর বরপুত্র হিসেবে শেঠজী যদিও এতো তাড়াহুড়ো করতে রাজি নয়, একটু শলাপরামর্শ করে সিদ্ধান্তে আসতে চান।
নায়কের কাহিনীর গতি আমাদের পরিচিত ছকেই এগিয়ে চলেছে। এই অংশে বিভিন্ন স্তরের মানুষের টাইপ চরিত্র যেমন আমরা পাই, তেমনি এই চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ নাট্যকার ছোট্ট পরিসরে আমাদের সামনে তুলে ধরেন।
নাট্য দর্শকের প্রত্যাশা অনুযায়ী এরপর ফণীর বিপণ্ণতা, ইন্দ্রাণী পাবলিশার্স এর করুণ পরিণতি বা শেঠজীর পর্দা ফাঁসই কাঙ্ক্ষিত ছিল। কিন্তু নাটকের গতি দর্শকের সেই প্রত্যাশা পূর্ণ করে না। নাট্যকারের লক্ষ্য একটা স্টিরিওটাইপ কাহিনীর বর্ণনা নয়, আমাদের চারপাশে যে বিভিন্ন শ্রেণীর চরিত্রগুলো ছড়িয়ে আছে সরলভাবে তাদের উপস্থাপন।
নাটকের এই অন্যখাতে প্রবাহ আমাদের চমকিত না করে পারে না। শেঠ গৃহিণী যখন তার ভাই ফেকমলের বই-এর হিসেবে গরমিল ধরে ফেলে সেই বই বাইরে ব্ল্যাকে বিক্রির আধাআধি বখরা চায় এবং শুধু তাই না, বইগুলো আগুনে পোড়ানোর বদলে প্রতিদিন দুই-চার কপি করে বিক্রির জন্য ফেকমলকে আধাআধি বখরায় দলে টানে তখন তাদের মানসিকতায় না হয়ে পারি না।
বলেছিলাম কি জাঁতার ঘরের ঐ বইগুলোকে উনুনে না ফেলে খানকয়েক করে রোজ বেচলে হয় না।
কাহিনী যত এগিয়েছে পাঠকের চমকের মাত্রা তত বেড়েছে। বই-এর দাম ক্রাইসিসের কারণে দুটাকার জায়গায় চার টাকা হয়ে গেছে শুনে এই অতিরিক্ত মুনাফার লোভে শেঠজীই নিজের কেচ্ছা বিক্রি লাভজনক বিবেচনা করে টিকমচাঁদকে দায়িত্ব দেয় প্রতিদিন দুই-চারখানা করে বই বাজারে বিক্রি করার জন্য। যদিও নাটকের শেষে গিয়ে আমরা জেনেছি ক্রাইসিস বজায় রেখে নিজের কেচ্ছা বিক্রির এই বুদ্ধি শেঠজী তার গৃহিণীর থেকেই পেয়েছিল।
বিরজুর মা, মুনাফা ঠাকুরের সঙ্গে সঙ্গে তোমাকেও গড় করতে ইচ্ছে করছে। তোমার কাছে অনেক কিছু শেখাবার আছে। তুমি আমায় এক হাটে কিনে অন্য হাটে বেচতে পারো।... মুনাফা ঠাকুর কার কাছে থেকে শিখলেন জানি না, আমার কিন্তু ব্যাপারটা মাথায় ঢুকল ফুল আর গণেশজীর পিছনে তোমার রাখা বই গুলো দেখে।
এদের সুযোগ্য সন্তান শিক্ষিত বিরিজলাল আবার ব্যবসায়িক বুদ্ধিতে আরও এককাঠি উপরে। সে ইন্দ্রাণী পাবলিশার্সই কিনে নিয়েছে, সেখানে কর্মচারী হিসেবে রেখেছে ফণী চাটুয্যেকে, মাইনে ১৫০ টাকা। এখন থেকে সে কেচ্ছা প্রকাশ করবে।
' আরও কিছু লেখাপড়া - জানা লোকজন রাখতে হবে, 'হাটে হাঁড়ি' সিরিজের বই মাসে একবার করে বার করবার জন্য -- ইংরেজি, হিন্দি, বাংলায়। আইন বাঁচিয়ে লেখাতে হবে বইগুলো। সব বড় লোকের কেচ্ছা থাকবে তাতে। এখন লাখ দুয়েক টাকা ঢালতে হবে। কেবল আমাদের গদির কেচ্ছার বইখানা থেকেই। আমি মোচে তা দিয়ে সেই দুই লাখ টাকা তুলে নেবো।'
তার আরও উপলব্ধি -
'ছাপার অক্ষরের কারবারের পয়সা সঙ্গে সঙ্গে, 'ইজ্জত যে এতোক্ষণ বাড়বে সেটা তো বুঝছো না।'
ফণীবাদের নাটকের সব চরিত্রগুলোর প্রথম থেকে শেষ অবধি লক্ষ্য মুনাফা অর্জন। যদিও ফণীও এই সুযোগ নিজের দাম ৭০ টাকা থেকে ১৫০ টাকার বাড়িয়ে নিয়েছে। এদের প্রতীক রূপেই যেন মুনাফা দেবীর অবস্থান। তবে শেঠজী ও শেঠগৃহিণীর এই অর্থগৃধ্নতা আমাদের চরিত্রগুলোর প্রতি বিরূপ করে না, বরং আনন্দ দেয়, চমকিত করে। এখানেই নাট্যকারের সাফল্য। পূর্বেই যে নাট্যকারের সহানুভূতিশীলতার কথা বলেছি, ---- এই চরিত্রগুলো অঙ্কনের ক্ষেত্রে নাট্যকারের সেই মনোভাব কাজ করেছে। বই ও ব্যবসা যা শেষ পর্যন্ত অর্থলোলুপ ব্যবসায়ীদের হাতে যাবে, সেখানে মুনাফাই হবে একমাত্র লক্ষ্য এবং কেচ্ছা হবে সাহিত্যের বিষয় -----এই উপলব্ধি হয়তো কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই হয়েছিল নাট্যকারের। অন্যান্য ব্যবসার সঙ্গে বই - ব্যবসার কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই হয়েছিল নাট্যকারের। অন্যান্য ব্যবসার সঙ্গে বই - ব্যবসার কোনো তফাত রইল না। এর যোগানের উপরই তার চাহিদা এবং দাম নির্ভর করবে এবং ক্রাইসিসের সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা বই-এর ব্যবসায়ও অর্জন করা যায় --- এই বক্তব্য নাট্যকার আমাদের জানিয়েছেন। সমাজ সম্পর্কে অভিনিবেশ না থাকলে এই ভবিষ্যৎবাণী সম্ভব নয়।
কেচ্ছার প্রতি সকল শ্রেণীর আগ্রহও নাট্যকারের ব্যঙ্গের লক্ষ্য। ফলে শেঠজী, শেঠগৃহিণী, বিরিজলাল, ফণীর পাশাপাশি আমরাও নাট্যকারের ব্যঙ্গের বিষয় হয়ে উঠি। একেই হয়তো বলে পোয়েটিক জাস্টিস। কোনো বিভেদ না রাখা। সবাই লক্ষ্যবস্তু হবার ফলে এই ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত সকলকে হাসায়, আঘাত দেয় না। শেঠজী কোনো আড়াল ছাড়াই সবকিছুকে হিসেব করেছেন লাভ-ক্ষতির দাঁড়িপাল্লায়। আর মধ্যবিত্তরা মুখোশ পরে সবকিছুর হিসেব করে। শেঠজীর সঙ্গে এখানেই যা পার্থক্য। 'পারবে না এদের সঙ্গে' নাটকের উত্থান-পতন, চরিত্রগুলির বিকাশ ও পরিণতি নাটকটিকে সার্থক করে তুলেছে। সতীনাথ তাঁর সাহিত্যজীবনে এই একটি নাটক রচনা করলেও যে মুন্সীয়ানা তিনি এই নাটকে দেখিয়েছেন, আরও নাটক তিনি যদি সৃষ্টি করতেন তবে বাংলা নাট্যসাহিত্যই সমৃদ্ধ হতো।
খু্ব ভালো লাগলো
উত্তরমুছুন