কবিতা

ভাঙে মৃদঙ্গ

স্মৃ তি  ম ল্লি ক  সা হা


অবান্তর আবেগের আবেদনে,
আঁধার সরাতে আকাশের নীল থেকে, আলোর অঞ্জলি আনা হোক।
কোনো একদিন দেখা হোক, সততার ঐক্যবদ্ধতা দৃঢ় হোক একবার।
 অপেক্ষায় জমা হোক দ্রোহ 
এতো নিষ্ঠুর নগরীর পথে অঙ্কুরে
থমকে যায় সৎ ও সততা,  ট্রাফিক সিগন্যালে।

আদর ছুঁয়ে যত আনন্দ, যন্ত্রণা চিহ্ন ততোধিক, চোখের ছায়ায় চোখ শান্ত হোক বনভূমি।
তোমার শরীর ছুঁয়ে আমার কবিতারা ভিজে যাবে,
দিশেহারা অক্ষরগুলো মোহিত হবে ভাবে।
জেগে উঠুক নির্মিলিত ঘুম চোখ। কিছু তো মানুষ বিচক্ষণ হোক? এমনই পাল্টে যাবে পাশা, পালাবার পথ পাবে কোথা?
 সন্ধ্যায় শঙ্খ উলুর ধ্বনি মাঝে এ যেন ফ্যাসিস্ট বর্বরতা।

মনের আয়নায় যখন তোমাকে খুঁজি,
ফুলের সুগন্ধ ফোঁটা ফোঁটা জল চোখ যুঝি।
স্থির চোখের পাতা স্পর্শ করে তোমার শরীর,
যেমন তৃণশীষ সিক্ত করে ভোরের শিশির।
কন্ঠে যেন ভাঙা মৃদঙ্গ, বার বার খণাসুরে গিলে যায় ঢোক,
পাষান বিদরি স্রোতমতী ঝর্ণায় ভিজে আসে চোখ।




গান স্যালুট

সো মা  ন ন্দী


স্তাবকদের ভিড় শেষে 
অপ্রেমে ক্লান্ত অবনত মুখ-
তবুও জপছে ঈশ্বর বন্দনা, ইন্দ্রপ্রস্থের কপাটে দাঁড়িয়ে! 
আঁধারের তর্পণ বুকে রক্তখেকো নিষ্ফলারা বারুদে বাতাস কেটে,
ছেঁড়া ফুল আর ছেঁড়া পালকের নীলচে মায়ায়
নরম হৃদয়খানা, এ ফোঁড় ও ফোঁড় মাখিয়ে দিল কেমন কেতামাফিক যত্নে! 

গাঢ় নিস্তব্ধতার গ্লাভ্স জুড়ে-
জমাট রক্তের জ্যামিতিক নক্সাকে প্রদক্ষিণ করে ঘুরে যায় দিন, 
নিকষ খনিজের গুহাঘরে... 
আয়না বুকে এ তোমার কেমন জন্ম ছিল কবি?





রাস্তা

আ কা শ  নে রু দা 


আঁক কষছি!
আশ্চর্য এক যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে 
আঁক কষছি!
প্রশ্ন জাগে!
এই যেমন,
হৃদয়ে ধরে রাখা পৃথিবী বড়ো?
না কী, পৃথিবীকে ধরে রাখা হৃদয়?
জীবনের রাস্তা বড়ো?
না কী, রাস্তা জুড়ে এগোতে থাকা জীবন?
মানুষকে ছুঁয়ে থাকা সম্পর্ক বড়ো?
না কী, সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখতে,
নিঃশেষ হয়ে যাওয়া মানুষ বড়ো?
প্রশ্নের দৈর্ঘ্য বাড়তেই থাকে!
আরও প্রশ্ন গুল্মের মতো পা জড়িয়ে ধরে!
কে কাকে বাঁচিয়ে রাখে!
মানুষকে ঈশ্বর?
না কী, ঈশ্বরকে মানুষ?
ভালোবাসাকে মানুষ?
না কী, মানুষকে ভালোবাসা?
উত্তর খুঁজতে আঁক কষতে থাকি!
শব্দের ব্যঞ্জনায় রাত্রি পার হয়!
মনের দ্বন্দে মন ক্ষয় হয়!
আঁক কষা শেষ হয় না!

গুল্মের মতো ছায়া এগিয়ে আসে!
ওষ্ঠে জাগতে থাকে নেশা!
নেশায় জাগতে থাকে মুহূর্ত!
আর মুহূর্তের মাঝে মুহুর্মুহু জেগে উঠে দেখি,
কালের নিয়মে ফুরিয়ে যাচ্ছে আমার রাস্তা!
গন্তব্যে পৌঁছানোর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত 
কষতে থাকা আঁক কি তবে,
অসমাপ্ত থেকে যাবে!

রাত্রির আয়নায় নিজেকে চিনতে ইচ্ছে হয় না!
ক্লান্তির আলিঙ্গনে শরীর বিশ্রাম নিতে চায়!
কিন্তু মন জেগে থাকে!
শেষ দুই প্রশ্ন নিয়ে মন জেগে থাকে!
এই রাস্তা শেষ হলেই কি সব আঁক মিলে যাবে?
আঁক, এই রাস্তা,
আর এই রাস্তায় কাটাতে থাকা জীবন 
সবই বিভ্রম?






কৈলাশ বিলাসী

সু জি ত  মু খো পা ধ্যা য়


নবমী শেষে সূর্যের গোলাপি আলোয়,
তুই শেষবার বেঁধে নিস চুল,
কুলুঙ্গির আয়নায় মাটির দেওয়ালে।
দোপাটির চাপা হাসি মুখে।
স্থলপদ্ম গোলাপি অনুরাগে,
তখনো উৎসব মাখে।
আজই সন্ধ্যায় নীলকণ্ঠী উড়ে যাবে...
সাদা মেঘ সন্ধ্যা ডানায়, নীলকন্ঠ দেশে।
নবমীর রাত...
রাতজাগা ঝাড়বাতি  কুয়াশা চাদরে, ঝাপসা ঝালর।
কখন যে দশমীর ভোরে, বোঁটা ঝরা শিউলিরা কাঁদে?
কে জানে...?
তাকেই কি শিশির বলে, এ মাটির দেশ...?
মঙ্গলঘট কঞ্চি শলাকা ঘেরা সুতোর বাঁধন মন্ত্র।
গ্রন্থিকাটে বিজয়ী উপাচার।
শেষবার অপরাজিতায় বাঁধে তোর বাহু...
তবু সব বাঁধন ছিঁড়ে...
তুই যাস চলে ভিখারি হরের ঘরে।
কি সুখে সুখী তুই উমা?
রাজউপাচার ফেলে ভিখারি  কৈলাশ...
সোনালী আসর ছেড়ে, কি সুখে
সাজিস শ্মশানের ছাই পাঁশে?

সিঁদুরে কপাল রাঙা, গোলাপি আলতা দাগি পা,
ফেলে যাস বাপের শিশির উঠোনে শেষবার।
শরৎ এর টলমলে দীঘি,
ছলাৎ জলে একবার ভেসে ওঠে মুখ...।
শেষবার... দিস ডুব...।
এপারে অগুনতি  চেয়ে থাকা বিষাদের মুখ।
দৈন্য শুক্লা একাদশী চাঁদ। আলো গায়ে ঘুমায় এ মাটির বুকে কাশ ফুল।
কাল সূর্য ওঠা প্রতীক্ষা... দ্বাদশী সকাল।






থাকুক ওরা হিসেব কষে

শ্যা ম ল  খাঁ


যে যা খুশি বলুক! সামনে তো সব চুপ
পেছনে কি বললো কে, তা নিয়ে আর ভাবি না,
প্রয়োজন যার মিটে গেছে, আমি পোড়া ধূপ
অতীতটাকে মুছে ফেলি। নেই তো অনুশোচনা।

পিছিয়ে পড়ি! কি ক্ষতি তায় শেষ তো সবার শূন্য,
আমায় নিয়ে সময় কাটে, সেও তো বিরাট পাওনা,
পাপগুলো সব আমারই থাক, নিক না ওরা পুণ্য
ওরা না হয় আগলে রাখুক, আমিই দিই রওনা।

চিহ্ন কিছু রইলো নাকি! তাই কি ওরা খুঁজছে?
মুছতে গিয়েও পারছে না তা, আটকে গেছে গায়ে,
নিজের কাছেই হেরে গিয়ে, নিজের সাথেই যুঝছে
উচ্চ রবে পিছু ধাওয়া তাই কি নিরুপায়ে!

চোখ গুলো সব নজর রাখে, যেখানে যাই আমি |
আমার ভুলের ফয়দা তোলে অতি সন্তর্পনে,
দেখলে কিছুই যায়না বোঝা, বুঝি ভীষণ কমই 
সিদ্ধ সবাই কাঁটা ছেঁড়ায় , আর সুযোগ সন্ধানে।

থাকুক ওরা হিসেব কষে। লাভ ক্ষতি আর সুদ আসল
ঝুলি ভরাক উপচে পড়া রত্ন রাশি দিয়ে।
সইবো না হয় সারা জীবন শোক বইবার ধকল,
ক্লান্ত হয়ে হয়তো কখন চোখ যাবে জড়িয়ে।






অ-মানবিক

দে বা শি স  স র খে ল 


প্রতিদিনের বিবিধ হতাশার মাঝে এ দৃশ্য খুব আশাব্যাঞ্জক।
যে লোকটা একদিন বুড়ির কাতর আবেদনে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, সেও এসে হাত ধরে।
কেউ বা লাঠিটা হাতে ধরিয়ে দেয়।
নিজের জলের বোতল এগিয়ে দেয় অন্যজন।
      এক যাত্রী ভাঁড়ে গরম চা এনে দেয়, সঙ্গে বিস্কুট।
দুই যুবা বুড়িকে আলগোছে তুলে সামনের বেঞ্চে শুইয়ে দেয়।
       ঘটনাটি হলো এক বৃদ্ধ ভিখারিনী ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে পা হড়কে পড়ে গিয়েছেন।
না, আঘাত তেমন গুরুতর নয়।
        খুব স্বস্তি পান বুড়ি, সকলকে তার সন্তান বলে মনে হয়।
সকলে বেঁচে থাক, মনে মনে ভাবেন এখনো তাহলে মানুষ আছে পৃথিবীতে।
    তার খুব ইচ্ছে করে মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ দিতে। কিন্তু সাহসে কুলায় না। হাজার হোক ভিখিরিনি তো।
                   এক সহযাত্রী দেখে বুড়ির ঝোলা থেকে দশ টাকার একটি কয়েন অনেক দূরে গড়িয়ে গেছে। সে খুব সন্তর্পনে তুলে নেয়। এতদূরে বুড়ির নজর পড়ার কথা নয়। স্টেশনের বাইরে এসে সে ওই পয়সায় একটা সিগারেট এবং এক প্যাকেট বিড়ি কেনে। সিগারেট মৌজসে টানতে থাকে।কোন তাপ অনুতাপ নেই।
          বুড়ি ঠিকই বুঝতে পেরেছেন। তবু মানুষের উপর বিশ্বাস তার ভেঙ্গে যায়নি। দোষে-গুণে মানুষ।
        এখনো দুনিয়ায় খারাপের চেয়ে ভালোর পাল্লাই ভারী।






আজ জ্যোৎস্নায়

বী থি  ক র


তাঁর সাথে আমার প্রথম দেখা চাঁদের ঘাটে, 
যখন তিথিতে আসন জুড়ে পূর্ণ পূর্ণিমারাত।
এমনই সব কথা ছিল দোঁহে মিলে আলোর স্রোতে,
সলাজ নয়নে ফুটেছিল আসন্ন শরতের রোদ। 
দু-জনের সুরে ছিল মৃদুমন্দ শীতের পরশ,
দোলায় দোদুল্যমান ভালোবাসায় সিক্ত হৃদয়।
সে এসে বসেছিল পাশে, শুনিয়েছিল কবিতা,
আমার হাতের মুঠোয় আলোয় ভেজা পাণ্ডুলিপি।
নীল খামে মুঠো মুঠো মেঘ দিয়েছিল উপহার,
যেখানে ছলাত ছলাত বর্ষা নামে আদরের বানে। 
ঠোঁটের ভাঁজে তিরতির কাঁপন প্রেমের ইঙ্গিত আঁকে,
চাঁদের গায়ে আলপনা দেয় চাঁদসোহাগি মন। 
কদমের ঘ্রাণে এত প্রেম সাক্ষাতে করে আলাপন,
সখী, আজ জোৎস্নায় চাঁদের ঘাটে নিভৃতে মিলন।






মঙ্গল গ্রহ থেকে বলছি...

_______এ বং  দে বা শী ষ


টুকরো হয়ে দেখেছি, দেখেছি যতোটা সম্ভব আসক্ত হওয়া যায় সব পথে,
জীবন বড়ো অদ্ভুত শ্রমনীতি, অযথা হাজার পরিশ্রমের পরে বুড়ো আঙুল জোটে।

প্রচেষ্টার অদৃশ্য গুণমান ভালোবেসে যতোটা পথিক সন্ন্যাসী বেশ।
হিসেবের ফর্মুলা দামি, যতোবার কষতে যাওয়া খেতে বাধ্য অদ্ভুত সব কেস।

তাহলে উপায় বলো কোথায় কিভাবে আশ্রয়?  
মুক্তির একটাই পথ, পৃথিবীর শুভ কাজ যতো---
টিকিয়ে রাখতে জানতে হয়। 

ঘেঁটেছি ধর্মগ্রন্থ, ঈশ্বরের কাছে করোজোড়ে ফেলেছি চোখের জল,
বলছি কী! এতো চাওয়ার লোভ ছেড়ে কষ্ট করে পেড়ে খাও ফল।

চেষ্টার ফসল হয় ভালো, মাঠ ঘাট ভরে যায় ঘ্রাণে,
তোমরা একবার প্রতিযোগিতা ছেড়ে এগিয়ে দ্যাখো একনিষ্ঠ নিজগুণে। 

কী আছে শুরুর কথায়, কিই বা শেষের পথে বাঁচে!
কেনো এতো হতাশা?  জন্ম মৃত্যু শোক?  
যা আছে সবটুকুই তোমারই কাছে।

নিজেকে নিজের কাছে রাখো, তুলে ধরো ভালোবাসা আশায়,
তুমিই সবকিছু পারো, নিজেকে সবার আগে বুঝতে চিনতে হয়।





গাঙ্গায়নী

গী তা লি  ঘো ষ


তুমি শান্তনু-নন্দন
তুমি গঙ্গাপুত্র...
জীবনের এক অমোঘ মায়ায়
তোমার সমগ্র জীবন পরিব‍্যাপ্ত।
শৈশব কেটেছে তোমার মাতৃসঙ্গে---
জগতবিশ্রুত সকল অস্ত্রগুরুর সান্নিধ্যে।
অভ‍্যাস করেছ ধনুর্বিদ‍্যাসহ সকল শস্ত্রশিক্ষা।
হয়ে  উঠেছ এক অসামান্য যোদ্ধা। 
তারই সাথে শাস্ত্র বিদ‍্যায় 
তুমি পরম যোগ্যতা লাভ করেছ।
হস্তিনাপুরে পিতার রাজত্বে
অভ‍্যাস করেছ রাজনৈতিক জ্ঞান।
রাজা শান্তনু তোমাকে 
যোগ্য উত্তরাধিকারী তৈরি করেছেন 
অনেক আশায়, অনেক ভালোবাসায়।
রাজ‍্যজুড়ে শুধু তোমার নাম ধ্বনিত হয়েছে 
বারবার... বিপুল জয়ধ্বনিতে
তুমি অভিষিক্ত হয়েছ দেবব্রত!
প্রস্তুত হয়েছ তুমি দেবজয়ী রাজনৈতিক জ্ঞানে। 

ধনুর্বিদ‍্যা অভ‍্যাসে তোমার গতায়াত ছিল 
নদীকূলে, বিশাল উদ‍্যানে...
মনে পড়ে?
ধীবর রাজ‍্যের দাস রাজকন‍্যা,
কালিন্দীর চকিত চাহনি দেখেছ তুমি, গাঙ্গায়ণী!
তোমার রাজদুর্লভ রূপের আকর্ষণে
সেই তরুণী ছিল আত্মহারা!
যুবরাজ, তোমার প্রাণেও কি গোপন দোলা লেগেছিল?
এ বিশ্বের কেউ জানেনি তোমার মনোভাব।
শুধু তোমার নিত‍্য আসা-যাওয়া স্থগিত ছিল না।
সেই সূত্র ধরেই 
উচ্চাকাঙ্ক্ষী কালিন্দীর মনে জন্মেছিল
প্রেমাভিলাষ!
উপরিচর রাজার প্রকৃত কন‍্যার মনে  ছিল
রাজ পরিবারের প্রতি অদম‍্য লালসা।
তারই সঙ্গে মিশেছিল
সুপুরুষ দেবব্রতের প্রতি অদম‍্য আকর্ষণ!
কিন্তু সে প্রেমের পরিণতি শূন‍্যতায় পর্যবসিত।
যুবরাজ আপন কর্তব্যে অবিচল। 

দাসকন‍্যা কালিন্দীর মনে বুঝি আগুন জ্বলে।
সে আগুনে খাক হয়ে যায় 
তোমার সমগ্র ভাবী জীবন, দেবব্রত।
তোমারই পিতার সুখের আশায়
তোমার কঠিনতম প্রতিজ্ঞায় তুমি ভীষ্ম হলে।
কিন্তু তোমার জীবন?
হস্তিনাপুর কি তোমাকে ছেড়েছে?
যৌবরাজ‍্য ছেড়েও 
আপন পথে চলার শক্তি কি তুমি অর্জন করতে পারলে?
আরও কঠিন জালে জড়িয়ে পড়লে তুমি দেবব্রত।
দাসকন‍্যার প্রতিশোধের আগুনে
তোমার জীবন যৌবন 
কোন আগুনের দহনে ধ্বংস হল?
প্রতিটি প্রতিজ্ঞার জর্জর জ্বালায়
সকল সম্ভাবনার অবসান হল! 

যে জীবন এক অপরূপ আনন্দময় 
রূপকথা হয়ে 
জগত বিশ্রুত হতে পারত,
অচিরেই তার অন্ত হল যে!
ভীষ্ম হয়ে হস্তিনাপুরের রক্ষাকর্তা রূপে পরিগণিত হলে তুমি! 
কী নিদারুণ অপচয়! 

যে জীবনের মাঝে ছিল 
অনন্ত এক সম্ভাবনা,
সে জীবন রূপান্তরিত হল
এক অপরিসীম ব‍্যথার যন্ত্রণায়!
তুমি কি কখনো মনে মনে ভাবোনি
সেই উজ্জ্বল আনন্দের কথা?
সত‍্য করে বল তো গাঙ্গায়নী...
কোনো অলস মুহূর্তে,
তোমার মন  
সেই শান্ত সুন্দর 
একখণ্ড গার্হস্থ‍্য জীবনের কথা 
কি বলে নি তোমায়?
নিদারুণ ব্রহ্মচর্যের অভিশাপ 
মাথায় নিয়ে 
অতিবাহিত করেছ জীবনের প্রবাহ!
স্নেহময় পিতামহ হয়েও
কুলবধূর অপমানকে নিরস্ত করতে পারোনি!
তুমি যে রাজা হতে পারলে না, 
ভীষ্ম হয়েই 
আপন প্রতিজ্ঞার জালে জড়িয়ে,
আমরণ রইলে 
শুধুই হস্তিনাপুরের রক্ষক হয়ে!!






আত্ম-অন্বেষণ
      
 তৈ মু র  খা ন


 ঘুমানোর ভেতর, জাগরণের ভেতর, নীরবতার ভেতর
                                   নিজেকে খুঁজে যাচ্ছি
 আর সম্পর্কের ভেতর, ক্রোধ ও সহিষ্ণুতার ভেতর
                                  নিজেকে চিনতে চাইছি

 'আমি' শব্দটি এখন বিরক্তিকর, পিচ্ছিল, দুমুখো সাপ
 বেগুনি রঙের জামা পরে বিকেলের রোদ পোহাচ্ছে
 'আমার' শব্দটি চায়ের দোকান থেকে হাটে-বাজারে
 বিপুল তর্কের ভেতর বেশ অহংকারী

 মানব-বাগানে আমি ও আমার বলে কোনো ফুল নেই
 শুধু দু'মুখো পাইপ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে দূষিত জল
পিপাসারা সবাই অচরিতার্থ, পার্থিব আসক্তি নিয়ে
                                              ধূসর কাঙাল

 কী উৎসব আসছে তবে?
 'আমি'র নতুন নতুন মুখ এবং 'আমার' গার্হস্থ্য সংবাদ
 চিত্রনাট্যের স্ক্রিপ্ট লেখা শেষ হলে শূন্য উদ্যান শুধু
 মরুভূমি পার হয় প্রজন্মের  উট...






স্মৃতিভাষ্যে শারদীয়া

সু খে ন্দু  ভ ট্টা চা র্য


শরৎ এলেই মেঘে জমে কিছু মায়া

হয়তো কিছুই নেই, বা অজান্তে ছিল   

বাতাসে ছড়ানো কিছু এলায়িত কথা  

আবাহনী অন্তরালে চেয়ে চেয়ে দেখে।

অকথিত নির্লিপ্ত শোকের শীতঘুম    

শিশিরে আঁচড় কেটে চিহ্ন এঁকে যাবে      

ভোরের শিউলি ঝরা স্মৃতি অনুভব

সময়ে হাজিরা দেবে ছায়া ছায়া মায়া।  

প্রবাহের পুণ্যতোয়া চিরায়ত স্রোত!

হিমবাহ, ক্যানভাসে ঋতুবরাবর  

জানি না  অভাবী চাঁদ কোন কারাগারে  

শুধু জানি রাজমহলের ঘাটে বাঁধা  

সমাপনে সে ও রাখে ক্ষীণতর আশা   

মুঠোভরে সময়ের প্রবাহে বিনুনি।  

আনন্দ দোলায় দোলে পুরাতনী গান  

আধোঘুম জেগে উঠে আজও ঘাটে ফেরে

মননের সাজি ভরে মালা গেঁথে ফেলে     

শ্রদ্ধাভরে পৌঁছে দেয় পূর্ণিমা আলোকে । 

দীর্ঘছায়া, পার হয়ে আনন্দ পিপাসা   

স্মরণ-ও সামিল হয় মিলন আগ্রহে।






আগুনের জাহাজ এবং বরফ বৃক্ষ

অ সী ম  দা স 


চকমকি চামড়ার তিলগন্ধ মোম মাংস ফুঁড়ে 
কবে আমি উদ্ধারণ পুরের ঘাটে দুধগঙ্গা হবো!
করোটি করাত এসে মুছে দেবে যৌন যন্ত্রণা 
চোখের হস্তিনী ক্ষুধা কবে খাবে অনন্ত শেয়াল!

জ্বলে জ্বলে আগুনের জাহাজ হয়েছি।
আমি যে বরফের দাঁড় বেয়ে 
নোঙরের প্রশান্ত মাটি হতে চাই, মনসিজ!
অগুনতি জোয়ার জননী যোনী 
পলির প্রতিভা মূলে সবুজ শব্দ ফেলে গেছে।
রিপুহীন বৃক্ষ করো 
শরীর সিঁড়ির ছিদ্রে যত রিফু লাগে 
হে সময়, আমি প্রস্তুত।

আমি শুধু শুক্রহারী শুদ্ধ হতে চাই।





ঝাপসা মনের কথা

ছ ন্দা  চ ট্টো পা ধ্যা য়


জানিনা কেন এমন হয়,
সকালের মসৃণ রোদে
ঘাসের আগায় ঝিকিয়ে ওঠা সহস্র নাকছাবি,
আমাকে মুগ্ধ করে না।

জানিনা কেন এমন হয়,
মেঘমেদুর কোপাইয়ের ছবি 
অথবা, বৃষ্টির আদরে শিহরিত কদম্বকেশর,
একটুও রোমাঞ্চিত করে না আমায়।

জানিনা কেন এমন হয়,
বসন্তের নির্মম খোঁচায় 
কৃষ্ণচূড়ার রক্ত ওঠা মুখ,
দেখেও বিষণ্ন হই না আমি।

জানিনা কেন এমন হয়,
গভীর রাতে যখন পূবের জানলা দিয়ে,
দখিনা বাতাসের সঙ্গে ফুটিফুটি জ‍্যোছনা---
আমার বিছানায় হামলা করে,
ভীষণ বিরক্ত লাগে তখন।

শুধু যখন কোন বিনিদ্র রাতে
বিছানা হয় রুটি সেঁকার তাওয়া,
হঠাৎ গম্ভীর হরিধ্বনি
ভীষণ আকৃষ্ট করে আমায়,
ছুটে যাই বারান্দায়।

হেমন্তের কুয়াশা ঢাকা ল‍্যাম্পপোস্টের
পাণ্ডুর দৃষ্টির নীচে দিয়ে মনে হয়
আমিও চলে যাই ঐ ভাবে...
ঐভাবে চারজনের কাঁধে চেপে--- 
দুলতে, দুলতে, দুলতে, দুলতে..

কেন এমন হয় এটা বোধ হয় জানি।





তবুও...

শ ম্পি তা  রা য়


এই পৃথিবীতে জন্মাতে চাই না আমি,
চাই না হংস হয়ে মেঘের মধ্যে ভাসতে
মানুষের চরম রূপ দেখেছি আমি
দেখেছি মানুষের দেহে কীটের বসবাস!
তোমাকেও দেখেছি আমি,
দেখেছি সুন্দরতার পূজারী তুমি
সুন্দরের অবয়বে ড্রাকুলার ছায়া।।

চাই না পৃথিবীতে জন্মাতে আমি
তবুও ফিরে আসতে হবে আমাকে
আসতে হবে সেই সুর শোনার জন্য...
সেই সুর যা নাইটিঙ্গেলকেও স্তব্ধ করে দেয়,
সেই সুর যা ঘুম পাড়ায় দুরন্ত শিশুকে।।

আসতে হবে সেই ছবি দেখার জন্য 
যা ভোরের সূর্যকেও ম্লান করে দেয়,
সেই ছবি যখন শিশুটি রঙিন ঘুড়ির স্বপ্ন ছেড়ে মাথায় তুলে নেয় ইঁটের বোঝা।।

আসতে হবে সেই স্বাদ নেওয়ার জন্য
যে স্বাদ বিস্বাদ করে দেয় প্রিন্স চার্লসের ডিনারকেও
সেই স্বাদ যখন মা তার ভাতের শেষ কনাটি তার সন্তান কে দেয়।।

তাই ফিরে আসতে হবে আমাকে
আসতে হবে এই নারকীয় পৃথিবীতে একটুখানি
স্বর্গের স্বাদ পেতে।।






ধুলো ছাইয়ের কবিতা

প ল্ল ব  ভ ট্টা চা র্য


সকাল বেলায় ছাই উড়েছে
শূন্য হাওয়ার মাঠে
প্রজাপতির ব্যস্ত ডানা
ক্লান্ত দুপুর ঘাটে।

চোখ ঢেকেছি লজ্জা পেয়ে
আঁধার ঘনায় দিনে
ধুলোয় ছাইয়ে গাঁটছড়া বেশ
আকাশ কোনে কোনে।

মাখতে চায় শিউলি আলো
নদীতে নেই ঢেউ
শ্বাস-প্রশাস করছে লড়াই
বাতাস দেবে কেউ?

বাতাসে বিষ গেলাস ভরে
করতে হবে পান
তবুও জানি সইতে হবে
এই পৃথিবীর টান।

সকাল বেলায় ছাই উড়ছে
শরীরে দাও ছাই
গাছ কেটেছ গাছ পুড়িয়ে
মাখতে হবে তাই।






অস্মিতা

ম নে র  মা নু স


তোমার জরাজীর্ণ বিবেক আর মনন ইমারতের 
প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে আমার জীবন্ত অভিলাষার 
ছত্রাক গুলো আজও সবুজ হয়ে বিরাজিত। 
      আমার খুঁড়িয়ে চলা সাধারণ চাওয়া পাওয়া
 গুলো তোমার বয়ে যাওয়া উদাসীন সময়ের
 গতিবেগের কাছে নির্মম ভাবে পরাজিত।।

আজ আমার পরাজিত মনন চৈত্রের ঝরা পাতার
 মতো কখনও বিবেকের ঘরে কখনও অন্তরের
 দ্বারে দ্বারে আশ্রয় খুঁজে বেড়ায়। 
     অজান্তে কিছু হারানোর গুপ্ত বেদনা যেন 
 সময়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, শরীরের শিরায় শিরায় 
বিরহ-বিচ্ছেদের গন্ধ ছড়ায়।। 

 নাইবা রইলে বর্তমান প্রবাহমান লহমার আঙিনায়
সু-স্মিতার মিলন মেলায় আপন অস্মিতা ভুলে। 
     তবুও জেনো ভরবে এই সবুজ ছত্রাকের ছত্রে 
ছত্রে রঙিন অভিলাষার ঐশিকী ঈশারায় নার্গিস
 ফুলে ফুলে।।






পাথরের প্লাবন

স ন্দী প  কু মা র  মি ত্র


জানি তুই আকাশ ভালবাসিস
তার নীলে তোর অনন্ত খুশি
মেঘের আড়ালে খেলিস লুকোচুরি
তবে কেন রুক্ষ পাহাড়টা কে---

যেখানে একটুও সবুজ নেই
নেই ঝরণা, নেই পাখি
শুধু আছে দিন যাপনের আর্তনাদ---
আর হারিয়ে যাবার বাসনা।

পুঞ্জীভূত ক্রোধ যেখানে নিয়মিত
ফাটিয়ে চলেছে চুড়ার হৃৎপিন্ড কে
ঝুরঝুরে পাথরের প্লাবন
ধোঁয়াসা করে দেয় চারিদিক।

আর তার ফাঁকে নিজেকে
লুকানোর সেকি অপরিসীম চেষ্টা---
পারবি সেখানে ফোটাতে রডোডেনড্রন 
ঘোচাতে পারবি তার রোজ ক্ষয়ে যাওয়া।





ঊর্ননাভ

সো না লি  ম ণ্ড ল  আ ই চ


সব পাওয়া হয়ে গেলে 
ফুরিয়ে যাবার আগে এসো
ডেকো নাম মনে এলে 
রেখেছি শেষ মোমখানি জ্বেলে ।

সেসব নেশাকথা হাওয়া মরফিন 
অথবা লাল সবুজ কিছু স্মরণীয় দিন
কে জানে কে কবে জ্বেলেছিল 
প্রতীক্ষা নিয়ে কেউ কী শেষতক বসেছিল।

এ শরৎ কথা বলে অন্য
এ শিউলি মনে করার জন্য
এ সকাল খুব জ্বরে ভোগে
এ উৎসব ভয় ভাবনার শোকে।

দীর্ঘশ্বাস শব্দটা হার্ট বিষয়ক
সুস্থ থাকার জন্য উপযোগী
নিম্নচাপ আবহাওয়া বার্তাগুলো ঠিকই
কেউ কেউ ছাতা মাথায়, ছাদের নিচে 
ভেজা চুল ভেজা চিবুকে গ্রহণ লাগা কাল
বলে সম্পর্কের কথা, শুনতে ভাল্লাগে না
ওসব ছেড়ে, এই চাঁদ আলো সব ভুলে
আমি অন্য কিছু খুঁজতে থাকি।

আঁককষা যন্ত্রটা প্রলম্বিত শূন্য আঁকে
তখন বেলুন হয়ে উড়ে যাই,উড়তে থাকি
বড্ড হালকা জেব্রা ক্রসিং ধর্ম সব ভুলে
প্লেন, প্যারাসুট আর একটা বিরাট মেলা 
যেখানে কাঁচের চুড়ির মত বিভিন্ন ধর্ম
রঙিন এক রামধনুর মতো উচ্চতা নিল।

এ সময় কৌণিক কোণ
ডেকে আনে খুব কাছে
শুভেচ্ছা জানিয়ে বলে
জানো এখনো কেউ ভালো আছে।

ব্যস্ততাটুকু ভালো থাকতেই 
শীত রোদ বৃষ্টিকে ছুঁয়ে দেখা
হাঁটি হাঁটি পা-পা কতো শেখা
সবকিছুই তো কেবলমাত্র বাঁচতেই

জীবন জুয়া খেলে গেল সে যে
মরণ ধোঁয়া জ্বেলে দিল কে যে
হাওয়া বিষ উঠছে পাঁজর বেয়ে
যাওয়া শিস ছুটছে ভীষণ ধেয়ে...






ছায়া নামে

ম ধু মি তা  রা য়


আমি জানলায় বসে
রোদের দূরে সরে যাওয়া দেখি
গাছের মাথা ছুঁয়ে পাখির ডানায় রঙ ভরে
ক্রমশ দূরে সরে যায় রোদ

আকাশে আগুন জ্বলে
নদীর জল রক্ত লাল

পুকুর মাঠ অরণ্য পেরিয়ে
দূরে সরে যায় রোদ

ছায়া নামে, শিরশিরে শীতল ছায়া।






আঁচ

জা রা  সো মা  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়


পেরিয়ে যাচ্ছে ক্ষুধার্ত সময় 
প্রগলভ অস্থিরতা দুঃসাহসিক

কাঙাল জন্মে হাতের রেখায় আঁকা শূন্য 
বড়ো তীব্রতায় জানিয়েছে প্রতিবাদ 

সেসব অন্ধকার রাত ডানা মেললেই
সতর্ক হতে হয়, প্রহরী তা জানে বিলক্ষণ 

গৃহীসন্ন্যাস কমণ্ডল উপুড় করতেই 
চন্দ্রাহত শোক মিলিয়ে যায় বাতাসে

কথার পিঠে কথা গনগনে সংসার আঁচে
সেঁকে রাখে আধপোড়া রুটি ।।





বাক্যবিলাসী মন

কা বে রী  রা য়  চৌ ধু রী 


আমার ভাবনাগুলোর খোঁজ পাবে না কেউ
সে কখনও নদী, কখনও হৃদসায়রে ঢেউ!
রাতের নির্জনে বাক্যবিলাসী মন আড়ষ্ট আঙুলে বুনছে স্বপ্নের তাঁত
বোবা মুখে কথা বোনে প্রিয় পংক্তিতে কবিতার চাহাত!
অব্যক্ত কথারা আখরের মুক্তমালায়
অন্ত্যমিলের আলতা মলাট খাতায়!
সাঁঝের আঁচল উড়িয়ে ধূলোয় কৃষ্ণমেঘে ধারাবর্ষণ
মনের গভীর জলে সুপ্তি-আহরণ!
একলা হওয়ার কাজলা চোখের পাতায়
হাসি ঠোঁটে সুপ্ত ব্যথায় ডুব নদীটায়!
সকালের রবি আর সাঁঝে তারা, চাঁদ
আপনারে খুশি রাখি হৃদয়ে দিয়ে বাঁধ!
বালি ঝরে নোনাধরা বুকে ঝড় যন্ত্রণায়
নুড়ি কুড়িয়ে বুকের বামে রক্ত প্রবাল!
অক্ষরে অক্ষরে ভেসে যাওয়া সুখের শাওন
কখনও দুঃখের প্রহরী নিরালা রোদন!
ছলছল চোখের মান অভিমান
শব্দবৃষ্টির স্নান, স্মৃতির সন্ধান! 
আমার হয়ে কবিতা কথা বলে, আমার হয়ে লেখে.. 
ছেলেবেলা, কৈশোর, অতীতকে পাশ ফিরে দেখে! 
হাসি কান্নার দুয়ার খুলে 
হাজার কথার ছলে ছন্দ গাঁথে আপন খেয়ালে সুরে সুরে!!






চলে তো যেতেই পারি
  
দু র্গা প দ  ম ন্ড ল
 

চলে তো যেতেই পারি পর্ণা।
শুধু একটা রূপটানের অপেক্ষা---
অকারণ মনখারাপের বিকেলে
কতকটা আবেগ--- পোড়া ছাই হাতে।

অন্য হাতে কিছুটা নিঃস্ব ঐশ্বর্য---
যা ছিল কাঁথা শিল্পে এমব্রয়ডারি;
ক্ষুব্ধ সময়ের না-লেখা দলিল
স্টোর রুমে। মুহূর্তের একান্ত নিভৃতি,---
সব ছেড়ে যেতে পারি তোর জন্যে, কবিতা।

কেউ কেউ ছুঁড়ে দেবে তিক্ত  ঘৃণা কিংবা
আরক্ত ক্রোধ, কেউ কেউ শোনিতাশ্রু---
সে সব স্বপ্নগরিমা পিছু কি টানবে না
এই অসমাপ্ত দীর্ঘ ক্লান্ত পর্যটনে!

পরিযায়ী শব্দগুলো ভ্রুপল্লবে ডাক দ্যায়,
বলে,: এভাবে থাকাটা নাকি শাশ্বত অন্যায়।।






কোমল গান্ধার

শ্রী স দ্যো জা ত


তোমার ওই মন্দবাসার ছোট্ট কৃষ্ণচূড়াটার মতন অদম্য ভালোবেসো আমাকে,
ফেলে আসা সাদাকালো মাইল ফলকগুলোকে তুমিই হয়তো পারবে আবারো সহৃদয় ময়ূরকণ্ঠী করে তুলতে,
হয়তো আমি অযাচিত কোনো হিমশীতল কল্পনায় 
তুমি প্রখর বিষের অথৈ রোদ হলেনা কেন..??
জানোই তো নীল নির্জনের গোলাপদানিটা জন্ম বৃতি থেকে অশনি সঙ্কেত,

ফেলে দেওয়া উষ্ণ অবকাশটা মেখে সে যে এ জন্মেও এক উদয় অস্ত ঘর্মাক্ত পদাতিক,
তুমি চেয়েছিলে অবিকল একটা মেঘনা গৃহকোণ নয়তোবা কাবেরী প্রাসাদ,
কিছু না হোক একটুকরো ময়ূরাক্ষী জলকেলি আলাপন 
তোমার হাস্নুহানা ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বলা হয়ে ওঠেনি,
আমি তোমার সেই ফেরারি স্বর্ণখচিত গলাবুক অতন্দ্র কোনো মনিহার নই,

নিজেরই মৃত্যুর কাছে এক টুকরো মেঘ চাইতে গেছিলাম,
আমার জানা ছিল না,
রোদবৃষ্টির মতন আমি তোমায় যেমন খুশি ছুঁতে পারিনা,
তোমার নষ্ট মেদুর ওই স্রোতখানি আমার স্বপ্ননীল পৃথিবী,
তবু কেন অবেলার তৃষ্ণার্ত আকাশটা
তোমার সংক্ষিপ্ত মাটির ভেজা সুখটুকু হতে পারেনা..!!

অঘোষিত সময়টা বড়োই বিচিত্র কারুকাজে গড়া যেন একই রঙের দৈনিক পৃথিবী,
তাঁর নির্লিপ্ত সহিষ্ণু বুকের কাছে বেলাশেষের সবটাই বড় ম্লান 

চেনা কণ্ঠের স্বরলিপি থাকলেই বুঝি অহরহ সুর বাঁধা যায়..!! 
বর্ণিল এই জলসায় কারই বা অধিকার... কারই বা পদধ্বনি!
কেনই বা পাওয়া না পাওয়ার আমৃত্যু এই দলছুট মিছিল..!
রোজকার রোজবন্দী জীবন যেমন কাটে আর কি...

শুরু থেকে সবটাই জানা ও চেনা ওই বিহঙ্গ দোতারায়
             তবু সুখ পাখিটার ঘর কোথায়?
     সুখ পাখিটার ভাঙাচোরা ওই বাঁশি'টা কোথায়!!

আজ নিশ্চুপ হলাম নীরবে শব্দ আঁকলাম।
হয়তো সবটাই আমাকে ছুঁয়ে যাওয়া সেই অলিখিত কোমল গান্ধার।
এই রাত্রি গোলাপ আর তুমি ছড়িয়ে দিয়েছো নিলাদ্রী আতর
আমি দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেছি 
আমাকে তুমি গোলাপ করো তোমার গোলাপদানির।।






প্রেমের কবিতা

র ঙ্গ ন  রা য় 


প্রতিটি প্রেমিকা আসে, কবিতা উপহার দেয়, তারপর চলে যায়। 
আমি নিজের লেখা সব কবিতা গুলো বারবার পড়ি, অক্ষর হাতড়াই 
খুঁজে দেখি প্রেমিকাদের অস্তিত্বের সুন্দরী গন্ধ 
এসব দিনেই আমি সুস্থ থাকি ভীষণ 
আসলে কেউ সারাজীবন থাকে না বলে 
একা থাকা শিখি, রাস্তায় বেরোই, চায়ের দোকানে চা খাই 
চাওয়ালা জানায়, ওই মেয়েটি তোমায় ঝাড়ি মারছিল এতক্ষণ 
নিজেকে সন্দেহ করি, সেই মেয়েটি কোনও দিন জানবেই না 
এতক্ষণ আমিও তাকেই দেখছিলাম—
প্রতিদিন বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক কীভাবে যেন ঝিমিয়ে আসে 
ভাল লাগে না, জীবন দেখা যায়, উপলব্ধি করা যায় না। 
তবু ফিরে আসি, সাইকেল চেপে ফিরে আসি,
ঝুড়িতে পাউরুটি নিয়ে ফিরে আসি—
রাত বাড়ে, তাকিয়ে থাকি খাতার দিকে 
কে লিখবে কাকে এই প্রশ্ন চিহ্নের মাঝে এসে দাঁড়াই 
প্রশ্নচিহ্নের তলে থাকা কালো বিন্দুটা বুলেটের মতো গেঁথে থাকে বুকে 
পাউরুটির গুঁড়ো মুখে সারিবদ্ধ পিঁপড়েদের সাথে আমিও হাঁটতে থাকি 
সারিবদ্ধভাবে হাঁটি, মিছিলের কথা মনে পড়ে






উড়নচণ্ডী

বী থি কা  ভ ট্টা চা র্য 


এভাবেও কি ঝাঁপিয়ে পড়া যায়? উড়িয়ে দিয়ে ময়লা ধুলো আঁচল?
এভাবেও কি বাঁধন ছেড়া যায়? ধুইয়ে দিয়ে চোখের কালো কাজল? 
এভাবেই কি ভয়াল করাল রূপে, জলদ তোমার রণ চণ্ডিনী নাচ?
বুকের খাঁচায় ঝড়কে বন্দী করে, নৃত্যে তুমি  উড়নচণ্ডী আজ। 
থেকে থেকে গর্জনেতে মেতে, তর্জনেতে শাসিয়ে ফুঁসছো যখন, 
বৃষ্টি ধোঁয়ায় ঢেকেছে চতুর্দিক, চক্ষু থেকে গলিত লাভার ক্ষরণ। 
তোমাকে চেয়েই উতলা বসুন্ধরা, দুই করজোড়ে করে আহ্বান রোজ,
শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিয়েছো তুমি, অগ্নি দহনে মিটিয়েছো আক্রোশ। 
রৌদ্র দগ্ধ অধীর পৃথিবী তবু , চেয়েছিল বারি পেতেছিল করপুট,
নীরদ তুমি নৃত্যের তালে আজ, সিক্ত করেছো, ভিজিয়ে দিয়েছো বুক। 
উদ্ধত তুমি যখন যা খুশি করো, সদর্পে হাসো রণহুঙ্কারে গর্জনে,
আমরা মানুষ পুতুল নাচের তালে, সেদিকেই দুলি, তোমার দিক হেলনে। 
ধ্যান ভগ্ন, রক্ত নয়ন মেলে, এ কোন রূপে এসেছো ঝঞ্ঝাবায়! 
স্বেচ্ছাচারের এ কোন ভঙ্গী তব, সগর্বে হাসো এ কোন ভঙ্গিমায়?
তবুও আমরা তোমাকেই চাই রোজ, নব নব রূপে এসো প্রিয় ধরা মাঝে, 
শস্য শ্যামলা বসুন্ধরার মুখে ফুটুক হাসি, তোমার প্রলয় সাজে।






আলোয় ফিরে

ক বি তা  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য় 


একটা হিম-শীতল ভাবনা প্রায়ই ছুঁয়ে যায় আমাকে, 
চেতনাকে অবশ করে দেয় 
আর আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি
আগামীর অনিশ্চয়তার দিকে...

ভয়ার্ত করে তোলে সে রাত্রে
ঠিক যখন চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে,
কিছু মধুর স্বপ্ন ভীড় করে নামার আগেই আমাকে ঠেলে নিয়ে যায় এক কালো গহ্বরের দিকে,
সেখানে ক্রমশ তলিয়ে যেতে যেতে আমি দু হাত বাড়িয়ে দিই আলোর দিকে...

অতঃপর এক অদৃশ্য টানে গহ্বরের পিচ্ছিল গা বেয়ে উপরে উঠতে থাকি ধীরে ধীরে, 
সেই কঠিন পথের শেষে আমি যেন এক কিশোরী!
শুনতে পাই বহু প্রতীক্ষার আগমনী গান!
সেই গানের আলোয় স্নান সেরে গায়ে মাখি কাশফুলের আদর,
আর মনে মনে দূর্গা হয়ে ছুটন্ত রেলগাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটি, এবং ছুটতেই থাকি...






শরৎ এলেই

ম ধু মি তা  ধ র


‌চারিদিকে ফের পুজো পুজো রোদ্দুর
প্যান্ডেল হবে, পথ জুড়ে রাখা বাঁশ
শরৎ মানেই প্রকৃতিতে আগমনী
চামরের মত আরতি করছে কাশ।

বর্ষা নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে বলে
শরতের মেঘে জ্যোৎস্নার মত সুখ
মায়ের পায়ের নূপুরের রুনুঝুনু
ক্যানভাস জোড়া উপচানো হাসি মুখ।

শরৎ এলেই কাউন্ট ডাউনের শুরু
দিনরাত্রিরা নিয়মের বেড়া ভাঙে
বেহায়ার মত সব কিছু চেয়ে বসি
মায়ের কাছে 'দিল' বড় বেশী 'মাঙ্গে'।

নিকোনো উঠোনে শিউলির আল্পনা
রাত জাগা চোখে স্বপ্নেরা দাবিদার
মহালয়া ভোরে কে যেন নেড়েছে কড়া
কখন কে জানে রাত হয়ে গেছে পার।

খড়মাটি দিয়ে মাকে আমরাই গড়ি
রঙতুলি দিয়ে এঁকে দিই নাক চোখ
তবু নতজানু হয়ে তোরই কাছে ভিখ মাগি
তোর স্নেহরসে ভাসুক মর্ত্যলোক।






আয়নার ঘেরাটোপে

চৈ তা লী  না থ


চলে যেতে চায়...!
মোহাচ্ছন্ন অতৃপ্ত-প্রাণ যেতে চায় ফিরবে না বলেই!
পৃথিবীর সীমা পেরোতে পেরোতে সাথে নিতে চায় স্মৃতি-সম্বলটুকুই! প্রতি মুহূর্তে সে বোধ করে..., এক্ষুনি জন্মেছি এক আনকোরা নতুন পৃথিবীতে... চারিদিকে শুধু আয়না! কিন্তু তার সম্বন্ধে ভাবা বারণ। কারণ ভাবা মানেই না বোঝা, বেঁচে থাকা, শুধু দেখা যেন তার সঙ্গে একমত হওয়ার জন্যই!

সন্দিগ্ধ মনে আকাঙ্ক্ষার নদী পেরোতে গিয়ে আফসোসের চোরাস্রোতে ভাসে বৈকি সে। নির্ধারিত সময় আর সংযত আবেগকে ইচ্ছে করে ভোলার অজুহাতগুলোকে জড়ো করতে গিয়ে রূঢ় বাস্তব যতক্ষণে হাজির হয় তার সামনে, ততক্ষণে অনুভূতিরা তেলকালি মাখা ছোপ ছোপ স্মৃতিছবি রেখে কর্পূরের মতো উবে যায়! তাই ফেলে যাওয়া প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসার স্মরণে বিন্দুমাত্র বিচলিত হবে না আর সে! হয়তো নিরুদ্দেশের যাত্রায় স্বার্থপরও হবে সে! পার্থিব যা কিছু, সে খবর কে রাখলো তা জানার আর অবকাশও রইবে না তার! 

এযে ভীষণ সত্য,, সেই প্রিয়মুখ, আবেগের  মাহেন্দ্রক্ষণ, আবেশের এক ঐশ্বরিক বিভরতায় মুগ্ধ মনের সবটুকুতেই ছিলো তার ঐচ্ছিক আত্মনিবেদন! তাইতো ফেলে যাওয়া আবেগ-অনুভূতিদের পিছুডাক আর থাকবেনা তার জন্য! তা সে জানে। 
তাই, হৃৎস্পন্দন থামিয়ে বায়ুশূন্য ছায়াপথে এগোনোর ব্যাকুলতার মাদকতা তখন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরবে তাকে! এখানে তার কোন দর্শন নেই, শুধু অনুভূতি আছে।
সে যদি নদী বা মেঘের কথা বলে, তা এই জন্যে নয় যে সে তাকে জানে। সে শুধু ভালোবাসে তাকে, শুধু সেই কারণেই। কারণ যারা ভালোবাসে তারা জানে না তারা কী ভালোবাসে, কেন ভালবাসে অথবা ভালোবাসা কী!?!

হয়তো তার মনে সে বিশ্বাস তখনও থাকবে অটুট, মৃত্যু এলেই পূর্ব প্রতিশ্রুতির কাঙ্ক্ষিত জীবনবেলা শুরু হবে তার। জুঁইগন্ধী বাসর ঘরে অপেক্ষার হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে তার চিরকাঙ্ক্ষিত জন, তাদের প্রিয়-সুখঘর সাজাবে বলে!

তবু চারিদিকে আয়নার ঘেরাটোপে কেন চলতে হয় তাকে?
কেন ভাবনা আসে?
কেন রাত্রি জন্ম দেয় তাকে প্রতিটি তারার আভাসে!?!
কেন প্রতিটি জন্মের বোধে মৃত্যু হাসে?
জবাব চায় সে...

কিন্তু হায়...!
প্রাণপ্রতিম ফিরিয়েছে মুখ, বলেছে... 'এতো স্বর্গ, মহাপাপীদের স্বপ্নপূরণের কোনো স্থান নেই এখানে... ফিরে যাও, ওই তামসিক কুণ্ডে... যেখানে নৈমিত্তিক নরকবাসের বিচারসভা বসে! যেখানে পেরোতে হয় অসহ্য যন্ত্রণার কাতরানির পথ, উত্তপ্ত প্রস্রবণ, আগুনের জ্বলন্ত কুণ্ড! যেখানে বীভৎস অশরীর ঘোরাফেরা! যেখানে গেলে আগামী একটা যুগের আগে পুনর্জন্ম নেই!'

নির্দ্বিধায় স্বপ্ননীড় ফেলে যাবে সে!
ছেড়ে যাবার তৃতীয় দিনে নিয়তির নিয়মেই সকলে ভুলবে সেই মহাপাপীর জীবনকথাও!
নরকের অলিগলি কী ভীষণ শুনসান... ঘৃণ্য!!






বন্ধুতা থাক্ সযত্নে পরিপাটি
  
ম ঞ্জি রা  ঘো ষ


উদাসী আবেগে রামধনু রঙ লাগে
বিস্ময়ে কাঁপে দু চোখের নীল তারা
স্খলিত অতীত বেদনায় অবনত
তথাপিও আজ মন যেন দিশেহারা।

যা ছিল অধরা, দূরাগত সঙ্গীতে
যা ছিল সুদূর, স্বপ্নের ছায়ানীড়ে
শুধু ছুঁয়ে থাকা অক্ষর সংলাপে
শুধু বেজে যাওয়া বেদনা মথিত মীড়ে।

কেন যে এমন দুর্দমনীয় স্রোতে
একূল ওকূল ভেসে ভেসে একাকার---
মাঝ দরিয়ায় ডুবু ডুবু সংশয়
তবু ভেসে চলা গতিপথে অনিবার।

মন ছুঁয়ে যায় জল ছলছল ধারা
কখনও কখনও অমাবস্যার কারা,
কখনও সিক্ত ভোরের শিশির কণায়
কখনও আবার শাশ্বত ধ্রুবতারা।

মাঝে মাঝে জাগে, দ্বিধা সংশয়, ভয়
বড় একা লাগে, একাকী আঁধার রাতে
শূন্যতা যেন বড় বেশি ভয়াবহ
তখনই জেনেছি, হাত রেখেছিলে হাতে।

তুমি আছ, তাই তন্দ্রা ঘনায় রাতে
সিঞ্চিত করে শুষ্ক মনের মাটি, 
আসুক প্রলয় আসতে ও পারে খরা---
বন্ধুতা থাক্ সযত্নে পরিপাটি।।






আগমনী

শ ম্পা  মু খা র্জী  কো লে


আসছে পুজো সাজছে আকাশ
হবে মায়ের বোধন,
দশ হাতে মা রক্ষা করবে
অসুর হবে নিধন।

কুমোর পাড়া ব্যস্ত এখন
গড়তে মায়ের মূর্তি,
মন্ডপে মাকে পৌঁছে দিতে
চলছে প্রস্তুতি।

ঢাকিওয়ালা ছেই দিচ্ছে ঢাকে
বাজাবে পূজা মন্ডপে,
সন্ধিক্ষণ পূজা হবে 
একশো আট প্রদীপে।

পুরুত মশাই মন্ত্র পাঠে
করছেন অনুশীলন,
আর নেইকো বেশী দিন
মায়ের মর্ত্যে আগমন।

করিম চাচার ফুলের চাষ
পদ্ম আর শালুক,
রাম রহিমের হাত ধরে মা 
আবার ফিরে আসুক।

বোস কাকীমার আলপনায়
উঠবে সেজে মায়ের বেদী,
বিশুরমা গড়বে শ্রী 
এসো গো সব দেখবে যদি।

বরণ ডালা সাজিয়ে মাকে
এয়োতিরা করবে বরন,
শাঁখ বাজিয়ে উলু দিয়ে
হবে মায়ের বোধন।

দ্বার ঘটেতে পাঁচু খুড়ো
জল ভরে রাখবে,
কুমারী পূজা, নবপত্রিকা স্নান
নিয়ম রীতিতে হবে।

মেয়েরা সব কাটবে ফল
সাজাবে পূজার ডালা,
ও পাড়ার অর্জুনদা আনবে
তীরকাঠি আর কাদার ডেলা।

সবাই এখন ব্যস্ত কাজে
সাজো সাজো রব,
শিউলি, কাশ বলছে দেখো
এলো যে উৎসব।

এই খানেতে সবাই সবার
বড়ই আপনজন,
তোমরাও এসো গো সবাই
রইলো নিমন্ত্রণ।






তবুও সৃষ্টিসুখ
 
সো মা  কো লে 


রোজই নতুন কিছু শব্দের গায়ে আঁকিবুঁকি
কোনোটা সম্পূর্ণ অথবা এলোমেলো।
হয়তো, তারা উচ্চতার চূড়া ছুঁতে পারে না।
মাটির কাছাকাছি তাদের বসবাস।
তেমন করে গুছিয়ে উঠতে পারে না,
কখনও তারা "নামজাদা"র তকমা পায় না।
তবুও সাধ জাগে,
আকাশ ছোঁয়ার...
বার বার তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে এদিক ওদিক
তবুও গুছিয়ে রাখি পরম যত্নে।
হয়তো জুতসই নয়, তাও সারি সারি পঙক্তি সাজাই।

টালমাটাল যাপন যখন,
ওদের ধরি খড়কুটোর মতো
 নিঝুম রাতে নিশ্চুপ তারার মতোই,
লেপ্টে থাকি আমি অক্ষরের গায়ে।
কয়েক হাজার মৃত ঝিনুকের বুক চিরে,
তবে পাই মুক্তো কণার সন্ধান।

কিছু আহত অক্ষর, খুচরো আবেগ,
আর কিছু অব্যক্ত শব্দ।
হয়তো তেমন কিছুই না,
তবুও প্রতিদিন নিয়ম করে উদযাপন।
প্রতিদিন সৃষ্টি সুখের উল্লাস।।






একটা গল্প শোন

সী মা  সা ন্যা ল


তারপর এ অমাবস্যা রাত
ফুরিয়ে গিয়ে, দুগ্গামায়ের তীর
যেইনা এসে অসুরের বুকে
গপ্পো জমে হলো যেন ক্ষীর।।

ও ঠাম্মি, তাপ্পর কি হলো
"পানটা তো খেতে দেরে, ধুর
একে একে হচ্ছে সব নিধন
দাপিয়ে বেড়া গ্রাম শহর অসুর।

কাশবনেতে রূপোর মুকুট আর
শরৎ শিউলির ঘাসে টুপটাপ
ঘরে ঘরে দুগ্গারা সব জেগে
মারছে দেখ ময়াল কেউটে সাপ।

এ মহালয়া আমার মায়ের নামে
দশভুজা স্থিতি সৃষ্টি রূপকার
লাল চন্দনে কপালে তিলক দিয়ে
ভাঙবে এবার অশুদ্ধ সংস্কার।।






সফেদ বলাকা

শ্যা ম ল  কু মা র  মি শ্র 


সারা আকাশ জুড়ে সেদিন ছিল এক টুকরো কালো মেঘ, সফেদ বলাকা ডানা মেলে উড়ে যায়। 
ক্লান্ত অবসন্ন ছিল সে উড়ান,
প্রাণহীন শুধু বয়ে যাওয়া... 

আকাশটা ছিল বা ইউক্রেনের বা রাশিয়ার 
ছোট্ট শিশুটা দুহাত তুলে বলেছিল---
ও পাখি, নিয়ে যাও আমায় 
আমিও তোমার সাথে ডানা মেলে উড়ে যাব 
দূরে বহুদূরে যুদ্ধহীন প্রান্তরে
নীল আকাশের বুকে খেলব 
তোমার সাথে আনন্দের খেলা 
প্রাণের খেলা জীবনের খেলা... 

সফেদ বলাকা সেদিন থমকে চেয়ে মৃদু হেসেছিল 
কালো আকাশের দিকে চেয়ে বলেছিল-- 
হে আকাশ! তুমি নীল কবে হবে? 

আকাশের চোখে জল 
আমি তো নীলই
ওই দেখো ওরা আমার বুকে ধোঁয়ার আস্তরণ তৈরি করেছে
চাপ চাপ কালো ধোঁয়া
বারুদের ধোঁয়া হিংসার নিশান 
আমি নীল থাকতে চেয়েছিলাম 
তোমাদের সনে তোমাদের ভালোবাসা মাঝে... 

ক্লান্ত বলাকা ডানা মেলে ধরে 
উড়ে যায় না-হিংসার দেশে 
একটা নীল আকাশ আর ঘন সবুজের খোঁজে
শিশুটি চিৎকার করে ওঠে 
বলাকা আমায় নিয়ে যেও 
আমি তোমারই অপেক্ষায়...





কেবল ভাবি

ত নু জা  চ ক্র ব র্তী


কারো কারো সকাল হলে
কেউ কেউ ঘুমাতে যায়---
নেবে কেন সকাল তাদের 
অসময়ে ঘুমের দায়!

নিভু নিভু সলতেটাকে 
ঘেঁটে দিলে মশাল জ্বলে---
তা'ও এত অনীহা কেন?
অলসতা চরণ তলে!

বসে পড়ে পংক্তি ভোজে 
বিনা মেঘে বজ্রপাত---
হলে হোক তড়িতাহত 
আগুনের নেই তো জাত।

এতটুকু পেলেই খুশি 
পোয়াতির ন-মাসে সাধ---
কবে আর সেলাম পাবে?
জোছনার নষ্ট চাঁদ!





সবুজ গাঁয়ে

জ য়া  ঘো ষ


গ্রামের পথে পথে কেমন সহজ বিছিয়ে থাকে। 
কেমন মায়াময় মুখগুলো আলগোছে জড়িয়ে ধরে আমায়। ওদের কাছে যাই ভালোবাসা খুঁজি। পথে যেতে যেতে চোখে পড়ে দূরে গগন চাষী ধান বুনছে আপনমনে। মাথায় টোকা, জলে পা, আনমনে সে পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে।

দূরে দূরে বক, মাছরাঙা নদীটির দিকে তাক করে বসে আছে। সবুজে সবুজে ভেসে গেছে চারপাশ। 
আসমুদ্র হিমাচল যেন ওখানেই ছুঁয়ে আছে। শান্ত, নিবিড় এইসব সহজসুখ এইসব মেঠো হাওয়ায়, এইসব বন্যগন্ধে, তোমায় মনে পড়ছে খুব। 

এইসব স্বর্গীয় হয়ে যেত যদি তুমি কাছে থাকতে। আনমনা মন বেখেয়ালে টুকরো টুকরো তোমাকেই ভেবে ফেলে। অপরাধ নিও না। যে আমি আধফালি চাঁদ কখনও চাইনি অথচ সেই আধেক চাঁদের মায়ায় এ জীবন থমকে গেছে। সবুজ সহজ এত সুন্দর...
 তবুও মনে হয় তোমার চেয়ে সুন্দর নয়।






অপেক্ষায়

ক ল্যা ণ  ভ ট্টা চা র্য্য


আকাশের বুকে কালশিটে মেঘ
কবিতার বাসর ঘরে বৃষ্টি নেমে ছিল
নদীর স্রোতে জন্মেছিল সবুজ অক্ষর—
এখন আর কোনো পরিযায়ী কবিতার সময় নয়!

দরজাটা খুলে দাও
অন্ধকার ভাঙছে ভীষণ শব্দে,
আরেকটু পরেই গাছেদের সভায়
ঘোষিত রোদ্দুর, ছায়াদের মুক্ত করে দেবে—
দীর্ঘ দিন হাঁটু মুড়ে ক্ষিদে ঢেকে রেখেছিল
তীব্র শীতের উত্তাপে
অথবা,
আফিমের শব্দে বন্ধ চোখে উপনিবেশের মানচিত্র 
আর বিন্দু ঘামে জমাট রক্ত পিণ্ড 
ক্ষত রা অক্ষত, যুগ যুগান্তর!

ভাগ করা চা-এর ভাঁড়ে 
যে কবিতা শুয়ে আছে, থাক্,
না হয় কোনো এক ক্ষিদেহীন অরণ্যে
শোনাবো প্রজাপতির জন্ম কথা।





পুজোর বাদ্যি বেজেছে

অ র্পি তা  মু খা র্জী  চ ক্র ব র্তী 
 

আমার গায়ে পড়লে কাঠি
আগমনীর সুর,
পেটের টানে ঘরছাড়া মন
বাড়ি অনেক দূর।

বোধন থেকে সব তিথিরা 
আমার তালে তালে,
পুজো নামে সুগন্ধী ফুল 
ফোঁটায় শরত ডালে।

মৃন্ময়ী মা চিন্ময়ী হন
আমার সরব বোলে
প্রাণপ্রতিষ্ঠা, চক্ষুদানে,
আরতি কলরোলে।

'আবার কবে? বছর পরে।'
বিদায় বাদ্যে বাজে,
দর্পণে মা অশ্রুসজল
বিসর্জনের সাজে।

ফিরতি পথে যাই খুশিতে
আপন ঘরের টানে,
কাছছাড়াদের ভরিয়ে দিতে
আসর জমা গানে।





সাজিয়ে রাখা হাসি

সং ঘ মি ত্রা  ভ ট্টা চা র্য


তুমি আমার মুখের ওপর সাজিয়ে  রাখা হাসিটাই দেখলে?
তার ভেতরে কতদিনের বেদনা কে আড়াল করে রেখেছি---
তার কোনো খবরই  রাখনি!
যুক্তির বাঁধনে আবেগ কে ধরে রাখা যায় কি কখনো?
সেই রকম কোনো প্রচেষ্টা ছিল না কোনোদিন।
তবে তোমার কাছে একটা স্বচ্ছ  মন আমি জমা রেখেছিলাম।
কিন্তু তুমি হয়তো অবজ্ঞা করোনি তবু কেমন শীতল উদাসীনতা ছিল তোমার মধ্যে।
তাকে আমি প্রশ্রয় দিতে দিতে একদিন দেখি কাঁটাঝোপ তৈরী হয়েছে।
সেই ঝোপের ভেতর গাঢ় অন্ধকার ভেদ করে তুমি আমাকে সে ভাবে দেখোনি বা দেখতে চাওনি কোনোদিন।
অক্ষরের পরিধিতে তোমাকে বাঁধতে চাইনি কোনোদিন।
তবু কেন যেন তুমি কাব্যে ছন্দে ধরা দাও আমার প্রতিটা মুহূর্তে।
জ্যোৎস্নার মায়াবী আলো কিংবা সবুজ অরণ্যের আবছা কুয়াশা---
যেখানে এখনো লেগে আছে খানিকটা বিষন্নতা।
তার মধ্যেও তোমার স্মিত হাস্যময় মধুরতাকে খুঁজি বার বার।
ঝড় ওঠা পৃথিবীকে দেখি যত বার।
বড়ো চেনা চেনা লাগে।
আমার বুকের ভেতরেও সেই ঝড় উঠেছিল কোনোদিন কোনসময়।
তার ক্ষত তার রেশ এখনো রয়ে গেছে দগদগে ঘা হয়ে।
তাই তুমি আমার মুখের ভেতর সাজিয়ে রাখা হাসিটাই দেখলে।
তার ভেতরে কতদিনের বেদনাকে আমি আড়াল করে রেখেছি!
তার কোনো খবরই রাখোনি আর!





স্মৃতির পাতায়

প্র দী প  কু মা র  দে  নী লু


স্মৃতির মণিকোঠায় আজও অম্লান স্নেহেরপরশ,
ভালোবাসার উষ্ণতা কি করে ভুলে যাই 
কোপাইয়ের তীরে বসে কেটেছে শিহরিত প্রহর।
সাঁওতালি নাচের সাথে তোমার শরীরী উন্মাদনা,
বন্য প্রকৃতির ডাকে আমরাও খোলস ছাড়ি,
একগোছা ফুল জড়িয়ে দিলাম তোমার খোঁপায়।
হলুদ চাদরে জড়ানো উন্মুক্ত চরাচর 
চারিদিক সবুজের সমারোহ, বয়ে যায় নদী
রাতে জানালার শার্সিতে বৃষ্টির ছোঁয়া।
রোমান্টিক মুহূর্ত কাটে বেহিসেবী খেলায়,
তোমার তৃপ্ত ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে মনে হয়
এটুকুই রয়ে যাক শেষ সম্পদ হয়ে হৃদয়ে।






লিখে রাখা সেসব কথা

সু ন ন্দা  চ ক্র ব র্তী


আমি নতুন আর কি লিখছি?
কবিতার ছত্রে 
মেঘ আলো ছায়া,  
ইচ্ছে জীবনের ঝরাপাতা, 
কিছু লোকগাথা,
নৌকা ভাসানোর ধারাপাত, 
শাপভ্রষ্ট চাতকী 
হয়ে জলজ প্রার্থনা।

নতুন কি লিখব সাদা পাতায়?
উদ্ভট স্বপ্নে ঘামে 
ভেজা রাত, 
ছোটি ছোটি বাত,
নিশির ডাক চাঁদের মায়ায়, 
পর্ণসাইটের কামুক আরাধনা। 

নতুন আর কি লেখার থাকে? 
নতুন কুসুম ভোর,
ঝিলগন্ধী রূপকথা,
হিমঝরা চন্দ্রমল্লিকার আধোজাগা কলির 
ধীরে ধীরে ফুটে ওঠা 
আঁধার কেটে, 
পাইনের গায়ে লিখে রাখা 
আঙুলের পরশে প্রিয়জনের নাম,
শ্রমিকের ঝরানো ঘাম,  
আরও নতুন কিছু ভাবনার খাম 
পাতায় পাতায় ছড়ালাম।






নুয়ে আছে বৃন্ত -প্রেম

শু ভ্রা  দা শ  গু প্তা 


অভিমান সে তো এক ছায়াপথ নাম...
মধুবনে হেঁটে যাওয়া অমৃতধাম,
শ্রাবণের ধারা তাই ঝরে অবিরাম...!

ফিরে পাওয়া গোধূলির চেয়ে দেখ সাজ...
অভিযোগ কিছু নেই দোষ গুনে আজ, 
দূর পথে চলে গেছে ভুলে থাকা কাজ! 

প্রেম জানে রাজপথ আর আলপথে হাঁটা...
তুমি দরজাটা খুলেছিলে তবে আজ কেন আঁটা?
পাপরাশি বুক ছুঁয়ে হয়ে গেছি কাঁটা! 

দিন যায় রাত যায় চলে যায় সুখ...
ভালোবাসা দূরে গেলে একা হয় বুক, 
আঁখিপটে ভেসে ওঠে শান্ত সেই মুখ!

ক্লান্ত তুমি অবসন্ন সঁপেছ আমাতে মন...
প্রেম তো কোনও ভিক্ষা নয় শুধুই সমর্পণ, 
শপথের মালা ছাড়া নেই কোনও ধন!

দূরে কোনও নদী দেখ আগুনেতে পোড়ে...
প্রেম ছাড়া বুকে আজ ব্যথা শুধু ঘোরে, 
বাঁশি বাজে বাঁশি বাজে তবু যাও সরে সরে!






সবার যে তাই সায় তায়

র ত ন  পা ল


বিশ্বকর্মা পূজো আসলে কিছুটা সময় ধরে,
হৈ হুল্লোড়ে খুশি যেন মাতায় প্রাণটি ভরে।
উড়াল দেবে উড়বে ঘুড়ি দূরের নীলাকাশে,
বন্ বন্ বন্ মাতাল হাওয়ায় স্বপ্ন কেমন ভাসে।

শরতের কাল রৌদ্র ঘেরা পেঁজা তুলোর মেঘে,
ভেলায় ভাসে আড় চোখেতে শ্রাবণ বেজায় রেগে।
হঠাৎ ওঠে ঈশান কোণে কালো মেঘের ছায়া,
লুকোচুরি খেলা রোদের আলো ছায়ার মায়া।

বাড়ির ছাদে পন্টু, মলি দেখছি ওড়ায় ঘুড়ি,
হাতের টানে টানছে ভীষণ দেখায় জারিজুরি।
দূর আকাশে যেদিক পানেই যতদূর চোখ যায়,
ঘুড়ির মেলায় কত রঙের প্রাণের পরশ তায়।

ছলবলিয়ে দলটি বেঁধে আজকে লড়াই ভারি,
কে আছে কে দেখাও শক্তি পাঞ্জা কষো তারি।
এই কটা দিন যুদ্ধ ভীষণ নাওয়া খাওয়া ভুলে,
দস্যিপনায় মেজাজ চড়ে আওয়াজ উঁচু তুলে।

ভোকাট্টা আর মাঞ্জা শব্দ রক্ত স্রোতের ধারায়,
মুখের কথায় ছোঁ দিয়ে যায় অ্যাড্রিনালিন বাড়ায়।
রঙ্গরসের ইয়ার্কি আর যুদ্ধ জয়ের নেশায়,
অল্প বয়স অলস ভাবেই সবার যে তাই সায় তায়।
সবার যে তাই সায় তায়,
সবার যে তাই সায় তায়।।





মনের অলিগলি

উ প ম ন্যু  মু খা র্জি


আমি এখন অন্য পথে চলি
অন্য কথা বলি।
বিস্তৃত পথ আমার 
হারিয়েছি ছেলেবেলা
হারিয়েছি তার মনের অলিগলি।
একটা সময় ছিল তখন 
শুনতাম রবীন্দ্রময় রেশ,
পড়তাম সুকান্ত নজরুল জীবনানন্দ 
ভালো থাকতাম বেশ,
মনে আছে শরৎচন্দ্র পড়ে জল আসতো চোখে
মন বলতো দেখিনি কতদিন ওকে....
বিভূতিভূষণ মনে নিতাম
অপু হয়ে যেতাম নিজেই
এখন কল্পনার দুর্গা আর আসেনা 
আগের মতো মনে মনে বলি না 
দিদি কতদিন পাইনি আমি তোকে।
কত মণি মুক্ত বোঝাই কাব্য 
এখন করা হয়না পাঠ...
আমি এখন মস্ত বড় মানুষ 
চোখে এখন জল আসেনা পড়ে 
কবি জসীমউদ্দীন নকশী কাঁথার মাঠ।
সত্যিই এই অলিগলি ছেড়ে এসেছি অনেকদিন 
আমি এখন ভালো আছি বেশ,
আকাশ পানে ঝাপসা চোখে ভাবি 
বুঝতে পারি কোথায় আমি শূন্য 
 আর কোথায় আমি শেষ।





সঞ্চার

ব না নী 


ঘুম ভেঙে দেখি, ঘরটা দীর্ঘ টানেল ধরে যেতে যেতে 
উল্টে নিয়েছে রাস্তাঘাট।

যে দরজা একান্ত আমার ছিলো, ক্লান্ত রোদের গায়ে 
শেষ বিকেলের আড়াল টেনে দাঁড়িয়ে ছিলো কুঞ্চনহীন–

ঘুম ভেঙে দেখি তার ঠাঁয়ে দাঁড়িয়ে এখন অতলান্ত খাদ! 

বিছানা বালিশ পড়ে আছে যোজন দূরে। 
তার নিচে তুষ– তারও নিচে, নীল ধোঁয়ার মাঝে 
হারিয়ে ফেলেছি কী যেন— কী যেন! 

সদ্য পালক ছেঁড়া কিশোরী পান্ডুলিপিকা থেকে 
ঝাঁপিয়ে পড়ি আমি রিক্ত হয়ে, ধুলি হয়ে, প্রতিটা
ফিরতিপথে তলাতে থাকি নিথর ইচ্ছেজমির কোলে---

ধীরে ধীরে অস্পষ্ট হতে লাগে একেকটা করতল
যাদের আমি দেখতে চেয়েছিলাম 
যখন নৈঃশব্দ কেঁপেছিলো চোখের কোণায়

তারপর, তারও বহুদিন পর– 

এক মৌসুমী মেঘ চিরে তোলপাড় হলো সব। 
সশব্দে বৃষ্টি হলো এমন, ফুটিফাটা কোল ঠেলে 
দরমা ঘেরা মন্দির জেগে উঠলো বীজপত্রের মতো! 

আমি আনন্দঘট ভরে ডেকে আনলাম শঙ্খ-কাঁসর- ধূপগন্ধদের; 
পিছু পিছু একঝাঁক সন্ধ্যা ঢুকে এলো ঘরের ভিতর।

দিন কোথাও অন্যগোলার্দ্ধ ধরে হেঁটে যাবে এবার,
শীতলতর—






পুজোর খুশি

ব র্ণা লী  মু খা র্জী

নীল চাঁদোয়ার আলপনা এঁকে
শরতের মেঘ দিচ্ছে উঁকি,    
অপু দুর্গা আজও ছোটে 
কাশের বনে লুটোপুটি।

শিউলি ফুলে উঠোন ভরা
 ঘরের মেয়ে ফিরছে বাড়ি, 
ঢাকের কাঠির আনন্দেতে 
মাতাল মন হয় বানভাসি।

উন্নয়নের জোয়ারে
থিমের পূজো দিকে দিকে,
 আটচালা আর পায় না দেখা 
শহরের রাজপথে।

চারদিন বাপের ঘরে 
জমিয়ে মজা করবো সবে, 
গরীব দুঃখীর মুখের হাসি 
এনে দিও মা সব গৃহকোণে।।





শরৎ

অ নি ন্দি তা  না থ 


শরৎ মানে স্নিগ্ধ নরম হাওয়ার স্পর্শে
কিশোরীর লাবণ্যতা

শাপলা, শালুক,কাশ, আর শিউলির সৌরভে 
মনোবীনার তারে সুর ঝঙ্কার
 
দিকে দিকে ছড়ায় আগমনীবার্তা

শরতের মেঘ যেন নীল দরিয়ায় সফেন ঢেউ

সবুজ ফরাস পাতা অবারিত মাঠ
যেন ভোরের শিশিরস্নাত দরাজ মন
টিয়ার পাখায় ওড়া আনন্দগান
দূর্বায় ঝরে মুক্তোর হাসি
অনিন্দ্য সুন্দর ঋতু জুড়ে 
বাউল মন পাগলপারা।





তুমি আসবে বলে

নূ পু র  রা য়  রি ন ঝি ন 


তুমি আসবে বলে আকাশে শরৎ মেঘ করছে আনাগোনা।
তুমি আসবে বলে শাপলা পদ্মের হাসি পুজোর দিন গোনা।
তুমি আসবে বলে পথের ধারে ঘাসের পরে শিশির কণা। 
তুমি আসবে বলে দেরাজ খুলে নতুন জামা দেখে ক'খানা।
তুমি আসবে বলে কমলা পাড়ে শিউলি উঠোনে লুটোপুটি 
তুমি আসবে বলে ভোরের বেলা শিউলি কুড়ানো খুনসুটি। 
তুমি আসবে বলে ছুটছি পথ কোথায় কাশফুলের মেলা
তুমি আসবে বলে ছুটছি পথ খুঁজছি হারানো ছেলেবেলা। 
তুমি আসবে বলে পথের শিশুর মুখে ফুটে টুকরো হাসি।
তুমি আসবে বলে ভাবছে ক'টা দিন তো একটুখানি বাঁচি।
তুমি আসবে বলে মৃন্ময়ী রূপ চিন্ময়ী হয়ে ওঠা অপেক্ষা।
তুমি আসবে বলে খুশির ঝুলি ভরবে কত জনা কি'ভাবে 
তুমি আসবে বলে মানুষ মানুষ হবো পণ করি এ-ভবে।





সাঁঝ

শি খা  না থ


ছাদের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে নীলাভ। সাঁঝের আকাশ দেখা বহু দিনের অভ্যেস। বড়ো উদাস মন আজ। আকাশের চালচিত্রে তেমন মেঘ ভাঙ্গা রশ্মি ছড়িয়ে নেই। আছে এক উদাস করা শান্তি।আলো আছে এখনো। রাত্রির প্রসারতায়, ডুব দেবে খানিক পর। সাঁঝ শেষ হবে, ক্ষীণ আলো বয়ে যেতে যেতে বলে যায় কতো কথা, দূরে দূরে তেতলার ঠাকুর ঘর থেকে শঙ্খ আর ধূপের গন্ধ বাতাস বয়ে আনছে, এক অনুভূতির মুহূর্ত। নীলাভ খোলা ছাদের মাঝে রাখা ইজি-চেয়ারটায় এসে বসে, কত গান মনে পড়ে, গুন গুন করে গায়। সন্ধ্যা তারা মিষ্টি হেসে উঁকি দেয় পশ্চিম আকাশে, হীরের নাকছাবির মতো। চোখের চশমাটা কোলের ওপর রেখে খানিক ভাবে, নীলাভ। ফেলে আসা বছরের স্মৃতি, কতো বিরহ, অপরিণত প্রেম, আর এক নিখাদ পরিপাটি ভালোবাসার সংসার। 

নীচের রাস্তা দিয়ে হেঁকে যায়, ঘটি গরম, ডাকটা শুনেই বিদ্যুতের মতো খেলে যায় খেলার মাঠ। ফুটবলে পা ছুঁয়ে দৌড়ে বেড়ানো মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। কতো বার সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে হাঁটু ছড়েছে। খেলার মাঠ মনে পড়তেই মনে পড়ে বর্ণালীর কথা, বোঝা না বোঝার দূরত্বে দাঁড়িয়ে এক অপলক চাওয়া, কবিতা লেখার হাতে খড়ি। ধীরে ধীরে স্কুলের ক্লাস এগিয়ে চলে, বুঝতে অসুবিধা হয়না, বর্ণালীর দেখা না পাওয়াতে অস্বস্তি। ছোট বয়সের প্রেম, না না ঠিক তা নয়,  খুব কোমল অনুভূতি। বুঝতে পারা হৃদয় নামের বস্তুর এমন এক রাসায়নিক উপকরণ আছে যাতে টান পড়লে মন ভালো থাকেনা। স্কুল ছাড়িয়ে কলেজ, সরে গেলো বর্ণালী, চোখে তখন নতুন স্বপ্ন। কলেজ ইউনিয়নে তখন লাল পতাকার ছাত্র নেতা। গলায় বিপ্লবের গান "পথে এবার নামো সাথী" " উই শ্যাল ওভার
কাম।" সুপুরুষ চেহারা হাসি খুশি  এক অনর্গল কবিতা আউড়ে যাওয়া যুবক, কতো মেয়ের চোরা চাউনি সব যেনো আজ ছবির মতো সামনে এসে পড়েছে। 

ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে, টের পায়নি। নীলিমা চা নিয়ে ছাদে আসে, ঘরের পাশেই লিফট তাই আসতে কোনো অসুবিধা হয়না, ছোট্ট দুটো মোড়া ছাদেই সিঁড়ির কোনায় থাকে। এ সময় রোজই দুজন এক সাথে চা
খায়, আলতো ডেকে তোলে নিলাভকে---

কি গো ঘুমিয়ে পড়লে? শরীর ঠিক আছে তো? চা খেয়ে ঘরে চলো, আজ রবি ফিরছে ব্যাঙ্গালোর থেকে, মনে আছে তো, ওর ফ্লাইট সাতটায়, ন' টার মধ্যে কলকাতা  পৌঁছে যাবে, বাড়ি আসতে আসতে রাত দুটো। আজ
তাই রাতে আনন্দির বাড়িতে থেকে, কাল দুই ভাইবোন
একসাথে আসছে। কতদিন পর ছেলে মেয়ে দুটোকে দেখবো, চলো ঘরে যাই, বেশ অন্ধকার হয়ে আসছে। 

ভাদ্রের মাঝামাঝি একটা গুমোট গরম, মাঝে মাঝে বৃষ্টির
ছিটে থাকলেও, গরমটাই বেশি। নীলাভর দুই ছেলে মেয়ে। দুজনেই কৃতী সন্তান। রবি খড়গপুর আই আই টি থেকে পি.এইচ.ডি করে, এখন ব্যাঙ্গালোরে একটা বড়ো কোম্পানির উচ্চ পদে আছে। মেয়ে আনন্দি, বেথুন কলেজে পড়ায়, একা একটা ফ্ল্যাটে থাকে মাঝে মাঝে নীলাভ ও নীলিমা গিয়ে থাকে ওর কাছে। খুব সুন্দর গান গায়, রবির কবিতা লেখার হাত অসাধারণ। ইতিমধ্যে
বেশ কয়েকটা বই কলকাতা বই মেলায় প্রকাশ পেয়েছে।
ভাবে মনে মনে, এবার ছেলে মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। রবি ছোট থেকে রামকৃষ্ণ মিশনের স্কুলে পড়েছে, তার ভাবনা চিন্তা খুব পরিণত। আনন্দি খুব ছটফটে মিষ্টি, পড়ার জগৎ আর গান এই দুই তার সঙ্গী।
হাতের কাজ নিখুঁত, অসম্ভব গুণী, তার জন্য পাত্র জোগাড় করা খুব কঠিন, তবে ঈশ্বরের মজার খেলা,
ঘড়া দেখে সরা জোগাড় করে রাখেন, সময় মতো সবই ঠিক হবে। 

নীলিমা খুব সংসারী, খুঁটিনাটি সব দিকেই নজর, কলেজে পড়তে পড়তে প্রেমের জালে জড়িয়ে পড়ে দুজন, তারপর বিয়ে, নীলাভ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে বড়ো পোস্টে চাকরি করতো দশ বছর হলো রিটায়ার করেছে, নীলিমা 
স্কুল শিক্ষয়িত্রী, অবসর নিয়েছে বছর পাঁচেক। ছেলে মেয়ে ওদের জন্য সমস্ত আধুনিক ব্যবস্থা করে দিয়েছে ঘরে। দেখাশোনার জন্য মেয়ে আছে, সেই সব করে।

নীলাভ আজ যেনো একটু বেশিই থাকতে চায় ছাদে। সকালে অনেক পুরনো একটা চিঠি পায়, পুরনো বইয়ের মধ্যে, সাল, তারিখ ঝাপসা হয়ে গেছে, কিছু কিছু বয়ানোও পড়া যাচ্ছে না, তবু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পড়ে। মনে
পড়ে কিছু মুখ, অনেক সাঁঝ কেটেছে তাদের সাথে এই
ছাদেই। কবিতারা আসা যাওয়া করতো তখন নির্দ্বিধায়। অলক্ষ্যে প্রেম ও এসেছিলো। সে সব বহুদিন থাকেনা। মোহ মাত্র, দিনের শেষে সেই ঘরে ফেরা। স্বপ্ন ছিলো, সময় সবাইকে সব চাওয়া পূরণ হতে দেয় না। নীলাভরও হয়নি। নীলিমা তার ছেলে মেয়ে সংসার নিয়েই খুশি। 

আজ সেই চিঠিটাই স্মৃতি হয়ে সারা সাঁঝের আলোয় ফিরিয়ে দিলো কিছু ভালোবাসার মুহূর্ত। 

নাহ্ এবার ঘরে যাই, ধীরে ধীরে নেমে এলো নীলাভ। নীলিমা টিভিতে সিরিয়াল দেখছে, সঙ্গে উমা সর্বক্ষণের মেয়েটি, সিরিয়াল নিয়ে কতো আলোচনা। শুনে মনে
মনে হাসে নীলাভ। অনেক দিন পর কবিতার খাতা নিয়ে বসে, সেই মুখ খুব ঝাপসা মনে পড়ে, একটা মায়ের আদল তার নামটাও ঠিক মনে পড়ছেনা, আবার সেই চিঠি বার করে দেখে, নাম কোথাও নেই, যেটুকু পড়তে পারলো তাতে লেখা।

স্নেহের বাবু
 
তোকে ছেড়ে যেতে মন চায় না, তবু যেতে হবে। সময় দেয় যেমন, কেড়েও নেয় তেমনই, 

তার পর আর পড়া যাচ্ছে না, ইতি বলেও কোনো নাম নেই। মনে করতে চেষ্টা করলো কে ডাকতো আমায় বাবু বলে, কিছুতেই মনে পড়লো না। মনটা খুঁজতে থাকলো। সকলের কথা সাঁঝ মনে করালেও, কিন্তু ইনি..? কাল ছেলে মেয়েরা আসছে, মনটা বেশ ভালো লাগছে। চিঠিটা দুমড়ে মুচড়ে ডাস্ট বিনে ফেলে দিলো নীলাভ। হবে হয়তো কেউ, কতো জনের সাথেই তো পরিচয় ছিল।
তেমনই বোধ হয়। 

সাঁঝ এখন অন্ধকারে তলিয়ে গেছে, স্মৃতিরা ফেরৎ গেছে
নিজের ঘরে, জীবনের গল্পগুলো থাকে এমনই, স্মৃতির দরজা ছুঁয়ে। কাউকে মনে পড়ে কাউকে পড়েনা।





চাতক

নি র্মা ল্য  ঘো ষ 


আমি হৃদয়ের কারবারি।
ঘি খাওয়া প্রদীপ জ্বালিয়ে 
প্রতীক্ষায় থাকি প্রতি রাত 
ভালোবাসার।
ভালোবাসা না পেতে পেতে 
ভুলেই গিয়েছিলাম 
ভালোবাসা বলে কিছু আছে।
ভালোবাসা না পেতে পেতে 
একদম পাগল।
আসলে,
আমার আত্মায়...
তোমার ভালোবাসার দাগ লেগে আছে এখনো।
তাই 
মুছে ফেলতে পারি নি আজও।
এখনও চাতক পাখি হয়ে থাকি 
তোমার ঐ একটু 
ভালোবাসার জন্য।
রাত দিন।





বেঁচে থাকা

টু লা  স র কা র 


ভালো লাগা বদলে যায় সময়ের সাথে।
যে কোনো উৎসবে উচ্ছ্বাস ফেটে পড়তো।
এখন উৎসব দুঃখ জাগিয়ে তোলে।
পূজা-পার্বনে কত আয়োজন। 
নীরবে কাটাতে চাই ওই দিনক্ষণ। 
পূজো মানেই কোলকাতার কোলাহল। 
হৈচৈ  আনন্দে মেতে ওঠা।
নতুন পোশাক নিয়ে ভাবনা বছর ধরে।
পোশাক আজও কিনি আজও পরি।
সেই খুশির অনুভূতি হারিয়ে গেছে।
হাসি, বেড়াই বন্ধুদের সাথে গল্প করি।
তবু দিনের শেষে কি যেনো নেই।
বড় একা লাগে বড় ফাঁকা লাগে।
মহালয়ায় পিকনিক হতো রাত জেগে
আজ মহালয়ায় কান রাখি চেপে।
ঢাকের আওয়াজে খুশিতে হতো আন্দোলিত মন,
আজ ঢাকের আওয়াজে কান্নায় গুমরে মন।
যে পূজোর জন্য থাকতো সারাবছরের অপেক্ষা 
আজ মনে হয়, পূজো না আসলেই হতো ভালো।
সবার মাঝেও একাকী মননে 
অনিদ্রায় স্বপ্নহীন শয়নে।
তবু্ও বাঁচি নিজেকে ঠকাই
হেসে, অভিনয়ে জীবন বাঁচাই।





সেই মেয়েটির দশ`টা বছর

সৌ মে ন  দ ত্ত 


আজ তুমুল মেঘ ভাঙা বৃষ্টি নামুক,
বুকের ভিতরের যে জমা নিকষ কালো 
অন্ধকারের বারান্দা সেখানে ফুল যেন আর না ফোটে,
কুঁকড়ে কাঁদুক কুঁড়িগুলো,
শিকড় উপড়ে যাক মহা তান্ডবের প্রলয় শিখায়।
দশ বছর আগের সেই বানভাসি সন্ধ্যা
বেলঘরিয়া ৪ং প্ল্যাটফর্ম, সরগরম চা আড্ডা,
সোশ্যাল মিডিয়া তখনও কর্কটে পরিণত হয় নি,
কাগজের পাতায় হেড়লাইনস  "কামদুনি " 
দুরন্ত ট্রেনের সাথে পাল্লা দিয়ে মোমবাতির আর্তনাদ, সমাজের 
সব আলো দুরমুশে পিষে দিয়েছিলো নিমিষেই।
ঘরে ফিরে ছায়াপথ ধরে চলে আসে ঘরের স্মৃতি, 
রোদ স্নান সেরে অন্ধকার মেখে গেলা,
চেনা মৃত্যুকে দেখে আগুনের খিদে পায় না আর। 
লাল বাতি নিভে গেলে গ্রীন সিগন্যাল, ওরা বোঝে
ওরাও শিখে গেছে লুকোচুরি, 
মুখবন্ধ খামের সাবওয়েতে সাঁতার,
কুয়াশার ভোরে ক্লান্ত শরতের গৌরীরা।
সমাজের গায়ে অ্যাসিড বৃষ্টি। 
ঘরে ফেরার ডাক আসে না।
দশভুজা যেন আজ দশাননের গলা চিরে আলো।

বুকের মধ্যে আগুন দেখেছি মুঠো মুঠো,
যতবার সেই আগুনে হাত রেখেছি
জ্বলে উঠেছে স্বপ্নগুলো,
প্রসন্ন আলোয় সেগুলোকে আগলে রেখেছি নীরবতায়, নির্দ্ধিধায়, নিঃসংকোচে।
নদীর জলে হাত ধুয়ে দেখি নেই, কিছু নেই, কিছু থাকার কথা ছিলো
মুষ্টিবদ্ধ হয়ে, নেই তা নেই, কিছু নেই।
সময়ের দিকে কিছু ছোঁড়া অভ্যেসে নেই,
কাঁপন ধরা ঝাউগাছের পাতায় শীত ঝড়ের স্তব্ধতা, 
হে মহারাজাধিরাজ তোমায় দেখাবো অন্ধকারে আগুনের উদ্ভাবন, 
আমার পৃথিবীর রোদ্দুর মাখা কৌতুহলী  সকাল,
তুমি চাইলেও সেই ঝড় বৃষ্টিতে উষ্ণতা দিতে পারবে না।

ভয়াল পথের স্তুতির অগ্নি স্তুপ,
তুমি চোখ মেলাতে পারবে না সেই শিশুর তীক্ষ্ণ উচ্চারণে,
আলোহীন বেঁচে আছে যারা, শিকড়ে তাদের কলুষ আঁধারে জোয়ার,
মুঠো মুঠো আকাঙ্ক্ষার আলোকসজ্জা তোমাদের জন্য নিবেদিত।





শিউলি

ত ন্দ্রা  ম ন্ড ল


আগমনীর বার্তা নিয়ে
স্বর্গকানন থেকে
সুরভিত শিউলি এলো
খুশীর দ্যুতি এঁকে।
আবেগ ভরে লুটিয়ে পড়ে
ভোরের অরুণ ছোঁয়ায়
প্রেমোত্তাপের স্পর্শে
আপন হৃদয়খানি খোয়ায়।
ছোট্ট সে তার কোমল তনু
সবার নজর কাড়ে
দিকে দিকে সুবাস ছড়ায়
নীরব অহংকারে।
গ্রামবাংলার উঠোন জুড়ে
শিউলি দেয় আলপনা
শারদীয়ার শুভক্ষণের
প্রহর গোনে কল্পনা।
আলোর বেণু বাজিয়ে শরৎ
শিউলিতলায় হাসে
আগমনীর সুরের দোলায়
বঙ্গহৃদয় ভাসে।।





ঋতুমতী ধরিত্রী

শা ন্তা ল তা  বি শ ই  সা হা


ক্লান্ত শরীরে গা এলিয়ে দিই খোলা ছাদে।
মাথার উপর অঞ্জনঘন মেঘ,
ওরা আপন খেয়ালে ভেসে চলেছে না জানি কোন অচিনপুরে।
দেখছি দু'চোখ ভরে
মেঘের বুকে চাঁদের লুকোচুরি খেলা...
"মন মোর মেঘের সঙ্গী"।
কাল সারারাত বড্ড গুমোট ছিল,
কাঠফাটা রোদে আধপোড়া ঘাসেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে,
মাঠ যেন ফুটো গালিচা।
আজ আষাঢ়স‍্য প্রথম দিবস।
ওগো মেঘবালিকা, আমার মন যে প্রিয়া বিরহে বড় উতলা,
তুমি আমার দ‍ূত হবে?
বন্ধু হবে আমার?
কত দেশ দেশান্তরে নিত‍্য তোমার আনাগোনা! 
ওগো বন্ধু, তুমি তো জড় নও,
যাও, যাও মেঘ উড়ে যাও,
বলো তারে, আমি ভালো আছি।
কখন যেন নিজের অজান্তেই ভেসে চলেছি মেঘের ভেলায়
দূর হতে দূরে বহুদূরে,
আমার স্বপ্নলোকে।
দেখছি চেরাপুঞ্জির বুকে ঝিরঝির বৃষ্টির অপরূপ শোভা।
ওগো "কুচবরণ কন‍্যা তোমার মেঘবরণ চুল"।
চোখের পাতায় কয়েক ফোঁটা জল,
ক্রমে অজস্র জলবিন্দু চুল বেয়ে দু'কপোল বেয়ে ঠোঁট চিবুক বেয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে আমায়। 
সম্বিত ফিরে পেলাম,
মেঘবালিকা যেন চঞ্চলা হরিণী,
ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে ভিজছে শরীর ভিজছে মন ভিজছে ধরা,
ঋতুমতী হচ্ছে ধরিত্রী...
হাসছে খেলছে নতুন রূপে নতুন ছন্দে।
যুথি মল্লিকার সুবাসে সরস অরণ‍্যাণী এখন আলাপনে মত্ত,
পৃথিবীর গর্ভকেশরে জাগছে প্রাণের অঙ্কুর...
তারই ফাঁকে দিনমনির লুকোচুরি খেলা। 
ঊষার পূর্বরাগে মন্দ্রিত হচ্ছে শুভ শঙ্খধ্বনী,
দূর হতে ভেসে আসে ভৈরবী সুরের ঐক‍তান।।





বীতরাগ

মৌ মি তা  চ্যা টা র্জী


শব্দেরা আজ মিথ্যে পথের বাঁকে,
ভুলেছে নিজের অস্তিত্বের কথা,
জীবন লিখছে গল্প বীতরাগের,
ক্ষয়িষ্ণু মনে, জড়ানো অজানা ব্যাথা।

ছন্দের ঘর আজ যেন এলোমেলো,
ভাঙা বর্ণের অগোছালো অভিধানে,
ছেড়ে গেছে ভাষা কবিতার বন্দর,
বৃষ্টি ঝরে না, মেঘভাঙা অভিমানে।

ক্ষত ঢেকে দেয় মায়াহীন বাস্তব,
নতজানু হয় আবেগের দরবার,
শেষ হয় কিছু অতীত-সংলাপ,
পরে থাকে শোক, কিবা আসে যায় কার?।





শূন্যতার আবাহন

সু ব্র ত  ন ন্দী 


কষ্টের আঙিনায় বেঁধে রাখো কেন?
সুরতাল কথাকলি ডুবে গেছে কবেই, 
মনকথা আলপনা আঁকে আঁধারিতে, 
নির্বাক শ্রোতা হয়ে গেছে মন আগেই।

সৃষ্টির সূচনাতে অনির্বাণ আলো!
বৃষ্টির ধারাপাতে ধুয়ে গেছে ঘর,
দেখব না আর ফিরে অভিমানী রঙ,
বহুদিন থেমে গেছে উত্তপ্ত ঝড়।

তবু কিছু কথা জেগে থাকে নিজ দেশে,
শূন্য মন সুনামীর ঢেউ তোলে প্রাণে,
স্বপ্নেরা জেগে থাকে নিজ সুখাগারে
আঁধারিতে শূন্যতার আবাহন মনে।






প্রাক্তন ছাত্রী

অ ন্ন পূ র্ণা  দা স


তোমাকে দেখার পর সারাক্ষণ একটা ঘোরে... 
ঢং ঢং ঘন্টার শব্দ, খেলার মাঠ, ক্লাসরুম 
স্মৃতিতে বারেবারে ফিরে আসে। এই বুঝি ইংরেজি ক্লাস হবে! 
আবার মনে হয় ভূগোল, 
কখনো আবার অপেক্ষা প্রিয় দিদিকে দেখার
বিজ্ঞানে ভীষণ ভয় 
কিন্তু দিদিকে খুবই ভালোবাসি
এক এক সময় ভাবি কি করে এতো পড়া মনে রাখে? 
আমার তো সব গুলিয়ে যায়। 
একটুও ভালো লাগে না পড়াশোনা
তবে গল্প বা ইতিহাস শুনতে বেশ ভালো লাগে
এক এক সময় ভাবি দিদি যদি ইতিহাস পড়াতো
অথবা বাংলা, তবে বোধহয় কিছু উত্তর দিতে পারতাম। 
তা না বিজ্ঞান, বিশেষ জ্ঞান
এ যে বড়ই কঠিন, কি করে পারি! 
আমার বোধহয় তার প্রিয় ছাত্রী হওয়া হবে না
আফসোস থাকবে সারাজীবন, 
তবে স্কুল তোমাকে আমি বড়ই ভালবাসি, 
রোজ কত মেয়ে আসে শিক্ষা নিতে, 
সেই পরিচিত পোশাক পরিধানে
তারাও বড় হয় তোমারই ছত্রছায়ায়,
নিজেকে নিয়োজিত করে কল্যাণপূত কর্মে---
আগামীতে সমাজকে সুন্দরভাবে নির্মাণকল্পে...






বাবা-মা
 
চা য় না  ম ন্ড ল 


তোমাদের খুব ভালোবাসি আমি
তোমরাও আমাকে ভালোবাসো সেতো আমি জানি বাবা-মা,
আগে তো আমরা সকলে
একসঙ্গে ভালোই ছিলাম।
ছিল আমাদের ছোট একটা ঘর
হলোই বা তা কুঁড়েঘর 
তখন ছিল আমাদের সোনার সংসার,
আমাকে বাইরের স্কুলে রেখে
তোমরা আলাদা হয়ে গেলে
তাতে কি তোমরা সত্যিই সুখী হলে।
আমার আর ভালো লাগেনা
আমি পড়াশোনা করতে পারছি না, আমার পড়ায় মন বসছে না
 আমি চাই আগের মত একসঙ্গে থাকতে। 
ঠাকুমা-ঠাকুবাবা, দাদু-দিদা, মাসি পিসিদের ঘরে যাব বেড়াতে।
আমার এভাবে একা একা
বাঁচতে ইচ্ছে হয় না
ডিভোর্সি বাবা মায়ের সন্তান
তাই কেউ কথা বলে না আমার সঙ্গে, তোমরাই বলো বাবা-মা
আমার কি দোষ
যদি সত্যিই তোমরা আমাকে ভালোবাসো,
তবে নিয়ে চলো বাড়িতে
থাকবো সবাই একসাথে। 
চাইনা টাকা, বড় বাড়ি, দামি গাড়ি
চাই একটা কুঁড়ে ঘর
আর সোনার সংসার
এখান থেকে নিয়ে যাও বাবা মা আমায় বাড়িতে 
আগের মত আবার থাকবো সবাই একসাথে।






রাতের অশ্রু

ই লা  সূ ত্র ধ র


তুমি আমার ছিলে না কখনো
আমিও তো তাই-
খুঁজেছি নিজেকে

ঠাঁ ঠাঁ দুপুরে 
ক্লান্তির শূন্য প্লাটফর্ম 
দাবানলের দাবদাহে ভাসছে অসহায়
উতপ্ত বাতাসে চাতক পোড়া গন্ধ মাখে

যেটুকু আবিষ্কার করেছি যাপন
সময়ের স্রোতে রোজ পাল্টায় পটভূমি 
মুছে যায় অনাহুত প্রেম

এখন গভীর নিস্পলক সুখে
অপেক্ষায় থাকি
রাতের অশ্রু কখন ঝর্না হয়ে ঝরে





শান

দে বা ঞ্জ লি  সে ন


সেই এলে তুমি- অবশেষে। 
পূর্নিমার চাঁদ যখন তার, পূর্ণাঙ্গতা -একটু একটু কমিয়ে, একফালি  রূপ নেয়,
          তখন।

জানি, একফালি কাস্তের ধারও, অনেক। 
তফাৎ শুধু, আমায়-
শান দিতে হয় নি।





তরী হবো আজ

রূ পা লী  মু খা র্জি


অনেক দিন পর আকাশ দেখলাম
রাত সরিয়ে ভোর হবার আগে,
ফাঁকা রাস্তার সাথে কথা বলছে
নিবিড় হেসে হেসে,
ইচ্ছে করছিল একবার নদীর কাছে যাই 
পাল তুলে দি ঢেউয়ের ঘর ভেঙে ভেঙে,
জানি কুয়াশা এসময় স্নান সারে
দুব্বো ঘাসে জামাকাপড় জমা রেখে,
তাল গাছকে বলেছে পিছন ফিরে বসতে
অথচ রোদ চাইছিল প্রাণভরে
ক্যানভাসে পিপাসা এঁকে,
সরোজ বাজিয়েছিল 
বিলায়েৎ খাঁ
চোখ মুছে।





আমি তো বেশ থাকি

স ঙ্গী তা  মু খা র্জী  ম ণ্ড ল 


তুমি যে সময়গুলোয় তোমাকে সাজিয়ে রাখো
আমি তখন নিরুপায় অপেক্ষায় বসি হা পিত্যেশ করি 
এমন কথা যদি ভাবো, তবে ভুল ভাবো!
প্রেসক্রিপসন থেকে একটা একটা করে দুঃখ এস ও এস করে দিয়েছি কবেই
বেঁচে থাকাটা আমার অস্তিত্ব; নিজের থেকে নিজেকে গুছিয়ে তোলায়
কোনো নমুনা নেই। 
নিজেই পৃথিবীতে এতো শোকের
মাঝে এক চিলতে উম্মিদ হয়ে থেকে গেলে,
ঢোক গিলতে কষ্ট কম হয়
আমি তো বেশ থাকি 
পাখি সংলাপে






সময় ফুরিয়ে গেলে

তী র্থ ঙ্ক র  সু মি ত


সময় ফুরিয়ে গেলে
ঘড়ির বিবর্তন ঘটে
অসমপিকা ক্রিয়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে
নিদারুন স্পষ্টে অক্ষরের শিলালিপি লেখে
বৃদ্ধ বনসাই যৌবন হারিয়ে
রোদ মরিচের বাগানে
একাকী অপেক্ষারত
না জানি কত ব্যর্থতা ক্রমশঃ মুছে যেতে যেতে
একদিন বৃষ্টি হয়ে ঝরবে খরা মাটিতে
তুমি শব্দের কেমন যেন একটা পরিবর্তন ঘটবে

আর ঘড়ির কাঁটা স্থির হয়ে
নিজেকে মেলে ধরবে কোনো কালবৈশাখীর বুকে।






জীবন আর গল্পের কথা
  
স ঞ্জ য়  কু মা র  ক র্ম কা র


নিষ্পলক চোখে অসমাপ্ত সব 
রঙিন স্বপ্ন ছিলো,
চোখের রঞ্জন রশ্মিটাও এখন 
নিশ্ছিদ্র নিবিড়।

ব্যয়বহুল জীবনের ভাগ্যটাও 
বেশ নির্ণীত হয়েছে আজ...

বেঁচে থাকাটাও ভীষণ দুর্বিষহ হয়ে ওঠে,

নীল রঙা চিঠি, 
একদৃষ্টিতে চোখে চোখ রেখে  নিশ্চুপ 
একটা হতাশা,

বিমূর্ত বৃষ্টির উল্লাসে 
অর্ধেক আকাশটা শুধু খুশিতে 
উদ্বেল হয়ে রয়েছে।

মাখা কুঞ্জপথে অজস্র প্রপাত
অদৃশ্য তুলির আঁঁচড়ে বর্ষা যখন ভেসে আসে...

ভেজা বৃষ্টির জলস্ফীতি
চোখে নতুন চাহনি,
জল ছুঁই ছুঁই সারাক্ষণে 
যে বৃষ্টি তোমায় স্পর্শ করে গেছে...

মাখা বৃষ্টির জলের বিচিত্র রঙ,
থেমে যাওয়া জীবনের কলরব 
এভাবেই আকুল হয়ে ওঠে।

শোভিত ফানুসের আলোকাবরণ, 
তপ্ত ধোঁয়ায় আকাশ জুড়ে এক
 নিমেষে উধাও হয়ে যায়।

জীবন আর গল্পের কথা,
ছন্দে ছন্দে গানের স্লোগান 
নির্মিত নতুন পথে অঝোরে বৃষ্টি
ঝরে গেছে।

সম্পন্ন শব্দের সাথে প্রত্যয়ের
মিলন,
থমকে থাকা স্তব্ধ ঘাট
রক্ত মাখা যন্ত্রণার বিষাদ...

অবিরল সব মনের লেখায় 
বিস্তৃত ভাবে চেয়ে থাকে।।






ফিনিক ফোটা জোছনা

সর্বগ্রাসী পিতা

সু জ ন  প ণ্ডা

চাঁদ কে ভালবেসে কবিতা সবাই লিখেছি দু এক লাইন। রাতের পর রাত ভেসে গিয়েছি জোছনায়। মায়ায়।
চাঁদের আলো মায়া বই তো নয়।

যে যুবকের কথা আজ বলবো, তার নাম বেশ মনে করতে পারি। কিন্তু বলতে ইচ্ছে করছে না। নামের প্রয়োজনও নেই বিশেষ।

বছরের প্রতিটি চাঁদের হিসেব তার আঙুলে। শুক্ল পক্ষ আর কৃষ্ণ পক্ষের নির্ভুল গণনা থাকতো তার। আর পূর্ণিমা নিয়ে সে কি উন্মাদনা। বাবা আর ছেলের ছোট্ট সংসারে তৃতীয় সদস্য যেন ছোট্ট ওই স্ফটিক গোলকটি। মা শিখিয়ে ছিল তাকে চাঁদের সাথে গল্প করতে। নিজের সুখ দুঃখ ভাগ করে নিতে।
মা চলে যাওয়ার পরেও তাই...

প্রতি পূর্ণিমায় নতুন নতুন ভাবে চাঁদকে খোঁজার চেষ্টা। কখনো সাইকেল নিয়ে মাঠের পর মাঠ পেরিয়ে চলে গেছে এলাকার সবচেয়ে উঁচু টিলার মাথায়। কখনো শাল বন কাজুবাদামের বনে। কখনও আমরা কেউ সাথে গেছি, কখনো সে একাই। আমাদের ভালোবাসা পিছুটানে বাঁধা পড়েছে, তার কখনো ফাঁকি হয়নি।
মধ্যরাতের নদীতে একা নৌকা বেয়ে ছুঁতে চেয়েছে জ্যোৎস্না। লোকে বলেছে পাগল আমরা বুঝেছি প্রেমিক।


সে বছর চৈত্রের শেষ থেকে গরম পড়েছে ভীষন। বৈশাখের বিকেল গুলি কেটেছে শান্ত নির্ঝঞ্ঝাট।ক্লান্ত প্রকৃতি।

যুবক বলেছিলো পূর্ণিমার রাত্রে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামবে। 
জিজ্ঞেস করলাম কি করে জানলে?
হেসে বলেছিল হবে, দেখে নিও। আমাকে স্নান করতে হবে যে।

পূর্ণিমার সেই রাতে আকাশে ফুটো হয়ে গেছিল বোধ হয়। সারারাত বৃষ্টি ভিজে যুবকটির জ্বর হয়। সাথে তীব্র মাথা যন্ত্রণা।

দু দিন পর ডাক্তার কি সন্দেহ করে বললেন, মাথার কয়েকটা পরীক্ষা করতে হবে। ফলাফল এলো, মাথায় বহুদিন বাসা বেঁধেছে টিউমার। বহুদিন ধরে একটু একটু করে ঘর বানাতে বানাতে এখন সে স্থায়ী হয়েছে। তাকে আর নাড়ানো যাবে না। বৈশাখ শেষের সেই পূর্ণিমা ভেতরে লুকোনো এই সত্যি খুঁড়ে এনেছে যুবকের জন্য।

তারপর আর মাত্র দুটি পূর্ণ চাঁদ... অসুখের খবর বোধ হয় অসুখটিও জানতো না, যেদিন খবর পেলো সেদিনই নিজের ক্ষমতায় গ্রাস করতে লাগলো যুবককে। বর্ষার শুরুতে যুবকটি মারা যায়।

একা এক পিতার খবর আমরা কেউই নিই না।

কার্তিকের এক পূর্ণিমায় সেই বৃদ্ধকে দেখি আবার। রাজপথে দাঁড়িয়ে বিরাট হাঁ করে চেয়ে আছে পূর্ণ চন্দ্রের দিকে।
তার ছেলেকে খেয়েছে ওই চাঁদ, তিনি গুঁড়ো গুঁড়ো জ্যোৎস্না খেয়ে একদিন শেষ করে ফেলবেন ওই চাঁদের আস্ফালন। তাঁর তীব্র হাঁ থেকে পিতার দীর্ঘশ্বাস উঠে আসছে।






ধর্ষক

অ মি তা ভ  দে


কামোৎপিড়িত 
তুমি বেসামাল মানব,
তুমি নর, তুমি অযাচিত
উপসংহারে দানব।
তুমি যৌন দাস,
তুমি কোমলের অবক্ষয়,
হিত রহিত কামনার আশ।

তুমি বিনষ্ট উদ্দাম,
তুমি কলঙ্ক পৌরুষ...
স্বেচ্ছাচারের শ্রেষ্ঠ উপমা
নির্বোধ এক ফানুস।
রক্ত বসন কাপালিক তুমি
নারী বুভুক্ষু মণীশ,
তুমি অপৌরুষের দাবানল
ঘৃণিত এক পুরুষ।

তুমি আরণ্যক, তুমি নাগরিক,
একাধারে তুমি পাশবিক,
তুমি অযুক্তি অনাচার
তুমি অন্যায় আকরিক।।





ভোঁ-কাট্টা ভোঁ-কাট্টা

শৈ লে ন্দ্র  না থ  চ ক্র ব র্তী


এক পাল ছেলে। ঘুড়ির খেল।  ভোঁ-কাট্টা...।
ছুট ছুট ছুট...! অ্যাই তোরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি
দেখছিস? কাটা ঘুড়িটা কতদূর যাবে স্যাটাস্যাট
ভেবে নে। ওটা ধরতে হবে। তাই ছুটতে হবে। ছুটে
ছুটে বেদম হলে চলবে না, দাঁড়িয়ে পড়লেও চলবে না।
স্থিতি নেই অবস্থিতি আছে। অঙ্গীকার আছে, আছে
অস্বীকারও। অধিকারটা বাদ। নানা রঙের নানা
ধরণের ঘুড়ি মাঞ্জা দেওয়া সুতোয় বাঁধা। সাঁই সাঁই
বাতাস- পৎ পৎ করে ওড়া।  উড়তে উড়তে লড়া,
ভোঁ-কাট্টা ভোঁ-কাট্টাতে শেষ। কক্ষনো না।
ছিন্ন সুতোয় বাঁধা কাটা ঘুড়ি ধরতে কতো দৌড়াদৌড়ি!
মানুষ ঘুড়ি হয়, মাঞ্জা দিয়ে বাজারে ছাড়া হয়।
সমাজবিরোধী করার জন্য লড়াই,
সমাজবিরোধী হবার জন্য লড়াই। জান কবুল।
যে পারে না সে ফুটুর--- ভোঁ-কাট্টা।
ঘুড়ি প্রচুর, লাটাই প্রচুর--- প্রাচুর্যের একশেষ।
না ওটা প্রাচুর্যের ছদ্মবেশ। লাটাই একটাই।
ধারণকারী অত্যাচারী শাসক সমাজ, বলার
অপেক্ষা কোথা? বাকিরা সব ভোঁ-কাট্টা ভোঁ-কাট্টা।





শুরুতে শূন্য

ম ধু মি তা  ঘো ষ


শূন্যের সীমান্তে গভীর এক চোরাবালি।
বহুদিনের জমা জলে সারাজীবনের শোক অসুখটা-
ভ্রান্তিবিলাসের আয়না ধরে দাঁড়িয়ে আছে পরিত্যক্ত এক দ্বীপে।
ধরাছোঁয়ার বাইরে প্রশস্তির উপপাদ্য।
হিরণ্ময় আলোর সন্তান আমি...
বাঁচার আঁশটে গন্ধটা বয়ে বেড়াই নাভীর উৎস ফুলে।
মায়ামাখা ব্যথাসুখগুলো কানে কানে বলে-
মনখাতার ভিতর খোলা পড়ে আছে ভালোবাসার আখর।
শুধু নিঃশব্দে অন্তঃসলিলা হয়ে লিখে যাচ্ছি নিজের প্রায়শ্চিত্তনামা।।





কাল্পনিক

প্র ণ ব  কু মা র  ব সু 


স্বপ্নে গড়া মিথ্যে ছড়া পড়িস কেন রাত্তিরে
আসবে সুদিন কষ্ট কদিন মৃত্যু পথযাত্রীরে-
সূক্ষ্ম কলা শুকনো গলা দিনরাত্রির সব‌ই এক
চোখটা তুলে ব্যথাটা ভুলে জানলা দিয়ে তাকিয়ে দ্যাখ-
গন্ধ নানান ভুলেছি বানান লিখছি কী যে যাচ্ছেতাই
সকাল সন্ধ্যে চোখটা বন্ধে আরাম কেমন পাচ্ছে ভাই-
সর্ষেতে ভূত আসে যমদূত দিয়েছে রেগে ভীষণ গাল
যাওনা ফিরে আপন নীড়ে দেখা হবেই আগামীকাল।






শুরুয়াৎ

দী প ঙ্ক র  স র কা র


গল্পের শেষটুকু শুরু হতেই দু'চোখ বেয়ে গড়িয়ে
পড়ল জল। এইসব নাট্যদৃশ্যের আয়োজন বোঝে
না ব্যথিত হৃদয়।

আকাশে বাতাসে কান্নার সুর শোকের আবহে বিমূঢ়
বনাঞ্চল। রৌদ্র ছায়ায় উড়ুক্কু সাপেদের ঝাঁঝালো
হলাহল।

কোথায় স্বস্তির শ্বাস হিমালয় থেকে আসমুদ্র
অরুণাচল, এতটুকু স্থিতিস্থাপকতা নেই নিশ্চিত
বসবাস।

অথচ এমন কথা ছিল না বেহাগের তানে হেসে
উঠবে খল খল এই জনপদ, প্রাক স্বাধীনতায়
স্বপ্ন এমনই ছিল এদেশ হবে আনন্দ নিকেতন।

স্বপ্ন ভঙ্গের আগে ফিরিয়ে দিতে হবে আজন্ম লালিত
বিশ্বাস, গল্পের শুরুটুকু শেষ হতেই লিখে ফেলি শেষের শুরুয়াৎ।






চাই সেই বিদ্যাসাগর

শু ভ্র  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়


যাঁর হয় না কোনো পরিচয়
মোদের শুরু তো সেই বর্ণ পরিচয়
যাঁর জ্ঞানের আলোয় আলোকিত শিক্ষা
তাঁর কাছেই মোদের প্রথম দীক্ষা।।

এখন যে বয়সে নারীরা হেসে খেলে বেড়ায়
সেই সময় নারীরা মরত জ্বলন্ত চিতায়,
এই কুসংস্কারকে ভাঙতে তিনিই প্রথম এলেন এগিয়ে
নিজের পুত্রের সাথে বিধবার বিয়ে দিয়ে।।

তিনি শুধু বিদ্যার সাগর নন,
তিনি শুধু দয়ার সাগর নন,
তিনি যে ছিলেন একজন মহান মানুষ 
তিনিই তো প্রকৃত বীর পুরুষ।।

বাঙালির ঘরে ঘরে আজ পুজিত নানা ধর্মের নানা ঈশ্বর 
যিনি মানবতার পুজারী সেই বিদ্যাসাগরই তো আমাদের ঈশ্বর,
তবুও আমাদের অনেকের ঘরেই নেই এই ঈশ্বর 
তবুও বলি প্রতি ঘরে ফুটুক ফুল পূজিত হোক মানবতার ঈশ্বর।।

তাই তো বলি যে ঈশ্বর পারে মানুষের পাশে দাঁড়াতে
যে মানবতার সাগর পারে তার ঢেউ-এ জ্ঞানের আলো জ্বালাতে,
আমাদের আর চাই না কোনো মহাপুরুষ 
মোদের চাই সেই বিদ্যাসাগরের মতো একজন মানুষ।।






স্বাধীন

পা পি য়া  গো স্বা মী


কবে যেন স্বাধীন হয়েছে দেশ---
আশেপাশের সবাই নিরুদ্দেশ।
ঘুমের ঘোরে ছিল সে অচেতন
আপন জনের নেইতো বিচরণ।

ঘুম ভেঙেছে জানেনা কবে তার
অবাক হয়েই দেখছে চারিধার।
খিদের জ্বালায় প্রাণ করে ছটফট
চারিপাশটা দেখে নিল ঝটপট।

শূন্য পুরী চারদিক করছে খাঁ খাঁ 
এলোমেলো ছুটেছে নিজের বাসা-গাঁ।
থামল এসে কোথায় জানেনা সে ঠিক
বন্দুকের তাকে ঘাবড়ে ভোলে দিক।

ছুটতেই, বেদম জোরে পড়ল হুমড়ি খেয়ে
এক গুলিতে রক্ত বন্যায় দু'দেশ গেছে নেয়ে।
খিদেয় তৃষ্ণায় ছটফটিয়ে প্রাণ
আঁকড়ে ধরেছে স্বদেশের মাটিখান।

নিজের রক্তে রাঙিয়ে জন্মভূমি
যাবার বেলা নিয়েছে কেবল চুমি
ধন্য হলো কি মানব জন্ম তার?
স্বাধীনতার স্বাদে মৃত্যু পারাবার।






প্রতীক্ষা

তা রা ন্নু ম  জা হা ন


তোকে ছোঁয়ার তাগিদে ঝরেছি
অঝোর শ্রাবণের ধারা হয়ে, 
ঊষর মরু পথের হাহাকারের মতো
ছুটে চলেছি দিক হতে দিগন্তে। 
যেভাবে মিলনের তীব্র আবেগ নিয়ে
নদী প্রবাহিত হয় মোহনার দিকে, 
চাতক যেভাবে তৃষ্ণার্ত আকুতি নিয়ে
বৃষ্টির পথ চায়, 
আমিও অনন্তকাল সেই প্রতীক্ষার অনলে
দাহ হয়ে চলেছি তোর জন্য।।





যে আয়ুরেখা আঁকা মানুষের হাতে

যু থি কা  ত র ফ দা র  জুঁ ই


গণিকার গর্ভে যে চাঁদ এঁকেছিল একদিন তার সৃষ্টির দিনলিপি
আয়ুরেখা ছাপিয়ে
দূরত্বের মেঘমালা সরিয়ে 
মানুষওতো মানুষকে অতিক্রম করে চুপিচুপি কত কত কালিমা লেপে দিল তাতে....
অন্তহীন উদাসী আঁধার হেঁটে যায় সেই নক্ষত্রপুঞ্জের ধার ঘেঁষে ঘেঁষে
চকমকি পাথরের বুকে কুমারীর মাতৃযন্ত্রণা আজো কোন মুক্তির কথা বলেনা
তবুও রাহুগ্রস্ত মানুষ আপন উন্মাদনায় নিজেই নিজেকে বন্দী করে সৃষ্টির বাঁকে 
সে
ভাবে অরণ্যের গভীরতায় 
অগোচরে যে ফুল আজ ফুটেছে,
কালের নিয়মে ঝরে যাবে
তার দায় শুধুই কালের
কোন সন্তাপ তাকে স্পর্শ করবে না।





বিলুপ্ত আলো

স ঙ্গী তা  মু খা র্জী


যেদিন ঘুটঘুটে অন্ধকারকে ডিঙিয়ে, সে আলোর ঠিকানায় পৌঁছেছিলো
সেদিন কোনো জাদুকর তার হাত ধরেনি

তাকে পথ চিনিয়েছিলো জোনাকির ঝাঁক, 
রাতের গভীরতার সংকেত দিয়েছিলো হুতুমের শব্দ

বরং বুকে ভয় ধরিয়ে ছিলো সভ্যতা
আলোর বুকে পা রাখতেই ওরা তৃষ্ণা মেটাতে চেয়েছিলো, 
চকচকে লোভাতুর দৃষ্টিতে শান দিয়ে বোঝাতে চেয়েছিলো...
ওরা পুরুষ

শুধু বুঝতে চায়নি--
ভালোবেসে নিষিদ্ধ পল্লীতে বিক্রি হয়ে যাওয়া
পলাতক মেয়েটির পেটের খিদে।





বনসাই

নে পা ল  সূ ত্র ধ র  চ য় ন 


আমি নিজেকে উপলব্ধি করি
খুব কাছে থেকে
চেষ্টা করি আপনাকে জানার-
দূরত্ব কমে আসলে অচেনা হয়ে যাই।
যখন অনুভব আর বোধ শূন্যতায় ঘিরে ফেলে ভাবনা
শিশুর মত অঝোরে কাঁদতে ইচ্ছে করে
তখন বৃক্ষের মত একা হয় যাই পাখি শূন্য
কেবল  ইচ্ছে করে বনসাই হতে!






বিভাজন

পা র্থ  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য় 


মনের মধ্যে একটা কাঁটা তারের বেড়া আছে 
এপারের অনুভূতি অনুভব ওপারে যেতে চাইলেও যেতে পারে না 
সীমানায় একটা টগর ফুলের গাছ আছে 
তার ওপর ভার পড়েছে দুপারের সদ্ভাবনা রাখবার।

এপারের অনুভূতিগুলো ফুল তোলে, 
 সস্নেহে জল সিঞ্চন করে 
ওপারে শুধুই ফুল তোলে, 
আর ছিঁড়ে ফেলে 
আমার  প্রহর কাটে, দিন কাটে
টগর ফুলের গাছটা এখন বেশ  পরিণত 

পাতাগুলো বাহারি রঙ হারাচ্ছে ক্রমশই
মোটা গাছটার কান্ড বীর বিক্রমে ভাঙতে চাইছে 
সেই বিভাজন,  সেই কাঁটা তারের বেড়া 

তার পর একদিন হয়তো বা
মিলেমিশে  একাকার হয়ে যাবে সব অনুভূতিগুলো 
ক্লান্ত আমি, আমারও প্রহর গোনা শেষ হবে, অচিরেই।






চিঠি

জ য় না ল  আ বে দি ন


"তোমার চলে যাওয়া পথের উপর
আজও দুচোখ জ্বেলে বসে আছি
ফেরার অপেক্ষায়"।

সেদিন খেয়া ঘাটে বিদায় পর্বে
বিনয়দাকে বলেছিলাম-
মন খারাপের কি আছে গো
আবার একদিন ঠিক কেমন হুট করে
চলে আসব।

যে যায় সে আর আসে না গো-
একটা দীর্ঘশ্বাস পড়েছিল বিনয়দার।

তা বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল
হঠাৎ ঠিকানাটা নজরে এলো
একটা চিঠি লিখে দিলাম,
"সামনের পুজোয় আসছি দাদা"।
বিনয়দার লেখা লাইনগুলো
বড় কষ্ট দিচ্ছে আজ...






খিলাত ও বায়ু

অ ভি শ্রু তি  রা য়


নীরব অলিন্দ ছেড়ে উঠে আসছি ক্রমশ 
শরীরে ফুল, নাসিকায় পরাগ, প্লাবন...
এমন ভাবে কোনো গলির পাশে
তপোবন আর সাদা মেঘ ছাড়িয়ে
বাদ্য সংক্রান্ত সমস্ত শব্দের প্রত্যাখ্যান করতে পারছি। 
আমরা কোথাও কেউ অমলিন হতে পারিনি। 
যেসব ভারে ঝুঁকে পড়েছিলাম ক্রমশ 
তার সকল উত্তর অধিকার ছেড়ে রেখে
নৌকায় উঠে বসবো।
অমন নদীর কাছে
আমার সিংহাসন রাখা আছে
রাজবেশ শুকিয়ে উঠলেই
নিলামে উঠবে জীবন





ঝড় নামে, ঝড় থামে

আ মি নু র  র হ মা ন


আমার সামনে বিশাল আকাশ
আমি বসে আছি তোমার সমুদ্রের কিনারে
যেখানে ঝড় নামে, ঝড় থামে
তুমি আমি একাকার হয়ে যাই

একটা ঢেউ আছড়ে পড়েছিল
আমি সেই ঢেউয়ে ভেসে গিয়েছি
এরপর অজস্র ঢেউ, অজস্র ঝড় এসেছিল 
আমি নিস্তব্ধ, নির্বিকার তাকিয়ে দেখেছি।

পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে ভেবেছি 
নিচে ক্ষুদ্র পিঁপড়ের মতো আমরা
তবু কতো অহংকার জমা বুকের ভেতরে!
নিস্তব্ধ রাত্রি জানে আমি তোমার জন্য কতটা বিভোর!






একটা শব্দ ভালোবাসি

আ ল তা ফ  হো সে ন উ জ্জ্ব ল


হিমশৈল বরফ 
একটা শব্দ, ভালোবাসি! 
অবাক দৃষ্টিতে শুভতিথি
কখনো নিশ্বাসে স্বস্তি! 
কখনো অস্তাচল!
পথহারা পথিকের-
বিমূর্ত রূপের সন্ধি 
দীর্ঘ অনুভব ছায়াছাদ। 
মন মাতানো সুগন্ধের 
সমারোহ
আলতো ছুঁয়ে- সুক্ষ্ম পরিব্রাজক 
পুস্পিত আবেগ এ-ও ললিত বাণী
যুগে যুগে ছিলো এখনো আছে! 
ভালোবাসা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কারুকার্যতা। 
মনোমুগ্ধকর ঠোঁট বিশ্লেষণ
অফুরন্ত ভাবাবেগের অনুভূতি-উৎস
চতুর্দশ কিশোরীর কথা, 
অথবা অষ্টাদশ কিশোরের সংকল্প 
সঞ্চারিত বাণী; 
হিমশৈল বরফ অথবা গ্রীষ্মের 
ঝরনাধারা বৃষ্টি।।





ঋণ

সো মা  না য় ক


হয়নি বলা অনেক কথা
বুকের মাঝে গুমরে মরে,
তুমিও যেন মেঘ শরতের
বৃষ্টি নামিয়ে যাচ্ছো সরে!

মনের বাড়ি দূরের গাঁয়ে
নির্ঝঞ্ঝাট জীবন সেথায়
চাইতে পেতে দিতে গিয়ে
গোলমালেতে সবই হারায়।

দাঁড়িয়ে নাবিক জাহাজ ঘেঁষে
বন্দরেরই এপাশ ওপাশ
যাত্রী বোঝাই সুখের আশায়
অপেক্ষাতে বারোটা মাস।

অন্তহীন এ প্রহর গোনা
ফুরিয়ে যদি তেমন দিন
আসতে পারে, ভাসান দিতে
দুঃখ ব্যথার দৈনিক ঋণ!

সেদিন জেনো খুঁজবো সুখে
একটা গাঁও, এক প্রতিচ্ছবি,
মিলন সুরে সুর মিলিয়ে
ভুলব জীবন-মৃত্যু, সবই।





কাঠুরিয়া তারও---

বি জ য়  শী ল


ভালোবাসো? নাকি ঘোমটায় নাচো খেমটা?
জানো কতো ধানে চাল কটা? খুদ কাটে কতটা?
কতো তুষ? কতো শ্রম নিষ্ঠা টান থাকলে পর 
পূষা-রাগানুরাগ সে-ই জীবনের আলো জ্বালে?

ভুলেছো, নিশ্চিত-দিয়েছিলেন প্রমাণ আমাদের
প্রিয় বিজ্ঞানসাধক, "গাছেরও আছে প্রাণ?"
তবু হাতপা ঘাড়গর্দান কেটে বানাও সৌখিন
প্রাসাদ? আকাশের সাথে পাঙ্গা রোজদিন?

কেটেছো সব ছায়া-মায়া? খেয়েছো প্রেম-মাস?
দ্যাখো শূন্যে ভাসে না মেঘ! নেই দেয়াভাস! কুচুটে,
তাই তুমি ছুঁতে পারোনি গাছের বুকের কোমল?
কাঠুরের কুঠারপ্রেম। দ্যাখো, তারও চোখে জল!





শ্রাবণ ধারা

অ জি ত  কু মা র  জা না 


ফুটপাত হাতে অনাথ শিশু, 
তীরবেগে ছুটে আসে বৃষ্টি। 
স্নেহশীল মায়ের মত, 
আঁচলের ভিতরে লুকিয়ে রাখে, 
নিজের সম্পদ ঘুমকে। 
অসহায় গাছতলার চোখে জল,
সাধ্যমত চেষ্টার পরেও, 
শেষ প্রার্থনা জানায়, 
অদৃশ্য সেই মহাশক্তিকে। 
যদি ঘুম আনন্দে-
খেলা করতে পারে, 
অনাথ শিশুর ভূমন্ডলে।

তালাবদ্ধ কত শূন্য ফ্ল্যাট, 
একা একা জীবন সাহারা। 
অনাথ শিশুর হাত ধরতে চায়,
কিন্তু মালিকের হাতে চাবি,
ফ্ল্যাটের চোখে তাই শ্রাবণ ধারা।





জীবন পথে চলার বাঁকে

র ত্না  সে ন


জীবন পথে চলার বাঁকে, সকলেই কি বন্ধু হবে?

সোনায় মোড়া দেবদূত কি, ভরসার হাত বাড়াবে?

কেউ তো দেবে ছোবল, শানাবে মিষ্টি ছুরি,

কেউবা মুখ ফেরাবে, তাতেই তুমি ভয় কি পাবে?

 

যখনই মেঘলা দিনে, শিরশিরানি হাওয়ার পরশ,

তখনই ঝন ঝনানি, বাজবে শোনো ওই টেলিফোন

ঢালবে কানে তরল গরল, সারা দিন ঝমঝমিয়ে,

নোনা জলে ভিজবে যে  মন। তা বলে থামলে হবে?

একা দীপ জ্বালাও মনে।

 যখনই পড়বে কাজল, বিষাদ ঘন দুটি চোখে,

ফুটবে মুচকি হাসি, তোমার ওই রাঙা ঠোঁটে।

তখনই আসবে আঘাত, জানো না! পিছন থেকে।

মুখোশের আড়াল দিয়ে, ফিস ফিসানি আসবে কানে।

মনটা তোমার ভারী হবে। রাজার পোশাক ছেড়ে তুমি,

পড়বে কি তাই চীর বসন? তা বলে থামলে হবে,

একা কাঁটা দলতে  হবে।

 কখনো গহন রাতে, নিবিড় হয়ে স্বপ্ন এলে,

বুকের মাঝে হাহাকারে, ঘুমিয়ে থাকা সবুজ ফনী,

লকলকে জিভ, ঢালবে বিষ। পুরনো ওই স্মৃতিগুলো।

তা বলে থামলে হবে? গান গেয়ে ঘুম পাড়াতে হবে।






কন‍্যারূপেণ

রি না  রা য়


দুগগা এল বাপের বাড়ি,
ষষ্ঠীর সকাল, নতুন শাড়ী,
ঢাকের আওয়াজ, ধূনোর গন্ধে,
মাতবে সবাই মহানন্দে।

আমার দুগগা, সেলাই করে,
পূজোয় ব‍্যস্ত সারাদিন,
মাপার ফিতে, থাকে হাতে,
পা চালায় সেলাই মেশিন।

পাঁচটি প্রাণী, অভাবের সংসারে,
দিনমজুর বাবা ওর-ই ভরসা করে।
পরণে ছাপা শাড়ী, ঘামে ভেজা মুখ,
দশহাতে সামলায়, দিতে সংসারে সুখ।

অষ্টমীতে নতুন জামা, মায়ের জন‍্য শাড়ী,
ফল, মিষ্টি সাধ‍্যমত, দুগগা ফেরে বাড়ি,
ভাইবোনদের খুশী আর, মায়ের চোখে জল,
হ‍্যাঁরে মেয়ে, তোরটা কোথায়?আমায় খুলে বল্।

বাবা তখন, স্নেহভরে প‍্যাকেট দিল হাতে,
এই শাড়িটা তোর জন‍্য, এনেছি কাল রাতে।
সবার জন‍্য ভাবিস, শুধু নিজেরটুকু ছাড়ি,
তুই যে আমার মা দুগ্গা, দশভুজা নারী।





প্রবহ

মী না  মু খা র্জী


দুরন্ত দুপুরের উত্তপ্ত বাতাসে
রাক্ষুসে রোদ্দুরটা মৌতাতে পোড়াচ্ছে পৃথিবী। 
পৃথিবীর বুকে জ্বলন্ত হিংসার আগুন। 
আকাশে তাকাতে চেয়েছিল কচি কচি ফুলের কুঁড়ি ক'টা। 
মাতৃ জঠর থেকে তারা একে একে বৃন্তচ্যুত হয়ে পড়ল ধুলোর আঁচলে! 

কিন্তু আমার যে আজ ফুলেরই প্রয়োজন বড়--
কচি কচি পাতারা 
ঝলসে ছারখার। 
তবুও মিয়ানো হাত জোড় করে যেন ডাকছে কাউকে---
দু-এক টুকরো বিচ্ছিন্ন সময় টোকা দেয়---
বসন্ত যাপনের বিচিত্র আনন্দ হাতে নিয়ে। 
হে প্রেমের দেবতা! 
পৃথিবীর এই বিষাক্ত মাটিতে দাও ভালবাসার শুভ্র মেঘ যারা অন্তত ফোটাক কয়েকটা কুঁড়ি!






নিষ্ফল বেদনায়
  
স্বা তী  ঘো ষ


ভালবাসায় মরে যেতে যেতে
সর্বনাশে ভেসে গেলে
কেন স্বীকার করনি আদ্যন্ত
অবুঝ অন্ধ জ্বালাময় দিনবেদনা
কেন নতজানু হওনি 
আপন পরাজয়ের কাছে-
জিতে যাওয়ার পরাভবে
কেন নিজেকে অগম্য 
করে তুললে-
হৃদকমলে পরশমনির ছোঁয়া
স্পর্শাতুর করেনি তোমাকে
অনুভবকাল পেরিয়ে গেল অন্তহীন পথে
আকাশগঙ্গার সহস্র নক্ষত্রের ঔজ্জ্বল্য
ক্ষণিক ম্লান হল বেদনায়
অজানা পথের দিকে পা বাড়িয়ে
একবার কি থমকে দাঁড়িয়েছিল, ক্লান্ত পদযুগল-






আগমনীর সুরে

নী লা শা  পা ল


বসে আছি গঙ্গা'র তীরে,
পাখি রয়েছে নীড়ে,
মৃদুমন্দ বাতাসের সাথে,
নৌকা ও এগোচ্ছে ধীরে।

ঢাকের আওয়াজ আসছে কানে,
প্রাণটা ও হচ্ছে চনমনে,
নিস্তব্ধতাকে করে খানখান,
মনটা ও করছে আনচান।

আগমনীর সুরে লেগেছে দোলা,
কাশবনের'ই মাথায়,
রং -বেরঙের সাজপোশাকে সব,
বের হয়েছে রাস্তায়-রাস্তায়।

মানুষের দল নেমেছে রাস্তায়,
এগিয়ে চলেছে সমানে,
চলার পথেই খাওয়া-দাওয়া,
পারলে একটু জিরিয়ে নেওয়া।

আনন্দ, হুল্লোড়-এ সবাই মশগুল,
পুজোর এই কয়েকটা দিনে,
বিদায়ের কালে, বিষাদের সুর,
ফিরে সব ভারাক্রান্ত মনে।





প্রত্যয়

অ রু ণি মা  চ্যা টা র্জী


কতটা পথ হেঁটে গেছ তুমি
সময়কে প্রহার করে!
আল পথ ধরে ছুটেছি আমিও
নাগাল পাব বলে।
মেঠো পথ আর নাড়ার দহনে,
ক্লান্তিকে করো ক্ষমা।
জোছনা ফুটেছে পশ্চিম দিকে
কাটবে কি অমানিশা?
কতটা পথ দৌড়লে তুমি
নদী হয়ে যাবে মেয়ে!
নদীর তটেতে শান্তির বাণী
বেসুরো কি শোনাবে?
শাড়ির ভাঁজেতে রক্তের স্রোত,
নদীর রঙ যে রাঙা!
নেভানো চুলোতে নাড়ার দহন
চাল নেই এক কণা।
ও মেয়ে তোর নদীর বুকেতে
জ্বালাবো দহন জ্বালা,
কাঁটাতারে আর নোয়াবনা মাথা
মার্জনা করো ব্যথা।





অশ্বারোহী স্বপ্ন

শ্বে তা  ব্যা না র্জী 


নিশ্চুপ পথ একা জাগে রাত,
বাঁশের বেড়া বন্ধ।

হেঁটে যায় চাঁদ ঘন কুয়াশায়, 
খাট, মাটিতে দ্বন্দ্ব। 

মহা নাগরিক খই ফোটা ঠোঁটে,
সেইভ করে রিংটোন। 

সস্তা বুকনির ভাঙাচোরা পথ,
খোঁজে আজও পরধন। 

ভাঙা স্বপ্নের ধ্বংসের ভিতর, 
হাজার বিষধর সাপ। 

ভ্রণ ঘরে জল ভাঙছে জেনেও,
নেই কোনো পরিতাপ।

শস্তায় কেনে শত হাততালি, 
হরবোলা সুর তুলে। 

ভেজে নাগরিক রূপকথা বুনে,
নাহলে চড়বে শূলে। 

খুঁজে নাও এবার  কাঁচ ভাঙা রোদ, 
কালো চশমা ফ্যালো খুলে। 

কথার বঁড়শিতে হ্যাঁচকা টান দিলে,
সিংহাসন উঠবে দুলে।





আমি মেঘের প্রতিরূপ

শু ভা শি স  সা হু


এখানে পাখির পালকে সন্ধ্যা নামে। 
দেখেছি তোমার মতো মুখ, 
যেন ক্ষিপ্ততার সুর। 

যেন কোন নক্ষত্রের আহরণে
আমি হেঁটে যাই। 

আমি হেঁটে যাই
বহুদূর। 
তোমার স্পর্শে সুদূর, 
আমি মেঘের প্রতিরূপ।





অব্যক্ত

শ ত ভি ষা  ম ল্লি ক


"ভালোবাসি" বলতে নেই,
ইশারা রাখতে হয়।

আধভেজানো দরজার ফাঁকে যেমন উঁকি দেয় আলো,
তেমন করেই সে আসে;
আবছায়া রঙ আর মেঘের বাষ্প মেখে আসে,
যেমন করে অগভীর ঘুমে ঘিরে আসে স্বপ্ন।

ব্যথা ফুরালে যেমন আরাম আসে, 
সাঁতরে আসে অমলিন হাঁসের দল
তেমন প্রবাহেই সে আসে,
নির্মল জলে তড়িৎ স্পর্শের মতো।

ভালোবাসা ভীরু পদক্ষেপে আসে,
দু:সাহস নেই তার।

দু:সাহসের কেবল আছে প্রভুত্বের অধিকার। 

সে দু দণ্ড জিরোয়, ছায়া মাখে, নি:শর্ত হাত পাতে, অবিরাম বাতাসে ভাসে।

ফেরালে দহন
আলিঙ্গনেও মরণ আসে।





বাস্তবতা

দি শা  পা ল ন দা র 


সেদিন রাসবিহারীতে গিয়েছিলাম একটা কাজে,
সময়টা সেপ্টেম্বরের শেষ, শহর ব্যস্ত পুজোর সাজে। 

দোকান, মলে উপচে পড়ছে ভিড়, বিক্রেতারা সাজিয়ে বসেছে পসরা, 
সম্ভার আছে বিভিন্ন তাদের, দুর্গাপুজো থেকে দশেরা

বাসের জানালা দিয়ে চোখ আটকে গেল সেখানে 
একটা বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল যেখানে।

পরনে তার ছেঁড়া ফ্রক, মুখখানি তার শুকনো 
চুলগুলো উড়ছে হাওয়ায়, চেহারা খানি রুগ্ন ।

ক'দিন পরেই দুর্গাষষ্ঠী, হবে মায়ের বোধন
কেবল বন্ধ হবে না মেয়ের খিদের জ্বালায় রোদন।

মা পরবে সোনার শাড়ি, হলুদ বরণ গায়ে 
মেয়ে পরবে ছেঁড়া জামা, এ কি ভাগ্য হায়! 

মা বধিবে মহিষাসুর সোনার ত্রিশূল দিয়ে 
মেয়ে হাঁটবে টলমলিয়ে, গলির রাস্তা দিয়ে।

মায়ের থালা উপচে যাবে নানারকম প্রসাদে 
দুমুঠো অন্ন জোটাতে না পেরে মেয়ে কেবলই কাঁদে।

মায়ের মণ্ডপে করবে ভিড়, লোকজন আর আলো 
নিঃসঙ্গ মেয়ের আশ্রয় অন্ধকার আর কালো।

মায়ের সাথে মেয়ের বলো, এ কি নাড়ির টান?
মা কি ভুলে গেছে, মেয়েটি তারই সন্তান?





বিসর্জন

শু ক দে ব  দে


বিসর্জন হয় প্রয়োজন শেষ হলে,
বিসর্জন হয় বাধ্যতার মুখে ঠেলে,
আমি বলেছিলাম--- দাঁড়াও---
আমি তো কাঁটাতারে বন্দি!
কিন্তু সেই কবে তোমার অকালবোধন(!)
যখন ঘাসের গায়ে শিশির জমেনি ঠিকমতো,
শিউলির গায়ে আসেনি কুঁড়ি৷
তাই আজও বিসর্জন হয় মনের অন্তরালে,
ঠোকা দেয় শুধু কাঠের কাঠামো জীবনের তীরে...





বিচ্ছিন্ন লেখা ...

দী পং ক র  রা য়

[উৎসর্গ --- পল্লবী মাহাত]


তুচ্ছতাচ্ছিল্য অবহেলায়
ছিঁড়ে যাওয়া জামাটি সেলাই করছি।


জখম, রক্ত-দাগ ধুয়ে নিই, তার দেওয়া 
অতীত দিনের হাসিতে;...

নাচতে তো জানি না 
নাচাতেও; তাও মাঝে মাঝে ভুল করে নকল প্রলাপ কিছু প্রতিশ্রুতি
মনে করে মানুষজন্মের দাবিদার হই, মনে করি 
হলেও হতে পারে হয়তো মজার ছলে 
এইসব চিহ্নবিহীন স্বীকারোক্তিতে রেখেছো তুমি আমাকে?


প্রতিদিন দাগ মাখি। রোজ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এই যে চৈতন্যের
পথ করি পরিষ্কার
এতটা জখম দিয়ে 
তার কতটুকু জানে কেই বা?


জানার কীই বা আছে এত, বোঝার---


কে কাকে বুঝতেই বা ক্ষণমুহূর্তের ঘাম-রক্তের কথা 
মনে করবে আবেগে!


-----হয়তো তখন রোদ উঠেছিল এমনই,
হয়তো তখন মনকেমন করেছিল, বসন্ত ছোঁয়ায় এমন কত অলীক দাগ-ই তো কপালে ঘামে আটকে থাকে, তাই বলে কি সবটাই পৌঁছবে সেই উৎসর্গে..?


সমাজ তো স্বজনপোষনেই ব্যস্ত বিপ্লব কোন দিক থেকে কাকে চায় ?


কিছু উজ্জ্বলতা
ছুঁতে প্রকৃত উৎসর্গ
তখনই সম্পূর্ণ
যখন অতি যত্নে লালিত উপহারটুকু তুলে দিতে কতটা 
কৃচ্ছসাধন স্মৃতি হয---

আমাদের সব সম্পর্কেই মুহূর্তের নিবেদন--- আমাদের সব সম্পর্কেই গোপন কিছু ছুঁৎমার্গ 
থাকে, যে কারণে পানপাত্র আলাদা হয় 
যে কারণে 
দূরের যাত্রাপথ হয়ে যায় একা একার...!


তুচ্ছতাচ্ছিল্য অবহেলায়
ছিঁড়ে যাওয়া জামাটি সেলাই করতে কতবার বিঁধে গেল আঙুলে ছুঁচ যে, সে কথা কে জানলো‌?


একটি নির্জন দুপুর 
মহুল বনের বাতাসে 
হাহুতাশ
কতবার ধরতে চাইলো যে সম্পর্কের দৈন্য---

একটু নির্জনতা পেলে এক একটা মানুষ 
কীভাবে সহজেই খুন হতে চলে যায় যেন সেই বোধে..!





ছিন্নমূল

শ র্মি ষ্ঠা  মি ত্র  পা ল  চৌ ধু রী


তোমার মাটিতে মিশে আছে আমার জীবনের স্রোত;
এখনো  নেশা লেগে যায়---
বাতাবি লেবু ফুলের ঘ্রাণ---
হেমন্তের শিশির স্নাত ঘাস মনে করিয়ে দেয়, গাছে জল দেওয়ার কেউ নেই আজ।।
বেদনা ও ক্ষোভ মিশে যায়, দেখি নিষ্প্রদীপ তুলসী মঞ্চ---
করবী আর গন্ধরাজ আজ শুধু জঙ্গলের গল্প শোনায়।
 লাল সুরকির পথ কাটে 
পাঁজরে স্মৃতির আঁচড়।
মনে পড়ে শান বাঁধানো পুকুর পাড় আর শিউলি শাপলা---
আজ জ্যোৎস্নার শাদা ধুয়ে দেয় পূর্বপুরুষের শ্মশান।
কান্না জমাট বাঁধে গঙ্গা-পদ্মার পলি মাটিতে।।





বাদলা রাতে

ব ন্দ না  রা য়
        

বাদলা রাতে বৃষ্টি যখন এলোমেলো
হাওয়ার সাথে মনটা কোথায় হারিয়ে গেল। 
দেখছি বসে সার্সিতে জল নকসা কাটে
বাদলা তুফান সবুজ বনে মাঠে ঘাটে।

দিগ দিগন্তে শুধুই যেন আলোর খেলা
আকাশ বাতাস মুখরিত শেষ বেলা। 
বাদলা রাতে তুফান ভারি বজ্রপাতে
আলো আঁধারে খেলায় যেন আকাশ মাতে।। 

বন ময়ূরী দিচ্ছে উঁকি মনের মাঝে
হারিয়ে গেছে মনের মানুষ কোন কাজে।
বিরহ ব্যাথা মনের মাঝে ভীষন বাজে।
পরান আমার তোমায় ছাড়া বাউল সাজে।

যখন আঁধার ঘনিয়ে আসে মনের কোণে
অবুঝ পরান তোমায় খোঁজে আনমনে।
মনবীণায় সুর তোলে সে অশ্রু পাতে
ঝর্ণাধারা নামছে অবশ হৃদয় খাতে।





জানি যেতে হবে

ক ম ল  দে


হয়তো কখনো ছাড়তে পারবোনা 
আবার ভুলতেও পারবোনা
আমার কষ্ট হবে
তবুও জানি যেতে হবে।।

কখনো চোখের নোনা জলে 
ভাসবে আমার মুখ
ভাসবে আমার বুক
তবুও জানি যেতে হবে।। 

হয়তো এটাই বিধির বিধান
তাই মন আজ ম্রিয়মান।
চিরদিন রয়ে যাবে মনের মাঝে
তবুও জানি যেতে হবে।। 

ভারি সুন্দর লাগছে তোমায়
এ ছবি সারাজীবন
মনের মাঝে আঁকা রবে।
তবুও জানি যেতে হবে।।

জীবনের শেষ গোধূলি বেলা
হঠাৎ আঁধার ঘনায় যদি
ভাবনা গুলো মিছে রয়ে যাবে
তবুও আমায় যেতে হবে।।





'খোলা চিঠি, প্রিয় কবি সুকান্তকে'

মি ষ্টি বৃ ষ্টি


তোমার রানার,পৌঁছে দিয়েছে, 
চিঠি?
ক্লান্তিতে ভেঙে-ভেঙে-?

ভোর তবে আসছেই!
তুমি বলো?
আকাশ উঠ্ ছে, রেঙে!

পূব দিগন্তে কাস্তের ফালি চাঁদ, তারা তার পাশে 
মিট্ মিট্ ক'রে জ্ব'লছে কিসের আশে?

তোমরা আকাশ ছোঁবে ব'লে হাত বাড়িয়েছো যার নামে 
'বিপ্লব!' ব'লে চেঁচিয়েছো উঁচুগ্রামে,

সে কি পৌঁছেছে কাছে?
তার জন্য যে, উপহার, সারা বিশ্বটা তোলা আছে!

'বিপ্লব!' ব'লে ভোরের পাখিটা 
বুকের রক্ত দিয়ে 
সাদা গোলাপকে লাল ক'রে তোলে ক্রমে--

মৃত্যু কিনেছে।
ম্লান জ্যোছনায়, ভ্রমে...

এইভাবে বুঝি সকাল আসছে,
রক্তের দামে কাড়া!

বাদ সাধছে ও দুর্নীতিবাজ কারা?

কালো হাত ভাঙো!
গুঁড়িয়ে দাও ওদের, স্বার্থপর!
জনতার টাকা একা খেয়ে ওরা বাঁধছে সুখের ঘর---

সুকান্ত, কবিতায় ওদের কি লজ্জা দিচ্ছো, বলো?

ওরাও বুঝ্ ছে যে ঘর ওদের নড়বড়ে, টলোমলো!
খুঁটিগুলো নড়বড়ে,
খুঁটি ভেঙে পড়ে ঝড়ে 

ও শ্রমিক, মুঠি ছুঁড়ে দেয় বেগে 
মিছিলে-মিছিলে, দুর্বার কী আবেগে!

নতুন মানুষ আনছে নতুন দিন,
রক্তে এবং ঘামে,

তোমার কথায়,

'এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে!'






আশ্বিন চিঠি আলোয় মিঠি

বি বে কা ন ন্দ  ন স্ক র


শিশির মাখে শিউলি শাখে হিমের পরশ ছোঁয়া 
পুজোর মাসে আশ্বিন হাসে শুভ্র কাশের মায়া।

হিমেল ঘ্রাণে পুজোর গানে নতুন সুরের ছটা
মনের খাতা শালুক পাতা পুজোর রঙীন ঘটা।

বৃষ্টি শেষে আশ্বিন আসে শাপলা দোলায় মাতন
মিত্র সুজন দুষ্টু কুজন সবাই এখন আপন।

মাতৃ আশীষ পাখালি শিস গাভীন ধানের ঢল
ঢাকের পিঠি পড়লো কাঠি রাঙলো মাটির তল।

আশ্বিন  রোদে খুশির বোধে পদ্ম পাতায় চিঠি
খড় কাঠামো শ্রম সুঠামো শারদ পরিপাটি।

মেঠো আঙুল মৃত্তিকা দুল মাটির  অলংকারে
মাটির কবি মাটির দেবী গড়েন মাটির ভারে।

দুগ্গা ফোঁটা জয়ের টীকা দেবীর বরণ ডালায়
শারদ লক্ষ্মী স্বপ্ন লক্ষ্মী সুখের  সর্বজয়ায়।

আশ্বিন চিঠি আলোয় মিঠি সৃষ্টি রোদের শ্বাস
শহর গাঁয়ে উতল বায়ে পুজো পুজো উচ্ছ্বাস।





সোনালী বিকেলে---

আ ল্পি  বি শ্বা স


একটা দুটো হলুদ প্রজাপতি
শেষ বিকেলের সোনালী রোদ মেখে
ফুলে ফুলে চুমকুড়ি কেটে ওড়ে
সেই সাথে মধুও নেয় চেখে।

সূর্য যখন পশ্চিমে পড়ে ঢলে
তেজহীন আর শান্ত আলোর বল
মেঘের স্তরে আশ্রয় নেয় আলো
টুপ্ করে তাকে পেড়ে এনে খেলি চল্

সোনালী বিকেল সাথে চায় মনসাথী
সোনালী বিকেল কারুকাজ আঁকে মিনারে
সোনালী বিকেল সাক্ষী ভালোবাসার
সোনালী বিকেল স্বস্তি খোঁজে নদী কিনারে।





জলপরী তিস্তার রূপকথারা

সা য় ন্ত ন  ধ র


ক্যালেন্ডারে বর্ষাকাল সমাপ্ত হলেও
খামখেয়ালী প্রকৃতি বৃষ্টি ডেকে আনে
সিরাস মেঘের দল প্রস্তুতি নিলেও
কিউমুলোনিম্বাসেরা বজ্রলেখা হানে।

পাপিয়া ডাকে পা-পিহা, ভাবে ঋতুরাজ
অহনার শিউলিরা সুগন্ধ ছড়ায়
জলাভূমি সন্নিকটে নতুনের সাজ
কুহেলিকা প্রতিরাতে মায়ায় জড়ায়।

তরনী, তটিনী ধারে জলে ভরে আছে
নীলাকাশ মুখ দেখে সেই স্বল্প জলে
রূপোলি বোরোলি ধরা দেয়নাকো কাছে
জলপরী তিস্তা সে যে কত কথা বলে।

যেদিকে তাকাই আজ দেখি নীলাকাশ
যেখানেই জাগে চর জন্মে সাদা কাশ।





হাসনুহানা ফুটুক

প্র কৃ তি  দ ত্তা


এক কালো রাতে ওরা এসেছিল
সমাজ গড়বে বলে বাসা বেঁধেছিল
চাঁদের আলোয় হাসনুহানা থেকে
পরাগ নিয়ে ওরা উড়েছিল।

ওদের গুঞ্জনে তখন এক তান এক লয়
ওরা ক্ষুদ্র কিন্তু কাউকে করেনি ভয়
দৃঢ় ডানা সঞ্চারণে ছিল বার্তা
ভয় নেই, হবে জয়, হবে জয়।

রূপোলী আলোয় ওরা মৌচাক গড়ে
ষড়ভূজ কুঠুরীতে মোমের প্রলেপ পড়ে
গড়ে ওঠে এক নিবিড় সমাজ
যা একদিন সোনালী মধুতে উঠবে ভরে।

আমরা কি পারিনা এমন সমাজ গড়তে
যুদ্ধ বিধ্বস্ত এ প্রিয় ধরনীতে
একবার মৌমাছি হয়ে দেখি
হাসনুহানা ফুটেছে রাতের সরনীতে।






স্মৃতির আলপথ

সু মা  দা স


এমন কোনো মেঘলা শোকে ভাঙছে আকাশ পাড়,
স্মৃতির আলপথ থেকে ভেসে আসা কোনো এক ভাঙচুর বিশ্বাস।

শীলমোহর লাগানো দস্তাবেজ জমা রাখা ভুলে যাওয়ার দেরাজে বন্দী করে,
ছিল দৃঢ় বিশ্বাস, আসবে না ফিরে আর কোনো ঢেউ তুলা সমুদ্রে ভর করে।

স্তব্ধতার অনেক বছর পর জীবন যখন বিরামহীন ভাবে চলে আপন ছন্দে,
হাসি, কান্না, ব্যথা বিজড়িত কথকতারা বিবশ সময়ে ধরা দেয় দ্বিধা দ্বন্দ্বে।

ছল ছল আঁখি, জড়িয়ে আসা কন্ঠে নিশব্দের ছয়লাপ,
তবু মনে পড়ে যায় যা ছিল শুধু ক্ষাণিক ভালো থাকার সোহাগী আলাপ।





মাতৃহৃদয়

ছ ন্দা  দা ম 


গভীর রাতে কবিতার খাতা থেকে বেরিয়ে আসে একটা মানুষ...
লোভ, লালসা, বাসনার আগুনে ছারখার একটা অগ্নিশিখা... আর কিছুই নয়,
অনুভূতিগুলো ভোঁতা হয়ে যাওয়া শূন্য দৃষ্টিতে
আশ্রয় খোঁজে,
মাথার ভেতরের জঙ ধরা কারসাজির মেশিনে ক্লান্তি...
     একটা আস্ত মন শুধু সে আর কিছু নয় যেন...
ছলকে উঠা লাভার উদ্গীরণ ঝরে পড়ে চোখ বেয়ে...।।

ছারখার করে ফেলতে গিয়ে যেন থমকে দাঁড়ায়,
তার মাতৃ জঠর আরো একবার দমিয়ে দেয় তাকে...
মনে করিয়ে দেয়... সে মা... প্রকৃতির মতোই সর্বংসহা
কুঁকড়ে যায় যেন সে প্রসব যন্ত্রণায়...
কেঁদে কঁকিয়ে উঠে... মাথা গুঁজে হাঁটুতে...
ভাবে সে... আর যা কিছুই হই সব কিছুই সবার বাদে।।

    আদিতেই আমি মা... অন্ত যে হয় না মায়ের!!
      মা যে অনন্ত বারিধারার মতো শান্তিদায়িনী,

বন্যার বারিধারার মতো উচ্ছাস ভাসিয়ে নিয়ে যায়,
     কাঠফাঁটা মাটির মতো বুকে মায়ের মন...
সিক্ত হয়ে যায় পরম মমতায়।





প্রতিবিম্ব

নী ল  আ কা শ


জলের কিনার ঘেঁষে বেঁকে যাচ্ছে ভেঙে ভেঙে যাচ্ছে প্রতিবিম্ব।
আমার মতো আকাশও জলের ভিতরে নাছোড় কাজল না হতে চাওয়া নীল রঙ।
কি ভীষণ মায়া যেভাবে লুটিয়ে রয়েছে আমার কাছে।

আমিও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অস্থির এই বিভ্রমে দেখছি আমার নিজেরও ভাঙন।





সাফ
 
নী ল  আ কা শ 


গাছপালা বাড়িঘর সব ধুয়ে ধুয়ে সাফ করে দিচ্ছে বৃষ্টি, আমি দেখছি,
আমি যেন সাফ হচ্ছি না কিছুতেই... 
দেখছি দড়ি ছিঁড়ে ছুটছে গরু ছাগল, উড়ে যাচ্ছে বুনোহাঁস, 
ব্যস্ততার শিকল ছিঁড়ে আমিও ভিজছি।
সবাই যখন এই দুপুরে খাবার খেতে ব্যস্ত, 
আমি জিভ দিয়ে চেটে যাচ্ছি উড়ে আসা বৃষ্টির ছাঁট...





প্রেত

প্র সূ ন  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য় 


অতৃপ্ত আত্মারা আসে,
উঠোন জুড়ে দাপিয়ে বেড়ায় তাদের কোলাহল।

কারও সুন্দর মুখশ্রী, কারও পেলব চামড়া দ্যুতি ছড়ায়।
হাজারটা বিজ্ঞাপনী ঝাপটানিতে তারা প্রমাণ করে,
তারা সুখী ও ভ্রমণবিলাসী।

সবুজ আলোর সাড়া পেয়ে যেদিন কেউ বেশী রাত জাগে
তখন জানতে পারে, মনের অসুখ মানুষকে প্রেত বানায়।
বিছানার মাঝখানে বালিশ রেখে
সম্পর্কের বাঁধে মোচড় দেয় তৃতীয় আকাঙ্ক্ষা।

প্রকৃত অর্থে জৌলুস কুড়িয়ে বেড়ানো আলোকবৃত্তরা এক একটি মৃত জোনাকি।
নিজের মানুষের অভাবে তারা এক একটি ক্ষুধার্ত প্রোফাইল।
মেক আপ ধুলেই তারা একা একা এবং একা...




অভিসন্ধি

প্র সূ ন  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য় 


শিউলি ফোটার সাথে সাথে 
বাজতে থাকে বারোয়ারি পুজোর ঢাক।
তবু পান্ডব যেন গান্ডীব তুলে ধরে,
রণক্লান্ত কেউ সারারাত হাতড়ে বেড়ায় বিছানা।

একার জন্ম একাকে সঙ্গ দিতে।
তাই স্বার্থের চোখ বাঁধা ধৃতরাষ্ট্র পাশার শর্ত রাখে,
গান্ধারী খুলে ফেলে চোখের আড়াল।
ঘর জুড়ে লুটোপুটি খায় শূন্যতা।

বারোয়ারি পুজোর ঢাক আরও তীব্র হয়।
প্যান্ডেল ভর্তি মানুষ একবার ফিরে তাকালেই
গভীর হয় ক্ষত মুখ।
আসন্ন অন্তিমে খেলা করে আত্মহত্যার অভিসন্ধি।

ইনিয়ে বিনিয়ে প্রেম আলোর উৎসবে নিজেকে ফেরত চায়...





কবিওয়ালা

ঊ ষা  গ রা ই 


কবিওয়ালা, এবার শোনাও তোমার কবিতা। হিমেল উত্তুরে বাতাস ছুঁয়ে গেছে কান, সেসব ছাপিয়ে কানে বাজুক তোমার কবিতা। শরীর নিয়ে ঘোরাফেরা করুক চারপাশে। তাদের কথা শুনে আমি হাসতে চাই, কাঁদতে চাই, অভিমান ভরে কখনও বা মুখও ফেরাতে চাই। করে উঠুক বিদ্রোহ সমস্ত চেতনা জুড়ে। সমিধ করেছি জড়ো জীবনের সমস্তটা দিয়ে। এবার দাও পূর্ণাহুতি। ঋত্বিক তুমি, কবিতা দিয়ে পোড়াও আমাকে 'কবিওয়ালা'।




অভিষেক

ঊ ষা  গ রা ই 


একটা কবিতার জন্য কি করতে হয়?
কী করেছি একটা কবিতার জন্য?
প্রশ্নটা বারবার ফিরে আসে সামনে
সারাদিনের ক্লান্তি ধুয়ে নিতে 
শব্দাশ্রয়ী করেছি চিন্তাকে
সপ্রতিভ দিন-রাত্রিগুলি সযত্নে মুড়েছি রঙিন মোড়কে 
করবী ভাবনায় নিজেকে প্রকাশ করতে 
অশক্ত শরীর মনেও ছুটে গেছি মানুষের মাঝে।

 আজ বুকের সমস্ত আলো নিভিয়ে 
কবিতার সামনে হাঁটুমুড়ে প্রার্থনায় বসেছি
রত্নাকর মনকে বাল্মিকী হওয়ার সুযোগ দিয়েছি
আয়োজন নেই কিছুমাত্র 
শুধু অন্তরের আকুতি নিয়ে অপেক্ষা করছি 
নব উন্মেষের আশায়...

এসো কবিতা, তোমার প্রতিক্ষায় আছি
থাকবো এ জীবনভর সুলগ্ন প্রত্যাশায় 
বুকের কৃষ্ণচুড়ায়  এবার তোমার অভিষেক হবে।





জীবক- নাম জীবন

র ত্না  দা স


জেতবন বিহারে একটি বেদীতে উপবিষ্ট জীবক। ভিষগাচার্য্য জীবক ভক্ক। আজ কিঞ্চিৎ মন উচাটন। যে মাতৃমুখ দর্শনের সৌভাগ্য অর্জন করে উঠতে পারেন নি, স্মৃতিপটে তার প্রলম্বিত ছায়া।

অন্তরাত্মা রুদ্ধ স্বরে বলে, জন্ম হতে না হতেই বিসর্জিত। কোন অপরাধে!

বিম্বিসার পুত্র- অভয়, পালক পিতার ভূমিকায়। তার স্নেহস্পর্শে, জীবনদান শুধু নয়, নামটুকুও তারই দয়ায়।

দিকে দিকে সেই নাম ধ্বনিত-
ধনি থেকে নির্ধনে
বঞ্চিত নয় কেউ
ফেরেনা কেউ দ্বার হতে।

পূর্ণ চন্দ্রমার স্নিগ্ধ পরশ চক্ষু আবেশিত করলেও মনে জমাট বাঁধা অন্ধকার, কিছুটা ক্লান্তি ও হতাশা সরের মত ভাসে...

স্বমেধা বিনা গুরু আত্রেয়কে কিছুই ছিল না দেবার আর। আপন ধী তাকে সেরা শিষ্যের শিরোপা প্রদান করেছিল।

তবু খেদ, জেদ হয়ে মনের ঘরে দৃঢ়তায় অবস্থান করে।

বোধিসত্ত্বের করস্পর্শে জীবন এখন এক অবগাহন। তিনিও রাজবৈদ্য জীবকের শুশ্রুষাধীন। মনে হয় এ জীবন ধন্য করুণাঘন'র চরণতলে।

রাজা অজাতশত্রু কঠোর থেকে কঠোরতর। বন্ধ হবে বৌদ্ধগান, সকল সম্মিলন। যদিও জীবকের কাছে তিনি পরম কারুণিক।

মন্ত্রণাকক্ষে তিনি অবধান করেন বৌদ্ধকথা। শ্রবণে জাগে চিত্তে হর্ষ। মহাবৌদ্ধ সম্মেলন সম্ভব করলেন অজাতশত্রু। জীবকের মন কানায় কানায় পরিপূর্ণ। তিনি আজ সক্ষম। হিংস্রতা থেকে জন্ম হয়েছে প্রেমের, নির্জ্ঞানের জ্ঞানচক্ষু হয়েছে উন্মিলিত। সার্থকতা কর্মের আড়ালে লুকিয়ে হাসে।

অজাতশত্রু কর্তৃক অনুরুদ্ধ ভিষগাচার্য্য জীবক হাতে তুলে নিলেন মসী। রচিত হলো কাশ্যপ সংহিতা। 
সেই আলোকবর্তিকা পথপ্রদর্শন করে চলেছে যুগ থেকে যুগান্তরে...

জীবক এক জীবনের নাম—








বিস্তৃতি

ক ল্পো ত্ত ম


সে ও তারা বাঁধছে তোমাকে 
কঠিন বাঁধনে বাঁধছে
মান-অভিমান, কান্না দিয়ে 
কখনো বাঁধছে লাস্যে।

তিলে তিলে তুমি, সারাজীবনে
গড়েছিলে ঘর কলমে কাগজে 
দিয়েছিলে রঙ মনের মতন
হাজার মাধুরী মিশিয়ে
স্বপ্ন তোমার ছিল প্রতি ধুলি মাঝে।

সব মুছে যাবে?
সব কী লুকোবে
নতুন খেলায়?

জাগবে তোমার পুরনো খেলা
বর্তমানের সাঁঝে?

সবই ধোঁয়াশা, রহস্যময়
সবই সংশয় মাঝে
বড় হয়ে উঠছে তোমার পরিধি 
বড় হয়ে উঠছে তোমার জীবন!







একবার

শি বা লো ক  দা স 


একবার আমি চাই কৃষ্ণগহ্বরের গা 
থেকে একটু পলেস্তারা তুলে আনতে,
যতক্ষণ না কেউ ঘুমিয়ে পড়ে।
দু পা পিছলেই আমি পেতাম আমার বাড়ি।

এর আমি নাম কি দেব, ভাষা ?
তাহলে তো বলতে হয় মেঝেতে পা 
পড়ার পর আমি নিজের প্রতি আঙুল তুলি।

একবার মনে হয়, চুরমার সব কিছু আমার 
চোখের মধ্যে নিয়ে নিই এক লহমায়, 
রক্ত পড়ুক, সে তো বন্য নয়।

এর আমি নাম কি দেব, অন্ধকার?
তুমি চেপে রাখো মাটির চিৎকার। 

নাম খুঁজতে খুঁজতে আলোয় পাই বিস্মরণ,
এর আমি নাম দিই না। সে স্বতন্ত্র।





বলতে নেই

শি বা লো ক  দা স 


শীতল, তুমি উষ্ণ হও চুম্বনের মতো,
একবার নিঃশ্বাসের পর এই রাস্তায় হাঁটো, 
তুলে নাও আঙুলে কাটা একটুকরো রূপোলী 
স্পর্শ, ভাঙো, গড়ো, আবার অন্তর্নিহিত হও শয্যায়...

তবুও বোলো না কোনোদিন, যাই!
পেরোনো দিনের মতো আয়ু তখন 
আরো গভীর, আরো শান্ত, অন্ধকার। 

দৃষ্টি, তুমি এবার নিঃশব্দে পাশ ফিরতে পারো, 
উঠোন ছেড়ে যখন বেড়ে উঠবে ছায়া, 
জ্বলে যাচ্ছে, পুড়ে যাচ্ছে নিমজ্জিত যা কিছু
মাটির ভেতর, আমি তুলে এনেছি।
ছুঁয়ে দিলেই তার তেষ্টা মিটবে না। 

তবুও জলের কাছে বোলো না, যাই!
সেও তো নিজেকে দেখতে চায় সন্ধে নামলে...

বলতে নেই যাই। নীরবের কাছে জরুরি এটাই।
জতুগৃহ যখন একা খুব, তারপরেও তুমি বলবে
চলো আগুনের কাছে বন্ধক রেখে আসি আমার 
মেঘ, বৃষ্টি, রোদ এবং বিপরীতমুখী স্রোত?







অতিক্রম করতে পারি না

সৈ য় দ  আ ফ সা র


এই অবেলায় অবাক চোখে তোমাকেই
দেখি, শীত-রাত্রি-বেলা ও ঘন কুয়াশায়
কুয়াশায় চেহারার রহস্যও লুকায়—এই রহস্যে
কী জীবন খুঁজে পাওয়া যায়? জীবন একটা 
পাখির মতো ভালোবাসা পোষে মনের খাঁচায়
আবার একদিন খাঁচা ভেঙে দূরে চলে যায়

তবুও একজীবনে কিছুই চিরস্থায়ী থাকে না 
                            না-মোহ, না- মুগ্ধতা
তাই বলে কী শীত-বসন্তক্ষণে তুমি দূরে
থাকতে পারো? না, অবশ্যই পারো না...

বেদনার স্পর্শগুলি নিরিবিলি বুকের ঠিক 
বাম পাশে ঝুঁকে আছে একা, আর আমি
কেবল তোমাকে অতিক্রম করতে পারি না





বিবৃতিগুচ্ছ

সৈ য় দ  আ ফ সা র


এই তো কদিন আগে, সবই ছিল ঠিকঠাক
যাবার পথটি ছিল খুব মসৃণ। পুরো ছিমছাম
এখন আমার এই দুর্দিনে কিছু লোকে হাসে—
                                       পথ করে রোধ...
মনের ইগোগুলো যেন মোড়ানো সাপের খোলে
ওদের দলে তুমিও দিয়েছো উঁকি, সুকৌশলে! 

সর্বলোকে, একদিন জেনেও যাবে
সবই তোমার সাজানো কাহিনি
বসে বসে ভাববে একদিন--- দীর্ঘ একটা শ্বাসে।
সেদিন ক্ষমা করে দেব প্রাণের মায়ায়, করুণায়
আমার মনের জানালা ভাঙা আয়নার মতো স্বচ্ছ 
তবু তারে শূন্যহাতে জড়িয়ে রাখছি আবদ্ধ বুকে

মন থেকে একটা আতশি আয়না কিনে দেব আমি
এই আয়না তোমার পুরনো স্মৃতি ফেরি করে দেবে
দেখে নিও, অহংকারী চোখে-মুখে বা ধারালো কথায়
রাগে ও চিৎকারে তোমার চেহারা ঢাকা কার মুখোশে

আর আমি, বড্ডো ঘুমের আবেশে ঘোররাত্রিতে মিশে 
নিঃস্ব একটা চাঁদের দিকে তাকিয়ে রবো জানালার পাশে





ছুঁয়ে থাকা ভাবনা

চ ম্পা  না গ


ছুঁয়ে থাকা ভাবনারা...
প্রতিদিন মনের খাতায় 
কতকিছু লিখে যায়...
তবুও শেষ হয় না জীবনের গান...

শৃঙ্খলিত যাপনের মাঝে,
মন হেঁটে চলে দীর্ঘ আঁকা বাঁকা পথ...
হারিয়ে পাই না যত!
পেয়েও হারাই তত!!

দুই ফোঁটা চোখের জল,
যার হয় না কোন রঙ 
নানান রঙে থাকে ভরা;
বাস্তবের পাণ্ডুলিপিটা...!!

সুদূর পিয়াসী মন...
পরিযায়ী পাখীর ডানায়,
নীড় খোঁজে ফিরে...
কত আশায় ঘর বাঁধা!!
তবুও নিরাশার জলে শুধু ভাসা...






তোমাকে ছুঁয়ে

চ ম্পা  না গ


মেঘ ছুঁয়ে স্বপ্ন ভাসে চোখে...
আজও দিনগুলি আছে সোনার ফ্রেমে বন্দী!
কতোবার তোমার প্রেমে হয়েছি সিক্ত!
ভালবাসায় ভিজতে কত 
ছুঁয়েছি তোমায়...
কতো ভেসেছি প্রেমের জোয়ারে শুধু তোমার হৃদয়ে অবগাহন করতে করতে!
গোধূলির শেষ আলো মাখতে মাখতে, কৃষ্ণচূড়া ফুল গুঁজে দিয়েছ খোঁপায়,
হাতে হাত রেখে হেঁটেছি কত পথ...
আবেশে জড়ানো সেই স্পর্শ আজও হাতড়ে বেড়াই মনের চোরা গলিতে...!!
জানি না মনে কী পড়ে তোমার,
সমুদ্র সৈকতে হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে যেতাম ঢেউয়ের সাথে দুজনে!!
আজ এতোকাল পরে সেই সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে আমি ...!!!!
সবই আগের মতো আছে শুধু নেই তুমি!
হাজার প্রশ্ন আজ কেমন যেন মেঘ হয়ে 
জমে আছ হৃদয় জুড়ে ...!!
আজও অনুভূতিতে শুধু তুমিই তুমি...
তোমাকে ভালবাসতে হাজার বছর যদি পার হই সাঁতার কাটতে কাটতে... তবুও হব নাগো আমি ক্লান্ত।
তুমি যে আমার আজীবনের চির বসন্ত!!






ওদের কথা

ঋ ষি 


বেশ কিছুদিন পর পর ফিরে আসে ওরা আমার ঘরে 

গলার কাছে আটকে থাকে,

আমি ওদের বসার আসন পেতে দি, দুটো ভাতে ভাত, কাঁচা লংকা খেতে দি 

ওরা সবসময় ঘুরতে থাকে আমার চার পাশে। 

এই শহরের রাস্তায়, হাটে, বাজারে, অফিসের কাজের চাপে 

ওরা আমার সাথে থাকে 

আমি অবাক হয়ে ভাবি ওরাই আমার বন্ধু বোধহয় 

আমি ওদের বন্ধু বলি, লোকে বলে কষ্ট। 

সারাদিন পরে ক্লান্ত হয়ে আমি ফিরে আসি আমার আস্তানায়

ওরাও ক্লান্ত তখন আমার মতো,

ওরা আমার মুখের দিকে তাকায়, ওরা হাসে আমার আয়নায়

আমি ওদের প্রশ্ন করি, কেমন কাটলো দিন?

ওরা বলে যেমন তোমার,

আশেপাশে লোকজন ভয় পায় ওদের 

বলে কষ্ট ধুর, ওরা না থাকলেই তো জীবন বিন্দাস।

এইভাবে দিন কাটতে থাকে 

হঠাৎ করে একদিন সকালের বিছানা হাতড়ে আর পাই না ওদের 

আমি ওদের খুঁজতে থাকি,

বুঝতে পারি ঢোক গিলতে আর তো কষ্ট হচ্ছে না,

বুঝতে পারি ওরা আমায় ছেড়ে গেছে  আবারও ফিরবে বলে, 

আমি হাসি মনে মনে 

খানিকটা বিরক্ত হই ওরা  আমাকে না বলে যাওয়ার জন্য।  

আমি জানি লোকে ওদের কষ্ট বলে 

কিন্তু ওরা আমার বন্ধু 

যখন কেউ থাকে না ওরাই তো থাকে

তাই আমি আবারও ওদের ফিরে আসার অপেক্ষা করি।





অমতবাদ

চি র ঞ্জী ব  হা ল দা র


ক) সঙ্গম পরবর্তী সমস্ত ভূমিকা অমিথ্যের প্রতারক।

খ) প্রায়োগিক চরিত্ররা দ্বন্দ্ব মর্দন স্থগিত রেখে ভীড়ে গেছে রথযাত্রায়।

গ) গুলে যাওয়া আলতার শীৎকার আর ম্যাথমেটিক্স প্রিয় লিপস্টিক এখন নিদ্ঘুমে।

ঘ) গুপ্ত ডায়রীর সমস্ত পৃষ্ঠার মার্জিন এখন প্রতারকের নামভূমিকায় টি আর পি-র অনুঘটক।

ঙ) উৎকৃষ্ট কালির প্রাপ্তিস্থান যে নেওটা আঁধার 
তা কোন এক অধ্যাপকের নোট  থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছে।




দর্শন

চি র ঞ্জী ব  হা ল দা র


পাগলরা আয়না দেখেনা।
অথবা দেখলেও তুমি তাকে ওই প্রহরে ঈশ্বর ভাবতে।

এক একটি ধ্বংসাত্মক প্রেরণার পর আবির্ভূত হবেন ঈশ্বরী। তার সারা গায়ে উৎকৃষ্ট চন্দনের আলপনা ।
তার বিশ্বস্ত ঘোটকটি তোমাকে বাদ দিয়ে তোমার পোষাক আর নিরাকার অস্মিতা বাহক।

উলঙ্গ আয়না তোমাকে উলম্ফন শেখাবে বলে 
এক অন্ধ শিক্ষিকার কাছে প্রেমের পাঠ নিচ্ছে।




ধার্মিক

চি র ঞ্জী ব  হা ল দা র


সম্ভবত স্নায়ুরোগের কারনে সমস্ত প্রেমিকরাই অ্যাসাইলামমুখী।
আসলে কাকটা তোতা পাখি হবে বলে এক মুখ ঢাকা
 গুপ্তচরের কাছে সহজ পাঠ শিখে নেবে।
এমন এক ঈশ্বরবোধের নাম চুম্বন।

তেমন দ্বীপে তোমার কোন বান্ধবী নেই। 
আকাশ থেকে নেমে আসে নাগরদোলা 
তোমার পক্ষে বিবৃতি দিলেও জানতে পারোনি অ্যাসাইলাম অধিকর্তা তোমার প্রতিদ্বন্দ্বী।

সম্ভবত স্নায়ুরোগের কারনে সমস্ত প্রেমিকরাই কাঁচা কামরাঙাকে আপেল ভেবে মধুচন্দ্রিমার ফর্দ লিখতে বসে।
হে ঈশ্বর তুমি ইহাদের পক্ষে সাওয়াল জারি রেখো প্লিজ।






সঙ্গীত পরম ধন

মু ন মু ন  মি ত্র


সপ্তসুরে বাঁধা আছে জীবনের গান,
একটি তার ছিন্ন হলে বাজেনা মনোবিতান।
দুঃখ তাপে ব্যাথিত চিতে, হৃদয় ভারবাহী হলে প্রকাশ পায় সঙ্গীত,
নদীর স্রোতের মতো বয়ে যায় সময়,
ঝর্ণাধারার মতো কন্ঠ হতে বাহির হয় আনন্দের গীত। 
সুর, লয়, তাল, ছন্দ প্রতিটি কর্মেই আছে, উপলব্ধিতেই সম্প্রীত।
বিশ্বের আনন্দযজ্ঞে, দেবী সরস্বতীর আবির্ভাবে বেজে ওঠে সকল বাদ্যযন্ত্র,
সকল ঋষির যৌথ সমাগমে উচ্চারিত হয় বেদ, উপনিষদের মন্ত্র।
নারদ মুনির সঙ্গীতে ধন্য, ধন্য করেন স্বর্গরাজ্যের সকল দেবদেবীগণ,
প্রাতঃকালে শুরু হয় আবাহন।
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত থেকে সকলপ্রকার সঙ্গীতে স্থান পান বিশিষ্ট শ্রদ্ধেয় সঙ্গীতাচর্যগণ,
এমন শিল্প সৃষ্টির স্রষ্টা, যিনি স্বয়ং সঙ্গীত করেন আরোহণ।
ঐতিহাসিক যুগে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সর্বাধিকারেরা সঙ্গীতচর্চায় স্থানাধিকার করেন,
বর্তমান প্রজন্মে ও অনেকে এমন বহুল দৃষ্টান্ত রেখে যান।
ভালোবাসা দিয়ে গড়া, স্বপ্নের মহড়া, সঙ্গীতই যেখানে সাজায় বহুমূল্যের পসরা।
বেসুরো সুর বাঁধি অন্তরে, না জানি কেমন করে নিজের অজান্তেই গুনগুনিয়ে গান হয়ে যায়।
কালের নিয়মেই যে ছিল আপনার থেকে আপন সেও কখনো পর হয়ে যায়।
এ ভগ্ন হৃদয়ে, সঙ্গীতই যেখানে একমাত্র উপহার, নইলে যে সব মরীচিকার ন্যায় রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়।
বালুকাতটে নেই তৃণভূমি, নেই কোন আশ্রয়, প্রকৃতি এক আশ্চর্যময়, পাহাড়ের বুকে সুর প্রতিধ্বনিত হয়।
এ এমন এক জাদুকরি মন্ত্র, যার দ্বারা দূর হয় সকল দুঃখ, কষ্ট,
বেঁধে রাখে সকলেরে একত্রে, যে মন বাঁধনহীন, সেই মনটারেও খুব যত্নে, আগলে মুক্ত করে, যুক্ত করে একনিষ্ঠ এক বীণার তারে।
হে আমার শ্রদ্ধেয় পরম গুরু,(আরতী চক্রবর্তী) চলে গেছ দূর হতে দূরে, রয়ে গেছে তোমার অমূল্য স্মৃতিখানি মনের গভীরে, রেখে গেছ সপ্তসুরে সঙ্গীতালঙ্কার, চাইবোনা কোন বর আজি এ ভিক্ষাছলে গুরুদক্ষিণা নাও মোর, চরণে লহো প্রণাম।
অন্তরস্থল হতে আজি এ মোর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
 



লেখকের প্রত্যুত্তর

মু ন মু ন  মি ত্র


পাঠকগণ জিজ্ঞাসিল মোরে, হে কবি এমন লেখা উপহার দিলেন কেমন করে?
উত্তরে কহিলাম, হৃদয়ের  অন্ধকার দ্বার হতে নেমে আসে আলোর ফুলকি, যেখানে জ্বলে অজস্র জোনাকি।
গভীর মনের ক্ষত, মুখ বুজে রয় একাকী, জ্বলন্ত লাভার  ন্যায় কলমের কালি হয়ে ঝরে পরে মুক্তাক্ষরে কাগজের পাতায়।
একজন কলমচি হিসেবে সেইদিন স্থান পায় জগৎসভায়।
সত্য, সাম্যের দৃষ্টি নিয়ে পথ নাহি শেষ হয় লেখকের লেখায়,
যেদিন রবো না এই জগতে, থাকবে মোর সকল স্মৃতি, লিপি হয়ে রয়ে যাবে পাঠকের মনের আঙিনায়।
স্বার্থকরূপ পাবে তব লেখনী,
বিন্দু, বিন্দু জল দিয়ে গড়া যে সিন্ধু, সকলের মাঝে পুস্তকরূপে প্রকাশিত না হলে,
ঠাঁই পাবে নাকি কোনদিনই এই হতভাগ্য লেখকের কাহিনী?
যে প্রজ্জ্বলিত জ্ঞান লেলিহান  শিখায় জ্বলছে অন্তরের গিরির গিরিশিখায়, অগ্নুৎপাতরূপে বাহির হয়ে স্রষ্টার দ্বারা সৃষ্টি হয়।
সৃষ্টি, ঈশ্বরের আশীর্বাদের বৃষ্টি,
পাঠকগণ পড়েন দিয়ে অন্তরের দৃষ্টি।
লেখক ও পাঠক উভয়ের মধ্যে তৈরি হয় একটি সাঁকো,
যা পার হয়ে যেতে পারলে সম্মুখে গভীর সমুদ্র,
যে সমুদ্রে থাকে আনন্দাশ্রু দিয়ে ভরা জল।
পাঠকের অনুভূতিতে, পদ্মপাতায় শিশিরবিন্দু পরে যেমন করে টলমল।
উভয়ের মেলবন্ধনে যা পরিণত হয় ক্ষীরসাগরে।
পরিস্ফুট হয় অক্ষর, যেন ক্ষীরসাগরে ক্ষীরের পুতুল রূপে।।






শ্রী বিষ্ণুর মায়াতেই আছে তব ছায়া

মু ন মু ন  মি ত্র


গোলকের চতুষ্কোন হতে পবন আজি ছুঁয়ে যায় দক্ষিণ দুয়ার হতে,
সাজো সাজো রব ওঠে, স্বয়ং বিষ্ণু দাঁড়ায়ে আছে আজি প্রাতে, ভিক্ষার ঝুলি হাতে।
মাতঃ ভিক্ষ্মাং দেহি
হৃদয়ে ত্যাজ জ্যোতিপুঞ্জ, যাহার চরণতলে সকল ভুবন দোলে,
ব্রক্ষ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর এই ত্রিশক্তির দিব্যজ্যোতি দ্বারা সৃষ্ট মহামায়া,
ধ্বংস করে সকল অশুভ শক্তির ছায়া।
আজি ভিক্ষার ছলে ছলনা করো মোরে, আমি যে তোমারই কায়া তব হৃদি পদ্মদলে।
ভিক্ষা তব নিতে চাও আমার কাছ হতে? 
রুদ্রবীণা বাজে তব প্রাণে, এসেছ মোর দ্বারে?
এ অর্ঘ্য তোমারে করি নিবেদন,
মোর প্রাণের দান, দুমুষ্ঠি খুলে দেও বাড়ায়ে হাত।
বর যাহা মাগি, দিও তাহা প্রাণ ভরে, এ ভুবনে আছে যত দুঃখ, কষ্ট, তাপ লভিতে হবে সকল পাপ।
মাথা নত করে সম্মুখে দাঁড়ায়ে আজি, দু নয়নে অশ্রুপাত, করজোড়ে করিয়া প্রণাম হরণ করো মোর শোকতাপ।
ত্যাজিয়ে এ জীবন ছাড়িয়াছি দ্যুলোকে,
অনিদ্রায়, অনাহারে নিশিযাপন করিয়াছি, কাটেনাই বেলা ঐ ভূলোকে।
দেখাই যদি দিলে তব ক্ষান্ত কেন হলে, দেখাও তোমার মোহমায়া এ জগৎজালে।
তোমার ই এই মায়ায় সৃষ্ট সকল বিশ্ব-ব্রক্ষ্মান্ড, এ জগতের সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং জগতেরে করিয়াছে আপন।।







কবিতাগুচ্ছ

জননী

অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত


বিষণ্ণ শীতের কোনো একদিন
নৈঃশব্দের প্রতিমা হয়ে  উঠোনের তুলসী তলায় শুয়েছিল আকাশের ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ! 
         জানো মা--- 
স্তব্ধতার রেণু অশ্রুবিন্দু হয়ে
বাতাসে মিশে মিশে  আকাশে
কেমন বুনে যাচ্ছিল অবিশ্রান্ত 
স্মৃতির  প্রবঞ্চক রাত?

Dream the lost spellings
in this bitter world 
            Cristofar Marlo 




নিরুদ্দেশের গান

অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত 
               

                অথচ 
আজও কি কেউ সরিয়ে রাখে হাতে হাত রাখা প্রেমিক বাতাস?
সরু গলির শেষে সতত আমি চাতক প্রতীক্ষায় থাকি!
শব্দহীন  আকাশে দৈত্যের মাতো কালো মেঘ ভিড় করে
ভেসে ভেসে আসে!
ঝুমা তুমিই বলো--- বৃষ্টি আর বিদ্যুৎ মেখে আমি কি যাবো নিরুদ্দেশে?





কবির কাছে

অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত 


বলো--- কার কি যায় বা আসে 
তুমি জন্মেছিলে আজ থেকে 
ঠিক একশো বছর আগে?
ওদিকে স্মরণে ও মননে 
নয়শো দিন পার!
রাজপথে মেধাবী যুবকদের 
অশ্রু ঝরে অনিবার!
তাদের চোখের জলে "আয় 
বৃষ্টি ঝেপে!"
ফেবু চলে গান চলে ভাষণ  ঝাড়ি শব্দ গুনে--- মেপে!
ডান-বাম ঠিক রাখি 
জল মাপি কুল ঠিক দেখে!
তোমার কবিতা দুরাক্রম্য স্বপনের মতো আমার কি সাধ্যে তাই জোটে!
তবুও দেখি জন্মভূমি অগ্নিগর্ভ 
রাজপথে মিছিল নামে--- অশ্রু 
রক্ত হয়ে ঝরে বারবার!
"অন্ধ হলেও কি প্রলয় বন্ধ থাকে?" অমেধাবী  জনগণ হয়তো বিদ্বজন ছাড়বে এবার!

(প্রিয় কবি বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের একশততম  জন্মদিনের পুণ্য স্মৃতিতে।)




আলেয়ার দেবীকে

অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত


তুমিও কী স্মৃতির মতো দেহহীন হয়ে আজ নিজেকেই ডাকো?
কোনো আলো নেই--- কোনো গোপন অনুভূতি নেই! কোনো এক অনিচ্ছুক বাঁশি যেন বাজাতে বললেই তবে বাজো?
                       অথচ--- সকাল তো অনেক দূর!
ভালোবাসা সেই সূর্যের ভোরে ডেকে গেছে কবে?
                তুমিও স্মৃতির প্রতিমা হয়ে খড় নিয়ে বেঁচে আছো--- "হে দেবী! ভালোবাসা বাঁচবে কিভাবে?"





অশ্রুদিনের কবিতা

অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত


পৃথিবীর নগন্যতম বস্তুর মতো কেউ সবার অগোচরে পুড়ে গেছে কাউকে ভালোবেসে!
তুমিও কী তাকে ফিরিয়ে দেবে? দিও না! কারণ--- হৃদয় জুড়ে যার মৃত হাঙ্গরের শব--- সে কী গোধূলি সন্ধ্যার কামরাঙা সূর্যকে আর ভালোবাসে?





যুগ কথা

অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত  


               হয়তো 
কৃষ্ণ কিশোর আকাশে লেজ লাগানো ঘুড়ি উড়লে তোমার কথা  আজ ও কারোর কারোর মনে পড়ে!
লিখে রাখছে সে ভাঙা হৃদয়ের জানালা প্রণয় দরজা খুলে বন্ধ করার অব্যক্ত কথা 
বাজারের হারিয়ে যাওয়া পুরানো  মেঠো বাঁশির চাপা  
                     মৃদু স্বরে!





জীবনের অল্প অল্প গল্পস্বল্প

জ বা  ভ ট্টা চা র্য


                    এক
   
   তখনও  চোখ ভরা ছিলো নীলাঞ্জনের বসবাস---
   তবু তুমি আমায় ডেকে, প্রায় চুপিচুপি
   লাল গোলাপের কথা বলেছিলে।
   সেই থেকে তোমাকে আমার
   অসমাপ্ত গল্পের পংক্তিতে
   লুকিয়ে রেখেছি।


                       দুই 

   আঘাতের সব গল্প কখনও  কি শেষ  হয়?
   ক্রমে  ক্রমে পাঁজরের সবকটা  হাড়
   ভেঙেচুরে  নিতে  পার, যদি চাও---
   দিনের শেষে তবু ওষ্ঠ আমার 
   কুড়িয়ে নিয়ে আসে, শেষ
   লিবিডোর গান।


                       তিন

   অবশেষে আকাঙ্ক্ষাকে প্রত্নযুগের            
সূত্রাকারে লিখি
   যাপন আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধি সময়ের শব্দসুতোয়
   একে একে কান্নারা থামে, জল ঢালে
   চিতাও নিভে  যায় শেষে, হুতাশে
   জীবনের সব গল্পেরা ছাই হয়ে
   পঞ্চভূতে  মেশে।






কবিতাগুচ্ছ

স ঞ্চি তা  গো স্বা মী

                    (১)

সব স্বপ্ন ভেঙে যায়, সব ফুল ঝরে যায়
নিয়ত রক্তাক্ত হয় বুকের গোপন বাতায়ন,
তবুও, নব অঙ্কুর মেলে দেয় নব পল্লবের ডানা
প্রতিদিন পুষ্ট হয় রোদ্দুরে শিশিরে,
শুধু একা মাটি কেঁদে যায় নিঃসঙ্গ বিবরে।।


                    (২)

 অসীম শূন্যে ছড়িয়ে দিলাম আমার যতো মিথ্যা যাপন...
নদীর জলে প্রতিবিম্বের মত আমিও চূর্ন হয়ে যাই সময়ের দর্পণে।
শব্দের ভেতরে প্রতীক খুঁজি না আর, 
অলীক কোনো স্বপ্নের প্রতি মোহ নেই কোনো।
পুরনো বন্ধুরা একে একে সরে গেছে অতৃপ্ত আকাঙ্খায়...
দু হাঁটুতে মুখ ঢেকে বন্ধ করে দিয়েছি সময়ের জানালা, দু চোখে ক্লান্তি অনিঃশেষ...
এখন আমার একলা যাপন।।


                    (৩)

আমি যদি নিদ্রামুগ্ধ  হয়ে স্তব্ধ হয়ে যাই,
পৃথিবী গড়িয়ে পড়ে দশ আঙ্গুলের ফাঁকে,
বাকি সব কথা অন্তঃসলিলা

বুকের বালিতে চাপা পড়ে থাকে...
যা হবে, তা আমার হোক
তুমি শুধু দীপ্ত ওষ্ঠ খোলো।।

                    (৪)

অভাবী শ্রাবণের প্লাবনে ভাসে অসুখ নদী
নোনা জলে ভাসে সুখের অসুখ
দেখিনি খুলে তোমার চিরকুট,
কী লেখা ছিলো গোপন মায়াবিনী??
এতো দেখি... তাও দেখা হয়নি...।।

                    (৫)

চেনা পথে যাতায়াত খালি
জল ঢালি শুধু ফুটো কলসিতে
দিনের শেষে চোখে বালি...
তবু, বেঁচে আছি।
তুমিও কি আছো??






কলমশ্রমিকের ছয়কাহন- ছয়েতে ছয়

ক ন ক কা ন্তি  ম জু ম দা র 


               তুমি

তোমায় ভালবেসে একরাশ অভিমান জমিয়েছিলাম,
দিন শেষের মিলনে তোমায় সাজিয়ে দেবো 
দু'হাত ভরে।
রাত শেষের বার্তা জানান দিলো প্রভাত আগত,
তুমি অধরা সূর্যের আলো নিয়ে মেঘের আড়ালে।




               আশা

মাটি খুঁড়ে জল পাওয়া যায়
হৃদয় খুঁড়ে পাই ভালবাসা।
তোমার কাছে থাকনা 
আমার এইটুকু আশা!




               বলি কি

ছোটবেলা সাথে রেখো,
সারা জীবনের সাথে সাথে।
বয়স কাছে ঘেঁষবে না কাছে,
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত...।
মেঘনা পদ্মায় তো এখন 
বর্ষার জোয়ার,
কবিতার ক্লাসরুমে কবিতার কি 
আকাল?




               স্মৃতি

স্মৃতিতেই আছে শুধু তুমিটাই নেই,
নাই থাকল তবুও স্মৃতি আছে।
তুমি কিন্তু আজও আছ আমার মনে,
যেমন আমি আছি তোমার মনে!
প্রেমের মৃত্যু আছে গ্রহন বর্জন আছে।
স্বপ্ন চিরস্থায়ী বলে,
অলিখিত বিলাস আছে।
গতকাল আজ হয়, আজ কাল হতে পারে,
কিন্তু স্মৃতির ভাণ্ডার সু-সজ্জিত বর্তমান।




               চাই

চারিদিক কুয়াশার চাদরে ঢাকা,
তারি মাঝে উঁকি দেয়
মনের লুকানো কথা।
এলে যদি দিও সে বারতা...।



               শরৎ

শরৎ সকালের হালকা এক পশলা,
টুকুসখানি উঁকি দেওয়া সুন্দরীর 
একটু আসকারা 
সোনা রোদের ঝলকানি।
মনের উথাল পাতাল আলোড়ন, 
মন ছোটে আকুলি বিকুলি 
হৃদয়ে লেগেছে প্রেমের দোল।






কবিতাগুচ্ছ

সু শা ন্ত  সে ন


১. 
চেষ্টা

যত চেষ্টাই করোনা কেন পারবে না গাড়ি ঘোরাতে
গাড়ি চাকা রুদ্ধ হয়ে আছে।
সে একদিকে শুধু চলে যাবে মাইলের পর মাইল 
স্পিডোমিটারের নিয়ম মেনেই
থামবে শুধু 'প্রস্থান' চিহ্ন পেলেই
মরুদ্যান দেখে দেখে।
যত চেষ্টাই করোনা কেন পারবে না গাড়ি ঘোরাতে।


২.  
ডাক

হাতছানি দিয়ে ডাকলেই
কি মেঘ ভেদ করে সূর্য ঝলসে উঠবে!
খাবলে খাবলে খেলে বদ হজম হয়
তাই গোটা গোটা চন্দ্র সূর্য তারা গিলে
বুদ হয়ে আছে মহাকাশ।
হাতছানি দিয়ে ডাকলেও
দেখতে পাবে না কিছুতেই।


৩. 
মেয়ে

সেই মেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো
তখন সন্ধ্যাও ঘাড় ঘুরিয়েছে
বসন্ত বাতাসও।
তুমি হারিয়ে যেও না অনুপমা
সন্ধ্যা ও বসন্ত বাতাস- তোমরাও
সঙ্গে এসো।
সেই মেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়েছে।



৪.  
কবি

কবিতা নশ্বর নয়- কবিরাও নয়
অধুনা নশ্বর শুধু আমার হৃদয়।
এহেন হৃদয় ছিঁড়ে পলাতকা ওড়ে
তুমি হাসো মালবিকা, থাকি স্বপ্ন ঘোরে।
দর্পণে শরৎশশী নিকষিত প্রেম
ইন্দুবালার সাথে সেখানে ছিলেম
সার্চলাইটের আলো স্টেজের উপর
সম্পূর্ণ জীবন জুড়ে আসেনা উত্তর।
যশ নয় মান নয় শুধু ভালোবাসা?
নিরুত্তর থেকে যায় প্রত্যেক জিজ্ঞাসা।
কবিদের প্রশ্ন যেন বিভীষিকা-ময়
তারাই চলেছে বয়ে তাপিত হৃদয়।


৫.  
টি টোয়েন্টি

ধুম ধারাক্কা ধুম ধারাক্কা 
হয় ছক্কা নইলে অক্কা।

মারল টেনে সামনে সপাট
কানায় লেগে বল লোপাট
সোজা পেরোয় বাউন্ডারি
মার কাটারি মার কাটারি।

একশ কুড়ি বলের খেলা
দেখছে সবাই বসছে মেলা।

উত্তেজনায় ভরছে মাঠ
অফ ড্রাইভ স্কোয়ার কাট 
ব্যাটিং আরো কত রকম 
স্পিন বোলিং গরম গরম।

দেখছি সবাই আমোদ করে
বন বানাবন মাথা ঘোরে।


৬.  
নারী

নারী যখন ফেলে চোখের জল
বিশ্ব অন্তরাত্মা তখন কাঁদে
পুরুষ তখন পশুর থেকে অধম
জীবন তখন পড়ে কুটিল ফাঁদে।

নারীর কাছেই জন্ম ভিক্ষা নিয়ে
কিসের ক্ষুধায় নারী কে চাই ভোগে
পুরুষ হওয়া নয়তো এত সোজা
বিয়োগ সোজা অঙ্ক শক্ত যোগে।







কবিতাগুচ্ছ

মনোমৃত্তিকা

হা বি বু র   র হ মা ন  এ না র


উচ্ছলিত শিশিরের কল্লোলে ভাসতে ভাসতে
নিরুদ্দেশ প্রহরের দেশে ঘর বাঁধবো একদিন

এই আকাশ... তোমাদের চোখে চোখ রাখবে
রোজকার নতুনতা নিয়ে

এই মাটি—
পরম স্নেহে নদ-নদী... তরুপল্লবের গৌরবগাথা
শোনাবে তোমাদের

শালিক-দোয়েল-ডাহুকের কোলাহলে তখনও—
ঘুম ভাঙবে... ইঁট পথরের যান্ত্রিক নগরের বুকে

অনেক মনোমৃত্তিকা তখনও রক্তে-রঞ্জিত হবে-
হয়তো- সমস্ত নিয়ম অনিয়মের ছুরির ঘায়ে...
দারুণ বিপন্ন হবে... মানবতা




স্বপ্নবাজ পাখি

হা বি বু র  র হ মা ন  এ না র


পরানের প্রিয় প্রচ্ছদে প্রস্ফুটিত হবে,
নীলকণ্ঠ হয়ে তোমার; সুনির্মল হাসি!

সুনীল চক্ষু-নীড়ে স্বপ্নবাজ পাখির...
অবাধ ওড়াউড়ি!

বড় বেভুলা, ক্লান্ত-শ্রান্ত পথিক এক!

আড়ি পেতে... আমি, না জানি কখন;
ভেঙে পড়ে এই অপেক্ষার বাঁধ?




আশিকা

হা বি বু র  র হ মা ন  এ না র


আশিকা দোকান খুলেছে— মাংসের দোকান
স্তরে স্তরে সুসজ্জিত টাটকা... পণ্যসম্ভার

মনোহরী পান মুখে পুরে, দিনরাত চলে
নাগরিক সভ্যতার আনাগোনা... সবুজ অট্টালিকা

নিচে পানের দোকান, দোকানী আশিকার লাঙ

লাঙের পান, আর আশিকার মাংসের দোকান
সম্প্রতি— ভরা নিদানেও অনেক ডিমান্ড





কবিতার অন্বেষণে

প লা শ  বি শ্বা স 


               ( ৪৭ )

ধূপের ধোঁয়ার মতো বিলীন হতে চায় মন
তোমার অন্তহীন ভালোবাসার মাঝে
একটু একটু করে 
আর ধোঁয়ার কুণ্ডলী মুক্ত আমি
সেই পবিত্র ক্ষণে শুধুই তুমি 
                                     

              ( ৪৮ )

নদী জলে ঢেউ গুলো চলে উৎসের বিপরীতে
আমার হাতে গোনা ক'টা ঢেউ চেয়ে থাকে
তোমার দিকে হাঁ করে
ঘুণধরা কাঠের ওপর হেঁটে যাওয়া পিঁপড়ের মতো
গুটি গুটি অসীম গন্তব্যে
                              

              ( ৪৯ )

পথে যেতে যেতে খুঁজি তোমায়
দু-দণ্ড দাঁড়িয়ে দেখি
পথ পাশে তোমার হাসি হাসি মুখ বনফুলে
আকাশ তলে সোনা রোদে ভিজিয়ে নিচ্ছো নিজেকে
আর মুখায়ব জুড়ে ষোড়শীর প্রেম প্লাবন
                                 

              ( ৫০ )

আমি নদীর মতো মিশে যাবো একদিন তোমার সাগরে
আঁকাবাঁকা পথে যেতে হয় কেনো 
অত বুঝি না বাপু
সহজ সরল নয় সে পথ আমার মনের মতো
তুমি হাত ধরে নিয়ে চলো আমায় সর্বক্ষণ
                                        

              ( ৫১ )

যেতে যেতে পথ থমকে দাঁড়ায়
তোমার আমার পাগুলো জড়িয়ে যায় সময়ের সুতোয়
কিম্ভুতকিমাকার আলাপন প্রেক্ষাপট
হাঁ করে তাকিয়ে থাকে আমাদের দিকে
আর পরস্পরকে হারানোর ভয় মিছে গল্প ফাঁদে
                                         

             ( ৫২ )

তোমায় দেবো বলে শিশির কুড়িয়েছিলাম এক মুঠো
আর রোদ্দুর এক মুঠো
এক আকাশ কুয়াশা নিয়ে যাচ্ছে আমায় অজানা দেশে
আমি খুঁজে চলেছি তোমায় ঝাপসা দৃষ্টিতে
ওই তো পরীর বেশে আজও তুমি





কান্না-হাসি

সু নৃ তা  রা য়  চৌ ধু রী


'ওগো আকাশ, এই তো সেদিন শ্রাবণ জুড়ে কাজল কালো
মেঘ যে ছিলো,
কোথায় গেল?
আজকে তারা কোথায় গেল?

সব ঝরালে আমার বুকে?
 আজকে দেখি নি-ভার সুখে
সাদা মেঘের ভাসিয়ে ভেলা চলছো কোথায়? কোন মুলুকে?
একটু সাদা যাও না রেখে।' 
মেঘ চলে যায়, মাটি থাকে মলিন দুখে।

দেখলো মাটি টলটলে ঐ নদীর জলে
সাদা পালে নৌকা চলে
অমনি কথা উঠলো বলে, 'সাজাও আমায় ঐ ধবলে'।
সব বিফলে।

আবার দেখে মাথা তুলি, 
চলছে ঢুলি। 
বকের পাখার ঝালরগুলি
চলার তালে উঠছে দুলি।
সেই তালে তার ফুটলো বুলি,
'সাদা রঙে ডুবিয়ে তুলি
আঁকবো ছবি ভাবনা ভুলি,
সাধ হয় যে অমনি করে হাওয়ায় হাওয়ায় আমিও দুলি
হাওয়ায় নোয়াই মাথাগুলি'।
কেউ তো কথা নেয়না কানে, যাচ্ছে চলি।
অশ্রু ওঠে ছলোছলি।

শরৎ রাণী আসেন পাশে
স্নেহের বশে, শিশির স্নিগ্ধ তাঁর পরশে
মনটি যে তার উঠলো ভরে কী হরষে।
মাটি হাসে, 
সেই হাসিটি দিচ্ছে দেখা আন্দোলিত শুভ্র কাশে।
ছুটির বাঁশি হাওয়ায় ভাসে, 
ঐ শোনা যায় আগমনীর বার্তা আসে।








মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল সংখ্যা || ৪ ফাল্গুন ১৪৩০ || ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪