স্মৃতিকথা


কাশ্মীর ষষ্ঠ পর্ব

শু ভ্র জী ৎ বি শ্বা স

কাশ্মীরের মানুষদের আয়ের একটা বড় উৎস পর্যটন একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কাশ্মীর যে শুধুই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ তা কিন্তু নয়। যতগুলো দিন ওখানে পড়াশুনা সূত্রে থাকা ও স্থানীয় মানুষ-জনদের সাথে মেশার অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে সেখানকার কালো দিকটা সম্পর্কে জানতে আর কিছু বাকি থাকার কথা নয়। ভারতীয় সৈন্য বাহিনীদের সাথে প্রতিবেশী দেশের অনুপ্রেরণা ও কোনো এক যন্তরমন্তর ঘরে রাখা মস্তিষ্ক প্রক্ষালক যন্ত্রের সহযোগিতায় স্থানীয় মানুষের একটা অংশ এমন ব্যাবহার করেন যার ৯০ শতাংশই হয়তো আমাদের অজানা থাকে। বাকিটা পত্রপত্রিকা কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সৌজন্যে আমরা কিছুটা জানতে পারি। বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে বন্ধ হয় ইন্টারনেট পরিষেবা এমনকি কখনো কখনো ফোনও। আমাদের সৈন্য বাহিনী ও একটা অংশের অনুপ্রাণিত মানুষ জন কিংবা প্রতিবেশী দেশ থেকে বিনা নিমন্ত্রণে আসা কিছু অতিথিদের লড়াইয়ের মাঝে পিষতে হয় সেখানকার একটা বড় অংশের মানুষকে। স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়। স্বাভাবিক কারণেই পর্যটকরাও 


অশান্তি এড়াতে কাশ্মীর ভ্রমণ এড়িয়ে চলেন। যেই মানুষগুলো পর্যটন শিল্পে কাজ করে দু'বেলা দু'মুঠো খাবারের জোগাড় করেন তাদের পেটে লাথি মারা হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কিশোরদের বাসে পাথর নিক্ষেপের ঘটনার সাক্ষী আমি নিজেই। পরিস্থিতি ভালো থেকে খারাপ, খুব খারাপ হতে ওখানে একটা মুহূর্তই যথেষ্ট। তবে দীর্ঘদিন থাকার সুবাদে বুঝেছি ওখানকার মানুষ খুব সৎ প্রকৃতির। দুটো অর্থ উপার্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও পরিশ্রমে কম যান না। আমরা সব সময়ই সচিত্র পরিচয়পত্র ও কলেজ/ইউনিভার্সিটির দেওয়া পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে চলতাম। পুলওয়ামা, সোফিয়ানে যাবার সময় মাঝে মাঝেই বাস দাঁড় করিয়ে সেগুলো চেক করতো সৈন্য বাহিনীর জওয়ানরা। সৈন্য বাহিনীর সঙ্গে মেলামেশা কিন্তু ওখানে অনেকেই ভালো চোখে নেয় না। সেই সব কথা ভাবলে আজও শিহরণ জাগে।





ঝড়ের রাতে তালসারিতে

শ্র য় ণ  সে ন 

“বাবু, আর অপেক্ষা করো না। হোটেলে ফিরে যাও। ব্যাপারস্যাপার ভালো ঠেকছে না।”
--- বেশ তৃপ্তি করে চা খাচ্ছিলাম, মধুদার সতর্কবাণীতে চমকে গেলাম। বেশ তো শান্ত পরিবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। হঠাৎ কী দেখল মধুদা? আমাদের চলে যেতে বলছে কেন? 
---“কী ব্যাপার মধুদা? কী হয়েছে?”
---“আকাশটা দেখো। দৌড়ও শিগগির।”
আকাশটা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম হঠাৎ করে। কোত্থেকে যে একরাশ ঘন, কালো মেঘ আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। এ যেন অশনিসংকেত। হাত থেকে কোনোক্রমে চায়ের কাপ নামিয়েই দে ছুট!
কিন্তু ভাগ্য সহায় থাকলে তো! হোটেলের গেটে পৌঁছনোর আগেই শুরু হয়ে গেল বেদম ঝড়। হঠাৎ করে নেমে আসা অন্ধকারে আমরা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন। হোটেলে পৌঁছনোর জন্য একটা বালির ঢিবি পেরোতে হয়। সেটা অতিক্রম করতে গিয়ে চোখমুখে বালি ঢুকে গেল। প্রবল দমকা হাওয়ার সঙ্গে মিনিট দশেক যুদ্ধ করে হোটেলের মেন গেটে পৌঁছতেই আর আমাদের দেখে কে! এক ছুট্টে রিশেপশন। ততক্ষণে ম্যানেজার ভদ্রলোকের চিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। আমাদের জন্যই চিন্তা করছেন বলাই বাহুল্য। আমাদের দেখে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। 

দিঘায় তিনদিন কাটিয়ে আজ দুপুরে এসেছি তালসারি। দিঘায় ভ্রমণকালে তালসারির পরিকল্পনা অনেকেই করেন, কিন্তু এখানে রাত খুব একটা বেশি কেউ কাটান না। আমরা এক রাত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভাগ্যিস নিয়েছি, না হলে একটা ভয়ংকর অথচ সুন্দর রাতের অভিজ্ঞতা থেকে হয়তো বঞ্চিতই থেকে যেতাম। 
ওড়িশা পর্যটনের পান্থশালায় বুকিং আমাদের। ভৌগোলিকভাবে তালসারি ওড়িশায় হলেও, মানুষের আচার-আচরণ-ভাষা সবেতেই বাংলার ছাপ। 

কে বলবে গতকাল দিঘায় প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল! গুমোট গরমে কাহিল এখন। সেই গরমকে সঙ্গী করেই তালসারি এসে পৌঁছে গেলাম। বিকেলে রোদ যখন একটু পড়তির দিকে, একটু হাঁটাহাঁটির জন্য বেরোলাম। তালসারিতে সমুদ্রে যাওয়া অত সোজা নয়। সমুদ্র এবং তালসারির মাঝখানে রয়েছে একটি নদী, যাকে সুবর্ণরেখার শাখানদীও বলা যায়। সমুদ্রে যেতে চাইলে নৌকা করে সেই নদী পেরিয়ে যেতে হবে। ইচ্ছে ছিল সমুদ্রে যাওয়ার, কিন্তু বেলা শেষ হয়ে আসছে বলে সেই পরিকল্পনা থেকে বিরত থাকলাম। বেশ কিছুক্ষণ নদীর ধারে বসে সমুদ্রের হাওয়া খেয়ে ফিরে চললাম মধুদার দোকানে। 

একটু আগেই মধুদার সঙ্গে আলাপ হয়েছে। নাম মধুসূদন সাউ। বালেশ্বরে বাড়ি। কিন্তু রুটিরুজির টানে তালসারিতে একটা ছিটেবেড়ার দোকান দিয়েছেন। চা-বিস্কুট, টোস্ট-অমলেট সবসময় পাওয়া যায়, আর আগে থেকে অর্ডার দিলে দুপুর এবং রাতের খাবারও বানিয়ে দেন তিনি। 
নদী ভ্রমণ সেরে আরও এক গ্লাস চা নিয়ে বসে এইসবই গল্প হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে। হঠাৎ তাঁর সতর্কবাণী… 
মে’-এর কালবৈশাখী আছড়ে পড়েছে তালসারিতে। কিন্তু এক-একসময়ে মনে হচ্ছে যেন সুপার সাইক্লোনের কবলে পড়েছি। ঝড় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই ঝনঝন করে হোটেলের সিঁড়ির একটা কাঁচ ভেঙে গেল। দমকা হাওয়া আর বৃষ্টির জলের ছাঁট ঢুকছে হোটেলের ভেতরে। আমাদের ঘর ওপরে। চেষ্টা করছিলাম যাওয়ার, কিন্তু পারলাম না। রিসেপশনেও ঠিকঠাক দাঁড়াতে পারছি না। 
ভাঙা জানলা দিয়ে দমকা হাওয়া ঢুকছে, সেই সঙ্গে জলের ছাঁট, নিমেষের মধ্যে রিসেপশন চত্ত্বর জলে জলাকার। অবিরাম বিদ্যুতের ঝলকানি এবং মুহুর্মুহু বজ্রপাত। মনে হচ্ছে প্রলয় চলছে। ঝড়ের তাণ্ডবে মনে হচ্ছে গোটা বাড়িটাই না ভেঙে পড়ে! 

যাইহোক, প্রায় আধঘণ্টা পর ঝড়ের তাণ্ডব কিছুটা কমল। আমরা ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে উঠে ঘরে গেলাম। বৃষ্টি তখনও অবিরাম। বিদ্যুৎ যে আজ আসবে না বুঝিয়ে দিয়েছেন ম্যানেজার সাহেব। মোমবাতির আলোয় গরম চা-পকোড়া সহযোগে সন্ধ্যার আড্ডাটা দারুণ জমে উঠল। প্রকৃতি এখন অনেকটাই শান্ত। ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝে মধ্যে শোঁ শোঁ শব্দ করে হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। কেমন যেন মনে হচ্ছে ভৌতিক ব্যাপার। সেই ভৌতিক ব্যাপারকে আরও জমিয়ে দিচ্ছে ভুতের গল্প নিয়ে আমাদের আড্ডা। 

ডিনার করার জন্য নিচে রেস্তরাঁয় যাওয়ার আগে মনে হল বাইরেটা একটু ঘুরে আসি। বৃষ্টি থেমেছে ঘণ্টাখানেক হয়েছে। চারিদিক ঘুটঘুটতে অন্ধকার। অনবরত ডেকে যাচ্ছে ব্যাঙের দল। মেঘ এখনও রয়েছে আকাশে। টর্চের আলোয় বুঝলাম ঝড় বেশ ভালোই তাণ্ডব চালিয়েছে। হোটেলের বাগানের কোনো টবই এখন দাঁড়িয়ে নেই, সবাই ভূপতিত। মাটিতে পড়ে গিয়েছে হোটেলের গেটের বোর্ডটা। বুঝলাম কাল বেশ ভালোই খরচা আছে হোটেল কর্তৃপক্ষের।
এই সবের মধ্যেই হঠাৎ করে চিন্তা উঠল একজনের জন্য। তাঁর কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম প্রায়। মধুদার দোকানটা ঠিকঠাক আছে তো?...

মধুদার দোকান একদম ঠিকঠাক আছে দেখে দারুণ একটা অনুভূতি হল। মাত্র কয়েকঘণ্টার আলাপেই মনে কতটা জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
সকাল হতেই চলে এসেছি মধুদার দোকানে। বিদ্যুৎ এখনও আসেনি। কিন্তু ঝড়ের সৌজন্যে রাতে দুর্দান্ত ঘুম হয়েছিল।
---“কী মধুদা, তোমার দোকানের কোনো ক্ষতি হয়নি তো?”
---“না গো কিছু হয়নি, খুব জোর বেঁচে গিয়েছি। কাল মনে হচ্ছিল দোকানটাকে বাঁচাতে পারব না। যাক বাবা এখন আর চিন্তা নেই।”
মধুদার মনে একটা অদ্ভুত প্রশস্তি। 
আজ সকালটা অদ্ভুত সুন্দর। আগের রাতের ঝড়ের চিহ্ন ভালোই বোঝা যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে রয়েছে। হোটেলের চৌহদ্দিতেও দেখছিলাম বালি ভর্তি হয়ে রয়েছে। এই সুন্দর সকালটাকে কাজে লাগিয়ে একটু দুঃসাহস দেখালাম। নেমে পড়লাম সেই নদীতে। সাঁতার কাটার পর্ব চলল কিছুক্ষণ। পরে স্থানীয়দের মুখে শুনলাম খুব ভুল করে ফেলেছি। এখানে নাকি কুমীর হানা দিতে পারে যখন তখন। 

না সমুদ্রে যাওয়া হল না এবারও। কিন্তু তালসারিতে যতক্ষণ থাকলাম, কিছু না কিছু রোমাঞ্চ আমাদের জন্য অপেক্ষা করে ছিল। একরাশ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার স্মৃতি নিয়ে বিদায় জানালাম তালসারিকে।





আমার যেদিন ভেসে গেছে

দে বি কা  চ ট্টো পা ধ্যা য়

আমার বাবা বীরভূম জেলার ঝাড়খন্ড সীমান্তে অবস্থিত এক সাঁওতালি গ্রাম তুম্বুনির প্রান্তরে গড়ে ওঠা স্কুল শ্রী রামকৃষ্ণ শিক্ষাপীঠ স্কুলের শিক্ষক হওয়ার দরুণ আমার ছোটবেলা কেটেছে তুম্বুনির শ্রীরামকৃষ্ণ শিক্ষাপীঠ স্কুলের কোয়ার্টারে। পাশাপাশি ছয়টি কোয়ার্টারে ছয় জন শিক্ষক থাকতেন তাঁদের পরিবার নিয়ে।এই ছয়টি বাড়ি ছিল স্কুলের সীমানার শেষ প্রান্তে। বাড়িগুলির সামনে ছিল বিশাল এক রুক্ষ মাঠ, যার মাটি ছিল সিমেন্টের মত শক্ত, ঘাসের লেশমাত্র ছিলনা তাতে। খেলতে খেলতে পড়ে গেলে হাত পা কেটে বা ভেঙে যাওয়া ছিল স্বাভাবিক। আর বাড়িগুলোর পিছনে ছিল বন। ছোটনাগপুরের মালভূমি অঞ্চলের মত এই বনের প্রকৃতি, কেবলমাত্র বসন্তে নতুন পাতার আগমন, বর্ষায় গাছগুলো প্রাণবন্ত হয়ে ওঠা ও বছরের বাকি সময়টা রুখুশুখু ভাবে বেঁচে বর্তে থাকার প্রচেষ্টা। পুবদিকে বনের শাল সেগুন গাছের মাথার উপর দিয়ে সূর্যোদয় আর পশ্চিমে মাঠের শেষ প্রান্তের দিগন্তরেখায় সূর্যাস্ত দেখা ছিল আমাদের প্রতিদিনের অভ্যেস। পূর্ণিমায় থালার মত গোল চাঁদটাও উঠত ঐ পুবের শাল সেগুন গাছগুলোকে টপকে।গ্রীষ্মের রাতে বাড়িগুলোর সামনে পাতা চৌকিতে চিৎ হয়ে শুয়ে আকাশের তারা দেখতে দেখতে কতদিন তারাখসা দেখে আমরা ছোটরা চিৎকার করে এ ওকে ডেকে দেখিয়েছি। ছায়াপথ দেখে অতলস্পর্শী মহাশূণ্যকে অনুভবের সীমায় না আনতে পেরে ভয় পেয়ে চোখ সরিয়ে নিয়েছি আকাশের দিক থেকে। ছয়টি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিল মানসিক নৈকট্য ও পারস্পরিক নির্ভরতার বাতাবরণ। আমাদের ছোটদের জন্মের পর জ্ঞান হওয়ার আগে থেকেই এই সম্পর্ক তৈরী হয়ে ছিল। এত বছর পরেও আজও এই সম্পর্কের সুতোটা শুধু শক্ত হয়ে আছে তাই নয়, শক্ত থেকে শক্ততর হয়ে উঠেছে যেন। এই বাড়িতেই কাটিয়েছি জীবনের প্রথম 20/22 বছর। বাড়িগুলো ছিল ছোট ছোট দু কামরার। সামনে ছোট এক ছোট্ট বারান্দা, তার নীচে রুক্ষ মাটিতে কিছু ফুলগাছ লাগিয়েছিলেন আমার মা, পরে তার মধ্যে কিছু গাছ বড় হয়ে ছায়া দিতে শুরু করলে আরো কিছু ফুলগাছ লাগানো হয়েছিল। বাড়ির পিছনে ছিল একটা পাঁচিল ঘেরা উঠোন। উঠোনের একটা দরজাও ছিল, কিন্তু মাঝে মাঝে বাবা ঐ দরজায় তালা দিতে ভুলেই যেতেন রাতে।এখন ভাবলে আশ্চর্য হয়ে যাই--- ঐ নির্জন এলাকায় বনের ধারে দরজা খোলা রেখেও কিই নিশ্চিন্ত জীবন কাটাতাম আমরা। সামনের মাঠের শেষ প্রান্তে ছিল একটা বাঁশঝাড়। আমাদের ছোটদের বিশ্বাস ছিল ওখানে ভয়ঙ্কর কোনো সাঁওতালি দেবতার বাস, যে আমাদের কোনো না কোনো সময় ভয় দেখিয়ে তাড়া করবে। প্রচন্ড ভয়ে ছোটরা সিঁটিয়ে থাকতাম এবং একা কখনোই ঐ বাঁশঝাড় তলায় যেতাম না। এ হেন এক অপরিচিত জায়গা ঐ স্কুলের সৌজন্যে ক্রমশ কলকাতা ও অন্যান্য বড় শহরে পরিচিতি লাভ করছিল। প্রচুর ছাত্র স্কুলের হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে বড় বড় জায়গায় চলে যাওয়ার ফলে বেশ সুনাম ছড়িয়ে পড়ছিল রাজ্যে ও রাজ্যের বাইরে। কিন্তু নকশাল পিরিয়ডে নকশাল নেতারা এই স্কুলের হস্টেলকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে গ্রহণ করায় সেই হস্টেল পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। গমগমে স্কুল এলাকায় স্কুল ছুটি হলেই নেমে আসে শ্মশানের স্তব্ধতা। এখানে এই শান্ত পরিবেশে বড় হয়ে ওঠার জন্যই হয়তো নির্জনতা আমার ভাল লাগে। এখন শহুরে জীবন কাটাতে হলেও বাড়ি বলতে এখনও ঐ ছোট্ট দু কামরার কোয়ার্টারটিকেই স্বপ্নে দেখি সবসময়। সেই ফাঁকা মাঠ ও বন এখনও তেমনই রয়ে গেছে, তবে মানুষগুলোর চরিত্র বদল ঘটেছে অনেকাংশে। তবুও ওখানের সাঁওতাল মানুষগুলোকে বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে সবসময়েই।






বর্ষার সন্ধ্যা

অ র ণ্যা নী 

এক বর্ষার সন্ধ্যা। কলেজ কামাই করে বাড়িতে আরামে শুয়ে রেডিওয় বর্ষার গান শুনে সারাটা দিন কেটে গেছে। পাড়ায় এক বৃদ্ধার জীবনাবসান ঘটেছে সেদিন। সকলেই বলছে, মরে বেঁচেছেন উনি। দীর্ঘদিন বিছানায় শয্যাশায়ী অবস্থায় অনেক যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়ে গেছেন তাঁর ও তাঁর পরিবারের মানুষদেরও। অসুস্থ অবস্থায় পাড়ার সকলেই তাঁর শেষ ইচ্ছা পূর্ণ করার প্রয়াসে, তিনি যা যা খেতে ভালোবাসতেন, সবই তাকে খাইয়েছেন। এটা আমাদের পাড়ার একটা প্রথা ছিল। কারুর যাওয়ার দিন ঘনিয়ে আসছে দেখলে, সকলে তার কী কী খেতে সাধ হয় তা জিজ্ঞেস করে খাইয়ে দিতেন। এর ব্যতিক্রম ঘটলে নাকি তার আত্মা শান্তি পাবে না। মৃত্যুর পরও যে সাধের বস্তুটি তার খাওয়া হলো না, তার জন্য ঘোরা ফেরা করবেন, কারুর বাড়িতে সেটি রান্না হলে চলে আসতেও নাকি পারেন শরীরহীন আত্মা হয়ে অথবা আধা শরীরে! কিন্তু অসুস্থ ব্যক্তিকে যে এভাবে খাওয়ালে তাকে মৃত্যুর দিকেই আরও তাড়াতাড়ি ঠেলে দেওয়া হয়, সেকথা কে বোঝে? নিজেদের নিরাপত্তার কথাই আগে ভাবতে হবে। তার পরিবারের মতামতও এক্ষেত্রে গ্রাহ্য হতো না।

বৃদ্ধাকে তো সেই তিন বছর বয়সে এই পাড়ায় ভাড়া আসার পর থেকে কলেজ জীবন পর্যন্ত বৃদ্ধাই দেখে গেছি! পেছনে বুড়ি ও সামনে ঠাকুমা, মাসিমা সম্বোধন করত তাকে সকলে। কত বয়স হয়েছিল তার হিসাব না মেলায় একশো বছর ধরে নেয়া হলো। আমার মায়ের একটু নরম মন ছিল। তাই কেউ বৃদ্ধার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ না করায় মা সন্ধ্যাবেলা কাজের মেয়েটির কাছে বার বার স্মৃতিচারণ করে যাচ্ছিলেন। মেয়েটি আমার দিদির কাছাকাছি বয়সী। কিন্তু ছোটবেলায় একসাথে খেলা করেছি বলে আমিও নাম ধরেই ডাকতাম মঞ্জুকে। মঞ্জুর সেদিন কাজ সারতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আর বৃষ্টির দিনে সন্ধ্যা একটু তাড়াতাড়িই নামে। তাই মঞ্জু মাকে বারংবার বারণ করছিল এভাবে সদ্যমৃত ব্যক্তির স্মৃতিচারণ করতে। মা তবুও আত্ম তুষ্টির সঙ্গে বলে যাচ্ছিলেন, বৃদ্ধার প্রতি কী কী কর্তব্য পালন করেছেন। আমি আর দিদি এসে মঞ্জুর সঙ্গে মজা করতে লাগলাম ও ভয় পাচ্ছে দেখে। মা সতর্ক করলেন কারুর মৃত্যু নিয়ে মজা করাটা যে উচিত নয় সে সম্পর্কে। তবে সেই সতর্কীকরণে ঔচিত্যবোধের থেকে ভীতিই বেশি ছিল হয়তো। আমরা সাফাই গাইলাম, মৃত্যু নিয়ে তো মজা করিনি, করেছি ভয় নিয়ে। তাতেও মা আর মঞ্জু দু'জনেরই আপত্তি! মঞ্জু ভয়ে ভয়ে জানালো, বুড়ি ওর কাছে সন্দেশ খেতে চেয়েছিল। একদিন মাইনের টাকা দিয়ে সন্দেশ খাওয়াবে ভেবেওছিল। কিন্তু তার মধ্যে- - - । দিদি নাকি সুরে বলে উঠল, "এঁই মঞ্জুঁ, সঁন্দেশ দেঁ।" মঞ্জু নিষেধ করল অমন করে ভয় দেখাতে। বিকেলে পড়ে থাকা চায়ের কাপডিশগুলো তখনো কুয়োতলায় গিয়ে মেজে আনা বাকি।

অন্ধকার নামল, সঙ্গে বৃষ্টি। গ্রামে গ্রীষ্ম বর্ষায় লোডশেডিং নিত্যদিনের ঘটনা। হ্যারিকেন ভরসা তখন। মঞ্জুর অনুরোধ, "এই, খুকু নয় মামণি (আমাদের ডাক নাম) হ্যারিকেনটা নিয়ে কূয়োতলায় আয় না একটু"। মজা করে কেউই আমরা যেতে রাজি নই। ওকে বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলাম আমরা। মঞ্জু একাই দ্রুত হাতে চায়ের কাপ ডিশ মাজা ধোয়া করছিল হ্যারিকেনের মৃদু আলোয়। আমরা ঘরে। মা রান্না করছিলেন। হঠাৎই বিকট শব্দে চিৎকার করে উঠল মঞ্জু, "বাবা গো - - - "। এক দৌড়ে হ্যারিকেন উল্টে ফেলে, পায়ের আঘাতে গোটা দুই কাপ ভেঙে, বৃষ্টির মধ্যেই রান্নাঘরে এসে হাঁপাতে লাগলো মঞ্জু। আমরাও দৌড়ে রান্নাঘরে এসে দাঁড়ালাম। মঞ্জু শুধু অঙ্গুলি নির্দেশ করল। সেই মতো তাকিয়ে আমরা দেখলাম, অন্ধকারে সাদা একটি বিড়াল আমাদের কাপডিশগুলোর উপর দিয়ে মৃদু গতিতে এগিয়ে গিয়ে পাঁচিল ডিঙিয়ে প্রস্থান করল। মঞ্জু ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে! বাড়িতে আমাদের অনেক বিড়ালই ছিল। কিন্তু এরকম সাদা বিড়াল সত্যিই ছিল না। মঞ্জু বলতে লাগলো, "সন্দেশ চাইতেই এসেছিল।" এখন উপায়? মা উপায় বাতলে দিলেন। কালী মন্দিরে পরদিন সন্দেশ সহকারে পুজো দিলেই আত্মা শান্তি পাবে।
সত্যি, অন্ধকারেই সাদা বিড়ালগুলোর কোথা থেকে যে আবির্ভাব ঘটে জানি না। কালো অন্ধকারের সঙ্গে সাদা রঙের বৈপরীত্যের কারণেই কি এমনটা ঘটে?





বাদল বেলা

সু ল গ্না  চৌ ধু রী

ক) "ওপারে তে বিষ্টি এলো ঝাপসা গাছপালা---
এ পারেতে মেঘের মাথায় এক-শো মানিক জ্বালা।।"
প্রথম বৃষ্টি যেদিন নামে খুব আদিখ্যেতা করি৷ কত কাব্যি, কত গান গুনগুনাই যেদিক তাকাই সব ভালো লাগে। বাড়ির পিছনে চ্যাটার্জিদের পাঁচিলের গায়ে খানিকটা ঝোপে প্রথম যেদিন বৃষ্টি নামে, তারপরে জংলা গন্ধ এসে পৌঁছে যায় আমার ঘরগুলোতে।  কেমন সব সবুজ, সজীব। পথচারী কিছু মিস্ত্রি দেওয়ালের ওই পারে হাত দিয়ে বড়ো কচুপাতা ছিঁড়ে মাথা আগলে চলতে থাকে।  কচুপাতাটা ছিঁড়ে নিয়ে সে চলে গেলে, জংলা গন্ধটা আরো বেশী তীব্র হয়। চোখ বন্ধ করে সে ঘ্রাণ নিই প্রথম বৃষ্টি শুরুর আদিখ্যেতায়। পাঁচিলের গায়ে একটু মাঝারি আকারের জামরুল গাছে বুলবুলির বাসা, প্রথম বৃষ্টির কয়েক ফোঁটা গায়ে মেখে কিচিরমিচির ডাকে মুখর হলো, সে ডাক শুনে আরেকজন স্বজাতি এলে দুজনে অনেক কথা বললো, অনেকক্ষণ, বুঝি না তো ছাই! শুধু বুঝি উপচানো সুখ, যার কোনো রঙ নেই, মাপ নেই শুধু অনুভূতি আছে। মনের মতন সাথী কাছে থাকার অনুভূতি। অনেক গল্প। গ্রীষ্ম ঋতুতে ধরা জামরুল ফুল খেতে এসে মনে হয় এই গাছ মনে ধরেছিলো সেই থেকে থেকে গেছে সেই বুলবুলি বাসা বানিয়ে।
এরপর, নির্জন দুপুর আসে ঝমঝম, ঝিমঝিম, ঝুপঝুপ কথায় মেঘ বালিকা নেমে আসে, কান পেতে শুনি, আহা! প্রথম বৃষ্টি তুমি, কি ভীষণ মিষ্টি। 

খ) বৃষ্টির দিনগুলো খুব নষ্টালজিক করে দেয়। কতকাল আগের সব দৃশ্য যেন জমা জলের মতন জমে থাকে তারপর পাখি যেমন সুখে আহ্লাদে সেই জমে থাকা জলে একটু পাখনা ভিজিয়ে নেয়, আমরাও কাজের ফাঁকে, ফাঁকে মন ভিজিয়ে নিই স্মৃতি নামের গহন অন্তরে। সেই শৈশবে বৃষ্টি মানেই জমা জল। পা  ভিজিয়ে ছপছপ, বাড়িতে ফিরেই হ্যাঁচ্চো, হ্যাঁচ্চো দিয়েই মনে, মনে প্রমাদ গুনতাম,--- রবি ঠাকুরের "তাসের দেশ" নাটিকার সেই গান -- হাঁচ্ছো,হাঁচ্ছো ভয় কি দেখাচ্ছো! স্কুল ফেরতা ভিজে আসা জামা কাপড় ছাড়তেই মা বলতেন পা'য়ের পাতার নীচে কাঁচা সর্ষের তেল ঘষার কথা। আমাদের সেই কালে হোমিওপ্যাথি ঔষুধের প্রভাব বড্ড বেশি ছিলো। একমাত্র খুব জ্বর হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ আনা হতো। রোগভোগ কমই ছিলো প্রকৃতিতে মেশামেশি করার জন্য। এখন এমন এক জীবনের ভার, খর বৈশাখের পর প্রথম যেদিন বৃষ্টির সরসতা ধেয়ে আসে মন চায় মেঘের দেশ থেকে গুঁড়ো গুঁড়ো জল বিন্দুতে খুব করে ভিজি। কিন্ত তা আর হয় কই? এখন অনেক 'কিন্তু', তাই জানলার পর্দারা হাওয়ায় দুলে উঠলে শুধু  গুন গুন করে ওঠে মন---
"দাও আকুলিয়া ঘন কালো কেশ
 পরো দেহ ঘিরে মেঘনীল বেশ"।
 সবটুকুই মনে মনে…





ধুলো মাখা স্মৃতি

সা য় ন্ত ন  ধ র

বৃটিশ আমলের সরু পাতলা ইঁট দিয়ে তৈরী লালরঙা বাড়িটিতে এখন আর কেউ থাকেনা… অবশ্য কেউ থাকেনা বললে ভুল হবে, দেখতে একতলা হলেও কল্পনায় সেটি তিন তলা, প্রথম তলায় থাকত পিঁপড়ে ও উঁই পোকার দল, দোতলায় মনুষ্য পরিবার আর তিনতলায় চামচিকা। হ্যাঁ এমন লালরঙা হেরিটেজ বাড়িটি একটি ফাঁকা বিস্তৃত খেলার মাঠে… একটা ছোট দিঘি বা বড় পুকুর বলা যায়, এর ঠিক পিছনে তার অবস্থান। বহু পূর্বে এখানে ধু ধু বালুকাময় মৃত্তিকায় বর্ষায় শুধুই ঘাস জন্মাতো, চৈত্রের ফুটিফাটা রৌদ্রে সেগুলি পুড়ে যেতো। সামনেই তিস্তার বালুচর,পচিয়া বাতাসে উড়ে আসতো বালুকনা। উঠতো ধূলিঝড়। মাঠের এক এক প্রান্তে ছিলো লিচু গুলমোহর আর মাদার। এ ছাড়া আর কোন বড় গাছ ছিলো না। সেই মরুপ্রায় খাঁ খাঁ বাসভূমি যত্নের ছোঁওয়ায় ক্রমশঃ সবুজ হয়ে উঠেছিলো। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, আতা, পেঁপে, কলা, কমলা, মুসুম্বি, গন্ধরাজ লেবু এমন হরেক রকম ফলের গাছ, কদম, জারুল, মাদার, গুলমোহর, রেনীজেরা, ঘোড়ানিম, গামারী, তুন আরও কত বৃক্ষের সাথে ক্যালিয়েন্ড্রা, কারিপাতা, গোলাপ, শেফালি, চা, মেহেন্দি, কুটরাজ, নিশিন্দার মত গুল্মের সহাবস্থান। নারকেল, সুপারির মত একবীজপত্রীদের সাথে ডালিয়া, কসমস, জিনিয়াদের ভিড়। বাঁশের বাতার সাথে জিওল গাছের খুঁটি গেড়ে রাংচিতার মেলবন্ধনে তৈরী বেড়া সবই ছিল। সে এক অরণ্য বটে, দল বেঁধে আসতো মুনিয়া, জলাধার থেকে চুঁইয়ে পড়া জলে তেষ্টা মিটাতে আসতো চাতকপাখি, বাগানে ঘুরতো ছানাপোনা সহ ডাহুক মা।টিয়াপাখির ঝাঁক ঠোঁট দিয়ে ঠুকরে খেতো ঘোড়ানিমের ফল, আর বেশীরভাগই ছড়িয়ে ফেলতো শান বাঁধানো চাতালে। ঠ্যাঁ ঠ্যাঁ করে ডেকে উঠতো সাতকাওয়া, বিষন্ন দুপুরে ঘুঘুর একটানা ডাক শোনা যেত, মাছরাঙা, মৌটুসি, বসন্তবৌরী, কাঠঠোকরা, মোহনচূড়ার দেখা মিলতো প্রচুর, বসতো নাম না জানা নানা পাখির মেলা। ওরা আউটডোরের বাসিন্দা। সে রাংচিতার বেড়া আর নেই, সেই ছোট্ট অরণ্যের অনেক গাছও এখন আর নেই। পিঁপড়ে, উঁই, চামচিকারা এখনো আছে হয়তো। কিন্তু সেই মনুষ্য পরিবার বিদায় নিয়েছে বহুবছর হল। হলদে দেওয়ালগুলোয় কচি হাতে গ্রাফাইট কণার আঁচড়ে তৈরী আঁকিবুকিগুলো রয়ে গেছে, শতাব্দী প্রাচীন বাড়ির কাঠের জানালাগুলোর ক্ষতগুলোকে কাল্পনিক রেখায় কখনো ঘড়ি কখনো বা পাখি মনে হত। সেসব হয়তো এখনও আছে। শেষবারের মত যখন চলে গিয়েছিল তারা, আর যে ফিরবে না, তা ভাবেনি। ভেবেছিল আবার ফিরবে কোন ছুটির অবসরে। কিন্তু তেমনটা আর হল না। একটু ছুঁয়ে দেখা না হলেও পদচিহ্ন রাখার সৌভাগ্য হয়েছিল আউটডোরে। দিনগুলো ফুরিয়ে আসছে খুব দ্রুত। চোখের আড়ালে বেশীদিন কারো মনে থেকে যাওয়া সম্ভব নয়, হয়ত তাদের ভুলেও গেছে সবাই। হয়তো আর পায়ের চিহ্নও পড়বে না এখানে। বাগানের ফলগুলিতে অধিকার কায়েমে আসবে না কেউ, ফুলগুলি অনাদরেই ঝরে পড়বে। হয়তো বাজার থেকে কিনে আনা কোন জ্যান্ত শোল মাছ চৌবাচ্চা থেকে পালিয়ে পিছনের পুকুরে ডুব দেবে না। প্রতিবছরের অতিথি সাপেরা চিরস্থায়ী বন্দ্যোবস্ত করে নেবে কাঠের ফেন্সিং ও তারজালি ঘেরা বারান্দায়। হয়তো বিস্তৃত সবুজের শেষে যেখানে নীল মিশেছে, সেই দিগন্ত আর ধোঁয়ায় ভরে উঠবেনা। হয়তো উন্মুক্ত আকাশে দিনে সূর্য কোন মনুষ্যছায়া আঁকতে পারবে না কালো মাটিতে। রাতের আকাশে তারাদের আর গুনবে না কেউ চাতালে বসে। কাঠ পিঁপড়েরা আর কামড় দেবেনা কোন কচি পায়ে। দুর্বাঘাসের মখমল হয়তো দখল করে নেবে বুনো লতা গুল্ম। হয়তো এখনও মাঠে গরু চরবে, খড়ি কুড়োবে কুড়ুনিরা, রাখাল ছেলে খেলে বেড়াবে আপন মনে, আমটি, জামটি, লিচুটি পেড়ে খাবে। কাঁচা লিচু খেলে পেটে ব্যাথা হবে -এ কথা কেউ আর তাদের বলবে না। স্মৃতি হয়ে গেল রোজ সূর্য ওঠার আগে পুবের জানালাটা খুলে দেওয়া, ঘরের মধ্যে মিষ্টি রোদের খেলা করার দিনগুলি। বসন্তের সকাল-দুপুর-বিকেল গুলোতে বাড়ির চারপাশে ঘুরে বেড়ানোর দিনগুলি। হয়তো সত্যিই আর ফেরা হবেনা তাদের। হয়তো একদিন সেই লালরঙা বাড়ি ভেঙে ফেলা হবে, বা হয়তো নিজে নিজেই ভেঙে পড়বে বয়সের ভারে। তখন মনে কি পড়বে কারো তাদের কথা ? না, কি দরকার মনে করার, সময় সবকিছু ভুলিয়ে দেয়, শুধু মনে রাখবে প্রতিটি ধুলিকণা, প্রতিটি গাছের পাতা, ঝরে যাওয়া ফুলেরা। স্মৃতি, স্মৃতি, স্মৃতি হয়ে  যায়। স্মৃতি, স্মৃতি, স্মৃতি হয়ে  যায়। স্মৃতি, স্মৃতি, স্মৃতি হয়ে  যায়।








মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল সংখ্যা || ৪ ফাল্গুন ১৪৩০ || ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪