রম্য রচনা



যাওয়ার আগে

প্র দী প কু মা র  দে

কথার মানে বুঝতে না পারলে যা হয় আর কি! আবার এক কথার অনেক মানেই হয়। আজ আমার ক্ষেত্রে সেটাই ঘটে গেল। 
তবে বলছি শুনুন,

বাইরের রাজ্য থেকে জামাই এসেছে। আজ ও ব্যক্তিগত কোন কাজ সেরে আমাদের বাড়ি আসার পথে প্রায় রাত সাড়ে দশটার সময় স্টেশনের পাশে বসা সবজিওলার থেকে কিছু বাজার এনেছে খুবই সস্তা দামে। সম্ভবতঃ যাওয়ার আগে ওরা সস্তায় বয়ে আনা সবজির সদ্ব্যবহার করে ফিরতি ট্রেন ধরে।

আমি ব্যাপারখানা তখন কিছু জানিনি বা শুনিওনি। হঠাৎ গিন্নি এসে জামাইয়ের সামনে আমায় তার হাত দুটো নাড়িয়ে জানাতে লাগল,
---দেখো, এইজন্যই তোমায় বলি যাও, যাও আর যাও। কিন্তু তুমিতো আর যাবেই না। দেখো কত সস্তায় বাজার পাওয়া যায়! যাওয়ার আগে গেলে ওরা সস্তায় বাজার দিয়েই দেয়!

মাথামোটা আমি। বুঝলাম উল্টো। আমি গেলেই ওরা যেন বাঁচে! আর যাওয়ার আগে ওদের সব গুছিয়ে মায় সস্তার বাজারটাও করে দিলেই ভাল। মানুষ যখন দুনিয়া ছেড়ে চির বিদায় নেয় তখন বুঝি সবজিওলাদেরও মায়া হয়!

মন খারাপ। মধ্যরাতে ছাদে উঠে গেলাম। দেখি যদি কাউকে পাই। বাবা মা বন্ধু বান্ধব অনেকেই তো গত হয়েছে, ওরা যদি কেউ আসে!

এল স্বয়ং যম। মনের দুঃখ বলেই ফেললাম,
-- -প্রভু যদি আমায় সঙ্গে নেন...

যমের মনটা খারাপ নয়। একটু চিন্তা করে খেঁকিয়ে উঠলো,
---আঃ মলো, আগে সব্জিবাজার কর কাল আমি তোকে সন্ধ্যা সাতটায় ঠিক নিয়ে নেব।

---জয় হোক প্রভু। অশেষ তোমার কৃপা!

পরের দিন কাগজপত্র সব গুছিয়ে রেখে বিকাল পাঁচটার মধ্যেই বাজারে চলে গেলাম কাউকে কিচ্ছু না বলে। আরে বাজারে কি ভিড় আর কি দাম! অফিস ফেরত সব্বাই কিনছে দাম দিয়ই! যা হোক আমাকে যাওয়ার আগে বাজার করতেই হবে আর এটাই হবে আমার সস্তার বাজার!

ব্যাগভর্তি বাজার নিয়ে বাড়ি এলাম সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। গিন্নিকে চেঁচামেচি করে ডাকলাম,
---এই নাও যাওয়ার আগে আমার সস্তার বাজার!

গিন্নির তো ঘড়ি দেখে চক্ষু চড়কগাছ! এমন জোরে খিস্তি দিল আমায় যে আমি তখনই বুকের ব্যাথায় কুপোকাত আর স্বয়ং প্রভু যমের আশীর্বাদে যমের বাড়ি চলে এলাম।

যম আমাকে ওর দূরবীনটা দিয়ে দেখাচ্ছে, নীচে আমাদের বাড়িতে তখন ওই সব্জির সাথে মৎস্য সহযোগে মৎসমুখী উৎসব চলছে।
হায় কপাল!





মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল সংখ্যা || ৪ ফাল্গুন ১৪৩০ || ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪