শ্রুতি অভিনয়
শিবরাত্রির সলতে
গী ত শ্রী সি ন হা
গলা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে ছেলের প্রবেশ---
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে...
ছেলে--- কি হলো মা! তোমার মুখে এতো মেঘ জমে আছে! বুঝেছি, বুঝেছি আবার কেউ কিছু বলেছে--- তাই তো---
( মা নিয়ে দু'লাইন গান )
**মা মাগো মা, মা গো মা,
আমি এলাম তোমার কোলে,
তোমার ছায়ায় তোমার মায়ায়
মানুষ হব বোলে।**
মা--- উফ বাবু! ছাড় না রে! আমার মাথা ব্যথা করছে! ভালো লাগছে না রে বাবা...
ছেলে--- আবার ভুলভাল কথা! (কপট রেগে) নিশ্চয় কেউ এসে মাথার পোকাটা নাড়িয়ে দিয়ে গেছে! ( গুনগুন করে গান)
মা--- খাওয়ার টেবিলে দেখ তোর কাকিমা এসে এক প্যাকেট সন্দেশ দিয়ে গুটিকয়েক কথা শুনিয়ে গেল! কী বললো জানিস! "আমার চার চারটে ছেলে ইঞ্জিনিয়ার, দেখো দিদি ছোট ছেলেরও গতি হয়ে গেল! আর তোমার একমাত্র শিবরাত্রির সলতে--- (অট্টহাসি)"
ছেলে--- মাগো, আমি পারবো না মা! চাকরির দুনিয়ায় নিজের উঁচু পদের কুর্সি ঠেলে ঠেলে অফিসের দৌহদ্দি ডিঙিয়ে জীবনকে খরচা করতে!
সত্যি বলো তো মা তুমি কী চাও দেখতে আমাকে ওমন পোষাকি পরিস্থিতিতে?
মা--- না না... না বাবু না! আজও চোখ বন্ধ করলে তোর ছোট্ট অপোক্ত শরীরটার কথা মনে পড়ে রে বারবার! হন্যে হয়ে ডাঃ এর দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষুকের মতো ঘুরেছি! শুধু... শুধু তোর প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছি!
ছেলে ------ ভুলে যাও মা আগের কথা! দেখো তো মা, আজ দুনিয়ার দরবারে তোমার ছেলের নাম সবাই জানে!
মা--- সুরের দুনিয়ায় তুই আমার রাজা রে! বড় চাকরি- বড় গাড়ি- বড় বাড়ি কিছু... কিছু চাই না! শুধু তুই সুরে সুরে থাক। এ-ই টুকু। এটাই অনেকটা প্রাপ্তি রে বাবা!
ছেলে--- একি মা! তোমার চোখে জল! মাগো তুমি যে আমার পৃথিবী, পৃথিবীর চোখে জল এলে সব রসাতলে চলে যাবে--- তলিয়ে যাবে সব সৃষ্টি। (প্রাণ খোলা একটা গান)
তুমি মা আমাকে পৃথিবীর এই আলো দেখিয়েছিলে।
তোমারই আলোর এই আমাকে শীতল তুমি করে দিলে
মাগো তোমার স্নেহ মা গঙ্গা হয়ে
ওই অমৃত ধারাতে যায় যে বয়ে।
দেখি তোমার হাসি ওই সোনালী ভোরে
কত স্বপ্নের সুখে হাসে আকাশ নীলে।
মা--- ঠিক বলেছিস! গুটিকয়েক মানুষের কথায় আমাদের জীবনের উপচার তো আর পাল্টে যেতে পারে না! সুরের জগতে যাঁরা আছেন সবাই আমার ছেলে কে নামে চেনে -কন্ঠে চেনে! না রে বাবা, আমার আর কিছু চাই না! আমার একমাত্র শিবরাত্রির সলতে গানে গানে জীবন ভরিয়ে তুলুক, এটাই আমাদের পুরস্কার!
পারবি তো বাবু...! বাবু! পারবি তো...!
ছেলে--- পরম্পরা মা (উৎসাহিত হয়ে)! ডাঃ বলেছিলেন মিউজিক থেরাপিতে আমি সুস্থ হবো! তুমি আর বাবা সারাদিন গানে গানে কথা বলে, সুরে সুরে ছন্দে তালে লয়ে আনন্দে উল্লাসে মহাসমারোহে রোজ রোজ প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে উৎসব বানিয়ে রাখতে আমাদের তিনজনের
দুনিয়ায়!
মা--- এইভাবে একদিন তুই সম্পূর্ণ আকাশ ছুঁতে পেরেছিলি রে বাবা!
বাবু আমরা জয়ী রে আমরা জয়ী--- সব দুর্যোগ কে জয় করেছি--- সঙ্গীত সাধনায়!
ছেলে--- জীবনের পাতা সাজানো থাক সুরেলা সুরের সম্ভারে! অলস মানুষের শরীরে ঘুমিয়ে থাকে নেভা আগুন!
মা--- বৃষ্টি এসে দরজায় কড়া নাড়া দিলে আমরা সন্তর্পণে এগিয়ে গিয়ে আমাদের স্বপ্নদের গায়ে মেখে নেবো! আর আমাদের নিয়ে অন্যদের আতঙ্কগুলো দুঃখের অনুভূতিতে জড়াজড়ি করে ঘুমিয়ে থাকবে!
ছেলে--- ধীরে ধীরে এক পা এক পা করে নেমে হেঁটে যাবে তাদের আভিজাত্যের অহংকার, মাগো সঙ্গীতের কাছে সব যে মলিন মা।
মা--- বাইরে বৃষ্টি পড়ছে রে বাবু!!! দেখ দেখ, কান পেতে শোন বৃষ্টির গান--- শুনতে পাচ্ছি রে বাবা---
বর্ষা আমার জন্ম ঋতু রে বাবু---
বর্ষা আমার জন্ম ঋতু
বর্ষা আমার সুখ
বর্ষা আমার মনের বাউল
বর্ষা আমার দুখ।
বর্ষাতে হই বৃষ্টিমুখর
বর্ষাতে গান গাই,
বর্ষাতে হই প্রেমের কবি
বর্ষাতে প্রাণ পাই।
জন্ম যেমন বর্ষা ঋতু
মৃত্যুও হোক তাই
বর্ষাকে যে ভালোবাসি
বর্ষা আমি চাই।
ছেলে--- (বর্ষার গান শুরু করলো) পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে
পাগল আমার মন জেগে ওঠে॥
চেনাশোনার কোন্ বাইরে যেখানে পথ নাই নাই রে
সেখানে অকারণে যায় ছুটে ফিরে।
মা--- ওই আসে ওই অতি ভৈরব হরষে/জলসিঞ্চিত ক্ষিতিসৌরভ রভসে/ধনগৌরবে
নবযৌবনা বরষা/শ্যামগম্ভীর সরসা।/গুরুগর্জনে নীপমঞ্চরী শিহরে,/শিখীদম্পতি কেকাকল্লোলে বিহরে/দিকবধূচিত হরষা/ঘনগৌরবে আসে উন্মদ বরষা।
ছেলে--- চরণ ধরিতে দিও গো আমারে--- চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে, নিয়ো না, নিয়ো না সরায়ে---
জীবন মরণ সুখ দুখ দিয়ে বক্ষে ধরিব জড়ায়ে।।
স্খলিত শিথিল কামনার ভার বহিয়া বহিয়া ফিরি কত আর---
প্রাচীনতম বাদ্যযন্ত্র যেটা ইতিহাসের সাক্ষর রাখে একটি হাড়ের বাঁশি যা প্রায় 42.000 বছর পুরোনো বলে মনে করা হয়। এই প্রমাণ সাধারণত মানব সংস্কৃতির দীর্ঘ ইতিহাসের প্রেক্ষিতে সঙ্গীত থেরাপির প্রাচীন শিকড় রয়েছে বলে মনে করা হয়।
আজকের শেষ গানটি নিবেদন করা হলো সঙ্গীতের দেবী মা সরস্বতীর উদ্দেশ্যে ।
( বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন