গীতিনাট্য
জাগো দুর্গা অসুর বিনাশিনি
আ শ রা ফ হা য় দা র
দুর্গা দেবীর স্মরণে মন্ত্র পাঠ:
"ক্তঁ দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা॥ ক্তঁ সর্বমঙ্গলমাঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে। শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহ্স্তু তে।। ক্তঁ জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী। দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোহ্স্তু তে"॥
ঢাক-ঢোল-খোল-করতাল-শঙ্খ-ঘন্টা বাদ্যের সম্মিলিত ঐকতান, ধূপ-ধুনোর সুগন্ধী ধোঁয়া, ফুল-মালা-নৈবেদ্য-চন্দন-অগুরু-কস্তুরী-কর্পূরের মিলিত সুবাস, তার সাথে মন্ত্রোচ্চারণ ও মন্দ্রস্বরে চণ্ডীপাঠ এক ভাবগম্ভীর পবিত্র পরিবেশের সৃষ্টি করে। পূজায় প্রচলিত দেবী দুর্গার ধ্যানমন্ত্র:"
সর্ব্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্ব্বার্থসাধিকে।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্তুতে।।
মহালয়া বা পিতৃপক্ষের দিন থেকে মূলতঃ দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এ দিনে পিতৃপক্ষের শেষ এবং দেবী পক্ষের শুরু হয়। এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে, পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করে থাকে। মহালয়ার দিন প্রয়াত আত্মাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়, প্রয়াত আত্মাদের সমাবেশ হয়। মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষেরও শেষদিন হয়। তাই মহালয়াতে গঙ্গায় অঞ্জলি প্রদান করে পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। পৃথিবীর সমগ্র কিছুর জন্য প্রার্থনা ও অঞ্জলি প্রদান করা হয়।
ভূমিকা:
দুর্গা মূলত শক্তির দেবী। ঋগ্বেদোক্ত দেবীসূক্তকে দেবী দুর্গার সূক্ত হিসাবেই মান্যতা দেওয়া হয়। দেবী দুর্গা নির্গুণ অবস্থায় এই জগৎসংসারে বিরাজ করেন। দুর্গা দেবীর জন্ম হয়না, আবির্ভাব ঘটে। দুর্গা দেবী মহাশক্তি ব্রহ্মার ব্রহ্মত্ব, শিবের শিবত্ব, বিষ্ণুর বিষ্ণুত্ব প্রদান করেছেন, এই দেবী দেবতাদের সমষ্টিভূত তেজপুঞ্জ থেকে স্বরূপ ধারণ করেন। দুর্গা পূজাবিধি তন্ত্র ও পুরাণেই প্রচলিত। মৎস্যপুরাণ, মার্কণ্ডেয় পুরাণ, দেবীপুরাণ, বামনপুরাণ, কালিকাপুরাণ, স্কন্দপুরাণ, বরাহপুরাণ, শিবপুরাণ ও দেবী ভাগবত। দুর্গা দেবী জয়দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, গন্ধেশ্বরী, বনদুর্গা, চণ্ডী, নারায়ণী, শিবানী, কালী ,গৌরী ,উমা, মহাদুর্গা, অগ্নিদুর্গা, শূলিনী দুর্গা, সিন্ধুদুর্গা, মূল দুর্গা--- এইরকম বিভিন্ন নামে ও রূপে পূজিতা হন। তিনি কখনো বা নৃমুণ্ডমালিনী চামুণ্ডা। তিনিই জগদীশ্বরী, আপন মহিমায় এই পৃথিবীতে পরিব্যাপ্ত হয়ে আছেন প্রতিটি জীবের শরীরে। তিনি ঘটন-অঘটন পটিয়সী, দুর্গা দুর্গতিনাশিনী। তিনিই জগৎকে চালান ও প্রতিপালন করেন জগদ্ধাত্রী রূপে। আবার প্রলয়কালে তিনিই হয়ে উঠেন প্রলয়ঙ্করী দেবী কালিকা। দেবী দুর্গা শাক্ত মতে সর্বোচ্চ আরাধ্য দেবী, বৈষ্ণব মতে তাঁকে ভগবান বিষ্ণুর অনন্ত মায়া হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয় এবং শৈবমতে দুর্গাকে শিবের অর্ধাঙ্গিনী পার্বতী। দুর্গা দেবীকে বর্ণিত উমা(পার্বতী) হৈমাবতীকে দুর্গা হিসাবেই আখ্যায়িত করা হয়েছে। ভাগবতে শ্রীকৃষ্ণের যোগমায়াকে দুর্গার একটি স্বরূপ আখ্যা দেওয়া হয়েছে যিনি হরির সহায়িকা তথা শিবভক্তিপ্রদায়িনী। দুর্গাদেবীর বর্ণনা মহাভারতের বিরাট পর্ব ও অন্যান্য পুরাণে পাওয়া যায়। পার্বতীরূপী দুর্গাদেবীর ভিন্ন ভিন্ন অবতারসমূহ হল: কালিকা, নন্দা, ভ্রামরী, শাকম্ভরী, রক্তদন্তিকা, কৌশিকী, ভীমা, উগ্রচণ্ডা, ভদ্রকালী, শান্তা, দুর্গা, অজিতা, অপরাজিতা।
গান:
জাগো দুর্গা জগম্ময়ী
অসুর বিনাশিনি
শারদীয় আকাশে বাজে
তোমারই আগমনী।।
জাগো দুর্গা---
রাতের ও নির্মল আলোর বাঁশিতে
ভোর হয়েছে ভুবন মোহিনী হাসিতে।।
শারদীয় আকাশ সেজেছে কাশফুলে
তোমারই আগমনে মুখরিত হয়ে
তুমি যে চিন্ময় মা দশপ্রহরণধারিনী।
জাগো দুর্গা------
তোমারই আগমনে ফুটেছে শিউলী
রাতেরও সরোবরে দুলছে পদ্মকলি।।
পৃথিবীর বুকে যত জীর্ণতা ঘুচিয়ে
তুমি যে আসো মা দশভুজা রূপে
জাগো মা নারায়ণী তনুমনে।
জাগো দুর্গা---
দুর্গা দেবীর স্মরণে কবিতা আবৃত্তি:
আকাশ পথে জগদ্ধাত্রীর আগমন
'জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী মাতৃরূপি জননী'
শিশিরে শিশিরে শারদীয় আকাশ পথে মায়ের আগমন
ত্রিশূল হাতে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে আসা অসুরবিনাশিনী ।।
চারিদিকে সাজসাজ রব রব আনন্দ উল্লাস
মা আসছে রাতের আঁধার পেরিয়ে সূর্য ওঠা নতুন ভোর
আলোর জোয়ারে উদ্ভাসিত বৃক্ষ তরুলতা
এবার ঘুচে যাবে যত জরাজীর্ণ শীর্ণ মলিনতা
দূর হবে হিংসা বিদ্বেষ, অনাচার, দুরাচার, অবিচার, যত তত শোক তাপ হানা, দুঃখ দুর্দশা বন্যা খরা মহামারি গ্লানি।
জগন্ময়ীর আগমনে মুখরিত কৃষকের আঙিনা
মাঝি মল্লার নৌকোর সারি সুখের পাল তোলা
বাউলের একতারায় সাম্য ও শান্তির আকুলতা
রাখালের বাঁশির সুরে সুরে শান্তির ব্যাকুলতা
সতী মায়ের আকাশ পথে আগমন।
ভোরের শিশিরে ফুটেছে শিউলি জবা
সরোবরে ফুটেছে কত শত লাল নীল পদ্ম
ফুটেছে মাঠে ঘাটে নদীর পাড়ে শারদীয় কাশফুল
এক আনন্দ মুখর ভবমোচনী মায়ের আগমন।
মা কখনো দূর্গা, সতী, সাবিত্রী, ভবপ্রীতা, আর্য্যা, জয়া,
আদ্যা, শূলধারিণী, পিনাকধারিণী, চিত্রা, মহাতপা, চিত্তরূপা, সর্বমন্ত্রময়ী, সত্যানন্দস্বরূপিণী, ভবাণী, আবার কখনো মা দেবমাতা, দক্ষকন্যা,
দক্ষযজ্ঞবিনাশিণী, কলমঞ্জীরবঞ্জিনী, সুন্দরী, অগ্নিজ্বালা, তপস্বিণী, নারায়ণী, বিষ্ণুমায়া, কত্যায়নী, ব্রক্ষাবাদিনী,
সর্বদানববাঘিনী, উগ্ররূপ, জনপ্রিয় দেবী, দেবীসূক্ত,
জগদ্ধাত্রী, হৈমাবতী, পার্বতীরূপী, দূর্গতিনাশিণী স্বর্গ থেকে মর্ত্যে এসেছে সেই বার্তা মহাভক্তি মায়ের আগমন।
মা কখনো মঙ্গলময়ী, কখনো মাতৃময়ী, কখনো শান্ত
আবার কখনো অশান্ত ক্ষ্যাপা অসুর বিনাশিনী
মহাশক্তি অষ্টাদশভুজা, ষোড়শভুজা, দশভুজা, অষ্টভুজা
আবার মা চতুর্ভুজা, বিজয়া দশমী।
মায়ের হাতে কখনো ত্রিশূল, কখনো শিঙ্গা,
কখনো শিউলি জবা পদ্ম আবার কখনো শান্তির মহাবাণী
মা যে স্বর্গাদপি গরীয়সী মা মর্ত্য প্রেমময়ী রুক্মিনী।
মাগো তোমার অগ্নিরূপে ধ্বংস করে দাও
অসুরের বংশ, ধ্বংস করে দাও ঘুষ সুদ দুর্নীতি কালোবাজারি, লুটপাট বলাৎকার
ধ্বংস করে দাও আঁধারের বাঁধ, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও
ধর্মান্ধতা, ভেঙে দাও অশুভ শক্তি, ভেঙে দাও সাম্প্রদায়িক শক্তি, গুঁড়িয়ে দাও ধর্মের নামে অধর্ম আর বজ্জাতি।
দেবীসূক্ত জগদ্ধাত্রী মা প্রতিষ্ঠা কর ধর্মনিরপেক্ষতা আর অসম্প্রদায়িক চেতনা, এই পৃথিবী হোক ধর্মনিরপেক্ষতার বাসস্থান
এই পৃথিবী হোক সমবেত সকলের সাম্য ও শান্তির।
মায়ের আগমনে ঘরে ঘরে আনন্দ হাসি
কৃষকের ক্ষেত সোনালী ফসলে ভুবন মোহিনী হাসি
নির্মল আলো রাশি রাশি, যামিনী কামিনী বাঘিনী
এ দশপ্রহরণধারিনী মহাবিশ্বের মহাকাশ বিজয়ী হাসি।
কুমারী মহামায়ার আগমন ঢাকের তালে তালে
বাঁশির সুরে বাজে মায়ের পায়ের পদধ্বনি
ছন্দে ছন্দে নৃত্যে নৃত্যে নাচে সুরমন্ত্রে
আজই জগন্ময়ীর পুষ্প বরণ, আরতি লগন
যুবক যুবতী বৃদ্ধ বৃদ্ধা অঞ্জলী লহর হাতে
আরতি উলুম ধমনী মন্দিরে মন্দিরে
অন্তরে অন্তরে ঢাকের তালে তালে নৃত্য
মঙ্গলময়ী, কল্যাণময়ী মায়ের সাম্য ও শান্তির বাণী।
জয় হোক মানবতার, জয় হোক সাম্য ও শান্তির
জয় হোক দুর্গা মায়ের, জয় হোক মহাশক্তি বিজয়ার
জয় হোক শান্তিময় পৃথিবীর মানব মানবীর
মায়ের আগমনে সমবেত সকলের মন পরিষ্কার হোক
সকল অন্তরে মহাবলা মা জাগ্রত হোক, জাগ্রত হোক।
তোমার আগমনে ঘরে ঘরে দূর হোক সকল আঁধার
নতুন প্রভাত জাগ্রত হোক, সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ুক
নতুনে নতুনে বরণে বরণে জাগ্রত হোক এ ধরা এবার।
তুমি ভবানী মা এবার মঙ্গল কর মঙ্গল কর মঙ্গল কর
সোনার আলোয় আলোকিত কর, ধন রত্ন ভরিয়ে দাও
ঘরে শান্তির প্রদীপ জ্বেলে দাও, মঙ্গল দীপ জ্বেলে দাও
আঁধার মনের দিগন্তে আজ মাগো আলো জ্বেলে দাও
সকল অশুভ শক্তি দূর কর মা, এবার অসুর বিনাশ কর।
(মঞ্চে অসুরের আবির্ভাব:)
আমি অসুর। আমার জন্ম অসুর বংশে। আমি এই রাজ্যের অধিপতি। আমার জন্ম আছে আমার কোন মৃত্যু নেই। আমি অমর অমরত্বের অধিকারী। রম্ভ নামক অসুর মহাদেবকে কঠোর তপস্যায় প্রীত করে তাঁর কাছে ত্রিলোকবিজয়ী পুত্রলাভের বর প্রার্থনা করলে আশুতোষ মহাদেব তাঁকে সেই বর প্রদান করেন। আর তখনই অসুরের জন্ম হয়। তাই 'মহেশ' স্বয়ং তিন কল্পে 'মহিষ'রূপে রম্ভাসুরের পুত্রত্ব স্বীকার করেন।
"এবমুক্তঃ প্রত্যুবাচ রম্ভস্তং চন্দ্রশেখরম্।
অপুত্রোহহং মহাদেব যদি তে মহ্যমনুগ্রহঃ।।
মম জন্মত্রয়ে পুত্রো ভবান্ ভবতু শঙ্কর।
অবধ্যঃ সর্ব্বভূতানাং জেতা চ ত্রিদিবৌকসাম্।।"
"ইতি পূর্ব্বং মহাদেবো দেবীং প্রার্থিতবান্ পুরা।
তেন দেবী মহাদেবং জগ্রাহ মহিষাসুরম্।।"
রম্ভ পুত্রপ্রাপ্তির বরলাভ করে অসুররাজ্যে ফেরার সময় "ত্রিহায়ণীঞ্চিত্রবর্ণাং সুন্দরীমৃতুশালিনীম্" এক মহিষীকে দেখে কামার্ত হন। কামার্ত রম্ভ ওই মহিষীকে হরণ করে বনের মধ্যে তাঁর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হন। মৈথুনের পরে ওই মহিষীকে বিবাহ করে রম্ভাসুর। বিবাহের পর পুনরায় তাঁরা মৈথুনে আবদ্ধ হলে অপর এক মহিষ অতর্কিতে আক্রমণ করে মিলনরত রম্ভকে বধ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর যক্ষরা তাঁর মরদেহ চিতায় স্থাপন করে। তাঁর স্ত্রী শোকাহত মহিষী সহমরণের উদ্দেশ্যে চিতায় আরোহণ করেন। চিতায় অগ্নিসংযোগ করলে চিৎকার করে ওঠেন মহিষী । তখন তাঁর গর্ভ থেকে নিষ্ক্রান্ত হয় তার মহিষী ও রম্ভের মিলনজাত সন্তান, অর্ধ মহিষ অর্ধ মানব মহিষাসুর। তখন রম্ভও পুত্রস্নেহবশতঃ চিতা থেকে পুনরায় উত্থিত হন। নবোত্থিত রম্ভের নাম হয় রক্তবীজ। শিব বরপ্রভাবে মিলনকালেই গর্ভসঞ্চার হয়েছিল মহিষীর। তাঁর পশুরূপের সাথে মিলনের ফলে জ্বলন্ত চিতা থেকে জন্মায় অর্ধ মহিষ অর্ধ মানবরূপী মহিষাসুর। শিববরে জাত মহিষাসুর অতীব দুর্দান্ত হয়ে উঠে দেবতাদের বিতাড়িত করে স্বর্গরাজ্য অধিকার করেন। রাজ্যচ্যূত দেবগণ মহেশ্বর ও নারায়ণের কাছে গিয়ে তাঁদের দুঃখের কাহিনী নিবেদন করেন। হরিহরের নিদারুণ ক্রোধাগ্নি তাঁদের দেহ থেকে নির্গত হয়ে এক বহ্নিচক্রের নির্মাণ করে। এর সঙ্গে যোগ হয় ব্রহ্মা ও অপরাপর দেবতাদের ক্রোধরশ্মি। মহামায়া আদ্যাশক্তি দেবতাদের এই সমষ্টিভূত তেজঃপুঞ্জ হতেই কাত্যায়নদুহিতা কাত্যায়নী রূপে আবির্ভূতা হন। দেবী চণ্ডিকা যুদ্ধে এই অসুরকে বধ করেন।
দুর্গা দেবীর নৃত্য:
গানের সাথে
দুর্গা দেবীর আহবান:
এসো মা দুর্গা অসুর বিনাশ কর। তুমি আসো অস্ত্র নিয়ে যে অস্ত্র দিয়ে অসুর বিনাশ করতে পারো। সেই অস্ত্র তোমার হাতে ধ্বনিত হোক। সেই অস্ত্রধারী তুমি মাগো। তোমার হাতে অস্ত্র তুলে নাও ত্রিশূল, খড়্গ, চক্র, গদা, শঙ্খ, শক্তি, ঢাল, বাণ, ধনুক, ঘণ্টা, পরশু, নাগপাশ । এই অস্ত্র দিয়ে তুমি অসুর বধ করো মা। অসুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ তোমার সন্তানেরা। মাতৃরূপি মেয়েরা অসুরের কাছে লাঞ্ছিত। এই অত্যাচার নির্যাতন থেকে তুমি মাগো রক্ষা কর। তুমি যে জগন্ময়ী। এই অসম আঁধার দূর কর মা। অসুর তুমি বিনাশ কর। আঁধারে আলো দাও মা, আঁধারে আলো দাও। তোমার আলোয় দূর হোক এ আঁধার। তোমার আলোয় উদ্ভাসিত হোক নতুন পৃথিবী।
মঞ্চে অসুরের আবির্ভাব:
এই আসমান জমিন সবই আমার। এই পৃথিবীর অধিপতি আমি। আমি মালিক। সকল রমণী আমার ভোগের সামগ্রী। আমি সুখ চাই, শান্তি। এই আমার স্বর্গ। অনিন্দ্য সুন্দরী মেঘবালিকা তপস্বীনি রূপসী এ দিকে আসছে। এই সুন্দরী নারীও আমার ভোগ বিলাসের প্রাণেস্বরী। এই সুন্দরী মেঘবালিকা এদিকে আসো, পাশে বসো। তোমার প্রেমের দোলায় দোলাও আমায়, ভুলাও প্রেমময়ী। অপূর্ব অপূর্ব অপূর্ব সুন্দরী মেঘবালিকা। এ যে আমার সুধার খনি। হা হা হা
দুর্গার মঞ্চে আবির্ভাব:
এবার তোমার রক্ষা নেই অসুর। আমার অস্ত্রের আঘাতে তুমি জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। তুমি আমার সন্তানদের অনেক নির্যাতন করেছো, আমার মেয়েদের লাঞ্ছিত করেছো। এবার তুমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও। (যুদ্ধ হবে অসুর আর দুর্গার। অসুর বধ হবে।)
অষ্টাদশভুজা অঞ্জনপ্রভা উগ্রচণ্ডা, ষোড়শভুজা অতসীপুষ্পবর্ণা ভদ্রকালী ও তপ্তকাঞ্চনবর্ণা দশভুজা দুর্গা মূর্তিতে মহামায়া মহিষাসুরকে বধ করেন। তৃতীয় কল্পে মহিষাসুর ভদ্রকালীর কাছে অসুরপ্রবৃত্তি থেকে মুক্ত হয়ে যজ্ঞভাগের অধিকারের বর প্রার্থনা করেন। উত্তরে দেবী অসুরত্বমোচনের বরপ্রদান করলেও যজ্ঞভাগ দিতে অস্বীকৃত হন, কিন্তু বলেন যে তাঁর পদলগ্ন হয়ে মহিষাসুর ত্রিলোকপূজ্য হবেন, তিনটি কল্পের প্রতিটিতে যে যে রূপে তিনি মহিষাসুরকে বধ করেছেন/করবেন অর্থাৎ উগ্রচণ্ডা, ভদ্রকালী ও দুর্গা রূপে মহামায়ার পদলগ্ন ও সাযুজ্যপ্রাপ্ত হয়ে দেব-গন্ধর্ব-মানব-দানব সকলের পূজা পাবেন। এই ভাবে মহা শক্তিতে অসুর দেবতাদের অবজ্ঞা করে অন্যায় অত্যাচার অবিচার করতে থাকে। রমণীদের প্রতি অসম্মান আর নির্যাতনের মাত্রা সীমাহীন ভাবে বেড়ে যায়।
দুর্গা দেবীর স্মরণে গান: (দেবী দুর্গা দাঁড়িয়ে থাকবে)
মাগো তোর ওই চরণতলে ঠাঁই দে আমায়
আমি বসে আছি এপারে তোর সাধনায়।।
মাগো তোর ওই---
জন্মে আমি তোর শীতল ছায়ায়
কাটাই স্নেহ মমতা ভালবাসায়।।
প্রেমের ভুবনে উদাসী হাওয়ায়
কাটাই আমি তোর আকুলতায়।
মাগো তোর ওই---
পৃথিবীর খেলা ঘরে
হাসি খেলি দিনের শেষে
ক্লান্তিতে লুটাইয়ে পড়ি
এই জগৎ সংসারে।।
মাগো জনম গেলো পথে পথে
মাগো তোর ব্যাকুলতায়
ওগো জগন্ময়ী মা দেখা দাও আমায়।
মাগো তোর ওই---
(সমাপ্ত)
(গীতিনাট্য মঞ্চায়ন করতে হলে লেখকের অনুমতি প্রয়োজন)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন