রম্য রচনা



ফুটন্ত

অ লি পা ব সু

কোন মুলুকে ছিলাম কে জানে৷
এখন নেমে এসেছি ভার্চুয়াল
শহরের রাস্তায়। কত বড় শহর, কিন্তু প্রাণ নেই। ঝাঁ চকচকে রাস্তায় এত পোকামাকড়ের মধ্যে লোকজন চলাচল করে। তাদের মুখ আলোয় ডুবে অন্ধকার। তবে পাগুলো খুব কথা বলে। কথার তাপ ছড়িয়ে পড়ে বাজারে। বাজার থেকে পৌঁছে যায় রান্না ঘরে, সেখানে গ্যাস আছে, সুবিধার জন্য ইনডাকশন মাইক্রোভেন আছে। কিন্তু বাসন সব্জি আমিষ নিরামিষ ভাগে ভাগে থেকেও ছটফট করে।
বাজারের বাতাসে এত তাপ যে সেখানেও রান্না হয়ে যাবে।

বাজারের ভিতরে একগুঁয়ে নরম রোড চলে গেছে টাউনে।
দু'দিকে বসত বাড়ির শিকড় অনেক নীচে।
এরা বাজার থেকে শুধু নিঃশ্বাসটা নেয় মুখ বাড়িয়ে। হাওয়া চলাচলের গতিকে বাজার থেকে টেনে নেওয়ার এটাই পথ ৷ মাঝে মধ্যে দারুণ ওলটপালট ঘটে। বাজার থেকে পাহাড় নদী সমুদ্র নিঃশ্বাসের টানে চলে আসে, তার আভাস পায় প্রতিভাবান টাউনশিপ কর্তা, তার দিনের দরকার নেই, পায়ের ঠোকায় আগুন জ্বালিয়ে
ভাত রান্না হয় ৷

তাতে কি 
দুদিকেই তাপ আছে।
দুদিকেই মশলা সামগ্রী আছে।
দু'দিকের রান্না মেলানো দরকার।

খুব খিদে পেয়েছে। ভাবছি খাওয়া কত মজার! কিন্তু কিছু জোটেনি।
হাড়ি কড়াই জোড়াতালি দেওয়া বন্ধ করে হাত গুটিয়ে বসে 
আছি।
ওরা আত্মদর্শন ছেড়ে রান্নার সমস্যায় নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছে। যতক্ষণ গায়ে না বেঁধে বুঝতে পারবে না কাঁটার ধকল।

কোথায় ভাত ফোটাবো তা না; একা বসে আছি এক মুঠো ছাই ভস্ম নিয়ে। এই মুঠে ছাই তো ঐ মুঠে....!
এ যে কত বার দেখলাম তার ইয়ত্তা নেই ৷






একটি অদ্ভুত চুক্তি

জা হি দ হা সা ন রা জু 

মেয়েটার সাথে গতবছর আমার বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে আমাদের প্রায় ১২ বছরের প্রেম ছিল। সেই স্কুল জীবন থেকে! প্রেমের মত গতানুগতিক শব্দের চেয়ে যদি বলি 'গভীর ভালবাসা' ছিল, সেটা আরও শোভনীয় হবে। তবে লেখা একটু ছোট করার জন্য গতানুগতিক শব্দটাকেই ব্যবহার করব। 

আমাদের প্রেমটা একটা চুক্তির উপরে দাঁড়িয়ে ছিল। একটা অদ্ভুত চুক্তি। দুজনেই একমত হয়েছিলাম আমরা কেউ কাউকে চিঠি লিখব না, মোবাইলে কোনও মেসেজও লিখব না। তবে মোবাইলে কথা বলা, সামনাসামনি দেখা করা, সামনাসামনি কথা বলা সব চলত। 

আসলে এমন অদ্ভুত চুক্তির প্রস্তাবটা আমিই দিয়েছিলাম। যে মেয়ের কণ্ঠ এত মধুর, যার হাসিতে মুক্তা ঝরে সে কেন কষ্ট করে মেসেজ লিখতে যাবে! তার চেয়ে কেন আমি তার কণ্ঠের শতভাগ মধু উপভোগ করব না! তাই এমন শর্ত। 

রাত জেগে কথা বলতাম। কি মিষ্টি কণ্ঠ! যেন নিশ্চুপ রাতের আঁধারে স্বর্গ থেকে কোনও পরী এসে কানের কাছে ফিসফিস করছে। আহা! সামনাসামনি যখন দেখা করতাম তখনও মুগ্ধ হতাম। তার কি শুধু মিষ্টি কণ্ঠ? মায়াবতী ওই চেহারার বর্ণনা শুরু করলে শেষই হবে না। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী এবং মায়াবতী মেয়ে। চুল থেকে শুরু করে তার পা, সবকিছু মায়ায় ভরা। রাজপুত্রকে উপরে তুলে আনতে যে রাজকন্যা জানালা থেকে নিজের চুল বাড়িয়ে দিয়েছিল তার চুলের চেয়েও সুন্দর। পা জোড়া দেখে বলতে ইচ্ছা হত, "ওই পা মাটিতে ফেলো না, আমি বুক পেতে দিচ্ছি, তার উপর দিয়ে হেঁটে যাও।"

ফুচকা খাওয়ার সময় যখন হা করত মনে হত চিরকাল এই দৃশ্য দেখে কাটিয়ে দিব। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর হা করা মুখ। Maaza আমের জুসের বিজ্ঞাপনে ক্যাটরিনা কাইফের হা করা মুখের দৃশ্যও এর সামনে নস্যি। 

বাদাম খাওয়ার সময় বাদামগুলো হাতের তালুতে ঘষে ফুঁ দিয়ে খোসা ছাড়াত। ভাবতাম বসন্তের আগমনী সমীরণও কি মানুষকে এত মাতাল বানাতে পারে! মনে হত কেন আমি বাদামের খোসা হলাম না! 

১২ টা বছর দেখতে দেখতে কেটে গেল। গতবছর বিয়ে ঠিক হওয়ার পরে আমরা চুক্তি তুলে নিলাম। মানে চিঠি বা মোবাইলে মেসেজ আদান-প্রদানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলাম। 

রাতে মেসেঞ্জারে জিজ্ঞেস করলাম, 
-- তুমি খেয়েছ?
-- hae 

আমি উত্তর দেখে আকাশ থেকে পড়লাম। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আবার জিজ্ঞেস করলাম, 
-- কালকে কি আমাদের দেখা হচ্ছে? 
-- hae 

বাসায় বলে বিয়েটা ভেঙে দিলাম। সত্যি বলতে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। এমন মায়াবতী, সুন্দরী একটা মেয়ে হ্যাঁ এর উচ্চারণ 'hae' লিখে প্রকাশ করতে পারে এটা ভেবেই শিহরিত হয়ে গিয়েছিলাম। অভ্র কিবোর্ডে অন্তত চেক করে দেখত 'hae' লিখলে সেটা হ্যাঁ এর কাছাকাছিও যায় কিনা! তাছাড়া ha, hm, hmm, hu, ho, yes, হ্যা, হু, হ, হুম কতকিছু ছিল! 

তা না, 'Hae'!





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল সংখ্যা || ৪ ফাল্গুন ১৪৩০ || ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪