ভ্রমণ কাহিনী


সুন্দরী টুমলিং

ক ল্প না রা য়

শীতের হিমেল হাওয়ায় মন পাড়ি দেয় সুদূরে, তাই চললাম বরফের চাদরে মোড়া টুমলিঙে। রাতের গাড়িতে উঠে সকাল বেলা পৌঁছে গেলাম নিউ জলপাইগুড়ি। স্টেশন থেকে গাড়ি নিয়ে শুরু হোলো চলা, পাহাড়ি পথের বাঁকে বাঁকে, গাছের ফাঁকে ফাঁকে রৌদ্রছায়ার লুকোচুরি, পাহাড়ের মাথায় মেঘেদের আনাগোনা এইসব দেখতে দেখতে ঘুম ছুঁয়ে সোজা পৌঁছলাম মানেভঞ্জন।ঘড়ির কাঁটা তখন তিনটের ঘরে।মানেভঞ্জন থেকে গাড়ি নিয়ে রওনা হলাম টুমলিঙের উদ্দেশ্যে।কিলোমিটার নয় যাওয়ার পর গাড়ি থামলো মেঘমায়। এখানে মেঘেরা পাহাড়ের সাথে কথা বলে, মেঘ-পাহাড়ের আলাপন তারই মাঝে সূর্যের লুকোচুরি দেখে সৌন্দর্য্যের মাদকতায় মাতাল হয়ে যায় মন। ছবি তুলে, চা খেয়ে আবার গাড়ি চলতে শুরু করে, চার কিলোমিটার যাওয়ার পরেই বিকেল চারটে সাতচল্লিশ নাগাদ পৌঁছে গেলাম টুমলিঙে। সূর্য তখন দিগন্তকে নানান রঙে রাঙিয়ে, যাচ্ছে অস্তাচলে। ভীষন ঠান্ডা হাওয়া বইছে, চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে বরফ।তবুও, নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ডুব দিয়ে, সেই অপরূপ দুর্লভ মুহূর্তকে ধরে রাখার অভিপ্রায়ে, চলছে একের পর এক ক্লিক। পাহাড়ের ঢালে সূর্য গেলো ডুবে!অবাক হয়ে বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে আছি বর্ণময় দিগন্ত রেখার দিকে। একদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা, অন্যদিকে অস্ত রবির রঙীন রশ্মিতে প্রকৃতির ক্যানভাসে আঁকা হচ্ছে একের পর এক রঙীন দৃশ্যপট! যা না দেখলে বোঝা যায় না, যা ভাষায় অব্যক্ত।

আঁধার ঘনিয়ে এলো, আমরা হোটেল সিদ্ধার্থ-এ আশ্রয় নিলাম। তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস চার থেকে পাঁচ। বরফের মাঝে দুর্গম স্থানে হোটেলের আতিথেয়তায় আমরা মুগ্ধ। আগুনের সামনে কফির মাগ হাতে এক মহানন্দের উল্লাসে সবাই উছ্বসিত। কতরকমের অভিব্যক্তি! আলোচনা চলছে জোর কদমে।
রাতের খাবারে রুটি, ভাত, চিকেন, ডাল, সবজী, স্যুপ সবেরই ব্যবস্থা আছে। খাওয়ার জন্য গরম জল, তাও আছে। সারাদিনের ক্লান্তি, ঠান্ডা কোনো কিছুই যেন বোধের মধ্যে নেই, এমনই এক উত্তেজনা। পরের দিন সূর্যোদয়-এ স্লিপিং বুদ্ধর ছবি তুলবো। প্রায় সারারাত ধরেই জেগে আছি কখন ভোর হয়। রাত তিনটের সময় হোটেলের জানালা দিয়ে দেখি, পরিষ্কার নীল আকাশের নীচে মায়াবী চাঁদের জোৎস্নার আলোয়ান গায়ে দিয়ে প্রকৃতি হয়ে আছে এক স্বপ্নময়ী জাদুকরী। তার জাদুকাঠির ছোঁয়ায় পরম শান্তিতে বুদ্ধ হয়ে আছেন নিদ্রামগ্ন। অনুভব করলাম রহস্যময় মোহময় এক নৈসর্গিক রূপ। স্বর্গ! ভগবান! সব উপলব্ধি যেন একই সাথে হয়ে গেলো, এতটাই অভিভূত আমি।
ভোর পাঁচটা থেকে অপেক্ষা কখন সূর্যদেব দেবেন দেখা। একটু একটু করে আলো ফুটছে তারই সাথে সাথে প্রস্ফুটিত হচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর আকাশ জুড়ে রঙের আভা, পাহাড়ি পথে পরে আছে শ্বেতশুভ্র বরফ। অবশেষে এলো সেই পরম মুহূর্ত, গগনে উদ্ভাসিত হলেন দিবাকর। তাঁর আলো এসে পড়লো স্লিপিং বুদ্ধের উপর। স্বর্গীয় এক দৃশ্য! মনে পড়লো সেই কথা, 'আহা! কি দেখিলাম জন্ম জন্মান্তরে ও ভুলিব না।'

পর্বতমালার এক একটা করে শৃঙ্গ সূর্যের রঙিন আলোয় আলোকিত হচ্ছে, নিজের মধ্যে যেন অনুরণন হচ্ছে। সকাল সাতটা নাগাদ টুংলু-র উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। রাস্তা পুরো মোটা বরফের চাদরে মোড়া।নীল স্বচ্ছ আকাশ, পর্বত-চূড়ায় মেঘেদের আসর জমেছে, বরফ দেখে সবাই আত্মহারা, বরফ নিয়ে নিজেদের মধ্যে ছোঁড়াছুঁড়ি চলছে, এতটাই আনন্দিত সবাই। খানিক সময় কাটিয়ে ছবি তুলে ফিরে এলাম।পরের গন্তব্য ছিলো সান্দাকফু।কিন্তু এতোটাই বরফ পড়েছে যে গাড়ি তো যাবেই না, ট্রেক করে যাওয়াটাও বেশ মুস্কিলের, তাই একটু মন খারাপ নিয়েই ফিরে এলাম পরের গন্তব্যের জন্য, পিছনে পরে রইলো স্বর্গীয় সৌন্দর্যে ভরা অপরূপা টুমলিং।।
আমরা ছিলাম "Siddhart Lodge" এ, এটি টুমলিং, মানেভঞ্জন এ অবস্থিত।
এদের সাথে যোগাযোগের নম্বর: 09593320408




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চতুর্থ বর্ষ || দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল ও বাসন্তী সংখ্যা || ৯ চৈত্র ১৪৩১ || ২৩ মার্চ ২০২৫

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪