প্রবন্ধ

প্ল্যাস্টিক ব্যবহার ও পরিবেশ

শ ক্তি প্র সা দ ধ র


মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক নতুন পর্বের সূচনা হয়েছিলো মানুষের প্রথম ধাতুর ব্যবহার শেখার পরে।গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশককেও বলা যেতে মানব সভ্যতার এক নতুন পর্ব।কারণ ঐ সময় থেকে শুরু হয়েছিলো প্ল্যাস্টিকের ব্যবহার।বিজ্ঞানের জয়যাত্রার ধারাকে অক্ষুন্ন রেখে উনবিংশ শতাব্দীর উষালগ্নে জন্ম নিয়েছিলো আধুনিক প্ল্যাস্টিক পলিথিনের আদিপুরুষ।প্ল্যাস্টিক এখন এতোটাই জনপ্রিয় যে গরীব থেকে উচ্চবিত্ত সবার বাড়িতেই এর উপস্থিতি। 

প্ল্যাস্টিক প্রকৃতপক্ষে কৃত্রিম পলিমার।অনেকগুলি প্রাথমিক উপাদান (মনোমার) যখন পলিমেরাইজেশন বিক্রিয়া করে কোনো দীর্ঘ শৃঙ্খলাকার বৃহদাণবিক যৌগ গঠন করে তখন তাকে পলিমার বলে।যেমন ইথিলিন নামক মনোমার পলিমেরাইজেশন বিক্রিয়া করে পলিথিলিন গঠন করে। 

বেলজিয়ামবাসী একজন রসায়ণ শিক্ষক ভেলক্স আবিষ্কার করেন প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সফল আলোকচিত্র সন্বন্ধীয় কাগজের মতো পদার্থ। তাঁর এই আবিস্কার তিনি জর্জ ইস্টম্যান নামক জনৈক ব্যক্তির কাছে বিক্রয় করেন।১৯০৬ খ্রীষ্টাব্দে লিও হেনড্রিক বেকল্যান্ড ব্যাকেলাইট (যা আধুনিক প্ল্যাস্টিকের প্রথম রূপ) আবিস্কার করেন। ১৯২০ সালে জার্মান রসায়ণবিদ হেরম্যান স্টডিংগারের গবেষণার ফলস্বরূপ প্ল্যাস্টিকের জগতের দরজা খুলে যায়।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুযুধান দুই পক্ষই যুদ্ধের প্রয়োজনে নতুন বৈশিষ্ট্যের প্ল্যাস্টিক তৈরির গবেষণায় মন দিয়েছিলো।ফলে জার্মানী প্রস্তুত করলো কৃত্রিম রবার।আমেরিকা শুরু করলো ব্যাপক নাইলনের ব্যবহার।কৃত্রিম তন্তু হিসেবে টেঁকসই ও সস্তা হবার ফলে যুদ্ধের বাজারে এদের যথেষ্ট কদর ছিলো। যুদ্ধোত্তর কালেও এই গবেষণা জারি রইলো।
১৯৫৩-তে পলি-ইথিলিন তৈরি হল জার্মান বিজ্ঞানী জিগলারের দ্বারা ১৯৫৪-তে ইতালীয় বিজ্ঞানী নট্টা প্রস্তুত করেন পলিপ্রোপিলিন। এই দুটো বহুল প্রচলিত ও গুরুত্বপূর্ণ প্লাস্টিক। তাই ১৯৬৩ সালে যুগ্মভাবে এই দুই বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পান। 
প্লাস্টিকের ব্যাপক জনপ্রিয়তার সপক্ষে অনেক কথাই বলা যায়। যেমন: প্লাস্টিক হাল্কা, পচনশীল নয়, জলরোধী টেঁকসই, দামে সস্তা, কম শক্তিব্যায়ে সৃষ্ট, কম জায়গা দখল করে, যে জিনিস কাগজের ব্যাগে বইতে গেলে লাগবে একটা ট্রাক। প্লাস্টিকের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল একে সহজেই নানা আকৃতি দেওয়া যায়। তাই এর এইরূপ নামকরণ হয়েছে। গ্রীক শব্দ "Plasticos"-এর থেকে প্লাস্টিক শব্দের উদ্ভব, যার অর্থ "যার আকার পরিবর্তনযোগ্য।"
দেশ-কালের সীমানা পেরিয়ে প্লাস্টিক আজ বিশ্বব্যাপী অধিকার স্থাপন করেছে আর প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করে চলেছে সভ্যতার সঙ্কট। পৃথিবীব্যাপী প্লাস্টিকের ব্যবহার গত পাঁচ দশকে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলেও পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর তুলনায় ভারতে তা যথেষ্ট কম। যেমন: ২০০৯ সালের প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার বছরে গড়ে ৮৯ কিগ্রা, ইউরোপে ৬০ কিগ্রা, সারা পৃথিবীতে ১৫ কিগ্রা কিন্তু ভারতে তা মাত্র ১ কিগ্রা। 
আমাদের দেশে এই মুহূর্তে প্রায় ৫৫০০এর উপর প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরির কোম্পানী রয়েছে, যার মধ্যে ৬০০এর বেশী কারখানায় প্লাস্টিক ব্যাগ উৎপন্ন হয়। ১৩০ কোটি মানুষের দেশে ব্যবহার্য প্লাস্টিকের মোট পরিমান ১০০০০০০ মেট্রিক টন যা মোটেও উপেক্ষার বিষয় নয়, বরঞ্চ পরিবেশবিদদের কাছে মাথাব্যথার কারণ। 
প্লাস্টিক জৈবভঙ্গুর নয় অর্থাৎ সহজে বিক্রিয়াও করে না, প্রাকৃতিকভাবে ভাঙেও না। ফলে প্রকৃতিতে এটি ক্রমশঃ জমতেই থাকছে। এগুলি জল নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। বন্যা ও মশা মাছির আঁতুড়ঘর তৈরি হচ্ছে। মুম্বই শহরে প্রতিবছর এই কারণেই বন্যা হচ্ছে। প্লাস্টিক জমে জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। সেই জমি অণুজীবেরও বসবাসঅযোগ্য হয়ে পড়ে। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক ক্রমশঃ বিবর্ণ হয়ে যায় ও বহুদিন পর ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য প্লাস্টিক মাটির নীচে অন্ততঃ তিনশো বছর একই রকম থাকতে পারে। প্লাস্টিক বিয়োজিত করে এমন জীবাণু আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে জেনেটিক ইঞ্জিনীয়ারিংএর মাধ্যমে যা অত্যন্ত ব্যায়সাপেক্ষ। 
ভারতে শহুরে আবর্জনার ৪-৫% হল প্লাস্টিক বর্জ্য। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বর্জ্যের ৮০% ই ভারতে পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের জন্য সংগৃহীত হয়। এগুলি হল পি.ভি.সি, পলিথিন, পলিস্টাইরিন ইত্যাদি। পেটের তাগিদে এ কাজে সহায়তা করে হাজার হাজার জঞ্জালকুড়ুনি ও ফেরিওয়ালা। তবে কয়েকবার প্রক্রিয়াকরণের পরই তা ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে যায়। পুনঃপ্রক্রিয়াজাত প্লাস্টিকের গুণগত মান যেমন খারাপ, স্বাস্থ্যের পক্ষেও তা ক্ষতিকর। এ জন্য উন্নত দেশগুলিতে প্লাস্টিক বর্জ্যের পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ অনেক কমে গিয়েছে। ফলে ঐসব দেশের প্লাস্টিক বর্জ্য টন টন চলে আসছে আমাদের দেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। "গ্রীনপিস-১৯৯৩" প্রদত্ত হিসেব থেকে জানা গিয়েছে ১৯৯০-১৯৯৩ সালে ইংল্যান্ড, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা থেকে ভারতে মোট প্রায় কুড়ি লক্ষ মেট্রিক টন বর্জ্য আমদানী করা হয়েছে, যার বেশিরভাগটাই প্লাস্টিক বর্জ্য। প্রকৃতপক্ষে ভারত এখন প্লাস্টিক বর্জ্যের আস্তাকুঁড়। ভারতে এখন প্রতি বছর প্রায় ১৫ লক্ষ কম্পিউটার আর ৩০ লক্ষ মোবাইল ফোনের বর্জ্য পরিত্যাক্ত হয় (২০০৯-সালের প্রেক্ষিতে)।
আজ থেকে ৩২ বছর আগেও পলিথিনের ক্যারিব্যাগের প্রচলন ছিল না। চট বা কাপড়ের ব্যাগ, ধামা, ঝুড়ি, কাগজের বা শালপাতার ঠোঙা ইত্যাদির দ্বারা বেচাকেনা বা মালপত্র বহন চলত। ১৯৯৮ সালে ভারত সরকারের পরিবেশমন্ত্রক ৮ʼʼ×১২ʼʼ এর কম মাপের ও ২০ মাইক্রনের কম পুরু পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে এবং পুনঃপ্রক্রিয়াকৃত প্লাস্টিকের ক্ষেত্রে রিসাইকেল্ড কথাটা ও কত শতাংশ প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াকৃত হয়েছে তা উল্লেখ করতে নির্দেশ দিয়েছে। ভারতে প্লাস্টিকের বার্ষিক উৎপাদন ১৬ লক্ষ মেট্রিক টন যার দুই তৃতীয়াংশ ইউরোপীয় দেশ সমূহ থেকে আমদানীকৃত, আবার এর মধ্যে ৪ লক্ষ মেট্রিক টন ব্যবহৃত হয় শুধু পলিথিন ক্যারিব্যাগ তৈরিতে। সেজন্য পলিথিন ক্যারিব্যাগই পরিবেশবিদদের মাথাব্যথার কারণ।
পুনঃপ্রক্রিয়াকৃত প্লাস্টিক দেখতে ভাল নয়। তাই এতে কালো রঙ মেশানো হয়। এই কালো রঙে টাইটেনিয়াম ডাই অক্সাইড, ক্যাডমিয়াম ও সীসাযুক্ত পদার্থ থাকায় ঐ প্লাস্টিক হয়ে ওঠে বিষাক্ত। এইরকম পলিব্যাগ ও অন্যান্য রঙীন পলিব্যাগে কোন খাবার রাখলে ঐ প্লাস্টিকের ক্ষতিকারক উপাদানগুলো খাবারে মিশে বিষাক্ত করে তোলে। তাই সরকারী ঘোষণায় সাদা বা স্বচ্ছ পলিব্যাগ ব্যাবহার করার কথা বলা হয়। প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্যালোরিগত মান বেশি হওয়ায় জ্বালানী হিসেবেও একে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্লাস্টিক পোড়ালে ধোঁওয়ার সাথে ক্ষতিকর ডাইঅক্সিন ও ফিউরান বাতাসে মিশে ব্যাপক দূষণ ঘটে। এতে মানুষের শ্বাসকষ্ট বাড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ডাই অক্সিন মানুষের ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান। এটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির ক্ষরণকেও ব্যাহত করে। ডাই অক্সিন ও ডাই বেঞ্জো ফিউরান খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে উদ্ভিদ ও প্রাণী মারফৎ শেষে মানুষে পৌঁছায়। উন্নত দেশগুলোতে কঠোরভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োগ ঘটিয়ে পরিবেশে ঐ দুই যৌগের মাত্রা কমিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অজ্ঞতাজনিত কারণে এই মাত্রা ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে। 
জিনের ওপর প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। কোন কোন প্লাস্টিক তৈরিতে বিসফেনল এ (বিপিএ) নামক একটি সাদা রঙের কঠিন যৌগ ব্যবহৃত হয়, যা দাঁতের ডাক্তাররা দাঁতের ক্ষয় বুজিয়ে ফেলার জন্য ফিলিং মেটেরিয়াল হিসেবে ব্যবহার করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেস্ ওয়েস্টার্ণ রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী প্যাট্রিসিয়া হান্ট প্লাস্টিক পাত্রের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বলেছেন, "সামান্যতম বিপিএ ইঁদুরের বর্ধনশীল ডিম্বাণুর পক্ষে ক্ষতিকর। পরীক্ষাগারে ইঁদূরেরা প্লাস্টিকের যে খাঁচায় থাকত তা থেকে বিপিএ চুঁইয়ে আসত, ঐ খাঁচার ইঁদূরদের ডিম্বাণুতেই ডঃ হান্ট অস্বাভাবিক জিনগত ত্রুটি লক্ষ্য করেন। এ থেকে অনুমান যে মানুষের ওপরেও এর অনুরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এতে গর্ভস্থ ভ্রূণের জননাঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। ইস্ট্রোজেনের স্বাভাবিক কাজে বাধা সৃষ্টি করে বিপিএ। এর ফলে সন্তানসম্ভবা মহিলার গর্ভপাত হওয়ার বা সন্তানের ডাউন্স সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়ে। 
সমুদ্রে ভাসমান প্লাস্টিক সামুদ্রিক প্রাণী যেমন কচ্ছপ, তিমি ভুল করে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে প্লাস্টিক তাদের অন্ত্রে ও অন্যান্য অংশে আটকে গিয়ে মৃত্যুর কারণ হয়। কেবলমাত্র উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লীতে শত শত গোরুর মৃত্যুর কারণ প্লাস্টিকে মোড়া সব্জির অবশিষ্টাংশ। একটি মৃত গোরুর পেট থেকে ৩৫ কেজি পলিথিন ব্যাগ পাওয়া গেছে। 
জৈবভঙ্গুর প্লাস্টিক তৈরি করা যায় কি না সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা অনেকদিন আগে থেকেই গবেষণা চালাচ্ছেন। পলিইথিলিনের সঙ্গে কন্দজাত স্টার্চ মিশিয়ে জৈবভঙ্গুর প্লাস্টিক তৈরি করা গিয়েছে তিরুবনন্তপুরমে অবস্থিত সেন্ট্রাল টিউমার ক্রপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে। তবে এই প্লাস্টিকের দাম বেশি এবং পুরোপুরি জৈবভঙ্গুর নয়। কারণ এতে অভঙ্গুর সিন্থটিক পলিমারই হল মূল উপাদান। বর্তমানে এন ভি গ্রীন সংস্থা শুধুমাত্র পটেটো স্টার্চ থেকে সম্পূর্ণ জৈবভঙ্গুর প্লাস্টিক তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে। 
প্রকৃতিতেও পরিব্যক্তির ফলে প্লাস্টিকখেকো ব্যাকটিরিয়ার জন্ম হতে পারে। তারা প্লাস্টিকের জিনিসপত্রকে উই বা ঘুণপোকার মতো খেয়ে ফেলবে। কিন্তু এর ফলাফল মারাত্মক হতে পারে। আধুনিক যুগে যদি কোন শহরে এমন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হয়, তবে প্লাস্টিকপ্রধান সেই শহরের কি দশা হবে তা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। এই ভাবনা নিয়ে কীট পেডলারের কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাস মিউট্যান-৫৯- দ্য প্লাস্টিক ইটার এবং সিনেমা ডুমস্ ওয়াচ উল্লেখযোগ্য। 
বর্তমান যুগে প্লাস্টিকের কুফল জানা সত্ত্বেও এর ব্যবহার দিন থেকে দিন বেড়েই চলেছে। ধাতব পদার্থের বিকল্প হিসেবে বাসনপত্র, ঈআঁজের জলের বোতলের পরিবর্তে পার্লপেট হর্সপেট, ট্যাপারওয়্যার বোতল, প্যাকেজিং হিসেবে, যানবাহন নির্মান শিল্পে, পাইপ, দরজা, আসবাবপত্র তৈরিতে, শল্যচিকিৎসায়, কৃত্রিম হাড়, দাঁত তৈরিতে, কৃত্রিম তন্তু বা চামড়া হিসেবে, জামাকাপড়, পিপিই, পশমীবস্ত্র, লেপ, কম্বল, বেল্ট, ইলেকট্রিক সরঞ্জাম, জুতা, খেলনা, ব্যাগ, শব্দপ্রতিরোধক হিসেবে, রেইনকোট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট, টেলি যোগাযোগের অপটিক্যাল ফাইবার, পেন, পেন্সিল, মোবাইল ফোন, চশমা প্রভৃতি প্রস্তুতিতে পলিথিন, প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়। আরো দুর্ভাবনার বিষয় হল প্রধান খাদ্য হিসেবে যে চাল ব্যবহার করা হয়, সেটাও প্লাস্টিক পালিশ করা হচ্ছে।
পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের কল্যাণে এখন আমরা যেদিকে তাকাই, শুধু প্লাস্টিক আর প্লাস্টিক। খনিজ তেল শোধনের পর যে ওলেফিন পাওয়া যায় তা থেকে প্রস্তুত হয় ইথিলিন, প্রোপিলিন, বুটাডিন প্রভৃতি প্লাস্টিক শিল্পের নানা কাঁচামাল। 
উপরিউক্ত তথ্যগুলো প্রমাণ করে প্রতিনিয়ত শিশুর হাসির মত পবিত্র পরিবেশকে প্লাস্টিক দানবের আচ্ছাদনে শ্বাসরুদ্ধ করছি। তাই আজ সময় এসেছে ব্যক্তিগত সুবিধার উর্ধ্বে গিয়ে সার্বজনীন মঙ্গলসাধনের জন্য প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহারকে চিরতরে বিদায় জানাবার। প্লাস্টিকের পরিবেশবান্ধব বিকল্প অনেক রয়েছে আমাদের হাতের কাছে। কাগজ, কাপড়, চট ও কলাগাছের তন্তুর ব্যাগ, শালপাতার ঠোঙা-বাটি-থালা ইত্যাদির ব্যবহার চালু করতে হবে। তবে এখানেও একটু ভাবার বিষয় আছে যে শুধু কাগজনির্মিত পাত্র খাবারের জন্য ব্যবহার করা সুবিধাজনক নয় কারণ খাবারের জলীয় ভাবের জন্য সেই পাত্র কখনোই ব্যবহারের উপযুক্ত নয়। সেক্ষেত্রে কাগজের পাত্রেও পলিইথিলিনের আস্তরণ দেওয়া থাকে। উপরন্তু কাগজ জোড়া দেওয়ার জন্য যে আঠা ব্যবসার করা হয়, তার গন্ধ খাবারে এসে মেশে। পলিইথিলিনের সামান্যতম উপস্থিতির জন্য এই আপাত নিরীহ কাগজের পাত্র বা পেয়ালাও প্লাস্টিক কাপের মতোই জৈবভঙ্গুর নয়। [Hocking,M.B.(1991)]। তাই পৃথিবীকে সম্পূর্ণরূপে প্লাস্টিকমুক্ত করতে আরো বহুদূর পথ হাঁটতে হবে। আইন করে শুধু প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যান করা নয়, প্লাস্টিক শিল্পে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। যেমন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যগুলির মধ্যে হিমাচল প্রদেশে সর্বপ্রথম প্লাস্টিকবিরোধী আইনকে কার্যকর করা হয়। এতে ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থা, স্বনির্ভরগোষ্ঠী, বেকার যুবক যুবতী ও মহিলাগোষ্ঠীর কাছে উপার্জনের দরজা খুলে যাবে। 
তবে সব কিছু আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সচেতনতা দরকার। পরিবেশ পরিছন্নতার ব্যাপারেও সচেতন হতে হবে। আমরা প্রত্যেকে যদি নিজের নিজের বাড়ির চারপাশে পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ও প্লাস্টিক বর্জনের ব্যাপারে উদ্যোগী হই তবে অর্ধেক যুদ্ধ জেতা হয়ে যাবে।






মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল সংখ্যা || ৪ ফাল্গুন ১৪৩০ || ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪