কবিতা
বৃষ্টিছাঁট
সু ম ন্ত চ ক্র ব র্তী
ঠিক শেষ বিকেলের প্রান্ত ছুঁয়ে মেঘ,
উথাল পাথাল মনের উঠোন ঘর,
জমতে জমতে ছাইলো আকাশময়,
কিছু প্রকাশ হওয়ার এতো আড়ম্বর?
হঠাৎ ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি ভাসাচ্ছে ঘরদুয়ার,
শুধু কি তাই আর কিছু ভাসছে না?
ব্যস্ত তুমি জানালাটার ছিটকিনি লাগছে না,
মনের অবাধ্যতা মানিয়ে নেয়া আত্ম-প্রবঞ্চনা?
কতো কিছুই নাগাল বিহীন সময় ঘোড়া বেয়ে,
ছকে বদ্ধ জীবন দশে-পাঁচের ক্লান্ত সওয়ারিও,
সময়পথের জমা ধুলোর কাঁচে জমাট আস্তরণ,
তোমার আঙুল ছাপ লাগা কি তারও এতো প্রিয়?
এসো ফিরি আরেকটিবার পুরোনো গন্ধ ঘিরে,
বৃষ্টি যখন ধুয়েই দিলো মেঘলা গোধূলিকে,
নাহয় জলছবিতেই দেখি তোমার অনন্য সংরাগ,
ফের নতুন করে চিনতে থাকি মানুষ প্রকৃতিকে!
(১)
ভালোবাসা তো অপবিত্র নয়
অ ত সী ম ন্ড ল
তুমি চেয়েছিলে খেলতে খেলতে চাঁদের পাহাড় ছুঁতে।
আমি চেয়েছিলাম জ্যোৎস্না রাতে ভিজতে বসন্ত উৎসবে।
কোনো অতৃপ্ত বাসনা পূর্ণ করতে না।
বরং বিশুদ্ধ বাতাসে এক বুক শ্বাস
নিতে নিতে তোমার হতে চেয়েছি,
ভালোবাসা তো অপবিত্র নয় কিন্তু ....
(২)
অর্থহীন
অ ত সী ম ন্ড ল
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে
যতটুকু ধন সম্পদ জমিয়ে ছিলাম তিলে তিলে
আজ তা মূল্যহীন মনে হচ্ছে।
দামী দামী আসবাব, প্রসাধনী, পোষাক
সবই অর্থহীনতার বকলমায় ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে- আমার দিকে ....
(১)
মিতাক্ষরা নদী
সো মা ন ন ন্দী
ঐ দূরে সর্ষে ক্ষেতের হৃদয়ে হাস্নুহেনার গন্ধ মাখা ধূপ
পাখোয়াজের তালে শেষ নিঃশ্বাস ফেলে গেলে,
আলতা রাঙা পা দুখানি লয়ে নেমে আসে অতলেতে তুষার মানবী
রূপচাঁদা মাছের কোল ঘেঁষে।
সোনাঝুরির জাফরি কারুকাজে নিহত রোদ্দুরের তৃষ্ণা
উদাসীন শিয়ালকাঁটায় ফুটে উঠলে,
রাঙচিতা বুকের নিভন্ত বালি ধুয়ে নেয় মরা নদী
আলুথালু চন্দনেরাও ভাঙা ঘাটে ভরে ফুটো ঘট...
(২)
ভোর
সো মা ন ন ন্দী
এ ঘোর আঁধারেও ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে হৃদপিন্ডের মাঝখানটা,
যেখানে মানুষ হবার মন্ত্র ছিল সেখানটা একেবারে রক্তে রাঙা!
এই যে তুমি ছোরাবিদ্ধ মৃত মানুষ
ভীষণ অপ্রেম ইতরের মতো ছিনিয়ে নিয়েছে জীবন
শুধু একটা মাত্র চিহ্ন খোলসের মতো পড়ে,
তারপর শূন্য শুধুই কি শূন্য?
রূপসী বাংলা টেনেছে বুকে চোখে নিয়ে জলের সাগর
তোমার অশোক অমল বলেই জেনো,
এরপরেও শেষ হবে না কিছুই।
যে জিয়ানো ভালোবাসা মাথা কোটে সহদোর বুকে,
যে ভালোবাসার গান আলো হয়ে উঠে আসে মাটির আত্মা হতে -
কাদের এত গায়ের জোর তাকে ছুরিবিদ্ধ করে?
(১)
যদি তোমাকে ভুলতে পারি
প ল্ল ব ভ ট্টা চা র্য অ ন ন্ত
যদি তোমাকে ভুলতে পারি
তবে জেনো, এ কৃতিত্ব শুধু তোমারই।
সময় হারিয়ে যাবে সময়ের স্রোতে
যা আছে অদূর ভবিষ্যতে
একদিন তাই যাবে হারিয়ে পশ্চাতে।
যে কথারা একদিন তুলে ছিল ঝড়
যে ব্যথারা একদিন ভেঙে ছিল ঘর
সেই কথা, সেই ব্যথা, অনুভবে রবে গাঁথা
বিস্মৃতির জলছবি এঁকে যাবে পরতে পরতে।
ইচ্ছের বাগানে যদি আজও ফোটে ফুল
ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশায় যদি কর ভুল
ভাঙা ভাঙা বিশ্বাসেরা যদি আরবার জুড়ে
ঘুণপোকা সম তারা তোমার হৃদয় খাবে কুরে।
তারও পরে যদি কর আশা
আবার ফিরে পেতে চাও হারিয়ে যাওয়া ভাষা
সেই চেনা পরিচিত শরীরের ঘ্রাণ
আর দু চোখের অপলক সেই চেয়ে থাকা
অচেনা হতাশায় দেখো যাবে না তারে রাখা।
বরং পারলে ভুলে থেকো
তোমার কৃতিত্ব তুমি তোমাতেই রেখো
ভালোবাসার যে মানচিত্র এঁকেছো যত্ন করে
তোমার পেলব হাতে আমৃত্যু নেড়েচেড়ে দেখো
আর বিরহের ঠাণ্ডা আতর সর্ব অঙ্গে মেখো।।
(২)
বড় দীর্ঘতম রাত
প ল্ল ব ভ ট্টা চা র্য অ ন ন্ত
বড়ো দীর্ঘতম রাত
যেখানে আমার অপেক্ষারা স্থির বসে-
নিশাচরের আলিঙ্গনে কলহমুখর।
ইতিউতি তারারা আড়চোখে চায়
সুস্থিত এ দেহ ক্রমশ বিদ্রূপ মেখে যায়।
বড়ো দীর্ঘতম রাত
চোখ চেয়ে দেখি গাছেদের কঙ্কালগুলো
কেমন করে আদুরে জ্যোৎস্না মাখে গায়
ঝিঁঝিঁ পোকার গান শোনে, নৃত্যে ভেসে যায়।
শূন্যে দুহাত তুলে আলিঙ্গনে তারে পেতে চায়।
বড়ো দীর্ঘতম রাত
আবাসনের ওই দূর পারে শ্মশানের মাঠ
আমার স্বপ্নেরা সেথা রাতভর ছাই ভষ্ম মাখে
আমার অস্তিত্বের কাঙালপনা হাত পাতে
হাত সরে আসে, শুধু শূন্যতায় নতমুখ ঢাকে।
বড় দীর্ঘতম রাত
আমার ইচ্ছেরা সেথা অকারণ হামাগুড়ি খায়
স্বাধীন স্বপ্নগুলো নিশুতি হাওয়ায় ভেসে যায়
ক্রমশ ক্রমশ এক হাড়হিম করা অনুভুতি
আমাকে উজাগর রাখে এক দীর্ঘ প্রতীক্ষায় ।
(১)
সম্পর্ক
জ য় ন্ত দ ত্ত ম জু ম দা র
সম্পর্ক গুলো অনেকটা
দূরবীন যন্ত্রের মতো
চাইলে-
দূর সাগরের তুঁতে রঙ পাল তোলা নৌকো
তুমি কাছে টানতেই পারো
আবার যন্ত্রটা উল্টে দিলেই
পাশের সমুদ্র সঙ্গীও যেন বহুদূর!
(২)
এখন তুমি কোনো ধুন শুনিয়ো না
জ য় ন্ত দ ত্ত ম জু ম দা র
চুপ থাকো, জানো না-
এ সময় পাহাড়ি ফুল বড় রঙ ছড়ায়
হলদে শাখারা ফিরে পায় তার সবুজ
এখন তুমি কোনো ধুন শুনিয়ো না
বরং গড়িয়ার তালে উত্তাল হতে দাও
চম্প্রেং এর সুর বাজুক সারা রাত জুড়ে
আমি আবার ফসলের গন্ধে সাজিয়ে নেবো
আমার যা কিছু বেতাল ছন্দ, নিদ্রাহীনতা
আর বিশৃঙ্খল মূহুর্ত
এখন আমায় তুমি কোনো ধুন শুনিয়ো না।
আবার
জাম্বুরা ফুলের গন্ধে ভরে উঠতে দাও এ বুক...
( 'গড়িয়া' ত্রিপুরার উপজাতিদের জুমের ক্ষেতে বীজ রোপণের উৎসব, চম্প্রেং- তাদের এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র বিশেষ)
বসন্তবিলাপ
নি র্মা ল্য ঘো ষ
রাত্রিকে ভেঙ্গে চুরে যেই দিন আসছে
পাখিরা ঘুম ভেঙ্গে কি যেন ভাবছে
একটি কৃষ্ণচূড়া যেই মুখ তুলল
বসন্ত এসে গেছে কে যেন বলল
একগাদা রঙ নিয়ে রাধা যেই ছুঁড়ল
কৃষ্ণ আনমনে কি যেন গাইল
তখনি বৃন্দাবন হোলিতে মাতল
আবীরের গন্ধ ভালোবাসা লিখল
সেই ভালোবাসা বুকে আঁকড়ে নিলাম
তুমি আর আমি মিলে বসন্ত হলাম
স্বচ্ছতায় আহা মরি
দে ব যা নী ঘো ষা ল
জানিনা ...
এ কোন পথের দিশায় মোহাচ্ছন্ন আমি ...!!
প্রতিদিনের ধোঁয়াশায় মোড়া দৃষ্টিকে সরিয়ে, পুরনোকে নতুন ছন্দে বেঁধে,
যে পূজোর অঞ্জলীর আকাঙ্খায় আমার প্রাপ্তির বাগানে
ভিন্ন ফুলেরা পাপড়ি মেলে ধরে
জানায় তাদের জাগরন ...,
কেবল আমারই পুষ্পাঞ্জলীর আব্দারে ...!!
সে যে কতটা প্রাসঙ্গিক কেবল আমারই জন্য ...,
তা কখনো বোঝেনি সে ও ...
এ নৈসর্গিক শব্দতরঙ্গের আস্তরণে চারিদিক কেন মনে হয় পৃথিবীর সবই অপ্রাসঙ্গিক??
একমাত্র সে প্রাসঙ্গিক ...??
এমন দিশা কি প্রেম?
না কামনার ঘনঘটা?
তবে তাই হোক ...
অমন সাধনায় মোহরূপী হব
চির বসন্ত কামনায় ...
যতই রক্তাক্ত হই হিমেল গোলাপের
শিশির ভেজা কাঁটায় ...ll
তিরিশে ফেব্রুয়ারি
ত প ন পা ত্র
আজ তিরিশে ফেব্রুয়ারি।
ব্রহ্মচারী মহারাজ ফিরে আসছেন আশ্রম থেকে পূর্বাশ্রমে।
হাতে কমণ্ডলু নেই,
দন্ডটিও ছেড়ে এসেছেন।
বিধবা মা
এবং
বিপত্নীক পিতা
একা একা বৃদ্ধাশ্রমে বিপরীত কারো সাথে এক-আধটা কথার জন্য হ্যাংলার মতো তাকিয়ে থাকতো।
তারাও আজ ফিরে আসছে,
পুত্র আর পুত্রবধূ দেখেছে ভবিষ্য মুখ অশ্রুর দর্পণে।
ধীরে ধীরে সকল আশ্রম কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে।
সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে গৃহস্থ মন্দির।
এখানেই চতুর্বর্গ, চতুর্মুখ, চতুরাশ্রম।
এখানে নাতিই নাড়ুগোপাল,
মা-বাবাই স্বর্গ ও স্বর্গাদপি।
এর মাঝেই গণেশের মাতৃপরিক্রম;
বেথেলহেম, কাশী, মক্কা, প্রেমের বৃন্দাবন।
একাকীত্বের জগত
ম ণি কা বি শ্বা স ক র্ম কা র
এতো পিছুটান
ছড়ানো ছেটানো অগোছালো কাজ ফেলে,
এই যে হঠাৎ না বলেই চলে গেলে,
ফিরে তাকালে না,
সাড়া ও দিলে না,
শুনলে না কারোর ডাক, কিসের এতো তাড়া?
কিসের এতো ঘুম?
কেন এতো নির্বাক?
কতো কাজ করবে বলে ও
সব রেখে গেলে বাকি।
তোমার চশমা আর চটি কোথায় এখন রাখি?
বলে তো গেলে না,
যে কথাটি তুমি বলে যাবে বলেছিলে,
খুব অন্যায়,
বিনা নোটিশেই না বলে চলে গেলে!
আর আমি
একাকীত্বের জগত আগলে বসে আছি নিরুপায়।
ভেঙে দাও শৃঙ্খল
প্র দী প কু মা র দে
দোহাই! মৌন থেকোনা, প্রতিবাদ কর,
বিদ্রোহী মন নিয়ে ভেঙ্গে দাও শৃঙ্খল।
বিদীর্ণ পিঞ্জর থেকে বেরিয়ে পড় আলোয়,
উড়ে যেতেই পারো মুক্তির খোঁজে সূর্যের বাহুপাশে।
প্রদক্ষিণে মাতো উচ্ছ্বাসে অনন্ত আকাশে,
সমুদ্রের ধারে উচ্ছল বনজ প্রান্তরে।
সমাপ্তির রেখা টেনে অকারণ বন্দীত্বের জ্বালা,
পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের মধুর আহ্বান অকারণ!
রক্তিম পশ্চিম দিগন্তে ছুঁয়ে যায় আলো ছায়া,
ডানার ঝাপটে পাখা মেলে উড়ে যাও শেষবার।
সময় বাড়ন্ত! পা বাড়ায় রাত্রি আকাশ দখলে,
যাও উড়ে!শেষ শক্তি অনন্ত অভিলাষ নিয়ে,
শেষ পাড়ি হয় হোক! অভিমানী ডানার ঝাপটে!
আকাশ অপেক্ষায়! তার সব টুকু আলো নিয়ে।
যুগান্তরের মিলনতিথি
কা বে রী রা য় চৌ ধু রী
জীর্ণ পুরাতনের বিদায়বেলার প্রান্তরেখায়
বিনিদ্র চোখ যামিনীর নিলাদ্রী সীমানায়!
মিটিমিটি তারারা চন্দ্রাভা ছড়ায় চন্দ্রমল্লিকায়
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে মুখোমুখি দুজনায়!
চাঁদের জ্যোৎস্না প্রেয়সী রূপোলী আলোয়
মনযমুনায় ভালবাসার ছবি আঁকে রাতমোহনায়!
স্মৃতির পাতায় অজস্র ছায়ার আনাগোনা,
সুখের খোঁজে আকুল মন আজ দিশেহারা!
যুগান্তরের ঘূর্ণাবর্তে কালের গতিময়তা-
শেষ থেকেই শুরু হয় নতুনের আগমনী বার্তা!
আলোকদ্যূতি আকাশে ছড়ায়
বাতাস মুখরিত খুশিতে
গোধূলির প্রকাশ সাঁঝের প্রদীপ শিখার আরতিতে!
চন্দ্রপ্রভায় উজ্জ্বল জ্যোৎস্না মনকাড়া অনুভূতি
পুরাতন ও নতুনের সন্ধি ক্ষণে মিলনতিথিতে
আনন্দ বিনোদনে স্বপ্নিল আবেগে ভাসছে দুনিয়া
জীর্ণতা, দুষিত নিঃশ্বাস ধুয়ে মুছে নতুনের আশা
ভবিষ্যৎ আলোর ঝলকে আজ রাশিকৃত প্রত্যাশা!!
তমসাবৃত আলো
সু র ঞ্জ না বি শ্বা স দে
তখনও আকাশ জুড়ে বুনে চলেছে সে
তারাদের কথা ...
কালোপটে নকশিকাঁথা ...
রাতের ক্যানভাসে মিটিমিটি জ্বলতে জ্বলতে
একদিন মুছে যাবে সময়ের ছলে,
কেউ তো নশ্বর নয় ... কেউ থাকবে না সারাটা
জীবন একসাথে ...
তারপর অপেক্ষা ... পুনর্জন্মের ...
আবার ফিরে আসবে কি সে তারাদের দেশে,
আবার জ্বলবে কি জ্বলবে না ছায়াসরণীতে ...
কে জানে, কেই বা ... জানে?
শুধু হন্যমান আয়ু ... তারাখসা মরণ ...
নীল যন্ত্রণা আর পিছুটান ...
মাঝখানে জন্মের ডাক ...
নিজের মাঝে নিজেই সে এক গোলকধাঁধা ...
অন্ধকার ...তমসা ...
অথচ অন্তরে চৈতন্যদর্শন হলে
অন্তহীন ঘনকালো আকাশপথও
ভাস্বর হয়ে ওঠে।।
বিদায় রজনী
নি ভা চা ক লা দা র
দিন যায় রাত আসে স্মৃতি পড়ে রয়,
কতো কথা শত ব্যথা সয়েছি যে প্রাণে,
তবু চলা কথা বলা শেষ বেলা ক্ষণে,
দিন হোক আলোময়, নাহি মানি ক্ষয় ।
সুপ্ত আশা ভালবাসা পূর্ণ যেন হয়,
যত ঢেউ তল হোক এই আশা মনে,
নিশি শেষে নব শুরু শুভ যেন আনে,
মন্দ, ভালো স্মৃতি থাক হোক শুধু জয় ।
দূরত্ব যাক্ না ঘুচে একসাথে চলা,
সুখে দুখে কাছাকাছি মন খুলে বলা।
আর ক্ষণকাল জেগে থাক গো সজনী,
নিশি আর কিছুক্ষণ যাবে লয় হয়ে,
সুদূরে মিলাবে আঁধার বিদায় রজনী,
সুদিন আসবে ভবে এ অরুণোদয়ে।
শেষ কোথায়
আ র তি ধ র
চলা শুরু সেই অন্ধকারে
মাতৃ জঠরে
আলো চাই,
হাত, পা, ছুঁড়ে যাই।
কচি, কোমল চরণ
অবাধ বিচরণ
হাত, পা ছোঁড়াছুঁড়ি
সারা বাড়ি দৌড়াদৌড়ি।
দিন পেরিয়ে যায়
সময় বদলায়
কাজলের ফোঁটা
সময়ে পাল্টায়।
বাহারি টিপ
সিঁদুর পেরিয়ে সাদা শূন্য কপাল
হেঁটে চলেন আবহমান কাল।
কোমল চরণ
আলতা ডিঙিয়ে
আজ রুক্ষ গোড়ালি
তবুও চলেছেন কেবলই!
অনেকগুলো কালবৈশাখী
কিছু বসন্ত বিরাজে আজও
হৃদয় মাঝে.....।
ক্লান্তি বিহীন মন
হেঁটে যান সারাক্ষণ
কে জানে
কিসের টানে...!
ডাক দিই
শুধাই তারে
'ওগো জননী, এবার থামো দেখিনি,
সে হাসে
উত্তর আসে
'এ সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে মন যেতে নাহি চাহে যে....!
এখন তুমি কোথাও নাই
শা ম স উ জ জো হা
একটা সময়, তুমিই ছিলে শুধু
কাছে না থাকলেও দূরভাষে খবর নিতে
একটু পরেই আবার মেসেজ করতে
'একটা কথা বলতে ভুলে গেছি' বলে
একটা সময় ছিলো, সময়-অসময় চলে আসতে
আমাকে ডেকে বার করতে, বলতে 'ঘুরতে যাবো'
অথচ নতুন কোন জায়গায় না, একই ফুটপাথে
হাঁটতে, একই পার্কের একই বেঞ্চে বসে থাকতে
তারও আগে একটা সময় ছিলো, চিঠি লিখতে
হয়তো উত্তরের অপেক্ষায় থাকতে
আমি লিখি না বলে কত কথা শোনাতে
এখন তুমি না বললেও তোমাকে লিখি
এখন তোমাকে লিখি, চিঠির মতো লিখি
তুমি দেখো না, তুমি লিখোও না
আমি লিখি, 'তুমি নাই, তোমাকে মনে নাই
তোমাকে মনে পড়ে নাই'
আমি সামাজিক 'আজ বাড়ি নাই'
তুমি অসামাজিক, ফেসবুকে নাই
তুমি কোথাও নাই
যদি দিতে পারো মিঠেল রোদ
টু লা স র কা র
হে পৌষ, যদি দিতে পারো মিঠেল রোদ মাঠ ভরা, ক্ষেত ভরা, মন ভরা
যেখানে থাকবে না কোনো পৌষ সর্বনাশ।
বসন্ত এসো সময় মতো দিয়ে যাও সবুজ বিপ্লব গাছে গাছে কচিপাতার হিল্লোল, কৃষ্ণচূড়া পলাশের আহ্লাদী রূপবাহার।
এই বৃহৎ ধরা, ব্যাধি জরা আক্রান্ত, উদ্দ্যমহীন যাপন
যেন যেমন চলছে চলুক।
ঋতুর পরিবর্তনে জীবনপট সজ্জিত সুসময়ে।
সূর্যের প্রখর তাপে ধ্বংস হোক মারণ কীট
ঝলসে যাক আবর্জনার স্তুপ।
কলুষ নাশ হোক অঝোর বারিধারায়।
সাবালক হয়ে উঠুক কিশলয় দল
বর্ষণ স্রোত ধুয়ে নিক পচনশীল সব বস্তু, সজীবতায় সুস্থতায় পৃথিবী দেখুক পৃথিবীর পাংক্তেয় রূপ।
সুখ দুঃখের বৃত্তে
সু র জি ৎ কো লে
সুখ বলে আসছি,
দুঃখ বলে আয়,
দুজনার দেখা হবে,
সেই বিদায় বেলায়।
সুখ, দুঃখ জীবনে চিরন্তন সত্য,
এই নিয়ে জীবন প্রবাহ চলেছে নিত্য।
সময় বলে আমি,
সবার চেয়ে দামী।
জীবনটা ঘিরে আছে,
সুখ, দুঃখের বেড়া,
মৃত্যু বলে আসবো শেষে,
ধৈর্য্য ধরে দাঁড়া।
এভাবে চলতে থাকে জীবন ধারাপাত।
সকলে মিলে একাকার হই
ভুলে জাতপাত।
আত্মকথা
স ঞ্চি তা গো স্বা মী
প্রিয়তম, জানো কি, এই মন মরে গেছে বহুদিন।
শরীর ছেড়ে যেতে চায় হৃদয়..
তবুও, ধরে রাখার চেষ্টা অন্তহীন।।
প্রাণহীন পৃথিবীতে কী রেখে গেলে?
নিজেকে সঁপে দেবো স্বপ্নে কখনো তোমাকে পেলে।।
একবার ফিরে এসো ভালোবাসার দূত,
ঘুম ঘোরেই ছোঁব তোমায়, বাস্তব হোক অচ্ছুৎ।।
আসবে কী আসবে না অদ্ভুত দোলাচল...
আশার আশায় ধমনীতে অশান্ত রক্ত চলাচল।।
প্রবঞ্চনা
জা রা সো মা ব্যা না র্জি
ধীরে, আরও ধীরে ওঠো।
ক্লান্তির কফিন থেকে দিনের রোদ
ছড়িয়ে পড়ুক আত্মঘাতী যন্ত্রণা হয়ে।
প্রতিদিন কবিতায় মৃত্যুদন্ড হোক সুবর্ণার।
অতীতের বদ্ধ মোহ রাশে জমছে দৈন্যতা।
অবিশ্রাম ক্লীবত্বের জ্বালায় আঁকড়ে ধরো তমসা
তারপর অন্তহীন বিসর্জন হোক বর্তমানের
হে কাব্যচণ্ডাল,
মহত্ত্বের প্রচারে ভরিয়ে তোলো নির্বাক প্রপাত
ভালোবাসার সঙ্গে লেপে দাও নিকষ কালো
তারপর মিশে যাও মাটির বুকে
কেবল এক উন্মাদিনী হৃদয় হাহাকারে বলে উঠুক
প্রবঞ্চক। প্রবঞ্চক। প্রবঞ্চক।।
খিদে
স জ ল কু মা র টি কা দা র
রাত্রে খাওয়া-দাওয়ার পর শুয়ে পড়ি।
ফের অপূর্ব এক খিদে পায়।
তখন তাকে পাশ কাটিয়ে
ঘুমোতে পারি না। তলপেটের নিচে
খামচে খামচে ধরে!
অগত্যা তার খোঁজে হাতড়াই
যে আমার পাশে শোয়।
ফাগুন বেলা
পি না কী র ঞ্জ ন মি ত্র
জ্বর হয়েছে? থার্মোমিটারে পাঠ দেখো তো। জল পটি দাও। পথ্য সাবু।প্যারাসেটামল খেয়েই নাও।
থার্মোমিটারে পাঠ কিছু নেই। শরীর শীতল। পায়ে জ্বলন?
তাও তো নেই। ঠাণ্ডা চাঁদি।মনের ব্যারাম। চলছে দহন হৃদয় কোণায়।
শীত গেছে গা। ঝঞ্ঝা অমিল। দিনের সূর্য থাকছেটা বেশ।
রোদ্দুরটাও তাপছে ভালোই। আমের গাছে বোল ধরেছে।
ঝরছে পাতা পর্ণমোচীর।
কালো শাড়ির ঘোমটা মাথায় লাল পলাশও দিচ্ছে উঁকি।
মধুপ জানে কে ডাকে গো মধুর টানে কোন সে বনে। রাধা পাগল বৃন্দাবনে।
বন সেজেছে প্রেম আগুনে।
পুড়িয়ে দিতে মনের জ্বলন মরণ দশায় ফুল মেতেছে।
খুশীর নেশায় ফাগুন বেলা।সৃষ্টি আদি সুখের খেলা।
বসন্তের কবিতা
ছো ট ন গু প্ত
পাখির ডানায় রঙ আলাপন দেখে
বাতাসে থাক রোদ আলো উষ্ণতা
একটা চিঠি রঙিন খামে এঁকে
পাঠিয়ে দিলাম স্বপ্নিল বারতা।
আজকে ফুটুক আকাশে রোদ্দুর
তোর গানে আজ আসুক নতুন সুর।
মেঘভেলা যাক দূর থেকে দূর ভেসে
বৃষ্টি এখন নাই বা এলো আর
নির্ঝর আকাশ ছড়াক আলো হেসে
মাঘ শেষ হলেই বসন্ত আবার।
তোর ও আমার টুকরো কথাগুলো
আজকে মাখুক অচিনপুরের ধুলো।
চল যাওয়া যাক সেই নদীটার তীরে
আকাশ নীলের নীচেই স্বপ্ন বাস।
এই নদীটার টলমলে জল ঘিরে
গল্প খেয়ার মাঝির সুর আভাস
যাক ভেসে যাক কাগজ নৌকা ক'টা
বিকেল সূর্য ছড়াক আলোক ছটা।
আয় না রে মন আজকে চলে যাই
সেই যেখানে রাখাল বাঁশির সুরে
বাউল গানে ভরসা ফিরে পাই
বেহাগ বাজে আলোর সমুদ্দুরে।
নকশিকাঁথার কবিতা বানিয়ে
থাকবো ভালোবাসার শব্দ নিয়ে।।
একটু দেখা
অ ন্ন পূ র্ণা দা স
তোমায়একটু দেখবো বলে আমি অপেক্ষা করতাম।
সেই গান! কিশোর কুমারের,
'মনে পড়ে রুবি রায়',
কেন অপেক্ষা করতাম জানি না,
একটা ভালোলাগার অবেশ জড়িয়ে রাখতো আমায়
বারেবারে প্রশ্ন করি নিজের মনে,
কেমন করে তুমি পারো অরুন্ধতী তুমি?
কেমন করে?
তুমি পড়াশুনায় প্রথম,
গানে প্রতীভাবান শিল্পী,
আবার প্রফেসর!
সবেতেই অনন্যা।
সংসার থেকে চাকুরী,
সব দিকেই তুমিই সেরা।
আমি অবাক হয়ে রাতজেগে তোমার গান শুনেছি আর ভেবেছি-
কোন মন্ত্রবলে তুমি এতো গুণী!
কোন উত্তর পাইনি জানো,
সেই আমার মতো কয়েক জন ছাত্রী যারা তোমাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করতো তারা হয়তো
সময়ের সাথে সাথে অপেক্ষাতেই হারিয়ে গেছে,
জানিনা তারা কেউ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কিনা,
তবে একটা কথা বলতে পারি,
তারা মন থেকে তোমাকে ভালোবেসেছিলো,
এখনো তুমি কলেজে যাও,
এখনো হয়তো তোমাকে দেখার জন্য লাষ্টবেঞ্চের ছাত্রীরা অপেক্ষা করে,
তোমাকে দেখে তারা উদ্বুদ্ধ হয়,
জীবনে সাফল্যকে স্পর্শ করতে চায়,
কেউ পারে কেউ পারেনা,
কিন্তু তুমি তাদের কাছে আজও একটা প্রেরণা, আদর্শ।
এটা একটা ভালোলাগার গভীরতা থেকে সৃষ্ট ভালোবাসা,
সবটাই সেলিব্রেটিকে অনুসরণ করার মতো,
এ অনুসরণ তোমাকে অনুভব করার মধ্য দিয়ে যে যার নিজের কর্মে সফলতা আনতে সক্ষম।
ভালোবাসা
শি বা নী চৌ ধু রী
তুমি বলেছিলে ...
ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দেবে!
বলেছিলাম ...
ভালোবাসা কোন্ রঙে রাঙা?
উত্তর দিয়েছিলে ...
আবির রঙে রঙিন থাকে তা!
বিশ্বাস করিনা ভালোবাসার কোনো নির্দিষ্ট রঙ আছে বলে!
ভালোবাসার কোনোও রঙ নেই,
সব রঙেই সমান উজ্জ্বল তার উপস্থিতি
চির রঙিন সে!
তুমি বলেছিলে ...
তোমার বুকের মাঝে
এক পাহাড় প্রেম আছে.….!
প্রেমের কোনও আকার হয়না
তবুও প্রেম চিরন্তন!
বলেছিলে.....
তোমার হৃদয় জুড়ে
ভালোবাসার রাজপ্রাসাদ...!
ভালোবাসাকে রাজপ্রাসাদে বন্দী করা যায়!
অবাধ তার গতি!
আজীবন দ্বন্দ্ব! তোমার আমার
ভালোবাসার হিসেবে!
মেলাতে পারিনি কোনোদিন!
সে আমার অক্ষমতা
একান্তই আমার!
ভালোবাসাকে পাখনা দিলাম আজ...
ভেসে যাক পৃথিবীর কোনায় কোনায়
মরুভূমে ফোটাক ক্যাকটাস,
নীল মেঘেদের সাথে আলাপন ছলে
দিগন্ত চুমি সোহাগে আদরে!
সমুদ্র তরঙ্গে তরঙ্গায়িত হয়ে
লক্ষ কোটি বার
আছড়ে পড়ুক বেলাভূমে!
হাওয়ায় হাওয়ায় মুক্তি স্নানে
স্নাত হোক চির শাশ্বত ভালোবাসা!
স্বপ্ন পরী
ব ন্দ না রা য়
বাঁধন ছাড়া পাখির মতো
দূর গগনে উড়তে চাই
ইচ্ছে করে তোমায় নিয়ে
অনেক দূরে পালিয়ে যাই।।
আমি যে এক বন্দী পাখি
খাঁচার ভিতর ডাকাডাকি
স্বপ্ন গুলো মনের ভিতর
অন্ধকারে লুকিয়ে রাখি।।
আসতো যদি স্বপ্ন পরী
ছুঁয়ে দিত সোনার কাঠি
উড়ে যাওয়ার জন্য দিত
না হয় একটা শিতলপাটি।।
সোনার কাঠির ছোঁয়ায় যদি
হঠাৎ আমায় পরী বানায়
উড়ে যাবো তোমার কাছে
সেদিন আমায় কে আর থামায়।।
তোমার মনের অসুখ গুলো
এক লহমায় করবো দূর
হাতটি ধরে সেদিন তোমায়
নিয়ে যাবো অচিনপুর।।
বড়দিনে
ক বি তা ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়
একটা সুন্দর সকাল, অথচ বিষাদের
হালকা ইশারা ইতিউতি ছড়িয়ে;
শহরও যেন মন খুলে
মেতে উঠতে পারছে না উৎসবে,
লক্ষ লক্ষ কীটানু দাঁত, নখ
বের করে পাহারায় ...
খুব সকালে দু-এক ঘণ্টার জন্য
একশো চুয়াল্লিশ ধারাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে
উঁকি মেরেছিলেন সূর্যদেব,
তারপরই পুরো আকাশে
কে যেন বিছিয়ে দিল কালো চাদর
আর একটা সাইনবোর্ড!
তাতে লেখা "সোনালী রোদের প্রবেশ নিষেধ"
নিস্তব্ধ শহর তাই প্রায় শীতঘুমে এখনো ...
গতকাল হিমেল রাতে কাঁধে ঝোলা নিয়ে
চিরাচরিত ছন্দে ঠিক সময়েই এসেছিল
সান্টা বুড়ো,
চেনা ছবিটা না পেয়ে,
ঝোলানো কয়েকটা মাত্র ভীত-মোজা দেখে ফিরে গিয়েছিল ...
যদিও শীতের হাওয়ায় ভেসে আসছিল ক্রিসমাস ক্যারল নিকটবর্তী গির্জা থেকে ...
আলোয় সাজানো গির্জাটা
অনেক ইতিহাস বুকে নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে,
যেন অক্ষমতা আর অপারগতার জ্বলন্ত নিদর্শন!
ওদিকে একটা ঘরে তখন জীবনের সব দায়ভার সেরে এক অশীতিপর পৃথিবী
ক্লান্ত চোখে অপেক্ষায়
এক নতুন সকালের, সোনালী রোদ্দুরের,
আর ছুটন্ত রেণডিয়ারের ...
অতএব আধ-ফুরনো ঝোলা নিয়ে
বিষণ্ণ সান্টা ফিরে গেছিলো নুব্জ্য দীর্ঘ শরীরের ছায়া ফেলে ...
যেতেই যখন হবে ছেড়ে
মৃ ণা ল চ্যা টা র্জী
যেতেই যখন হবে ছেড়ে -
তখন কিসের ভয়?
থাক না পড়ে বিষয়আশয়
যা কিছু সঞ্চয়!
ধন দৌলত যায় না সাথে
যায় না বাড়ি গাড়ি -
তবে কেন এ মন মাতে
ভেবে কথা তারই?
মুদলে আঁখি সবই মিছে,
রইবে পড়ে ভবে পিছে -
পুড়বে দেহ কাঠের জ্বালে,
উড়বে শুধুই ছাই!
শুধুই আমার আমার করে
লুটছে এ মন দুহাত ভরে -
ছুটছে জীবন কোন্ আঁধারে
সে তো জানা নাই!
পলাশ
চ ন্দ্রা ণী চৌ ধু রী
সামনের বাড়িটায় প্রতিবার পলাশ ফোটে
আর আমার এই বুড়ো বয়সেও প্রেম পায়-
আচ্ছা প্রেম কি কখনো বৃদ্ধ হয় না?
আ্যাকাডেমি নন্দন কলেজ ক্যানটিন গড়ের মাঠ কেমন যেন হুহু করে এগিয়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে কপালে চুমো খাচ্ছে।
ওদিকে ঢং ঢং করে শ্যামবাজার কলেজস্ট্রীট ট্রামটাও তো এদিকেই আসছে।
কিছু বলবে বোধহয়।
চেনা রাস্তা অলিগলি আমায়
ঘিরে ট্রা লা করে গান গাইছে।
আমার বড্ড ভয় করছে।
একটু থিতু হয়ে মোবাইলে যখন টাইপ করছি
আমার বর্তমান থেকে অতীত
কেমন যেন খাঁ খাঁ
মনে হচ্ছে কবেকার আমি চেনা রাস্তায় চেনা গন্ধে হাঁটছি।
সন্ধ্যায় নিজেই নিজের জানালার পর্দা টেনে আবছায়া করে দিচ্ছি।
রাতকুয়াশায় নিজেই নিজের মাথায় ছাতা ধরছি।
ছোটবেলার ফেরিওয়ালার সঙ্গ করছি।
আর ঝরা পাতায় কবিতা লিখছি।
আবার একটা অন্য দিনে শিশির সিক্ত অজানা সকালের খোঁজ করছি।
নাঙ্গা কবিতা
চি র ঞ্জী ব হা ল দা র
আলেকজান্ডার কে নিয়ে যে ফেলাসি লেখার কথা ছিল,
আমার ক্রমাগত বিবর্তন
তা হতে দিল না।
শীলভদ্র, তুমি দামোদর নদী পার হতে গিয়ে দেখলে
শীত করছে।
একটা করমচা গাছ কেঁপে উঠলো।
কোন ও এক মুখ ঢাকা মানুষ তাৎক্ষনিক ছায়ায় সাজিয়ে নিচ্ছিলেন আগাম যুদ্ধ ও অন্ধকারের বর্ণময় সংলাপ।
আমরা গণতন্ত্র রচনা করবো বলে-
মামার্ত দেউলে নিজেদের নাম লিখে
উৎসর্গ করেছি রঙদার মারণাস্ত্র।
ময়ূরসিংহাসন ডাকে, "তৈমুর, আয় আয়।"
চন্দ্রগুপ্ত ডাকে, "চাণক্য আয়"।
মা ডাকে, "যুদ্ধের সময় এলো বলে!
দু'মুঠো খেয়ে যা খোকা।"
ফেলাসি লিখবো বলে গ্যাস বেলুন ওয়ালার সাথে বন্ধুত্ব পাতাতে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি।
বিবাদ লিখব বলে দর্শন বাদ দিয়ে
আকাশের নিচে পুরোদস্তুর নাঙ্গা দাঁড়িয়ে,
দেখি, কে আমায় কার্তুজ উপহার দেবে!
অধরা মাধুরী
স্মৃ তি ম ল্লি ক সা হা
আজন্মলালিত স্বপ্ন
ভরা ছিল মনের কোটরে
আশা ছিল ছুঁয়ে যাবো বসন্তের সব রঙ ছাপিয়ে ফাগুন ঝরা চরে!
পাওয়ার মাঝে আপনাতে গড়েছি বালুচর,
ভেঙেছে সাগর লহরে,
বেলা শেষে আজ হিসেব মেলেনা কেন যে...!
কখনো কি আসবে এমন সকাল- নকশীকাঁথায় বোনা স্মৃতি ভাঙবে সময়ের বাঁধ?
কখনো চোখ বুজে দেখি বিশ্বচরাচর
হারিয়ে যাওয়ার মাঝে'ও এক ময়ূরপঙ্খী
ছিন্নদিনের খন্ড আলো দেখায় সংসার..
কুঁড়িয়ে নিয়ে যত্নে তারে গাই, আকন্দ ভোর তারই প্রতীক্ষায়।
স্বপ্নগুলো ইচ্ছে মাখা...বাসা তার মগ ডালেতে বাঁধা
জীবন যুদ্ধে অলীক ব্ল্যাকআউট ...
নিয়মের ভাঙ্গা গড়া স্রোতের আড়ালে ভাসা
কে জানে হঠাৎ কখন বেরিয়ে পড়ে এক-একটা রাস্তা !
জীবন হারে সঙ্গিহীনা নিয়ম ভাঙার আহ্বানে,
মেঘের গর্জনে কান্না ভেজা চোখ...মেঘ বৃষ্টির খেলা সুতোয় বাঁধা মন,
মনডুবুরীতে ভরা অভিমান মরুভূমির ফুৎকার শুনে..
ডুবতে থাকে গভীরে...!
...অ-প্রেমে অতলান্ত তলিয়ে
জীবন মেপে নাও বিস্মৃতি তলে..?
পথে পথে
সো না লি ম ণ্ড ল আ ই চ
স্যাটেলাইট ম্যাপে সেদিন খুঁজেছিলাম
ঠিকানাটা তোর নাকি ছিল বেনাম
অচেনা পথের পথিক সে তো ভবঘুরে
আপন পথ ছেড়ে দূরে ,বহু দূরে।
শেষে ঝড় উঠলো ভীষণ জোরে
বিপন্নরা বিলাপ করে অন্ধকারে
সার্থক যে মনের জোরে ভীষণ বাঁচে
আমার বুকে চড়ুইছানা রোজই কাঁদে।
এ ফুল এ রং এ সুবাস সব বসন্তেরই
এসব অভিমানে ঋতুর ভুলচুক নেই
দক্ষিণ হাওয়া উড়িয়ে দেয় মুহূর্তেই
গায়ে প'ড়ে পলাশ কেন ডাকছে ওই।
সময় চলুক হাঁটি হাঁটি একটানা
মৃত্যু কঠিন ছায়া নামে নামুক না
মিলন রাতের খোঁজে মুঠোয় হাতখরচ
আসবি নাকি, সুখলতার ভীষণ গরজ?
আজ ঝরা পাতায় আগুন লাগুক
বেহিসেবি ফুলের গন্ধে ফাগুন হাসুক
কু ঝিক ঝিক ছুটছে ছুটুক
বোহেমিয়ান একলা হাটুক...
ষোলো-দানে
ক থা ক লি সো ম (পা রু ল)
কি জানো তুমি?
মেধাহীন অনুভবে তোমার স্বপ্ন
ক্লান্ত হয়নি এখনও!
জনাকীর্ণ সমুদ্রে একলা হওনি
এখনও তুমি!
হাতা-খুন্তির কড়ে
দাম্পত্য পেরেকে
ঘরের দুয়ারে গেঁথে
নিজেকে কি যিশু ভাবছো তুমি?
তাদের তুমি ক্ষমা করো প্রভু
বলেই যাবে নিষেধের অভিমানে।
স্রেফ ঐটুকুই,
মাথার উপর ছাদটা যাতে না হারায়,
ষোলো-দানে বিতাড়িতা জন্মস্থান থেকে তুমি-
মৃত্যুর স্থানটা পাকা হয়তো হয়!
পুতুল নাচ -
দশ আঙুলের কারসাজিতে নাচা পুতুল।
কিসের অভিমান
কিসের অভিযোগ
কিসের মায়া
কিসের আমার আমার...
কর্ণ-বধিরকারী চিৎকার
উচ্ছৃঙ্খল ভোঁদড়-নাচ কিংবা বন্দেমাতরম্
সুতোর টানে পরের গোলার শব্দ
নিজের ঠোঁটে বসিয়ে
করে যাও অঙ্গ সঞ্চালন।
লজ্জা, ঘৃণা, ধিক্কার ওতো শহীদদের জন্য
তুমি তো গণতান্ত্রিক অধিকার।
বকুল ফুল
মা লা চ্যা টা র্জ্জি
বকুল ফুল ঝরলে মনে হয় বকুল ফুলের ঝরা বন্ধ হয়নি,
বকুল আমাকে শাড়ির মতন জড়িয়ে রেখেছে
যেন বকুল আমার প্রেম...
রাত্রি গভীর হলে সাজানো তারার
মিটিমিটি হাসি দেখলে মনে হয়
সাজানো তারা যেন রাত্রিকে অধিক ভালোবেসে
সুখী হল,
একা গাঢ় অন্ধকারে চুপচাপ বসে থাকলে মনে হয়
কে বলেছে একা?
এই তো রয়েছে প্রগাঢ় আঁধার, সঙ্গে রাজপথ
রাজপথের শরীর মানুষের কথা শুনে
হেসে যায়...
এর চেয়ে অধিক শ্রোতা আর কোনো মানুষ
কস্মিনকালেও হতে পেরেছে কি
কোনদিন?
খুশি হয়ে গল্প করি রাজপথের সাথে।
মনে করি, রাজপথ নির্মল বড়ো
খুশি খুশি মনে দখিনা বারান্দাতে বসেই যেই
কবিতা লিখি মনের আনন্দে
আহা, কবিতাতে প্রাণ আসে.....
কবিতা ভালোবাসি। তবু কবিতা আসলোতো
দখিনা বারান্দাতে,
বকুল ফুল ঝরলে এই পৃথিবীতে
পৃথিবী সুগন্ধীভরা বলে মনে হয়.....
মাহ ফাগুন
ধ ন ঞ্জ য় পা ল
মন্দ বাতাস
ফাগুন মাস,
চোখের কোণে
সর্বনাশ।
পলাশ ফুলের নির্যাসে
মন দিয়েছিস্ কার আশে!
আজ শিমুলের রঙ মেখে
তাকাস্ কেন ঐ চোখে!
বন্দী খাঁচায় নাগপাশে
উড়ুক্কু মন ভালোবেসে,
চায় মন তোর চোখ ছুঁতে
পারবিনা তুই মন দিতে!
রাখবো তোকে এই বুকে
নাকছাবিতে খুব সুখে,
এক পৃথিবী ঘর আছে
ঘরের মধ্যে মন বাঁচে।
আলতা-সিন্দুর-কুমকুমে
বাজবে নূপুর রুমঝুমে,
মুখে কনে-দেখা আলো
বাসবি তখন অনেক ভালো।
শাল-পলাশের ঐ বনে-
ঝিলিক-চোখে বাণ টেনে,
শিমূলফুলের খোঁপাতে
অঘটনের ফাঁদ রাতে।
রাতের চোখে মৌমহুলে
সুখের নাচের মাদলে,
কোমর ধরে নাচবো দুজন
রাতের পাখি গাইবে কূজন।
ফিরবো ঘরে লাল চোখে
পাতবো চাটাই সেই সুখে,
মুক্ত হবে মনের পাখি
থাকবে রক্তগোলাপ-আঁখি।
হবি কি তুই ফাগুনমাস!
হবি আমার সর্বনাশ!
এই তো জীবন
ছ ন্দা দা স
মনের তলে গুমরে মরে সপ্তসাগর
আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে কষ্টগুলো,
বঞ্চনারা সঞ্চিত হয় বুকের ভেতর
জীবন বলে, এটাই নাকি প্রাপ্য ছিল।
দুঃখরা সব মেঘ হয়েছে অভিমানে,
ইচ্ছেমতো যখন তখন ভেজায় আমায়,
অশ্রুনদী কূল ভাসিয়ে প্লাবন আনে,
মুখের হাসি সারাটি ক্ষণ মুক্তো ঝরায়।
স্বপ্নরা সব চূর্ণ হয়ে হারিয়ে গেছে,
ব্যর্থতাকে লুকিয়ে রাখি শূন্যতায়,
এই জীবনের জটিল পথে একলা চলা,
বিষণ্ণ সুর থমকে থাকে রক্তধারায়।
যুদ্ধ নাকি প্রার্থনা
ক স্তু রী ক র
ছোট ছোট অনুভূতির তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে
পলাশ শিমুলে রাঙানো বসন্তাভাসের খুশ চিঠিতে শহরের ডাকবাক্স ভরে উঠছে
বাহারের সুর ধরেছে জনমনের বাঁশি
হলুদ গোলাপি ফাগের মাঝে কেউ বুঝি একটি হাইফেন লিখে দিল, কিছুটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হলো আনন্দের ভেতরে, বহুদূরের বারুদের গন্ধ নাসারন্ধ্রে, বুকের ভেতর আকুল উদ্বেগ ভিনদেশী আত্মীয়ের জন্য,
রক্ত দিয়ে আত্মীয় লেখা হয়
যুদ্ধ লেখা হয়
তবে আত্মা দিয়ে কি লেখা হয় গো পৃথিবী...
অন্তরের ব্যাকুল প্রার্থনা
তারা,হাঁস,জোনাকি ও শিয়ালের থাবা
দে বা শী ষ স র খে ল
সন্ধ্যাতারা ফুটে উঠলেই নিঝুম ধরণীতলে একটি শেয়াল তক্কে তক্কে থাকে।
দিঘি জল ত্যাগ করে হাঁস।
রক্তে লাল সন্ধ্যার আকাশ
শিয়ালের ঠোঁটে
ঝোলে লাজবতী হাঁস।
সন্ধ্যা হলেই আধবাঘাদের গন্ধে গুমোট পয়সাগাড়ি।
সবারই আড়ি
কিভাবে যে ভাব হয় জানে
প্রকৃত জহুরী।
সন্ধ্যাতারা ফুটে উঠলেই চারদিকে পুরুষগন্ধ ফুলদল চুরি ও ছিনারি।
কামিনী ও নয়নতারা আড়ালে।
তারার কাঁপন টের পায় জোনাকির ডানা সন্ধ্যার আঁচলে।
ফুল ঝরে
নবজন্মের বিকাশ পঞ্জিকা রচিত হতে থাকে
রাত্রির গহনে।
তখন যে তারাটি জেগে থাকে
সে চেনে না সন্ধ্যাকে।
তখন ধরণীতলে শিয়ালের ঠোঁটে হাঁস।
চরাচরে স্নিগ্ধ মৃদু মিহিন বাতাস।
স্বপ্নের চাবি
শি বা নী বি শ্বা স
তারপর
মিলিয়ে যাওয়া পায়ের চিহ্ন ধরে
ছেলেবেলার গলির খাঁজে খাঁজে হেঁটে চলি...
বাড়ির চৌহদ্দির উঠোনে এক্কাদোক্কা খেলার
চৌখুপী ঘর পেরিয়ে গলি থেকে মাঠ—
পিট্টু খেলার ইঁটের টুকরো, বুড়ি বাসন্তী আর
গোল্লাছুটের হাত ছাড়িয়ে ছুট... ছুট... ছুট...
ছেড়ে যাওয়া হাতের কুয়াশা ভেঙে
রাশি রাশি নাম ছড়িয়ে পড়ে বৃষ্টির মতো আর
বাঁকে বাঁকে হারিয়ে যাওয়া গলিতে
মরে-যাওয়া স্মৃতি হাতড়ে ঘর খুঁজে বেড়াই...
আমার হাতের মুঠোয় ঘুণে ধরা নাম আর নাম
বাঁক হারানো বেণীর ভাঁজে
মিলিয়ে যাওয়া পায়ের ছাপে
খুঁজে পাওয়ার খেলায় গো-হারা হেরে দাঁড়িয়ে পড়ি।
পড়ন্তবেলায় পাখিদের কিচিরমিচিরে
ঘরে ফেরার ডাক
সারাদিনের ক্লান্তির বোঝা কাঁধে
হেরে যাওয়া আমিটা একপা’ দু’পা হেঁটে
বাড়ি ফেরার চেনা ঠিকানার বাঁকে এসে দাঁড়াই
ইঁটের রাস্তার পাশে ছোটবেলার শেখা ঠিকানাটার
কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাই না
মিথ্যে ছেলেবেলা আরও মিথ্যে হয়ে যায়
হারিয়ে যাওয়ার খেলায়।
আজ শুধু এটুকুই বুঝি—
এ বয়সে এসে স্বপ্নের চাবি খোঁজা বৃথা...
আমার বসন্ত
স ন্দী প কু মা র মি ত্র (সো না)
গোটা একটা বছর অপেক্ষায়
সেই যে গেছো
আর কোন খবর নেই,
একটুও বোঝো না
অপেক্ষায় আকুল হবার কষ্ট!
আমার ও তো মন আছে
হৃদয়ে চোরা স্রোত চলে
আবার ফিরে পাবার আশায়
ভুবন আলো করে আসো--
গন্ধ স্পর্শে মাতোয়ারা
হবার নেশায় ছটফট
করছে মেদিনী,
দেখো রাধাচূড়া কেমন
থমকে আছে তুমি নেই বলে,
কৃষ্ণচূড়াও প্রস্ফুটিত হতে
পারছেনা শুধু অপেক্ষায়,
মৃদুমন্দ বাতাস বইছে
তোমার আসার খবর নিয়ে
মৌমাছিরা গুঞ্জন করছে
আনন্দের সুরে আজ
পরজ বসন্ত
সত্যিই খুব সুন্দর লাগছে,
বাসন্তি রঙে
রাঙিয়েছো চারিদিক
দেখো দেখো রাধাচূড়া
কৃষ্ণচূড়ার মাখামাখি
ওদের আনন্দ শয্যাটাও
কতো মধুর
পলাশও নিজেকে
আদরের রঙে রাঙিয়েছে
পাখিরা গান ধরেছে
ভ্রমর ধরেছে তান
রঙবেরঙের ফুলের মালায়
চারিদিক বর্ণময়,
আসছে দোল পূর্ণিমা
তোমার ছোঁয়ায় আমার অপেক্ষা
বিভোর হবো আবিরের
গন্ধ মাখা ভোরে ।
সবাই যা পারেনা
র জ ত পু র কা য় স্থ
কাসেম ভাই বাঁশি বাজায়;
কি মধুর সুর ওঠে তার বাঁশিতে।
কিন্তু কাজ নেই তার হাতে।
অকর্মা, অপদার্থ কত খেতাব পায় সে।
বোস বাবুর মস্ত বাড়ি
বিদেশি গাড়ি, রমরমা ব্যাবসা ;
বাঁশের বাঁশিতে সুর তুলতে পারেনা।
সুর তুলতে বৈভব লাগেনা।
আবার বৈভব সুরের জন্ম দিতে অপারগ।
কাসেমের খালি পেটে আগুন জ্বলে,
খাবার নেই।
বোস বাবুর টেবিলে সাজানো দামি খাবার,
উধাও খিদে।
গ্যাসে পেট থাকে টইটম্বুর।
একটা বাঁশি যদিওবা খুঁজে পায় কয়েক মুঠো পোড়া ভাত ;
গভীর তপস্যায় বোস বাবুদের দালানে
বাঁশিতে সুর ভাসেনা।
তবুও প্রতিভা মূল্যহীন বৈভবের মানদণ্ডে!
শুধু বৈভবের নিঃস্বতার অবসরে
প্রতিভারা ছুঁয়ে ফেলে আকাশের নীল।
কখনোবা
পাহাড়ের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে
মাথা নোয়ায় ঘাসেদের সমতলে।
মিথ্যা নয়
কো য়ে ল তা লু ক দা র
বসন্তে পাতা ঝরে, বসন্তেই আবার নতুন করে পল্লবিত হয় বৃক্ষ- ভালোবাসা চলে গেলে ভালোবাসা আসে, রাজা থাকলে যেমন রানী আসে-
আসলে কথাটা কেমন হলো! কথাটা হবে- সব ভালোবাসাই মিথ্যা হয় না।
এক কমলা রঙের ঊষা প্রহরে কেউ একজন বিগলিত প্রেমকণ্ঠে বলেছিল -'জীবন জীবনকাল আমি তোমার হয়ে থাকব।' এরপর রুপালি জলের ঢেউ তুলে কত ভালোবাসা সে ঢেলে দিল।
তারপর সে একদিন চলে গেল সব স্রোতধারা থামিয়ে দিয়ে। কিন্তু তার রেখে যাওয়া ভালোবাসা কী সে নিয়ে যেতে পেরেছে?
আসলেই পারে নাই-
ভালোবাসার চুম্বন, আলিঙ্গন, নিমগ্ন প্রেমময় মুহূর্তগুলি কেউ কখনও ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে না, এই ভালোবাসাগুলি কখনও মিথ্যা হয় না।
কতটুকুই বা বলি
ম ধু মি তা রা য়
কতটুকুই বা বলি!
দরজা বন্ধ হয়ে গেলে
বলা যায় কতটুকুই!
প্রতিনিয়ত ডালপালা
ছড়াচ্ছে শিকড়
উন্মুখ হচ্ছে আবেগ
কষ্টরা জমায়েত হচ্ছে একে একে
চলে যেতে হবে বলেই কি!
আমার থাকা আর না থাকার মধ্যে
সমান্তরাল দুটো দাগ ছাড়া কিছু নেই
ছিল কি কোনদিন!
যে কথা তাকে বলেছ, তাকে তাকে এবং তাকে
সে কথাতেই কখন আকাশ ভেবে ছুঁয়ে ফেলেছি শূন্য
শূন্যকে আঁকড়েই এঁকে গেছি
সংখ্যার কারুকাজ এলোমেলো খাপছাড়া
যাবার সময় তাকিয়ে দেখি
নিজেই পূর্ণ করেছি সবটুকু আশ
বিষণ্ণ বিকেল মুছে লিখে গেছি বসন্তের সুবাস...
প্রস্তাব
শা শ্ব তী চ্যা টা র্জী
উচ্চারণ সৎ হ'লে ফল হয়।
তবু কেন অজস্র বিরতি পথে পড়ে?
অবিরল স্বরলিপি বাধা পায়;
অপ্রকাশ্য বিরতির দাবি- এখন এটুকু থাক,
এর বেশি শোনাবে উৎকট।
আমি ফিরে যাই যত অনুচ্চার আভরণে মুড়ে,
তুমি নিশ্চুপ থাকো ছদ্ম কুয়াশার অন্তরীপে,
শমিত বেহালার ছড়ে রুদ্ধ তান,
তাপরোধী বল্কলে ওম্-হীন বৃক্ষ সন্তাপ।
কিন্তু এইভাবে
কি ক'রে বোঝানো যাবে
জলের গভীরে মূহ্যমান গাছপালা কতখানি সৌরপ্রত্যাশী?
শ্বাসপথে থেমে আছে কত দগ্ধ বসন্তবাতাস,
কদমের কোলে কত অসমাপ্ত বাঁশি
গোপনে বাজিয়ে চলে অতল হুতাশ...
যে অপার উৎকণ্ঠা তিষ্ঠোতে দিল না ঘরে
আঙিনা বাথানে,
তাকে আমি বিরতি শেখাই-
বিরতি নিয়ে সে ছোটে শ্মশানেমশানে
প্রেতে পাওয়া শব যেন অলক্ষ্যে পোড়ে আলেয়ায়;
ভস্মসার বুকে ক'রে ঘরে ফিরে দোর দেয়
আজানেরও আগে-
পাখিরা তর্জমা করে সেইসব স্থগিত কথন,
সেইসব অলিখিত মৃত্যুদণ্ডাদেশ
পাঁজরে লুকিয়ে রেখে দিনমান
ভদ্রাসন পার করি নতভঙ্গিমায়...
এত বিঘ্ন বোঝো না কি যথেচ্ছ অপঘাত ডেকে আনে!
মুলতুবি উপচারে হানি করে নষ্ট ঔষধি,
পৌরোহিত্যে ছেদ পড়ে মন্ত্র বাধা পেলে...
হোক সত্য, দিক সত্য ভেঙে যত সংযম পরাকাষ্ঠাসার-
এ কপট মুছিয়ে নামাও
দূরপ্লাবী সহস্রধার...
আর কি কখন কবে এমন সন্ধ্যা হবে
নী লা ঞ্জ না মি ত্র
সন্ধ্যার ঘাট ছুঁয়ে অনন্ত সময়
কতো নির্লিপ্তভাবে করেছি পার,
শুনেছি পারে বসে নদীর ছলাৎ ঢেউ
স্বজন হারানো হাহাকার।
তারপরও ছুঁয়ে থাকতে চেয়েছিলাম
তোমার ঐ নির্ভরতার হাতদুটোই,
তুমি ছেড়ে চলে গেলে,
তারপরও চলেছি ঠিকই
তোমাকে ছাড়াই জীবনের চড়াই উৎরাই।
ছুঁয়ে থাকা
আ ল্পি বি শ্বা স
ঐ যে ধ্যানী বক, চুপটি করে বসে আছে ধানীরঙ হলুদে, শুনশান সকাল চিরে চললো ইকোরিক্সা, সেই শব্দে হঠাৎ করে মেললো সাদা ডানা। ও বক তুই অসাবধানে পেরিয়ে যাসনে কাঁটাতারের সীমানা।
দল বেঁধে পাঁচ ছয়টি হাঁস
যেন এইমাত্র বিতর্কসভা ছেড়ে বেরিয়ে দুলকি চালে পার হচ্ছে রাস্তা, স্বপ্ন ছেড়ে বাস্তবের কাদামাটি ছুঁতে,
চেনা জনপদ ছেড়ে যাস্ নে তোরাও।
কি বিশাল আকাশের পরিসর! সবটুকু জুড়ে টাঙানো মেঘেদের সামিয়ানা।মাঝ বরাবর কাঁটাতারের সীমানা। সে কথা মেঘেদের ডেকে বললেও শোনে না।মেঘ বড় অবাধ্য।
যেই না এ কথা মনে মনে বলা, নিমেষে বৃষ্টি ঝরিয়ে মেঘেদের সে কি কান্না! ওপার থেকে এপার ছুঁয়ে হয়তো বা লজ্জা পেয়ে ওপারেই ফিরে যাওয়া।
একি! সূর্যও যে নিজেকে ভেঙেচুরে রশ্মিজাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছে কাঁটাতারের এপার ওপার সর্বত্র।
হেমন্তের বিষাদ ছড়িয়ে পড়েছে 'মেহবুব'এর দাওয়া থেকে 'শ্যামলী'র উঠোনে।
ভোরের কুয়াশায় 'অপূর্ব'-র চষাখেতের ভিজে ধানফুলের পরাগীগন্ধ ছড়ায় 'সুলতানা'-র রাজকীয় মহলের প্রবেশপথে।
প্রতিটি হেমন্তে পাতারা শুধুই ঝরতে জানে, বৃষ্টিতে ভিজতে জানে, বাতাসে উড়তে জানে, এতো জানে, তবু বোঝে না চেনা অচেনা জনপদের ফারাক, কাঁটাতারের অর্থ।
সবাই সবাইকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকতে চায়, বিহ্বল খড়কুটো মন, যতই আটকে দাও কাঁটাতারের সীমানায়।
ব্রাহ্মমুহূর্তে সমুদ্র
প্র কৃ তি দ ত্তা
শেষ রাত, অ্যালার্ম বেজে উঠল
ভৈরব রাগ ছড়িয়ে পড়ল অন্তঃকরণে
রাতের কালো ফিকে হয়েছে শুধু
সমুদ্রের গর্জন ভীষণ ক্ষীণ।
তিনজনের ঘুম টুটেছে
সূর্যোদয়ের আগেই যে সে আসবে
প্রতিসরণের জটিল সূত্র মেনে
বাকিরা তখনও ঘুমোচ্ছে অঘোরে।
ওরা এসেছে শুধু সমুদ্রস্নান করতে
জলের মধ্যে হুটোপুটি, হাঁক ডাক
আমাদের ভালোলাগে ব্রাহ্মমুহুর্তে
সমুদ্রের এই নিস্তব্ধতা।
ভোরের বাতাসে শীতল অনুভূতি
শীতবস্ত্র চাপিয়ে ক্যামেরা হাতে
আমার প্রথম সমুদ্রকে জানার পালা
দূরের নিয়ন আলোগুলোর চোখে ঘুম।
ভাটার টান অনুভূত হল জলে পা দিতেই
পায়ের পাতায় সুড়সুড়ি দিচ্ছে বালি
ভেজা তটরেখায় কম্পিত প্রতিচ্ছবি
ক্লান্ত চাঁদ হেলে পড়েছে পশ্চিমে।
হার্মিট ক্র্যাবের দল ছুটোছুটি করছে
সময় হয়েছে, আসছে জোয়ার
এক লহমায় ঢেউএর উচ্চতা বাড়ে
দিগন্তে গোলাপি বল লাফিয়ে ওঠে।
ধুসরতা কাটিয়ে নীলাচল ফেরে স্বমহিমায়
একজন জেলে জাল ছুঁড়ে দেয়
সৈকত ভরে ওঠে জনজোয়ারে
এরপর একটু সমুদ্র স্নান, স্মৃতিটুকু থাক।
দেশান্তর
ক ল্পো ত্ত ম
চালে চালে মোরগের লাফালাফি,
কার ঝুঁটি কত বড়ো
কত দমদার
কার ডাকে জেগে ওঠে পাড়া
কার পায়ে চাপা পড়ে
নুয়ে পড়ে ঘাস
এই নিয়ে দাপাদাপি।
গাঁয়ের সীমানা ছেড়ে কতদূর
ধাওয়া করেছিল কাকে
কে কখন
কোন্ অবকাশে
সেই সব বাহাদুরি
ছড়িয়ে পড়ছে
এক চাল থেকে চালে
সকালে উঠেছি যেই
হদবদ হদবদ চালের উপর
ধাইত্ বলে হাত নাড়তেই সব
যে যেদিকে উড়ে যায়
লাফ দিয়ে নেমে
ঢুকে পড়ে নিজ নিজ ঘরে।
জেগে ওঠো
যদি চাও বন্ধ হোক প্রদর্শন
চালের ওপর।
কবিতার অন্বেষণে
প লা শ বি শ্বা স
( ১৩ )
সবুজে ঢাকে না আকাশ
বিবর্ণ হতে হতে একটা সময়
মিশে যাবো অশ্বত্থ পাতার মতো
তোমার অন্তহীন চাহিদার ভিতর অনায়াসে
কবিতা তোমাকে নিয়ে যাবো আমি সেখানে
( ১৪ )
আজ পদ্ম পাপড়িতে মেলেছিলে দুটি আঁখি
শিশিরের ঘ্রাণ মুখে মেখে
চঞ্চলা বালিকার মতো শারদ প্রাতে
ঝরা শিউলি বলে নি কথা
সারাটা দিন ছুঁয়ে আছি কবিতার খাতা
( ১৫ )
শীতল বাতাস প্রাণ ভোলানো
বাঁশ পাতার ঢেউ ছুঁয়ে যায় হৃদয়
শিষ দিয়ে গ্যালো মিঠে সুরে ওই যে দোয়েল
দু'নয়ন খোলো একটি বার কবিতার মতো
প্রভাতী গান শুনিয়ে যাও আমার দ্বারে তুমিও
( ১৬ )
আমার রক্তকরবী নিয়েছে স্বেচ্ছা বিসর্জন
জল থই থই চোখের কোণে
মুক্ত সরোবরে ফুটেছে ওই শাপলা
শিশির মেখেছে প্রাতে
ভাসাবো সেথা আমি কবিতার তরী খানি
( ১৭ )
সবুজ পাতা বেয়ে ঝরে পড়া সেই
বৃষ্টির একটি ফোঁটায়
দেখেছি তোমার মুখের ছবি
সরে সরে যাচ্ছে ঘন মেঘ
হৃদে নীলাম্বরীর ঢেউ খানি রেখে
( ১৮ )
হারিয়ে যাচ্ছি ক্রমশঃ আমি
তোমার জেগে থাকা রাত্রির অতল মহীসোপানে
ঘুম ঘুম চোখে মধুর সুর বেজে ওঠে কানে
ভালোবাসার এই ধ্বনি
মরমে টোকা দিয়ে যায় সর্বক্ষণ
সীমানা পেরিয়ে
শু ক দে ব দে
আঁধারসীমা পেরিয়ে গেছো তুমি
এনে দিয়েছো নতুন সোনার ভোর
স্বর্ণপালকে মুকুট সাজালে তুমি
ভারতমাতার হে দক্ষ কারিগর!
ছুটে চলেছো অনন্তকাল ধরে
গায়ে নিয়ে আঘাতের ডোরা দাগ,
পথের দুপাশে মাঠভরা দর্শক
বলবে না আর ভাগ মিলখা ভাগ৷
সীমানা ছুঁয়েছো, ফিরে এসেছো তবু
এবার ফিরে এলে না কিন্তু আর!
আবার হয়তো অন্য কারো রূপে
তালির মাঝে নামবে পুনর্বার৷
অথবা দেখবো প্রকৃতির মাঝে তুমি—
ছো মারছে মস্ত কোন চিল,
অথবা ঈগল তেড়ে আনছে কিছু,
চিতায় ডিঙছে উচ্চতার পাঁচিল...
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন