মুক্তগদ্য
একাকী শ্রাবণের গান
জ বা ভ ট্টা চা র্য
আকাশে কাজল মেঘে ভেসে আসে
বৃষ্টির চিঠি
ধূসর কাহিনীমালা লিখে যায়
লাজুক নদীটি
উঁচু বাঁধানো পথটির নিচেই ক্ষীণাঙ্গী তন্বী কিশোরীর মতো নদী। কি তার নাম কে জানে! ছলছলিয়ে ছুটছে আর ছুটছে ।আকাশ ছোঁয়া হীরে মোতির চুমকি বসানো শাড়িতে তার ছাইরঙা দেহে রূপের ঢল। জল তরঙ্গ বুদ্বুদ, নদীর মোহিনী মায়া,
বৃষ্টির ঝমঝমে নদীর বুকে হীরের চুমকি,আমায় বড় টানে। নিরিবিলিতে নদীর পাড়ে একটু বসি। অবশ কষ্টগুলো ভাসিয়ে দিই ঢেউজলে। রাত ভোর হতে এখনও কিছু বাকি--- নিংড়ানো সময় বাঁচিয়ে চেয়ে আছি ভোরের দিকেই-- ভোরের আলোয় জীবনের মনোহারী মিথ্যেগুলো যদি সত্যি হয়ে যায়! একদিন তো তোমার সাঁকো আমারও ছিল--- আজ কতদূর সব---- এলোমেলো।
একাকী কুয়াশা মাঝে
শ্রাবণের শেষ গান
পাটাতনের সিঁড়ি বেয়ে
নেমে যায় শ্যাওলাগন্ধী টানে
মায়াহীন অশ্রুজলে কবে
জোনাকি প্রহর উৎসবে
জোছনারা ভেসে গেছে গানে।
আমি জানি বাঁক ফেরা বাঁকে
নদীজল ডেকেছে আমাকে
বেদনার মতো কাছে পাওয়া
এ পরবাসী হৃদয় ছেড়ে
আমার হলোনা ফিরে যাওয়া।
ককপিট
প্র বা ল ব সু
মেয়েটিকে প্রথম দেখেছিলাম সুলেখাতে। কিছুটা সময় গড়িয়ে যেতে না যেতেই বুঝতে পারলাম, অনেকদিন পর সে একটি কথা বলার মানুষ পেয়েছে। মানুষ তো অনেক আছে। কিন্তু মনের মতো না পেলে, সবার সাথে কি কথা বলা যায়? তাইতো আর দেরি না করে মেয়েটি ঝটপট উলটে দিল তার ঝুলি। ঠিক যেন কথায় কথায় কথার পাহাড়। কিছুতেই ফুরোয় না।
জীবনকে নদী ধরলে, সম্পর্ক হলো নুড়িপাথর। এ'কথার গভীরে গেলে চোখের জলও ফল্গু হয়ে যায়। সম্পর্ক একটি গাছের মতো। চিরদিন বাঁচে না।
সুতরাং, কে কাকে কখন বুকে টেনে নেবে, আর কে কাকে ঠেলে দেবে নর্দমার পচাগলা জলে– তা আগে থেকে বুঝতে পারা ভীষণ কঠিন। তা না হলে কোনো প্রেমেই রক্ত ঝরতো না।কোনো সম্পর্কই ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যেত না।
আর, তোমার কাছেও এই জীবনটা অর্থহীন লাগতো না। আসলে, সব গাছেরই ফুল ফোটাবার স্বপ্ন থাকে ভেতরে ভেতরে। সব গাছই চায় অসীমে হারিয়ে যেতে। কিন্তু তাও কি হয়?
না না, জ্ঞান দিচ্ছি না। এসব কথা মাথায় রাখলে এই পৃথিবী আর কষ্ট পাবে না।
সিঁদুরে মেঘ দেখলে কে না ভয় পায়?
জড়িয়ে পড়ার ভয়ে, খুব চেনা মানুষটাও আজকাল পাশকাটিয়ে চলে। দেখলে মনেহয়, কেউ কাউকে চেনে না।
অবশ্য এতে আমি অবাক হই না, বরং খুশি হই মনেমনে। তেমন সাধুপুরুষ এই পৃথিবীতে ক'জনই বা জন্মেছে? ভালো খারাপ সবার ভেতরেই থাকে। কিন্তু, খারাপটা প্রকাশ্যে এলে যারা নাকে রুমাল চাপা দেয়, তাদের থেকে দূরে থাকতে না পারলে গলায় কলসি ঝুলিয়ে গঙ্গায় ডুব দেওয়া হাজার গুণে ভালো।
'কিছুকিছু চলে যাওয়া মুখের ওপর দরজা বন্ধ করার মতো'। এমন হলে বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যায় একেবারে। চোখের আড়াল হলেই কি শান্তি? তবে মনে রেখো, চোখের আড়াল মানে কিন্তু মনের আড়াল নয়। কী করে বুঝবে কে কতটা কষ্টে আছে? এমন অনেক চোখই আকছার দেখতে পাই, চরমতম কষ্টের দিনেও যাদের দু'ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে না। বরং প্রাণপণে চালিয়ে যায় নিজেকে আড়ালে রাখার প্রয়াস।
মিলন উৎসব
বি উ টী সা ন্যা ল
বোহেমিয়ান জীবন আমার।এ গ্রাম থেকে সে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো আর ক্ষ্যাপার মতো পরশপাথর খুঁজে বেড়ানোই কাজ। ঘুরতে ঘুরতে দেখি, নবগ্রামে মেলা হচ্ছে। মেলা মানেই মিলনক্ষেত্র। বহু লোকের সমাগম সেখানে। বসলাম গিয়ে বাউলের আখড়ায়। মঞ্চে তখন চোদ্দ তাপি পরিহিত এক বাউল গান ধরেছে। 'মন মাঝিরে বল না কোন পারে ভিড়াবি তোর নাও'। ঐ আখরায় সবাই প্রায় বাউল, একতারা নিয়ে টুংটাং শব্দ তুলছে আর গুনগুন গাইছে। আমারই পাশে বসে থাকা এক বাউল ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, "কি দেখো!" সে বললো দেখি মানুষের মন। সেই মন, যে মনে পাপ বাসা বেঁধে আছে। আমিও কিঞ্চিৎ উৎসুক হয়ে বললাম তা কেমন দেখতে সে? বাউল বললো চুপ করে গুঁটিসুঁটি মেরে বসে থাকে। সুযোগ পেলেই সে তার দাঁত, নখ বার করবে, কামড়াবে, আঁচড়াবে। বাউল বললো "এই মেলায় যেমন গ্রামের মানুষের সরলতা আছে বাবু, তেমন আছে ধূর্ত ভ্রুকুঞ্চিত চোখ! ঐ চোখ গুলোকে খুঁজে চলি আমার একতারার মাথায় লাগানো এই বর্ষা ফুঁড়ে দেবার জন্য।" বাউলের কথা গুলো ভাবতে ভাবতে উঠে গেলাম আখড়া থেকে। একটু এগোতেই দেখি এই মিলনক্ষেত্রে কত বিচিত্র মানুষের ভিড়। কত দোকানী তাদের পসার সাজিয়ে হাঁক পাড়ছে। কেউ রং বেরংএর ফিরনি আর তাল পাতার সেপাই বিক্রি করছে। কোথাও কেউ চপ, পাঁপড় ভাজা খেয়ে ঢেকুর তুলছে। জিলাপির গন্ধে ম ম করছে চারধার। আবার এই মেলাতেই গ্রামের সরল সাদাসিধে জগন্নাথের মা, একধারে বসে কাঠের জগন্নাথ বিক্রি করছে। উড়ছে বেলুন, বাড়ছে ভিড়, চলছে রথের মেলা। জয় জগন্নাথের জয়।
প্রতিটি মুক্তগদ্যই দারুণ
উত্তরমুছুনপ্রতিটি মুক্তগদ্যই দারুণ
উত্তরমুছুন