কবিতা


দুর্ঘটনা

বি মা ন  বি শ্বা স

রাতের বাসরে যেদিন তোমার শরীর ছুঁয়েছিলাম
ভেবেছিলাম তুমি অচেনা নও...
বধির নিঃশ্বাসের শব্দ শুনে বুঝলাম 
এ শরীর তোমার, মনটার মালিক তুমি নও!

দিনের আলো গিলে গোধূলি চেয়েছি বারবার
ভেবেছিলাম ভালোবাসবো নরম আঙুল ধরে... জন্ম জন্মান্তর 
পরে বুঝলাম তার রঙ আছে, স্বপ্ন ডুবে গেছে সন্ধ্যের আল বেয়ে
সেই কবে তৃষ্ণার আদিম স্বাদ।

স্বপ্ন ভাঙতেই জীবনের গান শুনলাম
দেখলাম বিষাক্ত আঁধারে ঢেকে আছে মানুষ আর মানুষের মন
বুঝলাম জরাজীর্ণ শরীরটা পড়ে আছে, হৃদয়টা আর নেই!

এখন আর স্বপ্ন দেখি না আমি 
আলোর পথ চেয়ে জেগে থাকি
ভাবি আঁধারের শরীর চিরে যদি কোনো ভালোবাসা আসে এ পথে ভুল করে 
এ আমার কল্পনা নয়, ভ্রম নয়, মধ্যরাতের প্রলাপ নয়
এ আমার প্রেমিক সত্ত্বার অগোছালো ভাবনার থলি।

আর কিছু চাওয়ার নেই। আমি শুধু চাইছি একটি বিশেষিত মোমেন্টাম। দুর্ঘটনা। যেখান শরীর আর মন সহজেই একাত্ম হয়। জানি তুমি ছাড়া এই বিদ্যে আর কেউ শেখেনি এই পৃথিবীতে।





এবার উৎসবে
              
মি ষ্টি বৃ ষ্টি

ঘামতেল গলেছে লজ্জায় 
স্বেদ রক্ত অশ্রু গ'লে পড়ে
শীত থেকে শরতে এবার 
নিচে আসবে তো?
তুমি আসবে তো?
আমাদের রাগ দুঃখ অসীম লজ্জার ভাগ নেবে?
এখানে তোমার মেয়ে কষ্টে আছে 
কোনোটা মরেছে।
কটা খবর
খবর হয়?
সবই তো কবর!
কতো ঘটনা ঘটছে ঘড়ি ঘড়ি
মুখ বন্ধ হয় অন্ধ হয় প্রমাণ লোপাট হয়
ধর্ষিত মৃতদেহ তড়িঘড়ি  
পুড়িয়ে দেয়, পোড়ে, ছাই হয়।
বিচার না পেলে উমা
আমরা উৎসবে ফিরবো না!
এবার বিচার এনো সঙ্গে ক'রে
মরা মেয়েটার...
ওর মধ্যে আগুন ছিলো 
মৃত্যুতে সে আগুন নেভেনি।।




আমি

র ত্না  দা স

লুপ্ত শিশিরে সুপ্ত বাসনা বিনষ্ট ক্ষয়ে গুঁড়ো গুঁড়ো লোধ্ররেণু
বাতাসে মেশে কান্না পরিসরে, 
মনের অগোচরে
ভয়ার্ত রাতে যাপিত নিশীথে।
কে ছিঁড়েছে কলি! কোন ভীষণতর অলি! 
টুকরো টুকরো ছড়ানো ছিটানো দেহাবশেষ অবিনশ্বর আত্মায়---

পড়ে থাকে পথের ধুলোয় অনেক প্রশ্ন জড়ো...

বাঁচবে বলে, বাঁচবে বলে
মৃত্যু এলো চোখের জলে
ক্রোধ মেখে জাগে ক্ষোভ, প্রবল শোকে
উন্মুক্ত শিখা হয়ে জ্বলে
একদিন, 
সবদিন বয়ে যায়... বইতে থাকে...
শীত থেকে গ্রীষ্মে, বর্ষা থেকে বসন্তে।

নীরবতা!
কত কথা! ঘরেদুয়ারে, পথে প্রান্তরে ছড়িয়ে যাচ্ছে আগুন রাগে
নাম কী সেই রূপের!
আমি... আমি... আমি...




ভালবাসা তবু আজ ব্যর্থতার পরিহাস

শু ভা শি স  সা হু

প্রেম তুমি ফিরে যাওয়ার
হাওয়ার মতো ব্যথিত রাতে। 
এ বিরহ ব্যথিত জীবনে এসোনাকো তুমি আর। 

কী হবে ভালোবেসে
এ কঠিন স্তব্ধ রাতে। 
যেন সংকল্পবদ্ধ হই, 
তবেই বা কী লাভ? 

কঠিন মুখ
আর উত্তাপের সহস্র রাত কেটে যায়। 
ভালবাসা তবু আজ
ব্যর্থতার পরিহাস।।




দাগ কেটে যাও

অ রু ণি মা  চ্যা টা র্জী 

স্মৃতি অ্যালবামে টুকরো অতীত 
সেজে থাকে বড় যতনে, 
মানবজমিন হয়েছে পতিত 
খুঁজে ফিরি সেই রতনে। 

বরণীয় যারা, স্মরণীয় তারা 
বলে গেছে কানে কানে,
সাগরের জল মন্থনে যারা 
অমৃত সুধা আনে। 

বলেছিলো তারা, দাগ কেটে যাও 
জীবনে বাঁচার মানে, 
বেলা শেষে গানে, চড়েছি যে নাও 
মধু ভান্ডের টানে। 

কাজ করে যাও, দাগ কেটে যাও 
ছোট্ট জীবন বৃত্ত, 
অশ্রু রক্ত ঝরিয়েছি তাও 
জীবন তো জানি অনিত্য!

নিজের সাথে তো যুদ্ধ করেছি 
নিজেকেই ভালোবেসেছি, 
রক্ত আঁচড়ে নিজেকে ক্ষয়েছি 
দাগ কি কাটতে পেরেছি?

বেলা শেষে আজ, মন্থনে হৃদ 
বকুল সুবাস বিলায়,
রক্ত মূল্যে বুনিয়াদি ভিত 
ফিরছি আমার কুলায়।

শত ফুল আজ যতনেতে রাখা
উর্বর হৃদ বাগিচায়, 
মানুষের কথা, ভালোবেসে থাকা 
মানুষের শুধু পরিচয়। 

যৌবন বেলা মোহ বিভ্রাট 
বুঝতে চাইনি কিছু, 
দিনমনি আজ, চুকিয়েছে পাট
বিবেকটা পিছু পিছু!

বেলা শেষে গান, ঐক্যের তান 
বলে যাই গানে গানে, 
ভালোবাসা হলো জীবনের গান 
দাগ শুধু অভিমানে।




সেই গাছটা

কৌ শি কী  ঘো ষা ল

গাছটা বাড়িটার মতই পুরনো
অথবা তার থেকেও কিছু বেশি
খিড়কি পুকুরে ছায়া ফেলে
স্থির কাটিয়েছে 
কতগুলো কালের পথ।

ঐ বাড়িটা তার গল্পগুলো
বুকের ভেতর জমিয়ে
আজও দাঁড়িয়ে আছে।

সেই যে টুকটুকে ছোট্ট বউটা
যাকে একদিন তার প্রিয়জনেরা 
লাশ বানিয়ে, ফেলে দিলো এই পুকুরে
 নীরব, বড়ো অসহায়তায় দেখেছে ও।

তারপর প্রজন্ম কেটে গেলো
এ বাড়ির রূপবতী কন্যা
মন দিলো এক রাখালিয়া বাঁশির সুরে
তাদের অপ্রয়োজনীয়  গুণগুনানিতে
ভরে উঠতো গাছটার বুক।

একদিন সেই সুর
কোথায় হারিয়ে গেলো
রাজকন্যাকে নিয়ে গেলো 
অন্য এক রাজপুত্র। 

তারপর আরো কত,
কতগল্প, কবিতা, উপন্যাস
গড়েছে ভেঙেছে  মিশে গেছে অতলে
গাছটা সব দেখেছে।

আরো কত দেখবার
অমোঘ বিধান মাথায় নিয়ে
ঠায় দাঁড়িয়ে আছে
খিড়কি পুকুরে  ছায়া ফেলে।।




তোমার জন্য কষ্ট হয়
     
প্র দী প  সে ন 

তুমি আজীবন দুখু মিঞাই রয়ে গেলে গো। 
তোমার সৃষ্টি হুল ফোটাতে পারেনি এতটুকুও
সেই জাতের নামে বজ্জাতিই তো চলছে 
জাত শেয়ালের হুক্কাহুয়া এখনো তো শুনতে পাই 
জাত জালিয়াতের সেই জুয়াখেলাও চলছে। 
একবার ওখানে ভজনালয়ের মিনারেও চোখ রাখো 
দেখতে পাচ্ছো, ভণ্ডের দখলে চলে গেছে কেতাব, ধর্ম? 
ও কীসের জয়গান শুনছো, মানবতার? আদৌ তা নয়। 
ঠিক বুঝেছিলে, তাই তো বলে গিয়েছিলে-
'ভাঙি মন্দির ভাঙি মসজিদ ভাঙিয়া গির্জা গাহি সংগীত' 
কিন্তু কেতাবি জ্ঞানে অন্ধের দল সে সঙ্গীতের বোঝেই বা কী? 
বড্ড কষ্ট হচ্ছে না সেই মাটিতে ঘর বেঁধে 
থেকে থেকে জাত শেয়ালের হুক্কাহুয়া শুনতে? 
অথচ জান্নাত থেকে জাহান্নামের মাটিতে তো তোমার ঘর বাঁধবার কথা ছিল না! 
কষ্ট হয়, তোমার জন্য। খুব, খুব কষ্ট হয়।





শীতের দিন

অ নি ন্দি তা  না থ

কুয়াশা ঢেকেছে ভোর, 
পথের দু'ধারে বৃক্ষের সারি।
পাতা হ'তে শিশির বিন্দু 
ঝরছে টুপটাপ
মেলেনি দেখা রবির---
উষ্ণ তাপ নিতে শুকনো 
পাতায় আগুন জ্বালে ওরা। 

শীতের অতিথি পাখির
আগমন ঝিলে। 
জলের সাথে ওদের খেলা। 
হিমালয়ের পাগল হাওয়ার মাতন। 
তাপের পারদ মাত্রা নামছে, 
আনন্দে উচ্ছল!!

বেলার বয়স বাড়ে,
পাতার ফাঁকে একটু রোদের ঝিলিক, 
মিঠে রোদ্দুরের ছোঁয়া পেতে 
ছোটাছুটি করে ওরা।

গলিতে খেঁজুর রসের কলস ভারে 
শিউলিরা--- হেঁকে যায়।
কমলার টক-মিষ্টি রস
চমক আনে বনভোজনে।

শিশিরের ঘায়ে পাতার রূপ বিবর্ণ, 
পড়ছে টুপটাপ পাতা খসে, 
ওদের ব্যথিত অন্তর। 

পত্রালিশূন্য দেহ বৃক্ষদের, 
পাখিরা তাদের সুখের 
নীড় খোঁজে। 
শীতলতায় স্তব্ধ চতুর্দিক।
ঋতু বৈচিত্র্যে শীতের এভাবেই আসা-যাওয়া।





জীবন-তরী

দি লী প  কু মা র  ম ধু

তোমার ঘরে এলাম যখন 
দরজায় দিলে খিল 
দাঁড়িয়ে থেকে হাতটি রাখি 
যেথায় থাকে দিল। 

দুটি পায়ের ছাপ রেখে যাই 
তোমার ঘরের দোরে 
পায়ের চিহ্ন দেখতে পাবে 
দরজা খুললে ভোরে।

দেখব তখন কেমন করে 
পদচিহ্ন মোছো 
বিজন মনে বলবে তুমি---
হৃদয়েতে আছো। 

তবে কেন লুকোচুরি 
খোলো মনের দ্বার 
জীবন-তরীর প্রতিক্ষণে 
বইবে কতো ভার!





লহ প্রণাম

সু স্মি তা  ম ন্ড ল  পা ই ক (মা লা)

কলম ও কালির যত কৃষ্টি,
বঙ্গে ভরায়ে তব সৃষ্টি!
সৃজনে দিয়েছো উপায়ন,
তুমি মোদের সেই গুণীজন!
যাঁর জ্ঞানে দীপ্ত রবি,
তিনি আমাদের বিশ্বকবি!
তব গুন লিখেও লেখার নাহি শেষ,
তব রচনা অধ্যয়নে গর্বিত মোদের দেশ।
বারে বারে বলে যায় মন,
এসেছে যে বাইশে শ্রাবন।
ধন্য তব প্রতিভা ধন্য তব স্বনাম,
দাসেরে ধন্য করি লহ কোটি প্রণাম!




নেশা

নূ পু র  রা য়  (রি ন ঝি ন)

এই তো মনের রোগ 
মাথায় যেদিন পোকা নড়ে 
লেখার বাড়ে ঝোঁক
সকাল হলে ঝুটঝামেলায়
বাড়বে নিজের ভোগ।

কী করি আর তাই
কীপ্যাডে তাই আঙুল চালাই 
মিটাই খিদে ভাই
এমনি করেই ভালো থাকার
মন্ত্র জপে যাই।

রাত্রি শেষে দিন
আঁধার কেটে আলোর দেখা 
আসবে যে একদিন
সেই আশাতে পথের কাঁটা 
মাড়াই তা-ধিনধিন।




চাঁদ দেখিনা তোমায় দেখি

হী রা ম ন  রা য় 

চাঁদ ও দেখে লজ্জা পাবে তোমার ও রূপ দেখতে পেলে।
তোমার চোখে চোখ পেতে রই চাঁদ দেখিনা তোমায় ফেলে।।
যখন চাঁদের ঝিলিক ঠিকরে পড়ে জ্যোৎস্না সবার নজর কাড়ে।
আমি তখন তোমায় দেখি তোমার আদর গায়ে মাখি নদীর পাড়ে।।
চাঁদের আলো আমার ভালে রাত্রি করে আলো।
তুমি আমার পূর্নিমা গো আমার হৃদ মাঝারের আলো।।
ভ্রমর কালো দুষ্টু ও মেঘ চাঁদকে যখন আড়াল করে।
তখন পূর্ণিমাতেও সন্ধ্যা যেন আঁধার এসে জড়িয়ে ধরে।। 
ভাবি তোমায় দেখে লজ্জা পেয়ে মেঘের ফাঁকে দিচ্ছে উঁকি। 
তাই তো তোমায় দেখে চাঁদ দেখিনা করি ভালবাসার আঁকিবুঁকি।। 
রাতের আঁধার দূর মনে হয় তোমার আলোর ঝলকানিতে। 
তাই তো তোমায় দেখি, চাঁদ দেখিনা মাধবী ভরা ব্যালকনিতে।।
বর্ষা রাতে তোমার হাতে গরমাগরম চায়ের কাপে।
উড়িয়ে ধোঁওয়া মনের আঁধার দেয় উড়িয়ে উষ্ণ তাপে।।
ফাগুন পূর্ণিমা তিথিও ছাড়
তাজমহলের রূপবীথি চাঁদকে বিকোয়।
যেন তুমি আমার মমতাজ ওগো চাঁদ মমতাজ একই সুতোয়।।
তুমি চোখের আড়াল হলেই যেন অমাবস্যা ঘিরে ধরে। 
রাহুর গ্ৰাসে চন্দ্রিমা যেমন 
গ্ৰহণ চক্রে আটকে পড়ে।। 
তাই তো সকল ভুলে 
তোমার চোখেই চোখ পেতে রই। 
ও আমি চাঁদ দেখিনা
তোমায় দেখে বিবশ হয়েই রই।।




আবার সেই অসম্ভবের আশা

আ জী মি

আমার ফেলে আসা প্রথম ভালবাসা 
তোমার আঁচলের গন্ধ মাখা উজ্জ্বল হাসি 
শব্দহীন ঠোঁটে নির্বাক নয়নে আমি চেয়ে থাকি 
নীল আবেগ মেখে ভেসে চলেছিলাম নিজেই
পৃথিবীর সাজঘরে অজানা অতিথি হয়ে 
অনন্ত নিলয় হৃদপিণ্ডের ভাঁজে ভাঁজে রেখেছি 
আমার অব্যক্ত ভালবাসার প্রদীপ।
কখনো তোমার মনে পড়ে কি সেই মুহূর্ত 
হৃদয়ের কথা যখন থাকেনা গোপন 
একে একে জেনে যায় সবাই
যেমন ঢাকে না মেঘের আড়ালে শুভ্র চাঁদ
প্রবল বাতাসে ফুলের সৌরভ।
সকালের সুমিষ্ট আবেগের বর্ষায় ভিজে 
এক শান্ত আবিরের ধারায় মেতে বসন্ত বিকেলে
এখনো মনে পড়ে মেঘমুক্ত নীল আকাশ 
তারা ভরা পূর্ণিমা মাধবী রাত
ভীষণ এক অস্থিরতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেত 
স্রষ্টার দানে ঔ অনিন্দিত ক্ষণে।
পাওয়া হলো না আমার সেই বিকেলের আকাশ
যে স্বর্ণালী প্রভায় আলোকিত করে হৃদয় 
প্রেমের রঙিন মেঘমালা উড়ে গেছে নিরুদ্দেশে।
আজ জীবনের শেষ বিকেলের সীমান্তে দাঁড়িয়ে 
এখন এই রুদ্ধজীবনের যবনিকা কালে 
কেন মনে বাঁধি আবার সেই অসম্ভবের আশা।



ভালো আছি

প ঙ্ক জ  মা ন্না 

শেকড়ে শেকড়ে চেনাজানা গাঢ় হলে 
নিরেট মানুষও আবার প্রেমিক হবে
লোভে ঘর ভাঙে, হয়তো জাহাজডুবি 
মানুষ মেতেছে সংহার উৎসবে 

কতদূর যাবে ভাইকে পেছনে ঠেলে!
আর কত পেলে সব-পেয়েছির দেশ!
উপরে উঠলে একা লাগা দস্তুর
হাত ধরাধরি ভালো আছি, এই বেশ 

পাশাপাশি বোসো লগ্ন মাটির বুকে 
ভালোবাসা দেখে আকাশও আসবে ঝুঁকে 
মানুষ এখন দূরতর দ্বীপবাসী 
আমার হৃদয় হৃদ-গানে বিশ্বাসী



আত্মার শান্তি

স র ব ত  আ লি  ম ণ্ড ল

বেঁচে থাকার নামই জীবন।
শ্বাস যতদিন থাকবে
তোমার কর্মগুণে অনেক নাম ডাক হবে।
যে মুহূর্তে তোমার মৃত্যু হবে-
তোমার নাম হয়ে যাবে শবদেহ।

তাই বেঁচে থাকার সময়-
তোমার যেটি পছন্দ, 
হৃদয় দিয়ে সেটি অনুভব করো।
হতে পারে নাচ- গান কিংবা
 হাসি ঠাট্টা- তামাশা,
 হতে পারে খাদ্যরসিক হিসেবে,
 খাও, তবে আনন্দের সাথে---
 যদি ঘৃণার সাথে খাও, তবে বদহজম হবে।

পৃথিবীতে যখন মানুষ হয়ে জন্মেছো 
কিছু কাজ করে যাও।
মৃত্যুর পরে শবদেহ বললেও-
মুখে যেন একবার বলে,
আহা! মানুষটি ভালো ছিলো!
নয়ন যুগল দিয়ে চিবুক বেয়ে যেন-
দু'ফোঁটা অশ্রু পড়ে গড়িয়ে
সেটাই হবে তোমার আত্মার শান্তি।




নন্দিনী কথা

প্র দী প  ব সু

চাই যে তোমায় দিবানিশি,
চাই তো ভালোবাসতে...
রাতের আঁধারে পথ চলতে
থমকে গেলাম ফিরতে।

দিনের আলোয় কাটিয়ে ভয়
চাইবো তোমার ধরতে হাত,
উপযুক্ত হলেই তবে,
ফিরিয়ে দিও সুন্দর বরাত।

কুসুম পেলব মনের দরজায়
সামনে নেই কোন ছিটকিনি,
বাইরে থেকে যায় না খোলা...
কিভাবে ওজন দরে ভালোবাসা কিনি?

ভালোবাসার জন্য দরকার এক শ্বেতশুভ্র মন,
যেমনটি তুমি ছিলে তেমনই থেকো চিরন্তন।





সার্থক

শ্রী ধ র 

দিনের সূচনা হয়, সূর্যোদয়ের সাথে,
নিয়ে আসে আগাম বার্তা, সকলের কাছে,
পশু, পাখি, মানব জাগে, বিশ্রামের শেষে,
কর্মযজ্ঞ শুরু হয়, এই অবকাশে।

বৃদ্ধ-বৃদ্ধার অনুভবে থাকে, কেবলই নিঃসঙ্গতা,
চোখে মুখে ধরা পড়ে, তাদের উদাসীনতা,
যৌবনকালে জীবন তাদের, ছিল গতিতে ভরা,
এখন যেন সেই জীবনেই, চলছে কেমন খরা।

মানব জীবন ক্ষণস্থায়ী, বৈচিত্র্যে ভরা,
অস্তিত্ব রক্ষার জীবনযুদ্ধে, লড়তে হয় সারা,
সময়ের সাথে ঋতু বদলায়,চলে আসা-যাওয়া,
মানব কল্যাণ করতে পারলেই, জীবন সার্থক হওয়া।





লোকজীবন

দে বা শী ষ  স র খে ল

নির্জনতার ভেতর 
এক চিরবিরহীর কান্না জমে থাকে ।
নিম গাছটির ছায়ায় সাদা সাদা নিমফুল আলো।
কতকাল তুমি নিমের সুগন্ধ নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছো ছায়ায়। 
পাশের রাস্তা দিয়ে ছোট হাতি চেপে লাচিয়ারা ছৌ  উৎসবে যায়।
চাল ও চকর জানে তারা 
উল্কা জানে 
তাদের গানে 
চামু কামারের সুর  
তুমি তার কিছুই জানো না 
পড়ে থাকে আনখ্ সমুদ্দুর  
দূর দেশে যাবে 
কি লাচ দেখাবে 
তার তুমি কিছু জানো?
তোমার ভেতরে এক ভল্কানো       
লোকালয় খোঁজে
নির্জনতার ভেতর 
কোন লোকতীর্থ নেই।
লোকজীবনের ভেতর
কোন নির্জনতা নেই।




অভিমানের ইতিকথা

চ ম্পা  না গ

অভিমানগুলো আসলেই এক একটা সুনামী কিংবা বেনামী ঝড়...
সেই কবে বড্ড অভিমানে এসেছিল প্লাবন...
তুমি ছুঁয়ে দিতে বরফ গলা জলের মতোই হল সুশীতল।
এমনি বোধহয় হয় ভালবাসার ছোঁয়া...
কারণ ছাড়া নাছোড়বান্দা,
অকারণে হয় সর্ব্বহারা।
অভিমানের পুটলি থেকে সব হয় ফুস।
এক মন্তরে কুণ্ডলী পাকিয়ে বুকের ভিতর ঠুস।
জীবন তুমি সাত রঙা ঘুড়ি!!
রঙ দিয়ে অঙ্গ সাজাও,
মাঝ রাতেও তারা গোনো,
প্রেমের আগুনে তাপ সেঁকো,
উষ্ণ ওমে তোমার খোঁজ। .. 
ভালবাসায় জ্বলে মরো...
জীবন তুমি সত্যি অভিনব !!




হাতছানি দেয় বারবার

ই লা  সূ ত্র ধ র

বনপাহাড়ীর তল্লাট এখন কুয়াশা মাখে
মেঘের ভ্রুকুটি গভীর আঁধারে ফিসফিস কথা
জানিনা কিসের মাদকতা এসে অবয়ব আঁকে
এখানে আবেশে ভেজা বাতাসের গাঢ় নীরবতা 

স্বপ্ন প্লাবনে কোপাই খোয়াই প্রকৃতির মুখ
মনের ভিতর সাঁতার কাটছে চাতকের পাখি 
স্বর্গীয় স্বাদ অনাবিল হাসি দিগন্ত সুখ
হৃদয়ের খাঁচায় সম্পদ ডালি যত্নে রাখি

লালমাটি পথ সোনাঝুরি হাট দেহাতী জীবন 
রঙ বেরঙের গ্রামীণ পশরা বনানীর ঘরে
সাঁঝের বেলায় পল্লী গানেও জুড়েছে ইমন
উদাস বাউল একতারা হাতে মাতোয়ারা করে

কোন নিদারুণ করুণ চাউনি আসর সাজায়
মহর কুঠিতে আলো ছড়িয়েছে ঝলমলে ঝাড়
সাঁওতাল যারা আদিবাসী নাচে ধামসা বাজায়
হিমেল হাওয়া হাতছানি দেয় শুধু বারবার।





ভালো থেকো

ছো ট ন  গু প্ত

যার সাথে দেখা হয় তাকে ডেকে বলা
ভালো থেকো নিজেতেই দিন থেকে রাত 
উপহার না চেয়েও আলোপথে চলা
ভালোবেসে ছবি এঁকো, বাড়িয়েছি হাত ।

আকাশের যত তারা খসে গেলে যাবে
শুক্লার চাঁদ এলে গান শুরু হবে
বৈঠকি মেজাজের জোছনা সোহাগে
সাতসুরে গুনগুন বার্তা নীরবে 

মিলনের বেলা জুড়ে উষ্ণ পরিধি
উৎসবে মেতে ওঠা লতায় পাতায়
ডাক দিয়ে কাছে আসা চলমান বিধি 
লিখে যাওয়া কবিতারা থাক গে খাতায় ‌।

ভালো লাগা কোনো লেখা খুঁজে বের করা
অনন্ত পথ ধরে হেঁটে চলে যাওয়া
সে কবির বিড়বিড় আলাপ অধরা
দিন শেষে ফালি চাঁদ জোছনাকে পাওয়া ।

দেখা অদেখার ভিড়ে মুখরিত স্মৃতি
কিছু তার মনে থাকে কিছু তো হারায়
খুঁজে ফেরা রাত জাগা স্বপ্ন প্রতীতি
না পাওয়ার সুখ নিয়ে ভালো থাকা যায় ।




হেমন্ত

ড ক্ট র  শি খা  দ ত্ত 

হিজল বনে ডুবে যাচ্ছে বাদামি বিকেল,
হেমন্তের বিষন্ন বেলা ফুরিয়ে যেতেই 
শীত নামছে মৃদু পায়ে কলাবতী রাগে।
কোনায় কোনায় জমে উঠেছে হীরেকুচি নোলকের সংসার।
এ সময় কে যেন ডাক দিয়ে যায়। 
তখনই দু'হাত আকাশের দিকে বাড়াই। 
হাত বাড়ালেই শুনি, ধ্বনি প্রতিধ্বনি।
আমন ধানের গন্ধ মাখা বাতাস ছুটে আসে আলপথে,
একটু রাত বাড়লেই আকাশ কুয়াশায় মায়াময় চাঁদ ওঠে। 
হেমন্তের ওষ্ঠ পাপড়িতে তখন মেহগনি বাতাস খেলা করে। 
মৃদু আলোর বৃত্তে জমে থাকা প্রস্তর লিপিতে 
ঝুলছে তার শীতার্ত ডানা।




আমরা সবাই মানুষ

উ প মা  বে গ ম

আমরা যারা নিজেদের সবাই মানুষ বলে দাবি করি,
আসলেই কি সবাই মানুষ?
কতশত সত্য গিলে খাই-
আবার কিছু প্রকাশ করি শুধু নিজের স্বার্থে।

খালি আর দুর্বল জায়গায় প্রতিবাদ করি,
যেখানে সত্যি দরকার সেখানে নীরবতা অবলম্বন করি।
চাটুকারিতা-চামচাগিরি করে ভালোবাসা প্রদর্শন করি।
মিথ্যে কথাও এমন সুন্দর ভাবে প্লেটে সাজিয়ে দিই,
যে সত্যিরা অন্ধকার গলিতে লুকিয়ে পড়ে লজ্জায়।

সত্যিটা তুমি, আমি--- আমরা সবাই জানি।
তারপরেও  স্ব-গৌরবে বলি আমি মানুষ, তুমি মানুষ আর আমরা সবাই মানুষ।




গোধূলি রঙ

প্র গ তি  দে  চৌ ধু রী 

এই গোধূলি রঙ 
আকাশের বুকে এঁকে দেয় শত আলাপন। 
ছায়াপথ কত নিটোল আবেগে 
জড়িয়ে ধরে অভিমানী মেঘে 
চুমু খায়... রঙ বিলোয়...
কিশোরী লালিমায় মেঘ 
লাল হয়ে যায়...
স্বপ্ন ছড়ায়... ছবি আঁকে... 
আকাশ তা বুকে ধরে রাখে 
পরম মমতায়...
অবশেষে--- মুছে যায় সব 
জেগে উঠে তারা, ভেসে উঠে চাঁদ।




হিমেল হাওয়া

অ ন্ন পূ র্ণা  দা স

এই হিমেল হাওয়ায় চারিদিক নিস্তব্ধ
সোঁ সোঁ হাওয়া--- ইছামতি নদীটি কালের সাক্ষী বহন করে চলেছে। 
বালিকা বধূর সময় এখন নেই
তবুও কোথায় যেন নিরাপত্তার অভাব, যুদ্ধের ঘোষণা.... 
আজকে আমি আর তুমি নিয়ে গল্প বলতে ইচ্ছে করছে না। 
শুধু এই নিস্তব্ধ সময়ে পৃথিবীর মাটিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে ইচ্ছা.... 
যদি দেখা হয় তবে নতুন কোন গল্পের শুরু হবে
তবুও আজ বলতে চাই,
মানুষ বেঁচে থাকে অন্তরে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করার সু-দীর্ঘ চেষ্টা নিয়ে। 
যা যুগে যুগে দেখা দেয় ধর্মের মধ্যে, সমন্বয়ে ঐক্য শান্তির বার্তার প্রতীক হয়ে  হিন্দু,মুসলমান, জৈন, বৌদ্ধ...





ডিসেম্বর

ধী রে ন্দ্র না থ  চৌ ধু রী 

ডিসেম্বর মাস মানেই তো হাড়-কাঁপানি,
চাল ডাল তেল, প্রেসার কুকার, কি লাফানি।
স্নানের জলের সাথে ডিভোর্স, মাস তিন চার,
সূর্যটাও অনেক আগেই ঠিক পগার পার।
তুই তো তখন লেপের তলায় বেলা "দশ" এ,
শীতল শরীর, উষ্ণতারই অঙ্ক কষে।
দেখা, শোনা, ছোঁয়াছুঁয়ি, স্বপ্ন অলীক,
প্রেমটা যেন আনটার্টিকার বরফ ঠিক।
খাওয়া দাওয়া লাটে ওঠে, বিছানা আগে,
শরীরটাকে লেপের তলায় ঢোকাতে লাগে।
প্রেমের কথা বললেই তুই খুব ভয়ঙ্কর,
"এই ছোকরা, পালা, এটা মাস "ডিসেম্বর "।





ধোঁয়াশা

লি পি কা  ডি' ক স্টা  ম ণ্ড ল

অঘ্রাণের ধূসর তুলোট চাদর জড়িয়ে প্রকৃতি কেমন ম্রিয়মান।
কাঁচা পথে মিহি ধুলো গুঁড়ো মশলার মতো প্যাকেটের গায়ে চিটে আছে।
অ্যাসফল্টের গায়ে পায়ে পায়ে উঠে আসা ধুলোর আস্তরণ।
ছুটন্ত গাড়ির পিছে ধাওয়া করে পথ সারমেয়... নেড়ি কুত্তার মতো।
একসময় ক্লান্ত হয়, ভঙ্গ দেয় রণে।
অনেকটা দূরে এসে.... আস্তানা গড়ে পথের দুধারে।
দ্রুতগামী পথচারীদের পথচলার সঙ্গী হয়।
প্রকৃতির বুকে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি নেমে আসে
কুয়াশারা মুড়ে নেয় দশদিক। 

রাত গভীর হয়।
ধূলি ধূসর বায়ু শীতল হয় জলকণা হয়ে নামে
মেঠো পথের তুলোট কম্বল আধ ভেজা হয়ে নেতিয়ে থাকে।
বিটুমিনের পিচঢালা পথে কর্পোরেশনের গাড়ির ছেটানো কৃত্রিম বৃষ্টিধারা মেখে পথগুলো চান করে বাবু হয়ে থাকে।
গাড়ি ঘোড়া এখন কম চলে পথে সওয়ারহীন।
শুধু ট্রাকগুলা ছোটে হঠাৎ হঠাৎ।
মারমুখী সারমেয় তাড়া করে মরে পথের পরে। 
ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষায়। 
ল্যাম্পপোস্টগুলি কাঁধে উঁচানো বন্দুক নিয়ে ঝিমোতে থাকে।
ভার নামাবার পালা এবার, মুক্তির তরে.... 
সূর্যের লালিমা দেখা দিলে  একবার দপ করে উঠে
মিইয়ে যায়।
পাশের নয়ানজুলির থেকে সদ্য ধোঁয়া ওঠা চায়ের পেয়ালার মতো ভাপ উঠতে থাকে...
নিশ্বাস ভারি করা ভোরের গাড়ি ধরতে ছোটা কেরানি বা সব্জিওয়ালা একবার দাঁড়ায়। 
বুক ভরে হাওয়া নেয় হাপরের মতো আবার ছুটতে থাকে।
বাইরে শন শন হাওয়া বইতে শুরু করে
কপালে বাহুমূলে স্বেদবিন্দু জমতে থাকে।
কমলা লাল সূর্যটা ফ্লাইওভারের মাথা ছাড়িয়ে উঁকি মারে... অঘ্রাণের ভোরে।।





ছন্দপতন

বি দি শা  ব্যা না র্জী                   

অবশেষে রঙ্গমঞ্চে
শীতের পদার্পণ---
পরিযায়ী পাখির মত
উড়ু-উড়ু মন।

ব্যাগ গোছাও, বাক্স গোছাও
নিয়ে লটবহর 
সবাই মিলে বেরিয়ে পড়ি
দেশ দেশান্তর।

ফুলের মেলা, শিল্প মেলা
মেলার হরেক কিসিম,
মেলার রাজা বইমেলার 
এবারের কি থিম?

চড়ুইভাতি, ব্যাডমিন্টন, 
রাতভর জলসা,
সার্কাস আর ম্যাজিক শোয়ের 
তাঁবু ভিড়ে ঠাসা।

কফির মাগে আরাম চুমুক
জয়নগরের মোয়া!
দুপুরবেলার মিঠে রোদে
কমলালেবুর কোয়া!

ছিল সবই ভাল তবু
হঠাৎ ছন্দপতন---
বলা নেই কওয়া নেই 
বৃষ্টি যখন তখন!




শীতের হাওয়ায়

বী থি কা  ভ ট্টা চা র্য 

হিমেল শীতের ভোরে, কুয়াশার জাল ছিঁড়ে সূর্য্যটা ওঠে, 
অনুরাগে ডাক দেয়, ঝরে পড়া বুনোফুল অনুভবী ঠোঁটে,
রোদের উষ্ণতা থাক হলদে সর্ষে ক্ষেতে আলতো ছোঁয়ায়,
ভালবাসা ছুঁয়ে থাক, গরম চায়ের কাপে, উষ্ণ ধোঁয়ায়। 
উত্তুরে হাওয়া বয়, পাতাদের ঝরে পড়া মৃদু শিহরণ,  
পাতা ঝরা থর থর, দোলা দেয় মনে, মৌসুমী পরশন। 
ভোরের কুয়াশা ছিঁড়ে, অনুরাগে শীত নামে, ঘাসের চাদরে, 
ঝরাপাতা স্নাত হয়, শিশিরের নীরে, আলতো আদরে। 
রহস্য জাল বোনে, আবছায়া আলো, রাতের গভীরে, 
জোনাকীর টিপটিপ, দীপ জ্বলা রাত, তারাদের ভীড়ে। 
ফুলে, ফলে ডালি ভরে নিয়ে আসে শীত, ধরণীর বুকে,
বনভোজন আর পিঠেপুলি উৎসব, ডাক দেয় হাসিমুখে। 
পর্ণমোচীর বনে, রিক্ত শাখার শিহরণ, সিক্ত ব্যথায়‌,
খঞ্জনী বাজে কার সুমধুর সুরে, বোষ্টমী গান গায়। 
ছাতিমের মিঠে ঘ্রাণ, আলটুসী রোদে, মন ছুঁয়ে যায়,
ফসল কাটা মাঠে, উত্তুরে হাওয়া বায়, কাঁপন ধরায়,
ফুটপাতে শীত নামে, রাতের গভীরে, শিশুরা ঘুমায়,
বিবর্ণ মলিন বেশ, রুক্ষ, শুষ্ক কেশ, ছেঁড়া কাঁথা গায়। 
কবিরা কবিতা লেখে অনুরাগী মনে, আবেশ বিভোর, 
দারিদ্র্য নিয়ে গেছে শৈশব যার, দুরাশার ঘন ছায়া ঘোর।
হিম ভেজা ফুটপাতে, কনকনে ঠাণ্ডাতে, শীতে কাঁপে ওরা,
ক্লান্ত জীবন জুড়ে, হতাশ মনের ঘরে, বাঁচে আধ মরা।





পৌষের ছায়াঘেরা বারান্দায়

সং ঘ মি ত্রা  ভ ট্টা চা র্য

এক আকাশ জোড়া ভ্রান্তির মেঘ ঘনিয়ে আসে বুকে।
উত্তুরে হাওয়া সেখানে যুক্তি তর্কের ধার ধারে না কোনোই।
পৌষের ছায়াঘেরা বারান্দায় কিছু আদর রেখে যায় বিকেলের নরম রোদ্দুর।
তবুও কেমন মন কেমনের সমুদ্রে বসে আছি।
অনেকটা কম্পাসহীন জাহাজের নাবিকের মতো।
চারিদিকে নোনা জল।
তাই চোখের জলকে কিছু আলাদা লাগে না আর।
তাই নিজেই নিজের কাছে মস্ত বাধা।
আবার জটিল অঙ্কের ধাঁধাও বটে।
কি চায় জীবন আমার কাছে?
প্রশ্নটা সময়ের মৃৎপাত্রে জমা  হোক বিন্দু বিন্দু শিশিরের মতো।
ততক্ষন নাহয় আমি পঞ্চবটির ছায়াঘেরা নীড়ে লক্ষ্মণরেখা সামলাই।
অদ্ভুত এই জীবন।
কখনো অপরূপা নারীর সলাজ হাসি।
কখনো আবার রহস্যের ঘোমটা টানা!
কে কবে বুঝেছে তাকে?
চাওয়া পাওয়ার অংক মেলানো খাতাটা মুহূর্তের জন্য দুর্লভ মনে হয়!
আবার কোনো আশ্বিনের নাম না ঝড় কখন যেন তাকে ধুলোয় ফেলে দেয় ঝরা পাতার মতো।
ঘরে পড়ে থাকে মণিমুক্তো ভরা সিন্ধুক।
অথচ মন চায় বাউন্ডুলে হতে|
কিংবা লাল মাটির দেশে গেয়ে চলা বাউলের সুরে সুর মেলাতে।




ফসিল

শ ম্পা  সা ম ন্ত

ঘোড়াদের শত্রু হতে চাইনি।
তবু ঘোড়াটিকে ডিঙিয়ে ঘাস খেয়ে ফেললাম।
এইমাত্র ঠোঁটদুটো ফাঁক করল
বয়স্ক রেলগাড়ি।
ঘোড়ার চাইতেও দ্রুতগামী দূরত্বে
কেড়েনিল শব্দভূক মুহূর্ত।

এইমাত্র রাত্রি ভেঙে ভোর হতেই মাছিরা স্টেশন পেরিয়ে গেল।
ঘোড়াটির অগ্নিময় ভ্রূকুটিতে ভস্মীভূত হলাম।

পাহাড়ের ধ্বস আমাকে ধ্বস্ত করল।
মিছেমিছি এক কল্পিত কবরে চাপা পড়লাম। যেখান থেকে 
ফসিলের দেহে আর ঘরে ফেরা হলনা।




সঙ্গী নক্ষত্রেরা

র ত্না  সে ন 

হেমন্তের এক বিষণ্ণ সন্ধ্যায়
যখন গৃহস্থরা করেছে দ্বার রুদ্ধ
একাকী দাঁড়িয়ে দেখি নিস্তব্ধ বাতাসে ভেসে আসে
দূরে গৃহপালিত কুকুরের ক্ষীণ শব্দ।

হেমন্তের এক বিষণ্ণ সন্ধ্যায় যখন আকাশ থেকে
ঝরে পড়ে গলানো চাঁদের আলো,
তারারা পরস্পরের দিকে চেয়ে করে কানাকানি।
কৌতুকে দেখে ওরা আমাকে সহস্র আলোকবর্ষ থেকে দূরে-
একা আমি দাঁড়িয়ে থাকি কার প্রতীক্ষায়।
যখন আকাশ থেকে হিম ঝরনার জলের মতো গলানো চাঁদের আলো ঝরে পড়ে মাঠে ছাদে বিশ্ব চরাচরে।

নিস্তব্ধ বেলায় আমাকে আমি খুঁজি যখন সঙ্গী হয় নিশীথের নক্ষত্রেরা।




মনের ঈশ্বর

প্র শা ন্ত  ক র

হাতের তালুবন্দী করে রেখেছিস
তোর ঈশ্বর।
জঙ্গলের বৃষ্টিতে ভিজছে
তোর নৈবেদ্যর ফুল,
সুর তুলে দিচ্ছে কৌপিন বাতাসে

তোর এক হাতে ঈশ্বর,
এক হাতে দিলখোলা তরবারি।
জঙ্গলের ছায়ায় শুয়ে আছে তখন
তোর ফুলের শরীর।

তোর এক পায়ের তলায়
ফুলের জন্মভিটে,
এক পায়ের তলায় যন্ত্রনার নাভিমূল।
জঙ্গলের আগুনে পুড়ছে
তোর দোলাচল।

মনে ঈশ্বর থাকলে বলিস,
নির্মোহে আমার পুজোর থালা সাজাবো।




ধাঁধাঁ
  
প লা শ  বি শ্বা স 

ছুটি মানে
বাড়ে কাজ,
চোখ মেলে দেখি
কতো জটিল সাজ!

গিঁট খুলতে গিয়ে
জটলা পাকানো সুতো ধরি,
এবার 
হয় বাঁচি না হয় মরি!

কী হয়
কী যে হয় না,
এক পেশে মতবাদ
হয়তো চলে না!




নতুন ছন্দ

দী পি কা  দে  ভৌ মি ক 

নতুন বর্ষের আগমনে মনটা কেমন দোলে 
সূর্য ওঠে পূব আকাশে ভোরের দরজা খোলে।

বুকের ভেতর নতুন ছন্দ আনন্দে ভাসে 
খুশির হাওয়া বইছে আকাশে বাতাসে।

যত বিষাদ আছে মনে বিদায় দাও সবে 
বুকের মাঝে সদা হাসি খুশি বিরাজ রবে।




সফলতা

স র মা  দে ব দ ত্ত 

দুচোখ ভরে আঁকা থাকুক 
আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন 
ব্রত হোক কঠোর কঠিন 
আর কিছু যত্ন

শত্রু যখন অলসতা 
সরিয়ে রেখে দুরে 
নিরলস পরিশ্রমেই
গাইবে জীবন সুরে

ফল লাভের আশায় নয়
কর্মই হোক ধর্ম 
বুক চিতিয়ে লড়াই থাকুক 
হোক গলদঘর্ম।





এবং আমি

র ঞ্জ না  বি শ্বা স

বেশ টের পাচ্ছি, যত দিন যাচ্ছে
আমি অদ্ভুতুড়ে হয়ে যাচ্ছি! 
পরিচিতির অভাব বোধে
অকারণে আধার কার্ড খুঁজি
ব্যাগের ভেতর। 
অপ্রস্তুত মুখ, আর ভম্বুলে চোখে
নিজেকেই চোরা ভেংচি কাটি---
জোর চেষ্টায় নিজেকে জড়ো করে
ফিরে দেখি কখন যেন
শূন্য রানেই রান আউট!
তারপর একদিন ভোরবেলা
ঘুম ভেঙ্গে দেখি এখানে এখনো
গভীর রাত্রি, আশেপাশের পরিচিত
মুখগুলো আমার কেউ হয়না---
তাই আমার ভাঙ্গাচোরা নৌকা নিয়ে, 
পাড়ি জমাই ভোরবেলার 
দেশে। যেখানে আমাকে আমার
সেলফি দিয়ে পছন্দ করা হয়না। 
এখন রোজ আমি আমার 
মুঠো হাত শূন্যে ছুঁড়ে চেঁচাই, 
এই যে সবাই শোন
আমি সেই পাগলাটে আমি
অদ্ভুতুড়ে আর বেজায় বেখাপ্পা।




ধ্রুবক

স ন্দী প ন  গু প্ত

যার কথা ভাবছো বসে
একলা ঘর মনে,
অনুভূতিরা কোথায় যাবে
হঠাৎ দর্শনে...

কেমন কথা বলতে হয়
কোথায় কিংবা কবে,
অন্ধকার যাক হারিয়ে 
আলোক উৎসবে...

মেঘের কাছে বৃষ্টি কথা
মুখের কথা তেঁতো,
ভুলের কাছে হারার আগে
ধরতে যদি পেতো...

যেমন তুমি তেমন আমি
সম্পর্কই টক,
দুলছে মানুষ এদিক সেদিক
হচ্ছে না ধ্রুবক...





কিশোরীর প্রেম

কা বে রী  রা য়  চৌ ধু রী 

চঞ্চলা হরিনী চপলতা হৃদয়ে ঢেউয়ের তরঙ্গ দোলা, 
রঙ তুলির টানে লাবণ্যে টইটুম্বর আয়ত নয়নে লাজুক চাহনিতে আবেগে জোয়ার।
মনে পড়ে শিমুল গাছের ফাঁকে গোধূলির অস্তরাগ, 
প্রথম আলাপে মন দেওয়া নেওয়ার শপথে চোখে চোখ রেখে স্বপ্ন দেখা। 
জলপাই রঙের স্বপ্নগুলো হিমেল হাওয়ায় পশমিনা মনের ওম, 
তটিনী মায়ায় দুকূল উপচানো মনযমুনায় অঙ্কুরিত প্রেম চুপিসারে হৃদয়ে পানকৌড়ি ডুব সাঁতার। 
কিশোরীর প্রেম নিষ্পাপ ভালোবাসা সরলতার আচ্ছাদনে নদীর মতো বহমান অন্তঃসলিলা... 
মনে পড়ে তোর হাতের স্পর্শে পাশে থাকার অঙ্গীকার। 
স্মরণীয় মূহুর্তরা মণিকাঞ্চন শুভ্রতার আলো ছড়িয়ে আছে আজও মায়ায়.... 
কিশোরীর অবুঝ মন মানে না বারণ তপন দহনে ক্ষত। 
শীতের মৌসুমী ফুলগুলোর মতো ফিরতি পথে পুর্ণবার প্রতীক্ষায়, 
শিশিরের টুপটাপ শব্দে চকিত হৃদয় অশ্রুত স্রোত চোরা বালির তট। 
ঢেউ জানে পাথর বুকে হোঁচট পাওয়া ব্যথায় এগিয়ে যাওয়াই কালের প্রবাহমানতা, 
ঝরা পাতা জলে ভেসে মহীরুহের পানে মায়া কাতর। 
ডাকনামে পিছুডাক স্মৃতির
পাঠাগারে চুপকথারা ভিড় করে অন্তবিহীন বিবাগী মনের বিভ্রম, 
কচিমনের ভাবালুতা শীতলতার আবর্তে ঘূর্ণায়মান নাগরদোলা। 
নাবিক যেমন জাহাজ ডুবির পর নোনা বালিচরে দিশেহারা মাস্তুলে বাঁধা রশিটি সামলাতে পর্যুদস্ত, 
কিশোরীর চোখ ব্যর্থতায় হড়পা বানে ভেসে যাওয়া হারানোর বেদনা অনুভব 
নুড়িপাথর সিন্দুকে সঞ্চিত মূলধন, অভিজ্ঞতার নিরিখে ভবিষ্যতে পদযাত্রা উপচ্ছায়া নির্ভর।।





কাল রাতে

ক বি তা  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য় 

সান্টা এসেছিল মাঝরাতে 
বসেছিল পাশে,
ঝুলিভরা উপহার 
সুগন্ধ বাতাসে...

 কেটে গেল অতন্দ্র-প্রহর
হাতের উপর হাত রেখে, 
বাইরে খুশির আলো
তবু অন্ধকার চোখে... 

আরো কিছু সময়ের পরে
যখন শুকতারা আকাশের পারে,
বিদায় নেবার সময় হল তার
রেখে গেল স্পর্শ আর বেহিসাবি বেদনার ভার...

বিষণ্ণ সকাল জেগে 
চোখ মেলে চায়,
সূর্য দিগন্ত মাপে
সামান্য দ্বিধায়...

বিছানার একপাশে এখনো  
সুগন্ধি বকুল
স্তব্ধ চোখে ক্রমাগত 
জিজ্ঞাসা নির্ভুল...

এসেছিল সে, বসেছিল পাশে
রেখে গেছে চিহ্ন তার
ভোরের  ভেজা  ঘাসে আর
উত্তরের বাতাসে...





আরাধ্য

ঊ ষা  গ রা ই 

কোনও এক জনমে তুমি আমার
আরাধ্য হোয়ো....
বন্ধু নয়, প্রেমিক নয়
এমনকি জাগতিক স্বামীও নয় 
তোমাকে চেয়ে নিচ্ছি আকুল প্রার্থনায় 
তারও বেশী করে...
এইটুকু ভাবতে ভাবতেই 
ফেলেছি ভরা কলসির জল 
ভুলেছি জাগতিক ঘরকন্না 
এঁকেছি রসকলি আর 
কিছু বেদনা বিধুর ছবি।

সে  জনমে সকাল হলেই 
সূর্যস্নাতা হয়ে আসবো কেশ এলিয়ে 
দুপুরে মধ্যগগণে তপন দীপ্তিকে 
আঁচলে আড়াল করবো,
গোধূলির বুকের ওপর মরচেরঙা আকাশে 
কনেদেখা ক্ষণে শুভদৃষ্টি হবে
সন্ধ্যায় বকুলের গন্ধমেখে অপেক্ষায় থাকবো 
আর প্রতি পূর্ণিমার মিলনক্ষণে
রেখে যাবো তোমার বাঁশিতে 
একটি নতুন সুর।

যখন জোয়ার আসবে নদীতে 
সে জোয়ারে যদি ভাসিয়ে আনতে পারি 
তোমার আঁখির মতো একটি কমল
চাঁদের চিবুক বেয়ে গড়িয়ে নামা 
হাসিটার মতো...
সে ব্যথার দান দিতে কার্পণ্য করবোনা এতটুকু।

রাতের আকাশে যখন সপ্তর্ষিমণ্ডল 
জীবনকে গলাগলি ক'রে 
দাঁড়িয়ে হাসবে মৃত্যুহীন যামে 
সবটুকু জীবন আমার উপুড় করে 
নিজেকে রোপন করবো মাটিতে 
সে জনমে তুমি আমার হবে
কান্নাহাসির দক্ষিণামূল্যে।

তারপর বিগত জনমের যতটুকু সঞ্চয় 
একতারার সুরে বেঁধে 
ঘর ছাড়বো একলা 
সে হবে আমার বিষন্ন অপরাহ্নের 
আশিলক্ষযোনির পারাবার।

সে জনমে তুমি আমার ধন্বন্তরি হ'য়ে 
বিশল্যকরনী বুকে রেখো শ্যাম।





অপরূপ

উ দ য়  ভা নু  চ ক্র ব র্তী

এই যে দু দণ্ডের আমার পৃথিবী, এই শহর, রাস্তা ঘাট বাড়ি এই যে আমার বেঁচে থাকা, 
নিশ্চিত কিছু নয় কিছু নয়, 
অথচ আমি এখনও নিঃশ্বাস নিতে পারছি, তৃষ্ণায় জল খেতে পাচ্ছি, ফুরফুরে হাওয়া বইছে উত্তর থেকে, মধ্য অগ্রহায়ণের আকাশে মেঘের মিনার ভেঙে পড়ছে...
দূরে দু এক জায়গা থেকে "যো ওয়াদা কিয়া ও নিভানা পড়েগা" ভেসে আসছে কর্ণ কুহরে-
 এক পুরোনো পানসীর নিচে এঁকেছি আমার প্রিয়তমা নারীর আয়ত দুটি চোখ... তার সোনালী চুল উড়ে হলো মরুঝড়ের শিখা...

সেসব ভাবি, এক কোনায় চুপচাপ নিশ্চিন্তে দাঁড়িয়ে থাকি আমি, 
তোমার মৃদু হাসি ঝাউয়ের ফাঁকে নিবিড় জোৎস্নার মতো... নিরন্তর প্রলয়ের মাঝে... অপরূপ, কী অপরূপ..!





আংশিক সময়ের পাশে

দী প ঙ্ক র  স র কা র 

আংশিক সময়ের পাশে দু-দণ্ড দাঁড়াই 
বিস্ময়ে, চেয়ে দেখি রজঃস্বলা নদী ভেসে 
যায় দুর্বার স্রোতে।

জানি না সে কোন মহিমা এক ছলনার 
টান, কেবল ছুটিয়ে মারে আরও আরও 
পথ অজানা উদ্দেশে।

বাঁকের পরে ভাঙি বাঁক ঘোর লাগা চোখে 
ভেঙে চলি সমূহ সন্নিপাত পায়ে পায়ে দলিয়ে 
মাড়িয়ে যাই...

কোন সে নেশায় ছুটি অবিরাম নদীর মতোই 
উদ্দাম উচ্ছল, আংশিক সময়ের পাশে দু-দণ্ডের
বেশি কেন থাকে না সময়!





ফাইল হারিয়ে যায়

অ জি ত  কু মা র  জা না 

আষাঢ়ে গল্পের একটা সুইচ বানাবো বলে,
মগজকে খুলে রাখি।
কিশোর ভাবনা, চঞ্চলতার জামা পরে,
দৌড়াদৌড়ি করে নোংরা ডাস্টবিনে।
লাগাম হাতে নিয়ে, 
মুখ ঘুরিয়ে দিই সঠিক দিকে।
বিপ্লবের স্লোগান মুখে, 
স্বাধীনতার গান গায়।

অবাধ্য সন্তানের মত, 
বায়নার লাইব্রেরী নিয়ে, 
আমাকে লক্ষ্যবস্তু করে তীর ছুঁড়ে।
মায়ের আদর মাখিয়ে, 
চিনিয়ে দিই-এটা পূর্ণচ্ছেদ, 
ওটা জিজ্ঞাসার চিহ্ন। 
পাহাড় বিশাল উচুঁ, 
পরিকল্পনার ফাইল হারিয়ে যায়।




একা থাকা যায় না

শ র্মি ষ্ঠা  মি ত্র  পা ল  চৌ ধু রী

শিরশিরে হাওয়া জানান দেয়, 
শীত ঢুকে গেছে আমার শহরে।
উষ্ণতার ওম খুঁজতে খুঁজতে....
বিছানায় এক মুঠো জুঁই ফুলের মিঠে ঘ্রাণ!
আয়নায় লেগে থাকা তোমার টিপের
বিভঙ্গে আটকে যায় চোখ।
আলনায় পাটে পাটে ভাঁজ করে কাপড়-
আমাকে একা থাকতে দেয় না!
একজোড়া অভিমানী কাজল পরা চোখের
পাহারা চায় মন!
চারমিনারের রিংগুলো ঘরে আঁকে তোমার অবয়ব....
তুমি নেই অথচ আছো, ভাবতে ভাবতে...
স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়ে দেয়।





দিন বদলের চলছে খেলা

অ জি ত  চৌ ধু রী

দিকে দিকে আজ যায় না দেখা
পরিচিত সেই রানার,
তাগিদ নেই যে এখন আর
চিঠিপত্র বয়ে আনার।

দিন বদলের চলছে খেলা
সবাই মেতেছে ফোনে,
তাইতো রানার ছোটেনা এখন
কেউ রাখেনি মনে।

হাতে লণ্ঠন লাঠিতে ঘুঙুর
রানার চলতো ছুটে,
কখনো দেখেছি রাত্রিবেলা
কখনো ভোরে উঠে।

আজ আর কেউ লিখেনা চিঠি
মোবাইলেই সারে কাজ,
রানার তাইতো ইতিহাস হয়ে
অবলুপ্তির পথে আজ।




সোনারপুর জংশন

 তা প স  মা ই তি

পাখির মতো উড়ছি মনে মনে
পেয়ারা গাছটার ডালে।
একটা বাসা বেঁধেছি চোখে চোখে,
পাশেই প্লাটফর্ম, একটা উঁচানি হাত
কুয়াশার ভেতর দিয়ে
দিচ্ছে উঁকি।

প্রাণে তার স্পর্শ দিতে চেষ্টা করলে
সে হাসে

আমার ইচ্ছের উপর ভর করে
চার লাইনের ট্রেন চলে যায়
সে যেতে চাইলেও, যেতে পারলো না।

চার নম্বর ক্যানিং লাইনে
আবার ট্রেন এলো,
তবুও সে উঠলো না।




শীতের প্রহর

আ ল তা ফ  হো সে ন  উ জ্জ্ব ল 

শীত এসেছে
সব স্মৃতিরা শীতের সাথে কুয়াশা'রা উড়ে যায়
স্মৃতির খড়ি সংগ্রহে
শীতের সকালের আলাদা স্বাদ
দুধ চিনির মিশ্রণে
অনুপস্থিত বা উপস্থিত জিনিসের জন্য
রাস্তায় বৃষ্টির অবশিষ্টাংশ, আরেকটি হাসি আরেকটি নস্টালজিয়া

শীতের সকালগুলো অন্যরকম
যারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে
তাদের মিস করি
বৃষ্টি দেখছি এক কাপ কফি
কাটানো স্মৃতি
শীতের সাথে প্রত্যেকের নিজস্ব গল্প




আমার ছড়াপাখি

ব দ রু ল  বো র হা ন 

আমার আছে একটা ছড়াপাখি, 
ছড়া লেখার জন্যে আমায় করে ডাকাডাকি। 
নেই যে সকাল, নেই যে বিকেল
করে হাঁকাহাঁকি, 
বুকের খাঁচায় যত্ন করে আগলে তারে রাখি;
আমার ছড়াপাখি।

রাতের বেলায় যখন আমার ঘুম আসে না চোখে,
জেগে ওঠে ছড়াপাখি 
শুরু করে ডাকাডাকি 
মাথার ভেতর ছড়ার পঙক্তি একে একে ঢোকে;
অলস আমি দিই না সাড়া
ছড়াপাখি দেয় যে তাড়া
হয়তো তখন রাত পোহাবার খুব বেশি নেই বাকি,
সাধ্য আমার হয় না তখন চুপটি করে থাকি।

মুঠোফোনের নোটপ্যাডে সেই পঙক্তি লিখে রাখি,
তখন আমার ছড়াপাখির বন্ধ ডাকাডাকি।

ছড়াপাখির সঙ্গে আমার সখ্য কিশোর বেলায়,
তাকে নিয়ে খেলি আমি 
হয় না মোটেই থামাথামি
কখনওবা সে আমাকে খেলায়।




হেমন্তের শীতলতায়

ব র্ণা লী মু খা র্জী

শিউলি ফুলের মতো ভালোবাসা ঝরে পড়ে দূর্বাঘাসে,
কনে দেখা হলুদ রঙে আবিরে মাখা উন্মুক্ত আকাশ।
ভোরের শিশির ভেজা ঘাসে আনাগোনা করে লাল নীল প্রজাপতি, 
হেমন্তের মদিরতা সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে।
কি অদ্ভুত এই ঋতু পরিবর্তন!!
খেজুর গাছে হাঁড়ি মিষ্টি রকমারি,
আলতো বাতাস ছুঁয়ে চলে যায় নরম গালে___
শাপলাভরা ডিঙি নৌকা আপন ছন্দে ভেসে বেড়ায় চরাচর জুড়ে।
পরিযায়ী পাখিরা দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসে ভালোবাসা বুকে নিয়ে,
শালিক চড়ুই এখন আর আসে না অভিমানভরা চোখে।

রাজনীতির রং বুঝিনা__ বুঝিনা ঘাত প্রতিঘাত দ্বন্দ্ব বিদ্বেষ
প্রকৃতির মায়াজালে সম্মোহিত হয়ে বার বার ফিরে  আসি এই ধূলি ধূসর রাজপথে
আজানের সুর গীর্জার ঘন্টাধ্বনি দূর্গাপূজোর গন্ধ বুদ্ধের বাণী মিলেমিশে একাকার।
 কত না বলা কথা রয়ে যায় পলেস্তারার ফাটলে
তবুও বেশ ভালো আছি এই ভালোবাসা-ময় দেশে।





পিছুটান

প ল্ল ব  সে ন গু প্ত

কিছু কি তেমন করে যায়?
হয়তো কিছুটা বা আরোও একটু বেশি
একটা হৃদয়, ছেঁড়া স্মৃতি, একটা বছরও,
তীরে শুধু পদচিহ্নের রেষারেষি।

ঢুলু ঢুলু চোখ আর ভেজা ভারী মন
ফিরেও দেখে কি কিছু?
পাখি গেছে আকাশের নীলিমায় 
শুধু একটাই পালক পিছু পিছু।

বাতাসের টানে কোনোও পাগলাটে ঝড়
তাকে ঠেলে দেয় দূর আরোও দূর।
কিছুই যায় নাতো একেবারে
বেজে যায় মন, কথা আর 
ফেলে যাওয়া বছরের সুর।।





ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি

দে ব যা নী  দা স

সময় পাল্টেছে, দিন পাল্টেছে
পাল্টে গেছে মানুষ এবার
মানবিকতা হারিয়ে আজ তাই
চলেছে পথে অতল গভীরে
পরাধীনতার অন্ধকূপে বসে সেদিন
স্বপ্ন দেখেছিলে হে মহামানব
স্বাধীন দেশের স্বর্গমাঝে চলবে সেথা
সুশাসন আর শান্তিমিছিল
হিংসা-দ্বেষ সব ভুলে সবাই
মিলেমিশে শুধু বাঁচার লড়াই

এক যুগ পেরিয়ে দেখি
এ কি চলছে দেশ জুড়ে?
উন্নতির নামে দুর্নীতি অহিংসার নামে হিংসা
চলছে বুঝি ক্ষমতার বড়াই

শিক্ষা হোক বা জনসেবা, কিম্বা হোক চিকিৎসা---
সবেতে চলছে খেলা, সবলের দর্প
আসলকে টপকে নকলকে দেখি
মিথ্যা দিয়ে ঢাকা সত্যের পৃথিবী

সখ্যতা আজ অনেক দূরে
প্রতিহিংসার স্রোত রক্তে ধমনীতে
ধৈর্য্য, শৌর্য, প্রেম ও ভালোবাসা
নম্রতা ভদ্রতা সততা ও বুদ্ধিমত্তা
অভিধানের পাতায় রয়েছে বন্দী
তুলে নিয়ে তাদের বক্তব্যে ভাষণে
সাজিয়ে তুলি আপন দর্পে
নিজের স্বার্থে বাঁচি আজ আমি
সম্পর্কগুলোকে তুড়ি মেরে দিই উড়িয়ে।

মিথ্যে হলো সব আত্মবলিদান
হে ভারতসন্তান
কোথায় গেলো উষ্ণ শোণিত
পাষাণবেদীর শক্ত লিখন
ভুলেছি আমরা তাদের নিমেষে
সাম্প্রদায়িকতার জোয়াল নিয়ে কাঁধে 

হে নজরুল, হে ক্ষুদিরাম, বাঘাযতীন, বীর ভগৎ, 
হায় মাস্টারদা, লাল-বাল-পাল, নানা সাহেব, খান আব্দুল গফফর খান
কোথায় তুমি বীর সুভাষ, মাতঙ্গিনী, প্রীতিলতা---
যাঁরা আত্মত্যাগে স্বপ্নে রচিলে এ দেশ মহান।

রক্তে গড়া, স্বপ্নে ঘেরা তোমাদের দেশ ছেড়ে যাঁরা
দিচ্ছে পাড়ি বিদেশ বিভুঁই 
কেন কোন্ যুক্তিতে!

আবার আসবে মীরজারফ? আবার ঘটবে পলাশিযুদ্ধ?
হয়তো আবার পাবো ফিরে জালিয়ানওয়ালাবাগের শহীদক্ষেত্র! 

এই না হলে হবে কেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি??





ফেরত

প ল্ল ব  ভ ট্টা চা র্য  অ ন ন্ত 

শিশিরের শব্দে জেগেছে ঘাসফুল
অসমাপ্ত জীবন জেগেছে আরো একবার
মাটির প্রেমে হয়তোবা বৃক্ষজ উন্মাদনা
বিপন্নতায় তবুও মানুষের নির্ভরতা।
বিষন্নতা ছিল কিছু হয়তো---
আচ্ছন্নতার আচ্ছাদন এখন উন্মুক্ত---
টুকরো টুকরো অগোছালো উদ্যম
এখন সংঘবদ্ধ না-বিয়োনো মাটির আঁতুরঘরে।
সূর্যের ফোটন কনা ঝরে ঝরে পড়ে
পাতায় পাতায় ক্লোরোফিলের মৃদু সংবহন।
ঝড়কে, জানি করবে প্রতিরোধ এইবার
সমস্ত অবহেলার হিসেব হয়তো বুঝে নেবে
ফিরিয়ে দেবে বেহিসেবি নাশকতার প্রত্যাঘাত।
আকর্ষ ছিল যত আশেপাশে--
আবার নতুন করে শুরু হবে সাহসী আস্ফালন
যে ছিল অপরিপুষ্ট---,অবহেলিত
সম্মান ফিরে পেতে, ফিরিয়ে দেবে অদৃশ্য অপমান।।





অনাসৃষ্টি

পূ র্বা  মা ই তি 

জড়ো করা শব্দগুলোর 
হাওয়ায় ভাসে গান-
জড়ো করা অশ্রুগুলোর 
মরশুমি অভিমান।

অভিমানের কয়েক পঙক্তি
বেয়ারিং খামে- 
কপোলজুড়ে নেমে আসে 
নৈঃশব্দের নামে। 

নৈঃশব্দের মানে আছে 
শুধু চুপটি থাকা নয়- 
জ্বলে যাচ্ছে পুড়ে যাচ্ছে 
তবু বাইরে অভিনয়।

ভেতর ঘরে আগুন জ্বলে 
ভেতর ঘরে বৃষ্টি-
 অহরহ কাব‍্যগাথা 
পদ‍্য অনাসৃষ্টি।

কে বসে যে মানিক গাঁথে 
কে বাঁধে যে বজ্র-
ভেতরঘরে অরূপরতন 
মনকে চালায় রুদ্র।

কে সে রুদ্র কোথায় থাকে 
তল পাইনে তার-
কখন ভাবি আকার আছে 
কখন নিরাকার।

যখন তখন কড়া নাড়ে
কলম ধরায় হাতে-
বীণা বাজায় হৃদমাঝারে 
অমলতাসের রাতে।

জড়ো করা শব্দগুলোয় 
ভাসে হরিণ-ঘ্রাণ-
পদ‍্য ভাসে গদ্য ভাসে 
ভাসে তোমার নাম।





পরিযায়ী

শ র্মি ষ্ঠা  সে ন

খুব সহজে ঘুণপোকা  কুরে খায় জেনেও যখন তুমি দ্রুতলয়ে ফিরে গিয়েছিলে হলদেটে অতীতে, তোমার বর্তমান গুমরে কেঁদেছিল পাতাঝরা বিকেলে। 
অনেকটা সময় রংহীন, দিশাহীন। তারপর বিয়োগান্তক গল্পের সূত্র মেনে, ধরে নিয়েছিল, এভাবেই বুঝি ডিঙি করে ঘুরে বেড়াতে হয় এক পৃথিবী থেকে অন্য পৃথিবী। 

পরিযায়ী পাখিদের শীত-গ্রীষ্ম যাপনের স্বাভাবিকতার মতো সেও যদি পাখি হতে চায় একবার?
তোমারই মতো!

আলতো হাতে সম্পর্ক ধরে রেখো।





কুয়াশারা কিছু বলে

সং হি তা  ভৌ মি ক 

নীরবতায় মোড়া শীতের রাত যখন শব্দহীন,
হিমেল হাওয়ায় কুয়াশারা আজ যেনো উদাসীন।
নিঃস্তব্ধতা বড়ো কঠিন রাস্তারা যখন কথা বিহীন,
মন বোঝে পাহাড়, দৃষ্টিতে হয় অভিমান বিলীন।
কুয়াশারা প্রেমের কথা বলে অনুরাগের চাদর মুড়ে,
আবেগের ব্যস্ততা  মিঠে রোদের উষ্ণতায় পুড়ে।
মুগ্ধনয়ন প্রসন্ন চিত্তে মধ্যাহ্নসমীরে যেথা চঞ্চল,
মায়ামন্ত্রে স্নিগ্ধ শিশির বিন্দু তৃণ বক্ষে উচ্ছল।
মোহবন্ধ কুয়াশা ঘেরা দুপুর প্রকৃতি প্রেমে অন্ধ
শীতলতার আলিঙ্গন নিভৃতে আবৃত ফেরার পথ বন্ধ।





কেউ একদিন

জ্যো তি র্ম য়  মু খো পা ধ্যা য়

মাঝ রাস্তায় ঠোঁট টেনে নেবে ঠোঁটে
এমন ভাবনায়‌ পেরিয়ে গেল শীত

জিজ্ঞেস করতে বলল
                       এমনিই ইচ্ছা হল তাই

কী আর বলি, সব চুমু তো আর শর্ত মানে না 
সব প্রেমও বোঝে না বিচ্ছিন্ন মেঘভার





বস্তুত

সো না লি  ম ন্ড ল  আ ই চ

এক হাঁটু রোদ বইতে বইতে বেলা।
রাত পিপাসার শিশির জলে
বাক্য গড়িয়ে অনুচ্ছেদ। 
মরতে শুরু করে তিস্তার মাছ।
উদয় অস্ত শীতভুক প্রাণ।
হরেক আশায় ধনী গরিব।
পশমি গান এসে নাড়ায় কড়া।
খিড়কি খুলে দুদন্ড অবসর। 
এক পৌষী চন্দ্রমসীতে সব খুইয়ে 
খুঁটে নিচ্ছ কিছু শস্যবীজ।
নিতান্ত বাঁচার জন্যই পার্বণ।
দিনরাত অচেনা দীঘির গল্প।
মাস মায়নায় কমলালেবু ক্রিম
সোয়েটার কম্বলের পশমী ঘর।




শীত

সো ম প্র ভা  ব ন্দো পা ধ্যা য় 

সংবেদন শব্দ জড়ো হলে কবিতা গোছের একেকটা ফুল ফোটে, কবি সেসব কুড়োতে গেলেই ম্রিয়মাণ ডিসেম্বরের ঝুলিতে জমে বিলাপ 
মরচে ডাকবাক্স ঘরে খিল, কাচের মতো গুঁড়ো হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিবশতা।

শোকেস সাজানো বাহারি আলাপকালে বলেছিলাম এসো নতুন করে শুরু হোক, অথচ 
শীত শুধু পোড়ায়। 

আত্মদহন সমূহের পূর্বাপর সংকল্প।

শরীরে আগুন। প্রবণতা।





অবরোহন

ছ ন্দা  চ ট্টো পা ধ্যা য়

লোকটা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে চেয়েছিল, উঠেওছিল অনেক বছর ধরে...
সে সিঁড়িতে মসৃণ মার্বেল পাথরের কারুকাজ...
 যে কোনো মুহূর্তে পা পিছলে যাওয়ার ভয়... 
ভয়ঙ্কর টেনসন, টানটান উত্তেজনা, লোকটা তবু উঠছিল!
তার জন্য অপেক্ষায় ছিলো না কোনো অলৌকিক লিফট, 
প্রার্থী সে দৈব অনুগ্রহের... ছোটবেলায় বাবা বলেছিলো,
 'কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না!' 
লোকটা একটা একটা করে সিঁড়ি ভাঙছিলো, আর ভাঙছিলো, আর ভাঙছিলো...
আর ভাবছিলো একটা প্রশস্ত ছাদের কথা!
ঐ ছাদের উপর চাঁদের চাঁদোয়া... নক্ষত্রের চুমকি!  
লোকটা সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসলো একটা অন্ধকার বারান্দায়, সারি সারি বন্ধ দরজা...!
লোকটা সব দরজায় টোকা দিয়ে চিৎকার করে বললো, দরজা খোলো, করুণা করো... 
তার প্রার্থণা দরজা থেকে দেওয়ালে আছড়ে পড়লো প্রতিধ্বনি তুলে...
দরজা খোলোওওও, করুণা করোওওও...!
কোনো অদৃশ্য অদৈব হাত তার ঘাড়ে ধাক্কা দিলো...
লোকটা গড়িয়ে পড়তে লাগলো এক বালতি জলের মতো...
লোকটা বুঝতে পারছিলো... আরোহনে দম লাগে, 
অবরোহন সাবলীল...!!





দাম্পত্যের ভিতর হঠাৎ শীতকাল

স জ ল কু মা র  টি কা দা র

দাম্পত্যের ভিতর হঠাৎ শীতকাল উড়ে আসে।
দেখতে দেখতে কুয়াশায় ডুবে যায় সমস্ত পথঘাট।

কীভাবে এখন পৌঁছাবে, একজন 
অন্যজনের কাছে?

তাছাড়া, ঠান্ডার ছোবলে
সম্পর্কের শরীর থেকে, ঝুপঝুপ 
খসে পড়ে রক্ত-মাংস...

বেরিয়ে আসে বীভৎস হাড়গোড়!




বডি লোশন

সৈ ক ত  দা ম

শীতের রোদ্দুর এসে লাগে গায়ে,
আমার বাবার মতো গায়ে...
মাঝে মাঝে শুধু ভুলে যাওয়া,
আমিও আমার বাবার শরীর...
আমিও এক উপত্যকা,
হিমশীতল উপত্যকা...
শুধু চিতার আগুনে চকচক করে,
উপত্যকার বরফ...
বরফ গলেও গলে না...
গাছের থেকে আলগা হয় বসন্তের পাতা,
আমাকে নিখুঁত ভাবে দেখে অবহেলার খাতা...
শীতের সময় এই তো কাজ,
আমি দেখি খাতাকে, আর আমাকে দেখে খাতা...
আজীবনের বৈষম্যগুলো,
জুড়ে জুড়ে দেখি ছাদে...
দেখি হয় কিনা কোনো কোলাজ 
কোলাজের মাঝে সেই তো বরফ,
বরফের সীমারেখা...
সীমারেখার এ পাড়ে আমি,
ও পাড়ে আমার বাবা...
শেষ কবে বুলিয়েছি হাত,
তাও মনে পড়ে না...
শুধু টেবিলের পাশে রাখা আছে,
শীতকালীন বডি লোশন...
শুধু রোদ্দুর বোঝে বেঁচে আছি,
গায়ে লেগেই সব প্রশ্নের নিরসন...





ক্যানভাস

উ ত্ত ম  দ ত্ত 

সম্পর্কের চড়াই উৎরাই 
সাপ-মইয়ের খেলা, 
সে-সব কিছু মানিয়ে নিতে
যায় জীবনের বেলা। 

অন্ধকারে হাতড়ে বেড়ানো 
চাই সকলের আস্থা, 
বন্ধুত্ব হোক আলোর সাথে 
এটাই বাঁচার রাস্তা। 

ছোট একটা ভুলের থেকে 
শিখি অনেক কিছু, 
সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে 
চলি সত্যের পিছু।

মনের মাঝে আঁকছি ছবি 
ওটাই প্রকৃত ক্যানভাস, 
রঙ তুলিতে রাঙিয়ে তুলি
এটাই হোক অভ্যাস। 

বাড়িয়ে দিও সেই নির্যাস
আগলে রাখতে সততা, 
সেটাই হোক বাঁচার শক্তি 
সঙ্গে নিয়মানুবর্তিতা।





ক্ষত

অ ভি জি ৎ  শে ঠ

দিকে দিকে হারানো সম্ভ্রম,
বিজ্ঞপ্তির কালো মোড়কে ফিরে আসে।
ক্ষুধার জ্বালায় নয়, 
সিক্ত আলোয় মুছে যায় ক্ষত বিক্ষত শরীর।
তিলে তিলে শেষ হয় মনের অস্থিরতা,
অবরুদ্ধ চিন্তার মিঠে বেদনায়।

সকালের এক কাপ চা,
চামচে একটুকরো ভালোবাসা দিয়ে,
ক্ষতস্থানে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করছি।
অন্তরে চেপে থাকা বিক্ষোভ,
বিবেকের করুণ সুরে মিশে গেছে,
স্মৃতির কিছু রক্তাক্ত করুণ সুর।

তাড়নায় কাতর কিছু চাপা ডাক,
রক্তমাখা সত্যের পথ দেখায়,
ক্ষতের মাঝে লুকিয়ে থাকা ভবিষ্যতের বীজ।
গোঙানিতে রূপান্তরিত চাপা কান্না,
লজ্জার আঘাতে মৃত্যু ঘটে না,
একটু একটু করে ম্লান হয় অস্তিত্ত্বের আলো।





পশম

দী প্র  দা স  চৌ ধু রী

ছোট্ট ভুলের মতো তোমার ওই দুটি চোখ
বুকের ভেতর হাহাকারের শব্দ শোনায়।
পিঠের ওপর আদর ক্ষত ছড়াচ্ছে নখ-
ভিজিয়ে দেওয়ার হিসেব ঠিকই ঠোঁট বুঝে যায়!

আমার হিসেব তোমায় দেখে মলিন দেখায়
স্তম্ভ সকল নিচ্ছে ছোঁয়া গরম তাপের,
কামড়ে ধরুক সব পরিধি জীবন রেখায়-
তীব্রতা পাক বুকের পশম নিম্নচাপে…




সেপ্টেম্বরে

আ ল্পি  বি শ্বা স

হে প্রিয় সেপ্টেম্বর,

গ্রীষ্মের চাঁদিফাটা সৌরোত্তাপ ছাড়িয়ে
নরম রোদে পিঠ সেঁকে নিতে দাও,
সুদূর সমুদ্রতীর হতে সমভাবাপন্ন বাতাস বহায়ে দাও আমার জানালায়

পর্ণমোচীরা প্রস্তুতি নিক 
একটা দুটো পাতাকে বিবর্ণ করার
ঝরিয়ে দিক অবহেলায় নয়                                               
নব সৃষ্টির আনন্দে, ভালোবাসায়...

ভয় পেয়ে ছুটে পালাক কাঠবেড়ালি,

বনাঞ্চলে সাময়িক খাদ্যাভাব---

সপরিবারে শাখামৃগ আসুক লোকালয়ে খাদ্যান্বেষণে,
ওরাও উল্টে পাল্টে পিঠ সেঁকে নিক গৃহস্থের সানশেডে

তোমার আমার সবার দেহে
সমানুপাতে লাগুক রোদ জল হাওয়া
চরম তুষার শীতে জমে যাওয়ার আগে।





ভেতরপুরের যা কিছু থাক না গহিনে

প রা ণ  মা ঝি 

মনের ভেতর যা রাখার তা কেন বাইরে আসে বারবার 
এ তো ভালোলাগা নয় ; ভালোবাসা নয়; প্রেমও নয়; কেবল-ই ক্ষয় 
         ডানা গজায় উড়ে উড়ে পুড়ে পুড়ে মরবার 

ভেতরপুরের যা কিছু থাক না গহিনে 
নদী তো চলে এঁকেবেঁকে; বামে ও ডাইনে 
তাবলে তলের ছবি আনে কী কখনো সামনে 

তুমি থাকো তোমাতেই 
আমি থাকি আমাতেই 
মিলেমিশে নির্জনে পারি তো মাঝে মাঝে বসতে 
কে তখন করবে মানা;  মন খুলে একটু  হাসতে




 নিখোঁজ

 দে ব যা নী  ঘো ষা ল

তোমাকে দেখতে চাই,
কোন কারণহীন পুরুষ রূপে।
একটা নির্ভেজাল মানুষ রূপে।
পারিপার্শ্বিক আবর্জনা 
স্পর্শ করেনি কখনো যাকে।
একনিষ্ঠ বিশিষ্ট নিখাদ এক মানব রূপে।
শ্রদ্ধায় নত হয়ে যায় যাকে এক মুহূর্তের দৃষ্টি বিনিময়ে।
সেই আগের মত!
প্রথম পরিচয়ে মুগ্ধতার সীমা ছাড়িয়ে ছিল যাকে দেখে!
মুখ ফসকে কখন যেন বলেই ফেলেছিলাম...
স্বতস্ফুর্ততায়!
ভীষণ ভালবাসি তোমায়।
ভীষণ ভীষণ!!
ফিরিয়ে দাও সেই ভরসামাখা দৃষ্টি,
ফিরিয়ে দাও সেই পবিত্র অবয়ব,
ফিরিয়ে দাও সেই অনন্য ব্যাক্তিত্ব,
ফিরিয়ে দাও সেই নিখাদ সততা,
ফিরিয়ে দাও সেই শিশুসুলভ জিজ্ঞাস্য আর আব্দার।
যে পুরুষকে সব নারী চেয়ে এসেছে চিরটাকাল,
তার নিজের একমাত্র আস্তানার খোঁজে।
বলতে পারো---
কেন হারিয়ে গেল সে?
কেন কেন কেন
হারিয়ে গেল,
সভ্যতার অন্তরালে?!!




দুর্বলতা

দে ব যা নী  ঘো ষা ল

দুর্বলতাকে মুখ ঢেকেছে মুখোশি 
দশ আঙুলের চেটো।
দীর্ঘশ্বাস কুড়িয়েছি প্রতিবাদী  রূপে।
অবলা যখন হয়েছি সবলা।
আহত হৃদয় প্রতিঘাতে দগ্ধ প্রতিনিয়তে।
ভালোবাসি বলে পারিনি 
উপেক্ষার শান দিতে কলমে।
বিবেক কেঁপেছে শিক্ষার ব্রতে 
কাউকে ক্ষুদ্র অনুধাবন 
সাজে না আত্মবলিদানে।
জিভে দিয়ে আগল 
দুর্বলতার স্মরণে।
তবু
সবলা হয়ে দীর্ঘশ্বাসই যদি উপহার 
বারবার সে উপহার শিরধার্য
যদি শুধরাও আমিত্বকে 
একটি  অন্তত বার না হয়
পড়ন্তবেলারই শেষে।।
নচেৎ বেলা বয়ে যায়
হতাশারই অনিশ্চিত প্রশ্বাসে।।




অলীক স্টেশনে

 দু র্গা প দ  ম ন্ড ল
 
পথে যেতে যেতে নেমে পড়েছি অজানা স্টেশনে। সেগুন গাছের আড়ালে সূর্য এখন অস্ত যাচ্ছে। স্তব্ধ সমস্ত বিকেল। কেউ কি আমায় ডাকল? প্ল্যাটফর্ম থেকে ফিরে গেছে ফেরিওয়ালা, উধাও মেঘের কনভয়। আকাশ থেকে কে যেন হিমেল হাওয়ায় স্বপ্নের রুমাল উড়িয়েছে। রেলের লাইন চলে গেছে সাপের খোলসের মত। 

পৌষের কুয়াশার ভেতর থেকে এক খন্ড মেঘ ঝুলে আছে কার যেন বারান্দা থেকে। পায়ের তলায় নাক ছাবির মত অসংখ্য ঘাসফুল।

অথচ কোথায় ছিল আমার ভ্রমণান্ত? এখানেই কি! নাকি আমি কোনো দ্বীপে নেমে পড়েছি? কোনো স্মৃতির ভুলে যাওয়া ভূখণ্ডে? কিন্তু কে ডাকলো আমায়!

হঠাৎ মেঘের ওপার থেকে কেউ যেন নেমে আসছে! প্ল্যাটফর্মের ওপাশে সদ্য গায়ে-হলুদ রাধাচূড়ার পাশে দাঁড়ালো কে ও! একি! ও যে আমার ছেলেবেলার বন্ধু বিষাদ। দৌড়ে গেলাম। কিন্তু আমি ওর কাছে যাবার আগেই বিষাদ রাধাচূড়া গাছটাকে জড়িয়ে ধরে একটা কৃষ্ণচূড়ার ফুল ছুঁইয়ে দিলে, তারপর মিলিয়ে গেল। 

আমার সামনে এখন নিস্তব্ধ হিমেল গোধূলি। রেলপথের আয়নায় আমার অবয়ব মিলিয়ে যাচ্ছে।

ধূসর লিরিকগুচ্ছের পান্ডুলিপিখানি কেবলই ছায়ার মত দুলতে থাকে মায়া শরীর নিয়ে।  "আকন্দ পথের সুপ্ত পদাবলী" হাতে কররেখা গুনতে থাকি।

তোমার ঠিকানা আমার পকেটে। অথচ খুঁজে পাচ্ছি না স্টেশনের টিকিট ঘর।

এবারও হিম হিম সন্ধ্যায় তোমার ওখানে যাওয়া হলো না ডরোথী।।





অসুখ

দু র্গা প দ  ম ন্ড ল 
 
তোমাকে বলা হয়নি বিদিশা, 
একটা অসুখ কুরে কুরে খাচ্ছে আমাকে--- 

মাঝে মাঝে খুঁজে পাই না আমার 
ডান হাতের পাঁচটা আঙুল,
বাম হাতের অনামিকা 
অথবা তর্জনী 
কিংবা কোন একটা চোখের 
মণিকর্ণিকা। 

তিনটের লোকাল ট্রেনে ফিরতে ফিরতে 
একেক দিন বিকেলটাই উধাও,---
নেমে আসে মাঝরাতের অন্ধকার;
পাঁচ বাই বারোর গলিটা সেদিন 
চৌত্রিশ নম্বর জাতীয় সড়ক।

রোদ্দুরের মধ্যে কখনো কখনো দেখতে পাই
ছাঙ্গু লেকের বরফ, 
লেবং-এর রাস্তায় তিনটে ভালুক 
সেদিন পথ আগলে দাঁড়িয়ে। 

পরিষ্কার আকাশে এইতো কবে যেন 
ফুটে উঠল রক্তদ্রোণ,
কোনো কোনো সকালে শুনি 
বাতাসে বেহাগ;
লাশ কাটা ঘর থেকে 
ভেসে আসে স্নিগ্ধ বেঠোফেন।
আচমকাই ঘুড়ির লাটাই থেকে 
ছিটকে পড়ে ধ্রুবতারা। 

বিদিশা,
 তুমি তো দর্শনের ডক্টরেট---
কিছু একটা প্রেসক্রাইব করতে পারো না!
অসুখটা যে ক্রমেই জাঁকিয়ে বসছে 
নিদ্রায়, জাগরণে। 
নিদেনপক্ষে তোমাদের ল্যাবরেটরীতে 
রক্তচাপটা দেখে নিয়ে বল 
অসুখটা নিরাময়যোগ্য কিনা।।





দুঃসহ সময়

টু লা  স র কা র

দিনগুলো আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে। 
বের হতে চাইছি সেই ভয়ানক স্মৃতি হতে। 
পারছিনা বেরোতে পারছি না। 
ক্যালেন্ডারের তারিখ গুলো দেখলেই বুকটা কেঁপে ওঠে।
কেন ওই দিনগুলো আমার জীবনে বারবার আসে। 
জানি আসবেই, আসাই তার নিয়ম। 
এই মাস থেকে আমি বেরোতে চাই। 
এই মাস আমার কাছে
ভয়ানক দুঃস্বপ্নের মাস । 
সবকিছু মেনে নিতে হয় সময়ের সাথে। 
কিছু ক্ষত থেকে যায় মনের
কোণে। 
ক্ষত শুকোতে এত সময়। 
গভীর ক্ষত শুকিয়ে কি যায়? 
ভীষণভাবে মনে পড়ে 
মাসের ওই কটা দিন। 
সত্যিই এড়ানো যায় না 
স্মৃতির বোঝা চেপে ধরে।




নিঃশব্দ চারিদিক

টু লা  স র কা র 

ঘরগুলো এখন বেশি বড় লাগে। 
আগে ছোট মনে হতো। 
মানুষের সমারোহে গমগম করতো। 

জানলাগুলো এখন বন্ধই থাকে
খুলতে ইচ্ছে করলেও খোলা হয় না। 
জানলার গাছপালায় উপর ভোরের আলোর বিচ্ছুরণ-
খুলে দেয় অতীতের পাতা। 

পৌষের কাছে জমা থাকে অনেক বার্তা,
শুনতে চাই না সেসব বার্তা। 
কিছু নিয়মকে করেছি অভ্যস্ত।
চলছে জীবন আপন নিয়মে। 

নৈঃশব্দ, ঘিরে আছে ঘরের চারদিক। 
নিস্তব্ধতার এক অদ্ভুত আকর্ষণ। 
ঘন্টার পর ঘন্টা ভাবনার বিচরণ। 

অভিনয়টা কখনো কখনো করতে হয়। 
নিজেকে ভালো রাখার তাগিদে। 
বাইরের জগৎ হাসিখুশি উচ্ছ্বাসে। 
বেদনাগুলো ঘিরে ধরে নীরবে। 

জীবন তো এরকমই, আবার কথা হবে, আবার দেখা হবে। 
প্রাচীরটা চারি ধারে রক্ষিত থাকবে।




কবিতার পাড়া

উ প ম ন্যু  মু খা র্জী 

পাড়া ছিল এক, কবিতার
অনেক কবিতারা থাকে সেই পাড়া জুড়ে
অবিস্মরণীয় স্মৃতিরা ঘোরাফেরা করে
ডানা আছে লাগানো সেই চিন্তায়
রোজ স্বপ্নের সাথে যায় সে উড়ে।

শব্দের চেনা অচেনা অলঙ্কার
সুরের সাথে বোঝাপড়াটা বেশ
স্পর্শের অনুভূতি তার না ছোঁয়ায়
ছন্দের থেকে যাওয়া রেশ।
মনের মরচে পড়া জানালাটা
খুলে যায় কখনও
মুহূর্তরা হয়না কখনো শেষ।
ক্ষতগুলো উপভোগ্য হয়ে যায়
এই পাড়ায় এসে,
কিছু না বলা কথা
কিছু না বলা বেদনা
কিছু না বলা অসম্পূর্ণ ভালোবাসা
সম্পূর্ণতার গাড়িতে চড়ে চলতে থাকে বেশ
এক অদ্ভুত আরাম, এ এক আশ্চর্য দেশ।




স্বর্গ

উ প ম ন্যু  মু খা র্জী 

ঈশ্বর বললেন 
তুমি কি চাও?
আমি বললাম তুমি সব দিয়েছো 
আর যা দেবে দাও।
উনি বলেন আর কি দিই তোকে
তোর যে কিছুই নেই চাওয়ার,
আমি বললাম স্বর্গ ছেঁড়া আকাশটা চাই, দেবে?
যেখানে পাবো নতুন করে ওকে।
তোর আর কিছু নেই পাওয়ার?
আমি বললাম না, তুমি কেড়ে নিয়েছো তাকে 
রোজ আঁধার রাতে আকাশ খুঁজি 
পাইনা কখনও আমার আঁচল পাতা মাকে।
বড় ইচ্ছে হয় তাদের কাছে যাওয়ার।





মৃত্যুর কালো চোখ

র থী ন  পা র্থ  ম ণ্ড ল

মৃত্যুর নিকষ কালো ছায়া
আজ ঘিরে ধরে আমায়
আলোর উৎসের দিকে পালাতে চাইলেও
পালাতে পারি না আর
পালাতে পারি না বর্বরতার বুক ছেড়ে
যেখানে প্রতিটি দিন
প্রতিটি মুহুর্তে জন্মাই আমি

আসলে এই জন্ম-মৃত্যু, মৃত্যু-জন্মর
খেলা খেলতে খেলতে
কখন কোথায় যে
পাকে চক্রে চলে যেতে হয়
তা সত্যিই জানি না আমি

কারণ মৃত্যুর চেয়ে স্নিগ্ধ
তো কিছুই নেই আর

সত্যি বলতে জন্মের আলোয়
পথ চলতে চলতে কখন যে
মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ি
তা বুঝতেই কেটে যায় সময়
কেটে যায় হাজার বছর, হাজার জন্ম।




তোমার ইচ্ছেগুলো

র থী ন  পা র্থ  ম ণ্ড ল

আজও হারিয়ে যাওয়া আমিটাকে
ফিরে পাবার অপেক্ষায় থাকি
অপেক্ষায় থাকি তোমার ডাকের

তোমার কথা ভাবতে ভাবতে
এখনও হেঁটে চলি নির্জন রাস্তায়
খামে বন্দী সব ইচ্ছেগুলো
সঙ্গী হয় আজও
রঙিন প্রজাপতি হয়ে
তারাও উড়ে যেতে চায় তোমার কাছে

তোমার রেখে যাওয়া ইচ্ছেগুলো
পূর্ণতা পায় আমার হৃদয় মাঝে

জানো শিউলি,
আমার একাকীত্বের আকাশে
তোমার পাওনার ডালিগুলো
নক্ষত্র হয়ে জ্বলজ্বল করে এখনও।।





যোগীর ফসল

শু ভ শ্রী রা য়

ওরে সাধক তোর ভাবের জগৎ আড়ালে তুই রাখ,
যেখানসেখান মেলে দিলে যাবে পৌঁছে চতুর কাক,
সে কাক তুলে নেবে ভাবের ঘরের পরম বস্তু তোর,
ছড়িয়ে দেবে অনায়াসে যত্রতত্র, বড় চালাক চোর,
দীর্ঘ এক সাধনার ফসল যে তোর পাওয়া কষ্ট করে;
লাগবে ভালো, সে মাণিক যদি এর-ওর হাতে ঘোরে?
রেখে দিস লোকচক্ষুর থেকে দূরে বস্তু গভীর, বোঝ-
সুখে সুখে, বিনা ত্যাগস্বীকার কেউ না পায় যেন খোঁজ।
ভাবের নদী ঢুঁড়ে দৈব ঘোরে সাধনশ্রমে পাওয়া রতন,
দিস না ছড়িয়ে এত হেলাফেলায় যোগী, করিস যতন!




সোয়েটার

শু ভ শ্রী  রা য়

শীতের গায়ে একটা কি দুটো গরম সোয়েটার জড়িয়ে দাও না!
কত কত ঠান্ডা জমেছে কুয়াশা-অবয়বে তার,
সবাই এভাবে দূর দূর করলে কেমন করে হয়!

সোয়েটারবিহীন শিশুরা অবশ্য শীতকেই বাধ্য হয়ে জড়িয়ে ধরে,
আরামদায়ক গরম পোষাক পরা সুখীখুশি শীতপুষি সোহাগী বাচ্চাদের তারা হাঁ করে দূর থেকে দেখে
আর শীতকেই আঁকড়ে ধরে আরো জোরে,
তাদের কষ্ট টেনে শীতের হৃদয় হিমতর হয়ে যায়;
নিজেকে সে ধিক্কার দেয়,
হিমাঙ্ক না হিম পঙ্ক কাকে বেছে নেবে বুঝতে পারে না।





শীতকাল

অ ভি জি ৎ  দ ত্ত 

শীতকাল মানে খাওয়া-দাওয়া
শীতকাল মানে বেড়াতে যাওয়া
শীতকাল মানে নানাধরনের মেলা 
শীতকাল মানে চুটিয়ে ক্রিকেট খেলা। 
শীতকাল মানেই পিকনিক আর বনভোজন 
শীতকাল মানেই পর্যটন। 
শীতকাল মানেই নানারকম শীত বস্ত্রের আগমন। 
শীতকাল মানেই খেজুর গুড় আর পিঠেপুলি 
শীতকাল এলেই ঘুরতে চলি।
শীতকাল মানেই শীত বস্ত্রের চাহিদা
ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে 
লেপ আর কম্বলের তলায় শোয়া।




বড়দিন

অ ভি জি ৎ  দ ত্ত

হে মানবতার মূর্ত প্রতীক
যীশু খ্রিষ্ট, তোমার জন্মদিন
সমগ্ৰ বিশ্বে পালিত হয়
নাম শুভ বড়দিন।

খ্রিস্টান ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা
এই নয় শুধু তোমার পরিচয়
দয়া, মায়া, ভালোবাসা দিয়ে
সেবা করতে মানুষকে সবসময়।

তোমাকে যারা হত্যা করেছিল চক্রান্ত করে
আজও তারা ঘৃণিত রয়ে গেছে
সকলের কাছেতে।
তোমার মহিমা, তোমাকে করেছে মহান
তাই শুভ বড়দিনে সকলে জানাই
তোমাকে সম্মান।

মানবতার মূর্ত প্রতীক তুমি
তোমার বাণী যদি আমরা মানি
পৃথিবীতে থাকতো না হিংসা, বিদ্বেষ
পৃথিবীটা হতো স্বর্গের মতো
সুন্দর এক দেশ।




আলেয়া

পূ জা  গু প্তা

দূরের ওই মস্ত পাহাড়,
অনন্ত সে নীলিমা...
প্রতিবিম্বে বহুকাল আর,
নিজেকে সে দেখে না...

বর্ষার ঘন মেঘ,
পাহাড়ী কোনো নদী,
সম্পর্কে শ্যাওলা জমে,
কথা সে রাখেনি...

তোমার পাড়ায় বৃষ্টি নামে,
পাল্লা খোলা জানলায়,
আলোকবর্ষ দূরে আমি,
বৃষ্টিস্নাত বারান্দায়...




দিনযাপনের রোজনামচা

পূ জা  গু প্তা

দিনগুলো সব পেরিয়ে যায়,
দিব্যি হেসে খেলে,
নিজেকে কেবল খুঁজে পাওয়া
শান্ত নদীর চরে...

ঠোঁট দুটো সারাদিন,
শব্দ সেলাই করে,
ক্ষত'য় আমি মলম লাগাই,
রাতের অন্ধকারে...

ভালোবাসা ঠিক যেন
ছোট্ট এক চারা,
প্রতিদিন রোদ মাটি
নয়নে বারিধারা...

এ শহর স্বার্থ বোঝে,
রাখে না কেউ খোঁজ...
চুপ করে গেল হঠাৎ যারা,
বিজ্ঞাপনে নিরুদ্দেশ হয় রোজ...

দিনের শেষে ভাঙ্গা ঘরে,
একলা যখন হলে,
চেয়ে দেখো একবার ঐ
নীরব চাঁদের পানে...

আমরা সবাই গল্প শেষে
অভিমানী হই রোজ...
ঘরের ঐ ছোট্ট কোণে,
ঢুকতে পারেনি রোদ...

"ভালো আছি" টার অন্তরালে,
"ভালো নেই" টা চাপা...
প্রকাশিত থাক হাসি মুখটা,
অপ্রকাশিত ব্যথা...




দুটি এক পংক্তির কবিতা

সু শা ন্ত  ন ন্দী

১) বিমূর্ত সংলাপ

জল,নদী, মোহনা আর ম্যানগ্রোভের অরণ্যে
পাখিরা বিমূর্ত সংলাপ জমা করে

২)ইচ্ছে মৃত্যু

প্রতিটি ইচ্ছেই জীবনের দিকে হেঁটে যেতে পারেনা





কবিতাগুচ্ছ

আ র তি  ধ র

১.ঈশ্বর 

যিনি আমাকে ভুল পথ হইতে সরাইয়া নিজ হাতে সঠিক পথের দিক নির্দেশ করেন তিনিই আমার কাছে আমার আরাধ্য ঈশ্বর।

২.জীব 

যাহার প্রাণে দয়া, মায়া, ত্যাগ, প্রেম, জানিবার আগ্রহ, ব্যাথায় ব্যাকুলতা, সুখে নির্মলতা, পর দুঃখে কাতর হইতে দেখি ~তাহাকে প্রকৃত জীব মনে হয়।

৩.প্রকৃতি

যেখানে বৃষ্টি আসিলে সোঁদা গন্ধ পাই, ফুল ফুটিলে ভ্রমরের গুঞ্জন শুনি, বসন্ত আসিলে কোকিল জানান দেয়, সন্ধ্যা নামিলে উলুধ্বনি কানে আসে, তাহাই প্রকৃতি।

৪.কাল

ইহার কোনো নিশ্চয়তা নাই, ইহাকে বাঁধিয়া রাখা অসম্ভব, কখনো বা ক্ষণিকের মধ্যে তাহার সান্নিধ্য আনন্দদায়ক ~আবার কখনো বা দীর্ঘপথ অতিক্রম করিয়াও বাকি থাকিয়া যায় অনেকখানি! তবে যে সময়টায় আমি সম্পূর্ণ একাকী আকাশের দিকে চাহিয়া হৃদয়ে সুখ উপলব্ধি করি... তাহাই কাল।

৫.কর্ম 

সাংসারিক জীবনের নানাবিধ কর্ম ধর্ম ভাবিয়া সম্পন্ন করিবার পর যদি কখনো অপরের মঙ্গল হেতু কিছু করিতে পারি...তাহাই আমার কর্ম।




জীবন পথে

ন ব কু মা র  মা ই তি

আমি তো চলেছি জীবনের সেই পথে 
যে পথে বিছানো হাজার কন্টক
কখনো কেটেছে উপোসী দুই বেলা 
তবুও থামেনি পথ চলার শকট। 

তুমি তো আমায় ভালবাসা দাওনি
 দিয়েছো কেবল সীমাহীন অবহেলা 
তবুও আমি তোমার স্মৃতি ভেবে
দিবস-রাত্রি নিরবধি পথ চলা। 

জীবন আমার সাহারা মরুভূমি
সৃষ্টি করব সবুজ মরুদ্যান 
বাধার পাহাড় ক্রমশ ডিঙ্গিয়ে যাবো
রাত্রির শেষে নবারুণ উত্থান। 

সমাজ, সে তো উৎপীড়িতের দলে
কেবল কাঁদায় ছলে বলে কৌশলে
কঠিন শপথ নিয়েছি মন্ত্র বলে
সত্য নিশান উড়াবো আকাশ তলে।





বিপন্ন বিস্ময়

ন ব কু মা র  মা ই তি

ভ্রমণ পথে গাছের ডালে দেখি
পাখির ভেঙে পড়া বাসা-
অতর্কিতে ডানা ঝাপটাচ্ছে 
তাকে অন্য গাছের ঠিকানা বলে দিই।

পাখিদের আর্ত চিৎকারে 
ব্যথিত হয়ে ওঠে অন্তর 
দেখা যায় চোখ থেকে 
ফিনকি দিয়ে রক্ত গড়ায়

ভ্রমণ পথে বিগলিত হৃদয় 
নিয়ে বুঝতে পারি- 
আনন্দ, যন্ত্রণা ও নীরবতা 
আসলে এক বিপন্ন বিস্ময়।





এসো হে নববর্ষ

ন ব কু মা র  মা ই তি

নববর্ষ এলে মনটা স্মৃতির সরণিতে হাঁটতে শুরু করে 
তুলে আনে শৈশবের ভাঙা আধুলি আর যৌবনের 
ধুন্ধুমার দিনগুলো। মাথার উপরে শূন্যতা, তলায় রুগ্ন মাটি
 ভুলুন্ঠিত নারীর সম্ভ্রম।ক্ষতবিক্ষত সমাজ শরীর 
কিছুক্ষণ আলো আঁধারির মধ্যিখানে এসে ভাবতে বসি
 কি দেখেছি কালের করাল গ্রাসে, কি পেয়েছি?
শূন্যতার গায়ে জামা পরাতে পরাতে ভারে ভারে শূন্য হয়ে যাচ্ছি
মুল্যবোধ নেই: দুঃখ, যন্ত্রণা, নৈরাশ্য 
শুধু দাও দাও। মানুষ আজ উৎকণ্ঠায়
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কিছুই নেই: আমি নেই, আমরা নেই 
তুমি নেই, ওরাও নেই। নেই ভুবনডাঙার পাকুড় গাছগুলো
 চারিদিকে নিরস্তিত্বের অস্তিত্ব, শুধুই ফসিল 
এই চরম দুঃখে বড় সাধ জাগে মানুষের পাশে বসি 
ওদের মুখে তুলে দিই বৈশাখী পরমান্ন 
আমার দৃষ্টি চলে যায় পাশের গাঁয়ে, ডুলুং, ইরাবতী
 নদীর পাড়ে, দুলে-বাগদি পাড়ায়। তাদের নিরন্তর
 অভাব শূন্যতা দেখে দু'চোখে অশ্রুর বান ডাকে
 ঈশ্বর ও আল্লার উদ্দেশে বলি, ওদের শক্তি দাও, বাঁচতে দাও 
মনে পড়ে ডারউইনের 'অরিজিন অব্ স্পেসিস', অস্তিত্বের লড়াই
 সামাজিক ও মানবিক অবক্ষয়; রুদ্ধশ্বাস পথচলা 
চরম অভাব ও অস্থির সময়ে নিরবধি প্রতীক্ষায় বসে রই 
নতুন বছরে দেখে যাব এক আলোকিত সুসময় 
রাম ও রহিমের ছেলে লাটাই হাতে ঘুড়ি ওড়ায় উন্মুক্ত মাঠে 
ওদের পরনে বহু প্রতীক্ষিত নতুন পোশাক, হাতে দুটো লজেন্স।




কর্কটক্রান্তি

অ র্ণ ব  সা ম ন্ত 

কর্কটক্রান্তির দুপুরে বৃশ্চিক দংশন করে 
আয় কবুতর আয় জড়ানো আদরে আদরে 
ভগ্নাংশ নিদ্রায় ভগ্নাংশ জাগরণে 
তন্দ্রাঘোরে তন্দ্রাহরণী দ্রাঘিমাংশকে দ্রাঘিমা করে
আয়ু পোড়ে আয়ু পোড়ে তবু উজ্জীবিত শিখা 
মধ্যদিনে মধ্যগগন স্পর্শ করে অবাধ্য অসহ্য দহনে 
চর্বচোষ্যলেহ্যপেয় কোষে কোষে ক্ষুধা মেটায় 
স্নায়ুতে স্নায়ুতে ঝঙ্কার ওঠে, বিদ্যুচ্চমকের ঝাঁকুনি 
স্বাতীনক্ষত্রের জল পড়ে গা'য়, জল যেতে চায় জলের গভীরে 
কিছুই অসম্ভব নয় আর সপ্তভুবন পদতলে মূর্চ্ছাপ্রবণ 
সমাধির থেকে উঠে আসে দুপুর একা একা 
তোর লাবণ্যের ঢেউয়ে ঢেউয়ে , তোর রূপের অরূপে 




বেহালাবাদিকা

অ র্ণ ব  সা ম ন্ত 

একদিন ছিল খরস্রোতা , সুনাব্য 
ষাঁড়াষাড়ির কোটালে প্লাবিত করেছে সমস্ত সংসার 
মিটিয়েছে প্রিয়জন ক্ষুধা, বেড়েছে সাত ব্যঞ্জন 
গেরস্থালিতে মোহমুগ্ধ ভাবব্যঞ্জনায় 
আজ হে ঝড়ের পাখিনি গোধুলির লগ্নে 
বেহালার ছড়ে সুর তুলে লন্ডভন্ড খন্ড করে দিচ্ছ 
যত মেঘ যত স্রোত যত স্বরবিতান 
মজে যাওয়া নদীটির অন্তঃস্থলে ফল্গুস্রোতও নেই 
'নাব্যতা' শব্দটি হারিয়েছে অভিধান থেকে, শুধু কালো দিগন্তরেখা 
পাখিনি যখন তখন উড়ে যেতে পারে 
নীলকন্ঠ হয়ে অচেনা কৈলাসে, অজানা আকাশে।





দ্রাঘিমা সিঁড়ি

 অ র্ণ ব  সা ম ন্ত 

পাথরের সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে অলকানন্দা 
দ্রাঘিমা স্খলিত করে তোড়ে ভাসায় সমস্ত সমুখ 
খরস্রোতা, সুনাব্য নদী হয়ে পাহাড় পর্বত ছাড়িয়ে 
উপত্যকা পথে ছোটে মালভূমে, সমভূমে...
তারপর সমস্ত ভালোবাসা নিয়ে ঝপাং সমুদ্রে 
সংসারের দু'কূল ভাসি যায় উজানে উজানে 
ভাটিতে গেয়ে ওঠে ভাটিয়ালি জ্বালা জুড়াতে একান্নবর্তীর 
পাগলি এখনও হৃৎকমল ভাসাতে পারে আশ্লেষে উচ্ছ্বাসে 
গোধূলির অস্তরাগে জ্বেলে দিতে পারে নুড়ি নুড়ি সংঘর্ষে চকমকি আলো 
দ্রাঘিমাকে ডাকতে পারে স্খলনে, ধারনে 
একেক নদী নাব্যতা স্রোত ধরে রাখে আজীবন 
আর কবিকে দিয়ে যায় অনন্তের পান্ডুলিপি ভালোবেসে, সুগভীর ভালোবেসে 
যুবতীজোছনা অমল ভাসানে ডাকে কবিকে।




অপরূপ পলাশ

অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত 

গোধূলির মায়াজালে সারা মাঠ ভিড়  করে আসে!
বিজিতের হতশ্বাসে মেদুর হয়ে আসে দিগন্তের বিলীয়মান রেখা!
কতদূর আর কতদূর বিজয়ীর গৌরবময় শিখা---
সৌরভ আর অহংকারে যা  বারবার আন্দোলিত হতে থাকে!
                   তবুও 
রমণীরা বিজিতের বিনীত পরাজয়ে মুগ্ধ থাকে--- তাকেও প্রণয়ে ও জয়ে 
অহংকারী করে!
প্রবাসিনীর জানালার খড়খড়ি  খুলে যায়--- গোধূলির আলো পড়ে!
তার মনে পড়ে অঙ্গরাজ কর্ণের কথা--- এইরূপ এলোকেশী  সন্ধ্যার আগমনে!





ফেরা-৪

অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত

কতদিন ঘুম-ঘোরে উঠে গেছি আঁধারে আকাশের ছাদে--- ছড়িয়েছি মৌন কবিতার আলো আর বৃষ্টির দানা বিষাদ সিক্ত পৃথিবীর রিক্ত বুকে!
                    তারপর---
আর হয় নি ফেরা! হারিয়ে যাওয়া মেঘের ঝুলন্ত সিঁড়ি মায়ের ছিন্ন আঁচলের মতো দোল খায় নন্দন কাননের পারিজাত গাছে গাছে!
ভাবছি--- আমিও ফিরবো না আর! ছিন্ন আঁচল ধরে থেকে যাবো একাকিনী মায়েরই কাছে!





অপরূপ পলাশ

অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত 

           কেন 
যে দিনের অবহে মিশে থাকে অন্য কোনো ছন্নছাড়া দিন?
অনেক  অনেক  ইচ্ছে মরে যাবার পর
ভেসে থাকি অতীত দৃশ্যমানতায়!
                তারপর
ভেজা রোদ্দুর আর গল্পের নিটোল দুপুর 
পার হবার পর অন্ধকার ঘন হয়ে আসে---
নিভে যায়  গোধূলির অপরূপ আলো!
ত্রিফলার আলোয় জেগে ওঠে--- সবপেয়েছির দেশের ম্লান চতুরতা!
কী ভাবে ধীরে ধীরে জন্ম হয় আগুনের---
জেনে যায় আবহমান শহর আর  বাতাসে
ভাসমান তাঁবুর অখিল রিক্ততা!




কবিতা

সু শা ন্ত  সে ন

কবিতা এঁকে বেঁকে চলতে গিয়ে ঘেমে নেয়ে অস্থির, কারণ কাঠখোট্টা গরম পড়েছে। আবার একদল বলল--- গরমের থেকে বেশি বাতাসে আর্দ্রতা, তাই এত অস্বস্তি হচ্ছে।

কবিতা বৃষ্টির আশায় ঘোরাঘুরি করছিল ভিক্ষুকের ন্যায়, যদি কেউ দয়া পরবশ হয়ে মাথায় একটু জল ছিটিয়ে দেয়, তাহলে হয়ত সে একদিন  'দেশ' পত্রিকায় জায়গা করে নেবে।

বাঁকা হাসিতে পরিপার্শ্ব বলে উঠলো--- আগে হাত
পাকান, তবে ত ভিক্ষুক হবেন।



বারণ

সু শা ন্ত  সে ন 

যতবার বারণ করো না কেন
ঠিক ফিরে আসব
শেফালীর বুক চিরে 
সন্ধ্যার বাতাসে।

তখন নদী-বালু-তীরে
বাতাসের দাপটে মিল খুঁজে নিও
আমার চুম্বনে।

যতবার বারণ কারো না কেন
জানি এ বারণ সে বারণ নয়।
তাই বারবার ঠিক ফিরে আসবো।





ওখানে

সু শা ন্ত  সে ন

ওখানে রয়েছে অন্য একটা বিশ্ব 
সে বিশ্ব বেশ হাসি হাসি মুখে থাকে
ছাড়া ছাড়া দেখি বসতি যদিও সব
সপ্তাহান্তে সূর্য প্রণামি আঁকে।

বিদেশী ভাষা ও বিদেশী সে আচরণ
বিশ্বজনীন মূর্তির অবয়বে
ঘুরছে ফিরছে নিজ মন মাধুরীতে 
নতুন ঠিকানা খুঁজিয়া পাবে সে কবে!

প্রজন্ম সব শেখে সেই আচরণ
বিশ্বায়নের স্রোত ধাবমান বেশ
মিলে মিশে সব হয় দেখি একাকার
সব শেষে জানি লুপ্ত গানের রেশ।





দিনকাল

শি খা  না থ

নিশুতি রাত জেগে একলা তারারা হেঁটে চলে,

আকাশের পথে পথে জোনাকির চিকমিক

অন্ধকার ঢাকা পড়ে। বিহ্বল মুহূর্তে জোৎস্না ভাসে,

চাঁদের বুক জুড়ে রুপোলি আবেশ। 

ভালোবাসার কথা বলে, হেলে দুলে দাঁড়িয়ে থাকা গাছ,

কোটরে লক্ষী পেঁচার বাস। প্রেম খেলে লুকোচুরি,

কখনও জিঘাংসায় কখনও জিজ্ঞাসায়,

প্রাণহীন প্রেম পরে থাকে সাজানো হাসিতে,

চাঁদের বুক জুড়ে কলঙ্কের ইতিহাস।





নিয়তি

শি খা  না থ

বেনারসির ঘেরাটোপে লজ্জা রাঙা সিঁদুরে মুখ

বড়ো উজ্জ্বল, _ চোখে প্রেম ,উজ্জ্বল রাঙা ঠোঁট,

কল্পনার বিস্তার, সুখ সুখ গন্ধ ফুলের মালায়,

 অপেক্ষা যেন মাধবীলতার শৃঙ্গার,

এক বুক ভালোবাসা নিয়ে বসে থাকা আসেনা সে।

আলো নিভে আসে, রাত শেষ হয়, আসেনা সে।

আলো ভোরে, নিভল বাতি  মনের, লজ্জা রাঙা মুখ

বড়ো ফ্যাকাশে। আলতা ধোয় নদী, শান্ত আবহে।





অজানা

শি খা  না থ

যত্নে  আঁকি মুখ সময়ের, চেনা মানুষের, ক্ষণে ক্ষণে 

পাল্টায় অচেনা পরিসরে, গোপন অভিসারে।

ভালো লাগা চেনা স্রোত হারালো পথ, বিদায়ী হেমন্ত

বিনিময় খোঁজে, বসন্তের আধো ডাকে কোকিলের স্বর

অঙ্কুরিত পাতা সবুজের গন্ধ মেখে উচাটন, তারও গন্তব্যে বড়ো অচেনা। শুধু নিয়মের টানে ভেসে যায় স্রোত,

জীবনের সবটাই অচেনা, কিছু অজানা।





হেমন্ত

শি খা  না থ

শুনি হেমন্তের গান, শুনি শির শির পাতা দের দোলা,

হিম লাগা কোরকের ভাঁজে, রাত কুসুমের মুখ তোলা।

পেলব নীরবতা, আকাশ জমির মাঝে, বৈরাগ্যের লীলা,

শিশির, পল্লবে মেখে, রূপলাবণ্যে ভূমি ছোঁয়া বেলা।


আবছায়া গোধূলির রূপরেখা শান্ত স্থির বিরহী,

কার অমোঘ টানে ফিরে দেখে অনন্তের পরিধি,

সোনালী আবেশে ভাসে পূর্ণতার ভারে, প্রান্তর

হৈমন্তী মেলে আঁচল ছড়ায় সুরভী প্রতিভাত অন্তর।





শব্দে সহবাস

 অ সী ম  দা স 

নিবিড়, গূঢ় নিবিড় চোখে এঁকেছো আলপনা 
গোপন ভীড়ে হারিয়ে গেলেও 
ফিরিয়ে আনে তোমারই কল্পনা।

মুক্তি পেতে চাইছি মোহের গজব সর্বনাশ, 
শান্ত হবার শিরায় পাতো
স্বেচ্ছা স্বরে শব্দে সহবাস।

এ কোন অ-সুখ রক্তবীজে, প্রথম রত্নাকর !
গুটিয়ে নিলেও ঝাঁপির নীলে
নিষাদ বিষে পোড়াচ্ছে তস্কর।

ভাবনা ভাসে, ভাবনা ডোবে, ভাবনা ওড়ায় ঘর
কাব্যে সুখী কবিতাতেই 
মরণ বাঁচন সমান নিরন্তর।






বিস্ময়ে অক্ষত

 অ সী ম  দা স 

চড়া কাছে নয়, কুলু কুলু দূরে থেকো
পেষা পেশী নয়, কৃপণ তালুতে রেখো ।

মাংসের নীচে শুয়ে আছে কঙ্কাল 
খুঁতের উপরে ময়ূরপঙ্খী পাল।

থিতু হাড়গোড়ে পূর্ণ পিষ্ট হলে 
খুঁতখুঁতে বোধ বাড়ে মগজের বোলে।

অন্তর্গত মৃত্যুর মোমে পুড়ি
জন্মের জিনে তা দেয় চাঁদের বুড়ি!

পুরো তলে নয়, ছুঁইছুঁই ছলে এসো
হাটখোলা নয়, বিজন বাতাসে ভেসো ।

অফুরান মনে হিম ঝর্ণার মতো 
প্রতি ঘাতে বেঁচো বিস্ময়ে অক্ষত।





পথ ভোলানো দূর

অ সী ম  দা স 

যেমন করে পথ ভোলানো দূর 
ছায়ার কোলে লুকোনো রোদ্দুর 
তেমনি করে খুঁজিয়ে জড়াও স্রোতে,
আটকে ঠোঁটে চুমুর সমুদ্দুর।

একবারে নয়, ঘুর্ণি ঘুড়ির মতো 
হ্যাঁচকা টানে হেঁচকি হারায় ক্ষত,
সহজ কাঁটা পেতো না পথ পাতায় 
এক চুমুকে সোহাগ অসম্মত।

পা বাড়ালেই পাহাড় পিঠে নয়
দমের দাঁড়ে প্রেমের পরিচয়,
ভরিয়ে রেখো মন পোড়ানো মোমে
পর্যটকী পাওয়াতে বিস্ময়।




সময়ের ধাঁধা

সু মি তা  চৌ ধু রী


সত্যিই কি সময়ের সাথে বদলে যায় সব?
নাকি সময়ই বদলায় কালের অভিসন্ধিতে?
পড়ে থাকে রিক্ত হাতে জরিপের ফিতে!

হিসেবটা বড়ো গোলমেলে সময়ের অঙ্কের,
কখনো ব্যস্তানুপাতিক, কখনো সমানুপাতিক, সরলীকরণ সরল নয়।
আজকের মুহুর্তরা আগামী ক্ষণেই ভাবে, "না জানি কি হয়"!!





নীল সাদা ধোঁয়াশা
 
সু মি তা  চৌ ধু রী

কিছু নীল সাদা ধোঁয়াশায় আবৃত মন-মগজ,
তাই সত্যকে চেনা দায়।
অথচ সবাই জানে সত্যকে আজ,
তবু মসনদ খুঁজে ফেরে তায়!রোজনামচার এই বালখিল্যে
  জীবন অকূলে হারায়!!





বিস্ময়
  
সু মি তা  চৌ ধু রী

কেন জানি না এতো আলোর মাঝেও ভীষণ অন্ধকারের বাসা!
কেন জানি না খালি হাতে আসা-যাওয়ার মাঝেও ক্রমবর্ধমান লালসা!
কেন জানি না প্রতিটা বিশ্বস্ত সম্পর্কের ভিতে অবিশ্বাসের ঘুণ!
কেন জানি না আজ প্রতিটি সৃষ্টিকেই হতে হয় নৃশংসতায় খুন!
কেন জানি না একবিংশ শতাব্দীর মানবসভ্যতা আজ গুহামুখে! 
কেন জানি না সত্যকে পায়ে দলে আজ দুবৃত্ত বাঁচে সর্বত্র সুখে!!





রাজ প্রহসন

 সু মি তা  চৌ ধু রী

উড়ছে রঙিন ফানুস কত-শত
সংস্কৃতির নৈবেদ্যে সাজে জলসা।

অপরপ্রান্তে জ্বলছে অগুণতি চিতা,
 অনিত্য জীবনে ঘোর অমাবস্যা।

ওরা লুকিয়ে রাখে মুখ সত্যের অপলাপে,
রাজ দরবারে যে প্রহসনই আদ্যোপান্ত ভরসা।।





মশাল জ্বালো
 
সু মি তা  চৌ ধু রী

মৃত্যু উপত্যকা গ্রাস করছে ক্রমেই সভ্যতাকে,
সামনে অতলান্ত খাদ, নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে ঢাকা।
ওখানে কীটেদের বসতি, 
যারা এক লহমায় তোমাকে তাদের খাদ্যে পরিণত করতে প্রস্তুত। 
আর দেরী নয়, মশালগুলো জ্বালো একসাথে,
সেই আলোর শিখায় মৃত্যুকে দেখাও তার নিজস্থান ঐ অতলান্ত খাদে।।





নয়া ইতিহাস
 
সু মি তা  চৌ ধু রী

ছোট্ট এই জীবন জুড়ে কতো ছবির কোলাজ নিল ঠাঁই,
সুখ-দুঃখ, ওঠা-পড়ার ছন্দপতন তো নিত্যসঙ্গী,
সেই গতানুগতিকতার পাঁচিল ডেঙে আগামী দিল নবনির্মাণের ডাক।
বুকের মশালে লিখল সময় এক নয়া ইতিহাস,
রুক্ষ পথ দিল পথিক হওয়ার আহ্বান,
মনের মাঝের স্বপ্নকে ভোরের আলপনায় এঁকে।।




জীবন সঙ্গী

লা ল ন  চাঁ দ

আসতে চেয়েছিলে 
এলে না 
নিঃশব্দ ঘর দোর 

আমি একা। একেলা 
মৃত্যুকে নিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে আছি 
মৃত্যুই এখন আমার জীবনসঙ্গী 

২)
নিঃস্ব 

শরতের নরম হাওয়া 
আকাশে শাদা মেঘ 
কাশফুল দোলা দেয় বুকের মাঝে 

যারা বাইরে ছিলো সবাই ফিরে আসে 
তোমার গন্ধ পাই 
তোমাকে পাই না এই নিঃস্ব বুকের ভেতর 

৩)
তুমি

তুমি এলে ফুল ফোটে 
তুমি এলে পাখি গায় গান 

তুমি এলে শান্ত হৃদয় 
তুমি এলে বুকের জগদ্দল পাথর উধাও হয়ে যায় 

তুমি স্বপ্ন 
তুমি হৃদয়। তুমি পিপাসা থৈ থৈ  

৪)
তোমাকে না পেলে

তোমার জন্যে কবিতা লিখি 
তোমার জন্যে লিখি গান 

তোমাকে আঁকতে গিয়ে আঁকি তোমার চোখ 

তুমি সুখ তুমি শান্তি 
তুমি প্রেরণা। তুমি জীবন 

জানি তোমাকে না পেলে নিশ্চিত আমার মরণ 

৫)
প্রতীক্ষা

আর কতোদিন প্রতীক্ষা 
ঘুম আসে না 
সারারাত জেগে থাকি একা 

বিষণ্ণ মন 
বিষাদের আগুনে পুড়ি 
তুমি না এলে এ আগুন নিভবে না সারা জীবন 

৬)
তুমি নেই 

সন্ধ্যা নামছে 
একা একা হাঁটছি 

অজানা পথঘাট 

তবু মনে হচ্ছে আমার হাতে তোমার হাত 
তোমার ছোঁয়া আমার সারা অঙ্গে 

পেছনে তাকিয়ে দেখি তুমি নেই




কবিতার অন্বেষণে

প লা শ  বি শ্বা স 

                    (৭১)
দুঃখগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরে যাবে
মেঘলা আকাশ যতোই দুঃস্বপ্ন বুনে যাক
ফুলের মতোই হাসবে তুমি
সূর্য নিশ্চয়ই উঠবে একসময়
চিন্তা করোনা তুমিই তখন সূর্যমুখী 

                    (৭২)
যেমনই দেখি তোমায় কাছে দূরে
অনন্ত পথে অসীমের মাঝে ক্ষণিকের ব্যস্ততায়
জাল পাতা জাগতিক ঘেরাটোপের ভিতর থেকে
বন্দীদশার জীবন খণ্ডে ইতিহাস ভূগোল ঘেঁটে
প্রশান্তির আর এক নাম তুমি
                                   
                    (৭৩)
মিশে থাক প্রেমের অনন্ত বিভূতি আকাশে বাতাসে
নাইবা পেলাম তার সুগন্ধ সবটা
কিছু তার হোক আবদ্ধ বর্ণমালায়
মুখরিত হোক শব্দের ঝংকারে
তোমার আমার কর্ণকুহর

                    (৭৪)
এক কাপ উষ্ণ পানীয়তে ঠোঁট রেখে
শরীরের ভিতর সব ঘরগুলোয় বারান্দায়
মায়াজাল চ্যাটচ্যাটে আঠার মতো ছড়িয়ে নিয়েছি
আর সেদিন তুমি অন্তরে তুলে গ্যাছো রঙীন শিহরণ
আমি অন্য কিছু ভাবার সময় পাই নি 
                                          
                    (৭৫)
একদিন তোমার বুকের গভীর আস্তানায় 
আমার যাওয়া ছিলো অনিবার্য
অথচ পাখিটির চোখে দেখেছিলাম চরম উন্মাদনা
যেটা তুমিও ভাবতে পারোনি
যোগ বিয়োগের সাংসারিক অঙ্কের রীতিতে

                    (৭৬)
অস্পষ্ট একটি রঙীন গোলাপে
এঁকে দিয়েছি শীতকালীন হলুদ গাঁদার প্রেম
দিশাহীন পথে দিগন্ত ছুঁয়ে যায় স্বপ্ন
হলুদ গুঁড়ো লেগে থাকে প্রজাপতির ডানায়
আমি সা রে গা মা তোমার গানের স্বরলিপিতে




কবিতাগুচ্ছ

শা শ্ব ত  ভ ট্টা চা র্য

আয়না কাহিনী

তিন পা ঘেঁষে আয়না

আজ অনেক তৃপ্ত,

আয়না এখন নিজে নিজেই কথা বলে

আয়না আমার প্রতিচ্ছবি।


রোদ

রোদ যদি কাঁচে এসে পরে

বিচ্ছুরণ দেখি

গরমে চুল দেই

আরাম লাগে

রংধনু দেখি

শীত মনে হয়।।


রংধনু

আজ রং জলে অনেকগুলো রং

গুলিয়েছি সাদা ক্যানভাস কালো করবো

যেমন কালো তোমার চোখগুলো,

জানিনা দেখতে পাচ্ছি না

আজ, এতটা নিকষ 

আজকাল আর রং জলে তুলি বোলানো হয়না

আজকাল আর কালোতে রং খুঁজিনা 

মা বলে কালোতে সব রং মিশে যায়

আচ্ছা তোমার চোখে রংধনু মিশে আছে?

সেখানে লাল রং আছে?





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চতুর্থ বর্ষ || দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল ও বাসন্তী সংখ্যা || ৯ চৈত্র ১৪৩১ || ২৩ মার্চ ২০২৫

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪