পত্রসাহিত্য




ফ্রাইডেস্ ফর ফিউচার

সা য় ন্ত ন  ধ র


এই পৃথিবীকে নিয়ে, তার প্রকৃতিকে নিয়ে খেলে চলা মানুষদের কাছে, হাজার আশ্বাসের মধ্যে একটিকেও বাস্তবায়িত না করা দেশ নায়কদের কাছে আমার এই খোলা চিঠি...

আমি একবিংশ শতাব্দীর সন্তান। জন্ম নিয়েছি রাজনৈতিক ভাবে আপাত শান্ত কিন্তু জলবায়ুগতভাবে উত্তপ্ত এক পৃথিবীতে। মানিয়ে নেওয়া গুণের জন্য অনেক সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারে না যে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশঃ বাড়ছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা জানেন। তারা বারংবার সতর্ক করেন দেশনায়কদের, কিন্তু তাঁরা চুপ থাকতে, হাত গুটিয়ে বসে থাকতে ভালোবাসেন। আমার যখন আট বছর বয়স, বিদ্যালয়ের পাঠক্রমে নতুন কিছু শব্দ শুনলাম। গ্লোবাল ওয়ার্মিং, গ্রীন হাউস এফেক্ট, ওজোন গহ্বর। জানলাম কেন এসব হয়, এর ফল কতটা মারাত্মক হতে পারে। আমরা ওই বয়সে যা জানলাম তার চেয়েও কয়েকগুণ ক্ষতিকারক দিক রয়েছে এই ঘটনাগুলির, রাষ্ট্রনায়করা সবাই তা জানেন। কিন্তু তারা যে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন। গণতন্ত্রের পূজারী হোক বা সাম্যবাদের রক্ষক, ধনী স্বচ্ছল দেশ হোক বা উন্নয়নশীল গরীব দেশ, সকলেই একে অপরের ওপর দোষারোপ করে চলেছেন। তর্জনী তুলছেন একে অপরের দিকে। কিন্তু বাকি তিনটি আঙুল যে নিজের দিকে রয়েছে। কি করেছেন তাঁরা? একের পর এক আর্থ সামিট, কনভেনশন, প্রোটোকল সংগঠিত হচ্ছে, কিন্তু লাভের লাভ কি হচ্ছে? কতটা দূষণ কমাতে পেরেছি আমরা? দূষণ নিয়ন্ত্রণে কতটাই বা সদর্থক ভূমিকা পালন করেছি? দেশ নায়ক যদি এ বিষয়ে উদাসীন হয়, তাহলে জনসাধারণ উদাসীন হবেই। সেক্ষেত্রে পৃথিবীর দশ প্রান্তে দশ জন বা ১৯৫ টি দেশের ১৯৫ জন তাদের একক প্রচেষ্টায় কিচ্ছু করতে পারবেন না। আজ আমেরিকা বা ইউরোপের স্বচ্ছল দেশগুলি যদি প্রোটোকল মেনে না চলি, কনভেনশনের শপথ ভুলে যাই তাহলে অনাহারক্লিষ্ট উন্নয়নশীল দেশগুলো কি করতে পারে? তাই সর্বাগ্রে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। তবে ওই শপথের মত এগিয়ে আসা নয়, যারা এই শপথ রাখতে পারেনি, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ ধর্মঘটের ডাক দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে জানার পর আরও প্রায় আট বছর কেটে গিয়েছে, কিন্তু জলবায়ুর কোন উন্নতি হয়নি, তাই আমি ২০১৮ এর অগাস্ট থেকে বিদ্যালয়ের ক্লাস বাদ দিয়ে প্রতি শুক্রবার সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে ধর্ণা দিতাম। এলো আমার বন্ধুরা। এভাবেই ফ্রাইডেস ফর ফিউচার সংগঠন গড়ে ওঠে। ফিউচার নিয়ে এই আন্দোলনে ব্রতী হতে আমার পূর্বসূরি কখনোই আমাকে আটকাতে পারে না। কারণ তাঁরা বলেছিল "এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।" কিন্তু সেই অঙ্গীকার রাখা হয়নি। তারা গণপরিবহন ত্যাগ করে নিজেদের সুবিধার কথা ভেবে রাস্তায় নামিয়েছে হাজার হাজার গাড়ি ও মোটরসাইকেল। যেখানে একটি বাসে যদি ১০০ জন সওয়ারী হয়, সেই বাসটি মাত্র ১৪ পাউন্ড কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে যোগ করে সেখানে ওই ১০০ জন ব্যক্তি যদি ১০০ টি প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামে তাহলে সেই কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৮৯ পাউন্ড। এতো একটা উদাহরণ মাত্র। এখন যা পরিস্থিতি তাতে সব ধরণের জীবাশ্ম জ্বালানী বাতিল করে অচিরাচরিত শক্তিকে কাজে লাগাতেই হবে। আজকে যারা সবে সংসার শুরু করেছেন, অনেকেই আর সন্তানাদি চাইছেন না। তাঁরা ভীত, এ কোন পৃথিবীতে তাঁরা তাঁদের সন্তানদের রেখে যাবে? ২০১৫ সাল থেকেই জলবায়ু ধর্মঘটের রূপরেখা ছিল, আমি কিছুটা এগিয়ে দিলাম তার গতি। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১ ডিগ্রীতে পৌঁছে গেছে,  অবিলম্বে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রির কম রাখার জন্য দ্রুত ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা এই কয়েক বছরে প্রত্যক্ষ করেছি ব্রাজিলের নিরক্ষীয় সেলভা অরণ্যে দাবানল, দুই মেরু প্রদেশে বরফ গলনের দৃশ্য, আন্টার্কটিকার বরফহীন মৃত্তিকায় সবুজ শৈবালের আধিক্য, মরুশহর সহ একাধিক স্থানে প্রবল বর্ষণে বন্যা পরিস্থিতি, হ্যারিকেন, টাইফুন, টর্নেডো ও সুপার সাইক্লোনে ধ্বস্ত হয়েছে উপকূল থেকে মহাদেশীয় ভূমিভাগ, উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে অস্ট্রেলিয়ার মত দ্বীপ দেশেও। কৃষির নামে চলছে ধোঁয়াশার খেলা, শিল্পের নামে জল দূষণ...

দেখেছো আজ প্রকৃতি কেমন অদ্ভুত রকম খেয়ালী হয়ে উঠেছে
সেই যে বৈশাখী দারুন দহন দিনে
মেঘের সমুদ্র আকাশের সবটা জুড়ে
তারপর একে একে শ্রাবণের ভরা বর্ষা
শরতের মহালয়া ভোর
কদম বকুলের গন্ধ ভেসে গেছে বর্ষার ঘোলা জলে
কাশের পালক ঝুরে জল
মেঘের সমুদ্র শুকোয় না আর
এসেছে আশ্বিন
তবু আসে না রোদেলা দিন
প্রকৃতি তোমার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে যে
তুমি ভালো আছো তো ...

২০১৯ সাল থেকে আমার এই আন্দোলন আমি ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলাম বিদ্যালয় থেকে বিশ্বে, অফিস চত্বর থেকে অবনীর প্রান্তে প্রান্তে, গ্রাসরুটস থেকে গ্লোবালে। ইতিহাসের বিখ্যাত জলবায়ু আন্দোলনে এগিয়ে এসেছে জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, আমেরিকার নিউইয়র্ক সহ ৪০ টি দেশের ২০০০ এর বেশি বিজ্ঞানী। আমাদের শক্তি আমাদের এই আন্দোলন এযাবৎকালের বিজ্ঞান দ্বারা সমর্থিত। ২০১৯ এর জাতিসংঘের জলবায়ু শীর্ষক সম্মেলনের তিন দিন আগে ২০ সেপ্টেম্বর এই আন্দোলন কার্যকর হয় যা ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে। আমি ২ লক্ষ ৫০ হাজার আন্দোলনকারীর সামনে বক্তব্য রেখেছি। ২৭ সেপ্টেম্বর আন্দোলনের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ২৪০০ টি আন্দোলনে অংশ নেন আনুমানিক ২ মিলিয়নের বেশি মানুষ। মন্ট্রিলের বক্তৃতার জন্য মন্ট্রিল স্কুল বোর্ড তাদের ১ লক্ষ ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর ক্লাস বাতিল করে। বৈশ্বিক এই আন্দোলন কার্যকর হয় অসংখ্য স্থানিক আন্দোলনের সাফল্যে। ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটে আমন্ত্রিত হই রাষ্ট্রসঙ্ঘে। সেখানে মহাসচিব আন্তোনিও গুট্টেরেজের সামনে আমার বক্তব্য তুলে ধরেছি, বক্তব্য রেখেছি দাভোসের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে। এই আন্দোলনে আমি একা নই, আইনের সাহায্য নিয়ে ২১ জন তরুণ তরুণী মামলা করেছে- 'জুলিয়ানা বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মামলা'- যার অন্যতম। আমি বলতে চাই, বিভিন্ন দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, সংসদ সদস্যরা, ব্যবসায়ীরা, সাংবাদিকরা আমাদের নিয়ে মজা করা মিথ্যে প্রচার করা বন্ধ করুন। সত্যকে প্রচার করুন আপনাদেরই উত্তরাধিকারীদের স্বার্থে।

এবারে আমি তোমাদের বলছি, যারা আমার এই আন্দোলনকে সমর্থন করে নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত রাখতে এগিয়ে আসবে ঠিক করেছো। যারা এখনো দ্বিধায় রয়েছো তাদের প্রতি আমার এই চিঠি...

পিটার কালমুস, কেট মার্ভেল, মাইকেল মান এর মতো জলবায়ু বিজ্ঞানীরা আমাদের সাথে আছেন। ২০১৯ এ বিশ্বের ১৫০ টি দেশের ৪৫০০ টি স্থানে প্রায় ছয় মিলিয়ন মানুষ এগিয়ে এসেছিলেন (দ্য গার্ডিয়ানের রিপোর্ট অনুসারে) সেই সংখ্যাটাকে আরও বাড়িয়ে নিতে হবে। ভারতে দিল্লি, চেন্নাই, পুনে, মুম্বাইয়ের মতো মেট্রোপলিটন, পাঞ্জাবের ফাগওয়ারা, তামিলনাড়ুর নাগেরকয়েল, রাজস্থানের কিষাণগড়, মহারাষ্ট্রের শোলাপুর, কেরলার আলুভা, কর্ণাটকের হোন্নালি, উত্তর প্রদেশের গৌরীগঞ্জ, ছত্তিসগড়ের অম্বিকাপুর, মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড়, আসামের মঙ্গলদৈ এর মত ছোট শহরের মানুষ এগিয়ে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গের বিজ্ঞানমঞ্চ উদ্যোগ নিয়েছে আমাদের আন্দোলন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে। তোমরাও সকলে এগিয়ে এসো। বৃক্ষরোপণ দিবসের মধ্যে গাছ লাগানোকে সীমাবদ্ধ রেখো না। শুধু গাছ লাগানোই নয় তাদের পরিচর্যা করতে হবে। গণপরিবহন ব্যবহার করতে হবে। বাইক বা প্রাইভেট কারের পরিবর্তে সাইকেল বা ইলেকট্রিক যান ব্যবহার করতে হবে। তোমাদের সেই স্যারের কথা মনে আছে যিনি পরিবেশ দূষিত হবে দেখে ধূমপান করেন না, আরামদায়ক চারচাকায় ঘোরেন না, পড়ে থাকেন শুধু গাছেদের পরিচর্যায়? তাঁর মত হতে হবে। আমি যে শুধু ভাষণ দিচ্ছি তাই নয়, আমিও কিন্তু ইংল্যান্ডের মে ফ্লাওয়ার অ্যারিনা থেকে মলিজিয়া ২ জাহাজে চেপে জলপথে নিউইয়র্ক গিয়েছিলাম জলবায়ু বৈঠকে যোগ দিতে। বিমান পরিত্যাগ করেছিলাম কার্বন ফুটপ্রিন্ট বেশী হয় বলে। তাই দলে দলে এগিয়ে এসে সফল করে তুলতে হবে জলবায়ু ধর্মঘট, এই পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য, আগামী প্রজন্মকে বাঁচানোর জন্য।

না ...
প্রকৃতিকে কোন প্রশ্ন নয়
ঝড়, বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি
-এ সবই ভিন্ন ভিন্ন সময়ে
ঋতুভেদে প্রকৃতিরই রূপ
মমতাময়ী প্রকৃতির কোলেই তার সন্তান সুরক্ষিত

সন্তান যদি ক্ষমতালোভী হয়
সন্তান যদি অহঙ্কারী হয়ে 
ধরাকে সরা জ্ঞান করে
সন্তান যদি অরণ্য নিধন যজ্ঞে মাতে-- সন্তান যদি প্রকৃতির বিরুদ্ধাচারণে লিপ্ত হয়-- সন্তান যদি এভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার করে-- সন্তান যদি নিজেকে ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী ভাবে-- তাহলে তার ধ্বংস যে অনিবার্য!!!

তার হাত ধরেই আসবে 
আম্ফানের মতো প্রলয়ঙ্কারী ঝঞ্ঝা প্লাবণ সুনামী মহামারী ...

এতে আর আশ্চর্য কি ...

তাই মা প্রকৃতির কাছে 
কোন প্রশ্ন নয় 
সব বিপর্যয়ের জন্য 
প্রকৃতি দায়ী নয়।
মানুষকে ভাবতে হবে-
আরো ভাবতে হবে ...

                       ~ইতি, গ্রেটা থুনবার্গ।






এবং পরকীয়া

আ র তি ধ র


-একটু আগেই হলো দেখা, 
ফিরে এসেই চিঠি  লেখা..! 

-হ্যাঁ, লুকিয়ে দেখা, জানিয়ে দেখা, স্কুল, কলেজ পালিয়ে দেখা! প্রেমের পাঠ যে এমনই! কত যে কথা, যেন শেষ হয়না। দেখা হলে কথা, দেখা না হলে তার'ই কথা ভাবা! এত দেখাদেখির পরেও চিঠি লেখা! 

-চলো না আজ দুজনে মিছিমিছি করি অভিমান, 
দেখি কার প্রেম কত গভীর, 
কে ভাঙায় প্রথম কার মান!

প্রেম নিয়ে কত যে কাব্য, কবিতা। প্রেমের যে কত রকমের বহিঃপ্রকাশ! যৌবনে প্রেম আসে জীবনে। একটি পুরুষ একজন নারী দুজনের এই প্রেম অনেক সমতল, অসমতল পর্যায় অতিক্রম করে একসময় বিয়ে নামক সামাজিক স্বীকৃতি পেয়ে লুকোচুরি পর্বের ইতি ঘটে...! 

-না... প্রেমের ইতি বলিনি! একজোড়া বিবাহিত স্বামী স্ত্রীর এই স্বীকৃতি লাভ করা প্রেম কাহিনী আবার অন্যরকম! তাদের  দুজনের একসাথে ওঠা বসায় আর কারও চোখ রাঙানি নেই। মোটকথা তাদের আর লুকোচুরি নেই, বাঁধন ভাঙা প্রেমের জোয়ারে তারা দুজন ভেসে যেতেই পারে....!

-আস্তে আস্তে দাম্পত্য সুখ অনুভব, ধীরে ধীরে সোনালী আগামীর স্বপ্ন... 

এ যে চিরকালীন সমাজ ব্যবস্থা। এভাবে এগিয়ে চলছে জীবনের পরম্পরা। কিন্তু এই পরম্পরায় বিঘ্ন ঘটছে আজকাল একটি অন্য উপাখ্যান মাঝে প্রবেশ করাতে...! 

-ভরা সংসার, স্বামী সন্তান, 
তবুও মন কেন আনচান, 
কিসের অভাব কে জানে? 
মন ধেয়ে যায় কিসের টানে!

-ঠিক ধরেছেন, আমি পরকীয়ার কথাই বলতে চাইছি। অনেকে আবার 'পরকীয়া' শব্দটির আগে 'প্রেম' শব্দটি ব্যবহার করেন! তবে আমি ঠিক বুঝতে পারিনা, পরকীয়া কি প্রেম...? 

প্রেম..., লুকিয়ে হোক আর দেখিয়ে হোক দুটোই গ্রহণযোগ্য পরিবার তথা সমাজের কাছে। কিন্তু পরকীয়া...? এর যেমন বর্তমান বলে কিছু নেই, তেমনই ভবিষ্যৎ ও সুখময় নয়।

--তবুও... 
এই পরকীয়ার আজ বাড়বাড়ন্ত অফুরন্ত! আর এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দুটো নয়, তিনটি পরিবার। কারণ পরকীয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয় বিবাহিত দুটো মানুষের মাঝে তৃতীয় একজনের উপস্থিতি, এবং এই তৃতীয় জন ও হয়তো বিবাহিত বা বিবাহিতা..! ক্ষণস্থায়ী এই পরকীয়া ভেঙে তছনছ করে পরিবারের সমস্ত সুখ, সম্পদ। 

-বদলে গেছে সমাজ, বদলে গেছে সমাজের চালচিত্র। কথাটি সত্যি। তবে কিভাবে এল এই বদল...? 

-অতি আগে দেবর বৌদি বা শালি জামাইবাবু সম্পর্কে একটু খুনসুটি হয়তো ছিল তবে তা কখনো শালীনতার সীমা অতিক্রম করত না। তার কারণ কিশোরী বয়সে স্বামীর ঘরে এসে বেশিরভাগ নববধূ দেখতেন শাশুড়ির কোলে খেলা করছে তার দেবর নয়তো শাশুড়ির গর্ভে বড় হচ্ছে তার ননদ! আবার শোনা যায় অনেক সময় কাকা, ভাইপো জন্ম নিয়েছে একই বছরে...! 

এভাবেই তারা কখনো মায়ের কোলে কখনো বৌদির কোলে বড় হয়ে উঠতেন, আর এভাবেই একসময় তারা মা, বৌদিকে একই নজরে দেখতেন। 

আর একটি ব্যাপার ছিল জীবনযাত্রা! এত ফ্ল্যাট বাড়ি, এত নিউক্লিয়ার পরিবার ছিলই না! যার ফলে গ্রাম অথবা শহরে প্রতিবেশীদের সাথে ছিল পাড়াতুতো সম্পর্ক, সেখানে পাশের বাড়ির ছেলেটি অথবা মেয়েটির মাঝে সম্পর্ক ছিল ভাইবোনের। কেউ কাউকে অশালীন ইশারা করার কথা বোধহয় ভাবতেন ও না।

একটি কিশোরী যেমন বিয়ে হয়ে এসে সন্তান জন্ম দেওয়া আর তাদের মানুষ করতে করতে  তার সাধ, আহ্লাদ কিছু আদৌ আছে নাকি অথবা স্বামীর কাছে কিছু চাইবার থাকতে পারে একথা ভুলেই যেতেন। অপরদিকে সেই পুরুষ মানুষটিও পিতা হবার দায়িত্ব, পিতার আদেশ, উপদেশ মেনে সংসারের হাল টানতে গিয়ে ভুলেই যেতেন পরকীয়া তো দূরের কথা নিজের স্ত্রীর সাথে একটু বাইরে কোথাও ঘুরে আসা যায়.....! 

'পৃথিবী বদলে গেছে
চলো উপভোগ করি যৌবনের
যত উন্মাদনা
প্রেম, বিবাহ তো জীবনের পরম্পরা
এর মাঝে একটু পরকীয়া করতে নেই আজ মানা...!'

আজ সত্যিই নেই মানা। মানা করলেও কেউ শুনবে না। ভবিষ্যত নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করার সময় কোথায়! তারচেয়ে বর্তমান নিয়ে স্ফুর্তিতে জীবন কাটানোই বুঝি মঙ্গল! আর এই মঙ্গল পরিবারে ডেকে আনছে অমঙ্গল, ভ্রষ্ট হচ্ছে পারিবারিক সুখ, নষ্ট হচ্ছে সন্তানের ভবিষ্যৎ! 

-এত ভাঙন
রোধ করা প্রয়োজন 
এসো দিনশেষে ঘরমুখি হই
শান্তিতে রই। 

---নাঃ... দিনশেষে আশাহত হতে হয়। সংবাদে চোখ রাখি, প্রেম, পরকীয়া, পরিণতি সব দেখে দীর্ঘশ্বাস আসে অজান্তেই মুখে বলি কি দেখছি.... সংবাদ নাকি তার বিপরীত শব্দটি...!







মেঘের কাছে গাছের চিঠি

স র মা  দে ব দ ত্ত 


প্রিয় সাথী মেঘ,

প্রথমেই জানাই তোমাকে এবং তোমার পরিবারের সকলকে আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে এক আঁজলা ভাদুরে শীতল ভালোবাসা। আশা করি পরিবারের সকলকে নিয়ে তুমি বেশ ভালোই আছো।

 সত্যি করে বলতো মেঘ তুমি কী আমার উপর মান করেছ? আজ কতদিন হল তোমার কোন সাড়া নেই তোমার স্পর্শ পাইনি। আগে তো কখনো এমনটি হয়নি।তোমার শীতল স্পর্শ আমাকে বাঁচার আনন্দে উজ্জীবিত করে। তোমাকে ছাড়া কী করে বাঁচি বলতো!
দূর থেকে শুধু তোমাকে দেখি তুমি তোমার সহচরীদের সঙ্গে আকাশে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত মুখরিত করে ছুটে বেড়চ্ছ। আর আমি যেন কলেজ গেটে দাঁড়িয়ে থাকা একব্যাকুল প্রেমিক। চাতকের মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছি কখন তুমি ঝরে পড়বে আমার মাথায়, গালে, ঠোঁটে, কপালে আর আমি তৃপ্তি ভরে তোমার ভালো বাসা আকণ্ঠ পান করে বাঁচার আনন্দে মেতে উঠবো আর চারিদিক সবুজে সবুজে ভরিয়ে দেব প্রাণের প্রাচুর্যে। 

তাই বলছি প্লিজ অভিমানিনী  তুমি আর অভিমান করে থেকো না। তুমি এক ছুটে চলে এসো আমার কাছে। চল না আমরা দুজন মিলে আমাদের এই পৃথিবীটাকে আরও সুন্দর করে গড়ে তুলি। 

 অনেক আবোল তাবোল বকলাম। আজ আর নয় এবার কলম ছুটি চাইছে। আবারও তোমার জন্য এক আকাশ অন্তহীন ভালোবাসা পাঠালাম। 

 ইতি--- 
তোমর বিরহী বৃক্ষ







বিবাহ বার্ষিকী

শ্রী সা র থি ম জু ম দা র


আজি তোমাদের মিলন দিনে দখিনা সমীরণ উতলা আকুলা। শাল মহুয়ার মদিরগন্ধে মদিরা বিধূরা। মধুগন্ধভরা এই ফাগুন তোমাদের জীবনকে করেছিল স্বপ্নিল, আঁখিপাতে জেগেছিল বিস্ময়, স্বপ্নময় আর রহস‍্যময় ভাললাগার ঘুম ঘুম মোহিনী মায়া। মিলনরাতি হয়েছিল মধুময়। আবেশে বিভোর, স্বপ্নিল সুন্দর। দূরের গোধূলির রাঙা আলো মাখানো নীলিমা হয়েছিল বক্ষলগ্না। চাঁদ ডোবা আলো আর আঁধারের মতো তোমাদের জীবন ছিল পৃথিবীর স্বপ্নময়। গৃহকোণে যে বাসর প্রদীপ তোমাদের জীবনের মূক তবু মুখর সাক্ষী ছিল সেও আজ নেই কিন্তু তার মিষ্টি শিখার পূত পরশটুকু আজও আছে তোমাদের হৃদয়েের মাঝে। তোমরা ছিলে রাজা ও রাণী। গলে ছিল রজনীগন্ধা মাথায় মূকুট। কন‍্যা অশোক অলক্তরাগে রঞ্জিতা ওষ্ঠাধর। অলংকারে ভূষিতা। সানাইয়ের সুরে মিলনসুর বেজেছিল ভৈরবীতে। বিদায়ের পূতঅশ্রুজলে মা বাবা আত্মীয়দের ছেড়ে সেই নবীনের সাথে জীবনের পরমলগ্নে ছেড়েছিলে আপন গৃহ। সন্ধ্যার সতেজ রজনীগন্ধারা তোমাদের মতোই শ্রান্ত অবসন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল বাসরগৃহের চারদিকে। চলে গেছে সে রজনী তবু হয়নি হারা। পুরাতন বেনারসীখানা এখনো আছে পুরাতন গন্ধ  মেখে। মনে পড়িয়ে দিচ্ছে সেই দিনযাপনের স্মৃতির কথা।

সে রজনী চলে গেছে তারপর নবীনপথে তারপর ঝরেছে আমের মূকুল, ঝরাপাতা।চলেছ বাস্তবের দৃঢ় আলিঙ্গনের সাথে। জীবনের পথই তোমাদের রাজ‍্যপাট।

অতীতের সেই আরক্তিম ভালবাসা তোমাদের হৃদয়ে চিরবসন্ত হয়ে বিরাজ করুক। বসন্তের দিনে তোমরা দোঁহে জীবনের আনন্দে পথ চলো। যাকিছু সুন্দর তা তোমাদের জীবনকে ভরিয়ে দিক।আলো আর আঁধারের মাঝে সেই বাসর প্রদীপ তার প্রদীপ শিখায় আলোকিত করুক জীবনের পথকে।ভালবাসাময় হোক তোমাদের জীবন।

ইতি  
শুভেচ্ছা জানাই শুভবিবাহবার্ষিকীর মহাসুন্দর দিনে।






আল্পনার চিঠি

অ দি তি  ভ ট্টা চা র্য (অ র ণ্যা নী  অ র ণ্যা নী)


কৈশোরের সব থেকে কাছের বন্ধুর দেওয়া রহস্যাবৃত এক চিঠি, যা আজও পুরনো ডায়েরির ভাঁজে সংরক্ষিত। অভিমান ভরে যে চিঠি সেদিন পড়ে ওঠা হয়নি বোধহয় ভালো করে। দুই বন্ধুর মধ্যে কথা তখন বন্ধ। চিঠির মাধ্যমে মনের কথা আদান প্রদানের চেষ্টা। এটাই বন্ধুর শেষ চিঠি। এই চিঠি লেখার কিছু দিন পর কালীপুজোর রাত্রে অসহায় এক কিশোরীর রহস্যময় আত্মহত্যা ঘটে। তার বাড়ির ও স্থানীয় শাসকবৃন্দের চাপে সেই রহস্য উদ্ঘাটন হতে পারেনি। আত্মহত্যা বলেই চালিয়ে দেওয়া হয়। পাঠকের হৃদয়ে আজ তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করলাম। 

প্রিয় খুকু,
পত্রে প্রথমে তোমাকে বলি যে তুমি কেমন করে জানলে যে আমি তোমাকে ভালবাসি না? এটা কিন্তু তোমার একেবারে ভুল ধারণা। তুমি নিশ্চয় জান যে আমার মনটা কেমন। আমার বিয়ে পার্থর সঙ্গে হবে না। কারণটা যদি তুমি জানতে চাও তাহলে আমি তোমাকে বলব, কেমন? তুমি যে কথাগুলো লিখেছো সব ঠিক কথা বটে, তবে হ্যাঁ কিছু ভুল আছে। যদি জানতে চাও তাহলে তোমাকে বলবো। আমি জানি তুমি আমাকে কতখানি ভালোবাসো। কিছু বুঝি আর না বুঝি তবে তোমার মনটা বুঝতে আমার কোন কষ্ট হয় না বুঝলে? পার্থর সঙ্গে কেন ভাব করেছি কই তুমি তো জানতে চাইলে না? তুমি আমাকে এত ভরসা দিয়েছ, আমি কই তোমাকে কী দিয়েছি বা কী বলে সন্তুষ্ট করেছি? তবে তোমার কথা আমিও কিন্তু কোনদিন ভুলব না। যতটা স্বার্থপর ভাবো, ততটা নয়। তুমি ভাবছ যে কচি সব ভুলে গেছে। আসলে কিন্তু কিছুই ভুলিনি এবং ভুলবো না। সারা জীবন মনে রাখব। আর তুমি যে কাজের কথা বলছো, কিন্তু কাজের কথা তো আর পার্থ জানে না যে আমি তোমাদের বাড়িতে কাজ করি। আর যদি আমার তোমাদের বাড়িতে কাজ ছেড়ে দিতাম তাহলে অনেক আগেই ছেড়ে দিতাম। শুধু তোমার জন্য ছাড়তে পারিনি। আর যতদিন না বিয়ে হয় ততদিন থাকবো। আর তোমাকে দরকার লাগবে, একশো বার দরকার লাগবে। এই যে এতকিছু শিখেছি, তা কি সব পার্থর জন্য শিখেছি? তা তো তোমার জন্যই শিখতে পেরেছি। তোমাকে কখনো ভুলে যেতে পারি? চিঠি লিখতে বা অন্য কোন কাজ করতে গেলে ঠিক মনে পড়ে যাবে তোমাকে। সবাইকে আমি বলি, যে যা কিছু শিখেছি তা সব খুকুর জন্য। এই কথাটা তুমি বিশ্বাস করবে না বলেই আমি তোমাকে মিথ্যে বলেছি। আসলে ব্যাপারটা কেউ জানে না। আর পদ্মা কিছুই জানে না যে তা নয় তবে জানে কিছু। আর আমি তুলিকে যদি বলতাম তাহলে তো আমি ভুল করতাম। জানি তুমি আমাকে বিশ্বাস করবে না। সত্যি তুমি বিশ্বাস করো আমি অত বোকা নই যে সবাইকে বলব ব্যাপারটা। শুধু এতদিন দুজন জানত। এবার থেকে মাত্র তিন জন জানল। এতদিন যে যা কিছু বলেছে তা সবটাই মিথ্যে। এবার শেষ করলাম। বাকিটা মুখে বলে দেবো।
ইতি - কচি





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল সংখ্যা || ৪ ফাল্গুন ১৪৩০ || ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪