কবিতা



কবিতার অন্বেষণে

প লা শ  বি শ্বা স



           ( ১৯ )
জুঁই গন্ধ চেয়েছিলে তুমি পূবের জানালায় এই রাতে
আমি হাত বাড়িয়ে তোমার পরশ নিলাম মেখে
সে অধিকার আগেই দিয়ে রেখেছো
প্রতিটি শ্বাস দেওয়া নেওয়ার মাঝে
আমি পূর্বরাগে গা ভাসিয়েছি 
                                     


               ( ২০ )
সূর্য হেসেছে আজ বেশ ক'টা দিন পর
ওই তো তোমার হাসি হাসি মুখ
ভালোবাসার সোনালী কিরণ 
আমার সারাটা শারীর জুড়ে
আর ফুটফুটে নয়ন তারা তুমি



                ( ২১ )
আমার ভালোবাসার নাও যদি তীরে ডোবে হেসে
উথাল পাথাল মাঝ দরিয়া ছাড়ি
মন মাঝি আমার গাইবে বৃথা
ভাটিয়ালী একটানা বেসুরে
না পেয়ে কোনো দিশে 
                                  



              ( ২২ )
রাত জাগা পাখি
চেয়ে দেখো তোমার ঝকঝকে আকাশের দিকে
ফুল ফোটা ভোর হয়ে ধরা দেবো ঠিকই
এখন আমি রাতের ক্যাসিওপিয়া
সুর বাঁধি একতারায়
                               
                          

                ( ২৩ )
মনটি আমার জলের মতো
তোমার হৃদ সরোবর রাখবে যেমন প্রসারিত
আমার ভালোবাসা তেমন আকারই নেবে
ঘোলা না টলটলে
কীসের ভাবনা ভাবো অতশত



              ( ২৪ )
লুকিয়ে রেখেছো নিজেকে
মেঘের আড়ালে মায়া সন্ধ্যার সাজে
বিদ্যুৎপর্ণা হয়ে চকিত জানান দিয়ে যাও ক্ষণে ক্ষণে
তুমি আছো আমাতেই
ফাগুনের আগুন জ্বেলে দিয়ে






উৎস

চি র ঞ্জী ব  হা ল দা র


সোনার নকল দাঁত বাঁধা দিয়ে ভদকা দোকানের লাইনে দাঁড়িয়ে শোকপ্রকাশ করেছিলো যে বিকেল

পৃথিবীর চমৎকৃত অনুগ্ৰহ জড়ো করে যে ছিটাল
আকাশের উপর প্রতিশোধস্পৃহায় উপড়ে ফেলেছিল
ভালবাসার বিশ্বাসঘাতক চিহ্ন

হাজার লম্পঝম্প করেও যে গোধূলি একজন প্রাকৃত অষ্টাদশী কে হাজির করতে পারেনি তার কোটি টাকার ঝুল বারান্দায়

আমার জন্মদিন কোন নেমন্তন্ন ছাড়াই এরা পায়েশ পরিবেশনের দায়িত্বে তৎপরতা দেখাতেই ঈর্ষাকাতর
নিশা 

দেখি পাঠক দেখি তোমার পয়গমে আমার উত্তরীয় খুঁজে পাওয়ার গল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত পানীয় পরিবেশন পটুনীদের  বৃহন্নলার সঙ্গদানের কৃতজ্ঞ থাকব।







মন্ডলবাড়ি

চি র ঞ্জী ব  হা ল দা র


যে সাতমহলা বাড়ির গোধুলি সন্ধ্যা ভরে থাকতো
বেহালার ধুন
সমস্ত আমলকী গাছেরা অভিবাদন জানাতো
ছোটমেয়ের লক্ষীমন্ত উদাসীন অপেক্ষাকে
যে সেগুনমঞ্জরী থেকে নেমে আসতো পেঁচাদের প্রথম প্রহরের কলরব
আমার সমস্ত পথ সেই অলিখিত উত্তর পত্রে নত হয়ে আছে

আজকাল এক পাগল আমাকে অনুসরণ করে
আজকাল স্বপ্নাকাকিমার মুখ ভেসে ওঠে লবনহ্রদের
মজে যাওয়া সামাজিক জনপদে
সুদীপ্ত কি এখনো ডাক্তারের চেম্বারে অনির্ণেয় অনাগতের জন্য অপেক্ষায় ঘুমিয়ে আছে

আমার ফুটো গৃহকোণ থেকে এক স্বপ্নাদ্য তাবিজ
হেসে ওঠে
বৃষ্টি নামার প্রাক্কালে বাস্তুময়ূর নাম ধরে ডাকে
আমার বিবাহ বাসরে যে পাগল গান গেয়েছিল
তার নাম ভুলে যাবো এটা তো নেক্সট টু পসিবল

সেই মন্ডলবাড়িতে আজ আমার অন্নপ্রাশন
সবাই গান গাইতে এসো কিন্তু






বেশ তো আছি

নূ পু র  রা য়  ( রি ন ঝি ন )


বেশতো আছি নিজের কাছে নিজে
মন্দ ভালো সবটা আছে জানা‌।
ভাবতে থাকা অনলাইনে কি যে
মনের সাথে প্রেমেরজাল বোনা।

আমি যখন বইতে ডুব দিয়ে
ছন্দ গুনি মাত্রা মাপি ডুবে 
স্বভাব গত বাক্যবাণ গেঁথে
মনের ঘরে রক্ত স্রোত ঝরে!

তোমার মতো ভাবছ বসে তুমি
উল্টো মুখে মাখছ মসি ঘষে!
পাঁকে পদ্ম পাপড়ি মেলে চায়
মনের ভুলে গেছোই ভুলে শেষে।





সেদিনও বর্ষা ছিল

নূ পু র  রা য় ( রি ন ঝি ন )


সারাদিন টুপটুপ ঝুপঝুপ ঝমাঝম
রেনুদের গায়েমেখে ভালোলাগা মনোরম।
দিনছিল বেশভাল ছেলেবেলা সময়েতে
মাথাভেজে অবিরাম ছাতাহীন বরষাতে।
বড়জোর কচুপাতা কলাপাতা মাথাটায়
জলকাদা গায়েপায়ে অভিযোগ নেইতায়।
কুঁড়েঘর ছাউনিতে বাঁশশন ফুটিফাটা
ঘটিবাটি আটকায় জোড়াতালি বিছানাটা।
ডালচাল হলুদেই হয়েযেত খিচুড়িটা
সাথেকভু মিলেযেত ধোঁয়াওঠা লাবড়াটা।
আহা!আহা! কি দারুণ চেটেপুটে খায়দায়
অভিযোগ অনুযোগ তোলা সেই জমানায়।
আজদেখো ছাতাছাদ সবআছে মাথাটায়
তবুবুক  নোনাজলে ভেজেনানা আছিলায়।
ভিজেভিজে চুপচুপে শিমুলের বালিশটা
রাতদিন ভিজেচলে কুলুঙ্গির কার্নিশটা।
নদীনালা গাছপালা ভিজেজলে চমকায় 
সবুজের সমারোহ প্রকৃতিকে বদলায়।
বহুবিধ প্রাণীদের জলেতেই ঘরদোর
জলছাড়া নীলগ্রহ গতিহীন হবেভোর!






রসায়ন

প ল্ল ব  ভ ট্টা চা র্য  অ ন ন্ত


স্বপ্নেরা যখন ওড়ে
মুখ ঝাপটে যায় ঝরাপাতা,
ঠিক তখনই মনে হয়-
এ ভাবেই তো এগিয়ে যেতে হবে,
শেষ সম্বল টুকু পিছনে ফেলে।
নস্টালজিয়া প্রত্যাশা
দাঁড়িয়ে থাকুক বিস্মরণের দিগন্ত রেখায়।
আমার শেষ গন্তব্য থেকে
উড়ে যাবে ধোঁয়া, ধুলো-
একাকার হয়ে যাবে
স্বপ্ন হয়ে যারা একদিন এসেছিল-!!
জানি, একদিন এখানেই
নিজের বলে সব দাবী করেছিলাম;
একদিন এখানেই
সিক্ত স্পর্শে প্রেম খুঁজেছিলাম-!
আজ শুধু অবশিষ্ট বিষাদটুকু নিয়ে
আমার ইচ্ছের আকাশে
সমস্ত স্মৃতির আবর্জনা উড়িয়ে
আমি হারিয়ে যাব, আমি ফুরিয়ে যাব,
নিরুদ্দেশের পথ ধরে-
নাম না জানা ক্যাকটাস মাড়িয়ে, মাড়িয়ে।।






ধ্রুপদী জীবন ও রাত্রি

প ল্ল ব  ভ ট্টা চা র্য  অ ন ন্ত


সন্ধ্যার আভাসটুকু এলেই
অন্ধকারের দরজা যায় খুলে।
হাত বাড়িয়ে কাছে ডেকে নেয় ক্লান্তি-
আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে অবসন্নতা।
বিছানার চোরকাঁটা ঝেড়ে 
এলিয়ে দিই সারাদিনের ধামসানো দেহ,
ঘুম-কে ডেকে কানে কানে শোনাই কথা,
একটু আধটু ভাগ করে নিই বুকের ব্যথা।
রাত্রি আমায় বড্ডো ভালোবাসে।
সবাই যখন ঘুমোয় 
সে আমার কাছে আসে।
জড়িয়ে ধরে আমার গলা।
শুনতে চায় যে কথাটি হয়নি তোমায় বলা।
শর্ত করে, হবে আমার দূত-
রাত পোহালেই পৌঁছে দেবে
বার্তা তোমার কাছে,
যা লুকিয়ে রাখা আছে।
আধখানা রাত আমার কাছে থাকে,
আর আধখানা রাত ফাঁকি দিয়ে ছোটে,
বার্তা নিয়ে চুপিসারে তোমার পথের বাঁকে।
নিশাচরের তীক্ষ্ণ চোখে
হয়তো তখন তোমার চেয়ে থাকা।
স্মৃতির পাতার আখরগুলো মতিভ্রমে
অনেক কথা শুনতে তোমায় জাগিয়ে রাখা।
রাত্রি কি যায় সত্যি তোমার কাছে!
শোনায় তোমায় না বলা মোর কথা
শুনতে কি চায় তোমার গোপন কথা
আমায় যা হয়নি বলা বন্দী বুকে আছে ?
অন্ধকারে হয়তো দুজন রাত্রি জেগে থাকি
ফিসফিসিয়ে বলি যা আজও আছে বাকি
অনেক কথার অনেক ব্যথার পাহাড় গড়ে
অশ্রু ঝরাই একলা ঘরে একলা অন্ধকারে।
হাত বাড়িয়ে যারা ডাকে আপন সেজে
কেউ তারা নয় আপন জেনো তোমার আমার
মিথ্যে শুধু বাঁধন ছিঁড়ে মুক্ত হওয়া
তাল বেতালে উলোট পালোট ধ্রুপদ ধামার।






প্রথম কদম ফুল

কা বে রী  রা য় চৌ ধু রী


ছিটেফোঁটা শান্তির জল
কদম্ব বৃক্ষে ফুলের সমারোহ।
অভিসারিকা রাধিকার চঞ্চলতা
আষাঢ়ে বাদল দিনের আশায়।
শ্যামের বাঁশির সুর আসে না কানে
টুপটাপ বৃষ্টিতে রিনিঝিনি আওয়াজ।
নদীতীরে নৌকো ভিড়িয়ে মাঝি উদাস
তপ্ততায় ফেরিঘাট জনশূন্য শুনসান।
ঈশান কোণে মেঘের আশায় দিন গুনি
প্রথম কদম ফুলের গন্ধ হাওয়ায়।
চড়াইপাখির কিচিরমিচির খুনসুটি
ঝরঝর বাদলা দিনের গানের সুর বাঁধি।।






মেঘবালিকার বিষণ্ণ ছায়া

কা বে রী  রা য় চৌ ধু রী


ঈশান কোণে মেঘলা আকাশ
মেঘেরা নির্বিকার চিত্তে দোদুলদোলা।
আবহাওয়া দপ্তরে রোজই বৃষ্টির বার্তা
ঝোড়ো হাওয়া টুপটাপ্ বৃষ্টিতে গরম চড়া।
মেঘবালিকার কাজলা চোখে জল ছলছল
অভিযানে থমথমে মুখ নারীর হৃদয় ব্যথা।
মেঘের ঈশারায় চলতে গিয়ে হয়রানি একসার
একাকীত্বে আলুলায়িত চুলে মনমরা নিরাশায়।
আষাঢ়ে বাদল দিনে মেঘবালিকার বিষন্ন ছায়া
সঙ্গীবিহীন নিরালায় একলা মনে চুপচাপ।
ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে বাদলা হাওয়ায় প্রেম
শ্রাবণধারায় ভিজলে হবে হাবুডুবু আবেগ।।






রবি প্রেম

স ঞ্চি তা মা হা তো 


তোমার বন্ধ করা দুই আঁখিতে,
স্বপ্ন অনেক জাগায়।
তোমার শক্ত করা দুই  মুঠোতে, 
আমায় নতুন ছন্দে মাতায়।
বিবরণ শুনতাম তোমার,
লম্বা দাড়ি, লম্বা গোঁফ, এক গা ঢাকা পোশাক।
সেই থেকেই পেয়েছিলুম, রবি ঠাকুর আশ্বাস।
চোখ তোমার ছন্দে ভরা,
 হাতেও নানান তাল।
জানিনা,
আমি কখন যেন, সেই কবিতার প্রেমেই মাতাল।
উত্তাল হাওয়ায় ব্যালকনিতে,
মনে পড়ে তোমায়।
ঘুরেফিরে বলি যেন,
একবার তুমি দাঁড়াও।
তোমার "পাগলা হাওয়ার" গানের সুরে,
কে যেন আজ ডাকে পিছু।
তোমার "সহচরী"গানের ভাষায়,
গল্প বলে অন্য কিছু।
তোমার কালির দোয়াত নীলচে রাঙা,
ডায়েরি মোড়া জলছবিতে।
সেই "কিনু গোয়ালার বাঁশির" পাতায়,
জাগে তোমার প্রাণ।
আর "পুরাতন ভৃত্য" দেখিয়েছো,
কি সেই ত্রাণ।
তোমার জন্যই বিশ্ব মাঝারে,
জাগে অনেক প্রাণ।
আজ রবিঠাকুর জানাই তোমায়
সহস্র প্রণাম।।







তোমার শহর, আমার গ্রাম

স ঞ্চি তা  মা হা তো 


তোমার শহর বড্ড কালো, 
লাগে না মোটে ভালো।
আমার গ্রামে রঙের বাহার, 
অপূর্ব এক চেহারা তাহার।
তোমার শহর, সাদাকালো ছবিতে জমকালো।
আমার গ্রাম, শস্য-শ্যামল আর রঙিন ফুলেতে চমকানো।
তোমার শহর বৃষ্টি থেকে অনেক দূরে,
আমার গ্রাম, বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকে চেয়ে।
তুমি যে শহুরে মেয়ে,
 নূপুর দাও পায়ে? 
আমাদের গ্রামে যেন ছমছমিয়ে  নুপুর বাজে।
তোমার শহর ভীষণ ব্যস্ত,
 দাঁড়াও বুঝি সময় করে?
আমার গ্রাম খোলামেলা, দিনরাত্তির আড্ডা বসে।
তোমার শহরের কাক, শকুনের ডাক।
আর, আমার গ্রামে রঙিন পাখির ঝাঁক।
তোমার শহরে বাজে প্রকৃতির গান?
আমার গ্রামে আছে প্রকৃতির এক প্রাণ।
তোমার শহর অগোছালো ভীষণ।
আর, আমার গ্রাম যেন একখানা পটচিত্র।
তোমার শহরে,
যায়না মধুকর, যায় না কোন পাখি।
তারা যেন তোমার শহরকে মিছে দেয় ফাঁকি।
আমার গ্রামে, আসে মধুকর,
আসে হরেক রকম পাখি।
আমার গ্রামে বাজে এক সুরেলা মধুর বাঁশি।
তাইতো পথিক গ্রাম চেয়ে বলে,
-'তোমায় ভালোবাসি'।।







প্রাপ্তি

অ সী ম  পা ঠ ক 

 
বেদনার মাঝে শূণ্যতার মাঝে এক নিঃসঙ্কোচ অপ্রাপ্তির মাঝে তুমি এসেছো মনের দর্পন হয়ে, জাগ্রত বিবেক হয়ে। ভালোবাসার অস্তিত্বের অধিকার নিয়ে। সেই একই আগ্রাসন, একই জেদ, হার না মানা ইস্পাত কঠিন মানসিকতা। সম্পূর্ণ আমার হয়ে আমার অবচেতনে মিশে যাওয়া এক অনুভূতি তুমি। উপলব্ধির গভীর থেকে আরও গভীরে তোমার বিস্তার। তোমার নিঃশব্দ পদচারণায় আমার ক্লান্ত মনের রিক্ত বাগিচায় সুগন্ধি ফুলের সমাহার। তবুও যুদ্ধ জেতার উন্মাদনায় বিজয়ী সম্রাট যেমন ছায়ার সাথে যুদ্ধ করে, তেমনই আমার মনের সাম্রাজ্ঞীকে অনুভব করি বারেবারে  নিজের সাথে যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত হয়ে। রক্তের দাগ না লেগে থাকলে প্রেম যে নির্মল পরিশুদ্ধ হয় না। অপ্রাপ্তির রক্তজবায় তুমি আমার প্রাপ্তির গোলাপ। দূরত্ব শব্দটা আমাদের তাই গ্রাস করেনা, আমার যতো প্রাপ্তি ব্যাবধানের ব্যাবচ্ছেদে।পৃথিবীর দুই মেরুর অভিকর্ষে আমার হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে প্রাপ্তির খাতায় শুধু তোমার নাম নীলাঞ্জনা ।।







সীমারেখা

অ সী ম  পা ঠ ক 


আমার সীমারেখা আমি জানি। 
ঐ যে দূরে দিগন্তরেখায় 
সূর্যাস্তের রক্তিম বর্ণালীর চ্ছটায় হলুদ সর্ষে জমি, 
তারও ওপারে কুলুকুলু শব্দে বয়ে যাওয়া শান্ত নদী, 
আবার ওখানে গেলে 
দিকচক্রবালরেখাও সরে যায় 
তোমার শহরের উপকন্ঠে। 
হয়তো ওটাই আমার সীমারেখা, 
জানি ওখানে টিলার উপর থেকে দেখা যায় 
ধপধপে সাদা মার্বেল পাথরে মোড়া 
তোমাদের বিলাসবহুল প্রাসাদ।
আমার সীমারেখা অতদূর অবধি পৌঁছোতে হয়তো কয়েকটা জন্মের প্রতীক্ষা।  
কাঁটাতারের বেড়া যেমন সীমারেখার নির্ণায়ক ভৌগোলিক অবস্থানের ক্ষেত্রে, 
তেমনই ভালোবাসা কখনও বদলায় না,
তার রূপান্তর ঘটে,
স্থান কাল পাত্র ভেদে তার রূপ বদলায়।
ভালোবাসা আমার কাছে জলের মতো স্বচ্ছ প্রবহমান।
তার আকার  রঙ গন্ধ সব কিছুই তৈরী করে নিতে হয়। 
সীমিত সময়ের সীমারেখায় ভালোবাসা নতুন এক 
সীমারেখার সমীকরণ তৈরী করে।
নতুন এক প্লাবন আনে।  আমার ভালোবাসার মানচিত্রে আমার 
সীমারেখাতে আমি লাল দাগ টেনেছি 
তোমাকে হারাতে চাইনা বলে।







আজকাল

ঊ ষা  গ রা ই


কবিতাগুলো আজকাল চেনা কবিতার মতো
লিখতে পারিনা...
বকুলগন্ধ, শিউলিগন্ধ, রজনীগন্ধাগন্ধ
আরও কতো সুবাস যে বেড়াতে এলো
এই খাতার আনকোরা পাতায়।
তাদের আসন দিলাম, কাঁসার মাজা ঝকঝকে ঘটিতে 
জল-বাতাসা দিলাম, তালপাতার পাখায় বাতাস করলাম
তারা সন্তুষ্ট না হয়ে সারাক্ষণ মুখ ঘুরিয়েই থাকল।
অথচ---
আমি পরিপাটি চুল বেঁধে 
দাওয়াখানি নিকিয়েই রেখেছিলাম,
তোমরা জায়গা পাচ্ছোনা?
তাইকি গা ঠেলাঠেলি করছো?
কিন্তু এ বিশাল অমৃতময় দাওয়ায় বালিঝড় তো ওঠেনি!!
ভয় পেওনা গো তোমরা...
এখানে অর্জুন অনুপস্থিত,
মাছের চোখে তীর বেঁধানো হবেনা,
কর্ণ যে আজও সুতপুত্র।
আমি লভ্যাংশ রেখে দিয়েছি ঝুড়ি ভরে।
শুধু আসনটাই ভেসে গেছে লোনাজলে।
সম্পর্কগুলো কেবলই নুনের বস্তায় হামলা চালাচ্ছে।
পৃথিবী শুদ্ধ হতে এখনও যোজন পথ বাকি।








আমি

ঊ ষা  গ রা ই


আগুনের ভেতর দিয়ে হেঁটে
পৌঁছাতে চেয়েছি আলোর উৎসমুখে
অফুরান সাহসে তোর কড়ে আঙুল
ধরা ছিল মুঠিতে।
গান বাজছিল দূরে
উৎসবের সমাপ্তি সঙ্গীত...

শোকের ছবি তুলে ক্রমান্বয়ে 
সাজিয়ে রাখছিলি শো-কেসে...

তুই কবিতা লেখ-
একটি মেয়ের জীবনের কবিতা।
আমি হাঁটা দিই এ যাবৎ
স্মৃতির ট্যানেল ধরে
উত্তাল সমুদ্র হতে আগ্নেয়গিরির গর্ভে...







অতীত-কে

সু জ ন  প ণ্ডা


তোমাকে লিখি না বহুদিন,
তুমিও ভুলেছ ঠিকানা।
এখন পাতার পর পাতা
শুধু হলুদ বালিয়াড়ি।
নিস্তেজ। শুকনো। রৌদ্রস্নাত।
শুধু নির্বাক মুহূর্তের আনাগোনা
দায়ভার হীন বেদুইনের মতো।

তোমাকে লিখি না বহুদিন
তুমিও ভুলেছ ঠিকানা। 
এখন পাতার পর পাতা 
শুধু ধূসর রঙের অতীত 
ক্রমশ গাঢ়তর ছায়া টুকু নিয়ে। 

তোমাকে লিখি না বহুদিন
তুমিও ভুলেছ ঠিকানা।
সবটুকু ভুলে যাওয়া গেছে এতদিনে, 
অতঃপর শূন্যতা এসেছে আজ। 
কঠিন। নিটোল। সর্বগ্রাসী।
অতঃপর মুছে গেছে সব অভিযোগ।

তোমাকে লিখি না বহুদিন
তোমাকে নিয়েও নয়।
তুমিও ভুলেছ ঠিকানা
আমি বদলে নিয়েছি দেশ।







ভবিষ্যত-কে

সু জ ন  প ণ্ডা


একদিন এই পাহাড়ের নাম ছিল অসম্ভব।
ঘন কুয়াশা ঢাকা
আর সবুজ শ্যাওলা আঁকা নিখাদ প্রাচীর।
গাছগুলি ছুঁয়েছিল আকাশ।
আকাশ, যার নাম ছিল সাহস একদিন। 
তুঁতে রাঙানো
আর সূর্যের আলোয় ঝকমকে পাখির ডানা। 
পালক ছুঁয়েছিল বিদ্যুৎ। 
বিদ্যুৎ যাকে তখন প্রত্যয় বলতো সবাই। 
দৃঢ় অথচ কী ভীষণ হালকা। 

তারপর একদিন 
সাহসীর প্রত্যয় ভেঙ্গে দিয়েছে 
অসম্ভবের সব অহংকার। 

পাহাড়ের সব গাছেরা 
অহংকার ভাঙা নদীতে পা ডুবিয়ে
সেই গল্প শোনায় আজও।








পারলে তুমি ফিরিয়ে এনো

ম ঞ্জি রা  ঘো ষ 


মন খারাপের বৃষ্টি এল 
অথৈ জলের ধারা,
ছাদ উঠোনে ভিজছি আমি 
মনটা পাগলপারা।

আয় বৃষ্টি ঝেঁপে 
দু'চার মুঠো দুঃখ দেব 
কান্না দিয়ে মেখে,
বুকের মাঝে রেখেছি  যা
যত্ন করে রেখে।

মন খারাপের বৃষ্টি জানিস 
তোকেই আমার ভয়?
তোর দেখাতেই ভাঙবে আমার সংযমেরই লয়।

আয় বৃষ্টি ঝেঁপে 
জলের ধারায় জড়িয়ে রাখিস
ক্লান্তিনাশা প্রেমে,
অহংকারে মেতে আছি 
বিশুদ্ধ সেই হেমে।

ভিজবে হতাশ, ভিজবে গ্লানি শত 
ভিজবে মনের অনেক অনেক ক্ষত 
ভিজবে আমার আঁখির পাতায় 
থমকে থাকা অশ্রু ধারা যত।

হৃদয়ের একূল ওকূল ভাসিয়ে যাবো 
মন খারাপের দেশে,
পারলে তুমি ফিরিয়ে এনো 
হঠাৎ করে এসে।


 





বর্ষা ভেজা  আজকে রাতের চিঠি

ম ঞ্জি রা  ঘো ষ


মেঘের সাথে  ইলশেগুঁড়ি ফোঁটা 
বিষণ্ণতায় করছে ছলোছলো,
ও মেয়ে, তুই কি ভাবছিস বল
চোখের  কোণে অশ্রু  টলোমলো।

দুয়ার ধরে আগলে রেখে বেলা
ও মেয়ে, তুই  রাগ করেছিস বল?
রাগের ভাঁজে অনুরাগের  ছোঁয়ায় 
নীরব হল আজকে কোলাহল।

মেঘের ডানায় ইলশেগুঁড়ি নাচে 
মেঘের কাছে  কি যেন সে যাচে
সেই মেয়েটা উদাস উদাস চোখে
এক দিগন্ত স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে।

বর্ষা ভেজা আজকে রাতের চিঠি 
রাত ফুরালেই আগল করে দিঠি,
চোখের তারায় মগ্ন  ভালবাসায় 
প্রেমিক'কে সে ক্ষণে ক্ষণে  হারায়।।







দাবানল

প্র দী প  ম ণ্ড ল


বিধ্বংসী দাবানল,
জ্বলে, নেভে আবার জ্বলে, পর্যায়ক্রমে আবর্তন। 
বনের হৃৎপিণ্ডে রক্তক্ষরণ
রক্ষা নেই কারো, গুল্ম থেকে মহীরুহ
ছাই রয়ে যায় কেবল। 
মনের দাবানলে ওড়ে না ছাই
হৃৎপিণ্ডের প্রাচীর ভাঙে
আঁখি কোণে জ্বলে শুভ্র মুক্তো। 
দীর্ঘশ্বাসের তালে তালে
লহর ওঠে উত্তাল নদীতে
দাবানল প্রশমিত হয়, শুকায় আঁখি কোণ। 
সময়ের আবর্তনে কখনো ছন্দময়
কখনো কাটে তাল, 
জীবন চলে আপন গতিতে অবিরাম।







স্রোতস্বিনী গঙ্গা তুমি নীরব কেন

শা ন্তা ল তা বি শ ই সা হা


যদি বা নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে- 
নির্মম প্রেমের মতো;
সত্যবাদী হয়ে উঠে কলমের কালি
হায়: হৃদয় ফুঁড়ে বেদনা জানাতে ভালোবাসে,
ভালোবাসে তোমার ভাবনায় বিভোর হতে।
তোমার স্থিরতাকে উপেক্ষা করে গেছি চিরকাল,
কেন তবু দাঁড়িয়ে থাকো!
দু'কূল ভাঙা মহাকালের বুক জুড়ে?
ঐ একমুখ জীবনকে জীবিত রেখে-
স্মৃতি শুধু গিয়েছে থেকে।
এই তার বেলাভূমি এই বালুচর-
এই তার নিস্তব্ধ স্মৃতি।
তুমি শুধু এক দুই তিন চার তারাদের ভিড়ে,
কে জানে কোথায় আছো! তবু তুমি আছো,
এ শুধু নিস্তব্ধতা জানে।
কখনও বা ভুলে যেতে পণ করি-
কখনও বা তারা গোনা ছেড়ে উত্তাল সমুদ্রে ডুব দিই,
লাল নীল আলপনা আঁকি।
কত রাতে শিশির জমেছে খালি গায়ে,
পলি পড়েছে বিস্তীর্ণ দু'পারে অসংখ্য মানুষের হাহাকার,
তুমি নেই মানেই তো হাহাকার।
ওগো শঙ্খচিল-
তুমি আর কেঁদো না গো,
নেশা আজ শেষ।
রোদ ওঠে ছাদে,
কোথায় তারাপীঠ?
কোথায় শিশিরের শব্দ?
ভোঁ বেজে গেছে ভোঁ-
দশটা-চারটা জীবন,
সারাদিনের শেষে-
আবার জোৎস্না নামে,
আবার কুয়াশা নামে ধরণীর বুকে,
আবার প্রিয়'রা আসে,
আবার পালে লেগেছে হাওয়া।
তুমি আসবে বলে, আবার
অপেক্ষায় দিন গোনা।







বন্ধুর পথ

টু লা স র কা র


চলেছো তুমি বহুপথ 
কিন্তু এপথে এসেছো কি কখনও। 
যে পথ করেছো পার 
সে পথের সম্মুখীন বারবার।
একবার এই পথটাও দেখো হেঁটে, 
গভীর খাদের পাশে।
জনশূন্য তমসাচ্ছন্ন বদ্ধ বেলাভূমির আগ্রাসী আক্রমণ। 
মিলিয়ে দেওয়া সহজ নয়,
সবার সাথে সবার চলন।
রবি এখানে অসহায়- 
দেখায় না আলোর দিশা
একাকী স্তব্ধ রজনী যেনো মৃত্যুকালীন নিশা।
এ নয় ক্ষোভ 
নয় অভিমান 
এ শুধু শেখা জীবনের কাছে।
তুমি আছো যেখানে থাকো সেখানে আলোকিত হয়ে।
বোঝাতে চাইনা পথের বাধা প্রতি পদক্ষেপ কণ্টকিত সদা।
অগ্র-পশ্চাৎ দক্ষিণ-বাম সমস্থান সকল।
সূর্যের প্রখর তাপে ভষ্ম শরীর জল জঙ্গল। 
মেঘ আসেনা দিতে ভিজিয়ে কেমন ম্রিয়মাণ 
প্রকট শীত জাঁকিয়ে বসে, জমে শোণিতধারা।
কতদিন দেখিনি বসন্তের কৃষ্ণচূড়া পলাশ, শিমূল। 
হেঁটে চলেছি বন্ধুর পথ ক্রমশ পিছনে ফেলে
চোখদুটো এখনও সুস্থ স্বপ্ন দেখে এগিয়ে চলে।







পুরাতন এক খেয়া তরীর কথা

নি ভা চা ক লা দা র 


বেড়ি বাঁধা পায়ে মোহনায় 
পড়ে আছি নির্জন একেলা, 
স্মৃতি যে পাহাড় প্রমাণ, 
শুধু হিসেব করার পালা।
 
মাঝি ভাই নিত্য নদীর বুকে 
আমায় ভাসিয়ে নিয়ে যায়, 
কড়ির লাগি ঠাসাঠাসি করে 
শত শত জন চড়ায়। 

এপার ওপার পারাপার, 
জোয়ার ভাটার টানে, 
ক্লান্ত অবসন্ন দেহটি  
ছন্দ হারা চলনে। 

ওঠা আর নামা বার বার 
শত শত নিতি নিতি
বৈঠা ছপছপ, কড়ির তাগিদ
মাঝি ভাই এর অতি। 

কতো আলাপচারিতা কানে আসে 
কথার কথা- না খাঁটি, 
কেহ আবার খাচ্ছেন বসে 
হাতে হাতে ভাগ বাটি। 

মাঝে মাঝেই কতো লাশ 
পশু কিম্বা মানুষ ভেসে যায়, 
কাহার কি কারণ এমন 
পরিনতি জানি নে হায়। 

কেহ আবার বস্তা বন্দী, 
পুতিঃগন্ধ ছড়ায়, 
কোন তরুণীর মরদেহ না 
অবৈধ প্রেমের ফসল হায়!

আমার অন্দরে যাহারা, 
তাহারা সাধু না অসৎ কে জানে! 
চোখে ধুলো দিতে কোন্ 
অসৎ চলে আত্মগোপনে।








সমাজ

অ শো ক বো স দে ব ব্র ত


গল্পে তুমি
আমি গল্পের বাইরে।
তোমার সবকিছু সুন্দর -
দরজায় হীরের আম,
জানলায় সোনার মেঘ,
আমার জানলা দরজায় ঘুন পোকা।

তুমি বাঘের সাথে
খালি হাতে আখড়ায়।
সাপের বিষ দাঁত 
ভয় দেখিয়ে উপড়ে নাও।
আমি বাঘের মাসির ভয়ে
মাছের ঝোল তালা বন্ধ রাখি।
ডেন্টিস্ট পোকার ভয় দেখিয়ে
আমার দাঁত উপড়ে নিয়েছে কাল‌।

তুমি তাই উন্নত শির,
এলিট শ্রেণী।
মেজাজ নিয়ে কথা বল ।
আমিতো মাঠের ঘাস,
কারখানার শ্রমিক,
বখশিসের আশায় থাকা ওয়েটার।
বসকে দেখে মাথা নোয়ানো 
দরজা খোলার সহায়ক।
আহাম্মক।







কালো মেঘ

শ ম্পা মু খা র্জী কো লে


এই কালো মেঘ ডাকলে তোকে দিসনা কেন সাড়া?
তোর যে দেখি সারাক্ষণ কাজের ভীষণ তাড়া।

এদিক সেদিক উড়ে বেড়াস শুকনো জায়গা পেলে,
অমনি তুই ভিজিয়ে দিস ইচ্ছা মত জলে।

সারাদিন রাত গল্প ঘুম খাওয়া দাওয়া ভুলে,
কাজের উপর মন দিয়েছিস এসব কিছু ফেলে।

দিনের বেলায় রবিমামার দেখা পাই না মোটে,
কখন যে উদয় হয় কখন যে যায় পাটে।

দে তো দেখি আকাশটাকে ভালো করে ধুয়ে,
শরৎ আকাশ আসুক ফিরে খুশীর বার্তা নিয়ে।







আইবুড়ো ভাত

পি না কী র ঞ্জ ন মি ত্র 


ঘাম ঝরছে ভেজা শরীর , বাদল বইছে ভারী 
সাঁতরে বেড়ায় সাঁওতালী মেঘ এলোকেশী নারী 
কেউ বলে সে মেঘের রাশি জলজ জলদ ভারে 
তৃষ্ণা মেটায় পাহাড় মাঠের বাতাস বুকে ক'রে ।

আইবুড়ো ভাত খাবে ব'লে ক্ষেতে চলছে প্রস্তুতি 
নিদ্রা রোগে আর কত কাল ঘুমের করবে স্তুতি। 
খাল বিল মাঠ ডাক দিয়েছে  শাণাও ঈষের ধার  
অনেক হলো ভিক্ষা অন্ন, অন্নপূর্ণা-বাড়ন্ত ভাঁড় 
প্রতিশ্রুতি, প্রলোভনে শুয়ে বসে পাড় হলো আল 
বাদল এলো গতর খোলা, খোলা মাঠ  যুদ্ধের কাল। 
এক দুই নয় অনেকটা দিন কালের নদী বয়ে চলেছে 
কলকব্জায় জং ধরেছে। বাদল বাতাস শিস দিয়েছে
ঘুমের ঘোরের নেই অবকাশ,
হাপর চায় বুক ভরে শ্বাস
সাজিয়ে গাড়ি বরকন্দাজ বলছে হেঁকে, দুয়ার খোলো, 
মাঠ খেতে চায় আইবুড়ো ভাত কলম ধরো যুদ্ধে চলো।








অটুট বিশ্বাস

ছ ন্দা দা ম


হৃদয় আমার জ্বলন্ত অগ্নিবলাকা.....
জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দেবার আগুন পুষে রেখেছে,
আপোস শেখেনি সে... হারতে জানে না কখনোই।

প্রতিটি বার ভেঙে ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলেছ তুমি...
তবু আশ্চর্য শক্তি এর... জুড়ে গেছে জাদুবলে।
এমনি করে প্রতিটি অশুভ শক্তির অসীম সাহস...
তবু ওরা পরাজয় স্বীকার করে সত্য সুন্দরের কাছে,
বারবার মাথা নত করে... হেরে গিয়ে।

আমার জেদ আমাকে নুতন সূর্য ছিনিয়ে আনতে
সাহস যোগায়,
সাহস জোগায় বিষের পেয়ালা গলাধঃকরণ করেও
মন্থনে অমৃত তুলে আনার।
হয়তো ভাবো তুমি আমাকে লতা... জড়িয়ে ধরে বাঁচি বৃক্ষকে,
তবু বারবার প্রতিবার ভুল ভেঙে দিই আমি।
মহীরুহের বীজ ধারণ করি আপন অন্তর আত্মায়,
আমার শাখা প্রশাখা ছড়ায় মহাশূন্যে,
বারংবার শোনায় জীবনের জয়গান,
হাজারো ঝড় ঝঞ্ঝায় থাকে অটুট।।








স্মৃতির ধারাপাত
      
অ রু ণ কু মা র দাঁ


চোখ জুড়ে বৃষ্টি নামে
বুকের মধ্যে নদী-
বালির উপর শায়িত স্মৃতি
নৌকা এঁকে রঙিন ছবি।

কথার ভেতর হারানো কথা
সেতুর উপর পাগল-
পরাগরেণু মাখে দু'হাতে
ভালোবাসা জমানো ভুল মানুষের খাতে।







ওরে ও মেয়ে

জা স মি না খা তু ন


কন্ঠে যদি কনকচাঁপার মালা নাইবা
দোলে, ওরে ও মেয়ে তুই আঁচল
ভরে শিউলি ফুলই সগৌরবে
নে রে তুলে।

আঁধার ঘরে মাটির প্রদীপ যদি নাই
বা জ্বলে, ওরে ও মেয়ে তুই
আপনারে জোনাকি করে নে রে গড়ে।

জ্যোৎস্না রাতে পূর্ণচন্দ্র যদি নাইবা ছড়ায় 
আলোর আভাস নীল আকাশে,
ওরে ও মেয়ে তুই আপন হাসির
ঝলকানিতে ঘুচাস সকল অন্ধকার এক নিমেষে।







মেঘের ফাঁদে

ত ন্দ্রা ম ন্ড ল


মেঘের ফাঁদে শ্রাবন কাঁদে
রিমঝিম সারাবেলা,
স্মৃতির ঢেউ এ চলে বয়ে
মনকেমনের ভেলা।

বৃষ্টি নূপুর ছন্দে খেলে
আনমনা রাতদিন,
উতল হাওয়ায় মেঘের ছাওয়ায়
মনটা উদাসীন।

বকুল বেলি দেয় অঞ্জলী
মনমাতানো গন্ধে,
বৃক্ষ লতা ক‌ইছে কথা
সবুজ আনন্দে।

মেঘের বাঁশী বিজলী হাসি
চমকে ওঠে চিত্ত,
ঘরের কোনে প্রহর গোনে
আমার একাকীত্ব।।









দোটানার অবসান
 
মা লা চ্যা টা র্জ্জি
  

ওপারের তরী এসে গেলে
দোটানার অবসান ঘটাবো। 
বহ্ন্যুৎসবে ভস্ম জীবন মুছে দেবো
ফিরেও তাকাবো না— ছুঁড়ে ফেলবো মায়া ছাইটা,
এমনই নির্ভার হবে আমার যাত্রা কাল,
এমনই আকর্ষিত হবে গান,
ওপারের তরী এসে গেলে,
আমি সম্পর্কের বসনের ভেলা
পুরো ডুবিয়ে দিয়ে চলে যাব।








পার্থক্য

শু ক দে ব দে


জানলা দিয়ে বৃষ্টি দেখতে বেশ
বিন্দু বিন্দু মিশে যায় সহচরী৷
এই ছলনাই গরীবের বিদ্রুপ
বাড়ির ফাটলে ঢুকে যায় জলপরী৷

হঠাৎ সেখান সবাই যখন চুপ
গবাদি পশু দেওয়াল চাপা থাকে৷
সে চিৎকার শোনা যায় না জলে
পাঁঠার কান্না ঢেকে দেয় ঠিক ঢাকে৷

কেউ বা শেষে আশ্রয় নিয়েছে ছাদে,
বাচ্চা কোলে সাঁতরে যাচ্ছে আজ
বিরাট টাকার বিন্দুমাত্র দিয়ে
তোমরা ভাবছ করেছি পূণ্যকাজ!

কেউ ফিরছে এঘর ওঘর ভিজে
কোথায় পাবে একটামাত্র ছাদ?
তুমি সাজছো নীল কাজলের চোখে
ভণ্ড আবেগ, বাস্তবতাই বাদ৷







দ্রোহ কাল

প্র ল য় ব সু


এইসব নীড়মুখী তারা
আর মনামির শিশুদের কথা-
প্রপাতের উন্মত্ত শরীরে
জুড়ে থাকে জানুভঙ্গ ব্যথা;
অনন্তের লৌহফলক-
তোমার আমার পানে 
থাকে চেয়ে অন্ধকার
রাত্রি নিষ্পলক।

স্বকীয় পরকীয়ার মত
মেঘেদের পাশাপাশি-
শ্রীতমা গিয়াছে ভুলি
যত কলি, শত কানাকানি;
গোলাপি সকাল মাখা
কবেকার আনমন গাথা-
তখনও বিকেল ছিল,
আজ হেলে পড়া গুলঞ্চলতা।

এইসব ঢেউয়ের কথা অবিরাম
দারুচিনি দ্বীপের ভিতর-
দুদন্ডের রূপমুগ্ধ- চেয়ে থাকা-
নিছক উদাসী মন ছড়ায় আতর;
শতজল ঝর্ণার কলধ্বনি-
ইতিহাসে বহুদামী কোমল পাথর,
গল্পের শরীর বেয়ে চলে বয়ে
গতিময় অগতির স্বপ্নবাসর।

অস্থির সময় শেষে
রিক্ত চৈতী অবসানে
পড়ে রয় অবসন্ন 
নিদারুণ অনাবৃষ্টি ক্ষণে
নিরন্তর সন্ধানের অতৃপ্তি-
অপরিসীম- অসহায়-
বাস্তবের কাছে প্রেম 
চিরদিন থেকে যায় নিরুপায়!







মুক্ত বিহঙ্গ

প্র দী প কু মা র দে ( নী লু ) 


খাঁচা থেকে বেরিয়ে মেঘ ভরা আকাশ
মাথায় করে এসো যাওয়া যাক শৈলশহরে,
কিম্বা দীঘার তীর ছুঁয়ে যাওয়া ঢেউ এর সন্ধানে,
কাজু বাগানের শীতল ছায়ায় ক্ষণিকের বিশ্রাম,
যাওয়া যেতে পারে উত্তরের চা বাগানের সবুজ মেলায়,
কতদিন অনর্থক ভাবনার গহীনে ডুবে থাকা যায় বলো!
তার চাইতে খোলামেলা উদোম প্রকৃতির কাছে এসে,
সময়ের প্রত্যাশিত পরিণতি স্পর্শ করি ভালোবেসে,
ইচ্ছে হয় পৃথিবীর সমস্ত খাঁচা খুলে দিই উড়ে যাক 
বন্দী বিহঙ্গের দল নীল আকাশে ডানার ঝাপটে জিতে নিক 
যাবতীয় অবক্ষয়! এক নিমেষে পাল্টে যাক সময়ের কাঁটা,
ইতিহাসে লেখা থাকুক অসহনীয় যাতনার রেশ মৃত্যু মিছিল,
তবুও মানুষ হেরে যায়নি, কতবার কতশত আকস্মিক আক্রমণে।
তাই বলি! সব ভাবনার উর্দ্ধে উঠে চলো বেড়িয়ে আসি,
হয়তো এই হবে শেষ যাত্রা একসাথে হাত ধরে পাশাপাশি।








নগ্নচিত্র

ব ন্দ না ম ন্ড ল ( মিত্র )


একটি নগ্নচিত্র আঁকতে চাই
না না, কোনো নারী বা পুরুষের নয়।
এই পার্থিব জগতের অপার্থিবতার
মস্তিষ্কের গভীরে, যেখানে অবচেতন শয্যাশায়ী
তার উপর দাঁড়িয়ে কতগুলি প্রেতের নগ্নচিত্র।

হ্যাঁ, ঠিক তাই।
কতকগুলো প্রেত!!

বলতে না পারা প্রেত
দেখতে না পাওয়া প্রেত
শুনতে না পারা প্রেত
ভাবতে না পারা প্রেত
এমনই আরও কত!!!

গুগল করেছি, লাইব্রেরী খুঁজেছি
কত না চিত্র প্রদর্শনী ঘুরেছি!
কিন্তু নাহ্, কোথাও নেই এমন চিত্র।
এমন কি, মর্গের মরা মানুষের মাথার ভেতর উঁকি দিয়েও পাইনি।

সহসা একদিন ঘুমের ঘোরে দেখি,
কিলবিলিয়ে উঠলো স্বপ্ন।
জেগে উঠলো প্রেত।
শুরু করলো নৃত্য।
অন্ধকারে আমার আরষ্ঠ দেহে তখন ছটফটানি।
এই তো পেয়ে গেছি! পেয়ে গেছি! 
চোখের সামনে ভেসে উঠলো আমার দিনযাপনের চিত্র।
সভ্যতার কালো চশমা এঁটে হেঁটে চলেছি 
কানে রয়েছে হেডফোন!
আস্তাকুঁড়ে খুঁটে খাওয়া লোকটাকে দেখতে পাইনি,
মৃত কন্যাভ্রূণের কান্না শুনতে পাইনি,
চোখে পড়েনি নিগৃহীত পাঁচুর মায়ের ক্ষতচিহ্ন!

হ্যাঁ, ঐ তো সেদিন আমার জন্মদিনে
সেই বাচ্চা কোলে বৌটা 
কেমন ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে ছিলো,
তার খিদে আমি দেখতে পাইনি।
স্কুলছুট ছেলেটি পকেট মেরে পালালো,
তার অশিক্ষাই বড় করে দেখলাম, 
তার অভাব তো দেখলাম না!
অমুকবাবুর মেয়ে রাতবিরেতে ঘরে থাকে না
দেরী করে ফেরে
ছোটখাটো পোশাক পরে বলে কত সমালোচনার ঝড় উঠলো,
কই তার পক্ষাঘাতে শয্যা নেওয়া বাবার খোঁজ তো করিনি,
ঐ বৃহন্নলার ভঙ্গীমাতে বিরক্ত হলাম,
ওদের বেদনা অনুভূত হলো না। 
আরও কত শত শত প্রেত একসাথে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মস্তিষ্কের রন্ধ্রে রন্ধ্রে!
হায় রে! এই তো সেই নগ্ন প্রেত!
উচ্চাকাঙ্ক্ষা সভ্যতা ভব্যতার আড়ালে দানবের মত বড় হয়েছে গহীন মস্তিষ্কে,
টের পাইনি। 
যন্ত্রনায় মরমে ছটফট করছি,
বুকের ভেতর হৃদপিন্ডের লাফালাফি টের পাচ্ছি,
সে যেন সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করে চলেছে দানবের বিরুদ্ধে।
দেহ আরষ্ঠ,
কিছু দেখতে পারছি না, শুনতে পারছি না, বলতে পারছি না।
অস্ফূটে বেরিয়ে এলো শুধু
গোঙানি।
ঘুম ভেঙে দেখি-
পাখিরা ডাকছে,
সূর্য তার সবটুকু প্রাণ ঢেলে দিয়েছে এই পৃথিবীর বুকে,
আয়নায় নিজেকে দেখলাম-
মানবিকতার পরিধানে ঢেকে নিলাম নিজের নগ্নতা।।








হিসেব  

অ নি ন্দি তা না থ 


মনটা মুক্ত ছিল,
উদার আকাশে দৃষ্টি।
গভীর চিন্তায় নিমগ্ন,
পিতা না ফেরার দেশে 
নিলেন স্থান।
মা-বোনের দায়িত্ব নিলেম কাঁধে।
বেকারত্বের জ্বালায় অস্তিত্বরতা,
ভীষণ ব্রজাঘাত।
জীবনের ছন্দ কেটে
নিরন্তর দ্বন্দ্ব।
চারপাশে ঘোর অমাবস্যা।
সিঁড়ি ভাঙা অংকের জীবন,
কখনো মেলে, কখনো অনির্ণেয়।
অসহ্য যন্ত্রণা!
প্রতি রাতে ঘুম ভাঙে,
চোখের কোণে জমে 
নোনা জল।
ঘড়ি প্রহর গোনে 
টিক্ টিক্ শব্দে।
চিন্তার খেলা অহরহ।
জীবন যুদ্ধে জেতার 
তীব্র বাসনা।
আর অবিরত এগিয়ে চলার মন্ত্রে পথ চলা।








বর্ষা

অ জি ত কু মা র জা না 


যোগ বিয়োগের চিহ্ন নিয়ে,
     বর্ষা গান গায়। 
সময় জানে সব গল্প, 
     আমরা নগদ প্রত্যাশায়।।

নতুন শুরু, গন্ধ বাসর, 
     জমার পাল্লা ভারী। 
উঠোন রোদে চড়ুই পাখি, 
     সস্তা সোনার ভরি।।

যোগ সাগরে বানিজ্য জাহাজ, 
     আমদানি রপ্তানির ভীড়। 
বিয়োগ চিহ্ন, লুকিয়ে হাসে,
     পিঠের তূণীতে তীর।।

সবার স্বপ্ন কোটি পতি, 
     বর্ষা ও নয় ভিন্ন। 
জলের কলস ঢালতে ঢালতে, 
     সব করে ছিন্ন।।







রাতের গভীরতায়

অ ন্ন পূ র্ণা দা স


শান্তনু অপেক্ষা করছে কখন আসবে দেবব্রত,
রাতের গভীরতায় হাজার প্রশ্ন মনকে অস্থির করছে
এখন কোথায় হস্তিনাপুরের ভাবি রাজা,
যার কাছে রাজ্যের দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তে অবসর নেবে,
এমত সময়ে দ্বারারক্ষী বলে,
"স্বাগত যুবরাজ"
শান্তনু চমকিত হলেন,
পরক্ষণেই যুবরাজের মলিন
 আনন নিরীক্ষণে
পিতার হৃদয় ব্যাথিত হলো,
একি! কি দেখছেন তিনি!
এমন দৃঢ়তা, প্রস্তরীভূত কাঠিন্য তো দেখেননি কখনো,
যুবরাজের প্রতিজ্ঞার কথা শুনে... দুটি চোখে অশ্রু ঝরে যায় পিতার।
একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন করুণ করে ....
ভীষ্ম নামে পরিচিত হলেন যুবরাজ দেবব্রত।
যার নাম লেখা আছে মহাকাব্যের বিশেষ চরিত্র নিদর্শনে,
এতোক্ষণ মহাভারতের দৃশ্য মনে মনে দেখছিলো নিরুপমা,
হঠাৎ তার মনে প্রশ্ন আসে, আচ্ছা ভীষ্মের হস্তিনাপুরে রক্ষার প্রতিজ্ঞা কি ধর্ম যুদ্ধ, নাকি পূর্ব নির্ধারিত?
নানান কথা ভিড় করে আসে 
মনের আয়নায় কল্পনায়,
ঘড়ির কাঁটা ঢং ঢং শব্দ করে বেজে ওঠে,
রাত গড়িয়ে যখন দুই প্রহর….









আর্তি

দে ব যা নী ঘো ষা ল


কেন সে শ্রাবন ঘেরা সকাল
ভিজিয়েছিল আকুলীর মন,
সে প্রশ্ন তুমি আমায় কোরো না।
বর্ষাতিহীন মেঘলা সকালে অঝোর ধারায় ব্যাকুল উদাসী কেন এক আলগা আবেশী,
সে প্রশ্ন তুমি আমাকে কোরো না।
কালো হেলমেটে রেডক্রস আঁকা বাইকে কালো ওয়াটারপ্রুফ পরে মুষলধারা পেরিয়ে মানব যন্ত্রের পরিষেবা কেন দিতে সব কিছু ভুলে 
সে প্রশ্ন তুমি আমাকে কোরো না।
কেন এই চেতনা অপরিবর্তিত এত ধারার পরে পরেও,
সে প্রশ্ন তুমি আমাকে কোরো না।
আমার আমিতে পাল্টে যাওয়া,
এত প্রশ্নের মুখোমুখি কেন,
সে প্রশ্ন প্লিজ তুমি আমাকে কোরো না।
বৈশাখী ঝরে তপ্ত মন, 
শীতল হাওয়ার আবেশে জড়ানো,
অনেকটুকু পাওয়ার মাঝে, 
না পাওয়ার ঐটুকু শ্বাস,
এত কেন যে কেন!
সে প্রশ্ন আমাকে কোরো না।
চেয়েছিলে বৃষ্টি হোক।
খোঁজ নাও নি আবহাওয়ার।
অবচেতন মন বোকা কান্নায়,
আঁধার পেরিয়ে আঁধার।
তবু প্রশ্ন কোরোনা,
কেন সুচতনার বৃষ্টিভেজা সকাল আজও যুঝতে পারলো না।








অপেক্ষা 

প্র তী ক মি ত্র


অপেক্ষা তো মানুষ করেই থাকে।
তা ভালোর বদলে খারাপ পেলেও।
আমি যেমন অপেক্ষায় ছিলাম কতশত মুহুর্ত ধরে
কখন তুমি শীতল উদাসীনতা ভেঙে
অংশগ্রহণের পাথর ভাঙবে সজোরে।
অপেক্ষার দরুণই দেওয়ালগুলো মনোক্রমে উঠছে রেঙে।
দ্বিধাগুলো ঠিকই থেকে যাচ্ছে দীর্ঘক্ষণ অন্তহীন আকাশ দেখেও।
দিশা ছাড়া কতটা কতদুরই বা এগিয়ে যাবে চাকা?
অগত্যা অপেক্ষাতেই ফিরে যাওয়া বেমানান কেউ ভেবে নেয় পাছে
চাহিদা কতটুকুই বা আর থাকতে পারে বৃষ্টির কাছে!








সাগরলীনা

ছ ন্দা দা স ব সু


তোমার চোখের সাগর নীলে আমার অবগাহন 
নীলপদ্মের রেণু মেখে হয়েছি পদ্মগন্ধা নারী, 
সাগর ঢেউয়ের রহস্যময়তা সর্বাঙ্গ জুড়ে
হৃদয় ভরা অমৃত ভাণ্ড ....
চোখের পাতায় স্বপ্নের মায়াবী আবেশ,
ছুঁয়ে দিলে হয়ে যাবো নীল প্রজাপতি 
পাখা মেলে উড়ে যাবো
আকাশের নীল আঙিনায় ...
তোমার অবাক চোখ দেখবে আমায়
চাঁদের জ্যোৎস্না মাখা, মায়া অবয়ব 
তারাদের দেশের এক নক্ষত্র কুমারী;
নীল আলো জ্বেলে জাগবো সারারাত 
সূর্য্যের ঔজ্জ্বল্য নিয়ে ডাকো যদি কাছে 
তোমার উত্তাল সাগর বুকে পড়বো ঝ'রে,
অসীম প্রেমে বিলীন হবো তোমাতে 
পরম আশ্রয়স্থল যেখানে আমার ....








মজুর কথা

ছো ট ন গু প্ত 


রিক্সাওলা কাঁঠালতলা পৌঁছে দিবি ঠিক মতো 
কুড়িটাকা লাগবে বাবু, বলিস কি রে, পথ কতো ?
পথ যতো হোক এই গরমে এমন কি আর বাড়তি চাই, 
রিক্সাওলার ঘাম ঝরে যাক, বাবুর হিসেব, বাড়ছে খাঁই।

ঐ যে দেখো ভর সন্ধেয় রেলিং ঘেঁসে পথ চেয়ে–
খদ্দের আজ পায়নি বোধহয়, দাঁড়িয়ে আছে সেই মেয়ে
এই মেয়েটাই শরীর যোঝে ঠিক বোঝে তো দামটা তার 
এই সমাজে ঘর জোটেনি, আম্রপালিরও দরকার।

কাজ হারানো ছাঁটাই মজুর আজ নেমেছে ভিক্ষে চায় 
ঘরে আছে পাঁচখানি পেট, বেঁচে থাকাও বেজায় দায়।
কিংবা সে লোক হোক গে হকার বিক্রিবাটা নেহাত কম,
ছুটতে থাকে চলন্ত ট্রেন, লোকটা বাঁচায় নিজের দম। ‌

তোমরা যারা দিব্বি আছো রাত্রি হলে পান শ্রী রাম 
বাসন মাজা কাপড় কাচা ঐ মেয়ে পায় কি আর দাম!
ভুখা পেটের সেই যে লড়াই পাচ্ছে না তো বাঁচার আয় 
লড়াই কঠিন জেনেই ওরা নতুন লড়াই লড়তে যায়।

সেলস গার্ল বা সেলস বয়ের বিক্রি মানে ইনসেনটিভ 
ধনী লোকের বাসায় ওদের ঢুকতে মানা শুকোয় জিভ
বিক্রি তেমনি না হয় যদি আজ আছো কাল পথ দেখো 
ঐ ছেলেটার ঐ মেয়েটার স্বপ্ন নিয়ে গান লেখো !

রাত্রি বাড়ে আই টি ঘরে কাজ তুলে যায় টেক মজুর
হাই তোলা নয় মাইনে অভয় ভুল হলে নেই মাপ কসুর 
আজকে সুকাজ কালকে আওয়াজ অকম্মাকে নোটিশ দাও 
আইটি হাবের লক্ষ্মী ছানার প্রভুর হুকুম, বিদেয় নাও।

এসব কথা মজুর জানে, মালিক জানেন বিলক্ষণ,
স্থায়ী শ্রমের ভাঙলে মাজা ঠিকে শ্রমিক আয় তখন।
আর যা কিছু সত্যি বলে জানছো তুমি নীল আকাশ
জ্বালাও আলো জোছনা রাতে, থাক জীবনের সুনীল ভাস।








যদি তুমি বলো

প্র দী প কু মা র বি শ্বা স ( মি নু )


বর্ফিল তরল শীতে একা, অশ্রুসিক্ত ক্ষণে,
ইচ্ছেরা স্বইচ্ছায় নির্বাসনে, গেছে অভিযানে;
ভিটে মাটি কবিতার কল্প কম্পনে
নির্বাসিত সভ্যতার খোঁজ অনুসন্ধানে!

তুমি যদি বলো তবে তারা হতে পারি
শব্দের শৃঙ্খল বাধা ছন্দ মনোহারি
সুরে সুরে গান হবো ঘুম ভাঙ্গানিয়া
জোছনার জোরদার সুখ জাগানিয়া!

হতে পারি সাগরের ঢেউ, যদি তুমি বলো
হতে পারি নির্জন নদীতীর বালুচরে চলো
যদি তুমি বলো!

কাকডাকা ভোর হতে পারি প্রতি ভোরবেলা
রোদ্দুর হতে পারি অসহ্য শীতে সারাবেলা
রাগ আমি হতে পারি অনুরাগ অনুরাগে
সেতারের তারে তারে ভৈরবী রাগে!

নীল টিপ লাল টিপ জ্বল জ্বল
কপালের ঠিক মাঝখানে
কালো কাজলের রেখা চিহ্ন 
পলকের স্বচ্ছ দৃষ্টিযানে!

ভায়োলিন, গিটার, সেতারের তারে
সুর হবো সঙ্গীতের রোজ ব্যবহারে
আলোকের গতিপথ হতে পারি নির্দেশে
শরীরে সাজিয়ে দিয়ে সভ্য অভ্যাসে!

শিরা উপশিরা হবো রক্ত সঞ্চালনে
হৃদয়ের ধুকপুক প্রতি স্পন্দনে
পলাশ বসন্ত হতে পারি বারবার
আকাশের মেঘ হতে পারি বর্ষার!

আলো হবো আঁধারের সর্বনাশা ঘরে
ঝড় হবো তুফানের অবাধ্য স্বরে
চিনে নিও জেনে নিও, ধরে রেখো হাত
প্রতিক্ষণ হৃদপুরে বৃষ্টি ধারাপাত







আজও বেঁচে আছি

অ ম ল বি শ্বা স


রক্ত পাল্টে 
শরীরে দ্রুত রক্ত নিতে গিয়ে
দেখি
টাকা গুনতে গুনতে
বেরিয়ে যাচ্ছে বৌ-পেটানো 
খিস্তিখেউড় মার্কা এক নেশাখোর,
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম।

পাশের ছোট্ট ঘরে 
অলিখিত প্লাস্টিকের ব্যাগে
সীল ঠুকে রক্তের গ্রুপ নির্ধারণ করছে 
কিছু পেশাদারী লোক।

প্রতিবাদ করতে গিয়ে
চড়-থাপ্পড় খেয়ে বেরিয়ে এলাম,
একজন বয়স্ক ব্যক্তি 
এগিয়ে এসে বললেন, রক্ত পাল্টে 
অসময়ে মরতে যেও না।

তাঁর কথায় আজও বেঁচে আছি
রকমারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের
রমরমা কাগজ ছিঁড়ে ফেলে।








অনন্তের খোঁজে

ভা স্ক র বো স


মধ্যরাতে নিকানো দাওয়ায় এসে দেখি-
চাঁদ মোমের মতো গলে গলে পড়ছে।
দৌড়ে এসে আঁজলা ধরে দুহাত পেতে রাখি।
টুপ টুপ করে চাঁদের টুকরো বৃষ্টির মতো ঝরছে।
নাতিশীতোষ্ণ পরশ আমার তালু বেয়ে বাহু হয়ে-
বুক ভরে হৃদপিণ্ডে এসে প্রবেশ করে। 
বুজে আসে আমার বহুদিনের নিদ্রাহীন আঁখি।
কিন্তু না। তবুও আমি ভীষণ ভাবে জেগে থাকি।
জেগে থাকে আমার কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্বের মন।
কাল বদল হয়, আমিও মগ্ন থাকি শান্ত গভীর অনুক্ষণ।
লক্ষ আলো ছায়া মিলে ফুলঝুরি খেলে আপন মনে,
তারা হাত ধরে নিয়ে যায় গভীর কোনও প্রাঙ্গণে।
প্রাঙ্গণে এসে আমি নিমীলিত চোখ মেলে ধরি।
চারপাশ রং আর আলোর বন্যার জড়াজড়ি।
কেন্দ্রে বসে মৌন এক ঋষি একমনে মন্ত্র পড়েন।
সম্মুখে তাঁর ঝুরো ঝুরো মাটি আর একতাল ছাই।
মন্ত্র প্রতিধ্বনিত হয়- “অতঃপর কিছুই নাই”
সেই ধ্বনিত শব্দের মধ্যে অনন্তের খোঁজ পাই।
এমন বাস্তবে, ভাবতে ইচ্ছে করে কবিরা কি করেন।
হ্যাঁ। সবই বাস্তব। আমার জীবন, মন, চিন্তার ফসল।
যা আমি জন্মসূত্রে পেয়েছি। পেয়ে থাকি অনর্গল।
সন্দেহ হলে যে কেউ অনুভবে দেখে নিও আমি কতটা সফল।।









বলতো সকালটা কোনদিকে

স ন্দী প কু মা র মি ত্র


ভোরের কুসুম রঙা আকাশ দেখার 
খুব ইচ্ছে ছিল
কালবোশেখের দাপটে মেঘগুলো কেমন
এলোমেলো হয়ে গেল
বৃষ্টিদের আর দল বেঁধে নামা হলো না
ভাবনাগুলো খেই হারিয়ে
আশ্রয় নিল পান্থশালার দরজায়
রাজপথ পাড়ি দেওয়া হলো না
আনন্দগুলো নিংড়ে নিয়ে
একাকিত্বের বাসরে দিল ঠেলে
আর নিকোটিনের ধোঁয়া হাত ধরে
সময়ের স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে চলল
কোন অজানার পথে
যেখানে সূর্য উঠতে লজ্জা পায়
চাঁদ কলঙ্কে ঢাকা পড়ে, 
সেখানে তারারাই শুধু লক্ষ যোজনের একাকিত্বের সফরে
পা বাড়ায়।।








আঘাত

সৌ মি ব্যা না র্জী


কুয়াশায় ঢাকা চিন্তা গুলো যখন উঁকি মারে।
সন্দেহের দাগগুলো ও তখন মুচকি হাসে একনাগাড়ে।

পার্থক্যটা শুধু লাল রঙেরই ছিল বুঝি, শরীর জুড়ে প্রতিক্ষন।
সম্মান সুরক্ষিত হয় রঙিন সিঁথিতে নাকি রক্তে ভরেছে জীবন।

বন্দি করেছে সব ইচ্ছাগুলো অচেনা অধিকারবোধ।
ছদ্মবেশে তৈরি নিতে সেও ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ।

অবিশ্বাসের টুকরো উড়ছে চারপাশে ধুলো হয়ে।
শুকনো চোখ ও লুকিয়ে থাকে, এক ফোঁটা অশ্রুর ভয়ে।

ভিড়ের মধ্যে ফুসফুসটাকে পাড়িয়ে যায় শত উত্তেজনা।
এগোতে চাইলেও প্রতিপদে জড়িয়ে থাকে সহস্র ফণা।

স্মৃতির কথাগুলোকে কুড়োতে গিয়ে গেছে পথ হারিয়ে।
চারপাশে ক্রমশ জলন্ত লোভের দৃষ্টি ফেলছে ঘিরে।

অট্টহাস্যে হাতের তালুর মধ্যে ঘুরছে দেখো নিয়তি।
পুঁতে রাখা ভুলগুলোও কেঁচোর মতো বেরিয়ে পড়ছে, করতে ক্ষতি।

এরই মধ্যে অমাবস্যার চাঁদও খোঁজে একটু আশার আলো।
সমুদ্রকে সেও মনপ্রান দিয়ে বেসেছে বড়ো ভালো।

বজ্রপাতে চিড়ে গেছে আকাশের ও হৃদয়।
বৃষ্টি ধারায় ভেসে ও মাটির হচ্ছে তবুও ক্ষয়।

কাপুরুষরাই প্রতি যুগেই অগ্নিপরীক্ষা নিয়েও হায় সতীকে বলেছে গণিকা।
মৌখিক প্রতিশ্রুতিই শুধু জমিয়েছে আসর, অনুভুতি তাই বড্ড একা।

মেরুদন্ডহীন আবেগ মাঝপথে ছেড়ে চলে যাবে হঠাৎ।
তবুও শরীর বাঁচুক, মৃত মনের সাথে পেয়েও অজস্র আঘাত।।








সোনার তরী

শ্রী সা র থি ম জু ম দা র


[কবিগুরুর সোনার তরী কবিতার স্মরণে
শ্রী সারথি মজুমদার-
কবিতাটিতে চৌদ্দটি লাইন আছে ও প্রতি লাইনে চৌদ্দটি অক্ষর আছে,যুক্তাক্ষরকে একটি অক্ষর ধরতে হবে।]


সোনারতরী, আলোয় ভাসি আসে দূরে,
কে বসে গো, আশায় তারি নদীর তীরে।
স্বর্ণধান সব নেবে যে সোনারতরী
জীবনকর্ম সব নেবে তরণী ভরি।
মহাকালের মহাদূত, তার দিশারী
তরণী যে সবটুকু কাজ নিয়ে পাড়ি
দেবে সে তমসা পথে কোন অজানায়।
চাষী ভাবে সন্ধ্যারাগে নদী কিনারায়
তার তরে একটু জায়গা নেই আর।
সে কিভাবে অন্তহীন পথ হবে পার?
একা বসেই আকুলমনে ভাবে চাষী,
স্বর্ণধানের স্বর্ণমাখা আলোয় ভাসি।
তোমার কাজ নেবে শুধু সোনারতরী,
তোমা ছাড়াই সোনারতরী দেবে পাড়ি।








কবি কাঁদে কবিতাও কাঁদে

ব ন্দ না রা য়


কবিতার গা বেয়ে টুপটাপ জল পড়ে। 
তুমিও কাঁদছো কবিতা? 
কবিতা কাঁদে কবিও কাঁদে
নিঃসঙ্গ নীরবে...

দিবারাত্র বোঝা পড়া যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা  
কালি, কলম, কবি আর কবিতা-
সাদা পৃষ্ঠায় কত আঁকিবুকি, কাটাকুটি পাতার পর পাতায় 
অদৃশ্য রক্তারক্তি...

অসংখ্য শব্দের কাঠামো 
কাদা মাটি কাঠ খড়ের নিকানো 
শব্দ প্রতিমা...

একলব্যের অঙ্গীকার এক একটি মহাকাব্য;
এক একটি জীবন্ত শব্দ প্রাণ,
জীবনানুভূতির আত্মকথন...

ওগো সত্যদ্রষ্টা কবি কবিতারূপী আত্মকথায় কেন ব্যথা?
কবি কাঁদে কবিতাও কাঁদে 
অমোঘ নিয়মে সৃষ্টি হয় অবাক ইতিহাস ...









পরিণাম ও একটি অযাচিত সনেট

শা শ্ব তী চ্যা টা র্জী 


 মাটিঘর ধুলোখেলা যেন লুকোচুরি,
চাষাবাদ ছলনায় ফসল বেসাতি।
 ভ্রষ্ট প্রাণ স্তূতিময় অবোধ প্রজাতি;
মোহঘোর অনলস হানে কস্তুরী।
অযাচিত মায়া ভাণ সুখ আলেয়ার
ডেকে যায় দিবানিশি পান্থ কিবা নাম!
ত্রাণহীন অবেলায় ত্যক্ত ব্রজধাম
কে আর বাজাবে বলো বাঁশি নিয়ে কার?

বনানী গচ্ছিত প্রেম ফোটে একা দূরে-
আঁধারের কান্তি যেন সাঁঝের জোনাকি;
সহজ পলল মাত্র ঢেউয়ের নূপুরে-
আসে যায় মৃদু পায় প্রিয় নাম ডাকি।
দিনান্তের তিথি তবু জোছনা মুকুরে
ছায়াপাতে কি নিবিড় নিশি জাগা পাখি।









অভিমান

উ জ্জ্ব ল চ ক্র ব র্তী


বরাদ্দ ছিল অমূল্য সময়ের পুরোটাই,
তুমি চাইলেই জড়িয়ে নিতাম বুকের মাঝে,
অথচ মেঠো পথে যাবার সময় একটিবারের জন্যও পেছনে ফিরে তাকাইনি

মন চেয়েছে ফিরে যাই...

সামনে অনন্ত নীল আকাশ,
দেখেছি ডালিমের ফাঁকে চাঁদের স্তিমিত আলো,
অঘ্রাণের ধান কাটার শেষে মাঠের বিষন্নতা,
অথবা সূর্য নিভে গেলে এক অদ্ভুত মনখারাপী দীঘির জলে,

আমি যখন চিবুক ছুঁয়ে অভিমানের...
হয়তো তুমিও ভাবছো আমার‌ই কথা!

তবু ফিরবো না কেন জানো?

বরং তুমি ভালোবাসো তাকেই--
যে তোমাকে বুঝতে চায়নি কোনো দিন।








আপনকথা

প লা শ পো ড়ে ল 


এক পশলা বৃষ্টি একা আমার জন্যে 
বৃষ্টি দু'ফোঁটায় গানের ভুবন 
এসো, তোমার বুকে হাত রাখি 
আমার হৃদয়ও তুমি ছুঁয়ে যাও 
এইভাবে তোমাতে আমাতে মিলে আপনকথা।

নদী জানে বোষ্টমির বুকের মাঝে 
একটি দীঘল স্বপ্ন ছিলো 
ছড়িয়ে দিলাম হৃদয় খুঁড়ে 
মঞ্জুষাতে, 
সবটুকু রোদ্দুর সম্পর্ক পাতিয়ে বারোঘর এক উঠোনে বন্ধুতা।









মন পাগলপারা

শি বা নী চৌ ধু রী


মেঘবালিকা মেঘবালিকা, আছো কতো দূরে?
তোমার পায়ের নূপুর ধ্বনি শুনি হাওয়ার সুরে!
জানো নাকি পথ চেয়ে র‌ই তোমার আসার পথে,
কখন তুমি আসবে বলে সুদূর আকাশ রথে!
এখনো কি সাজ সজ্জা হয়নি সকল সারা?
বিলম্ব আর সহেনা যে, মনে ভীষণ তাড়া!
আসবে তুমি সারা দেহে জড়িয়ে মেঘের পালক,
গুরু গুরু ডমরুতে চমকে দেবে দ‍্যুলোক!
দহন জ্বালা জুড়িয়ে দেবে তোমার সিক্ত ধারা,
এসো এসো মেঘবালিকা, আমার ভীষণ তাড়া!
গল্প হবে তোমায় আমায়, বসবো পাশাপাশি
চোখের তারায় ঝিলিক দেবে অকারণের হাসি!
ঠোঁট ফুলিয়ে কখন আবার অভিমানের ঝড়,
উথাল পাথাল বুকের ভিতর আসমানি কবুতর!
মেঘবালিকা, সত্যি বলছি তোমায় ভালো‌বেসে-
ভালো‌বাসার স্বাদ পেয়েছি আজকে অবশেষে!
আকাশ হতে চাইনা আমি, মাটি ছুঁয়ে‌ই রব,
তোমার সাথে নিরালাতে প্রাণের কথা কব!
বোঝোনি কি সঙ্গ পেতে কেমন পাগলপারা,
মেঘবালিকার সাথী হতে আমার ভীষণ তাড়া!








ভাব-ব্যঞ্জনা

ম ধু ছ ন্দা গা ঙ্গু লী


ভালোর মর্ম ভালোরাই বোঝে,
দুষ্টের মন দুষ্টু খোঁজে,
ডাস্টবিনেতে গরিব কাঁদে,
ধনীর আকাঙ্ক্ষা ছোটে চাঁদে।

কিপটে দাতা সে মেকী দাতাকর্ণ,
সবজান্তার মগজে নেই স্বর-ব্যঞ্জনবর্ণ,
মিষ্ট ভাষণের আড়ালে ঘোর অনাচারী,
বিশুদ্ধতার মোড়কে যেন শুদ্ধ ব্রহ্মচারী।

খন্ডে-খন্ডে এ জীবন শতধা
ঝরা পাতার শেষে যেন চির বসন্ত,
ডুবু-ডুবু রবির নিভু-নিভু আলো,
হিংসার বশে জাপটে ধরেছে কালো।

খোলা চোখে আলোর আলো ঝিকমিক,
বন্ধ চোখে আঁধারে অন্ধ চারিদিক,
আলো-কালোর একসাথে হবে যেদিন দেখা,
জীবন টানবে সেদিন অন্তিম রেখা।








শূন্য এ বুকে

স ঞ্চি তা গো স্বা মী


চরাচরে সন্ধ্যা নামে যখন
তারায় তারায় আকাশ ঝলমল,
মনের খুশি কোথায় গেল তখন?
চোখের কোণে অশ্রু টলমল।।

সন্ধ্যা হারায় রাতের অমোঘ টানে
রাতপাখি নিঃসঙ্গ কাঁদে...
যদিও আমার আকাশ ছোট্ট একটুখানি,
কিন্তু কোনো সীমানাও আঁকিনি...
খাঁচার দরজা আজোও আছে খোলা
ও পাখি, তুই আসতে পারিস ফিরে
তোর আকাশে উঠলে ঝোড়ো হাওয়া।।








শূন্য স্থানাঙ্কে

চৈ তা লী না থ


খুব চাইছি একপশলা বৃষ্টি হোক...

ওই মেয়ে... 
সত্যি চাইছি, ভীষণ চাইছি  
ওই মিশকালো আকাশটা শুধু তোরই হোক।

আর শোনো... তোমরা... হ্যাঁ তোমাদেরই বলছি...
বন্দী জানলার কাঁচে জমে থাকা ধোঁয়াশায় 
তোমাদের ভালোবাসা লেগে থাকা আঙুল দিয়ে 
এই বেলা বুনে নাও ইচ্ছে খুশির আকাশকুসুম। 

এই মেয়ে..…
আজ শুধু তোকেই দেখছি,
এই অকাল শাওনে ভিজে নে একবার। আকাশের দিকে তাকিয়ে দ্যাখ!
কপালের ওই লাল টিপে পড়ুক একটা ফোঁটা  
আর তা গড়িয়ে পড়ুক কপোল বেয়ে।

বোকা মেয়ে....
আজ এলোচুলে থাক
ভেজাচুলের ছোট মিহিন জলে কথারা ঝরুক টুপটাপ!
...আর তার ঝাপটায় ভিজে যাক ওই বৃষ্টিরই আদুরে শরীর!!

এই মেয়ে...
তুই অবাক হলি?
জানতে চাস কেন বারবার আড়ালে গিয়ে চোখ মুছি? 
কি ভাবছিস, আমরা কাঁদছি?
কেমন করে বোঝাই বল!
চোখের ভিতর যে আমাদের হাজার নদী বয়,
কান্না নয় সে... কান্না এত সহজ নয়।
এতো সকাল-সাঁঝের কষ্টনদী চোখের মাঝে ধরে রাখা, সেও এক জ্বালা!
ভাবছিস! চোখে আবার কেমন জ্বালা?!?
আমাদের চারপাশের দৃশ্যে 
শুধু গনগনে আগুন আর ধোঁয়া,
সে ধোঁয়ায় জ্বলছে চোখ! 
আমরা চোখের জ্বালায় চোখ মুছি
আবার সবকিছু স্পষ্ট দেখার ইচ্ছে নিয়ে।

ও মেয়ে...
একবার নীল শাড়ি পরা নিটোল সৌন্দর্য নিয়ে ভেজ।
গোলাপ-নির্যাসের ঘ্রাণ নিক বৃষ্টিফোঁটারা নিজের বুকে।

স্নাতা সুন্দরী তোকে দেখছি...
নূপুরের রুনুঝুনু, কাঁকনের শিঞ্জিনী 
ঘন সবুজ পাড় দেওয়া তোর মখমলি মিহিন
শাড়িতে কেউ যেন তার মনের জমানো সব নীল ঢেলে দিয়েছে! 
মনে হলো কেউ যেন তোর ভালোবাসায় নিরাশ হয়ে
তোর দুটি রাতুল পায়ে নিজেকে বলিদান দিয়েছে, আর তার হৃদয়ের জমাট বিষাদ তোর নীল শাড়িকে আরও নীল করেছে....তাই এই বেলায় সুন্দরীর মন ভার!

ওই দ্যাখ...
আকাশের প্রচ্ছদপটে তোরই মুখচ্ছবি। 
সময়ের সাথে কি নিবিড় সম্পর্ক পাতানো....!

আমি উঠি।
যাই.….দেখে আসি
পৃথক কারণে একস্থানে, একই কালে ভিড় করা
বিস্তর মানুষের মাঝে আমি একা কেন অহেতুক!?

একটু ভেবে দেখি মনে মনে
জীবন নাট্যের এ কোন অঙ্ক অভিনীত হচ্ছে!!









ফেলে দে

ক থা ক লি ক থা ( পা রু ল )


চৈতের তপ্ত দুপুরে 
এঁটেলের এক গুল্ম লতার
আদরে ঠাঁই হলো ছাদের একটা টবে,
 তারপর, এক মগ জল।

অনাথা গুল্ম লতা,
নুইয়ে পরা কচি ডাল সামলে
ফুলে ফলে ডাল ভরার স্বপ্ন দেখলো তবুও!
টবের কাঁকর বালি মাটি আঁকড়ে ধরে 
এক সময় ফুল ফুটলো ফল ধরলো কটা ডাল ছড়িয়েও গেলো।

কিন্ত যে মাটিতে সার নেই , ডানা মেলার জায়গা নেই জল নেই, পায়ের তলায় মাটি নেই 
সে ফুল গন্ধহীন বর্ণহীন কলিতেই পোকা কাটা।

এতো গেলো প্রথম পর্ব, 
এর পরেও আরও ইচ্ছা আর একবার 
আলোর আশা বাঁচার নেশা 
শেকড় ছাড়ুক টবকে ভেদ করে।

বৈশাখী বাতাসী ঝড় ছিপছিপে জলে ভেজা ছাদ 
আনন্দে আসে ফুঁৎকার, আহা!
ঠিক সেই মুহূর্তে 
ভাঙ্গা টবে গুল্ম দেখে 
কে যেন বলে ওঠে 
ফেলে দে ফেলে দে।








দহনের পরে

ক বি তা ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়


প্রচন্ড দহনের পরে শান্তির ধারা ঝরিয়ে 
সে আসবে কথা দিয়েছিল,
সেই আশাতেই দগ্ধ হয়ে চলেছি
ক্রমাগত চাতকের মত...

 বাইরে চোখ মেললে শুধু
রোদ, তীব্র জ্বালা
আমি দগ্ধ হতে থাকি...
নির্বাসিত মনে হয় নিজেকে;
দূর পর্যন্ত গাছের দেখা নেই
দেখা নেই পাখিরও,
শুধু সকালে মাঝে মাঝে
এলোমেলো হাওয়া 
মনে করিয়ে দেয় সে আসবে, আসবেই ...

আমি গলা খুলে গান গাইতে চাই 
চোখে ভিড় করে কদম, পিয়াল, বলাকা 
আর শ্বেত-শ্মশ্রু শোভিত প্রাজ্ঞ ঋষি ...

হঠাৎই শান্তির বারি যেন 
আমি ঘুমিয়ে পরি নিশ্চিন্তে,
দূরে যায় তীব্র দহন 
ঘুম ভাঙে কোমল পরশে,
আকাশ ঝরিয়ে দেয় আদর
এক ফোঁটা, দু-ফোঁটা, তিন ফোঁটা ...

শালবনে অঝোর ধারা,
পিয়াল বনে পাতার নাচন,
বৃষ্টি মাদল বাজছে সুরে তালে
আমি ভিজি মনে মনে, অকারনে,
ভিজতেই থাকি এবং ভিজতেই থাকি 
তীব্র দহনের পরে...







ধোঁয়ার পরেই আলো

তু লি মু খা র্জি চ ক্র ব র্তী 


"কেমন আছো?"- চিঠির কাগজ তুলোট আর ঝাপসা অক্ষর।
ধর্মের ভাগাভাগি, ভালোবাসার মাঝে কাঁটাতার- 
বাইফোকালে নেমে আসে দুই দেশে এক ভোর।
আঁচলে মুছে গুছাই পুরোনো সম্পদ সম্ভার। 

বেঁচে থাকা যে যার মতো, মুঠো থেকে ঝরে যায় কস্য
স্মৃতি- 
ছবি মুছে, তুলে রাখি, মন দেরাজের তাকে।
জীর্ণ জীবন সাদামাটা, সবেতেই লেগে ছাই-ভস্ম
হয়তো তুমিও ভাবছ এসব, মেঘ ঢাকা দিন বলবেই বা কাকে!

এখানে আকাশ ঢেকে দেয় কালো চিমনির উদগার,
বাড়তে থাকে কলকারখানার পল্যুশন মাত্রা-
ওপারে ছিল সবুজ সতেজ দিন, 
আমাদের স্বপ্ন সংসার 
কিভাবে দুজন ছিটকেছি দুইপাড়ে,
হয়নি ফেরা, অগস্ত্য যাত্রা। 

মোহাজীর হয়ে টিন দরমার ঘর, 
কাঠের আগুন বারুদ হয়ে জ্বলে দেহমন্দির, 
তুমি ঈশ্বর হয়ে আছ, 
প্রতি দিনরাত প্রতি পলে,
তসবি জপে তোমার দিন কাটে, 
পেয়েছি খবর তুমি আজও সেই একা।
মৃত্যুর পরে মিলে যাব দুইজন, 
নীল আকাশের ঐপাড়ে হবে দেখা।

তোমাকে লেখা এটাই শেষ চিঠি, 
যে কোন সময় থেমে যাবে কলম,
সব অসুখের হয়তো ওষুধ আছে, 
বিচ্ছেদের নেই কোনো মলম।
আমার চিতার আগুনে আকাশ হবে আলো
সেইদিন... ঠিক সেইদিন, চিৎকার করে বোলো, বেসেছিলে ভালো।









আষাঢ়স‍্য প্রথম দিবসে

ছ ন্দা চ ট্টো পা ধ্যা য়


অম্বর মাঝে ডম্বরু বাজে, পুঞ্জিত মেঘ সঞ্চিত
পূবালী বায় উল্লাসে ধায় নবজলধারা সিঞ্চিত।

নিদাঘতপ্ত উন্মুখ ধরা তাকিয়ে আকাশ পানে-
প্রহর গোনে, সিক্ত হবে সে বর্ষার কলতানে।

বিজুরি চমকে, বজ্র ধমকে দিগন্তে কালিমা-রেখা,
বর্ষামুখর প্রকৃতির রূপ যেন শুধু পটে লেখা।

জুড়ালো শরীর দাবদাহ থেকে জুড়ালো অন্তঃস্থল,
শীকরবাহিত নিহারস্পর্শে পরিবেশ সুশীতল।

মেঘদূতের ঠোঁটে বার্তা পাঠায় বন্দি বিরহী যক্ষ,
মাটির গভীরে বীজ আছে পোঁতা ভবিষ্যতের বৃক্ষ।

ঊষর ক্ষিতি উর্বর হবে মৃত্তিকা হবে সরস,
সুধায় ভরেছে আষাঢ়ে আকাশ রভসে নতুন বরষ।

কদম্বকেশর শিহরিত আজ নবমল্লিকার সুবাসে,
যুথি,বেলি কেয়ার মাতাল স্নিগ্ধ গন্ধ বাতাসে।

উৎসবে শাঁখ বেজে ওঠে ঐ, দুয়ার দাও গো খুলে,
সোঁদা হাওয়া দেখো খেলা করে ঐ রূপসীর এলোচুলে।

কিষাণ-কিষাণী বাহুডোরে বাঁধা দোঁহায় আত্মহারা,
মাথার ওপর ঝরছে অবাধে আঝোর বাদলধারা।

আঁধার ঘনালো, কালো হয়ে এলো মেঘলা প্রদোষবেলা,
আষাঢ়স‍্য প্রথম দিবসে নব বর্ষণের খেলা।।






আমি পাথরের শরীর হয়ে থেকে যাবো

শা ম স উ জ জো হা


আমি পাথরের শরীর হয়ে সহস্র বর্ষ দাঁড়িয়ে থাকবো
গাঢ় শীতে, প্রবল গ্রীষ্মে এমনকি শান্ত বাতাসের দুপুরে- 
শেকড় গজাবে কিন্তু দেখা যাবে না তা, যেমন যায় না 
শ্যাওলা আমার শরীর ঢেকে রাখবে পোশাকের মতো।
কুঁড়েঘর দেখার আনন্দ পাবে তুমি এসে, আমি প্রত্যেকের
হাসিমাখা ছবিতে থেকে যাবো। শ্যাওলা ছাড়া বদলাবে না 
কয়েকখণ্ড শরীর আর একখণ্ড হৃদয় আমার।








বরাভয়

স জ ল  কু মা র  টি কা দা র


ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখি, পাট খেতে
হামলে পড়েছে জ্যৈষ্ঠের তেজি রোদ!
আর তার হিংস্র আক্রমনে সবুজ চারাগুলির যে 
কী করুণ অবস্থা! কিন্তু ছুটেও পালাতে পারছে না;
মাটির শিকলে তাদের পা শক্ত করে বাঁধা।

এই দেশে, ছোট একটা কুঁড়েঘর-প্রাসাদ থেকে
যিনি সমানে তাদেরকে বরাভয় দিয়ে যান

তিনি স্যালো মেশিন!







ফুল ফোটাও গন্ধরাজ
 
মৌ সু মী  পা ল 


ফুল ভালোবাসি  
ভালোবাসি ফুল 
ভীষন ভাবে!!
তোমাকে ছুঁয়েছি ফুল দিয়ে!
আমার খোঁপায় তোমার গুঁজে দেওয়া প্রথম ফুল
জ্বলজ্বল হয় আজও স্মৃতিতে!
বাসরসজ্জায় ফুল কম ছিল বলে তোমার সে কি রাগ-
প্রথম প্রণয়ের মালা শুকাবে না তা জানি
যতো দূরেই যাও বিষাদের জেরে!!

তবু-
এক সিংহাসন ফুলে আজও আমার দেবতারা সেজে ওঠে
নিত্য নতুন হয়ে
লাল নীল হলুদে সাদায়!

প্রিয় আদরিনী অবলা জীবটা যখন মারা গেল 
তোমার মনে আছে অরুণ-?
কেঁদেছিলাম যতো 
ফুল দিয়েছিলাম আরো অনেক বেশি?
ফুল ছাড়া তুমি কোথাও যাও না-
কোথাও না!!

না বলে চলে গেলেন আমার প্রিয় মাস্টারমশাই;
সেদিন তুমি কাছে থেকেও দূরে ছিলে আনমনা হয়ে
কোনো নতুন ফুলের সোহাগ চুম্বনে।
আমি জানি-
মাস্টারমশাই খুব চেয়েছিলেন 
তোমার হাতের ফুল শেষ যাত্রাকালে!!
যখন গিয়েছিলে-
তখন আঁধার পেরিয়ে সূর্য উঠেছিল।
অক্ষমতা নিয়ে শরীরের জ্বালাপোড়ায় আমি শুধু
ছটফট করে কেঁদেছিলাম দূর থেকে পাগলের মতো-

অরুণ-
বাকি থেকে যায় অনেক কিছু এমনি ভাবেই
আমাদের অগোচরে অযত্নে!
এতো ভালোবাসি ফুল-
তবু ফোঁটাতে কি পেরেছি নিজ হাতে একটাও ফুল 
আদরে সোহাগে?

হায় রে !-
সফলতা এতো দামী বলেই 
ফুল ঘেঁটেছি অনেক-
তবু ফোটাতে পারিনি একটাও ফুল-
জীবন রয়ে গেল তাই অপূর্ণতার দায়ে!!

যদি নতুন জনম দাও-
তবে ফুল ফোটাও গন্ধরাজ!!!!







হারিয়ে যেতে যেতে

শ্যা ম ল  খাঁ


এক একটা অভিমান অযত্নেই
আশ্রয় খুঁজে নেয় হৃদপিন্ডের ছোটো ছোটো কুঠুরিতে।
রক্তের স্রোতে বয়ে চলে যায়
মস্তিষ্কে, সারা শরীরে, অবচেতন মনেও।

আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে ভালোবাসার ছোট্ট ডিঙি খানি,
গোলাপের টকটকে লাল রঙ
ধীরে ধীরে নীল হতে থাকে।
তবুও লুকিয়ে রাখি মূল্যবান সম্পদ হিসেবে 
পুরানো ডাইরির একান্ত গোপন পাতায়।

ভিড়ের মাঝেও খুঁজে বেড়াই একাকিত্ব
অনেক মুখের সাদৃশ্যের মাঝে ছায়ার মতো ঘুরে বেড়ায়
সেই চির চেনা মুখ।
পাশাপাশি, ঠাসাঠাসি, বড্ড কাছাকাছি- 
তবু হাত বাড়ালেই সব যেন ভেঙে ভেঙে যায়।

স্পর্শ হারানো সেই ভিড়ে
আমিও হারিয়ে যাই জনারণ্যের গভীরে,
দিগন্ত যেখানে হারিয়ে গিয়েছিলো একদিন 
সেখান থেকে ফিরে আসার পথ আর খুঁজে পাই না।








নৌকোযাত্রা

স র্বা ণী  রি ঙ্কু  গো স্বা মী


কতোখানি ভেসে ছিল
কতোখানি ডুবেছিল জলে
নৌকো ভাবেনি কিছু সে কেবল ঢেউপারে চলে

সে কেবল ডাঙা চেনে
চিনিয়েছে তাকে জলও কেউ
অবিরাম দাঁড় টেনে ছুটিয়ে গিয়েছে খালি ঢেউ
আকাশ দেখেনি সে দেখেছে যা, তা জলেতে ছায়া
ছইটুকু জুড়ে থাকে আশ্রয় নিভৃতি মায়া
দিনশেষে ঘরে ফেরে
তার সাথে ভিজে গায়ে জল
ভোর না হতেই ডাকে, "কই রে ভাসবি না ...চল!"

ভাসা আর পার করা বুকে নিয়ে চলা শুধু থাকে
এ জীবননৌকোর চলাচল নদীটির ডাকে

একদিন ভাঙে তার কাঠামোর যা কিছু বাঁধন
কাঠ খোলে জোড় থেকে ক্ষয় হয়ে যায় পাটাতন
ছেঁড়া পাল ভুলে যায় বাতাসের সাথে কথা কওয়া
ভুলে যায় একদিন জলবুকে ছিল আসা যাওয়া
চুপ করে পড়ে থাকে উল্টোনো খোল 
হাওয়া বলে

"এই যে দেখছ একে 

একদিন ভেসেছিলো জলে !"








বৃষ্টি, প্রেম, কোলকাতা –কতকগুলি দৃশ্যপট

সু খে ন্দু  ভ ট্টা চা র্য
 

মেঘ পাখিরা হাওয়ায় ওড়ে 
ঝিরঝিরিয়ে বৃষ্টি পড়ে
খোলা আকাশ একটি ছাতা 
দুই-জনাতে ঢোকায় মাথা 
গল্প করার সময় আসে। 
 
টাপুর-টুপুর বৃষ্টি ঝরে  
আধভেজা চুল সঙ্গী করে  
ভেজা চাতাল অনেক মাথা
ভাজা বাদাম গল্প গাথা 
অথৈ জলে স্বপ্ন ভাসে।

ভিক্টোরিয়া, লেকের ধারে 
কেউ বা ব’সে গঙ্গা পারে
পার্কে পার্কে ভেজা ঘাসে 
কেউ বা দাঁড়ায় টার্মিনাসে 
সন্ধ্যে নেমে আসে।

কোথাও বা সেই লম্বা চাতাল
ছাতায় নিচে প্রেমের মাতাল 
মলে মলে  লম্বা সারি  
দাঁড়িয়ে আছে আড়াআড়ি
প্রেম যমুনায় ভাসে।

কলেজ ফাঁকি সিনেমা হলে 
সাদা ব্লাউজ বৃষ্টিজলে
কফি হাউস, সাউথ সিটি  
সর্দি ভয়ে গুটিসুটি 
প্রেম তবুও জাগে।

ছুটির দিনের বৃষ্টি-দুপুর
সোফায় বসেই বাজায় নূপুর  
ফোনে ফোনে অনেক কথা 
বৃষ্টি সারায় মনের ব্যথা
মেঘ মল্লার রাগে।







চাঁদের উপত্যকায় জ্যোৎস্নার জলপ্রপাত

অ সী ম  দা স 


সকাল বলেছিল,
সূর্যের বাগানে সাতরঙা রথে চড়িয়ে 
ক্লোরোফিলের সবুজ জন্মকথা শোনাবে।
আমি বলেছিলাম 
-- আমার তো পুরো জন্ম শেষ হয়নি এখনও 
আমি কি বুঝবো?
সকাল হাই তুলে ঘুমিয়ে পড়েছিল দুপুর ছায়ায়।

 দুপুর এগিয়ে এলো আমার দিকে, বলল 
-- ওই যে দেখছো খন্ড খন্ড সাদা মেঘ,
ওরাই একদিন চাতক প্রতিভার ছোঁয়ায় 
শস্যের শীষে সমবেত দুগ্ধ জাতক হবে।
আমি বললাম 
-- জন্মাতে জন্মাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি 
রক্তের গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছে,
আমি কি আর জন্মাতে পারব!
দুপুর মিলিয়ে গেল শেষ অন্ধকারে।

শেষ শব্দের পরে আর কোনও শব্দ নেই।
শুরুর সপ্তসুরে জেগে উঠল পৃথিবীর সমস্ত কোকিল,
সপ্তডিঙ্গা মধুকরের আনন্দ ঢেউ এ 
তখন চাঁদের উপত্যকায় জ্যোৎস্নার জলপ্রপাত।








অবশেষে

সো না লী  ম ন্ড ল  আ ই চ


মেহেন্দি বেড়া একলা আছে পড়ে লগ্ন নেই
কাক জীবনে বেলের খবর রাখেনি
উদাসী সেজে কর গুনি আলাদিনের জন্যেই 
যদি আসে ভালবাসা ধোঁয়ার মতনই!

কতো আশীর্বাদ ভরে ওঠে জন্ম-মৃত্যুদিনগুলো
ওইসব শাল মহুয়ার দিগন্ত একটা টবে সাজিয়ে
অনুগত অন্ধকার একটু পাশ ফিরে নাহয় শুলো
পুঁই চচ্চড়ি'র রেসিপি গুলিয়ে রাখি সব গুছিয়ে।

অতএব, মৃত্যুর মতো শান্ত ধীর স্থির সময়টা
আবছা মূর্তির মতো নরেন সন্দেহপ্রবণ অস্থির
অবাধ্য জিন তাড়াতে থাকা বাস্তু বিষয়টা
অবশেষে বেরিয়ে আসে আপনার যাপন স্বস্তির...

রকবাজ কোথাও খুঁজে পাওয়া নাই বা গেলে
বন্ধুর লিষ্ট কমাতে ব্যস্ত বাউল ও একতারা
পাঞ্জাবির পকেট থেকে আজেবাজে এলেবেলে
অভিজ্ঞতা কত শত শুরু হয়ে ফের হয় সারা।

খাঁড়া সেই সিঁড়িটা দুলতে শুরু করে প্রতিবার
সবাই খুব কাঁদে, ছোট্ট ছেলেটি হেসে হেসে
গঙ্গাসাগর যাত্রা করে, সে এক্কেবারে নির্বিকার
কুড়িয়ে পায় ভালবাসা সাগরের তলদেশে।








আহ্নিক

জা রা  সো মা  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়  ( সো ম প্র ভা ) 


আদত শেখাতেই পার হয়ে যায় আহ্নিকপর্ব 
তারপর কেবল জল-আগুন সন্ধি 

বাতাসের মুখে বলিরেখা পড়লেই
সংকীর্তন সারতে চায় পাপী মন 
ধুলোর পরতে পরতে অনুগল্পের শাখা প্রশাখা 

কলপাড়ে উবু হয়ে বসে বিগত 
জলের অছিলায় ধুয়ে ফেলতে চায় স্মৃতিচাদর
তবুও বেদাগ হয় না বোধহয় সবটুকু 

হাত ফেরতা চাঁদ কার্ণিশে বসলে 
তার পায়ের নীচে কর গোনে গুমোট বসন্ত।।








আজকের হাত

ত মা ল  রু দ্র


তর্জনী যেই তুমি উঠালে আমার দিকে,
মধ‍্যমার সাথে মিলে দেখালে তুমি "জয়"।
আমার অনামিকার কোহিনূর হলো ফিকে,
কনিষ্ঠা পেয়ে গেল হাড়হিম করা ভয়।

          আশা জাগলেই কেবল বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দর্শন,
          এতেই শুধু হাতযশের করতালি।
          গোটা জীবন ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষণ,
          অলীক শান্তি ছাড়া, কী বা তুই পেলি?

সাজলো জীবন, প্লাস্টিকের ফুল দিয়ে,
নেই সৌরভ, বৈভবে ভরা শুধু।
খোঁজা কৈ আর, মনটাকে সাথে নিয়ে,
শুকিয়ে গেছে তাই, হৃদয়ের সব মধু।

          সময় এসেছে এইবার তুই -হাত,
          আঙ্গুল গুলোর ঘোচা তুই একাকিত্ব।
          প্রতিবাদে তারা দিয়ে যাক আজ সাথ,
          জোট বেঁধে এবার হয়ে যাক মুষ্টিবদ্ধ।








স্থায়িত্ব

প্র কৃ তি  দ ত্তা


সবাই একদিন ছেড়ে যাবে তোমায়,
একাকী থাকতে হবে তোমাকেও এ ধরায়
একাকীত্ব? তুমি বললে, "বড় ভয়।"
ভয়কে জয় করা সহজ কথা নয়।

তুমিও চলে গেলে ওপারে
নির্জন মনের কোণ, স্বজনহারা
একাকী কতবার টাল খেয়ে গেলেও
প্রাণজোয়ারে ভাসবে না আর দেহের বজরা

ছবি হয়ে ফ্রেমে বাঁধা পড়বে না তুমি,
জেনে রেখো আধুনিক ফ্ল্যাটের দেওয়ালে
গলায় দুলবে না কোন স্মৃতিগন্ধার মালা
প্রস্তুতি নিয়ে মন সব দেবে ফেলে।

উত্তল আরশিতে ব্রহ্মান্ড এঁটে যায়,
চন্দ্রমা দীঘির পৃষ্ঠটান উপেক্ষায় উন্মুখ,
তোমার সন্ততি গড়বে আগামী পৃথিবী
তারা যে সিলভার নাইট্রেট মিররে দেখে মুখ।







ক্ষিদের আষাঢ়

সু জি ত  মু খো পা ধ্যা য়


তারপর ওরা পাড়ি দেয়, মিঠে নদী ডিঙিয়ে নোনা গাঙে, অনেকটা প্রতীক্ষা এক আষাঢ় কালো মেঘ।
কেশবতী কন্যার কালো চুল বেঁধে দেওয়া, 
জরিন নেশায় এক ঝাঁক রুপোলি আঁশের খোঁজ।
গর্ভবতী পেট ভরা ডিমে-- পেট খোঁজা ভাতের থালায় চাঁদ ওঠে। জোছনায় নোনা হাওয়া চটচটে
তিন পুরুষের গল্পেরা মিটমিটে লণ্ঠনে কাঁপে।
গলুই এ তখন রাত জাগা ঘরণীর উথালি শ্বাস।
পাশ ফেরা চাটাই এ ফাঁকা ফাঁকা গন্ধরাজী বুক।

চ্যাতানো ছাতি হাল ধরে টেনে চলে ক্ষিদে।
বাপ দাদু দিয়ে গেছে পেটানো পেশী আর পেট। তাবিজ কবচে বেঁচে থাকে ঘরে ফেরা বিশ্বাস।
এক ম্যাচিসে বিড়ি ধরায় ইয়াসিন আর ঈশান।
গাঙের হাওয়ায় নিভে যাওয়া ভয়---হাত আড়ালে
এক শিখা, পাশাপাশি ধর্ম জাগে ক্ষিদের রাতে।
এক আকাশের চাঁদ, ইলিশের আঁশ আর লাল নোলোকের পাশে এক আষাঢ় শিকারীর ক্ষিদে।
নোনা মিঠে রূপকথা লেখে পলি আর নিশি নোঙ্গর।






শূন্যতা

ম ধু মি তা ব সু স র কা র


আখতারি বাঈ এর ঠুঙরীর মতো ব্যতিক্রমী একটি বিকেল
যেমন খুশী গলা ভাঙ্গছেন, হাস্কি বলতে যা বোঝায় 
আমি একটি বিলোল সন্ধ্যার অপেক্ষায়

মনেমনে গলা মেলাচ্ছি 
কথা, সুর একাকার হয়ে যাচ্ছে 
"ফিরায়ে দিওনা মোরে শূন্যহাতে"

কেউ কি শূন্যহাতে ফিরতে চায়?
হাত ভর্তি করে দেবার মতো আমার কেউ নেই
অথচ ফিরতে তো হবেই কোনও একদিন অন্তত নিজের কাছে

যদি খালি হাতে ফিরি তাতেও কোনও দুঃখ থাকবেনা
এ ফেরা সে ফেরা নয়
যে ফেরায় নৌকাডুবি হলে
তলিয়ে যাবার আগে কেউ হাত বাড়িয়ে দেয়

সুরের মধ্যে ডুবছি, ভাসছি, থিতু হচ্ছিনা
আবারও ভাসছি, ডুবছি, শুধু ফিরছি না।
সুরের আবর্তে ঘুরছি কেবল 
শুন্য থেকে শুরু করে শূন্যতর বোধ। 

গলা ভাঙছেন আখতারীবাঈ আমিও সমান্তরালে আভোগ থেকে সোমে, সোম থেকে আভোগে
তানকারি এখনো বহুদূর
ততক্ষন শুধু অপেক্ষা! আমার হাতে আপাতত কিছুই নেই
নিমগ্নতা ছাড়া ঈশ্বর জানেন কতটা শূন্যতা একটি মানুষকে পূর্ণ করতে পারে। 

 ঠিক কতটা শূন্যতা আছে গানের নিহিতে








মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল সংখ্যা || ৪ ফাল্গুন ১৪৩০ || ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪