রম্য রচনা
মা সরস্বতী আর একটি রীতি
অ শো ক বো স
অশোক- মা তোমার পূজোটা এবার কবে গো?
মা সরস্বতী- কী দরকার জেনে?
অশোক- কিছুনা, অনলি ফর জেনারেল নলেজ।
মা সরস্বতী- জেনারেল নলেজ!! কোনও চাকরির পরীক্ষায়, এবারের সরস্বতী পুজো কবে, এরকম প্রশ্ন কখনও এসেছে বলেতো শুনিনি।
অশোক- না আসলে..
মা সরস্বতী- আসলে টা কী...আচ্ছা মিঠুনের বাংলা সিনেমার একটা ডায়ালগ বলতো?
অশোক প্রসঙ্গটা বুঝতে না পারলেও বলল- "মারব এখানে, লাশ পরবে শ্মশানে"
মা সরস্বতী- এবার প্রসেনজিৎ ...
অশোকের আসলটা মনে ছিলনা তাই মীরদার করা রিমেকটা বলল- আআআআমি চোর নই..
এরপর চিরঞ্জিতের "পাগলা", শাহরুখ খানের "কিকিকিকি কিরণ" সবকটা শোনার পর মা বললেন- এবার তুই আমার অঞ্জলীর মন্ত্রটা বল দেখি!
অশোক এবার হোঁচট খেল, না রাস্তার গলিতে নয়, স্মৃতির গলিতে....
মা সরস্বতী- তাহলে দেখ, এই ডায়ালগগুলো একবার দুবার শুনেই তোর মুখস্ত। কিন্তু প্রত্যেক বছর অঞ্জলী দিয়েও তোর অঞ্জলীর মন্ত্র মুখস্ত নয়, তার মানে তুই আমার পূজোটাকে কিরকম গুরুত্ব দিস বুঝেছিস তো?
অশোক- না তা নয়. .
মা সরস্বতী- তা নয় আবার কি? আরে বাবা তুই মায়ের চোখে ফাঁকি দিবি....তোরা হয়তো ভাবিস, মা কিছু জিজ্ঞেস করলে, মাকে যা কিছু বুঝিয়ে দিলি, আর মা তোদের কথা মেনে নিল! আরে না। মা সব কিছু বোঝে, কিন্তু তোদের বুঝতে দেয়না।
অশোক- কিন্তু মা, মানে...
সরস্বতী- হুমমম..এইদিন তো তোদের বেঙ্গলী ভ্যালেন্টাইন ডে, তাইনা? তাই খবর নিচ্ছিলি, সেটা কবে.... তাকে নিয়ে বেড়তে হবে যে,
গোলাপ, কার্ড আর গিফ্টের আয়োজন করতে হবে...
উপায় না দেখে অশোক এবার বলেই ফেলল- না মা, সে জন্য নয়। মানে, আমি কুল খেতে খুব ভালবাসি। কিন্তু তোমার পুজো না হলে তো আর কুল খেতে পারবনা, তাই..
মা সরস্বতী- দেখো ছেলের কাণ্ড। যাইহোক, একটা কথা জেনে নে, আমার পুজোর আগে যে কুল খাওয়া যাবেনা, এটা আমি কখনও বলিনি। এটা তোদের কেউ প্রথম বলেছে, তারপর তোদের মুখে মুখেই ছড়িয়েছে...
অশোক- এটা তাহলে তোমার নির্দেশ নয়!!!!
মা সরস্বতী- না। তোদের ফেসবুকে যেমন একটা মিথ্যা খবর ভাইরাল হয়ে যায়, তারপরতো সেটা নিয়ে দাঙ্গা পর্যন্ত বেঁধে যায়, এটাও তেমনি একটি মিথ্যে রটনা।
এবার একটু থেমে মা সরস্বতী বলল- আচ্ছা তুই বল, এরকম কখনও হয়েছে, বাড়ীতে কোনও খাবার এসেছে আর তোর মা বলেছে, আগে আমি খাব, তারপর তোরা?
অশোক- কখনই না। মা আগে আমাদের খাওয়ায় তারপর নিজে..
মা সরস্বতী- আমিও তো তোদের মা, আমি কি কখনও বলতে পারি, আমি আগে কুল খাবো, তারপর আমার ছেলেমেয়েরা খাবে...???
কিছু বুঝলেন ?
প্র দী প দে
কি ফুরফুরে হাওয়া বইছে আজ!
শীতকালে বসন্তকাল…
পাঞ্জাবী পড়ে আমাকে যা দেখতে লাগছে না!
একেবারে স্মার্ট যুবক
যদিও বয়স একটু হয়েছে
ওটা কিছুই নয়…
আমি জোয়ান!
কিছু বুঝলেন?
আরো বিশদে বুঝিয়ে বলছি-
ব্যপারটা কি হচ্ছে…
দেখলাম দূরে একটি মেয়ে লেকের ধারের বেঞ্চে বসে সেলফি তুলছে- আমি পরিস্কার দেখতে পারছি মেয়েটির পরিধান স্বল্পবেশে ফুটে উঠেছে তার দেহ সৌধের এক রমনীয় আহ্বান -ফুটন্ত গোলাপের গন্ধ এতটাই যে আমি একটা সিগারেটের মুখে আগুন ধরিয়ে এগিয়ে চললেম ওর দিকে…
মেয়েটির যেন খেয়ালই নেই আমি ওকে দেখতে দেখতে ওর কাছে চলে এলাম। হয়তোবা পাত্তাই দিচ্ছে না। নিজের পোজ দিতেই এতটাই ব্যস্ত যে কিছুই তার খেয়ালে নেই, ব্যস্ত সেলফি তোলা নিয়ে তার মোবাইলে।
আমি পাশে বসে পড়লাম। ফুরফুরে হাওয়ায় লেকের জল বইছে। নীলাভ টপ আর হাফ জীন্স পরিহিতা মহিলার থাই থেকে পা অনাবৃত। আর উপরের টপ এতই ছোট্ট যে নামমাত্র সিল্কের কাপড়ে উপচে পড়ছে ওর যৌবনকাল। আমার চোখ প্রথমেই ওর বুকে গিয়ে ধাক্কা খেল- মেয়েটি দেখে ফেললে যে আমি দেখছি। ভাবলেশহীন ভাবে মেয়েটি হাসলো আমাকে ফাঁসাতে।
আর আমিও ফাঁসলুম। দেখিনা একটু মজা করি এই শীতবসন্তে,
-আমি নীরোগ কর। এই একটু আলাপ করতে এলাম। দেখলাম একা একা ফোটো শুট করছো, ভাবলেম এই অধম যদি কোন তোমার সাহায্যে আসে।
একগাল হাসি। সারা শরীর দুলে উঠলো। ঠোঁট দুটি ফাকঁ হয়ে কামনার বসন্তবৌরি হয়ে উড়ে এল আমার চোখে। প্রথমেই বলেছি আমি বয়সে যাই হই, মনে আর শরীরে এক্কেবারে জোয়ান।
কতোবার এই কথাটি বলবো?
যে আমি বুড়ো নয় জোয়ান!
মেয়েটি আলাপ করতে চলে এল,
-আপনি বেশ রোমান্টিক তো? আমি এরকমই চাই। দেখবেন যখন ভালো করেই দেখুন। লুকিয়ে চুরিয়ে একদম ভালো নয়। আপনি যে পাশে বসে আমার সব দেখছিলেন তাতে আমি কিন্তু বেশ এনজয়'ই করলাম। আমি কত সুন্দরী বলুন তো?
-সত্যি খুব লোভনীয়...
-ওহঃ সুইট ডারলিং
-তাহলে আমাকে 'আপনি' করে কেন বলছো? আমি তো তোমায় প্রথমেই নিজের মনে করে 'তুমি' ই বলেছি। বলিনি ?
-একদম একদম,
বলতে বলতে মেয়েটি আমার পাশে সরে এল, একেবারে গায়ে ঘেঁষে বসে মুচকি হেসে ফেললো।
আমার অবস্থা খারাপ। আমি শীতকালীন বসন্তের গরম দাবদাহে এবার পুড়ে যাবো মনে হয়। শরীর জাগছে! আগেই বলেছি না বয়স যাইহোক আমি আসলে জোয়ান, ক'বার এক কথা বলবো?
বাপরে বাপ!
মেয়েটি আমাকে তাতাচ্ছে- মনে হয় ওর আমাকে খুব ভালো লেগে গেছে। লাগবে না কেন আমি এখনও কত্ত সক্ষম জোয়ান পুরুষ? বোঝেন না? না কি?
এবার আমি লাইসেন্স পেয়ে গেছি। ঘুরিয়ে খেলতে হবে তারপর সপাটে ছক্কা হাঁকিয়ে তুলে নিয়ে যাবো … রেস্টুরেন্ট হয়ে, ভাড়া করে ঘরে নিয়ে গিয়ে... আহা...
কি মজাই না হবে…?
ভাবতে পারেন?
এবার একবার মনে মনে ভাবুন!
-তোমার নামটা কিন্তু এখনও বলোনি ...? আমার নাম কিন্তু আগেই বলে দিয়েছি - নীরোগ কর।
-ওমাঃ ছিঃ ছিঃ কি লজ্জার কথা? আমার নামই বলিনি? ছিঃ ছিঃ…
বলেই এক বেল্লেল্লেপনা হাসি হেসে ছোট জামা নাচিয়ে আমাকে দেখালো ওর গড়ে তোলা শরীরের আকর্ষণীয় অংশগুলি...
আমিতো জলে গল…
না না ভুল বললাম- গলে জল
না তাও ঠিক নয় - আমার জমে ক্ষীর!
বোঝাতে পারলেম?
ওকে ধরতে মন চাইছে খুব- ও সব বুঝেই আমার গা এর কাছে এসে গেছে।
বিশ্বাস করুন কোনদিনই জানতাম না অল্পবয়সী যুবতীরা বয়স্ক পুরুষদের এত পছন্দ করে!
আজ আমার মনে আর কোন ক্ষোভ নেই।
আমি বুড়ো-ই হতে চাই!
ও আমার হাত ধরে নিল,
- তুমি আমায় বিয়ে করবে? আমি লতা…
-করবো মানে? এখনই ...
আমি ওর কাঁধে হাত রাখলুম।
বুঝতে পেরেছেন ? আমার কত সাহস?
-তুমি এখনও অবিবাহিত?
-তবেই না...
ওকে একটু ওষ্ঠ দিয়ে ছোট্ট একটা উপহার দেওয়ার কথা ভেবেই ওকে জাপটে ধরতে যাবো …
কি আনন্দ আমার… শরীরী ভাষায় …?
সপাঠে ঘাড়ে রদ্দা খেলাম - উর্ রি বাবা!
মরে গেলাম - মরে গেলাম …
ধপাস করে লতার শরীর ছেড়ে ভুমিতে খসে পড়লাম আমি নীরোগ কর।
আমি মরেই গেলাম!
ভাবতে পারছেন?
আমি জোয়ান কিন্তু মৃত্যুমুখী…
তবুও বেঁচে আছি!
একে বাঁচা বলে না মরা?
চোখে সর্ষেফুল …
ভয়ে ভিমড়ি খেলাম
এর থেকে মরে গেলেই ভালো ছিল .....
আশা করি আমার ব্যাপারখানা অনুভব করতে পেরেছেন।
দেখি সামনে দাঁড়িয়ে কোমড়ে কাপড় বেঁধে আমার সহধর্মিনী - রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে কটমট্ করে তাকিয়ে ………
মা কালী দেখেছেন তো?
এ তার থেকেও ভয়ংকর …
আমার পিলে চমকে গেল
'ইয়েটা' শুকিয়ে তলপেটের ভিতরে সেঁদিয়ে গেছে…
মার কাকে বলে? বাপের দেওয়া নাম ভুলে নীরোগ ছেড়ে রোগী বনে যাওয়ার উপদ্রব।
তবুও বোঝার চেষ্টায় খামতি রইল না …
কিন্তু জোয়ান শরীরের দোষ কি?
সে যে এলিয়ে কেলিয়ে পড়লো কেলানির চোটে।
এবার আমার দুর্দশার কথাটি ভেবে দেখুন …
একমাস বিছানায় শয্যাশায়ী ছিলাম। পরে কানাঘুঁষো শুনে জানতে পারলেম আমার বুড়ো বয়সের ভিমরতি ধরতে আমার সহধর্মিনী তার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়াকে দিয়েই এই কাজটা সেরেছিল।
আমি অনেক পরে বুঝলাম। একটু দেরীতেই।
আপনারা আগে বুঝেছিলেন?
কি বলেন?
বলতে পারবেন?
বলুন না?
প্লীজ!
ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পত্রিকার শুভকামনা করি
উত্তরমুছুন