অণুগল্প
চাঁপা
স র্বা ণী রি ঙ্কু গো স্বা মী
"অ্যা ম্যা গো, কী নোংরা করে রেকেচে গো এখানটা ! মানুষগুলোর ঘেন্না পিত্তি বলে কিচু নেই গো।" রোজই চাঁপা সরু গলিটা ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে পার হয়, নাকে আঁচল চাপা আর মুখে অজস্র বিরক্তি নিয়ে। দশ বাড়িতে বাসন মেজে আর ঘর পরিস্কারের পর ওর শাড়িটাও যে বেজায় নোংরা আর আধভেজা, সে কথা বলবার বুকের পাটা আছে কারোর? সঙ্গে সঙ্গে খরখরিয়ে একশোটা কথা শুনিয়ে দেবে'খন। "চোপা আর খোঁপা, এই নিয়ে চাঁপা!"- চালু কথা এই তল্লাটের।
সেই ফ্রকপরা বয়েস থেকেই মায়ের পিছন ধরে এ বাড়ি সে বাড়ি করে চাঁপা, ওর মুখেই শোনা। যেমনটা সচরাচর এদের জীবন হয়, শুরুতেই বলবে, "আমরা যেমন তেমন বাড়ির মেয়ে নই গো বৌদি, আমাদের ঘরদালান জমিজমা ছিল। ঐ সেবারের বন্যায় ....!" অনেক শুনেছি এইসব, প্রথম প্রথম নতুন বিয়ের পর হাঁ করে এই গল্পগুলো গিলতাম আর মনের ভেতরটা টসটসে হয়ে যেত। তখন মায়ায় পড়ে এটাওটাসেটা। এখন সকলের মুখে শুনে শুনে আমার ও "ঐব্যেস" হয়ে গেছে, চট করে গলি না ভাসি না মন্তব্য করি না। বুঝে নিয়েছি একটু এদিক ওদিক করে গল্পটা সেই এক, নরম দেখলেই হয় টাকা ধার চাইবে নয় ছুটির আবেদন। সে সব নাহলে নিদেনপক্ষে জিনিসের দাম বেড়েছে বলে মাইনে বাড়িয়ে দেওয়ার আবদার তো বটেই। বার কয়েক ঠকে ঠকে শিক্ষা হয়ে গেছে আমারও, পোক্ত গিন্নিদের কাছে শুনেছি ওদের সাথে বেশি কথা বললেই বিপদ... স্রেফ কাজের কথাটুকু।
এক সিঙ্ক এঁটো বাসন পড়ে আছে আর বাসি ঘর দোর, আমার বাড়িতে চাঁপার ঢুকতে ঢুকতেই রোজ সাড়ে এগারোটা। ঠিক পঁচিশটা মিনিট বরাদ্দ কাজে বাকিটা বকবক, সারা পাড়ার খবর অবিশ্রান্ত বলে যাবে... না শুনলেও ওর ভারি বয়েই গেল। জলখাবার দেব বলে বিপদে পড়েছি, ওর সঙ্গে রোজ আমাকে চা রুটি তরকারি জলখাবার খেতে হয় নাহলেই রুটি বাসি বলে ফেলে দেয় ডাস্টবিনে লক্ষ্য করে দেখেছি। আমার সকালবেলায় রোজ জলখাবার বানিয়ে দিতে হয় টাটকা দুই মেয়ের ইস্কুলের টিফিন আর কর্তার, সঙ্গে আমাদের দুজনেরও বানিয়ে রাখি। সেই রুটি যদি কেউ বাসি সন্দেহে ফেলে দেয় জল আসে কি না চোখে? আমি আবার রাগলেও কাঁদি, দুঃখ পেলেও কাঁদি, আনন্দ হলেও কাঁদি--- মহা জ্বালা। চাঁপা দেরি করলে আমারও না খেয়ে ততক্ষণ বসে থাকতে হয় অগত্যা।
হুড়মুড়িয়ে ঢুকলো আজ, "সরো সরো দিকি"--- বলতে বলতে। থতমত খেয়ে সরেই গেলাম সামনে থেকে। রান্নাঘরে ঢুকেই সিঙ্ক থেকে দু হাতে সরাতে লাগলো বাসনপত্তর, ঠকাং ঠকাং করে সে সবের স্ল্যাবের ওপর গতি হলো। আমি তাজ্জব হয়ে দেখছি শুধু, ধরার চেষ্টা করছি কান্ডটা কিন্তু বুঝে উঠতে পারছি না আদৌ! তারপর চাঁপা কোঁচড় উপুড় করে সিঙ্কে ঢেলে দিলো পাঞ্জার সমান গোটা ছয়েক কইমাছ, তখনও তিড়িক বিড়িক করছে সেগুলো। তারপর বিজয় গর্বে আমার দিকে ফিরে এক মুখ হেসে বললো, "ও পাড়ার পুকুরে ধরছিল ছেলেগুলো, সে দিন বলছিলে না দেশী কই পাই না বহুদিন সব তেলাপিয়া!"
আপন ঘর
স র মা দে ব দ ত্ত
ক'দিন ধরে যা মুশলধারায় বৃষ্টি হচ্ছে তাতে মনে হয় নির্ঘাত বান আসবে। চারিদিকে একেবারে জল থৈথৈ ঘর থেকে বেরনোর জো নেই। কী-বা দিন কী-বা রাত মিলেমিশে একাকার। স্কুলের বাচ্চারা অফিসের বাবুরা সকলেই কাক ভেজা হয়ে ঘরে ফিরছে। কাজের অভাবে গ্রামে ঘরে ঘরে অনটন। গরু ছাগল গুলো কেমন বিমর্ষ হয়ে পড়েছে। কৃষকের উদাস দৃষ্টি মনে করিয়ে দেয় অদূর ভবিষ্যতে দুর্ভোগের কথা। পাখির বাসা গুলি ভেঙে তছনছ।
এমতাবস্থায় হলুদ ফুলের ডালে পাতার নীচে এসে বসেছে ছোট্ট পাখি। ভালো করে উড়তেও শেখেনি। মা পাখিও নিজেকে বাঁচাতে অন্য কেথাও আশ্রয় নিয়েছে। এখানেই মানুষের সাথে তাদের পার্থক্য। পাতাটিও পরম যত্নে আগলে রেখেছ মাথার ওপর ছাতা হয়ে। চারদিকে টপটপ করে জল পড়ছে পাখিটিকে বাঁচিয়ে। মাঝে মাঝে জলীয় ভারি বাতাস এসে পাতাটিকে নাড়িয়ে দিচ্ছে পাতাটি হেলে পড়ছে দুলছে আবার একটু বৃষ্টি কমলেই সোজা হচ্ছে। পাখিটি তার নরম অশক্ত পায়ের নখ দিয়ে গাছের ডালটিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইছে। কখনো মনে হচ্ছে এই বুঝি তার সলীল সমাধি হবে আর বুঝি ফিরে পাবে না ওর ঘর ওর পরিবার।
হলুদ ফুল গাছটি বরাভয় দিয়ে বলল-"ভাই ছোটপাখি তুমি আমায় শক্ত করে আঁকড়ে ধরো আমি ব্যথা পাব না এখন কিন্তু উড়তে যেও না যেন কোথাও। ভয় পেয়ো না আমি তোমায় ঠিক বাঁচিয়ে রাখবো বৃষ্টি যত জোড়েই হোক তোমার কিছু হবে না। আমরা একসঙ্গে এ বিপদ কাটিয়ে উঠবো নিশ্চয়ই "
ছোট পাখির চোখে মুখে জল।পালক গুলো ভিজে জবজবে
"আমি আর পারছি না ভাই। ঠান্ডায় কাঁপছি। পা দুটো যেন অবশ হয়ে আসছে। জোরে আঁকড়ে ধরতে পারছি না হে ভগবান!! এখন আমার কী হবে "
হলুদ ফুল ---"ভয় পাচ্ছ কেন ছোট পাখি তুমি তো উড়তে শিখে গেছ।আর আমিতো নড়তে চলতেও পারি না এক জায়গাতেই থাকি।আমাকে রোদেরও পুড়তে হয় জলেও ভিজতে হয়
আমার তো পালিয়ে বাঁচবার কোন উপায় নেই গো
জলের ঘায়ে ঘায়ে আমার যে কী দুরবস্থা তা আর কী বলব
দেখো আমায় কী বিচ্ছিরি দেখতে হয়েছে। পাপড়ি গুলো সব খসে খসে পরছে। আমি কী আর কোন কাজে লাগতে পারবো। তবু তো তুমি কত কাজ কর।কত অজানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে খড়কুটো জোগাড় ঘর বানাও।সকাল হবার আগে মানুষ কে জাগিয়ে দাও।
দিন শুরুর প্রথম কাজটাই তুমি করো"।
ছোট পাখি--কীন্তু এই বৃষ্টিতে তো আমি কোন কাজই করতে পারছি না গো শুধু ঠান্ডায় কাঁপছি, ও সূর্য মামা তুমি ওঠো নাগো,একটু তাপ দাও
না গো,আর পারছি না"
এমন সময় একসারি পিঁপড়ে বেয়ে বেয়ে গাছে উঠছে। ছোট পাখির কথা শুনে এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বললো
"ছোট পাখির ঢং দেখে আর বাঁচিনে বাপু
তবু তো তোমরা উঁচুতে গাছের ডালে থাকতে পার আর আমরা তো থাকি সেই গর্তে
এই বেয়াক্কেল বৃষ্টিতে আমাদের কী অবস্থা হয় বলতো।তোমরা উড়তে পার আর আমরা গুটি গুটি পায়ে চলতে চলতে সব ভাসিয়ে নিয়ে চলে যায়। আমাদের কষ্ট কে বুঝবে
কারুর ঘরে ঢুকবার উপায় নেই আর যদি কারুর গায়ে একটু উঠেছি কি সে অমনি একেবারে টিপে মেরে বীরত্ব ফলাবে
পৃথিবীটা যেন আমাদের নয় আমাদের পৃথিবীতে থাকবার কোন অধিকার নেই "
ছোট পাখি --"কীন্ত তোমরা যাচ্ছ কোথায় এই ঝরজলে"
"খাবার গো খাবার, খাবার খুঁজতে যাচ্ছি "
এমন সময় বৃষ্টি একটু ধরে এল হলুদ ফুলের ডাল সোজা হতেই কোথা থেকে একটি প্রজাপতি যেন একেবারে উড়ে এসে জুড়ে বসল একটি বিধ্বস্ত ফুলের ওপর
হলুদ ফুল ভীষণ রেগে বলল---
তুমি খুব স্বার্থপর এতক্ষণ কোথায় ছিলে!আমরা যে কী ভীষণ কষ্টে দিন কাটালাম কই তখন তো একবারও এলে না খবর নিতে। শুধু নিজের সাজগোজ নিয়েই ব্যস্ত"
প্রজাপতি ---আমি তোমাদের ভালো করতেই এসেছি গো।নইলে যে ফুল ফুটবে না।আর দেখ সবাই আমার পাখার রঙেই তো চারিদিকে আলো হয়েছে কেমন পৃথিবী হাসছে, সু্য্যি মামা কেমন আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে মিটিমিটি।
তুমি দেখতে পাচ্ছে, মুখ তোল হলুদ ফুল আকাশের দিকে তাকাও।ছোট পাখি পিঁপড়ে সবাই আকাশে তাকাও দেখ কেমন মেঘ সরে গেছে। ওই দেখ, ওই দেখ কী সুন্দর নীল আকাশ দেখা যাচ্ছে
এমন সময় একটি ফড়িং এসে গুনগুনিয়ে বলে - কী হয়েছে গো তোমরা কীসের কথা বলছো আমাকেও বল না
প্রজাপতি মুখ বেঁকিয়ে অমনি ---হ্যাঁ তুমি তো এখন আসবেই আর অমনি বুঝি তোমাকে সব বলতে হবে!! তোমার তো কোন কাজ নেই শুধু যেখানে আনন্দ সেখানে গুনগুনিয়ে গান করা আর তিড়িং বিড়িং করে ঘুরে বেড়ানো।দেখে শুনে একটু কাজও তো করতে পার না কি!
শিরশিরিয়ে হালকা বাতাস এসে সকলের কানে কানে বলে গেল
"আর কোন ভয় নেই মেঘবৃষ্টি চলে গেছে অনেক দূর দেশে।
এবার সোনালী রোদের আলো গায় মেখে সবাই বাঁচো।এখন খুশির সময় সামনেই শরতকাল মা আসছেন। নদী তীরে কাশফুলেরা বোধনের আয়োজন করছে।
আর কোন বিপদের আশঙ্কা নেই। এবার সবাই প্রাণভরে পৃথিবীতে বাঁচবে।শুধু বাঁচার আনন্দে বাঁচবে।
এ পৃথিবী আমাদের সবার 'আপনঘর'
ছোট পাখি হলুদ ফুল পিঁপড়ে প্রজাপতি ফড়িং সবাই আনন্দে ঘুরে ঘুরে গাইতে লাগলো
" আ হা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে
শাখে শাখে পাখি ডাকে কত শোভা চারিদিকে
আ হা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে "
ঈশ্বরী ডাইন
ম হু য়া গা ঙ্গু লী
কিছুতেই বুঝতেই পারছিনা ওটা কিসের শব্দ..! পা ঘষে চলা, নাকি কিছু টেনে নিয়ে যাবার শব্দ... 'সঞ্জয়' ভীষণ উদ্বিগ্ন কিন্তু আচ্ছন্ন ছিলো মায়া ঘুমের ছোট্ট স্বপ্নে আলোলিকা ভোরে প্রতীচীর হাসিতে...
চোখ খুলেই সোজা বাগানে এদিক ওদিক খোঁজ খোঁজ... শহুরে আদবকায়দায় শহর হলেও এখনও মসলন্দপুরকে গ্রাম বলা চলে; নাহ্ কিচ্ছু নয়তো তবে শব্দটা কিসের..! সঞ্জয় এক বি ডিও অফিসার... ওর পোস্টিং এখন এখানেই... সৌভাগ্যক্রমে এমনই জীবন হয় এদের... পথ দিয়ে যাচ্ছে রানু... বলি ও দাদাবাবু কি খুঁজতিসো..! লজ্জা পেলেও উৎকণ্ঠা মুখে সঞ্জয়! নাহ্ কিচ্ছু নয়। কোয়ার্টারের ঘরটা সঞ্জয়ের খুব পছন্দের... চারিদিকে ঘেরা সবুজ... জানলা দিয়ে দেখা যায় টইটম্বুর এক গভীর পুকুর... আজ অমাবস্যা... অন্ধকার যেন গিলে খাচ্ছে ছোট্ট ঘরটাকে... হঠাৎ রিংটোন; "হ্যালো"..! একটু চুপ যেন ওপারের কেউ... সঞ্জয়ও উদাস... প্রতিচী যেন আনমনা আজকাল... খুব হতাশা ওকে ঘিরে রাখে আজকাল... বাড়িতে অনেক দায়িত্ব... কাছের হবো বললেও কাছে আসতেই ভয় পায়। তবু কিছুটা স্বস্তি দুজনের আদান-প্রদানে মধ্যের মুঠোফোন... যেন একে অপরকে নিবিড়ের নীড়ে রাখে বেশ কিছুক্ষণ... কাছেই মন্দিরে রক্ষাকালী পূজো... রানু অবশ্য সকালেই বলছিলো কৌশিকী অমাবস্যা আজ...
আজ আবার ঐ শব্দ ভোর রাতে!
রানু সকালে পুকুর পাড়ে ভীষণ আলোচনায় মত্ত, গ্রামে নাকি ডাইনী ঘুরছে! অনেকেই নাকি কাল আমার মতো খসখসে শব্দ শুনতে পেয়েছে... কার যেন মা কালি ভর হয়েছিলো..! হতবাক সঞ্জয়'... "এও কি সম্ভব..!" একটু একটু করে ভীষণ জটিল অঙ্ক কেমন গোঁজামিলে গুলছে মাথায়... আজ বড়ো উৎকণ্ঠার রাত... বাইরে শনশন বাতাসে কপাটের ছিটকিনি স্বাধীন ওঠানামায়... খসখস আবার..! সঞ্জয় দেরী না করে সোজা টর্চের আলোয় ভরিয়ে দিলো পুকুর পার...
আঁচল লুটোচ্ছে মাটিতে কপাল জুড়ে সিঁদুর... পাগলের মতো ছুটোছুটি... কিন্তু কে উনি... কিছু না ভেবে সঞ্জয় হ্যাঁচকা টানে ধরলো মেয়েটির হাত... পুকুরের দিকে ছুটছিলো মেয়েটি... "আমি ডাইনী... ছেড়ে দিন আমাকে" "কিন্তু সেতো রূপকথার গল্পে থাকে" সঞ্জয়' বলে ওঠে... মেয়েটি দূর্বিসহ যন্ত্রণার দৈনন্দিন শিকার। রোজ ওকে জোর করে মাকালী সেজে থাকতে হয়! লোক ঠকানোই কাজ..! কুঁড়ে খায় মন... তাই রোজ পাপ খন্ডনে পুকুরে ডুব দেয়.. আশ্রয় হারাবে নাকি মাকালী হবে..! অরাজি হলেই সকালেই গ্রামের লোকের সামনে স্বামী শ্বশুর শাশুড়ি ডাইন বানাবে... সঞ্জয়' বিস্ফারিত লক্ষ্যে ভাবে... ভক্তির এতো শক্তি যে, দেবী বনে যায় ডাইনী..! "সঞ্জয় আজ ঠাকুরবৌ'-এর দাদাবাবু... কোয়ার্টার দেখভাল করে... গ্রামকে কুসংস্কারমুক্ত করার তাগিদই সঞ্জয়ের এখন! আজ বিডিও অফিসার গ্রামের মানুষের কাছে স্বয়ং জ্যান্ত ঈশ্বর। খুব খুশি প্রতীচীও... তবুতো রোজের কতো গল্প থাকে ওদের আজকাল!
পুজার জামা
দী পি কা দে ভৌ মি ক
আজ পঞ্চমী,খুকুর সবে দুটি জামা হয়েছে।দাদু আর মামা দিয়েছেন,বাবা এখনো দেননি।খুকুর বাবা আজকে পুজার জামা কিনতে নিয়ে যাবে।সকাল থেকেই খুব খুশি,নাচ , গান করে কাটছে,খুকুর পড়তে বসার ইচ্ছে নেই আজ।সকালে বাবা অফিস বেড়িয়ে গেলেন,দুপুর গড়িয়ে
বিকেল তারই মাঝে ছোটো পিসি এসেছে খুকুর জন্য নতুন জামা নিয়ে।খুকুর খুশি আর ধরে না।
সন্ধ্যা হতেই খুকুর বাবা বাড়ি ফিরলেন।মা বাবা আর খুকু যাবে বাজার পুজোর জামা ও জুতো নেবে।মনে মনে ঠিক করেছে সাদা পরীর মতোন জামা নেবে আর সাদা জুতো তার সাথে হেয়ার ব্যান্ড।
দোকানে গিয়ে পছন্দের সবকিছু পেয়ে গেলো খুকু। তার সাথে আরো দুটো জামা হলো।দোকান থেকে বের হবার সময় চোখে পড়লো খুকুর বয়সী একটি মেয়ে দোকানের পাশে বসে আছে।ইশারা করে খাবার চাইছে।পড়নের জামাটা হদ্দো ছেড়া।খুকুর বাবা মেয়েটির জন্য খাবার আনতে রাস্তার ওপারে গেলেন ।
আর এদিকে খুকুর নানান প্রশ্ন মেয়েটি কে নিয়ে ,মার কাছে।
মা ও কথা বলছে না কেন? ওর কী হয়েছে? ওর জামাটা ছেড়া কেন? এখানে বসে আছে কেন?ওর বাবা মা নেই? নানান প্রশ্ন।
মা বললে ও কথা বলতে পারে না বোবা,
খুকু বললো আচ্ছা বোবারা কথাও বলতে পরেনা।
মা বললে বোবারা কানে শোনে না, তাই কথাও বলতে পারে না।
ওর জামাটা রোজ পরে,তাই ছিরে গেছে,আর নেই হয়তো জামা।
তবে কী ও পুজতে নতুন জামা পড়বে না? মা বললে কেউ যদি দেয় তবেই পড়বে।এদিকে খুকুর বাবা মেয়েটির জন্য আনেক খাবার নিয়ে ওর হাতে দিয়েছে।মেয়েটির খাবার খেতে লাগলো।খুকুর মা বাবা পথ চলতে এগিয়ে গেলো।খুকু ব্যাগের থেকে একটি জামা বের করে মেয়েটির হাতে দিয়ে জড়িয়ে ধরে টা টা দিয়ে মা বাবা সথে চলতে লাগলো।
খুকুর মা ও বাবা অবাক হলো। বাড়ি ফিরে খুকু বললো ও আমার মতো পুজোতে নতুন জমা পড়ে ঠাকুর দেখতে যাবে, তাই না মা?
ছোট্ট একটি ভুল
অ ন্ন পূ র্ণা দা স
মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৮ এর ট্রেনে বাড়ি ফিরছে। এইসময় ট্রেনে খুব ভিড়। সবাই যেতে বারণ করে। কিন্তু মেয়ে মামার বাড়িতে এসে যাবার সময় মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। তাই দুপুরে খেতে দেরি করে। রূপকথা আবার খাবার পর ভাত ঘুমের অভ্যাস। তাই খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে কোথাও যেতে পারেনা। তাইতো সেও একটুখানি ঘুমিয়ে নেয়। টোট কাকুকে সেইমতো বলে রেখেছে। সে যথা সময়ে এসে তাদের স্টেশনে পৌঁছে দেয়। রূপকথা টিকিট কেটে স্টেশনে যায়। এই কর্ড লাইনে অনেকক্ষণ পরে পরে ট্রেন এবং ট্রেন ঠিক সময় আসে না। সন্ধ্যার এই ট্রেনটি প্রতিদিন আধঘণ্টা দেরি করে আসে। সেইমতো ট্রেন 6-40 মিনিটে আসে। সে মেয়েকে নিয়ে মহিলা কামরায় ওঠে। একটাও বসার সিট নেই। মানুষ ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছে না। এইসময় কাকীমার কথা মনে পড়ে। কাকীমা যাবার সময় বলে তোর কাকু বলছিলো 6 টা ট্রেনে কেন যাচ্ছে, আগের ট্রেনে যেতে পারলো না। এখান ট্রেনে খুব ভিড় হবে। কি আর করবে এতো যে ভিড় হয় তা জানা ছিল না। সবসময় বিকেলের ট্রেনে বাড়ি ফেরে। আজকে মেয়ে কিছুতেই বাড়িতে যেতে চাইছিল না। ওকে অনেক বুঝিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য রাজি করায়। দিদুমার মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু কিছু করার নেই;সোমবার থেকে স্কুল আর একটি নোটিশ জমা দেবার শেষ তারিখ। তাইতো তাকে ফিরতেই হবে। তা না হলে আরও একদিন থাকতে পারতো। যাইহোক এখন এই ভিড় ট্রেনে গন্তব্যে সুন্দর মতো পৌঁছাতে পারলেই হলো। এমন সময় ফোন বেজে ওঠে, তোমরা এখন কোথায়? সে বরকে বলে আমরা এইসবে ট্রেনে উঠেছি। ঠিক আছে, ধীরে সুস্থে চলে এসো। মেয়েকে বলে ফাঁকা জায়গা দেখে দাঁড়িয়ে পড়তে। একজন ভদ্র মহিলা বলে এরা বালি স্টেশনে নামবে আপনার এবং মেয়ে দুজনের জায়গা হয়ে যাবে। সেইমতো তারা এগিয়ে যায় এবং সিটে গিয়ে বসে। কিন্তু পেছন থেকে একটি চেঁচামেচি শুনতে পায়। পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখে দুজন ভদ্রমহিলা কথা কাটাকাটি করছে। একজন আর একজনের দোষারোপ করছে। আপনি এগিয়ে গেলে আমি বসতে পারতাম। আপনি কেন এগিয়ে গেলেন না। সে তাকিয়ে দেখে নীল শাড়ি পরা বয়ষ্ক ভদ্রমহিলা সে তো সিটে বসে ছিল তাহলে আবার কি হল যে বসার কথা বলছে! ভালো করে তাকিয়ে দেখে এবং তাদের কথা শুনতে চেষ্টা করে। তার পাশে বসা ভদ্রমহিলা বলে, নীল শাড়ি পরা ভদ্রমহিলা সিটে বসে ছিলেন। কিন্তু ট্রেনে জানালার সিট ফাঁকা হওয়ায় ওখানে বসতে গিয়ে আগের সিট ছেড়ে যেই ওঠে; তখন ওনার আগের সিট এবং জানালার সিটে সঙ্গে সঙ্গে লোক বসে যায়। তাইতো তিনি চেঁচামেচি করছেন। এই ভিড় ট্রেনে বসার জায়গা পাওয়া সহজ নয়, সেখানে আবার জানালার ধারে বসতে যাওয়ার ইচ্ছা হলে হবে?
যা পেয়েছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে ওনার সিট হারাতে হতো না। এখন দাঁড়িয়ে যেতে হবে।আমি কথাটি শুনে হাসতে থাকি। পরক্ষণেই ভদ্রমহিলার দিকে চোখ যেতে একটুখানি কষ্ট লাগলো। যতোই হোক বয়ষ্ক ভদ্রমহিলা, তাই তাকে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কষ্ট লাগলো। এই সময় আন্তর থেকে কে যেন বলে উঠলো, একটুখানি ভুল......
ভালোবাসা
র মে শ দে
মা, বাবা সন্তানকে ভালোবাসে। সন্তান তার মা, বাবাকে ভালোবাসে। সকল বোন তার ভাইদের ভালোবাসে। সব ভাই তার বোনদের ভালোবাসে। এ তো রক্তের সম্পর্কের ভালোবাসা। স্বার্থপরতার ভালোবাসা। এরা পারেনা রাস্তায় পেরিয়ে যাওয়া মেয়েটিকে বোনের ভালোবাসা দিতে। আর ওই রাস্তার ধারে ভিক্ষে করা ছেলেটা যার মা, বাবা জন্মের পরেই মারা গিয়েছে- একজন বাবা, মা কি পারে না তার স্কুলে যাবার ব্যবস্থা করতে? পারে না---
তার শৈশব গুলো সুন্দর, হাসিখুশি করতে। রক্তের বন্ধন থেকে বেরিয়ে এসে তাকে আপন করে নিতে?
তাহলে হয়তো জগতে ভালোবাসার গুরুত্ব আরো বেড়ে যেতো। হিংসা কমে যেতো। বিশ্বাস বোধ বেড়ে যেতো। মানুষ মানুষকে, মানুষ প্রকৃতিকে ভালোবাসতে পারতো। জগতের বৈচিত্র্য বেড়ে যেতো। বনের গাছপালা, পশুপাখিগুলো প্রাণ ফিরে পেতো। প্রকৃতি আর মানুষের ভালোবাসার বন্ধনে সমাজে শান্তির বাতাবরণ ঘনিয়ে আসতো।
পিতৃস্মৃতি
চ ন্দ ন দা শ গু প্ত
এখন বিকেল পাঁচটা। আজ শনিবার। নিউইয়র্কে এই চুয়াল্লিশ তলা এপার্টমেন্টের টপ ফ্লোরের ফ্ল্যাট থেকে আকাশের মেঘগুলোকেই কাছে মনে হয়, আর রাস্তার গাড়ি ঘোড়াগুলোকে মনে হয় অ-নে-ক দূরে।
নিজের দেশ ছেড়ে এসেছি বাইশ বছর হয়ে গেল। মা তো বহু আগেই চলে গেছেন। তখন আমি খুবই ছোট। বাবা যতদিন বেঁচে ছিলেন, মাঝে মাঝে কলকাতায় ফিরতে বলতেন। সত্যি বলতে কি, চাইলে আমি অনায়াসে কলকাতায় বদলী হতেই পারতাম। আমার স্ত্রী ইভা আমেরিকান হলেও তার যে ভারতে যেতে আপত্তি ছিল, তা-ও না। আসলে দীর্ঘকাল এই মার্কিন মুলুকে থাকার পর মনে হয়েছিল, আমি আর কলকাতার লাইফ স্টাইলের সাথে মানিয়ে নিতে পারব না। ওই ধাক্কাধাক্কি, ভীড়, ভ্যাপসা গরম......আমার একদম না-পসন্দ্। আর সাতবছর আগে বাবা চলে যাবার পর তো আমার কলকাতায় ফেরার কোনও কারণই রইল না।
গতকাল অফিসের পর এক জুনিয়র সহকর্মীর বাড়িতে ইনভাইটেশন ছিল। ছেলেটির নাম শঙ্কর বিশ্বনাথন। ও তামিল, মাসখানেক আগে বিয়ে করেছে। সবাই মিলে ছোট্ট একটা পার্টি হল। আমরা সব মিলিয়ে জনা আটেক গিয়েছিলাম।
যথারীতি অনেক আড্ডা আর গল্পগুজব হল। খাবারের মেনুতে দক্ষিণ ভারতীয় পদ যেমন ছিল, ঠিক তেমনই ছিল একাধিক কন্টিনেন্টাল পদ। খাবার পর্ব শেষ হবার পর শঙ্কর হাতজোড় করে বলল, -----"আপনাদের কাছে আমরা আধঘন্টা সময় চাইছি। আমাদের, মানে আমার এবং আমার স্ত্রীর বাবারা আজ কেউ বেঁচে নেই। তাই তাঁদের স্মৃতিবিজড়িত কিছু জিনিস আমরা যত্ন করে সংরক্ষণ করে রেখেছি। সেইগুলো যদি আপনারা একটু দেখেন, তাহলে আমাদের খুব ভাল লাগবে।"
আপত্তি করার প্রশ্নই ওঠে না, আমরা সাগ্রহে রাজি হলাম।
এবার শঙ্কর আর ওর স্ত্রী কল্পনা আমাদের নিয়ে গেল ওদের বাড়ির ভেতরের একটা ঘরে। ঘরটা খুব বড় নয়, তবে চমৎকার ভাবে আলো আর দেওয়ালজোড়া শো কেস দিয়ে সাজানো। সব মিলিয়ে দুজন প্রয়াত বৃদ্ধ মানুষের প্রায় আড়াইশোটি স্মৃতিচিহ্ন এত সুন্দর ভাবে সাজানো রয়েছে যে, না-দেখলে বিশ্বাসই করা যাবে না। বেশ কয়েকটা ফটো, জামাকাপড়, বইপত্র এইসব তো আছেই। তার সাথেই রয়েছে ওঁদের ব্যবহার করা চটি, পেন, ঘড়ি, চশমা, সিগারেটের কেস, নস্যির ডিবে, রেজার, তাবিজ, আংটি, কাপ-প্লেট, চিরুণি, ছাতা, সাবান, ওষুধপত্র, রুমাল, টর্চ, বেল্ট, ওয়াকিং স্টিক, ওঁদের পরীক্ষা-পাশের মার্কশিট- সার্টিফিকেট ....... এইরকম অজস্র জিনিস।
একটা একটা করে সবগুলো দেখাবার পর শঙ্কর বলল,
-----"আমাদের আফসোস, ওঁদের ব্যবহার করা মোবাইল দুটো বহু চেষ্টা করেও আমরা সংগ্রহ করতে পারিনি। আর আমাদের দুজনেরই মা আমাদের খুব ছোটবেলায় পরলোকে চলে গেছেন। তাই ছবি ছাড়া ওঁদের কোনও স্মৃতিচিহ্নই আমাদের কাছে নেই। প্রতি বছর ওঁদের জন্মদিনে, মৃত্যুদিনে আর আমাদের ম্যারেজ ডে-তে আমরা ওঁদের জন্য বিশেষ পুজো আর স্মৃতিসভা করি।"
ধূপধুনোর গন্ধে ভরা ঘরটা থেকে বেরিয়ে আসার সময় কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম।
বাড়ি ফিরতে সেদিন রাত দশটা বেজে গিয়েছিল। ইভাকে এইসব কিছুই বলিনি। আজ সারা সকাল--দুপুর প্রাণপণ খুঁজেও আমার বাবা-মায়ের কোনও স্মৃতিচিহ্নই খুঁজে পাইনি। শেষপর্যন্ত আলমারির লকারের একদম পেছনে ইভার কয়েকটা পুরনো প্রেসক্রিপশনের সাথে খুঁজে পেলাম বছর দশেক আগে কলকাতা থেকে বাবার লেখা একটা চিঠি।
বেঁচে থাকতে মাঝে মাঝে টাকা পাঠানো ছাড়া বাবার জন্য কিছুই করিনি। বাবার লেখা শেষ চিঠিটাই তাই একমাত্র পিতৃস্মৃতি হিসেবে রক্ষা করব।
পথকাব্য
ব র্ণা লী রা য় স র কা র
বৃহস্পতিবার, ভরসন্ধ্যে। মিঠাই হেঁটে চলেছে পথ বেয়ে। বাতাসে উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনির অনুরণন। আচমকা চেয়ে দেখে, ডাস্টবিনের কোণায়, ছোট্ট লক্ষ্মী পরিত্যক্ত অবস্থায়!
শ্রাবণ
ব র্ণা লী রা য় স র কা র
পঁয়ষট্টি বছরের অণিমাদেবী, হাঁটু ব্যাথা নিয়েও দোতলায় উঠে পূর্ব দিকের ঘরের দরজাটি খোলেন।
সুসজ্জিত সেই ঘরটিতে, আজকের দিনে, একসময়,
ওনার মেয়ের জন্মদিন পালন করা হতো।
মেয়েকে নিয়ে ফেলে আসা দিনের স্মৃতিচারণায় হঠাৎ চোখের জমিতে উদ্ভাসিত হলো সেই ভয়ঙ্কর দূর্ঘটনায় মেয়ের মৃত্যুর প্রতিচ্ছবি!
অণিমা দেবীর চোখে ও ঘরের বাইরে তখন অঝোর শ্রাবণ।
অনল
অ গ্নি মি ত্র
অনল অবাক হয়ে যায়। দীপ্তির তার প্রতি কোনো রুচিই নেই। সে চায় প্রতীকদাকে। প্রতীকদা কলেজে কিছু বছর সিনিয়র। মদ সিগারেট ও মহিলা ঘটিত দুর্নাম আছে তার।
দীপ্তির হয়তো এরকমই পছন্দ ছিল। হতাশ হয় অনল। তাহলে রাতভর জেগে প্রমোশন করার কী দরকার ছিল? আগে কবিতার সাথে বন্ধুত্বে চিড় ধরেছে। কবিতা আগেই শারীরিক ঘনিষ্ঠতা চেয়েছিল। সরল, আদর্শবাদী অনলের তা ভালো লাগেনি। অনল.বুঝতে পারে না কী করবে! তারপর পড়াশোনায় ডুবে যায়। পড়ার বই, গল্পের বই। সে আবিষ্কার করে যে সে গল্প কবিতা লিখতেও পারছে।
নিজেকে নিজেই ভালো রাখতে শিখেছে অনল এখন।... কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে না সে আর!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন