পোস্টগুলি

অক্টোবর, ২০২১ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

মুক্তগদ্য

একঘেয়ে কাহিনীরা চৈতালী নাথ শিউলির সাথে রজনীগন্ধার গন্ধমেশা বাতাস মাঝে মাঝে আমার ছোট্ট ঘরটাকে এমন উদাস মদির করে তুলছিল, যেন চোখ-মন দুই-ই জুড়িয়ে আসছিল!  জুড়িয়ে গেলেই পুড়িয়ে যায় উড়িয়ে দিয়ে ছাই... ধোঁয়া কখন মেঘ হয়ে যায় হদিশ কোথায় পাই!?  আগুন ভাসে ওই আকাশে কে জানে সে কীসের টানে? জলের বুকে ছলের অভাব...স্বপ্ন রাখে নয়ন পানে! বাইরে নজর পড়তেই মেঘজল ধোয়া ছলছলে আকাশ!....দেখে মনে হচ্ছিলো যেন একটি কী বিরাট নীলপদ্ম!  ভাবতে ভালো লাগছে, আজ তারই মাঝে ওই চাঁদ পদ্মমণির মতো উঁকি দেবে। আর তার চারপাশে তারাগুলো যেন আলোক ভ্রমরের মতো জ্বলবে নিভবে আপন খেয়ালে! দীর্ঘ তপস্যার স্মৃতিতে শুধু আমারই ছবি এঁকেছি নিজেই!....ওই চাঁদ ডোবার আগেই যা কিছু সব লিখে যাই! তারাগুলোর কাজ নেই আর, শুধু জ্বলা শুধুই জ্বালা! সোহাগ মাখা চাঁদ যে আমার...রাতের বুকের গল্প বলা। আঁধার! সে তো পেরিয়ে যাবে, ভোর হলে সে নিরুদ্দেশ..  জল জানে সে কোথায় পাবে আবার একটা রাতের রেশ!! আমি এনেছি শিউলি ফুলের গোড়ের মালা....! বিদ্রূপ করবে?? কোরো না.....! ......প্রতি বছর এমন দিনের সাঁঝবেলায় আমি শিউলি ফুলের মালা জলে ভাসিয়ে দিই। ....এ মালা তো আমার নয়! ..... এ মালা জ

অণুগল্প

তিস্তার খোঁজে তিস্তা পারে শ্যামল কুমার মিশ্র লালমণিরহাট-- বড় চেনা বড় কাছের এই গ্রাম। মেঠোপথ ধরে হেঁটে চলেছে সবুজাভ। দূরে বাহিরচর দেখা যায়। দিগন্ত জুড়ে জ্যোৎস্না ভরে রয়েছে। জোৎস্নাস্নাত হতে হতে এগিয়ে চলেছে সবুজাভ তিস্তার অভিমুখে। প্রতি রাতে সে তিস্তাকে দেখতে পায়। তিস্তার কলধ্বনিতে মন ভরে ওঠে। এক সময়ে সে গিয়ে বসে তিস্তা সন্নিধানে। এক টুকরো হিমেল হাওয়া এসে লাগে তার চোখে মুখে। মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। হারিয়ে যায় ত্রিশ বছর আগে। সেদিন ও ছিল এমনি এক দুধসাদা জ্যোৎস্নাভরা সন্ধ্যা। অপরাহ্ণের ম্লান আলো এসে পড়েছিল তিস্তার বুকে। নীল আকাশ এসে মিশেছে তিস্তায়। দু'চোখ ভরে দেখছে তিস্তাকে। দুয়ে মিলে একাকার। তিস্তার হাত ধরে চলেছে চিলমারিপাড়ার দিকে। দুদিকে কাশের বনে আনন্দের হিল্লোল। ছোট্ট বিহঙ্গের মত কলতানে ভরিয়ে তুলছে তিস্তা। হাজারো প্রশ্নের ভিড়। পেলব জ্যোৎস্না গায়ে মেখে ওরা বসেছিল তিস্তা-পারে। নাম না জানা পাখি এক, গান শুনিয়ে চলেছে। সবুজাভর বুকে মাথা রেখে তিস্তা হারিয়ে যায় সেই গানের মাঝে। আজও চোখ বন্ধ করলে সবুজাভ শুনতে পায় সেই গান। হঠাৎ ভাবনায় ছেদ ঘটায় খালেক ভাইয়ের গলা। নাও বে

গল্প

সমুদ্র সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী ওরা চলে যেতেই চাদরটা সরিয়ে লাফ দিয়ে উঠলাম, সমুদ্র আমাকে দেখতেই হবে এক্ষুনি। সমুদ্র....তার নীঈঈঈল জল আর সাদা সাদা ফেনা সঙ্গে নিয়ে আকুল ঢেউয়ের ছুটে আসা। যেদিন থেকে এখানে এসেছি, সব নিস্তব্ধ হয়ে গেলে তখন তার আওয়াজ পাই। ভীষণ ডাকে আমাকে ... বলে আয় আয় আয়! খালি এই সাদা সাদা বোবা দেওয়াল গুলোর ভেতরেই শুয়ে থাকবি? কত কথা আমার জমা আছে তোকে বলব বলে!" টানা একটা বড় চৌকো বারান্দা আর সবুজ ঘাসের লন পেরোলেই দেখতে পাই সারি দিয়ে নারকেল গাছ। তারপরই নিশ্চয়ই সে ...নীল নীল আর নীল শুধু, আমি জানি খালি টুক করে এইটুকুনি পেরিয়ে যেতে পারলেই ব্যাস্। এতক্ষণ ওরা বিষন্নগলায় ফিসফিস করে কি সব যে বলছিলো, আমি কিচ্ছুটি শুনিনি, শুনিও না আজকাল। যত রোগ আর ওষুধের হবিজাবি ফিরিস্তি। সাদা পোশাকে নার্স দিদি আসে বারেবারে, হাসিমুখ দেবদূতী যেন। কী মিষ্টি করে যে কথা বলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কিন্তু কি যে তেতো ওষুধগুলো আর কি অসম্ভব ব্যাথা লাগে ইঞ্জেকশনে। আমি কুঁকড়ে যাই ভয়ে ব্যথায়, তখন আমার আর কিচ্ছু ভালোলাগে না। আজ ওরা কেউ নেই দেখে ফাঁক পেতেই দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে ঝুঁকে পড়ি, কোথায় তুমি সমুদ্র ক

বড় গল্প

দেখা হয়েছিল তোমাতে আমাতে... নীলিমা চ্যাটার্জ্জী পিএসসি বিল্ডিং-এর গেট দিয়ে আরও অনেকের সাথে মুখে একরাশ দুশ্চিন্তার ঘন মেঘ নিয়ে হনহনিয়ে ভিতরে ঢুকল শুদ্ধসত্ত্ব মুখার্জ্জী। দেওয়ালে টাঙ্গানো লিস্টের সামনে এত ভিড় যে সামনে এগোতেই পারছিল না। অনেক কষ্টে ঠেলেঠুলে এগিয়ে একটু কোনাকুনি দাঁড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করল শুদ্ধসত্ত্ব। আজ WBCS-এর  “এ” গ্রুপের লিখিত পরীক্ষার ফল বার হয়েছে। 1,2,3,4....পরপর নামগুলো দেখে যাচ্ছে কম্পিত বক্ষে.... কোনওদিন সেভাবে ঈশ্বরকে ডাকেনি.... কিন্তু 20 নম্বরটাও যখন পার হয়ে গেল শুদ্ধসত্ত্ব তখন বাড়ির আরাধ্য দেবতাকে স্মরণ করতে বাধ্য হল। পরীক্ষা তো ও খুবই ভালো দিয়েছিল, তবে নিজের নামটা এখনও দেখতে পাচ্ছে না কেন? 23, 24, 25.... চোখদুটোয় যেন হাজার ওয়াটের আলো জ্বলে উঠল শুদ্ধসত্ত্বর! এই তো লেখা শুদ্ধসত্ত্ব মুখার্জ্জী, নিজের রোল নম্বরটাও মিলিয়ে নিল চট করে।  আনন্দে উড়তে উড়তে দুই বড় হাঁড়ি মিষ্টি নিয়ে বাড়ি ফিরল শুদ্ধসত্ত্ব। ফোনে না জানিয়ে বাবা-মাকে দারুণ খবরটা নিজমুখেই দিল বাড়ি এসে। হৈ হৈ পড়ে গেল বাড়িতে। বাবা রিটায়ার্ড জয়েন্ট সেক্রেটারি। সবাই আনন্দে আত্মহারা। বিকালে ছোটকাকু এসে জড়িয়

প্রবন্ধ

"মহালয়া" কী ও কেন ... তপন পাত্র কথা হচ্ছিল দু'চার জন গৃহবধুর সাথে । প্রসঙ্গ: "মহালয়া"। তাঁরা তখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রী। মহালয়ার ভোরে প্রায় জোর করেই তাঁদের জাগিয়ে দেওয়া হতো। স্কুল মাঠের বকুলতলায় ঢুলু ঢুলু চোখে বসে পড়তেন তাঁরা। ছোট্ট আয়তাকৃতির একটা বাক্স থেকে ভেসে আসতো কী সব গান আর খুব গম্ভীর গলায় যত্তোসব মন্ত্র! একসময় সকাল হয়ে যেত। তাঁরা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করতেন, ''তুই আকাশের দিকে তাকিয়ে মহালয়া দেখতে পেয়েছিস?" উত্তর আসতো-"না"। আর তুই? প্রতিউত্তর-"না"। দীর্ঘ কয়েকটা বছর তাঁদের ধারণা ছিল মহালয়া মানে, ভোর বেলায় আকাশে হয়তো বিশেষ কিছু দেখতে পাওয়া যায়, তাঁদের দুর্ভাগ্য তাঁরা দেখতে পাননি। কড়া মেজাজের দিদিমণিদের এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করারও সাহস হয়নি। পরে ধীরে ধীরে বড়ো হবার সাথে সাথে আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো তাঁদেরও ধারণা বদলালো। তাঁরাও ভাবলেন, মহালয়া মানে বাণীকুমার সম্পাদিত গীতি আলেখ্য "মহিষাসুরমর্দিনী"। এক ঝাঁক সংগীত তারকার ভুবনমাতানো গান এবং বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ। সত্যি কথা বল

কবিতা

মানবী দুর্গা সুমন্ত চক্রবর্তী  সত্যি কি তুই দুর্গা হবি!  অন্ধকার ওই অসুরটাকে,  বুকের মাঝে ত্রিশূল ঠুকে,  চোখ রাঙাবি 'আর জ্বালাবি'।  সত্যি কবে দুর্গা হবি!  রোজের মতোই 'দশ'টি হাতের কাজ সামলে, সকল বেয়াদপির কানটি মলে,  হুকুম দিবি চাই পৃথিবী এমনধারা,  একমাত্র রাত্রি ছাড়া,  আর কখনো কোনো আঁধার  স্পর্শ করার নেই দরকার। সত্যি কি তুই সব দুর্গতিকে,  তর্জনীতে ঠেকিয়ে রেখে,  একদিন সব ঘর চৌকাঠ করে দিবি পার।  তবে আয় মা আবার। ভাসিয়ে দে মা সব কুটিরের দহন জ্বালা,  হিংসা ক্রোধ ঈর্ষা যেন না করে আর- কোনো হৃদয় ফালাফালা!  মানুষে মানুষে বিভেদ যেন,আর সে ভীষণ,  নীরব কোনো অত্যাচারে, পোড়ায় না মন।  আর কোনো ঢেউ যেন না আছড়ে পড়ে,   ক্ষুধার এবং মারণ রোগের,   এই ধরণীর অভাবী কিংবা দুঃখী ঘরে।  এই দুনিয়ায় সবাই যদি না হয়ও সমান,  সুযোগ যেন সকলে পায়।  একদিন তারও উর্ধ্বে উঠে সমান হওয়ার  চেষ্টা যেন মান্যতা পায় নিয়ম করে।  তোরই মতোন দুঃসাহসী কন্যা যেন জন্মায় সব ঘরে ঘরে।  মাতৃরূপী হয়েও যেন শক্তিমতীর আগুন থাকে বুক পাঁজরে। আমরাও চাই একদিন তুই,  শুধু নিয়মমাফিক পূজাতে নয়,  সকল দিনে, সকল ক্ষণে, সকল মনের সঙ্গী হব