পত্রসাহিত্য
প্রিয়তমকে
মা লা চ্যা টা র্জ্জি
প্রিয় যাযাবর,
তোমার কাছে এই প্রথম আমার চিঠি, হয়তো শেষ কারণ তুমি এখন আর তোমার ঠিকানায় থাকোনা। ঠিকানা বলতে তো ঢাকুরিয়ায় ছোট্ট একটা ঘর, যার দেওয়াল বেয়ে উঠেছে বটের অসংখ্য ঝুরি, সামনে আগাছার জঙ্গল।
আজ শ্রাবণ সন্ধ্যায় কেন জানিনা তোমার কথা খুব মনে পড়ছে। অনেকদিন আগে বৃষ্টির এক বিকেলে তুমি আমার জীবনে এসে ভিতটাকে নাড়া দিয়ে সব ওলোট-পালট করে দিয়েছিলে। বাদলভেজা সেদিন আমরা অনেক ভালবাসার কথা বলেছিলাম। গঙ্গার-ঘাটে বসে সেদিন আমি তোমার কাছে বায়না করেছিলাম হোক বৃষ্টি, তবুও বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আমরা সূর্যের হাই তোলা, পাখিদের নীড়ে ফেরার গান শুনবো। তুমি অট্টহাস্য করে তখনি আমার নাম দিলে ‘বৃষ্টি’, আদর করে বললে, ‘তুমি আমার বৃষ্টি’।
সংসারে আর পাঁচটা মেয়ের মতন আমিও গতানুগতিক জীবন কাটাচ্ছিলাম, তুমিই আমাকে ভাবনার নেশা ধরিয়ে দিলে। কেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে বোঝালে আমিও চেষ্টা করলে দুকলম
লিখতে পারি? গাইতে পারি 'বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল...'
একটা প্রশ্নের উত্তর খুব জানতে ইচ্ছা করে সব শিখিয়ে পড়িয়ে তুমি কেন বোহেমিয়ান হয়ে গেলে? তোমার কি বৃষ্টি বিকেলে আমাকে মনে পড়েনা? হয়তো প্রতীক্ষায় থেকে থেকে আমার জীবনে সন্ধ্যা আসবে, গড়িয়ে পারও হয়ে যাবে। হয়তো সেদিন তোমাকে দেখবো ধূসর কাঁচের মধ্যে দিয়ে, জীবনের শেষবেলায়। হয়তো আমাদের দুজনের মুখে অজস্র বলিরেখা পড়বে, মাথার চুল রূপালী হয়ে আকাশ দেখবে। তোমাকে চিঠি লিখতে লিখতে মন বড় বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ল, ‘বৃষ্টি কল কল কোরোনা’ বলে এখন তুমি চুপ করাবেনা তা জানি।
আজ যখন গোধূলিবেলা হবে তখন যতই বৃষ্টি পড়ুক আমি তোমার পরিত্যক্ত বাড়িতে যাবো। জানি, বাধা দেওয়ার জন্যে সেখানে দরজায় তালা নেই, সবসময় তালা খোলা।
ইতি,
তোমার বৃষ্টি
দারুণ
উত্তরমুছুনদারুণ
উত্তরমুছুন