কবিতা

কোন্ রাগ বাজাবো

দু র্গা  ম ন্ড ল 

একটা বয়সের পরে 
বাসনায় দুর্ভিক্ষ লাগে,
চেতনায় বৈরাগ্য।
সূর্যকান্তি বিপ্লবী মনন 
প্রায়ান্ধকার কৃষ্ণগহ্বর।

অথচ প্রাক-যৌবনের প্রাক্কালে 
দলছুট বালিকা 
রুদ্র আনন্দে অস্থির। 

একটা বয়সের পরে 
প্রেমও হিসেবি হয়ে যায়।
দ্বিধান্বিত, বেহালায় 
কোন্ রাগ বাজাবো!---
মালকোষ নাকি কলাবতী,
জয়জয়ন্তী অথবা মেঘমল্লার!




শ্রাবণ

জ বা  ভ ট্টা চা র্য

 আজও পথের বাঁকে, শূন্য  বৃক্ষশাখায়
বৃষ্টি দুলছে
শুনেছিলাম বৃষ্টি ছুঁলে, একটুখানি জ্বর
তবুও আজ বৃষ্টি ছুঁলাম
টুপটাপটুপ বৃষ্টি আমায় ভেজালো অতঃপর। 
লঘুভার মেঘের মতো, রক্তের নিজস্ব স্বভাবে
ভালোবাসা এবার নদী হবে।

যে প্রেম এসেছিল ভরা বর্ষায়, শুধু কিছু শব্দঋণ রেখে হায়
বিরহী শ্রাবনী মেঘে, তারেই ফিরালে শূন্যহাতে, শ্যামরায়!!





মনে মনে সহবাস, নিঃসীম মনে রূপকথা

অ সী ম  দা স

ভাগ্যিস আমার মনমঞ্চের সংলাপ আলাপ 
তুলতুলে নরম পাশবালিশটাও‌ দেখতে পায় না!
দেখলে, দেখতে দেখতে ঝিনঝিনে ঝুনো হয়ে যেতো।
এতো দীর্ঘ সে নাট্যের দৈর্ঘ্য
পৃথিবীর ব্যাসও বাস্তু হারাতো।

মৃদু লঘু গুরু স্বরে কতটুকু কথা বলি
শব্দের বাচাল চাতালে!

মনের ভেতর জেটে এক্ষুনি চলে যাই
বোগা থেকে বোস্টন কোয়ান্টাম বেগে,
শব্দহীন কথকতা কাঁধে আটলান্টিক‌ ডিঙিয়ে
ভরে আনি নিঃসীম মনে রূপকথা।
কোনও ধুরন্ধর রেডারেরও সাধ্য নেই ধরে
কখন গেলাম আর কতখানি
মহড়ার মধু মনের মৌচাকে জমালাম।

মনে মনে সহবাস এক দূরগামী 
দীর্ঘতম কবিতার রিমঝিম শতদ্রু স্নান।





 লক্ষ্য

ক বি তা  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য় 

এখন আর কোনো মৃত্যু সংবাদ 
বিচলিত করে না আমাকে,
ভয় ও পাই না আর 
বরং দেওয়ালে ঠেকে যাওয়া 
পিঠ নিয়ে লড়াই করে যাই অবিরত...

অথচ আগে ভয় পেতাম খুউব,
তোমাকে ছেড়ে যাবার ভয়;
আশংকা ঘিরে থাকতো সবসময়ই 
"মরণ রে তুঁহুঁ মম শ্যাম সমান" 
গাইতাম ঠিকই,
তবে গলাটা একটু কেঁপে যেত...

ভয় হত অনিশ্চিত যাত্রায়
হারিয়ে যাবো না তো!
কিন্তু এগিয়ে যাওয়া মৃত্যু মিছিল
রাস্তা দেখাচ্ছে অনবরত!
হারানোর ভয় নেই আর,
তোমাকে ছেড়ে যাবার কষ্টও নেই...

তাই জাগতিক আকর্ষণ থেকে 
আস্তে আস্তে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি 
সেই তাঁর নির্দেশে,
ছাড়পত্র পাওয়া সারা
শুধু শীলমোহরের অপেক্ষায়...

এতদিনে বুঝেছি মৃত্যু বড় সোজা, 
সস্তাও বোধহয়;
জীবন সত্যিই দামি...






বৃষ্টি নামলে

ছো ট ন  গু প্ত

বৃষ্টি নামলে আষাঢ় বিকেলে মনখারাপের রাতে—
মেঘেদের কালো উলুঝুলু চুল রিমঝিম স্বরে মাতে
ঘুম নেমে আসে পার্থিব চোখে রাত্রি নিঝুম হলে
আরও কারা যেন ঘুমকে তাড়িয়ে বৃষ্টি ভিজতে চলে।

আবেশ মুগ্ধ হাতে হাত রেখে হারানো স্মৃতির গানে
জোনাকির আলো ঝিঁঝিঁর শব্দ আঁধারের অভিমানে
অবচেতনের আশ্লেষ বড় ভালো লাগে ভালো রাখে
বর্ষণস্নাত ভালোবাসাটুকু সিন্দুকে ঢাকা থাকে।

বাতায়ন মেলে জলছাট এলে পাগলামি খুঁজে ফেরা
রাতের আকাশে বৃষ্টি আবেশে কবিয়াল সুরহারা
অভিমানী চোখ জলকণা দেখে বলেছিল ভালো আছি 
সবুজ পৃথিবী দুলে ওঠে গাছে পাখিদের কাছাকাছি।

অনায়াসে হেসে রাত ভালোবেসে গুনগুন গান গেয়ে
ঘুমের চাদরে জড়ানো শব্দে কবিতার কথা বেয়ে
মেঘলা আকাশে নীরব সফরে বৃষ্টির গতি বাড়ে 
পৃথিবীর মাটি নদীখালবিল ভিজে যায় নিঃসাড়ে।

সিক্ত বাতাস ডাক দিয়ে যায় বৃষ্টিতে একে তাকে 
বৃষ্টি নামলে একশত কবি সারারাত ছবি আঁকে
'আজি ঝরঝর মুখর বাদল' সঙ্গীতে লিখে রাখে
আষাঢ়ের মেঘবৃষ্টির আদর খুব কাছাকাছি থাকে।





নীরস বাদল

বী থি কা  ভ ট্টা চা র্য 

বৃষ্টিরে তুই নীরস কেনো, কার স্বপনে থাকিস মগন?
হঠাৎ করে গেলি ফিরে, কার সাথে তোর সুখের যাপন? 
চেয়ে চেয়ে ক্লান্ত যখন, অপেক্ষাতে চোখ চেয়ে রয়, 
হঠাৎ কেনো নিলি বিদায়, দূর নীলিমায় কার ঠিকানায়। 
তোর খুশীতে সুর বাজে ওই, শ্রাবণ আকাশ বাদল দিনে। 
তবুও যে তোর পাইনা সাড়া, উদাস হৃদয় বৃষ্টি বিনে। 
মেঘের দেশের কোন মুলুকে, কার সাথে তুই বাঁধলি রে ঘর?
কার আদরে মুখ ঘুরিয়ে, থাকিস দূরে, আমরা কি পর?
একটু যদি দৃষ্টি ফেরাস দেখবি চেয়ে কত স্বজন, 
তোর আশাতেই করছে যাপন, তোর বিহনে বিষণ্ণ মন। 
শূন্য শাখে ফুল ফোটে না, শুষ্ক পাতার মলিন ঝরা।
আসবি যখন হাসবে আবার শ্যামল সবুজ বসুন্ধরা। 
মৌমাছিরা ভীড় করেনা, আর আসেনা ফুলের বনে,
প্রজাপতি উড়ে গেছে, না জানি কোন বিরস মনে। 
এই শ্রাবণের মুখটি চেয়ে, আয়না নেমে খুশীর সাজে। 
মেঘ গুরগুর শব্দ তুলে, শ্রাবণ নাচুক মনের মাঝে। 
তোকে চেয়ে তোর আদরে, গাছগাছালি মেলবে আঁখি। 
বৃষ্টি জলের মিষ্টি ধারায় খুশির ছোঁয়ায় উঠবে জাগি। 
ছোট্ট ছেলে অপেক্ষাতে, কাগজ দিয়ে গড়ছে ভেলা।। 
আনন্দ তার থমকে গেছে, তোকে পেলেই  করবে খেলা।
আয়না রে মেঘ অথৈ ধারায়, তাথৈ নাচের ছন্দ তুলে। 
নাচবে ময়ূর, বাজবে বাঁশি, সাঁওতালী নাচ কোমর দুলে। 
সৃষ্টি বাঁচুক মিষ্টি ধারায়, বৃষ্টি নাচুক দৃষ্টি সুখে, 
সবুজ আবেগ প্রাণ ফিরে পাক, স্বর্গ আসুক ধরার বুকে।





মনোবিতানের রূপকথা

 শু ভ জি ৎ  দা স  দাঁ

বিকেলের শেষ ঘুড়িটা ভো-কাট্টা হতেই আবছা হয়ে এলো ইচ্ছে রঙের লাটাই,
তোর বাড়ির ছাদে এখন বিচ্ছিন্ন মাঞ্জাসুতোর হাত ধরে নিঃশব্দে গোধূলি নামছে,
চুম্বনের নোনা স্বাদে আর্দ্র হয়ে উঠছে চিলেকোঠার নিঝুম ঘর।

দুধেল জ্যোৎস্নায় মিলেমিশে গেছে নক্ষত্রের হলুদ স্মৃতি,
কিছু মলাটবন্দী কথা, কিছু স্বরলিপি- যে গান কখনো গায়নি কেউ।

আরো কথা বাকি আছে,
আরো অনেক ছোঁয়া বাকি রয়ে গেছে- যা শিশিরের মতো নৈঃশব্দ্য ভালোবাসে,
তোর বুকে মুখ রেখে শুষে নেয় অবারিত মন,
অকুন্ঠ উষ্ণতা বিলিয়ে দেয় সাঁঝবেলার অবুঝ মৌনতা,
শরীরিণী হতে চায় কোজাগরী চাঁদ।

তারপর...
দেখলাম তোর প্রশ্রয়ী চোখের ইশারায় 
মনোবিতানের দরজা খুলে আমার জন্য অপেক্ষা করছে আকাশমণি রূপকথারা।





প্রকৃতির প্রার্থনা

 ম ধু মি তা  ভ ট্টা চা র্য  

রজনীগন্ধা গুলো রেখেছি তোমার কাছে
ওকে রাতের গল্প বোলো।
একটা গোটা আকাশ তোমার কাছে,
ওকে বন্যচাঁদের আল্পনা দিও।

একটা হারিয়ে যাওয়া রাস্তা আছে,
ঠিক যেখানে বৃষ্টির পরে রোদ
ছুঁয়ে যায়।
ওকে হারিয়ে যাওয়া রাস্তার পলাশফুলের বৃষ্টি বিছিও।

একটা প্রখর তাপের সূর্য আছে
অবশ করে দেয় পৃথিবী যেখানে,
ওকে, পুষ্পবতী আলোর  পূর্ণকাম, সূর্যের কাছে এনে দিও।

তুমি যেখানে আলোর বৃষ্টি
বুনেছিলে 
হ্লাদিনীর মুরলীতে-
তোমাকে এনে নিও,
রামধনুর রঙে।

এটা কাজের অবসরে
তোমাকে দেখার প্রথম আলো।
সন্ধিতে পড়েছিল বৃষ্টির এক ফোঁটা।
তোমাকে দেখার জিজ্ঞাসায়।
এমনই এক
বৃষ্টি রচতে  বলে দিও আকাশকে।





বন্ধু
  
পি না কী  র ঞ্জ ন  মি ত্র

ঝড় বৃষ্টি বাদল বলে কথা
ওদের ভাষা বুঝতে পারে গাছও
গাছেরও কি পৃথক ভাষা আছে?
যে ভাষাতে কথা বলে ওরা?
জানি, 
পাখিরা সব অনেক ভাষা জানে
বনের পশুও কথা বলে মানি
গাছের কথা পাখি বোঝে ভালোই 
গাছেরাও কি আমার ভাষা বোঝে?
মানুষ দেখে ভয় পেয়ে যায় পাখি 
পশুও নাকি ভয়ে ভয়েই বনের ভিতর থাকে 
মানুষ তবে পোষ মানাবে, সত্যি বলো কাকে!
কুকুর, বেড়াল, গরু, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া, মোষ 
বোকা বলেই গুটি কয়েক মেনেছে আজ পোষ।
মানুষের কেউ বন্ধু কি গো আছে?
স্বাধীন হয়েও বন্ধু পশু যে গো 
খাবার লোভে আসে না যে কাছে।
খাবার লোভে পোষ মেনেছে যারা 
তারা কি আর বন্ধু হতে পারে?
খাবার যদি না দেওয়া হয় তবে 
সে নিশ্চয়ই অন্যখানে যাবে। 
গাছ গাছালি আজও চুপটি থাকে 
যেথায় তাকে রেখে দিই গো বাগানের এক কোণে 
খাবার দাবার জল বাতাস দিলে তো খুব ভালো 
না দেওয়া হয় তবুও সে চুপটি করেই থাকে 
সারা জীবন শ্বাসের বাতাস, ফুল, ফল, পাতা 
এমনকি তার চামড়া দিয়েও ঔষধের সে দাতা 
হাড়গোড়ও বাদ যায় না, দিয়ে যায় তো সবই 
তারই ছায়ার তলে বসে দস্যু হলেন কবি।
হায়! বন্ধু, তোমাকে আমার জানাই নমস্কার 
তুমিই বন্ধু তুমিই ত্রাতা সৃষ্টিকে কর উদ্ধার।





বৃষ্টির ঘ্রাণকে অনুভবে পেয়েছি

স ঙ্ঘ মি ত্রা  ভ ট্টা চা র্য 

এক বুক মরুভূমি নিয়ে বসে আছি চাতকের মতো।
কণ্ঠে ধারণ করেছি বিষণ্ণতা।
কালো মেঘের সারি অর্ধেক আকাশ ছেয়েছে।
তাই হয়তো মনের ঘরে বৃষ্টির ঘ্রাণকে অনুভবে পেয়েছি বার বার।
তবুও বাতাস শুষ্ক।
তাই আজ-কাল-পরশুর গল্পে কেমন যেন মন ছুঁয়ে যাওয়া বেসুরো কান্না।
হঠাৎ আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে বৃষ্টি নামে।
তবুও তারই মধ্যে আঁধার হাতড়িয়ে দু-একটা পথ খুঁজে ফেরার পালা চলতেই থাকে।
তাই অচেনা আভাসে বুকের চোরাকুঠুরিতে একরাশ দ্বন্দ্ব জমা হয়।
তবে কি বৃষ্টি এসেছিলো শুধুই মনের ঘরে?
এখন এলে দেখতে পাবে কাঠকুঠো জমিয়ে আগুন জ্বালিয়েছি দেহের অনু পরমাণুতে।
হয়তো তাই সমুদ্রের বালুরাশি জমা করেছি নীল কুয়াশায়।
আর সবুজ ঘাসের পরে আঁচল পেতেছি আকাশের নীলিমায়।
তবুও কেন জানি এরই মধ্যে একবুক মরুভূমি নিয়ে বসে আছি চাতকের মতো---
রাত্রি দিন অবসরযাপনের বিবর্ণ জড়ত্বকে সঙ্গী করে।






বাদল

ধী রে ন্দ্র না থ  চৌ ধু রী

বাদল মানেই আষাঢ়, শ্রাবণ, বৃষ্টি মুষলধারে,
রাস্তা ঘাট ভাসছে জলে, এপারে ওপারে।

বাদল মানেই স্কুলের ছুটি, ফিরছিস বাড়ী তুই,
গেছে ভিজে সারা শরীর, একটু তোকে ছুঁই..?

বাদল মানেই দিনের খাবার খিচুড়ি, ইলিশ ভাজা,
একটানা ঘুম, দুপুর বেলায়, সন্ধ্যে হলেই তাজা।

বাদল মানেই রাস্তায় থাকা মানুষের দুর্ভোগ,
তাদের কোনো চাল-চুলো নেই, ধরছে নানা রোগ।

বাদল মানেই বৃষ্টি টানা, বন্ধ গাড়িঘোড়া,
তোর আর আমার সাক্ষাৎ নেই, এমন কপাল পোড়া।

বাদল মানেই টাওয়ার গুলো ভিজছে জলে,
নেটওয়ার্ক সব বন্ধ হয়ে রসাতলে।

বাদল মানেই শীত শীত ভাব, দুপুরে ঘুম,
ইচ্ছে করে তোর ঠোঁটেতে দিই দুটো চুম্।

বাদল মানেই গাছে কদম রাশি রাশি,
তুই কি জানিস তোকে কতো ভালোবাসি..?

বাদল মানেই মাঠে কতো নষ্ট ফসল,
লোকসানেতে ক্ষতি চাষির, চোখেতে জল।

বাদল মানেই জল থই থই, সর্বনাশা,
স্তব্ধ জীবন, হারিয়ে গেছে মুখের ভাষা।

বাদল মানেই ঘরবন্দী, কোথায় যে যাই,
তবুও তোকে এই বাদলেই ভীষন যে চাই।





বৃষ্টি

টু লা  স র কা র 

বৃষ্টি মানে আকাশ কালো 

আঁধার হয়ে এলো।

বৃষ্টি মানে রিমঝিম ঝমঝম শব্দ

পথঘাট সব স্তব্ধ। 

বৃষ্টি মানে রবিমামা নিয়েছে ছুটি

মেঘেরা উল্লাসে হেসে কুটোকুটি 

বৃষ্টি মানে আষাঢ় শ্রাবণের ধারা 

পুকুর নদী- নালা খাল-বিল সব ভরা।

বৃষ্টি মানে প্রেমিকের চোখে প্রেমের জাগরণ 

 হৃদয় চায় নিজেকে মেলে করতে আলাপন।

বৃষ্টি মানে স্মৃতির পাতা খুলে যাওয়া

ভালোবাসার অতীত আবার ফিরে পাওয়া।

বৃষ্টি মানে অলিন্দেতে স্থির নয়ন

হৃদয়ে জাগে অজানা শিহরণ। 

বৃষ্টি মানে খিচুড়ি আর ভুড়িভোজন

অপরাহ্ণে তেলেভাজার নিটোল আয়োজন। 

বৃষ্টি মানে ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ্

নাচনকোঁদন, যেন খেয়েছে ভাঙ্।

বৃষ্টি মানে কাব্যের ছড়াছড়ি 

সারাদিনই মেঘলা ইলশেগুঁড়ি। 

বৃষ্টি মানে কান্না ধুয়ে যাওয়া

কষ্ট চাপা, কেউ খুঁজে না পাওয়া। 

বৃষ্টি মানে সবুজ শ্যামল প্রকৃতি 

দীর্ঘ টানা শব্দের অবস্থিতি।

বৃষ্টি মানে প্রবল ধারাগতি

অতিবৃষ্টি বন্যা প্রবল মতি।

বৃষ্টি ভালোবাসি, বৃষ্টি ভালোবাসি।

বৃষ্টি বড় আপন, কান্না ঢেকে হাসি।





শেয়ালের আর গর্ত খোঁড়া হয় না

শ্যা ম ল  খাঁ

প্রতিবছর এই কয়েকটা দিন
ফাটা রেকর্ডের মতো কতকগুলো উপদেশ
কানে বড্ড বাজে।
বড্ড গরম, বড্ড গরম, শতাব্দী সেরা ইত্যাদি ইত্যাদি,
সচেতন হও 
গাছ লাগাও, গাছ লাগাও, আরো
বেশি করে
যত্রতত্র বীজ পুঁতে দাও, 
লাগানো চারা কিংবা ফেলে দেওয়া বীজ
একদিন মহীরুহ হবে, শীতলতা দেবে,
অক্সিজেন দেবে, বৃষ্টি দেবে, প্রকৃতিকে ভারসাম্য দেবে
আরও কত কত কি!

তারপর একদিন বৃষ্টি নামল
পাছার ফোঁড়া ফেটে পুঁজ রক্ত বেরিয়ে গিয়ে
যন্ত্রণার উপশম হলো।
আর গাছ লাগানোও হলো না, বীজ পোঁতাও হলো না 
পৃথিবী সকল বোদ্ধাদের বুকে নিয়ে 
সমান গতিতে পরিক্রমণ করেই চলল।

আবার এলো সেই বিশেষ কয়েকটা দিন
ঝড়, নিম্ন চাপ, প্রবল বর্ষণ,
বন্যা, ভূমি ধ্বস, শহরে নগরে কোমর সমান জল।
গ্রামে গ্রামে---
শস্য হানি, প্রাণহানি, সম্পদ হানি ইত্যাদি ইত্যাদি।
আবার সচেতনতার বাঁধাধরা অমুল্য বার্তা 
যথেচ্ছ সবুজ ধ্বংস না করার সাবধান বানী।

যেন মঙ্গল গ্রহ থেকে নেমে
ঘুমন্ত পৃথিবীর বুক থেকে
রাতারাতি সবার নজর এড়িয়ে
কারা যেন সবুজ নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে,
কেউ তাদের ধরতে পারছে না।

নেতা মন্ত্রী আমলারা 
খোলা মাঠে নীল আকাশের নীচে 
ঘটা করে গাছ লাগাচ্ছেন।
একটা গাছ, হাজারটা ছবি
টিভি আর মোবাইলের স্ক্রিনে উপছে পড়া বিজ্ঞাপন
লক্ষ লক্ষ লাইক কমেন্টের বন্যা।
জনগণের টাকার শ্রাদ্ধ
আর চারা গাছ পড়ে রইলো অনাথ শিশুর মতো
মাত্র কয়েকটা দিনের আয়ু নিয়ে।
পৃথিবীর সবুজায়নের হাজার হাজার শিলান্যাসে
চেয়ে দেখি মানুষের ঢল 
মিষ্টির প্যাকেট, মিনারেল ওয়াটার
নাচ গান, লম্বা চওড়া বক্তৃতা,
কয়েক'শ লিটার ডিজেল পেট্রোলের অকাল মৃত্যু
সমান তালে শব্দ দূষণ আর বায়ু দূষণ।

সদিচ্ছাহীন প্রকল্পের মোড়কে
লোক দেখানো সচেতনতা--- আর
মানুষকে বোকা বানানোর সুনিপুণ প্রচেষ্টা।
গ্রামের কাঁধে---
সবুজায়নের সব দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে চলল 
নগরকেন্দ্রিক উন্নয়নের সারা বিশ্ব জুড়ে প্রচার।

সচেতনতার কথা মনে পড়ে শুধু ঐ কয়েকটা দিন
গরমে নাভিশ্বাস উঠলে 
ধ্বংস স্তূপের নীচে চাপা পড়লে 
কিংবা বানের জলে ভেসে গেলে,
প্রকৃতির প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে উঠলে।

তারপর নিয়মমাফিক দিন পেরিয়ে যায় 
প্রতিদিনের মতো।
সাম্রাজ্যের পত্তন হয়, পতন হয় 
লাভ লোকসানের হিসেবনিকেশ সবকিছুই হয় 
ঠান্ডা ঘরে বসে, বুদ্ধি ভাড়া করে।

শেয়ালের আর কোনোদিনই গর্ত খোঁড়া হয় না।
আমরা চিরকালীন বোবা মানুষ 
সব দেখে শুনে---
শুধু হাসতেই পারি--- কিছু বলতে পারি না।





জমেছে মেঘ

মৌ সু মী  মু খা র্জী 

কালো আঁধারি আকাশ ঘিরেছে  জলদ, 
রিমঝিম বৃষ্টি চলছেই ক্রমাগত,
দাঁড়িয়ে গ্রিলে, দেখছি বাঁধ মানে না অশ্রু,
মনে পড়ছে অতীত, আজ নিঃসঙ্গ  অভিযাত্রিক, 
একদিন জোর করে ভিজেছি কত,
দুজনে আগুন ঠোঁটের উষ্ণ আলিঙ্গনে, বারিষ ঝরেছে  অফুরন্ত।
বৃষ্টি ভেজা মন উষ্ণ ঠোঁটে চায় যে বৃষ্টি চুম্বন।
আবার আগের মত ভিজে নিতে কপাট খুলে বাহির,
জ্বরের ঘোরে প্রলাপ, 
মাথায়  থাকতো হাত বুলিয়ে দিতে,
ভালোবাসার পরশ মাখামাখি।
ফিরে এলাম, জ্বর যদি হয়, একলা ঘরে,
এখন আর মন নেই বৃষ্টি ভেজার, শরীর অশক্ত, 
মাথা থেকে হাত সরিয়ে নিলে,  কৃষ্ণ মেঘ বুকে,
একাকী অবসাদে শুধুই অন্তরে বাইরে প্রলয়,
যদি দেখা হয়!!
মনের অগোচরে, সামলে রাখবে 
না জানি আগের মতো,
তুমি যে আজ বাধ্য সংসারী,
এখন বৃষ্টিছাঁটের ভয়ে 
জানলা ‌লাগাও তাড়াতাড়ি।
ভিজলে বাড়বে কাশি আগের মত, 
হয়তো এখন আরো বাড়াবাড়ি।
আজ আমার একলা থাকা, 
একলা পথের পথিক, একাই কান্ডারী,
হাত ধরে তুমি নিয়ে চলো অন্তিমের সংসারে,
বলতে পারি কি আগের মতন করে!!






প্রহরী

দে বা শী ষ  স র খে ল

কুইটিপিন, আর্পিজল--- রকমারি চাঁদমারি ডাঙ্গা পেরিয়ে ঘুমের জগতে যায় কবেকার 
কশেরুকা-ভাঙা শিশু।
হাসি কান্না ঘুম 
গভীর সমুদ্রপ্রদেশ থেকে
নীল তিমি হাহাকার করে।
জলের সুড়ঙ্গ পথে আহত ঘুঙুর।
তীরে যে তরণী ধায়
তাতে সকল কিন্নরীর সাজো সাজো রব।
তুমি স্বপ্নের ভেলায় নাই
অফুরন্ত নেশার আহ্লাদে যে মরমে মরেছে।
তুমি তার হাড় মাংসের বস্তা কাঁধে
চলেছ কেবল,
সামনে দিকচিহ্নহীন ঢেউ
সুতীব্র প্রহরীর ভূমিকা তোমার।





নিঃশব্দ শক্তি

মী না ক্ষী  চ ক্র ব র্তী  সো ম

আমার সামনে দাঁড়িয়ে উদ্ধত সিঁড়ির মিছিল  
প্রতিটি সোপান স্থিতপ্রজ্ঞ, 
কারা যেন রেখে গেছে পদপাতে সময়ের দাগ।
অবলীলায় মুছে ফেলার দায়ভার নেয় না কেউ।
সহযাত্রীরা ধাপে ধাপে বেয়ে যায় ওপরে
আমার চোরা অহংকার অপারগতায় ঠেলে দেয় পথে
প্রতিটি ধাপে থেমে থেমে আমি সঞ্চয় করি 
অভিজ্ঞতা, আশা, নিরাশা...
উপভোগ করি বেঁচে থাকার আনন্দ
শুষে নেই সব অসূয়া---
একসময় ভেতরে নিঃশব্দ শক্তি জমে পাথর হয় 
তারপর মেলে দেই চরাচরে দুই প্রসারিত হাত।
এসো, এসো, যা কিছু আছে আমার একান্ত
ভাগ‍্যের হাতে সঁপে দেই আমি আমাকে 
আমার সামনে চলমান সিঁড়ির 
আহ্বান গ্রহণ করার অস্থির সময়টুকুতে
তলিয়ে যাবার আগে আরও একবার 
ঘুরে দাঁড়াই দৃপ্ত ভঙ্গিমায়।।





কনজুগাল পদ্য

চি র ঞ্জী ব  হা ল দা র

রথ দেখা আর কলা বেচা
কিনে এনো মাটির পেঁচা।
ঘরে ভীষণ জ্বালায় ইঁদুর
যাচ্ছো তুমি অতসীপুর।

খেয়াল রেখো নিজের নজর
বিশ্বাস নেই একটুও তোর।
ভুলেও যদি অন্য পানে
আসবেই ঠিক আমার কানে।

যাচ্ছো তুমি অতসীপুর
কিনে এনো মেটে সিঁদুর।

নেই ঝঞ্ঝাট ঝগড়া বিয়া
একটু আধটু পরকীয়া।
যাবো না আর বেচতে কলা
উঠবোস আর দু'কান মলা।

পাইনি পেঁচা বর্ষার দিন।
এনেছি কিনে মাটির সতীন।
একটু আধটু মিথ্যে পীরিত
তোমারও জিৎ আমারও জিৎ।





আলোর মন্ত্র

অ র্পি তা  মু খা র্জী  চ ক্র ব র্তী

সেই মায়াময় বিকেলের কাছে পৌঁছে
তার নাম দিয়েছিলাম জারুল বিকেল। 
মরা নদীর ধার ঘেঁষে অফুরান প্রাণের মেলা,
বেগুনি ফুলতোলা আঁচলে অপার দৃষ্টিসুখ,
গ্রীষ্মের রুক্ষতায় দগ্ধ গাছগাছালির মাঝে
কোমল এক নিরাময়, প্রশান্তির স্নিগ্ধ আলপনা।
অদূরেই স্বচ্ছ ঝিলমিল এক সোঁতা।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কতিপয় মানুষের মুঠোফোনে ছবি, ভিডিও, রিলস।
গোধূলি গায়ে নদীর বালুচরে একাকী নৌকোখানি 
জাদু তুলির টানে পরিপূর্ণ এক ল্যান্ডস্কেপ।
হঠাৎ হালকা এক কলরোল...
আলগোছে বৃক্ষচ্যুত
একমুঠো ফুলে জড়ানো একটি জারুল শাখা। 
নিষ্পাপ হাসি মুখে 
মুঠোভরা থোকা জারুলের অচেনা আদানপ্রদান,
'মা, আমার পুজোর ফুলের বোধন তোমার নামে 
মায়ের জাত তোমরা... শক্তিরূপিনী...'
ছিন্ন জারুল শোকে একটু আগের কঠোর মুখটি 
খানিকটা পেলব, ঠোঁটে আভাস একটু হাসির।
হাতে ধরা গুচ্ছ জারুল থেকে ক'টামাত্র ফুল
চেয়ে নিল যে ছিঁড়েছে আর দিয়েছে সে।
পাড়ের ঢাল বেয়ে দাঁড়ালো নদীর সোঁতার কাছে,
জলের বুকে ফুলের পাঁপড়ি ভাসালো যত্ন করে,
করজোড়ের প্রার্থনায় হাওয়ায় ভেসে এল,
নদী, সবুজ প্রান্তর, গাছগাছালি, পাখি সবাইকে
ভালো রাখার প্রার্থনার নিবিড় মন্ত্রধ্বনি...
'চোখে দেখতে পাওয়া এই ভগবানেরা ভালো থাকুক...'
অদূরে ঠান্ডা পানীয়তে নেশা মিশছিল যাদের
প্রকৃতির নিরালা নিজস্ব গন্ধকে কটু করছিল যারা 
আরক্ত চোখে বিষাক্ত হেসে বলে উঠলো,
'ফুলচোর...পাগল কোথাকার...'
জারুলের পুষ্পাঞ্জলিকে  বাতাস তখন 
ভাসিয়ে নিয়ে চলেছিল সহজতার 
কোনো এক ইচ্ছেপূরণের ঠিকানায়।
হাতে ধরা হঠাৎ পাওয়া জারুলের থোকায় অজান্তেই ঝরেছিল কিছু অশ্রুবিন্দু।
জারুল গুচ্ছের  টুপটাপ খসে পড়া পাঁপড়িদুটিও সিক্ত ছিল পুজোর অর্ঘ্য হবার কৃতজ্ঞতায়।
জারুল বিকেল অস্তরাগের আবছায়াতেও
এক আলোর বিকেল হয়ে ডানা মেলল সেদিন।
সন্ধ্যের ধূপছায়াতে নদীর কিনারে দাঁড়ানো
'পাগল ওরফে জারুল চোর' - এর ছায়াটি 
নদীর বুকে জলছবি আঁকলো মানুষের।





ভাঙ্গা গড়ার খেলায়

 নী ল  দি গ ন্ত 

মাঝে মাঝে মনে হয় 
অনেক দূরে চলে যাই,
এই চেনা মানুষ ছেড়ে, 
এই চেনা পৃথিবী ছেড়ে
অন্য কোথাও অচেনায় হারাই,
কোনো গ্রহান্তরে অন্য ভাবে, 
কোনো গ্রহান্তরে বন্য স্বভাবে।
এখানে কোনো কাজেই লাগিনা আর
শুধু মিছে অঙ্গীকার,
শুধু মিছে ভিড় করা।

গ্রীষ্মের দাবদাহের মত প্রখর হয় মন,
অপেক্ষা থাকে বর্ষার, 
বাঁধ ভাঙার, ভেসে যাওয়ার।
অপেক্ষা থাকে মৃত্যুর
অপেক্ষা থাকে নব সৃষ্টির।
তবু রেহাই নেই, 
অপেক্ষা অপেক্ষাই থাকে,
এক-এক করে আবার বসন্ত আসে
পর্ণমোচী মন সবুজে ভাসে,
ভাঙ্গা গড়ার খেলায় দিনরাত হাসে।





বর্ষায়

মি ষ্টি বৃ ষ্টি

বর্ষায় ভেঙে পড়ছে চোখ!
ভেজা-ভেজা চোখের পালক 
জানলায় অবিশ্রান্ত জল...
নারিকেল শাখার দোলক 

জানলায় ছাঁট আসছে, 
বন্ধ করো! পর্দা ভিজে যায় 
কান্নার কাছে অসহায়, কী চিঠি ধরেছো হাতে?

নিষ্ঠুর এমন? কোনো অক্রুর সংবাদ? তোমার কানু কি মথুরায়? 
জল ঝরে সহস্র গোপিনী 
বিষ-নীল ডুব যমুনায়!

ম'রে গেলে কানু পাবে আর? এই কথা ঢুকেছে মাথায়! চোখ মোছো, রান্না চাপাও।
আজ তবে খিচুড়িই হোক!





নিশি পোহায়

অ মি তা ভ  দে

লেখা যখন শুরু হলো দুচার পাতা...

খোলা মনের খোলা চিঠি দিলাম তোকে
রাতদুপুরে সময় যখন তোকে খোঁজে
নীল আলোতে চার দেয়ালে তোরই ছায়া
দুলতে থাকে হৃদয় তখন এলোপাথাড়ি
আজকে দেখি গন্ধরাজের আরেক কুঁড়ি।
লেখা এখন অনেক বাকি তোর জন্য
এই তো সবে শুরুর শুরু লিখতে বসা,
একটু হেলে বাঁদিক ঘেঁষে তুইও আছিস
কেমন যেন আদুরে গলায় আমায় ডাকিস।
নাকছাবিটা মনের ভুলে খুলে এলি!
বড্ড ফাঁকা, আয় না তবে আঙ্গুল ঠেকায়
কুঁচকে ভ্রূ দীঘল চোখে নেশা ধরে
ডুবতে দিবি ওই চোখেতে এক্কেবারে?


লিখতে গিয়ে হোঁচট খেলাম....

বারান্দা তে হঠাৎ যেন আলোর রেখা
ওমা! এতো তারার আলো! কখন এলো!
আমার পাশে তুইও ছিলি সেই ক্ষণেতে
গঙ্গাফড়িং উড়ে বসে তোর নাকে।
লেখা তখন বন্ধ করে পাগল হলাম
দীঘল চোখে ট্যারা হয়ে ফড়িং খুঁজিস
কী ভালো যে লাগছে এখন তোর মুখটা
ইচ্ছে হলো, জড়িয়ে ধরে দিলাম চুমু।
বুকের ভেতর ধড়পড়ানি বেড়েই চলে
আগুন জ্বলে শরীর মনে আগুন জ্বলে
তারার আলো ছিটকে পড়ে তোর মুখে
দেওয়াল ধরে একটা জোনাক উড়ছে সুখে।


লেখা তখন রাতদুপুরে চমক জাগায়...


আমার চোখে সর্ষে ক্ষেতের হলুদ আবেগ
লম্বা বেণী ঠিক তখনই চাবুক মারে
কানের কাছে ফিসফিসিয়ে ভালোবাসি
নিবিড় করে বুকের কাছে টেনে নিলাম।
চিবুক ছুঁয়ে মনে মনে বলেই দিলাম
আর কখনো তোকে আমি হারাবো না
মেঘযাত্রা শেষ যাত্রায় শরিক হবো
হিংসে করুক নিন্দুকেরা যত খুশি।

লেখা এখন প্রেমের ঘরে আটক পড়ে
খোলা মনের খোলা চিঠি দিলাম তোরে
আজকে না হয় এইটুকুতে বিদায় বলি
কাল নিশীথে আসবি আবার কথা দিলি।।





বৃষ্টি এলো

অ নি ন্দি তা না থ

তপ্ত রবির কিরণ। 
ক্লান্ত-ঘামে ভেজা শরীর, 
স্নিগ্ধতা চায় মন। 
সহসা দেখা মেলে আকাশে
কালো মেঘের কুন্ডলী। 
গুরু গুরু ধ্বনি ক্ষণে ক্ষণে 
     বাজে কানে।
অপেক্ষার দিন শেষ 
      বাদল এলো!
ভিজলো অঙ্গ শীতল শান্ত 
       বারি ধারায়। 
উচ্চারিত হলো তৃপ্তির শব্দ 
         আহা শান্তি!
শিশুদের নৌকো ভাসানোর
      আনন্দের কোলাহল। 
শুষ্ক ধরার বুকে বর্ষার স্পর্শ, 
খাল, বিল, মাঠ, নদী, সমুদ্রে 
        জল রাশির খেলা। 
কেয়া-কদম্ব বনে মাতাল 
            গন্ধ লুটপুটি। 
তুলনাহীন, অপরূপ বৃষ্টির সৃষ্টি।
    অতিবৃষ্টিতে বিপর্যয়, 
যান-বাহনগুলো উভচর তখন 
      চলে উভচর প্রানীর রূপে। 
পুরাতন স্মৃতির রোমন্থন, 
এ বৃষ্টিতে ঘুচলো তাপের দুঃখ।




বাকি গল্প

তী র্থ ঙ্ক র  সু মি ত

অসময়গুলো এখন বড় খাপছাড়া
সময়ের তাগিদে লিখে রাখা যত চিঠি
এখন আমার বইয়ের টেবিল জুড়ে
নানা অছিলায় আমার কালো কালির "পেন" টা
এখন ভাঙ্গনের গল্প লেখে
নদীর কাছে দাঁড়িয়ে যে বিশ্বাসের প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম
আজ ভগ্নাংশের হিসাবে অতীত বলার দাবী রেখেছে
মুহূর্তে কত কিছু বদলে যায়
ঘড়ির ব্যাটারিটাও এখন স্থগিত

আর আমি...

এসো এক কাপ চা খেতে খেতে বাকি গল্পটা বলি।।





বাদলা এলো

নি ভা  চা ক লা দা র

সাদা মেঘের ভেলা গেছে নিরুদ্দেশে,
কাজল বরণ মেঘের ঘনঘটা আকাশে।
মেঘে মেঘে বাদ্যি বাজে ডম্বরু,
বাদলা মেয়ে এলোকেশীর নৃত্য হলো শুরু।

বসুন্ধরা উঠলো সবুজ সুন্দর সাজে,
কুসুম কলি উঠলো ফুটে কাননেতে লাজে।
ঘাসে ঘাসে সবুজ বরণ ফিরে পেল প্রাণ,
পথের বাঁকে ব্যাঙ ধরেছে ঘ্যাঙর, ঘ্যাঙর গান।

 নদীর বুকে জলরাশি ছুঁয়েছে নীরার দুকূল,
ঢেউ-এ‌ ঢেউ-এ খেলে হয়েছে আকুল।
টাপুর টুপুর বৃষ্টি ঝরে বর্ষা রাণীর গান,
কান পেতে রই, জুড়িয়ে দিলে প্রাণ।

চাষী ভাই-এর মুখে ফুটেছে হাসি,
সোনার ফসল ফলবে রাশি রাশি।
পাকা ফসল তুলবে ঘরে,
দুঃখ যাবে দূরে।

বাদলা মেয়ে এসো ফিরে ফিরে,
সুখ স্বপ্ন  সব তোমায় ঘিরে ঘিরে।





মৃত্যুর জন্মদিন

প ল্ল ব  ভ ট্টা চা র্য  অ ন ন্ত
             
আগুন পুড়িয়েছে চোখ
গান এসে ধুয়েছে ছাই---
হাওয়ায় ভেসেছে মৃত্যু ফুলের ঘ্রাণ;
বাতাস বৃষ্টি একসাথে মিলেমিশে
পালন করেছে মৃত্যুর জন্মদিন---!

ঘুমন্ত ফুলেরা মাঝেমধ্যে আসে
শুনতে চাই বেঁচে থাকার গল্প।
আমি ছড়িয়ে দিই--- লুকিয়ে রাখা কান্না
বন থেকে বনান্তরে, দুর-দুরান্তরে
জেগে ওঠা কলিদের ঘুমপাড়ানি গান।

একদিন আলোর মাঝেই
নেমে এসেছিল মৃত্যুর জন্মদিন---,
সন্দিগ্ধ উপত্যকা ধরে হেঁটেছিল পা'য় পা'য়
হাজার ঢেউকে জড়িয়ে ধরে---
শেষ বারের মতো মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল
বেঁচে থাকার ইচ্ছে নিয়ে মৃত্যু উপত্যকায়।।





সুখের রঙ

গৌ রী  স র্ব বি দ্যা

সুখের অনেক রঙ, সাত রঙে রংধনুর 
মতো উঠে আসে মানুষের জীবনে 
সবাই সুখ পছন্দ করে, সুখের আশায় ছোটে,
সুখকে প্রণতি জানায়।

আর দুঃখ! দুঃখের কোন রঙ নেই,  
যাকে রঙতুলি দিয়ে আঁকা যায়!
কেউ তাকে স্পর্শ করতে চায় না,
 সাদরে গ্রহণ করতে চায় না!

অথচ সুখ দুঃখ পরস্পরের বন্ধু 
তারা ঘুরেফিরে আসে জীবনে 

সুখ ক্ষণিকের, দুঃখ দীর্ঘস্থায়ী 
দুঃখকে সাদরে মেনে নিতে পারলেই
সুখ খুব সহজে এসে ধরা দেয়।




বাঙালীর বর্ষা

ঋ ত ম  পা ল 

বাদলা দিন মন রঙিন, 
হয়েছে যে বর্ষার আগমন;
ভ্যাপসা গরম মুছে গিয়ে, 
হয়েছে স্বস্তির আনাগোনা;
তাই মনে আনন্দ ভীষণ। 

বাইরে ঝোড়ো হাওয়া, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, 
টাপুর টুপুর বৃষ্টি ধারায় একলা অবকাশ। 

বৃষ্টির দিনে মাতোয়ারা মন, 
খিচুড়ি, বেগুনি, আলুরদমে;
জমে যাবে দুপুর, হবে ভুরিভোজের আয়োজন। 

বৃষ্টি হলেই গল্পের বই, মনে প্রেমের ছোঁয়া, 
বিকেলের এক কাপ চায়ে হারানো ভালোবাসার উষ্ণতা খুঁজে পাওয়া।





আদিম ভালোবাসা

ছ ন্দা  চ ট্টো পা ধ্যা য়

হাজার বছর নয়, তার‌ও বহু আগে থেকেই অনন্ত ভবিষ্যতের পথে হাঁটছি আমি, শুধু তোমার জন্য... 
বাউল মন আউল হয়!

জীবন সংগ্রামের রসদ যোগাতে ল্যাংটা পুরুষ ঝাঁপিয়ে পড়তে বুনো ম্যামথের ওপর, রক্তমাখা কাঁচা মাংস ছিঁড়ে কাড়াকাড়ি... 
পেটে ক্ষুধা দাউ দাউ!
তারপর জৈব খিদে...
আমার নিরাবরণ শরীর তোমার ভয়ে ছুটে পালাচ্ছিল ছায়া নিবিড় বনান্তরে...
তোমার হাতের কোনো বুনোজন্তুর ফিমার,
সবলে বসিয়ে দিলে আমার মাথায়!
আমার পা চিরে রক্তপাত...
ব্যাথায় না পালাতে পারি।
সিঁদুরে আলতায় আমি নববধু!

পায়ে পরালে লতাপাতার শিকল, নাকে কানে ফুটো করে পরালে লতার দড়ি, হাত‌ও বাঁধলে ঐ দড়িতে...
 গলায় দড়ির মালা দিয়ে বেঁধে রাখলে গুহার দেয়ালে।
অলঙ্কার উঠলো আমার  হাতে, কানে, নাকে, গলায়, পায়ে...
আমি এয়োস্ত্রী, নির্যাতন আমার ভূষণ। 

অভ্যস্ত হয়ে গেলাম তোমার ধর্ষণে,
আদরকে চিনলাম...
সুখানুভূতি হতো তোমার আলিঙ্গনে!
কখন যে ভালোবাসলাম...

ভোলগা থেকে গঙ্গার পথে  
সঙ্ঘবদ্ধ নারীপুরুষের মিছিল
সভ্যতার উন্মেষ...
মাতৃতান্ত্রিক সমাজের বিবর্তন পুরুষতান্ত্রিকতায়।

লক্ষ যুগ কেটে গেল। 
বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় নারী ফিরে চায় তার স্বাধীন সত্ত্বা... সন্তানের নিশ্চিন্ত অধিকার!

কোটি কোটি বছর ধরে আমি শুধু খুঁজে চলেছি আমার সেই আদিম প্রেমিককে...

আসবে তো?!





বৃষ্টির কুঁড়ি ঝরে

বি বে কা ন ন্দ  ন স্ক র 

বৃষ্টির কুঁড়ি ঝরে মাটির বুকে 
নদী নালা বুক পাতে অন্য সুখে।
সৃষ্টির বারিধারা পড়ে গুঁড়ি গুঁড়ি 
বৃষ্টির ফোঁটা যেন কাঁচের চুড়ি।

মেঘ মাখা দিন সাজ মেঘলা নিঃশ্বাস
চোখে মুখে মেঘ রঙ বৃষ্টি আভাস।
পাতার আড়ালে মুখ হলদে পাখির 
শির শির শিহরণ কুসুম পাখির।

বৃষ্টির মোতি মালা ঘাসের ডগায় 
বৃষ্টির গান শোনো চাষী বউ গায়।
বুক ভরা আশা ভরা আষাঢ়ের ঘ্রাণ 
বাতাসে মেশালো কে গো বৃষ্টির তান।

বৃষ্টির ফুল খেলা চোখের পাতায় 
মাটির উঠান নাচে বৃষ্টি নেশায়।
ডাহুকের কলতান পাখির পাড়ায় 
বৃষ্টির ছড়া পাঠ নতুন চারার।





অনুভূতি
 
অ নু ভা  স র কা র

সাদা কালোতে নিজেকে আঁকলাম,
মনখারাপি বিকেলে
তোকে দেখলাম।
বেশ আছিস আনমনে,
নিজের খেয়ালে।
তবে কি আমিও খেয়াল ছিলাম..?
খেয়াল গুলো কি বদলে যায়..?
কখন আলো,কখন অন্ধকারে
নাকি রঙিন বাহারে।
স্বপ্ন গুলো কি খেয়ালের মধ্যে সীমিত..?
নাকি জোর করে আনতে হয় তাকে..?
প্রশ্নের পর প্রশ্ন ঘিরে থাকে আমাকে!
একটুকরো ঠান্ডা বাতাস চাই,
কিছু ক্যানভাসে আঁকতে চাই,
রূপকথার সেই মানুষ চাই,
চাহিদার তো শেষ নাই!
ব্যথাতুর মন মানে না বারণ।
জানিস স্বপ্নের রাস্তাতেও চলা বারণ।
ভয় ক্রমশঃ করছে গ্রাস,
হারিয়ে যে ফেলার বড় অভ্যাস।
আত্মা বড় সজাগ,
লাভ ক্ষতি দেখেনা আজ।
এক মুঠো রৌদ্র কেনা কি যায়..?
মুঠোটাই যে জ্বলে যায়।
তাই সূর্যের সন্ধানে বের হলাম,
নিজেকে আজ নিজের মতো করে মেললাম।
রূপকথা থাকনা একটু আলগা,
বাঁচার কি শুধু এটাই অভিপ্রায়..?
এক অজানা দিশা,
কিছু সন্ধ্যা তারা,
কিছু স্বপ্ন নিলাম না হয়।
সন্ধান তো করতেই হয়,
তাই নয় কি...?





কবিতা

সু শা ন্ত  সে ন

সেই কবিতা'টা তো লেখাই হল না
যা লিখতে চাই
মনের অন্তঃস্থলের কথাটি।
অনেক বার চেষ্টাতেও বিফল হয়ে
মনেরই দিকে তাকালাম- দিক-নির্দেশনার আশায়।
মন- নিরুত্তর।
তবু চেষ্টা চলতে থাকলো
চলতেই থাকলো
যতক্ষণ না বিন্ধ্য পর্বত নত হবে পুনরায়।
অগস্ত্য মুনির কথা স্মরণে 
সেই থেকে সাধনা চলছে
অবিরত।





কালো মেঘ

শ ম্পা  মু খা র্জী  কো লে

এই কালো মেঘ ডাকলে তোকে 
দিসনা কেন সাড়া?
তোর যে দেখি সারক্ষণ 
কাজের ভীষণ তাড়া।

এদিক সেদিক উড়ে বেড়াস
শুকনো জায়গা পেলে,
অমনি তুই ভিজিয়ে দিস
ইচ্ছামত জলে।

সারাদিন রাত গল্প ঘুম
খাওয়া দাওয়া ভুলে,
কাজের উপর মন দিয়েছিস?
এসব কিছু ফেলে।

দিনের বেলায় রবিমামার
দেখা পাই না মোটে,
কখন যে উদয় হয়
কখন যে যায় পাটে।

দে তো দেখি আকাশটাকে
ভালো করে ধুয়ে,
শরৎ আকাশ আসুক ফিরে
খুশির বার্তা নিয়ে।





হতাশা

স্ব প ন  কু মা র  ধ র 

বসে ভাবি সারাক্ষণ,
এ কেমন জীবন!
অনুপ্ররণাহীন প্রতিক্ষণ,
কাটাবো কী করে সারা জীবন!

আতস কাঁচের তলায় দেখি,
ছান্দিক জীবনের অন্ত,
হতাশায় মন ডুবেছে বলেই,
লেখাপড়ার চর্চা বন্ধ। 

আশায় আছি সময় বদলাবার,
হতাশার জীবন কাটবে আবার,
জীবন হবে তখন গতিময়,
উপভোগটাও হবে ছন্দময়।





একলা বাদলা

দি শা  পা ল ন দা র

যদি বাদলা দিনের কাজলা সাঁঝে 
আমায় পড়ে মনে, একান্ত গোপনে, 
যদি আঁখিজুড়ে নামে অকাল শ্রাবণ, 
মেঘের ঠিকানায় আমার খবর পাবে। 

যদি কখনো বিরহ মিছিল নামে 
তোমার হৃদয়ের অলিতে গলিতে, 
সেই পুরনো জানলায় জড়িয়ে ধরা 
বৃষ্টিভেজা কেতকীর কাছে আমার সুবাস পাবে।

তবু দূরেই থাকো, হয়ো নাহয় কাকভেজা রোদ
আমি হবো শেষবেলাকার একলা ভাঙা মন
আবছা আলোয় সন্ধ্যেবেলায় বৃষ্টির দাবানল
খরস্রোতে এসেছে ভেসে ছন্দবিহীন শাওন।

দিন বদলায়, আলো পাল্টায়, ভাঙা শহর জুড়ে 
দুটো মন আজ দুদিকে হাঁটছে একলা
হয়তো কখনো, কোনদিন, আমরা রামধনু হবো
আমাদের ছুঁয়ে যাবে আলতো রঙের জ্যোৎস্না।





ঘুঁটেই তো পুড়ছে
 
প্র দী প  সে ন 

কেন মিছে গেলো গেলো রব? 
দেখছো না ধোঁয়ার কুণ্ডলী?
শুনছো না কাঁসর ঘন্টা?
শুরু হয়ে গেছে উৎসব?
ঘুঁটেই তো পুড়ছে, তাতে এতো হইচই?
কেন, আমরাতো অক্ষতই আছি  
বলছে না সবাই পইপই?
হঠাৎই খেয়াল হলো আমরা গোবর বইতো নয়
ঘুঁটেরা পুড়ছে আজ, কাল যে গোবরের পালা!
 
সেখানেই ভয়।





বৃষ্টি বাদল
 
দে ব যা নী  সে ন গু প্ত 

অনেক দূরে কালো বাদলের ঢেউ, 
উপচে পড়ছে আকাশটা,
আস্তে  আস্তে ঘিরে ফেলে,
সমগ্র গগনখানা।
গুরু গুরু বাজে ধ্বনি, 
ময়ূর পেখম মেলে,
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নাবে,
ফুল পাতা গাছ ভীষণ, 
বাতাসে নুয়ে নুয়ে পড়ে ।
গরজে গরজে বিদ্যুত চমকায়,
যেন বুকের শ্বাস যাবে আঁটকে,
পাগলির মেয়ের হাততালিতে,
বসুধা উঠছে চমকে।
পাকপাখালি যে যেথায় ছিল,
সবে কাঁপে মরন ভয়ে,
বাজের শব্দে প্রাণের পাখি,
উড়তে গিয়েও থমকে যায়!
ঝমঝমঝম বৃষ্টিতে,
রাস্তায় জমে হাঁটু জলে,
কোথায় নালা কোথায় গর্ত?
আছাড় খেয়ে পড়ছে দেখ।
সারাদিনের বাদলধারা,
পক্ষীকুল গৃহহারা,
ভেসে যায় পাখির ছানা,
ওরে বৃষ্টি! এবারে  বাড়ি যা না।।





মল্লিকা ধান
  
প লা শ  বি শ্বা স

বৈশাখী রোদের 
              শ্রেষ্ঠ অবদান!
সোনা রঙের 
                মল্লিকা ধান!
পেঁচা, ইঁদুর, আর মল্লিকার সম্পর্ক
           শুধু অন্ধকারের!
কালবৈশাখীর অস্তিত্ব দিগন্ত রেখায়
              স্বস্তি কৃষকের!




কে জানে

স র মা  দে ব দ ত্ত

ফুরোয়নি এখনো জীবনের রসদ টান পড়েনি ভাঁড়ারে
তবুও মনে আতঙ্ক জাগে ভেঙে যায় বুক 
এ কিসের সঙ্কেত?
সব থেকেও কেন মনে হয় কিছু নেই কেউ নেই 

হু হু করে বয়ে যায় বাতাস ভাঙা মনের অলিতে-গলিতে 
এ আমি কোথায় দাঁড়িয়ে? সামনে ঔ মৃত্যু উপত্যকা!! 

ঝাপসা দৃষ্টি, অলস পা দুটি 
আমি পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছি 
বাঁচবার চেষ্টা করছি 
কিন্তু কোথায় যাব!
আমার যে পা সরছে না
আমিও কী আস্তে আস্তে ডুবে যাব?
ঔ মৃত্যু উপত্যকায়!
হয়তো তাই, হয়তো বা তা নয়---
কে জানে!




স্ট্রবেরি কালারের ফিমেল কাউন্টার ও আয়নার অসদপ্রতিবিম্ব

নি মা ই  জা না

স্ট্রবেরি কালারের একটা ফিমেল কাউন্টার। এনক্রিপ্টেড চ্যাটিং এক্সপায়ারিং রিচার্জ সেন্টার। আমি ঝোলা বাঘের মতো সিন্দুক দ্রবণ নিয়ে সুলভ শৌচালয় থেকে ফিমেল কনডম বিক্রেতাকে তিন দিন ক্ষুধার্ত হরিণীর মাংস খেতে দিয়েছিলাম

আমি মিথ্যে করে স্টেরয়েড ইনজেকশনারি নিডিল পাতলা জিভের ভিতরে ঢুকিয়ে পিশাচের উলঙ্গ বীভৎস দাঁতগুলোকে হাওয়া খাওয়াই। আমার সরু সরু হাড়ের দুর্গন্ধ ওড়া জলজ স্নায়ুর মতো এ জন্মের মৃত গন্ধ লুকিয়ে রাখি একটা ভয়ংকর বিছানার নিচে।
দক্ষিণ পূর্ব কোণে আমার পিতা প্রতিদিন ঘুমিয়ে থাকে বলে আমার শরীরে আর কোন দ্বিবীজপত্রী ফল ঝুলে নেই। বাদামী দিক থেকে অদৃশ্য নীল নীল পিতাগুলো জেগে উঠলে আমি তাদের সংকর সং তত্ত্বে জন্ম দিতে দেখি একটি বন্ধ্যাত্ব বিষয়ক সিমবায়োসিস ফার্টিলিটি সেন্টার। আমাদের দরজা শুধু দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল আত্মহত্যায় ঝুলে থাকা পুরুষটির মতো
অন্ধকারে আমি মৃত মানুষদের হাতে তাদের গ্রন্থি রসের বীজ ও দরজার বৈকুণ্ঠ ক্ষত্রিয় সিঁড়ি ঘরের ইস্পাত কুঠুরি আর ইছামতি নদীর একটা লালাভ যমুনা পোকা দ্বীপ নিয়ে মৃত পাকস্থলীর চারপাশে উপুড় হয়ে বসে আছি।


শ্মশান কাঠের ওপর কিছু ভয়ংকর রজতান্ত্রিক মুদ্রা দৃশ্য দেখাবে বলে। আমি কাঠের উপরে দাঁড়ানো একমুখী সাপ। চন্দ্রগ্রহণে ভয়ংকর ধ্বংস হবো, ঈশ্বর আর আমার ঘরের গৃহপালিত আয়নার সামনে নিতম্বের বেষ্টনকারী অন্তর্বাস পাল্টাচ্ছেন






বর্ষা রূপে অপরূপে

ব র্ণা লী  মু খা র্জী

মেঘের চাদরে শীতল আকাশে নেমে আসে এক পশলা বৃষ্টি, 
সবুজে মোড়ানো প্রকৃতির অনাবিল অপরূপ সৃষ্টি।
পথ চলতে আমি তুমি একই ছাতার তলায়,
পিছল রাস্তায় হাতটি ধরে বাঁধা পড়ি দু'জনায়।
ভরা শ্রাবণে অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরে পড়ে,
টুপটাপ করে আম জাম এমনিতেই খসে পড়ে।
আমি তুমি মুখোমুখি অঝোর বারি ঝরে,
রুদ্ধ ভাষারা খোলা বাতায়নে নিজেদের মেলে ধরে।
ব্যাঙেরা সব নৃত্য গীতে হয়ে ওঠে বিভোর,
বৃষ্টি এসে ভাসিয়ে দেয় দুঃখ বছরভর।
খাল বিল ভেসে ওঠে বানভাসি জলে,
ছেলেমেয়েরা আদুল গায়ে কাদা মাটি মেখে খেলে।
বাদল দিনের কাজল মেঘে গুরুগম্ভীর ঝলকানি,
ময়ূর ময়ূরী পেখম মেলে নাচে আলোক রাশি।
গ্রীষ্মের শেষে বর্ষা আনে মনে পরম শান্তি,
ধনধান্যে ফুলেফলে ভরে  শস্যশ্যামলা প্রকৃতি।
কাঠগোলাপ জুঁই বকুল লিলির অনন্য সমাহার,
প্রতিপলে নিসর্গের উচ্ছল রূপের বাহার।
বাদল ধারায় স্নাত রাই ধায় অভিসারে,
বাঁশির ধ্বনি ভেসে ওঠে সুদূর যমুনাপারে।





রঙ করাবে গো

সা য় ন্ত ন  ধ র 

রঙ দেবে গো রঙ, তোমার বাড়িটা একটু রাঙিয়ে দিতাম...
এই নাও রঙ... অ্যপ্রিকট, ফুসচিয়া, নাট ব্রাউন...
আরে এ তো সব ফুল ফলের নাম গো, এ দিয়ে কি হবে?
ওই ফুল ফলের যা রঙ, এ তাইই...
নাও নাও এবারে রাঙিয়ে দিয়ে যাও...
ও ভাই রবি, নিয়ে আয় রঙের বালতি, গুলে ফেল রঙ...
ঠিক আছে কৃষ্ণ দাদা, তুমি ব্রাশ, রোলার নিয়ে এসো...
এনেছি মোরা এনেছি মোরা রঙ করবার সরঞ্জাম...
ওপাশটা তুই ধর ভাই, এদিকটা আমি সামলাই...
সময় কাটে, সাদা দেওয়ালে পড়ে রঙের পোচ 
কিছু রঙ বেঁচে যায়...
ভাই তোমরা নিয়ে যাও এ রঙ...
তোমাদের বাড়িতে লাগিয়ে নিও...
তা কি হয় গো? বাড়ি কই? 
ও থাক, চলটে গেলে লাগবে কাজে...
তোমাদের ঘর রাঙিয়েই আমরা খুশি... 
চলি... টাটা....
রঙ করাবে গো.... রঙ...





ভারতপথিক

ড রো থী  দা শ  বি শ্বা স
   
কি দিয়ে তৈরি তুমি হে রাজন! সেই তো মাটি জল বাতাস আগুন আকাশ---
বুদ্ধিমত্তা তো তোমার আমার সবার, শুধু মানবিক সুর চেতনার অবকাশ
একটু বেশিই সাধারণ মানবাত্মার চেয়ে, চিন্তনে একটু বেশিই এগিয়ে থাকা---
বেদ পুরাণ আর মনুসংহিতা ঘেঁটে সতীদাহ রদে লড়ে গেলে তুমি একা।

বাল্যবিবাহ, কৌলীন্য প্রথা উৎপাটনের পর, ছিন্ন করেছো সতীদাহ-নাগপাশ
টাটকা বাতাসে ধূলায় ঘাসে মুক্তি লভেছে শতেক কন্যা, রুখেছো সর্বনাশ
সর্বকালের আধুনিকতম মানুষ, ভারতপথিক পথ হেঁটেছো আঁধারে---
ব্রাহ্মধর্মের শত শত দীপ জ্বেলে দূর করেছো সমাজের সব বাধারে।





মধ্যরাতের গান

আ ল্পি  বি শ্বা স 

মধ্যরাতে পৃথিবী ঝরায় অশ্রু
টুপটাপটুপ জলপতনের শব্দ
আর্দ্র বাতাস ছুঁয়ে যায় বাতায়ন
জলে ভিজে ভিজে পাতারা ভীষণ জব্দ।

এসব কথা আসলে কবিতা নয়
এসব শুধুই ঘটনার বিবরণ
টুকরো ভাবনা বাতি নেভানোর আগে
এ শুধু আমার স্বগত সম্ভাষণ।





আমি সেই বৃষ্টিকে ভালোবাসি

প্র কৃ তি  দ ত্তা

বৃষ্টিকে একটা আলতো চুম্বন করতে দাও
বৃষ্টির রূপোলি ফোঁটা ছুঁয়ে যাক তোমার কেশরাশি
বৃষ্টি গেয়ে যাক কোন ঘুমপাড়ানিয়া গান
বৃষ্টিতে ফুটপাথ হয়ে যাক শান্ত পুকুর 
অথবা নিকাশি আধার স্রোতস্বিনী
বৃষ্টি হয়ে যাক কার্নিশ থেকে জলপ্রপাত
জলসম্ভারে হয়ে যাক খলবলে মাছেদের খেলাঘর
মেঘের উড়ান ছেড়ে ভাসমান ধুলি থিতু হোক ঘাসেদের কোলে
শিকড়ে শিকড়ে হোক রসদ জোগান
বৃষ্টি টুপটাপ ছন্দে বাড়ির ছাদে সুর ভাজুক সারারাত ধরে
আমি ছুঁতে চাই গবাক্ষে ছুটে আসা জলছাট 
আমি সেই বৃষ্টিকে ভালোবাসি।





উপেক্ষিত

ত নু শ্রী  ম ণ্ড ল 

উপেক্ষিত আমি।

উপেক্ষা করে পাওয়াটাও একরকম পাওয়া...

কষ্ট পেতে পেতে কষ্টের ধারগুলো কেমন যেন কমে যায়- তাই না! 
জীবনের অর্ধেকটি সময় কেটে যায় একরকম  নির্ভেজাল বর্ণপরিচয়ে। 

তোমাকে ভালোবেসে কখন যে নদী হয়ে গেছি  বুঝিনি-
নদীর পাড়ে একে একে জমা হয় আমার হৃদয় পাঁজরের ভাঙা নুড়ি-পাথর; 
নদীর দুধ সাদা ফেনাগুলো মাঝে মাঝে আছড়ে পড়ে আমার আধ-ভাঙা শরীরের উপর;
কখনো রামধনু মেঘদূতের আহ্বানে আকাশের ঠিকানায় ক্ষণিকের অতিথি হয়ে আসি, 
আবার মিলিয়ে যাই আকাশ-গঙ্গায়! 
সেখানেও কত কাজ আমার-
বলতে পারো একরকম নিজেকে ব্যস্ত রাখার নিদারুণ প্রচেষ্টা। 
একটাই প্রহর খুঁজি অক্ষরগুলো ঢেউ আর পাড়ের সীমানায় বন্দী করার-
...কিন্তু আমার কোলজুড়ে বিশ্রাম নেয় জোৎস্নার পবিত্র আলো, 
তাকে সরিয়ে রাখার সাধ্য কার বলো?
   আমি আজ বড়ই ক্লান্ত-
একমুঠো বিশ্রাম চাই একান্তে- তবুও তোমার কাছে সময়ের অভাব! 
মাথার উপর চিলটি ডেকে চলে অনবরত, 
ইচ্ছে করেই না শোনার বাহানায় মনের দরজা বন্ধ রাখি-
তখন চিলটির তীব্র ভৎর্সনা আর বাতাসকে কলুষিত করে না;
সে মনভোলা হয়ে শুদ্ধতা ছড়িয়ে দেয় আমার নীল সীমানায়।





ইচ্ছে যাপন

প্রী তি ল তা  চা কী  ন ন্দী

ভরা শ্রাবণ উপচে পড়েছে
অনর্গল মুহূর্তের জানালায়
যাপনের ক্ষতের ভেতর
জ্বলতে থাকা শ্বাসটুকু 
ধীরে ধীরে লীন হতে থাকে
অনর্থক কাজের অছিলায়
বাষ্পীভূত স্রোত এড়িয়ে
বরাবর পা বাড়িয়ে থিতু হওয়া
বাতাসে ভেসে আসা বনজ নির্যাসটুক গায়ে মেখে
উপভোগ্যের দাবী রাখে ইচ্ছেযাপন।





চেনা চেনা স্বপ্ন

কা বে রী  রা য়  চৌ ধু রী

আদুরে অভ্যাসে চোখে ঘুম নামলে ভিড় করে মায়াবী ছোঁয়া
নীলের নেশায় গহন মনের অতলে ডুব সাঁতারে স্বপ্ন পিয়াসী আবেগঘন।
বাস্তবের যা ভাবি মনের কোনায় সোহাগ রঙিন কুঞ্জবিতান
চিরসবুজ মনের মাধুরীমায় কুঁড়ি থেকে পাপড়ি মেলে সদ্যোজাত শিশুর মত ফুটফুটে সজীব।।
চেনা চেনা স্বপ্ন মুঠোতে বিদ্যুৎ শিহরণে আবিষ্ট করে মোহের মদিরায়
আলোকিত জ্যোৎস্নায় সায়ন্তিকা স্বর্ণালী আভা জোনাক আলোয় হৃদয়ের অন্দরমহল পুলকিত হিল্লোল।
রোজনামচার যাপনের ব্যথা ভুলে অজানা জগতে দেই পাড়ি
স্বপ্নিল আঁখি জুড়ে অথৈ নীলে গহন মনে সাগরের প্রসারতা।
সুদূরের হাতছানিতে সীমার বাইরে অসীমের আহ্বান
বৃষ্টি ভেজা জুঁই বকুল কামিনী হাসিতে উতলা অনুভব।
মন আকাশে মেঘ রোদ্দুর বৃষ্টির আগমন 
বৈচিত্র্যময় সুগন্ধ বাতাসে অনুভূতির ছোঁয়ায় সহস্র ধারায় প্রস্রবণ।
মনমায়া আলোছায়ায় কলমীলতা হেলেদুলে উচ্ছ্বাসে হাওয়ায় 
ভালোলাগা ভালবাসায় প্রগাঢ় হিল্লোলে শ্রাবণ অনুরাগ।
ভোরের ঘুম ভাঙ্গানিয়া ডাকে টুটে যায় স্বপ্নের আগল 
ঘোর লাগা চোখ খুলে সাতরঙা ঝিলিকে মৌন বৈরাগ্যে ভৈরবী রাগে সরগম।





খিদের জ্বালা

চা য় না  ম ন্ড ল

শুনতে পাচ্ছো নাকি আমাদের কান্না
আজকে যে হয়নি আমাদের ভাত রান্না,
পেটে খিদে খিদে শুধু খিদে
খিদের জ্বালায় বাচ্চারা আমার খুব কাঁদে।
আমরা কেউ কলকারখানায় কাজ করি, 
আবার কেউ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে 
বৃষ্টিতে ভিজে চাষ করি।
তবুও আমরা পাই না শ্রমের 
সঠিক দাম।
কাঠফাঁটা রোদেও 
আমরা কাজ করি।
তোমাদের মুখে খাবার তুলে দিয়ে
আজ আমরা নিঃস্ব।
আজ নেই আমাদের কোনো মূল্য, 
আমরা দিন আনি দিন খাই,
এখন আমরা কোথায় খাবার পাই।
তোমাদেরতো  অনেক অনেক টাকা
দাওনাগো, আমাদের ১০০ টাকা ধার,
কিনবো চাল, ফুটিয়ে খাব সবাই, 
খাবনা মাছ সবজি
খাব শুধু ফ্যান ভাত, নুন ভাত,
এতেই মিটবে খিদের জ্বালা।





তোমাকেই চাই

তা রা ন্নু ম  জা হা ন

আমার একটা তুমি চাই 
যে শান্ত নদীর মতো হবে স্বচ্ছ 
আমার যা কিছু মলিনতা গ্রহণ করে, 
আমাকে করে দেবে স্নিগ্ধ শীতল। 

আমার একটা তুমি চাই
কালবৈশাখীর মতো প্রচন্ড, 
যা কিছু আমার জীর্ণ দীর্ণ
সব ভেঙে আমাকে নবরূপে গড়বে। 

আমার একটা তুমি চাই
শান্ত পেলব বাতাসের মতো, 
ক্লান্ত বিষন্নতায় আমি যখন বিভ্রান্ত
আমাকে পরম যত্নে যে রাখবে আগলে। 

আমার একটা তুমি চাই
গহীন অরণ্যের মতো, 
আমার একাকীত্বের অবহেলার দিনে
তার গভীরে আমি হবো নিখোঁজ। 

আমার একটা তুমি চাই, শুধু তুমি।।





তাইতো আমি কবি

ত ন্দ্রা  ম ণ্ড ল 

শ্রাবণ মেঘে আকুল বেগে
                   ঝরঝর ঝরে বৃষ্টি 
চরাচর জুড়ে দূর থেকে দূরে 
                   সবুজ সবুজ সৃষ্টি।
যত খাল বিল নদ নদী ঝিল 
                   ভরে যায় জলে জলে 
কেতকী কদম হাসে হরদম
                   বকুল কথা বলে।
কখনো আলো কখনো কালো 
                   মেঘের গুরু গুরু 
বাদল হাওয়ায় কি এক মায়ায় 
                    মনটা উড়ু উড়ু।
মনের খাতায় পাতায় পাতায় 
                    শ্রাবণের জলছবি 
ছন্দে ছন্দে পরমানন্দে 
                     তাই তো আমি কবি।।





মনিহারি দোকান

র ত্না  রা য়


আপেলটাতে কামড় বসাতে বসাতে  উঠে বসে ছিল সে কাঠের নৌকাটায়।

অলকানন্দার তীব্র স্রোতে দাঁড় বেয়ে এসে দাঁড়িয়েছিল মৈনাক পাহাড়ের নীচে আয়না দিয়ে বাঁধানো মনিহারি দোকানটার সামনে।

সাধ করে তার নাম রেখেছিল মায়ার সংসার।

কাঁচের শোকেসের মধ্যে থরে থরে সাজানো সুখদুঃখ, আনন্দবেদনা, ভুলবেভুল মাখানো কান্না হাসির রকমারি কাগজের ঠোঙা।

সারাদিনের বেচাকানায় ক্লান্ত মন এবার একটু বিশ্রাম চায়।

শিরশিরে বাতাসে পর্ণমোচী গাছটার পাশ দিয়ে হেঁটে এসে চুপ করে বসে রাতনদীর মোহনায়।

ঘরে ফেরা পাখিদের ডানায় পুরনো হিসেবটা মনে মনে সেরে নেয়। 

কতটা গেল, কতটাই বা ফেরত পেলো।

 কখনো মিলে যায়, কখনো  পুরোটাই বরবাদ।

 তবু হার না মানা মন জলবাতাসা ধুপধুনো দিয়ে নতুন এক নক্ষত্রের জন্মলগ্নের অপেক্ষায় 

সূর্যধোয়া সকালে দোকানের দরজা খোলে পুনরায়।।





বার্তা

সু মা  গো স্বা মী 

আজ একটা বার্তা পাঠাবো মেঘের দেশে।

ঝোড়ো এক হাওয়া সঙ্গী করে 
খুব মেঘ করুক তোর পাড়ায়।

টিপটিপ বৃষ্টিতে ভিজতে থাক 
তোর ধূলোবালি ছোঁয়া সারাটা দিন।

অগোছালো চিন্তারা ঘুম ঘুম চোখে 
চায়ের কাপে চুমুক দিক তোর পাশটিতে বসে।

ভেজা ভেজা মেঘ, ভেজা ভেজা দিন 
আর থাক তোর কিছু স্বরচিত ইচ্ছের ডায়েরি।

সিঁড়ির রেলিঙে ভর দিয়ে স্নান করে যাক
তোর খোলা চুল, তোর চিবুক।

রান্নাঘরের জানালায় মাতাল আর্দ্র হাওয়া 
উঁকি দিয়ে দেখে নেবে তোর গিন্নিপনার রূপ।

সজল মেঘের বুকে জড়িয়ে থাকা বিদ্যুৎফলা 
মুচকি হেসে তোকে বলে উঠুক,
'এমনি করেই কেটে যাক 
তোর আলো-আঁধারি দিন'।

উপন্যাসের সমাপ্তিতে তোর সিক্ততায় ডুবে 
মনে মনে একটাই কথা বলবো তখন,
'এর চেয়ে ভালো নেই কিছু আর'।





বৃষ্টি চাই বৃষ্টি

কৃ ষ্ণা  গু হ

জ্যৈষ্ঠের দাবদাহে ক্লান্ত শহর!!
আকাশের দিকে চেয়ে সবাই।
বৃষ্টি চাই বৃষ্টি  !!

পারদ ঊর্ধ্বগামী 
মনের ঘরে ভীষণ গুমোট
বৃষ্টি করেছে আড়ি!! কবে আসবে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি?

 উত্তাল পাহাড়ি ঝর্ণার মতো বৃষ্টিকে জড়াবো মধুর আলিঙ্গনে!!
সুপ্ত বাসনায় সিঁটিয়ে আছে দেহ।

শালিক চড়ুই ফিঙে করছেনা আর ছুটোছুটি, যে যার নিজের কুলায় তপ্ত হাওয়ায় গেছে ফিরে।
দোলা দেয়নি সব পল্লবে ,
গাছেরা সব হলুদ মেখেছে গায়
মন ভরেছে বিষন্নতায়!!

এক পশলা বৃষ্টি আসুক মনের ঘরে 
ভিজিয়ে দাও শরীর ভিজিয়ে দাও মন!! ভিজিয়ে দাও আবেগ-অনুভূতি

বৃষ্টি আসুক এ তল্লাটে বৃষ্টি তোমার বৃষ্টি আমার
কাগজের নৌকা বানাই ফিরে যাই  অতীতের চেনা আঙিনায়।

বিশ্বজুড়ে  বৃষ্টি করুক লুটোপুটি!!
মাঝিরা গলা ছেড়ে ধরুক ভাটিয়ালি!!
রুক্ষ দিন আর নয়, সবুজে সবুজে ভরে উঠুক তপ্ত মাটি।





বাদল দিনের ছড়া
 
র ত্না  সে ন 

টাপুর টুপুর বৃষ্টি পড়ে, নদে এলো বান। মনে পড়ে ছেলেবেলার হারিয়ে যাওয়া গান।

জল থৈ থৈ উঠোন জুড়ে কাগজ নৌকা ভাসে।
সবুজ গাছের পাতা থেকে ঝর ঝর জল পড়ে।

আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে, যেন ঘন কালো মসী, 
দেখছি বাদল, হাওয়ার মাতন ঘরের ভিতর বসি।

উথাল পাথাল হওয়ার নাচন বৃষ্টি এলো মেলো, কখনো বা ইলশে গুঁড়ি ঝির ঝিরিয়ে এলো। 

ফুল গাছের ডাল ভেঙেছে, পাপড়ি পড়ে খসে, 
পাতার ফাঁকে চুপটি করে কাক ভিজছে বসে।

ভিজছে চড়ুই, ভিজছে টমি, ভিজছে কাপড় বারান্দায়। 
ছাতা মাথায় চলছে মানুষ, ছিটছে জল পায়ে পায়ে।

গুরু গুরু মেঘ গর্জায় বৃষ্টি থামে ক্রমে।
বিদ্যুতেরই ঝলক দেখে ভয় জাগে যে মনে। 

ঠান্ডা হলেন ধরিত্রী মা জল জমে শুখা বুকে, 
সাজবে এবার সবুজ ফসল ফুটবে হাসি সবার মুখে।





বৃষ্টি

বি দি শা  ব্যা না র্জী

বাদল দিন 
মেঘলা মন,
আকাশ কালো
প্রেম গোপন। 

টাপুর টুপুর 
বৃষ্টিছন্দ, 
ভিজে বাতাস 
মৃদুমন্দ। 

পথে মাঠে
জলের ঢল, 
করছে খেলা 
শিশুর দল। 

আকাশ চিরে
সৌদামিনী,
কেঁপে ওঠে
আঁধার রজনী।
 
একলা পথিক 
চলছে পথে,
বৃষ্টিঝরা 
গহন রাতে!





রাংভাং

বি উ টী  সা ন‍্যা ল

উত্তরকন‍্যার কোলে চুপটি করে লুকিয়ে আছে তাবাকোশি।
পাইন আর বার্চের নীরব উচ্ছ্বাসকে পিছনে ফেলে,
বর্ষার আনন্দে রাংভাং ছুটে চলেছে দুরন্ত গতিতে।
বর্ষার জল রাংভাংকে করেছে পুনঃযৌবনা।
রাংভাং বয়ে চলেছে উচ্ছ্বল ছল্ ছল্ কলকল সুরে।
তাবাকোশি গ্রাম বলছে--- যাসনা রাংভাং,
ফিরে আয়, ফিরে আয়-
তুই ওভাবে নৃত‍্যরত হয়ে বয়ে চললে
আমি কার উপর ঘুমাবোরে রাংভাং?
তুই সব জল নিয়ে তিস্তায় মিশে গেলে,
আমাকে সবুজ করবে কে?
চা বাগান বাঁচবে কি করে?
আমি সবুজ না থাকলে পর্যটকরা আসবে কেনো?
একটু বোঝ রাংভাং, তোর গতিকে একটু শ্লথ কর।
সারা বছর জল ধরে রাখার ক্ষমতা রাখ।
মাটি আর পাথরের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোল।
পর্যটন শিল্পের পসরা সাজিয়ে, বাঁচিয়ে দে রাংভাং তোর প্রেমিক তাবাকোশি গ্রামকে।





আমি কী

অ র্পি তা  কু ন্ডু
 
শব্দরা হেঁটে হেঁটে যায়
আমার চেতনার প্রবাহে
ওখানে কতিপয় শব্দবন্ধ তৈরি করে
কথাদের ভিড়ে  নিস্তব্ধতার সাম্রাজ্য...

এক যোজন দূরে কয়েকটি 
গণ্ডি কাটা... ওপারে যাওয়ার ভীষণ নিষেধ
নিষিদ্ধের ডাকে মৃত্যুর গন্ধ লেগে থাকে
চিলের ডানায় অসংখ্য অশ্বত্থের
বাঙ্ময় প্রকাশ...
তখনও শব্দরা হাঁটতে থাকে
নীরবতার সাম্রাজ্যের ভিতর।

আমরা গুটিগুটি পায়ে এগোই
সংকেত লক্ষ্য করে
লক্ষ্যভেদী বানের বিন্দুতে
এক একটি জীবনের স্থবিরতা খুঁজি

খুঁজে পাই কি?
প্রশ্নচিহ্ন... কতো প্রশ্নচিহ্ন সঙ্গে হাঁটে
আমরাও মিলিয়ে যাই অনন্তের আহ্বানে
এ প্রশ্ন নিরন্তর... আজন্মের... আমি কী...
আমি কে? প্রশ্নরা হাঁটতেই  থাকে।





ঘাসে ঘাসে

রা জ রু ল  ই স লা ম

গাড়িগুলো মৃদু আলোয় এগোচ্ছে 
চোখের পাতায় দীপশিখা জ্বলে।

আশ্চর্য, পালক শবর শবরী পাহাড় থেকে নিচে নেমে আসে। 

গতিধারা নিয়েই জনস্রোত
গাড়িগুলো মৃদু আলোয় ভাসছে 
সমুদ্রের ধারে। 

জনহীন শূন্যতার মাঝে উৎক্ষেপণ
যেখানে গাভীর মতো দাঁড়িয়ে ছিলে 
গাছটির নিচে
ঘাস হয়ে। 

রেখে গেছো পায়ের কাঁটা আঙুলগুলো
সামনে এগোতে গেলেই
রক্ত ঝরে ঘাসে ঘাসে।





অন্তরীপ

রা জ রু ল  ই স লা ম 

রাস্তার বাড়িগুলো পুরোনো হয়েছে অনেক 
বারবার সংস্কার করা হচ্ছে
রাস্তাটি... 

যেখানে তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে
অন্তরীপ ভেবে 
এখন সেখানে 
গাছগুলো প্রদীপের মতো আলোর হাওয়ায়
দুলছে সুদূরে। 

আর রাস্তাটি এখন লাল খামের মানচিত্রে
তুমি সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলে 
অন্তরীপ ভেবে।





আশ্রয় অনন্ত

শু ভ শ্রী  রা য়

হে অনন্ত, তোমার মধ্যে মিলিয়ে যাওয়ার উপায় এখনই নেই,
অনুভবে অনুভবে পেতে চাই তোমায়
তোমার মুহূর্তস্বাক্ষর নিজের হৃদয়ের গভীরে রাখি,
জীবনসর্বস্ব এই নদীর ধার
মাটিতে উপকথা গাঁথা,
স্বপ্ন থেকে খসে পড়া সময়ের সামান্য তাড়া, অনেক অবসর,
প্রাণের স্রোত, ভাঙা পার নির্জনতা মাখা...

কাঙ্ক্ষিত ভূমি টেনে নিয়ে এসেছে,
যতটুকু পারি চোখে করে আলো নিয়ে যাই।

সীমিত, খন্ডিত আমি এমন করেই তো তোমার অঙ্গ হয়ে থাকি,
বাতাসি প্রাসাদে গভীর হয়ে ওঠে আমার ইচ্ছাকুটীর;
আমার সঙ্গে তোমার ছায়া আসে, অনন্ত!
কোথাও কোনো বাড়িতে আমার জায়গা হয় না আর।




ধাঁধা-দুনিয়া

শু ভ শ্রী  রা য়

সাবধানে পা ফেলিস, মন
একে তো ধাঁধা-দুনিয়া,
আলোকিত নয় সব পথ
তার ওপর সমস্ত আলো নয় তোর জন্য,
যে রাস্তা আপাত মসৃণ তার ভেতরেও
চালাকির কোনো স্তর লুকিয়ে থাকতে পারে,
যেখানে মৈত্রী সেখানেও গোপন হার্দিক সরণিতে
হয়তো চলে আদিম অসূয়ার রথ...
ছদ্মবেশী ঘৃণা সুযোগের অপেক্ষায় নেই;
এমন তো নয় কখনোই।

তোকে রক্তাক্ত করার জন্য যে বসে আছে
হয়তো সে আপাত প্রীতিতে হাসে খিলখিল,
পা ফেলিস সতর্ক হয়ে,
যে কেউ বিষপ্রহরে হয়ে উঠতেই পারে বন্য।





কীসের এত ভয়

শু ভা শি স  সা হু

তোমার হৃদয়ের জানালায় বয়ে যায়
শুধু আমার প্রেমের ঝড়;
আমি শুধু 
যেতে চাই
তোমার কাছে, 
আমার দিন কেটে যায়
তোমাকে জাগাতে জাগাতে। 

তোমার
হৃদয়ের রাতে
শুধু আমার
শব্দ হয়, 
আমাকে ভালোবাসতে
তোমার কীসের এত ভয়?





আমার চেয়ে কে আর অধিক খুশি

শু ভা শি স  সা হু

সন্ধ্যা নেমেছে আমার
দরজায়, খুনসুটি কার? 
বাতাসকে আমার মনে হল
তোমার প্রেমের হাতের ছোঁয়া। 

হে
সমুদ্র;
হে নারী,
আমাকে কি আজও ডাকো? 

আমি আজও
এই প্রেমের 
অরণ্যে ভেসে থাকি;
পেয়েছি প্রেমের
পুরানো চিঠি, 
সেই থেকে আমি তোমার প্রেমে ভেসে আছি। 
বলো, আমার চেয়ে
কে আর
অধিক খুশি?





মা

র থী ন  পা র্থ  ম ণ্ড ল

জন্মের যন্ত্রণা কতটা 
তা আমি না বুঝলেও 
তুমি অবশ্যই বোঝো 

কারণ, সৃষ্টিও তোমার
ধ্বংসও তোমার 

ধ্বংসস্তূপের ভেতর সৃষ্টি খুঁজতে খুঁজতে
তোমার কাছেই বারবার ফিরে আসি 
আদরের জন্য 
স্নেহের আঁচলে নিজেকে 
জড়িয়ে রাখার জন্য

ঠিক কতটা অন্ধকারে নিমজ্জিত হলে 
আলোর জন্য চিৎকার করে 
তোমাকে ডাকতে হবে 
বলতে পারো, মা...





শুনতে পেতাম তোমার ডাক

র থী ন  পা র্থ  ম ণ্ড ল

চিঠি আছে, চিঠি!

চিঠি আছে, চিঠি!

ডাকের অপেক্ষায় থেকে যাই আজও
শুনতে পেতাম দরজায় কড়া নাড়া--
চিঠি আছে, চিঠি!

জন্ম থেকে জন্মান্তরে 
তোমার সাথে পথ চলা
মন থেকে মনান্তরে 
জীবন থেকে জীবনের
পথ বেয়ে কত খবর
বয়ে আনা তোমার
রাতের বেলায় ঘুমিয়ে পড়ে
শুনতে পেতাম তোমার ডাক---
চিঠি আছে, চিঠি!

ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হয়ে চলে গেছে রানার
আছে শুধু পোস্টম্যান আর
ইমেল হোয়াটসঅ্যাপের টুং টুং করে দরজায়
কড়া নাড়া---
চিঠি আছে, চিঠি!





স্বৈরাচারী ইচ্ছেরা

ন ব কু মা র  মা ই তি

ক্রমাগত কুরে কুরে খায় জৈবিক রসদ
 রক্ত খেকো দানব, অটল সন্ত্রাস
ঘুনধরা সমাজ শরীরে পচন ধরেছে
মুখ থেকে রক্তবমি হয় যক্ষা-কাশ! 

কত আর জোড়া তালি দেবে, আগত সময়
বাঁকে বাঁকে মন্দাক্রান্তা ফল্গুধারা বয়
খরা বন্যা মহামারী জনতার বিপুল উল্লাস
শ্বাস-রোধী মহানগরীর পথ, বিপন্ন সময় 

আমাদের প্রিয়জন নর-নারী বিষম-সঙ্গম 
দূষণ সর্বত্র, জল স্থল অন্তরীক্ষ অনন্য উপায় 
জল পড়ে অন্ধের চোখে, বেদনার বহ্নি শিখা বয়
তথাপি অন্ধের মত গণতন্ত্র হাতড়ে বেড়ায়

 নিস্তার পায়না উন্মাদিনী, গর্ভে তার অবৈধ জাতক 
নামাবলী গায়ে দিয়ে পথ চলে মন্ত্রী মহোদয় 
মুক্তির উল্লাসে কাঁধে কারাগার, মৃত সক্রেটিস
নিভৃতে বন্দী বিচারের বাণী, সত্যের অপচয়!





নিত্য ধাবমান জীবন

ন ব কু মা র  মা ই তি

সম্পর্কের রসায়ন সর্বদা সরলরৈখিক হয়না 
সময়ান্তরে বাঁক বদল করে নিভৃতে
দূর আকাশের গ্রহ থেকে আলোচিত সব ভাষা 
যে ভাষায় কখনো পুরনো হবেনা সংবেদী জীবন
                            
শব্দ ভাষা কথাদের সাথে নিত্যদিনের 
মস্করা নয়, জীবনশৈলীর বিভাজিকা 
শব্দে শব্দে গড়ে তুলি ভাসমান যৌবন 
সৃষ্টির সুরম্য প্রাসাদ, ভালোলাগা রোদ্দুর হাসি
সমবেত প্রচেষ্টায় বয়ে যাক নিত্য ধাবমান জীবন
নিভৃত সময়ের সংলাপী মধুকথা...




হৃদয়ের লাইব্রেরি

ন ব কু মা র  মা ই তি

ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের ঘর খুব ছোট 
আরো ছোট উঠোনের বাগান
সবকিছু ছোটর মাঝে ক্ষণিক আশা
হৃদয়ের লাইব্রেরি কিন্তু বড়-
বহু স্তর, প্রকোষ্ঠ, কানায় কানায় ভর্তি 
প্রজ্ঞারূপ হীরে, জহরত, মনি- মানিক্য
মানবতা, ভালোবাসা, প্রেম, সখ্যতা
নিরন্ধ্র অন্ধকারের মধ্যে অনিঃশেষ
কিছু আলো, হীরকোজ্জ্বল আলো
সুরধুনীর পথ ধরে চলেছে ক্লান্তিহীন মগ্ন ভগীরথ 
ব্রাহ্ম মুহূর্তে শান্তির নীড় সন্ধানে...





ভুল

মা লা  চ্যা টা র্জ্জি


             ১
ভুলে ভরা  জীবনের মধ্যে বসে  আছি
আলো  জ্বালালেই  বিবেক এসে দাঁড়ায়
বলে, আমাকে একটা নির্ভুল  জায়গায় নিয়ে যাবি?

আমি চমকে তাকাই তার দিকে
মনে মনে বলি ক্ষমা করো, প্লিজ  অনুগ্রহ করো
ব্যর্থ হও, এই ভুলের ভিতের গায়ে হেনোনা নালিশ। 

                   ২
টিনের তোরঙ্গের নিভৃত  আলো-আঁধারিতে
কবেকার এক ভুলেভরা খাতা  পড়ে আছে। 
হিজিবিজি লেখা পোকাকাটা  ভাঁজে—
ছেলেবেলাকার বেজে ওঠা সময়ের ঘ্রাণ।
ছেঁড়াখোঁড়া খাতাতে হলদেটে  হয়ে আছে—
আমার ছেলেবেলার মুখ। 

                        ৩
পথে যেতে যেতে পড়ে থাকে ভুল,
ফিরে দ্যাখো, বলে চিৎকার  করলেও
সে চিৎকার মিলিয়ে যায় জুতোর  ঠোক্করে। 

আমাদের মিথ্যে আছে, ভুল  আছে
এইটুকু তো জীবন সব কি বোঝাতে পারি
একজন ভুল করলে সবাই ভুল ধার করে নিই,
আমাদের ভুলের কাছে, আমাদের মিথ্যের কাছে
আকাশের নীল রঙও নিষ্প্রভ।




প্রস্তুতি

তৈ মু র  খা ন

তোমার আঁচলে কত নক্ষত্র ফুটেছে

 বিচিত্র আলোর ঝিকিমিকি

 আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি!


 ওখানে হৃদয় রাখবো তোমার আলোয়

 ওখানেই রেখে দেবো আমার বাঁশির সুর

 ওখানে কখনো হবে না অন্ধকার!


 শুধু রাত্রির সন্তান হয়ে বেঁচে থাকা যায়?

মাইল মাইল রাস্তা হেঁটে জীবনের আয়ু হলো ক্ষয়

অন্ধকারে নিজেকেও বিশ্বাসঘাতক মনে হয়


 সারারাত যদিও জেগে থাকি

 সারারাত যদিও নক্ষত্রফুল কুড়াই

তবু এক উজ্জীবনের ডাক আসে শুনি


 দীর্ঘশ্বাসগুলি লুকিয়ে ফেলি

 আর তৃষ্ণাগুলি অস্বীকার করি

গভীর নির্জনে একা চুপি চুপি যাই…




 এই জন্ম

তৈ মু র  খা ন

যে শব্দ গান হয়নি

আমি সে শব্দের কাছে যায়নি কোনোদিন;

 যে মেঘ বৃষ্টি দেয়নি

আমি কি সেই মেঘের কাছে গেছি?

আমার শস্যের ক্ষেতে শব্দ আর গান

আমার মাথার ওপর মেঘ আর বৃষ্টির সম্মোহন।


 এই জন্ম শুধুই বাঁশি

এ জীবন শুধুই ভেজা ভেজা অভিমান


 দুপুর বিকেল হয়ে আসে

 বিকেল রাত্রির ডাক পায়—

 গেরুয়া আলোর পথে নামে রাঙাচেলি

রাত্রিতে হেসে উঠবে অদ্ভুত জ্যোৎস্নায়!


 বিশ্বাসের ধ্বনিগুলি বেজে ওঠে

অলৌকিক সমুদ্রের নৌকাগুলি ছেড়ে যায়

একে একে সমস্ত নাবিকেরা সাদা পোশাক পরে

আমিও ধূসর গন্ধ মুছে ফেলি মনে মনে


 উপলব্ধির সব জানালায়

 আমার আসক্তি তীব্র হলে

 আবার আবার মেঘ জমে

 শব্দেরা গান হয়ে ফেরে।





পাটনি কথিত

তৈ মু র  খা ন

 
ওগো নদী, আমি চলে যাচ্ছি

 আর ফিরবো না কোনোদিন

 আমার নৌকা ভাসিয়ে দিলাম


 এখন আমি বিপন্ন স্মৃতির ভেতর

 বানিয়ে নিয়েছি ঘরবাড়ি

 এখন কান্নার জলের পুকুরে স্নান সারি


 বহুদিন দেবী আসে না আর

গাড়ি চেপে চলে যাচ্ছে সব দেবী

সেতুর বাঁধনে বন্দি সব নদী সভ্যতার


 কার স্পর্শে কে-বা সোনা হয়

কার বরে কাদের সন্তান দুধ-ভাত খায়

কিছুরই হিসেব জানা নেই তার


শুধু পতাকা উড়ছে চারিদিকে

হানাহানি আর কুৎসার গানে হাততালি

 সব রাস্তা জুড়ে নেমেছে বাহিনী


এই পথে কবে আসবে আবার

আমাদের নবজন্মের বিদ্যা ও সুন্দর?

ছেঁড়া অন্নদামঙ্গল হাতে দাঁড়িয়ে আছে রায়গুণাকর!




কবিতার অন্বেষণে

প লা শ  বি শ্বা স

                      (৫৯)

অগোছালো জীবনে এসে যায় যদি
টেরাকোটার কারুকার্য শোভিত ভালোবাসা
আর জঙ্গলের নৈঃশব্দ্য কিংবা পাহাড়ের ঝর্ণার চঞ্চলতা
টানাটানি করে নিয়ে যায় তোমার দৃষ্টির কাছাকাছি
ক্ষতি কি 
                                            
                      (৬০)

পুকুর ধারে ফুলে ফুলে
বাঁশ বাগানের পাতায় পাতায়
পাখ-পাখালির গানে গানে
কিংবা প্রদীপ শিখার আলোর তরঙ্গে
সবখানেতেই বিরাজ করো তুমিই তো বনলতা 
                                      

                      (৬১)

একে অপরের মস্তিষ্কের মন্থকূপে আলো খুঁজছি দু'জনেই
আর আলোর ভিতরে তোমার আমার কথারা
ভেসে বেড়াচ্ছে এখন অবলীলায়
পদ্ম পাতায় জলের মতো তুমি ভাসছো আমার চোখে
আমি এক অবাক নৈঃশব্দের যাত্রী
                                       

                      (৬২)

মেঘের অন্তরাল থেকে প্রতিপদের চাঁদ
ছড়িয়ে দিচ্ছে মৃদু আলোর আবেশ হৃদয়ের দরজা পর্যন্ত
আর তুমি চেয়ে আছো জানালার পাশে একমনে
বৃক্ষশাখে পাখির বাসার পানে
আজ নীল স্বপ্নের বুনুনে জেগে রবে রাত


                       (৬৩)

শিশির মাখে নিশ্চিন্তে দুর্ব্বা শরীর
দোয়েলের শিস ভেসে আসে শীতল বাতাসের সাথে
কুয়াশার চাদরে সীমানা ভুলে দিগন্তরেখার চুম্বন
তোমার আমার উষ্ণ ঠোঁটে
এসো খুঁজে নিই দু'জনে হৈমন্তিক সুখ 
                                        

                      (৬৪)

খেজুর গুড়ের মিষ্টতা লেগে থাক তোমার দু'টো ঠোঁটে
সোনা রোদ্দুরে শিশিরে শিশিরে মুক্তো হাসুক খিলখিল
আর চন্দ্রমল্লিকার কুঁড়িতে প্রেম কথা
ইতিহাস লিখুক এই শীতে
প্রভাতকালীন রহস্যের ঘেরাটোপে





ভাষা দিবসে

অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত 

প্রবাহ কি জলের অপেক্ষা করে? যে ভাবে ঊষার ধানক্ষেত অপেক্ষা করে সবুজ শস্যের-- নিরন্ন শিশুটি  প্রতীক্ষা করতে থাকে ফুটন্ত  সাদা ভাতের!
আমিও ভাষা উদ্যানে বেড়াতে গিয়ে সুবেশা ড্যাড ও ম্যামদের  ভিড়ে ভুল করে ধামাকা বলে ফেলি!
স্বর্গের আগের স্টেশনে ধামাকা--- বিপন্ন ভালোবাসার সৈনিকরা চিৎকার করে ওঠে!
আমার অশ্রুতে তখন রফিক আজাদরা উৎসব হয়ে ঝরতে থাকে!




উদাসীন

অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত 

কোনো কোনো একলা বিকেলে আমি আকাশের দিকে একমনে চেয়ে থাকি!
খুব না পাওয়ার মতো এই চাওয়া ---নক্ষত্রেরা বহু আলোকবর্ষ দুর থেকে আমার এই না পাওয়া শিশিরের হতে পাঠিয়ে দেয়!  
আমার অসহ্য শীত করে--- শীত এলেই আমার মৃত্যুর কথা মনে পড়ে!
মেঘবালিকার দল মায়ের মতো কোল পেতে দাঁড়িয়ে যায়!
আমি অভিমানী একাকী  আকাশকে বলি--- আমার রাবণের সিঁড়ি কই?    
রূপসী চাঁদ জ্যোৎস্না সড়ক ছুঁয়ে  বানিয়ে দেয় আলোর সিঁড়ি 
আমি ধীর পায়ে একা একা তাতে উঠে পড়ি!




মেলা থেকে ফিরে

অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত 

                  হয়তো 
মহা ভাদরের প্রযোজনায় তোমার প্রাত্যহিক দিনলিপি ছুঁয়ে যাচ্ছে বর্ণহীন রোদ।
                      আর 
অ্যাসিড বৃষ্টির সকালে কালো মেঘ দেখতে দেখতে তুমি ভাবছো  কবে যে কাটবে সমস্ত সমাজবন্ধুদের এই কেপমারি ঝোঁক?  
ওদিকে তোমার বাজার যাওয়ার আগে টিভিতে 
"কালো ধন" সিরিয়াল খুলে বসেছে তোমার বউ ও শ্যালিকা!
তুমিও বাজার ভুলে সংলাপ ঝেড়ে ঝেড়ে পালন 
করছো যাত্রাদলের বিবেকের ভূমিকা!
তোমাকেই বলি--- খোল নলচে  বদলাতে গেলে 
দু ফুট মাটি খুঁড়ে কেউ পায় নি আজ পর্যন্ত 
কুয়োর জল!
রাস্তাই একমাত্র দেখাতে পারে রাস্তা! বাকি সব 
অর্থহীন বিকল!




একাকী নিভৃতে

অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত

                হয়তো

কোনো একদিন এই পৃথিবীতে চাঁদ উঠবে না
সারাদিন অন্ধকার প্রিয় বন্ধুর মতো ঘিরে রাখবে
আমাকে!
আমার নিদ্রাহীন চোখে জমে যাবে রাস্তার ধুলো
সারাদিন সূর্য আর উঠবে না! সকাল দুপুর আর প্রত্যেকটি
গোধূলি বিকেল প্রশ্ন চিহ্নের মতো  দাঁড়িয়ে যাবে!
পৃথিবীর কোনো বাগানে গন্ধরাজ ফুটবে না--- ফুটবে না 
স্নিগ্ধ অপরাজিতা!
কাশবন আর সোনালি ধানভরা   ক্ষেত আর ফিরবে 
না কোনো গ্রামে!
একদিন শুধু তোমাকে ভালোবেসে ঝুমা পূর্ণিমার রাতে 
ব্রতচারীর গোলদিঘির চাঁদ দেখতে দেখতে মারা যাবো 
সবার  অগোচরে--- একান্ত নিভৃতে!





অপরূপ পলাশ

অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত 

                 ভাবি---
সমস্ত যাওয়া কি নির্ভার মেঘের মতো বৃষ্টিদিনে ফিরে আসার তাগিদ--- তাহলে কেন সকল হত্যালীলার মধ্যে জীবনের পরম আশ্বাস লুকিয়ে থাকে?
যা কিছু মহার্ঘ ভাবি তার কোনো ছায়া আজকাল মাটিতে পড়ে না!
যেহেতু হাতের কাছে অকুলান  শান্তির জল--- মানুষ তার শোক  আর শোকের মুকুল লুকিয়ে রাখে 
নদীর স্বচ্ছ জলে!
যেভাবে গবেষণামগ্ন শহর তার পরিশ্রান্ত অবয়ব আড়াল রাখে  কথার আবহে!




জন্মদিনে

অ শো ক  কু মা র  দ ত্ত 

As  one  who  shrewdly   pretends 
That  he  and   the  world  are  friends 
                          Robert  Frost  
           
                     তবু
ক্রন্দনরত বালকের মতো যন্ত্রণার  আভাস 
আজও খুঁজি তোমার অখণ্ড নীরবতার ভেতরে!
কে যেন খুঁজে যাচ্ছে তোমার নিঃশব্দ অভিমান আজও গ্রামবাংলার পথে-ঘাটে অরণ্য ছাতিমে!
               অথচ
নীরবতার ভেতরে না কি ডুবে থাকে 
প্রবল প্রেম!
মঞ্চ কাঁপানো প্রখর বুদ্ধিজীবীদের অপার শান্তিজল!
                   অতএব
বিদেশী তোপের কামান ধ্বনি  আন্ড  
লাস্ট বাট নট  দ্য লিস্ট--- থ্যাংক ইউ অল!






মেঘ-বৃষ্টি-প্রেম

প্র ল য় ব সু

পশলা মেঘে বৃষ্টি নামে
মেঘের আঁকিবুকি,
মেঘলা হাওয়ায় দূর ভেসে যায়
অলস প্রতিশ্রুতি।
শহর জুড়ে বৃষ্টি নামে
ভেজা পথের টান,
বৃষ্টি নামে- বুকের মাঝে
মেঘমল্লার তান।

স্থির সময়ের দ্বার খুলে দেয়
বৃষ্টিসুখের কাল,
আকাশ থেকে নামছে ধীরে
মেঘের মায়াজাল।
মেঘের পরে মেঘ জমেছে
মেঘপিওনের গান,
যক্ষিনী কোন প্রিয়ার তরে
প্রাণ করে আনচান।

ভেজা মাটির সোঁদা ঘ্রাণে
বাদলা দিবসরাতি,
হলুদ বনে পাখনা মেলে
রঙিন প্রজাপতি।
প্রেম জমেছে মনের কোণে
ভিজছে হিয়ার দুকুল-
মন্দাক্রান্তা ছন্দে ঝরে 
খোঁপায় গোঁজা বকুল।

কদমবংশী গলায় দোলা
সাতনরী মণিহার,
সিক্ত শাড়ির আলগা প্যাঁচে
আর্দ্র সুখের দ্বার।
একবুক মেঘ সূচ্চমিনার
উত্তাপী নাগপাশ-
শ্রাবণধারার উল্লাসে আজ
ময়ূর পেখম সাজ।




খোলা চিঠি

প্র ল য় ব সু

সবাই জেনে যাক-
তুমি বৃষ্টি হয়ে এসেছ...
আমার পুব জানালার 
কপাট ছিল খোলা,
পর্দা উড়েছে হিম পূবালী বাতাসে...
বৃষ্টির বিন্দু ছিটকে ভিজেছে
আমার মুখ থেকে মন... 
ভেঙ্গেছে ঘুমের মেলা।

আজ বৃষ্টি তোমারও শহরে,
আমার শহরের মতই... 
খোলা থাকুক আমার মতই 
তোমার বাতায়ন মুখ...  
হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুঁয়ে 
ভুলে যেও অভিমানের কয়েকটা কথা...
আজ ভিজুক তোমার সুখ, 
আর চুল থেকে চিবুক।

ভালো থেকো বৃষ্টিবিলাসী বৃষ্টিপাগলী আমার...





বৃষ্টি-ভেজা

প্র ল য় ব সু

দূরে কোথাও দুএক পশলা বৃষ্টিও হচ্ছে,
কিন্তু কত দূরে!?
আসা কি বাতিল তবে বৃষ্টি?

অনাবিল চুম্বনসিক্ত সেই ঠোঁট বেয়ে
কোনো কথাই কি ধরা দেবে না হৃদয়ের কানাচ ভেজাতে?
অনেক কাছের থেকে?

কালচে লাল সিঁদুর রঙা আকাশ-
খানিক তোমার পরণের ওড়নার মত,
পতপতিয়ে উড়ছে জানি ঝোড়ো হাওয়ায়-
অবিরল।

বাতাসে বর্ষার মৃদুমন্দ ঘ্রাণ 
একঘেয়ে লাগে না আমার,
তোমারি মত সতত কাঙ্ক্ষিত, সদা মোহময়ী 
উদ্ধতযৌবনা।

আমার এমন কাছে-
শ্রাবণী এত বড় অকূল আকাশে,
আর কাকে পাবো এই সহজ গভীর 
অনায়াসে-,

বলতেই নিখিলের অন্ধকার। 
মেঘের ভেলায় কত পাখি গেল উড়ে
প্রকৃতিস্থ প্রকৃতির মতো- 
প্রেম অপ্রেম থেকে দূরে।

তাকিয়ে দেখলাম না তো
নির্জন অবিমিশ্র চাঁদ আর নক্ষত্রের ঝাঁক!
বৈতরণীর থেকে অর্ধেক ছায়া গুটিয়ে নিয়েছে তারা,
তোমারি অধীর অপেক্ষায়।

রোজ কিছু লিখে ফেলতে হবে এমন তো নয়,
তবু কলমে ভরসা রাখি-
তোমাকে কাছে চেয়ে চীৎকার করতে যে লজ্জা 
তার থেকে আমায় মুক্তি দেয় সে- আলোয় আঁধারে।

থাক না আমার লেখা শিক্ষিত বাঙালীর কাছে
পদকল্পলতিকা পদাবলীর মত
অপাঙক্তেয় দুর্বোধ্যতা হয়ে।
শুধু তুমি বুঝলেই জানি বৃষ্টি হবে...





অজন্মা আগামীর দিকে

র ত্না দা স

অতীতের পল ছুঁয়ে উঠে আসে ঢেউয়ের লহর
ছড়িয়ে পড়ে বালুতটে
না, তরঙ্গ বলা যায় না বরং থিতানো জঞ্জাল কিছু কোলাহল কিছু হলাহল
আবশ্যক বা অনাবশ্যক ফলাফল

চাওয়ার পরিধি পাওয়ার মেলবন্ধনে আটকে থাকে
সুখপাখি পা দোলায় মেহগনী পালঙ্কে বসে, দুখপাখি
যখন তখন ঝাপটা মারে ঘাড়ে
চেয়েছে কেউ! তবুও আসে বারেবারে
তার ঠোঁটের বঙ্কিমী ঠাঁট অনেকটা রাধা স্টাইলে জ্বালা ধরায়

মানুষকে নির্বিবাদে ভাবতে শেখায়
সে নিমিত্তের হাতে ক্রীড়নক মাত্র
সবই পুতুল নাচের ইতিকথা—
কোন সুতো কতটা নাচায়...
যার হাতে লাটাই তিনি ত্রিভুবনেশ্বর হয়ে বসে আছেন, তাকে দ্যাখা যায় না শুধু অনুভবে তিনি

আগম দিনের বার্তাবহ কী নিদান দেবেন
মনের প্রকোষ্ঠে শঙ্কা আশঙ্কার দোলায়মান এক কঠিন যন্ত্রণার আভাস
নরম খরগোশ শজারুর কাঁটা কোথায় পায়!
সারা গায়ে ফুটিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যস্ত
বোড়ের দান কে দেয়! শেষ হাসিটা
তোলা থাক তার জন্য।

পৃথিবীর আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি নিয়মমাফিক
অনেকটা স্কুলের রুটিন খাতা
অভ্যস্ত দাসবৃত্তিতে মনের অবনমন
সেখানেও অতীত ধ্বংসাবশেষ তার শেষ বিন্দু জিইয়ে রাখে
আগুন আঁচে হাত সেঁকতে হবে তো!

নদীমাতৃক দেশ এখন চড়া পড়া
মরা নদীর সোঁতায় স্বর্ণরেণু দূর্লভ এক
কুহেলিকা হয়ে
শুধুমাত্র ধাঁধায় পথিকেরে
ধূসর ঘোলাটে চাউনি অজন্মা ভবিষ্যৎ, সুদূর দৃষ্টিতে পরিমাপ করে

অনাগত আগামীর ডানায় যদি
এ্যালবাট্রসের বিস্তার পাওয়া যেত
যদি... যদি... যদি...
নাহলে সেই খেদোক্তি...
'আমার সাজানো বাগান শুকিয়ে গেল...' 

গুমরে গুমরে ওঠে অবচেতনে—





মলিন গোধূলি

র ত্না দা স 

ধূসর গোধূলির ছায়া ঘনিয়ে এলো।

আকাশে আজ
মলিন সাঁঝ!  
কোমল ম্লানিমা...

বিষণ্ণতা গাঢ়, ঘন, মোহবিধুর...

মন আজ সাজেনি।
বিষাদখিন্ন

আকাশে কালো কালি দিয়ে লেখা নাম আবছায়া ঝাপসা।

অস্তায়মান রবি আভা ফিকে লাল।

 মিলিয়ে যেতে যেতে কিছু গান করুণ!

অবসিত তারারা আজ মুখ দেখে চুপিসাড়ে...






মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চতুর্থ বর্ষ || প্রথম ওয়েব সংস্করণ || শারদ সংখ্যা || ১২ আশ্বিন ১৪৩১ || ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ || হিমেল সংখ্যা || ৪ ফাল্গুন ১৪৩০ || ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তৃতীয় বর্ষ || তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ || বাসন্তী সংখ্যা || ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ১০ মে ২০২৪