রেসিপি

ক্রীসমাস কেক

লি পি কা ডি' ক স্টা ম ণ্ড ল

দেখতে দেখতে দুটো বড়দিন পেরিয়ে গেল ওকে ছাড়া। বড়দিন মানে তো খ্রীষ্টজন্মোৎসব। জন্মদিন মানেই কেক পিঠে পায়েস। তবে ক্রীসমাস কেকের কিছু বিশেষত্ব আছে। প্রচুর পরিমাণে ফ্রুট ঠাসা পাম কেক। বড়দিনের কিছুদিন আগে থেকেই খ্রীষ্টান অধ্যুষিত এলাকার বাতাস ভারি হয়ে আসে এগ বাটার ভ্যানিলা এসেন্সের মিষ্টি সুবাসে। সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ভাজা পিঠের দিল খুশ করা ম ম গন্ধ। আরো কিছুদিন আগে থেকে শুরু হয়ে যায় ড্রাই ফ্রুটসগুলোকে আরো ড্রাই করে নেবার পালা। ঝেড়ে বেছে কেটে কুটে রাখা হয় কাজু নাটস কিসমিস রেসিন ডেটস চেরিস মোরব্বা কালারফুল পিলস.... ধুয়ে মুছে সাফ করা হয় কেক বিস্কুটের মোল্ড ট্রে... কারন প্রায় একবছর এগুলোর বিশেষ দরকার পড়ে না। সারা বছরে দু'চারটে বড়ো জোর কাজে আসে। বড়দিনের এই সময়টা বাল্ক পরিমাণে কেক প্যাটিস কুকিস বানাবার দরকার হয়... কিছুটা নিজেদের খাওয়ার  জন্য সিংহভাগটা পড়শি আত্মীয় বন্ধু বস মালিকদের জন্য। দু' বছর আমিও কেক বানাইনি। ক্রীসমাস কেক বানাবার সঙ্গে একটা নস্টালজিয়া কাজ করে। 


আমার আসানসোলে আসার আগে পর্যন্ত শাশুড়িমা 
কেনা কেক দিয়ে বড়দিনে অতিথি আপ্যায়ন করতেন। সঙ্গে দুধ সাদা পাটিসাপটা, কুচো নিমকি... (বিজয়ার মতো) আর ঢালাও ঘুগনি। আমি এসে পাটিসাপটার চ্যাপ্টার ক্লোজড করে দিলাম। বানাতে শুরু করলাম রোস্ট কেক ওরফে রোস কুকিস। ভাজা পুলি বা বাতাস পিঠে, কলকল, ডোনাট। পরে শিখেছি গুজিয়া... সামোসা। 
প্রথম প্রথম অ্যালুমিনিয়ামের ইলেকট্রিক ওভেনে কেক বানাতাম। একটা শেষ হলে আর একটা... সময় লাগতো খুব। ২০শে  ডিসেম্বর থেকে পাওয়ার কাটের ধুম পড়ে যেত। মাঝপথে কেকের পেট যেত চুপসে। কিনলাম  ওটিজি... ওভেন  টোস্টার  গ্রীলার... একটু সময় বাঁচলো। পুরানো স্কুল  থেকে মিউচ্যুয়াল ট্রান্সফার নিয়ে   
নতুন স্কুলে বছর কয়েকের মধ্যে পেলাম রীনাকে। বুদ্ধিটা ওই বাতালো... বেকারিতে গিয়ে বেক করে আনা। ময়দা, ডিম, চিনি, মাখন, বেকিং পাউডার, এসেন্স, ফ্রুটস, নাটস নিয়ে আগে থেকে বুকড করে রাখা সময়ে বেকারিতে পৌঁছে যেতে হয়। বড়ো বড়ো লোহার কড়াইয়ে কারিগররা ফেঁটে ব্যাটার রেডি করে দেয়, প্রথমে তো বেকারির টিনের ছাঁচে গ্রীসড করে কেক বানানো হত। এখন গতির যুগ, ইউসড এন্ড থ্রো... রাংতার ফয়েলে ব্যাটার ঢেলে  কয়লার ভাটি চুল্লীতে  বা ইলেকট্রিক ওভেনে  প্রচুর কেক একসাথে  বেকড হয়ে আসে। 


কত বছর হাসব্যান্ডের সঙ্গে এই পর্বটা সাঙ্গ করেছি। অন্য সব কাজ এদিন গৌণ। কেক বেক করাটাই মুখ্য। 

কিন্তু এই দু'বার পরিস্থিতি ভিন্ন... কেক বানানোটা তাই আপাতত মুলতুবি। 

কিন্তু তোমাদের সুবিধার্থে রেসিপি শেয়ার করলাম।


ক্রীসমাস কেক
উপকরণ:
দু' কেজির ময়দার কেক... 

ময়দা... ২কেজি
চিনি....২ কেজি 
বাটার... ৫০০গ্রামের চারটি(২ কেজি) 
ডিম... পোলট্রি মুরগির হলে ৩৫টা
           দেশি হলে ৫০টা
ড্রাই ফ্রুটস... পছন্দ মত দেড় কেজি
বেকিং পাউডার... ১০০গ্রাম
এসেন্স... ভ্যানিলা,ওরেঞ্জ... ১০ মিলি
জায়ফল ২টো মিহি গুঁড়ো 

পদ্ধতি :
বাটার ও চিনি ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। ডিম ফেঁটিয়ে মিশ্রণটি যখন থকথকে হয়ে আসবে তখন অল্প অল্প করে ময়দা ও বেকিং পাউডার এবং জায়ফল গুঁড়ো মেশাতে হবে। এবার ফ্রুট ও এসেন্স মেশাতে হবে। 
মেটাল মোল্ডে দিলে কনটেনারগুলো গ্রীসড করে নিতে হবে। 
সম পরিমাণে ব্যাটার প্রতিটা  পাত্রে ঢালতে হবে। 
উপরে কিছু কাজু  বাদাম  ছড়িয়ে দিতে হবে। 
ওভেনে ঢোকাবার সময় টাইম চেক করে নিতে হবে। 


সময় :  ৪০-৪৫ মিনিট পর চেক  করে দেখতে হবে
তাপমাত্রা:     ৩৫০° ডিগ্রী ফারেনহাইট 

সম্পূর্ন ঠান্ডা হলে ছাঁচ থেকে বের করতে হবে। 
২৪শে ডিসেম্বর বড়দিনের উপাসনা বা ক্রীসমাস ঈভ শেষে এই কেক খাওয়া হয়।।






মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চতুর্থ বর্ষ || দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল ও বাসন্তী সংখ্যা || ৯ চৈত্র ১৪৩১ || ২৩ মার্চ ২০২৫

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪