ছড়া
টইটই...
শ ঙ্খ শু ভ্র পা ত্র
টইটই টুকটুকে মাথায় কলপ,
আমার নয় বাপু করছি হলফ৷
টইটই টগবগে ঘোড়াটির প্রাণ,
তাই দেখে হাসছে ফুলের বাগান৷
টইটই টিয়াঝাঁক কই উড়ে যায়?
মন বলে, সুখ ওই বটের ছায়ায়৷
টইটই টিকটিকি তাল পড়ে 'ঢপ'...
গরম গরম খাস ফুলুরির চপ?
টইটই টুনটুনি ছড়া উৎসব,
পরিচালনায়— প্রিয় বিপ্লব৷
বড়দিনের মজা
প্র দী প কু মা র সা ম ন্ত
বড়দিনের ছুটিতে
চলো যাই উটিতে
কাটাই কিছুটা সময়
পাহাড়ের মিষ্টি শোভা
কি দারুণ মনোলোভা
হোক জীবন সঞ্চয়।
নদীতটে পিকনিক
মিঠে রোদ ঝিকমিক
নেচে ওঠে তনুমন
পরিযায়ী পাখি সব
করে যায় কলরব
সবাই কতো আপন।
জমে ওঠে চিড়িয়াখানা
বইমেলায় দেয় হানা
হাসি-গান উল্লাসে
গীর্জা মঠ সেজে ওঠে
যীশুর মহিমা ফোটে
পবিত্র সুর বাতাসে।
পুজোর নামে
শং ক র দে ব না থ
পুজোর নামে ডাইনে-বামে
হচ্ছে এখন কী যে!
কর্ণফাটা শব্দে বাজে
বুক-কাঁপানো ডিজে।
সঙ্গে তারই রঙ্গে মেতে
উদ্দাম নাচ চলে,
সুরায় সুরায় হৃদয় জুড়ায়,
শরীরখানা টলে।
এই সময়ে নেই পুজো সেই
প্রাণের পরশমাখা,
ভালবাসার আলোর বাসায়
ভক্তিনত থাকা।
ভক্তিগীতি এখন স্মৃতি,
পুজোয় বাজে না সে,
পপগানে তাল জপ করে সব
হাহা হোহো হাসে।
পুজো মানে উৎসবে আজ
ভূত সবে জুৎ নিয়ে,
লেট করে না পেট পুজোতে
মাংস ও মদ দিয়ে।
এই ছড়া সেই ছড়া
সু ব্র ত চৌ ধু রী
এই ছড়াটি মচমচে খুব
ভাজা চিড়ে, মুড়ি,
সেই ছড়াটি রিনিঝিনি
খুকুর কাঁচের চুড়ি।
এই ছড়াটি শন শনা শন
ঝুমকো লতা দুলে,
সেই ছড়াটি ভন ভনা ভন
ভ্রমর ওড়ে ফুলে।
এই ছড়াটি চকচকে খুব
সিল্কি কালো চুলে,
সেই ছড়াটি ছলাৎ ছলাৎ
নৌকা বাঁধা কূলে।
এই ছড়াটি টন টনা টন
ব্যথায় কাঁদে খোকা,
সেই ছড়াটি মৌ মৌ বাস
ছড়ায় তালের থোকা।
এই ছড়াটি খচখচে খুব
মনের কোণে ধন্দে,
সেই ছড়াটি ঝুম ঝুমা ঝুম
নাচে আপন ছন্দে।
শীতের সকাল
স্ব প ন কু মা র বি জ লী
ঝরছে শিশির সকালবেলা
দেখছে ছোট খুকি
সুয্যি তখন পুব আকাশে
দিচ্ছে সবে উঁকি।
রান্না ঘরের চালে বসে
মাখছে শিশির কাকে
চাদর মুড়ি দিয়ে খুকু
সেই ছবিটা আঁকে।
শিশির ভেজা দুটো শালিক
যেই এসে গান ধরে
গল্প বলার কেউ কেন নেই
বসেই ভাবে ঘরে।
মনে মনে সঙ্গী খোঁজে
শিশির ঝরা প্রাতে
কাঠবিড়ালি ছুটে এসে
খেলতে থাকে সাথে।
সব গাছ বন্ধু নয়
স্বা গ তা ভ ট্টা চা র্য সিং হ
দিচ্ছি শ্লোগান ঝাড়ছি বুলি
গাছ আমাদের প্রাণ।
ধারণা নেই কোন্ গাছটি
করছে অনেক দান।
মাঠের পরে মাঠ দেখি সব
ইউসি আকাশমণি।
হোক ক্ষতি তাও গড়তে হবে
মস্ত টাকার খনি।
আম দেখিনা জাম দেখিনা
নেই পেয়ারা আতা।
পাখিদেরও নেই বসবাস
হচ্ছে কি সব যা-তা!
প্ল্যান্টেশন আর অরচার্ডে সব
যাচ্ছে ফাইল ভরে।
ফলের বাগান ধ্বংস করে
ইউসি খেলা করে।
কিন্তু বলো কে জানো তার
জালার মতো পেট।
ভাঙবে তবু মচকাবে না
হয়না মাথা হেঁট।
পাখপাখালি কেউ থাকেনা
ওদের ধারেকাছে।
শরীর জুড়ে আর কিছু নেই
তরল গরল আছে।
আমার সম্বল
শ ক্তি প দ প ণ্ডি ত
হিমেল হাওয়ায় কুঁকড়ে থাকি
পথ আমার ঘরদোর,
রাস্তার ধারে গাছের তলায়
রাত কেটে হয় ভোর।
আমার রোজকার বিছানাটা
ইটপাতা ফুটপাত,
শীতের দিনে চট পেতে শুই
মাথার বালিশ হাত।
দুইহাতে বুক জড়াই শীতে
কাঁপছি যে থরথর,
ঠাঁই নিয়েছি ভিড়ের মাঝে
শহর আমার ঘর।
ভিজছে শরীর হিম কুয়াশায়
আকাশ মাথার ছাদ,
কে আর শোনে এই ছেলেটার
নীরব আর্তনাদ।
দুঃখের সাথে বসত করি
বাঁচার ইচ্ছে খুব,
মায়ের বুকের সে ওম পেলে
কষ্ট ভুলে চুপ।
দুটো চোখে জল আছে আর
এক ছেঁড়া কম্বল,
দুই নিয়ে আজ আঁকড়ে আছি
এই আমার সম্বল।
শীতের দিনে
বি দ্যু ৎ মি শ্র
ভোরের বেলা হিমেল বাতাস
শিশির ভেজা ঘাসে
ফুল বাগানের ফুলগুলো সব
খিল খিলিয়ে হাসে।
হাত বাড়িয়ে পাহাড় নদী
তখন আমায় ডাকে
মিঠেল রোদে ঘুরতে যাওয়া
একটু কাজের ফাঁকে।
শীতের সময় ভারি মজা
পিকনিকে সেই ভিড়
মায়ের হাতে মিষ্টি পায়েস
বাটি ভরা ক্ষীর।
পরিযায়ী পাখির মেলা
দেখতে লাগে বেশ
শীতের সময় উঠবে সেজে
নতুন করে দেশ।
গানের গুঁতো
ব স ন্ত প রা মা ণি ক
শীতের রাতে পাড়ার মোড়ে হচ্ছে অনুষ্ঠান,
ভজন ঘোড়ুই গলা ছেড়ে ধরেছে তাঁর গান।
রাত্রি তখন এগারোটা, এমন অসময়ে
হেঁড়ে গলায় কেউ যদি ঠিক চেঁচায় পাগল হয়ে,
বলুন দেখি, কেমন লাগে? ধরবে না কি রাগ?
বলবে না কি গান থামিয়ে শিল্পী রে তুই ভাগ!?
কন্ঠখানা ষাঁড়ের মতন, সুর-তাল নেই মোটে,
শ্রোতা ভাবে, 'এমন শিল্পী কোত্থেকে যে জোটে!'
গানের জ্বালায় শ্রোতা পালায়, ভজন গেয়েই যায়,
চারখানা গান গাওয়ার পরে পড়ল সে লজ্জায়!
মাঠ হয়ে যায় পুরো ফাঁকা গান গাইবার দোষে,
কেবল মাঠে একটি বুড়ি শুনছে একা ব'সে।
ভজন বলে, 'ও বুড়িমা, তোমায় নমস্কার,
তুমি হলে সত্যি সত্যি গানের সমঝদার।'
বুড়ি বলে, 'এমনি কি আর শুনছি তোমার গান?
আর কিছুক্ষণ শুনলে আমার বেড়িয়ে যাবে প্রাণ!
স্টেজের ওপর পাতা আছে আমার মাদুরখানা,
ওতেই বসে তখন থেকে গাইছ তো একটানা!
মাদুরখানা সঙ্গে নিয়ে বাড়ি যাব ব'লে
বসে আছি, নইলে আমি কখন যেতাম চলে!'
শীত ব'লে কথা
সু ব্র ত দা স
শীত শীত, কিতকিত
সবুজাভ সবজির,
ঝিকমিকে পিকনিকে
খুশি ঘোরে কবজির!
শীত শীত, হার-জিৎ
ক্রিকেটিয় দুপুরে,
মনখুশি ভরপুর
তোলে সুর নূপুরে!
শীত শীত, ভয়-ভীত
ভৌতিক গল্পে,
শীত ব'লে কথা ভাই
মন ভরে অল্পে?
একলা দুপুর
প লা শ পো ড়ে ল
হেমন্ত যে বিষাদ-বিধুর
বাতাস বাজায় একতারা সুর,
নদীর বুকে ছন্দ নূপুর
রিমিঝিমি কী সুমধুর৷
খাঁ-খাঁ দুপুর, কানাবক, চিল...
হাওয়ায়-হাওয়ায় ধুলোখেলা,
মনের বয়স যাক ছোট হয়ে
শৈশব জাগে সারা বেলা।
লাফান দড়ি, খেলনা বাটি
ছড়া কাটে যে মকর সই,
দিঘিতে হাঁস কাটছে সাঁতার
খুকুমণি ডাকে চই চই।
পুতুল পুতুল সংসার পেতে
কুটুমকে আজ বসতে দেবো,
ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে
আর এক তাজ গড়িয়ে নেবো।
বেলুন
আ ভা স র কা র ম ণ্ড ল
গুড়ুম গুড়ুম মেঘের ডাক আর
আকাশ ছিল কালো
সকাল থেকেই তাইতো খুকুর
মন ছিল না ভালো ।
খাঁচায় পোষা ময়নাটি ও
ডাকছিল খুব জোরে
সারাটা দিন আজকে যে তার
কাটবে কেমন করে?
খুকু করে পায়চারি আর
ময়না ঝাপটায় ডানা
মা বলেছে আজ দুজনের
বাইরে যাওয়া মানা।
খেলার সাথী কেউ আসেনি
সবাই আছে ঘরে
মন খারাপের দিনে আজকে
বৃষ্টি শুধু ঝ'রে!
হঠাৎ তারা দেখলো দাদু
গলির পথটি দিয়ে
ভিজে ভিজে ফিরছে বাড়ি
বেলুন হাতে নিয়ে।
দেখেই নানা রঙের ঝিলিক
খুকুর চোখে নামে
এক নিমেষেই ময়নাটিরও
চেঁচামেচি থামে।
আমার জন্য
অ রু ণ শী ল
আমার জন্য আকাশ রাঙিয়ে সুর্য ওঠে
আমার জন্য হাসনুহেনা গোলাপ ফোটে
আমার জন্য পাখিরা গায় মিষ্টি সুরে
আমার জন্য ফড়িং ওড়ে বাগান জুড়ে।
আমার জন্য মা বানালো রঙিন জামা
আমার জন্য খেলনা আনেন মিষ্টু মামা
আমার জন্য চাঁদ ওঠে ওই পাতার ফাঁকে
আমার জন্য কত্তো খুশি ছড়িয়ে থাকে।
আমার জন্য বাবা আনেন ছড়ার বই
আমার জন্য বন্ধুদেরও কী হইচই!
আমার জন্য সবার খুশি বুঝতে পারি
আমার জন্য ঝলমলে এই পুরো বাড়ি।
আমার জন্য বেড়াল ছানা পায়রা কুকুর
আমার জন্য খেলে ওরা সকাল দুপুর
আমার জন্য সাইকেল থাকে আত্মভোলা
আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে বেলুনওয়ালা।
সবার ছোটো বলে আমার নেই তুলনা
ক্লাসে প্রথম, আদুরে ধন খোকন সোনা।
এক উঠোনে দুটি ছেলে
রু মি না হা ম জু ম দা র
তাজিয়া বানায় হিঁন্দুর ছেলে
কারবালা উৎসবে
মুসলমানের ধুনুচি নাচে
শারদ কলরবে
ভালোই ছিল দুটি ছেলে
হিন্দু মুসলমান
একই বৃন্তে দুটি কুসুম
এক মায়ের দুই প্রাণ
এক উঠোনের দুই কিনারে
তোদেরই যে বাস
অবুঝ হয়ে পাগল হলি
ছড়িয়ে বেড়াস ত্রাস
এক মাটিতে বড় হ'লি
একই রক্তে গড়া
হিংসা দ্বেষ বিরোধ যত
মন থেকে সব সরা
আমার তোমার এসব কিছুর
নেইকো কোথাও শেষ
যুদ্ধ করে প্রাণ হরে যায়
থাকে দুখের রেশ।
কোরান, গীতার একই বাণী
মন দিয়ে শোন বাপ
জঙ্গিপনা জেহাদ ঘোঁচা
আন মনে সন্তাপ।।
কা--কা
পা ভে ল ঘো ষ
একটা ছাগল,
খাদ্য পাগল
কাটছে জাবর মন ভরে।
করেনি খেয়াল
'পক্ষী শেয়াল'
দেখছে ওকে চুপ করে।
হঠাৎ দেখি
হচ্ছে একি..!
শব্দ হলো ঝুপ করে।
বসলো 'কাকা..'
দাঁড়িয়ে থাকা
ছাগের উপর টুপ করে।
মৎস্যপুরাণ
পা প ড়ি রা য়
ওগো দাদা বৌদিদি,
এসো এসো দেখে যাও
টাটকা সে মাছ তাজা
কত নেবে নিয়ে যাও।
দাম নিয়ে ভেবোনা কো
দেবো কিছু কমিয়ে
পছন্দের মাছ পাবে
রেঁধে খাও জমিয়ে।।
পাবদা, বা পারশেটা
গুরজালি, ট্যাংরা
তেল কই খাবে নাকি
বলো দেখি তোমরা!!
আর তবে দেরী কেন
চলে এসো বাজারে
রকমারি মাছ খাও
ভরপেট আহারে।
ভূত চতুর্দশী
স র্বা ণী রি ঙ্কু গো স্বা মী
কে রে ওরা মাঝরাতে ঐ ছাদেতে ফিসফিস
লম্বাপা আর গন্নাকাটা একটাকেও চিনিস?
নাকিসুরের গল্প শুনে কাটলো ঘুমের ঘোর
দুত্তোর ছাই রাতের বেলা ঘুম আসে না তোর
জানলা দিয়ে দেখতে গিয়ে অবাক হয়ে যাই
জমাট আসর ভুতেরা সব গল্প করছে ভাই
পচামাছের বড়া এত্ত সাজানো মাঝখানে
গন্ধে লিভার উল্টে যাবে এমন আয়োজনে
ব্রহ্মদত্যি শাঁকচুন্নী কারিয়া পিরেত বা
আর যতসব ভুতরা নাম মনেই আসছে না
আমায় দেখেই সমস্বরে গেলাস উঁচু করে
বলে চিয়ার্স এসো এসো ভূতের এই আসরে
ভয়ে আমার গলার ভেতর শুকিয়ে পুরো কাঠ
ভাবছি সবে শুরু করি জয় মহাবীর পাঠ
ওরা তখন বললো বোকা ভূত তো অতীতকাল
রাত কেটে যায় তাইতো আবার হয় যে রে সকাল
আমরা আছি সবার ভেতর হাড়পাঁজড়া নিয়ে
কালকে তুই ও ভূতই হবি বলছি না বানিয়ে
সত্যি কথাই এর ভেতরে সন্দেহ তো নাই
আমিও তাই হ্যাপি ভূতচতুর্দশী জানাই।
অধিকার
দি ব্যে ন্দু বি শ্বা স ঝ ল ক
জাত নয় ভাত চাই
তাজ নয় কাজ চাই।
অস্ত্র নয় বস্ত্র চাই
বর নয় ঘর চাই।
ভিক্ষা নয় শিক্ষা চাই
ফন্দি নয় সন্ধি চাই।
বন্ধ নয় ছন্দ চাই
দান নয় মান চাই।
যুদ্ধ নয় শান্তি চাই
বাঁচার মত বাঁচতে চাই।
হট্টমেলা
ছো ট ন গু প্ত
ভোরের পাখি ডাক দিয়ে যায় পুব জানালায় রোজ
শিশির ধোয়া সবুজ পাতা গাছগাছালির খোঁজ
ফড়িং প্রজাপতির ওড়া একশো ফুলের গানে
অপেক্ষা ফের সোনা রং-এর রোদ ছোঁওয়া বাগানে।
দু'হাত বাড়ায়, গাছগুলো চায়, ওদের সাথে বসি,
চন্দনা আর কাঠঠোকরাও আজ খুব সাহসী;
একটি দুটি মুনিয়া আর লেজঝোলা সেই পাখি
বললো আমায়, চুপ করে বোস, তোর ছবিটাই আঁকি।
শালিক বাসায় ইলিক ঝিলিক ঝগড়া লাগে কিসে,
কে আঙিনায় ধান খুঁটে খায়, কে গান গায় শিস-এ?
কাকের দলও দিব্বি এসেই বসলো মিটিং করে
কে কে যাবি ওই পাড়াতে, আনবি কে কি ঘরে?
পাখপাখালির ছোঁয়ায় শীতের আকাশ কোণে হাসি
সূর্য বলে, সবাই আছিস, আমিও তাই আসি।
পুবের কোণে দু'চোখ মেলে দেখছি আপনমনে
টকটকে লাল জামা গায়ে রাজাও সিংহাসনে।
যেই এল সে হাই তুলে তো উঠলো সবাই মিলে
ঘুম ভেঙে চায় গিনি সোনাও, হাসছিল খিলখিলে।
পাখিরা দেয় গুড মর্নিং, গাছও মাথা দোলে,
বাগান জাগে হট্টমেলায় রোজই সকাল হলে।
হিমেল হাওয়া
ব র্ণা লী মু খা র্জী
ভোরের আদুরে হাওয়ার ছোঁয়ায়
দোলা দিয়ে যায় মনের কোণে,
কুয়াশার নরম চাদর
মেলে ধরে দিকে দিকে।।
খেজুর রসের সুবাস
সকালের আমেজে,
মন প্রাণ ভরে যায়
রসনার আবেশে।।
ঘাসের 'পরে শিশির বিন্দু
মুক্ত হয়ে ঝরে,
শিমুল শিউলি পলাশের ফুল
ভরে ওঠে থরে থরে।।
শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি
বাতাসে তোলে ছন্দ,
সোনালী ধানে গোলা ভরে ওঠে
কৃষকেরা করে আনন্দ।।
শীতের রোদ গায়ে মেখে
জমে ওঠে বইমেলা,
সুস্বাদু খাবারে মন ভরে যায়
শীতের স্নিগ্ধ বেলা।।
হিমেল পরশ লাগিয়ে অঙ্গে
তোমাতে আমাতে মিলে,
একসাথে চলো হাঁটি মোরা
নিরুদ্দেশের পথে।।
একাল-সেকাল
আ র তি ধ র
বদলে গেছে সব কিছুই
যুগ বদলের সঙ্গে
বাচ্চাদেরও হচ্ছে বদল
চলন, বলন, ঢঙে!
বাচ্চা মানে মায়ের দুধ
আর ন্যাংটা, ন্যাড়া মাথা
খুঁজে এসো এমন বাচ্চা
আজ পাবেনা কোথা!
বাচ্চা মানে পাঁচটি বছর
দিব্যি হেসেখেলে ঘোরা
আজকের বাচ্চা দু'বছরে
শিখছে লেখাপড়া!
তিন বছরে যাচ্ছে স্কুলে
পিঠে ব্যাগের বোঝা
ফিরে এসে নাচের ক্লাসে
ছুটছে দেখো সোজা!
রবিবার ছুটির দিন
ওদের মানা ছুটির
হরেক রকম হোম ওয়ার্ক
আঁকার ক্লাসে হাজির!
একটুখানি সময় পেলে
মোবাইল হাতে তুলে
এক নিমেষেই ভিডিও খুলে
নাওয়া খাওয়া যায় ভুলে!
জানে ওরা অনেক বেশি
আজ আমাদের চেয়ে
যুগের হাওয়ায় তাল মিলিয়ে
যাচ্ছে যেন ধেয়ে!
ছোট্ট মাথা তাতেই তাদের
হাজার রকম চাপ
বাচ্চা তো নয় বলতেই হয়
ওরা বাচ্চাদের বাপ!
চাঁদের বাঁধভাঙা হাসি
র ত্না দা স
চাঁদের বুড়ি, শণের নুড়ি চরকা কাটে চুলে,
মাম্মা, পাপ্পা দাওনা ধরে চাঁদকে নেবো কোলে
চাঁদকে তো যায় না ধরা
সে তো শুধু মায়ায় ভরা
ছড়ায় কিরণ আকাশ জুড়ে ভোলায় আদর ছলে।
চাঁদের পাতা ফাঁদে সবাই পড়ে যায় ধাঁধায়,
চাঁদের আলো চাঁদের হাসি, মনকে যেন কাঁদায়
তবু চাঁদের রূপোলী ঝলক
দেখে চোখের পড়েনা পলক
মানুষ আজও ভীষণ খুশি ডাকলে মামা চাঁদ আয়...
হেমন্তের শোভা
শ ম্পা মু খা র্জী কো লে
হেমন্তের পরশ পাই
কার্তিক অগ্রহায়নে,
বাতাসে মোদের মন মাতে
নতুন ধানের ঘ্রাণে।
কুয়াশা চাদর হালকা করে
জড়িয়ে আছে গায়,
এই দেখো না হেমন্ত হাজির
গুটিগুটি পায়।
হিমের পরশ হিমেল হাওয়া
দারুণ খুশি মন,
চাষীর ঘরে নতুন ধানের
নবান্নের আয়োজন।
খেজুর রসের সুমিষ্ট স্বাদ
জয় নগরের মোয়া,
ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ
কমলা লেবুর কোয়া।
মধুর এমন ঋতুর ছোঁয়া
মনে খুশির হিন্দোল,
গাছের শাখে পাখির দল
খাচ্ছে কেমন দোল।
রংবেঙের ফুলগুলি সব
হাত ছানি দিয়ে ডাকে,
হেমন্ত যেন নিজের হাতে
নিজের ছবিই আঁকে।
শিশির ভেজা আদুরে রোদ
ভীষণ ভালো লাগে,
আলতো শীতের ছোঁয়া পাই
শীত আসারই আগে।
রাতের আকাশে অসংখ্য তারা
জোৎস্না ধোয়া আলো,
কি অপূর্ব অপরূপ শোভা
দারুন জমকালো।
পাতাঝরা শব্দগুলো
মনে কাঁপন ধরায়,
হিমের পরশে ফিরে আসে
নতুন কিশলয়।
দিন হয়েছে ছোট এখন
রাত হয়েছে বড়,
হেমন্তকে খুশী মনে সকলে
সাদরে গ্রহণ করো।
স্বাধীনতার সার্থকতা
স র মা দে ব দ ত্ত
এই ছেলেরা এই মেয়েরা
তোমারা কী সব জান?
একটি কিশোর ফাঁসির দড়ি
গলায় পড়লো কেন?
কোন সে ছেলে বোমা ধরে
দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তার ধারে?
কোন সাহেব কে মারবে বলে
পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে?
জানতে কী চাও-----?
১১ই আগস্ট কেন স্মরণীয়
সেই ছেলেটা দেশ জুড়ে আজ
কেন বরণীয়?
বলতে পারো কোন সে ছেলে
স্বাধীনতা আনবে বলে
রক্ত চায় নিজেই কে সে
ঘর ছাড়ল ছদ্মবেশে?
'দিল্লি চলো' দিল ডাক
বন্দী দশা মুক্তি পাক
সবার তিনি 'নেতাজী '
আসলে তার নামটি কী?
বলতে পারো কোন সে মেয়ে?
পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে
মরণ বরণ করলো নিজে
মেয়ে হয়েও ছেলে সেজে
প্রমাণ করলো আত্মসম্মান
ভারতবাসী দেয়না বিসর্জন।
বলতো দেখি কে সেই বৃদ্ধা?
মনেতে সে এক বীর যোদ্ধা
বুক পেতে দেয় গুলি খেতে
দেশের মান উঁচিয়ে হাতে
মাতৃভক্তে নেইকো জুড়ি
সবাই ডাকে গান্ধীবুড়ি।
বলো বলো কে সেই মহান?
শিক্ষক এক সূর্য সমান
মাতৃ মন্ত্রে দীক্ষা গ্রহণ
কঠোর কঠিন জীবন যাপন
ছাত্র গড়েন কঠিন ব্রতে
সৈনিক তারাই মুক্তি যুদ্ধে।
জানো কী? জন্মে ছিল এমন পুত্র
লাহোর মামলা ষড়যন্ত্র
কোন বিপ্লবী কৃষির ছেলে
অনশনে বসেন জেলে?
ছদ্মবেশে রেলে চড়ে
দেশের জন্য ডাকাতি করে
কোন মন্ত্রে দীক্ষা নিলে
চোখে তেজের আগুন জ্বলে?
জেনে নিও এঁদের কথা
এঁদের জীবন পুণ্য গাঁথা
তবেই হবে ধন্য তুমি
এদেশ হবে পুণ্যভূমি
জানলে তোমরা এঁদের কথা
স্বাধীনতা পাবে সার্থকতা।
অ্যালার্ম
জুঁ ই রা য়
গল্পগুলো বইয়ের ভিতর
ঘুমিয়ে আছে দেখো,
ছোট বড় মানুষগুলো
ঘুম ভাঙিয়ে শেখো।
দিনগুলো আজ গুমড়ো কাটা
কলির হাওয়া লাগে,
পাখির ডাকে ঘুম ভাঙেনা
এলার্ম বাজলে জাগে!
কবিতা সব বেড়ায় খুঁজে
পাঠক হবে কারা?
চোখ দিয়ে যায় দু-একজনা
ভালোবাসে যারা।
উপন্যাস পায় হতাশ কড়া
যতন আমার হারা,
কত ডাকি পড়তে আমায়
দেয়না ডাকে সাড়া!
অনুভূতি যায় যে ডুবে
বাড়ছে হিংসা দেশে,
অবহেলা করলে তবে
আফসোস হবে শেষে।।
ভূতের তাণ্ডব
ম ধু মি তা ধ র
ঐখানে বাঁশবনে ভূতেদের রাজ্যে
রাত হলে শুরু হয় বিদঘুটে কাজ যে
ওরা নাকি ঘুমায় না, জেগে থাকে রাতভর
ওখানে নিশুত রাতে চুপিচুপি ওঠে ঝড়।
ভূতেরা দলবেঁধে বাঁশগাছে উঠে যায়
বাতাসের সাথে সাথে জোরে জোরে দোল খায়।
পা ঝুলিয়ে বসে থাকে পোড়ো বাড়ীটার ছাদে
নাঁকি সুরে কখনও বা ইনিয়ে বিনিয়ে কাঁদে।
লিকলিকে, ঢাঙাপানা বাতাসের বেগে যায়
নিরীহ মানুষ পেলে রক্তটা চুষে খায়।
শ্যাওড়া গাছের ডালে নাকি ভূতেদের বাস
পথ দিয়ে গেলে কেউ করে যে সর্বনাশ।
ভূতের ভয়েতে কেউ ঘেঁষে না ও পথে আর
ঘাড় মটকিয়ে ওরা করবে পগার পার।
শাকচুন্নীরা নাকি সাদা শাড়ী পড়ে রয়
দূর থেকে দেখলেই হাড় হিম করা ভয়।
রাত একটার পরে দলবেঁধে ওরা সব
লোড শেডিং এর রাতে নাচা গানা উৎসব।
বেম্মদত্যি আর গেছো, মেছো কত নাম
পিলে চমকিয়ে যায় যদি শোনে রাম নাম।
ভয় পেলে রাম নাম কর যদি মনে মনে
ভূতেদের তান্ডব থাকবে না কোনখানে।
ধনী লোকের কদর বেশি
চৈ তা লী দা স ম জু ম দা র
ভবের হাটে ধনী লোকে
পায় যে কতো মান,
খেটে মরে গরিব মানুষ
পেটে পড়ে টান।
বাড়ি গাড়ি ধনী চড়ে
তারাই করে রাজ,
ভালো মন্দ তাদের জন্য
গরীব মরে আজ।
দিনে-রাতে চাষী খেটে
মাঠে করে চাষ,
দুমুঠো ভাত খেতে পাবে
মনেতে তার আশ।
বড়ো লোকের কতো কথা
লজ্জা শরম নাই,
ভালো মানুষ খুঁজতে বলো
কোথায় আমি যাই।
অহংকারের পতন হবে
জেনে রেখো ভাই,
তাইতো সদা সুখের পথে
খুশির গান গাই।
ধনী লোকের কদর বেশি
কেনো জানতে চাই,
প্রভু তোমার কাছে আমি
প্রশ্ন করি তাই।
মাঠেতে ধান ফলায় চাষী
কুমোর বানায় ভাড়,
বড়ো লোকের ঘরে গেলে
বন্ধ করে দ্বার।
অঘ্রাণের গল্প
চি র ঞ্জী ব হা ল দা র
ধানগাছেতে এসেছে ফুল
শিকড় নধর জল
তুলট মেঘে ভাসছে খুশি
চল দেখবি চল।
যাসনে খোকা বাইরে এখন
অঘ্রাণের এই মাসে
এদিক ওদিক হলেই কিন্তু
বক রাক্ষস আসে।
ঘাড় মটকে নিয়ে যাবে
তেঁতুল গাছের ডালে
সাধনা করে পাওয়া তোকে
অঘ্রাণের এই কালে।
হিমেল আকাশ কুলোর বাতাস
মাটির পিদিম ফুল
বায়না করলে উড়ে আসবে
রাক্ষসদের চুল।
ধানের গাছে দুধের গন্ধে
ভাসছে কৃষি জমি।
তারচে বলি শোন গল্প
ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী।
সুখ দুঃখ পাশাপাশি
র ত ন পা ল
দুঃখ আসে সুখের মাঝে জীবন দরিয়ায়,
সুখের পরত খুঁজে পাবে ইচ্ছে থাকলে তায়।
সুখ দুঃখ পাশাপাশি থাকে নিজের মনে,
জায়গাখানি দেয় যে ছেড়ে শূণ্য হলে ক্ষণে।
ভাগাভাগি করে তারা বসত গড়ে নীড়ে,
একে অন্যের সুখ ভোগেতে চলেও ধীরে ধীরে।
কেউ হয়তো অল্পে খুশির পাহাড় গড়ে চলে,
ব্যথা বেদনা দুঃখ যেন সদাই পিষে দলে।
চাওয়ার আশায় থেকেই ভালো দিনটি কাটে কারো,
না পাওয়াতেও তৃপ্তি সুধায় স্বপ্ন বাড়ে আরো।
বাড়ুক তাতে ক্ষতি তো নেই ইচ্ছে থাকলে বুকে,
আনন্দ গান গাইতে পারে থাকতে পারে সুখে।
সুখের মাঝেও শান্তি খুঁজে পায় না কত লোকে,
আরো চাওয়ায় গা ভাসিয়ে নিজেই থাকে শোকে।
ভুল ভাবনা মনকে নাচায় এদিক ওদিক তালে,
ছন্দহীন ও দিশেহারা স্খলন দুখের চালে।
নিজের কাছে নিত্য মনের লাগাম আছে যার,
ভুল ভাবে না মন উচাটন কোথায় থাকবে তার।
গতির রেখায় সে চলমান লক্ষ্য জানলে ভালো,
কতটুকু সীমায় বাঁধা কোথায় জীবন আলো,
সীমার মাঝেই অসীম অপার আনন্দ যার বেশি,
সুখ সাগরে দুখের মাঝেও সুখই দেখায় পেশী।
হারানো মন
ছ ন্দা দা ম
মনটা আমার হারিয়ে গেছে
গৃহস্থালির থালাবাসনে,
প্রাণটা আমার ফুরিয়ে গেছে
দৈনন্দিনী টানাপোড়েনে।
তেপান্তরের কোন মাঠেতে
পঙ্খীরাজের ঘোড়ার পিঠে,
রাজপুত্তুর হারিয়েই যায়
স্বপ্ন ভাঙার কুঠুরিতে।।
কলের জল, ভাতের হাঁড়ি,
সেবাযত্ন, মনরাখা ,
স্বপ্নবিলাসী মনটা যে আর
উড়তে পারেনা ভাঙা পাখা।
সুনীল আকাশ, ধু-ধু বাতাস,
দিগন্তজোড়া সবুজমাঠ,
হপ্তা শেষের মুদির ফর্দে
চুকে যায় যে জীবন পাঠ।।
আকার তুলি, লেখার কলম,
ছিন্নবেশী ডায়রীটা,
হেথায় হোথায় হারিয়ে গিয়ে,
হারায় তাদের অস্তিত্বটা।
এক চিলতে মনটাকে যে
রেখেছিলেম কোন কৌটোতে,
মরচে পড়া সেদিন পেলাম
ঘরের কোণের গর্ততে।।
কল্পনা? সেও যে এখন কল্পনা
প্র দী প শ র্ম্মা স র কা র
মাঝে মাঝে দাবি ক'রে বসি বেশী–
ভুলে যাই, শুধু প্রার্থনা করা চলে,
মন কেন ভাবে, সে যেন আমাকে বোঝে,
সহজ সত্য সহজ কথায় সে বলে?
যেতে যেতে থমকে গিয়েছি কতবার,
বিনা কৌশলে, খুব কাছে, বড় কাছে–
ভাষায় পারিনি বলতে যে কথা একবার
কেন যে বুঝিনি চোখেরও তো ভাষা আছে!
বন্ধুরা বলে উপহার কিছু লাগে
মনের কথা অপর মনকে বোঝাতে
এখন বুঝেছি প্রাক-দূরভাষ আমলে
কল্পনা ছিল দরকারী মন মজাতে।
খিটখিটে দাদু
টু লা স র কা র
খিটকেল দাদু খিটখিটে
কথার ধরন বিদঘুটে।
মুখে নেই কোনো হাসি
কথা বলে রাশিরাশি।
লাঠি হাতে সর্বক্ষণ
দ্বারে নজর সারাক্ষণ।
কে ঢুকলো কে বেরোলো
কে কখন লুকিয়ে ভাগলো।
দাদু খায় গাদাগাদা
লুচি, আলুর তরকারি সাদা।
গণ্ডা গন্ডা মিষ্টি নিমেষে শেষ
ভুড়িয়াল দাদু সুখে আছে বেশ।।
নেই চিন্তা নেই ভাবনা
সারাদিন খাবার বাসনা।
ডিম খায় একডজন
নিত্য সকালে ভক্ষণ।
দুপুরে মাছ মাংস ডাল
সাথে চাটনি পাঁপড় ঝাল।
বিকেলে দুধ চার গ্লাস
সাথে বিস্কুট ফার্স্টক্লাস।
রাতে বারোটা পরোটা।
খুশিতে খায় সবকটা।
সবজি মিষ্টি চাই সাথে।
রোজ থাকতে হবে পাতে।
দাদু বেশ পালোয়ান
ব্যায়াম করে যেনো জোয়ান।
ভুড়ি যতই হোক বড়
দাদু সদাই সড়গড়।
দাদু মস্ত এনার্জেটিক
হাসি কম খিটখিটে বেঠিক।
সান্টাক্লজ
বী থি কা ভ ট্টা চা র্য
শোনরে সবাই ডানপিটে,
থাকিস না আর মারপিটে।
আয় রে তোরা আয় ছুটে,
আনন্দ আজ নে লুটে,
বইছে হাওয়া উত্তুরে,
পাড়ায় এলো থুরথুরে।
মিষ্টি হাসির ফুলঝুরি,
করবে সবার মন চুরি।
লাল জামা আর লাল টুপি,
নয়তো বাঘা নয় গুপী।
সেতো মোদের সান্টাক্লজ,
বড়দিনের খুশীর খোঁজ।
সাদা সাদা গোঁফ দাড়ি,
আসবে চড়ে স্লেজ গাড়ি।
কনকনে এই ঠান্ডাতে,
শীত বুড়োটা হিম রাতে।
দেখবি যদি দৌড়ে আয়,
কি আছে ওর তল্পিটায়।
হরেক রকম উপহার,
নে নিয়ে যা, যা চাই যার।
ঘুমের মাঝে মাঝরাতে,
চুপিচুপি আসবে সে
দেখবি উঠে কি মজা
উপহারে ভর্তি মোজা।
খেলনা পুতুল রঙবাহারী,
মিষ্টি, লজেন্স রকমারি।
বড়দিনের খুশীর হাসি
আনন্দ থাক রাশি রাশি।।
হারানো শীত
গৌ রী স র্ব বি দ্যা
হারানো সেই শীতের সকাল
আমায় কেন ডাকে!
মাঘের শীতে শিশির ঝরে
সূর্য ছবি আঁকে।
পুকুর পাড়ে রোদের ঝিলিক
দাঁড়িয়ে লাগাই তাপ
বুড়ি দিদা এসে বলে
কী-ই শীত বাপরে বাপ!
খড় জ্বালিয়ে আগুন পোহায়
কমে না শীত তবু
ঠক-ঠকাঠক দাঁতে বাড়ি
শীতে জবুথবু।
এমন শীতে জ্যাকেট চাদর
মাফলার মাথায় টুপি
এখন আর সেই শীত পড়ে না
জ্বালায় না কেউ কুপি!
ইচ্ছেঘুড়ি
প্র ল য় ব সু
আকাশ জুড়ে ঘুড়ির মেলা,
হাজার ইচ্ছে ডানা,
মেঘপরীদের সঙ্গ পেতে
আজকে তো নেই মানা।
মাঠ পেরিয়ে ঘাট ছাড়িয়ে
উজান হাওয়ায় উড়ি,
ন্যাড়া ছাদের ধার ঘেঁষে ভাই
শক্ত লাটাই ধরি।
খেলব ছেড়ে, একটু টেনে,
পেটকাটি, চাঁদিয়াল
উড়বে ঘুড়ি পত্পতিয়ে-
মুখপোড়া, জিভেয়াল।
হালকা করে কান্নিক দিয়ে
উতাল তোল্লা মার-
মাথায় ঘষে চেত্তা টানি,
ভোঁকাট্টা বলমার।
ময়ূরপঙ্খী, শতরঞ্জি,
দিশি চাইনিজ মাঞ্জা,
গোঁত্তা মেরে করব লড়াই
নে তো দেখি পাঙ্গা!
কেটেও যদি যাই শেষমেষ,
খুশিভাসি অবশেষ-
ইচ্ছেঘুড়ি পৌঁছে দেবে
স্বপন পুরীর দেশ।
হিমেল হাওয়ার শুভেচ্ছাতে,
ফুটুক যত কুঁড়ি -
শীত শুরুতে আয় না ওড়াই
মনের ইচ্ছেঘুড়ি।
আমার স্বদেশ
ন ব কু মা র মা ই তি
মৈত্রীর দেশ আমার স্বদেশ
তবু কতো হানাহানি,
সাদা আর কালো, মোটা আর জলো
তাই নিয়ে টানাটানি।
ছোট আর বড়ো উচ্চ ও নীচ
সে তো সময়ের দান,
কর্মের মাঝে মিলাবে মানব
ধর্মেতে মহীয়ান।
দুটি দেশ আর দুটি জাতি যদি
অনায়াসে মিশে যায়,
দুই দেহে বহে একই রক্ত
মিলবে না কেন তায়?
পশ্চিম আজ ডেকেছে পূর্বে
ভ্রাতার আসন দিয়ে,
বিশ্ব জননী পেতেছে আঁচল
সন্তান-স্নেহ নিয়ে।
একই ক্ষুধা তৃষা দুঃখ বেদনা
ওখানে প্রভেদ নেই,
নারী ও পুরুষ হিন্দু যবন
এক দেহে মিলবেই।
ধর্মের যত গোঁড়ামি আর সে
জাতের অভিমান,
পঞ্চভূতে গড়া এই দেহ
ভূমাতেই অবসান।।
খোকাখুকি
সু চ ন্দ্রা ব সু
বই খোল ঝটপট
বুঝে পড়ো চটপট
চুপচাপ বসে কেন
বইটা পড়োনি যেন?
বুঝে মানে ঠিকঠাক
যদি জানো দাও দাগ
লিখে যাও মোটামুটি
না করেই কাটাকাটি
গিয়ে পরীক্ষার হলে
লেখো সব খাতা খুলে
মার খাবে খোকাখুকি
যদি করো টোকাটুকি
কেটো নাকো আঁকিবুঁকি
মেরো নাকো উঁকিঝুঁকি
কোরো নাকো বাড়াবাড়ি
খাতা করে কাড়াকাড়ি।
পৌষালী গীত
ত ন্দ্রা ম ন্ড ল
কুয়াশা চাদরে ঠান্ডা আদরে
হিমেল হাওয়ায় ভেসে,
শীতের বার্তা নিয়ে পৌষ
এলো অবশেষে।
রঙবেরঙের ফুলের ঢঙে
সাজলো চরাচর,
মিঠে রোদের আলপনাতে
ধরিত্রী মনোহর।
মজা হাসি হাজার খুশীর
উৎসব মরশুম,
পিঠে পায়েস বড়দিন আর
বনভোজনের ধূম।
দিকে দিকে অনুষ্ঠিত
হরেকরকম মেলা,
সকাল সাঁঝে ক্রিকেট বল,
ব্যাটমিন্টন খেলা।
উত্তুরে হাওয়ার দাপটে এবার
জাঁকিয়ে ধরবে শীত,
খাও দাও রোদ্দুর নাও
গাও পৌষালী গীত।।
জব্দ
সু নৃ তা রা য় চৌ ধু রী
ভুবন মোহন ঘাঁটি
অলস তিনি খাঁটি।
দিন রাত্তির থাকেন শুয়ে
দুয়ারখানি আঁটি।
তাঁহার বসতবাটি
এই কাছে নৈহাটি,
সেই পাড়ারই রতন বাবু
তাঁহার সহপাঠী।
ভুবন বাবু ঘুম দিয়েছেন
বিছিয়ে শীতল পাটি
রতন তাঁকে ডাকলে বলেন
রোব্বারটাই মাটি।
রত্নেশ ত্রিপাঠী
হেথায় সেথায় হাটবাজারে
করেন হাঁটাহাঁটি
ভুবন বলেন কিচ্ছুটি নেই
আগের মতো খাঁটি।
খুঁজলে হাটে যায় কি পাওয়া
সোনার পাথরবাটি?
রতন বলেন কেমন করে
বলছ এই কথাটি?
কক্ষনো কি হতে পারে
সোনার পাথরবাটি?
এই নিয়ে খুব চললো জোরে
কথা কাটাকাটি।
কেষ্ট চাকর দুধ এনেছে
ভরে কাঁসার বাটি
ল্যাংড়া আমও গোটা আটেক
ফলার পরিপাটি।
ছাড়িয়ে খোসা কামড় দিয়ে
গরম তাঁর মাথাটি,
আমের মধ্যে পেলেন কিনা
পাতলা একটা আঁটি!
অমনি ভুবন বাজার চলেন
বাগিয়ে পাকা লাঠি
আমওলাকে তেড়ে ধরেন
বাগিয়ে জুতোর পাটি।
ঠকাবার আর জায়গা পাওনা?
আমের মধ্যে আঁটি?
আমওলা তো ভয়েই সারা
ধরে তাঁহার পা-টি।
বুঝিয়ে বলে, কে বা শোনে
গরীবের কথাটি।
কাছেই ছিল মুষকো জোয়ান
ব্যায়াম করা গা-টি
ব্যাপার দেখে এগিয়ে এসে
কষিয়ে মারলো চাঁটি।
অমনি দাঁত কপাটি
ভাঙলো দাঁতের পাটি
বন্ধ হলো লম্ফঝম্প
বন্ধ হলো হাঁ টি।
ভুবন মোহন ঘাঁটি
তখন থেকে চুপ করেছেন
আর কাড়েন না রাটি।
পার্সোনাল পিএ
ব ন্দ না রা য়
সকাল থেকে সারাদিন
ব্যস্ত থাকি ঘরের কাজে
তবুও আমি বেকার জগতে
শুনতে হয় মাঝে মাঝে।
নেই মাইনা নেই বোনাস
নেই কোনো রিটায়ারমেন্ট লাইফ
তবুও ফাঁকি যায়না দেওয়া
আমি হলাম হাউজ ওয়াইফ।
যারা বাইরে রোজগার করে
আমরা হয়তো তাদের পি এ
টুকিটাকি সব করে দি
থাকি তাদের সঙ্গে নিয়ে।
ঘর গুছানো রান্না করা
সকল কাজে পরিপাটি
যদিও এতে আসেনা টাকা
ষোলো আনাই কর্ম মাটি।
যতই করো ত্যাগ সংসারে
কেউ তোমাকে বুঝবে না
যতই করো সবার তরে
তবু বেকার উপাধি ঘুচবে না।
ছড়ার পাড়ায় কারা
অ রু নি মা চ্যা টা র্জী
মিট মিট মিট প্রদীপ আলো
ঝিঁঝি পোকার গান,
আমরা কজন গল্প শুনি
গোলায় আছে ধান।
ইঁদুর গুলো গর্ত খুঁড়ে বর্ষা নেমেছে
ঠাকুরমা মধ্যে মধ্যে কাটছে দাঁতে পান।
চুপ করলেই ছোট্ট খোকন চিমটি কাটে মুখে,
বুড়ি বলে, বলছিরে থাম বিষম বাঁধে বুকে।
তারপর সেই তিতিল মিতিল গাছে উঠেছে,
বিরাট বড় জেব্রা এসে প্রশ্ন ধরেছে।
বলতো খোকা, কোথায় পাবো মানুষ কেনার হাট?
রোদ্দুরেরা গরম কালে কোথায় বাঁধে ঘাট?
ঘামের জলে পুকুর ভরা নোনতা অতি জল...
টক হয় সব পাকা পাকা যত রাজ্যের ফল?
তিতিল তখন চুপটি করে, মিতিল মৃদু হাসে,
এইটুকুন বলার পরে বুড়ি একটু কাশে।
খোকন সোনার বন্ধ শ্বাসে ঘরটা থমথম
জেব্রা যেন টিপছে গলা ফুরিয়ে আসে দম।
ঠাকুরমাকে চিমটি কেটে খোকন বলে বলো?
মিতিল তখন জেব্রাটাকে কি উত্তর দিল?
এমন সময় প্রদীপ নেভে দমকা হাওয়া এসে
আমরা কজন জড়িয়ে ধরি ঠাকুরমাকে ঠেসে।
কেন যায়
জ বা ভ ট্টা চা র্য
রুক্ষ শীতের দিনে
মরে যায়,
পর্ণমোচীর পাতা
ঝরে যায়---
ফুল ফোটাতে
না পারার যন্ত্রনায়---
আসূর্য আকুতি নিয়ে
ঝরে পায়ে পায়ে।
এই হিম হিম শীতলতায়
সম্পর্কের ওমটুকু নিঃশেষে
ভেঙে যায় পুনরায়---
দীর্ঘ রেশম পথ অভিমানে
রুদ্রাক্ষ আঁধার রেখে যায়।
এ সমস্ত শীতকাল মাটির মায়ায়
শস্য ফল শীতভোর কিছুতেই নয়।
কেষ্টর নিমন্ত্রণ
উ ত্ত ম ব নি ক
খোঁচাতে খোঁচাতে দাঁত কেষ্টা... রঘুকে দিলো বলে,
চার কুড়ি দিয়ে কেনা কাঁচের বাটি... গেলো যে বিফলে।
সেজেগুঁজে সপরিবারে...এসে বিয়ে বাড়ি,
আধপেট খেয়ে কিনা... শেষে দিতেই হবে পারি!
সকাল থেকে উপোস দিয়ে... এমনি উদর বেহাল
গর্জন করে বলে কেষ্টা... এই ব্যাটা, এটা কেমনতর ডাল!
বেগুন গুলান প্যানা প্যানা সব... এরে কয় কি বেগুনি?
গোটা কুড়ি গিলে হাঁকে কেষ্টা... কে রেঁধেছে শুনি!
কাঁঠাল চিংড়ির তরকারিতে... চিংড়ি গেলো কোথা?
ছ্যা, ছ্যা, ছ্যা একি পাক... একেবারেই যা তা।
দাদা একটা পাবদা দেবো... ফিরে তাকায় কেষ্ট,
গোটা দশেক আন আগে... দেখি হয় কিনা যথেষ্ঠ।
কাতল কালিয়া, কাতল কালিয়া.... কে যেন বলে,
এই ছোড়া বেশি দিবিনা, বলে... মাত্র ত্রিশ খানা গেলে।
কচি পাঁঠারমাংস কয় কে?... এ তো ছাগল ছাগল লাগে,
খবরদার বেশি দিবিনি... শুধু কেজি দুয়েক দে আগে।
শুধু শুধু চাটনি চেটে... মুখ যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগে
কাজুগুলান সব ডুবলো কোথায়... দেখিস না কেনো আগে।
যতো সব পাঁঠার দল দিয়ে... হয় নাকি পরিবেশন,
হাঁক দিয়ে বলে কেষ্টা এই ছোকরা কি আছে নেক্সট আইটেম
রসগোল্লার রস কোথায় গেলো এ তো শুকনো শুকনো লাগে
গোটা চল্লিশেক গেলার পর... মনে এ কঠিন প্রশ্নটা জাগে।
ক্ষীর দইতে ক্ষীর কোথায়... ময়দা ময়দা করে,
কেজি দুয়েক গিলে কেষ্টা... দ্যাশের বাড়ির তুলনা ধরে।
পান, পান, পান... দেবো নাকি বাবু একটা পান?
আধপেটেতে রয়েছি আমি... এবার নিবি কি আমার জান!
বিবর্তনে হারিয়ে গেলো কেষ্টারা সব কোথায়
বিয়ে বাড়ির রস বাড়তো এমন চরিত্রদের শোভায়।
আজ, হিসেব করে জীবন চলি হিসেব করে খাই,
সব কিছুই থাকে পড়ে যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাই।
খোকার বায়না
নি ভা চা ক লা দা র
নিয়ে চল মা মাসির বাড়ি
খোকা ধরেছে বায়না,
ইস্কুলেতে ছুটি দিলে ম্যাম
ঘরেতে মন রয় না।
মাসির বাড়ি ভারী মজা
উড়ে আসে ময়না,
পিয়ারা খায় কুটুশ কাটুশ
কাউকে ধরা দেয় না।
আছে যে ঐ মস্ত বড় পুকুর
রুই কাতলা মাছ,
খেতে দেবো কুঁড়ো সারা দুপুর
দেখাবে ওরা নাচ।
মা বলেন এক ক্রোশ পথ হাঁটা
মিছে করিস বায়না,
অমনি খোকা দু-পা ছড়িয়ে বসে
জুড়ে দিলে কান্না।
মায়ের হলো বিষম দায়
বলেন খোকা চল,
এক লাফে মায়ের কোলে
শুকায় চোখের জল ।
সুপুরী গাছ সারি সারি পথে
বাবুই বাসা বোনে,
খোকা দেখো শিল্পী পাখি বাবুই
রেখো কিন্তু মনে।
বাড়ির কাছাকাছি এসে গেছি
ঐ তো ছোট্ট ঝিল,
সাদা সাদা বক পাখি বসে তীরে
হঠাৎ ছোঁ মারে চিল।
বকেরা সব ডানা মেলে উড়ে
খোকা হাসে খিল খিল,
পথের কষ্ট নিমেষে গেলো ভুলে
মায়ের ভরে উঠলো দিল।
শীত এলে
ক বি তা ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়
শীতের সোনা-সূর্য মেখে হেমন্ত-রঙ আসে
আকাশ বাতাস নাচছে কেমন বিমুগ্ধ-উল্লাসে,
ঘাসের ডগায় শিশির জমে, মুগ্ধ সকালবেলা
আকাশ-প্রদীপ জ্বেলে আকাশ, সাজছে সন্ধ্যা-বেলা;
গাইছে বনের তরুলতা, গাইছে বনের পাখি
শাল-পিয়ালও বলছে 'এসো হেমন্ত-রঙ মাখি'
শহর জুড়ে ধোঁয়াশা-চাদর, ক্লান্ত দুপুরবেলা
ধুঁকছে শহর, ধুঁকছে মানুষ বিষণ্ণতার মেলা;
গ্রামের পথে খোলা-হাওয়া, সবুজ মাঠ আর বন
ছুটতে যে চায় সেই দিকেতেই বদ্ধ শহর-মন,
ভাণ্ড-ভরা খেজুর রস আর লোভী শিশু-চোখ!
পড়ছে মনে পাট-কাঠিতে চুবিয়ে খাবার শখ,
আকাশ-বাতাস কুয়াশা মাখা সেই সে সকালবেলা
বনের ধারে, পুকুর-পাড়ে দাপিয়ে দামাল-খেলা,
গামছা দিয়ে মাছ ধরা আর ফুল-চুরির সেই দিনে
ফল-চুরিও বাদ যেত না, পড়ছে সবই মনে,
গ্রামের পাশে ছোট্ট নদী তিরতিরিয়ে চলা
চড়ুইভাতির আয়োজনে কাটতো কত বেলা,
ছোটবেলার স্মৃতি সে-সব পাহাড়-নদী জোড়া
শীত পড়লেই এগিয়ে আসে ভালোবাসায় মোড়া,
ধূসর-চোখে জাঁকিয়ে বসে মুগ্ধ ছোটবেলা
ভুলেই যে যাই, এবার এলো সাঙ্গ করার পালা।
পুনরাবৃত্তি
অ দি তি ঘ ট ক
বসন্তেরই সোহাগ ছোঁয়ায়
ফুটলো কিশলয়
হরিৎ আভায় উঠলো ভরে
অঙ্গন ও আলয়
সেই পাতাটাই পড়লো ঝরে
রুক্ষ শীতের কালে
কুহুক জমা শুষ্ক শীতল
হাওয়ার তালে তালে
সংখ্যা বেড়ে হচ্ছে তারা
স্তূপের মত রাশি
বলছে, বিদায় দাও বন্ধু
এবার তবে আসি--
মর্মর এই ধ্বনির সাথে
আমরা রব মনে
আনন্দেতে ঘুরবে যখন
তোমরা বনে বনে।
একটি বছর করে পার
হিমেল হাওয়ায় আলগা হল
নাড়ির বাঁধন তার
আসবে আবার ডালে ডালে
নতুন কিশলয়
ভরবে তারা নতুন আলোয়
অঙ্গন আর আলয়
এমনি ভাবে নতুন আসে
নিয়ে হাজার আশা
সঙ্গে থাকে পুরাতনীর
বুক ভরা ভালোবাসা
দাদু-দিদা কাহিনী
প্র ণ ব কু মা র ব সু
দাদুর মাথায় বিরাট টাক
দাঁতগুলোতে রয়েছে ফাঁক-
যখন দাদু ঘুমিয়ে পড়ে
গোঁফ জোড়াটা বেজায় নড়ে-
দিদা যখন পুজো করে
চশমা চাপায় নাকের 'পরে-
দিদার মাথায় পাকা চুল
তবুও কাজে হয়না ভুল-
নাতি নাতনী আসলে ঘরে
দিদা ওদের আদর করে-
দাদু শুধুই তাকিয়ে থাকে
চায়ের কাপটা তুলে রাখে-
ব্যথা হলে দিদার কানে
দাদুই ওষুধ কিনে আনে-
নাতি নাতনী অবাক হয়
দাদুকে দেখে হয়না ভয়-
এমন করেই কাটে জীবন
মনের কষ্ট বুঝছে কজন-
চলতে চলতে হবেই শেষ
ভাল থাকার থাকবে রেশ।
চাষীর ছেলের স্বপ্ন
ঊ ষা রা নী স র কা র
হিমের বায়ে লাগল দোলা,
ফসল কেটে গোলায় তোলা
পিঠে পায়েস পেট পুরে-
খাব আমরা ঘরে ঘরে।
হই না কেনো চাষীর ছেলে,
দুঃখ নেই তাই বলে!
মোটা ভাত মোটা কাপড়-
সব কাজেতে সদাই দড়।
পাড়ার সকল মাসি পিসি,
জ্যাঠা খুড়ো বেজায় খুশী
গুরুজনদেরকে শ্রদ্ধা করি-
আশীর্বাদ নত শিরে ধরি।
পাঠশালাতে অধ্যায়ন,
একাগ্রতাতে নিবেশ মন
স্বপ্ন দেখি চাঁদে যাব-
জমি কিনে বাড়ী করব।
ময়ূরপঙ্খী দোলা
কৌ শি কী ঘো ষা ল
কালীপূজোর মেলা ভারি
দোকান পাটের বাড়াবাড়ি
চল্লো সেথায় মা, মেয়েতে
মুখে হাসির ছড়াছড়ি।।
দোকান দোকান ঘোরাঘুরি
টুকিটাকি ব্যাগে ভরি
এদিক ওদিক ঘুরছে সবাই
মুখে হাসির ফুলঝুরি।।
হঠাৎ মেয়ের বায়না দারি
ময়ূরপঙ্খী দোলা গাড়ি
চড়তে তাকে হবেই হবে
নইলে সবই মিথ্যে ভারি।।
মা,পড়লো মুশকিলেতে
মেয়েটা যে ছোট্ট ভারি
কেমন করে একলা ছাড়ে
অত বড়ো দোলা গাড়ি।।
মুখটা মেয়ের কালো হলো
দু চোখে জল টলমলো
মা, হেসে হাত ধরলো মেয়ের
চড়বো দুজন দোলা গাড়ি।।
ময়ূরপঙ্খী দুলছে তালে
ছুঁচ্ছে আকাশ দোলার চালে
হাসছে মেয়ে হাসছে যেনো
মুক্ত ছড়ায় থরে থরে।।
মেয়ের হাতে হাতটি রেখে
মা চলে তার পুরনো কালে
কত দূরে ফেলে আসা
শৈশবেরি ছায়া তলে।।
হিমেল সজীবতা
সি রা জু ল ই স লা ম
অবারিত মাঠ জুড়ে
ভরেছে থরেবিথরে
হলুদে শর্ষ্যে ভূঁই
মন চায় ছুঁই ছুঁই
প্রজাপতি গুঞ্জনে
ভেসে আসে মনেপ্রাণে
অব্যক্ত পঙক্তিমালা
সুখদুঃখ বিরহ জ্বালা
সোঁদা গন্ধে মাতোয়ারা
হিমেল বাতাস পাগলপারা
মন জুড়ে কাব্য গাঁথা
কবিতায় ভরে কতকথা
এমন সবুজের দেশে
মরি যেন ভালোবেসে
হিমেল সজীবতায়
জাগুক প্রাণ কবিতায়
শত জনমে বারেবার
জন্ম নেবো হয়তো আবার
সুজলা সুফলা দেশে
মরতে পারি ভালোবেসে
বাঁশি বাজায় নাকে
সু ব্র ত চৌ ধু রী
তেটে কেটে তাকে
খোকা বাজায় তবলা সুখে
দাদুর মাথার টাকে।
ধিতাং ধিতাং তালে
নুপুর পায়ে নাচে খুকু
দিদার শাড়ি লালে।
মেঘ গুড়া গুড় গুড়ে
গুন গুনা গুন গায় যে দিদি
আপন মনের সুরে।
তাক ডুমা ডুম তাকে
ঘুমের ঘোরে ছোট মামা
বাঁশি বাজায় নাকে।
টিয়ের প্রথম স্কুল
কো ম ল দা স
বিদ্যালয়ে গেল টিয়ে
ছোটো ভাইকে সঙ্গে নিয়ে
ক্লাস যখন হলো শুরু
ছোটোর বুকটা দুরু দুরু
কাঁপছিল তার পা,
কাঁপা দেখে বড়ো বলে
যা তুই বাড়ি যা।
স্যার বললেন ছোটো সোনা
শোনো আমার আলোচনা
ভয় পেয়ো না বাবা
এসো এসো কোলে এসো
বলো কী কী খাবা?
ছোটো বলে স্যার
নেই কিছু দরকার।
ফোন করুন স্যার আমার মাকে
আমি শুধু বলব তাঁকে
ভয় নেই আর মনে
স্কুলে খুব লাগছে ভালো
জানাবো টেলিফোনে।
বলবো আরও যেটা,
প্রথম দিনেই বুঝে গেছি
জ্ঞানের মশাল এটা।
ফুলের হাসি
ব দ রু ল বো র হা ন
ফুলের শোভা, ফুলের হাসি
রঙের বাহার রাশি রাশি।
ফুলকে সবাই ভালোবাসি
মামি, চাচি, পিসি, মাসী।
ফুল বাগানে ফুলের পরী
হাতে হাতে ধরাধরি।
নেচে-গেয়ে সরাসরি
মাতওয়ারা, গড়াগড়ি।
ফুলের হাসি, পাখির গানে
কী অনাবিল মাত্রা আনে।
ফুলের হাসি যায় কি গোনা?
মৌমাছিদের আনাগোনা।
ফুল্ল মন
মৃ ণা লে ন্দু দা শ
আশ্বিনেতে বাজনা ঢাকের
ফুল্ল মন কাদের কাদের!
ছোট্ট যারা বাবুই বাবুই
সোহাগ ভরে তাদের ছুঁই!
ইকির মিকির গল্প বলা
জিরাফ দাদার লম্বা গলা!
স্বপ্নে সাগর উঠোন জুড়ে
ভাসছে মন বাঁশির সুরে!
এবার যেই ফিরছি ঘরে
মৌমাছিরা গুনগুন করে!
সই পাতানো চিঠি পাঠায়
ময়না-দি রঙীন পাতায়!
বাসা তোমার খাসা
মা ন স চ ক্র ব র্তী
ছোট্ট বাবুই সকাল-বিকাল-
ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ ওড়ো
কেমন করে ঠোঁটের জোরে-
দারুণ বাসা গড়ো?
পক্ষীকূলে এমন বাসা-
আর যে কারো নাই
তোমায় দেখে অনেক পাখি-
হিংসে করে তাই।
ছোট্ট বাবুই বলছি শোনো-
বাসা তোমার খাসা
ঐ বাসাতে থাকার লোভেই-
তোমার কাছে আসা।
সাইট্রোলেনা
চ ন্দ ন কৃ ষ্ণ পা ল
দেখতে লাগে লেবুর মতো
কিন্তু লেবু নয়
ছয় পায়ে সে দিব্যি হাটে
লেবুর গন্ধ হয়।
আষ্ট হাজার প্রজাতি তার
একটি হলো সে
কোন দেশে যে বসতি তার
কে জেনেছে কে?
সাইট্রোনেলা প্ল্যান্ট জানি সে
লেবুর গন্ধ গায়
আগ্রহীরা পাবে তারে
উৎসাহীরা পায়।
রসের লড়াই
শ্যা ম ল খাঁ
সারা গায়ে প্যাঁচ নিয়ে, জিলিপি যে বসে,
একটি কামড় দিলেই, ঠোঁট ভিজে রসে।
রসগোল্লা রসে ভাসে, সাদা হাসি চোখে,
দুই আঙুলে চাপটা দিলে, স্রোত চতুর্দিকে।
মৌচাক রঙ মেখে, মধু ভরা বুকে,
আড়চোখে উঁকি মারে, লোভ ওঠে উস্কে।
কালোজাম হোক কালো, কি বা যায় আসে,
কড়া পাক ছানা নিয়ে, রসে টস টসে।
সন্দেশ হেলে দুলে, বহুতল গড়ে,
আমাকে নাও না ভাই, বলে করজোড়ে।
চক চকে গজা আসে, সেও রসে ভরা,
আমিও রসিক জন, চোখেতে ইশারা।
মনোহারী মনোহরা, গুড় মেখে গায়
চৌকিতে বসে বসে, হাসিমুখে চায়
এদিকে তাকাই যদি, অন্যে ধরে হাত,
অন্য পানে ঘোরালে ঘাড়, এর কষাঘাত ।
রসের লড়াই দেখে, মাথা ঘুরে যায়,
কাকে ছেড়ে কাকে ধরি, পড়ি দো টানায়!
আয় না চলে
গী ত শ্রী সি ন হা
শূন্যতা খুব একলা করে, একলা করে দূর পাহাড়ি
আদর করে ঝুল-বারান্দা জড়িয়ে থাকে লাজুক বাড়ি।
দিনের শেষে হঠাৎ কখন মগ্ন আমি
স্মৃতি যেন এলোমেলো দিগন্তব্যাপী!
চা বাগানের ওপর দিয়ে দুপুর হাঁটে রোদ মাড়িয়ে
কাঞ্চারা সব যাচ্ছে দেখো বাড়ির দিকে গা দুলিয়ে!
পাহাড় কোলে বৃষ্টি এলে, কি ক্ষতি তা কে বা জানে!
ঝর্ণা বেয়ে জল নেমেছে, কাঞ্চিরা সব ভিজছে হেসে খিলখিলিয়ে।
একলা পাহাড় ইশারাতে ডাকছে শুধুই "আয় না চলে!"
চোখ বুজিয়ে নিদেন ঘুমে রাত-দুপুরে স্বপ্নদোষে
দূর পাহাড়ি, তুই কি আমার আপনভোলা সোনার খনি!
আয় না এবার চা বাগানের সবুজ নিয়ে আদর মাখি।
তোকে ছাড়া কষ্ট কে পায় এই পৃথিবীর অন্যখানে!
গভীর রাতে পথের মাঝে কে কাঁদে রে তোর জন্যে?
মন খুলে সে বলছে বুঝি, মন অনাথা বলবে কি সে!
একলা জেগে শয্যাবিহীন লাল গালিচায় উপুড় হয়ে
আয় না চলে ভুবনপুরে, রাখবো তোকে মলিন বুকে
চল না রে আজ বেড়িয়ে আসি আড়াল করে গভীর জলে,
জল বলেছে যেতে আমায় , সাথে নিয়ে জলের বাড়ি,
সাক্ষী হবে জল পরী সব, করবে নাকো সমাজ আড়ি!
বল না... যাবি???
ইকিড় মিকিড়
ম ঞ্জি রা ঘো ষ
তোদের জন্য লিখবো না কি
দু এক খানি ছড়া---
লিখতে গেলে পড়তে হবে
অনেক অনেক পড়া?
মুক্ত আকাশ, ফুটন্ত ফুল
ঘাসের ডগায় শিশির,
তোদের না কি বন্ধু হবে
জানিস, ইকিড় মিকিড়?
শুনতে কি পাস গাছের ডালে
পাখির কিচিরমিচির?
ল্যাজ দুলিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে
ডাকছে,"ইকিড় মিকিড়।"
রোদের কণা বিছিয়ে পথে
বাদল গেছে চলে---
"ইকিড় মিকিড়, আসছি দাঁড়া"
আলো হঠাৎ বলে।
নদী চলে তরতরিয়ে
বাতাস আরও দ্রুত,
ফন্দি আঁটে, হারিয়ে দেবে
ইচ্ছে ওদের কত!
গাছের পাতা ঝরঝরিয়ে
পড়ে মাটির 'পরে
মাটি তখন আনন্দেতে
তোদের বুকে ধরে।
চামচিকিতে বাজনা বাজায় ইচ্ছে চামচিকির
চামের কাঁটা বুলিয়ে ডাকে
আয়না ইকিড় মিকিড়।
শিশির ভেজা ঘাসে ঘাসে
হিমেল হাওয়ার ভাসিস,
সময় সময় কুয়াশা কে
আচ্ছা করে বকিস।
ইকিড় মিকিড়, তোরাই তো সব
ছন্দে সুরে থাকিস,
আজগুবি সব স্বপ্ন গুলো
রঙিন ফিতেয় বাঁধিস।
রঙিন রঙিন প্রজাপতি
স্বপ্ন ছুঁয়ে যায়---
তোদের স্বপ্ন পূরণ করার
ওদের যেন দায়।
ভোরের আলো, রাতের তারা
গাছের সারি সারি
হবেই হবে সর্বহারা
করিস যদি আড়ি।।
আয় বসন্ত
কা জী নু দ র ত হো সে ন
আয় বসন্ত আয়
আয়রে হিয়ায়,
বিবর্ণতার বিসুখ মাখা
প্রাণের আঙিনায়
জরায় মরা ঝরাপাতায়
রোদের হাসি নাই।
আকুল দখিনবায়
অধীর প্রতীক্ষায়,
লাগিয়ে আগুন কৃষ্ণচূড়ায়
ফাগুন অহমিকায়
সাজিয়ে দিবি মনের উঠোন
রঙিন আল্পনায়,
ভরবে ভুবন নতুন গানে
প্রাণের বন্দনায়।
শিউলি ফুল
প লা শ বি শ্বা স
রাতের শেষে
ভোরবেলাতে
খুকুমনির
ভাঙলো ঘুম ।
সাজি হাতে
ছুটলো খুকু
নূপুর বাজে
ঝুম-ঝুম।
শিশির ভেজা
ঘাসের উপর
নরম দু'পা
তুল-তুল।
ভিজে ঘাসে
ছড়িয়ে আছে
মুঠো-মুঠো
শিউলি ফুল।
শিউলি ফুলে
গাঁথবে মালা
আর করবে
কানের দুল।
এই অঘ্রাণে
দু র্গা ম ন্ড ল
অঘ্রাণ এলে মনে পড়ে যায়
ছেঁড়া শবনমে স্বর
অঘ্রাণ এলে লাল ঠোঁট যেন
বেদনায় থরথর।
অঘ্রাণ ডাকে, আয় ছুটে আয়
মাঠে মাঠে খুঁটি ধান
কান পেতে শুনি আমরা দুজনে
শালিকের কলতান।
অঘ্রাণ মানে হাতে হাত রেখে
নীরবের কথকতা
অঘ্রাণ মানে ছুঁয়ে থাকা তোর
মুগ্ধ চোখের পাতা।।
উষ্ণতার খোঁজে
শ র্মি ষ্ঠা মি ত্র পা ল চৌ ধু রী
সাত সকালে শীতের চিঠি,
কুয়াশা মোড়া খামে;
ধূসর আকাশ গরম কাপে,
শীত ঘুমটা ভাঙ্গে।
মাঠ জুড়ে সব নতুন ধানের,
বিপুল আয়োজন;
চাষী ভাইরা ব্যস্ত সবাই,
পিঠে পুলির ক্ষণ।
শীতলপাটি, চুল শুকানো
মিঠে রোদের ছোঁয়া;
খেঁজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধা,
হাতে কমলালেবু মোয়া।
কড়াইশুঁটির কচুড়িতে
মনটা খুশি সবার;
গাজরের হালুয়া পেলে
আনন্দ দেদার।
হঠাৎ তোমার খোলা চুলে
অস্তরাগের রং,
পরিযায়ী পাখির মতো
উষ্ণতা খোঁজে মন।
শীতের শহর ব্যস্ত সবাই,
উৎসবে দেয় মন;
নানান রকম অনুষ্ঠানে
হিমেল দিনযাপন।।
সারকথা
নূ পু র রা য় রি ন ঝি ন
শ্বাপদেরা চুপচাপ ঘোরে ইতিউতি
ফিসফাস আওয়াজ ধরে যদি টুটি?
বেখেয়াল পায়ে যদি ঘোরাফেরা করে?
প্রাণটাও যেতে পারে অকালে বেঘোরে!
তাই বলি চলাফেরা করো সাবধানে
না হয় লটকে যাবে কোন আবডালে।
কি যে ভাই দিনকাল উৎসব মেলাতে
যাই পাই তাই লাভ উৎকোচ তোলাতে!
কাগজের পাহাড়ের হিসেব কী হলো?
বাক্সবন্দি করে সব কোথা নিয়ে গেলো!
আদার ব্যাপারী, খোঁজ কেনো জাহাজের?
পাহাড়টা ঢেকে রাখে অন্ধকার আঁধারের।
তুলারাশি রাজকন্যা
লি পি কা ডি 'ক স্টা ম ণ্ড ল
(দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের 'ঠানদিদির থলে' অবলম্বনে... ছড়া)
হাতীশালে হাতী /ঘোড়াশালে ঘোড়া /রাজা রাজারই মতো
দাসী বাঁদি সুখী /রাজা প্রজামুখী/রাজপুত্ররাও বাধ্য কতো,
এ'ভেবে নৃপতি /করেন মিনতি, /"সামলাও রাজ্য পালা করে"
সাঙ্গ হলে সফর/ ফিরতি পথ' পর /আটকালো মহা অজগরে।
পড়লেন ফাঁপরে /প্রণমিয়া নাগেরে/ কহেন, "কি অভিলাষ?"
'তুলারাশি কন্যে /পেলে হবে ধন্যে' /নাগ দেন পূর্বাভাষ!
বিষন্ন পিতারে /বচন দিল কুমারে, /"বছর পোহাতে দেব না,
সাত রাজপুত্তুর /সপ্ত সমুদ্দুর /ঢুঁড়ে আনবোই কন্যা।"
ভবঘুরের পরামর্শে /ছোটপুত্র চড়ে অশ্বে /যায় তেপান্তরের মাঠ
ছয় দিন ছয় রাতে /কালীমার চরণ পাতে /ঠেকান আপন ললাট।
"অবহেলা আঘাতে /যেও না প্রত্যাঘাতে," /কহিলেন মা শক্তি
বাঁচায় পিঁপড়ারে, /কিম্ভূত কিমাকারেও /কুমারের অচলা ভক্তি।
মিললো প্রতিশ্রুতি, /"আসিলে দুর্গতি, /তাকাও আঁধার মাণিক 'পরে",
হৃত পুত্রেরে পেয়ে /রাজা থাকেন চেয়ে /দিলেন এক হংস জোড়ে।
ভূষন্ডীর মাঠ /বাদাবন ঘাট /পেরিয়ে যাক পাহাড়ের গায়
সোনার গাছে /সোনার হীরামন /তুলারাশির গান গায়।
বিপদ সঙ্কুল পথে /অশ্বের রথে /পৌঁছে তুলারাশির দেশে
দ্বারীর চোখ এড়িয়ে /কুমার গেল পেরিয়ে /মালিনীর ভাগ্নের ছদ্মবেশে।
ভুঁই ঠোকরায় /সুরঙ্গ বানায় /রাজপুত্র তুলারাশির ঘরে
এক তোলা কুমারী /বেড়ে দুই তোলা নারী /পড়ে রাজার নজরে।
রাজপুত্র হলো বন্দী /মিটিয়ে সব অভিসন্ধি /রাজসমীপে এসে
বলেন নতশিরে, /"তুলারাজকুমারীরে/ বিয়ে করে নিয়ে যাব দেশে।"
রাজা কহেন উজিয়ে, /"তিনটি পরীক্ষা উৎরিয়ে /পাবে মোর কন্যা"
সে হালকা অতি /ওজন মাত্র রতি /বিশ্বে নহে সে নগণ্যা"!
'চালে ডালে মিশ্রিত /করবে পৃথকীকৃত' /প্রথম পরীক্ষা ছিল,
আঁধার মাণিক জ্বলে, /পিঁপড়েরা আসে চলে /চাল ডাল বেছে দিল।
দ্বিতীয় পরীক্ষা সাঁতার /উত্তপ্ত তেলের আধার /উৎরালো থুত্থুরে কিমাকার
তৃতীয় পরীক্ষা কঠিন /একমাসের পথ একদিন /হংস মিথুন করালো পার।
বারো পাহাড় শেষে /তেরো নদীর দেশে /বুড়ি ডাইনীর মন্দির
চাবি আনে ঠোঁটে করে /খতম করে ডাইনীরে /চুরি করিলো সিন্দুর।
শুকতারা সাক্ষী করে /'বিয়ে' মালিনী মাসির ঘরে /কী মনোহর দৃশ্য!
দুই জনক রাজ /আনন্দে উদ্বেল আজ /মহা অজগরও অদৃশ্য!!
অরণ্যদেব তারই স্হানে /ভবঘুরেও সসম্মানে /ব্রহ্মশাপ থেকে মুক্তি পেলো
তুলারাশি রাজকন্যা /সবে কয়, "ধন্যা ধন্যা" /রূপকথারা চুপ হলো।।
একটু হলেও থাকো
সু জ ন প ণ্ডা
একটু হলেও থাকো
না হয় এমনি করেই থাকো...
বুক পকেটে চিমটি হয়ে
না হয়
শেষ স্টেশনে ঘুম-টি হয়ে থাকো।
ঝড়ের মধ্যে জানলা খোলার মতো,
মন খারাপে বাউল ঝোলার মতো,
না হয়
সেই ছোট্ট বেলার গ্রামটি হয়ে থাকো...
একটু খানি
খুব অল্প হলেও থাকো।
সত্যি না হোক,
কল্প হয়েই থাকো।
শীত আসছে,
পাতা ঝরার গল্প হয়েই থাকো।
মাথা ধরার নিবার হয়ে থাকো।
একটু মাত্র,
ফুরিয়ে গিয়ে আবার হয়ে থাকো।
মাথার কাছে থাকো,
বুকের ওপর হাত বুলিয়ে থাকো ;
খাবার কিছু রোচে না মুখে আর
অসুখ হয়ে জড়িয়ে সারা বিশ্ব।
তুমি শুধু সুখের মতো থাকো।
একটু খানি,
না হয় অমনি করেই থাকো।
সাধ
চ ম্পা না গ
ইচ্ছেগুলি ডানা মেলে
উড়ত যদি আকাশে
ভাবনাগুলি লাগাম টানতো
পক্ষীরাজ ঘোড়াতে
সাধগুলি সব জাগছে মনে
একা বসে ঘরের কোণে
ফুলগুলি সব ফুটেছে বুঝি
রাতের শেষ বেলাতে
সূর্যি যেথায় দেয় না ধরা
চাঁদ যেখানে কয় না কথা
গানের সাথে ভাসাই ভেলা
এমনি করেই সকল বেলা
শীত এসেছে
গো বি ন্দ মো দ ক
শীত এসেছে শীতে এসেছে
গ্রাম বাংলার দেশে,
মরশুমি ফুল ডালিয়া গাঁদা
উঠলো ফুটে হেসে।
ভোরবেলাটা কুয়াশা ভরা
ভীষণ হিমেল হাওয়া,
শীতের রোদটা গায়ে মেখে
বনভোজনে যাওয়া।
সার্কাস-তাঁবু ময়দানেতে
ক্রিকেটের মরশুম,
গ্রামে গঞ্জে জেলায় জেলায়
বইমেলাটার ধূম।
বেড়াতে কেউ যাচ্ছে পাহাড়
কেউ সাগরে বনে,
উলের পোশাক সোয়েটারে
রঙিন জনে জনে।
তবে শীতে কষ্ট গরিবদের
লেপ কম্বল নাই,
কাঠকুটো তাই জোগাড় করে
আগুনটা পোহায়।
শীত কাঁপন
রী তা রা য়
শীত কাঁদুনে গ্যাস ছুঁড়েছে,
দুচোখে তাই লাগছে ঘোর...
কুয়াশার জাল ফাঁদ পেতেছে
ঠকঠকানি কাঁপছে ভোর।
কাকের বাসা নয় তো খাসা
নাই তো আলো নাই তো বাতি,
নাই তাদের লেপের আশা
থরথরিয়ে জাগছে রাতি।
কুকুর বিড়াল অন্ন খোঁজে
শীতের রাতে কোথায় যাবে?
ল্যাজ গুটিয়ে দু'চোখ বোজে
গরমজামা কে বা পরাবে?
পোষ্য যারা, তারা আছে সুখে
গা সেঁকে নেয় গরম দুধে
পথেরগুলো মাখছে ধুলো
পথ কুড়িয়ে মেটায় খিদে?
ঠান্ডা গুঁতোয় কাঁপছে পিলে
মুখে বেরোয় গরম ভাপ
পথে পথিক আগুন জ্বেলে
হাত বাড়িয়ে নিচ্ছে তাপ।
গরম চায়ে চুমুক দিয়ে
ধোঁয়ায় সাথে ধোঁয়া মেলায়
শীতকাতুরে কম্বল গায়ে
হাতমোজাতে হাত লুকায়।
গরিবদুঃখী ছেঁড়া কাঁথায়
শীত কাঁপনে যায় সিঁটিয়ে,
পর্যটকে বরফ কুড়ায়
পাহাড় দেশে বেড়াতে গিয়ে।
শীত বেলা
স ঙ্গী তা মু খা র্জী
কুজ্ঝটিকার ধূমল চাদর
খেজুর রসের গন্ধে আদর।
উঠোন জুড়ে গয়না বড়ি
দুপুর রোদে শুকনো করি।
দুই সখিতে ছাদের ঘরে
ভাব জমালো টক আচারে।
নদীর চরে সবে মাতি
জমজমাটি চড়ুইভাতি।
পিঠে -পুলি, মিষ্টি, পায়েস,
নলেন গুড়ে জিভের আয়েশ।
ঋতুর ফেরে ভুবন দোলে
শিশু রবি শীতের কোলে।
এয়ার-কম্প্রেসার
পী যূ ষ কা ন্তি স র কা র
তাপমাত্রার মান স্থির রেখে দিয়ে
আয়তন যদি দাও হঠাৎ কমিয়ে---
সাথে সাথে বায়ুচাপ যাবে ঠিকই বেড়ে
'বয়েলের সূত্র'--- বলে গলা ছেড়ে।
এয়ার-কম্প্রেসার সেই মতে তৈরি---
চাপ, আয়তন একে অপরের বৈরী।
রোটারি-রেসিপ্রোকেটিং-সেণ্ট্রিফিউগাল
তিনভাগে ভাগ করা বুঝে হালচাল।
এয়ার সিলিন্ডারের সংখ্যার তারতম্যে
পাবে সিমপ্লেক্স-ডুপ্লেক্স-ট্রিপ্লেক্স নামে।
বায়ুমণ্ডল থেকে বায়ু টেনে যন্ত্রে
সরু পথে সজোরে ছাড়ো সেই মন্ত্রে
চাপে চাপে বায়ু হবে সংনমিত
ব্যবহার তার হওয়া চাই যথোচিত।
রাস্তা, বাঁধ, উড়োজাহাজ--- নির্মাণে
শিল্পে সোনা, অ্যামোনিয়া উৎপাদনে।
কৃষিকাজে, খনিমাঝে, গাড়ি রঙ করতে।
কাচকে ফোলাতে আর ধুলোবালি ঝাড়তে।
সব কিছু কাজে লাগে এয়ার-কম্প্রেসার---
ঘরে-বাইরে তার সদা চলে ব্যবহার।
বিয়ের ভোজ-এখন তখন
আ র্য ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়
মনে পড়ে চাটাইয়ের আসন
সেই সে কলাপাতা,
পেতলের বালতিতে ছোলার ডাল
পেতলের চামচ ও হাতা।
পাতের একধারে নুন ও লেবু
বাদাম দেওয়া শাক ভাজা,
বিশাল একটা ভাজা বেগুন
বড়ই টাটকা ও তাজা।
ফুলকো ফুলকো লুচির সাথে
সেই সে কুমড়োর ছক্কা,
সপসপাসপ করতো সাবাড়
আন্টু নান্টু আর বক্কা।
রুই মাছের কালিয়া খাসির মাংস
হুস হাস হাস আওয়াজ ,
তখনকার ভোজবাড়ির এটাই ছিল
খুবই প্রচলিত রেওয়াজ।
প্ল্যাস্টিকের চাটনি সাথে পাঁপড়
চার রকম সন্দেশ রাবড়ি,
দইয়ের মাথাটা দারুণ দারুণ
নিমেষেই দিতাম সাবড়ি।
ক্যাওড়া দেওয়া জল আর মিষ্টি পান
সেও ভোলবার নয়,
প্রতিযোগিতা করে লেডিকেনি খাওয়া
এখনও কী হয়?
এবার আসি এখনকার কথায়
পাইনা সেসবের রেশ,
গেলাম খেলাম চলে এলাম
নেই আন্তরিকতার লেশ।
বুফে খাওয়ার মধ্যে পাইনা
ভালোবাসার ছোঁয়া,
যুগের সাথেই সব কিছুই যে
গিয়েছে আজ খোয়া।
আছে বিরিয়ানি মাটন কষা
আছে চিকেন তন্দুরি ,
বাটার ফ্রাই রুমালি রুটি
ফ্রন্ট স্যালাডও রকমারী।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেতে গিয়ে
হাতটা যদি নড়ে,
হাবুর প্লেটের মাটন গ্রেভি
নাড়ুর শার্টে পড়ে।
চাকচিক্য অনেক তবুও
কীসের যেন অভাব,
দেখেও দেখিনা চিনেও চেনেনা
এমনই সব ভাব।
ডাহুক ছানা- ডাহুক ছানা
ড রো থী দা শ বি শ্বা স
ডাহুকছানা, ডাহুকছানা, মা কোথায় তোর বল্?
জানি তোকে ত্যাগ করেছে, ভেবেছে দুর্বল।
তিনটি ছানার সঙ্গে মা তোর আছে সদলবলে,
দেখেছি আমি, পালিয়ে গেল ঝোপের অন্তরালে।
হা করেছিস, বুঝতে পারছি খাবি তুই জল,
তোর প্রাণ বাঁচালে মোর--- বাড়বে পুণ্যফল।
আঙুল ভিজিয়ে মুখে তোর ফেলবো জলের ফোঁটা,
বড়ো হলে নিজেই তুই কেঁচো খাবি গোটা।
ওদলাবাড়ি
সা য় ন্ত ন ধ র
আমার মায়ের ছেলেবেলা
কেটেছে এইখানে
লিস্ ঘিস্ চেলে ঘেরা
সবুজ বাগানে
বৃটিশদের পোলোক্লাব
এখন হানাবাড়ি
ছোট্ট এক পাহাড়ি স্টেশন
এটা ওদলাবাড়ি
স্কুলের মাঠে আজও দাঁড়িয়ে
শিমুল গাছটি একা
গরু চরে বেড়ায় সেথা
বাদুড়ের নেই দেখা
মাধবীলতায় ঘিরে থাকা
কাঠের তৈরী ফটক
জাহাজী প্যাটার্ণ কাঠের দ্বিতল
অন্যরকম চটক
আইভিলতার বাড়াবাড়ি
লিলিফুলের মেলা
গাছগাছালির শুকনো পাতায়
ছুটোছুটি খেলা
বৃহদাকার কাজুবাদাম
গাছটি দাঁড়িয়ে একা
সকাল হলেই তারই সাথে
করতে হতো দেখা
মাঝে মাঝে বনবিভাগের
চার পাঁচটি হাতি
বিশাল বড়ো কাঠের গুঁড়ি
দাঁতে নিত পাতি
বনবিভাগের হয়ে তারা
কাজ করত দিনভর
মাঝে মাঝে শ্রান্ত হয়ে
বসত মাটির পর
এসব গল্প ছোট্টবেলায়
মায়ের মুখে শোনা
কতবার শুনেছি সেসব
হাতেতে নেই গোনা
একমাস ধরে মন্ডপেতে
দুর্গামূর্তি গড়ে
ছেলেবুড়ো মাতে পূজোয়
মহা আড়ম্বরে
মন্ডপের নাটমন্দিরে
যাত্রা পালা হত
কপালকুন্ডলা নবকুমার
তখনই পরিচিত
ওদলাবাড়ি থেকে তুমি
নিয়ে একটা অটো
কাঠামবাড়ির মধ্য দিয়ে
গাজোলডোবায় ছোট
বিধাননগরের পথ চিরে
দক্ষিণে ক্রান্তি
সারাদিন ঘুরেও তোমার
আসবে না ক্লান্তি
আরো অনেক গল্প আছে
হবে সে সব পরে
বলবো আমি শুনবে তুমি
থাকো ধৈর্য্য ধরে ....
কেন যে এমন...
আ ল্পি বি শ্বা স
কেন যে এমন হয় বলো
পর নয় কেহ, সব ভাই---
খালি হাতে চাই না তো কিছু
শ্রম দিয়ে দাম পেতে চাই।
ছোট হয়ে নই আমি ছোট
দায় ও দায়িত্ব জন্মগত
আপন বা পর নির্বিশেষে
বিলিয়ে দিয়েছি যত্ন যত
ওরে মন, বইতে তো পারি
হাসি আর গান ভরা ডালি
আঁধারের পথ দিই পাড়ি
আপন মনের আলো জ্বালি
অতীত শৈশব
প্র কৃ তি দ ত্তা
শো কেসের শার্সী 'পারে থাকতো নাকি দুই বেড়াল
একটা হাসে মুচকি হাসি অন্যটা তো লাজুক চায়
দুই জনেতে দোস্তি দারুণ চুপটি করে রয় বসে
মুখোমুখি বসে তারা ছোট্ট দুটো লেজ নাড়ায়।
শৈশব এখন অনেক দূরে, রূপকথা আজ বৃষ্টিচ্ছায়
জমছে ধুলো, ঝাপসা কাঁচে স্মৃতিরা সব মুক্তি চায়।
তখন একটু আদর করে ধুলো ঝেড়ে রাখতে গিয়ে
মিষ্টি হাসির দেখা মেলে বেড়াল দু'টোর দৃষ্টি চেয়ে।
তখন শুধুই বৃষ্টি নামে মনের গহীন অন্তরে,
'ডাকছে ঝিঁ ঝিঁ ঘুমতী নদী ঘুমায় বনের প্রান্তরে।'
শীতের বাজার
মি ষ্টি বৃ ষ্টি
হিম গাছেতে শিম ধরেছে
হিম্ সিম্ খায় ছেলে
সিম্ কার্ডে মেসেজ পাঠায়
বছর কেটে গেলে
শীতবুড়ো, দূর পাহাড় ফেলে
কেন এবার এলে!
খেজুরে-গুড় এনেছো কি?
কড়াইশুঁটি, কপি?
বাজার আগুন, তবু তোমায়
কেমন করে বকি?
নলেন গুড়ের সন্দেশ খাও!
জয়নগরের মোয়া!
শীতের বাজার, আসল বাজার!
-না-যাক্ ধরা-ছোঁয়া।।
হিমেল-ছাদে
মি ষ্টি বৃ ষ্টি
বুকের দিকের নীল পকেটে
নীল ফটকে সূয্যি ওঠে
সূয্যি-মামা, সূয্যি-মামা!
হলুদ মামা, হলুদ জামা!
টি-শার্টে স্মার্ট, দেখন-হাসি
কমলা-রংয়ের, বাঘের মাসি,
শীত-পোয়াতে কাশীবাসী--
হিমেল ছাদে রোদ্দুর দ্যায়,
ওই মামা-কেই ভালোবাসি!
সূয্যি-মামা, আকাশবাড়ি
যাচ্ছে মামা, আকাশ পাড়ি!
কমলালেবু, নীল পকেটে
সাজিয়ে রাখি, সূয্যি ওঠে
কুয়াশা-মেঘ, ছড়িয়ে আছে,
দেখতে না-পাই, ভাবি, পাছে--
অম্ নি দেখি অম্ নিবাসে
পড়ছে খোকা, দেদার হাসে,
দশ নম্বর জার্সি-জামা
হিমেল ছাদে, দিচ্ছে হামা।
ছাদের ওপর দিচ্ছে হামা,
কে ওটা রে ? -- সূয্যি-মামা!
সন্ধ্যা
ছ ন্দা চ ট্টো পা ধ্যা য়
আমার ঘর তো আমার নয়,
সে ঘর তো পরের নামে!
তোর মনের ঘরে বসত আমার,
তুলসি তলায় সন্ধ্যা নামে।
অভিজ্ঞতার বলিরেখা শুধু
তোরই কপাল জুড়ে!
ভাবলি কেমনে হাবলা ছেলে?
তোর তরে আজও মনটা পোড়ে।
মনে পড়ে, জ্যোছনা সাঁঝে
চিলুরবিলুর গাছের তলায়
হাত ধরলি... রুদ্ধ গলায়
"ভালবাসি" হয়নি বলা।
মনে আছে? সেদিন ছিলো
মায়াবী এক মুগ্ধ রাত,
ঘরে ফিরে সেদিন আমি
পারিনি ধুতে আমার হাত।
আমার মাটির উঠোন জুড়ে
আজও খেলে চাঁদের আলো,
সত্যি এখনো তোতেই বাঁচি,
দ্যাখ্ না ফিরে, বাস্ না ভালো!
শব্দবাজী
ছ ন্দা চ ট্টো পা ধ্যা য়
ঢংঢং করে ছুটির ঘন্টা, সাইকেলের বেল ক্রিং ক্রিং,
ভোঁপ ভোঁপ বাজে মোটরের হর্ণ, মাথা করে মোর ঝিমঝিম।
গ্যাঙোর গ্যাঙোর বর্ষাকালে ডাকে ডোবায় ব্যাং,
ঘ্যানোর ঘ্যানোর দুষ্টু ছেলে নাচিয়ে চলে ঠ্যাং।
প্যাঁক প্যাঁক করে সদুপিসির হাঁস নেমেছে জলায়,
ভোঁস ভোঁস করে নাক ডাকাচ্ছে হারু দুপুর বেলায়।
রাগের চোটে বৌদিমনি বাসন ছোঁড়ে ঝনঝন্,
ঘাবড়ে গিয়ে দাদাভায়ের মাথা ঘোরে বনবন্।
বইছে দেখো শীতল বাতাস, গাছের পাতায় শনশন,
শব্দবাজির যন্ত্রণায় আমার বুকের ভেতর কনকন্।।
ভোজবাড়ির রকমারি
স ন্দী প কু মা র মি ত্র
কবে যে ফুরাবে এই
নিষেধের বন্ধন
লকডাউন শেষে
হবে মুরগী রন্ধন ।।
ভাইরাস নিয়েছে কেড়ে
খাবারের গন্ধ
কি খাই বুঝি না তাই
মনে লাগে ধন্দ।।
মুরগীর ঠ্যং খাব
কাঁটা চামচ ফেলে ভাই
সাথে সস টমেটোর
আয়োজনের জুড়ি নাই।।
খিদে গেল চানিয়ে
আমাকে জানিয়ে
আসছে মাছের ঝোল
কড়া থেকে নামিয়ে।।
কি দারুন রং তার
তেমনি সু গন্ধ
দৈ-কাতলা দেখো
রূপে কতো ছন্দ।।
জিভ করে সরসর
নাড়িভুঁড়ি ছেঁড়ে তাই
কখন পড়বে পাতে
মনে শুধু খাই খাই।।
কালিয়াও কম নয়
তেমন ভালো ঝোল
পেটে শুরু কীর্তন
বাজে কত্তাল খোল।।
ওরে পাতে দিয়ে যা
চিংড়ি মালাইকারি
রসনায় সপ সপ
খিদে চাপিতে নারি।।
হা পিত্যেশ বসে ভাবি
বাঁশকাটি চাল সাথে
ধবধবে সরু হবে
কখন পড়বে পাতে।।
হাতটা শুকিয়ে যায়
এতো জল খরচায়
খামোকা বসিয়ে রেখে
ক্যাটারার ঘোরে হায়।।
সাধের জুতো
স ন্দী প কু মা র মি ত্র
জানিস খুড়ো খেন্দি বুড়ো
ফিরলো যখন বাড়ি
গেল পরে কুর্তা প্যান্টে
এলো পরে শাড়ি!
জানতে চাইলে খ্যাঁকখ্যেঁকিয়
যেইনা এলো তেড়ে
রংভরা এক জলসা বেলুন
ওমনি দিলাম ঝেড়ে।
ফাটল বেলুন বুকের পরে
উঠলো মেখে রঙে
বাদুড়-রঙে সেজে বুড়ো
বদলে গেছে সঙে।
গাছে ছিল মুখ পোড়াটা
দেখে খ্যাখ্যা হাসে
কুঁচকো মুখে খেন্দি খোঁজে
কে ছিল আশপাশে।
হতাশ হয়ে যেইনা বুড়ো
ঝঁপাং পুকুর জলে
কোথায় ছিল জলঢোঁড়াটা
জড়ালো আঁচলে।
সেকি লাফ দিলো মাগো
ঘাটের পরে উঠে
সাপটা নিয়ে শাড়ি গেল
অঙ্গ থেকে ছুটে।
খেপে গিয়ে চ্যাঁচায় বুড়ো
হাসিস নেকো তোরা
পাঁকে কোথায় আটকে গেল
সাধের জুতোজোড়া।
রং বেরঙের ছড়া
অ নি ন্দি তা না থ
(১)
আদরের ফুলকি
দোলনায় দুলবি?
তোর কানে সুন্দর দুলটি!
রূপসী তুই দেখতে,
পারিস সবার সাথে মিশতে।
(২)
চাঁপা গাছে অনেক পাখি
জটলা করে আসে।
ডালে বসে আনন্দে,
কিচির মিচির ডাকে।
(৩)
চিংড়ি মাছের ঝোল,
তা'তে দিয়ে ওল
বেজায় গন্ডগোল
চুলকে গলা ঢোল!
খেলো সবাই ঘোল।
(৪)
পাত্র মন্দ নয় ,
তবে একটু খাটো।
গায়ের রঙ মিলেমিশে কালো ।
টিয়া পাখির মত নাকটা,
চটে গেলে লোকটা!
মাথায় মারে গাট্টা।
(৫)
শুনেগল্প ঠাকুরমার ঝুলি,
খোকা ছুটল পক্ষ্মী রাজে চেপে
তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে
ঘুমন্ত রাজকন্যার খোঁজে।
শিশুদের কথা
প ল্ল ব ভ ট্টা চা র্য অ ন ন্ত
(১)
মাগো তুমি যখন ছিলে
ছোট্ট আমার মতো
বই কি তোমায় বইতে হত এতো?
সারটা দিন পড়তে শুধু
খেলা ধুলা ফেলে
রাখতো তোমায় আটকে আমার মতো?
পড়তে যেদিন না চাইতে মা
পড়ত পিঠে বাড়ি?
শাস্তি পেতে? আমায় যেমন দাও?
সারাটা দিন ব্যস্ত রাখো
কেবল পড়া পড়ায়
মাগো আমার মুখের পানে একটুখানি চাও।
(২)
আমায় তো মা খুব পেটালি সেদিন
লিখেছিলাম কাক'এর রঙ সবুজ
জানিতো মা কালো কোকিল, কাক।
চোখে তখন টিয়ে, গাছের ডালে
আমায় বোকা বানিয়ে ছিল খুবই
বললে, কাকের গা'য় আমার রঙ রাখ।
(৩)
বলতো মা বাবা কেন
চুলের মুঠি ধরে তোমায় কাঁদায়?
নিত্য দিনই রাতের বেলা
নিয়ম করে ঘরেতে গোল বাঁধায়?
আমি তো মা জেগেই থাকি
তোমরা তখন দ্বন্দ্বে থাকো মেতে
মন খারাপের একলা ঘরে
ইচ্ছে করে পালিয়ে দুরে যেতে।
তোমরা বল মানুষ হতে
কাজের বেলায় কর কি তার কিছু?
দেখছি আর শিখছি আমি
হাঁটছি তোমাদেরই পিছু পিছু।
ছড়াগুচ্ছ
অ মি তা ভ দে
রসে বসে
হেসোটা ধারালো খুব
গাছে ওঠে তরতর
রশিটা শক্ত করে
কাটে গাছ পর পর।
নল দিয়ে টুপ টাপ
ভরে ওঠে হাঁড়িটা
ঘন রসে পাখি বসে
আনচান মনটা।
নির্বিকল্প মাতৃত্ব
মাথার উপর কাঠের বোঝা
বুকে সোনার মানিক
কষ্ট কিছুই পায় না যে মা
যতই কাঁটা বিঁধুক।
জীবন চলে গড়গড়িয়ে
সকাল সন্ধ্যে ধরে
মায়ের আঁচল সদাই ঢাকা
বাছার ভালো করে।।
দুটি মন
দুটি প্রাণ এক মন
বাঁধা বিনী সুতোতে
বর বৌ বৌ বর
চলে সাইকেলেতে।
হাসি মুখে একসাথে
দুটি তে বেরিয়ে পড়ে
সুরে সুরে গানে গানে
দু নয়নে সুখ ঝরে।।
পেটকাটি
ভোকাট্টা! ওই দ্যাখ
ঘুড়ি খান নামছে
পেটকাটি মনে হয়
পরানটা লুটছে।।
পরানের স্কুল নেই
নেই কোনো বাধা হায়!
ইচ্ছের ঘুড়িটা যে
যেথা পারে উড়ে যায়।।
ঠকঠক শীতে কাঁপে
তু হি ন কু মা র চ ন্দ
ঠকঠক শীতে কাঁপে
জলপাইগুড়ি,
চুপচাপ শুয়ে পড়ো
দিয়ে কাঁথা মুড়ি।
গড়গড়া টানে বসে
নিশীথের কাকা,
চারদিক শুনশান
চুপচাপ ফাঁকা।
কলমীর ঘন ঝোপে
ডাহুকের ছানা,
শীতে ঢাকে নাক মুখ
কচুরির পানা।
কনকনে শীতে স্নান
নারে বাবা না না,
ঘরে বসে কাঁথা গায়ে
ঝালমুড়ি খা না।
ঢকঢক ঢালছে
খেজুরের রস,
খকখক বাড়ে কাশি
শীতের পরশ।
ঠকঠক খকখক
ঢকঢক পানি,
অক্কা পেয়েছে কাল
রহিমের নানি।
টুনটুনি চুপচাপ
ঢাকে চোখ মুখ,
কেঁদে মরে ডাহুকেরা
ফেটে যায় বুক।
সারারাত শীতে কাঁপে
কুকুরের ছানা,
উনুনের আশেপাশে
ভয়ে যেতে মানা।
সর্ষের ফুলে মাছি
মধু নেয় চুষে,
হাঁড়িতে আগুন জ্বলে
ধিকধিকে তুষে।
কুয়াশায় মুখ ঢাকে
জলপাইগুড়ি
কনকনে শীত এসে
দেয় সুড়সুড়ি।
বাহ্ সব ছড়াই বেশ গুণসম্পন্ন।
উত্তরমুছুনখুব ভালো লাগলো এবারের ছড়আ সংখ্যাটি।--পল্লব ভট্টাচার্য
উত্তরমুছুন