কবিতা


আকাশ

গৌ রা ঙ্গ  সু ন্দ র  পা ত্র

কতদিন মানুষের কাছে আছি
তবু মনে হয় পৃথিবীতে মানুষের মতো
এতো দুরুহ কিছুই নেই আর
অথচ দেখি মানুষই এনেছে মানুষের কাছে
উৎকীর্ণ লিপির মতো আকাশের সংবৃত সমাচার।
আকাশের তলে আছি বহুকাল
আমার দুঃসময়ে মানুষ আসেনি
পেয়েছি আকাশ।
তখনই মনে হলো 
আকাশকে এমনভাবে কখনো দেখিনি,
সে আমার সমব্যথী
সে আমার সাধনার ধন, আমার প্রেমিকা।

এমন প্রেমিকা পেতে
মানুষের কাছ থেকে কিছুটা দূরে থাকা ভালো।





পাহাড়

নি র্মা ল্য  ঘো ষ 

পাহাড় যতটা উঁচু 
মেঘ তার থেকেও উঁচুতে থাকে।
কারণ,
পাহাড়ের একটা মাটির টান আছে। 
মেঘের সেটা নেই।
তাই আমি মেঘ হতে পারিনি।
পাহাড় হয়েছি।
কারণ,
মাটির মত টেনে ধরে রেখেছ 
আমার অস্তিত্বের পাহাড়কে 
সারাটা জীবন ধরে তুমি।

তাই, এখনো পর্যন্ত ধ্বস নেমে আসেনি-
বর্ষা ঋতুতে।





আষাঢ় শেষে

সো না লী  ম ন্ড ল  আ ই চ

বলছি শোন ভাঙল ঘুম
মন পুড়িয়ে 
গল্প শোন বৃষ্টির ধুম
কথা জড়িয়ে।

জলের ছাট মনের ঘাটে
লাগছে ভালো
যায় গোধূলি বয় মাজুলি 
আবছা আলো।

জল কাদায় প্রাণ জড়ায়
গাছপালা সব
মনের ক্ষিধে নেশা ছড়ায়
বন উৎসব।

কীট পতঙ্গ মাটির সঙ্গ
ভীষণ প্রেমে
বুকে হেঁটে যায় ভুজঙ্গ
স্বভাব মেনে।

হাড়ের কাঁপন যখন তখন
গল্প বাদ
মারছি উঁকি চাঁদের ডেরায়
কোথায় চাঁদ!!

আস্ত আকাশ একা শোনে
ঝিঁঝির ডাক
থোকা থোকা হলুদ ওখানে
চিচিং ফাঁক!

ভুত পেত্নী হেথা নড়েচড়ে
নিমের ডালে
লেজ ঝুলিয়ে মারুতি বীরে
বেজায় হালে।

ধুপধাপ পড়ছে তাল রাতভর
আলগা বোঁটায়
পচছে পাট ঘাটলায় মাসভর
আগল খোঁটায়।

চুপিসারে সিঁদ কাটে চোর
মনের ভিতে
পিছল পথের গাইছে ঘোর
আষাঢ় মিতে।





চলতি পথের গল্প

শ্রী  স দ্যো জা ত

তোমার শিশির ভেজা আগমনী পড়ন্ত বেলার অসীমতা'কে স্পর্শ করেছে 
নিয়ন আলোয় চলতি পথের নদী হওয়া তো একেই বলে...

সমস্যা থাকবেই 
মধ্যবিত্ত সংসারী আকাশে সমস্যা হলো মরা জোছনায় ভরা আবেগি পূর্ণ চাঁদ।
মাঝ বয়সী উলঙ্গতা কে বুকে জড়িয়ে রাখার নামই গঙ্গাকাব্য যাপন,
আজকাল এসব কথা কেউ শুনতেও চায় না 

ঘর কখনো নিজের হয়না!
সে থাকে কটা মাত্র সময়,
দিবা স্বপ্নের মতন ভালোবেসে অথৈ উৎকণ্ঠায় প্রিয়ংবদা ও প্রিয়তমায়,
ওসব শুধু কথা ভোলানোর জলসা আর তরজা।

সকাল বেলার প্রথম আলোয় যখন তোমার অস্ফুট মুখটা দেখি,
তখন ভুলে যাই আমি কী তোমার কেউ?
নিজেকে নিজে জড়াতে পারিনা বলেই তোমার সাদা শিউলি দোর ধরে থাকি।
তুমি দিনমান জুড়ে ফাঁকি ফাঁকি আর ফাঁকি
বিনা কলমে লিখে রাখি বেণীমাধবের গল্প পথের চলতি।
 
খোলা চোখে গৃহহীন ভালোবাসা'টা হয়তো অশালীন অমূলক অচেতন,
বেলা যত ফুরিয়ে আসে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়ি, 
দু'চোখের পাতা অজান্তে নেমে আসে নরম আঁচল মাটিতে,
তখন দেখি সেই অবিশ্বাসী প্রেমটাই আকাশ 
নদী রোজদিন।

দূরে থেকে যা কিছু স্পষ্ট কাছে আসলেই যদি নিমগ্নতা হারায় 
তাই তো এতো আয়োজন তোমার স্বরচিত লক্ষ্যে লক্ষ কোটির প্রারম্ভে

দু'টো গালে ঠাস ঠাস করে চড় মারি 
             কখনো আমাকে কখনওবা তাঁকে 
সময়কে বন্দি করে রাখার অদম্য প্রয়াস
                                   কখনো সত্য নয়
                      কখনোই উত্তীর্ণ মহার্ঘ্য নয়

হাঁটু মুড়ে আমার সামনে এসে বসো
দু'জন দু'জনকে শুধু দেখব অপূর্ব নীরবতা দিয়ে,
    কেউ কিছু বলবে না 
        কেউ কিচ্ছুটি জানবে না ….






বাকি কথা পরে হবে

অ মি তা ভ  দে

কথা দিয়েই হোক না কথার শুরু।
কথার পরে কথার মালা 
বিঁধছে কিছু কথার জ্বালা,
অতীত তুমি কথা কও
ভবিষ্যতের বার্তা বও
কথার জালেই পড়বে ধরা 
বুক করে দুরুদুরু।


কথায় কথায় কথার খেলা 
চমক দেওয়া কথার মেলা 
ফিসফিস ওই কথার ভেলা,
রূপকথার ওই আজব কথা 
অভিমানে চোখে কথা...
চুপ চুপ চুপ ঝিঁঝির ডাক
চুপকথাদের কথার হাঁক।

অনুরাগে  ইশারাতে 
কথার মানে কপট রাগে,
আলোচনায় কথার যুদ্ধ
এর পরে কি! বাকরুদ্ধ!
মিষ্টি কথায় বাজি মাত
কথায় কথায় বাড়ছে রাত।
এখনো অনেক কথা বাকি
এবার তবে কথা রাখি।





মেঘমল্লার

স র্বা ণী  রি ঙ্কু  গো স্বা মী

একদিন, বৃষ্টিতে চুপচুপে ভিজে,
লোকটা বাড়ি ফিরছে৷

আষাঢ়ের প্রথম পা ফেলায় থেমে গেছে গোটা শহর,
অর্ধেক রাস্তা একবুক জলের নীচে,
শনশনে হাওয়া কাঁপিয়ে দিচ্ছে ভিজে শরীর৷
আজ তার খুব ইচ্ছে করছে, একটা যুঁইফুলের মালা কিনতে, শ্রেয়ার জন্য!

শ্রেয়া এতো রাত অবধি জেগে থাকেনা,
তার জন্য অপেক্ষায় থাকে খাবারটেবিলে রাখা
ঠান্ডা ভাত,
আসলে তেমন করে জানাশোনাই হলোনা তো, বিয়ের পর থেকে,
ঐ যেটুকু নিয়মমাফিক!

"খুব ভালো ছেলে",
বিয়ের সময় শ্রেয়াকে, শ্রেয়ার বাবা বলেছিলেন৷
খুব ভালোছেলে, তাই জানতে পারেনি জীবনের নকশাগুলো,
খুব ভালোছেলে, তাই জোর করে খুলতে পারেনি বন্ধ দরজাও, কোনোদিন৷
আজ, খুব ইচ্ছে হলেও যেমন জানে, ওসব যুঁইয়ের মালা দিয়ে চাঁদধরা যায়না ৷

দরজাটা চাবি দিয়ে খুলতেই কেমন চোখ ধাঁধিয়ে গেলো,
এতো আলো?
টেবিলে সাজানো খাবার থেকে ধোঁয়া উঠছে,
খুব হাল্কা করে রবীন্দ্রসঙ্গীত,
পাশে গোলাপের গোছা!

একটা লাজুক চিরকুটে গোটাগোটা অক্ষরে লেখা,

"শাওন", পছন্দ?
কিম্বা,"মালবিকা"?






পথিক

প ল্ল ব  সে ন গু প্ত

অতিরিক্ত পথটুকু তুমি যাও।
দেখবে ওখানে ভীড়টা বড়ই কম।
থিরথির জলে দোলে কবেকার ফেলে আসা এক নাও
দেখাওতো দেখি নাবিকের সংযম।

অনেক তো হলো চেনাজানা বেচাকেনা।
রিং টোনে ভরা আবেগের আঁকিবুকি,
অকালবৃদ্ধ হলো না তোমার প্রাজ্ঞ 
মননে শোনা
কি করে যে নেবে বাড়ি ফিরবার ঝুঁকি?

তেমন করে কি বাড়িতে ফিরেছো কভু?
যাতনা বাড়িয়ে মনপুকুরেতে ডুবে?
ভেবেছিলে তুমি প্রহর পেরিয়ে কানামাছি খেলে তবু
শীতশীত মনে স্মৃতির শিশির রবে?

আজ হারা তুমি মধ্যপন্থী বায়ে। 
ফিরে ফিরে আসা সেই এক চৌকাঠে।
কবে কোন বেলা শরত দুপুরে 
আদুরকান্তি গায়ে
ঘুড়ি হয়েছিলে তেপান্তরের মাঠে।

তারপরে বন গহীন হয়েছে আরোও
পথ ভরে আছে  ঢাকামুখ পরিযায়ী,
চেনা অঙ্কের ঘুঁটি সাজিয়ে আজ কি বলতে পারো
এই গরমিলে তুমিও কতটা দায়ী?   

অতিরিক্ত পথটুকু তুমি যাও
পাটের সূর্য অপেক্ষমাণ সেথা।
যদি তার বুকে গভীরকে দেখো অপলকে চেয়ে নাও
শেষ থেকে শুরু পান্থজনের গাঁথা।





আত্মপ্রবাহ

তৈ মু র  খা ন

আমি নদী হয়ে বয়ে চলেছি

আমার বিদ্রোহী আত্মা জেগে ওঠেনি

                           কোনো ব্যঞ্জনার কাছে


পঞ্চসখিরা আলতা ধুয়ে গেছে

সাঁতার কেটেছে হৃদয়ে আমার

বালিতে প্রণয় চিহ্ন এঁকে 

একে একে চলে গেছে অন্য পুরুষের দ্বারে


আত্মা জাগেনি। ধর্মোৎসবের মলিন সকালে

কত হুলোহুলি—

মাংস ও নারী দেদার বিক্রি হয়ে গেছে

দীর্ঘ সঙ্গমের ওষুধ কিনে

                      কেউ কেউ ফিরে গেছে বাড়ি


আমার বাড়ি নেই। ঈশ্বর নেই। ধর্মোৎসব নেই।

শুধু আমলকী গাছের ছায়ায়

বসে বসে ডেকেছে দিনান্তের পাখি।

বৃদ্ধ সূর্য দার্শনিকের মতো 

                             রাত্রির দিকে চলে গেছে


আমি শুয়ে আছি। শুয়ে শুয়ে মৈথুনের শব্দ পাচ্ছি

শীৎকার ধ্বনিতে উন্মুখ হচ্ছে পাখি

রাতের চুড়ি বাজছে ঘনঘন 

শরীরী উল্লাসে কাঁপছে প্রমোদ কানন

চুম্বনের লহরী আসছে গাঢ় লাল 

                                    দুই ঠোঁটের মতন


কোথাও কথা নেই। শুধুই কথার ঘ্রাণ। 

আলোর ফিসফাস। বস্তুময় উপসর্গ।

কোথাও কোথাও স্বর্গের আভাস পাচ্ছে কেউ।

ঈশ্বরের ছায়া নাচতে দেখে

             কেউ কেউ পরকালের রাস্তা খোঁজে।

এই তার চমৎকার! এই তার সম্ভাব্য যাপন!

কালে কালে জন্মেন ঈশ্বর। ঈশ্বর তাদের পিতা।

                                      অলীক। দয়ালু।


আমার প্রবাহে কারা তরণি ভাসায়?

কাপালিক রক্ত ধুতে আসে

কোলাহল থেকে ছিটকে আসে রক্তস্রোত

লাশ ভাসে

                 লাশের মহিমা বুঝিনাকো


অন্ধকার যুগে সভ্যতার বাল্যকাল হাসে

অথবা চিরমূর্খ কাল সমূহ উত্তেজনা ক্রোধ

ধ্বংস বিহ্বলতা আততায়ী পোষে

সজীবতি ঘাতকের ছলে

দলে দলে বিনাশের অস্ত্র তুলে নেয়


নদী—সব সম্পর্কের ভেতর আমিই সূত্রধর

আমিই বিপুল দিন বিপ্লবের নতুন অধ্যায়

অথবা প্লাবনময় মৃত্যুঅভিঘাত

তারপর প্রাচুর্যের পলি, কৃষি ও নগর পত্তন


ক্লান্তিহীন নীরবে নীরবে স্নানের দৃশ্য দেখি

দুর্লভ অমোঘ স্নান, ত্রিভঙ্গ দোদুল জঙ্গম

বাসুকির ফণাময় দুর্লভ নাচন…

ঘোরের ভেতর দৃশ্য

সুরের ভেতর সম্মোহন

আলুথালু বৃন্দাবন, নগর উত্থান

সব দেবতার বাঁশি এই তীরে এসে বেজে ওঠে

নৌকাঘাট। রমণী ঊরুর নীলমোহ

অথবা রংধনু চিতা। বাউলের নিসর্গ অভিমান


কার্যত নীরবতার ভেতর শূন্যতা এসে দরজা খোলে

চোখ মেলে চেয়ে থাকি দূরে—

এপার ওপার জুড়ে সংশয়ের রেখা

সেতু বাঁধে, যদিও ভঙ্গুর সব সেতু

পার্থিবের কাছাকাছি থেকে

                            কেন অবিশ্বাস ডাকা?


অলীক নিষ্ফল সাধনায়

জুড়ে যায় believe! believe!






বৃষ্টি... একটি অপরাধী মেয়ে

সা য় ন্তি কা 

কত রাত বনগাঁ লোকালে বাড়ি ফিরেছে দুঃখরা। জানালার ভাঁজে পুড়ে যাওয়া শরীরের মতো ভিজেছে নদী! কান্নায় ভেঙে পড়েছে গাছেরা।

মেয়েটিকে ওরা সকলেই বৃষ্টি বলে ডাকতো। তার বুকে শুকিয়ে যাওয়া পাড়াটা এখনো রাত হলেই ভৌতিক হয়ে ওঠে।

যন্ত্রণাগুলো আগে থেকেই নিঃস্ব, শাদা আলোর গায়ে লেগে থাকা আঠার মতো মেয়েটার খয়েরি স্তন ঢাকা পড়ে যায় কুয়াশায়। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা হকারির ঘামে ভিজে যায় শূন্যতা।

মেয়েটি অপরাধী? মেয়েটির উরু বেয়ে নেমে আসা নদীটিও ভাঙছে বুঝি? তার তলপেটে সভ্যতা?

বৃষ্টি পড়ছে এখন শহরে। মেয়েটির আজ জ্বর, সে উলঙ্গ তবু সে ভাবছে ভূগোল!





স্বপ্নের দিশায়

দে বা শী ষ  ভ ট্টা চা র্য্য

স্বপ্ন দ্যাখা ভালো ,
তবুও য্যানো জট পেকে যায়,
আমাকে কেড়ে নিতে চায় কবিতার খাতা
এবং অন্যান্য অলঙ্কার!
মাছের দুচোখে বুঝি, গুরুত্ব হারিয়ে বুঝি;
একবুক জলে সাঁতার কেটে চলেছি আদি অনন্তকাল-
পৃথিবীর পোষ্য পরিযায়ী, নিজের নামতা ভুলে-
কষেছি যা কিছু সরঞ্জাম ছিলো মজুত করা,
শব্দের ভেল্কি আমি ঠোঁটে মেখে রাখি,
যে পথে গিয়েছে উড়ে প্রত্যাখ্যান এবং ভালোবাসা;
শত শহস্র হেলমেট আটকাতে পারেনা জলবায়ু,
আরও উষ্ণ হও শহর-
মানুষের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মেশিনে একটা গোটা রোদ ঢালি;
বুঝতে বাকি কিই আর আছে?
জানার চেষ্টায় নষ্ট করেছি যাপন বন্ধু কাল,
খরা আসে, আসে রুটির চেয়ে ধারালো জ্যোৎস্নার আলো,
আমাকে আঝালা ইচ্ছে দ্যায়,
তবুও তো বদহজম হয়েছে কতোবার,
বেশী জল খাই বলে বোতলের সাথে সময়ের সংঘাত,
কে কাকে টেক্কা দিয়েছে আড়ালে,
আমি ঢেকে রাখি আগামী যতটুকু বাকি,
প্রত্যাশা পেলে মানুষ যন্ত্রপাতি হয়ে ওঠে,
শেষ পথিক, নিজেকে চিনতে পারিনা আজকাল কোনভাবে।





অন্য শ্রাবণ

সু জি ত  মু খো পা ধ্যা য়

নারকেল গাছের পর্বসন্ধি বেয়ে,
শ্রাবণ গড়িয়ে নামছে।
শেওলা ছোপ ধূসর গোড়ায়।
কোষ রসে জাইলেম,
টইটুম্বুর শ্রাবনের ধারাপাত।

পুংকেশর গুলে গলে গলে পড়ছে,
গর্ভাধান বুকে।
সৃষ্টিতে সবুজ কচিবুকে,
এ মাটির শ্রাবণ।

সাগরের নোনা ডিঙি বেয়ে তুলে আনা,
ইলিশের লালচে ঠোঁট পালিশ।
ফাটাঠোঁট, দুই কষে ঘা।
সাদা হাজা আঙুলের ফাঁকে,
জমা রক্তে আঁশটে নখ পালিশ---
মেছুনির হাতে।
রুপালি নোলক ছিঁড়ে,
লালদাগি মেছো আঁশ বটি।

ফেলে আসা শালিকের বাসা, 
বর্ষায় ভিজে কাদা।
প্লাস্টিক চটির ফাঁকে সকালের কাদা মাড়িয়ে,
কাগজ আনা ছেলেটি---
খবর বয়ে আনে।

কাল রাতে কোথাও জেগেছে পেঁচা,
আদিমের স্বাদে, ঝাল ডালমুট।
নিশি জিবে লালসা চেটে---

খবরের কোণে, নিষিদ্ধ অক্ষরে---
ছবি হয়ে গেছে কুমারী ইলিশ।

রুপালি ওড়নার জরি, 
চাপ চাপ কালচে রক্তের ছোপ---
এ মাটির বুকে মুখ রেখে,
মেঘ মাখে অন্য কোনো শ্রাবণ।

নীল বিদ্যুৎ অক্ষর মালায়,
বুকে লেখা নিষিদ্ধ মেঘদূত।





খুব চাইছি একপশলা বৃষ্টি হোক

চৈ তা লী  না থ

ওই মেয়ে... 
সত্যি চাইছি, ভীষণ চাইছি  
ওই মিশকালো আকাশটা শুধু তোরই হোক।

আর শোনো... তোমরা... হ্যাঁ তোমাদেরই বলছি...
বন্দি জানলার কাঁচে জমে থাকা ধোঁয়াশায় 
তোমাদের ভালোবাসা লেগে থাকা আঙুল দিয়ে 
এই বেলা বুনে নাও ইচ্ছে খুশির আকাশকুসুম। 

এই মেয়ে...
আজ শুধু তোকেই দেখছি,
এই অকাল শাওনে ভিজে নে একবার। আকাশের দিকে তাকিয়ে দ্যাখ!
কপালের ওই লাল টিপে পড়ুক একটা ফোঁটা  
আর তা গড়িয়ে পড়ুক কপোল বেয়ে।

বোকা মেয়ে...
আজ এলোচুলে থাক
ভেজাচুলের ছোট মিহিন জলে কথারা ঝরুক টুপটাপ!
...আর তার ঝাপটায় ভিজে যাক ওই বৃষ্টিরই আদুরে শরীর!!

এই মেয়ে...
তুই অবাক হলি?
জানতে চাস কেন বারবার আড়ালে গিয়ে চোখ মুছি? 
কি ভাবছিস, আমরা কাঁদছি?
কেমন করে বোঝাই বল!
চোখের ভিতর যে আমাদের হাজার নদী বয়,
কান্না নয় সে... কান্না এত সহজ নয়।
এতো সকাল-সাঁঝের কষ্টনদী চোখের মাঝে ধরে রাখা, সেও এক জ্বালা!
ভাবছিস! চোখে আবার কেমন জ্বালা?!?
আমাদের চারপাশের দৃশ্যে 
শুধু গনগনে আগুন আর ধোঁয়া,
সে ধোঁয়ায় জ্বলছে চোখ! 
আমরা চোখের জ্বালায় চোখ মুছি
আবার সবকিছু স্পষ্ট দেখার ইচ্ছে নিয়ে।

ও মেয়ে...
একবার নীল শাড়ি পরা নিটোল সৌন্দর্য নিয়ে ভেজ।
গোলাপ-নির্যাসের ঘ্রাণ নিক বৃষ্টিফোঁটারা নিজের বুকে।

স্নাতা সুন্দরী তোকে দেখছি...
নূপুরের রুনুঝুনু, কাঁকনের শিঞ্জিনী 
ঘন সবুজ পাড় দেওয়া তোর মখমলি মিহিন
শাড়িতে কেউ যেন তার মনের জমানো সব নীল ঢেলে দিয়েছে! 
মনে হলো কেউ যেন তোর ভালোবাসায় নিরাশ হয়ে
তোর দুটি রাতুল পায়ে নিজেকে বলিদান দিয়েছে, আর তার হৃদয়ের জমাট বিষাদ তোর নীল শাড়িকে আরও নীল করেছে....তাই এই বেলায় সুন্দরীর মন ভার!

ওই দ্যাখ...
আকাশের প্রচ্ছদপটে তোরই মুখচ্ছবি। 
সময়ের সাথে কি নিবিড় সম্পর্ক পাতানো...!

আমি উঠি।
যাই... দেখে আসি
পৃথক কারণে একস্থানে, একই কালে ভিড় করা
বিস্তর মানুষের মাঝে আমি একা কেন অহেতুক!?

একটু ভেবে দেখি মনে মনে
জীবন নাট্যের এ কোন অঙ্ক অভিনীত হচ্ছে!!





বেহাগ

দু র্গা প দ  ম ন্ড ল
      
এখন তুমি কেমন আছো সাঁঝ সকালে
এক দুপুরে রৌদ্রে ভেজা ঘুঘু-ডাকা তেপান্তরে 
যেমন ছিলে তেমনি আছো এই অবেলায়!
খুব ভোরে কি স্বপ্ন দেখো? ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকো? 
মিহিন হাওয়ায় পর্দাটা কি খুব ব্যথিত--- পাইনে খবর।

কোন্ তারাটা আজও ডাকে সন্ধে হলে হাতছানিতে
বুক পোড়ানো বৃষ্টি- আগুন দু'এক ফোঁটায়
কী বলে যায় জনান্তিকে---?
জানতে বড়ো ইচ্ছে করে স্মরণ ক্ষরণ যন্ত্রণাতে।

না হয় তখন ভুল করেছি, ভুল করেছি ভালোবেসে
নষ্ট আশায়। বলতে পারো কী আসে যায়!
কার তাতে কী?
যত্নে না হোক, শ্যাওলা যেমন জমিয়ে রাখে
দু'এক কুচি মুক্তো দানা,--- থাক না কেন অবহেলায়!  

হয়তো ভাবো, ভাবতে পারো নির্জনতা খুন করেছি
নষ্ট হাতে, ভ্রষ্ট রাতে--- রাতের বেহাগ শুনতে শুনতে
        শুনতে শুনতে---





ঝুলন্ত আয়ু ম্যানহোল খোঁজে

শ্যা ম ল  খাঁ

গড় আয়ুর ঝুলন্ত দড়ি ধরে দোল খাচ্ছো তো!
------খাও।
আরও কিছুটা সুখ গায়ে মেখে নিয়ে
ঝিঙে ফুল রোদের কিরণ গায়ে লাগাতে লাগাতে 
একবার অন্তত ফিরে চাও।

সব কিছু মিলে গিয়ে শূন্য ভাগশেষ পেলে কি?
নাকি কিছু রেখে গেলে আগামী পৃথিবীর আঁচলে?

কেবল মাত্র একটা সংখ্যা!
নাকি সংখ্যাকে ছাপিয়ে গিয়ে গড়তে পেরেছো
এক মজবুত নিরেট অস্তিত্ব?
তোমার অনুপস্থিতি ভরাট করে দেওয়ার
সার্বজনীন কোনো কাহিনী লিখতে পেরেছো কি?

প্রেম অপ্রেম আর বিলাসিতার লড়াইয়ের মাঝে
কতটা বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছো নিজেকে?
নাকি সব বিক্রি করে দিয়েছো---
গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানোর নির্ঝঞ্ঝাট আমেজটুকু নিয়ে?

সব প্রশ্নের উত্তর যদি নিখোঁজ থাকে 
একবার নিজের উল্টো ছবি এঁকে ঝুলিয়ে দাও।
দেখবে রাজপথের মাঝে একটা ম্যানহোলের ঢাকনা তোমার জন্য ঠিক খোলা আছে।
আর দেখতে পাবে---
উত্তর গুলো অন্ধকারে কেবল দুর্গন্ধ মাখছে।






হলুদ সে দিন

ছ ন্দা  দা ম

বলে যায় কথাদের ঝাঁপি, ডাক দিয়ে যায়...
কোন অলক্ষ্যে মনখারাপি,
এমন দিনে লালপেড়ে শাড়িতে সোনালী স্বপ্ন
মেখে যায় বাসন্তী বুকে ইচ্ছের দাপাদাপি।

হলদেটে ডায়রিটার ফিনিক্স আগুন রঙের...
দুপুরের দামাল ফাল্গুনী মিঠেল হাওয়া,
আসকারা দিয়ে যায় কাঠফাঁটা চোখটাকে,
খোঁজে নেশা মাতাল হাওয়ায় 
বল্গাহারা স্বপ্নছোঁয়া।।

প্রলয়ের মেঘটাতে কবিতা লিখে রাখে সে তার বুকপকেটে....
হেঁটে যায় দিগন্তের সামিয়ানার দিকে,
নেই কোন জলছাপ, নেই মাপার মতো ব্যথা...
শহুরে দেয়ালে বিজ্ঞাপনেরা অকারণেই পেন্সিলে বুক আনচান আঁকে।

আকাশে হলুদের ছোপ ছোপ প্রেম সুরভিত কাব্যগ্রন্থ...
কৃষ্ণচূড়ার ঝিরিঝিরি পাতার বাতাস হয় আকুল,
মাছরাঙার ডানা ছুঁয়ে স্বপ্ন উড়ে দূরে আরো দূরে...
অথৈ নদীর মতো কুলহারা বুকের ঢেউ সর্বদা বিপদসংকুল।

তুমহে চাহে বিনা জী নেহী লগতা 
চাহে ভী তো জিয়া উদাস রহে,
ইয়ে ইস্ক হে ইয়া কোই বিমারী
লফ্জ মিলতা নহী ইসে ক্যা কহে!!





যযাতি

শ্যা ম ল  কু মা র  মি শ্র 


হে যযাতি! 
তুমি তো চেয়েছিলে 
নারী, সম্ভোগ, মৈথুন, দেহজ সুখ
হাজার বছর ধরে গ্রহণ করেও 
তুমি অতৃপ্ত রয়ে গেলে, 
কামনার আতপে তুমি ক্লান্ত অবসন্ন আজ
মুক্তি খুঁজে ফের নীরবে নিভৃতে...

জীবনের সায়াহ্নবেলায় 
উদ্বোধিত চিত্ত মাঝে জেগে ওঠে নিবৃত্তি
ত্যাগ মাঝে ঘটে মুক্তি তোমার
যৌবন প্রক্ষেপণে নেমে আসে শান্তি
সুন্দরের প্রকাশ ঘটে জীবনের মাঝে... 

রাত্রির নিশীথে খসে পড়ে রাজপোশাক 
রয়ে যায় জীবনের সারাৎসার 
জীবন হারিয়ে যায় সময়ের মাঝে 
অনন্ত জীবনবোধ বয়ে যায় জীবনের ধারাস্রোতে...





দিগন্তের শেষ শ্মশানে অসমাপ্ত প্রেমের চুম্বন

অ সী ম  দা স  

একটার পর একটা নিঃশ্বাস খসে পড়ছে 
সময়ের সৌর চুল্লীতে 
বিগত আয়ুর বিকেল বাথানে 
বাসি হচ্ছে যযাতির বাড়তি যৌবন 

আর আমি এক অসমাপ্ত প্রেমের চুম্বন দৃশ্য 
এঁকে যাচ্ছি পিচ্ছিল পদ্মের স্বপ্ন পাতায় 
দিনের পরে মাস মাসের পরে বছর সাজিয়ে 
থাকবন্দী পাহাড়ের মুখে ঢেলে চলেছি 
অবাধ্য জিনের তৈরি আবেগের নীল মদ 

দিগন্তের শেষ শ্মশানের এক মহাবট 
আমার ব্যাধের তীরে বিদ্ধ হওয়া এড়িয়ে 
আবারও ননী খেয়ে বাঁশি বাজানোর 
ইচ্ছে দাঁড়ে দাঁড়িয়ে ঠোঁট টিপে হাসছে 

নক্ষত্রের অবিরাম জন্ম মৃত্যু দেখেও 
আমার বারবার নতুন করে সৃষ্টি স্বাদ পাওয়ার 
ধোঁয়া- আগুন নেশা কাটছে না





জমাট ইচ্ছে

ক বি তা  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়  

আকাশের দিকে নির্নিমেষে চেয়ে থাকতে থাকতে তোমার মুখের ছবি ফুটে উঠতে দেখলাম যেন!
ভুলে যাওয়া কিছু কথা, কিছু গান সবেগে মনের দরজায় আছড়ে পড়লো,
অথচ প্রতিনিয়ত আমি তোমাকে ভুলে থাকতে চাই...

আমার যাপনে তোমার চিহ্নগুলো
নিষ্ঠুরের মত ভাসিয়ে দিয়েছি
নাম না জানা নদীতে,
তরতর করে সেগুলোকে এগিয়ে যেতে দেখে রক্তাক্ত হয়েও আমি মুছে দিতে চেয়েছি একটা গোটা অস্তিত্ব...

কিন্তু পারছি না কিছুতেই!
আজও যেন কাঙালের মত ভিক্ষাপাত্র নিয়ে প্রতীত হও
আর আমি শত চেয়েও তোমাকে ফেরাতে পারিনা,

একটা সম্পূর্ণ তুমিহীন দিন আর কাটানো হয় না আমার...





স্রোত

উ জ্জ্ব ল  চ ক্র ব র্তী

ওরা ভালোবাসুক রক্তাক্ত জীবন,
আমরা সাঁঝবাতি, শস্যভূমি, ধানক্ষেত, পেরিয়ে শীত সকালে মাতবো চুম্বনে,
ভালোবাসার দীঘল স্রোত আছড়ে পড়বে হৃদয় থেকে হৃদয়ে--

সকাল-দুপুর-রাত ভীষণ যন্ত্রণা তাড়া করে ফিরেছে যুদ্ধ‌ক্ষেত্রে,
শব্দরা খেলা করেনি শিথানে,
ছিল না নদীর কূল কূল ধ্বনি, বরষার রিমঝিম, বৃষ্টির গান, দেখিনি শিশিরের গালিচা,
       শুধু অনুভবে দেখেছি তোমার সমুদ্র নীল চোখে অঝোর বৃষ্টি,

সময়ের সমীকরণে কালক্ষেপণ হয়েছে অনেক,
আর নয়,
এবার ভালোবাসা আঁকড়ে বাঁচব
শিহরন ছুঁয়ে যাবে উষ্ণ চুম্বনে,

একদিন আমরা থাকবো না,
তবু‌, নক্ষত্রবর্ষ পর‌ও--
যুদ্ধ ছাপিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে ভালোবাসা।





মেঘ ও বৃষ্টি

সৌ মে ন  দ ত্ত

অভিমানে জমা পিচ রাস্তায়, না চাইলেও 
পা থমকে পারাপারের সিগনালে।
বৃষ্টি নামবে আরেকটু পরেই,
শহর জুড়ে মন খারাপের জ্বর,
বোঝা মুশকিল, এ দায় কার..!
যতটা পথ আলো ছিল, ঘর গুলো ততটাই অন্ধকারের স্নায়ুযুদ্ধ খেলছে।
হয়তো বৃষ্টি নামবে এবার,
চলো, চলা যাক কিছুটা পথ,
ঝড় ছুঁয়ে চলা যাক বাঁকে বাঁকে, 
চলা যাক ধীরে ধীরে নিস্তব্ধতা জড়ানো চোখাচোখি খেলতে খেলতে।
না বলা কথার কাটাকুটি করতে করতে।
অভিমানের আবরণে সুপ্ত নদীর পাড়ে 
দাঁড়িয়ে আর কতক্ষণ..! 
হয়তো বৃষ্টি নামবে এবার, 
চলা যাক নখে নখে বিদ্যুৎ চমকানি, আর...
চিবুকে অভিমানী ঝড় নিয়ে।
চলো, চলা যাক কিছুটা পথ, 
থমকে না দাঁড়িয়ে, কালবৈশাখী মাড়িয়ে।

শহরের বুকে ক্লান্ত পথিক,
ক্লান্ত সহচরী, 
ফেলে আসা হাসির দোয়াতে অভিমানী ঠোঁট ভিজিয়ে।
পাখিদের নীড়ে ফেরার পথে, বিষণ্নতার চাদর ছেড়ে
জুঁই মালতীর গন্ধ মেখে চলো হারিয়ে যায় অজান্তেই।





একটু অন্যরকম বৃষ্টি আসুক

আ র তি  ধ র

চোখ সোজা আকাশ পথে, 
চন্দ্রযান উড়ান ভরেছে ওই
মহাশূন্যের উদ্দেশ্যে...

অদৃশ্য হয়ে গেছে, 
এখন শুধু সাদা চিহ্ন আকাশে। 

অনেকক্ষণ...
চোখ নামাই নিচে, 
মানে তলানিতে, বুকের ভেতর
টগবগ শব্দ... স্পষ্ট! 

--একি রক্তের তোলপাড়, নাকি... 
ব্যথিত হৃদয়ের উন্মাদনা? 

-ওরা উল্লাসে ফেটে পড়ে, রক্ত, মাংস, একটা আস্ত উলঙ্গ উৎসব উদযাপনে। 

আকাশের সাদা চিহ্ন মিশে গেছে, এখন কালো মেঘ, ঘন কালো...

যেন জমাট বাঁধা সারি -সারি অভিমান। 
চোখ জ্বলে জলের ধারায়। 
বুকে এখন বসত করছে আস্ত একটা মণিপুর। 

একটু বৃষ্টি চাই। 
হ্যাঁ.... আমি চাই এবার একটু অন্য রকম বৃষ্টি নামুক।





তুমি, আমি ও আমাদের সংসার

সু ন ন্দা  চ ক্র ব র্তী

এই বৃষ্টি ভেজা দিনে
তোমার কথা ভেবে আর 
কাগজের নৌকা বানাই না,
উঠোনের জমা জলে নৌকা ভাসাই না।
তার চেয়ে বরঞ্চ খিচুড়ি ও 
ডিম ভাজা হোক ,
সি ডি তে কিশোরী আমনকর 
মেঘমল্লার থেকে মেঘ 
ভাসে আমার ঘরে 
আমার উপচানো সুখ।

তাও কেন মনের ভিতর অশান্তি?
জিভে টকটক ,কখনও তেতো স্বাদ 
চোঁয়া  ঢেঁকুর,
এন্টাসিডময় জীবন
মেঘগুলো ঘরের ভেতর 
কি যে বার্তা বয়ে আনে!
সুখগুলো মুহূর্তেই গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে 
মেঘের সাথে মিশে দুঃখ হয়ে যায়,
বুকের মধ্যে ঝরতে থাকে কষ্টমেঘ
টুপ টুপ টুপ---
তুমি শুনে হেসে বলো- "কিছুই না,
ওটা সখের কবিদের অসুখ"।।





বৃষ্টি মেয়ে

বী থি কা  ভ ট্টা চা র্য

থমথমে মুখ, আঁধার মেঘে, আষাঢ় গগন ছেয়ে,
সজল দিনে, মন কেমনে, কাজল কালো মেয়ে।
সারা দুপুর, বাজিয়ে নূপুর, জল থইথই বন্যা,
তুই তো এলি, মন উছলি, বাদল মেঘের কন্যা। 
হঠাৎ এসে ভাসিয়ে দিলি, ভিজিয়ে দিলি মন, 
ডাক দিয়ে যাস, অঙ্গ ভেজাস, আঙিনা উঠোন। 
হাতটা ধরে, আষাঢ় ছিলো, সঘন গগন ঘিরে,
শ্রাবণ এসে ভাসিয়ে দিলো, অথৈ বাদল নীরে ।
রিমঝিমঝিম শ্রাবণ ধারায়, বর্ষা মেয়ের নাচ,
টাপুর টুপুর, ছন্দে নূপুর, মন উতলা আজ। 
বৃষ্টি নাচে সামনে দূরে, মন যে উড়ু উড়ু,
মেঘলা মেয়ে নাচায় ভুরু, বাজায় গুরু গুরু। 
এমনি করেই রিণিঝিণি, নাচের তালে ছন্দে,  
মেঘের দেশে, নিরুদ্দেশে, পথ হারা আনন্দে।
ভিজিয়ে আঁচল, এলোকেশে, ছড়িয়ে জটা রাশি,
বৃষ্টি রে তুই মিষ্টি মেয়ে, হোসনা রে বানভাসি। 
মেঘের ভেলায় বৃষ্টি খেলা, ভাসলো ধরাতল, 
নদীর তীরে কূল ছাপানো, পাড় ভাসানো জল। 
গাছপালা মাঠ ভাসিয়ে দিয়ে, থামলি অবশেষে, 
পথ ঘাট সব জল থইথই, পৃথ্বী রইলো ভেসে।





বাসন্তী-ভাত

মি তা  বি শ্বা স  ব সু

চাল ভেজানো, হলুদাভ জলে
হাতের চাটুতে হলদেটে ছোপা 
মনে পড়ে ওর প্রথম হলুদ মাখা দিন
কম পড়ে ছিলো, অভাবে সেদিন। 

আজ সারা হাতে হলুদের গুঁড়ো 
শাড়ী জামা সব জেরবার রঙে
হলদেটে সেই ফ্যাকাসে মুখে 
বেয়ে আসে এক হলদেটে কষ।

রঙের তুলিতে হলুদের পোঁচ 
সূর্য এঁকেছে ছোট্টো মেয়ে
দিনের শেষে বিবর্ণ রঙ 
বদলে চলছে দীর্ঘ সময়ে, ঢিমেতালে মন।

হলুদ জলেতে চাল ভিজে ওঠে
এবার, রান্না হবে বাসন্তী-ভাত!





প্রশ্নটা  রইলো  তোমার  জন্য

সু দী প্ত  রা য়

মেয়েটিকে দেখেছিলাম এক বিকেলে, যখন কলেজে পড়ি আমি।
পড়ন্ত বিকেলের হালকা রোদ ছিল তার মুখের ওপর
যেন! ঐ দ্যুতির আভা তার ফর্সা গালকে করে তুলেছিল লালচে।
গোলাপি ঠোঁটের পাশে উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল কালো তিলটি।
কালো চুলের আড়ালে দেখেছিলাম কানের লম্বা ঝুমকোটি;
সাথে হলুদ ঢাকাই কম্বিনেশনে রোদের রঙ মিশে-
গড়ে তুলেছিল নতুন এক মায়াবী নেশা।
যখন, হঠাৎ করেই তার সাথে আমার চোখে চোখ হল 
চোখের কাজলে সেদিন সত্যিই দূর্বল হয়েছিলাম আমি।
তার ঐ চোখের গভীরতায় হারিয়েছিলাম নিজের মনকে।

বারবার, মন প্রশ্ন করছিল তাকে কেন এত সুন্দর তুমি?
কী দরকার ছিল এত সুন্দর করে সাজার!
খুব দরকার ছিল এমন ভাবে মাঠে একা বসে থাকার!
আচ্ছা!
তোমার এত সৌন্দর্য কী কেবল 
আমাদের পুরুষের হৃদয়কে হরণ করার জন্যই!
নাকি কেউ বলেছে তোমাকে এমন সেজে আসার জন্য!

আর হয়তো দেখা হবে না তোমার সাথে আমার কখনও।
তাহলে?
এইযে, আমার হৃদয় জ্বলে ছিন্ন হয়ে গেল তোমার রূপে!
তার দায়িত্ব নেবে তুমি?
পারবে! এই কলেজ ছাত্রকে নিজের হৃদয় দিতে তোমার?
পারবে তো! 
এমনভাবে সেজে এসে দু’দন্ড কথা বলতে আমার সাথে?
সে’দিন না হয় আলাপ হবে- জানাবে তোমার নাম-
শান্ত হয়ে শুনব তোমার কথা, দেখব তোমায় প্রাণ ভরে।
প্রশ্নটা রইল তোমার কাছে–
আবার যদি দেখা হয় কোনদিন,
অবশ্যই জানতে চাইব আমি।

বাস চলতে শুরু করল......





বৃষ্টি মুখর

গী তা লি  ঘো ষ

আমি বৃষ্টি খুঁজে মরি...
তপ্ত মনে শান্তিবারির ছোঁয়া,
যেন কোন অতলের মনের কথা
বৃষ্টি ধারার সাথেই
মনে উঠল যে গুমরি! 

সেই বৃষ্টি ব‍্যাকুল পথে,
ভিজেছিলাম তোমার দুহাত ধরে।
 কত অস্ফুট সব কথায়,
 মনটি যেন ভিজেছিল
তোমার প্রেমের সাথে। 

তুমি কোন গোপনের তারা
মনে ভেবেছিলাম আমি,
বৃষ্টিধারার সাথে সাথে
তোমার আলতো ছোঁয়ায় ভরে,
বাজল যে একতারা। 

বারিস্নানে ভিজে,
দোঁহার সাথে মনে মনে
রইল যে সেই কানাকানি,
অপরশ দুই চোখের ভাষা
ভরা বর্ষার মাঝে। 

নুপূরের তাল গুণে
বৃষ্টি ঝরে অঝোর ধারে,
পর্দা ফেলে যুগল মাঝে
দৃষ্টি আড়াল করে, 
চলে আপন পথের পানে। 

তুমি পথ হারিয়ে চল
আমি পাইনে তোমার রেশ,
বৃষ্টিমুখর রাতের মাঝে
পথ হারালাম আমি...
বৃষ্টি, ঠিকানা আজ বল।।





বৃষ্টিলেখা

জা রা  সো মা  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য় 

জলের প্রাবল্য না বুঝেই ডেকে ফেলি বৃষ্টি 
তির তির বাহানায় ছুঁয়ে যায় অভিমান 
তৃষ্ণা বাড়ে নৈকট্যে ও সূদূর সংলাপে

আবেদন ভাসে ও ভাসায় জীবন তরী 
অধিকার বসে সামলাতে বৈঠা 
দর্পণে ভেসে ওঠে সম্ভাব্য ও সম্ভাবনা যত 

অথচ
চাঁদ আজও শুকনো চোখের অপেক্ষায় 
জলের অভাব পার করে যায় আরো একটা জন্ম।।





শ্রাবণ

শি খা  না থ

তোমার  শ্রাবণ আমার শ্রাবণ মেঘলা দিনে ঘেরা,
আকাশ নীলে কালো রেখা অবাক দিশেহারা।
যখন তখন কব্য লেখে, গায় জীবনের গান
খোলা মাঠে সবুজ ঘেরা নদীর কলতান।

তোমার শ্রাবণ গল্প বলে আশা নদীর বাঁকে
সবুজ ধানের মখমলি রূপ মাটির আতর মাখে।
আমার শ্রাবণ কান্না ঘেরা গায়না সুখের  গান
ভাঙ্গা বাঁধে বান ভেসেছে মাটিতে নেই টান।

তোমার শ্রাবণ প্রেমে ভরা প্রেমিক নজর চায়
আমার শ্রাবণ বিরহিনী একলা কেঁদে যায়।
শ্রাবণ ঘেরা বাদল দিনে স্মৃতির ছবি ভাসে
উথাল পাথাল ঢেউয়ের দোলায় ভাবনা এসে মেশে।

সাঁঝ সকালে কাজের মাঝে বৃষ্টি এসে ডাকে,
তোমার আমার শ্রাবণ মেঘ বিভোর হয়ে থাকে।
রিনরিনে ওই শব্দটাকে বুকের মাঝে রেখে
ময়ূর নাচে পেখম তুলে মাতন লাগা দেখে।





আমি একটা মেঘ হতে চাই

ক থা ক লি  সো ম (পা রু ল)

আমি একটা আস্ত মেঘ হতে চাই, 
সূর্যের তাপে তপ্ত মাটি যখন ফেটে চৌচির হবে 
আমি মেঘ ভাঙা বৃষ্টি হয়ে সেখানে 
নদী হয়ে বয়ে যেতে চাই... 

যার পাড়ে গড়ে উঠবে সবুজ বনবীথি 
পাখির কলরবে মুখরিত হবে বাতাস
কবিরা নরম ঘাসের উপর উবু হয়ে বসে 
লিখবে কবিতা... কল্পনা-প্রেয়সীকে 

কখনও ভাসবে প্রেমের বন্যায় 
কখনও ফুল ছিঁড়তে গিয়ে ছিঁড়বে পাপড়ি 
কখনও দু-চোখ ভাসাবে প্রিয়াকে হারানোর 
বেদনায় যেখানে স্থান শুধু, 
কল্পনা আর ভালোবাসার...

বিচ্ছেদ সেখানে অজানা 
হিংসা সেখানে অচেনা 
দুঃখ স্পর্শ করবে না কাউকে
সমালোচনাকে কেউ চিনবে না। 

পাখির কাকলিতে মুক্ত হবে 
ব্যর্থতার জমাট ইতিহাস ।
রুদ্র-উত্তাপে বিবর্ণ রুক্ষ মাটি 
সেখানে পাবে মুক্তির উল্লাস, 
আমি এমন একটা মেঘ হতে চাই...






ব্যথাতুর পৃথিবী

সু মা  দা স

শান্ত পৃথিবী আজ অশান্ত, বদলাচ্ছে প্রকৃতির রূপ,
সময়ে অসময়ে হানছে হানা মানুষ রূপী অদ্ভুত।
ছিবড়ে ছিবড়ে খাচ্ছে দানবেরা ধরা মায়ের দেহ
কেমন করে মাগো তুমি নীরবে সব সহ?
কলুষিত করছে তোমায়, মানুষ হয়েছে পশু
লোভ লালসার পাশবিকতায় রক্ষা পায় না বৃদ্ধা ও শিশু।
তোমার কোলে মাথা রেখে আমরা শান্তির আশ্রয় খুঁজি,
তোমার আঁখির ব্যথাতুর অশ্রুসজল আমরা কি কখনো বুঝি?
ছাই চাপা যন্ত্রণা নিয়ে তুমি দাঁড়িয়ে আছো ঠায়,
তোমার ব্যথার উপশম হবার সুচিন্তা হোক্ তোমার সন্তানদের মানসিকতায়।
আবার তুমি হাসবে মাগো, খুশিতে উড়বে তোমার আঁচল,
জড়িয়ে ধরবে সন্তানেরা তোমায়, বয়ে যেতে দেবে না তোমার আঁখির জল।





যাত্রাপথে

সো ম না থ  ম ন্ড ল

লোকাল ট্রেনের সিট চুপ 
একঘেঁয়ে হতাশ দুলুনি,
উঁকি মারা হাওয়ার দাপট
গায়ে গা হেলিয়ে ঘুমে কুঁড়ি 
হাতে ধরা নরম আঙ্গুলে
                        আগামীর নুড়ি।

সোনালী স্বপ্নে জানালা
ভিড় ঠেলা পর পর স্টেশন
ভালবাসার কৃতজ্ঞতা,
স্বপ্নেরা সব নেমে গেল
                  বিরহের অজ্ঞতা।

সমন্বয়ের ফুল নাকি পাপড়ি!
ঝরে পড়ে,
বিশ্বাস ও নেমে গেছে, 
আবারও ট্রেনে-বাসে-ট্রামে
যাত্রাপথ একাকী, মুক্ত 
                   অতলে সঙ্গী সেজে।





আমার কাব‍্যগাথা

শা ন্তা ল তা  বি শ ই  সা হা 

আমি কবি,
প্রধানত সমসাময়িক কালের।
আমি তুলে ধরি সনাতন মানব জীবনের মূল বৃত্তিকে
আমার বোধ ও চেতনায়।
আচ্ছা কবিতা, তুমি কি দর্শকের মতো দূর থেকে লক্ষ‍্য কর
চলমান জীবনের ধারাবাহিকতা?
তারপর কালের কেন্দ্রবিন্দুকে কবির কলমের মুখে উপুড় কর,
শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে?
তোমার উপজীব‍্য বিষয়ের সন্ধানে আমাকে নিয়ে; 
কখনও তুমি দ্বারস্থ হও সাহিত‍্যের পাতায়,
কখনও বা বিজ্ঞানের তথ‍্যভাণ্ডারে
কখনও বা বতর্মানকে উপেক্ষা করে উজান বেয়ে পাড়ি দাও বিগতকালে,
পা ফেল ইতিহাসের পাদপীঠে।
সেখানে বিগ্রহ মূর্তি লাভ করে ; আমি প্রাণবন্ত হই!
কখনও বা ইতিহাসের ঋণকে 
মণিব‍্যপ্তির মতো অন্তর্লোকে ধারণ করি,
আখ‍্যানের টানাপোড়েনে তৈরী করি আমার আখ‍্যান বুনন।
খণ্ড খণ্ড কালের অনুপম ঐশ্বর্যকে 
সাজাই স্তরে স্তরে,
কবি কল্পনায় স্থির পূর্ণতা দিয়ে পরিব‍্যপ্ত করি,
আমার কব‍্যিক ভাণ্ডার।





মনখারাপি মরশুম

নী লা শা  পা ল 

একদিন খুব করে মন খারাপ হলে
সব অভিমান আমার ওপর চাপিয়ে দিও,
আমি না হয় রাতের আকাশ হব 
তুমি কেবল তারার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে নিও।
সন্ধ্যে নামলে ঝড়ের খেয়ার ঠিকানাটা লিখে নিও,
পাল্টে গেলে মনখারাপের এই মরশুম 
একলা থাকা ট্রামলাইনে ভালো থাকার চিঠি দিও।
আমি তখন থাকবো বসে 
শিশির ঝরা দূর্বাঘাসে
তুমি না হয় ফিরে এসে
আমায় একটু জাপটে ধোরো।

থাকতে চাইলে অজুহাতের বাহানা হয়ে থেকে যেও
শহর থেকে নগর ছেড়ে 
এই জনতার অবাধ ভীড়ে 
হারিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে হয়ে 
পাহাড়ী কোনো ঝরনা  হয়ে ঝরে পোড়ো।
কিংবা কখনও ব্যালকনিতে 
একলা হয়ে কফির কাপে চুমুক দিও,
আমি এ শহরের উষ্ণতম দিনের গল্প হলে
তুমি তখন খুব গোপনে মনখারাপি ভুলে যেও।।





বৃষ্টি

দে ব যা নী  ঘো ষা ল

তুমি বৃষ্টি চেয়েছো বৈশাখে।
তুমি বৃষ্টি চেয়েছো শ্রাবণে।
কিন্তু তোমার অজান্তেই বছরভর ঋতুরা ভিজেছে বৃষ্টিতে।
তোমার সফলতা আমাকে ভিজিয়েছে তৃষ্ণার্তের তৃপ্তিতে।
ভুল করে রোজই তবু এসে পরে এক চিলতে রোদ্দুর আমার স্যাঁতসেঁতে ঘরটাতে মরচে পড়া শিকের জানলা ঠিকরে।
বেঁচে থাকার রসদ যোগাতে।
এতটুকু উষ্ণতা।
অথচ নিষ্প্রোয়োজন ঐটুকু।
কেই বা চায় চেরাপুঞ্জির শ্যাওলা জমা অবিরাম সিক্ততা?
আমার আকাঙ্ক্ষার ঋতুরাজ আজ অদৃশ্য।
খুঁজে বেড়াই সেই হারানো সফলতা শুকনো চোখে বৈশাখী সন্ধ্যায় দু'ফোটা মেঘ ফাটা বৃষ্টিতে ঠোঁট ভিজিয়ে।





ভিজছে আমার পাড়া
 
সু মা  গো স্বা মী
     
মেঘলা দুপুর, ধোঁয়াটে আকাশ, বৃষ্টিস্নাত পথ
          আকাশের বুকে ঠাঁই পেয়েছে
                  মেঘের নৃত্য ঘর।
ছোট্ট গলির আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ছে
                   সোঁদা গন্ধের সুর।
পেঁপে কামিনীর সবুজ পাতায় দিচ্ছে দেখা
                 দমকা হাওয়ার রূপ।
 বৈশাখী উত্তাপের সঙ্গে যখন করেছি আমি আড়ি
                 জৈষ্ঠ্যের তেষ্টায় প্রাণ খুলে
                     বৃষ্টি হেসে লুটোপুটি।
   এতদিন পর বিজলী নামে 
           গয়না পড়েছে আকাশ  
                        ঠিক তখনই 
                    ভিজছে আমার শহর
                    ভিজছে আমার পাড়া





যদি বৃষ্টি হতে পারি

পা পি য়া  গো স্বা মী

যদি বৃষ্টি হতে পারি তবে
তোমার মনের মনি কোঠায়
দেবো সু‌নিল সাগর এঁকে
দুখের যত খড়কুটো কোথায় যাবে ভেসে।

যদি বৃষ্টি হতে পারি
এই পৃথিবীর আনন্দ ধারা 
উজাড় করে ঢালব ভূমন্ডলে
ছড়িয়ে যাবে সব মানুষের অন্তর দেশে। 

যদি বৃষ্টি হতে পারি
খুশির ঝরনায় পৃথিবীর বুকে
মিশে যাবো সবুজ ক্ষেত-মাটিতে,  
ফসল ফলাতে জেনো মাতবো ভালোবেসে।

যদি বৃষ্টি হতে পারি
সাগর-নদী-দীঘির বুকে 
আমি মিলবো অঝোর ধারে 
তাথৈ তাথৈ জল-গানে নাচব হেসে হেসে।

যদি বৃষ্টি হতে পারি
ছুঁয়ে তোমার চোখের পাতা 
কষ্ট মুছে দেবো বারি ধারায় 
ভালোবাসা তোমার মনে উঠবে জানি ভেসে।

আমি বৃষ্টি হতে চাই
দুঃখ সবার সরিয়ে দূরে
শুধু ভালোবাসাই দিতে চাই
চিরকাল বৃষ্টি-সুখে মিষ্টি মধুর আবেশে।





কথা দাও

অ নি ন্দি তা  না থ 

দীর্ঘ এক বছর প্রতীক্ষার পর 
তোমার অভিমান কমলো না?
সবার মুখে এক বার্তা, মেঘ--
তোর প্রেমিক বাদল নিরুদেশ। 
আমার হৃদয়ে আঘাত হানে গো।
সূর্যদার সাথে আমায় নিয়ে
কেন তুমি শুধু শুধু বিবাদ করলে?
জানতো, ভীষণ জেদি-তেজী সূর্যদা।
তোমায় ছাড়া একদন্ড বাঁচব না। 
অনুরোধ করছি কথা দাও জলদি আসবে। 
বাদল আমি ছাড়াও তোমাকে সবাই ভালবাসে। 

-সবার কথা মূল্য দিও প্লিজ।





পশ্চিমের রোদ

টু লা  স র কা র

আজকের দুপুরের পশ্চিমের রোদ
জানালা দিয়ে ঢুকে পড়লো বিছানার উপর।
সাধারণত এই জানালা এইসময় বন্ধ রাখি
দুরন্ত রোদকে আড়াল করতে।
আজ বন্ধ করতে গিয়েও বন্ধ করলাম না।
এই রোদকে ভীষণ চেনা মনে হলো।
খানিকক্ষণ চেয়ে রইলাম রোদের দিকে।
সে যেনো কতকিছু বলতে চায় আমায়।
বন্ধ জানালার প্রতি তার প্রচুর অভিমান। 
আজ সময় হয়েছে তার মনে করাবার-
কিছু অতীত, তখন জানালা খোলার সময়-
ছিল দীর্ঘ, এখন প্রায়ই বন্ধ থাকে।
পশ্চিমের রোদ আর দেখা হয়না।
চেয়ে রইলাম তার দিকে পলকহীন চোখে।
খুব সুন্দর এই মায়া জড়ানো রোদ্দুর 
আমাদের সাথে থাকতো, কত ঘটনার সাক্ষী সে।
মন বলছে কত কথা রোদ্দুরের সাথে।
জানালাটা খোলাই রাখলাম, যতক্ষণ সে থাকে থাকুক।
আমিও স্মৃতির পাতা দিলাম খুলে।
আজ রোদ্দুরই আমার বন্ধু হোক।





বিরহী শ্রাবণ

অ র্পি তা  মু খা র্জী  চ ক্র ব র্তী

সাদা কালো আটপৌরে ক্যানভাসে 
রংধনু আঁকে এক রঙের ফেরিওয়ালা...
তার অবাধ্য জারুল সোহাগের বেগুনী ছটায়
তোলপাড় হয়  মেঘলা রঙা মন আকাশ...
মধুর এক ভরসার নীলাভ স্বপ্ন মায়াময় হয়
আশমানী নীল মনপাল্কির পর্দার ওপারে...
পান্না সবুজ কুজনে কুজনে জীবন লেখে
তরতাজা এক বিরামের নতুন উপন্যাস...
জাদুমন্ত্রের হলদে রঙা অনুভবের প্রজাপতিটি
ডানার রোশনাই ছড়ায় 
বিবর্ণতার শেষ সীমা পর্যন্ত...
বসন্ত হঠাৎই থমকে দাঁড়ায়
নিবিড় উষ্ণতার গেরুয়া রংতুলিতে...
কৃষ্ণচূড়ার অকারণ স্ফূর্তির লালিমা লাগে
মনমরা মনকেমনে...
সাতরঙা রূপকথার সোনারকাঠি ছোঁয় শূন্যতাকে
রঙের অবিরাম ধারাপাতে...
একপশলা ভালোবাসার বৃষ্টির পর
রংধনু আসে, রংধনু হাসে, হারিয়েও যায় আবার...
এক আকাশ শ্রাবণ প্রতীক্ষারা 
জারুল ঢাকাই, কদম দুল ও এমনি আরও ছোট ভালোলাগায় সেজে উন্মুখ থাকে
 সেই দেদীপ্যমান আবেশের সুখস্পর্শের পিয়াসে...





সহজ করে বাঁচি

নী ল দি গ ন্ত 

আমাদের কল্পনার ফানুস আজ
বাস্তবের কার্নিশে ঠোক্কর খাচ্ছে প্রতি নিয়ত।

জীবনের জটিল হিসাব কষতে কষতে
ভালো থাকার ঠিকানায় অশরীরী ক্ষত।

সুখের স্মৃতিরা রয়ে গেছে ফেলে আসা দিনে
চাওয়া পাওয়ার বৈষম্যে ইতস্তত ভাবনারা।

এসো না আবার আগের মত সহজ করে বাঁচি
আবেগী প্রাণের ছোঁয়ায় আবার ফুটুক আনন্দধারা।





শ্রাবণ কাঁদে

ত ন্দ্রা  ম ন্ড ল

মেঘলা আকাশ একলা দুপুর
রিমঝিমরিম বৃষ্টি নূপুর
সবুজ বসনে সাজলো বসুন্ধরা।
বাউল বাতাস উদাসী সুর
ঝাপসা লাগে দূর বহুদূর
কদম কেয়া খুশীতে আত্মহারা।

শ্রাবণ কাঁদে অঝোর ঝরে
বিজলি হাসে আকাশ চিরে
মেঘমল্লারে গায় বর্ষার গান।
কাগজ ভেলায় নড়ে চড়ে
শৈশব জাগে স্মৃতির ভীড়ে
সুরভিত আজ বকুল বেলীর প্রাণ।

বৃষ্টি মাতাল অলস চিত্ত 
প্রহর গোনে একাকীত্ব
হৃদয়বীণা ভিজে যায় কান্নায়।
কৃষ্ণ মেঘে ঢাকা আদিত্য
ধরণী 'পরে বর্ষা নৃত্য
চরাচর বুঝি ভেসে যায় বন্যায়।।






সমগন্ধী

ন ব নী তা

বেদনাগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকি
বড় আলতো আলতো, আলগোছে
স্পর্শরহিত এই পরশ, তবুও নিবিড়
তবুও বড় গভীর৷

জেনেছি, দুঃখেরও একটা নিজস্ব গন্ধ থাকে
যা দিয়ে অন্য সবকিছুর থেকে তাকে
পৃথক করা যায়

অন্য সবকিছুর ভিড়েও আয়াসহীন সাবলীলতায়
তাকে চিনে নেওয়া যায়৷

তাই বোধহয় যোজন যোজন দূরে থেকেও
পৃথিবীর সমস্ত দুঃখী মানুষ
অজান্তেই পরস্পরের সমগন্ধী হয়ে যায়৷





আর্তি

নূ পু র  রা য় (রি ন ঝি ন) 

চুপ করে ভালো থাকা দায় 
মন প্রাণ যেনো মৃত প্রায়!
ঝড় ঝঞ্ঝা চারিদিকে ধায়
মাঝখানে শুকা ভুখা হায়!

পিছে ডাকে তায় তারস্বরে 
ঝেঁপে ঝেঁপে এসো এইবার
যেও নাকো ফেলে অনাদরে।
ভিজে চপচপ দাও ত্রাণ।

জীর্ণ পাতা ধুয়ে করো সাফ
বিবর্ণ গাছ ও তৃণলতা
এইবার যেনো করো মাফ!
নতুনের যতো ব্যকুলতা।

তার কাছে চিরঋণী জানি  
ধ্বংসলীলা তবু অবিরত 
জেনে শুনে ভুল বার বার!
যাও তফাৎ হও বিরত।





বিনা নোটিশে

ম ধু মি তা  ধ র

বিকেল কখন দাঁড়িয়েছে চৌকাঠে
চলতে চলতে ক্লান্ত  এখন রোদ
নিস্তেজ রবি বিদায়ের ক্ষণ খোঁজে
আকাশেতে আজ মেঘেদের অবরোধ।

আবছায়াতে হারিয়ে গিয়েছে চাঁদ
সিঁদুরের টিপ মুছে গেছে যেন জলে
চৈতী আকাশে কালবৈশাখী ঘটা
মেঘেদের কানে বৃষ্টিরই কথা বলে।

বিকেল  ফুরোলে আঁধার জাঁকিয়ে  বসে
মৌতাত জমে সান্ধ্য চায়ের কাপে
ভেজা কার্নিশে বৃষ্টিরা ওত পাতে
স্মৃতির খাতা ভরে ওঠে সংলাপে।

মরসুম নয়,তবুও শ্রাবণ কেন
বিনা নোটিশেই আসে অতিথির মত
যার বুক জুড়ে ঘন মেঘ ছেয়ে থাকে
তারই চোখে ঝরে বৃষ্টিরা অবিরত।





ছোট্ট পরিবার

নি ভা  চা ক লা দা র 

ভেঙ্গে খন্ড খন্ড ছোট্ট   পরিবার ও রে
স্বামী স্ত্রী এক সন্তানে     সুখের সংসার
কদাচিৎ দুটি সন্তান      সংখ্যা বেড়ে চার 
ভাগ্যক্রমে পুত্র কন্যা     কোনও বা ঘরে। 

কাকা,পিসি,মামা মাসি     বিলুপ্ত অচিরে 
নহে আর দূর নহে     সে দিন আসার 
একা একা বাঁচা দায়      হবে যে সবার 
মধুর ও সম্বোধন      রবে গো সংসারে। 

এমন দিন বদলে     শান্তি কোথা তবে 
লোকজন হইচই       ঘরে নাহি রবে। 

শিক্ষা লাগি পাড়ি দেয়     সন্তান বিদেশে 
পিতা মাতা দু-জনায়        একাকীত্বে  ভোগে 
পরিশেষে রোজগার        ভিন দেশে শেষে 
শেষ দেখা টুকু নাহি       মরণের আগে।





তোকে ভালোবাসি  তাই...

কৌ শি কী  ঘো ষা ল 

তোকে ভালোবাসি সেই বিশ্বাসে
হেরে যাওয়া ঘুঁটি আবার সাজিয়ে
খেলায় নামতে পারি

তোকে ভালোবাসি এই আশ্বাসে
মেঘে ঢাকা আকাশে 
বিনিদ্র প্রহর চাঁদের প্রতীক্ষা 
করতে পারি।।

তোকে ভালোবাসি, তাই
অনির্বচনীয় কোনো দৃশ্যের
 মুখোমুখি হলে
মানসে তুই পাশে এসে দাঁড়াস।।

তোকে ভালোবাসি  সেই সত্যির
মান রাখতে
সম্পূর্ণ  অন্ধকার মেঘের আড়াল  সরিয়ে
হলদে মৃদু চাঁদ , 
এসে তাকায় আমার জানলাপাশে।।

তোকে ভালোবাসি, তাই নিজেকে
একটু সাজিয়ে নি
নিজের অজান্তেই।। 

তোকে ভালোবাসি তাই
একবুক অভিমান ছুঁয়ে
চোখের জলে ভাসতে পারি।।

তোকে ভালোবাসি, 
তাই সম্ভব, অসম্ভব অনেক কিছুই পারি
শুধু 
বলতে পারি না,
তোকে ভালোবাসি 
সেই সত্য বলার অধিকার 
মহাকাল কেড়ে নিয়েছে
এই জীবনের  বাস্তবতার দোহাই মেনে...





জলদ মেঘের সিক্ততা
 
কা বে রী  রা য় চৌ ধু রী

কখনো মেঘ কখনো রোদ্দুর
আকাশগাঙ্গে খামখেয়ালী মৌসুম
ধূলিমাখা প্রান্তর ভিজে মাটির ঘ্রাণ
মেঘভাঙা বৃষ্টিতে স্বস্তির স্নান
ভেজা ভেজা মন মুখোমুখি দুজন
প্রেম পেয়ালায় চুমুক দিয়ে উষ্ণতা ওম!
আলাপী কূজনে মাখোমাখো খুনসুটি
জলদ মেঘের সিক্ততায় দামিনী ঝলক ভ্রুকুটি!
জুঁই ফুলের সৌরভে স্বপ্নময় প্রভাতী মধুময় গুঞ্জন 
শীতল হাওয়ায় মান অভিমানে
আবেগী মানভঞ্জন!
সবুজের দেশে ফুল কুড়িয়ে অঞ্জলি নিবেদন
শীতল হাওয়ার আঁচলে উড়ন্ত
পাখিরা হিল্লোলে মুখর!
তোমার খেয়ালী সুরে সুর তুলেছে ওই ভেজা পায়ের নূপুর
রিণিঝিনি কাঁচের চুড়ির ছন্দ রাগে টাপুর টুপুর!
বকুল ফুল খোঁপায় গুঁজে আবেশে বিভোর স্বপ্নচারিতায়
আঙ্গুলে আঙ্গুলে বুনছি তারই কবিতা চুপকথায়!
ঠোঁটে ঠোঁটে মৃদু শিহরিত অনুভবে চম্পা, চামেলী বর্ণাঢ্য আভায় আঁখির মিলন
পানকৌড়ি ডুব সাঁতারে স্বপ্ন পিয়াসী মনের ইচ্ছেপূরণ!!





ইচ্ছে ডানা

শ ম্পা  মু খা র্জী  কো লে 

সবুজ ঘেরা গ্রামখানি, আকাশ মিশেছে যেথা, 
বারে বারে মনটা  আমার পৌঁছে যায় সেথা। 

যাবো আমি তোমার দ্বারে করে জোড় হাত, 
 নত করে মাথা আমি চাইবো তোমার আশীর্বাদ। 

খোয়াই হাটের আশেপাশে কোপাই নদীর তীরে, 
সেইখানেতে বাঁধবো ঘর নিজের মত করে। 

 তুমুল  বর্ষায় ভিজবো আমি আপন খুশিতে, 
বুনো ফুল গুঁজবো খোঁপায় মনের আনন্দেতে।

সোনাঝুরির জঙ্গলেতে খেটো শাড়ি পরে, 
মাদলের সুরে নাচবো তখন ওদের হাতটি ধরে।

ওদের ভাষায়  বলবো কথা  ওদের মত করে, 
দেখবো তখন সবাই কেমন চিনতে আমায় পারে?

বসন্তে পলাশ শিমূল সাজবে রঙিন সাজে, 
খুশীগুলো খুব যত্নে রাখবো মনের মাঝে। 

সূর্য থেকে উত্তাপ নেবো চাঁদের নরম আলো, 
আঁচল পেতে কুড়িয়ে নেব যতটুকু যা ভালো। 

স্নিগ্ধ বাতাস নীলাভ আকাশ পাখির কলতান,
বাউল ফকির আপন মনে গাইবে বাউল গান।

শুনবো আমি মুগ্ধ হয়ে দেখবো দুচোখ ভরে, 
একতারাটি বাজিয়ে কেমন নাচছে সুরে সুরে। 

শিশির ভেজা ভোরের আলোয় ভীষণ খুশি মন।
বারেবারে হাতছানি দেয় তোমার শান্তিনিকেতন।





মহান মে দিবস

সু ব্র ত  চ ক্র ব র্ত্তী

যাদের রক্ত ঘাম হয়ে, তোমার ইমারত গড়ে তোলে
যে টেবিলে বসে তুমি খাও সরু চালের ভাত
যে সবজি দিয়ে রান্না কর দুবেলা ভরাও পেট
ভেবে কি দেখেছ, তাঁরা কি পায়
আছে তাদেরও প্রয়োজন।

বঞ্চিত তাঁরা সবাই, এই দুনিয়ায় নেই ঠাঁই
তোমার মতনই তাঁরা, মানুষ বলে পায় না মান 
তুমি একজন শ্রমিক, ওদের বেলায় নেই প্রাপ্য
তোমার বেলায় দিতে হবে, নয় কি এটা অনায্য?

শ্রম দিবসের হোক শপথ, চাই সবার জন্য কাজ
ঘুষ দিয়ে নয়, নায্য পথে, প্রাপ্য সবার দিতে হবে
এই পৃথিবীতে বাঁচার অধিকার, সবার সমান
আমরা হলাম সবাই শ্রমিক
মালিক, মজদুর আছে যত পদ
শ্রমের বিকল্প নেই কোথাও।

মানুষ হয়ে উঠতে হবে, মানবতা কথা বলবে
মহান মে দিবসের ঝান্ডা তুলে
শেষ নয় কিছু ভাষণ দিয়ে
শ্রমিকের শ্রম সবার রোজগার
শ্রমের মর্যাদা দিতে হবেই...





বর্ষা সমাগমে

র ত্না  দা স

শ্রাবণের ঘন কৃষ্ণ আঁখিপল্লব ভিজে যাচ্ছে আকুল বারিধারায়... 
রুক্ষ, শুষ্ক প্রকৃতি বর্ষা সমাগমে নবীন
যৌবনোদ্বেল
হিল্লোলিত আনন্দ মেখলায় বৃষ্টি ফোঁটা চুমকি জরি
কত বর্ণে, কত ছন্দে বাজে বর্ষা গান...
মেঘমল্লারে ধ্বনি ওঠে... মুখরিত রাগিণী...
সবুজ রূপবিভায় ধরণী কুন্তলকেশী আলুলায়িতা সিক্তবসনা, নবযৌবনা... 

অঙ্গে অঙ্গে বাঁশি বাজে জন্ম হয় প্রেমকথার...
কাব্যগীতি কুজনে কবিদল উন্মুখ চিত্ত
মহাসমারোহে আহ্বান 'এসো এসো উতল ধারায় ঢালো বারি সিক্ত সিঞ্চনে...'

কাকলি কলাপে, মধুর আলাপে বিহগকুল বিস্তার করে ডানা অসীমের নভোনীলে...





পরাগের রেণুগুলি

স্বা তী  ঘো ষ

তুমুল বৃষ্টির পর নিথর
হয়ে আছে পৃথিবী 
কালো মেঘ প্রলম্বিত রয়েছে
থরে থরে আকাশের গায়ে
বর্ষার জলগন্ধ মথিত হচ্ছে
বুকের ভিতর-
ইতস্তত ঝরে পড়া কামিনীফুল
নরম মাটিতে গেঁথে আছে
ছোট ছোট গুল্ম, শাখা নুয়ে 
আছে মাটির দিকে, নম্রতায়
ভেজা ফুলের মৃদু সুগন্ধ
আলতো ছোঁয়া দিল
নরম কচিপল্লবে,
বৃষ্টিস্নাত মেদুরতায়, ছলছল
জীবনগানের স্বরলিপি লিখছে
বাদলদিন, হৃদয়মোহনায় -
বৃষ্টির রিমঝিম ভিজিয়ে দিচ্ছে
পরতে পরতে জমে থাকা 
আকুল হৃদয়ের পরাগরেণু
নিবিড়তায়---





আশার পিপাসা

বি দি শা  ব্যা না র্জী

আধেক রাতে হঠাৎ যখন ঘুম ভেঙে যায়
কত কথা কড়া নাড়ে মনের দরজায়।
টুকরো ছবি, টুকরো কথা
আবছা হওয়া স্মৃতির পাতা---
ভারী বাতাস কোথা হতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে যায়।

বাতাস কি সত্যিই ফেলে যায় দীর্ঘশ্বাস? 
নাকি ওটা ভাঙা মনের না-শোনা হা-হুতাশ?
কত অশ্রদ্ধা লাঞ্ছনা
কত অগুনতি অবমাননা
চোখের কোণে চেপে রাখা কষ্টের জলোচ্ছ্বাস? 


সারাদিনের নানা কাজে সদা ব্যস্ত মন
ভুলে যে যায় কত কথা যখন তখন। 
দরকারী  সব কাজের কথা
হিসাব নিকাশ ডায়েরি খাতা
অতীত দিনের দুখের কথা ভুলতে কি তার বারণ?


মনের যত জমাট বাঁধা কষ্টের নেই কি শেষ? 
এই বোঝা কি বইতেই থাকবে জীবনের অবশেষ?
দূর করবেনা আশার আলো
আঁধার মনের নিকষ কালো?
তৃষিত মন আশার পানে চেয়েই রবে নির্নিমেষ?





সের দরে মৃতমাছ

সু বা ই তা  প্রি য় তি

রাস্তায়- এ মাথায় একটা দৈত্য
ঐ মাথায়- আরেকটা ভারবাহী, সারা বাংলাদেশ ষোলো টন!
মধ্যখানে আছি পিষ্ট মাছ হয়ে; নদীকালের স্বপ্ন বুদবুদে
কত কী-যে ভূরি ভূরি মুখ সমীপে নজরানা তোলে।
আসলে তোলার কিছুই নাই কন্ঠে।
কন্ঠে-  তাই একই গান গায়
জল- কেবল প্রাণটাই জলীয় নয়।নচেৎ
বহু- যে সকল বিদেহী মাছের ফুলকা ফুলে ফুলে নদীবক্ষে..
বক্ষে.. ভরেছে বক্ষে সের দরে; লাল পচনীয় আংরাখা।
কাল- মেছো সংসার চুপ করে যায়, কড়া মারবেল চোখটার
কাছে। কিছু আঁশমাখা তান লেজের কাছটায়-
ঘাই দিয়ে যায় তাবৎ প্রচলিত নদীকাল।
সুমৃত জলজ-জীবনের মৃতকাল।





বৃষ্টিবিলাস

দি শা  পা ল ন দা র

বাজছে ঘুঙুর, অনেক সূদূর, জলনুপূরের সুরে
বৃষ্টিমেয়ের জলসা বসুক মেঘের আঁচল জুড়ে।

শহরজুড়ে বৃষ্টি নামুক মেঘের খেয়ালবশে
বারিষকথার গল্প শোনাক আমার কাছে এসে।

ভিজছে শহর, আজ দু'প্রহর, শ্রাবণদিনের ঘনিমা
অলিগলির প্রান্ত ভেজায় শাওনের নজরানা।

খোলা ছাদে মুখোমুখি, আজ ভিজবে নাকি!
ঠোঁটের কোণে আটকে যায়,
এখনো যে অনেক কথা বাকি___

ভিজছে নগর, বৃষ্টিবাসর, আজ বৃষ্টিবিলাসী অন্দরমহল
আর জানলার ধারে রাখা প্রেমপত্র?
তাতেও লেগে বৃষ্টির স্বত্ব।

বৃষ্টি ফোঁটায় তখন লুটায়, প্রতিচ্ছবি রাত
বৃষ্টিবাসর, অভ্রআসর, তখন মেঘের খিলাত।





বৃষ্টি জানে

সা য় ন্ত নী  দা স

বৃষ্টি জানে মন কেমন, 
বৃষ্টি জানে মনের ভিতরের গভীর কথা। 
বৃষ্টিমুখর ধূসর আকাশও আস্কারা দেয়, 
জাগায় লুকোনো প্রেমের গভীর ব্যথা। 

বৃষ্টি জানে মন কেমনের স্বভাব, 
 অস্থির মন যখন থাকে চেয়ে খোলা আকাশপানে। 
তীব্র হয় তখন হদয়ে অভিমানী বাষ্প, 
কালো মেঘ জমাট বাঁধে চোখের কোণে। 

বৃষ্টি জানে মন কেমনের ভাবাবেগ, 
সে জানে পোড়া ইঁটের শহরের ঘুণধরা ইতিকথা। 
হঠাৎ দমকা ঝড়ের হাওয়া, 
পড়ায় মনে একাকী রাতের নীরবতা। 

বৃষ্টি হয়তো জানে মন কেমনের গোপনতা, 
সেও হয়তো তাই সঙ্গ দিতেই আসে। 
আকাশেরও বুঝি খুব অভিমান হয়, 
তাই অভিমানে ঝরে পড়ে সে এই ধরার বুকে। 

বৃষ্টি জানে তার আগমনে,
কখনো হয় মন কেমনের জন্মদিন। 
অশ্রুসিক্ত হৃদয়ও যেন বলে ওঠে, 
শোধ হবে না কখনো এ জীবনে তোমার ঋণ





সোনালি তন্তু তুমি

প্র কৃ তি  দ ত্তা

সোনালি তন্তু তুমি...গ্রীষ্ম শেষে এ ধরনীর অমূল্য দান
সোনালি তন্তু তুমি...করচোরাসের বাস্ট ফাইবার
দুই বাংলার শ্রেষ্ঠ অর্থকরী ফসল।

সোনালি তন্তু তুমি...জমা জলে সবুজ রঙের হাওয়ার দোলা
সোনালি তন্তু তুমি...পাটশাক রূপে বাঙালীর খাওয়া।

সোনালি তন্তু তুমি...শ্রাবন মেঘেতে গ্রামীন আঘ্রাণ
সোনালি তন্তু তুমি...শিশুটির হাতে ধরা পাটকাঠিটি
ছোট্ট হাতে সাজানো এক চিত্রপট।

সোনালি তন্তু তুমি...জল থৈ থৈ নয়ানজুলিতে ছলাৎ ছল
সোনালি তন্তু তুমি...মেহনতী আভিজাত্যের আনন্দের রেশ।

সোনালি তন্তু তুমি...সুশোভন ঐ ছাত্রটির কাঁধে ঝোলা ব্যাগ
সোনালি তন্তু তুমি...দূর্গা পুজার লালপেড়ে সাদা শাড়ি
মডার্ণ ফ্যাশন মাঝে ঐতিহ্যের অহংকার।

সোনালি তন্তু তুমি...বেলাকোবার এক নম্বর সোনালী আঁশ
সোনালি তন্তু তুমি...উলুবেড়িয়া বাঁশবেড়িয়ার চটেরকল।

সোনালি তন্তু তুমি...অতীত হয়েছো আমাদের দোষে
ফিরে এসো তুমি...আবার তোমার সোনালি জৌলুশে।





কোন্ কাঠের নৌকো রে তুই...

আ ল্পি  বি শ্বা স

কোন্ কাঠের নৌকো রে তুই
ফেঁসে গেলি, টেঁসে গেলি
কচুরীপানার ঝোপে!

খাটলো না তো জারি জুরি
জ্যোৎস্নামাখা বালুচরী
জড়াস্ পাঁজর খোপে।

শ্যাওলা দামে জড়িয়ে মন
চালাস্ চালাকিটা এমন
নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাস্ 
যাকে পাস্ তাকে-

হতিস্ যদি শালের ছিপ
চাঁদের কপালে দিয়ে টিপ
মরতিস্ না পাপে।

তবুও তোর নোনা ধরা
শরীরটা যে জং পড়া
না জানি কার শাপে

তোকে দেখে বহুত ডরাই
করি না আর অযথা বড়াই
শত শঙ্কা বুকে যে মোর তিরতিরিয়ে কাঁপে।

দেখেছিস? দেখ্ আকাশ জুড়ে তারার দেওয়ালি,
সপ্তঋষির অঙ্গন জুড়ে খুশির রঙ্গোলি
দেববালা কোন্ নিপুণ হাতে রেখেছে এঁকে

জীবনভর তো রাগ দেখালি
শুনলি না মোর ভাটিয়ালি
গাঙুর জলে ডুবে ম'লি
কোন্ দৈব-দুর্বিপাকে!!





সাজরে সজল মেঘ

সা য় ন্ত ন  ধ র 

ও মেঘ তুই যাবি?
ওই যে দূরে ধুম্র পাহাড়,
শুভ্র শিরে পর্বত শিখর
রুপোলি নদীর কলকলতান
নীল আকাশে সফেদ উড়ান
মেঘ, তুই যাবি?
আমায় নিয়ে যাবি?

হোমস্টের জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকি দূরে
দুষ্টু মেঘ কেন যে তুই ভিজিয়ে দিলি কাচ
ঝাপসা কাচের ঝাপসা দৃষ্টি আমার চোখের 'পরে
তার চে' আমায় সঙ্গে নে তুই, ভেলা রূপে বাঁচ।

ওই যে দূরে টংলু, ফালুট
তুষারচাপে শুকনো ঘাসের চাপ
চল না মেঘ ভিজিয়ে আসি ওদের...

মেঘ অপারগ, বলল তাই, কেমন করে যাবো?
আবহাওয়ার জটিল অঙ্ক তুমি কি বুঝতে পারো?
অ্যারোসলের ঘনত্ব আর
বাষ্প জলের এই হাহাকার
কেমন করে আকাশে আজ সজল মেঘ সাজাবো?
কেমন করে অসময়ে স্বচ্ছতোয়া নামাবো?

চল না মেঘ দূর সাগরে একটু আসি ঘুরে
ধার করে নে একটু জল মৌসুমীকে বলে
তারপরে চল ওই গ্রামেতে অঝোর ধারায় নামি
ধাপ কেটে চাষ, ফলাবো ফসল, গড়বো আগামী
মেঘ, ও মেঘ, তুই যাবি?

এত করে বলছো যখন বসো আমার 'পরে
সাঁতার দিই নীল আসমান তোমায় সঙ্গে করে
ওই যে তোমার রুপোলি নদী, একটু ঘুর্ণিপাক
জল নিয়েছি ভরে, এবারে ফেরা যাক।
ওই যে তোমার ধুম্র পাহাড়, শুভ্র শিখর
ঝাঁপিয়ে পড়ো আমার সাথে, রডোডেন্ড্রন ফুলের ওপর।

এখন আমি আসি গো ছেলে আবার আসবো আমি
তখন তোমায় সঙ্গ দেবো, গড়বো নতুন আগামী।

যাবরে মেঘ আবার যাবো তোর সাথে ভেসে
হাসবো, খেলবো, দেখবো কত অজানারে ভালোবেসে।





যৌনক্ষুধা

দে বা র তি  গু হ  সা ম ন্ত

১৯৭১ এর কলকাতা,
আমাদের তিলোত্তমা মহানগরী...

দুপুর রোদে,
রাস্তায় একটা ফেরিওয়ালা ঘুরছে,
মাঝে মাঝে,
ময়লা ফতুয়ায় ঘাম মুছে নিচ্ছে।

কাঁধে একটা শতচ্ছিন্ন ঝোলা,
হাতে একটা কাঠের লাঠি।
ফেরিওয়ালা হাঁক পাড়ছে,
"যৌনক্ষুধা চাই গো, যৌনক্ষুধা।"

আশপাশের বাড়ির জানালা,
ঝপাঝপ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বাড়ির বউদের মুখে কাপড় চাপা,
মেয়েরা লজ্জায় লাল।

একটা মুরুব্বি গোছের লোক,
ফেরিওয়ালাকে ডেকে জিজ্ঞেস করে,
"কি সব আবোল তাবোল বলছ ফেরিওয়ালা?
সে ক্ষুধা কি বিককিরি করার?"

মলিন হাসে ফেরিওয়ালা,
অল্প দম নিয়ে বলে,
"কেন নয় ঠাকুর?
তোমার কি সে ক্ষুধা পায় না?"

মুরুব্বি বলে,"আস্তে ভাই, গলা নামিয়ে,
সে যে সর্বনাশা ক্ষুধা, গোপনে মেটাতে হয়,
এরকম খোলা বাজারে কি আলু পটলের মতো বেচতে হয়?"

ফেরিওয়ালা বলে, "জানি গো ঠাকুর,
সেই সর্বনাশা ক্ষুধাই তো গ্রাস করল আমার সংসার,
আমার স্ত্রী সেই ক্ষুধার জ্বালায় ত‍্যাগ করল সংসার,
সেদিন হতে আমি ভবাপাগলা, গৃহত‍্যাগী, ছন্নছাড়া।

তারপর অনেক দিন পর,
সে ফিরে আসে আমার কাছে,
রূপযৌবন শুষে খেয়েছে তোমাদের মতো বাবুরা,
কোলে তার ছোট বাচ্চা, যৌনক্ষুধা বেড়েই চলেছে।

তাইতো ভরদুপুরে ফেরি করে বেড়াই যৌনক্ষুধা,
কারো লাগলে বোলো গো,
আমি নিয়ে যাব সেই ঠিকানায়,
মেটাতে আমার স্ত্রীর যৌনক্ষুধা।

বড্ড ভালোবাসি গো বাবু তাকে,
লাগলে বোলো, আসব আমি,
নিয়ে যাব তোমায় নিশুত রাতে,
মেটাতে যৌনক্ষুধা, ক্রন্দনরত বাচ্চার পেটের ক্ষুধা।

বিনিময়ে দিও দুটো ট‍্যাকা গো বাবু,
আসলাম গো!"





আলোআকাশ

দে বা র তি  গু হ  সা ম ন্ত

আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামছে শহরের বুকে,
ভাঙছে টাকা, উড়ছ‍ে পয়সা,
ভাঙছে সম্পর্ক, বাড়ছে একাকিত্ব,
ভাঙছে বিশ্বাস, কোনঠাসা দাম্পত‍্য।

আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামছে শহরের বুকে,
সূর্য অস্ত যাচ্ছে,জ্বলে উঠছে স্ট্রিটলাইট,
গর্ভে চলছে ভ্রুণহত‍্যা, বরণ হচ্ছে মালক্ষীর,
ভাটা পড়ছে নদীর যৌবনে, বিয়ের পিঁড়িতে একাত্তর।

আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামছে শহরের বুকে,
বাড়ছে পলিউশন, কমে যাচ্ছে বেঁচে থাকার সীমা,
বাড়ছে টেম্পারেচার, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, কমছে সবুজ,
বাড়ছে জিনিষের দাম, কমছে কর্মসংস্থান।

বেড়েই চলেছে হাতে থাকা স্মার্টফোনের রেট,
কমছে সম্পর্কের মূল‍্যায়ন।
মিলছে না কিছুতেই গরমিলের হিসেব!
এই কি তবে আমাদের ডিজিটাল ইন্ডিয়া??

আলো কোথায়? একফালি হলেও যথেষ্ট।।





জীবনদায়ী দ্বীপ
 
ম ঞ্জি রা  ঘো ষ

রাখবে আমায় কাছে দূরে, এটুকুই দিয়েছিলে আশ্বাস
হতেই পারি নীরা তোমার, বুকের ভিতর প্রলম্বিত শ্বাস।

যা ছিল মেঘান্তরের ভাঁজে, কখনও বা কবোষ্ণতায় মাখা
বৃষ্টি আর রোদের ফাঁকে ফাঁকে মনেতে যত্ন করে রাখা।

বহুরঙা ভাবনা এলোমেলো, আসে যায় ছন্দ অনুষ্টুপ
তারি মাঝে থাকতে হবে জানি, আশমানে চাঁদ রয়েছে চুপ।

না বুঝেই লোক্যাল ট্রেনে উঠি, গতিটা খুব তো নয় দ্রুত
সময়ের দৈর্ঘ্য বেড়ে চলে, মাঝে থাকে অনেকখানি ক্ষত।

বানভাসি ভুলের ক্ষত থেকে, উঠে আসে গোপন অন্তরীপ
রোদ্দুর উঁকি দিয়ে ডাকে, "আয়, আমি তোর জীবনদায়ী দ্বীপ।।





বেদনায় গাঁথা থাক কিছু নান্দনিক

ম ঞ্জি রা  ঘো ষ

গাম্ভীর্যে মাধুর্যে গাঁথা তোমার পৃথিবী
অনুভবে সুগভীর, বেদনায় স্থির---
মাঝে মাঝে মনে হয়, রয়েছ সুদূরে
তবু এই ব্যবধান গড়েনি প্রাচীর।

যে থাকার, সে থেকে যায়, অনন্ত জীবন
প্রত্যহ ছুঁয়ে থাকে মধুর আবেশ,
সুখে থেকো, ভালো থেকো, পরিপূর্ণ মনে
সম্পূর্ণ করে নিও, তোমার প্রতিবেশ।

শব্দপ্রবাহে আসে লুকোচুরি মায়া
বেদনায় গাঁথা থাক কিছু নান্দনিক
আমৃত্যু ছুঁয়ে থেকো বাঁশরীর সুর
চিরন্তন ঢেকে দেবে, তুচ্ছ প্রাত্যহিক।।





এখানে এখন

প ল্ল ব  ভ ট্টা চা র্য  অ ন ন্ত 

এখানে এখন বৃষ্টি অসময়ে
বজ্রপাত মূক মাটি যায় সয়ে।
ছড়ায় না হেথা, পেঁকো পুকুরের ঘ্রান
পদ্মফুলের শিকড় মরেছে,
এখানে এখন অনুগ্রহের দান।
মানুষপুরে বারুদ গন্ধ ছড়ায়
ধূপের গন্ধে অম্ল ঢেকুর ওঠে
এখানে মানুষ নহবৎ শুনে
খোলা তরবারি হাতে নিয়ে বেগে ছোটে ।
এখানে এখন ঝরে যায় পাতা
নীরস শাখায় গায় নাকো পাখি গান
এখানে মানুষ জীবন বেচে কেনে
এখানে মানুষ বুঝে করে বিষ পান।
এখানে এখন মেঘ করে অসময়ে
মেঘ ফুঁটো করে বৃষ্টি আসেনা ঝেঁপে
পাথর ভাঙে, হাতে তুলে নেয়
পাথরের ঘায় ছড়ায় ভাত 
ভাতের আঘাতে পাহাড় উঠে কেঁপে।।





অমানুষি

প ল্ল ব  ভ ট্টা চা র্য  অ ন ন্ত 

আমরা শুধু ছড়িয়ে যাই
জড়িয়ে জড়িয়ে যাই না
পথকে আমরা বহু ভাগ করি
পথিকের পথ পাই না।

আড়ালে আড়ালে শুধু চেয়ে থাকা
কানে কানে ফিসফিসানো
আমরা এখানে মানুষে মানুষে
অমানুষি রঙে মিশানো।

এখানে মানুষ একা একা হাঁটে
হাতে হাতে নয় বন্দি
এখানে মানুষ জড়িয়ে ধরে
অন্ধকারের ফন্দি।

এখানে মানুষ সমস্ত দিন
খেলে কাটাকুটি খেলা
হৃদয় এখানে হয় ভাগাভাগি
চলে শূন্যের মেলা।।





ওড়না
 
নী ল  আ কা শ

মেঘ-ওড়না ছুঁড়ে দিয়ে একজোড়া চাঁদ দেখিয়েছিল মেয়েটি। মেয়েটির কপালে সিঁদুর আঁকতে পারেনি ছেলেটি। কাঁধ থেকে নামাতে পারেনি পাহাড় তাই মেয়েটির উপত্যকায় কখনও বৃষ্টি নামেনি। সাপলুড়ো খেলতে খেলতে মেয়েটি জানালার বাইরে তাকিয়ে বলেছিল- ওই দিগন্তের কাছে নিয়ে যাবে একদিন?
অথচ,
মেয়েটির মেঘ-ওড়না ভাসতে ভাসতে কত হাইরাইজ, কত অ্যাভিনিউ , দিগন্ত পেরিয়ে 
           কতদূর কতদূর কতদূর ভেসে গেল-





বিড়াল

নী ল  আ কা শ 

টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে, মেঘ উড়ছে। স্মৃতির। মেঘচ্ছায়ায় শুয়ে আছি। একটা বিড়াল। 
কোথাও যেতে পারছি না তাই নিজেকে গুটিয়ে রেখেছি কার্ণিশের নীচে। এ গলি ও গলি ঘুরে খিদে মেটানোর একটা নীল নকশা এঁকে নিচ্ছি আপাতত।





সময়

সু শা ন্ত  সে ন

মন্দ মন্দ গন্ধ ভরা ছন্দ হারা স্রোতে
ভাসছি বিকেল রোদে 
দিক হারানো সমুদ্রের বিশাল কালো জলে
প্রশ্ন আমি করছি পলে পলে
এই জীবনের সঠিক কি মানে
খুঁজব কোনখানে?
চলার পথে সঠিক-বেঠিক
কে দেখাবে দিক?
কোন দিকে যে চলছি কে তা জানে
              শতাব্দীর পর শতাব্দীতে
বৃদ্ধি পেল জ্ঞান-তৃষ্ণা কাহারই ইঙ্গিতে!
পূর্ণতার খোঁজে 
চলতে থাকে ও যে,
মন্দ মন্দ গন্ধ ভরা ছন্দ হারা স্রোতে
                 সে কোথায় চলে যায়
দাঁড়ের মাঝি হাল ধরেছে,  চারদিকে সে চায়।





আমার কোনো ক্ষমতা নেই

সু শা ন্ত  সে ন

আমার কোনো ক্ষমতা নেই
আমি হতে পারিনি প্রতিবাদের ধ্বজা
আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরিনি 
পথ খুঁজে খুঁজে।
আমি এক অপদার্থ
বোঝা হয়ে পাক খাই 
পৃথিবীর বুকে অন্তহীন।
আমি সেই জনতা'য় আছি
যারা শুধু দিন আনে দিন খায়
জ্বলে পুড়ে যায় প্রতিদিন
পারে না করতে প্রতিবাদ।
এই শতাব্দীতে 
প্রতিবাদ খুব ছিল প্রয়োজন 
এই শতাব্দীতে পরশুরামের মত
অবতার নেই।
অবতার হলিউডে ল্যাজ নেড়ে
উড়ে উড়ে যায় , তাই দেখি ,
হাত তালি দিয়ে করি সহর্ষ প্রকাশ।





সন্তর্পণে

শি বা লো ক  দা স 

পা ফেলতেই ফাটা মাটিটা জুড়ে গেল!
পলেস্তারার জোর এতটা বেড়ে গেছে?
না, তোমার মনের ভুল; চক্রে নতুন সংযোগ, 
কিছু পড়ে আছে হয়তো বাড়ির ভেতর, 

গলা জ্বলে যায়, কোষ মরে যায়,
কেউ ঢেলে দাও জল, সন্তর্পণে, 
যাতে মানুষ চিনতে পারে ধোঁয়াকেও। 

আমি নিজের কোনো নাম দিইনি এখনও, 
ঘরে জমে থাকা ভুসোকালির গভীরতায় 
মাপি স্তম্ভ, আর কিছু বাকি নেই, নেই অপূর্ণ, 
দ্বারে ভিক্ষুক, তার হাতে রাখি পদ্ম অন্নের বদলে,
এক পলকে পেতে চায় ব্রহ্মমুহূর্ত সে একবার বলেছিল। 

উত্তরের হাওয়ায় সন্ধ্যে নেমে যায়, 
রাত্রি নামিয়ে আনো সন্তর্পণে,
যাতে কেউ দুঃখ রাখুক নীল খামে।

জোয়ারকে কি তুমি আজও ভুলে যাও, মিনতি?





তাৎক্ষণিক

শি বা লো ক  দা স 

ছায়া সরে গেল হঠাৎ যখন 
আকাশ শিকড়কে স্পর্শ করল।
তাৎক্ষণিক ছিল না, তবুও কোথাও 
নক্ষত্রেরা সাজিয়েছিল রাস্তা। 
আমি সেই রাস্তা পার হতে গিয়ে দেখি
দুটো আলোকরশ্মি তখনও দলছুট। 

কাগজ মুঠো করে দেওয়ালে আঘাত,
সে কথা রাখতে পারেনি, তাই জলে ডুব 
দিয়েছে হংসধ্বনি, ঘরের মধ্যে মরে গেল চাঁদ। 
তাৎক্ষণিক ছিল না, তবু কোথাও রাখা ছিল 
পালাতে পালাতে ধরা পড়ে যাওয়া এক বেকার 
ছেলের গর্তে ঢুকে যাওয়া একটি পা, হাহাকার। 

কি শব্দ, কি শব্দ, কোথাও প্রবেশ করতে করতে
আঙুল তার জড়ানো ফাঁস খুলতে পারে না,
সে তোমাকে বোঝাতে গিয়ে কাটাকুটি খেলায়
একটি বাড়তি শূন্য বসিয়ে ফেলে অতর্কিতে।
যার চারিপাশে প্রচুর গাছ, ভেতরের হাওয়া, 
তখনও গুমোট নয়, যাও, ফেরার আগে সেরে 
নাও নোনা সমুদ্রের সাথে শেষ কথোপকথন ।





না দেখা

র থী ন পা র্থ ম ণ্ড ল

না হয় একটু বেশীই দিলাম
না হয় তার কিছুটা ঠিকঠাক
বাকিটা অকারণ... 

আর মায়ের শীতলপাটি আঁচল
আমার বাবার শাসনসিক্ত ছায়া
আর আমাদের খুনসুটি...

ইচ্ছে করে না লেখা পাতাগুলো এমনই থাক।
সবকিছুই কি লেখা যায় বলো? 
কিছু শ্রাবণ থাক না জমে... 

ধারাপাতে স্মৃতির ধুলো। 





আগাছার স্তুতি

র থী ন  পা র্থ  ম ণ্ড ল

যে পৃথিবীর কালগর্ভে হারিয়ে যায় না নকশালবাড়ি 
যে সমাজের আঙুল চুষেও নিমেষে উৎখাত হয় জমিদারী 
সেখানেই জন্মেছিল আমাদের মতো বুনো ঘাস
প্রতিপালনের দায়িত্ব না নিলেও যে নিজের গরজে
বাড়তে থাকে, ক্রমশঃ বাড়তেই থাকে 
সাধ্যমতো  বিস্তার করে নিজের সাম্রাজ্য 
তবুও লোকে তাকে আগাছাই বলে। 

পায়ে মাড়াতে মাড়াতে তারই ওপর দিয়ে তৈরি হয় পথ
সে পথে সবুজ শহীদ হয়, তবু টিকে থাকে আগাছা
খটখটে শুকনো হয়ে তখন অপেক্ষারত, আর 
সেই অন্তিমকালে আমি বারুদ মাখবো আঙুলে।
আগাছা বেঁচে থাকে সূর্যের পথ চেয়ে।





ভোরের পদ্য

সু বী র  দা স

মেঘলা ঘোমটা পরে আকাশ।
নক্ষত্রেরা গেছে অমাবস্যার ভোজে;
হাওয়ায় মিষ্টি ফাজলামো।
কোথাও কি আমাকে পাচ্ছি না খুঁজে?

অকস্মাৎ যদি দৃষ্টির পিছনে ওঠে চাঁদ
নক্ষত্রেরা জেগে ওঠে আলোর ঘুম ভেঙ্গে
হয়তো কর্ণিয়ায় ধরা পড়ে না ফাঁদ
হৃদয় রাঙবে কোন রঙে?

ধরেই নিচ্ছি, প্রশ্নের ভিতরেই সেই স্বর:
পিছনের পিছন নেই।
দেওয়াল হবে চিত্রকর?
আলোর পরীক্ষা সম্পূর্ণ মানুষের পায়ে দাঁড়ালেই।

----রুরু




তত্ত্ব বড় জটিল জল

সু বী র  দা স

আজ ডারউইন বাদ , কাল রবীন্দ্রনাথ।
পরশু আজ নিশ্চুপ যে আমি।
তখন কি ভূতে খাইয়ে দেবে ভাত?
তখনও বলব , ঠিক বুঝে নেবেন বিচারের বানী ঈশ্বর সর্বত্রগামী?

বেশ!
তোমার নেই দেশ!
তোমার নেই দাফনের মাটি।
জানার নেই, কেন উত্তর আধুনিক মহাকাব্য---
প্রেমিক শ্রেষ্ঠ বহুজাতিক হাওয়া মোরগের ঝুটি!

মাগো, কি করে বুঝবে তোমার অন্তঃস্থল---
তত্ত্ব বড় জটিল জল?

----রুরু




ভারতবর্ষ যেমন

দে বা শী ষ  স র খে ল

অমরকন্টকে আরেক বিদ্যাসাগরের নাম শোনা যায়।
এখানে রাজপ্রাসাদের মত অনুপম প্রাসাদ রয়েছে।

তিনি নেই।

এই আবাসনে এসে
এটুকু বোঝা যায়
            এই পৃথিবীর বুকে
 রাজভিখিরিরাই যথার্থ ক্ষমতাবান।
কখনো দিগম্বর, বায়ুভুক 
আরেক ঈশ্বর কিংবা ঈশ্বরের যথার্থ প্রতিরূপ।
তেমন দর্শন বিলাসী এলে সজল  নীরদমেঘে ভূমিতল ঢেকে গেলে 
তাকে দেখা যায়।
অজস্র কুরচি ফুল তার পদযুগ ঘিরে রাখে।
রাজ ভিখিরির আবির্ভাব
আচার্য শংকর এর মত 
স্নান সারেন নর্মদায়
রামধুন গাইতে গাইতে
চলে যান পর্ণ কুটিরে।
তার নির্মিত প্রাসাদে 
অতিথির ভিড়ে তাকে দেখা যায় খুব কম।
তাকে দেখে অমরকণ্টকে সাদা পায়রার বকম বকম
উড়ে যায় হরিতকী গাছে।
এখানে দিগম্বর জৈনদের
পাদ পিঠ আছে।
এখানে বহমান পবিত্র নর্মদা রয়েছে।





জব্বলপুর

দে বা শী ষ  স র খে ল

যোগিনী দেখেছো তুমি
চোখে চোখে কামনার ফণা।

ম্যাজিক রক, ব্যালেন্স রক, দেখে বুঝবে
মানবপদবীধারী সব শূন্যে ঝুলে থাকে।
সজীব বস্তুপিণ্ড কোন অলীক কল্পনা নয়।

কামনা বাসনা সকল সাঙ্গ হয়
সেই রাঙাসিন্ধুজলে রকমারি প্রস্তরের মেলা।
কবেকার ভাঙাচোরা হিরণ্য পাথর নয়,
ঝলমলে আদিম চিহ্ন মাখা নবীনতা।

অনেক দূরের পাথর থেকে 
বাড়ন্ত কিশোর ম্যাজিক দেখায়,
ঝাঁপ দেয় নদী জলে।
জীবিকা কুড়ায়।

জলে কল্পতরু রকমারি জীবন কাহিনী
নটে গাছ ফুরিয়ে গেলেও
জীবনের গল্প থামে না কখনো।

জব্বলপুরে নর্মদায় জলকেলি শেষে
আবার ছুটতে থাকে ভ্রমণের বাস।





ভুবন বাউল

ন ব কু মা র  মা ই তি

নদীর কিনার ধরে আনমনে এগিয়ে চলে
ভুবন বাউল, নেই কোনো ঘর দোর 
নেই কোন পিছু টান, আজন্ম শেকড়ের মায়া 
বিলাস বৈভব, সুখের পরমান্ন 
পথে গড়ে আত্মনীড় শুদ্ধতার ঠিকানা অপার

কানাগলির পথ বেয়ে ঠা ঠা রোদে
একতারা হাতে রাধা বোষ্টমী উদাসী কন্ঠে 
গেয়ে যায় প্রিয় গানের মুখরাটুকু
"বেঁধেছে এমন এক ঘর শূন্যের উপর পোস্তা করে.....
ধন্য ধন্য বলি তারে.............. "

অনতিবিলম্বে ভুলে যাই জাত-অজাতের বেড়া  
বামুন-চাঁড়াল, হিন্দু-যবন অভেদ আত্মা 
ভাই-ভাই, শুধু পৃথক অন্নে খাই
একতারা ধ্যান শীর্ষে স্বর্গীয় অনুরণন 
পথের শেষ সম্বল গুরু সিরাজ সাঁই

সনাতন সংসার আগলে বসে থাকে কিছু হিসেবী 
মানুষ, রাত গর্ভ ছিঁড়ে আসে আঁধার উপাসক 
বিষন্ন বেদনায় ভুলে যায় প্রতি দিনের সংসারী সহবাস 
আকণ্ঠ আত্মার স্তুতি ধুলোবালি মাখে 
সংসার বিরাগী যত মানব মানবী!





নন্দনকানন

ন ব কু মা র  মা ই তি

                    (১) 

আকাশ উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে জ্যোৎস্নায়
একটি ফুলের উন্মোচন দেখতে দেখতে 
একটি ফুল ম ম করে সৌরভে 
জ্যোৎস্নার উদ্ভাস দেখতে দেখতে  

                    (২)
     
একটি সুন্দরী মেয়ে ব্যান্ডেল স্টেশনে 
আমার সিটের পাশে বসে পড়ে
 আলুলায়িত কেশ, খোঁপায় কুসুম তেলের গন্ধ
 আমার কল্পনা ক্রমশ ঘনীভূত হয়
 সুদূর পিয়াসী মন প্রেমের আসমান 
ছুঁয়ে যায়, ভ্রমণ পথের মানুষ বারানসী

                    (৩)

বর্ধমান স্টেশন রোডে নেমে
 হোটেল পল্লীসমাজের কাছ দিয়ে
 কয়েক পা এগিয়ে গোলাপ বাগান
 ভালোবাসা ও সৌন্দর্যে মোড়া নন্দনকানন!




শ্রাবণ হতে শেখো

ই ন্দ্রা ণী  সে ন গু প্ত

১ 
একখণ্ড মেঘ ভেসে উঠলো 
তোমার পায়ের শব্দে, 
তুমি আমাকে স্পর্শ করতেই 
মেঘ আমার চোখে জল হল 
বৃষ্টি দেখে আবার ফিরে এলে
বললে, রাস্তা নাকি অথই জলে ভেসে গেছে 
তখন আমার ঘরে উপচে পড়ছে শ্রাবণ 
এই শ্রাবণে কেউ ফেরে নি 
এই শ্রাবণে কেউ কি ফিরতে পারে? 
মধ্যরাতে চোখে শ্রাবণ এলে 
তাকে রাখব কোনখানে? 
একটি ক্রিস্টালের বাটি রেখেছি 
শিথানের পাশে....... 
কবিগুরুর একলা ঘরের শ্রাবণ 
প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে প্রবাহিত হোক 
বিনীত হও মানুষ, শ্রাবণ হতে শেখো
এরপর বসন্তদিন চাইতে লজ্জা হবে যে





কবিতার অন্বেষণে

প লা শ  বি শ্বা স

          ( ৪১ )

চন্দনের পাতাগুলো আর দেখি না তেমন
লজ্জাবতীর লতা নিঃশব্দে পথ হাঁটে একা
শামুখ খোল তার ডানায় বয়ে নিয়ে যায় এক নদী
যে নদীতে ভাসে তোমার গান 
চেয়ে চেয়ে দেখি
                                       

           ( ৪২ )

কলমি ফুলের আবেশ মিশে আছে ঢোল কলমির ফুলে
ধুতরাফুল চেয়ে আছে আকাশ পানে
বাঁশপাতায় আলো ঝরার আগেই
কুয়াশা মাখা মনে
তুমি সূর্যমুখী হয়ে যাও
                                    

  
           ( ৪৩ )

বিশ্বভুবন দেখে যাবো তোমার চোখে
বনলতা আমায় রেখো না দূরে
কল্পনার আঙিনায় আমি শুয়ে বসে সবখানে যাই
যখন তোমার হিয়ার মাঝে
আমার ঠাঁই হয়
                                       


           ( ৪৪ )

দূর পাহাড় চূড়ায় ছড়িয়ে আছে তোমার হাসির ঝরণা
সূর্যের কিরণ লেগে ঝকমকে আরও তা
মাটিতে রেখেছি দু'টো পা আমার
চোখগুলো ওই আকাশে
আমায় ভালোবেসেছো তুমি পাহাড় চূড়ার মতোই
                                         


           ( ৪৫ )

কয়েক খন্ড বরফ গিলে নিয়েছে হৃৎপিণ্ড
এরপর একটি তার বেয়ে তা গলে গলে
ভালোবেসে ঠান্ডা করে দিয়েছে আমার মস্তিষ্ক 
এখন তোমার উষ্ণ বাহুডোর
আমাকে ক্রমশঃ লোভী করে তুলছে
                                     


           ( ৪৬ )

একাকীত্বে নিমজ্জিত একরাশ শূন্যতা
বেলপাতায় আর শিমলতায় দিয়ে যায় নিঃসঙ্গতা
বৃষ্টি জলে ধুয়ে আসা ভিজে মাটি 
একত্রিত হয়ে স্বপ্ন খোঁজে বৃহৎ ব-দ্বীপের
একটি শালিক ডুবে যায় কিচির মিচির শব্দে মনের ভিতর




বৃষ্টি, শোন--- ঝিরঝিরে পথ

জ য় ন্ত  দ ত্ত  ম জু ম দা র

বৃষ্টি 
------

বৃষ্টি এলেই 
দিগন্ত ঝাঁপসা চাদর পড়ে
বৃষ্টি এলেই 
ঝাঁপসার ওপার স্বপ্নেরা কথা বলে

শোন
--------

পাহাড়ি বৃষ্টি শোন
ঐ যে ঘরের কোন
সেখানে মল্লার গাইছে
দুই সহজিয়া মন
ও বৃষ্টি তুই শোন


ঝিরঝিরে পথ
---------------------

চল এই আষাঢ়েও 
আরো একবার ঝিরঝিরে পথ হাঁটি
বলা না বলা কথা নিয়ে
কোনো নতুন ছবি আঁকি




উপোষী শব্দদল

সু জ ন  প ণ্ডা

১.
মানুষ আমি বুঝতে পারিনা
সম্পর্কের কথা
সমাজের কথা ঠিক পরিমেয় নয়
বিপুল দুর্বোধ্য এই পৃথিবীতে
আমাকে জড়িয়ে ধরে যে-
সেই বৃষ্টির রাত গুলিকে আমি চিনি কেবল

২.
সারি সারি নগর
নাগরিক অহংকার আর স্পর্ধা।
আমাকে আমার সূর্য ফেরত দাও
আমার ভোর উধাও
আমার বিকেল অনিশ্চিত।


৩.
মৃত্যুর পরও
আমার দু হাত মুষ্ঠিবদ্ধ থাকে যেন
খেয়াল রেখো।
এই পৃথিবীর সমস্ত আব্দার
আমি দাবি মনে করি।


৪.
পরের জন্মে শিশির হবো। 

এক ফোঁটা নয়
হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ। 

ঝাপসা করে দেবো-
যা তুমি দেখাতে চাও। 
ভিজিয়ে দেবো-
যা তুমি দেখতে চাও।


৫.
নির্ঘুম রাত্রে আমি আকাশ দেখি।
তারার বৈঠক,
ওইখানে মনে হয় ঘর ছিল একদিন। 
জানো,
নক্ষত্রেরা কেউ শ্রেষ্ঠ নয়,
অথচ সত্য সবাই।

৬.
বড়ো বেশি কথা বলি
বড়ো কম শুনি।
এই বৃদ্ধ দালান, 
কড়িতে বরগায় অজস্র ঘুনপোকা।
অথচ কী ভীষণ নবীন পৃথিবী।

নবীনতর জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে
অথৈ সাগর
সীমাহীন পর্বত

বড়ো বেশি কথা বলি
বড়ো কম শুনি। 
চাঁদ, আমাকে বুদ্ধের মৌনতা শেখাও।






জতুগৃহ

স ন্দী প  কু মা র মি ত্র 

জানিস মল্লিকা
পান্ডবদের সেই জতুগৃহের কথা
যেটা কতো যত্ন করে তৈরী করেছিল
কৌরব ভাইরা, যাদের সাথে
ছোটো থেকে খেলাধুলা, 
নানা আনন্দে মেতে থাকতো 
সরল প্রাণ পান্ডবরা।

বঞ্চিত করার লক্ষে, আর
ক্ষমতা ভোগের নেশায়
সেই আপনজনদের হত্যার উদ্দেশ্যে
যত্নের সেই সৃষ্টি করিয়ে ছিল
তাদের মাথা গোঁজার আশ্রয় হিসেবে 
যেখানে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল
মিথ্যার জাল বুনে---

ঠিক তেমনই আজও কতো মানুষ
মনের জতুগৃহে পুড়ছে---
ঐ সৃষ্টিছাড়া ভালবাসার
এক বিন্দু জলের জন্য 
চাতকের তৃষায়।

হাহাকারের আর্তনাদে
ভরে উঠছে 
নিঃশব্দ কালো রাতের আকাশ
আঁধারে মুখ ঢাকছে চাঁদ তারা।

আর স্বপ্ন ভাঙার খেলায়
মেতে উঠছে ঘৃণ্য হায়নার দল 
বিবেক যেখানে চিরস্থায়ী হয় 
হীনমন্যতায়।









মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল সংখ্যা || ৪ ফাল্গুন ১৪৩০ || ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪