পত্র সাহিত্য
ফার্স্ট ভ্যালেন্টাইন ডে
তু লি মু খা র্জি চ ক্র ব র্তী
লি,
তোমার থেকে সহস্র যোজন দূরে বসে তোমাকেই লিখছি। উত্তর পাব না জেনেই লেখা, আসলে এ চিঠি তোমাকে লেখা অন্য চিঠিদের ভিড়ে সংখ্যা বাড়িয়ে থেকে যাবে আমার মন তিজোরী-তে।
ভ্যালেন্টাইন ডে নিয়ে সারা বিশ্বে এত উৎসাহ উত্তেজনা দেখে মনে পড়ে গেল কবিতায় আমাদের প্রথম যোগাযোগ। চিনতাম না কেউই কাউকে কিন্তু কবিতায় ছুঁয়ে থাকতে থাকতে কখন যে মনের খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলাম দুজনেই দুজনের সেই দিন তারিখ আর মনে রাখি নি। তোমার লিখে রাখা অক্ষর রঙিন প্রজাপতি হয়ে স্পর্শ করে যায় আমাকে। উত্তরের অপেক্ষায় থাকি আরেকটা রঙিন প্রজাপতি এসে বসার। তুমিও কি এভাবেই ভাবো? জানি না... হয়তো সবটাই আমার একতরফা কল্পনা।
কল্পনায় আমি এঁকে যাই তোমার মুখ, দীঘল ভুরু, টিকালো নাক আর কমলালেবু কোয়া ঠোঁটে ছুঁয়ে টোল আর চিবুকে ছোট্ট তিল...
কোনও একদিন ঠিক ছুঁয়ে দেব তোমায়, সত্যি সত্যি.... দূরত্বের সাঁকো পেরিয়ে
সেইদিন... সেইদিনই হবে আমাদের ফার্স্ট ভ্যালেন্টাইন ডে....
অপেক্ষার গাছ রোদ মেখে দাঁড়িয়ে থাক।
দেখা হবে ঠিক আমাদের.....
তোমার
ঋ
শেষ চিঠি
সু নৃ তা রা য় চৌ ধু রী
তরুতল
প্রথম বসন্ত
স্নেহের কিশলয়,
আমার জীবনের শেষ চিঠি খানি তোমায় লিখে রেখে যাচ্ছি। আজ এই পত্রে দেবো পত্রে পত্রে কত গোপন কথা, আপন কথা নিহিত থাকে, তার পরিচয়।
বিগত বসন্তে যেদিন দখিন হাওয়ায় উতলা হয়ে বসন্তদূত গেয়ে উঠলো তার প্রথম কুহুতান, সেই পঞ্চমে বাঁধা আলাপ শুনে বৃক্ষশাখা আবৃত করে দলে দলে আবির্ভূত হলাম আমরা। সেই সসঙ্কোচ, সলজ্জ, আরক্তিম আত্মপ্রকাশে বুকের মাঝে ঝিরিঝিরি কম্পন এখনও মনে পড়ে। সঙ্গে করে এনেছিলাম পুষ্পমঞ্জরীকে। সবার চোখে দেখেছিলাম সবিস্ময় মুগ্ধতা।
ধীরে ধীরে বিকশিত হলাম, হয়ে উঠলাম সতেজ, সবুজ। মুগ্ধ নয়ন এখন স্নিগ্ধও। বৃক্ষের সুচারু শোভায় আমরা তখন গর্বিত। মঞ্জরীরা যখন স্তবকে স্তবকে দল মেলে দাঁড়ালো, আহা! কী তাদের সৌন্দর্য! আমরা, পাতারা তাদের ঘিরে রাখতাম সযত্নে। কত রঙিন প্রজাপতির আনাগোনা, কত ভ্রমরের স্তাবকতা!
শুধু কি ফুলের পাহারা? আমাদের দায়িত্ব তখন বৃক্ষকে আর সেই সঙ্গে পরিবেশকে রক্ষা করা। আমরা সূর্যের আলোটিকে আমাদের সবুজ কণায় ধরে, হাওয়া থেকে ক্ষতিকারক কার্বন ডাইঅক্সাইড নিয়ে শিকড় বেয়ে আসা জলের উপকরণে তৈরি করলাম গাছের খাদ্য। তাতে বাঁচল জীবজগত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে। হাওয়ায় ছেড়ে দিলাম বিশুদ্ধ অম্লজান। প্রকৃতি হলো প্রাণবায়ুপূর্ণ ছায়াশীতল।
হাসিমুখে আনন্দে কাটছিল দিনগুলো। প্রথম দুঃখ এলো যখন ফুলেরা বৃক্ষ জীবন ত্যাগ করে ঝরে ঝরে পড়তে লাগলো। ওমা! তখন দেখি কচি কচি ফল এসেছে গাছে! এবার শুরু হলো পাখিদের উৎসব। কিন্তু হায়! ফলের জীবনও ক্ষণস্থায়ী, কিছু অকালে ঝরে গেল, কিছু পাকা ফল পাখিতে খেলো, বেশিরভাগ নিয়ে গেল মানুষ।
ততদিনে গ্রীষ্ম এসেছে। প্রখর তাপে নিজেদেরকে মেলে ধরে ধরণীতল ছায়াশীতল করে রেখেছি, ক্লান্ত রাখাল বালকের মাথায় ছাতা ধরেছি।
একদিন প্রবল রোদের তেজ, সেদিন যেন আমরাও আর সহ্য করতে পারছি না, ক্লান্তিতে ঝিমিয়ে পড়ছিলাম, পাখিরাও কিচিরমিচির ছেড়ে নিশ্চুপ, হঠাৎ বিকেলের দিকে আকাশ কালো এলো।মেঘে মেঘে বিদ্যুতের ঝলকানি, বজ্রগর্জনকে সঙ্গী করে ধেয়ে এলো ঝড়। প্রচণ্ড আন্দোলনে শাখাচ্যুত হলো কত পাতা, কত প্রশাখা হলো বৃক্ষচ্যুত! এর মধ্যে নামলো প্রবল বৃষ্টি। হঠাৎ ক্ষীণ কান্নার আওয়াজ শুনে দেখি, বৃক্ষ কোটরে তিনটি পক্ষীশাবক! আহারে! মা হয়তো বেরিয়েছে খাদ্যের সন্ধানে, ফিরতে পারেনি ঝড়ের দাপটে, বেচারারা ভয়ে, খিদেয়, শীতে অস্থির! আমরা ঘন হয়ে দাঁড়ালাম কোটরের মুখে, যেন ভিজে না যায় ওরা। কিছুক্ষণ পর ঝড়বৃষ্টি থেমে গেলে ওদের বাবা-মা ফিরে এলো। শিশুদের নিরাপদ দেখে কী উল্লাস তাদের! ছানারাও খুশি।
এমনি অনেক ঝড় সহ্য করেছি, জানো? তারপর যখন বর্ষা এলো! ওঃ! সে কি বৃষ্টি! দিন নেই রাত নেই!আমরা তো ভিজে ভিজে সারা! একদিন এক দুঃখী বুড়ি বৃষ্টিতে আর তো চলতে পারে না! আমাদের গাছের তলায় আশ্রয় নিলো। আমরা তাকেও ভিজতে দিইনি একটুও। জল লাগেনি তার মাথায়।
তারপর তো একদিন মেঘ সরে গিয়ে ঝকঝকে নীল আকাশ দেখা গেল। আমাদের ধৌত শ্যামল অঙ্গে তখন সোনালী রোদের ছোঁয়া। আবার ঝিরঝিরে বাতাসে তিরতিরে কাঁপন।মাটি তখনও ভেজা। গাছ তো শিকড় দিয়ে টেনে সেই জল পৌঁছে দিচ্ছে আমাদের কাছে, আর আমরা তা বাষ্প করে হাওয়ায় ছেড়ে দিচ্ছি। ধীরে ধীরে মাটি এলো শুকিয়ে। হাওয়ায় শিরশিরে ভাব। বুকের ভেতর কেমন যেন করে উঠল। না, আর তো বাষ্পমোচন করা চলবে না! গাছ তো তবে শুকিয়ে যাবে! ইতিমধ্যে বড়ো ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, আমার সবুজের মধ্যে হালকা হলুদ ছোপ, বৃন্তও শিথিল হয়ে এসেছে। বুঝলাম আমার সময় শেষ। নীরবে অপেক্ষায় আছি শেষ দিনের জন্য। উত্তর থেকে শীতল বাতাস এসে কাঁপিয়ে দিল। শাখা আঁকড়ে থাকার শেষ চেষ্টা করে একসময় টুপ করে ঝরে গেলাম অন্য পাতাদের সঙ্গে। এবার অপেক্ষা করছি, কবে ধুলোর সঙ্গে মিশে ধুলো হয়ে যাব।তার আগে এই চিঠি লিখে গেলাম।
এবার আমার গর্বের, আমার অভিমানের কিছু কথা বলি। আমরা যদি না থাকতাম, গাছ কি এত সুন্দর হতো? ফুল ফল তো ক্ষণস্থায়ী, আমরাই তো গাছের শোভা, তাই কিনা? গাছের ছায়া মানে তো আমাদের ছায়া, তাই তো?অথচ দেখো, পতঙ্গ ফুলে আকৃষ্ট, পাখিরা ফলে।কবি শিল্পী দেখেন ফুলের শোভা, ভোগী কদর করেন ফলের, বিষয়ী বিচার করেন কোন গাছের গুঁড়ি কত মজবুত, কত কাষ্ঠল, পাতার কদর কেউ বোঝে না। আমরা সংখ্যায় অনেক তো, তাই হয়তো!
তুমি নতুন এসেছ পৃথিবীতে, বয়ে এনেছ নন্দনের বার্তা। পরিণত হও।যতদিন থাকবে, ততদিন তোমার দায়িত্ব পালন করো। তোমার পত্রজন্ম সার্থক হবে তাতেই। সর্বভূতের ক্ষুণ্ণিবৃত্তির ভার যে তোমার ওপরেই ন্যস্ত! উৎপাদিত খাদ্য দিয়ে রক্ষা করো প্রাণকে, প্রশমিত করো তাপকে, প্রাণবায়ু দাও পরিবেশকে। কীটদষ্ট হলেও, ব্যথিত হলেও আক্ষেপ কোরো না। ঈশ্বর তোমাকে সহ্যক্ষমতা দিন, তাঁর নন্দনের আশীর্বাদ ঝরে পড়ুক তোমার ওপর, এই প্রার্থনা করি। শুভেচ্ছান্তে
ইতি
ঝরাপাতা
কিশলয়,
ঠিকানা-তরুশাখা,
পর্ণমোচী বন।
নীস্টার থেকে তিস্তা
সা য় ন্ত ন ধ র
প্রিয় বন্ধু সৃজন,
আজ তোর কথা খুব মনে পড়ছিলো। ফোন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগের কোন উপায় নেই কারন নেটওয়ার্কের আর কোন অস্তিত্ব নেই। আমি জানি না নীস্টারের তীর থেকে এ চিঠি আদৌ তিস্তা পাড়ে পৌঁছবে কিনা, আর পৌঁছলেও কত দিনে তাও জানা নেই। বাবা মা এর সাথে কথা হয়েছিল যখন কিয়েভের সেনা বাঙ্কারে ছিলাম। ওরা কথা বলিয়ে দিয়েছিল। তারপর থেকে আর কারোর সাথেই যোগাযোগ নেই। জানিনা এখানকার যুদ্ধবিধ্বস্ত খবর কতটা দেখাচ্ছে দেশে, তবে বেশি কিছু না দেখানোই ভালো, স্বজনদের থেকে যাঁরা দূরে আছেন তাঁদের চিন্তা এতে বাড়বে বই কমবে না। তোকে আমার বর্তমান অবস্থা জানাচ্ছি কারন কিছু কিছু কথা আছে যা বাবা মা কে নয়, প্রিয় বন্ধুকে বলতে হয়। দেখ আমরা একসাথে পড়তাম। একসাথে সর্বোভারতীয় নিট পরীক্ষায় বসেছিলাম। প্রথমবারের প্রচেষ্টায় উতরে গেলেও খুব ভালো ফল হলো না। তুই বললি আরও ভালো করে প্রিপারেশন নিয়ে পরের বছর পরীক্ষা দিবি। আমার ধৈর্য্য একটু কম বরাবরই। চলে এলাম ইউক্রেনে। ভর্তি হলাম বোগোম্লিটস ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে। তোর সাথে যোগাযোগ ক্ষীণ হলো। তবে শুনেছি পরেরবার তুইও ভালো রেজাল্ট করে নর্থবেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিস। তোর এখন থার্ড ইয়ার আর আমার ফোর্থ ইয়ার। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি তাতে ডিগ্রি দূরের বিষয়, প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারি কিনা সেটাই ভাবছি আর লিখছি। এখানে অনেক ভারতীয় শিক্ষার্থী পড়তে আসে। যারা নতুন এসেছে তারা ফেব্রুয়ারিতে যখন সতর্কতা জারি হয়েছিল তখনই ফিরে গেছে। আমরা আবার এই সতর্ক বার্তার সাথে পরিচিত হয়ে গেছিলাম। কিছু হয় না, এমন ভাবনায় পেয়ে বসেছিল। হবে নাই বা কেন? মনে আছে সেই রাখাল বালকের কথা? বাঘ এসেছে বাঁচাও বলে হাঁক দিত। আর যেদিন সত্যি বাঘ এলো সেদিন কেউ তাকে বাঁচাতে এলো না। কিয়েভ তো নীপার নদীর তীরে, তাহলে আমি নীস্টারের কথা কেন বললাম সেটা বলি। আমরা জনা পঁচিশেক বন্ধু মিলে হাঁটতে শুরু করি চারদিন আগে, কিয়েভ থেকে দক্ষিণ পশ্চিমে রোমানিয়া সীমান্তের দিকে। প্রায় ৪২১ কিমি পথ অতিক্রম করে নীস্টার নদীর তীরে জ্ভানেটস গ্রামে এসে পৌঁছেছি। ছোট্ট গ্রাম। তরঙ্গায়িত ভূমিভাগ ঢেকে রয়েছে সাদা তুষারে। এখানে যুদ্ধের প্রভাব কম। আমাদের জন্য কিছুটা নিরাপদ এখনও। একটানা এতদূর হেঁটে আমাদের শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। একদিন তাই বিশ্রাম না নিলেই নয়। আর মাত্র ৯০ কিমি চলতে পারলে পৌঁছে যাব সিরেট শহরে যা রোমানিয়ায় অবস্থিত। রোমানিয়া মুক্ত দেশ, নিশ্চয়ই কিছু ব্যবস্থা হবে বুদাপেস্ট পৌঁছানোর। তোর ওখানে এখন কোকিল পাপিয়া কুহুতান ধরে, কর্কশ অথচ সুরসরগমে ডেকে যায় কাঠঠোকরারা। তোদের বাড়ির সেই চেরী গাছটা নিশ্চয়ই ভরে আছে গোলাপি সুগন্ধি ফুলে। পলাশ, রুদ্রপলাশেরা আগুন রঙে রাঙিয়ে রেখেছে অ্যালির দুই পাশ। জারুলের তামাটে পাতায় বেগুনি ফুলের আসার নিমন্ত্রণলেখা। কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, গুলমোহর, রেনিজেরা আর অমলতাসেরা দোলের রঙিন আবহকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুতি সারছে নিশ্চয়ই। আর এদিকে এখানে এখনও শীত কাটেনি। মাইনাস তাপমাত্রায় বরফের সাদা চাদর নোংরা হচ্ছে সশস্ত্রসেনার ভারী বুটের চাপে। শীতঘুমে ঘুমিয়ে থাকা পাতাঝরা গাছেরা ঘুমের মধ্যেই ভেঙে খানখান হচ্ছে এলোপাথাড়ি মিসাইল-রকেট হানায়। দূর থেকে বরফ আর ছাই চেনা দুষ্কর। সাজানো সুন্দর দেশটি এখন যেনো ধ্বংসস্তূপ। দেশের উত্তর ভাগটা নিরপদ নয় বলে পোল্যান্ড না গিয়ে রোমানিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যেটা বলছিলাম, সেদিন তোর কথা শুনলে একটা বছর হয়তো নষ্ট হতো, পুরো জীবনটা অনিশ্চয়তার দিকে চলে যেত না। তবে ইউক্রেনের জন্য আমার কষ্ট হয় না। কষ্ট হয় এখানকার নাগরিকদের জন্য, আমাদের মত বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ছাত্র ছাত্রীদের জন্য। ইউক্রেনের ভাগ্য এমনটাই হওয়ার ছিল। একতাই বল এই চিরন্তন সত্যকে অস্বীকার করে জাতির ভিত্তিতে সাবেক সোভিয়েট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এমনই দুর্বল হয়ে পড়েছিল এ দেশ। সবাই হয়তো মানবাধিকারের প্রশ্ন তুলে রাশিয়াকে বিঁধছে। কিন্তু মূল যুদ্ধাপরাধী তো পৃথিবীর দাদারা। যারা কিনা বাতিল কাগজের মত ইউক্রেনীয়দের যুদ্ধের আগুনে পুড়িয়ে দূরে বসে আদুরে উত্তাপ নিচ্ছে। ওদের আগ্রাসন ভীত করেছে রাশিয়াকে। আর ফলস্বরূপ যুদ্ধ। সবকিছুর উর্ধ্বে রাজনীতি, তার মাপকাঠি কখনো অর্থনীতি, কখনো ধর্ম, কখনো বা রেস বা জাতি। গায়ের বর্ণ নির্ধারণ করে কে রিফিউজি আর কে অতিথি। আমরা কেন হাঁটছি জানিস? কারণ আমরা শ্বেতাঙ্গ নই। ওদের জন্য ট্রেনে জায়গা রয়েছে, বাস রয়েছে। আমাদের রয়েছে জঙ্গল পথে লুকিয়ে চুরিয়ে ৫০০-৬০০ কিমি একনাগাড়ে হেঁটে পথচলা। তারপর সীমান্তে পৌঁছে সেনাবাহিনীর লাথি, লঙ্কার গুঁড়ো। সেনাবাহিনী মানে কিন্তু রুশ সেনা নয়। ইউক্রেনের সেনা। সত্যি কি আশ্চর্য ঘটনা না? এরাই বলে মানবাধিকারের কথা। বলবে না কেন? সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান বা ভিয়েতনামে তো মানবাধিকার রক্ষা করছিল সেই দাদারাই। ভারত এসবে না জড়িয়ে ভালো করেছে। স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত জোট নিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাসী, মাঝে এই নীতির তেমন প্রয়োজন না হলেও এই নীতিই শ্রেষ্ঠ। যাই হোক অনেক ভারী ভারী কথা লিখে ফেললাম। এখানে এখন সন্ধ্যা হচ্ছে। নীস্টারের জলে ডুবন্ত সূর্যের প্রতিবিম্ব তিরতির করে কাঁপছে। তোদের ওখানে রাত ঘনাচ্ছে। সাড়ে তিন ঘন্টার পার্থক্যে এখানেও চাঁদ উঠবে। বাঁকা চাঁদ খেলা করবে তিস্তা - নীস্টারের জলে। কাল ভোরে উঠে শেষ ল্যাপের প্রস্তুতি। আজ সব তোকে জানাতে পেরে হালকা অনুভব করছি। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ধনধান্যপুষ্পভরা গানটির ওই লাইনটির মর্মার্থ আজ বুঝতে পারছি রে। এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি। সত্যি প্রতিজ্ঞা করছি যদি স্বদেশে ফিরতে পারি, তবে না হতে পারি ডাক্তার তবু দেশ ছাড়বোনা কোন মূল্যে। চিঠিটা পোস্ট করে আসি, করতেই হবে। কারন আমি ফিরি বা না ফিরি, আমার শেষ উপলব্ধি যেন আমার প্রিয় বন্ধুর কাছে পৌঁছায়। ভালো থাকিস।
স্বপ্ন অধরা থাক, প্রাণেতে চাই,
আর নিরাপদে ঘরে আজ ফিরতে চাই
যুদ্ধ দামামা বাজে, আকাশে মেঘ
তাই,হাজার মাইল পথ হাঁটতে চাই।
হায়, কবে হবে সেই মধুর ক্ষণ
ছিলাম আগে তুই আমি যেমন।
আমি পৌঁছে যাবো কবে সেই শহর-
যদি দেখা হয়ে যায় তোর আমার।
ইতি,
তোর শুভস্মিত।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন