প্রবন্ধ
রবীন্দ্রনাথের সমাজ চেতনা
প্র ল য় ব সু
কবি, ছোট গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী, চিত্রশিল্পী, দার্শনিক সৃজনশীল লেখক ইত্যাদি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর রচনা যতো আলোচিত হয়েছে তাঁর সমাজচিন্তা ও সমাজ দ্বন্দ্ব ততটা আলোচিত হয় নি। যদিও এই দুই বিষয়ের আলোচনা পরস্পরের পরিপূরক এবং রবীন্দ্রনাথের লোকহিতসাধনের চিন্তা ছিল একেবারেই মৌলিক ও সৃজনশীল।
খানিকটা গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজার মত করে ওনারই দ্বারস্থ হতে হল এই প্রসঙ্গে আলোচনার সূচনায়।
“মানুষের উপর মানুষের অধিকার আছে। পরস্পরের জন্য পরস্পরকে অনেকটা সহিয়া থাকিতে হয়, অনেকটা আত্মসংযম করিতে হয়” - প্রবন্ধ “স্বদেশী সমাজ”, প্রবন্ধকার দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনায় সমাজের উন্নতির মধ্যেই দেশের কল্যাণ নিহিত আছে, সামাজিক স্বাধীনতার মধ্যেই প্রকৃতার্থে দেশের স্বাধীনতা প্রতীয়মান, সামাজিক সংহতিই পারে জাতির মেরুদণ্ড শক্ত করে তুলতে।
প্রশ্ন উঠতেই পারে অধুনাকালে রবীন্দ্রনাথের সমাজচেতনার আলোচনা কতটা প্রাসঙ্গিক! সেই সূত্রে বলতেই হয় ক্রমবর্ধমান নারীনির্যাতন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর নির্লজ্জ আক্রমন সত্ত্বেও সমাজ যখন নীরবতার আবর্তে ঘুমিয়ে পড়ছে, ঘুমিয়ে পড়ছে স্বঘোষিত সমাজবিবেকরা সেই পরিপ্রেক্ষীতেই আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর সমাজচেতনাকে নিবিড়ভাবে জানার বিষয়টি, কারণ এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে সমাধানসূত্র। স্বল্প পরিসরে এই আলোচনাকে সীমাবদ্ধ করাটা বড়ই কঠিন, তবু তারই আংশিক প্রয়াসে এই লেখার অবতারণা।
রবীন্দ্রনাথ অনুভব করেছিলেন সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মানুষকে আনন্দ দিতে পারে না বরং এই অসুখ মানুষের অন্তরের সুকুমার প্রবৃত্তিগুলি নষ্ট করে দেয়। ১৮৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্ম তখন অবিভক্ত বাংলায় শুরু হয়ে গেছে নবজাগরণের সমৃদ্ধ জোয়ার - রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়– এঁরা বাংলায় রেনেসাঁ আনতে সচেষ্ট। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ পিতা দেবেন্দ্রনাথ এবং সমকালীন সমাজ সংস্কারকদের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে সচেষ্ট হন; দৃষ্টিভঙ্গীকে বিশ্বজনীন, জাত-ধর্ম ইত্যাদির প্রভাবমুক্ত করতে প্রয়াসী হন।তাঁর দৃষ্টিভঙ্গীতে গুরুত্ব পেতে থাকে সমাজে ব্যক্তির অধিকার, সাম্য, স্বাধীনতা, সমাজে বা পরিবারে নারীদের বন্দীদশা। ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাসে আমরা যেমন পাই এক অন্তপুরবাসিনী নারীর আত্ম-আবিষ্কারের রসায়ন তেমনই পাই নিখিলেশের চরিত্র, ‘চোখের বালি’ উপন্যাসে তেমনই বিনোদিনী, আশা, রাজলক্ষ্মী, অন্নপূর্ণা ইত্যাদি চরিত্রের মধ্যে দিয়ে তাঁর নারীবাদী মননের উৎকৃষ্ট নবীকরণের আভাস পাই। গ্রাম-বাংলার সাধারণ নিপীড়িত নারীসমাজ আর তাদের দুর্দশা তাঁকে অস্থির করে তুলতে থাকে।পরবর্তীতে ‘নারীর মনুষ্যত্ব’ পত্র-প্রবন্ধে (১৯২৮) তিনি নারীর আত্মমর্যাদা, নারীর আত্মসম্মান ও মনুষ্যত্বের কথা বলেছেন, তাঁদের চিন্তার সামাজিক ও শিল্পিত অভিব্যক্তি দিতে সমর্থ হয়েছেন। গোরা উপন্যাসের আনন্দময়ী চরিত্রের মধ্য দিয়ে তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ ভাবনা, বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে মানবিক ঐক্যের গুরুত্ব।
১৮৮৯ সালে শিলাইদহে আসার পর তিনি অন্য ধর্মসংস্কৃতির নিপীড়িত, দারিদ্র্যক্লিষ্ট জনজীবনের নিকট সংস্পর্শে আসেন। তখন তাঁর তরুণ মনে প্রতিভাত হয় হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিভেদ, হিংসা ও বিদ্বেষ যা তাঁর হৃদয় ব্যথিত করে। শিলাইদহে তিনি পান বাউলদের সংস্পর্শ, গগন হরকরাসহ লালনভক্ত শিষ্যবর্গের সাক্ষাৎ। লালন ফকির ও তার শিষ্যদের কাছে রবীন্দ্রনাথ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় অনেকাংশে প্রেরণা লাভ করেন। জাত-পাতহীন সমাজ তৈরির সাধনায় বাংলার বাউল-ফকির সম্প্রদায়সহ রামানন্দ, কবির, গুরুনানক, রবিদাস ও গৌতম বুদ্ধের মানবপ্রেম সাধনালব্ধ বাণী তাঁর চেতনালোক উদ্বুদ্ধ করে তোলে। রবীন্দ্র রচনাবলীর দশম খণ্ডে 'সভাপতির অভিভাষণ' শিরোনামে তিনি হিন্দু-মুসলিম হিংসা-বিদ্বেষ সমস্যা সমাধানের পথনির্দেশে বাস্তবানুগ যুক্তিযুক্ত সমাধান চিত্র তুলে ধরেন।
১৯০৪ সালে ‘স্বদেশী সমাজ’ প্রবন্ধে পল্লীজীবনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সমাজ ও স্বদেশচিন্তা বিষয়ে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত এল রবীন্দ্র লিখনীতে যেখানে তিনি চাইছেন হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান, খৃষ্টান – বিভিন্ন ধর্মের মৈত্রী। রবীন্দ্রপ্রবর্তিত গ্রামীণ প্রকল্পের অন্যতম বিকাশ শ্রীনিকেতনে। কৃষিবিদ লিওনার্ড এলমহার্স্টের সক্রিয়তায় এবং অর্থানুকূল্যে ব্যাপকভাবে গরীব গ্রামবাসীদের সর্বাঙ্গীন উন্নয়নের জন্য শ্রীনিকেতনের কর্মধারা শুরু হয়। শ্রীনিকেতন পল্লী-সংগঠন বিভাগ পরিচালিত গ্রন্থাগার প্রথাগত শিক্ষা ও গবেষণামূলক কার্যোপযোগী গ্রন্থ ব্যবহার করতে দিত।
সাম্যবাদী ভাবনার প্রতিফলন রয়েছে রবীন্দ্রনাথের সমাজচিন্তায়। তিনি বিশ্বাস করতেন একক মূলধনের চেয়ে সমবায়িক পুঁজির মাধ্যমেই দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব। অমিয় চক্রবর্তীকে এক চিঠিতে (১৫ নভেম্বর, ১৯৩৪) রবীন্দ্রনাথ বলেন — ‘শিক্ষাসংস্কার এবং পল্লী সঞ্জীবনই আমার জীবনের প্রধান কাজ।’ রবীন্দ্রনাথ তাঁর মৃত্যুর বছর দুই আগে (ভাদ্র ১৩৪৬) শ্রীনিকেতনের কর্মীদের সভায় বলেছিলেন — ‘আমি কেবল জয় করব একটি বা দুটি ছোট গ্রাম। আমি যদি কেবল দুটি তিনটি গ্রামকেও মুক্তি দিতে পারি অজ্ঞতা অক্ষমতার বন্ধন থেকে, তবে সেখানেই সমগ্র ভারতের একটি ছোট আদর্শ তৈরি হবে।’
স্বদেশী আন্দোলনের ক্ষেত্রেও তাঁর সমাজসচেতন মননশীলতার প্রমাণ পাই। সত্যেন্দ্রনাথ রায়ের ভাষায় স্বদেশী আন্দোলন রবীন্দ্রনাথের কাছে স্বদেশীতে দীক্ষাগ্রহণের, জাতির আত্মআবিষ্কারের, জাতীয় ঐক্যের আন্দোলন।রবীন্দ্রনাথের সমাজভাবনার বৃহদায়তন জুড়ে রয়েছে ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের চরিত্র বিশ্লেষণ।
আন্দোলনমুখী রবীন্দ্রনাথ বলেছেন— “যে ভারতবর্ষ অতীতে অঙ্কুরিত হইয়া ভবিষ্যতের অভিমুখে উদ্ভিন্ন হইয়া চলিয়াছে, ইংরেজ সেই ভারতবর্ষের জন্য প্রেরিত হইয়া আসিয়াছে। সেই ভারতবর্ষ সমস্ত মানুষের ভারতবর্ষ।”
তাঁর ‘কালান্তর’ পর্বের ‘লোকহিত’ প্রবন্ধটি শুধু সামাজিক মূল্যবোধের নিরিখেই নয়, সকল অর্থেই একটি যুগান্তকারী রচনা। এখানে তিনি এমন কিছু মৌলিক বিষয়ের অবতারণা করেছেন যা বর্তমান সমাজ ভাবনাকেও সমতালে প্রভাবান্বিত করার ক্ষমতা রাখে। যারা প্রকাশ্যে হিত করার আত্মাভিমানে মত্ত তাদের জন্যে রবীন্দ্রনাথের বার্তাটি এইরূপ - ‘হিত করিবার একটিমাত্র ঈশ্বরদত্ত অধিকার আছে, সেটি প্রীতি। প্রীতির দানে কোনো অপমান নাই কিন্তু হিতৈষীতার দানে মানুষের অপমান হয়। মানুষকে সকলের চেয়ে নত করিবার উপায় তাহার হিত করা অথচ তাহাকে প্রীতি না-করা।’ (লোকহিত, পৃ. ৫৪৮)
কেবলমাত্র তাঁর সাহিত্যচিন্তার বিবিধ আধারে নয়, প্রত্যক্ষভাবে সমাজের কল্যাণে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। নিজে জমিদার হয়েও তার মানবিক উন্নয়নের ধারণা গড়ে উঠেছিল গ্রামকেন্দ্রিক ভারতের বিকাশভাবনার ভেতর দিয়ে। আজকের পঞ্চায়েতী ভাবনার সার্থক রূপ সেদিনের রবীন্দ্রভাবনায় প্রতিফলিত হয়েছিল। শুধু সমাজ নয়, পরিবেশ চেতনায় রবীন্দ্রনাথের ভাবনা আমাদের কাছে ক্রমঃপ্রাসঙ্গিক ও জরুরি হয়ে উঠছে।মানুষের সমাজ যেখানে প্রথম সভ্যতার প্রথম পাঠ শিখেছিল অরণ্যই সেই প্রমিথিউস। নগরায়নের ধারাবাহিক প্রসারতার বিরুদ্ধে তাই রবীন্দ্রনাথ ‘চৈতালী’ কাব্যগ্রন্থে “সভ্যতার প্রতি” কবিতায় বলে উঠেছেন –
“দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর—
লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর
হে নবসভ্যতা। হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী,
দাও সেই তপোবন পুণ্যচ্ছায়ারাশি,
গ্লানিহীন দিনগুলি…।”
বিশ্ব পরিভ্রমণকালে তিনি তাঁর সাহিত্যচেতনা নয়, ভারতীয় সংস্কৃতির বহুত্ববাদী ভাবনাকে তুলে ধরেছেন পৃথিবীর দরবারে। বৌদ্ধধর্মের অহিংসা, ইসলাম ধর্মের সুফিবাদ, বাউলদের ভাববাদী চেতনার অন্তর্নিহিত সত্যকে উদ্ঘাটিত করেছেন। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার রবীন্দ্রনাথ তাই বলে উঠেছেন–
“নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস,
শান্তির ললিত বানী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস-
বিদায় নেবার আগে তাই
ডাক দিয়ে যাই
দানবের সাথে আজ সংগ্রামের তরে
প্রস্তুত হতেছে ঘরে ঘরে…।"
প্রকৃতপক্ষে রবীন্দ্রনাথের সমাজভাবনা হল প্রকৃতির সাথে ব্যক্তির, ভাবনার সাথে কর্মের, জ্ঞানের সাথে মনুষ্যত্ববোধের এবং স্থানিকতার সাথে আন্তর্জাতিকতার মেলবন্ধন, একই সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠ এবং যুক্তিনির্ভর। তাই রবীন্দ্র নির্দেশিত পথ কৃষকের কল্যাণে, সমবায় নীতির সম্প্রসারনে, শিক্ষায়-চিন্তায়, নারীমুক্তি আন্দোলনে, প্রকৃতিচেতনায়– সর্বত্র আজও সমান ভাবেই প্রাসঙ্গিক। বাঙালীর সমাজ-সংস্কার থেকে শুরু করে প্রতিদিনের কর্মপ্রবাহের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের চিন্তা-চেতনা এক অবিচ্ছিন্ন সূত্রে গাঁথা। আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনে রবীন্দ্র অনুশীলনই বাঙালীকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস আর উদ্দীপনা যুগিয়ে নিজ অবস্থান বিশ্ব দরবারে সুনিশ্চিত করার একমাত্র উপায়।
তথ্যসূত্র ও ঋণস্বীকার–
১. প্রবন্ধ “স্বদেশী সমাজ”, প্রবন্ধকার দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২. রবীন্দ্র সমাজভাবনা– রবিন পাল
৩. অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা– বিমল ভৌমিক
(শব্দসংখ্যা ১০০০)
বসন্ত উৎসব হোলি
সু জা তা দা স
দোল হলো রঙের উৎসব। এই উৎসব বসন্ত উৎসব নামেও খ্যাত। দোল হিন্দুধর্মের জনপ্রিয় উল্লেখযোগ্য উৎসবের একটি যা বৃন্দাবনে প্রথম রাধা ও কৃষ্ণের মাধ্যমে প্রচলিত হয়েছিল। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী ফাল্গুনী পূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনধামে শ্রীকৃষ্ণ রাধিকা আর অন্য গোপীগণের সাথে আবীর গুলাল সহযোগে রঙ খেলায় মেতেছিলেন, সেই থেকেই শুরু হয় দোল উৎসব। সেই সময় থেকে আজকের দিনেও কৃষ্ণ ভক্তেরা রাধা কৃষ্ণের মূর্তি নানা রঙের গুলাল আবীরে স্নান করিয়ে দোলায় চড়িয়ে কীর্তন আর শোভাযাত্রার মাধ্যমে পরস্পর নিজেরাও আবীর গুলাল মাখেন এবং আনন্দে মেতে ওঠেন।
এই রঙে রঙে সকলের মেতে ওঠার উৎসব যেমন দোল পূর্ণিমা, তেমনই এই তিথি চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম তিথি হিসেবে গৌর পূর্ণিমা নামেও অভিহিত হয়।
এই দোল উৎসব সংক্রান্ত পৌরাণিক উপাখ্যান যা আজও লোকগাথা হিসেবে প্রচলিত সেগুলি মূলতঃ দুটি ভাগে বিভক্ত--- প্রথমটি- দোল পূর্ণিমার প্রথম দিন বহ্ন্যুৎসব হোলিকাদহন, দ্বিতীয়টি- রাধাকৃষ্ণের দোলযাত্রা বা ফাগুখেলা। এখানে হোলিকাদহন নিয়ে একটি পৌরাণিক কথা যা প্রায় সকলেই অবগত...
ভক্ত প্রহ্লাদ ছিলেন মহারাজ হিরণ্যকশিপু আর কুয়াধুর পুত্র এবং পালনকর্তা ভগবান শ্রী বিষ্ণুর পরম ভক্ত। পুরাকালে সত্যযুগে হিরণ্যকশিপু নামে এক বিষ্ণু বিদ্বেষী ভয়ঙ্কর দৈত্য ছিলো,
নিজেকে ভগবানের আসনে অধিষ্ঠিত করার মানসে মন্দার পর্বতে পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর করে উর্ধ বাহু ও আকাশে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে অনাহারে অত্যন্ত কঠোর তপস্যায় রত হন। সুদীর্ঘ ছত্রিশ বৎসর তপস্যার পর সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মদেব দর্শন দেন এবং অমরত্ব ছাড়া যে কোনো বর চাইতে বলেন, চতুর দৈত্য তখন এই বর চাইলেন--- আপনার সৃষ্ট কোনো প্রাণী আমাকে বধ করতে পারবে না, গৃহের বাইরে বা ভেতরে আমার মৃত্যু হবে না, দিন কিংবা রাতে, জল, ভুমি, আকাশে, পশু বা মানুষের হাতে, কোনো অস্ত্রে যেন না বধি আর জরা ব্যাধি যেন না স্পর্শ করে। 'তথাস্তু' বলে আশীর্বাদ প্রদান করে ব্রহ্মদেব ফিরে গেলে ব্রহ্মার বরে শক্তিমান হয়ে আরও অত্যাচারী হয়ে ওঠে হিরণ্যকশিপু এবং তার বিষ্ণুভক্ত পুত্র প্রহ্লাদকে তিনিই ভগবান এটা বোঝাতে চেষ্টা করতে থাকলেন প্রতিনিয়ত, কিন্তু প্রহ্লাদ তার মায়ের মতোই বিষ্ণুভক্ত ছিলেন পিতার কোনও কথাই তাকে বিচলিত করতে পারলো না, তাই চলতে থাকলো তার উপর নানা অমানুষিক অত্যাচার, কিন্তু প্রতিবারই ভগবান বিষ্ণু তার প্রিয় ভক্ত প্রহ্লাদকে বাঁচিয়ে আনতে লাগলেন।
হোলিকা ছিলো হিরণ্যকশিপুর বোন, সে অগ্নি দেবের তপস্যা করে নিজেকে আগুনে না পুড়ে ছাই হওয়ার আশীর্বাদ পেয়েছিলো--- তাই হিরন্যকশিপুর প্ররোচনায় প্রহ্লাদকে মারার মানসে তাকে কোলে নিয়ে অগ্নিতে প্রবেশ করলো অগ্নিদেবের (অসত্যের সাথ দিলে এই আশীর্বাদ কাজ করবে না) এই শেষ কথাটা ভুলে গিয়ে।
হোলিকা আগুনে প্রবেশ করলো এবং সেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেলো আর প্রহ্লাদ বেঁচে ফিরে এলেন বিষ্ণুভক্তির কারণে।
হোলিকা যেদিন মারা গেলো তার পরের দিন ছিলো ফাল্গুনী পূর্ণিমা তাই আজও দোল উৎসবের আগেরদিন হোলিকা দহন করা হয় অশুভ শক্তির বিনাশ আর শুভ শক্তির সূচনার জন্য।
দক্ষিণ ভারতে এটাই কাম দহনম নামে খ্যাত, এই দিন শিবের তৃতীয় নয়নের রুদ্র তেজে কামদেব ভষ্ম হয়েছিলেন, তামিলনাড়ুতে এই উপলক্ষে কামদেবের প্যান্টোমাইম প্রদর্শন করা হয় এবং তার মূর্তি পোড়ানো হয়। তারপরের দিন শুরু হয় রঙে রঙে রঙিন হয়ে ওঠার অনুষ্ঠান যা দোল বা হোলি নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এই হোলি নানা নামে পরিচিত,
যেমন- ভোজপুরিতে ফাগুয়া, হিন্দিতে হোলি, ওড়িশায় ফাকুয়া, অসমে বসন্ত উৎসব বা দোলযাত্রা, নামে অভিহিত। ব্রজ অঞ্চলে ঐতিহ্যগত ভাবে রাধাকৃষ্ণের সাথে যুক্ত অঞ্চল এই সময় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়ে ওঠে, ভারত ও নেপালের বাইরেও নানা দেশে এবং বিদেশেও এই হোলি উৎসব উপমহাদেশের প্রবাসী জনসংখ্যার দেশগুলিতে দেখতে পাওয়া যায়।
এই দোল উৎসব শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত, কবিগুরুর সময়ে এই বসন্ত উৎসব ঘরোয়াভাবে পালন করা হতো নাচগান আবৃত্তি ও নাট্যাভিনয় করা হতো তবে পরবর্তী সময়ে এই বসন্ত উৎসব অন্যতম উৎসব হিসেবে পরিগণিত হয় শান্তিনিকেতনে যা আমজনতার বসন্তউৎসব নামে পরিচিত। ফাল্গুনী পূর্ণিমার আগের রাতে বৈতালিক হয়, পর দিন সকালে "ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল" গান দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের সূচনা--- সন্ধ্যায় গৌরপ্রাঙ্গনে অভিনীত হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনও নাটক।
বসন্ত আসেই যেন আমাদের হৃদয়ে অকারণ দোলা দিতে, শীত শেষে এই সময় প্রকৃতিও যেন তার রূপের ভান্ডার খুলে দেন কবির ভাষাতে বলতে হয় "তোমার অশোকে কিংশুকে, অলক্ষ্য রঙ লাগলো আমার অকারণের সুখে" বাঙালির তেরো পার্বণের সূচনা বোধহয় এই বসন্ত উৎসব দিয়েই।।
বসন্তোৎসব
প্র তি ম সে ন
রঙ তো জীবনেরই একটা নাম, জীবনেরই একটা অংশ, রঙহীন জীবন যেন মৃত্যু উপত্যকায় অনন্ত অপেক্ষমান একাকীত্বের অসীম শূন্যতা। আমাদের বেড়ে ওঠা, আমাদের শিক্ষা সবকিছুই তো প্রকৃতিকে দেখে। রঙ প্রকৃতির অপত্য সৃজন। একটু তাকালেই আমরা দেখতে পারি প্রকৃতি আমাদের জন্য কতো রঙ ছড়িয়ে রেখেছে আমাদের চারিদিকে, যা আমরা সাদা-কালো চোখে সবসময় দেখে উঠতে পারিনা।
বসন্ত যেন সেই বার্তাটাই নিয়ে আসে তার দূরন্ত ছটফটানো উপস্থিতিতে। শুধু সবুজের সমারোহ নয়, যেন উদযাপন রঙের, দূরন্ত ছটফটে কিশোর-কিশোরীর মতো ফুটে ওঠে ফুল। রবীন্দ্রনাথ বসন্তোৎসব করেছিলেন প্রকৃতির রঙের উৎসবকে উদযাপন করার জন্যে। আমাদের প্রত্যেকের নিজেদের মধ্যে যে একখণ্ড আমি আছে তাকে বিলিয়ে দিতে বলেছিলেন তিনি প্রকৃতির বৃহৎ সত্ত্বার কাছে। বৃহতের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার অনাবিল আনন্দটুকু ভাগ করে নিতে বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাই দোল'ই হোক বা হলি সবটাই হলো রঙের উৎসব, এককথায় বসন্তোৎসব, আনন্দের উৎসব, প্রকৃতির সাথে একাত্ম হওয়ার উৎসব।
প্রকৃতি যেন উদাসীন মহাকালেশ্বরের মতো চেয়ে থাকে আমাদের দিকে। সে যা দুহাত ভরে দেয় তার কতোটা আমরা তেমনভাবে নিতে পারি? আবার তার কতোটুকুই বা তেমনভাবে ফিরিয়ে দিতে পারি? এই রঙ তো শুধু আবীর নয়, এই রঙ হলো প্রকৃতির প্রতীক। এই রঙ ছড়িয়ে আছে আমাদের শরীরে, মজ্জায়, সত্ত্বায়, আমাদের চারিপাশে। প্রতিটি রঙ তাই এক একটা সত্ত্বা এক একটা চরিত্র। কেউ একটু বেশি রাগী রঙ, কেউ একটু হালকা মনের। কেউ একটু বিষণ্ণ আবার কেউ সদ্য তরুণীর মতো অহঙ্কার।
কিন্তু প্রত্যেকটা রঙেরই এক একটা বৈশিষ্ট্য আছে, নিজস্বতা আছে, ব্যক্তিত্ব আছে, মৌলিকত্ব আছে। নীল রঙের ব্যক্তিত্ব আর আকাশী রঙের ব্যক্তিত্ব এক নয়। কচি কলাপাতা রঙ আর গাঢ় সবুজের মেজাজটাই আলাদা। হলুদের আমেজ আর লাল রঙের আহ্বান কি এক? এ যেন রঙেরই সংসার। রঙের ঘরবাড়ি। প্রতিটি রঙ যেনো একে অপরের পরিপূরক একে অপরের সাথে সংলাপে রত। সেই সংলাপ শুনতে হলে বুঝতে হলে আমাদের প্রকৃতিকে ভালোবাসতেই হবে। প্রকৃতির সঙ্গে মিশতেই হবে। প্রকৃতির থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলে আমরা বুঝবো না প্রকৃতির রঙের ভাষা।
প্রকৃতিতে যেমন সব রঙ মিলেমিশে আছে, তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই, বিভেদ নেই, ঠিক তেমনই মানুষের জীবনকে বেঁধে দিচ্ছে সব রঙ। আমরা সেই অচেনা বন্ধনের সুতোকে রাঙিয়ে নিতেই একে অপরের সঙ্গে রঙের খেলায় মেতে উঠি। প্রকৃতি যেন ডেকে ডেকে বলে এত বিভেদ কিসের, আবার তোরা মানুষ হ। তোরা নিজেদের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম কর, ক্ষুদ্রতাকে দূরে সরিয়ে রাখ্। স্বীকার করে নে সব রঙের অস্তিত্বকে। প্রকৃতি যেন সহবতের পাঠ দেয়।
সহাবস্থানের মূল মন্ত্র শেখায়, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য খোঁজে। তাই তো ছোটোরা বড়োদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে, বড়োরা ছোটোদের গায়ে রঙ মাখিয়ে দেয়, বন্ধুরা আলিঙ্গন করে রঙ মেখে।
বসন্তোৎসবের অনেক আগে বাংলায় ছিল রাসমেলা বা রাসযাত্রা, যার পথিকৃৎ ছিলেন যুগাবতার শ্রীচৈতন্যদেব। তিনিই প্রথম দেখিয়েছিলেন কি করে সমাজে উচু-নীচ ভেদাভেদ ভুলে জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সকল বর্ণের মানুষকে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমভক্তিরসে উদ্ভুদ্ধ করে সকলকে একসূত্রে বাঁধা যায়। শুধু আবীর খেলা বা শোভাযাত্রা বের করা নয়, মানুষে-মানুষে ধর্মের বর্নের ভেদাভেদকে দূর করার প্রয়াস নিয়েছিলেন তিনি।
পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে বসন্তোৎসব শুরু করেছিলেন প্রকৃতির রঙকে উদযাপন করে মিলনোৎসব পালন করতে। তাই দোল বা হোলি শুধু রঙেরই উৎসব নয় মিলনোৎসবরূপে বিশ্বে সমাদৃত।
বসন্ত একদিন চলে যায় ঋতুচক্রের নিয়মে। কিন্তু জীবনের রঙ যাতে ফিকে না হয় তার জন্য রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন তাঁর অমর গানে 'রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাওগো আবার যাবার আগে'।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের যৌক্তিকতা
ছ ন্দা চ ট্টো পা ধ্যা য়
আন্তর্জাতিক নারীদিবস পালনের একমাত্র যুক্তি এই দিনটি নারী শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের দিবস। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব একটা মেতে উঠতে পারিনা।কারণ, এই একটা ঢক্কানিনাদের দিনেও সংসারের যাবতীয় কর্তব্য পালন না ক'রে আমরা পারিনা।তার ফাঁকফোকরে নোটবুকে আঁচড় কাটা।
নারী সম্পর্কে একটি কনসেপ্ট সব সময় চলে এসেছে যে নারীজাতি পুরুষের অধীন। যেহেতু তার শারীরিক শক্তি পুরুষের তুলনায় কম। তার পিরিয়ড হয়। আসলে হোমো স্যাপিয়েন্সের মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের নারী নিজেকে দক্ষ প্রশাসক প্রমাণিত করেছিল।একটি সন্তান প্রসব করতে যে যন্ত্রণা ও শারীরিক শক্তির প্রয়োজন হয় কোনও পুরুষ তা কল্পনাও করতে পারবে কী? আমার মনে হয় সেই হোমো স্যাপিয়েন্সের যুগ থেকেই পুরুষের ইগো হার্ট হচ্ছিলো। ক্রমে মানুষ সভ্য হলো, প্রতিষ্ঠা পেলো পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। আমি বলতে চাইছি না যে মাতৃতান্ত্রিক সমাজের সবই ভালো ছিলো। মানুষের পিতৃপরিচয় ছিলোনা। মায়ের বড় ছেলে ছোট ছেলের বাবা হতে পারতো। রাহুল সাংকৃত্যায়ন তাঁর ভোলগা থেকে গঙ্গা বইতে এমন তথ্য লিপিবদ্ধ করেছেন। অতএব যৌন শৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য পিতৃতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন অবশ্যই ছিলো। সভ্যতার গোড়াপত্তনের সময় থেকেই শুরু হয়েছিল নারীকে সম্পত্তি হিসেবে দেখা। নারীর দুর্বলতাকে পুঁজি করে সমাজে নানান বিধিনিষেধ আরোপ হলো। পুরুষ প্রেমিক, তার শিল্পীসত্ত্বার মূল উপাদান কিন্তু যৌনতাই। ফলে নারীবিদ্বেষ ও যৌন হিংসা ওতোপ্রোতভাবে যুক্ত হয়েছে। এটা অবশ্যই আমার ব্যক্তিগত মত। তবু প্রমাণ হিসেবে বলবো, বৈদিক যুগের শিক্ষিত নারী--- গার্গি, মৈত্রেয়ী, খনা, অপালা ঘোষা---এরাও কিন্তু ঋষি পুরুষদের ঈর্ষার হাত থেকে রেহাই পাননি। তার চেয়েও দুঃখের কথা- 'মেয়েরাই মেয়েদের চরম শত্রু'-এই আপ্তবাক্যটি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীই এই বিধান সানন্দে মেনে নিয়েছে। আমার ছাত্রজীবনেও দেখেছি কলেজ জীবনের শুরুতেই অনেক মেয়ের পড়া শেষ না করেই বাড়ি থেকে বিয়ে দিতে। এবং এই ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশী উদ্যোগী হন মেয়েদের মায়েরাই। আজও সেই মানসিকতার মহিলার সংখ্যা কম নয়। মেয়েরাও মেনে নেয়। অবিহিতা চাকুরিরতা, বাবা-মা, ভাইবোনের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করা মেয়েটা তাই সমাজের কাছে সমালোচনার বস্তু। তাইতো হাসপাতালের রাতডিউটি, মূমুর্ষূর সেবা করা নার্স, আয়া, অথবা সিরিয়ালে স্যুটিং করে নায়িকা বাড়ি ফিরলে প্রতিবেশীদের কৌতুহলী রুদ্ধ বাতায়নগুলি খুলে যায়।
নারীর আর এক নাম রমণী, যার মধ্যে রমণ শব্দটি অনেকের কাছে অর্থবহ। অতএব কামদুনি থেকে হাথরাস, পার্কস্ট্রীট থেকে আহিরীটোলায় শিশু নারীকে রমনী করে তোলা হয়। সম্প্রতি সন্দেশখালি তো জমিদারি মানসিকতার ঘৃণ্য নজির!
তবু তুলনায় পুরুষরাই নারী সুরক্ষায় এগিয়ে এসেছেন আগে।সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের জন্যই নারী-সুরক্ষা ও শিক্ষা নিয়ে সচেতন, সরব ও সক্রিয় হয়েছিলেন রামমোহন , বিদ্যাসাগর, অবলাবান্ধবরা।দ্বারকানাথ গাঙ্গুলী না থাকলে আমরা একজন ডাক্তার কাদম্বিনী গাঙ্গুলীকে পেতাম না।
আসলে নারী শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের ফসল বিশ্ব নারী দিবস এবং নারী প্রতিটি দিন, প্রতিটি মূহুর্ত লড়াই করে যাচ্ছে তার বিপন্ন অস্তিত্বকে রক্ষা করার জন্য। যে পুরুষ নারীকে সম্মান দেন, তাকে উদ্বুদ্ধ করেন, পাশে থাকেন সাহিত্য, সংস্কৃতি, কবিতা ও বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের মাধ্যমে সেই সেই পুরুষরাই নারীর প্রকৃত বন্ধু। এখানে লিঙ্গবৈষম্যের বিষয়টি প্রাধান্য পায়না।
অতএব, নারীদিবসের সম্মান রক্ষায় প্রত্যেক দিনই নারীদিবস হিসেবে মানতে হবে, অবশ্যই পুরুষ-বিদ্বেষের মাধ্যমে নয়।
যীশু কি ভারতে এসেছিলেন!
রা না স র কা র
ইদানিং একটা মিম ফেসবুকে ঘুরতে দেখছি-"যীশু কি কোলকাতার পার্কস্ট্রিটে জন্মেছিলেন? নাহলে হুজুগে বাঙালি কেন তার জন্মদিনে পার্কস্ট্রিটের এমাথা ওমাথা হেঁটে বেড়ায়?"
যাইহোক, এ তো মিম। কিন্তু যীশু কি আদৌ জন্মেছিলেন, নাকি পুরোটাই মিথ- তা নিয়েও জব্বর বিতর্ক আছে। সে বিতর্কে না গিয়ে বরং তিনি ভারতে এসেছিলেন কিনা, সেটা বরং একটু ঘেঁটে দেখা যাক। এই বিষয়টিও বিতর্কিত, তবে আজ শুধু যীশুর ভারতে আসার পক্ষে যারা, তাদের তথ্য-যুক্তিগুলোই লিখবো। এই দলে আছেন- ফরাসী সন্ন্যাসী আইরেনিয়াম, রুশ সাংবাদিক নিকোলাস নটোভিচ, বাঙালি সাধক অভেদানন্দ, লেখিকা হেনরিয়েটা মেররিক, জার্মান লেখক হোলগার কার্সটেন প্রমুখ।এদের কয়েকজন আবার নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে বইটইও লিখেছেন। এবার দেখাযাক, তাদের তথ্য-যুক্তিগুলো কি রকম...
১) যীশু ক্রুশবিদ্ধ হন ৩৩ বছর বয়সে। তাঁর জীবনের ১৩ থেকে ৩০ বছরের ঘটনা বাইবেলে নেই। এ সময়টাকে বলা হয় "মিসিং ইয়ার্স"। উপরে উল্লিখিত ব্যক্তিদের মতে যীশু এ সময়ে একবার ভারতে আসেন এবং ভারতীয় বৈদিক দর্শন, বৌদ্ধদর্শন এবং আয়ুর্বেদ শাস্ত্র চর্চা করে কিছুকাল থেকে আবার ফিরে যান।
২) ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার তিনঘন্টা পর তাঁর অচেতন দেহ ক্রুশ থেকে নামিয়ে কাছেই এক গুহায় রাখা হয়। এরপর যীশুর মৃতদেহ আর পাওয়া যায়নি। মনে করা হচ্ছে, ক্রুশবিদ্ধ হবার পরেও একজনের পক্ষে পাঁচ ছ'দিন লাগতে পারে মৃত্যু হতে। যীশু যদি তার অধিগত আয়ুর্বেদ চিকিৎসাবিদ্যা কোনো শিষ্যকে শিখিয়ে থাকেন, তাহলে তাকে সুস্থ করে তোলা অসম্ভব নয়।
৩) কাশ্মীরে একটা সমাধি আছে, যেটাকে স্থানীয়রা এক পশ্চিম থেকে আসা জ্যোতির্ময় পুরুষের সমাধি বলে মনে করেন।
৪) লাদাখের জো-জিলা গিরিপথে হেমিস নামে একটি বৌদ্ধমঠ আছে। সেখানে একটা প্রাচীন তিব্বতী পুঁথি আছে, যেখানে ঈশা( যীশু এ নামেও পরিচিত) নামে এক পশ্চিমদেশীয় জ্যোতির্ময় পুরুষের উল্লেখ আছে। পশ্চিম বলতে এখানে মধ্যপ্রাচ্য বোঝানো হচ্ছে। পুঁথিটি উপরোক্ত অনেকেই দেখেছেন এবং দু একজন কিছুটা অনুবাদও করেছেন।
৫) আলেকজান্ডারের ভারত অভিযানের সময় (৩৩০ খ্রীঃপূঃ) থেকে ভারতে আসার পথ সুগম হওয়ায় ভারতে স্থলপথে আসা অসম্ভব ছিলোনা। তাছাড়া সে সময় কাশ্মীর উপত্যকায় বেশ কিছু ইহুদি গোত্র বসবাস করতো।ফলে যীশু তাদের কাছে আশ্রয় পেতে পারতেন, তাদের একত্রিত করবার চেষ্টাও করতে পারতেন।তাঁর কিছু কথায় এর সূক্ষ্ম ইঙ্গিত আছে বলে মনে করা হচ্ছে।
৬) ক্রুসবিদ্ধ হবার পর সুস্থ হয়ে যীশু দ্বিতীয় বার যখন ভারতে আসেন, সাথে তার মা মেরীও ছিলেন। পাকিস্তানে "মারি" নামে একটা জায়গা আছে। সেখানেই তাঁর প্রয়াণ হয় বলে মনে করা হয়। যীশুরও এই উপমহাদেশেই প্রয়ান ঘটে বলে এই মতের স্বপক্ষের লোকেরা মনে করেন।
৭) যীশুর প্রচারিত ধর্ম বা দর্শনে ভারতীয় বৈদিক এবং বৌদ্ধ দর্শনের প্রভাব আছে বলেও উপরোক্তদের কেউ কেউ মনে করছেন। এটাকে তারা যীশুর প্রথমবার ভারতে আসার পক্ষে একটা যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
যাইহোক, এসব মতের বিপক্ষেও অনেক যুক্তি আছে। সব মিলিয়ে বেশ বিতর্কিত ব্যাপার। জটায়ুর ভাষায়-"হাইলি সাসপিসাস্"। উনি ঈশ্বর বা ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন কিনা জানা নেই, তবে বেশ রহস্যময় একটি চরিত্র যে ছিলেন, তা বলাই বাহুল্য।
ন্যান্সি মোরেজন (কিউবান কবি)
শং ক র ব্র হ্ম
কিউবান কবি ন্যান্সি মোরেজন ১৯৪৪ সালে পুরানো হাভানার একটি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। শ্রমজীবী পিতামাতা, অ্যাঞ্জেলিকা হার্নান্দেজ ডোমিংগুয়েজ এবং ফেলিপ মোরেজন নোয়োলার কাছে বড় হয়ে ওঠেন। তার বাবা আফ্রিকান ঐতিহ্য প্রতিভূ আর মা তার আফ্রিকান নিষ্কাশন।
ন্যান্সি মোরজন ক্যারিবিয়ান এবং ফরাসি সাহিত্য অধ্যয়ন করে হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স সহ স্নাতক হন। তিনি ফরাসি এবং ইংরেজিতে সাবলীল। তিনি ফরাসি ভাষা শেখান। তিনি স্প্যানিশ ভাষায় ফরাসি এবং ইংরেজির একজন অনুবাদক, বিশেষ করে ক্যারিবিয়ান লেখক, যার মধ্যে এডোয়ার্ড গ্লিস্যান্ট , জ্যাক রুমেইন এবং আইমে সিসায়ার, রেনে ডেপেস্ট্রে রয়েছেন। তার নিজের কবিতা ইংরেজি, জার্মান, ফরাসি, পর্তুগিজ, গ্যালিসিয়ান, রাশিয়ান, ম্যাসেডোনিয়ান এবং অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং মার্গারেট বাসবি-র সম্পাদিত ১৯৯২ সালের অ্যান্থলজি ডটারস অফ আফ্রিকাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মোরেজন ২০১৩ সাল পর্যন্ত রেভিস্তা ইউনিয়নের পরিচালক, Unión de Escritores y Artistas de Cuba (লেখক ও শিল্পীদের ইউনিয়ন; UNEAC); ২০০৮ সালে, তিনি UNEAC-এর লেখক বিভাগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
তিনি একজন স্পেনীয় ভাষিক কিউবান কবি, সমালোচক এবং প্রাবন্ধিক। তিনি স্ট্রুগা পোয়েট্রি ইভিনিংস গোল্ডেন রেথ অ্যাওয়ার্ডের পেয়েছেন। তিনি "উত্তর বিপ্লবী কিউবার সর্বাধিক পরিচিত অনুবাদক মহিলা কবি"।
বেশ কিছু সাংবাদমূলক, সমালোচনামূলক এবং নাটকীয় কাজ করেছেন তিনি। ১৯৮২ সালে, তিনি Piedra Pulida- এর জন্য কিউবার "প্রিমিও দে লা ক্রিটিকা" (সমালোচকের পুরস্কার)-য় পুরস্কৃত হন এবং ২০০১ সালে কিউবার জাতীয় সাহিত্য পুরস্কার জিতেছিলেন , প্রথমবারের মতো একজন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। সাহিত্যের জন্য এই জাতীয় পুরস্কার ১৯৮৩ সালে তৈরি করা হয়েছিল; নিকোলাস গুইলেন প্রথম এটি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ২০০৬-এর জন্য স্ট্রুগা কবিতা সন্ধ্যার সোনার পুষ্পস্তবকও জিতেছিলেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশে ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করেছেন; তার কাজ ইংরেজি, সুইডিশ এবং জার্মান সহ দশটিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
তিনি সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বক্তৃতা দিয়েছেন এবং ওয়েলেসলি কলেজ এবং মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন, যেটি ১৯৯৫ সালে তার কাজের উপর দুই দিনের সিম্পোজিয়াম পরিচালনা করে এবং আফ্রো-হিস্পানিক পর্যালোচনার একটি বিশেষ সংখ্যায় গবেষণাপত্রগুলি প্রকাশ করে। ১৯৯৯ সালে, ওয়াশিংটন ডিসি-তে হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস ১৯৯৯ সালে তার কাজের সমালোচনামূলক প্রবন্ধের একটি সংগ্রহ প্রকাশ করে: সিঙ্গুলার লাইক এ বার্ড: দ্য আর্ট অফ ন্যান্সি মোরজন, মিরিয়াম ডিকোস্টা-উইলিস , পিএইচডি দ্বারা সংকলিত এবং মুখপাত্র। Richard trajo su flauta y otros argumentos শিরোনামে তার কবিতার একটি সংকলন (রিচার্ড তার বাঁশি নিয়ে এসেছিল), মারিও বেনেডেটি দ্বারা সম্পাদিত, ভিসার বই, ২০০৫ সালের বসন্তে মাদ্রিদে প্রকাশিত হয়েছিল।
মোরেজোন কাজে বিভিন্ন থিমের অন্বেষণ করেন। কিউবান জাতির পৌরাণিক কাহিনী, সেই জাতির মধ্যে কিউবার কালো মানুষদের সম্পর্ক। তিনি প্রায়ই একটি সংহতিবাদী অবস্থান প্রকাশ করেন, যেখানে স্প্যানিশ এবং আফ্রিকান সংস্কৃতি একটি নতুন, কিউবান পরিচয় তৈরি করতে মিশে যায়। তার বেশিরভাগ কাজ--- এবং তিনি কিউবান শাসনের মধ্যে সফল হয়েছেন—তাকে কিউবার জাতীয়তাবাদ এবং কিউবান বিপ্লবের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। উপরন্তু, তিনি কিউবার বিপ্লবের মধ্যে নারীদের অভিজ্ঞতা এবং জাতিগত সমতার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে তার সমাজের মধ্যে নারীদের পরিস্থিতির কথাও তুলে ধরেন; প্রায়শই কালো মহিলারা তার কবিতায় প্রধান চরিত্র, বিশেষত ব্যাপকভাবে সংকলিত মুজের নেগ্রায় (কালো মহিলা)। তার কাজ দাসত্বের ভয়াবহ সত্যকে একটি পূর্বপুরুষের অভিজ্ঞতা হিসাবে বিবেচনা করে। তার কাজ রাজনৈতিক থিমগুলির পাশাপাশি ঘনিষ্ঠ, পারিবারিক বিষয়গুলির আচরণ আকর্ষণ করে। সমালোচকরা তার নিজের লোকদের সম্পর্কে তার কৌতুকপূর্ণ পর্যবেক্ষণ, বিশেষ করে কিউবান হাস্যরসের তার কার্যকর ব্যবহার এবং অত্যন্ত গীতিমূলক, অন্তরঙ্গ, আধ্যাত্মিক, বা কামোত্তেজক কবিতায় তিনি নিয়মিত "আনন্দ" যাপন করেছেন।
(নির্বাচিত গ্রন্থপঞ্জি)
১)
Amor, ciudad atribuída, poemas . হাবানা: Ediciones El Puente, ১৯৬৪ সাল।
২)
Elogio de la Danza . মেক্সিকো সিটি: লা ইউনিভার্সিডাদ ন্যাসিওনাল অটোনোমা ডি মেক্সিকো, ১৯৮২ সাল।
৩)
Elogio y paisaje. হাবানা: Ediciones Union, ১৯৯৬ সাল।
৪)
ফান্ডাসিওন দে লা ইমেজ । হাবানা: সম্পাদকীয় Letras Cubanas, ১৯৮৮ সাল।
৫)
গ্রেনাডা নোটবুক/কুয়াডেরনো ডি গ্রানাডা । ট্রান্স লিসা ডেভিস। নিউ ইয়র্ক: Círuculo de Cultura Cubana, ১৯৮৪ সাল।
৬)
মিউটিসমোস _ হাবানা: Ediciones El Puente, ১৯৬২ সার।
৭)
নিকোলাস গুইলেনে নেশন ও মেস্টিজাজে । হাবানা: Ediciones Union, ১৯৮২ সাল।
৮)
অবিশ্বাস্য অক্টোবর, হাবানা: Ediciones Union,
পয়সাজে সেলেব্রে । ১৯৮২ সাল।
৯)
কারাকাস: Fundarte, Alcaldía de Caracas, ১৯৯৩ সাল।
১০)
প্যারাজেস ডি উনা ইপোকা । হাবানা: সম্পাদকীয় Letras Caubanas, ১৯৭৯ সাল।
১১)
পিয়েড্রা পুলিডা । হাবানা: সম্পাদকীয় Letras Cubanas, ১৯৮৬ সাল।
১২)
কবিতা। মেক্সিকো সিটি: ইউনিভার্সিডাড অটোনোমা ডি মেক্সিকো, ১৯৮০ সাল।
১৩)
পোয়েটাস ডেল মুন্ডো ল্যাটিনো এন টালাক্সকালা। Tlaxcala: Universidad Autónoma de Tlaxcala,১৯৮৮ সাল।
১৪)
নিকোলাস গুইলেন, এড. হাবানা কাসা দে লাস আমেরিকা, ১৯৭৪ সাল।
১৫)
রিচার্ড ট্রাজো সু ফ্লাউটা ওয়াই ওট্রোস আর্গুমেন্টোস। হাবানা: Unión de Escritores y Artistas de Cuba, ১৯৬৭ সাল।
১৬)
যেখানে দ্বীপটি ডানার মতো ঘুমায়। ট্রান্স ক্যাথলিন ওয়েভার। সান ফ্রান্সিসকো: দ্য ব্ল্যাক স্কলার প্রেস, ১৯৮৫ সাল।
১৭)
মিরার অ্যাডেনট্রো/লুকিং উইদিন: নির্বাচিত কবিতা, ১৯৫৪-২০০০ (দ্বিভাষিক সংস্করণ, আফ্রিকান আমেরিকান লাইফ সিরিজ)। এড. জুয়ানামারিয়া কর্ডোনস-কুক। ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটি প্রেস,২০০২ সাল, ISBN 9780814330371.
১৮)
চোখ এবং আত্মার সাথে: কিউবার ছবি। ট্রান্স পামেলা কারমেল এবং ডেভিড ফ্রাই। হোয়াইট পাইন প্রেস,২০০৪ সাল, আইএসবিএন 9781893996250
১৯)
মনোগ্রাফ
"A un muchacho," "Niña que lee en Estelí", "Soldado y yo"। টুলুস: ক্যারাভেল, ১৯৮২ সাল।
২০)
বলদাস প্যারা আন সুয়েনো । হাবানা: Unión de Escritores y Artistas de Cuba, ১৯৮৯ সাল।
২১)
Le Chaînon Poétique (ফরাসি ভাষায়)। ট্রান্স স্যান্ড্রা মনেট-ডেসকম্বে। Champigny-sur-Marne, France: Edition LCJ,১৯৯৪ সাল।
২২)
কুয়াদেরনো ডি গ্রানাডা । হাবানা: কাসা দে লাস আমেরিকা,১৯৮৪ সার।
২৩)
ডস কবিতা ন্যান্সি মোরেজন . রোল্যান্ডো এস্টেভেজ দ্বারা অঙ্কন এবং নকশা। Matanzas, Cuba: Ediciones Vigía,১৯৮৯ সাল।
২৪)
লেঙ্গুয়া দে পাজারো। কারমেন গন্সের সাথে। হাবানা: Instituto Cubano del Libro, ১৯৭১ সাল।
২৫)
আমার কবিতা টুলুজ: ক্যারাভেল, ১৯৯৩ সাল।
২৬)
আমাদের পৃথিবী। ট্রান্স জেআর পেরেইরা। মোনা, জ্যামাইকা: ইনস্টিটিউট অফ ক্যারিবিয়ান স্টাডিজ, ১৯৯০ সাল।
২৭)
এল রিও দে মার্টিন পেরেজ এবং ওট্রোস কবিতা। রোল্যান্ডো এস্টেভেজ দ্বারা অঙ্কন এবং নকশা। Matanzas, Cuba: Ediciones Vigía, ১৯৯৬ সাল।
[ তথ্যসূত্র - উইকিপিডিয়া। সংগৃহীত ও সম্পাদিত।]
সূত্র নির্দেশিকা-
ওয়েভার, ক্যাথলিন(নভেম্বর ২০১৬ সাল)। "এবং তারপরে একটি বিপ্লব ছিল - ন্যান্সি মোরেজনের সাথে একটি সাক্ষাৎকার"। কবিতা ফ্ল্যাশ । সংগৃহীত - ১৪ই আগস্ট,২০২২ সাল।
"ন্যান্সি মোরজন, জাতীয় কবি"। কিউবা 50, ৩রা ডিসেম্বর ২০১৮ সাল। সংগৃহীত- ১৪ই আগস্ট ২০২২ সাল।
Prensa Latina (২০ই মে , ২০১২ সাল)। "কিউবার কবি ন্যান্সি মোরজনকে মার্কিন পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে"। কিউবা বিতর্ক। সংগৃহীত- ২০ই ডিসেম্বর, ২০১২ সাল।
লুকিং উইদিন/মিরার অ্যাডেনট্রো: নির্বাচিত কবিতা/কবিতা এসকোগিডোস। ১৯৫৪-২০০০. দ্বিভাষিক সংস্করণ। সম্পাদিত এবং জুয়ানামারিয়া কর্ডোনেস-কুক দ্বারা একটি ভূমিকা সহ। গ্যাব্রিয়েল আবুদু, ডেভিড ফ্রাই, ন্যান্সি আব্রাহাম হল, মির্টা কুইন্টানেলেস, হেদার রোজারিও সিভার্ট এবং ক্যাথলিন ওয়েভারের অনুবাদ। ডেট্রয়েট: ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০০৩ সাল (আফ্রিকান আমেরিকান লাইফ সিরিজ)। 367 পিপি ISBN 0-8143-3037-1 (hbk); ISBN 0-8143-3038-X (pb).
এই নিবন্ধটি যথেষ্ট পরিমাণে "Morejón, Nancy" এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে ল্যাটিন আমেরিকান ওমেন অথরস এনসাইক্লোপিডিয়ার জন্য এলিজাবেথ কুনরড মার্টিনেজ দ্বারা ওয়েব্যাক মেশিনে ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৫ সালে সংরক্ষণাগারভুক্ত) এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। সংগৃহীত - ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৫ সাল।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা - অর্থনৈতিক উন্নতির বাহন
নী ল দি গ ন্ত
সূচনা:
----------
কম্পিউটার এবং অটোমেশন ছাড়া আধুনিক জীবনের একটি মুহূর্তও আজ কল্পনা করা কঠিন। বাষ্প ও বিদ্যুতের ব্যবহার অতীতে শিল্পবিপ্লব ঘটিয়েছে। রিলে, ট্রানজিস্টর এবং সেমিকন্ডাক্টর অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত রেখেছে। সম্ভবত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এ.আই.) এই প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ। অটোপাইলট, রিমোট কন্ট্রোল অটোমোবাইল এবং রোবোটিক-সার্জারি থেকে চন্দ্রযান মিশনের মত স্বয়ংক্রিয় আধুনিক পদ্ধতিগুলোর পরবর্তী ধাপ হিসাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আধুনিক বিজ্ঞান স্বাগত করতে প্রস্তুত হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের আধুনিক জীবনযাপন, কাজের গুনমান ও সুরক্ষা বাড়াতে এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে সক্ষম ৷
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নতি:
--------------------------------------------
মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা শক্তিকে কৃত্রিম উপায়ে প্রযুক্তি নির্ভর করে যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সামগ্রিক গবেষণার লক্ষ্য হচ্ছে প্রযুক্তি তৈরি করা যার মাধ্যমে কম্পিউটার এবং রোবোটিক মেশিনগুলি বুদ্ধিমানের মতই কাজ করতে সক্ষম হবে।
জীবন যাত্রার মান নির্ভর করে সেই দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর ওপর। অর্থনৈতিক উন্নতি সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি ইতিবাচক শক্তি। আমাদের এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে আর্থিক অগ্রগতি যেন একটি নির্ভরশীল পদ্ধতিতে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চলতে থাকে। আর এটা বাস্তবায়িত করার জন্যে উৎপাদনশীলতার ওপর নজর দেওয়া দরকার। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দারিদ্র্য কমাতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখে। যখন এটি দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান, উৎপাদনশীলতা এবং মজুরী বাড়াতে সহায়তা করে তখন সামগ্রিক ভাবে একটা রাষ্ট্রের মানুষদের জীবনযাত্রার মানও বাড়ে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক তথ্য বিশ্লেষণ করতে সক্ষম এবং ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক অবস্থার ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে। এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলি নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়িক ব্যক্তিদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্থনৈতিক সূচক যেমন জি.ডি.পি, মুদ্রাস্ফীতি এবং কর্মসংস্থানের পূর্বাভাস দিতেও সক্ষম।
গ্রাহক পরিষেবার কাজ, জালিয়াতি সনাক্তকরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, অর্থ, লজিস্টিকস-সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট এবং গুনমান নিয়ন্ত্রণ সহ মানুষের দ্বারা সম্পাদিত কাজগুলিকে স্বয়ংক্রিয় করতে ব্যবসায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের চেয়ে অনেক দক্ষ ভাবে কাজ করতে দেখা গেছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি কী কী?
-----------------------------------------------
আর্টিফিসিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক এবং ডিপ লার্নিং এ.আই. প্রযুক্তি দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এ.আই. অনেক দ্রুত, প্রচুর পরিমাণ ডেটা প্রসেস করতে পারে এবং মানুষের তুলনায় অনেক সঠিকভাবে ভবিষ্যতবাণী করতে পারে।
এ.আই. অ্যাপ্লিকেশনগুলি বিপুল ডেটা গ্রহণ করতে পারে এবং দ্রুত সেটিকে কার্যকরী তথ্যে পরিণত করতে পারে। এর একটি প্রাথমিক অসুবিধা হল যে এ.আই. প্রোগ্রামিং-এর জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল পরিমাণ পুরানো ডেটা সংগ্রহণ ও প্রক্রিয়া করা ব্যয়বহুল।
এ.আই. এর সুবিধা:
-----------------------------
• চিকিৎসাক্ষেত্রে রোবোটিক-সার্জারি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্তন ক্যান্সার এবং মেলানোমা সহ নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এ.আই. ডাক্তারদের চেয়েও ভাল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
• ডেটা-বেস কাজের জন্য কম সময় অনেক ডেটা হ্যান্ডেল করতে সক্ষম। এ.আই. ব্যাপকভাবে ব্যাঙ্কিং এবং সিকিউরিটিজ, ফার্মা এবং বীমা সহ ডেটা-বেস শিল্পগুলিতে ব্যবহৃত হচ্ছে, আর্থিক পরিষেবাগুলি ঋণের আবেদন প্রক্রিয়াকরণ এবং জালিয়াতি সনাক্ত করতে নিয়মিতভাবে এ.আই. ব্যবহার করছে।
• শ্রম বাঁচায় এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। একটি উদাহরণ হল গুদাম বা ওয়ার হাউসে অটোমেশনের ব্যবহার, যা মহামারী চলাকালীন বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং এ.আই. এবং মেশিন লার্নিংয়ের একত্রিকরণের সাথে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
• ব্যক্তিগতকরণের মাধ্যমে গ্রাহকের সন্তুষ্টি প্রদান করতে পারে। এ.আই. পৃথক গ্রাহকদের জন্য সামগ্রী, বার্তা, বিজ্ঞাপন, সুপারিশ এবং ওয়েবসাইট ব্যক্তিগতকৃত করতে পারে।
• এ.আই.-চালিত ভার্চুয়াল এজেন্ট সবসময় উপলব্ধ। এ.আই. এজেন্টগুলির ঘুমানোর বা বিরতি নেওয়ার দরকার নেই, চব্বিশ ঘন্টা পরিষেবা প্রদান করে।
এ.আই. এর অসুবিধা:
-----------------------------------
• এটি এখন খুবই ব্যয়বহুল।
• গভীর প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রয়োজন।
• এ.আই. টুল তৈরির জন্য যোগ্য কর্মীদের সীমিত সরবরাহ।
• এক কাজ থেকে অন্য কাজ সুইচ করার ক্ষমতার অভাব।
• মানুষের চাকরি দূর করে, বেকারত্বের হার সাময়িকভাবে বৃদ্ধি করে।
উপসংহার:
-----------------
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হল একটি শক্তিশালী হাতিয়ার যা আমাদের অবশ্যই দায়িত্বের সাথে ব্যবহার করতে হবে। এর সঠিক ব্যবহার আমাদের পৃথিবীকে অর্থনৈতিকভাবে আরো উন্নত করে তুলতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণ মোকাবিলা করার সাথে সাথে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুরক্ষা এবং চাকরির সুযোগ সহ বিভিন্ন সামাজিক চাহিদা পূরণ করতে পারবে। এক গৌরবময় ভবিষ্যতের জন্যে রাষ্ট্রের উপযুক্ত পরিকাঠামো ও সঠিক নীতি নির্ধারন করা একান্তই আবশ্যক। এখন এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে স্বাগত করা এবং সম্মিলিতভাবে আমাদের পৃথিবীকে একটি প্রাণবন্ত ও উৎপাদনশীল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
তথ্যসূত্র:
-------------
১)https://web.stanford.edu/~chadj/AI.pdf
https://www.npcindia.gov.in/NPC
https://bn.wikipedia.org
নিরক্ষর বনাম শিক্ষিতা বৌমা
তা প স পা ল
রবিবাসরীয়তে "পাত্রী চাই"এর একটা বিজ্ঞাপন দেখে চোখ আটকে গেল। এই একবিংশ শতাব্দীতে মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণার যে কোনো পরিবার থাকতে পারে এই বিজ্ঞাপনটি তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
"স্কুল শিক্ষক পাত্রের জন্য নিরক্ষর পাত্রী চাই!"
কেমন শিক্ষক, একটা নিরক্ষর মেয়েকে নিয়ে পথ চলবে, না নিরক্ষর মেয়েরা স্বামীকে দেবতা
হিসাবে মান্যি করবে, স্বামীর কথাকেই বেদবাক্য বলে জ্ঞান করবে। বিজ্ঞাপনটা আমাকে ভাবাতে শেখালো।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে একজন শিক্ষক নিরক্ষর মেয়ে কেন চাইছে, হয়তো শিক্ষিত মেয়ের কাছে কোন চরম শিক্ষা পেয়েছে তাই দগদগে ঘা উপশমের জন্য তার পরিবার নিরক্ষর মেয়েকেই বেছে নিচ্ছে পুত্রবধূ হিসাবে। ভাবতে ভাবতে আমার মন চলে গেল পঞ্চাশ বছর আগে--- যখন মেয়েদের লেখাপড়া শিখানো সামাজিক অপরাধ। সমাজে এরকম বার্তা প্রচলিত ছিল যে মেয়েরা বেশি লেখাপড়া শিখলে কম বয়সে বিধবা হয়। রবীন্দ্রনাথও বোধকরি সেই সংস্কার থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি, তাই শিক্ষিতা বিনোদিনীকে বিধবাই দেখিয়েছেন তাঁর "চোখের বালি" উপন্যাসে। মেয়েরা নাটক নভেল পড়লে
সংসারে অলক্ষ্মী বাসা বাঁধে। মেয়ে মানে শুধু সংসারে সবার জন্য সবকিছু করে যাবে, সবাইকে সুখে রাখার চেষ্টা করবে, তার সুখের কথা কেউ ভাববে না, তাই পরিবারের সবাই সুখে থাকলে সেটাই তার সুখ।
সে কালের মা-ঠাকুমারা ছিলেন অশিক্ষিত, বড়জোর প্রাইমারির গণ্ডি কেউ পেরিয়েছে কেউবা পেরোয়নি, কিন্তু সংসারে ছিল তারা সুগৃহিণী। বাড়ির কর্তা মানেই রাজা কমসে কম জমিদার; বাড়ির বউ চাকরানী। স্বামী দেবতার সুখের জন্য তাদের দিনাতিপাত, মেয়েদের কথা কেউ ভাবতো না, তারাও না।
বছর ত্রিশ আগে বিহারের এক প্রত্যন্ত এলাকায় গেছি আত্মীয় বাড়ি। বিকেলে পৌঁছেছি, রাতে আমাদের জন্য খাবার তৈরি হচ্ছে। চালের রুটি আর দেশি মুরগীর ঝোল। বাড়ির মেয়েরা রান্নাঘরে রুটি তৈরি করেছে, আর ছেলেরা বাইরের উনুনে মাংস রান্না করছে। আমরা দাওয়ায় বসে আছি বলে বাড়ির বয়স্ক মহিলারাও কুপি হাতে ঘোমটা দিয়ে ঘুরে ঘুরে যাচ্ছে, পরপুরুষ যাতে আমাদের চোখ না পড়ে।
খাওয়ার সময় ছেলেরাই পরিবেশন করছে আমাদের।
আমি জিজ্ঞাসা করছিলাম মেয়েরা খাবেনা?
---তারা উত্তর দিয়েছিল মেয়েরা মাংস খায় না! পরে জেনেছিলাম 'খায় না' নয়, তাদের খেতে দেওয়া হয় না, শিশুকাল থেকেই ছেলে মেয়ের মধ্যে বিভেদ শুরু।
লেখাপড়া শিখলেই মেয়েরা তাদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। যতদিন তাদের নিরক্ষর করে রাখা যায় ততদিনই লাভ। রামায়ণ, মহাভারত, ব্রতকথা, পাঁচালী যাই পড়ুন না কেন এ হলো মেয়েদের মেয়ে করে রাখার প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনা। তোমরা মেয়ে, বাড়ির পুরুষদের তোমরা সুখী করার চেষ্টা করবে, ভালো রাখার চেষ্টা করবে, তুমি কি পেলে তা তুমি ভাববে না, সবাই ভাল থাকলে তুমিও ভালো থাকবে, এটাই তোমার বেঁচে থাকার সার্থকতা!
কিছুদিন আগে একটি পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে মাতৃ সম্মেলন বসেছে (ভিতরে মেয়েরা পরীক্ষা দিচ্ছে, বাইরে মায়েরা আড্ডা জমিয়েছে)। তাতে এক মা
গর্বের সঙ্গে বলছে, " বিয়ের পর আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে ১০ বছর ধরে জ্বালিয়েছে, আজ এই হচ্ছে; কাল ঐ হচ্ছে--- বাড়ি হাসপাতাল করে একেবারে নাস্তানাবুদ করে মেরেছিল, ওরা মরতে একটু হাই করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম! সকালে
ছেলে মেয়েদের পড়াই তারপর দোকান, বিকেলে মেয়েদের টেলারিং শেখাই, রাতে টেলারিং এর কাজ করি। ওর বাপ ওর মত রোজগার করছে, আমার রোজগারও কোনো কম নেই। ইচ্ছামতো খরচ করি, ছেলে-মেয়েদের শখ সাধ মেটাই, মাসে মাসে মা'কে হাত খরচ পাঠাই, আমার টাকা আমার মত খরচা করি, ওর বাপও কিছু বলতে পারেনা--- আজকালকার দিনে মেয়েদের স্বামীর মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকার দিন ফুরিয়েছে, মেয়েরা কিছু না কিছু রোজগার না করলে হয়?
(সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে নয়।)
বিবাহ: পরিপূর্ণতা বনাম অপরিপূর্ণতা
ন ন্দি তা সো ম
শিশুকালে "বিয়ে" বা বিবাহ সম্বন্ধে ধারণাটি খুব মধুর ছিল। কারণ বিয়ে বা বিয়ে বাড়ির অর্থই ছিল প্রচুর আলো, সাজসজ্জা, খাওয়া আর আনন্দ। বর বিয়ে করতে আসার সময় যাদের সাথে আনে তারা বরযাত্রী। তাতে সামিল হতে পারাটা বেশ গর্বের ছিল। আর কন্যার পক্ষে হলে সানাইয়ের শব্দ, সাজগোজ, নানাবিধ খাওয়াদাওয়া, ছোটাছুটি-- আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে। এটুকু জানতাম-- পুরোহিত এসে কিসব মন্ত্র পড়ে বলবেন বিয়ে সমাপ্ত।
বড়ো হওয়ার সাথে সাথে বুঝতে শুরু করলাম-- যত সহজ "বিয়ে বা বিবাহ" শব্দটি উচ্চারণ করা ততো সহজ নয় জীবনের চলার পথে। ক্লাস সেভেনে সংস্কৃত দিদিমণি বুঝিয়ে ছিলেন বিবাহের অর্থ। "বি"শেষ রূপে বহন করার অর্থ হচ্ছে বিবাহ। বিবাহের পূর্ণ অর্থ হচ্ছে-- একটি সামাজিক পবিত্র বন্ধন যার মাধ্যমে দুটি মানুষের মাঝে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। কতটুকু বুঝেছিলাম জানিনা। কিন্তু জীবনের চলার পথে বিবাহের প্রকৃত অর্থ বোঝার চেষ্টা করে চলেছি।
আমার বোধে বিবাহ দুই ভাবে হয়। প্রথম বলা যায় নারী ও পুরুষ নিজেদের পছন্দমতো জীবনসঙ্গী খুঁজে নেয়। আর দ্বিতীয়টি পারিবারিক আত্মীয়স্বজন, গুরুজনেরা খুঁজে দেন। কোনটাতেই অসুবিধা নেই। আমাদের জীবনের প্রতিটি জিনিসের মধ্যেই আছে অনুকূল ও প্রতিকূল, ভালো/ মন্দ, পরিপূর্ণতা/অপরিপূর্ণতা। বিবাহ কখনো হয় সফল-- আবার কখনো অসফল। আজ আমার আলোচ্য বিষয় "বিবাহের পরিপূর্ণতা বনাম অপরিপূর্ণতা।
প্রায়ই একটা কথা শোনা যায় "সমানে সমানে বিয়ে হওয়া প্রয়োজন"। মেনে যদি নিই-- সামাজিক, আর্থিক সমানে হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু মানসিকতা কিভাবে সমানে সমানে হবে? আমরা সবাই এক ছাঁচে গড়া মানুষ নই। বিভিন্ন পরিবেশে, বিভিন্ন চিন্তাধারায় আমরা বড়ো হই। নারী, পুরুষ বিয়ের আগে যদি তারা পরস্পরকে না চেনে বা জানে তাহলে পরস্পরের মানসিকতা সম্পর্কে তারা জানবে কী করে?
একটি বাড়ি বানাতে গেলে আগে তার ভিত স্থাপন করতে হয়। বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত দেন। প্রথম ইঁট যদি মাটির অবস্থা অনুযায়ী স্থাপন করা হয়-- তবে সেই বাড়িটিও শক্তপোক্ত হয়। ঠিক সেইরকম বিবাহিত দম্পতির সংসারের মূল ভিত্তি হওয়া উচিত বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা। আমরা যদি একে অপরের দোষ/গুণ মানিয়ে নিয়ে চলি-- তবে দেখবো জীবনের অনেক সমস্যার সমাধান হয়। ভালোবাসা তখনই জীবনে আসবে যখন আমরা একে অপরকে সম্মান ও বিশ্বাস করে তাকে এবং তার পরিবারকে কাছে টেনে নেবো। তাদেরকে নিজের বলে ভাবতে শুরু করবো। তাদের সুবিধা অসুবিধা নিজের মনে করে সমাধান করবো। বিবাহের পরিপূর্ণতা কিন্তু এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে।
আর একটি প্রধান জিনিস হলো ধৈর্য্য। অধৈর্য্য কখনো কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না। আজকাল প্রায়ই বিবাহবিচ্ছেদের কথা শোনা যায়। একে আমরা বিবাহের অপরিপূর্ণতার ক্ষেত্রে রাখতে পারি। আমার নিজস্ব ধারণা-- বর্তমান প্রজন্মের সহনশীলতা অনেক কম। সবসময় যদি অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াই সেটা কী ঠিক ? আজকের নারীরা আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী। পরমুখাপেক্ষি তারা নয়। তাই শ্বশুর, শাশুড়ি বা স্বামীর নির্দেশ সবসময় মেনে চলা সম্ভব নয়। আগের দিনে কন্যা বিদায়ের সময় মা বলে দিতেন, "শ্বশুর বাড়িতে মানিয়ে চলিস।" কন্যারাও চেষ্টা করতো অক্ষরে অক্ষরে মানতে। এটা তো দুপক্ষেরই মেনে চলার কথা। সেটা আগের প্রজন্ম মনে না রাখলেও বর্তমান প্রজন্ম কেন মনে রাখবে বা মেনে চলবে? স্বামী স্ত্রীর সমস্যা নিজেরা মিটিয়ে ফেলা সর্বসময় সঠিক।
সব মানা না মানা এবং নিজের অহম বোধকে দূরে সরিয়ে একটু চেষ্টা করা যায় না কী বিবাহ সফল করে তার পরিপূর্ণতা আনতে। একটি বিবাহের পরিপূর্ণতা সবাইকে সুখী করে। অপরিপূর্ণতা, অসফল বিবাহ নিয়ে আসে দুঃখ, বেদনা। সবথেকে অসহায় ভগ্নপ্রায় অবস্থায় পড়ে সেইসব সন্তানেরা যাদের মা বাবার বিবাহিত জীবন সফল পরিণতি না পেয়ে অপরিপূর্ণতায় ভরে গেল। কোনোভাবেই তা কাম্য নয়। তাই বিবাহের পরিপূর্ণতাকেই স্বাগত জানাই।
হুম
চৌ ধু রী সু ল গ্না
"হুম"একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। এই "হুম" শব্দখানি প্রচণ্ড অর্থবহ। নির্বিবাদী, শান্তিপ্রিয় মানুষের উচ্চপর্যায়ের উত্তর। এক "হুম" শব্দটি পৃথিবীর কত ইতিহাসের যে স্রষ্টা এবং শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার! এটা একটা আহ্লাদ সূচক শব্দ এবং অবশ্যই বুদ্ধিদীপ্ত। অভিজাত হুম শব্দ আশ্বাসময়। শব্দ "হুম"এর অঙ্গুলি হেলনে মানব জীবনের চড়াই-উতরাই কত রাস্তার সৃষ্টি, কতো মন ভেঙে কতো মন গ’ড়ে এই "হুম" শব্দখানি পার্থিব জগতে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত। "হুম" শব্দটির উপর মানুষের স্বাধীন ও পরাধীন হওয়াও নির্ভর করে।
শৈশবের, কৈশোরের দিন গুলিতে অভিভাবকদের কাছ থেকে এই "হুম"এর হুমকারখানি শুনলে কখনও হৃদয়খানি উদ্বেল হয়ে উঠতো, দুনিয়া মুঠোয় ভরে নিয়ে ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করতো। আবার এই "হুম" শব্দখানি কর্ণকুহরে প্রবেশ না করা অবধি মানব দেহের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের এক ইন্দ্রিয় দিয়ে গড়িয়ে আসা লবনাক্ত বারিধারা দ্বারা সিক্ত থাকতো দুইখানি কপোল।
মানুষ তাঁর ছাত্র জীবনে পরীক্ষা কক্ষে যখন কোনো প্রশ্নের উত্তর এ বিভ্রান্ত বোধ করেন, তখন তাঁর সেই বিভ্রান্তিমূলক প্রশ্নের সকল ভ্রান্তি দূর করে দিতে পারে তাঁর দুরে বসা কোনো সহৃদয় বন্ধুর একখানি "হুম" সূচক শব্দ, যে শব্দ বয়ে আনতে পারে স্বস্তির বার্তা, বাড়তে পারে বন্ধুত্বের উষ্ণতা।
একটা "হুম"শব্দের অভাবে ভাঙতে পারে ঘর, একটা “হুম" শব্দের অভাবে হৃদয় তোলপাড় করা প্রেম ভেঙে যেতে পারে, সে ও হয় সম্ভব এই "হুম"এর গুনে। "হুম" মনকে স্বপ্ন দেখার জন্য এগিয়ে যেতেও সাহায্য করে থাকে। দাম্পত্য জীবনে জায়া ও পতি কোনও শপিংমল এর খরিদ্দারি করতে গিয়ে নিজেদের পচ্ছন্দমাফিক জিনিসপত্র হাতড়ানোর সময়ে একে, অপরের থেকে ছুটে আসা "হুম" শব্দখানি ঘুচিয়ে দিতে পারে দাম্পত্যের সকল তিক্ততা, মন কষাকষি , বোধ করি দাম্পত্য তখন মধুময় হয়ে ওঠে।
তাই "হুম" শব্দের অর্থ হলো--- তুমি যা খুশী ভেবে নিতে পারো এই "হুম" শব্দটি তাই সাংঘাতিক শক্তিসম্পন্ন, "ঘুচে যাক গ্লানি", এই "হুম" নাদকে ঘিরেই হয়ে উঠতে পারে, এই হুম শব্দতেই কতো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দেবতার আসনে বসিয়ে রেখেছে তাঁর অধস্তন কর্মচারীটি, চিরচেনা হুম শব্দটি কখন যেন বড্ড আপনার হয়ে যায়।
কোনও ভক্ত যখন মন্দিরে গিয়ে দেবতার চরণে ভক্তিভরে কাতর অনুরোধে নিজের মনের ব্যাকুলতা নিবেদন করে আসেন, তারপর দেবতা যখন সকলের অলক্ষ্যে তেনার আশীর্বাদসূচক "হুম" শব্দটি সেই ভক্তের উপর বর্ষণ করেন, সেই ভক্তের জীবনখানি তখন সফলতায় ভরে ওঠে। ভক্তের ডাকাডাকি হয়ে ওঠে সফল।
তাই "হুম" মানে অনুমতি পাওয়া--- যার অন্তর্নিহিত অর্থ অসাধারণ, এই "হুম" শব্দ শুনে তুমি ঊর্ধ্ববাহু হয়ে নাচতে পারো, মন খুলে গাইতে পারো, স্বাধীনতার স্বাদ নিতে পারো, মন খুলে গালি দিতে পারো, চোখ ভরে জল আনতে পারো, প্রাণখুলে হাসতেও পারো, ভালোবাসতেও পারো। তাই সর্বক্ষেত্রেই "হুম" একখানা সফল, 'হ্যাঁ'সূচক শব্দ বা ধ্বনি, প্রশ্রয় সাপেক্ষও বটে, যা অনুমতির অপেক্ষায় থাকা মানুষকে দু'খানা ডানা জোগাড় করিয়ে উড়িয়ে দিতে পারে সফলতার আকাশে।।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন