শ্রুতিনাটিকা


বাজার-বিভ্রাট

নী লি মা  চ্যা টা র্জী


(পর্দা উঠল। টিংটং শব্দে কলিং বেল বাজল। বাড়ির গিন্নি এসে দরজা খুলে দিল। বাড়ির কর্তা  দু'হাতে দুটো ব্যাগ নিয়ে ঘরে ঢুকল হাঁপাতে হাঁপাতে।)

কর্তা::: বাব্বাঃ সারাটা রাস্তা কুত্তার মতো জিভ বার করে হ্যা হ্যা করতে করতে এলাম! দুটো ব্যাগ একবার তুলে দ্যাখো তো, তোমার একেবারে ইয়ে বেরিয়ে যাবেখন!

গিন্নি::: আ মরণ! কথার ছিরি দ্যাখো একবার!

কর্তা ::: তা বলব না? একেবারে যেন ফিস্টির লিস্টি করেছেন উনি! ব্যাগ তুলতে গিয়ে পটল তোলার জোগাড়।( মান্না দের অনুকরণে হাঁপাতে হাঁপাতে গান) ব্যাগ তুলতে গিয়ে আমি পটল তুলে ফেলেছি, হায় রে হায় রে ব্যাগ তুলতে গিয়ে আমি পটল তুলে ফেলেছি!! উফ্, মরলুম আমি!

গিন্নি ::: উঁঃ... আবার হালুম হুলুম করে কথা কয়...

কর্তা ::: বলব না ! আইতে যাইতে ভগবান ব্যাটা এমন শালখানাই দিয়েছিলেন আমার পশ্চাদ্দেশে যে আমরণ মনে থাকবে। 

গিন্নি::: কী, কী বললে?

কর্তা ::: আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক আছে। এখন আমরা সেদিনের মতন বাঙাল ঘটির ঝগড়া শুরু করব না। শেষে চিৎকার করে দুজনারই গলা 
ব্যথা হবে, তাপ্পর গার্গল করে মরতে হবে! বরং বাজারের ব্যাগদুটো দ্যাখো...

গিন্নি ::: হুম, তাই দেখি! এটা কী? এ মা এত বড় প্লাস্টিক ব্যাগ ভর্তি  আদা কেন? কত্তগুলো আদা এনেছ গো?

কর্তা::: কেন তুমিই তো বললে এক কিলো আদা আনতে, বললে না?

গিন্নি ::: হায় আমার কপাল! আমি তো বললাম, এক কিলো আতা আনতে! কাল পাশের বাড়ির অতসী বলল খুব মিষ্টি আতা এনেছে ওর বর, তাই তোমাকে বললাম এক কিলো আতা আনতে! আর তুমি শুনলে আদা? এক কিলো আদা দিয়ে আমি এখন ঝোল রাঁধব না অম্বল রাঁধব... ধুর বাবা, কী কালা লোকের পাল্লায় পড়েছি যে! ঘর করা দায়! একটু বুদ্ধিও
নেই ঘটে!

কর্তা ::: পরিষ্কার করে উচ্চারণ করতে পার না? বলবে আ...তা, আ....দা নয়। পান-সুপারি খেয়ে তো জিভের জড়তা এমন...

গিন্নি::: হ্যাঁ এখন তো, যত্ত দোষ নন্দ ঘোষ! এ কী! আবার এত্তগুলো শশা এনেছ? পরশুদিনের আনা শশাই তো রয়ে গেছে ফ্রিজে... আমি কি তোমায় শশা আনতে বলেছিলাম, অ্যাঁ? বলেছিলাম কি?

কর্তা ::: আলবৎ বলেছিলে, রান্নাঘর থেকে বললে তো এক কিলো শশা আনতে....

গিন্নি ::: বাজে বোকো না তো! ( একটু চিন্তা করে) ও... বুঝেছি... আমি বকুলের মাকে তখন বলছিলাম, এ বাবা, তোমার হাতে কতগুলো মশা কামড়েছে... তাই  তুমি বুঝি শুনলে এক 
কিলো শশা!!

কর্তা ::: তা বাজারের লিস্ট বলার সময় বকুলের মায়ের
হাতে মশার কামড়ের কথা আসে কেন শুনি? আর রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে লিস্ট বলো কেন? কাছে এসে বলতে পারো না? যত্ত সব....

গিন্নি ::: ইচ্ছে করে তোমার কানে গরম সীসা ঢেলে দিই!
কালার হদ্দ একটা! কাগজের ঠোঙাতে আবার 
কী আনলে গো?

কর্তা ::: ও... ওটা নিশ্চয়ই মটরডাল হবে...

গিন্নি ::: মটরডাল? এ তো আনতে বলিনি, বললাম 
তো মটরশুঁটি আনতে...

কর্তা ::: এহে, ভুলেই গেলাম ছাই...তাই তো ... তুমি তো মটরশুঁটির কথাই বলেছিলে... বয়স হচ্ছে, বুঝলে গিন্নি! 

গিন্নি::: বয়সের জন্য নয়, তোমার মাথাটা এমনিই 
 লাড্ডু গো... একেবারে ফাঁপা... ঢ্যাবঢ্যাব আওয়াজ হয়! আমার মা বাবা যে কী দেখে বিয়ে দিয়েছিলেন, কে জানে! ও মা, এতগুলো
ভিম বার এনেছ কেন?

কর্তা ::: তুমিই তো বললে পাঁচশ গ্রাম ভিম আনতে....
তা দোকানদার বলল, ভিম পাউডার নেই, এই বারগুলোই নিয়ে যান, এগুলো খুব ভালো হবে...

গিন্নি ::: তোমার যন্ত্রণায় আমি এবার গলায় দড়ি দিয়ে
ঝুলে পড়ব! বললাম পাঁচশ সিম আনতে, তুমি শুনলে ভিম! ও মা গো, আমি যে কী করি এ কালার বাচ্চাকে নিয়ে...

কর্তা ::: ভালো হবে না বলে দিচ্ছি.... আমাকে বলবে 
বল, আবার বাবা- মাকে খামোকা টানছ কেন?

গিন্নি ::: না টানার কী আছে, তোমার মাও তো কানে খাটো ছিলেন! একদিন মাকে বললাম, মা চান করে আসুন, মা বললেন, না না, এই ভর দুপুরে আমি এখন গান গাইব না!

কর্তা ::: হা হা হা ..... তা যাই বল না কেন, মায়ের আমার গানের গলাটা কিন্তু খাসা ছিল!

গিন্নি ::: হুঁ, তা ছিল। আচ্ছা পেঁয়াজ আনোনি, শুধু আলু দেখছি তো...

কর্তা ::: আরে আগে জলখাবার দাও, তারপর রেয়াজে বসব তো....

গিন্নি ::: আরে কচু, পেঁয়াজের কথা বলছি... পেঁ-য়া-জ... রেয়াজ নয়...

কর্তা ::: ( জিভ কেটে) ইস বেমালুম ভুলে গেছি গো, আজকের দিনটা চালিয়ে নাও, কাল এনে দেবখন! কেন যে কিছুই মনে রাখতে পারি না!

গিন্নি ::: এবার থেকে ছাই লিখেই দেব সব...

কর্তা ::: ( অপেক্ষাকৃত মৃদুস্বরে) সে তো পড়তে আবার তোমার কাছেই ফিরে আসতে হবে... যা হাতের ল্যাদা তোমার!!!

গিন্নি ::: কী, কী বললে? 

কর্তা :::: ও সরি, তুমি তো আবার আমার মতন কালা নও, বরং একটু বেশিই শোনো!!! আরে ঝগড়া 
থামিয়ে মাছের ব্যাগটা দেখ! ফুলকপি, বাঁধাকপির সাইজটা দ্যাখো  পেঁয়াজকলির রংটা দ্যাখো, কী নকনকে পালংশাক এনেছি, দেখেছ? তখন থেকে তো আমার পিণ্ডিই চটকে যাচ্ছ!

গিন্নি ::: দেখি ...কী মাছ এনেছ! ও বাবা এ তো তিড়িং 
বিড়িং করছে! কী মাছ কাটিয়ে আনোনি?

কর্তা ::: তুমিই তো চিৎকার করে বললে, কৈ মাছ আনতে, আমি তো স্পষ্ট শুনলাম, এখন মিছে কথা বললে হবে না কিন্তু! আর আজ এত ভীড় ছিল যে, মাছ কাটাতে গেলে আধ ঘণ্টা দাঁড়াতে হত, তাই আর কাটাইনি!

গিন্নি ::: আমি বলেছি? কৈ মাছ আনতে? তুমি কি কানের মাথাটা একেবারেই খেয়েছ? শুধুই কান শুনতে ধান শোনো দেখি! আমি চিৎকার করে তখন বললাম, বাজারের ব্যাগটা কই রেখেছ, অমনি তুমি শুনলে , তোমায় কৈ মাছ আনতে
বলছি! হে ভগবান, আমায় তুলে নাও! ইচ্ছে করছে এই জ্যান্ত মাছগুলোকে তোমার 
প্যান্টুলুনের মধ্যে ছেড়ে দিই!

কর্তা ::: ওরে বাবা, আমার ধন সম্পত্তি সব খোয়া যাবে গো!

গিন্নি ::: যা....ক , বাঁচি আমি তাহলে! এই ঘোড়ার ডিমের ভুলভাল বাজার করতে এত সময় লাগালে?

কর্তা ::: ঐ যে তুমি বললে তোমার বান্ধবী নলিনীর খোঁজটা আনতে, তাই তো পথে ওর বাড়ি হয়েই এলাম... বরটা হঠাৎ মরে যাওয়ায় বেচারি খুবই দুঃখী হয়ে আছে গো... চেহারা দেখলে চোখে জল এসে যায়!

গিন্নি ::: উঁ.... ঢং দেখে বাঁচি না আর! তা আমি কখন তোমায় বললাম নলিনীর খোঁজ আনতে, দু'বেলা ফোনেই তো ওর সাথে আমার কথা হয়! আমি বলেছিলাম, সদানন্দের দোকানে ভালো নলেন গুড় এসেছে কিনা তার খোঁজ নিতে। আর তুমি ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে আমার বন্ধু নলিনীর বাড়ি চলে গেলে? রসের নাগর!

কর্তা::: ( জিভ কেটে) ধুর কচু আজ তো দেখি সবই গোলমাল হয়ে গেল! আচ্ছা, আচ্ছা, এবার মাথা ঠাণ্ডা করে দ্যাখো তোমার পছন্দের ক্রিমরোল আছে ঐ বড় প্যাকেটে! তুমি তো বললে চার পাঁচটা আনতে, আমি একেবারে দশটার প্যাকেটই এনেছি.... খেয়ে দ্যাখো। একেবারে ফ্রেশ ! তুমি তো ফরমাশ করেই খালাস.... কয় দোকান ঘুরতে হল জানো?

গিন্নি::: ( অবাক হয়ে, চোখ গোল করে বলল) ও মা আমি কখন তোমায় ক্রিমরোল আনতে বললাম!! ( একটু ভেবে , তারপর খিলখিলিয়ে হেসে বলল) আমি তো তোমায় চার পাঁচটা 
কাঁকরোল আনতে বলেছিলাম, ডালের সাথে ভাজা করে দিতাম আজ! ( আবার হাসি) যাকগে,  বিকেলে চায়ের সাথে আজ 
ক্রিমরোলই খামু!

কর্তা ::: উফ্, বাঁচলুম  বাবা ! গোমড়া মুখে একটু হাসি 
তো ফুটল! আর একটা জিনিস তো দেখলেই
না....ঐ যে টেবিলে রেখেছি... দ্যাখো, তোমার কথামত কেমন এ ক্লাস গোলাপজাম এনেছি!

গিন্নি ::: ( একবার গোলাপজামের ভাঁড়টা দেখল, তারপর আবারও খিলখিল করে হেসে উঠল) 
ওরে আমার ক্যাবলাকান্ত রে, আরে  আমি তো গোলাপজাম ফল খাওয়ার গল্প করছিলাম বকুলের মায়ের সাথে .... ছোটবেলায় খুব খেতাম.... বাড়িতে গাছ ছিল তো!!! আর তুমি ভাবলে তোমায় গোলাপজাম মিষ্টি আনতে বলেছি!( আবারও হাসি) তবে তোমার এই ভুলটাও  আমি মাপ করে দিলাম.... কারণ গোলাবজামুন খেতে আমি দ্দারুণ ভালোবাসি গো!

কর্তা ::: যাক বাবা, আমার ভুলভাল বাজার সত্ত্বেও গিন্নি আমার হেসেছেন। পরানে আমার বসন্তের বাতাস বইছে। দাঁড়াও, দাঁড়াও... আমার এখন একটা প্রেমের গান পাচ্ছে গো!( মিষ্টি করে গান )
“ ভালোবেসে সখী          
            নিভৃত যতনে , আমার নামটি লিখ তোমার
            মনের মন্দিরে...”

গিন্নি :::(গিন্নির হাসিহাসি গদগদ মুখ) আ মোলো যা, বুড়ো বয়সে ঢং দেখে মরে যাই আর কী!!! এই নাও, বড় করে হাঁ করো দেখি, গোলাবজামুন খাও.....

                         যবনিকা পতন




সংলাপী সংলাপ

মৌ সু মী  পা ল 


(ক) :  অলি...গলি...চলি... হোলি... দলি... ছলি...আর কি ... আর কি ...
(খ) : কাব্যি যদি হৃদয়ে দোলে....চা কি তবে রসাতলে?.... তোমায় কি যে বলি ...
(ক) : হ্যাঁ ঠিক.... বলি!
(খ) :  কি বলি?
(ক) : ওই যে উপরে অলি গলি চলি ছলি...
তার সাথে তোমার বলি ...
(খ) : ( অবাক হয়ে ) আমার বলি? পুজোর মানত পাঁঠা আমি?...
(ক) : (জিভ কেটে ).... কি বলো বৌ ... বসন্তে তুমিই যে দামি! মেয়ে হলে পাঁঠা কেন? প্যাঁ...থুরি...ওটা হবে সেটাই জানি... 
(খ) : ভালো হবে না বলে দিলাম ... চা পাবে না নিয়ে গেলাম।
(ক) : (চা নিয়ে) আহা গিন্নি...শব্দ চায়ে জমিয়ে আড্ডা ...নইলে বৃথাই যাবে যে প্রানটা।
(খ) : কতো ঢং...আহা মরি!
(ক) : দাও গো সখি শব্দ কিছু... সংলাপেতে পদ্য ভরি।
(খ) : আমি কি একটা শব্দ ভাঁড়ার? নিতে পারো ইচ্ছেমতো? যেথায় যতো? 
(ক) : জানি রে বৌ...তোমার কাছেই শব্দ আছে মনের মতো।
(খ) : পাগলামী টা রাখো এবার...ঢের হয়েছে, চলি!
(ক) : মিনতি করি... শব্দে কাঁচা... তাই ... শব্দ যাও বলি।
(খ) : আঃ মোলো!
(ক) : ওটা কি ভালো শব্দ হলো?
(খ) : লেখো না বাপু ...নদী...পাহাড়... আকাশ...বাতাস...
(ক) : এখানে আবার বাপু কোথায়? সখি গো...অভয় দিলে তোমার জন্য লিখতে পারি এক মধুমাস।
(খ) : দেখা গেছে...ওই প্রথম প্রথম... তারপরে সব ভোঁ কাট্টা...
(ক) : এবার কিন্তু রেগে যাচ্ছি...দেব গাট্টা...
(খ) : মুরোদ তোমার ভালোই জানি, বাচ্চা না কি?
(ক) : তবে তো সব জেনেই গেছো এখন দেখি!
(খ) : আচ্ছা বেশ!
(ক) : ঝগড়া শেষ। (হাতটা ধরে)...সাব্বাস সাব্বাস!!
(খ ) : আচ্ছা বেশ! ওদিকে এঁটো বাসন রাশ।
(ক) : তাতে সখি হয়েছে কি? বাতাসে প্রেমের ফাগুন দেখি।
(খ) : তাই না কি? ঘরের কাজ ফেলে এখন আকাশ দেখি... বাতাস দেখি...ঘরে ক'টা চাকর দেখি?
(খ) : পরে সে সব হবে কাজ! বৌ রে আজ! এসেছে শব্দরাজ...
(খ) : ধান্দাবাজ!!
(ক) : ধান্দাবাজ? ...বলতে পারো এমন কথা ? ...
হরি নারায়ন! হরি হরি!
(খ) : অনেক হয়েছে ...মরি মরি ...।
(ক): তবে এসো প্রিয়া...?এমন দিনে এসো এবার ভাব করি- 
(খ) : হা হা হা হা.. ‌হৃদয়ে থাকুক ফাগুন ভরি।
(ক) : সংলাপ টি হলো শেষ 
(খ) : সবাই তোমরা থেকো বেশ।।




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল সংখ্যা || ৪ ফাল্গুন ১৪৩০ || ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪