অণুগল্প
বুমেরাং
নি র্মা ল্য ঘো ষ
"দেখ, তুমি আমাকে ভালোবাসো... আমি তোমাকে খুব যত্নে রাখব..."
"কি রকম যত্নে?" ছেলেটির আগ্রহ...
" তোমার কোনো ব্যাপারে interfere করব না... যা খুশী করবে... শুধু আমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসবে না..."
"সে তো এখনো বাসি না অন্য কাউকে..."
"ভবিষ্যতেও না..."
"ঠিক আছে... কথা দিলাম..."
হিমি আনন্দে জড়িয়ে ধরল অতীনকে... আবেগও স্পষ্ট ফুটে উঠেছে তার চোখে মুখে। বড্ড ভালোবাসে সে অতীনকে। তাই তো বরকে ফাঁকি দিয়ে ভিক্টোরিয়ায় প্রতিদিন বিকেলে অতীনের সঙ্গে দেখা করতে আসে।
আজকেও এসেছিল। তখনি এ সব কথাবার্তাগুলো হচ্ছিল। হঠাৎ হিমি লক্ষ্য করল অতীনের মুখটা কেমন পাংশু বর্ণের মত হয়ে যাচ্ছে ভিক্টোরিয়া গার্ডেনের বাঁ দিকে তাকিয়ে।
"মা, দেখ বাবা..." একটি ফুটফুটে বাচ্চা দ্রুত দৌড়ে আসছে অতীনের দিকে, পেছনে অবাক বিস্ময় চোখে শাখা সিঁদুর পরিহিতা এক বিবাহিত ভদ্র মহিলা তাকিয়ে আছেন অতীনের দিকে।
হিমির সারা শরীর দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। সে ঘুণাক্ষরেও কোনদিন টের পায়নি এসব।
মিছিল
শ্যা ম ল কু মা র মি শ্র
সত্তরোর্ধ্ব নিরঞ্জনবাবু পথ হাঁটছেন। দীর্ঘ প্রায় তিরিশ বছর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব সামলেছেন। এই বয়সেও তাঁর ঋজুতা ও বাচনভঙ্গি ঈর্ষণীয়। কোনদিন কোন অসত্যের সঙ্গে কখনো আপস করেননি। ঢাকুরিয়া পঞ্চাননতলা থেকে হেঁটে চলেছেন। কাঁধে ঝোলানো শান্তিনিকেতনী ব্যাগ যা তাঁর কলেজজীবন থেকেই সঙ্গী।
প্রয়োজনীয় কিছু বই খাতা আর কলম থাকে ওই ব্যাগে। হঠাৎ গড়িয়াহাটের মোড়ে এসে থমকে যেতে হলো। চোখের সামনে এক বিরাট মিছিল। গড়িয়াহাট মোড়ে যখন ওর প্রান্তভাগ তখন মিছিলটা বালিগঞ্জ স্টেশন ছাড়িয়ে কতদূর গেছে তা বলা দুঃসাধ্য। কলেজের ছাত্র-ছাত্রীই বেশি। তাদের হাতে রয়েছে নতুন শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে লেখা নানা স্লোগান। নিমেষেই নিরঞ্জনবাবু হারিয়ে যান ফেলে আসা অতীতে।
সময়টা তখন সত্তর দশকের মাঝামাঝি। উত্তাল সেই সময়ে বহু মেধাবী ছাত্র সেদিনের সেই আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পড়ে। প্রতিদিন খবরের কাগজে নিত্যনতুন হিংসার খবর। ঘর-বাড়ি জ্বলছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরীক্ষার নামে চলছে প্রহসন। বিপ্লবের বার্তা নিয়ে বহু মেধাবী ছাত্র নানা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মাঝপথেই পড়াশোনা ইতি টেনেছে।
সেই উত্তাল সময়ে যাদবপুর এলাকার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়ে এসেছেন নিরঞ্জন বাবু। সেদিনটি ছিল নভেম্বরের শেষ কিংবা ডিসেম্বরের প্রথমার্ধ। স্কুলে তখন বার্ষিক পরীক্ষা চলছে।
এক ঘন্টাও হয়নি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। হঠাৎ কিছু ছাত্র বিপ্লবের স্লোগান দিতে দিতে বিদ্যালয়ে ঢুকে পড়ে। মুহুর্মুহু স্লোগানে বিদ্যালয় চত্বর মুখরিত। তাদের দাবি পরীক্ষা বন্ধ করতে হবে না হলে সবাইকে বই খুলে লেখার অনুমতি দিতে হবে। প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের পরামর্শে দুদিকের গেট বন্ধ করে দেওয়া হলো। সহশিক্ষকদের প্রত্যেককে ক্লাসের বাইরে আসতে নিষেধ করলেন। একাই গিয়ে দাঁড়ালেন তাদের সামনে। তিনি চিৎকার করে উঠলেন-- বন্ধ দরজার দিকে এগোতে গেলে আমার লাশের উপর দিয়ে যেতে হবে। সন্তানসম আমার ছাত্রদের কোন ক্ষতি আমি হতে দেবো না। হঠাৎ প্রতিরোধে বিপ্লবী ছাত্ররা একটু হকচকিয়ে যায়। ওদের মধ্যে একজন এসে স্যারকে প্রণাম করে। স্যারের প্রথম দিকের ছাত্র গৌতম। নিরঞ্জনবাবু তাদের বোঝান। দেশের মুক্তি হিংসার মাধ্যমে আসে না। এদেশ বিদ্যাসাগর রামমোহন বিবেকানন্দের দেশ। এই মনীষীদের ভাবধারা যত বেশি চর্চিত হবে ততই মানবমনের বিকাশ ঘটবে। তোমরা হিংসার পথ ত্যাগ কর। পড়াশোনার জগতে ফেরো। দেখবে সেখানেই মানুষের মুক্তির সঠিক দিশা। একটা জাতি তখনই জেগে ওঠে যদি তারা শিক্ষা-দীক্ষায় সমৃদ্ধি লাভ করে। উন্মত্ত বিপ্লবী দল ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে সেদিন ফিরে যায়। ছাত্রদের পরীক্ষাও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। হেডস্যারকে ঘিরে তখন উজ্জ্বল কতগুলো মুখ।
হঠাৎ একজন মিছিল থেকে সরে এসে প্রণাম করে। চিন্তার খেইটা হারিয়ে যায়। 'স্যার ভালো আছেন? আমি গৌতম। এখন একটা কলেজে পড়াই'। নিমেষেই অতীতটা ভাস্বর হয়। দুহাতে ওকে জড়িয়ে ধরেন নিরঞ্জনবাবু। চোখ দুটো হাসি-অশ্রুতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মিছিলটা ততক্ষনে অনেকটাই এগিয়ে গেছে...
ঈদগাহ
শ্যা ম ল কু মা র মি শ্র
গাত্রোত্থান করলেন রমজান চাচা। ষাটোর্ধ্ব যুবক। দীর্ঘদেহী। সুঠাম দেহ। পলিত কেশ আর শ্বেতশুভ্র শ্মশ্রুতে যেন সাক্ষাৎ ফেরেশতা। সুরমা আঁকা দুচোখে যেন স্বপ্ন খেলা করে। চোখ দুটোতে এক স্বপ্নিল গভীরতা। ওই চোখের দিকে তাকালে ইবলিশও যেন হিংসা ভুলে যায়। আজানুলম্বিত সফেদ আলখাল্লা গায়ে দিয়ে তাসবির মালা হাতে এগিয়ে চলেছেন ইছামতির তীর ধরে। রমজানের শেষ নিশিযাপন। রমজান চাচা স্থির নেত্রে তাকিয়ে রইলেন পুবাকাশপানে। আলোকরশ্মি ছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত আকাশ জুড়ে। অপরূপ এক রঙের খেলা। সুবহে সাদিকের আলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে রমজান চাচা উপলব্ধি করলেন ফজরের নামাজের সময় এসে গেল। রাত ফুরোলেই খুশির ঈদ। সুবহে সাদিকের দিকে তাকাতে তাকাতে ইছামতির তীরে আজ ফজরের নামাজের প্রস্তুতি নিলেন চাচা। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। কুল কুল রবে বয়ে চলেছে ইছামতি। জীবনের নানা কথা ইছামতির ঢেউয়ে ঢেউয়ে। সব নিয়ে যেন ইছামতি রমজানের কানে কানে বলে যায়-- ভালোবাসার কথা, বলে যায় আর হিংসা নয়, আর যুদ্ধ নয়। ভালোবাসাই হোক জীবনের শেষ কথা। চারিদিকের বিস্রস্ত হিংসার যেন শেষ হয়। ক্রমবর্ধমান হিংসা আর জাতপাতের ব্যথায় ভরে ওঠে রমজানের বুক। দুচোখ বেয়ে টপটপ করে জল পড়তে থাকে। সালাত শেষে ধীরে চোখ খোলেন। ধীর পায়ে ঈদগাহের দিকে এগিয়ে চলেছেন রমজান চাচা। ঈদগাহে তখন নানা বর্ণের সমাবেশ। বিভিন্ন বয়সের ছেলেমেয়েদের ভিড়। সবারই যে বড় প্রিয় রমজান চাচা। ছোট বড় সবার কাছেই রমজান ভাই চাচাজী নামেই পরিচিত।
ছোট্ট তামিম এসে জড়িয়ে ধরে চাচাজীকে। হাজারো প্রশ্ন তার। রোজা কি? রমজান কাকে বলে? এমনি নানা প্রশ্ন। ঈদগাহের এক প্রান্তে শস্পরাজির মাঝে একখন্ড পাথর। তার উপর স্থির হয়ে বসলেন রমজান চাচা। সকালের একটুকরো মিষ্টি আলো ছাতিমের পাতা ভেদ করে রমজান চাচার মুখে এসে পড়েছে। পবিত্র সেই মুখে যেন আলোর অঞ্জলি ঝরে পড়ছে। ছাতিমের ডালে পাতার আড়ালে ডেকে চলেছে নাম না জানা এক ছোট্ট পাখি। তার সুরে যেন ঝরে পড়ছে ঈদের আনন্দ। মৃদু মন্দ বাতাস এসে খেলা করে চলেছে পলিত কেশ মাঝে। উদীয়মান সূর্যের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন হারিয়ে যান রমজান চাচা। দুহাতে গলা জড়িয়ে ছোট্ট তামিম বলে ওঠে --কি দাদাই তুমি বলবে না? তুমি কোথায়? দুহাতে মুখটা ধরে নাড়া দেয় তামিম। ও দাদাই! তুমি বল না। তুমি কি হারিয়ে গেছ? উন্মুক্ত নদী তীরে পলল খন্ডে বসে থাকা মানুষটি ধীরে ধীরে যেন ফিরে আসেন মর্ত্যলোকে। সস্নেহে বুকে টেনে নেন তামিমরে। তারপর বলতে থাকেন-- রমজান মাস হলো আত্মশুদ্ধির মাস।'রমজ'---শব্দের অর্থ হলো তাপদগ্ধ। একমাস রোজা বা সাওমের মাধ্যমে ঘটে প্রবৃত্তির আত্ম নিয়ন্ত্রণ। আগুনে পুড়ে সোনা যেমন খাঁটি হয় সাওমে তেমনি ঘটে মানুষের পূর্ণ মুক্তি। ষড়রিপু থেকে মুক্তি। রমজান চাচা বলে চলেন--রমজান মাসের প্রথম দশদিন রহমতের বারিধারায় পূর্ণ থাকে, দ্বিতীয় দশদিন ক্ষমা ও মার্জনার জন্য নির্ধারিত। শেষ দশদিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায় নির্ধারণ করে। ফলে রমজান মাস মুসলমানদের জীবনে ত্যাগ ও পবিত্রতার বার্তা বয়ে আনে।
বলতে বলতে রমজান চাচা যেন কোথায় হারিয়ে যান। সূর্যের আলো এসে পড়েছে শ্বেতশুভ্র শ্মশ্রুগুম্ফ সমন্বিত মুখটিতে। আলোআঁধারির যেন এক অপূর্ব খেলা রমজান চাচার চোখে মুখে। দুচোখ বেয়ে জলের ধারা। অস্ফুটে বলে ওঠেন--রমজান শেষে পবিত্র এই ঈদের দিনে বাগটুই এর মানুষদের জন্য ব্যথায় বুক ভরে উঠছে। রমজান চাচার দুচোখের ভেতর দিয়ে খোকন ও যেন দেখতে পাচ্ছে হিংসার বলি মানুষগুলোকে। ঈদগাহ যেন রক্তে ভেসে চলেছে। দুহাতে মুখ ঢেকে উঠে দাঁড়ান রমজান চাচা। হাত বাড়িয়ে দেয় খোকন। খোকনের হাত ধরে এগিয়ে চলেন রমজান চাচা। পেছনে ঈদগাহের মাইকে তখন বেজে চলেছে ---
জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে
বন্ধু হে আমার রয়েছ দাঁড়ায়ে...
যন্ত্রণা
ম ঞ্জু চ্যা টা র্জি
রোজকার মতো সুবোধ বাবু প্রাতঃভ্রমনে বেরিয়েছেন। রোজকার সঙ্গীরা সবাই দুরত্ব বজায় রেখেই যে যার মতো হাঁটছেন। মাঝে মধ্যে এই আনলকড টু নিয়ে একটু আধটু কথা বার্তা চলছে। হাঁটার তালে সবই যে শোনা যাচ্ছে এমন ও নয়। হঠাৎ সুবোধ বাবুর মাথায় ঠক করে কি উড়ে এলো এসে লাগলো। উনি যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠে মাথা ধরে বসে পড়েন।
প্রাতঃভ্রমনকারীদের মধ্যে তো হৈ চৈ পড়ে গেলো, কেউ বেশি এগোতেও পারছেন না। দেখা গেলো, সুবোধ বাবুর সামনে একটা গুলতি পরে আছে। আরে! এটা কোথা থেকে এলো!! এটা ছুঁড়ে মারলোটাই বা কে? সবাই এদিক দেখতে লাগলো কর্মটি কে করেছে,, একজনের চোখে পড়লো গাছের আড়ালে একজোড়া চোখ। আরে এ তো বিল্টু!সুবোধ বাবুদের পাশের ফ্ল্যাটেই থাকে। বছর সাতেকের ছেলেটিকে পাকড়াও করে নিয়ে আসে একজন।
কি রে! বিল্টু, সুবোধ বাবু কে হঠাৎ গুলতি ছুঁড়ে মারতে গেলি কেন বল? তুই বাড়ি ছেড়ে একা এত দূর এলিই বা কেন! বিল্টুর চট জলদি জবাব ওই তো দাদুটা-কে মারতে এসেছি। কেন কি করেছে ওই দাদু তোকে? আমাকে না, দাদুর বাড়ির সামনে ফুটপাতে যে পাগলীটা বসে থাকে, একটু নোংরা ছড়ায় তো, আমি জানলা দিয়ে দেখেছি ওই দাদুটা ছোট ইঁটের টুকরো ছুঁড়ে মেরে বলে যাঃ ভাগ!!
সবাই বলতে থাকে,, বেশ করে, ওই দাদু আর পাগলীটা কি এক হলো? তোর কি বুদ্ধি শুদ্ধি নেই? দাঁড়া তোর বাড়িতে বলতে যাচ্ছি আমরা। সুবোধ বাবুকে একজন জলের বোতল থেকে মাথায় জল ঢালতে থাকে। সুবোধ বাবু মাথার ফোলা জায়গায় হাত বোলাতে বোলাতে ভাবে 'আমি আর ওই পাগলী টা এক নই ঠিকই, কিন্তু "যন্ত্রনা"-টা বোধহয় এক'।
২৩ শে শ্রাবণ
ম ধু মি তা রা য়
বৃষ্টির একটানা রিমঝিম শব্দে ঘুমটা ভোরের দিকে বেশ নিবিড় হয়ে এলো।একটা সবুজ জল ছপছপে মাঠ, চুপচুপে ভেজা কদমগাছ...শ্রাবণী হেঁটে চলেছে...
চুল বেয়ে টুপটুপ করে জল পড়ছে। হঠাৎ বৃষ্টিশেষের নরম আলোয় সারা আকাশ জুড়ে রামধনু উঠল...
"ওঠ এবার, এত বেলা অবধি ঘুমায় কেউ"... অনেক কষ্টে স্বপ্নটা থেকে বের হতেই মায়ের মুখ।
"হ্যাপ্পি বার্থডে"... বাবার হাতে একটা গিফট প্যাকেট।
এক লাফে উঠে পড়ল শ্রাবণী।
বৃষ্টি থেমেছে। জানলার পর্দাটা সরাতেই হাস্নুহানার গন্ধ ভেসে এলো। একটা বছর পার হয়ে গেল।বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠল হঠাৎ।
পড়ার টেবিলে বসে ডায়রিটা বের করল। আস্তে আস্তে পাতা উল্টালো...
১৫ই শ্রাবণ
আজ তোমার সাথে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। মন আজ বেজায় খুশি। বিকেলে সেতার বাজালাম অনেকক্ষণ। জানিনা সে সুর পৌঁছলো কিনা তোমার জানলায়! তবু তোমার জন্যই, কেবল তোমার জন্যই ইমনের স্বরলিপি জুড়ে ভালোবাসা আঁকলাম।
১৮ ই শ্রাবণ
আজ একবারও ফোন করলে না কেন? মেসেজর উত্তরও দিলে না! ভীষন মনখারাপ লাগছে। কিছু তো বলো! রাগ করেছ কি? অভিমান? নাকি সেই মেয়েটা যার চোখের প্রশংসা করছিলে সেদিন তার কথাই ভাবছ? আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না, কিচ্ছু না।
২২শে শ্রাবণ
তুমি আজ আমার ফোন কেটে দিলে! লিখতে পারছি না চোখ আবছা হয়ে আসছে। আগামীকাল আমার জন্মদিন। তোমার কি তাও মনে নেই!
তারপর এই একবছরে আর একটা অক্ষরও লেখা হয়নি শ্রাবণীর। এক বছর আগের সেই জন্মদিনে কেবল একটা মেসেজের প্রতীক্ষায় সারাটা দিন কাটিয়ে রাতের বালিশে ঢেলে দিয়েছিল সমস্ত কষ্ট।
এক ঝলক বাতাস এলোমেলো করে দিল ডায়রির পৃষ্ঠাগুলো। শুকনো গোলাপের পাপড়িগুলো ছড়িয়ে পড়ল ঘরজুড়ে। সে দিয়েছিল এমনই এক জন্মদিনে। যত্নে রেখে দিয়েছিল ডায়রির ভাঁজে।শ্রাবণী পাপড়িগুলো কুড়োতে থাকে।
আকাশ এখন মেঘলা। ছাদের রেলিং-এ ঝুঁকে অনেক নীচের চলমান স্রোত দেখছিল শ্রাবণী। তার দুনিয়াটাই কেবল থমকে গেছে। এপার ওপারের মাঝের সাঁকোটা বিপজ্জনক ভাবে দুলতে থাকে।
হঠাৎ ই সারা আকাশ জুড়ে রামধনু উঠল।
সেই ভোরের স্বপ্নের মত।
শ্রাবণী শুনল মা ডাকছেন... মনি নীচে এসো, তোমার বন্ধুরা এসে গেছে কেক নিয়ে... মনি...মনি...
সবুজ সাথী
ন ন্দি তা সো ম
মন ভালো লাগছিলো না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম জানালার ধারে। কি ভাবছিলাম কে জানে!! হঠাৎ কোথা থেকে এক ঝলক বৃষ্টি ভেজা ঠান্ডা হাওয়া আমার চোখ, মুখ স্পর্শ করে গেলো। ইশারায় ডাক দিলো। বলে উঠলো- এই মেয়ে, মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? নেমে আয়, নেমে আয় এই উন্মুক্ত প্রান্তরে, খোলা আকাশের নিচে। মনের বন্ধ জানালা খুলে ছড়িয়ে দে নিজেকে। উড়িয়ে দে মন খারাপের সব উপকরণ। দেখবি,,, মন ভালো হয়ে গেছে রে। অবিশ্বাসের স্বরে বলে উঠলাম- তাই আবার কখনো হয় না কি? আত্মবিশ্বাসে সে বলে উঠলো- আয় না, চেষ্টা করে দ্যাখ না। ছুটে গেলাম প্রান্তরে, মনের জানালা উন্মুক্ত করে ছড়িয়ে দিলাম নিজেকে। বৃষ্টি ভেজা ঠান্ডা হাওয়া ঢুকে পড়লো খোলা জানালা দিয়ে মনের অন্দর মহলে। খুব ভালো লাগছে--- সত্যি খুব ভালো লাগছে। কিন্তু একি? চোখ দিয়ে অজান্তে বেরিয়ে আসছে বারিধারা। প্রথমে ফোঁটায়,, তারপরে অঝোরে। বাইরে, মনে- বৃষ্টিধারা হয়তো ধুইয়ে দিচ্ছে আমার মন খারাপের কারণগুলো। বৃষ্টির জলে আমি সম্পুর্ন সিক্ত। খুব ভালো লাগছে। আদর করে প্রকৃতি বলছে- মন খারাপ করবি না। আমরা আছি তোর মনকে ভালো করে দেবার জন্য। কি করে ভুলে ছিলাম তোমাকে? তুমি তো আমার সবুজ। তোমার সাথে ছিলো যে আমার মনের অটুট বন্ধন। হৃদয় দিয়ে তোমায় ভালোবেসেছি। তুমি যে আমার প্রথম ভালোবাসা সবুজ। মনে আছে সবুজ,, আমার বাবা প্রথম তোমার সাথে আমায় পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন- দেখো, কতো রঙ ছড়িয়ে আছে চারিধারে। লাল, হলুদ, সবুজ, নীল কতো রঙের বর্ণের ছড়াছড়ি। হেসে বলেছিলেন- তোমার কাকে পছন্দ? দৌঁড়ে গিয়েছিলাম সবুজে ভরা একরাশ পাতার কাছে। বলেছিলাম- বাবা আমার সবুজ চাই। হেসে বললেন- ঠিক আছে, আজ থেকে সবুজ তোমার সাথী। সেই শুরু হলো পথ চলা। বৈচিত্র্যময় তুমি, মিল অমিলের মাঝে তোমার স্থিতি। তোমাকে ভাল করে চিনতে গিয়ে নিজেকে ভুলে গেলাম। কোথায় যেনো হারিয়ে ফেললাম নিজেকে। সবুজ, আমার হারানো আমিকে তুমি কি আবার খুঁজে দিলে? আর আমায় হারাতে দেবে না তো? আমি যে হারাতে চাই না গো।
জানিনা, কি করে হারালাম আমি। হয়তো বাবার হাতের মুঠো আলগা হয়ে গিয়েছিলো। হয়তো কোনো ঝড় তোমাকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিলো।
আজ বাবা নেই। কিন্তু তোমাকে আবার আমি খুঁজে পেয়েছি। তুমি শক্ত করে জড়িয়ে রেখো আমায়। সবুজের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাঁচা যায় না,, বাঁচতেও চাই না। তোমার চির সত্যের মধ্যে আমি শাশ্বত হয়ে বেঁচে থাকতে চাই। তোমার রূপ, রঙ, বর্ণের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই। তোমার শাশ্বত ভালোবাসার বন্ধনে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে চাই। রাখবে তো সবুজ আমায় তোমার করে?। বাদল ধারা আমায় সম্পূর্ন সিক্ত করে কানে কানে একতারা বাজিয়ে বলে উঠল- শুধু সবুজ কেন- আমিও আছি তোমার সাথে, আমাকেও যে তুমি খুব ভালোবাসো। আমরা মিলে মিশে থাকবো।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন